রোববার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫
৬ পৌষ ১৪৩২

দর্শনার্থীদের জন্য সীমিত পরিসরে উন্মুক্ত হচ্ছে বঙ্গভবন

মঙ্গলবার বঙ্গভবনে সংস্কারকৃত এয়ার রেইড শেল্টার ও তোষাখানা জাদুঘরের উদ্বোধন করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
আপডেটেড
২৪ জানুয়ারি, ২০২৩ ১৯:৩৫
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা
প্রকাশিত
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা
প্রকাশিত : ২৪ জানুয়ারি, ২০২৩ ১৯:০৯

দর্শনার্থীদের জন্য সীমিত পরিসরে উন্মুক্ত হচ্ছে বঙ্গভবন। এ লক্ষ্যে নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ মঙ্গলবার বিকেলে বঙ্গভবনে সংস্কারকৃত এয়ার রেইড শেল্টার ও তোষাখানা জাদুঘরের উদ্বোধনকালে এ কথা জানান। খবর বাসসের।

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বঙ্গভবনের ভিতরে সাধারণত মানুষ আসতে পারে না, এটার ভিতরে কি আছে, না আছে, কেউ কিছুই জানে না।’

বঙ্গভবনের তোশাখানা জাদুঘরকে শতাব্দীকালের বর্ণাঢ্য ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অন্যতম নিদর্শন হিসেবে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, বঙ্গভবনের সমৃদ্ধ ইতিহাস সংরক্ষণ এবং তা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে বঙ্গভবন তোশাখানা জাদুঘর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

আবদুল হামিদ বলেন, বিদেশি রাষ্ট্রদূতসহ আগন্তুকরা পরিদর্শনকালে আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্য সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হতে সক্ষম হবেন।

রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, বঙ্গভবনের অনেক স্থাপনা দেখে মোটামুটিভাবে তারাও আকৃষ্ট হবেন এবং আমাদের বাংলাদেশ সম্পর্কে তাদের মনোভাব অনেক উঁচু হবে বলে আমার বিশ্বাস।

মুক্ত আকাশ, জলাধার আর অবারিত সবুজের সমাহারে গড়ে উঠা এই স্থাপত্যের গোড়াপত্তন ঘটে ১৯০৫ সালে। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের ফলে সৃষ্ট পূর্ববঙ্গ ও আসাম নামে একটি নতুন প্রদেশ প্রতিষ্ঠা করা হয়। তৎকালীন ঢাকার নবাব পরিবারের দিলখুশা বাগানবাড়ির দক্ষিণাংশে লেফটেন্যান্ট-গভর্নরের বাসস্থান হিসেবে অস্থায়ী লাটভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয়।
গভর্নরের অফিস ও বসবাসের জন্য নির্মিত হয় একটি কাঠের প্রাসাদ। স্যার ব্যামফিল্ড ফুলার পূর্ববাংলা ও আসাম প্রদেশের প্রধান শাসনকর্তা হিসেবে ১৯০৬ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি নবনির্মিত অস্থায়ী গভর্নমেন্ট হাউজে প্রবেশ করেন। মূলত এ দিন থেকেই বঙ্গভবনের যাত্রা শুরু। অচিরেই ভবনটি ‘দিলখুশা গভর্নমেন্ট হাউজ’ নামে পরিচিতি লাভ করে।
১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর এটি পূর্ব বাংলা বা পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নরের বাসভবন হিসেবে ব্যবহৃত হয়। প্রথম গভর্নর ছিলেন স্যার ফ্রেডারিক বোর্ন। এ সময় ‘গভর্নমেন্ট হাউজ’ এর নাম পরিবর্তন করে নতুন নামকরণ করা হয় ‘গভর্নর হাউজ’। ১৯৬১ সালের ৯ মে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে ভবনটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ছাদের কিছু অংশ ভেঙে পড়ে। ফলে তৎকালীন গভর্নর লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোহাম্মদ আযম খান ক্ষতিগ্রস্ত ভবন সংস্কারের পরিবর্তে একটি নতুন ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৬১ সালের জুন মাসে তৎকালীন গণপূর্ত বিভাগ (সিএন্ডবি) ভবন নির্মাণ সংক্রান্ত কাজ শুরু করেন এবং গভর্নর আযম খান ১৯৬৪ সালের জানুয়ারি মাসে এটি উদ্বোধন করেন।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের পর দেশে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদের অন্যান্য সদস্যগণ ২৩ ডিসেম্বর গভর্নর হাউজে মন্ত্রিপরিষদের প্রথম সভা করেন। সেই সভায় গভর্নর হাউজকে নতুনভাবে ‘বঙ্গভবন’ নামে নামকরণ করা হয়। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের বন্দি অবস্থা থেকে মুক্ত হয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি সদ্য-স্বাধীন বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। দেশে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারের পরিবর্তে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার প্রবর্তিত হলে তিনি ১২ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি পদে ইস্তফা দেন এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।
১৯৮৫ সালে বেশ বড় পরিসরে বঙ্গভবন উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এর অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জা ও অলংকরণের কাজে প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হয়। অভ্যন্তরীণ নান্দনিক সৌন্দর্য্য বৃদ্ধিতে সংযোজন করা হয় দুর্লভ চিত্রকর্ম।
পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সময়ে ২০১৬ সালে নির্মাণ করা হয় অত্যাধুনিক সুইমিংপুল কমপ্লেক্স। আবদুল হামিদের অভিপ্রায় অনুযায়ী ২০২১-২২ সালে বঙ্গভবনে ব্যাপক সংস্কার কাজ সম্পন্ন করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- রাষ্ট্রপতির অফিস কক্ষ, হরিণ পুকুর, গ্যালারি হল, দরবার হল, ভিআইপি অপেক্ষাগার-১, এয়ার রেইড শেল্টার, কেবিনেট হল, বঙ্গভবন তোশাখানা যাদুঘর।
১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের সময় গভর্নরের নিরাপত্তার জন্য একটি এয়ার রেইড শেল্টার নির্মাণ করা হয়। স্বাধীনতার পর এয়ার রেইড শেল্টারের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যাওয়ায় এটি পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। পরবর্তীতে ২০২২ সালে এটি সংস্কার করে পুনরায় ১৯৬৫ সালের আদলে নিয়ে যাওয়া হয়।
বঙ্গভবনের প্রাচীন মানুক হাউসকে সংস্কারের মাধ্যমে ‘বঙ্গভবন তোশাখানা জাদুঘর’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, যেখানে বঙ্গভবনের বিভিন্ন ঐতিহাসিক নিদর্শনসমূহ প্রদর্শন করা হচ্ছে। ১৫০ বছরেরও অধিক পুরানো মানুক হাউস এর আগে রাষ্ট্রীয় তোশাখানা হিসেবে ব্যবহৃত হত। উনিশ শতকে মানুক নামের এক আর্মেনিয় ব্যবসায়ী এখানে বসবাস করতেন।
বর্তমানে তোশাখানার বেশ কিছু উপহার সামগ্রী সংরক্ষণ ও সর্বসাধারণের দেখার জন্যবঙ্গবন্ধু সামরিক যাদুঘরের পাশে রাষ্ট্রীয় তোশাখানা জাদুঘরে স্থানান্তর করা হয়েছে। মানুক হাউসকে তোশাখানা জাদুঘর হিসেবে প্রতিষ্ঠার সময় এর দেয়ালে ছোটো ছোটো ইট অত্যন্ত ভঙ্গুর অবস্থায় পাওয়া যায়, যার কিছু অংশ কোনো পরিবর্তন ছাড়াই সংরক্ষণ করা হয়েছে।
তোশাখানার পাশেই প্রদর্শনের জন্য রাখা হয়েছে প্রেসিডেন্সিয়াল স্টেট কার। ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিরা গাড়িটি ব্যবহার করতেন। জার্মানির ট্রাস্কো ব্রেমেন কোম্পানি নির্মিত প্রেসিডেন্সিয়াল স্টেট কারটি একটি অভিজাত এবং অতি-বিরল প্রসারিত লিমুজিন যা মূলত ডব্লিউ ১২৬ মার্সিডিজ-বেঞ্জ ৫০০ এসইএল মডেলের উপর ভিত্তি করে নির্মিত।
বঙ্গভবনের অন্যান্য ঐতিহাসিক নিদর্শনসমূহের মধ্যে বিভিন্ন ধর্মীয় সাধকের মাজার, দানা দীঘি, মাজার পুকুর, সিংহ পুকুর উল্লেখযোগ্য। সুদীর্ঘ ইতিহাস আর ইসলামি, ব্রিটিশ ও মোঘল স্থাপত্যরীতিতে গড়ে উঠা এই ভবন তার স্থাপত্যশৈলীকে ছাপিয়ে হয়ে উঠেছে স্বাধীন সর্বভৌম বাংলাদেশের এক অনন্য প্রতীক। দেশের সর্বোচ্চ সুরক্ষিত এই ভবন সম্পর্কে মানুষের কৌতুহলের শেষ নেই।

বঙ্গভবনকে দেশি-বিদেশি দর্শনার্থীদের জন্য সীমিত পরিসরে উন্মুক্ত করার লক্ষ্যেই তোশাখানা ও এয়ার রেইড শেল্টার হাউজের আধুনিকায়ন এবং ওয়াকওয়ে নির্মানসহ নানা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

বিকেলে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ নবনির্মিত তোষাখানা জাদুঘরের উদ্বোধন করেন। তিনি তোশাখানা জাদুঘরের বিভিন্ন কক্ষ ঘুরে দেখেন।

বঙ্গভবনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে থাকা এ তোশাখানাকে একটি আধুনিক মান সম্পন্ন জাদুঘরে পরিণত করা হয়েছে।

তোশাখানায় বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের কাছ থেকে পাওয়া উপহার সামগ্রী এবং ঐতিহাসিক ছবি সংরক্ষিত রয়েছে।

দেশি-বিদেশ দর্শনার্থীদের জন্য এটি সীমিত পরিসরে উন্মুক্ত থাকবে। আবার বিশ্বের যে কোন প্রান্ত থেকে অনলাইনেও যে কেউ তোষাখানাটি যাতে পরিদর্শন করতে পারে এবং বঙ্গভবন সম্পর্কে জানতে পারে সে উদ্যোগও নেয়া হয়েছে।

এর আগে রাষ্ট্রপ্রধান সংস্কারকৃত এয়ার রেইড শেল্টার হাউজের উদ্বোধন করেন এবং বিভিন্ন কক্ষ পরিদর্শন করেন।

রাষ্ট্রপতির স্ত্রী রাশিদা খানম, সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মাদ তৌফিকসহ সংশ্লিষ্ট সচিবরা এসময় উপস্থিত ছিলেন।


সহিংসতা-হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের ন্যায়বিচারের আওতায় আনতে হবে

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদি হত্যাকাণ্ড এবং এর পরের সহিংসতার ঘটনায় দ্রুত, পূর্ণাঙ্গ, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত নিশ্চিত করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে শনিবার (২০ ডিসেম্বর) দেওয়া এক পোস্টে এ আহ্বান জানায় লন্ডনভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থাটির দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক আঞ্চলিক অফিস।

পোস্টে উল্লেখ করা হয়, সহিংসতার অংশ হিসেবে প্রথম আলো, দ্য ডেইলি স্টার ও ছায়ানটের কার্যালয়ে আগুন দেওয়া হয় এবং নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীরকে হেনস্তা করা হয়।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এসব সহিংসতার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছে, এসব ঘটনায় মানুষ আহত হয়েছেন, সম্পত্তি ধ্বংস হয়েছে, এমনকি প্রাণহানিও ঘটেছে। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবিলম্বে পদক্ষেপ নিয়ে সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের ন্যায়বিচারের আওতায় আনতে হবে।

এ ছাড়া ধর্ম অবমাননার অভিযোগের পর হিন্দু পোশাক শ্রমিক দীপু চন্দ্র দাসকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায়ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অ্যামনেস্টি।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এসব সহিংসতার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছে, এসব ঘটনায় মানুষ আহত হয়েছেন, সম্পত্তি ধ্বংস হয়েছে, এমনকি প্রাণহানিও ঘটেছে। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবিলম্বে পদক্ষেপ নিয়ে সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের ন্যায়বিচারের আওতায় আনতে হবে।


শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় ওসমান হাদির বিদায়

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

সহকর্মীসহ লাখো ছাত্র-জনতার ভালোবাসায় চির বিদায় নিলেন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ শরিফ ওসমান হাদি।

শনিবার (২০ ডিসেম্বর) ৪টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদসংলগ্ন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবরের পাশেই তাকে সমাহিত করা হয়।

এর আগে এদিন বেলা ২টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় বড় ভাই আবু বকর সিদ্দিকের ইমামতিতে হাদির জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা ও লাখো মানুষ অংশগ্রহণ করেন।

জানাজা শেষে কফিনবাহী অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ পর্যন্ত আসেন তার অনুসারীরা।

এ সময় তার সহকর্মীরা অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন। শপথ নেন হাদির স্বপ্ন পূরণ না হওয়া পর্যন্ত লড়াই অব্যাহত রাখবেন। তারা বলেন, লাখো মানুষের ভালোবাসা প্রমাণ করে জীবিত হাদির চেয়ে শহীদ হাদি অনেক বেশি শক্তিশালী।

আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘আজকে আমি সাধারণ মানুষের সঙ্গে হাদির জানাজা পড়েছি। আমাকে আজকে প্রধান উপদেষ্টা ডেকেছেন, আমি যাইনি। আল্লাহ হাদিকে শাহাদাতের জজবা হিসেবে কবুল করে নিয়েছেন। ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত তৃতীয় শহীদ হিসেবে আল্লাহ কবুল করেছেন।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান বলেন, ‘শহীদ শরিফ ওসমান হাদি ইতিহাসের অংশ হয়ে গেছে। দেশের জন্য তার যে ত্যাগ আল্লাহ তা কবুল করুক।’

তিনি বলেন, ‘তার পরিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্প্রসারিত পরিবারের অংশ। আমরা তার চূড়ান্তভাবে সম্মান জানাতে আমাদের এ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের পাশে কবরস্থ করা হয়েছে। আমরা মনে করি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার সন্তানকে বুকে নিয়েছে। মা তার ছেলেকে বা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে গ্রহণ করেছে।’

বক্তব্য শেষে দোয়া পরিচালনা করেন হাদির বড় ভাই। এ সময়, হাদীর পরিবারের লোকজন এবং আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. নিয়াজ আহমেদ খান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা, জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আখতার হোসেন ও অন্যান্য নেতারা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা, ডাকসু নেতারা, এবং ইনকিলাব মঞ্চের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, গত ১২ ডিসেম্বর নির্বাচনী প্রচারণার সময় রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় গেলে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে হাদিকে গুলি করে দুর্বৃত্তরা। গুলিটি তার মাথায় লাগে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অস্ত্রোপচারের পর তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে ১৮ ডিসেম্বর রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

পরদিন ১৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টা ‌৩ মিনিটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে শহীদ হাদির মরদেহবাহী এয়ার অ্যাম্বুলেন্স চাঙ্গি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে। সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে হাদির মরদেহ বহনকারী ফ্লাইটটি অবতরণ করে। পরে এয়ারপোর্ট থেকে হাদির মরদেহ জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের হিমাঘারে রাখা হয়। সেখান থেকে গতকাল শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে তার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়।

শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে শনিবার একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালন করা হয়। এ উপলক্ষে দেশের সব সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সরকারি ও বেসরকারি ভবন এবং বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছে।

এর আগে, গত বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালনের ঘোষণা দেন।


মুক্তিযুদ্ধের উপ-সর্বাধিনায়ক এ কে খন্দকারের জানাজা রবিবার, দেওয়া হবে গার্ড অব অনার

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

মহান মুক্তিযুদ্ধের ডেপুটি চিফ অব স্টাফ এবং সাবেক বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এ কে খন্দকার, বীর উত্তমের জানাজা আগামীকাল রবিবার দুপুরে অনুষ্ঠিত হবে। এদিন দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ঘাঁটি বাশারের প্যারেড গ্রাউন্ডে মরহুমের জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এ সময় জাতির এই শ্রেষ্ঠ সন্তানকে যথাযথ সামরিক মর্যাদায় গার্ড অব অনার প্রদান করা হবে।

এর আগে শনিবার সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় বার্ধক্যজনিত কারণে ইন্তেকাল করেন এ কে খন্দকার। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৫ বছর। তিনি এক কন্যা, দুই পুত্র এবং অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

এ কে খন্দকারের জন্ম ১৯৩০ সালের ১ জানুয়ারি। বাবার কর্মসূত্রে রংপুরে জন্ম হলেও তার পৈতৃক নিবাস পাবনা জেলার বেড়া উপজেলার ভারেঙ্গা গ্রামে। তার বাবা খন্দকার আব্দুল লতিফ ছিলেন ব্রিটিশ আমলের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট এবং মা আরেফা খাতুন ছিলেন একজন আদর্শ গৃহিণী। চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে এ কে খন্দকার ছিলেন তৃতীয়। বাবার চাকরির সুবাদে বগুড়া করোনেশন স্কুলে তার শিক্ষাজীবন শুরু হয় এবং পরবর্তীতে ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় তিনি মালদা জেলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন।

বর্ণাঢ্য সামরিক জীবনের অধিকারী এ কে খন্দকার ১৯৫২ সালের সেপ্টেম্বরে পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে (পিএএফ) পাইলট অফিসার হিসেবে কমিশন লাভ করেন। কর্মজীবনে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত ফাইটার পাইলট হিসেবে এবং পরবর্তীতে ফ্লাইং ইন্সট্রাক্টর, ফ্লাইট কমান্ডার ও স্কোয়াড্রন কমান্ডার হিসেবে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত তিনি পিএএফ প্ল্যানিং বোর্ডের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং একই বছর ঢাকায় পাকিস্তান বিমান বাহিনী ঘাঁটির সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে নিয়োগ পান।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে এ কে খন্দকার উইং কমান্ডার হিসেবেই মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেন এবং ডেপুটি চিফ অব স্টাফ বা উপ-সর্বাধিনায়কের গুরুদায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন। ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর তৎকালীন প্রবাসী সরকার তাকে গ্রুপ ক্যাপ্টেন পদে পদোন্নতি দেয়। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম এ জি ওসমানীর ব্যক্তিগত উপ-প্রধান সেনাপতি হিসেবে রণাঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সুসংগঠিত করতে তার অসামান্য অবদান জাতি চিরদিন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।


সব বন্দরে দ্রুতই আরটিজিএস চালু, কক্সবাজার হবে প্রথম ক্যাশলেস জেলা: গভর্নর

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যকে আরও গতিশীল ও সহজতর করার লক্ষ্যে দেশের সব সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দরে খুব দ্রুতই সার্বক্ষণিক লেনদেনের জন্য ‘রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট’ বা আরটিজিএস (RTGS) সেবা চালু করা হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। একই সঙ্গে তিনি জানান, দেশের প্রথম জেলা হিসেবে পর্যটন নগরী কক্সবাজারকে ‘ক্যাশলেস জেলা’ হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

শনিবার (২০ ডিসেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রামের রেডিসন ব্লু হোটেলে ‘চট্টগ্রাম অঞ্চলের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও আঞ্চলিক পর্যায়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের করণীয়’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

গভর্নর বলেন, ‘ক্যাশলেস বাংলাদেশ’ বাস্তবায়ন করতে হলে দেশের প্রতিটি নাগরিকের হাতে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকার মধ্যে স্মার্টফোন পৌঁছে দিতে হবে। এছাড়া ব্যাংকিং সেবা প্রান্তিক পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে নারী এজেন্ট নিয়োগের মাধ্যমে এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

চট্টগ্রাম অঞ্চলের অর্থনৈতিক গুরুত্ব তুলে ধরে ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, সিঙ্গাপুর, দুবাই ও হংকংয়ের আদলে চট্টগ্রাম অঞ্চলের আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক কানেক্টিভিটি বৃদ্ধি করতে হবে। চট্টগ্রাম বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র; এখানকার সমুদ্রবন্দর, ইপিজেড ও ভারী শিল্পের সম্ভাবনাকে পূর্ণ রূপ দিতে আর্থিক খাতের সুদৃঢ় ভূমিকা অপরিহার্য। তিনি উৎপাদনমুখী খাতে পর্যাপ্ত ও স্বল্পমূল্যের ঋণপ্রবাহ নিশ্চিত করার বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্বের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।

গভর্নর আরও নির্দেশনা দেন যে, বাংলাদেশ ব্যাংকের পুনঃঅর্থায়ন স্কিমসমূহের অব্যবহৃত তহবিল এ অঞ্চলের উপযুক্ত গ্রাহকদের মধ্যে বিতরণ করতে হবে। আর্থিক অন্তর্ভুক্তির অংশ হিসেবে প্রতিটি ব্যাংককে অন্তত একটি বিদ্যালয়ে আর্থিক সাক্ষরতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ডিজিটাল ও ক্যাশলেস লেনদেনের উদ্যোগ নিতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক চট্টগ্রাম অফিসের নির্বাহী পরিচালক মো. মকবুল হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) উপাচার্য ড. মাহমুদ আব্দুল মতিন ভূঁইয়া এবং বাংলাদেশ ব্যাংক প্রধান কার্যালয়ের নির্বাহী পরিচালক মো. খসরু পারভেজ। সভায় চেম্বার প্রতিনিধি, বন্দর ও কাস্টমস কর্মকর্তা, অর্থনীতিবিদ এবং ব্যাংকারসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন এবং নানা সুপারিশ তুলে ধরেন।


হাদি হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ও সব পক্ষকে সহিংসতা থেকে বিরত থাকার আহবান জাতিসংঘ মহাসচিবের

আপডেটেড ২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১৯:১৫
নিজস্ব প্রতিবেদক

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ড মেনে এই ঘটনার দ্রুত, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের জবাবদিহি নিশ্চিত করার জন্য তিনি বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) নিউইয়র্কে নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক মহাসচিবের এই বার্তা গণমাধ্যমে তুলে ধরেন। তিনি জানান, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জাতিসংঘ মহাসচিব বাংলাদেশের সব পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। একইসঙ্গে সহিংসতা থেকে বিরত থেকে উত্তেজনা প্রশমন এবং দেশে শান্তিপূর্ণ নির্বাচনী পরিবেশ বজায় রাখার ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।

এদিকে, হাদি হত্যাকাণ্ডে গভীর উদ্বেগ ও শোক প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক। গত ১২ ডিসেম্বর গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর হাদির মৃত্যুর ঘটনায় তিনি জেনেভা থেকে এক বিবৃতিতে সতর্ক করে বলেন, প্রতিশোধ ও প্রতিহিংসা কেবল সমাজের বিভাজনকেই আরও গভীর করবে এবং সবার অধিকার ক্ষুণ্ন করবে। তিনি এই হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ীদের অবিলম্বে আইনের আওতায় আনার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।


জাতীয় কবির সমাধির পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত ওসমান হাদি

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও জুলাই যদ্ধা শরিফ ওসমান হাদির দাফন সম্পন্ন হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধির পাশে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়েছে। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে তিনটার দিকে তার দাফন কাজ সম্পন্ন হয়। দাফন শেষে বিকেল ৪টার দিকে কবরের পাশে সংক্ষিপ্ত স্মৃতিচারণ ও মোনাজাত পরিচালনা করেন মরহুমের বড় ভাই ড. মাওলানা আবু বকর সিদ্দিক।

এর আগে বেলা ৩টার দিকে হাদির মরদেহ বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স জাতীয় সংসদ ভবন এলাকা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে পৌঁছায়। সেখানে এক শোকাবহ পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

শনিবার দুপুর আড়াইটার পর জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় লাখো মানুষের অংশগ্রহণে ওসমান হাদির জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় ইমামতি করেন তার বড় ভাই। জানাজায় অংশ নিতে সকাল থেকেই মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ ও এর আশপাশের এলাকায় মানুষের ঢল নামে। ‘আমরা সবাই হাদি হবো, যুগে যুগে লড়ে যাবো’, ‘হাদি ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেব না’—এমন স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। জানাজা উপলক্ষে সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‍্যাব ও আনসার সদস্যদের সমন্বয়ে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল।

জানাজায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যবৃন্দ, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। জানাজার আগে ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব জাবের ও ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বক্তব্য রাখেন।

জানাজার আগে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার বক্তব্যে বলেন, প্রিয় ওসমান হাদি, তোমাকে আমরা বিদায় দিতে আসিনি। তুমি আমাদের বুকের ভেতরে আছো এবং বাংলাদেশ যতদিন থাকবে, ততদিন তুমি সব বাংলাদেশির বুকে থাকবে। হাদির নির্বাচনী আকাঙ্ক্ষার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ওসমান হাদি নির্বাচনে অংশ নিতে চেয়েছিল এবং দেখিয়ে দিয়ে গেছে কীভাবে বিনয়ের সঙ্গে মানুষের কাছে গিয়ে প্রচারণা চালাতে হয়। তার সেই শিক্ষা আমরা গ্রহণ করলাম। তিনি আরও বলেন, হাদি কোথাও হারিয়ে যাবে না। তাকে আমরা আল্লাহর কাছে আমানত রাখলাম এবং তার আদর্শ ধারণ করে জাতির অগ্রগতির পথে এগিয়ে যাব।


হাদি যুগ যুগ ধরে আমাদের সঙ্গে থাকবে: প্রধান উপদেষ্টা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ শরিফ ওসমান হাদির জানাজায় অংশ নিয়ে আবেগঘন শ্রদ্ধা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, হাদি কখনো হারিয়ে যাবে না, তাকে কেউ ভুলতে পারবে না। সে যুগ যুগ ধরে আমাদের সঙ্গেই থাকবে। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত জানাজায় তিনি এসব কথা বলেন।

বিদায়ী এই বীর যোদ্ধার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, প্রিয় হাদি, তোমাকে আজ বিদায় দিতে আসিনি। তুমি আমাদের বুকের ভেতর আছো এবং বাংলাদেশ যতদিন আছে, ততদিন তুমি সকল বাংলাদেশির হৃদয়ে থাকবে। হাদির ‘বল বীর- চির উন্নত মম শির’ মন্ত্রকে ধারণ করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে ড. ইউনূস বলেন, হাদি আমাদের কানে এমন এক মন্ত্র দিয়ে গেছে যা কেউ কখনো ভুলতে পারবে না। আমরা দুনিয়ার সামনে মাথা উঁচু করে চলবো, কারও কাছে মাথা নত করবো না।

শরিফ ওসমান হাদির নির্বাচনী প্রচারণার ধরণ ও বিনয়ের প্রশংসা করে প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, হাদি নির্বাচনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে দেখিয়ে দিয়ে গেছে কীভাবে বিনীতভাবে মানুষের কাছে যেতে হয় এবং প্রচারণা চালাতে হয়। তার এই শিক্ষা ও আদর্শ জাতীয় রাজনীতিতে কাজে লাগানোর আহ্বান জানান তিনি। তিনি হাদির বিদেহী আত্মাকে আল্লাহর কাছে আমানত হিসেবে সঁপে দিয়ে বলেন, আমরা সবসময় তোমার কথা স্মরণ রেখে জাতির অগ্রগতির পথে চলতে থাকবো।

উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন ঢাকার পুরানা পল্টনে দুর্বৃত্তদের গুলিতে গুরুতর আহত হন শরিফ ওসমান হাদি। প্রথমে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে ১৫ ডিসেম্বর তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়, সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার তিনি মৃত্যুবরণ করেন।


জাতীয় কবির সমাধির পাশেই চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন শহীদ ওসমান হাদি, কবর প্রস্তুত

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধিসৌধের পাশেই শহীদ শরীফ ওসমান হাদির দাফনের জন্য কবর প্রস্তুত করা হয়েছে। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে কবর খোঁড়ার কাজ সম্পন্ন হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমেদ জানিয়েছেন, জাতীয় কবির কবরের দক্ষিণ দিকে ওসমান হাদিকে সমাহিত করা হবে। মসজিদের দেয়াল ঘেঁষে দ্বিতীয় স্লটের পূর্ব পাশে তার কবরের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে।

কবর প্রস্তুত কার্যক্রম পরিদর্শন ও তদারকির সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমেদসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।


লাখো মানুষের অংশগ্রহণে ওসমান হাদির জানাজা অনুষ্ঠিত

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

লাখো মানুষের অংশগ্রহণে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ শরীফ ওসমান হাদির জানাজা সম্পন্ন হয়েছে। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুর আড়াইটায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় এই জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় ইমামতি করেন মরহুমের বড় ভাই ড. মাওলানা আবু বকর সিদ্দিক।

এই জানাজায় অংশ নেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। এছাড়া বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা এবং সর্বস্তরের জনগণ জানাজায় শরিক হন। জানাজাকে কেন্দ্র করে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজা ও মানিক মিয়া এভিনিউ এলাকায় মানুষের ঢল নামে। খামারবাড়ি থেকে আসাদ গেট পর্যন্ত পুরো এলাকাটি কার্যত জনসমুদ্রে পরিণত হয়।

উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর দুপুরে দুর্বৃত্তদের গুলিতে গুরুতর আহত হন ওসমান হাদি। প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার অস্ত্রোপচার হয় এবং পরে পরিবারের ইচ্ছায় তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় গত ১৫ ডিসেম্বর উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাকে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

ওসমান হাদির মৃত্যুতে শনিবার দেশজুড়ে একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালন করা হচ্ছে। শোক পালনের অংশ হিসেবে দেশের সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছে।


সুদানে নিহত ৬ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীর মরদেহ দেশে পৌঁছেছে

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

সুদানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন ঘাঁটিতে সন্ত্রাসীদের ড্রোন হামলায় নিহত ছয় বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীর মরদেহ দেশে পৌঁছেছে। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) বেলা ১১টা ৫ মিনিটে নিহতদের মরদেহ বহনকারী ফ্লাইটটি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক এস এম রাগিব সামাদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে গত ১৩ ডিসেম্বর সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের আওতাধীন কাদুগলি লজিস্টিকস বেইসে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠী বর্বরোচিত ড্রোন হামলা চালায়। এতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ছয় সদস্য নিহত হন এবং আহত হন আরও ৯ জন।

নিহত বীর শান্তিরক্ষীরা হলেন– নাটোরের করপোরাল মো. মাসুদ রানা, কুড়িগ্রামের সৈনিক মো. মমিনুল ইসলাম ও সৈনিক শান্ত মন্ডল, রাজবাড়ীর সৈনিক শামীম রেজা, কিশোরগঞ্জের মেস ওয়েটার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম এবং গাইবান্ধার লন্ড্রি কর্মচারী মো. সবুজ মিয়া।

হামলায় আহত শান্তিরক্ষীদের বর্তমানে কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবির আগা খান ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাদের মধ্যে কয়েকজন চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল ছেড়েছেন এবং বাকিরাও শঙ্কামুক্ত রয়েছেন বলে জানা গেছে। আহতদের মধ্যে তিনজন নারী সদস্যও রয়েছেন।

উল্লেখ্য, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের অবদান বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত। সুদানের সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যদের পেশাদারিত্ব, সাহস ও এই সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হচ্ছে।


বীর উত্তম এ কে খন্দকারের মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টার গভীর শোক

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, মুক্তিবাহিনীর ডেপুটি চিফ অব স্টাফ এবং স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এ কে খন্দকার, বীর উত্তমের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শনিবার এক শোকবার্তায় তিনি এই বীর মুক্তিযোদ্ধার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।

শোকবার্তায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এ কে খন্দকার ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক অবিস্মরণীয় সৈনিক। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতা, দূরদর্শিতা ও নেতৃত্বগুণ দিয়ে তিনি দেশের স্বাধীনতা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিবাহিনীর ডেপুটি চিফ অব স্টাফ হিসেবে তার কৌশলগত সিদ্ধান্ত ও সাংগঠনিক দক্ষতা স্বাধীনতা সংগ্রামকে আরও সুসংহত করেছিল। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী গঠনেও তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন এবং দেশের প্রথম বিমান বাহিনী প্রধান হিসেবে এই বাহিনীকে একটি সুসংগঠিত ও কার্যকর প্রতিষ্ঠানে রূপ দিতে অসামান্য অবদান রাখেন।

এ কে খন্দকারের সততা ও সাহসিকতার প্রশংসা করে ড. ইউনূস উল্লেখ করেন, রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তিনি দেশের স্বাধীনতার ইতিহাস নিয়ে গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। তবে পতিত ফ‍্যাসিবাদী শাসনামলে সেই গ্রন্থের কারণে তিনি ব্যাপক রোষানলে পড়েন। প্রধান উপদেষ্টা মন্তব্য করেন, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরাই ছিল সেই শাসনের দৃষ্টিতে তার অপরাধ।

প্রধান উপদেষ্টা এ কে খন্দকারকে একজন দৃঢ়চেতা মুক্তিযোদ্ধা ও আদর্শনিষ্ঠ দেশপ্রেমিক হিসেবে অভিহিত করে বলেন, তার কর্ম ও চিন্তা নতুন প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। এই বীর সন্তানের মৃত্যুতে দেশ তার এক শ্রেষ্ঠ সন্তানকে হারালো। শোকবার্তায় তিনি মরহুমের শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজন, আত্মীয়স্বজন ও সহযোদ্ধাদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।


ওসমান হাদির দাফন ঘিরে ঢাবি এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা, পুলিশ ও বিজিবি মোতায়েন

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

জুলাই যোদ্ধা ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির দাফনকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশের কবরস্থান এলাকায় নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুরে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জানাজা শেষে মরদেহ দাফনের জন্য এই স্থানে নিয়ে আসার কথা রয়েছে। এ উপলক্ষে কবরস্থানের ভেতরে ও বাইরের এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, দাফনের জন্য কবর খোঁড়াসহ আনুষঙ্গিক সব প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। যেকোনো ধরণের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে কবরস্থানের মূল ফটক এবং আশপাশের এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি সদস্যদেরও সারিবদ্ধভাবে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলমসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সশরীরে উপস্থিত থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা তদারকি করছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্রে জানা গেছে, জানাজা ও দাফন ঘিরে প্রচুর জনসমাগমের সম্ভাবনা থাকায় সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে এবং পরিস্থিতি বিবেচনায় অতিরিক্ত ফোর্স প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে। তার জানাজায় অংশ নিতে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সাধারণ মানুষের ঢল নেমেছে।

উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর দুপুরে ঢাকা-৮ আসনে নির্বাচনী প্রচারণা শেষে ফেরার পথে দুর্বৃত্তদের গুলিতে গুরুতর আহত হন স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদি। প্রথমে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে গত ১৫ ডিসেম্বর উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুর জেনারেল হসপিটালে স্থানান্তর করা হয়, সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।


মুক্তিযুদ্ধের উপ-সর্বাধিনায়ক এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে খন্দকার আর নেই

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

মহান মুক্তিযুদ্ধের ডেপুটি চিফ অব স্টাফ (উপ-সর্বাধিনায়ক) এবং সাবেক বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এ কে খন্দকার, বীর উত্তম ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না-লিল্লাহ ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।

এ কে খন্দকারের জন্ম ১৯৩০ সালের ১ জানুয়ারি। বাবার তৎকালীন কর্মস্থলের সুবাদে রংপুরে তার জন্ম হলেও তার পৈত্রিক নিবাস পাবনা জেলার বেড়া উপজেলার ভারেঙ্গা গ্রামে। তার বাবা খন্দকার আব্দুল লতিফ ব্রিটিশ আমলের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন এবং মা আরেফা খাতুন ছিলেন একজন আদর্শ গৃহিণী। চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে এ কে খন্দকার ছিলেন তৃতীয়। বাবার চাকরির সুবাদে বগুড়া করোনেশন স্কুলে তার শিক্ষাজীবন শুরু হয়। পরবর্তীতে ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় তিনি মালদা জেলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন।

বর্ণাঢ্য সামরিক জীবনের অধিকারী এ কে খন্দকার ১৯৫২ সালের সেপ্টেম্বরে পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে (পিএএফ) পাইলট অফিসার হিসেবে কমিশন লাভ করেন। ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত তিনি ফাইটার পাইলট হিসেবে কাজ করেন এবং পরবর্তীতে ফ্লাইং ইন্সট্রাক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বিভিন্ন সময়ে তিনি ফ্লাইট কমান্ডার, জেট ফাইটার কনভারশন স্কোয়াড্রনের স্কোয়াড্রন কমান্ডার এবং পিএএফ একাডেমির ট্রেনিং উইং-এর অফিসার কমান্ডিং হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৯ সালে তিনি ঢাকায় পাকিস্তান বিমান বাহিনী ঘাঁটির সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে দায়িত্ব পান।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেন এবং ডেপুটি চিফ অফ স্টাফের গুরুদায়িত্ব গ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর তৎকালীন অন্তর্বতীকালীন সরকার তাকে গ্রুপ ক্যাপ্টেন হিসেবে পদোন্নতি দেয়। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম এ জি ওসমানীর ব্যক্তিগত ডেপুটি ইন চার্জ বা উপ-প্রধান সেনাপতি হিসেবে যুদ্ধের ময়দানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।


banner close