ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও দেশের প্রথিতযশা হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব.) ডা. আব্দুল মালিককে আজীবন সম্মান কাইন্ডনেস পুরস্কার দেয়া হয়েছে।
রাজধানীর ডেইলি স্টার ভবনে শনিবার এক অনুষ্ঠানে ডা. আব্দুল মালিকের কন্যা অধ্যাপক ফজিলাতুন্নেসা মালিক বাবার পক্ষে পুরস্কারটি গ্রহণ করেন।
ডা. মালিকের মেয়ের হাতে এই সম্মাননা পুরস্কার তুলে দেন সিআরপির প্রতিষ্ঠাতা ভ্যালেরি অ্যান টেইলর, ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম ও সম্মান ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ডা. রুবাইয়ুল মুর্শেদ।
ডা. মালিকের সঙ্গে আরও তিনজনকে পুরস্কার দেয়া হয়। তারা হলেন জাহিন আহমেদ (প্রয়াত), জোগেশ চন্দ্র রায় (প্রয়াত) ও সুভাষ মণি সিংহ। সুভাষ মণি সিংহ ভারতের নাগরিক।
অনুষ্ঠানে সিআরপির প্রতিষ্ঠাতা ভ্যালেরি অ্যান টেইলর কাইন্ডনেসের ভূমিকার বিষয়ে বলেন, ‘মানুষ মানুষের প্রতি দয়া অনুভব না করলে সমাজ শান্তিপূর্ণ হয় না। কাইন্ডনেস মানুষকে মানুষের কাছে নিয়ে আসে, সেটাই সমাজের ভিত্তি।’
ফজিলাতুন্নেসা মালিক বলেন, ‘এই পুরস্কার গ্রহণ করে আমি অভিভূত।’ বাবা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমার বাবা সেবাই পরম ধর্ম বলে মানেন। সেই ব্রত নিয়েই তিনি ১৯৭০ সালে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট গড়ে তোলেন। সেই প্রতিষ্ঠান এখন অনেক বড় হয়েছে।’
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ভুটান দূতাবাসের চ্যান্সেরি শেরাব দর্জি বলেন, ‘সবাই জানেন, ভুটানের রাষ্ট্রীয় নীতি হচ্ছে গ্রস ন্যাশনাল হ্যাপিনেস। ১৯৭০-এর দশকে ভুটান এই নীতি গ্রহণ করে। এরপর ধাপে ধাপে তার উন্নতি হয়েছে। এর মূল কথা হলো, মানুষের সর্বাঙ্গীণ সন্তোষ ও শান্তি নিশ্চিত করা।’
নিস্বার্থ কাজ ও দয়ার স্বীকৃতি দেয়ার জন্য সম্মান ফাউন্ডেশনকে অভিনন্দন জানান শেরাব দর্জি।
গান্ধী ফাউন্ডেশনের সভাপতি এস কে সান্যাল বলেন, হতদরিদ্র ও অস্পৃশ্য মানুষকে অন্যরা প্রাপ্য সম্মান দিতে চান না। মহাত্মা গান্ধী সমাজের সবচেয়ে নিপীড়িত ও অস্পৃশ্য মানুষের মুক্তির জন্য আন্দোলন করেছেন। মহাত্মা গান্ধী মনে করতেন, সমাজের একদম শেষের সারির মানুষের কাছে যেতে না পারলে মুক্তি হবে না।
অনুষ্ঠানে সম্মান ফেউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ডা. রুবাইয়ুল মুর্শেদসহ উপস্থিত ছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন জনস্বাস্থ্যবিদ আহমেদ মুশতাক রাজা চৌধুরী, সিপিডির বিশেষ ফেলো অর্থনীতিবিদ মোস্তাফিজুর রহমান, মহাত্মা গান্ধী প্রতিষ্ঠিত হরিজন সেবক সংঘের সভাপতি শঙ্কর কুমার সান্যাল, পশ্চিমবঙ্গের সমাজ সংস্কারক সুভাষ মণি সিংহ প্রমুখ।
খুলনার খানজাহান আলী হকার্স মার্কেটে যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়েছে।
শনিবার বেলা ১১টায় অভিযান শুরু হয়ে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলে। এ সময় যৌথ বাহিনী ওই মার্কেট থেকে প্রায় ৮ টনের বেশি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করে। পরে ৩টি প্রতিষ্ঠানকে ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া অপর একটি প্রতিষ্ঠানের মালিককে না পাওয়ায় সেটি সিলগালা করে দেওয়া হয়।
অভিযানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মমতাজ বেগম। তিনি বলেন, যৌথ বাহিনী শনিবার বেলা ১১টার দিকে নগরীর খানজাহান আলী হকার্স মার্কেটের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালায়।
এ সময় ৪টি প্রতিষ্ঠানের ৮টি গোডাউন থেকে ৮ হাজার ৮৫ কেজি ব্যবহার নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করে। এর মধ্যে ৩টি প্রতিষ্ঠান গৌতম স্টোর, উত্তম স্টোর ও টিউলিপ স্টোর থেকে ৪ হাজার ৪৬০ কেজি পলিথিন উদ্ধার করা হয়। প্রতিষ্ঠান তিনটিকে ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
অপরদিকে অভিযান চলাকালে রনি স্টোরের মালিককে পাওয়া যায়নি। পরে তার প্রতিষ্ঠান থেকে ৩ হাজার ৬২৫ কেজি পলিথিন উদ্ধার করে প্রতিষ্ঠান সিলগালা করা হয়।
পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পলিথিনের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।
গত এক যুগে বাংলাদেশে সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে আত্মহননের ঘটনা বাড়ছে। আর্থিক অনিশ্চয়তা, পেশাগত চাপ ও পারিবারিক সংকট এগুলোর পেছনের প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। সম্প্রতি ‘আজকের পত্রিকা’র প্রবীণ সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকারের মৃত্যুও এ তালিকায় যোগ হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, হতাশাজনিত বিষণ্নতা থেকেই এসব ঘটনা ঘটছে এবং সাংবাদিক কল্যাণে রাষ্ট্রের সক্রিয় ভূমিকা অত্যন্ত জরুরি।
৭১ বছর বয়সি বিভুরঞ্জন চাকরি করতেন ‘আজকের পত্রিকা’য়। এর বাইরে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে নিয়মিত কলাম লিখতেন। অফিসে যাওয়ার কথা বলে বেরিয়ে এক দিন আগে নিখোঁজ হয়েছিলেন তিনি।
নিখোঁজ হওয়ার আগে ২১ আগস্ট সকাল ৯টায় তিনি অনলাইন পোর্টাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে একটি খোলা চিঠি মেইল করেন।
চিঠির ফুটনোটে তিনি লেখেন, ‘জীবনের শেষ লেখা হিসেবে এটা ছাপতে পারেন।’ বিভুরঞ্জন সরকারের পরিবারের সদস্যদের বরাতে জানা যায়, ওই দিন সকাল ১০টার দিকে অফিসে যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বেরিয়ে তিনি আর ফেরেননি।
খোলা চিঠিতে বিভুরঞ্জন সরকার নিজের ও ছেলের অসুস্থতা, মেডিকেল পাস সরকারি কর্মকর্তা মেয়ের উচ্চতর পরীক্ষায় ‘ফেল করা’, বুয়েট থেকে পাস করা ছেলের ‘চাকরি না হওয়া’ এবং নিজের বেতন-ভাতা না বাড়ার ফলে আর্থিক দৈন্য নিয়ে হতাশার কথা লিখেছেন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তিনি হয়তো এসব কারণেই আত্মহত্যা করেছেন।
তবে গত এক যুগে সাংবাদিকদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা আগের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে দেখা যাচ্ছে। এ সময়ের বিভিন্ন গণমাধ্যম ঘেঁটে যতজন সাংবাদিকের আত্মহত্যার খবর পাওয়া যাচ্ছে, এদের বেশির ভাগই নিজেদের অপমৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছেন প্রধানত পেশাগত ও আর্থিক অনিশ্চয়তা এবং পারিবারিক সংকটের কারণে। সাংবাদিকের পাশাপাশি এ সময়ে মুক্তিযোদ্ধাসহ বুদ্ধিজীবী পরিবারের বেশ কিছু সদস্যের আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটেছে।
২০১২ সালের মার্চ মাসে বিখ্যাত সাংবাদিক মিনার মাহমুদের আত্মহত্যার ঘটনা বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছিল। আশির দশকের আলোচিত সাময়িকী ‘বিচিন্তা’র সম্পাদক ছিলেন মিনার মাহমুদ।
ঢাকা রিজেন্সি হোটেলের সপ্তম তলার একটি কক্ষ থেকে তার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল। সে সময় ওই কক্ষে প্রায় ১০০টি ঘুমের বড়ির খোসা পেয়েছিল পুলিশ।
হোটেলকক্ষ থেকে মিনার মাহমুদের লাশের সঙ্গে পাঁচ পৃষ্ঠার একটি চিঠিও পাওয়া গিয়েছিল, যা তিনি লিখেছেন স্ত্রী লাজুককে উদ্দেশ করে। লাজুকের সঙ্গে বিয়ের আগে তার দাম্পত্য কাটে নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিনের সঙ্গে। মিনারের চিঠিতে জাগতিক অসফলতা নিয়ে প্রকাশ পেয়েছিল গভীর এক হতাশা।
আলোচিত আরেকটি আত্মহত্যার ঘটনা ছিল শহীদ বুদ্ধিজীবী সেলিনা পারভীনের ছেলে ব্যাংক কর্মকর্তা সুমন জাহিদের। ২০১৮ সালের আগস্টে রেললাইনের ওপর মাথা রেখে শুয়ে পড়েছিলেন সুমন জাহিদ।
সাংবাদিক-বুদ্ধিজীবী শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা কবিরের আত্মহত্যার ঘটনাটিও দেশজুড়ে আলোড়ন তুলেছিল। ২০২৩ সালের জুন মাসে আত্মহত্যা করেন অর্পিতা কবির। আত্মহত্যার আগে সুইসাইড নোট হিসেবে একটি চিরকুট লিখে যান তিনি। ধারণা করা হয়, পারিবারিক কলহের জেরে আত্মহত্যা করেন অর্পিতা।
শাহরিয়ার কবিরের পরিবারে আগেও একটি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছিল। ২০০৬ সালে তার ভাই কালানদিয়ার কবির আত্মহত্যা করেন। পারিবারিক ও বৈষয়িক সম্পত্তিসংক্রান্ত জটিলতা এবং সংকটের মধ্যে পড়ে তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন বলে সে সময় অভিযোগ উঠেছিল।
আরেকটি আলোচিত ঘটনা ছিল ফটোসাংবাদিক শবনম শারমিনের (৩০) আত্মহত্যা। স্বজনদের অভিযোগ, স্বামীর নির্যাতনের শিকার হয়ে ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে আত্মহত্যা করেছিলেন তিনি। অবশ্য আত্মহত্যার পর কর্মক্ষেত্রে তার নির্যাতিত হওয়ার অভিযোগও উঠেছিল।
২০২২ সালের ১৩ জুলাই উদ্ধার করা হয় সাংবাদিক সোহানা তুলির (৩৮) লাশ। পুলিশের ধারণা, তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন। তিনি কালেরকণ্ঠ, বাংলা ট্রিবিউন ও আমাদের সময় পত্রিকায় কাজ করেছিলেন। পারিবারিক কলহের জেরে তুলি আত্মহত্যা করেছিলেন বলে সে সময় কথা উঠেছিল।
আর জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর ২০২৪ সালের ২৮ আগস্ট হাতিরঝিল থেকে গাজী টিভির নিউজরুম এডিটর রাহনুমা সারাহর (৩২) লাশ উদ্ধার হয়। সে সময় রাহনুমার স্বামীর দাবি করেছিলেন, তার স্ত্রী আত্মহত্যা করেছেন। কিন্তু মৃত্যুর আগে ফেসবুকে রাহনুমার শেষ পোস্ট ছিল, ‘মরে বেঁচে থাকার চেয়ে মৃত্যুই ভালো’। নিজের কর্মস্থল নিয়ে বেশ অসন্তুষ্ট ছিলেন রাহনুমা। মৃত্যুর আগে তিন মাস ধরে তিনি বেতন পাননি বলে তখন অভিযোগ উঠেছিল।
দেখা গেছে, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবী পরিবারের এসব আত্মহত্যার পেছনে প্রধানত কাজ করেছে হতাশাজনিত বিষণ্নতা। পেশাগত অনিশ্চয়তার পাশাপাশি পারিবারিক সংকট এর নেপথ্যে দায়ী বলে মনে করেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ আহমেদ হেলাল।
বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যসহ সাংবাদিকদের মধ্যে কেন আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে—প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘মানুষ মূলত আত্মহত্যা করে হতাশাজনিত বিষণ্নতা থেকে। শুধু বাংলাদেশ নয়, পাশের দেশ ভারতেও আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে আমাদের এখানে সাংবাদিকদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে কি না, গবেষণা না করে তা বলা যাবে না। তবে এই সময়ের মধ্যে যেসব সাংবাদিক আত্মহত্যা করেছেন, তাদের ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে, বেশির ভাগই হতাশ হয়ে বিষণ্নতায় ভুগে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। এক্ষেত্রে অনেকেরই হয়তো পেশাগত ও আর্থিক অনিশ্চয়তার পাশাপাশি পারিবারিক সংকটও একটি কারণ। কেনো মানুষ আসলে নির্দিষ্ট একটিমাত্র কারণে আত্মহত্যা করেন না, এর পেছনে বহুমাত্রিক কারণ থাকে।’
তবে আত্মহত্যা কোনোভাবেই সমাধান নয় উল্লেখ করে আহমেদ হেলাল বলেন, ‘হতাশা যখন বিষণ্নতায় রূপ নেয়, তখনই মানুষ আত্মহত্যা করে। আর যিনি আত্মহত্যার মধ্য দিয়ে সবকিছু শেষ হয়ে গেল বলে ভাবেন, তিনি আসলে নিজের পরিবারকে নতুন ঝুঁকিতে ফেলে দেন। তাই আমাদের আশপাশে যেসব মানুষ আছেন, তারা হতাশ ও বিষণ্ন কি না, সেদিকে আমাদের নজর দেওয়া দরকার।’
এদিকে সাংবাদিকদের এমন আত্মহত্যার পেছনে রাষ্ট্রেরও দায় আছে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক খোরশেদ আলম। তিনি বলেন, ‘যারা সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন, তারা অনেক স্বপ্ন আর সামাজিক দায়িত্ব পালনের জন্য এখানে আসেন। কিন্তু একসময় যদি কোনো সংবাদিকের মনে হয়, প্রাতিষ্ঠানিক, পারিপার্শ্বিকভাবে তিনি যথেষ্ট স্বাচ্ছনন্দ্যে নেই, তখন তার পরিবারেও এর ছাপ পড়তে বাধ্য। এ সময় হতাশা ও বিষণ্নতা স্বাভাবিকভাবেই তাকে গ্রাস করতে পারে। আসলে সাংবাদিকদের কল্যাণে রাষ্ট্রের এগিয়ে আসা দরকার। এক্ষেত্রে সাংবাদিকতা পেশাকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের ব্যাপারে রাষ্ট্রের যেমন ভূমিকা রয়েছে, একইভাবে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মাধ্যমের সংবাদকর্মীরা যাতে ওয়েজ বোর্ডে তাদের প্রাপ্য বেতন পান, তা নিশ্চিত করার বিষয়েও রাষ্ট্র ভূমিকা রাখতে পারে।’
সূত্র: কালেরকণ্ঠ
আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সাড়ে ১৩ হাজার সহকারী শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে জানিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু নূর মো. শামসুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে সাড়ে ১৩ হাজার শিক্ষক পদ শূন্য রয়েছে। আগস্ট মাসের মধ্যেই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ এবং ডিসেম্বরের মধ্যে নিয়োগ কার্যক্রম শেষ করার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে।’
গতকাল শনিবার কিশোরগঞ্জ শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক মতবিনিময়সভায় তিনি এ তথ্য জানান।
সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার। তিনি বলেন, ‘আমার বাড়ি হাওরে, আমি জানি বাস্তব অবস্থা কী। শুধু হাওর নয়, দেশের চরাঞ্চল বা প্রত্যন্ত এলাকাতেও শিক্ষকরা থাকতে চান না, শহরে বদলি হতে চান। নিয়ম অনুযায়ী যেখানেই পোস্টিং সেখানেই থাকতে হয়।
কিন্তু তদবির আর বদলির চাপে বস্তবতা অন্য রকম। এসব সমস্যা ওপর থেকেই সৃষ্ট। এটা আসলে আমাদের সামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যা।’
সম্প্রতি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের দশম গ্রেডে উন্নীতকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
তাদের নিয়ন্ত্রণকারী সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তারাও একই গ্রেডে আছে। এ ক্ষেত্রে এটিইওদের গ্রেড উন্নয়নে সরকার কী ভাবছে, এমন প্রশ্নের উত্তরে উপদেষ্টা বলেন, ‘শিক্ষকদের নিয়ন্ত্রণকারী কর্মকর্তারা দশম গ্রেডে থাকলেও প্রশাসনিক চেইন অব কমান্ড ভেঙে যাব, এমন ধারণা সঠিক নয়। তবে তাদেরও (কর্মকর্তা) গ্রেডের উন্নয়ন দরকার।’
মতবিনিময়সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মো. মাসুদ রানা। তিনি বলেন,‘ কিশোরগঞ্জ জেলায় বর্তমানে ৮০৫ জন শিক্ষক প্রশিক্ষণবিহীন আছেন।
তাদের দ্রুত প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হবে। তাছাড়া ১৮০টি বিদ্যালয়ে স্কুল ফিডিং কার্যক্রম চালু হচ্ছে। একইসঙ্গে সহকারী শিক্ষকদেরও মূল্যায়নের প্রয়োজন রয়েছে। তা-ও করবে সরকার।’
সভায় সভাপতিত্ব করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মিজাবে রহমত। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এনডিসি (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মোহাম্মদ কামরুল হাসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মুকিত সরকার, এবং জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মজিব আলম।
রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে তিন দিনব্যাপী অংশীজন সংলাপ আজ রোববার কক্সবাজারে শুরু হচ্ছে। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে রোহিঙ্গা পরিস্থিতির ব্যাপারে উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলনের আগে কার্যকর সুপারিশ প্রণয়নে এই সংলাপের আয়োজন করা হয়েছে। নিউইয়র্কের সম্মেলনটি ৮০তম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সাইডলাইনে অনুষ্ঠিত হবে।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে উচ্চ প্রতিনিধির কার্যালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে ‘অংশীজন সংলাপ: রোহিঙ্গা পরিস্থিতির ওপর উচ্চ-স্তরের সম্মেলনের সমাপ্তি’ শীর্ষক আয়োজনটি ২৪ থেকে ২৬ আগস্ট উপকূলীয় জেলাটিতে অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থী আশ্রয় নিয়ে আছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস আগামীকাল ২৫ আগস্ট সংলাপে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেবেন।
সংলাপে দেশ-বিদেশের কূটনীতিক, আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ, রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও শিক্ষাবিদসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ অংশগ্রহণ করবেন।
আয়োজকরা জানান, রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের পুরুষ, নারী ও যুবকদের কথা গুরুত্ব সহকারে শোনার ওপর জোর দেয়া হবে, যেন আন্তর্জাতিক মহল তাদের আকাঙ্ক্ষা, অভিযোগ ও ভবিষ্যত প্রত্যাশাগুলো সরাসরি জানতে পারে।
সংলাপে বিষয়ভিত্তিক পাঁচটি অধিবেশন থাকবে। সেগুলো হলো, মানবিক সহায়তা ও তহবিলের চ্যালেঞ্জ, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বর্তমান উন্নয়ন, প্রত্যাবাসনের জন্য আত্মবিশ্বাস তৈরির ব্যবস্থা, নৃশংসতার জন্য ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতা, টেকসই ও সময়সীমাবদ্ধ সমাধানের জন্য দীর্ঘমেয়াদী কৌশল।
আগামী ২৬ আগস্ট অংশীজনরা রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করবেন এবং শরণার্থীদের চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে সরাসরি ধারণা পাবেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সংলাপের লক্ষ্য হলো- নিউইয়র্কে আসন্ন উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলনের জন্য সুনির্দিষ্ট ও কার্যকর সুপারিশ প্রণয়ন করা।
আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের সম্মেলনে প্রায় ১৭০টি দেশের প্রতিনিধি অংশ নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। সেখানে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা ও অন্যান্য নির্যাতিত সংখ্যালঘুদের চলমান দুর্দশা সমাধানের ওপর আলোকপাত করা হবে।
সরকারি কর্মকর্তারা জানান, ২০১৭ সালে মিয়ানমারে গণহত্যা থেকে বাঁচতে পালিয়ে বাংলাদেশে আসার আট বছর পর এবং মিয়ানমারে ক্রমবর্ধমান সহিংসতা ও রোহিঙ্গাদের জন্য আন্তর্জাতিক তহবিল হ্রাসের মধ্যে কক্সবাজারে এই অংশীজন সংলাপ বিশেষভাবে সময়োপযোগী।
এর আগে বক্তব্য রাখতে গিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরেন। সেগুলো হলো- নিরবচ্ছিন্ন বৈদেশিক সাহায্য অব্যাহত রাখা, আন্তর্জাতিক মহলে আলোচনায় রোহিঙ্গা সংকট দৃশ্যমান রাখা এবং রোহিঙ্গাদের তাদের মাতৃভূমিতে নিরাপদ, স্বেচ্ছায় ও মর্যাদাপূর্ণভাবে প্রত্যাবর্তনকে সহজ করা।
তিনি আরও বলেন, ‘বিষয়টি ভুলে যাওয়া উচিত নয়। আমরা এটিকে আলোচনায় নিয়ে আসার জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছি।’ দীর্ঘস্থায়ী সংকট থেকে মানবিক, উন্নয়নমূলক ও নিরাপদ উত্তরণের ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
আসন্ন নিউইয়র্ক সম্মেলন বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী শরণার্থী সংকটের ব্যাপারে ন্যায়বিচার, জবাবদিহিতা ও স্থায়ী সমাধান নিশ্চিত করার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পদক্ষেপের গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হবে।
দেশে চালের অস্থিতিশীল বাজার নিয়ন্ত্রণে দীর্ঘ চার মাস পর অবশেষে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে চাল আমদানি শুরু হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে গতকাল শনিবার সকাল পর্যন্ত প্রথম চালানে ভারতীয় পেট্রাপোল বন্দর হয়ে ৯টি ট্রাকে মোট ৩১৫ মেট্রিক টন মোটা চাল দেশে প্রবেশ করেছে।
আমদানিকারকরা জানিয়েছেন, চালবাহী আরও কয়েকটি ট্রাক ভারতের পেট্রাপোলে অপেক্ষমাণ রয়েছে। এ চালান দ্রুত ছাড়া হলে বাজারে সরবরাহ বাড়বে এবং দামের ওপর তাৎক্ষণিক প্রভাব পড়বে বলে আশা করছেন তারা। তবে উচ্চ শুল্কহার না কমানোয় আমদানির পরিমাণ সীমিত থাকার শঙ্কাও রয়েছে।
বেনাপোল সিএন্ডএফ স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান জানান, চলতি বছরের ১৫ এপ্রিল সর্বশেষ চাল আমদানি হয়েছিল। দীর্ঘ বিরতির পর নতুন এ চালান আসায় বাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
বেনাপোল উদ্ভিদ সংরক্ষণ কেন্দ্রের উপসহকারী কর্মকর্তা শ্যামল কুমার নাথ বলেন, নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষার পর দ্রুত ছাড়পত্র প্রদানের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স হাজি মুসা করিম অ্যান্ড সন্সের স্বত্বাধিকারী আব্দুস সামাদ বলেন, আমাদের ৯টি ট্রাক কয়েকদিন ধরে ভারতের পেট্রাপোলে অপেক্ষা করছিল। অবশেষে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে তা বেনাপোলে প্রবেশ করেছে। আরও কয়েকটি ট্রাক এখনো অপেক্ষমাণ রয়েছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পাওয়ার পর অনেক প্রতিষ্ঠান এলসি খুলেছে। ইতোমধ্যে নতুন চালান আসতে শুরু করেছে। রোববার থেকে আরও চাল দেশে প্রবেশ করবে বলে জানিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে চাল আমদানির পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ২,৫৮৪ শতাংশ। গত বছর যেখানে আমদানি হয়েছিল মাত্র ২৫.৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের চাল, সেখানে এ বছর তা দাঁড়িয়েছে ৬৮২.৪ মিলিয়ন ডলারে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ উদ্যোগে দেশের বাজারে চালের সরবরাহ বাড়বে এবং দামের চাপ অনেকটাই কমবে। ব্যবসায়ীদের ধারণা, বাজারে প্রতি কেজি চালের দাম ৫ থেকে ৭ টাকা পর্যন্ত কমতে পারে।
বেনাপোল স্থলবন্দর পরিচালক শামিম হোসেন বলেন, পেট্রাপোল বন্দর হয়ে ৯টি ট্রাকে মোট ৩১৫ মেট্রিক টন মোটা চাল দেশে প্রবেশ করেছে। আমরা প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিয়েছি, যাতে দ্রুত চাল বাজারে সরবরাহ করা যায়।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, যারা ব্যালট বাক্স দখল করার স্বপ্নে বিভোর, তাদের স্বপ্ন ভঙ্গ হবে। যারা অস্ত্রবাজি করে ভোটে জিততে চাইবেন তাদের জন্যও আছে দুঃসংবাদ। ভোটকেন্দ্র দখলের ইতিহাস ভুলে যান। ভোটের বাক্স দখলের নিয়ত থেকে থাকলে আপনারা দয়া করে সরে আসুন। আমরা কঠোর অবস্থানে থাকব। তারা ঘুঘু দেখেছে ঘুঘুর ফাঁদ দেখেনি। তারা এবার ফাঁদ দেখবে। কোনো কেন্দ্রে অনিয়ম হলে পুরো ভোট বাতিল করা হবে।
গতকাল শনিবার রাজশাহী আঞ্চলিক লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (আরপিএটিসি) হল রুমে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে রাজশাহী অঞ্চলের নির্বাচন কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সিইসি বলেন, দেশের ক্রান্তি লগ্নে আমি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব নিয়েছি। এই নির্বাচনের ওপর নির্ভর করছে দেশ কোন দিকে আগাবে। দেশের ভবিষ্যৎ কোন দিকে যাবে। আমরা গণতন্ত্রের পথে হাঁটব নাকি অন্য পথে হাঁটব। এটা নির্ধারিত হবে এই নির্বাচন থেকে। নির্বাচনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশ-জাতি, ইতিহাস আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। আমরা নির্বাচন কমিশন কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য দ্বারা গাইডেড না। আমরা কোনো রাজনীতির মধ্যে ঢুকতে চাই না। আমাদের কাজ হচ্ছে সরকার যখন চাচ্ছে নির্বাচনটা অর্গানাইজ করা, সেটা করে দেওয়া। আমরা এর মধ্যে থাকব। কোনো রাজনৈতিক বিতর্কে আমরা যেতে চাই না।
নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা কিন্তু একটা সুষ্ঠু, সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে পুরোদমে প্রস্তুতি নিচ্ছি। এই সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমরা যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়েছি। ভোটার তালিকার বিশাল একটা দায়িত্ব ছিল। আমাদের অফিসাররাসহ ৭৭ হাজারের বেশি লোক আমরা কাজে লাগিয়েছি। এর আগে তাদের ট্রেনিং দিতে হয়েছিল। তারপর তাদের মাঠে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে কাজে। আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে হালনাগাদ করেছি, মৃত ভোটার আইডেনটিফাই করেছি, সেগুলো বাদ দিয়েছি। কিছু লোক ভোটার হওয়ার যোগ্য কিন্তু তাদের ভোটার লিস্টে নাম ছিল না, তাদেরকে আমরা আইডেনটিফাই করেছি। সবমিলিয়ে আমাদের ভোটার তালিকা মোটামুটি হালনাগাদ হয়ে গেছে। কিছু কারেকশন শেষ হলে আপনারা ফাইনাল তালিকা পেয়ে যাবেন।
কোন পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এ বিতর্ক নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, আনুপাতিক পদ্ধতি বা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন সংবিধানে নেই। সংবিধানের বাইরে আমরা যেতে পারি না। এটা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক চলছে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে। আমি এর মধ্যে ঢুকতে চাই না। যদি আইন পরিবর্তন হয় তাহলে হবে। স্ট্রাইকিং ফোর্স নয়, সেনাবাহিনীকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আমরা কাজ করছি। সেনাবাহিনী যাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত হয় সেই ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি।
সরকার চাপ দিলে পদত্যাগ করবেন জানিয়ে তিনি বলেন, সরকার নির্বাচন নিয়ে আমাকে এখন পর্যন্ত কোনো চাপ দেয়নি। আমাকে চাপ দিলে আমি পদত্যাগ করব, চেয়ারে থাকব না। আওয়ামী লীগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, লীগের এই মুহূর্তে কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নেই। তাদের বিচার চলছে। বিচার চলাকালে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। দেখা যাক বিচারে কী হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন।
সামজিক ও রাজনৈতিক সমস্যার কারণে হাওর এবং চরাঞ্চলের দুর্গম এলাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা থাকতে চান না এবং তারা শহরে চলে আসতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডাঃ বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার।
শনিবার (২৩ আগস্ট) দুপুরে কিশোরগঞ্জ জেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও প্রাথমিক শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণের সাথে প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে করণীয় বিষয়ে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।
উপদেষ্টা বলেন, আমার বাড়ি হাওরে আমি সবই জানি। বিষয়গুলো নিয়ে আমি পরিষ্কার। এটা শুধু হাওরের সমস্যা না। সব জায়গাতেই চরাঞ্চলে শিক্ষকেরা থাকতে চায় না এবং তারা শহরে আসতে চায়। এই বিষয়টি সামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা শুধুমাত্র যদি আমাদের সমস্যা হতো তাহলে সমাধান করা যেতো। আমাদের নিয়ম কি? আমাদের নিয়ম হচ্ছে শিক্ষকেরা উপজেলাতে নিয়োজিত হবেন, যেখানে চাকরি পাবেন সেখানে থাকবেন। কিন্তু বদলির বিষয়গুলো কোথা থেকে আসে? উপর থেকে আসে। তদবিরগুলো কোথা থেকে আসে? উপর থেকে আসে। উপর থেকে আসে সমস্যাগুলো। এগুলো কিসের সমস্যা? এগুলো আমাদের সামাজিক সমস্যা, আমাদের রাজনৈতিক সমস্যা। বিষয়টি জটিল উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, এগুলোকে যতটুকু সম্ভব কাটিয়ে উঠার জন্য চেষ্টা করছি। আমরা বরাবরই চাই হাওরে শিক্ষকেরা থাকুক। কিন্তু বিভিন্নভাবে বিষয়গুলো হয় না।
সম্প্রতি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের ১০ম গ্রেডে উন্নীতকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার, তাদের নিয়ন্ত্রণকারী কর্মকর্তা সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারগণও একই গ্রেডে আছে, এক্ষেত্রে প্রশাসনিক চেইন অব কমান্ড বজায় রাখার জন্য এটিইওদের গ্রেড উন্নয়নে সরকারের কোনো সিদ্ধান্ত আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, আমাদের অনেক ক্ষেত্রেই একই গ্রেডের কর্মকর্তারা রয়েছেন। যারা নিয়ন্ত্রণকারী কর্মকর্তা। কলেজগুলোতে যান যেখানে প্রিন্সিপাল এবং প্রফেসররা একই। মেডিকেল কলেজে যান সেখানেও একই। এমন অনেক জায়গাতেই রয়ে গেছে। ফলে এইটা হলেই যে করা যায় না এটা ঠিক না। এটা হচ্ছে আমার অবস্থান। দুই নাম্বার অবস্থান তাদের গ্রেডের উন্নতি প্রয়োজন কিনা? অবশ্যই প্রয়োজন। কারণ তারা দশম গ্রেডে ঢুকছেন তাদের তো পদোন্নতি প্রয়োজন। সুতরাং তাদের গ্রেড উন্নতি করা প্রয়োজন। আমি মনে করি এটা প্রয়োজন। আমরা সেজন্য কতৃপক্ষের কাছে লিখছি যে তাদের গ্রেডের উন্নতি করা হউক। উন্নতি না হলেই চেইন অফ কমাণ্ড ভেঙে যাবে এটি আমরা ঠিক মনে করি না।
মতবিনিময় সভায় উপদেষ্টা অধ্যাপক ডাঃ বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, বেসরকারি বিদ্যালয়গুলো বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে অভিভাবকদের আর্কষণ করার জন্য। এটা তাদের ব্যবসা। আর অভিভাবকরা মনে করে সরকারি বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করলে প্রেস্টিজ চলে যাবে। অনেক কিছু চলে যেটা সংবিধান বা আইন মেনে চলে না। কিন্তু আমাদের অবস্থান কি সেটা জানা আমাদের কর্তব্য। আমাদের সংবিধান বলে শিক্ষা আমাদের মৌলিক অধিকার। আমরা একটা আইন করেছি বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা। অর্থাৎ দেশের প্রত্যেকটা শিশু অবৈতনিক শিক্ষা পাবে। এজন্য অভিভাবকরা প্রত্যেকটা শিশুকে এটা গ্রহণ করাতে বাধ্য। আমাদের শিশুদের ছোট বেলা থেকেই বিভিন্নভাবে ভাগ করে ফেলছে। আমাদের যাদের অর্থের অভাব নেই তারা দামি দামি স্কুল খুললাম। আমাদের যারা নীতিনির্ধারক তাদের সন্তানেরা পড়ছে দামি স্কুলে। সাধারণ মানুষের সন্তানেরা পড়ছে সরকারি স্কুলে। ফলে সরকারি স্কুল, অবৈতনিক স্কুল যে মনোযোগ পাওয়ার কথা তা পায় না। সেজন্য আমাদের শিক্ষাখাতে বরাদ্দের প্রয়োজন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মোঃ মাসুদ রানা বলেন, জেলায় ৮০৫ জন শিক্ষক প্রশিক্ষণ বিহীন রয়েছে। অহেতুক কারন দেখিয়ে যেন কেউ প্রশিক্ষণ থেকে বিরত না থাকেন। নির্বাচন ব্যতীত অন্যান্য দায়িত্ব যেনো পালন করতে না হয় সেজন্য আমরা কাজ করছি। প্রধান শিক্ষকরা ১০ম গ্রেড পেয়েছেন। এতে আপনাদের প্রতিও রাষ্ট্রের চাহিদা বেড়েছে, সেদিকটি খোয়াল রাখতে হবে। সহকারি শিক্ষকদেরও মূল্যায়ন করা প্রয়োজন। স্কুল ফিডিং কার্যক্রম চালু হবে ১৮০টি স্কুলে। খাদ্যের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠলে নমুনা সংগ্রহ করতে হবে। খাদ্যের নমুনাতে কোনো সমস্যা দেখা দিলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ইউপিইটিসি ইন্সট্রাক্টররা মডেল স্কুলে সঠিকভাবে মনিটরিং করে না। পিটিআই'র ইন্সট্রাক্টরদেরও এ কাজে লাগাতে হবে। প্রাথমিকের সকল শূন্যপদ পূরনের বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিদ্যালয়ের জমি সংক্রান্ত মামলা জট কমানোর জন্য জেলা প্রশাসক ব্যবস্থা নিবেন বলে তিনি আশা করেন।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু নূর মোঃ শামসুজ্জামান মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বলেন, আমাদের এই মূহুর্তে কিন্তু শিক্ষকদের শূন্য পদের সংখ্যা বেশি নয়। সাড়ে ১৩ হাজার পদ শূন্য। আমরা আশা করতেছি এই মাসের মধ্যেই বিজ্ঞপ্তি দিব এবং ডিসেম্বরের মধ্যে নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করব। জেলায় ১৩টি উপজেলার মধ্যে ১০টি উপজেলাতেই মিড ডে মিল চালু আছে।
এ সময় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এনডিসি (পলিসি এন্ড অপারেশন) মোহাম্মদ কামরুল হাসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মুকিত সরকার, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মজিব আলম। মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মিজাবে রহমত উপস্থিত ছিলেন।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ঢাকার পরিবেশ রক্ষায় সামগ্রিক ব্যবস্থার পরিবর্তন প্রয়োজন। শুধু ব্যক্তির পরিবর্তন নয়, দেশের সামগ্রিক ব্যবস্থার পরিবর্তন প্রয়োজন। আমাদের সবাইকে পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত হতে হবে এবং পরিবর্তনের দিকে এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি আজ ঢাকার মতিঝিলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) অডিটোরিয়ামে আয়োজিত ফোকাস গ্রুপ ডিসকাশন (এফজিডি) শীর্ষক “ডি-সেন্ট্রালাইজেশন অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ওয়েলফেয়ার অফ দ্য ক্যাপিটাল: টুয়ার্ডস আ সাসটেইনেবল ঢাকা” অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
উপদেষ্টা জানান, শিল্প দূষণের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করা হবে এবং ঢাকার আশেপাশের নদী দূষণ রোধে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হবে। পলিথিন বিরোধী প্রক্রিয়া ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। ঢাকাকে বায়ুদূষণের কারণে সাভারকে ‘ডিগ্রেডেড এয়ারশেড’ ঘোষণা করা হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ভবন ও কক্ষের নকশা পরিবেশবান্ধবভাবে করতে হবে। গ্রামীণ আবহই টেকসই এবং একজন আদর্শ কৃষকের জীবনযাপন-ই টেকসই উন্নয়নের প্রতিচ্ছবি। অনাবৃত জায়গায় ঘাস লাগাতে হবে। শুধু সরকারের উদ্যোগ যথেষ্ট নয়, জনগণের সক্রিয় সম্পৃক্ততা অপরিহার্য।
উপদেষ্টা আরও বলেন, বর্তমান সরকার টেকসই উন্নয়নে বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছে এবং জনগণকে সম্পৃক্ত করছে। তিনি দেশ নিয়ে নতুন করে ভাবার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সরকার দিকনির্দেশনা দেবে, কিন্তু পরিবর্তনের পথে এগিয়ে আসতে হবে সবার।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন রাজউক-এর চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মো. রিয়াজুল ইসলাম। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ভিত্তি স্থপতিবৃন্দ লিমিটেড-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক স্থপতি ইকবাল হাবিব। ঢাকা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি-এর সভাপতি তাসকিন আহমেদ এফজিডি-এর সভাপতিত্ব এবং সঞ্চালনা করেন।
অন্যান্যের মধ্যে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মোঃ জহিরুল ইসলাম, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি); মোঃ জিয়াউল হক, পরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর (ডিওই), বাংলাদেশ সরকার; কাজী গোলাম নাসির, সাবেক প্রধান স্থপতি, স্থাপত্য অধিদপ্তর, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়; মোঃ আশরাফুল ইসলাম, প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ, রাজউক; ড. মোঃ শামসুল হক, অধ্যাপক, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, বুয়েট; লিয়াকত আলী ভূঁইয়া, সিনিয়র সহ-সভাপতি, রিহ্যাব; দিলবাহার আহমেদ, ভৌগোলিক ও নগর পরিকল্পনাবিদ, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি); ড. আদিল মোহাম্মদ খান, সভাপতি, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি)।
আলোচনায় বক্তারা ঢাকার বিকেন্দ্রীকরণ, পরিবেশ সুরক্ষা ও টেকসই নগর উন্নয়ন নিয়ে মতামত প্রদান করেন। তারা মনে করেন, নগরের স্থায়ী কল্যাণ নিশ্চিত করতে সমন্বিত পরিকল্পনা ও শক্তিশালী নীতিমালা বাস্তবায়ন জরুরি।
আসন্ন ১৩তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কেন্দ্র দখলের যেকোনো অপচেষ্টার বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। এ ধরনের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের ভোট বাতিল করা হবে বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।
রাজশাহীর আঞ্চলিক লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে আজ শনিবার তিনি বলেন ‘যারা ভোটকেন্দ্র দখলের স্বপ্ন দেখছেন, তাদের সেই স্বপ্ন এবার দুঃস্বপ্নে পরিণত হবে, আমরা সম্পূর্ণ প্রস্তুত’।
নির্বাচনী প্রস্তুতির অগ্রগতি সম্পর্কে সিইসি নাসির উদ্দিন বলেন, পবিত্র রমজানের আগে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টার পরামর্শক্রমে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন,‘ নির্বাচন বিষয়ে কোনো রাজনৈতিক দলের বক্তব্যের বিষয়ে আমরা কিছু বলছি না। সংবিধান অনুযায়ী আমাদের দায়িত্ব পালন করছি’।
নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পর্কে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সিইসি বলেন, সংবিধান অনুযায়ী বর্তমানে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতির কোনো সুযোগ নেই। তাই প্রচলিত আইন মেনেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তিনি আরও বলেন, ‘আইনের পরিবর্তন হলে কমিশন সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।’
নির্বাচনে সেনাবাহিনীর ভূমিকা প্রসঙ্গে সিইসি নাসির উদ্দিন বলেন, তারা স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহযোগিতা করবে। এই মুহূর্তে জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপারদের (এসপি) বদলির কোনো পরিকল্পনা নেই বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
সিইসি জানান, নির্বাচন কমিশনের তালিকাভুক্ত প্রশিক্ষিত কর্মকর্তার সংখ্যা প্রায় ৫ হাজার ৭০০ জন। এদের অনেকেরই নির্বাচন পরিচালনার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তবে যাদের বিরুদ্ধে আগের নির্বাচনগুলোতে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে, তাদের এবারের নির্বাচনে দায়িত্ব দেওয়া হবে না।
‘নির্বাচন কমিশনের ওপর সরকারের কোনো চাপ নেই’ উল্লেখ করে সিইসি বলেন, ‘কোনো হস্তক্ষেপ করা হলে, আমি পদত্যাগ করব, দায়িত্বে থাকব না।’
রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে সিইসি নাসির উদ্দিন বলেন, আওয়ামী লীগ বর্তমানে আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ নির্ভর করছে সস্পূর্ণ আইনি প্রক্রিয়ার ওপর।
রাজশাহী অঞ্চলে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে সিইসি বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়ে সভা শেষ করেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ঘোষিত সময় অনুযায়ী আগামী জাতীয় নির্বাচনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী আজ শনিবার বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি)’র হিমাগার, কেন্দ্রীয় বীজ পরীক্ষাগার ও সবজি বীজ প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, নির্বাচনের প্রস্তুতি যেভাবে নেওয়া দরকার, আমরা সেভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছি। আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনে আমাদের প্রস্তুতি নিতে কোন অসুবিধা হবে না। এখন জনগণ, রাজনৈতিক দল ও গণমাধ্যম সবাই নির্বাচনমুখী। এটি বাধাগ্রস্ত করতে কোনো ষড়যন্ত্র কাজে আসবে না।
বাজারে সবজির দামের বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বৃষ্টির কারণে সবজি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় দাম কিছুটা বেড়েছে। আবার বাজারে আলুর দাম কিন্তু কম। আমাদের দেশে গবেষণার কাজ আরো জোরালো হলে বিদেশ থেকে বীজ আলু আর আনতে হবে না, তখন আলুর উৎপাদন খরচ আরো কমে আসবে।
তিনি বলেন, সরকারি মাধ্যমে আলু ক্রয় করা হবে, দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হবে যেন কৃষক ন্যায্যমূল্য পান।
লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়ে সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে, এটি চলমান প্রক্রিয়া।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আগের তুলনায় এখন সীমান্ত অনেক বেশি সুরক্ষিত আছে এবং সীমান্ত এলাকায় যারা বসবাস করেন তারাও অনেক সচেতন।
তিনি বলেন, বিগত সময়ে মানুষ মত প্রকাশ করতে পারতো না কিন্তু এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অনেক কিছুই লিখতে পারছেন।
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে একটি বাসায় বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে ফ্রিজের কম্প্রেসার বিস্ফোরণে একই পরিবারের নারী ও শিশুসহ ৯ জন দগ্ধ হয়েছেন।
শনিবার (২৩ আগস্ট) ভোর সাড়ে ৩টার দিকে সিদ্ধিরগঞ্জের হিরাঝিল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরে দগ্ধদের উদ্ধার করে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়।
দগ্ধরা হলেন, আসমা বেগম (৩৫), তানজিল ইসলাম (৪০), তিশা (১৭), আরাফাত (১৫), হাসান (৩৫), মুনতাহা (১১), জান্নাত (৪), ইমাম উদ্দিন (১ মাস) ও সালমা বেগম (৩২)।
জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক সার্জন ডা. সুলতান মাহমুদ শিকদার জানান, শিশুসহ দগ্ধ ৯ জন আমাদের এখানে এসেছে। তাদের মধ্যে, হাসানের শরীরের ৪৪ শতাংশ, জান্নাতের ৪০ শতাংশ, মুনতাহার ৩৭ শতাংশ, সালমার ৪৮ শতাংশ, শিশু ইমামের ৩০ শতাংশ, আরাফাতের ১৫ শতাংশ, তিশার ৫৩ শতাংশ ও আসমার ৪৮ শতাংশ দগ্ধ হয়। তাদের সবার অবস্থায়ই আশঙ্কাজনক। তাদের মধ্যে শুধু তানজিল ইসলামকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
দগ্ধদের হাসপাতালে নিয়ে আসা রাকিবুল ইসলাম জানান, দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে হঠাৎ গ্যাস পাইপলাইন থেকে বিস্ফোরণে শিশুসহ দগ্ধ হয় ৯ জন। পরে তাদের উদ্ধার করে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নিয়ে আসলে ভর্তি দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও জানান, আসমা বেগমের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুর থানা চকগদ্দর গ্রামে। বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানার হিরাঝিল এলাকায় থাকতেন তারা। আসমা বেগম, তানজিল ইসলাম, তিশা, আরাফাত হলেন একই পরিবারের সদস্য। মোহাম্মদ হাসান তার স্ত্রী সালমা বেগম, মুনতাহা, জান্নাত ও ইমাম উদ্দিন, তারা সবাই একই পরিবারের। তাদের গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালী জেলার বাউফল থানার জৌদা গ্রামে। তারাই সবাই একই সঙ্গে থাকতেন। আসমা বেগম একজন পোশাক শ্রমিক ও হাসান দিনমজুরের কাজ করেন।
এ বিষয়ে আদমজী ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. মিরন মিয়া বলেন , প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ফ্রিজে সরাসরি বৈদ্যুতিক লাইন দেওয়া ছিল। বৈদ্যুতিক লাইনের শর্ট-সার্কিট থেকে প্রথমে আগুন ধরে যায়, সেই আগুন থেকে ফ্রিজের কম্প্রেসার বিস্ফোরণ হয়। এতে পরিবারের সদস্যরা দগ্ধ হন। আমরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হওয়ার আগেই স্থানীয়রা দগ্ধদের উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে যান।”
তিনি আরও বলেন , “আমরা আশপাশে কিংবা ঘরের ভেতরে অন্য কোনো ধরনের গ্যাসের আলামত পাইনি। সবকিছুই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে ফ্রিজের কম্প্রেসার থেকেই বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছিল।”
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, আনুপাতিক পদ্ধতি বা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন সংবিধানে নেই। সংবিধানের বাইরে আমরা যেতে পারি না। যদি আইন পরিবর্তন হয় তাহলে এই পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে।
শনিবার (২৩ আগস্ট) সকাল ১০টায় রাজশাহী আঞ্চলিক লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে রাজশাহী অঞ্চলের নির্বাচন কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভার আগে তিনি এসব কথা বলেন।
এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘নির্বাচন হবে কি হবে না, এ নিয়ে কোনো রাজনৈতিক দলের বক্তব্যের ভেতর আমরা যেতে চাই না। প্রধান উপদেষ্টার কথা অনুযায়ী আমরা এগিয়ে যেতে চাই।’
‘প্রধান উপদেষ্টার চিঠি পাওয়ার পর থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি জোরদার করা হয়েছে। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে রমজানের আগে যাতে নির্বাচন হয় তার জোর প্রস্তুতি চলছে।’
কোন পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, এ বিতর্ক নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘আনুপাতিক পদ্ধতি বা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন সংবিধানে নেই। সংবিধানের বাইরে আমরা যেতে পারি না। এটা নিয়ে তর্ক বিতর্ক চলছে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে। আমি এর মধ্যে ঢুকতে চাই না। যদি আইন পরিবর্তন হয় তাহলে হবে।’
তিনি বলেন, ‘স্ট্রাইকিং ফোর্স নয়, সেনাবাহিনীকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সদস্যদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আমরা কাজ করছি। সেনাবাহিনী যাতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত হয় সেই ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। জেলা প্রশাসক বা পুলিশ সুপার যারা এর আগে নির্বাচনের দায়িত্বে ছিল, তাদের পদায়নের চিন্তা নেই।’
বিগত সরকার আমলে দায়িত্ব পালন করা নির্বাচন কর্মকর্তাদের নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের অধীনে ৫৭০০ কর্মকর্তা রয়েছে। তারা আগেও দায়িত্ব পালন করেছেন। এদের কোথায় পাঠাব? তবে যারা স্বপ্রণোদিত হয়ে বিগত নির্বাচনে অনিয়ম করেছিল, সেইসব নির্বাচন কর্মকর্তাদের রাখা হবে না’
সরকারের কোনো চাপ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই সরকার নির্বাচন নিয়ে আমাকে এখন পর্যন্ত কোনো চাপ দেয়নি। যদি চাপ দেয়, আমি পদত্যাগ করব, চেয়ারে থাকব না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগের এই মুহূর্তে কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নেই। তাদের বিচার চলছে। বিচার চলাকালীন আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। দেখা যাক বিচারে কী হয়।’
সিইসি বলেন, ‘ভোট আসতে আসতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হবে। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে রমজানের আগে যাতে নির্বাচন হয় তার জোর প্রস্তুতি চলছে। যারা বাক্স দখল করার স্বপ্নে বিভোর, তাদের স্বপ্নভঙ্গ হবে।’
‘যারা অস্ত্রবাজি করে ভোটে জিততে চাইবেন তাদের জন্য দুঃসংবাদ। ভোটকেন্দ্র দখলের ইতিহাস ভুলে যান। আমরা কঠোর অবস্থানে থাকব। ভোটকেন্দ্র দখলের চেষ্টা করলে পুরো কেন্দ্রের ভোট বাতিল করা হবে।’
পরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার সভায় রাজশাহী অঞ্চলের নির্বাচন কর্মকর্তাদের নির্বাচন বিষয়ে নানা দিকনির্দেশনা দেন।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর সীমান্তের মহিষকুন্ডি মুন্সিপাড়া এলাকায় পদ্মানদীতে কার্গো ট্রলারে স্থানীয় যুবকদের পিকনিক চলাকালে অভিযান চালিয়ে মাদকসহ দুই যুবককে আটক করেছে বিজিবি। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাদণ্ড ও জরিমানা করা হয়।
আটকরা হলেন— রাব্বী হোসেন (২০), মহিষকুন্ডি পাকুড়িয়া গ্রামের হানিফ হোসেনের ছেলে এবং অনিক হোসেন (১৮), ডাকপাড়া গ্রামের মৃত ইমদাদুল হকের ছেলে।
ভ্রাম্যমাণ আদালতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল হাই সিদ্দিকী রায় প্রদান করেন। এতে রাব্বী হোসেনকে ২ মাসের কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা, আর অনিক হোসেনকে ৭ দিনের কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার (২২ আগস্ট) সকাল ১১টার দিকে আশ্রায়ন বিওপির দায়িত্বপূর্ণ এলাকার পদ্মানদীতে অভিযান চালানো হয়। এ সময় ওই কার্গো ট্রলার থেকে ৩ বোতল মদ, ৩৪৩ গ্রাম গাঁজা এবং ২ প্যাকেট পাতার বিড়ি উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত মাদকের আনুমানিক মূল্য প্রায় ৫ হাজার ৮১০ টাকা।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া ৪৭ বিজিবির সহকারী পরিচালক জাকিরুল ইসলাম জানান, আটক দুই যুবককে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জেল জরিমানা প্রদান করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।