২০২০ সালের মার্চের ঘটনা। রাজধানীর মহাখালীর আমতলীতে সালাম না দেয়ায় রহমত উল্লাহ নামে এক কিশোরকে ছুরিকাঘাতে খুন করে অনন্ত নামে আরেক কিশোর। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে একই ধরনের আরেকটি ঘটনা ঘটে রাজধানীর মুগদা এলাকায়। ব্যান্ডেজ নামে এক কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের সালাম না দেয়ায় হাসান নামে এক কিশোরকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। গত বছরের অক্টোবরেও ঘটে একই ঘটনা। সালাম দেয়া না দেয়াকে কেন্দ্র করে রাজধানীর পল্লবীতে দুই কিশোর গ্যাংয়ের মধ্যে মারামারি হয়। এ সময় রাকিব নামে এক কিশোর ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হয়।
শুধু সালাম দেয়া না দেয়া-ই নয়, আধিপত্য বিস্তারসহ নানা রকম তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রায়ই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। গত কয়েক বছরে কিশোর গ্যাংয়ের হাতেই খুন হয়েছে অন্তত দেড় শতাধিক কিশোর। একাধিকবার অভিযান চালিয়ে কিশোর অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
কর্মকর্তারা বলছেন, কিশোর অপরাধ দমন তাদের কাছে রীতিমতো চ্যালেঞ্জের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন সময় সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে কিশোর অপরাধীদের গ্রেপ্তারের পাশাপাশি অভিভাবকদের সচেতন করা হচ্ছে। তার পরও কিশোর অপরাধীদের দৌরাত্ম্য থামানো যাচ্ছে না।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, কিশোর অপরাধীদের অপতৎপরতা প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সারা দেশের কিশোর অপরাধীদের একটি তালিকা তৈরি করেছে। পুলিশের তথ্য বলছে, বর্তমানে সারা দেশে কিশোর অপরাধীদের ১৭৩টি দল সক্রিয় রয়েছে। এসব দলে ২ হাজার ২৯ জন কিশোর রয়েছে। কিশোর অপরাধের ঘটনায় এখন পর্যন্ত সারা দেশে ৭৮০টি মামলা হয়েছে, এসব মামলায় আসামি ৮৯৬ জন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে কিশোর অপরাধীরা। মাঝেমধ্যে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হলেও কিশোর অপরাধীদের গ্যাং কালচার বন্ধ করা যাচ্ছে না। প্রতিটি গ্যাংয়ের নেপথ্যেই স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের মদদ রয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) এ কে এম হাফিজ আক্তার দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘কয়েক দিন পর পরই কিশোর অপরাধের ঘটনার মোকাবিলা করতে হচ্ছে আমাদের। তুচ্ছ ঘটনায় একে অপরকে খুন করছে। শুধু আইন প্রয়োগ করে কিশোর অপরাধ দমন করা সম্ভব না। কিশোর অপরাধী এতটাই বেড়েছে যে ধরে ধরে সংশোধনাগারে পাঠালে সেখানেও জায়গা কুলাবে না। আমরা তালিকা তৈরি করে বিট পুলিশের মাধ্যমে নিয়মিত মনিটর করি। কিশোর অপরাধীদের কাউন্সেলিং করে সুপথে ফিরিয়ে আনতে হবে। আমরা পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিসহ নানাভাবে কিশোর অপরাধ দমনের জন্য কাজ করছি।’
সংশ্লিষ্টরা জানান, গ্যাং কালচার মূলত শুরু হয় ১৭৮৩ সালে আমেরিকায়, স্ট্রিট গ্যাংয়ের মাধ্যমে। এরপর তা লাতিন আমেরিকাসহ ইউরোপ ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশে বিভিন্ন সমযে সন্ত্রাসীদের পৃথক গ্যাং থাকলেও এক দশক ধরে এই কিশোরদের মধ্যেও গ্যাং কালচার শুরু হয়েছে। ২০১৭ সালে উত্তরায় আদনান কবির নামে ১৪ বছর বয়সী এক কিশোরকে তার সমবয়সীরা পিটিয়ে হত্যার পর কিশোর গ্যাংয়ের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।
কিশোর অপরাধ নিয়ে গোয়েন্দা সংস্থার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে দেশে একশ্রেণির কিশোর তরুণদের গ্যাং কালচারে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। সহপাঠী, একই পাড়া-মহল্লায় বসবাসকারী বিভিন্ন শ্রেণি-পেশায় নিয়োজিত বখাটে কিশোর তরুণরা ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একত্রিত হয়ে বাহারি ও চটকদার নাম দিয়ে এলাকাভিত্তিক গ্যাং তৈরি করে বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। ডিসকো বয়েজ, বিগ বস, নাইন স্টার, ব্ল্যাক রোজ, নাইন এমএম বয়েজ, ভাইপার ইত্যাদি নামে এলাকাভিত্তিক গ্যাংগুলোর কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়। সারা দেশের ১৭৩টি কিশোর গ্যাংয়ের মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহানগরীতেই ১২৩টি। এসব গ্যাং সদস্য ফেসবুক ও ইন্টারনেটে গ্রুপ তৈরি করে ইভটিজিং, ধর্ষণ, খুন, মাদক গ্রহণ, চাঁদাবাজি, ভাড়াটে সন্ত্রাসী হিসেবে দখলবাজি, আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। এ ছাড়া কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে খুনের মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে। গ্যাং কালচারে জড়িয়ে পড়া এসব কিশোর অপরাধীকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে না পারলে ভবিষ্যতে সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য বড় ধরনের হুমকি হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে বলে শঙ্কাও প্রকাশ করা হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একজন কর্মকর্তা জানান, অ্যাডভেঞ্চার ও হিরোইজমের চিন্তাভাবনা থেকেই কিশোরদের মধ্যে গ্যাং কালচার শুরু হলেও তারা এখন ভয়ংকর অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। মাদকের নেশায় জড়িয়ে পড়া থেকে শুরু করে তারা চুরি, ছিনতাই, ইভটিজিং, মাদক ব্যবসা, ঝুঁকিপূর্ণ বাইক ও কার রেসিং, হত্যা, অপহরণ, চাঁদাবাজি, ধর্ষণ, মারামারি ও এলাকাভিত্তিক আধিপত্যের ঘটনা ঘটাচ্ছে। এ ছাড়া সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্ব, বখাটেপনা, বুলিং, র্যাগিং ইত্যাদি নিয়েও কিশোর গ্যাংয়ের মধ্যে নিজেদের মারামারি ও হতাহতের মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্র বলছে, বর্তমানে ঢাকা মহানগরে ৬৬টি কিশোর গ্যাংয়ের ১ হাজার ৪২ জন সদস্য রয়েছে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম মহানগরে ৫৭টি গ্যাংয়ে ৩১৬ জন সদস্য, খুলনা মহানগরে পাঁচটি গ্যাংয়ে ৩৫ জন, গাজীপুর মহানগরে পাঁচটি গ্যাংয়ে ৬৯ জন, ঢাকা বিভাগে ২৪টি গ্যাংয়ের ৩৪৪ জন, চট্টগ্রাম বিভাগের ১০টি গ্যাংয়ে ১১৪ জন, খুলনা বিভাগে দুটি গ্যাংয়ে ১৩ জন, বরিশাল বিভাগে চারটি গ্যাংয়ে ৫৮ জন ছাড়া সিলেট ও রাজশাহী বিভাগে ১৮ জনের একটি তালিকা করা হয়েছে।
পুলিশের সদর দপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানান, কিশোর গ্যাংয়ের নেতা ও সদস্যদের অপরাধ দমন ও গ্রেপ্তারের জন্য প্রতিটি মহানগর ও বিভাগে পৃথক তালিকা পাঠানো হয়েছে। রাজধানী ঢাকার বাইরে চট্টগ্রামে সবচেয়ে বেশি কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের উৎপাত রয়েছে। চট্টগ্রাম মহানগরীতে কিশোর অপরাধের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪০৩টি মামলাও হয়েছে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘আমরা কিশোর গ্যাং কালচার নির্মূলের জন্য কিশোরদের অভিভাবক ও স্কুলশিক্ষকদের সচেতন করার কার্যক্রম চালিয়ে আসছি। এ ছাড়া কিশোর-তরুণদের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ও খেলাধুলার সঙ্গে বেশি সম্পৃক্ত করার জন্য বলছি। এর ফলে কিশোর-তরুণরা অপরাধপ্রবণতা থেকে বের হয়ে আসবে। একই সঙ্গে যারা ইতিমধ্যে গ্যাং কালচারে ঢুকে অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
গাজীপুর মহানগরীর পুলিশ কমিশনার মোল্ল্যা নজরুল ইসলাম দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘আমি গাজীপুর মহানগরের কমিশনার হিসেবে যোগদান করার পর সব থানার ওসিসহ মাঠপর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের স্পষ্টভাবে কিশোর গ্যাং বন্ধ করার নির্দেশনা দিয়েছি। বর্তমানে গাজীপুর মহানগরে কোনো কিশোর গ্যাং থাকার কথা নয়। তার পরও যদি কোনো গ্যাং থাকে তাহলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
কিশোর গ্যাংয়ের নেপথ্যে রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়া
পুলিশ সদর দপ্তরের স্পেশাল ক্রাইম ম্যানেজমেন্ট শাখা থেকে সারা দেশের কিশোর গ্যাংয়ের একটি তালিকা সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সব ইউনিটের কাছে পাঠানো হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে পাঠানো তালিকাটি এই প্রতিবেদক সংগ্রহ করেছেন। ওই তালিকায় দেখা গেছে, প্রতিটি এলাকার কিশোর গ্যাংয়ের নেপথ্যে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর বা রাজনৈতিক নেতাদের সম্পৃক্ততা রয়েছে। তালিকায় মদদদাতা হিসেবে ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২১ জন ওয়ার্ড কমিশনারের নাম উল্লেখ রয়েছে। এ ছাড়া তিনজন এমপি, প্রয়াত এমপির ভাই, শ্যালক, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ওয়ার্ড ও মহানগর পর্যায়ের বিভিন্ন নেতাসহ আওয়ামী লীগের তিনজন উচ্চপর্যায়ের নেতার নামও রয়েছে।
প্রশ্রয়দাতা হিসেবে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে নাম থাকা ধানমন্ডি ও রায়েরবাজার এলাকার ওয়ার্ড কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম বাবলা দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘অনেক সময় কিশোর গ্যাংয়ের নেতা বা সদস্যরা অমুক ভাই-তমুক ভাইয়ের নাম ব্যবহার করে। কিন্তু আদৌ তার সঙ্গে কিশোর গ্যাংয়ের লোকজনের সম্পর্ক আছে কি না, তা জানতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রশাসনের লোকজন সব খোঁজখবর নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারে। আমি ওয়ার্ড কাউন্সিলর হিসেবে স্কুল-কলেজের শিক্ষক, মসজিদ-মাদ্রাসার ইমাম বা শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে এগুলো প্রতিরোধে নিয়মিত কাজ করি। সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করে কিশোর অপরাধীদের সুপথে ফিরিয়ে আনতে হবে।’
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার মুজিব সরোয়ার মাসুম দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘আমি কিশোর গ্যাং পছন্দ করি না। এগুলো প্যাট্রোনাইজ করার প্রশ্নই আসে না। এগুলো দমনের দায়িত্ব পুলিশের। পুলিশ অনুসন্ধান করে আইনগত ব্যবস্থা নিক, আমাদের কাছে সহযোগিতা চাইলে আমরা সহযোগিতা করব।’
রাজধানীর কিশোর গ্যাংয়ের লিডার যারা
ঢাকা মহানগরীর কিশোর অপরাধীদের তালিকায় পল্লবী এলাকায় সুজন ও রাসেল নামে দুই তরুণ একটি গ্যাং পরিচালনা করেন। এ ছাড়া সুমন গ্যাং, বিপ্লব মৃধা গ্যাং, সাগর গ্রুপ, কামরুল ইসলাম জয় ও আরজু ওরফে বিহারি আরজু নামে দুই তরুণের একটি গ্যাং, সোহাগ গ্রুপ, রনি গ্রুপ ও সোহেল একটি গ্যাং পরিচালনা করেন।
মিরপুরের দারুসসালাম এলাকায় আরাফাত নামে এক তরুণ একটি কিশোর গ্যাং পরিচালনা করেন। তিনি ৮ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সিনিয়র সাংগঠনিক সম্পাদক। একই এলাকায় অন্যান্য কিশোর গ্যাংয়ের মধ্যে নয়ন গ্রুপ অন্যতম।
মিরপুর এলাকায় ইমন নামে এক কিশোরের গ্যাং রয়েছে। তার আসল নাম নাজিমুর রহমান। এ ছাড়া সেলিম ও ফয়সাল নামে দুই কিশোর একটি গ্যাং পরিচালনা করে। তাদের দলে সদস্য রয়েছে ৯ জন। হৃদয় ও শাকিল নামে দুজনও পৃথক দুটি গ্যাং পরিচালনা করেন। মোহাম্মদপুরে লওঠেলা নামে একটি কিশোর গ্যাং রয়েছে। চাঁদ উদ্যানকেন্দ্রিক এই গ্যাংয়ের দলনেতা হলেন সাইদুল ইসলাম রকি। জিনজির নামে বাঁশবাড়ী এলাকায় আরেকটি গ্রুপ পরিচালনা করেন হৃদয় মিয়া ওরফে স্লো হৃদয়। মোহাম্মদপুরের রাজিয়া সুলতানা রোড এলাকায় পাটালী নামে আরেকটি কিশোর গ্যাং পরিচালনা করেন ফালান ওরফে হাফিজুর রহমান। এ ছাড়া গাংচিল নামে মোহাম্মদপুরের অন্য একটি গ্যাংয়ের লিডার হলেন লম্বু মোশাররফ ও মানিক।
ডেমরার দনিয়া এলাকায় একটা কিশোর গ্যাং পরিচালনা করেন কামরুল হাসান পলাশ। তার দলে ২০-২৫ জন সদস্য রয়েছে। ইয়াছিন ওরফে লিটনের দলে ১০-১২ জন সদস্য রয়েছে। বৃহত্তর ওয়ারী এলাকায় মুক্তার মিয়ার গ্রুপে ১০ জন, শেখদি নাসির গ্রুপে ৮-৯ জন, জুয়েলের গ্রুপে ১০-১২ জন, প্রকাশের গ্রুপে ৫ জন, আলামিন গ্রুপে ৪ জন, সাইদ গ্রুপে ৮-১০ জন, শান্ত গ্রুপে ১০-১২ জন, শহীদ ফারুক সড়ক এলাকায় ভাগিনা সুমন গ্রুপে ১৪-১৫ জন, বাঁশেরপুল এলাকায় চপলের ফকিং গ্রুপ, আরিফ ওরফে হুড আরিফের একটি গ্রুপ রয়েছে। সূত্রাপর এলাকায় হানি সিং নামে জয় একটি কিশোর গ্যাং পরিচালনা করেন। তার গ্রুপের সদস্য ৮-১০ জন। লালচান মোকিম লেন এলাকায় ফেরদৌস গ্রুপে ৫-৭ জন, গেন্ডারিয়ায় আরমান গ্রুপে ১২-১৫ জন, চালকনগর লেনের সোহাগ গ্রুপে ৮-১০ জন, বনগ্রাম এলাকায় নিশাত গ্রুপে ১৫-২০ জন সদস্য রয়েছে।
ধানমন্ডি এলাকায় সক্রিয় রয়েছে তৌসিফ গ্রুপ, রায়েরবাজারে সৈকত গ্রুপ, অরভিল-আলভির ব্রাদারহুড গ্রুপ, কালা আরাফাতের সিটিএন গ্রুপ, ল্যাব সাকিব গ্রুপ সক্রিয়। লালবাগে জুম্মন গ্রুপ, প্রবাল গ্রুপ, বাবু ও জিহাদ গ্রুপ, জন গ্রুপ, আহাদ গ্রুপ, সাগর গ্রুপ ও সুমন গ্রুপ সক্রিয়। এ ছাড়া তুহিন ও রিয়াজ গ্রুপ, ইমন ও সাব্বির গ্রুপ, পাত্তি ও রাব্বি গ্রুপ সক্রিয়। প্রতিটি গ্রুপেই ১৫-২০ জন করে সদস্য রয়েছে।
কামরাঙ্গীরচর এলাকায় ইয়াছিন, শুভ, ফয়সাল, ইব্রাহীম ও ফাহিম নামে পাঁচ তরুণ পৃথক গ্রুপ পরিচালনা করেন। পূর্বাচল এলাকায় সাদ্দাম হোসেন ওরফে কানা সাদ্দাম, খিলক্ষেতে কায়েস, আরিফ, তৌকির আহমেদ, অলিউল ইসলাম, ডিসকো আলামিন, মেহেদী হাসান, সুমন ও রফিকুল ইসলাম পৃথক গ্রুপ পরিচালনা করেন।
দক্ষিণখানে শান্ত গ্রুপ, ইয়ং স্টার গ্রুপ, ডিজে গ্রুপ ও রাসেল গ্রুপ সক্রিয়। উত্তরা এলাকায় ডিসকো সেতু ডিসকো বয়েজ নামে একটি গ্রুপ পরিচালনা করেন। এ ছাড়া নাইন স্টার গ্রুপ, নাইন এমএম গ্রুপ, বিগবস গ্রুপ, পাওয়ার গ্রুপ, জামালী ধ্রুবর গ্রুপ সক্রিয়। সবুজবাগ এলাকায় রয়েছে তকবির ওরফে হাতকাটা তকবির ও রনি বাহিনী। রাজারবাগ, কালীবাড়ি ও কুসুমবাগ এলাকায় তাদের পদচারণা বেশি। রনি ওরফে গুজা রনি ও দাতভাঙ্গা মামুনের বাহিনী সক্রিয় কাচারীপাড়া, নয়াবাগ, নন্দীপাড়া, মাদারটেক ও দক্ষিণগাঁও এলাকায়। বেলাল ও নয়ন গ্রুপ সক্রিয় মদিনাবাগ, উত্তর মুগদা, দক্ষিণ মুগদা, মান্ডা ও মানিকনগর এলাকায়।
যদি কোনো ব্যক্তি উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে মিথ্যা ও তথ্য গোপন করে বিভ্রান্তিকর কাগজপত্র দিয়ে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের সদস্য বা আহত জুলাই যোদ্ধা দাবি ও সুবিধা গ্রহণ করেন তা অপরাধ বলে গণ্য হবে।
নতুন জারি করা অধ্যাদেশে এ ধরনের কর্মকাণ্ডের জন্যে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড, দুই লাখ টাকা জরিমানা বা আর্থিক সহায়তার দ্বিগুণ অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
'জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার এবং জুলাই যোদ্ধাদের কল্যাণ ও পুনর্বাসন অধ্যাদেশ, ২০২৫' গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাতে জারি করেছে সরকার।
এই অধ্যাদেশের দ্বিতীয় অধ্যায়ে অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা, কার্যাবলী, কর্মচারী,ইত্যাদি বিষয় রয়েছে। 'জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তর' প্রতিষ্ঠায় বিস্তারিত এখানে উল্লেখ রয়েছে। চতুর্থ অধ্যায়ে অপরাধ ও বিচার বিষয়ে বিস্তারিত বলা হয়েছে। এখানে বলা হয়, কোনও ব্যক্তি ‘শহীদ’ পরিবারের সদস্য বা যেকোনও শ্রেণির আহত না হওয়া সত্ত্বেও উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে বা জ্ঞাতসারে মিথ্যা, বিকৃত তথ্য প্রদান, তথ্য গোপন ও বিভ্রান্তিকর কাগজ দাখিল করে নিজেকে ‘শহীদ’ পরিবারের সদস্য বা আহত দাবি করে চিকিৎসা, আর্থিক, পুনর্বাসন সুবিধা দাবি অথবা গ্রহণ করেন তাহলে তিনি এই অধ্যাদেশের অধীন অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবে।।এতে আরও বলা হয়, কোনও ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এ বর্ণিত অপরাধ করলে অনধিক দুই বছরের কারাদণ্ড এবং অনধিক দুই লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত সুবিধা বা আর্থিক সহায়তার দ্বিগুণ পরিমাণ অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এই আইনের অধীন অপরাধ অ-আমলযোগ্য ও জামিনযোগ্য হবে। এই অধ্যাদেশের অধীন সংঘটিত অপরাধের অভিযোগ দায়ের, অনুসন্ধান, তদন্ত, বিচার, আপিল এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়ে কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর, ১৮৯৮ (অ্যাক্ট নং ভি অব ১৮৯৮) এর বিধানাবলি প্রযোজ্য হবে।
এছাড়া, অধ্যাদেশে নিহত-আহতদের দুই শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। ‘গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ’ এবং আহত ব্যক্তিদের যথাক্রমে ‘জুলাই শহীদ’ এবং ‘জুলাই যোদ্ধা’র স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। আহতদের মধ্যে তিনটি শ্রেণি রয়েছে। তা হলো, অতি গুরুতর আহত, গুরুতর আহত ও আহত।
অধ্যাদেশে জুলাই ‘শহীদ’ পরিবার এবং আহতদের কল্যাণে নেয়া সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রমের আইনি ভিত্তি দেয়া হয়েছে।
১৮ জুন ২০২৫ তারিখে প্রকাশিত টাইমস হায়ার এডুকেশন (টিএইচই) ইমপ্যাক্ট র্যাঙ্কিংস ২০২৫-এর ফলাফলে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ডিআইইউ) বাংলাদেশের মধ্যে শীর্ষস্থান অধিকার করেছে। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বের শীর্ষ ২০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় জায়গা করে নিয়ে একটি গৌরবময় অবস্থান নিশ্চিত করেছে। বিশ্বব্যাপী ২,৩১৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ডিআইইউ ১০১ থেকে ২০০-এর মধ্যে অবস্থান করেছে। বাংলাদেশ থেকে তালিকাভুক্ত ১৯টি পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ডিআইইউ-ই একমাত্র প্রতিষ্ঠান, যা এই মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে।
টাইমস হায়ার এডুকেশন ইমপ্যাক্ট র্যাঙ্কিং মূলত জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি)-এর ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবদান মূল্যায়ন করে থাকে। ২০২৫ সালের র্যাঙ্কিংয়ে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বিভিন্ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অনন্য সাফল্য অর্জন করেছে। বিশেষভাবে, বিশ্ববিদ্যালয়টি মানসম্মত শিক্ষা (এসডিজি-৪) এবং লক্ষ্যের জন্য অংশীদারিত্ব (এসডিজি-১৭) এই দুই ক্যাটেগরিতে বিশ্বব্যাপী ১৯তম স্থান অর্জন করেছে। এছাড়া শালীন কাজ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি (এসডিজি-৮) ক্ষেত্রে ৩৩তম, শূন্য দারিদ্র্য (এসডিজি-১) ক্ষেত্রে ৩৬তম, জিরো হাঙ্গার (এসডিজি-২) ক্ষেত্রে ৫৩তম এবং বৈষম্য হ্রাস (এসডিজি-১০) ক্ষেত্রে ৬০তম স্থান অর্জন করেছে।
এই কৃতিত্ব ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির টেকসইতা, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন ও বৈশ্বিক প্রভাব সৃষ্টির প্রতি দৃঢ় অঙ্গীকারের পরিচায়ক। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই সাফল্যে তাদের সম্মানিত অনুষদ সদস্য, নিবেদিতপ্রাণ কর্মী, প্রতিভাবান শিক্ষার্থী, গর্বিত প্রাক্তন শিক্ষার্থী এবং মূল্যবান অংশীদারদের আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়েছেন, যারা এই যাত্রার অংশ হয়ে ডিআইইউ-কে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অর্জন বিভিন্ন গবেষণা প্রকল্প, সারাবছর আয়োজিত একাডেমিক ও সামাজিক কার্যক্রম এবং জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রচেষ্টারই স্বীকৃতি। এই সাফল্য একাধারে সহযোগিতামূলক দৃষ্টিভঙ্গির উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা শিক্ষা ব্যবস্থার এবং তথ্যপ্রযুক্তি-নির্ভর জ্ঞানচর্চার ধারাবাহিক উন্নয়নের প্রতিফলন।
‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার এবং জুলাই যোদ্ধাদের কল্যাণ ও পুনর্বাসন অধ্যাদেশ, ২০২৫' এর অধীনে 'জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তর' প্রতিষ্ঠিত হবে।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ মঙ্গলবার দিবাগত রাতে এ সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করেছে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের কল্যাণ ও পুনর্বাসনসহ গণ-অভ্যুত্থানের মর্ম ও আদর্শকে রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত করা এবং ইতিহাস সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে প্রণীত হয়েছে এ অধ্যাদেশ। অধ্যাদেশটি জনসাধারণের জ্ঞাতার্থে মঙ্গলবার দিবাগত রাতে প্রকাশ করা হয়।
এই অধ্যাদেশের দ্বিতীয় অধ্যায়ে অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা ও এর কার্যাবলীসহ নানাবিধ বিষয় অর্ন্তভূক্ত রয়েছে। এখানে বলা হয়েছে, এই অধ্যাদেশের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার এবং জুলাই যোদ্ধাদের কল্যাণ সাধন ও পুনর্বাসনে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন 'জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তর' প্রতিষ্ঠিত হবে।
অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় থাকবে ঢাকায়। সরকার প্রয়োজনে ঢাকার বাইরে বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে অধিদপ্তরের শাখা কার্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে পারবে।
অধিদপ্তরের কার্যাবলী হচ্ছে- সরকারি গেজেটে প্রকাশিত জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের তালিকা ও ডাটাবেজ সংরক্ষণ, প্রয়োজন অনুযায়ী সংশোধন এবং হালনাগাদ আকারে সরকারি গেজেটে প্রকাশের জন্য সুপারিশ।
এছাড়া রয়েছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহত জুলাই যোদ্ধাদের কল্যাণ সাধন ও পুনর্বাসনের লক্ষ্যে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত এককালীন ও মাসিক আর্থিক সহায়তা প্রদান এবং বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহত জুলাই যোদ্ধাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ।
আরো রয়েছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহিদ পরিবার ও আহত জুলাই যোদ্ধাদের কল্যাণ সাধন ও পুনর্বাসন করার লক্ষ্যে সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে পরিকল্পনা গ্রহণ, বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন।
কার্যাবলীতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহত জুলাই যোদ্ধাদের কল্যাণ সাধন ও পুনর্বাসনের লক্ষ্যে দেশি-বিদেশী সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ ও সমন্বয়সাধনের কথা রয়েছে।
অধিদপ্তরের একজন মহাপরিচালক থাকবেন এবং তিনি অধিদপ্তরের প্রধান নির্বাহী হবেন।
অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, এটি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের কল্যাণ ও পুনর্বাসনসহ গণ-অভ্যুত্থানের মর্ম ও আদর্শকে রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত করা এবং ইতিহাস সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে প্রণীত হয়েছে।
অধ্যাদেশ আরো বলা হয়েছে, তদানীন্তন পাকিস্তান সরকারের বর্ণবাদী, নিপীড়নমূলক ও বৈষম্যমূলক নীতি এবং বাংলাদেশের জনগণকে নির্বিচারে হত্যার কারণে মুক্তিযুদ্ধ অনিবার্য হয়ে ওঠে। ১৯৭১ সালে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাংলাদেশের জনগণ সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছে।
অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, জনগণের অব্যাহত সংগ্রাম ও ত্যাগ তিতিক্ষা সত্ত্বেও স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পরও সুবিচার, মর্যাদাপূর্ণ গণতান্ত্রিক ও বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গঠনের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জিত হয়নি। জানুয়ারি ২০০৯ সাল থেকে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে দলীয়করণ, দুর্নীতি ও পরিবারতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ফলে রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠান অকার্যকর হয়। অন্যায়ভাবে শক্তি প্রয়োগ করে বিরোধীমত দমন, গুম ও বিচার বহির্ভূত হত্যা সংঘটিত হয়। দেশের অর্থ পাচার ও লুটপাট নীতির ফলে অর্থনৈতিক বৈষম্য সৃষ্টি, নারী ও সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী কাঠামোগত সহিংসতার শিকার হয়। জনগণের বাকস্বাধীনতা ও ভোটাধিকার হরণ করে জাতীয় স্বার্থ ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করার সৃষ্ট প্রেক্ষাপট জনগণকে শঙ্কিত করে।
অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, জুলাই ২০২৪ এ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে দল-মত-ধর্ম-বর্ণ-নারী-পুরুষ নির্বিশেষে আপামর জনতার দীর্ঘ পনেরো বৎসরের ফ্যাসিবাদ ও বিচারহীনতার ফলে পুঞ্জীভূত ক্ষোভে এক গণআন্দোলন হতে ক্রমান্বয়ে গণঅভ্যুত্থানে রূপ লাভ করে ৫ আগস্ট, ২০২৪ এ ফ্যাসিবাদী শাসককে জনগণের কাছে পরাজিত হয়ে দেশ ছেড়ে পলায়নে বাধ্য করে। এ গণঅভ্যুত্থানে ব্যাপক সংখ্যক নারী ও পুরুষ অংশগ্রহণ করেছেন এবং দেশব্যাপী সহস্রাধিক নিরস্ত্র দেশপ্রেমিক ছাত্রজনতা শহীদ হয়েছেন।
এছাড়া অসংখ্য মানুষ আহত, কেউ কেউ গুরুতর আহত হয়েছেন। অধিকাংশই আঘাত ও নৃশংসতার বিভীষিকায় পর্যুদস্ত এবং তাদের এই আত্মত্যাগকে যথার্থ সম্মান প্রদর্শন অপরিহার্য।
অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, জুলাই আন্দোলনে ত্যাগের দৃষ্টান্ত জাতির গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও রাষ্ট্র পুনর্গঠনের একটি গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় হিসাবে সমুন্নত রাখা কর্তব্য।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহত জুলাই যোদ্ধাদের যথোপযুক্ত স্বীকৃতি, সম্মান, কল্যাণ ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহত জুলাই যোদ্ধাদের কল্যাণ সাধন ও পুনর্বাসনের উদ্দেশ্যে বিধান প্রণয়ন করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়। এই অধ্যাদেশ 'জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার এবং জুলাই যোদ্ধাদের কল্যাণ ও পুনর্বাসন অধ্যাদেশ, ২০২৫' নামে অভিহিত হবে। এটি অবিলম্বে কার্যকর হবে বলেও গেজেটে বলা হয়েছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) সদস্যদের জনবিচ্ছিন্ন না হয়ে বরং জনসংযোগ ও নিরাপত্তার মেলবন্ধনের মাধ্যমে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি আজ বুধবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের শাপলা হলে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের ৩৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত 'প্রধান উপদেষ্টার দরবার' অনুষ্ঠানের বক্তব্যে এ কথা বলেন।
এছাড়া প্রধান উপদেষ্টা স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের সদস্যদের সকল রাজনৈতিক মতাদর্শের ঊর্ধ্বে উঠে নিরাপত্তার জন্য কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে এসএসএফ মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুস সামাদ চৌধুরী বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, তিন বাহিনী প্রধান, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব মো. সিরাজ উদ্দিন মিয়া, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘আমরা সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি একটি সুষ্ঠু উত্তরণ নিশ্চিত করতে এবং আগামী মাসে আমরা ঐতিহাসিক জুলাই অভ্যুত্থানের বার্ষিকীতে ‘জুলাই সনদ’ ঘোষণা করব।’
আজ মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ঢাকায় অস্ট্রেলিয়ার নতুন হাইকমিশনার সুসান রাইল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে এলে এ কথা বলেন তিনি। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা ঢাকায় ভিসা কার্যক্রম পুনরায় চালু করার জন্য অস্ট্রেলিয়াকে ধন্যবাদ জানান।
সাক্ষাৎকালে অস্ট্রেলিয়ার নবনিযুক্ত হাইকমিশনার সুসান রাইল ভিসার আবেদন এখন অনলাইনে জমা দেওয়া যাবে বলে উল্লেখ করেন। তিনি আরও জানান, বর্তমানে ৬৫ হাজারর বেশি বাংলাদেশি অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করছেন এবং এর পাশাপাশি আরও ১৪ হাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থী সেখানে অধ্যয়ন করছেন।
সাক্ষাৎকালে তারা অন্তর্বর্তী সরকারের চলমান সংস্কার কার্যক্রম, নির্বাচন প্রস্তুতি, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলোচনা করেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার কার্যক্রমের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘অস্থির সময়ের পর আমরা এখন একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রয়েছে সংবিধান, বিচারব্যবস্থা ও প্রশাসনিক সংস্কারে—এগুলোই একটি শক্তিশালী বাংলাদেশের ভিত্তি। আমরা সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি একটি সুষ্ঠু উত্তরণ নিশ্চিত করতে এবং আগামী মাসে আমরা ঐতিহাসিক জুলাই অভ্যুত্থানের বার্ষিকীতে ‘জুলাই সনদ’ ঘোষণা করব।’
তিনি আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়েও কথা বলেন। অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘বহু বছর পর প্রথমবারের মতো জনগণ, বিশেষ করে প্রথমবার ভোটার হওয়া তরুণেরা স্বাধীনভাবে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবে। আমি বিশ্বাস করি এটি একটি উৎসবমুখর ও আশাব্যঞ্জক সময় হবে।’
নির্বাচনী সহায়তা নিয়ে সুসান রাইল জানান, অস্ট্রেলিয়া ইউএনডিপির মাধ্যমে বাংলাদেশে নির্বাচন কমিশনের প্রাতিষ্ঠানিক, কারিগরি ও পরিচালনাগত সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ২০ লাখ অস্ট্রেলিয়ান ডলার প্রদান করবে।
বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে রাইল বলেন, ‘আমাদের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ৫ বিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলারে পৌঁছেছে, যা গত পাঁচ বছরে বার্ষিক গড়ে ১৬ দশমিক ২ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।’
তিনি অস্ট্রেলিয়ায় অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থী এবং প্রবাসীদের অবদানের কথাও তুলে ধরেন।
তিনি আরও বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়া অ্যাওয়ার্ডস প্রোগ্রাম বাংলাদেশে তিন হাজারের বেশি সাবেক শিক্ষার্থীদের একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে, যারা দেশের অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন।’
এর জবাবে অধ্যাপক ইউনূস অস্ট্রেলিয়াকে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তির সংখ্যা বাড়ানোর আহ্বান জানান।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে অধ্যাপক ইউনূস এক মিলিয়ন রোহিঙ্গা শরণার্থীর জন্য মানবিক সহায়তা বাড়াতে অস্ট্রেলিয়ার প্রতি আহ্বান জানান।
এ প্রসঙ্গে রাইল বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়া সম্প্রতি মূল অংশীদারদের মাধ্যমে অতিরিক্ত ৯ দশমিক ৬ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার মানবিক সহায়তা প্রদান করেছে, যার ফলে ২০১৭ সাল থেকে রোহিঙ্গা ও আশ্রয়দাতা সম্প্রদায়ের জন্য বাংলাদেশে মোট সহায়তার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৫৩ দশমিক ৬ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার।’
তিনি আরও বলেন, ‘মিয়ানমারে পরিস্থিতি অনুকূল হলে, অস্ট্রেলিয়া নিরাপদ, স্বেচ্ছামূলক, মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই প্রত্যাবাসনের আশায় বাংলাদেশের পাশে থাকবে।’
সাক্ষাৎকালে এসডিজিবিষয়ক সিনিয়র সচিব লামিয়া মোরশেদ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পূর্ব এশিয়া ও প্যাসিফিক উইংয়ের মহাপরিচালক মোহাম্মদ নূরে আলম উপস্থিত ছিলেন।
প্রতারণার মাধ্যমে শেয়ার বাজার থেকে ২৫৭ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও মাগুরা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাকিব আল হাসানসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ হোসেন বাদী হয়ে সংস্থাটির সমন্বিত ঢাকা জেলা কার্যালয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর সেগুন বাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন এসব তথ্য জানান।
আক্তার হোসেন বলেন, তিনটি কোম্পানির শেয়ারে সাকিব আল হাসান বিনিয়োগ করেছেন। বিনিয়োগ কার্যক্রমে মার্কেট ম্যানিপুলেট করা হয়েছে। মার্কেট ম্যানিপুলেশনের সঙ্গে তিনি (সাকিব) জড়িত।
এর আগে গত সোমবার সাকিব আল হাসানসহ ১৫ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। সাকিব ছাড়া ১৪ আসামি হলেন— সমবায় অধিদপ্তরের উপনিবন্ধক মো. আবুল খায়ের (ওরফে হিরু) ও তার স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান, আবুল কালাম মাদবর, কনিকা আফরোজ, মোহাম্মদ বাশার, সাজেদ মাদবর, আলেয়া বেগম, কাজী ফুয়াদ হাসান, কাজী ফরিদ হাসান, শিরিন আক্তার, জাভেদ এ মতিন, মো. জাহেদ কামাল, মো. হুমায়ুন কবির ও তানভির নিজাম।
আসামিদের বিরুদ্ধে ২৫৬ কোটি ৯৭ লাখ ৭০ হাজার ৩০৪ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহারপূর্বক দ্রুত আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার অসৎ অভিপ্রায়ে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ সংক্রান্ত প্রচলিত আইন ও বিধি (সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬১ এর ১৭ ধারা) পরিকল্পিতভাবে লঙ্ঘনপূর্বক নিজেদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিও অ্যাকাউন্টসমূহে অসাধু, অনৈতিক ও অবৈধ উপায়ে ফটকা ব্যবসার মতো একাধিক লেনদেন, জুয়া ও গুজবের মাধ্যমে বাজারের কারচুপি করেছেন।
এজাহারে আরও বলা হয়, পরিকল্পিতভাবে নির্দিষ্ট কিছু শেয়ার সংঘবদ্ধভাবে ক্রমাগত ক্রয়-বিক্রয়পূর্বক কৃত্রিমভাবে দাম বাড়িয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ওই শেয়ারসমূহে বিনিয়োগে প্রতারণাপূর্বক প্রলুব্ধ করে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে তাদের ২৫৬ কোটি ৯৭ লাখ ৭০ হাজার ৩০৪ টাকা আত্মসাৎপূর্বক অস্বাভাবিক রিয়ালাইজড ক্যাপিটাল গেইনের নামে অর্জিত অপরাধলব্ধ অর্থ বা প্রসিড অব ক্রাইম শেয়ার বাজার থেকে সংঘবদ্ধভাবে উত্তোলন করেছেন। আসামি মো. আবুল খায়ের (ওরফে হিরু) কর্তৃক তার স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসানের সহায়তায় ক্যাপিটাল গেইনের নামে অর্জিত অপরাধলব্ধ অর্থের ২১ কোটি ১৪ লাখ ৪২ হাজার ১৮৫ টাকার উৎস গোপনের অভিপ্রায়ে লেয়ারিং করে বিভিন্ন খাতে স্থানান্তর করেন। তিনি ১৭টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সর্বমোট ৫৪২ কোটি ৩১ লাখ ৫১ হাজার ৯৮২ টাকার অস্বাভাবিক, অযৌক্তিক এবং সন্দেহজনক লেনদেন করেছেন।
ওই মামলায় সাকিব আল হাসানের সম্পৃক্ততা প্রসঙ্গে বলা হয়, আসামি মো. আবুল খায়ের (ওরফে হিরু) কর্তৃক শেয়ার বাজারে কারসাজিকৃত প্যারামাউন্ট ইস্যুরেন্স লি., ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স লি. এবং সোনালী পেপারস লি.-এর শেয়ারে সাকিব আল হাসান বিনিয়োগ করে বাজার কারসাজিতে যোগসাজশ করেন। সরাসরি সহায়তাপূর্বক সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কারসাজিকৃত শেয়ারে বিনিয়োগে প্রতারণাপূর্বক প্রলুব্ধ করে তাদের ২ কোটি ৯৫ লাখ ২ হাজার ৯১৫ টাকা রিয়ালাইজড ক্যাপিটাল গেইনের নামে অপরাধলব্ধ আয় হিসেবে শেয়ার বাজার হতে উত্তোলনপূর্বক আত্মসাৎ করেছেন।
আসামিদের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) এবং দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এর ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/১২০বি/১০৯ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
চলতি বছরের এপ্রিলে সাকিবের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। অর্থপাচার ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য দুদকের উপ-পরিচালক মাহবুবুল আলমের নেতৃত্বে দুই সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার ফলাফলের অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ডক্টর আলী রীয়াজ জুলাই মাসের মধ্যে একটি জাতীয় সনদ তুলে ধরার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
গতকাল বিকালে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দিনব্যাপী দ্বিতীয় দফার আলোচনার পর এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আলোচনা অত্যন্ত ইতিবাচক। আমাদের প্রতিনিয়তই অগ্রগতি হচ্ছে এবং আমরা আশা করছি যে জুলাই মাসের মধ্যে আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত জাতীয় সনদে পৌঁছাতে পারব এবং রাষ্ট্রীয় স্বার্থে সেখানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে আমরা ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করতে পারব।’
আলোচ্য বিষয় নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রথম দফার আলোচনার পর সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের কিছু বিষয়ে পুনর্বিবেচনার কথা রাজনৈতিক দলগুলো বলেছিলেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল মঙ্গলবার আবার এ বিষয়ে আলোচনা করার পর আমরা এ বিষয়ে একমত হতে পেরেছি যে ৭০ অনুচ্ছেদের বিদ্যমান বিধান পরিবর্তন করে অর্থবিল ও আস্থা ভোটের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য বাধ্যবাধকতা থাকবে যেন তারা দলের পক্ষে ভোট দেন।
তিনি বলেন, দ্বিতীয়ত, গতদিনের আলোচনার তুলনায় একটি অগ্রগতি হয়েছে এবং আমরা সুস্পষ্টভাবে বলতে পারি যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ওই ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে চারটি কমিটি অর্থাৎ পাবলিক একাউন্টস কমিটি, প্রিভিলেজ কমিটি, এস্টিমেশন কমিটি এবং পাবলিক আন্ডারটেকিং কমিটিসহ জন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সংক্রান্ত কমিটিগুলোর সভাপতির পদ আসনের সংখ্যানুপাতিক হারে বিরোধী দলকে প্রদানের বিষয়ে সকলে একমত হয়েছেন।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ আরো বলেন, জাতীয় সংসদের নারী প্রতিনিধিত্বের বিষয় দীর্ঘ সময় ধরে আলোচনা হয়েছে। সকলেই জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য ১০০টি আসন সংরক্ষিত করার জন্য সকলে একমত হয়েছেন। তবে এর পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা অব্যাহত থাকবে। আমরা আশা করছি আগামী সপ্তাহে এ বিষয়ে একমত হওয়া যাবে।
তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে যেটি সংবিধানের ৯৫(১) অনুচ্ছেদে আছে তার পাশাপাশি সংবিধানের ৪৮ (৩) অনুচ্ছেদে আছে সেগুলো সংশোধনের ব্যাপারে এক ধরনের ঐক্যমত হয়েছে। কিন্তু আমরা এই বিষয়টি আগামী সপ্তাহে আবার আলোচনা করব যেন একটি নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত আমরা আসতে পারি। কিন্তু প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ব্যবস্থা পরিবর্তনের বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্টের বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে কিন্তু তার সঙ্গে নীতিগতভাবে কিছু কিছু দল এর বিরুদ্ধে আপত্তি জানিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কিন্তু এটা কম বেশি সকলে স্বীকার করেছেন যে এ বিষয়ে পুনর্বিবেচনার দরকার আছে।
এ সময় কমিশনের একটি বড় স্টেকহোল্ডার হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর গতকালের আলোচনায় অনুপস্থিতির কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন , যে কোনো পরিস্থিতির উদ্ভব হলে আমরা সার্বক্ষণিকভাবে সব দলের সাথে যোগাযোগ রাখি যেন তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যায়। কমিশনের পক্ষ থেকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে, আমরা আশা করি গতকাল উপস্থিত না থাকতে পারলেও আজ তারা বা তাদের প্রতিনিধিরা এখানে উপস্থিত থাকবেন।
উল্লেখ্য, অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ চূড়ান্ত করা এবং বহুল আলোচিত ‘জুলাই সনদ’ প্রস্তুতের লক্ষ্যে গতকাল থেকে শুরু হয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা।
বেলা এগারোটা চল্লিশ মিনিটে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে এ আলোচনার আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়।
আলোচনায় কমিশনের সহ সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে আরো অংশ নেন জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের সদস্য বিচারপতি এমদাদুল হক, বদিউল আলম মজুমদার, আইয়ুব মিয়া, মো. ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
এছাড়াও, বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, বিএনপি চেয়ারপার্সন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইসমাইল জবিউল্লাহ,খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের, জাতীয় গণফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির সমন্বয়ক টিপু বিশ্বাস, গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল, এবি পার্টির জেনারেল সেক্রেটারি আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এর জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মুস্তাফিজুর রহমান ইরান, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ, বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (বিএলডিপি) চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, বাংলাদেশ জাসদের পক্ষ থেকে ডা. মুশতাক হোসেনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।
তবে, আমন্ত্রণ পেলেও বৈঠকে উপস্থিত হননি জামায়াতে ইসলামীর কোনো প্রতিনিধি।
এর আগে, এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জানায়, ১৭, ১৮ ও ১৯ জুন এই তিনদিন কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কুষ্টিয়া-১ আসনের সাবেক এমপি এ্যাডভোকেট আ ক ম সরওয়ার জাহান বাদশাহকে গ্রেপ্তার করেছে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ।
আজ মঙ্গলবার দুপুর ১টায় মোহাম্মদপুরের বসিলা সিটি ডেভেলপার এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারের পর জানা গেছে, বাদশা ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) সাড়ে ৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা করেছে। প্রথম মামলায় বাদশার বিরুদ্ধে ৪ কোটি ২০ লাখ ৭২ হাজার টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও ৬টি ব্যাংক হিসাবে ১১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা লেনদেনের অভিযোগ আনা হয়েছে। দ্বিতীয় মামলায় তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ১ কোটি ২৯ লাখ ৮০ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে।
ডিএমপি তেজগাঁও বিভাগের মোহাম্মদপুর থানার ইনচার্জ (তদন্ত) হাফিজুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মোহাম্মদপুরের বসিলা সিটি ডেভেলপার এলাকায় অভিযান চালিয়ে সাবেক সংসদ সদস্য আ ক ম সারোয়ার জাহান বাদশাহকে গ্রেপ্তার করা হয়। আইনানুগ প্রক্রিয়া শেষে তাকে আদালতে পাঠানো হবে।
প্রসঙ্গত, সরওয়ার জাহান বাদশাহ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ও কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন।
সরকার ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘাতের উপর নিবিড়ভাবে নজর রাখছে জানিয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, এই মুহূর্তে জ্বালানির দাম বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনা নেই।
তিনি বলেন, ‘আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। যদি সংঘাত দীর্ঘায়িত হয়—তাহলে এটি আমাদের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। তবে আপাতত, আমরা অপেক্ষা করব।’
মঙ্গলবার (১৭ জুন) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নতুন সম্মেলন কক্ষে অর্থনৈতিক বিষয় সম্পর্কিত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি এবং পাবলিক ক্রয় সম্পর্কিত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকের পর তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
এই সংঘাত অভ্যন্তরীণ জ্বালানির দামের উপর প্রভাব ফেলতে পারে কিনা এমন প্রশ্নে ড. সালেহউদ্দিন বলেন, ‘আন্তর্জাতিকভাবে এরই মধ্যে দাম সামান্য বেড়েছে, তবে আমাদের আগের দেওয়া ক্রয়াদেশগুলোকে এটি প্রভাবিত করেনি।’
তিনি আরও বলেন, সরকার গ্যাস ও এলএনজির দামও পর্যবেক্ষণ করছে।
উপদেষ্টা বলেন, ‘যদি এলএনজির দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ে, তবে আমরা আমাদের পরিকল্পনায় এটি বিবেচনা করব। সৌভাগ্যবশত, আজ আমরা যে এলএনজি আমদানি প্রস্তাবটি অনুমোদন করেছি তা পুরোনো দামেই। আমরা ভাগ্যবান যে এটি আগের হারে পাচ্ছি।’
বাণিজ্যের উপর বর্তমানে কোনো প্রভাব পড়ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না, বর্তমানে বাণিজ্যের উপর কোনো প্রভাব পড়ছে না।’
ভবিষ্যতে সম্ভাব্য বিঘ্নের আশঙ্কায় সরকার কোনো বিশেষ প্রস্তুতি নিচ্ছে কিনা জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ‘আজ আমরা যে এলএনজি এবং সার আমদানি প্রস্তাবগুলো অনুমোদন করেছি তা আগের দামেই রয়েছে। ভবিষ্যতে নতুন যেকোনো প্রস্তাব মূল্যে উপর প্রভাব পড়তে পারে।’
যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে তাক্ষণিক পরিকল্পনা সম্পর্কে ড. সালেহউদ্দিন বলেন, জ্বালানি মন্ত্রণালয় বিকল্পগুলো নিয়ে কাজ করছে। ‘আমরা এলএনজির উপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করি। এই সংঘাত কেবল জ্বালানি নয়, সার আমদানি এবং সামুদ্রিক পরিবহনকেও প্রভাবিত করতে পারে। হরমুজ প্রণালী দিয়ে জাহাজ চলাচল করে যার প্রভাব পড়তে পারে। তবে আমি মনে করি না যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হবে।’
বিশ্বব্যাপী জ্বালানির দাম ইতোমধ্যে বেড়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, অনেক দেশে দাম বেড়েছে, তবে আমরা এখনও কোনো পরিবর্তন করছি না। আমরা অপেক্ষা করব এবং দেখব।’
য়মনসিংহের ত্রিশাল পৌরসভার ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় সড়কের কেরানী বাড়ি মোড় এলাকায় ভয়াবহভাবে বৃদ্ধি পাওয়া মাদক ব্যবসা ও সেবনের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছে এলাকাবাসী। “চলো যাই যুদ্ধে মাদকের বিরুদ্ধে” স্লোগানকে সামনে রেখে (১৭ জুন) মঙ্গলবার সকাল ১১টায় এলাকাবাসীর উদ্যোগে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় সড়কের কেরানী বাড়ি মোড়ে এক মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়। পরে বিক্ষোভ মিছিল করে মাদকব্যবসায়ীর বাড়ি ঘেরাও করে বিক্ষুব্ধ জনতা। এসময় কাউকে না পেয়ে মাদক কারবারীদের বাড়িঘর ভাঙচুরের চেষ্টা করে উত্তেজিত জনতা। পরে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
এসময় বিক্ষোভকারীরা অভিযোগের পরও মাদককারবারী মিনা খাতুন ও তার ভাই মুক্তা মিয়া সহ আরও জনাদশেক মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার না হওয়ায় উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা অভিযোগ করেন যাদের বিরুদ্ধে মাদক বিক্রির অভিযোগ করা হয়েছে পুলিশ তাদেরকে না ধরে উল্টো অভিযোগকারীকে শাসিয়েছেন।
গত ১৫ দিন আগে স্থানীয় ইউএনও ও থানায় লিখিত অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাননি এলাকাবাসী। এতে স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। বিক্ষোভে পুলিশ উপস্থিত থাকা অবস্থায় ভুয়া ভুয়া বলে স্লোগান দেন।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, “সমাজে ছড়িয়ে গেছে মাদক, আসক্ত হয়ে পড়েছে যুব সমাজ। মাদক বেচা-কেনা বন্ধ করতে হবে।” তারা অভিযোগ করেন, কেরানী বাড়ি মোড় এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশ্যে বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য কেনাবেচা ও সেবন চলছে। এতে করে এলাকার যুবসমাজ ধ্বংসের পথে যাচ্ছে, বাড়ছে চুরি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধ। অথচ প্রশাসনের পক্ষ থেকে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
এসময় বক্তারা আরও অভিযোগ করেন, কিছু দালাল চক্রের ছত্রছায়ায় এই মাদক ব্যবসা বিস্তার লাভ করেছে। তারা প্রশ্ন তোলেন, মাদক ব্যবসার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণে প্রশাসনের পদক্ষেপ কোথায়?
মানববন্ধনে বক্তারা অবিলম্বে কেরানী বাড়ি মোড়সহ আশপাশের এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনার দাবি জানানো হয়।
অন্যথায় বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তারা। এ ব্যাপারে ত্রিশাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবরে একটি স্মারকলিপি দেওয়ার কথা রয়েছে।
উল্লেখ্য, এই আন্দোলনের আয়োজন করে স্থানীয় ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সচেতন জনসাধারণ। সবশেষে মাদক বাবসায়ীদের ২৪ ঘন্টার মধ্যে গ্রেফতার না করা হলে বুধবার বিকাল তিনটায় থানা ঘেরাওয়ের আল্টিমেটাম দিয়ে দিনের কর্মসূচি শেষ করা হয়।
ঈদুল আজহার আগে-পরে ১৫ দিনে সারা দেশে ৩৭৯টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় ৩৯০ জন নিহত এবং ১১৮২ জন আহত হয়েছেন। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি এ তথ্য জানিয়েছে।
গতকাল সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য উপস্থাপন করেন সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী।
প্রতিবেদনে তিনি বলেন, একই সময়ে রেলপথে ২৫টি দুর্ঘটনায় ২৫ জন নিহত ও ১২ জন আহত হয়েছেন। নৌ-পথে ১১টি দুর্ঘটনায় ১২ জন নিহত ও ৬ জন নিখোঁজ রয়েছেন। সড়ক, রেল ও নৌ-পথে সর্বমোট ৪১৫টি দুর্ঘটনায় ৪২৭ জন নিহত এবং ১১৯৪ জন আহত হয়েছেন।
মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, সড়কে দুর্ঘটনা ও যাতায়াতের ভোগান্তি কমিয়ে ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক করতে হলে ঈদের আগে কমপক্ষে ৪ দিনের সরকারি ছুটি থাকা দরকার। ঈদের যাতায়াত ব্যবস্থাপনা নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন। সবার আগে আমাদের গণপরিবহন ও ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা বাড়াতে হবে, ছোট যানবাহন মহাসড়ক থেকে উচ্ছেদ করতে হবে। প্রশিক্ষিত দক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন বাতিল, মানসম্মত সড়কের পাশাপাশি আইনের সুশাসন নিশ্চিত করা জরুরি।
তিনি আরও বলেন, যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, দেশের সড়ক-মহাসড়কে বৃষ্টির কারণে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এসব গর্তে পড়ে কিছু যানবাহন দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছে। ঈদের পরে বেশিরভাগ দুর্ঘটনা বিরামহীন ও বিশ্রামহীনভাবে যানবাহন চালাতে গিয়ে হয়েছে। ফলে এসব দুর্ঘটনায় সিংহভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় খাদে পড়ে ও দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের পেছনে লেগে দুর্ঘটনা বেশি ঘটেছে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য ও পথে পথে যাত্রী হয়রানি এবারের ঈদেও চরমে ছিল। গণপরিবহনগুলোতে ঈদকে কেন্দ্র করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্যের কারণে বাসের ছাদে, ট্রেনের ছাদে, খোলা ট্রাকে, পণ্যবাহী পরিবহনে যাত্রী হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দরিদ্র লোকজনদের বাড়ি যেতে হয়েছে।
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও সংলগ্ন এলাকায় আবারও একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে, যার বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। পাশাপাশি মৌসুমি বায়ু দেশের দক্ষিণাঞ্চলে সক্রিয়, অন্যান্য অঞ্চলে মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে তা প্রবল অবস্থায় রয়েছে। এর প্রভাবে সারা দেশে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়ার পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আজ (মঙ্গলবার) সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণও হতে পারে।
এ ছাড়া আবহাওয়াবিদ মো. তরিফুল নেওয়াজ কবিরের সই করা পৃথক এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আজ সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে যশোর, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলের ওপর দিয়ে দক্ষিণ অথবা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে।
এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
আগামীকাল সকাল ৯টার মধ্যে সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে বলে বলেও নিয়মিত আবহাওয়া বুলেটিনে জানানো হয়েছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, তাপমাত্রা কমার এই ধারা আগামীকালও অব্যাহত থাকতে পারে এবং তার পরের অন্তত তিন দিন প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
অন্যদিকে, বৃষ্টিপাত নিয়ে আগামী তিন দিনের পূর্বাভাসে রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি জানিয়েছে, বুধবার সকাল ৯টা থেকে পরের ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে সারা দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।
বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবারও একই ধরনের আবহাওয়া থাকতে পারে। অর্থাৎ রংপুর, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগের অনেক জায়গায় দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। পাশাপাশি দেশের কিছু স্থানে মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের সম্ভাবনাও রয়েছে।
বৃষ্টিপাতের এই প্রবণতা শনিবার, এমনকি তার পরের পাঁচ দিনও অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
বিতর্কিত তিন জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে জড়িত সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনারগণ ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিবদের ভূমিকা তদন্তে অবিলম্বে একটি কমিটি গঠনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
আজ সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এক বৈঠকে এ সংক্রান্ত আলোচনা শেষে এ নির্দেশ দেন প্রধান উপদেষ্টা ও কমিশন প্রধান প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন ও ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া। অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়া ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
বৈঠকে কমিশন সদস্যগণ জুলাই সনদ তৈরির কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করেন। কমিশনের সহ-সভাপতি প্রফেসর আলী রীয়াজ বলেন, ‘বেশকিছু বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। খুব শিগগিরই সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সনদ চূড়ান্ত করে ফেলা সম্ভব হবে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সবাই জুলাই সনদের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। আমি আশা করি আগামী জুলাই মাসের মধ্যে আমরা এটি জাতির সামনে উপস্থাপন করতে পারব।’
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা তাঁর লন্ডন সফরের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন, ‘লন্ডনে বাংলাদেশি কমিউনিটির যাদের সঙ্গেই দেখা হয়েছে তারা সংস্কার নিয়ে জানতে চেয়েছে। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা খুব আগ্রহী। তারা বিস্তারিতভাবে ঐকমত্য কমিশনের কাজ নিয়ে আমার সঙ্গে আলোচনা করেছে, মতামত দিয়েছে। যেখানেই গেছি সেখানকার প্রবাসী বাংলাদেশিরা আমাকে জিজ্ঞেস করছেন, ‘আমরা আগামী নির্বাচনে ভোট দিতে পারব তো?’ আমাদের প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। পোস্টাল ব্যালট এবং আর কী কী অপশন আছে সেগুলো নিয়ে ভাবতে হবে, সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনায় বসতে হবে।’
বৈঠকে নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিশন প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘সকল রাজনৈতিক একমত হয়েছে যে, অতীতের তিনটি বিতর্কিত নির্বাচন আয়োজনে কর্মকর্তাদের ভূমিকা তদন্ত ও জবাবদিহিতার আওতায় আনা প্রয়োজন।’