জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ অনুযায়ী যথাসময়ে ভোটগ্রহণ হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের যে রোডম্যাপ আছে, সে রোডম্যাপ অনুযায়ী আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। প্রস্তুতি রয়েছে এবং আমরা যথাসময়ে (দ্বাদশ জাতীয়) নির্বাচন করব।’
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে বুধবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন সিইসি।
দুপুর সাড়ে ১২টায় শুরু হওয়া বৈঠক চলে দেড় ঘণ্টা। এতে নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আলমগীর ও আনিছুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের দূত চার্লস হোয়াইটলিসহ ১১ জন প্রতিনিধি ছিলেন।
বৈঠক শেষে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘কিছু বিষয়ে এখনো রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে, এ কারণে নির্বাচনী পরিবেশটা অনুকূলে আসেনি। অচিরেই এই মতপার্থক্য দূর হয়ে যাবে।’
জাতীয় নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার হবে কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি জানান, নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারেননি তারা।
রাজনৈতিক দলগুলোর অংশ নেয়ার বিষয়ে সিইসি বলেন, ‘শেষমেশ সব দল নির্বাচনে আসবে, সে বিষয়ে আমরা আশাবাদ ব্যক্ত করেছি, তবে সে বিষয়ে আমরা নিশ্চিত করে...আমরা বলেছি যদি নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়, তাহলে চমৎকার প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। সেই লক্ষ্যে আমাদের পুরো প্রস্তুতি রয়েছে।’
রোডম্যাপ অনুযায়ী নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠানের ব্যাপারটি ইইউ প্রতিনিধিদের কাছেও তুলে ধরা হয়েছে বলে জানান হাবিবুল আউয়াল।
বৈঠকে ইইউভুক্ত দেশগুলোর প্রতিনিধিদের মধ্যে ছিলেন- ঢাকায় ইইউর ডেপুটি হেড অব মিশন ব্রেন্ড স্পাইনার, ডেনমার্কের দূত ইউনি স্ট্র্যাপ পিটারসন, সুইডেনের দূত আলেকজান্দ্রা বার্গ ভন, জার্মানির দূত আচিম টোস্টার, নেদারল্যান্ডসের দূত এন্যি গিরার্ড ভ্যান লুইন, ফ্রান্সের ডেপুটি হেড অব মিশন গিলিয়াম এড্রেন ডে কের্ডেল, ইতালির ডেপুটি হেড অব মিশন মাতিয়া ভেনচুরা, স্পেনের হেড অব মিশন ইগনাসিয়ো সাইলস ফার্নান্দেজ, সুইজারল্যান্ডের দূত নাথালি চুয়ার্ড ও নরওয়ের দূত এস্পেন রিক্টার সেভেন্ডসেন।
শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেছেন, আমাদের রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন ও দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার, ঐতিহাসিক মহাস্থানগড়, পাহাড়পুর, সোনারগাঁও, রামপাল, বজ্রযোগিনী এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর চট্টগ্রাম পার্বত্য অঞ্চল। যা দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ করে।
তিনি বলেন, বিপুল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিতে পর্যটন খাতের অবদান কম। অন্য দেশের তুলনায় আমাদের পর্যটনখাত এখনও পিছিয়ে আছে। সরকার টেকসই ও সবুজ পর্যটনকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। যেখানে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, পরিবেশগত টেকসই এবং সাংস্কৃতিক সংরক্ষণের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করার লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে।
শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান আজ ঢাকায় একটি হোটেলে “Workshop on Sustainable Practices in Green Tourism” শীর্ষক চার দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক কর্মশালার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন। শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব জনাব মো: ওবায়দুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)-এর নির্বাহী চেয়ারম্যান জনাব চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন।
ন্যাশনাল প্রোডাক্টিভিটি অর্গানাইজেশন (এনপিও), বাংলাদেশ এবং এশিয়ান প্রোডাক্টিভিটি অর্গানাইজেশন (এপিও), জাপানের যৌথ আয়োজিত এই কর্মশালায় বাংলাদেশসহ ২৪ টিএপিওভুক্ত বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি, নীতিনির্ধারক, গবেষক ও পর্যটন খাতের উদ্যোক্তারা অংশগ্রহণ করছে। স্বাগত বক্তব্য দেন ন্যাশনাল প্রোডাক্টিভিটি অর্গানাইজেশন (এনপিও) এর মহাপরিচালক মোঃ নুরুল আলম।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)-এর নির্বাহী চেয়ারম্যান জনাব চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, গ্রীন ট্রুরিজম বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল খাত। বিশ্বে ইকো ট্রুরিজমের আকার ৬০০ মিলিয়ন ডলার, যা ছোট কমিউনিটির মধ্যে সীমিত রয়েছে। বাংলাদেশের টেকসইও গ্রীনের উন্নয়নের অনেক সুযোগ রয়েছে।
চার দিনব্যাপী এ আন্তর্জাতিক কর্মশালায় ট্রুরিজম, সাসটেইনেবল- ইকো ট্রুরিজম, ক্লাইমেট চেঞ্জ বিষয়ে ১৫ টি সেশন অনুষ্ঠিত হবে। যেখানে এশিয়ান প্রোডাক্টিভিটি অর্গানাইজেশন (এপিও) এর সদস্য দেশের প্রতিনিধিরা সাসটেইনেবল ট্রুরিজম বিষয়ে গবেষণা ও ধারণপত্র তুলে ধরবেন।
সরকারকে সবসময় সতর্ক থাকতে হয় জানিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, ৫ আগস্ট নিয়ে সরকার সতর্ক অবস্থানে রয়েছে, তবে কোনো ধরনের নিরাপত্তা শঙ্কা নেই।
রবিবার (৪ আগস্ট) দুপুরে বাংলাদেশ সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত কোর কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি এ কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, ‘৫ আগস্ট নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই। আল্লাহর রহমতে এবং সকলের সহযোগিতায় সব অনুষ্ঠান ও কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হবে। সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সতর্কতাও নেওয়া হয়েছে। সরকারকে সব সময়ই সতর্ক থাকতে হয়। এজন্য নানা সভা আয়োজন করা হয় এবং সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা চাওয়া হয়।’
বিশেষ অভিযান বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এই অভিযান দেশব্যাপী চলছে এবং তা নির্বাচনের আগপর্যন্ত চলবে। ইতোমধ্যে অনেক অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। যেগুলো উদ্ধার হয়নি, সেগুলোর ব্যাপারেও সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।’
মোহাম্মদপুর এলাকায় কিশোর অপরাধ বেড়ে যাওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এক্ষেত্রে পরিবার ও সমাজ— উভয়ের সচেতনতা জরুরি।’ মব সহিংসতা নিয়ে আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মব সহিংসতা আগের তুলনায় কমেছে এবং ধীরে ধীরে আরও কমে যাবে। এ ধরনের ঘটনায় কোনো ছাড় দেওয়া হচ্ছে না।’
ব্রিফিংকালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ভারতে এক তরুণীকে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তরের পাশাপাশি নারী ও শিশুসহ ৯ জন বাংলাদেশিকে পুশইন করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)।
শুক্রবার (১ আগস্ট ) সকালে পঞ্চগড় জেলার বাংলাবান্ধা সীমান্তে এ ঘটনাটি ঘটে।
পঞ্চগড়-১৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মনিরুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার রাতে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর সীমান্ত দিয়ে পপির রায় (২২) নামে এক তরুণীকে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করে বিএসএফ। তিনি জানান, পপি দীর্ঘ এক বছর ভারতে অবৈধভাবে অবস্থান করে শিলিগুড়ির একটি মন্দিরে কাজ করছিলেন। তাকে গ্রেফতারের পর শিলিগুড়ি পুলিশ বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করে এবং পরে সৌজন্য বৈঠকের মাধ্যমে তাকে বিজিবির কাছে ফেরত দেয় বিএসএফ।
তবে একইসঙ্গে বিএসএফ ওই সীমান্ত দিয়েই একই পরিবারের নারী ও শিশুসহ চারজনকে পুশইন করে। পুশইন হওয়া ব্যক্তিরা হলেন: আছমা খাতুন (৩৫), তার ছেলে সামির মোড়ল (১৭), সালাম মোড়ল (১৫) ও মেয়ে শাহিনা (৭)। বিজিবির জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানান, তারা দীর্ঘদিন মুম্বাইয়ে অবৈধভাবে বসবাস করছিলেন এবং সেখানকার পুলিশ তাদের আটক করে শিলিগুড়ি পাঠায়। এরপর বিএসএফ তাদের পুশইন করে।
এদিকে শুক্রবার সকালে পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের ডাংগিপুকুর সীমান্ত এলাকা দিয়ে আরও পাঁচ নারীকে পুশইন করে বিএসএফ। তাদেরকে আটক করে বিজিবি পঞ্চগড় সদর থানায় হস্তান্তর করেছে। আটক নারীরা হলেন: সাদিয়া খাতুন (৩৫), শারমিন সুলতানা সুমি (৩৫), মল্লিকা (৩২), ময়না খাতুন (৪৫) ও হালিমা (৩১)।
সূত্র জানায়, হস্তান্তর হওয়া পপির বাড়ি দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ উপজেলায়। অপরদিকে পুশইন হওয়া ৯ জনের বাড়ি যশোর ও ময়মনসিংহ জেলার বিভিন্ন এলাকায়। তাদের পরিচয় নিশ্চিত করে জিডিমূলে পরিবারের জিম্মায় হস্তান্তর করা হবে।
বিজিবি জানায়, এর আগে একই দিনে সদর উপজেলার ঘাগড়া সীমান্ত ও ভজনপুর এলাকা থেকে আরও ১৭ জনকে পুশইন করা হয়, যাদের থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত দুই-তিন মাসে ১০ দফায় পঞ্চগড় জেলার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে নারী-শিশুসহ ১৫৭ জন বাংলাদেশিকে পুশইন করেছে বিএসএফ। এবার ১১তম দফায় আনুষ্ঠানিক হস্তান্তরের পাশাপাশি ৯ জনকে বাংলাদেশে পাঠাল ভারতীয় বাহিনী।
‘নতুন বাংলাদেশ’ গঠনে ২৪ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। গতকাল রোববার বিকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এ ইশতেহার ঘোষণা করেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
নাহিদ ইসলাম বলেন, গত বছর এই দিনে এই শহীদ মিনার থেকে আমরা ঘোষণা করেছিলাম ফ্যাসিবাদ ব্যবস্থা বিলোপের সেই ঐতিহাসিক এক দফা। ঐতিহাসিক এক দফা কোনো ব্যক্তি, দলের বা কোনো সংগঠনের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়নি।
তিনি বলেন, এক দফা ঘোষণা করা হয়েছিল বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের অভ্যুত্থানকারী ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে। এক দফার প্রকৃত ঘোষক বাংলাদেশের জনগণ বাংলাদেশের অভ্যুত্থানকারী ছাত্র-জনতা এবং শহীদ ভাই-বোনেরা।
এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, আমরা দায় ও দরদের রাজনীতির ঘোষণা দিয়েছিলাম, আমরা সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের ঘোষণা দিয়েছিলাম। বলেছিলাম আমরা এমন একটা রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠা করব যেখানে স্বৈরতন্ত্র আর কখনোই ফিরে আসতে পারবে না।
তিনি আরও বলেন, জুলাই পদযাত্রায় দেশের বিভিন্ন জায়গায় বলেছি ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন হয়েছে, কিন্তু ফ্যাসিবাদী বন্দোবস্তের বিলোপ আমরা ঘটাতে পারিনি।
এরপর নাহিদ ইসলাম এনসিপির ২৪ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেন। ২৪ দফা হলো- (১) নতুন সংবিধান ও সেকেন্ড রিপাবলিক, (২) জুলাই অভ্যুত্থানের স্বীকৃতি ও বিচার, (৩) গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সংস্কার, (৪) ন্যায়ভিত্তিক বিচারব্যবস্থা ও আইন সংস্কার, (৫) সেবামুখী প্রশাসন ও দুর্নীতি দমন, (৬) জনবান্ধব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, (৭) গ্রাম পার্লামেন্ট ও স্থানীয় সরকার, (৮) স্বাধীন গণমাধ্যম ও শক্তিশালী নাগরিক সমাজ, (৯) সার্বজনীন স্বাস্থ্য, (১০) জাতিগঠনে শিক্ষানীতি (১১) গবেষণা, উদ্ভাবন ও তথ্যপ্রযুক্তি বিপ্লব, (১২) ধর্ম, সম্প্রদায় ও জাতিসত্বার মর্যাদা, (১৩) নারীর নিরাপত্তা, অধিকার ও ক্ষমতায়ন, (১৪) মানবকেন্দ্রিক ও কল্যাণমুখী অর্থনীতি, (১৫) তারুণ্য ও কর্মসংস্থান, (১৬) বহুমুখী বাণিজ্য ও শিল্পায়ন নীতি, (১৭) টেকসই কৃষি ও খাদ্য সার্বভৌমত্ব, (১৮) শ্রমিক-কৃষকের অধিকার, (১৯) জাতীয় সম্পদ ব্যবস্থাপনা, (২০) নগরায়ন, পরিবহন ও আবাসন পরিকল্পনা, (২১) জলবায়ু সহনশীলতা ও নদী-সমুদ্র রক্ষা, (২২) প্রবাসী বাংলাদেশির মর্যাদা ও অধিকার, (২৩) বাংলাদেশপন্থি পররাষ্ট্রনীতি ও (২৪) জাতীয় প্রতিরক্ষা কৌশল।
ঘোষণা শেষে নাহিদ ইসলাম বলেন, আজ থেকে ঠিক এক বছর আগে এই শহীদ মিনারেই আমরা শপথ নিয়েছিলাম এই দেশকে স্বৈরাচারের হাত থেকে মুক্ত করব। আপনারা সেই আহ্বানে সাড়া দেওয়ায় আমরা সবাই মিলে ফ্যাসিবাদী শাসনকে পরাজিত করেছি এবং দেশের ওপর নিজেদের কর্তৃত্ব ফিরিয়ে নিয়েছি। আজ আবারও এই শহীদ মিনার থেকে আমরা আপনাদের আহ্বান জানাচ্ছি– আসুন আমরা সবাই মিলে আমাদের সেকেন্ড রিপাবলিক গঠনে এই ঐতিহাসিক ২৪ দফাকে বাস্তবে রূপান্তর করে সকল নাগরিকের স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ গড়ি।
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে হওয়া জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন চিফ প্রসিকিউটর।
গতকাল রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ এই সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। সূচনা বক্তব্যে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা সব অপরাধের নিউক্লিয়াস।
সূচনা বক্তব্যের আগে ট্রাইব্যুনালে বক্তব্য দেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। ট্রাইব্যুনালে তিনি বলেন, এ মামলার আসামিদের প্রচলিত আইনে সর্বোচ্চ সাজা চান। শেখ হাসিনার পাশাপাশি এ মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও আসামি।
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন এই মামলায় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় স্বীকার করে নিয়েছেন।
একই সঙ্গে আবদুল্লাহ আল-মামুন এই মামলায় ‘অ্যাপ্রুভার’ (দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্য বিবরণ প্রকাশ করেন যে আসামি, সাধারণত তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে পরিচিত) হয়েছেন।
এদিকে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় প্রথম একজন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন। গতকাল দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১–এ এই সাক্ষ্য দেন খোকন চন্দ্র বর্মণ নামের একজন মাইক্রোবাসচালক।
গতকালের জবানবন্দিতে খোকন চন্দ্র বর্মণ বলেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় পুলিশ তাঁর মাথা লক্ষ্য করে গুলি করে। গুলি তাঁর চোখ, নাক ও মুখে লাগে। এ সময় সাক্ষী খোকন চন্দ্র বর্মণ মাস্ক খুলে মুখ দেখান। দেখা যায়, তার বাঁ চোখ, নাক ও মুখ পুরোটাই বিকৃত হয়ে গেছে।
খোকন চন্দ্র বর্মণ বলেন, ‘যারা হাজার হাজার মানুষকে মেরেছিল, তাদের জন্য শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ও সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান—তারা দায়ী এবং আমি তাদের বিচার চাই।’
শেখ হাসিনার পাশাপাশি এই মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও আসামি। পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন এই মামলায় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় স্বীকার করে নিয়েছেন। সেই সঙ্গে তিনি এই মামলায় ‘অ্যাপ্রুভার’ (দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্য বিবরণ প্রকাশ করেন যে আসামি; সাধারণত তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে পরিচিত) হয়েছেন।
এই মামলায় পলাতক শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। সাক্ষী খোকন চন্দ্র বর্মণ জবানবন্দি দেওয়ার পর তাকে আমির হোসেন জেরা করেন। জেরায় সাক্ষীকে আমির হোসেন প্রশ্ন করেন, ‘আপনি যে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে দায়ী করলেন, তার দলিল আছে?’ জবাবে খোকন চন্দ্র বর্মণ বলেন, ‘না।’
জেরায় সাক্ষীকে আমির হোসেন আরেকটি প্রশ্নে বলেন, ‘আন্দোলনকারী ছাত্র–জনতা পুলিশের ওপর আক্রমণ করে। এতে যাত্রাবাড়ী থানার ১৩ থেকে ১৪ জন পুলিশ সদস্য নিহত হন। আরও অনেক পুলিশ সদস্য আহত হন। পুলিশের ওপর হামলায় ছাত্র–জনতা দেশি অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেছিলেন এবং সেই অস্ত্রের আঘাতে আপনি আহত হয়েছেন।’ জবাবে খোকন চন্দ্র বর্মন বলেন, ‘এসব কথা অসত্য।’
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। সূচনা বক্তব্যে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা সব অপরাধের নিউক্লিয়াস।
সূচনা বক্তব্যের আগে ট্রাইব্যুনালে বক্তব্য দেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। ট্রাইব্যুনালে তিনি বলেন, এ মামলার আসামিদের প্রচলিত আইনে সর্বোচ্চ সাজা চান।
মামলার বিচারের কার্যক্রম সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছে। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে।
জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) ১৪৫ দলের শর্ত পূরণের সময় শেষ হয়েছে গতকাল রোববার বিকাল ৫টায়। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দেওয়া নির্ধারিত সময়ে মাত্র ৪৩টি নতুন আবেদন করা রাজনৈতিক দল তাদের নথি জমা দিয়েছে। নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
এই নিয়ে দুই ধাপে মোট ৮০টি দল শর্ত পূরণের নথি জমা দিয়েছে।
ইসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, গত ২২ জুন পর্যন্ত ১৪৫টি দল নিবন্ধন পেতে ১৪৭টি আবেদন করেছিল। তবে প্রাথমিক বাছাইয়ে কোনো দলই শর্ত পূরণ করতে পারেনি। তাই জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) ১৪৪টি দলকেই প্রয়োজনীয় ঘাটতি পূরণে ১৫ দিন সময় দেওয়া হয়েছিল। গতকাল রোববার বিকাল ৫টায় সেই সময় শেষ হয়েছে।
আইনানুযায়ী, নিবন্ধন পেতে ইচ্ছুক দলের একটি কেন্দ্রীয় কমিটি, এক তৃতীয় জেলা ও ১০০টি উপজেলা কমিটি এবং প্রতিটি কমিটিতে ২০০ ভোটারের সমর্থনের প্রমাণ থাকতে হয়। এছাড়া কোনো দলের কেউ আগে সংসদ সদস্য থাকলে বা আগের নির্বাচনের পাঁচ শতাংশ ভোট পেলেও নিবন্ধন পাওয়ার যোগ্যতা হিসেবে ধরা হয়। এই প্রধান শর্তগুলো ছাড়াও বেশকিছু নিয়ম-কানুন মেনে আবেদন করতে হয়। প্রাথমিক বাছাইয়ে এসব নিয়ম-কানুনগুলোই সাধারণত খেয়াল করা হয়।
নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় দলগুলোর আবেদন পাওয়ার পর কমিশন প্রথমে এগুলো প্রাথমিক বাছাই করে। এরপর সেই দলগুলোর তথ্যাবলি সরেজমিনে তদন্ত শেষে বাছাই সম্পন্ন করে দাবি আপত্তি চেয়ে বিজ্ঞপ্তি দেয় কমিশন। সেখানে কোনো আপত্তি এলে শুনানি করে তা নিষ্পত্তি করা হয়। আর কোনো আপত্তি না থাকলে সংশ্লিষ্ট দলগুলো নিবন্ধন সনদ প্রদান করে ইসি। নিবন্ধন ছাড়া কোনো দল নিজ প্রতীকে ভোটে প্রার্থী দিতে পারে না।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর আরোপিত বাড়তি শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করার ঘোষণা করা স্বত্বেও বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক খাতের অস্বস্তি পুরোপুরি দূর হয়েছে কি-না, কিংবা কতটা দূর হলো সেই প্রশ্ন উঠছে।
এই খাতের ব্যবসায়ী ও বিশ্লেষকরা বলছেন, গার্মেন্ট বিষয়ে বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশগুলোর জন্য এই বাড়তি শুল্ক প্রায় বাংলাদেশের মতোই রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। পাশাপাশি অন্যতম প্রতিযোগী দেশ ভারতের জন্য অতিরিক্ত শুল্ক ২৫ শতাংশ থাকাটা বাংলাদেশের জন্য তা আপাতত স্বস্তির।
তবে তারা মনে করেন, এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠবে আমদানি শুল্কের কারণে মার্কিন বাজারে পণ্যের দাম বেড়ে গেলে ক্রেতাদের চাহিদা কমে আসা এবং সেটিকে মোকাবিলায় উৎপাদক দেশ হিসেবে পণ্য মূল্য কীভাবে কমিয়ে আনা যাবে সেই উপায় খুঁজে বের করায়।
তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ গত শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র একটি ভারসাম্যপূর্ণ শুল্ক কাঠামো ঘোষণা করায় তাদের চার মাসের উদ্বেগের অবসান হয়েছে।
‘বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যে ২০ শতাংশ শুল্ক অবধারিতভাবে আমাদের পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়াবে, যেখানে শিল্পগুলো আগে থেকেই ঊর্ধ্বমুখী উৎপাদন ব্যয়ের সঙ্গে তাল মেটাতে প্রানান্তকরভাবে যুদ্ধ করছে। এক্ষেত্রে সরকারকেও এগিয়ে আসতে হবে,’ বলেছেন বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান।
তবে বাংলাদেশে ব্যবসায়ী ও নীতিনির্ধারকদের এখনো দৃষ্টি থাকবে চীনের ওপর কতটা বাড়তি শুল্ক আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। এর আগে বাইডেন প্রশাসন দেশটির ওপর যে অতিরিক্ত শুল্ক দিয়েছিল তা এখনো বহাল আছে।
উল্লেখ্য, গত জানুয়ারিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট পদে আসার পর যুক্তরাষ্ট্র ও চীন উভয়ই একে অপরের পণ্যে পাল্টাপাল্টি শুল্ক বাড়াতে থাকে যা ১০০ শতাংশের ওপরে পৌঁছে যায়।
‘এ ধরনের শুল্কে বিশ্ব অর্থনীতি ও বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাবের সম্ভাবনা থাকে। অন্যদিকে চীনের ওপর কতটা শুল্ক আসে সেদিকেও দৃষ্টি রাখতে হবে,’ বলেছেন অর্থনীতিবিদ মোস্তাফিজুর রহমান।
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের ওপর চূড়ান্ত শুল্কহার ঘোষণা করেন। তাতে বাংলাদেশের পাল্টা শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে কমে হয় ২০ শতাংশ। এই শুল্ক কার্যকরের সময়সীমাও এক সপ্তাহ বাড়িয়ে ৭ আগস্ট নির্ধারণ করেছেন ট্রাম্প।
গত এপ্রিলে বাংলাদেশের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক ঘোষণা করেছিলেন ট্রাম্প, পরে জুলাইতে তা ৩৫ শতাংশে নামিয়ে আনেন।
বিজিএমইএ তাদের বিবৃতিতে জানিয়েছে, এর আগে বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রে ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ হারে শুল্ক দিতে হতো। এখন যে ২০ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক নির্ধারিত হয়েছে তার ফলে বাংলাদেশের মোট শুল্কের হার দাঁড়িয়েছে ৩৬ দশমিক ৫ শতাংশে, যা সুনির্দিষ্টভাবে বিভিন্ন পণ্যের জন্য বিভিন্ন হারে প্রযোজ্য হবে।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে চীনের পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ তার নিজের অবস্থান ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে।
আর বাংলাদেশের রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর হিসাবে, যুক্তরাষ্ট্রই বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের একক বৃহত্তম বাজার। আবার যত পণ্য দেশটিতে বাংলাদেশ রপ্তানি করে তার ৮৬ শতাংশের বেশি হলো তৈরি পোশাক।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশ রপ্তানি করেছে ৭ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন বা ৭৫৪ কোটি ডলারের গার্মেন্ট পণ্য।
কিন্তু গত এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্র ‘লিবারেশন ডে ট্যারিফ’ নামে নতুন শুল্ক ঘোষণা করেছিলো, যাতে বাংলাদেশের ওপর ৩৭ শতাংশ ধার্য করা হয়েছিল। এটি তখন নীতিনির্ধারক ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ তৈরি করে বাংলাদেশে, কারণ তখন ভারতের ওপর ২৬ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার ওপর ৩২ শতাংশ ও পাকিস্তানের ওপর ৩০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল।
এরপর সরকারের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা শুরু হয় এবং এক পর্যায়ে আলোচনায় ব্যবসায়ীদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য ২০ শতাংশ শুল্ক ধার্য করায় উদ্বেগের অবসান হয়েছে বলে মনে করেন বিজিএমই সভাপতি মাহমুদ হাসান খান।
‘তবে আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ নির্বাহী আদেশে স্পষ্ট বলা আছে, কিছু দেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বা নিরাপত্তা চুক্তি আলোচনা এখনো চলমান রয়েছে, যেগুলো সম্পাদিত হলে এসব দেশের শুল্ক আরো কমতে পারে,’ সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন মাহমুদ হাসান।
পোশাক খাতের ব্যবসায়ী ও বিজিএমইএর একজন পরিচালক ফয়সাল সামাদ বলছেন, ভারত থেকে শুল্ক কম আর প্রতিযোগী দেশ বিশেষ করে ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া ও পাকিস্তানের কাছাকাছি- এটাই আপাতত স্বস্তির বিষয় বলে তারা মনে করছেন।
‘কিন্তু এখন দেখতে হবে ক্রেতারা এটা গ্রহণ করে কি-না। তারা দাম কমাতে বলে কি-না। আমার ধারণা ক্রেতাদের সাথে দরকষাকষি এখন আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াবে। কৌশলগত নেগোশিয়েশনটা করা জরুরি হবে,’ বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।
ব্যবসায়ীদের মতে, গত কয়েক বছরে কারখানা খরচ বেড়েছে এবং এখন যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্ক এলো। ফলে ইন্ডাস্ট্রি কস্ট (শিল্প খরচ বা উৎপাদন ব্যয়) পর্যালোচনা করতে হবে।
‘তবে এটা (যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ২০ শতাংশে সুরাহা হওয়া) একটা সুযোগও হতে পারে। এটাকে কাজে লাগাতে পারলে বাজার সম্প্রসারণের সুযোগ তৈরি করা সম্ভব,’ বলছিলেন সামাদ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের হিস্যা নিয়ে পোশাক খাতে বাংলাদেশের যারা প্রতিদ্বন্দ্বী তাদের নিয়ে উদ্বেগ কমলেও চীনের বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত জানায়নি যুক্তরাষ্ট্র।
চীনের ওপর এখনো উচ্চ শুল্ক আছে এবং সেটি আরও বাড়লে সেখান থেকে সরে পড়া ক্রয়াদেশ কিছু বাংলাদেশের দিকেও আসবে বলে তারা মনে করেন।
‘চীন নিয়ে অনিশ্চয়তা, দাম বাড়ার কারণে মার্কিন বাজার সংকোচন ও বিশ্ব বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার শঙ্কা নিয়ে অস্বস্তি এখনো থেকেই গেছে। অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে দেড় ডলারের শার্ট হয়তো সাড়ে তিন ডলার হবে। এতে করে চাহিদা কমে যাওয়ার শঙ্কা আছে,’ বলছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান।
বিজিএমই অবশ্য মনে করছে, বাংলাদেশের মার্কিন রপ্তানির প্রায় ৭৫ শতাংশ হলো তুলাভিত্তিক পোশাক। এটিকে ব্যবহার করেও আরও কিছু শুল্ক ছাড়ের সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে।
'শুল্ক সংক্রান্ত নির্বাহী আদেশে বলা আছে, যদি নূন্যতম ২০ শতাংশ আমেরিকার কাঁচামাল (যেমন আমেরিকার তুলা) ব্যবহার করা হয়, তাহলে আমেরিকার কাঁচামালের মূল্যের ওপর এই অতিরিক্ত ২০ শতাংশ শুল্ক প্রযোজ্য হবে না। অর্থাৎ আমেরিকার কাঁচামাল ব্যবহার করলে আমরা বাড়তি কিছু শুল্ক ছাড় পাব,’ সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান।
তবে তৈরি পোশাক খাতের মালিকরা এটি মানছেন যে, শুল্ক বাধা মোকাবিলা করে তৈরি পোশাক খাতকে এগিয়ে নিতে হলে বাজার ও পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে হবে এবং নতুন ডিজাইন ও উদ্ভাবনেও বিনিয়োগ করতে হবে।
পাশাপাশি তারা মনে করেন, সরকারকেও দেখতে হবে যে ছোটো ও মাঝারি কারখানাগুলো যেন ব্যবসা থেকে ছিটকে না পড়ে।
প্রসঙ্গত, সরকারের দিক থেকে আগেই জানানো হয়েছে যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার ক্ষেত্রে পোশাক শিল্পকে রক্ষাই ছিল তাদের অগ্রাধিকার।
শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে দেওয়া বার্তায় বলা হয়, বাংলাদেশ ২০ শতাংশ শুল্কহার পেয়েছে—যা তার মূল পোশাক খাতের প্রতিযোগীদের (যেমন শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনাম, পাকিস্তান এবং ইন্দোনেশিয়া, যারা ১৯ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক পেয়েছে) অনুরূপ।
এর ফলে, পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের আপেক্ষিক প্রতিযোগিতা অক্ষুণ্ণ থাকছে।
ওই বার্তায় বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের প্রধান আলোচক ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমানকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, ‘আমরা একটি সম্ভাব্য ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক এড়াতে সক্ষম হয়েছি। এটি আমাদের পোশাক খাত এবং এর ওপর নির্ভরশীল লাখ লাখ মানুষের জন্য সুখবর। আমরা আমাদের বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা অক্ষুণ্ণ রেখেছি এবং বিশ্বের বৃহত্তম ভোক্তা বাজারে প্রবেশের নতুন সুযোগ তৈরি করতে পেরেছি।’
সূত্র: বিবিসি
বহুল প্রতীক্ষিত জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়া চূড়ান্ত করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। কাল ৫ আগস্ট মঙ্গলবার বিকাল ৫টায় আনুষ্ঠানিকভাবে এই ঘোষণাপত্র জাতির সামনে উপস্থাপন করা হবে।
তথ্য অধিদপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়া চূড়ান্ত করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ৫ আগস্ট, বিকাল ৫টায় জুলাই ঘোষণাপত্র জাতির সামনে উপস্থাপন করা হবে।
জুলাই ঘোষণাপত্রে দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আগামী নির্বাচন, প্রশাসনিক কাঠামোতে সম্ভাব্য পরিবর্তন এবং অর্থনৈতিক সংস্কারসহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু দিক তুলে ধরা হবে।
এ ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তার অবস্থান, দৃষ্টিভঙ্গি এবং ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা পরিষ্কারভাবে জানাবে বলে জানা গেছে। এটি হবে সরকারের একটি নীতিগত রূপরেখা, যা সামনের দিনগুলোর জন্য দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক দিকনির্দেশনা হিসেবে কাজ করবে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিজেই এই ঘোষণাপত্র পাঠ করবেন।
প্রসঙ্গত, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর দেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়, যার মূল ম্যান্ডেট হলো রাষ্ট্রের বিভিন্ন কাঠামোগত সংস্কার এবং জনগণের দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করা। এই প্রেক্ষাপটে জুলাই ঘোষণাপত্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দলিল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে ৫ আগস্ট বিকেল ৫টায় উপস্থাপন করা হবে আলোচিত ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’। এই অনুষ্ঠানে সারাদেশ থেকে ছাত্র-জনতাকে আনতে আট জোড়া বিশেষ ট্রেন ভাড়া করেছে সরকার। এই ট্রেনগুলোতে বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষ দুপুরের মধ্যে ঢাকায় আসবেন এবং কর্মসূচি শেষে ফিরে যাবেন নিজ নিজ গন্তব্যে। ট্রেন ভাড়ায় ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩০ লাখ ৪৬ হাজার টাকা, যা বহন করবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
আজ রোববার জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে ট্রেনের জন্য চিঠি দেয়। মন্ত্রণালয় তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি রেলপথ মন্ত্রণালয়ে পাঠালে সেদিনই আটটি ট্রেনের ব্যবস্থা নেয় রেল কর্তৃপক্ষ।
রেলপথ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নির্ধারিত ভাড়ায় এসব বিশেষ ট্রেন পরিচালিত হবে এবং তা নিয়মিত রেল সেবায় বিঘ্ন না ঘটিয়ে সম্পন্ন করা হবে।
রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, ১৬টি কোচের সমন্বয়ে তৈরি করা একটি বিশেষ ট্রেন চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসবে। এতে আসনসংখ্যা হবে ৮৯২। এর বাইরে দাঁড়িয়ে আরও অনেক মানুষ আসতে পারবেন। এই ট্রেনের জন্য রেল কর্তৃপক্ষ ভাড়া নির্ধারণ করেছে ৭ লাখ টাকার কিছু বেশি। গাজীপুরের জয়দেবপুর থেকে আরেকটি বিশেষ ট্রেন চলবে ৮টি কোচ নিয়ে। এতে যাত্রী আসন থাকবে ৭৩৬টি। এই ট্রেনের জন্য ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে সাড়ে ৭২ হাজার টাকার মতো।
নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা পথে ১০টি কোচ নিয়ে বিশেষ ট্রেনটি চলবে। এতে আসনসংখ্যা ৫১০। এই ট্রেনের জন্য সাড়ে ৫৬ হাজার টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। নরসিংদী থেকে ঢাকায় আসবে ১২ কোচের একটি ট্রেন। এটিতে আসনসংখ্যা ৬৫২। ভাড়া ধরা হয়েছে প্রায় ৯৫ হাজার টাকা। সিলেট থেকে ১১টি কোচ নিয়ে বিশেষ ট্রেন আসবে। এর কোচ সংখ্যা ১১ এবং ট্রেনটিতে ৫৪৮টি আসন থাকবে। এই ট্রেনের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ২৩ হাজার টাকা। রাজশাহী থেকে ঢাকার পথে ট্রেন আসবে ৭টি কোচ নিয়ে। এতে আসন থাকবে ৫৪৮টি। এই ট্রেনের জন্য ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। ১৪টি কোচ নিয়ে একটি বিশেষ ট্রেন আসবে রংপুর থেকে। এতে যাত্রী আসন থাকবে ৬৩৮টি। এই ট্রেনের জন্য ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় সাড়ে ১০ লাখ টাকা। ফরিদপুরের ভাঙা থেকে ৭টি কোচ নিয়ে একটি ট্রেন আসবে। এতে আসনসংখ্যা হবে ৬৭৬। এই ট্রেনের ভাড়া প্রায় ২ লাখ ৬১ হাজার টাকা।
দূরবর্তী ট্রেন যেমন রংপুর, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও সিলেট থেকে ট্রেনগুলো ভোর বা রাতের দিকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসবে। কাছাকাছি জেলা যেমন গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও ফরিদপুর থেকে ট্রেনগুলো দুপুরের আগে ঢাকায় পৌঁছাবে। সব ট্রেনকেই দুপুর ২টা থেকে ৩টার মধ্যে ঢাকায় পৌঁছাতে হবে।
কর্মসূচি শেষে রাত ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে ট্রেনগুলো ফিরে যাবে।
এ ধরনের ট্রেন ব্যবস্থাপনায় সমালোচনার জবাবে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম বলেন, ‘রাজনৈতিক দলের আবেদনে যেমন ট্রেন ভাড়া দেওয়া হয়, এবার সরকারের একটি মন্ত্রণালয় থেকে অনুরোধ এসেছে। আমরা টাকা পাচ্ছি, তাই ট্রেন ভাড়া দিয়েছি।’
রেল কর্তৃপক্ষ জানায়, বিশেষ ট্রেন পরিচালনার ক্ষেত্রে স্বাভাবিক নিয়মে ৩০ শতাংশ অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হয় এবং এতে নিয়মবহির্ভূত কিছু করা হয়নি।
জুলাই-আগস্ট মাসজুড়ে অভ্যুত্থান বর্ষপূর্তির কর্মসূচিতে অংশ নিতে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদল ২০ বগির একটি ট্রেন ভাড়া করেছে, যাতে ১,১২৬ জন আসন রয়েছে। একইভাবে, ১৯ জুলাই জামায়াতে ইসলামী রাজধানীর সমাবেশে অংশ নিতে ময়মনসিংহ, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম থেকে চার জোড়া বিশেষ ট্রেন ভাড়া করেছিল, যার ব্যয় হয় প্রায় ৩২ লাখ টাকা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিতর্কের মুখে রেল কর্তৃপক্ষ জানায়, কোনো দল বা মন্ত্রণালয়ের আবেদনে রেল ভাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে নিয়ম মেনে এবং অতিরিক্ত ভাড়ার ভিত্তিতে ট্রেন বরাদ্দ দেওয়া হয়।
বিদ্যুৎ বিভাগ কর্তৃক আজ বিদ্যুৎ ভবনের মুক্তি হলে 'জুলাই পুনর্জাগরণ অনুষ্ঠানমালা ২০২৫' উপলক্ষে এক আলোচনা সভা, অনুদানের চেক বিতরণ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এই অনুষ্ঠানে জুলাই শহীদ পরিবার এবং আহত জুলাই যোদ্ধাদের সম্মান জানানো হয়।
অনুষ্ঠানে জুলাই শহীদ ও আহত যোদ্ধাদের পরিবারের সদস্যরা তাদের অভিজ্ঞতা ও সংগ্রামের কথা তুলে ধরেন।
শহীদ মোঃ জান শরিফের স্ত্রী রহিদুন সাজবা বানু স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন যে, তার মেয়ের পিতৃস্নেহ এবং তাদের পরিবারের উপর ঘটে যাওয়া নির্মমতা কোনো অনুদান দিয়ে পূরণ করা সম্ভব নয়। তিনি আরও বলেন, শহীদরা দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন, কিন্তু বর্তমানে তাদের পরিবারের খোঁজ কেউ রাখছে না।
আহত জুলাই যোদ্ধা মোঃ ফয়েজ, যিনি একটি চোখ হারিয়েছেন, তার উপর ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ঘটনার বর্ণনা দেন। আরেক আহত যোদ্ধা মোঃ রাকিব হোসেন বলেন, তাদের উপর ঘটে যাওয়া ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে উপযুক্ত বিচার এবং আহতদের যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব ফারজানা মমতাজ। তিনি শহীদদের আত্মত্যাগের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান এবং তাদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। তিনি শহীদ ও আহতদের আত্মত্যাগের বিষয়টি উপলব্ধি করে দুর্নীতিমুক্ত, বৈষম্যহীন ও ন্যায়বিচার ভিত্তিক সমাজ গঠনে সরকারি-বেসরকারি সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান। তিনি ভবিষ্যতে জুলাই শহীদ পরিবার ও আহতদের পাশে থাকারও আশ্বাস দেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) মোঃ সবুর হোসেন। এছাড়া, অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) এবং বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যানও স্মৃতিচারণমূলক আলোচনায় অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে জুলাই আন্দোলনে শহীদ হওয়া ১৭টি পরিবারকে এবং দৃষ্টিশক্তি হারানো ৪ জন ও গুরুতর আহত ৪ জনসহ মোট ২৫ জনকে ১ লক্ষ টাকা করে মোট ২৫ লক্ষ টাকার চেক প্রদান করা হয়। এর আগে, বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে গত ২০ এপ্রিল, ২০২৫ তারিখে 'জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন'-কে ১ কোটি ৫ লক্ষ টাকার চেক প্রদান করা হয়েছিল।
অনুষ্ঠানের শেষে জুলাই শহীদদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত, আহত যোদ্ধাদের দ্রুত সুস্থতা এবং দেশের মানুষের কল্যাণ কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মোঃ মাহফুজ আলম বলেছেন, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবিত ১২টি সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে সরকার কাজ করছে। চলতি মাসের (আগস্ট, ২০২৫) মধ্যে এসব সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন হবে বলে তিনি আশাপ্রকাশ করেন। রবিবার (৩রা আগস্ট) রাজধানীর তথ্য ভবনে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহিদ সাংবাদিক পরিবার এবং আহত ও সাহসী সাংবাদিকদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সাংবাদিকদের সুরক্ষা অধ্যাদেশ প্রণয়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অধ্যাদেশ প্রণয়নের জন্য একটি প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। অধ্যাদেশে সাংবাদিকতার পরিধি নিয়েও একটি বিতর্ক আছে। সবমিলিয়ে সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে পরামর্শ করে এই অধ্যাদেশ প্রণয়ন করা সম্ভব হবে বলেও তিনি আশাপ্রকাশ করেন। নবম ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়নে সরকার কাজ করছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়নের সঙ্গে কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সমূহের সঙ্গে কথা বলে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেই ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়নের কাজ সম্পন্ন করা হবে। এর পাশাপাশি সরকারি উদ্যোগে সাংবাদিকদের দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। উপদেষ্টা সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণ গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
সাংবাদিকদের চাকরিচ্যুতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, হঠাৎ করে সাংবাদিকদের চাকরিচ্যুত করার বিষয়টি কীভাবে সমাধান করা যায়—সে বিষয়ে সরকার চিন্তা করছে। সাংবাদিকদের আর্থিক নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, সাংবাদিকদের যদি সম্মানজনক জীবন দেওয়া যায়, তাহলে তাঁদের পক্ষপাতমূলক আচরণ ছেড়ে দেওয়ার একটি সুযোগ থাকবে। তিনি সাংবাদিকদের সম্মানজনক বেতন প্রদানের জন্য গণমাধ্যম কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।
তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা বলেন, গণমাধ্যমপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত সাংবাদিকদের মালিকানার ভাগ দেওয়া যায় কিনা—সেই বিষয়টি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এটি করা সম্ভব হলে সাংবাদিকরা ক্ষমতায়িত হবেন এবং মালিক ও সাংবাদিকদের মধ্যে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠিত হবে। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের চলমান কার্যক্রম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, টেলিভিশন ও অনলাইন গণমাধ্যমকে একটি ফ্রেমওয়ার্কের মধ্যে আনার জন্য সরকার সম্প্রচার নীতিমালা প্রণয়নের কথা ভাবছে। এছাড়া তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সঙ্গে পরামর্শ করে ওটিটি ও অনলাইন গণমাধ্যমের জন্য নীতিমালা প্রণয়ন করা হচ্ছে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে গণমাধ্যমের ভূমিকা তুলে ধরে তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানের সময় কিছু সংবাদপত্র নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করেছে। তবে কারফিউ চলাকালীন কিছু টেলিভিশনের ভূমিকা ছিল পক্ষপাতমূলক। গণঅভ্যুত্থানে মোবাইল সাংবাদিকতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অভ্যুত্থান চলাকালীন অনেকে মোবাইল দিয়ে সাংবাদিকতা করেছেন এবং একইসঙ্গে অভ্যুত্থানেও অংশ নিয়েছেন। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ফটো সাংবাদিকদের ভূমিকার প্রশংসা করে তিনি বলেন, তাঁরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গণঅভ্যুত্থানের বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহের ছবি তলেছেন। যেসব ছবি দেখলে অনেক গল্প ভেসে উঠে।
মাহফুজ আলম বলেন, অনেক সাংবাদিক গণমাধ্যমপ্রতিষ্ঠানের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে নিজেদের বিবেকের দায় থেকে গণঅভ্যুত্থানের সংবাদ প্রচার করেছেন। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে গণমাধ্যমপ্রতিষ্ঠানের চেয়ে ব্যক্তি সাংবাদিকদের ভূমিকা অনেক বেশি।
কিছু গণমাধ্যমের সমালোচনা করে উপদেষ্টা বলেন, যেসব গণমাধ্যম জুলাই গণঅভ্যুত্থানে বিতর্কিত ভূমিকা পালন করেছে, তাদের প্রতি মানুষের ঘৃণা রয়েছে। বিগত সরকারের শাসনামলে যেসব গণমাধ্যম দুর্নীতি ও পক্ষপাতমূলক আচরণ করেছে, জাতির সামনে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করা উচিত।
সরকারের পক্ষ থেকে ফোন করে কোনো গণমাধ্যমকে প্রভাবিত করা হচ্ছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, গণমাধ্যম সরকারের চেয়ে জনগণের নিকট বেশি দায়বদ্ধ থাকবে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হলে গণমাধ্যমকে দায়িত্বশীল ও জবাবদিহি ব্যবস্থায় যেতে হবে। তিনি গণমাধ্যমপ্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করতে সংশ্লিষ্ট সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আলম বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আমরা যেমন খুব ভালো সাংবাদিকতা দেখেছি, তেমনি খুব বাজে সাংবাদিকতাও দেখেছি। গণঅভ্যুত্থানে অনেক সাংবাদিক জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাংবাদিকতা করেছেন, কেউ কেউ জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন। অন্যদিকে একদল সাংবাদিক আন্দোলনকারীদের হত্যা করার জন্য সরকারপ্রধানকে উদ্বুদ্ধ করেছেন। যা পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে মাঠের সাংবাদিক ও মফস্সল সাংবাদিকরা ব্যক্তিগত নিরাপত্তাব্যবস্থা ছাড়াই সাহসের সঙ্গে সাংবাদিকতা করেছেন। তাঁরা বাংলাদেশের সাংবাদিকতাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। তিনি সাংবাদিকদের সম্মানজনক বেতন এবং ব্যক্তিগত নিরাপত্তাসামগ্রী প্রদানের জন্য গণমাধ্যমপ্রতিষ্ঠানসমূহের প্রতি আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ আবদুল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. কাউসার আহাম্মদ, প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ, দ্য ফাইনান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ, শহিদ সাংবাদিক তাহির জামান প্রিয়র মা শামসি আরা জামান, শহিদ আবু সাঈদ হত্যার ভিডিও ধারণকারী সাংবাদিক তাওহীদুল হক সিয়াম এবং দ্য ডেইলি স্টারের ফটো সাংবাদিক ইমরান হোসেন।
অনুষ্ঠানে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহিদ পাঁচ সাংবাদিকের পরিবার এবং আহত ও সাহসী ১৯২ জন সাংবাদিককে সম্মাননা প্রদান করা হয়। সম্মাননার পাশাপাশি আর্থিক সম্মানি হিসাবে মোট ৫৬ লক্ষ টাকা প্রদান করা হয়।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ রোববার নৌবাহিনী সদর দপ্তরে ‘নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনী নির্বাচনী পর্ষদ-২০২৫' এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন।
নৌবাহিনী সদর দপ্তরে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নৌবাহিনীর ক্যাপ্টেন হতে কমডোর, কমান্ডার হতে ক্যাপ্টেন ও লেঃ কমান্ডার হতে কমান্ডার এবং বিমান বাহিনীর গ্রুপ ক্যাপ্টেন হতে এয়ার কমডোর, উইং কমান্ডার হতে গ্রুপ ক্যাপ্টেন এবং স্কোয়াড্রন লীডার হতে উইং কমান্ডার পদবিতে কর্মকর্তাদের পদোন্নতির আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের সামরিক কর্মকর্তাবৃন্দের সমন্বয়ে গঠিত এ পর্ষদ, সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর ভবিষ্যৎ জ্যেষ্ঠ নেতৃত্বের জন্য যোগ্য ও দক্ষ কর্মকর্তা নির্বাচন করবেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজে সংঘটিত মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
নির্বাচনী পর্ষদ-২০২৫ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী সশস্ত্র বাহিনীর বীর সেনা, সকল শ্রেণি-পেশার মুক্তিকামী বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আত্মত্যাগকারী সকল শহীদকে।
তিনি বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর গৌরবময় ইতিহাস, সংগ্রাম ও বীরত্বের কথা স্মরণসহ শান্তিকালীন সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা এবং জাতীয় প্রয়োজনে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
তিনি দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ও নানা সংকটে বিশেষত ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত ছাত্র জনতার অভ্যুত্থান পরবর্তী দেশের নিরাপত্তা সংকটে আপামর জনসাধারণের পাশে দাঁড়িয়ে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ, দেশ গঠনে উন্নয়ন ও সেবামূলক কাজে অংশগ্রহণ করে দেশের মানুষের ভালোবাসা ও পরম নির্ভরতা অর্জন করায় নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর সদস্যদের সাধুবাদ ও অভিনন্দন জানান।
প্রধান উপদেষ্টা দেশের সমুদ্র সম্পদের সংরক্ষণ ও আহরণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন, ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক প্রাণকেন্দ্র গভীর সমুদ্র বন্দরের ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর অবদান এবং সার্বিকভাবে সুনিল অর্থনীতির বিকাশে প্রয়োজনীয় দক্ষ মানবসম্পদ গড়ার ব্যাপারে নির্দেশনা প্রদান করেন। একইসাথে তিনি দেশের সুনীল অর্থনীতির বিকাশে চলমান বিভিন্ন কর্মকাণ্ড, মহেশখালী সমন্বিত উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এমআইডিএ) প্রতিষ্ঠা, উপকূলীয় অঞ্চলের উন্নয়নসহ দেশের সার্বিক উন্নয়নে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের ওপর আলোকপাত এবং এক্ষেত্রে নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর অবদানের কথা উল্লেখ করেন।
অধ্যাপক ইউনূস নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী কর্তৃক দেশের শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদানসহ দেশমাতৃকার সেবায় ও সুরক্ষায় বাহিনী দ্বয়ের ভূমিকা ও সর্বোপরি সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকীকরণের ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেন। নৌবাহিনী এবং বিমান বাহিনী দেশের সংবিধান সমুন্নত রেখে যে কোন রাষ্ট্রীয় সংকটে এবং দুর্যোগে আর্তমানবতার সেবায় জনগণের পাশে দাঁড়ানোর এই ধারা ভবিষতেও অব্যাহত রাখবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন।
তিনি বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর নেতৃত্বে দেশপ্রেমিক, মেধাবী, দক্ষ, পেশাদার, সৎ, মানবিক এবং নৈতিক গুণাবলীসম্পন্ন যোগ্য কর্মকর্তাদের নির্বাচনের জন্য নির্বাচনী পর্ষদকে যথাযথ নির্দেশনা দেন।
প্রধান উপদেষ্টা অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছালে নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম নাজমুল হাসান, ওএসপি, এনপিপি, এনডিসি, এনসিসি, পিএসসি এবং বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান, বিবিপি, ওএসপি, জিইউপি, এনএসডব্লিউসি, পিএসসি তাঁকে স্বাগত জানান।
নির্বাচনী পর্ষদ উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ায় নৌবাহিনী প্রধান এবং বিমান বাহিনী প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান।
নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রধান উপদেষ্টার ব্যক্তিগত সম্পৃক্ততা ও দিকনির্দেশনা নৌবাহিনী এবং বিমান বাহিনীর সকল সদস্যের কর্মস্পৃহা ও মনোবল বৃদ্ধি করেছে বলে তারা দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এছাড়াও, প্রধান উপদেষ্টার মূল্যবান দিকনির্দেশনায় নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীতে নেতৃত্ব প্রদানে দেশপ্রেম, পেশাগত দক্ষতা, মানবিক ও অধিনায়কত্বের গুণাবলির মাপকাঠিতে দক্ষ ও উপযুক্ত কর্মকর্তা নির্বাচনের মাধ্যমে সুদক্ষ বাহিনী গড়ে তোলার দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত করেন বাহিনী প্রধানগণ ।
অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট সামরিক ও বেসামরিক উধ্বর্তন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান শেষে প্রধান উপদেষ্টা নৌবাহিনী সদর দপ্তর প্রাঙ্গণে একটি বৃক্ষরোপণ করে নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী ও বাংলাদেশের সমৃদ্ধি কামনা করেন ।
সন্ধ্যা হলেই বালু নদের তীরে, নীলা মার্কেঠে জলে ওঠে লাল নীল বাতি। মাটির চুলায় লাকড়ি দিয়ে রান্না শুরু হয় হাঁসের মাংস আর বিভিন্ন ধরনের পিঠা। আর এগুলো তৈরি করেন নারীরা এবং পরিবেশনও করেন নারীরা। স্থানীয়রা বলেন, শুধু শীতেই এখানে কোটি টাকার বাণিজ্য হয়। মাংস দিয়ে পিঠা বিক্রি করে এখানে শতাধিক নারী স্বাবলম্বী।
শীত, গ্রীস্ম, শরৎ আর হেমন্ত সব মৌসুম বাঙালি জাতির বিলাসী আহার-বিহারের মৌসুমও। বছরজুড়ে হাজারো ধরনের পিঠাপুলি তৈরির ধুম পড়ে যায়। অঞ্চলভেদে ঘরে ঘরে তৈরি করা হয় কত রংবেরঙের পিঠাপুলি। তবে সময় এবং মানুষের রুচির মধ্যে অনেক পার্থক্য এসেছে। এক সময় বাহিরের খাবাওে অরুচি থাকলেও এখন ঘরে তৈরি খাবার খেয়ে আভ্যন্ত বাঙালি ক্রমেই ঘরের বাইরে তৈরি খাবার খেতেও অভ্যস্ত হয়ে উঠছে। বাঙালির এই খাদ্য রুচি পরিবর্তনের কথা ভেবে অঞ্চলভেদে গড়ে উঠেছে বিশেষ খাবারের বিশেষ রেস্টুরেন্ট। তেমনি কয়েক বছর ধরে শীত মৌসুমে শীতের খাবারের মেন্যুর শীর্ষ পর্যায়ে স্থান পেতে শুরু করেছে হাঁসের মাংস। এসব হাঁসের মাংস রান্নার ধরন ও স্বাদও আলাদা।
তেমনি রান্না করা হাঁসের মাংসের জন্য বিশেষ দ্রষ্টব্য স্থান হয়ে উঠেছে ৩০০ ফিট ঘিরে পূর্বাচলে বালু নদের পাশের ময়েজ উদ্দিন চতুর ও নীলা মার্কেট। ঢাকা-রূপগঞ্জ সড়কের ৩০০ ফিট এলাকায় স্টেডিয়ামের পাশে বালু নদের তীর ঘেঁষে গ্রামীণ এ বাজারের অবস্থান। প্রতিদিন সন্ধ্যা নামলে তরুণ-তরুণীরা, বন্ধু-বান্ধব কিংবা অনেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সেখানে হাজির হন রান্না করা হাঁসের মাংস দিয়ে চাপটি খেতে।
রাজধানী বাড্ডা থেকে এসেছেন শামিম-মুন্নি দম্পতি। তাঁরা বলেন, হাঁস তো বাসায় বসেই খাওয়া যায়। কিন্তু পূর্বাচলে খাওয়ার মজাই আলাদা। গ্রামীণ পরিবেশে খাওয়া ও ঘোরাঘুরি দুটোই হয়। ডেমড়ার মীরপাড়া থেকে এসেছেন আবিদ হাসান ও তাঁর বন্ধুরা। আবিদ বলেন, 'আমরা সব বন্ধু মোটরবাইকে করে পূর্বাচলে এসেছি হাঁসের মাংস খেতে। শুনেছি এখানকার হাঁসের মাংস খুবই স্বাদ।
গ্রামীণ আবহে সেখানকার দোকানগুলোয় হাঁসের মাংস রান্না করা হয় মাটির চুলায়। রান্নায় ব্যবহার করা হয় স্থানীয় উপকরণ। অনেক ভোজনরসিক মাটির চুলায় এই হাঁস রান্নার ঘ্রাণে বিমোহিত হন। দল বেঁধে হাঁসের মাংস দিয়ে চাপটি, রুটিসহ বিভিন্ন পিঠা খেতে পূর্বাচলে ৩০০ ফিটের ময়েজ উদ্দিন চত্বর ও নীলা মার্কেট ভোজনরসিকদের কাছে বিশেষ স্থান হয়ে উঠেছে।
সপ্তাহের ছুটির দিন শুক্র ও শনিবার ছাড়াও যেকোনো বন্ধের দিন যেখানে ভোজনরসিকদের ভিড় লেগে যায়। বিকেল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ভোজনরসিকদের এই ভিড় অব্যাহত থাকে। গ্রামীণ পরিবেশে দেশি হাঁসের মাংসের সঙ্গে আতপ চালের চাপটি কিংবা চিতই পিঠা ভোজনরসিকদের কাছে বিশেষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। শীত আসলেই শীতের খাবারের নতুন এই ট্রেন্ড হাঁসের মাংস খেতে দলে দলে ভোজনরসিকরা ছুটে যান নীলা মার্কেট এলাকায়।
৩০০ ফিট এক্সপ্রেসওয়ের পাশে পূর্বাচল সেক্টর-১-এ বিশাল এলাকাজুড়ে মার্কেকটির অবস্থান। ৩০০ ফিট এক্সপ্রেসওয়ে এমনিতেই রাজধানীবাসীর কাছে দর্শনীয় স্থান। তার পাশে নীলা মার্কেটের মজাদার হাঁসের মাংস মানুষের আগ্রহ আরো বাড়িয়ে তুলেছে। এর সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ায় রাজধানীর আশপাশের এলাকাগুলো থেকেও আনকে দল বেঁধে সেখানে হাঁসের মাংসের স্বাদ নিতে চলে আসেন। সেখানকার অসংখ্য দোকানের যেকোনো একটায় ইচ্ছামতো বসে উপভোগ করা যায় দেশি হাঁসের বিচিত্র স্বাদ। সঙ্গে রয়েছে বাহারি পিঠাও।
নীলা মার্কেট এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সড়কের দুই পাশে সারি সারি দোকান, যার প্রায় প্রতিটি দোকানেই পাওয়া যায় গরু, মুরগীসহ হাঁসের মাংস। রান্নার জন্য প্রতিদিন দুপুরের মধ্যেই শেষ করা হয় হাঁস কেটে মাংস ধোয়ার কাজ। সন্ধ্যা নামতেই শুরু হয় মাটির চুলায় রান্না। তখন সেখানকার চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে হাঁস রান্নার ঘ্রাণ। দেখা গেছে ছুটির দিনে সেখানে আলেয়ার পিঠাঘরে রান্না হচ্ছে ২৫টি হাঁস। আরো ১০টি মজুদ করা আছে। শিউলি আক্তার তাঁর পরিবারের সদস্যদের সহায়তায় প্রায় আড়াই বছর ধরে সেখানে ব্যবসা করছেন। খাবার মজাদার হওয়ায় শুরু থেকেই তিনি ভোজনরসিকদের কাছে জনপ্রিয়। কথায় কথায় জানালেন, ছুটির দিনগুলোতে বিকেল থেকে রাত ১টা পর্যন্ত তাঁর দোকানে বেচাবিক্রি চলে। ২৫০ টাকার এক প্লে¬ট মাংসে থাকে একটি লেগ পিসসহ মোট পাঁচ পিস মাংস, সাথে ঝোল। নীলা মার্কেটের বিশেষত্ব হলো সেখানকার মাংস রান্না হয় মাটির চুলায়। আর জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয় শুকনা কাঠ। এ কারণে খাবারের স্বাদ ভিন্ন হয় বলে জানালেন সেখানকার দোকানিরা।
ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে অনেকে দোকানের সাইন বোর্ডে লিখে রেখেছেন 'লাকড়ি দিয়ে মাটির চুলায় রান্না হয়।' 'নিমন্ত্রণ পিঠা ঘরে' রান্না করছিলেন খালেদা আক্তার। মাটির চুলার বিশেষত্ব সম্পর্কে তিনি বললেন, 'মাটির চুলায় কাঠ দিয়া রান্নাডা হইতে টাইম লাগে। আস্তে আস্তে রান্না হয়। এ জন্য খাবারডা মজা হয়। আর হাঁসের মাংস তো অনেক সময় নিয়া রান্না করা লাগে। মাংস শক্ত থাকলে খাইয়া মজা নাই।
'বউ-শাশুড়ি পিঠা ঘর'-এর মালিক বন্যা আক্তার বলেন, 'আমাদের লোক আছে। ওরা ময়মনসিংহ-নেত্রকোনা থেকে হাঁস দিয়ে যায়। একদম দেশি হাঁস। হাওরে যেগুলো পালা হয়। আমাদের দোকানে প্রতিদিন রান্না করা ৫০ থেকে ৬০টি হাঁসের মাংস বিক্রি হয়।'
শীতে একটু বেশি জমে ব্যবসা। 'অনন্যা খাবারঘর'-এর মালিক জাকির মিয়া বললেন, 'নীলা মার্কেটে দেড় শ থেকে দুই শ দোকান রয়েছে। যারা হাঁসের মাংস। বিক্রি করে। শীতে সবচেয়ে বেশি জমজমাট হয় এই বাবসা। শীতে হাঁস ভুনা দিয়ে পিঠা খেতে অনেকে পছন্দ করে। এই মৌসুমে এক মাসে আমার প্রায় দুই শ থেকে আড়াই শ হাঁস লাগে'।