চার বছর পর মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার উন্মুক্ত হলেও সিন্ডিকেট ও সিস্টেম জটিলতায় এর সুফল নিতে পারছে না বাংলাদেশ। আর তাই বাংলাদেশ থেকে কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়া সহজ করতে মালয়েশিয়াকে প্রস্তাব দেবে ঢাকা। প্রয়োজনে এ বিষয়ে বিদ্যমান চুক্তি পর্যালোচনা ও হালনাগাদ করার তাগিদও দেয়া হবে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের সফরে শনিবার বিকেলে বাংলাদেশে এসেছেন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুসন ইসমাইল। রোববার সকাল ১০টায় তিনি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমেদের সঙ্গে তার কার্যালয়ে বৈঠক করবেন। বৈঠকে বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ, সহজ ও দ্রুততর করার বিষয়ে আলোচনা হবে।
সিন্ডিকেট জটিলতায় চুক্তি স্বাক্ষরের এক বছরের বেশি সময় পার হলেও গুরুত্বপূর্ণ এই শ্রমবাজারটিতে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কর্মী পাঠাতে পারেনি বাংলাদেশ। মাত্র ১০০ রিক্রুটিং এজেন্সিকে কর্মী পাঠানোর সুযোগ দিয়েছে মালয়েশিয়া। কিন্তু বিদ্যমান সিস্টেমে এসব এজেন্সির মধ্যে সমানভাবে ভিসা বণ্টন হয় না। মূলত ২৫টি এজেন্সির পূরোনো সিন্ডিকেটই নিয়ন্ত্রণ করছে এই বাজার। যার ফলে কর্মীর যাওয়ার গতি শ্লথ। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো হয়েছে ৬৬ হাজার ১৭৩ জন।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, মালয়েশিয়ায় এখন নতুন সরকার এসেছে। কোভিড-১৯-পরবর্তীকালে অর্থনীতিকে চাঙা করতে দেশটির শিল্প-কারখানাগুলোতে এখন কর্মীর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বিগত সরকারের সময়ে হওয়া চুক্তি এবং সিন্ডিকেট জটিলতা নিয়ে দেশটির নতুন সরকার অবগত। এ কারণে ক্ষমতায় আসার পরেই কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে দেশটির মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে নতুন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে যুক্ত করেছে। নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রথম বিদেশ সফর হিসেবে ঢাকায় এসেছেন। এর মানে কুয়ালালামপুরও বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেয়ার বিষয়টি সহজ করতে আগ্রহী।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একজন উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা দৈনিক বাংলাকে বলেন, যেহেতু দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়ে গেছে, সেটি বদলানোর সুযোগ নেই। তবে নতুন করে কীভাবে এই প্রক্রিয়া সহজ করা যায়, সে বিষয়ে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হবে।
নির্দিষ্ট কয়েকটি নয়, বরং সব রিক্রুটিং এজেন্সি যাতে কর্মী পাঠাতে পারে, সে বিষয়েও গুরুত্ব দেয়া হবে বলে জানান তিনি।
প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘মালয়েশিয়া আমাদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি শ্রমবাজার। তাদেরও কর্মী চাহিদা রয়েছে। আমাদেরও পাঠানোর মতো প্রচুর কর্মী রয়েছে। তাই কর্মী যাওয়ার প্রক্রিয়াকে কীভাবে সহজ করা যায়, সে বিষয়কে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। আমরা চাই আমাদের যে দেড় হাজার রিক্রুটিং এজেন্সি আছে, তারা সবাই যাতে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর সুযোগ পায়।’
দীর্ঘ চার বছর বন্ধ থাকার পর ২০২১ সালের ডিসেম্বরে কর্মী পাঠানোর বিষয়ে মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়। এমওইউ অনুযায়ী, বৃক্ষরোপণ, কৃষি, উৎপাদন, পরিষেবা, খনি, নির্মাণ এবং গৃহস্থালি পরিষেবাসহ সব খাতে পাঁচ বছরে পাঁচ লাখ কর্মী নেবে মালয়েশিয়া।
সমঝোতার পর মালয়েশিয়া সরকারের মানবসম্পদমন্ত্রী ঢাকায় প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রীকে দেয়া চিঠিতে মাত্র ২৫টি এজেন্সি ও এর সঙ্গে সহযোগী (সাব-এজেন্ট) হিসেবে ১০টি করে এজেন্সি রাখার সিদ্ধান্ত জানায়। কিন্তু তাতে রাজি হননি প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ। তবে মালয়েশিয়ার অনড় অবস্থানের কারণে শেষ অবধি বায়রার সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন স্বপনের এজেন্সিসহ ২৫টির তালিকা চূড়ান্ত করা হয়। তালিকাভুক্ত এসব এজেন্সির বাইরে কেউ মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে পারবে না বলে অনড় ছিল দেশটি।
এই সিন্ডিকেট নিয়ে শুরু হয় তুমুল সমালোচনা। আন্দোলনে মাঠে নামে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর একটি বড় অংশ। এর প্রভাবে বায়রা নির্বাচনে বিজয়ী হন সিন্ডিকেটবিরোধীরা। তবে এরপর শুরু হয় নতুন মেরুকরণ। ২৫টি এজেন্সির বাইরে সিন্ডিকেটবিরোধীদের ২৫ থেকে ৭৫টি, পরে ১০০টি এজেন্সি যুক্ত হয়। কর্মীপ্রতি প্রায় ৭৯ হাজার টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হলেও মালয়েশিয়ায় কর্মসংস্থানে বাংলাদেশিদের ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ করতে হচ্ছে।
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় মূল সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম মাসুদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী কবির ওরফে ‘দাঁতভাঙা কবির’কে সাত দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ফয়সাল আহমেদের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসিবুজ্জামানের আদালত এই আদেশ দেন।
এর আগে কবিরকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এই মামলায় এর আগে মূল অভিযুক্ত ফয়সালের স্ত্রী সাহেদা পারভীন সামিয়া, শ্যালক ওয়াহিদ আহমেদ সিপু ও বান্ধবী মারিয়া আক্তার লিমাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মোটরসাইকেলের মালিক আব্দুল হান্নানকেও ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ১২ ডিসেম্বর জুমার নামাজের পর নির্বাচনী প্রচারণা শেষে ফেরার পথে রাজধানীর পল্টন মডেল থানার বক্স কালভার্ট এলাকায় হাদিকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় মোটরসাইকেলে আসা দুর্বৃত্তরা। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে দেশে প্রাথমিক চিকিৎসা ও অস্ত্রোপচারের পর উন্নত চিকিৎসার জন্য সোমবার সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়েছে। মামলার বাদী ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের অভিযোগ করেছেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করা এবং দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে আওয়ামী লীগের পলাতক নেতাকর্মীদের ষড়যন্ত্র ও নির্দেশনার অংশ হিসেবেই এই হামলা চালানো হয়েছে।
সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি ঘটলেও বর্তমানে তা স্থিতিশীল রয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে হাদির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ইনকিলাব মঞ্চের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানানো হয়, সিঙ্গাপুরে পৌঁছানোর পর তার কিছু প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। এরপর তার অবস্থার কিছুটা অবনতি হলেও দুপুর ৩টার দিকে তার ভাইয়ের বরাতে নিশ্চিত করা হয়েছে যে, বর্তমানে তিনি স্থিতিশীল অবস্থায় আছেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার সুস্থতার জন্য আরও একটি অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন, তবে তার বর্তমান শারীরিক পরিস্থিতি এখনো সেই অস্ত্রোপচারের জন্য অনুকূল হয়ে ওঠেনি।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর পল্টন এলাকায় গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর হাদিকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরবর্তীতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশে এবং সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টা ও চিকিৎসকদের পরামর্শে উন্নত চিকিৎসার জন্য সোমবার তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ক্যাম্পাসে পাকিস্তানের পতাকা এঁকে তা পদদলিত করার কর্মসূচিতে বাধা দেওয়ার প্রতিবাদে রাজাকারদের প্রতীকী ছবিতে জুতা নিক্ষেপ করে ঘৃণা প্রকাশ করেছেন একদল শিক্ষার্থী। মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য চত্বরে এই প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হয়।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, মহান বিজয় দিবসে পাকিস্তানের প্রতি ঘৃণা প্রদর্শনের অংশ হিসেবে তারা ক্যাম্পাসে পাকিস্তানের পতাকা আঁকতে চেয়েছিলেন, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও একদল শিক্ষার্থী তাতে বাধা প্রদান করে। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী আসিফ হোসেন ও ইসলামি ইতিহাস বিভাগের সাদ আহমেদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় লাখো মানুষকে হত্যাকারী পাকিস্তানের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করতে প্রশাসনের অনুমতির প্রয়োজন হওয়াটা দুঃখজনক। তারা প্রশ্ন তোলেন, স্বাধীনতার এত বছর পরেও কেন পাকিস্তানের প্রতি ঘৃণা প্রদর্শনে বাধার সম্মুখীন হতে হবে।
উল্লেখ্য, এর আগে সোমবার দিবাগত রাতে ক্যাম্পাসে পাকিস্তানের পতাকা আঁকতে বাধা দেওয়ার জেরে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ করেন। রাতভর উপাচার্যের গাড়ি আটকে রাখার পর ভোর পাঁচটার দিকে অবরোধ তুলে নেওয়া হলে উপাচার্য ও প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়েছে, সন্ধ্যা ৬টায় বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি), বিটিভি নিউজ এবং বাংলাদেশ বেতারে তার এই ভাষণ একযোগে সম্প্রচার করা হবে।
এর আগে দিনের শুরুতে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে একাত্তরের বীর শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধান উপদেষ্টা। ভোর ৬টা ৫৬ মিনিটে স্মৃতিসৌধের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন তিনি। এ সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত একটি চৌকস দল তাকে রাষ্ট্রীয় অভিবাদন জানায়। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর তিনি শহীদদের স্মরণে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন এবং পরে দর্শনার্থী বইয়ে স্বাক্ষর করেন।
শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় প্রধান বিচারপতির পাশাপাশি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাবৃন্দ, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, বীর মুক্তিযোদ্ধা, কূটনীতিক এবং উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মহান বিজয় দিবসে এক অনন্য বিশ্ব রেকর্ড গড়ল বাংলাদেশ। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পূর্তি উপলক্ষে সশস্ত্র বাহিনীর উদ্যোগে ৫৪ জন প্যারাট্রুপার একসঙ্গে জাতীয় পতাকা হাতে স্কাই ডাইভিং করে এই ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) রাজধানীর তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দর সংলগ্ন প্যারেড গ্রাউন্ডে এই ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটে। এটিই বর্তমানে বিশ্বের বুকে সর্বাধিক পতাকা হাতে প্যারাস্যুটিং করার রেকর্ড।
‘টিম বাংলাদেশ’-এর ব্যানারে ৫৪ জন সাহসী প্যারাট্রুপার এই প্রদর্শনীতে অংশ নেন। এই ঐতিহাসিক মুহূর্তটি সশরীরে প্রত্যক্ষ করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। রেকর্ড গড়ার এই আয়োজনের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর সমন্বয়ে এক মনোমুগ্ধকর ফ্লাইপাস্ট মহড়াও অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে বিমানবাহিনীর বিভিন্ন বিমান ও হেলিকপ্টার আকাশে কসরত প্রদর্শন করে।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এই ‘এয়ার শো’ ও বিশ্ব রেকর্ড গড়ার দৃশ্য দেখতে তেজগাঁওয়ের পুরাতন বিমানবন্দরে সাধারণ মানুষের ঢল নামে। সকাল থেকেই আগারগাঁও সংলগ্ন বিমানবন্দরের ফটকে দর্শনার্থীদের দীর্ঘ সারি দেখা যায়। সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও বিজিবি সদস্যদের কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে উৎসুক জনতা এই বর্ণাঢ্য আয়োজন উপভোগ করেন।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী বীর পুলিশ সদস্যদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এবং পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বিপিএম। মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল ৮টায় রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনস স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে তারা এই শ্রদ্ধা জানান।
প্রথমে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা স্মৃতিসৌধের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী। এরপর পুলিশ বাহিনীর পক্ষ থেকে আইজিপি বাহারুল আলম এবং পরবর্তীতে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জত আলী শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এছাড়া বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ পুলিশ উইমেন নেটওয়ার্কের (বিপিডব্লিউএন) নেতৃবৃন্দও ফুল দিয়ে বীর শহীদদের স্মরণ করেন।
যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে যশোরের শার্শার কাশিপুর বিওপি সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত বীরশ্রেষ্ঠের সমাধিস্থলে বিজিবি মহাপরিচালকের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। যশোর ব্যাটালিয়নের (৪৯ বিজিবি) ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত এই কর্মসূচিতে গার্ড অব অনার প্রদান ছাড়াও বীর শহীদের রুহের মাগফিরাত কামনায় ফাতেহা পাঠ, বিশেষ মোনাজাত এবং উপস্থিত সকলের মাঝে তবারক বিতরণ করা হয়।
এ সময় যশোর ব্যাটালিয়নের উপ-অধিনায়ক মেজর নূর উদ্দিন আহমাদসহ বীরশ্রেষ্ঠের পরিবারের সদস্য, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। যশোর ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল সাইফুল্লাহ্ সিদ্দিকী জানান, মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখের আত্মত্যাগ ও অবদানকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণীয় করে রাখতেই প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বিজিবির পক্ষ থেকে এই বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
মহান বিজয় দিবস উদযাপন ও একাত্তরের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে সাধারণ মানুষের ঢল নেমেছে। মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল থেকেই লাল-সবুজের পতাকা হাতে শিশু থেকে বৃদ্ধ—সর্বস্তরের মানুষের পদচারণায় এবং ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো স্মৃতিসৌধ এলাকা। খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে হাজারো মানুষ শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাতে সেখানে সমবেত হন।
দিনের শুরুতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস শহীদদের বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রীয় অভিবাদন জানায় এবং বিউগলে করুণ সুর বেজে ওঠে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা স্মৃতিসৌধ এলাকা ত্যাগ করার পরই প্রধান ফটক সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এরপরই ফুল হাতে জনতার বাঁধভাঙা স্রোত প্রবেশ করতে থাকে মূল বেদির দিকে।
অনেকেই দেশাত্মবোধক গানের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে এবং নীরবতা পালন করে শহীদদের স্মরণ করেন। আশুলিয়া থেকে পরিবার নিয়ে আসা মাহফুজুর রহমান জানান, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত এই দেশ ও স্বাধীনতার জন্য আত্মত্যাগকারী বীরদের শ্রদ্ধা জানাতেই তিনি ছুটে এসেছেন। অন্যদিকে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শোয়াইব রহমান বন্ধুদের নিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে এসে বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি আবেগ ও সম্মান জানাতেই তাদের এই আগমন। বিজয়ের উল্লাসের পাশাপাশি শহীদদের ত্যাগের মহিমাও এদিন গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছে জাতি।
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টার ঘটনাটি কয়েক মাসের দীর্ঘ পরিকল্পনার অংশ ছিল বলে তদন্তে উঠে এসেছে। তদন্তসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, হামলার আগের রাতে মূল অভিযুক্ত ফয়সাল ও আলমগীর সাভারের আশুলিয়ার একটি রিসোর্টে অবস্থান করেন। সেখানে তাদের মনোরঞ্জনের জন্য নারী সঙ্গীর ব্যবস্থাসহ বিনোদনের আয়োজন করেছিল মাস্টারমাইন্ডরা। পরদিন শুক্রবার সকালে তারা ঢাকায় ফিরে জুমার নামাজের পর হাদির ওপর গুলি চালিয়ে পালিয়ে যান। পল্টন থানায় দায়ের করা এই মামলাটি বর্তমানে তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
মামলার তদন্তের অংশ হিসেবে গতকাল শুটার ফয়সালের স্ত্রী সামিয়া, শ্যালক শিপু এবং রিসোর্টে থাকা বান্ধবী মারিয়ার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এর আগে হামলায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আব্দুল হান্নানকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছিল। এছাড়া গতকাল সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ থেকে ফয়সালের ঘনিষ্ঠ সহযোগী কবিরকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব, যাকে ভিডিও ফুটেজে হাদির আশেপাশেই দেখা গিয়েছিল। অন্যদিকে, হামলাকারীদের সীমান্ত পার হতে সহায়তার অভিযোগে শেরপুরের সীমান্ত এলাকা থেকে বিজিবি ও পুলিশ কয়েকজনকে আটক করেছে, যাদের মধ্যে কয়েকজনকে মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছে ডিবি।
এদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য গতকাল সোমবার দুপুরে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে শরিফ ওসমান হাদিকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়েছে। সেখানে পৌঁছানোর পর তাকে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী সায়েদুর রহমান জানিয়েছেন, বাংলাদেশ সরকার ও সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের মধ্যে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে এবং তিনি হাদির সুস্থতার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে একাত্তরের বীর শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকালে স্মৃতিসৌধের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে তিনি স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গকারী সূর্যসন্তানদের স্মরণ করেন।
পুষ্পস্তবক অর্পণের পর প্রধান উপদেষ্টা মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত একটি চৌকস দল তাকে রাষ্ট্রীয় অভিবাদন জানায় এবং বিউগলে বেজে ওঠে করুণ সুর। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ড. ইউনূস সেখানে উপস্থিত উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তা, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।
এর আগে, সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা পুরাতন বিমানবন্দর এলাকায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি আর্টিলারি রেজিমেন্ট ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে মহান বিজয় দিবসের আনুষ্ঠানিক সূচনা করে। দেশজুড়ে যথাযোগ্য মর্যাদা ও বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে এবারের বিজয় দিবস।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকালে স্মৃতিসৌধের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে তিনি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণ করেন।
পুষ্পস্তবক অর্পণের পর রাষ্ট্রপতি মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত একটি চৌকস দল তাকে রাষ্ট্রীয় অভিবাদন জানায়। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে রাষ্ট্রপতি সেখানে উপস্থিত উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তা, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।
এর আগে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা পুরাতন বিমানবন্দর এলাকায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি আর্টিলারি রেজিমেন্ট ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসের আনুষ্ঠানিক সূচনা করে। যথাযোগ্য মর্যাদা ও উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে দেশজুড়ে মহান বিজয় দিবস উদযাপিত হচ্ছে।
আজ মহান বিজয় দিবস। বাঙালি জাতির হাজার বছরের শৌর্যবীর্য এবং বীরত্বের এক অবিস্মরণীয় গৌরবময় দিন। বীরের জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার দিন। পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন ভূখণ্ডের নাম জানান দেওয়ার দিন।
১৯৭১ সালে ৯ মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর কবল থেকে দেশ মুক্ত হওয়ার এই দিনটিকে আজ জাতি বিজয় দিবস হিসেবে উদ্যাপন করছে।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ৩০ লাখ শহীদ ও ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে স্বাধীন দেশ হিসেবে জন্মগ্রহণ করে বাংলাদেশ।
পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ এবং বাংলাদেশ বিশ্ব মানচিত্রে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার মুহূর্তকে স্মরণ করে বিজয় দিবস উদ্যাপন শুরু হবে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে। বিজয় দিবস উপলক্ষে সকালে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধের শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে প্রথমে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং এরপর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টার নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং বীর মুক্তিযোদ্ধারা সেখানে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।
এছাড়া, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিদেশি কূটনীতিকরা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন, সর্বস্তরের মানুষ মহান মুক্তিযুদ্ধে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারকারী শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন।
দিনটি উপলক্ষে সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবন এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস এবং মিশনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনায় আলোকসজ্জা করা হয়।
ঢাকা এবং দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়ক দ্বীপগুলো ইতোমধ্যেই জাতীয় পতাকাসহ ব্যানার, ফেস্টুন এবং রঙিন পতাকা দিয়ে সজ্জিত করা হয়েছে।
মহান বিজয় দিবস দেশব্যাপী জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদ্যাপনের অংশ হিসেবে সর্বোচ্চসংখ্যক জাতীয় পতাকা নিয়ে প্যারাশুটিং করে বিশ্ব রেকর্ড গড়া হবে। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনী মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে শহরের তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরে পৃথকভাবে ফ্লাই-পাস্ট প্রদর্শন করবে। সেখানে একটি বিশেষ বিজয় দিবস ব্যান্ড শো আয়োজন করা হবে।
এছাড়া, ‘টিম বাংলাদেশ’-এর ৫৪ জন প্যারাট্রুপার দেশের স্বাধীনতার ৫৪ বছর উপলক্ষে সকাল ১১টা ৪০ মিনিট থেকে পতাকাবাহী স্কাইডাইভ প্রদর্শন করবে। যা বিশ্বের সর্ববৃহৎ পতাকা-প্যারাশুটিং প্রদর্শনী হবে, যা একটি নতুন গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড স্থাপন করবে।
দেশের অন্যান্য শহরেও সশস্ত্র বাহিনী দ্বারা একই রকম ফ্লাই-পাস্ট প্রদর্শনী পরিচালিত হবে। এর পাশাপাশি, পুলিশ, বিজিবি এবং আনসার বাহিনী দেশব্যাপী ব্যান্ড শো আয়োজন করবে। সমস্ত অনুষ্ঠান জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
বিজয় দিবস উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় দেশের সকল জেলা ও উপজেলায় তিন দিনব্যাপী বিজয় মেলার আয়োজন করবে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন শিশুদের জন্য মুক্তিযুদ্ধের ওপর আবৃত্তি, প্রবন্ধ রচনা এবং চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা এবং দিবসটি উদ্যাপনের জন্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে।
আজ বিকেল ৩টা থেকে নগরীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিজয় দিবসের গান পরিবেশিত হবে এবং নতুন প্রজন্মের শিল্পীরা দেশের ৬৪টি জেলায় একযোগে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গান পরিবেশন করবেন।
এ উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর এবং বাংলাদেশ শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিশুদের চিত্রাঙ্কন, রচনা ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক তথ্যচিত্র প্রদর্শনের আয়োজন করবে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোও দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে অনুরূপ কর্মসূচি গ্রহণ করবে।
রাষ্ট্রপতি আজ বিকেলে বঙ্গভবনে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা জানাবেন। এছাড়াও, মহানগর, জেলা ও উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদদের পরিবারের সদস্যদের জন্য সংবর্ধনা অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে।
বাংলাদেশ ডাক বিভাগ এই উপলক্ষে স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করবে।
বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার এবং বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও রেডিও মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস তুলে ধরে অনুষ্ঠান সম্প্রচার করবে।
সারাদেশের সিনেমাহলগুলোতে শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র এবং দেশের অডিটোরিয়াম এবং উন্মুক্ত স্থানে মুক্তিযুদ্ধের ওপর ভিত্তি করে তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হবে।
সরকারি এবং স্বায়ত্তশাসিত জাদুঘরগুলো প্রবেশ ফি ছাড়াই সারাদিন জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে, অন্যদিকে দেশের সকল বিনোদন কেন্দ্রে শিশুদের জন্য বিনামূল্যে প্রবেশের সুযোগ থাকবে।
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশে একটি অনুকূল পরিবেশ বিরাজ করছে। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন (ইসি) সময়মতো ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে সব ধরনের প্রস্তুতিমূলক কাজ সম্পন্ন করেছে।
বাংলাদেশ সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে উপদেষ্টা পরিষদের অর্থনৈতিক বিষয়ক কমিটি এবং উপদেষ্টা পরিষদের সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত কমিটির দুইটি পৃথক বৈঠকে সভাপতিত্ব করার পর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আপনারা দেখবেন, নির্বাচন কমিশন তাদের প্রস্তুতিমূলক কাজ খুব ভালোভাবে সম্পন্ন করেছে। ভোটার তালিকা সময়মতো প্রস্তুত ও হালনাগাদ করা হয়েছে এবং নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। এখন মূল বিষয় হলো সঠিকভাবে তা বাস্তবায়ন করা।’
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে সময়মতো ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও সংশোধন করেছে এবং নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করেছে, যা এখন সে অনুযায়ী বাস্তবায়নের পর্যায়ে রয়েছে।
ড. সালেহউদ্দিন আরও বলেন, মাঠপর্যায়ের পরিস্থিতি মূল্যায়নের ভিত্তিতে নির্বাচন বাস্তবায়ন করা হবে এবং যেখানে প্রয়োজন সেখানে অতিরিক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, ‘যেসব এলাকা তুলনামূলকভাবে বেশি সংবেদনশীল, সেখানে নিরাপত্তা ও অন্যান্য ব্যবস্থা জোরদার করা হবে। আর কম সংবেদনশীল এলাকায় কী ধরনের প্রস্তুতি প্রয়োজন, তা কমিশনের জানা রয়েছে এবং সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।’
অর্থ উপদেষ্টা আরও বলেন, নির্বাচনের সময়সূচি নিয়ে বড় ধরনের কোনো রাজনৈতিক মতভেদ তিনি দেখছেন না এবং দেশের রাজনৈতিক পরিবেশকে তিনি ‘অনুকূল’ বলে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা জানিয়েছে। তফসিল নিয়ে কেউ আপত্তি তোলেনি। বরং সবাই সর্বসম্মতভাবে বলেছে যে তফসিলটি উপযুক্ত। এটিই প্রমাণ করে যে সময়সূচি নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই।’
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি প্রসঙ্গে ড. সালেহউদ্দিন বলেন, সার্বিক অবস্থা সন্তোষজনক রয়েছে এবং নির্বাচন যত এগিয়ে আসবে, পরিস্থিতি আরও শক্তিশালী করা হবে।
তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং তা আরও জোরদার করা হবে।’
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে অনুকূল পরিবেশ বিরাজ করছে : ড. সালেহউদ্দিন
সরকারের ঋণ সম্পর্কে ড. সালেহউদ্দিন বলেন, বর্তমান প্রশাসন মূলত পূর্ববর্তী সরকার থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলোকে চালিয়ে যাওয়ার জন্য ঋণ নিয়েছে।
তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন যে এই প্রকল্পগুলোর অনেকগুলো ইতোমধ্যেই ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে, যদিও সেগুলো পরিত্যাগ করলে উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হবে।
ড. সালেহউদ্দিন আরও বলেন, যদি আমরা এই প্রকল্পগুলোকে মাঝপথেই বন্ধ করে দেই, তাহলে এটি অর্থনীতিবিদদের মতে ‘ডেডওয়েট লস’-এর সমান হবে, যার অর্থ ইতোমধ্যে ব্যয় করা অর্থ সম্পূর্ণরূপে নষ্ট হয়ে যাবে। এটি বিবেচনা করে, আমরা বেশ কয়েকটি চলমান প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
তিনি বলেন, ‘সরকার খুব কম নতুন প্রকল্প গ্রহণ করেছে।’
উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘সরকার কয়েক বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করেছে, যা আর্থিক শৃঙ্খলার প্রতি তার প্রতিশ্রুতিকে তুলে ধরে।’
নির্বাচন সংক্রান্ত ব্যয় সম্পর্কে ড. সালেহউদ্দিন বলেন, তফসিল ঘোষণার পর, নির্বাচন কমিশন এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে তহবিলের জন্য বিস্তারিত দাবি জমা দেয়নি।
তিনি আরও বলেন, তাদের অনুরোধ আমাদের কাছে এলে, আমরা দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে এবং তা বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হব।