সাহিদা যেদিন চাকরিচ্যুত হয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছিলেন, তার গর্ভের শিশুর বয়স তখন চার মাস। গর্ভধারণ করলেও অন্য কর্মীদের মতোই কাজ করে যাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু তার পোশাক কারখানার কর্তৃপক্ষ মনে করতে শুরু করে, অন্য কর্মীদের তুলনায় তার কাজের পরিমাণ কমেছে। তাই এক দিনের নোটিশে চাকরি ছাড়তে বাধ্য করা হয় তাকে। পরের দিন সাহিদা যখন ঢাকা ছেড়ে গ্রামের বাস ধরছিলেন, তখন তার কাছে মাত্র ৭০০ টাকা।
সাহিদা ভেবেছিলেন গর্ভবতী অবস্থায় আরও কয়েক মাস চাকরি করে যেতে পারবেন। সেই টাকা সঞ্চয় করে সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখাবেন। কিন্তু তা হয়নি। চাকরি টিকিয়ে রাখতে গর্ভপাতের কথাও একবার তার মাথায় এসেছিল। উত্তরবঙ্গের জেলা সিরাজগঞ্জ থেকে ঢাকার উত্তরখানে মালেক নামের এক পোশাক কারখানায় কাজ করতে আসা সাহিদা এই প্রতিবেদককে বলেন, তার কাছে এই গর্ভধারণ অভিশাপ হয়ে এসেছিল।
রপ্তানিমুখী হলেও বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলো রাজধানী ঢাকা ও তার আশপাশেই গড়ে উঠেছে। ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রাম জেলায় ৩ হাজার ২০০-এর বেশি কারখানায় কর্মরত আছেন ২৫ লাখের বেশি শ্রমিক। এর ১৫ লাখই নারী। তাদের সবাই প্রায় বয়সে তরুণী। প্রথম সন্তান জন্মের আগেই পোশাক কারখানায় কাজ করতে আসেন তারা।
‘শ্রম আইন-২০০৬’-এ মাতৃত্বকালীন ছুটি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার কথা বলা থাকলেও পোশাক কারখানাগুলোর হাতে গোনা কয়েকটি মাত্র তা মানে। উল্টো গর্ভধারণ করলে চাকরিচ্যুত করে থাকে প্রতিষ্ঠানগুলো, যদিও প্রতিষ্ঠানের মালিক ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ তা স্বীকার করতে চান না।
চাকরি হারানোর ভয়ে অনেক কর্মীই গর্ভধারণ পিছিয়ে দেন। অনেকে আবার বিলম্বিত বয়সে গর্ভধারণ করতে গিয়ে শারীরিক জটিলতার মধ্যে পড়েন বলে অভিযোগ করেন।
গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের নেত্রী জলি তালুকদার বলেন, ‘কয়েকটা গার্মেন্টস ছাড়া অধিকাংশ কারখানাই মাতৃত্বকালীন সুযোগ-সুবিধা দিতে চায় না। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে এমন দাবি করতে গেলে হয়রানিসহ চাকরি হারাতে হয়। তাদের বিরুদ্ধে আবার অভিযোগ দিতে গেলে সেখানেও মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হয়। সুবিধা পাওয়ার আশ্বাস মেলে, কিন্তু বাস্তবায়ন হয় না।’
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, পোশাকশিল্পে গর্ভধারণ করা নারী কর্মীর চাকরি হারানোর সংখ্যা মোটেও কম নয়। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরে আনুষ্ঠানিকভাবে জমা পড়া অভিযোগের বাইরে এ রকম ঘটনার সংখ্যা আরও অনেক বেশি বলে পোশাককর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। আবার যারা অভিযোগ করেন, তাদের ক্ষুদ্র একটি অংশই প্রতিকার পেয়েছেন।
গত এক মাসে ঢাকা, সাভার, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুরে বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) নথিভুক্ত পোশাক কারখানার ও সাব-কন্ট্রাক্ট প্রতিষ্ঠান মিলে ১০টি কারখানা থেকে চাকরি হারানো ১০ জন ও গর্ভধারণ অবস্থায় কাজ করা চারজনসহ মোট ১৪ জনের সঙ্গে এই প্রতিবেদক কথা বলেছেন। চাকরি হারানোদের মধ্যে আটজন বেকার হয়ে গ্রামে গিয়ে আর ফিরে আসেননি। তিন বছর বেকার থাকার পর আবার কাজে যোগ দিয়েছেন দুজন। আর কাজ চালিয়ে যাওয়া চারজন জানিয়েছেন তারা সহকর্মীদের কাছ থেকে উপহাস ছাড়া কোনো সহযোগিতা পাননি এবং আরও নানান ঝুঁকির মুখে পড়েছেন।
জুলেখা আক্তার (২৪) নামে এক পোশাককর্মী জানান, আশুলিয়ায় মোতালেব গার্মেন্টস নামে একটি পোশাক কারখানায় অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন। বেতন পেতেন মাসে ৯ হাজার ৭০০ টাকা। তার গর্ভের শিশুর বয়স যখন পাঁচ মাস, তখন হাত থেকে এক টুকরা কাপড় মেঝেতে পড়ে যাওয়ায় তিনি অন্যের সাহায্য নিয়েছিলেন। বিষয়টি ম্যানেজারের চোখে পড়ে। পরের দিন থেকে তিনি জুলেখাকে কাজে আসতে নিষেধ করে দেন।
ছাঁটাইয়ের শিকার হওয়ার পর অন্য পোশাক কারখানায় চাকরির চেষ্টা করেছিলেন জুলেখা। কিন্তু গর্ভবতী অবস্থায় তাকে কেউ চাকরিতে নিতে চায়নি। মাতৃত্বকালীন সুযোগ-সুবিধা তো দূরের কথা, সে মাসের বেতন বা অন্য সুযোগ-সুবিধা কিছুই জোটেনি জুলেখার। দেড় বছর পর কর্মস্থলে ফেরার চেষ্টা করেও মেলেনি ফেলে আসা চাকরি।
কুমিল্লার নাঙ্গলকোট থানার একটি গ্রাম থেকে আসা জুলেখা এখন চাকরি করেন মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন আতিয়া গার্মেন্টস নামক একটি পোশাক কারখানায়। তিনি দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘মনে হয়, গার্মেন্টসে চাকরি করা শুধু অভিশাপ না, পাপও। আমার সন্তানের বয়স এখন দুই বছর। যতদিন এ চাকরি করে যাব, আর বাচ্চা নেব না। কারণ চোখের সামনেই তো দেখেছি কতজন গর্ভধারণ করে চাকরি হারাচ্ছে।’
‘শ্রম আইন-২০০৬’-এ বলা আছে, কর্মজীবী নারী যিনি তার চাকরির প্রথম ছয় মাস পূর্ণ করেছেন, তিনি গর্ভবতী হলে গর্ভাবস্থায় এবং সন্তান জন্মের পরে সর্বমোট ১৬ সপ্তাহ ছুটি পাবেন এবং তা বৈতনিক ছুটি হবে।
গর্ভবতী মায়েদের মামলা, অধিদপ্তরে অভিযোগ
১৮ জানুয়ারি বোনকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থেকে বিজয়নগর কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরে আসেন আশফুল আক্তার (২৩)। আশফুলের গর্ভে তখন সাত মাসের বাচ্চা। তিনি রূপগঞ্জের আক্তার স্পিনিং মিলে কাজ করতেন। এক মাস আগে কোনো প্রকার ছুটি ও সুযোগ-সুবিধা না দিয়ে কারখানা থেকে তাকে ছাঁটাই করা হয়। অন্য নারীদের সহযোগিতায় অধিদপ্তরে চালু হওয়া জরুরি হেল্পলাইন ১৬৩৫৭ নম্বরে ফোন করেন তিনি। সেখান থেকে জানানো হয় শ্রম ভবনের এই অধিদপ্তরে অভিযোগ করতে।
শ্রমিকদের সুবিধা-অসুবিধার বিষয় দেখভাল করার দায়িত্ব পালন করে থাকে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এই কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের অভিযোগ শাখায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাতৃত্বকালীন ছুটি চাওয়ার আগেই চাকরিচ্যুত করা হয় অনেক নারী শ্রমিককে।
অধিদপ্তরে প্রতি মাসে ঢাকা ও আশপাশের এলাকার কারখানাগুলো থেকে গড়ে ১৫-২০টি অভিযোগ জমা পড়ে। ২০২০ থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত গত দুই বছরে ১১২টি অভিযোগ জমা পড়েছে। অবশ্য তাদের দাবি, কয়েক বছর আগে এই অভিযোগ আরও কয়েক গুণ বেশি ছিল।
জানতে চাইলে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের যুগ্ম মহাপরিদর্শক (সাধারণ শাখা) মো. হাসিবুজ্জামান দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘বিষয়টি অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। এমন ঘটনা প্রতিনিয়তই ঘটছে। আমাদের কাছে যারা অভিযোগ করতে আসেন, আমরা সঙ্গে সঙ্গে মালিকপক্ষকে ডেকে থাকি। শ্রম আইন-২০০৬ অনুসারে শুনানির পর সমঝোতা করে দিই। বৈতনিক মাতৃকালীন ছুটির ব্যবস্থা করি শ্রমিকদের।’
অবশ্য আশফুল সেদিন অভিযোগ দিয়ে ফেরার সময় এই প্রতিবেদককে বলেছিলেন, ‘গরিবের বিচার কোথাও নাই। মনে হচ্ছে না এখানে কোনো প্রতিকার হবে। এত বছর পার করলাম। এখন বিপদের সময় কিছুই হাতে পেলাম না।’
অধিদপ্তরের অভিযোগে কাজ না হলে কেউ কেউ শ্রম আদালতেও মামলা করেন। মূলত চাকরিতে পুনর্বহাল, পাওনা আদায়, মালিক-শ্রমিক চুক্তির লঙ্ঘন, বেতন-ভাতার দাবি, ক্ষতিপূরণ আদায় এবং ট্রেড ইউনিয়নসংক্রান্ত মামলা নেয় শ্রম আদালত। আদালত সূত্র বলছে, শুধু মাতৃত্বকালীন ছুটি আর পাওনা আদায় নিয়ে মামলা ঝুলে আছে ৩৫০টির বেশি। রায় হতে সময় নিচ্ছে বছরের পর বছর।
শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. ফারুক (এম ফারুক) বলেন, ‘শ্রম আদালতের সংখ্যা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি আদালতে লোকবলও বাড়াতে হবে। আরেকটি বিষয় জরুরি। শ্রম আদালতের রায় কার্যকর করার জন্য মালিকপক্ষের সদিচ্ছা থাকতে হবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তাসলিমা ইয়াসমীন দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘মাতৃত্বকালীন আইন ভঙ্গের জন্য আলাদা কোনো শাস্তির বিধান নেই, তবে শ্রম আইন ভঙ্গের একটি সার্বিক শাস্তি রয়েছে। আইন ভঙ্গের অভিযোগ পাওয়া গেলে চাকরিদাতাকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে। এ ছাড়া কর্মক্ষেত্রে চাকরিদাতার অবহেলার জন্য কেউ যদি গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত হন তাহলেও শাস্তির বিধান রয়েছে।’
নথিভুক্ত কারখানা যেমন-তেমন, ধার ধারে না সাব-কন্ট্রাক্ট
তৈরি পোশাকশিল্পের কারখানাগুলো বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত। তবে এ সমিতির সদস্যভুক্ত নয়, এমন কারখানাও আছে। এগুলো মূলত বড় কারখানাগুলোর পাওয়া রপ্তানি আদেশের বিপরীতে সাব-কন্ট্রাক্টের কাজ করে থাকে। এসব ছোট প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি আরও কম।
সারা দেশে এমন কতগুলো সাব-কন্ট্রাক্ট কারখানা রয়েছে, তার কোনো সঠিক হিসাব নেই। তবে সংশ্লিষ্ট কেনো কোনো সংগঠনের মতে ১৫-২০ হাজার ছাড়িয়ে যাবে।
এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়মের মধ্যে আনতে ‘সাব-কন্ট্রাক্টিং নীতিমালা-২০১৪’-এর খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। কিন্তু সেটার বাস্তবায়ন এখনো হয়নি। নারী শ্রমিক ও তাদের মাতৃত্বকালীন ছুটি নিয়ে এ নীতিমালায় কিছু বলা নেই।
গাজীপুরে চৌরাস্তায় শাকিল ফেবিক্স নামের একটি কারখানায় কাজ করেন আকলিমা। আকলিমার গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের মধুপুরে। তার স্বামী রিকশা চালান। আকলিমা দৈনিক বাংলাকে জানান, তার গর্ভধারণের এখন পাঁচ মাস চলছে। তিন মাস থেকে যখন তার কারখানা কর্তৃপক্ষ জানতে পেরেছে, তখন থেকে তার বেতন ২ হাজার টাকা কমিয়ে ৬ হাজার ৩০০ টাকা করা হয়। অভিযোগ, তিনি এখন স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কাজ কম করতে পারেন।
কারখানাটির ব্যবস্থাপক আতিকুল ইসলামের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অন্য কারখানাগুলো তো চাকরি থেকে বের করে দেয়। আমরা তো বেতন কমিয়ে দিয়েছি।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই কারখানাটি নথিভুক্ত কারখানা গাজীপুরে আল হামরার পোশাক তৈরির কাজ করে। আল হামরার পোশাক যায় যুক্তরাজ্যে।
মাতৃত্বকালীন ছুটি ও ভাতা পান ৩ শতাংশ নারী শ্রমিক
ছয় মাসের গর্ভধারণ অবস্থায় মিরপুরে স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপ ২২তলা গার্মেন্টসের অপারেটর হিসেবে কাজ করছেন আয়েশা খাতুন (২৫)। আগামী মাসে মাতৃত্বকালীন ছুটিতে যাবেন তিনি। মালিকপক্ষ ৩০ হাজার টাকা দেবে বলে আশ্বাস দিয়েছে তাকে। দুই বছর আগে বিয়ে হলেও প্রায় চার বছর ধরে এই পোশাক কারখানায় কাজ করেন হবিগঞ্জের এই মেয়ে। আয়েশার স্বামী জাকিরও এই কারখানায় কাজ করেন।
আয়েশা দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘মাতৃত্বকালীন ছুটির সঙ্গে অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা এখানে পাওয়া যায়। আমার আগেও অনেকে পেয়েছেন। তবে আমার পরিচিত অন্যরা, যারা অন্য কারখানায় কাজ করেন, তারা সবাই এই সুবিধা পান না।’
আয়েশার বক্তব্যের সঙ্গে মিলে যায় পোশাক খাতে কর্মরত শ্রমিকদের নিয়ে এশিয়ান সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্টের (এসিডি) সাম্প্রতিক গবেষণা। তারা বলছে, পোশাক খাতে কর্মরত নারী শ্রমিকদের মধ্যে প্রতিবছর মা হন ৮ দশমিক ৩ শতাংশ। কিন্তু তাদের মধ্যে মাতৃত্বকালীন ছুটি ও ভাতা পান মাত্র ৩ দশমিক ১ শতাংশ নারী শ্রমিক।
ভাতাসহ মাতৃত্বকালীন ছুটির ব্যাপারে আরও মানবিক হওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে এসিডির গবেষণাপত্রে। বলা হয়েছে, এটি নারী শ্রমিকদের অধিকার। এ ব্যাপারে গার্মেন্টস মালিকরা আরও যত্নবান হলে শ্রমিক-মালিক দুই পক্ষই লাভবান হবে।
ছুটির জন্য যে কাজের ক্ষতি হয় না, তার যৌক্তিকতা দেখিয়ে গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একজন শ্রমিক বছরে ৪ দশমিক ৭ দিন ছুটি পান। ৯৮ দশমিক ৪ শতাংশ শ্রমিক এ সাধারণ ছুটি ভোগ করেন। কিন্তু সপ্তাহের বাকি ছয় দিন তারা দৈনিক ৯ ঘণ্টার মতো কাজ করেন। এতে দেখা যায়, প্রতি সপ্তাহে তারা ৮ ঘণ্টা ৩০ মিনিট অতিরিক্ত কাজ করেন, যা ছুটি ভোগের এক দিনের চেয়েও ৩০ মিনিট বেশি। এর মানে দাঁড়ায় বছর শেষে ৭৩ শতাংশ শ্রমিক অতিরিক্ত সময় কাজ করেন।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি ফারুক হাসান দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘শ্রমিকদের সুবিধা-অসুবিধা নানা বিষয়ে কারখানা মালিকদের সঙ্গে তারা নিয়মিত বসেন। সেখানে শ্রমিকদের যার যা প্রাপ্য সেটা নিশ্চিত করা হয়।
বিদ্রূপ সইতে হয় সহকর্মীদের কাছে
কারখানাগুলোতে অনুসন্ধানে জানা যায়, কেউ মাতৃত্বকালীন ছুটি ও সুযোগ-সুবিধা আইন অনুযায়ী দেয় না। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান দুই-একটা মানলেও আবার কেউ কেউ কোনো পাত্তাই দেয় না। মাতৃত্বকালীন ছুটি চাইলে চাকরি থেকে বের করে দেয়ার নজিরই বেশি। তবে সব প্রতিষ্ঠানেই যেটা হয়, গর্ভাবস্থা্য় কাজ করার সময় সহকর্মীদের বিদ্রূপ সইতে হয়। এ সময় কাজ করতে নানাভাবে হয়রানি হতে হয় নতুন মায়েদের। সেসব বিষয়ে প্রতিকার চাওয়ার কোনো সুযোগও থাকে না।
কলকারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তরের পরিদর্শক সবুজ মাহমুদ দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘এমন অভিযোগ অনেক। আমাদের কাছে অভিযোগগুলো এলে আমরা ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। তা ছাড়া গর্ভবতী মায়েদের সুস্বাস্থ্যের জন্য কারখানার পরিবেশ ঠিক রাখার চেষ্টা করি। অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সব সময় নানাভাবে তাগিদ দেয়া হয়।’
ছয় মাস আগে চাকরি হারিয়ে সিরাজগঞ্জ ফিরে যাওয়া সেই সাহিদা বলেন, গ্রামে ফিরে তিনি ভালো নেই। বড় স্বপ্ন নিয়ে ঢাকা গিয়ে তার মতো কেউ যেন খালি হাতে না ফেরেন। যাদের ঘামে তিল তিল করে গড়া হচ্ছে দেশের পোশাকশিল্প। সেই শিল্পের শ্রমিকদের দায়িত্ব তিনি সরকারকে নিতে অনুরোধ করেন।
সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি ঘটলেও বর্তমানে তা স্থিতিশীল রয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে হাদির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ইনকিলাব মঞ্চের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানানো হয়, সিঙ্গাপুরে পৌঁছানোর পর তার কিছু প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। এরপর তার অবস্থার কিছুটা অবনতি হলেও দুপুর ৩টার দিকে তার ভাইয়ের বরাতে নিশ্চিত করা হয়েছে যে, বর্তমানে তিনি স্থিতিশীল অবস্থায় আছেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার সুস্থতার জন্য আরও একটি অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন, তবে তার বর্তমান শারীরিক পরিস্থিতি এখনো সেই অস্ত্রোপচারের জন্য অনুকূল হয়ে ওঠেনি।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর পল্টন এলাকায় গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর হাদিকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরবর্তীতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশে এবং সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টা ও চিকিৎসকদের পরামর্শে উন্নত চিকিৎসার জন্য সোমবার তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ক্যাম্পাসে পাকিস্তানের পতাকা এঁকে তা পদদলিত করার কর্মসূচিতে বাধা দেওয়ার প্রতিবাদে রাজাকারদের প্রতীকী ছবিতে জুতা নিক্ষেপ করে ঘৃণা প্রকাশ করেছেন একদল শিক্ষার্থী। মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য চত্বরে এই প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হয়।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, মহান বিজয় দিবসে পাকিস্তানের প্রতি ঘৃণা প্রদর্শনের অংশ হিসেবে তারা ক্যাম্পাসে পাকিস্তানের পতাকা আঁকতে চেয়েছিলেন, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও একদল শিক্ষার্থী তাতে বাধা প্রদান করে। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী আসিফ হোসেন ও ইসলামি ইতিহাস বিভাগের সাদ আহমেদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় লাখো মানুষকে হত্যাকারী পাকিস্তানের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করতে প্রশাসনের অনুমতির প্রয়োজন হওয়াটা দুঃখজনক। তারা প্রশ্ন তোলেন, স্বাধীনতার এত বছর পরেও কেন পাকিস্তানের প্রতি ঘৃণা প্রদর্শনে বাধার সম্মুখীন হতে হবে।
উল্লেখ্য, এর আগে সোমবার দিবাগত রাতে ক্যাম্পাসে পাকিস্তানের পতাকা আঁকতে বাধা দেওয়ার জেরে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ করেন। রাতভর উপাচার্যের গাড়ি আটকে রাখার পর ভোর পাঁচটার দিকে অবরোধ তুলে নেওয়া হলে উপাচার্য ও প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়েছে, সন্ধ্যা ৬টায় বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি), বিটিভি নিউজ এবং বাংলাদেশ বেতারে তার এই ভাষণ একযোগে সম্প্রচার করা হবে।
এর আগে দিনের শুরুতে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে একাত্তরের বীর শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধান উপদেষ্টা। ভোর ৬টা ৫৬ মিনিটে স্মৃতিসৌধের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন তিনি। এ সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত একটি চৌকস দল তাকে রাষ্ট্রীয় অভিবাদন জানায়। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর তিনি শহীদদের স্মরণে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন এবং পরে দর্শনার্থী বইয়ে স্বাক্ষর করেন।
শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় প্রধান বিচারপতির পাশাপাশি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাবৃন্দ, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, বীর মুক্তিযোদ্ধা, কূটনীতিক এবং উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মহান বিজয় দিবসে এক অনন্য বিশ্ব রেকর্ড গড়ল বাংলাদেশ। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পূর্তি উপলক্ষে সশস্ত্র বাহিনীর উদ্যোগে ৫৪ জন প্যারাট্রুপার একসঙ্গে জাতীয় পতাকা হাতে স্কাই ডাইভিং করে এই ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) রাজধানীর তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দর সংলগ্ন প্যারেড গ্রাউন্ডে এই ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটে। এটিই বর্তমানে বিশ্বের বুকে সর্বাধিক পতাকা হাতে প্যারাস্যুটিং করার রেকর্ড।
‘টিম বাংলাদেশ’-এর ব্যানারে ৫৪ জন সাহসী প্যারাট্রুপার এই প্রদর্শনীতে অংশ নেন। এই ঐতিহাসিক মুহূর্তটি সশরীরে প্রত্যক্ষ করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। রেকর্ড গড়ার এই আয়োজনের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর সমন্বয়ে এক মনোমুগ্ধকর ফ্লাইপাস্ট মহড়াও অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে বিমানবাহিনীর বিভিন্ন বিমান ও হেলিকপ্টার আকাশে কসরত প্রদর্শন করে।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এই ‘এয়ার শো’ ও বিশ্ব রেকর্ড গড়ার দৃশ্য দেখতে তেজগাঁওয়ের পুরাতন বিমানবন্দরে সাধারণ মানুষের ঢল নামে। সকাল থেকেই আগারগাঁও সংলগ্ন বিমানবন্দরের ফটকে দর্শনার্থীদের দীর্ঘ সারি দেখা যায়। সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও বিজিবি সদস্যদের কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে উৎসুক জনতা এই বর্ণাঢ্য আয়োজন উপভোগ করেন।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী বীর পুলিশ সদস্যদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এবং পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বিপিএম। মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল ৮টায় রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনস স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে তারা এই শ্রদ্ধা জানান।
প্রথমে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা স্মৃতিসৌধের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী। এরপর পুলিশ বাহিনীর পক্ষ থেকে আইজিপি বাহারুল আলম এবং পরবর্তীতে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জত আলী শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এছাড়া বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ পুলিশ উইমেন নেটওয়ার্কের (বিপিডব্লিউএন) নেতৃবৃন্দও ফুল দিয়ে বীর শহীদদের স্মরণ করেন।
যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে যশোরের শার্শার কাশিপুর বিওপি সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত বীরশ্রেষ্ঠের সমাধিস্থলে বিজিবি মহাপরিচালকের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। যশোর ব্যাটালিয়নের (৪৯ বিজিবি) ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত এই কর্মসূচিতে গার্ড অব অনার প্রদান ছাড়াও বীর শহীদের রুহের মাগফিরাত কামনায় ফাতেহা পাঠ, বিশেষ মোনাজাত এবং উপস্থিত সকলের মাঝে তবারক বিতরণ করা হয়।
এ সময় যশোর ব্যাটালিয়নের উপ-অধিনায়ক মেজর নূর উদ্দিন আহমাদসহ বীরশ্রেষ্ঠের পরিবারের সদস্য, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। যশোর ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল সাইফুল্লাহ্ সিদ্দিকী জানান, মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখের আত্মত্যাগ ও অবদানকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণীয় করে রাখতেই প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বিজিবির পক্ষ থেকে এই বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
মহান বিজয় দিবস উদযাপন ও একাত্তরের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে সাধারণ মানুষের ঢল নেমেছে। মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল থেকেই লাল-সবুজের পতাকা হাতে শিশু থেকে বৃদ্ধ—সর্বস্তরের মানুষের পদচারণায় এবং ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো স্মৃতিসৌধ এলাকা। খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে হাজারো মানুষ শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাতে সেখানে সমবেত হন।
দিনের শুরুতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস শহীদদের বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রীয় অভিবাদন জানায় এবং বিউগলে করুণ সুর বেজে ওঠে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা স্মৃতিসৌধ এলাকা ত্যাগ করার পরই প্রধান ফটক সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এরপরই ফুল হাতে জনতার বাঁধভাঙা স্রোত প্রবেশ করতে থাকে মূল বেদির দিকে।
অনেকেই দেশাত্মবোধক গানের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে এবং নীরবতা পালন করে শহীদদের স্মরণ করেন। আশুলিয়া থেকে পরিবার নিয়ে আসা মাহফুজুর রহমান জানান, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত এই দেশ ও স্বাধীনতার জন্য আত্মত্যাগকারী বীরদের শ্রদ্ধা জানাতেই তিনি ছুটে এসেছেন। অন্যদিকে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শোয়াইব রহমান বন্ধুদের নিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে এসে বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি আবেগ ও সম্মান জানাতেই তাদের এই আগমন। বিজয়ের উল্লাসের পাশাপাশি শহীদদের ত্যাগের মহিমাও এদিন গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছে জাতি।
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টার ঘটনাটি কয়েক মাসের দীর্ঘ পরিকল্পনার অংশ ছিল বলে তদন্তে উঠে এসেছে। তদন্তসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, হামলার আগের রাতে মূল অভিযুক্ত ফয়সাল ও আলমগীর সাভারের আশুলিয়ার একটি রিসোর্টে অবস্থান করেন। সেখানে তাদের মনোরঞ্জনের জন্য নারী সঙ্গীর ব্যবস্থাসহ বিনোদনের আয়োজন করেছিল মাস্টারমাইন্ডরা। পরদিন শুক্রবার সকালে তারা ঢাকায় ফিরে জুমার নামাজের পর হাদির ওপর গুলি চালিয়ে পালিয়ে যান। পল্টন থানায় দায়ের করা এই মামলাটি বর্তমানে তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
মামলার তদন্তের অংশ হিসেবে গতকাল শুটার ফয়সালের স্ত্রী সামিয়া, শ্যালক শিপু এবং রিসোর্টে থাকা বান্ধবী মারিয়ার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এর আগে হামলায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আব্দুল হান্নানকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছিল। এছাড়া গতকাল সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ থেকে ফয়সালের ঘনিষ্ঠ সহযোগী কবিরকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব, যাকে ভিডিও ফুটেজে হাদির আশেপাশেই দেখা গিয়েছিল। অন্যদিকে, হামলাকারীদের সীমান্ত পার হতে সহায়তার অভিযোগে শেরপুরের সীমান্ত এলাকা থেকে বিজিবি ও পুলিশ কয়েকজনকে আটক করেছে, যাদের মধ্যে কয়েকজনকে মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছে ডিবি।
এদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য গতকাল সোমবার দুপুরে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে শরিফ ওসমান হাদিকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়েছে। সেখানে পৌঁছানোর পর তাকে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী সায়েদুর রহমান জানিয়েছেন, বাংলাদেশ সরকার ও সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের মধ্যে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে এবং তিনি হাদির সুস্থতার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে একাত্তরের বীর শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকালে স্মৃতিসৌধের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে তিনি স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গকারী সূর্যসন্তানদের স্মরণ করেন।
পুষ্পস্তবক অর্পণের পর প্রধান উপদেষ্টা মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত একটি চৌকস দল তাকে রাষ্ট্রীয় অভিবাদন জানায় এবং বিউগলে বেজে ওঠে করুণ সুর। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ড. ইউনূস সেখানে উপস্থিত উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তা, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।
এর আগে, সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা পুরাতন বিমানবন্দর এলাকায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি আর্টিলারি রেজিমেন্ট ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে মহান বিজয় দিবসের আনুষ্ঠানিক সূচনা করে। দেশজুড়ে যথাযোগ্য মর্যাদা ও বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে এবারের বিজয় দিবস।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকালে স্মৃতিসৌধের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে তিনি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণ করেন।
পুষ্পস্তবক অর্পণের পর রাষ্ট্রপতি মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত একটি চৌকস দল তাকে রাষ্ট্রীয় অভিবাদন জানায়। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে রাষ্ট্রপতি সেখানে উপস্থিত উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তা, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।
এর আগে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা পুরাতন বিমানবন্দর এলাকায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি আর্টিলারি রেজিমেন্ট ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসের আনুষ্ঠানিক সূচনা করে। যথাযোগ্য মর্যাদা ও উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে দেশজুড়ে মহান বিজয় দিবস উদযাপিত হচ্ছে।
আজ মহান বিজয় দিবস। বাঙালি জাতির হাজার বছরের শৌর্যবীর্য এবং বীরত্বের এক অবিস্মরণীয় গৌরবময় দিন। বীরের জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার দিন। পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন ভূখণ্ডের নাম জানান দেওয়ার দিন।
১৯৭১ সালে ৯ মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর কবল থেকে দেশ মুক্ত হওয়ার এই দিনটিকে আজ জাতি বিজয় দিবস হিসেবে উদ্যাপন করছে।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ৩০ লাখ শহীদ ও ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে স্বাধীন দেশ হিসেবে জন্মগ্রহণ করে বাংলাদেশ।
পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ এবং বাংলাদেশ বিশ্ব মানচিত্রে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার মুহূর্তকে স্মরণ করে বিজয় দিবস উদ্যাপন শুরু হবে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে। বিজয় দিবস উপলক্ষে সকালে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধের শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে প্রথমে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং এরপর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টার নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং বীর মুক্তিযোদ্ধারা সেখানে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।
এছাড়া, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিদেশি কূটনীতিকরা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন, সর্বস্তরের মানুষ মহান মুক্তিযুদ্ধে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারকারী শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন।
দিনটি উপলক্ষে সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবন এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস এবং মিশনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনায় আলোকসজ্জা করা হয়।
ঢাকা এবং দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়ক দ্বীপগুলো ইতোমধ্যেই জাতীয় পতাকাসহ ব্যানার, ফেস্টুন এবং রঙিন পতাকা দিয়ে সজ্জিত করা হয়েছে।
মহান বিজয় দিবস দেশব্যাপী জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদ্যাপনের অংশ হিসেবে সর্বোচ্চসংখ্যক জাতীয় পতাকা নিয়ে প্যারাশুটিং করে বিশ্ব রেকর্ড গড়া হবে। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনী মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে শহরের তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরে পৃথকভাবে ফ্লাই-পাস্ট প্রদর্শন করবে। সেখানে একটি বিশেষ বিজয় দিবস ব্যান্ড শো আয়োজন করা হবে।
এছাড়া, ‘টিম বাংলাদেশ’-এর ৫৪ জন প্যারাট্রুপার দেশের স্বাধীনতার ৫৪ বছর উপলক্ষে সকাল ১১টা ৪০ মিনিট থেকে পতাকাবাহী স্কাইডাইভ প্রদর্শন করবে। যা বিশ্বের সর্ববৃহৎ পতাকা-প্যারাশুটিং প্রদর্শনী হবে, যা একটি নতুন গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড স্থাপন করবে।
দেশের অন্যান্য শহরেও সশস্ত্র বাহিনী দ্বারা একই রকম ফ্লাই-পাস্ট প্রদর্শনী পরিচালিত হবে। এর পাশাপাশি, পুলিশ, বিজিবি এবং আনসার বাহিনী দেশব্যাপী ব্যান্ড শো আয়োজন করবে। সমস্ত অনুষ্ঠান জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
বিজয় দিবস উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় দেশের সকল জেলা ও উপজেলায় তিন দিনব্যাপী বিজয় মেলার আয়োজন করবে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন শিশুদের জন্য মুক্তিযুদ্ধের ওপর আবৃত্তি, প্রবন্ধ রচনা এবং চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা এবং দিবসটি উদ্যাপনের জন্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে।
আজ বিকেল ৩টা থেকে নগরীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিজয় দিবসের গান পরিবেশিত হবে এবং নতুন প্রজন্মের শিল্পীরা দেশের ৬৪টি জেলায় একযোগে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গান পরিবেশন করবেন।
এ উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর এবং বাংলাদেশ শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিশুদের চিত্রাঙ্কন, রচনা ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক তথ্যচিত্র প্রদর্শনের আয়োজন করবে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোও দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে অনুরূপ কর্মসূচি গ্রহণ করবে।
রাষ্ট্রপতি আজ বিকেলে বঙ্গভবনে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা জানাবেন। এছাড়াও, মহানগর, জেলা ও উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদদের পরিবারের সদস্যদের জন্য সংবর্ধনা অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে।
বাংলাদেশ ডাক বিভাগ এই উপলক্ষে স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করবে।
বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার এবং বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও রেডিও মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস তুলে ধরে অনুষ্ঠান সম্প্রচার করবে।
সারাদেশের সিনেমাহলগুলোতে শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র এবং দেশের অডিটোরিয়াম এবং উন্মুক্ত স্থানে মুক্তিযুদ্ধের ওপর ভিত্তি করে তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হবে।
সরকারি এবং স্বায়ত্তশাসিত জাদুঘরগুলো প্রবেশ ফি ছাড়াই সারাদিন জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে, অন্যদিকে দেশের সকল বিনোদন কেন্দ্রে শিশুদের জন্য বিনামূল্যে প্রবেশের সুযোগ থাকবে।
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশে একটি অনুকূল পরিবেশ বিরাজ করছে। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন (ইসি) সময়মতো ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে সব ধরনের প্রস্তুতিমূলক কাজ সম্পন্ন করেছে।
বাংলাদেশ সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে উপদেষ্টা পরিষদের অর্থনৈতিক বিষয়ক কমিটি এবং উপদেষ্টা পরিষদের সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত কমিটির দুইটি পৃথক বৈঠকে সভাপতিত্ব করার পর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আপনারা দেখবেন, নির্বাচন কমিশন তাদের প্রস্তুতিমূলক কাজ খুব ভালোভাবে সম্পন্ন করেছে। ভোটার তালিকা সময়মতো প্রস্তুত ও হালনাগাদ করা হয়েছে এবং নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। এখন মূল বিষয় হলো সঠিকভাবে তা বাস্তবায়ন করা।’
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে সময়মতো ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও সংশোধন করেছে এবং নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করেছে, যা এখন সে অনুযায়ী বাস্তবায়নের পর্যায়ে রয়েছে।
ড. সালেহউদ্দিন আরও বলেন, মাঠপর্যায়ের পরিস্থিতি মূল্যায়নের ভিত্তিতে নির্বাচন বাস্তবায়ন করা হবে এবং যেখানে প্রয়োজন সেখানে অতিরিক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, ‘যেসব এলাকা তুলনামূলকভাবে বেশি সংবেদনশীল, সেখানে নিরাপত্তা ও অন্যান্য ব্যবস্থা জোরদার করা হবে। আর কম সংবেদনশীল এলাকায় কী ধরনের প্রস্তুতি প্রয়োজন, তা কমিশনের জানা রয়েছে এবং সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।’
অর্থ উপদেষ্টা আরও বলেন, নির্বাচনের সময়সূচি নিয়ে বড় ধরনের কোনো রাজনৈতিক মতভেদ তিনি দেখছেন না এবং দেশের রাজনৈতিক পরিবেশকে তিনি ‘অনুকূল’ বলে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা জানিয়েছে। তফসিল নিয়ে কেউ আপত্তি তোলেনি। বরং সবাই সর্বসম্মতভাবে বলেছে যে তফসিলটি উপযুক্ত। এটিই প্রমাণ করে যে সময়সূচি নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই।’
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি প্রসঙ্গে ড. সালেহউদ্দিন বলেন, সার্বিক অবস্থা সন্তোষজনক রয়েছে এবং নির্বাচন যত এগিয়ে আসবে, পরিস্থিতি আরও শক্তিশালী করা হবে।
তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং তা আরও জোরদার করা হবে।’
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে অনুকূল পরিবেশ বিরাজ করছে : ড. সালেহউদ্দিন
সরকারের ঋণ সম্পর্কে ড. সালেহউদ্দিন বলেন, বর্তমান প্রশাসন মূলত পূর্ববর্তী সরকার থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলোকে চালিয়ে যাওয়ার জন্য ঋণ নিয়েছে।
তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন যে এই প্রকল্পগুলোর অনেকগুলো ইতোমধ্যেই ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে, যদিও সেগুলো পরিত্যাগ করলে উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হবে।
ড. সালেহউদ্দিন আরও বলেন, যদি আমরা এই প্রকল্পগুলোকে মাঝপথেই বন্ধ করে দেই, তাহলে এটি অর্থনীতিবিদদের মতে ‘ডেডওয়েট লস’-এর সমান হবে, যার অর্থ ইতোমধ্যে ব্যয় করা অর্থ সম্পূর্ণরূপে নষ্ট হয়ে যাবে। এটি বিবেচনা করে, আমরা বেশ কয়েকটি চলমান প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
তিনি বলেন, ‘সরকার খুব কম নতুন প্রকল্প গ্রহণ করেছে।’
উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘সরকার কয়েক বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করেছে, যা আর্থিক শৃঙ্খলার প্রতি তার প্রতিশ্রুতিকে তুলে ধরে।’
নির্বাচন সংক্রান্ত ব্যয় সম্পর্কে ড. সালেহউদ্দিন বলেন, তফসিল ঘোষণার পর, নির্বাচন কমিশন এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে তহবিলের জন্য বিস্তারিত দাবি জমা দেয়নি।
তিনি আরও বলেন, তাদের অনুরোধ আমাদের কাছে এলে, আমরা দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে এবং তা বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হব।
চব্বিশের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার এক অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়া হয়। তবে তা বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড চেয়ে আপিল করেছে প্রসিকিউশন।
সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম সাংবাদিকদের জানান, ‘গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানকে দুটি সাজা দেওয়া হয়। একটি আমৃত্যু কারাদণ্ড, আরেকটি মৃত্যুদণ্ড। আজ আমরা আমৃত্যু কারাদণ্ড বাড়িয়ে দুজনের মৃত্যুদণ্ড চেয়ে আপিল করেছি। আপিলে আমরা মোট আটটি যুক্তি (গ্রাউন্ড) দিয়েছি।’
চব্বিশের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে মৃত্যুদণ্ড এবং রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল ১৭ নভেম্বর ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করেন।
রায়ে দণ্ডের সঙ্গে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়। পাশাপাশি শহীদদের পরিবার এবং আহতদেরও যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এই মামলায় প্রসিকিউশন পক্ষে ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও গাজী এমএইচ তামীম। এছাড়া প্রসিকিউটর বি.এম. সুলতান মাহমুদ, শাইখ মাহদি, আবদুস সাত্তার পালোয়ানসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। পলাতক আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন শুনানি করেন। রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী জায়েদ বিন আমজাদ। রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা হিসেবে বক্তব্য দেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।
মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন ৫৪ জন। এর মধ্যে রয়েছেন গণঅভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ আবু সাঈদের পরিবার, জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, এবং দৈনিক ‘আমার দেশ’ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
মামলার অভিযোগ গঠন করা হয় ২০২৫ সালের ১০ জুলাই। একপর্যায় সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রুভার) হন।
২০২৪ সালের জুলাই-অগাস্টে গণঅভ্যুত্থান দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও সরকারি প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি অংশের মাধ্যমে সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ে। বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এসব অভিযোগের বিচার চলছে।