বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের মামলায় ২০ আসামির মৃত্যুদণ্ড ও পাঁচজনের যাবজ্জীবনের রায় বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। রবিবার (১৬ মার্চ) বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের আপিল বেঞ্চ এ রায় দিয়েছেন।
এরআগে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি হয়েছে। বুয়েটের শেরে বাংলা হলের আবাসিক ছাত্র আবরারকে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে ছাত্রলীগের এক নেতার কক্ষে নিয়ে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়।
২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এ মামলা বিচারে এসেছিল। দুই পক্ষে যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর রায় আসে, যাতে ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড এবং পাঁচজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়।
তাদের মধ্যে তিনজন মামলার শুরু থেকেই পলাতক রয়েছে। বাকি ২২ জনের মধ্যে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মুনতাসির আল জেমি কারাগার থেকে পালিয়েছে।
গণঅভ্যুত্থানে সরকারপতনের পর গত ৬ অগাস্ট সে গাজীপুরের হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের দেয়াল ভেঙে পালিয়ে যায়। আবরার ছিলেন বুয়েটের তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। শেরে বাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন তিনি।
মামলার আসামিদের সবাই বুয়েট ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী। গ্রেপ্তার ২১ জনের মধ্যে আটজন আদালতে দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আবরারকে কীভাবে ক্রিকেট স্টাম্প আর স্কিপিং রোপ দিয়ে কয়েক ঘণ্টা ধরে বেধড়ক পেটানো হয়েছিল, সেই ভয়ংকর বিবরণ উঠে আসে তাদের জবানবন্দিতে।আবরার হত্যা: ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড ও পাঁচজনের যাবজ্জীবন বহাল
অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চট্টগ্রাম কার্যালয়ে দায়ের হওয়া একটি মামলায় বন বিভাগের ফরেস্টার সুলতানুল আলম চৌধুরীকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
বুধবার (১২ নভেম্বর) চট্টগ্রামের বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালত এ আদেশ দেন।
এদিন আসামি সুলতানুল আলম আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। আদালত শুনানি শেষে তা নামঞ্জুর করেন এবং আসামিকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, বন বিভাগের দাগনভূঞা সামাজিক বন বিভাগের ফরেস্টার সুলতানুল আলম চৌধুরী ১৯৯০ সালে বন বিভাগের নার্সারি প্রকল্পে প্ল্যান্টেশন সহকারী হিসেবে অস্থায়ীভাবে যোগ দেন। ২০০০ সালে তাঁর চাকরি স্থায়ী হয় এবং পরে পদোন্নতি পেয়ে বর্তমানে ফেনীর দাগনভূঞায় কর্মরত আছেন।
২০২৩ সালের ১৬ এপ্রিল দুদকের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের তৎকালীন সহকারী পরিচালক বাদী হয়ে সুলতানুল আসামি করে মামলাটি করেছিলেন। তদন্ত শেষে গত ১২ মার্চ চট্টগ্রাম দুদকের উপসহকারী পরিচালক মো. সালাহউদ্দিন আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
মামলার অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, সুলতানুল আলম চৌধুরীর দাখিল করা সম্পদ বিবরণীর বাইরে তার নামে জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ ৪৭ লাখ ৩৭ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদের তথ্য পায় দুদক। এছাড়া, দুদকে জমা দেওয়া সম্পদ বিবরণীতে তিনি আরও ১ লাখ ৬১ হাজার টাকার সম্পদ গোপন করেন।
দুদক চট্টগ্রামের আইনজীবী মো. রেজাউল করিম রনি বিষয়টি নিশ্চিত করে ঢাকা পোস্টকে বলেন, আসামি আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চেয়েছিলেন। কিন্তু আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এক যুগ আগে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে গণহত্যা-নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আসামিদের বিরুদ্ধে দুই মাসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। একইসঙ্গে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ১২ নভেম্বর দিন ধার্য করা হয়েছে।
বুধবার (১২ নভেম্বর) দুপুর ১২টার পর ট্রাইব্যুনাল-১ এর সদস্য অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরীর একক বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম। তিনি এ মামলার অগ্রগতি তুলে ধরে আরও দুই মাস সময়ের আবেদন করেন। শুনানি শেষে তার আবেদন মঞ্জুর করে নতুন দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এ মামলায় শেখ হাসিনাসহ ২১ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে চারজন গ্রেপ্তার রয়েছেন। তাদের আজ ট্রাইব্যুনালে হাজির করেছে পুলিশ।
আসামিরা হলেন- সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু, সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) একেএম শহিদুল হক ও পুলিশের সাবেক উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মোল্যা নজরুল ইসলাম।
এর আগে, ১২ আগস্ট এ মামলার প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আজকের দিন ধার্য করা হয়। ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ আদেশ দেন। তবে তদন্ত শেষ না হওয়ায় ফের সময় বাড়ানো হয়।
২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরের এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর বরাবর অভিযোগ করেন হেফাজতে ইসলামের নেতক আজিজুল হক। হেফাজত নেতা জুনায়েদ আল হাবিব ও মাওলানা মামুনুল হকের পক্ষে তিনি এ অভিযোগ করেন। এ ঘটনায় ২১ জনকে অভিযুক্ত করা হয়।
তারা হলেন- সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, সাবেক মন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক এমপি হাজি সেলিম, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, নারায়ণগঞ্জের সাবেক এমপি শামীম ওসমান, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকী, সাবেক আইজিপি একেএম শহীদুল হক, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক জিয়াউল আহমেদ, ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদ, ডিএমপির সাবেক উপকমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, কমিটির সদস্য অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ, গণজাগরণ মঞ্চের আহ্বায়ক ইমরান এইচ সরকার, একাত্তর টিভির সাবেক সিইও মোজাম্মেল হক বাবু, সময় টিভির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও আহমেদ জোবায়ের, এবিনিউজ২৪ ডটকমের সম্পাদক সুভাস সিংহ রায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব নাইমুল ইসলাম খান, সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ ও এনএসআইয়ের মো. মনজুর আহমেদ।
রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের আরও ৪৪ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে তাদের গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
এর আগে ১১ নভেম্বর নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ২২ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। ডিবির মতিঝিল, গুলশান, রমনা, লালবাগ, তেজগাঁও, উত্তরা ও সাইবার ক্রাইম বিভাগের টিমগুলো এসব অভিযান পরিচালনা করে।
সুনামগঞ্জে এক কিশোরীকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় এক ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। সুনামগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ মঙ্গলবার এই রায় দেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হলেন মো. লিটন আহম্মদ ওরফে লিটন মিয়া। তাকে একই সঙ্গে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তিনি সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার বল্লভপুর গ্রামের মো. খলিল মিয়ার ছেলে। মামলার রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌসুলি (পিপি) মো. শামসুর রহমান।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, জেলার দোয়ারবাজার উপজেলার পান্ডারগাঁও ইউনিয়নের পান্ডারগাঁও গ্রামের বাসিন্দা ফরিদ আহমদের বাড়িতে গত বছরের ২৯ এপ্রিল ঘটনাটি ঘটে। ফরিদ আহমদের স্ত্রী সাবিনা আক্তার তাদের ছোট মেয়ে প্রমি আক্তারকে নিয়ে আগের দিন তার বাবার বাড়ি বেড়াতে যান। সাবিনা আক্তারের বাবার বাড়ি একই উপজেলার আমবাড়ী যোগীরগাঁও গ্রামে। পরদিন সন্ধ্যায় সাবিনা আক্তার অসুস্থবোধ করলে তিনি চিকিৎসার জন্য স্থানীয় শ্রীপুর বাজারের পল্লী চিকিৎসক নাছির উদ্দিনের ফার্মেসিতে যান। সেখান থেকে ফেরার পথে মধ্যবাজারে আসার পর তার ছেলে মিনহাজ দৌড়ে গিয়ে জানায় তার মেয়ে তমা আক্তার (১৮) ফাঁস লাগানোর মতো ঝুলে রয়েছে। তখন ফরিদ আহমদসহ অন্যরা বাড়িতে গিয়ে দেখেন তমা আক্তার রান্না ঘরের দরজার তীরের সঙ্গে হাঁটু ভাজ করা অবস্থায় ফাঁস দেওয়ার মতো করে রয়েছে। তমা আক্তারের শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল। নাক দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিল। জিব্বা দাঁত দিয়ে চেপে ধরা এবং পড়নের সেলোয়ার খোলা ছিল।
এ ঘটনায় পরদিন ফরিদ আহমদ বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে দোয়ারাবাজার থানায় ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন। পুলিশ তদন্ত করে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকায় লিটন আহমদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। মামলাটির দীর্ঘ বিচারকার্য শেষে আসামি লিটন আহম্মদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হলে আদালতের বিচারক এই রায় ঘোষণা করেন।
বগুড়ার গাবতলী উপজেলার তোজাম্মেল হোসেন (৪৫) হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার রায়ে ৩ জনের ফাঁসি এবং ৩ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছে আদালত। মঙ্গলবার দুপুরে বগুড়ার সিনিয়র দায়রা জজ মো. শাজাহান কবীর এই রায় দেন। মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি মাজেদুর রহমান পিন্টু আদালতে উপস্থিত ছিলেন। বাকি আসামিরা পলাতক থাকায় গ্রেপ্তারের পর তাদের সাজা কার্যকর হবে বলে আদালত জানিয়েছেন। রায়ে প্রত্যেক আসামির ১ লাখ টাকা করে জরিমানার আদেশ দেওয়া হয়।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- মনিরুজ্জামান ওরফে মিশু (৩০), বাবুল প্রাং ওরফে আবুল কালাম আজাদ (৩৫) ও মানিক (৩২)। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন-দেলোয়ার হোসেন দলু (৬৮), পিন্টু ওরফে মাজেদুর রহমান (৪৬) ও আশিক (৩০)। এছাড়া রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় শান্ত নামের এক আসামিকে বেকসুর খালাস দেন আদালত।
জানা যায়, ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর আসামিরা গাবতলীর দুর্গাহাটা ইউনিয়নের বৈঠাভাঙা মোড়ে মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে তোজাম্মেল হোসনেকে হত্যা করে। তোজাম্মেল হোসেন গাবতলীর দুর্গাহাটা ইউনিয়নের নিজপাড়া গ্রামের মৃত ওসমান মোল্লার ছেলে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) অ্যাডভোকেট আব্দুল বাছেদ বলেন, ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী তোজাম্মেল হোসেন সেদিন এক আত্মীয়ের বিয়ের দাওয়াত খেয়ে ফেরার পথে চারমাথা মোড়ে ওঁৎ পেতে থাকা দুর্বৃত্তরা তাকে এলোপাতাড়িভাবে রামদা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। জমিসংক্রান্ত বিরোধ ও পূর্ব শত্রুতার জের ধরেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। নিহতের বড় ভাই মমিন মামলার বাদী হিসেবে অভিযোগ দায়ের করেন। দীর্ঘ ৮ বছর পর আদালতের রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন নিহতের পরিবার।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) সাবেক ভিসি হাসিবুর রশীদসহ ৩০ আসামির বিরুদ্ধে চলছে দশম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ।
সোমবার (১০ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে এ সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। অন্য দুই সদস্য হলেন— অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদ এবং জেলা ও দায়রা জজ নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।
আজ ১২ নম্বর সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিচ্ছেন রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আকিব রেজা খান। তিনি প্রত্যক্ষদর্শী।
ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করছেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম। সঙ্গে রয়েছেন প্রসিকিউটর আবদুস সোবহান তরফদার, মঈনুল করিম, সহিদুল ইসলামসহ অন্যরা।
গত ৪ নভেম্বর এ সাক্ষ্যগ্রহণ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সাক্ষী না আসায় সাক্ষ্যগ্রহণ পিছিয়ে আজকের দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল। ২১ অক্টোবর দ্বিতীয় বারের মতো সময় পেছানো হয়। এর আগে, ১৩ অক্টোবর সাক্ষী হাজির করতে পারেনি প্রসিকিউশন। এজন্য সময় চেয়ে আবেদন করেন প্রসিকিউটর মঈনুল করিম।
গত ৬ অক্টোবর নবম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষ হয়। ওই দিন জবানবন্দি দেন পুলিশের দুই উপপরিদর্শক। তারা হলেন- এসআই রফিক ও এসআই রায়হানুল রাজ দুলাল। দুজনই জব্দ তালিকার সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দিয়েছেন। পরে তাদের জেরা করেন পলাতক ২৪ আসামির পক্ষে চার স্টেট ডিফেন্সসহ গ্রেপ্তারদের আইনজীবীরা।
এর আগে, ২৯ সেপ্টেম্বর অষ্টম দিনের মতো সাক্ষ্য ও জেরা শেষ হয়। ওই দিন জবানবন্দি দিয়েছেন তিনজন। ২২ সেপ্টেম্বর সপ্তম দিনে প্রথমে ছয় নম্বর সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেওয়া সিয়াম আহসান আয়ানকে জেরা করেন স্টেট ডিফেন্স ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। ২১ সেপ্টেম্বর এ মামলায় সাক্ষ্য দেন আয়ান। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর তিনিই আবু সাঈদকে হাসপাতালে নিতে সর্বপ্রথম এগিয়ে আসেন। নিজের সাক্ষ্যতেও পুরো বর্ণনা তুলে ধরেছেন এই সাক্ষী।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর পঞ্চম দিনের মতো জেরা শেষ হয়। ওই দিন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার লাইব্রেরিয়ান আনিসুর রহমানকে জেরা করা হয়। ৯ সেপ্টেম্বর চতুর্থ দিনে পাঁচ নম্বর সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন তিনি। একই দিন এসআই মো. তরিকুল ইসলামও জবানবন্দি দেন।
৮ সেপ্টেম্বর এ মামলায় সাক্ষ্য দেওয়া রংপুর মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. রাজিবুল ইসলামের জেরা শেষ করেন স্টেট ডিফেন্স ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। ৭ সেপ্টেম্বর তিনি জবানবন্দি দেন। ওই দিন দ্বিতীয় সাক্ষী রংপুরে কর্মরত এনটিভির সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট একেএম মঈনুল হককেও জেরা করা হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পোশাক শ্রমিক মিনারুল হত্যা মামলাসহ ৫টি মামলায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে জামিন দিয়েছে হাইকোর্ট।
রোববার দুপুরে বিচারপতি এ এস এম আব্দুল মোবিন ও বিচারপতি সগীর হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ জামিনের আদেশ দেয়।
গত ৯ মে সাবেক মেয়র আইভীকে শহরের পশ্চিম দেওভোগে তার নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে একটি হত্যা মামলায় আদালতে হাজির করলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। গত ২৭ মে আইভীকে মিনারুল হত্যা মামলায় দুই দিনের রিমান্ড শেষে আদালত কারাগারে পাঠানোর পাঠায়।
বিদেশি বাণিজ্যের আড়ালে ৯৭ মিলিয়ন ডলার পাচারের অভিযোগে বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান ও তার স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ১৭টি মানিলন্ডারিং মামলায় অভিযোগপত্র দিতে যাচ্ছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
সিআইডির মিডিয়া শাখা থেকে পাঠানো ক্ষুদেবার্তায় এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
সিআইডি দাবি করছে, মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগে দায়ের করা ১৭টি মামলার অভিযোগপত্র দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে। মামলার তদন্তে মানিলন্ডারিংয়ের প্রমাণ মিলেছে।
এ ব্যাপারে রোববার (৯ নভেম্বর) বিকেল ৩টায় মালিবাগস্থ সিআইডি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হবে। সেখানে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে বলে জানিয়েছেন সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান।
সম্পদ বিবরণী দাখিল না করায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর সিতাংশু কুমার (এস কে) সুর চৌধুরীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছেন ঢাকার একটি আদালত। অভিযোগ গঠনের ফলে মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-২ এর বিচারক আয়েশা নাসরিন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আগামী ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত দিন ধার্য করেন।
আদালতের বেঞ্চ সহকারী দেওয়ান আশিক গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, এস কে সুরের বিরুদ্ধে আয় বহির্ভূত সম্পদ বা সম্পত্তির মালিক হওয়ার অভিযোগে নিজের ও তার ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিবর্গের স্বনামে বা বেনামে অর্জিত যাবতীয় স্থাবর বা অস্থাবর সম্পদ বা সম্পত্তি, দায়-দেনা, আয়ের উৎস ও তা অর্জনের বিস্তারিত বিবরণী আদেশ পাওয়ার ২১ কার্যদিবসের মধ্যে দাখিল করার জন্য নোটিশ জারী করা হয়। কিন্ত আদেশ পাওয়ার ২১ কার্যদিবস পেরিয়ে গেলেও তিনি সম্পদ বিবরণী দাখিল করেননি।
এ ঘটনায় গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর দুদকের উপপরিচালক নাজমুল হুসাইন বাদী হয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৬(২) ধারায় মামলা করেন। তদন্ত শেষে চলতি বছরের ২৫ আগস্ট আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে দুদক।
গত ১৪ জানুয়ারি রাজধানীর সেগুনবাগিচা এলাকা থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক এ ডেপুটি গভর্নরকে গ্রেপ্তার করে দুদক। ওইদিন তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। বর্তমানে তিনি কারাগারে আটক রয়েছেন।
গুম প্রতিরোধ, প্রতিকার ও সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। প্রস্তাবিত আইনে গুম করার অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ডসহ কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অধ্যাদেশটির খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
এর আগে খসড়াটি নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
প্রেস সচিব বলেন, গুম প্রতিরোধ এবং প্রতিকারের জন্য একটা আইন নিয়ে অনেকদিন যথেষ্ট ডিবেট হয়েছে। আজ (বৃহস্পতিবার) এটা চূড়ান্তভাবে অনুমোদন হয়েছে। এই অধ্যাদেশে গুমকে সংজ্ঞায়নের পাশাপাশি চলমান অপরাধ, কন্টিনিউ অফেন্স হিসেবে বিবেচনা করে মৃত্যুদণ্ডসহ কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।
প্রেস সচিব আরও বলেন, গোপন আটক কেন্দ্র স্থাপন, যা ‘আয়নাঘর’ নামে পরিচিত, তা ব্যবহার শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন গুম সংক্রান্ত অভিযোগ গ্রহণ ও তদন্ত কমিশনকে গুম সংক্রান্ত অভিযোগ গ্রহণ ও তদন্তের ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। এই অধ্যাদেশে গুম প্রতিকারের লক্ষ্যে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ গঠনের ১২০ দিনের মধ্যে বিচার সম্পন্নের বাধ্যবাধকতা, ভুক্তভোগী-স্বাক্ষীর অধিকার সুরক্ষা, ক্ষতিপূরণ এবং আইনগত সহায়তা নিশ্চয়তা প্রদান সংক্রান্ত বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া, গুম প্রতিরোধ প্রতিকার এবং সুরক্ষার উদ্দেশে তহবিল গঠন এবং তথ্যভাণ্ডার প্রতিষ্ঠার বিধানও সংযোজিত হয়েছে।
গুমের মতো অপরাধে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় সংস্থার সদস্যদের বিরুদ্ধে তদন্ত কে করবে, কীভাবে নিরপেক্ষতা নিশ্চিত হবে এবং গুমের শিকার হয়েছে এমন ব্যক্তির পরিবারের জন্য এই অধ্যাদেশে পুনর্বাসন বা ক্ষতিপূরণের কোনো বিধান রাখা হয়েছে কি না জানতে চাইলে প্রেস সচিব বলেন, ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য একটা তহবিল করা হয়েছে।
রাষ্ট্রীয় সংস্থার সদস্যদের বিরুদ্ধে গুমে সংশ্লিষ্ট হওয়ার অভিযোগ জাতীয় মানবাধিকার কমিশন তদন্ত করবে বলেও জানান তিনি। বলেন, তাদের ওপরেই এটা ন্যস্ত করা হয়েছে।
প্রেস সচিব বলেন, শেখ হাসিনার সময় বাংলাদেশে হাজার-হাজার ছেলেমেয়ে গুম হয়েছে। তার মধ্যে গুম বিষয়ক যে কমিশন করা হয়েছে, সেখানে অভিযোগের সংখ্যা প্রায় দুই হাজার এবং ওই কমিশনে যারা মেম্বার আছেন, তারা তাদের রিপোর্টে বারবার বলছেন যে এটার সংখ্যা ৪০০-এর উপরে হবে। আর দেশে শত শত আয়নাঘর ছিল, সেখানে এদেরকে রাখা হতো। অনেকে যারা গুম হয়েছেন, কেউ কেউ ফিরে এসেছেন, আবার অনেকে ফিরে আসেননি। বিএনপির অনেক কর্মী এখনো ফিরে আসেননি।
প্রেস সচিব আরও বলেন, গুম সংক্রান্ত একটি ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন আছে। যেটার নাম হচ্ছে, ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন ফর দি প্রটেকশন অব অল পারসনস ফ্রম এনফোরস ডিসএপিয়ারেন্স।
গত বছর ২৯ আগস্ট বাংলাদেশের উপদেষ্টা পরিষদ এটার এপ্রুভ করেছেন। বাংলাদেশ এটার অংশীদার হয়েছে। অংশীদারের এই কনভেনশনকে ফলো করে অধ্যাদেশটা তৈরি করা হয়েছে। এটা বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক আইন। এর ফলে বাংলাদেশে আর কোনো ফ্যাসিস্ট সরকার এসে গুমের রাজত্ব চালাতে পারবে না। দেশে কোনো আয়নাঘর তৈরি হবে না।
শফিকুল আলম বলেন, বৈঠকে আরও কয়েকটা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। জাতীয় লজিস্টিক নীতির খসড়া এবং চূড়ান্ত অনুমোদন হয়েছে। জাতীয় নগরনীতি নিয়েও আলাপ হয়েছে। তবে এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। আগামী বছর ২০২৬-এর সরকারি ছুটির তালিকা অনুমোদন হয়েছে।
রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে সহযোগিতা করার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় অর্থের ক্ষতি সাধন ও মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগে সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই)-এর চেয়ারম্যান সজীব ওয়াজেদ জয় ও ভাইস চেয়ারম্যান সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ও ট্রাস্টি রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বুধবার রাজধানীর সেগুন বাগিচায় দুদক প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন এক নিয়মিত মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান। দুদকের সহকারী পরিচালক মুবাশ্বিরা আতিয়া তমা বাদী হয়ে এ মামলাটি দায়ের করেন।
মামলায় অভিযুক্তরা হলেন- সিআরআই-এর চেয়ারম্যান ও ট্রাস্টি সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয়, ভাইস চেয়ারম্যান সায়মা ওয়াজেদ, ট্রাস্টি রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক, নসরুল হামিদ বিপু, এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর শাব্বির বিন শামস, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর আপিল সদস্য রওশন আরা আক্তার, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব ও এনবিআর-এর সাবেক চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন ভূঁইয়া, সাবেক অর্থমন্ত্রী আ. হ. ম. মুস্তফা কামাল। তারা পরস্পর যোগসাজশে সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ক্ষতি সাধন করেছেন।
দুদকের অভিযোগে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে অসৎ উদ্দেশে জনকল্যাণের নামে গঠিত নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই)-এর অনুকূলে প্রাপ্ত অর্থের ক্ষেত্রে আয়কর আইনের ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। তারা আয়কর মওকুফ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে নিজেদের বা অপরকে অন্যায়ভাবে আর্থিকভাবে লাভবান করেছেন। জনকল্যাণমূলক কাজে অর্থ ব্যবহার না করে এবং সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধন না থাকা সত্ত্বেও এসআরও জারি করে অবৈধভাবে কর সুবিধা গ্রহণ ও প্রদান করা হয়, যা অপরাধমূলক অসদাচরণ ও বিশ্বাসভঙ্গের শামিল।
দুদকের তদন্তে থেকে জানা যায়, ২০১৩-১৪ থেকে ২০২৩-২৪ করবর্ষ পর্যন্ত সিআরআই মোট ১০০ কোটি ৩১ লাখ ৪০ হাজার ৪৮৬ টাকা অবৈধভাবে আয় করে, যার মধ্যে ২৯ কোটি ৫০ লাখ ৯৮ হাজার ৯৬ টাকা ব্যয় হিসেবে দেখানো হয়। একাউন্টে জমার পরিমাণ পাওয়া যায়- ৫৫ কোটি ১১ লাখ ৮৩ হাজার টাকা। অবৈধ আয়-ব্যয় থেকেও আসামিরা ১৫ কোটি ৬৮ লাখ ৫৯ হাজার ৫২১ টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
তাছাড়া, সিআরআইয়ের নামে ২৫টি ব্যাংক হিসাবে মোট ৪৩৯ কোটি ৬ লাখ ৭৯ হাজার ৪৮০ টাকার সন্দেহজনক লেনদেন শনাক্ত করা হয়েছে।
অভিযোগে আরও বলা হয়, আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪-এর বিধি লঙ্ঘন করে ৩৬ লাখ ৫২ হাজার ৭৪২ টাকা আয়কর প্রদান না করার ফলে সরকার আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।
দুদক জানায়, মামলায় দণ্ডবিধির ৪০৯/১০৯ ধারা, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭- এর ৫(২) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২-এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারার অধীনে অভিযোগ করা হয়েছে।
গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর জয়, পুতুল ও ববির ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের গবেষণা সেল সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন-সিআরআই ও এটির ইয়ং বাংলা প্রজেক্টের ব্যাংক হিসাবও অবরুদ্ধ হয়েছে।
নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফেরাতে আপিলের শুনানি শেষ করেছে বিএনপি। শুনানিতে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার আর্জি জানিয়েছে দলটি। বিএনপির পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।
তিনি শুনানিতে বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করায় জাতির ভাগ্যে অমানিশা নেমে এসেছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর অংশ।
বুধবার (৫ নভেম্বর) সকাল ৯টা ৫০ মিনিট থেকে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে ৮ম দিনের আপিল শুনানি চলছে। বিএনপির শুনানি শেষে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করছেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক।
এর আগে মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর), ২ নভেম্বর ও ২৯, ২৮, ২৩, ২২ অক্টোবর তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফেরাতে আপিলের টানা শুনানি হয়েছে।
গত ২১ অক্টোবর নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফেরাতে আপিলের শুনানি শুরু হয়।
এর আগে গত ২৭ আগস্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে করা আবেদনের শুনানি শেষে আপিলের অনুমতি দেওয়া হয়।
এরপর ড. বদিউল আলম মজুমদারসহ ৫ জন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার আপিল করেন।
সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী জাতীয় সংসদে গৃহীত হয় ১৯৯৬ সালে। এ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ১৯৯৮ সালে অ্যাডভোকেট এম সলিম উল্লাহসহ তিনজন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট করেন। ২০০৪ সালের ৪ আগস্ট হাইকোর্ট বিভাগ এ রিট খারিজ করেন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে বৈধ ঘোষণা করা হয়।
এ রায়ের বিরুদ্ধে সরাসরি আপিলের অনুমতি দেওয়া হয়। এর ধারাবাহিকতায় ২০০৫ সালে আপিল করে রিট আবেদনকারীপক্ষ। এই আপিল মঞ্জুর করে আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ ২০১১ সালের ১০ মে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন।
ঘোষিত রায়ের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার বিলোপসহ বেশকিছু বিষয়ে আনা পঞ্চদশ সংশোধনী আইন ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পাস হয়। ২০১১ সালের ৩ জুলাই এ সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর এ রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন করেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি। অন্য চারজন হলেন– তোফায়েল আহমেদ, এম হাফিজউদ্দিন খান, জোবাইরুল হক ভূঁইয়া ও জাহরা রহমান।
আপিল বিভাগের ওই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে গত বছরের ১৬ অক্টোবর একটি আবেদন করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এ ছাড়া রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে গত বছরের ২৩ অক্টোবর আরেকটি আবেদন করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। পরে নওগাঁর রানীনগরের নারায়ণপাড়ার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেন আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে একটি আবেদন করেন।
সিরাজগঞ্জে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত সিরাজগঞ্জ-২ (সদর-কামারখন্দ) আসনের প্রার্থী ও জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যাপক জাহিদুল ইসলাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) পরিবেশ বিভাগের রেজিস্টার ও সহকারী অধ্যাপক ড. নাহরিন ইসলাম খানের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। মঙ্গলবার সিরাজগঞ্জ সদর থানা আমলী আদালতে দণ্ডবিধির ৫০০ ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়। মামলার বিষয়টি সিরাজগঞ্জ জজ আদালতের অ্যাডভোকেট আবু তালেব আকন্দ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ২৫ অক্টোবর গাজী টিভির ‘রেইনবো নেশন বনাম ধর্মীয় কার্ড’ শীর্ষক অনুষ্ঠান প্রচারের সময় সঞ্চালক কাজী জেসিনের উপস্থিতিতে ড. নাহরিন ইসলাম খান বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারকে কেন্দ্র করে সিরাজগঞ্জ জেলা জামায়াতের সেক্রেটারিকে নিয়ে মানহানিকর বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, জামায়াতের সিরাজগঞ্জ শাখার সেক্রেটারি গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ নেতারা পালিয়ে গেলে তাদের স্ত্রীদের প্রতি ‘জামায়াতের হক’ বলেছিলেন। অর্থাৎ তিনি বুঝিয়েছেন, ‘জামায়াতের লোকেরা নারী লোভী’। ইতোমধ্যে সেই ভিডিও ক্লিপ ভাইরাল হয়েছে।
তবে বিবিসি বাংলার সাক্ষাৎকার পর্যালোচনা করে দেখা যায়, জামায়াত নেতা বলেছিলেন ৫ আগস্টের পরে আলীগের কর্মীরা বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হয়েছেন। তবে আমাদের দ্বারা কেউ হয়রানির শিকার হয়নি। আমাদের ধারণা, আলীগের সাধারণ ভোটার ও সাপোর্টার ভোটারদের ভোট আমাদের দিকে আসবে।
তবে জামায়াত নেতা অধ্যাপক জাহিদুলের অভিযোগ করে বলেন, এই বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও কুরুচিপূর্ণ, যা আমার ব্যক্তিগত মর্যাদা ও জামায়াতে ইসলামীর ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে। এমনকি এই ধরণের কথা কখনো বলিনি। এই মিথ্যা প্রচার জামায়াত ইসলামী ও তার দলের বিরুদ্ধে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে এই বক্তব্য দেওয়া হয়েছে।
সিরাজগঞ্জ জজ আদালতের অ্যাডভোকেট আবু তালেব আকন্দ বলেন, আদালতে আমরা ভিডিও ক্লিপসহ সব প্রমাণাদি উপস্থাপন করেছি। বিজ্ঞ আদালত মামলাটি প্রাথমিক যাচাই-বাছাই শেষে পরবর্তী আইনগত প্রক্রিয়ার জন্য বিবেচনায় নিয়েছেন।