সাহিদা যেদিন চাকরিচ্যুত হয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছিলেন, তার গর্ভের শিশুর বয়স তখন চার মাস। গর্ভধারণ করলেও অন্য কর্মীদের মতোই কাজ করে যাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু তার পোশাক কারখানার কর্তৃপক্ষ মনে করতে শুরু করে, অন্য কর্মীদের তুলনায় তার কাজের পরিমাণ কমেছে। তাই এক দিনের নোটিশে চাকরি ছাড়তে বাধ্য করা হয় তাকে। পরের দিন সাহিদা যখন ঢাকা ছেড়ে গ্রামের বাস ধরছিলেন, তখন তার কাছে মাত্র ৭০০ টাকা।
সাহিদা ভেবেছিলেন গর্ভবতী অবস্থায় আরও কয়েক মাস চাকরি করে যেতে পারবেন। সেই টাকা সঞ্চয় করে সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখাবেন। কিন্তু তা হয়নি। চাকরি টিকিয়ে রাখতে গর্ভপাতের কথাও একবার তার মাথায় এসেছিল। উত্তরবঙ্গের জেলা সিরাজগঞ্জ থেকে ঢাকার উত্তরখানে মালেক নামের এক পোশাক কারখানায় কাজ করতে আসা সাহিদা এই প্রতিবেদককে বলেন, তার কাছে এই গর্ভধারণ অভিশাপ হয়ে এসেছিল।
রপ্তানিমুখী হলেও বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলো রাজধানী ঢাকা ও তার আশপাশেই গড়ে উঠেছে। ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রাম জেলায় ৩ হাজার ২০০-এর বেশি কারখানায় কর্মরত আছেন ২৫ লাখের বেশি শ্রমিক। এর ১৫ লাখই নারী। তাদের সবাই প্রায় বয়সে তরুণী। প্রথম সন্তান জন্মের আগেই পোশাক কারখানায় কাজ করতে আসেন তারা।
‘শ্রম আইন-২০০৬’-এ মাতৃত্বকালীন ছুটি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার কথা বলা থাকলেও পোশাক কারখানাগুলোর হাতে গোনা কয়েকটি মাত্র তা মানে। উল্টো গর্ভধারণ করলে চাকরিচ্যুত করে থাকে প্রতিষ্ঠানগুলো, যদিও প্রতিষ্ঠানের মালিক ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ তা স্বীকার করতে চান না।
চাকরি হারানোর ভয়ে অনেক কর্মীই গর্ভধারণ পিছিয়ে দেন। অনেকে আবার বিলম্বিত বয়সে গর্ভধারণ করতে গিয়ে শারীরিক জটিলতার মধ্যে পড়েন বলে অভিযোগ করেন।
গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের নেত্রী জলি তালুকদার বলেন, ‘কয়েকটা গার্মেন্টস ছাড়া অধিকাংশ কারখানাই মাতৃত্বকালীন সুযোগ-সুবিধা দিতে চায় না। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে এমন দাবি করতে গেলে হয়রানিসহ চাকরি হারাতে হয়। তাদের বিরুদ্ধে আবার অভিযোগ দিতে গেলে সেখানেও মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হয়। সুবিধা পাওয়ার আশ্বাস মেলে, কিন্তু বাস্তবায়ন হয় না।’
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, পোশাকশিল্পে গর্ভধারণ করা নারী কর্মীর চাকরি হারানোর সংখ্যা মোটেও কম নয়। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরে আনুষ্ঠানিকভাবে জমা পড়া অভিযোগের বাইরে এ রকম ঘটনার সংখ্যা আরও অনেক বেশি বলে পোশাককর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। আবার যারা অভিযোগ করেন, তাদের ক্ষুদ্র একটি অংশই প্রতিকার পেয়েছেন।
গত এক মাসে ঢাকা, সাভার, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুরে বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) নথিভুক্ত পোশাক কারখানার ও সাব-কন্ট্রাক্ট প্রতিষ্ঠান মিলে ১০টি কারখানা থেকে চাকরি হারানো ১০ জন ও গর্ভধারণ অবস্থায় কাজ করা চারজনসহ মোট ১৪ জনের সঙ্গে এই প্রতিবেদক কথা বলেছেন। চাকরি হারানোদের মধ্যে আটজন বেকার হয়ে গ্রামে গিয়ে আর ফিরে আসেননি। তিন বছর বেকার থাকার পর আবার কাজে যোগ দিয়েছেন দুজন। আর কাজ চালিয়ে যাওয়া চারজন জানিয়েছেন তারা সহকর্মীদের কাছ থেকে উপহাস ছাড়া কোনো সহযোগিতা পাননি এবং আরও নানান ঝুঁকির মুখে পড়েছেন।
জুলেখা আক্তার (২৪) নামে এক পোশাককর্মী জানান, আশুলিয়ায় মোতালেব গার্মেন্টস নামে একটি পোশাক কারখানায় অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন। বেতন পেতেন মাসে ৯ হাজার ৭০০ টাকা। তার গর্ভের শিশুর বয়স যখন পাঁচ মাস, তখন হাত থেকে এক টুকরা কাপড় মেঝেতে পড়ে যাওয়ায় তিনি অন্যের সাহায্য নিয়েছিলেন। বিষয়টি ম্যানেজারের চোখে পড়ে। পরের দিন থেকে তিনি জুলেখাকে কাজে আসতে নিষেধ করে দেন।
ছাঁটাইয়ের শিকার হওয়ার পর অন্য পোশাক কারখানায় চাকরির চেষ্টা করেছিলেন জুলেখা। কিন্তু গর্ভবতী অবস্থায় তাকে কেউ চাকরিতে নিতে চায়নি। মাতৃত্বকালীন সুযোগ-সুবিধা তো দূরের কথা, সে মাসের বেতন বা অন্য সুযোগ-সুবিধা কিছুই জোটেনি জুলেখার। দেড় বছর পর কর্মস্থলে ফেরার চেষ্টা করেও মেলেনি ফেলে আসা চাকরি।
কুমিল্লার নাঙ্গলকোট থানার একটি গ্রাম থেকে আসা জুলেখা এখন চাকরি করেন মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন আতিয়া গার্মেন্টস নামক একটি পোশাক কারখানায়। তিনি দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘মনে হয়, গার্মেন্টসে চাকরি করা শুধু অভিশাপ না, পাপও। আমার সন্তানের বয়স এখন দুই বছর। যতদিন এ চাকরি করে যাব, আর বাচ্চা নেব না। কারণ চোখের সামনেই তো দেখেছি কতজন গর্ভধারণ করে চাকরি হারাচ্ছে।’
‘শ্রম আইন-২০০৬’-এ বলা আছে, কর্মজীবী নারী যিনি তার চাকরির প্রথম ছয় মাস পূর্ণ করেছেন, তিনি গর্ভবতী হলে গর্ভাবস্থায় এবং সন্তান জন্মের পরে সর্বমোট ১৬ সপ্তাহ ছুটি পাবেন এবং তা বৈতনিক ছুটি হবে।
গর্ভবতী মায়েদের মামলা, অধিদপ্তরে অভিযোগ
১৮ জানুয়ারি বোনকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থেকে বিজয়নগর কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরে আসেন আশফুল আক্তার (২৩)। আশফুলের গর্ভে তখন সাত মাসের বাচ্চা। তিনি রূপগঞ্জের আক্তার স্পিনিং মিলে কাজ করতেন। এক মাস আগে কোনো প্রকার ছুটি ও সুযোগ-সুবিধা না দিয়ে কারখানা থেকে তাকে ছাঁটাই করা হয়। অন্য নারীদের সহযোগিতায় অধিদপ্তরে চালু হওয়া জরুরি হেল্পলাইন ১৬৩৫৭ নম্বরে ফোন করেন তিনি। সেখান থেকে জানানো হয় শ্রম ভবনের এই অধিদপ্তরে অভিযোগ করতে।
শ্রমিকদের সুবিধা-অসুবিধার বিষয় দেখভাল করার দায়িত্ব পালন করে থাকে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এই কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের অভিযোগ শাখায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাতৃত্বকালীন ছুটি চাওয়ার আগেই চাকরিচ্যুত করা হয় অনেক নারী শ্রমিককে।
অধিদপ্তরে প্রতি মাসে ঢাকা ও আশপাশের এলাকার কারখানাগুলো থেকে গড়ে ১৫-২০টি অভিযোগ জমা পড়ে। ২০২০ থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত গত দুই বছরে ১১২টি অভিযোগ জমা পড়েছে। অবশ্য তাদের দাবি, কয়েক বছর আগে এই অভিযোগ আরও কয়েক গুণ বেশি ছিল।
জানতে চাইলে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের যুগ্ম মহাপরিদর্শক (সাধারণ শাখা) মো. হাসিবুজ্জামান দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘বিষয়টি অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। এমন ঘটনা প্রতিনিয়তই ঘটছে। আমাদের কাছে যারা অভিযোগ করতে আসেন, আমরা সঙ্গে সঙ্গে মালিকপক্ষকে ডেকে থাকি। শ্রম আইন-২০০৬ অনুসারে শুনানির পর সমঝোতা করে দিই। বৈতনিক মাতৃকালীন ছুটির ব্যবস্থা করি শ্রমিকদের।’
অবশ্য আশফুল সেদিন অভিযোগ দিয়ে ফেরার সময় এই প্রতিবেদককে বলেছিলেন, ‘গরিবের বিচার কোথাও নাই। মনে হচ্ছে না এখানে কোনো প্রতিকার হবে। এত বছর পার করলাম। এখন বিপদের সময় কিছুই হাতে পেলাম না।’
অধিদপ্তরের অভিযোগে কাজ না হলে কেউ কেউ শ্রম আদালতেও মামলা করেন। মূলত চাকরিতে পুনর্বহাল, পাওনা আদায়, মালিক-শ্রমিক চুক্তির লঙ্ঘন, বেতন-ভাতার দাবি, ক্ষতিপূরণ আদায় এবং ট্রেড ইউনিয়নসংক্রান্ত মামলা নেয় শ্রম আদালত। আদালত সূত্র বলছে, শুধু মাতৃত্বকালীন ছুটি আর পাওনা আদায় নিয়ে মামলা ঝুলে আছে ৩৫০টির বেশি। রায় হতে সময় নিচ্ছে বছরের পর বছর।
শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. ফারুক (এম ফারুক) বলেন, ‘শ্রম আদালতের সংখ্যা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি আদালতে লোকবলও বাড়াতে হবে। আরেকটি বিষয় জরুরি। শ্রম আদালতের রায় কার্যকর করার জন্য মালিকপক্ষের সদিচ্ছা থাকতে হবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তাসলিমা ইয়াসমীন দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘মাতৃত্বকালীন আইন ভঙ্গের জন্য আলাদা কোনো শাস্তির বিধান নেই, তবে শ্রম আইন ভঙ্গের একটি সার্বিক শাস্তি রয়েছে। আইন ভঙ্গের অভিযোগ পাওয়া গেলে চাকরিদাতাকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে। এ ছাড়া কর্মক্ষেত্রে চাকরিদাতার অবহেলার জন্য কেউ যদি গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত হন তাহলেও শাস্তির বিধান রয়েছে।’
নথিভুক্ত কারখানা যেমন-তেমন, ধার ধারে না সাব-কন্ট্রাক্ট
তৈরি পোশাকশিল্পের কারখানাগুলো বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত। তবে এ সমিতির সদস্যভুক্ত নয়, এমন কারখানাও আছে। এগুলো মূলত বড় কারখানাগুলোর পাওয়া রপ্তানি আদেশের বিপরীতে সাব-কন্ট্রাক্টের কাজ করে থাকে। এসব ছোট প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি আরও কম।
সারা দেশে এমন কতগুলো সাব-কন্ট্রাক্ট কারখানা রয়েছে, তার কোনো সঠিক হিসাব নেই। তবে সংশ্লিষ্ট কেনো কোনো সংগঠনের মতে ১৫-২০ হাজার ছাড়িয়ে যাবে।
এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়মের মধ্যে আনতে ‘সাব-কন্ট্রাক্টিং নীতিমালা-২০১৪’-এর খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। কিন্তু সেটার বাস্তবায়ন এখনো হয়নি। নারী শ্রমিক ও তাদের মাতৃত্বকালীন ছুটি নিয়ে এ নীতিমালায় কিছু বলা নেই।
গাজীপুরে চৌরাস্তায় শাকিল ফেবিক্স নামের একটি কারখানায় কাজ করেন আকলিমা। আকলিমার গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের মধুপুরে। তার স্বামী রিকশা চালান। আকলিমা দৈনিক বাংলাকে জানান, তার গর্ভধারণের এখন পাঁচ মাস চলছে। তিন মাস থেকে যখন তার কারখানা কর্তৃপক্ষ জানতে পেরেছে, তখন থেকে তার বেতন ২ হাজার টাকা কমিয়ে ৬ হাজার ৩০০ টাকা করা হয়। অভিযোগ, তিনি এখন স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কাজ কম করতে পারেন।
কারখানাটির ব্যবস্থাপক আতিকুল ইসলামের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অন্য কারখানাগুলো তো চাকরি থেকে বের করে দেয়। আমরা তো বেতন কমিয়ে দিয়েছি।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই কারখানাটি নথিভুক্ত কারখানা গাজীপুরে আল হামরার পোশাক তৈরির কাজ করে। আল হামরার পোশাক যায় যুক্তরাজ্যে।
মাতৃত্বকালীন ছুটি ও ভাতা পান ৩ শতাংশ নারী শ্রমিক
ছয় মাসের গর্ভধারণ অবস্থায় মিরপুরে স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপ ২২তলা গার্মেন্টসের অপারেটর হিসেবে কাজ করছেন আয়েশা খাতুন (২৫)। আগামী মাসে মাতৃত্বকালীন ছুটিতে যাবেন তিনি। মালিকপক্ষ ৩০ হাজার টাকা দেবে বলে আশ্বাস দিয়েছে তাকে। দুই বছর আগে বিয়ে হলেও প্রায় চার বছর ধরে এই পোশাক কারখানায় কাজ করেন হবিগঞ্জের এই মেয়ে। আয়েশার স্বামী জাকিরও এই কারখানায় কাজ করেন।
আয়েশা দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘মাতৃত্বকালীন ছুটির সঙ্গে অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা এখানে পাওয়া যায়। আমার আগেও অনেকে পেয়েছেন। তবে আমার পরিচিত অন্যরা, যারা অন্য কারখানায় কাজ করেন, তারা সবাই এই সুবিধা পান না।’
আয়েশার বক্তব্যের সঙ্গে মিলে যায় পোশাক খাতে কর্মরত শ্রমিকদের নিয়ে এশিয়ান সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্টের (এসিডি) সাম্প্রতিক গবেষণা। তারা বলছে, পোশাক খাতে কর্মরত নারী শ্রমিকদের মধ্যে প্রতিবছর মা হন ৮ দশমিক ৩ শতাংশ। কিন্তু তাদের মধ্যে মাতৃত্বকালীন ছুটি ও ভাতা পান মাত্র ৩ দশমিক ১ শতাংশ নারী শ্রমিক।
ভাতাসহ মাতৃত্বকালীন ছুটির ব্যাপারে আরও মানবিক হওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে এসিডির গবেষণাপত্রে। বলা হয়েছে, এটি নারী শ্রমিকদের অধিকার। এ ব্যাপারে গার্মেন্টস মালিকরা আরও যত্নবান হলে শ্রমিক-মালিক দুই পক্ষই লাভবান হবে।
ছুটির জন্য যে কাজের ক্ষতি হয় না, তার যৌক্তিকতা দেখিয়ে গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একজন শ্রমিক বছরে ৪ দশমিক ৭ দিন ছুটি পান। ৯৮ দশমিক ৪ শতাংশ শ্রমিক এ সাধারণ ছুটি ভোগ করেন। কিন্তু সপ্তাহের বাকি ছয় দিন তারা দৈনিক ৯ ঘণ্টার মতো কাজ করেন। এতে দেখা যায়, প্রতি সপ্তাহে তারা ৮ ঘণ্টা ৩০ মিনিট অতিরিক্ত কাজ করেন, যা ছুটি ভোগের এক দিনের চেয়েও ৩০ মিনিট বেশি। এর মানে দাঁড়ায় বছর শেষে ৭৩ শতাংশ শ্রমিক অতিরিক্ত সময় কাজ করেন।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি ফারুক হাসান দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘শ্রমিকদের সুবিধা-অসুবিধা নানা বিষয়ে কারখানা মালিকদের সঙ্গে তারা নিয়মিত বসেন। সেখানে শ্রমিকদের যার যা প্রাপ্য সেটা নিশ্চিত করা হয়।
বিদ্রূপ সইতে হয় সহকর্মীদের কাছে
কারখানাগুলোতে অনুসন্ধানে জানা যায়, কেউ মাতৃত্বকালীন ছুটি ও সুযোগ-সুবিধা আইন অনুযায়ী দেয় না। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান দুই-একটা মানলেও আবার কেউ কেউ কোনো পাত্তাই দেয় না। মাতৃত্বকালীন ছুটি চাইলে চাকরি থেকে বের করে দেয়ার নজিরই বেশি। তবে সব প্রতিষ্ঠানেই যেটা হয়, গর্ভাবস্থা্য় কাজ করার সময় সহকর্মীদের বিদ্রূপ সইতে হয়। এ সময় কাজ করতে নানাভাবে হয়রানি হতে হয় নতুন মায়েদের। সেসব বিষয়ে প্রতিকার চাওয়ার কোনো সুযোগও থাকে না।
কলকারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তরের পরিদর্শক সবুজ মাহমুদ দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘এমন অভিযোগ অনেক। আমাদের কাছে অভিযোগগুলো এলে আমরা ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। তা ছাড়া গর্ভবতী মায়েদের সুস্বাস্থ্যের জন্য কারখানার পরিবেশ ঠিক রাখার চেষ্টা করি। অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সব সময় নানাভাবে তাগিদ দেয়া হয়।’
ছয় মাস আগে চাকরি হারিয়ে সিরাজগঞ্জ ফিরে যাওয়া সেই সাহিদা বলেন, গ্রামে ফিরে তিনি ভালো নেই। বড় স্বপ্ন নিয়ে ঢাকা গিয়ে তার মতো কেউ যেন খালি হাতে না ফেরেন। যাদের ঘামে তিল তিল করে গড়া হচ্ছে দেশের পোশাকশিল্প। সেই শিল্পের শ্রমিকদের দায়িত্ব তিনি সরকারকে নিতে অনুরোধ করেন।
নিখোঁজের পরদিন মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় মেঘনা নদী থেকে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও কলাম লেখক বিভুরঞ্জন সরকারের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল শুক্রবার বিকেলে গজারিয়ার কলাগাছিয়া এলাকার চর বলাকিয়ায় তার মৃতদেহ ভাসতে দেখা যায়। খবর পেয়ে নৌপুলিশ মরদেহটি উদ্ধার করে।
সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকার (৭১) দৈনিক আজকের পত্রিকার জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কয়জনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতকাল শুক্রবার দুপুর একটার দিকে গজারিয়া উপজেলাধীন মেঘনা নদীর চর বলাকী এলাকায় একজন পুরুষের লাশ ভেসে থাকতে দেখেন তারা। বিষয়টি স্থানীয়রা পুলিশকে জানালে তারা এসে লাশটি উদ্ধার করে।
স্থানীয় বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘শুক্রবার জুমার দিন, আমি বাসা থেকে নামাজের প্রস্তুতি নিয়ে মসজিদে যাওয়ার জন্য বের হয়েছিলাম। যাবার পথে দেখলাম মেঘনা নদী থেকে আমাদের বাজারের দিকে যাবার খালে এক ব্যক্তির লাশ ভাসছে। লাশটি উল্টা হয়ে ছিল তবে এটি কিভাবে এখানে আসল তা আমার জানা নেই। নামাজ পড়ে এসে দেখি উৎসুখ জনতার ভিড় জমে গেছে। পরে আমরা বিষয়টি পুলিশকে জানাই’।
নৌপুলিশের নারায়ণগঞ্জ অঞ্চলের পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন জানান, মৃতদেহ দেখে ধারণা করা হচ্ছে একদিন আগে তার মৃত্যু হয়। মৃতদেহ কিছুটা বিকৃত হতে শুরু করেছে। দেহে আঘাতের কোনো চিহ্ন নেই। ময়নাতদন্তে তার মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে তিনি বাসা থেকে বের হন। এরপর থেকে তার কোনো খোঁজ মেলেনি। এ বিষয়ে রাজধানীর রমনা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়।
পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার সকালে কর্মস্থল বনশ্রীর ‘আজকের পত্রিকা’ কার্যালয়ে যাওয়ার কথা বলে তিনি বাসা থেকে বের হন। যদিও পরে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, তিনি সেখানে যাননি। তিনি মোবাইল ফোনটিও বাসায় ফেলে যান। ‘আজকের পত্রিকা’ সূত্রে জানা যায়, ১৬ আগস্ট থেকে সাত দিনের ছুটিতে ছিলেন বিভুরঞ্জন।
বিভুরঞ্জন সরকারের ভাই চিররঞ্জন সরকার বৃহস্পতিবার রাতে ফেসবুকে লেখেন, আমার দাদা সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকার বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় অন্যান্য দিনের মতো অফিস (আজকের পত্রিকা) যাবেন বলে বাসা থেকে বের হন। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিনি অফিসে যাননি। পরিচিত পরিমণ্ডলের কোথাও যাননি। আজ কেউ তাকে দেখেননি। রাত ১টা পর্যন্ত বাসায় ফেরেননি।
চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে এক রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে প্রাইভেট হাসপাতালে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। স্বজনদের অভিযোগ, চিকিৎসকের অবহেলায় ওই রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার (২২ আগস্ট) সকালে উপজেলার কেরোয়া এলাকায় অবস্থিত ফরিদগঞ্জ ডায়াবেটিক ও জেনারেল (প্রাইভেট) হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত (বৃহস্পতিবার) রাতে ফরিদগঞ্জের কেরোয়া গ্রামের ইসহাক মিয়ার স্ত্রী কোহিনুর বেগম (৬৫) অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হন। শনিবার সকালে তিনি মারা যান। স্বজনদের দাবি, চিকিৎসকের অবহেলার কারণেই কোহিনুর বেগমের মৃত্যু হয়েছে।
এ নিয়ে রোগীর স্বজনদের সঙ্গে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বাগ্বিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে হাসপাতালের কিছু কর্মচারী স্বজনদের সঙ্গে স্বজনদের গায়ে হাত তোলে বলে অভিযোগ ওঠে। এতে উত্তেজিত স্বজনরা ও স্থানীয় কিছু লোক মিলে হাসপাতাল ভাঙচুর করেন।
খবর পেয়ে ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ, সাবেক পৌর মেয়র মঞ্জিল হোসেন এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। ঘটনার সময় হাসপাতালের ভেতরে প্রায় দুই শতাধিক রোগী ও স্বজন আটকা পড়েন এবং আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।
মৃত রোগীর বাবা বিল্লাল হোসেনও আক্রমনকারীদেরকে নিবৃত্ত করতে ব্যর্থ হন বলে জানান।
মৃত কোহিনুর বেগমের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করে বলেন, ‘রোগীকে ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাতে অনুমতি দেয়নি। একাধিকবার অনুরোধ করা হলেও হাসপাতালের অন্যতম পরিচালক ও সিনিয়র চিকিৎসক ডা. সাদিক হাসপাতালে আসেননি। চিকিৎসকের এসব অবহেলায় আমাদের রোগী মারা গেছেন।’
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডা. হুমায়ুন কবীর ইউএনবিকে বলেন, ‘আমি কয়েকবার রোগীকে দেখেছি। আমাদের কোনো অবহেলা ছিল না। উপজেলা পর্যায়ে যতটুকু সম্ভব আমরা চিকিৎসা সেবা দিয়েছি। শুক্রবার সকালে এই রোগীকে ঢাকায় রেফার করা হয়েছিল কিন্তু তিনি সকালেই মারা যান।’
ফরিদগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) রাজিব চক্রবর্তী ইউএনবিকে বলেন, ‘খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে যাই। সেখানে আমাদের পুলিশ সদস্যরা রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাহায্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন।’
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন ,বাণিজ্যে বৈচিত্র্য ও সক্ষমতা বাড়াতে বিভিন্ন দেশের সাথে উদারভাবে সংযুক্ত হওয়ার চেষ্টা করছি। বিক্রয় প্রবৃদ্ধি ও প্রতিযোগিতাপূর্ণ মূল্যে আমদানির সক্ষমতা বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে আমরা পাকিস্তানের প্রতিপক্ষের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্ভাবনা নিয়ে কাজ করেছি।
শুক্রবার ( ২২ আগস্ট ) দুপুরে চট্রগ্রামের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার চিটাগাং এর হল রুমে চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি আয়োজিত "মিটিং উইথ জাম কামাল খান ও শেখ বশিরউদ্দীন" শীর্ষক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘বাণিজ্য বৃদ্ধি করা, আমদানি ও রপ্তানির সক্ষমতা বৃদ্ধি করা এবং এসব খাতের বাইরেও আমরা অনেক বিষয় নিয়ে কাজ করছি। আশা করি, বাংলাদেশের সব ব্যবসায়ীর একত্র শক্তিতে ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধি হবে।
পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন ,দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক পথনকশা (রোডম্যাপ) তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে উল্লেখ করে জাম কামাল খান বলেন, আমরা ভাবছি, আগামী কয়েক বছরের জন্য একটি বাণিজ্য রোডম্যাপ তৈরি করব। কোন খাতগুলোতে নজর দিতে হবে, কোথায় বিনিয়োগ আসবে, কোন খাত রপ্তানি-আমদানির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে—সেসব ওই রোডম্যাপে উঠে আসবে। জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ স্বাক্ষরের পরই এ বিষয়ে খসড়া তৈরি হবে।
গ্লোবাল ইকনমিক ট্রেন্ড দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের সামনে সুবর্ণ সুযোগ এসেছে আমরা যদি একটি সঠিক ব্যবসায়িক রোডম্যাপ তৈরি করতে পারি তাহলে অবশ্যই ব্যবসা বাণিজ্য অগ্রগতি হবে। আগামী পাঁচ বছরে আমরা কোথায় থাকতে চাই, কোন খাতে আমাদের শিল্পকে নিতে চাই, সেই প্রস্তুতি নিতে হবে। নতুন প্রযুক্তি এআইয়ের সহযোগিতায় (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স) এখন আর বছরের নয়, ঘণ্টার হিসাবেই সবকিছু বদলে যাচ্ছে। তাই প্রস্তুত থাকতে হবে। খাদ্য, কৃষি, উৎপাদন, বাণিজ্য, মাছ, সামুদ্রিক খাদ্য, সেবা খাত, মানুষে মানুষে সংযোগ, স্বাস্থ্যসেবা—এসবই আমাদের অগ্রাধিকার খাত। লেদার, ফুটওয়্যার, তৈরি পোশাক; এগুলোতেও আমরা শক্তিশালী। পাকিস্তান গম, চাল উৎপাদন করছে এবং আরও অনেক কিছু সরবরাহ করছে। তাই আমার মনে হয়, এখানে দারুণ সহযোগিতা হতে পারে।
পাকিস্তানি ব্যবসায়ীদের মধ্যে যোগাযোগের জন্য আগ্রহ রয়েছে উল্লেখ করে বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খান বলেন, তবে বিমান সংযোগ না থাকলে এটি সম্ভব নয়। আমরা এই বছরের শেষ নাগাদ সরাসরি পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে ও বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানে ফ্লাইট চূড়ান্ত করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করব। দুই দেশে সরাসরি বিমান চলাচল শুরু হলে মানুষে-মানুষে যোগাযোগ, ব্যবসায়িক সংযোগ, পণ্য পরিবহনসহ সবকিছু আরও সহজ হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন চেম্বারের প্রশাসক মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা। বক্তব্য দেন বিএসআরএমের চেয়ারম্যান আলিহুসেইন আকবরআলী, বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ার্ড অ্যাসোসিয়েশনের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আমিরুল ইসলাম চৌধুরী, চেম্বারের সাবেক পরিচালক আমজাদ হোসাইন চৌধুরী প্রমুখ। সমাপনী বক্তব্য দেন বিভাগীয় কমিশনার মো. জিয়াউদ্দিন।
বৈঠকে ব্যাবসায়ী নেতৃবৃন্দ চট্রগ্রামের সাথে করাচির সরাসরি বিমান পরিবহন ও সামুদ্রিক জাহাজে পণ্য পরিবহণ চালু করা এবং শীপ বিল্ডিং খাতে সহযোগিতার মাধ্যমে দুই দেশের বাণিজ্য বৃদ্ধির আহবান জানান। এর মাধ্যমে দুদেশের বাণিজ্য সম্পর্ক শক্তিশালী হবে এবং বাণিজ্য ঘাটতি কমবে বলে তাঁরা অভিমত ব্যক্ত করেন।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেছেন, ‘ঠাকুরগাঁও মডেল’ অনুসরণ করে বরিশাল জেলাকে সম্পূর্ণরূপে শিশুশ্রম মুক্ত করা হবে। শিশুদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কোনো কাজে নিয়োজিত না রাখার পাশাপাশি তাদের নিয়মিত স্কুলে পাঠানোর উপর জোর দেন তিনি।
শুক্রবার বরিশালের শিল্পকলা একাডেমিতে ‘শিশু শ্রম নিরসনে তারুন্যের ভুমিকা’ শীর্ষক এক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শ্রম সচিব এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ সরকার ২০০১ সালে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম সম্পর্কিত আইএলও কনভেনশন ১৮২ অনুস্বাক্ষর করেছে এবং এরই ধারাবাহিকতায় শিশুদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ৪৩ ধরনের কাজের তালিকা প্রকাশ করেছে। কোনো শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত থাকবে না। তারা বইখাতা নিয়ে স্কুলে যাবে।”
শ্রম সচিব আইএলও'র অর্থায়নে ইএসডিও কর্তৃক বাস্তবায়িত ঠাকুরগাঁও জেলার ‘চাইল্ড লেবার মনিটরিং সিস্টেম (সিএলএমএস)’ মডেলকে একটি অনুকরণীয় উদাহরণ আখ্যায়িত করেন। তিনি জানান, জাতীয় পর্যায়ে এই মডেল অনুসরণ করে বরিশাল জেলাসহ অন্যান্য জেলাতেও শিশুশ্রম নিরসনের কার্যক্রমকে গতিশীল করা হবে।
শ্রম সচিব তরুণ সমাজ ও এনজিওগুলোর প্রতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “শিশুশ্রম নিরসনে তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে। তরুণরা বিভিন্ন সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে সমাজকে শিশুশ্রম মুক্ত করতে পারে। এখানে উপস্থিত সকলে যদি ১ জন শিশুরও দায়িত্ব নেন, তাহলেও বরিশাল জেলা অনেকাংশে শিশুশ্রম মুক্ত হবে।”
তিনি আরও জানান, শিশুশ্রম নিরসনে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার সাথে সমন্বয় করে বিভিন্ন উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে। অনুষ্ঠান শেষে বিভিন্ন দুস্থ শ্রমিকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৫৭ জন শ্রমিক ও তার পরিবারকে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যান ফাউন্ডেশন হতে ২৫ লক্ষ টাকার অর্থ সহায়তার চেক প্রদান করা হয়।
বরিশালের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই কর্মশালায় সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) জাহেদা পারভীন এবং বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার মো: রায়হান কাওসার। এছাড়াও বরিশাল জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ, সুধীজন, এনজিও কর্মী ও তরুণরা উপস্থিত ছিলেন।
ফৌজদারী অপরাধে দণ্ডিত অপরাধী এবং গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত পলাতক আসামী ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচার নিয়ে কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সরকার এক বিবৃতিতে বলেছে, এ ধরনের প্রচার শুধু আইনের লঙ্ঘন নয়, বরং দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির হুমকি তৈরি করে।
শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো ওই বিবৃতিতে বলা হয়, বৃহস্পতিবার কিছু গণমাধ্যম আইন অমান্য করে শেখ হাসিনার একটি বক্তব্য সম্প্রচার করেছে, যেখানে তিনি মিথ্যা ও উসকানিমূলক বক্তব্য দেন। ভবিষ্যতে এমন ঘটনা ঘটলে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সতর্ক করা হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো ওই বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের টেলিভিশন, সংবাদপত্র এবং অনলাইন আউটলেটগুলোতে ফৌজদারী অপরাধে দণ্ডিত অপরাধী এবং গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত পলাতক আসামী শেখ হাসিনার অডিও সম্প্রচার এবং প্রচার ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইনের গুরুতর লঙ্ঘন। তা ছাড়া, গত বছরের ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ঘৃণা ছড়ায় প্রাক্তন স্বৈরশাসকের এমন বক্তব্য সম্প্রচার নিষিদ্ধ করে।
আমরা দুঃখের সাথে লক্ষ্য করেছি যে, কিছু গণমাধ্যম বৃহস্পতিবার আইন ও আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরশাসকের একটি ভাষণ প্রচার করেছে যেখানে তিনি মিথ্যা ও উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। আমরা এধরনের অপরাধমূলক প্রচারকর্মে জড়িত গণমাধ্যমের কর্মকর্তাদের সতর্ক করে দিচ্ছি এবং দৃঢ়ভাবে জানাচ্ছি যে, শেখ হাসিনার বক্তব্য কেউ ভবিষ্যতে প্রকাশ করলে তাৎক্ষণিক আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আমাদের জাতির ইতিহাসের এই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে আমরা অপ্রয়োজনীয় বিভ্রান্তি তৈরির ঝুঁকি নিতে পারি না। এটি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে শেখ হাসিনা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় শত শত শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীর গণহত্যার নির্দেশ দেওয়ার মতো গুরুতর অভিযোগের পরে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে গিয়েছেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাকে দোষী সাব্যস্ত করেছে এবং বর্তমানে তিনি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বিচারাধীন রয়েছে। তদুপরি, বাংলাদেশের আইন অনুসারে, আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং একই সন্ত্রাস বিরোধী আইন ২০০৯ অনুসারে, যে কোনও ব্যক্তি বা সংগঠন যারা তাদের নেতাদের কার্যকলাপ বা বক্তৃতা প্রচার, প্রকাশ বা সম্প্রচার করে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে।
একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রস্তুতির কথা উল্লেখ করে সরকার বিবৃতিতে বলছে, ‘প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ন্যায়বিচার, জবাবদিহিতা এবং গণতান্ত্রিক নীতির উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশকে ভবিষ্যতের দিকে পরিচালিত করার জন্য কাজ করছে। বাংলাদেশের জনগণ, প্রজন্মের পর প্রজন্ম প্রথমবারের মতো সত্যিকার অর্থে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।’
শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচারে আরও সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, ‘আমরা, এমন একটি সময়ে, সংবাদ মাধ্যমগুলোকে শেখ হাসিনার অডিও এবং তার বক্তৃতাগুলো, যা বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা তৈরি এবং সহিংসতা উসকে দেওয়ার উদ্দেশ্যে তৈরি, এগুলো প্রচার করার ক্ষেত্রে সতর্কতা এবং দায়িত্বশীলতা অবলম্বন করার আহ্বান জানাই। তার মন্তব্য, বক্তৃতা এবং তার যেকোনো উসকানিমূলক বক্তব্য প্রচার, পুনঃপ্রচার বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে স্থিতিশীলতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করার ঝুঁকি তৈরি করে। এটি কেবল জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করার জন্য কাজ করে। এ ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ অমান্যকারী যেকোনো সংবাদমাধ্যম বাংলাদেশের আইনের অধীনে আইনি জবাবদিহিতার আওতায় পড়বে।’
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে মিয়ানমারের মানবাধিকারসংক্রান্ত জাতিসংঘের বিশেষ দূত টম অ্যান্ড্রুজ গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় সাক্ষাৎ করেছেন।
বৈঠকে অ্যান্ড্রুজ রোহিঙ্গা সংকটকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অগ্রাধিকার দিয়ে তুলে ধরার জন্য প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
তিনি স্মরণ করেন, আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কের জাতিসংঘ সদর দফতরে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সম্মেলন আহ্বানের উদ্যোগও প্রধান উপদেষ্টার হাত ধরেই এসেছে।
অ্যান্ড্রুজ প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও সহায়তা প্রদানে বাংলাদেশের উদারতায় বিশ্ব কৃতজ্ঞ। একই সঙ্গে স্থায়ী সমাধানের আশাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য আপনার নেতৃত্ব বিশেষভাবে প্রশংসনীয়।’
প্রধান উপদেষ্টা আশা প্রকাশ করেন, আসন্ন জাতিসংঘ সম্মেলন দীর্ঘদিনের এই সংকট নিরসনে কার্যকর সমাধানের পথ দেখাবে।
তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা কমে যাওয়ায় স্বাস্থ্য ও শিক্ষা সহ মৌলিক সেবা প্রদান কঠিন হয়ে পড়ছে। এ সময় তিনি পর্যাপ্ত অর্থায়ন নিশ্চিত করতে অ্যান্ড্রুজকে অব্যাহত প্রচেষ্টা চালানোর আহ্বানও জানান।
টম অ্যান্ড্রুজ বলেন, বাংলাদেশ বিভিন্ন পক্ষকে যুক্ত করে সংকট সমাধানে গঠনমূলক ভূমিকা পালন করছে। তবে রাখাইন রাজ্যে স্থিতিশীলতা আনতে ও শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তনের পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে, জাতিসংঘ মহাসচিবের মানবিক চ্যানেল স্থাপনের উদ্যোগটি বিদ্বেষমূলক প্রচারণার কারণে ব্যাহত হওয়ায় তিনি হতাশা প্রকাশ করেন।
তবুও টম অ্যান্ড্রুজ আশা করেন, সব পক্ষের ধারাবাহিক প্রচেষ্টায় দ্রুত একটি টেকসই সমাধান সম্ভব। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান তিনি।
উল্লেখ্য, টম অ্যান্ড্রুজ আগামী ২৫ আগস্ট কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ইস্যুতে স্টেকহোল্ডার সংলাপে যোগ দিতে বাংলাদেশে এসেছেন। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ওই সংলাপের উদ্বোধন করবেন।
সরকারি এবং কূটনীতিক পাসপোর্টে পারস্পারিক ভিসা অব্যাহতি সুবিধা পেতে পাকিস্তানের সঙ্গে চুক্তির অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এই অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
পরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এ তথ্য জানান।
প্রেস সচিব বলেন, ‘পাকিস্তানের মতো এ রকম চুক্তি আমরা আরও ৩১টি দেশের সঙ্গে করেছি। এই চুক্তি পাঁচ বছরের জন্য করা হবে । এর ফলে যারা অফিসিয়াল পাসপোর্ট এবং কূটনীতিক পাসপোর্ট ব্যবহার করছেন, তারা এখন বিনা ভিসায় পাকিস্তান সফর করতে পারবেন। একইভাবে পাকিস্তানের যারা অফিসিয়াল এবং কূটনীতিক পাসপোর্ট ব্যবহার করছেন— তারাও বাংলাদেশে সফর করতে পারবেন কোন ভিসা ছাড়াই। এটা একটা স্ট্যান্ডার্ড প্র্যাকটিস।’
উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানান, এ বিষয়ে পাকিস্তান সরকারের সম্মতি পাওয়া গেছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নতুন সচিব হিসেবে আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের আজ বিকেলে যোগদান করেছেন।
বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ১৩তম ব্যাচের কর্মকর্তা আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের ১৯৯৪ সালে সহকারী কমিশনার পদে চাকরিতে যোগ দেন। দীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি জেলা ও উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, নেদারল্যান্ডস ও থাইল্যান্ডে প্রশিক্ষণ গ্রহণের পাশাপাশি শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, চীন, ভিয়েতনাম, ডেনমার্ক, সুইডেন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে সরকারি কাজে ভ্রমণ করেছেন।
নতুন সচিব হিসেবে যোগদানের পর মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ তাঁকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান এবং কুশল বিনিময় করেন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (গ্রেড-১) হিসেবে দায়িত্ব পালনরত আবু তাহের মুহাম্মদ জাবেরকে ২০ আগস্ট জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে পদায়ন করা হয়।
পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা বাড়াতে দেড় দশক ধরে অকার্যকর থাকা বাংলাদেশ-পাকিস্তান জয়েন্ট ইকোনমিক কমিশন কার্যকর করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
বৃহস্পতিবার বিকেলে সচিবালয়ে পাকিস্তানের বাণিজ্য মন্ত্রী জাম কামাল খান এর সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিক দের ব্রিফকালে এসব কথা বলেন তিনি।
বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রীর সাথে খুবই ইন্টান্সিভ আলোচনা হয়েছে। জয়েন্ট ইকোনমিক কমিশন চালু কার্যকর করা এবং নতুন করে ট্রেড এন্ড ইনভেস্টমেন্ট কমিশন গঠনের আলোচনা করছি।
তিনি বলেন, দুই দেশ যৌথভাবে বা বিদেশি বিনিয়োগের মাধ্যমে ইন্টারমেডিয়েট পণ্য উৎপাদন করতে পারলে তা উভয় দেশের জন্য লাভজনক হবে।
উপদেষ্টা বলেন, আমাদের হাইড্রোজেন পার অক্সাইড এর উপর পাকিস্তান আন্টি ডাম্পিং ডিউটি আরোপ করে রেখেছে। আমরা সেটা প্রত্যাহার করতে অনুরোধ করেছি। তাঁরা আশ্বাস দিয়েছে। এছাড়া আমাদের চামড়া ও চিনি শিল্প উন্নয়নে সহায়তা চেয়েছি।
বশিরউদ্দীন বলেন, এক সময় পাকিস্তান আমাদের ১ কোটি কেজি চা রপ্তানিতে ডিউটি ফ্রি সুবিধা দিতো, তা আবার বহাল করতে অনুরোধ করেছি।
উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ প্রতিবছর ৮০ বিলিয়ন ডলার আমদানি করে যার মধ্যে ১৫ বিলিয়ন ডলারের ফুড এন্ড ইন্টারমেডিয়েট পণ্য। দুই দেশের মধ্যে এসব পণ্য বাণিজ্য বাড়ানোর সুযোগ আছে, সেটা খতিয়ে দেখার জন্য নতুন ট্রেড এন্ড ইনভেস্টমেন্ট কমিশন গঠন করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা কৃষি ও খাদ্য পণ্য, ফল আমদানি ও রপ্তানি নিয়ে আলোচনা করেছি। স্থানীয়ভাবে চিনি উৎপাদনে সক্ষমতা বাড়াতে পাকিস্তানের সহায়তা চেয়েছি । মধ্যবর্তী পণ্য উৎপাদনে পাকিস্তানের বিনিয়োগ চেয়েছি।
তাঁরা আমাদের সকল প্রস্তাবে ইতিবাচকভাবে দেখেছে এবং নিউ কমিশনে এসব বিষয়ে আলোচনা হবে।
বাংলাদেশ পাকিস্তানের দিকে ঝুঁকছে কিনা এমন প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, আমরা সবার দিকে ঝুঁকছি।, পাকিস্তান, যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ঝুঁকছি। ভারত থেকেও পেঁয়াজ আনছি। সর্বাগ্রে বাংলাদেশের স্বার্থ, যেখানে দেশের স্বার্থ আছে, সেখানেই ঝুঁকছি।
বাণিজ্য সচিব মাহবুবর রহমান বলেন, গত দেড় দশক পাকিস্তানের সাথে বাণিজ্য তেমন ছিলো না বললেই চলে। খাদ্য ও পাথরসহ বিভিন্ন পন্য আমরা নানা দেশ থেকে আমদানি করি, প্রতিযোগিতা দরে পাকিস্তান থেকে এসব পণ্য আনা গেলে প্রব্লেম নেই। একই সঙ্গে আমাদের রপ্তানি বাড়ানোতে গুরুত্ব দিছি।
বর্তমানে পাকিস্তান থেকে ইম্পোর্ট করি বেশি, রপ্তানি কম করি। আমরা রপ্তানি বাড়াতে পারলে দেশের জন্য মঙ্গলজনক হবে।
উপদেষ্টা পরিষদের ৩৯তম বৈঠকে আজ ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন হয়েছে।
ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়।
বৈঠকে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের কূটনৈতিক ও অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীগণের পারস্পরিক ভিসা অব্যাহতি চুক্তির খসড়া অনুমোদন করা হয়।
এছাড়া, উপদেষ্টা পরিষদকে সংস্কার কমিশনসমূহের সুপারিশ বাস্তবায়ন অগ্রগতি সম্পর্কে অবহিত করা হয়।
রাজবাড়ীর পাংশায় জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ-২০২৫ উদযাপন উপলক্ষে হাইস্কুল পর্যায়ে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) সকাল ১১টায় পাংশা জর্জ সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।
“অভয়াশ্রম গড়ে তুলি, দেশি মাছে দেশ ভরি”-এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আয়োজিত প্রতিযোগিতায় ক ও খ এই দুই গ্রুপে মোট ২০ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। ক গ্রুপে ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা এবং খ গ্রুপে ৯ম থেকে ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।
পাংশা উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এ আয়োজনে অংশ নেয়। এর মধ্যে রয়েছে- পাংশা জর্জ সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, এয়াকুব আলী চৌধুরী বিদ্যাপীঠ, কাজী আব্দুল মাজেদ একাডেমি, পাংশা পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং পাংশা সিদ্দিকীয়া কামিল মাদ্রাসা।
প্রতিযোগিতার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেশি মাছ সংরক্ষণ, অভয়াশ্রম তৈরি এবং পরিবেশবান্ধব মৎস্যচাষে সচেতনতা সৃষ্টির প্রয়াস চালানো হয়।
চিত্রাঙ্কণ প্রতিযোগিতাটি বাস্তবায়ন করে পাংশা উপজেলা জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ-২০২৫ উদযাপন কমিটি।
প্রস্তাবিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল নবীনগরের তিতাসপাড় ‘রসুলপুর’ এলাকায় স্থাপনের দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ১২টায় নবীনগর প্রেসক্লাব চত্বরে এ মানববন্ধনের আয়োজন করে সামাজিক সংগঠন ‘ঐক্যবদ্ধ নবীনগর’।
মানববন্ধন শেষে একটি প্রতিনিধি দল নবীনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রাজিব চৌধুরীর কাছে কলেজ স্থাপন সংক্রান্ত দাবিসংবলিত স্মারকলিপি প্রদান করে।
‘ঐক্যবদ্ধ নবীনগর’ সংগঠনের আহ্বায়ক মাসুদুল ইসলাম মাসুদ মানববন্ধনে বলেন, “সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে আমরা রসুলপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপনের দাবিতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যাচ্ছি। এটি বাস্তবায়িত হলে শুধু নবীনগর নয়, আশপাশের পুরো অঞ্চলের স্বাস্থ্যসেবা ও চিকিৎসা শিক্ষায় উন্নয়ন ঘটবে।”
তিনি আরও জানান, মাননীয় অর্থ উপদেষ্টা নবীনগরের কৃতি সন্তান সালাউদ্দিন আহমেদ ইতোমধ্যেই স্বাস্থ্য উপদেষ্টার নিকট একটি ডিও লেটার (ডেমি অফিসিয়াল লেটার) পাঠিয়েছেন, যাতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু করা যায়।
মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন: ঐক্যবদ্ধ নবীনগর সংগঠন সদস্য সচিব মোহাম্মদ হোসেন শান্তি, উপজেলা , জামায়াতে ইসলাম আমির,মুখলেসুর রহমান, উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফ হোসেন রাজু, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান মকুল, আলহাজ্ব শাহ জালাল আহমেদ, পরিচালক, টেননো ড্রাগ,আবু কামাল খন্দকার, সাবেক সভাপতি, নবীনগর প্রেসক্লাব শ্যামা প্রসাদ চক্রবর্তী,জালাল উদ্দিন মনির, কান্তি কুমার ভট্টাচার্য, সাবেক সাধারণ সম্পাদক,আসাদুজ্জামান কল্লোল, সাবেক সাধারণ সম্পাদকমুফতি বেলায়েতুল্লাহহাফেজ ছানাউল্লাহ সাইফুল ইসলাম, এনসিপি বক্তারা বলেন, রসুলপুর এলাকায় মেডিকেল কলেজ স্থাপন হলে উন্নয়ন ও জনসেবার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। এটি বাস্তবায়নে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তাঁরা।
চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে বিশেষ অভিযানে পিস্তলসহ ৩ জনকে আটক করেছে যৌথ বাহিনী।
বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) ভোরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে উপজেলার কধুরখীলে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। এতে নেতৃত্ব দেন এডহক ৪৮ এয়ার ডিফেন্স রেজিমেন্টের কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল সালাহউদ্দিন আল মামুন।
আটককৃতরা হলেন, কধুরখীলের রহমান ফকিরের বাড়ির মো: জাকির হোসেন (৫২), মো. আরমান হোসেন জিসান (২৮) ও জুবাইদ হোসেন রাব্বি (১৭)।
তাদের কাছ থেকে ২টি দেশীয় পিস্তল, ৩টি ছোরা, ২টি সেলফ ডিফেন্স স্টিক ও ৩টি মোবাইল জব্দ করা হয়েছে।
বোয়ালখালী সেনা ক্যাম্প কমান্ডার মেজর রাসেল প্রধান বলেন, আটককৃতরা মাদক ইয়াবার ব্যবসাসহ এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। জব্দকৃত অস্ত্রসহ আটককৃতদের থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।