রাজধানীর কাওরান বাজারে ট্রেনের ধাক্কায় শাহ আলম নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে শুটকিপট্টিতে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
শাহ আলমের বাবার নাম আনোয়ার উল্লাহ। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা জেলার মনোহরগঞ্জের কাশাইল গ্রামে।
ঢাকা রেলওয়ে থানার (জিআরপি) উপ পরিদর্শক (এসআই) সেকান্দর আলী দৈনিক বাংলাকে জানান, নিহত শাহ আলম মগবাজারের একটি হোটেলে বাবুর্চির কাজ করতেন। গত রাতে কারওয়ান বাজারের শুটকিপট্টি এলাকায় রেললাইন পার হওয়ার সময় কমলাপুর থেকে আসা আন্তঃনগর লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেনের ধাক্কায় তার মৃত্যু হয়। সংবাদ পেয়ে মরদেহ উদ্ধার করে আইনি প্রক্রিয়া শেষে বুধবার দুপুর ১টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম সম্মুখযোদ্ধা, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র এবং ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা এই নেতার জরুরি অস্ত্রোপচারের জন্য তার পরিবারের পক্ষ থেকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে তিনি সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) হাদির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক বার্তার মাধ্যমে এসব তথ্য জানানো হয়।
ফেসবুক পোস্টে দেশবাসীর কাছে তার সুস্থতার জন্য দোয়া চেয়ে বলা হয়েছে, আল্লাহ যেন তাকে হায়াতে তাইয়্যেবা নসিব করেন। একইসঙ্গে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলা হয়, যদি ওসমান হাদি মারা যান বা শহীদের কাতারে শামিল হন, তবে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় স্বাধীনতাকামী জনতাকে শাহবাগে জড়ো হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। হামলাকারীরা গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত শাহবাগ অবরোধসহ প্রয়োজনে পুরো দেশ অচল করে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয় ওই পোস্টে। এছাড়া খুনিরা যদি ভারতে পালিয়ে গিয়ে থাকে, তবে ভারত সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে তাদের ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার দাবিও জানানো হয়েছে।
এর আগে বুধবার রাতে প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকেও হাদির শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন বলে নিশ্চিত করা হয়েছিল। প্রসঙ্গত, গত ১২ ডিসেম্বর (শুক্রবার) দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে ব্যাটারিচালিত রিকশায় যাওয়ার সময় মোটরসাইকেল আরোহী দুর্বৃত্তদের গুলিতে গুরুতর আহত হন তিনি। প্রথমে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সিঙ্গাপুরে স্থানান্তর করা হয়।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত ও স্থিতিশীল রয়েছে। তিনি চিকিৎসকদের দেওয়া চিকিৎসা ঠিকমতো গ্রহণ করতে পারছেন, যা নিয়ে আশাবাদী তার মেডিকেল বোর্ড। বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এসব তথ্য জানান তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
ডা. জাহিদ জানান, বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত একটি মেডিকেল বোর্ড প্রতিনিয়ত তার শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছে। প্রতিদিন সন্ধ্যায় পরীক্ষার রিপোর্ট পর্যালোচনা করে চিকিৎসার পরবর্তী ধাপ নির্ধারণ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আলহামদুলিল্লাহ, এখন পর্যন্ত ম্যাডামকে যে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে, তা তিনি গ্রহণ করতে পারছেন এবং গত কয়েকদিনের শারীরিক অবস্থা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছেন। চিকিৎসকরা আশা করছেন, তিনি ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠবেন।
খালেদা জিয়ার বর্তমান অসুস্থতার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে ডা. জাহিদ অভিযোগ করেন, বিগত সরকারের আমলে পরিকল্পিতভাবে তাকে যথাযথ চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এর ফলেই তার শারীরিক জটিলতা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে এবং বর্তমানে তিনি বেশ কঠিন সময় পার করছেন। তবে তার বয়স ও অসুস্থতার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে চিকিৎসা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত ২৩ নভেম্বর থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী এবং ২৭ নভেম্বর থেকে তিনি ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসাধীন। ডা. জাহিদ দেশবাসীর কাছে খালেদা জিয়ার আশু রোগমুক্তি ও সুস্থতার জন্য দোয়া চেয়েছেন, যাতে তিনি আবারও বাংলাদেশের রাজনীতিতে যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে গণমাধ্যমকে অবহিত করতে যাচ্ছেন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে এই প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হবে বলে বিএনপির মিডিয়া সেল থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, দীর্ঘস্থায়ী বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী গত ২৩ নভেম্বর রাতে হঠাৎ শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে তাকে দ্রুত এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর থেকেই তিনি হাসপাতালটিতে চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান চলাকালে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনসহ মোট সাতজন নেতার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) সকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এর রেজিস্ট্রারের দপ্তরে প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে এই অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয় বলে নিশ্চিত করেছেন প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম।
মামলায় অভিযুক্ত অন্য নেতারা হলেন—আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, যুবলীগের সভাপতি শেখ ফজলে শামস পরশ, সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল এবং ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ওয়ালি আসিফ ইনান। এর আগে গত ৮ ডিসেম্বর প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল যে, এই সাতজনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। তদন্ত শেষের ১০ দিনের মাথায় তাদের বিরুদ্ধে এই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হলো।
আওয়ামী লীগের পক্ষে কথিত ‘অপপ্রচার’ চালানোর অভিযোগে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গ্রেপ্তার সাংবাদিক আনিস আলমগীরকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। সংস্থাটি এই গ্রেপ্তারকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর আঘাত এবং একটি ‘উদ্বেগজনক প্রবণতা’ হিসেবে অভিহিত করেছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক গবেষক রেহাব মাহমুদ এক বিবৃতিতে বলেন, আনিস আলমগীরের গ্রেপ্তার ভিন্নমত দমনের চলমান প্রক্রিয়ারই অংশ। নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের কার্যক্রমের সমর্থক সন্দেহে বর্তমানে অনেককেই লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে। তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অপব্যবহার বন্ধ করে নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তির (আইসিসিপিআর) বাধ্যবাধকতা মেনে চলার আহ্বান জানান। একইসঙ্গে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠব্য নির্বাচনের আগে ভীতিমুক্ত পরিবেশ তৈরি এবং বাক-স্বাধীনতা ও সমাবেশের অধিকার নিশ্চিত করার তাগিদ দেন।
গত ১৪ ডিসেম্বর রাতে ধানমন্ডি থেকে আনিস আলমগীরকে ডিবি হেফাজতে নেওয়া হয় এবং পরদিন উত্তরা পশ্চিম থানার একটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে তোলা হয়। আদালত তার ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থন করে আনিস আলমগীর বলেন, ‘আমি একজন সাংবাদিক। যারা ক্ষমতায় থাকে আমি তাদের প্রশ্ন করি। দুই দশক ধরে আমি এটাই করে আসছি। কারও কাছে মাথা নত করা আমার কাজ নয়।’
উল্লেখ্য, এই মামলায় আনিস আলমগীর ছাড়াও অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন, মডেল মারিয়া কিসপট্টা ও উপস্থাপক ইমতু রাতিশ ইমতিয়াজকে আসামি করা হয়েছে। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, গত ৫ আগস্টের পর থেকে অভিযুক্তরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও টকশোতে অংশ নিয়ে নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে রাষ্ট্রবিরোধী গুজব ও প্রচারণায় লিপ্ত রয়েছেন। তাদের এসব কর্মকাণ্ডের ফলে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা উসকানি পাচ্ছে এবং রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ করা হয়।
রাজধানীর হাজারীবাগের জিগাতলা কাঁচাবাজার সংলগ্ন একটি ছাত্রীনিবাস থেকে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেত্রী জান্নাতারা রুমীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) সকালে তার মরদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
নিহত ৩০ বছর বয়সী জান্নাতারা রুমী এনসিপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার ধানমন্ডি থানা সমন্বয় কমিটির যুগ্ম সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি নওগাঁ জেলার পত্নীতলা উপজেলার নাজিরপুর এলাকায়। তার বাবার নাম মো. জাকির হোসেন এবং মায়ের নাম নুরজাহান বেগম।
হাজারীবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, জান্নাতারা ওই এলাকায় অবস্থানকালীন সময়ে সক্রিয়ভাবে এনসিপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তার মৃত্যুর বিষয়টি আত্মহত্যা নাকি হত্যাকাণ্ড, তা খতিয়ে দেখতে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পরই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।
নিরাপত্তাজনিত কারণে গতকাল দুপুরের পর সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার পর আজ বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) সকাল থেকে আবারও স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে রাজধানীর যমুনা ফিউচার পার্কে অবস্থিত ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্রের (আইভ্যাক)। আইভ্যাক কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে কার্যক্রম চালুর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
এর আগে চলমান পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে গতকাল বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) দুপুর ২টার পর থেকে ভিসা সেন্টারের সব কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। এ বিষয়ে আইভ্যাক বাংলাদেশের ওয়েবসাইটে একটি জরুরি নোটিশও প্রকাশ করা হয়। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছিল, উদ্ভূত নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণে বুধবার দুপুরের পর আর কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে না।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, যেসব আবেদনকারীর বুধবার স্লট বা অ্যাপয়েন্টমেন্ট নির্ধারিত ছিল, তাদের পরবর্তীতে নতুন তারিখ ও সময় নির্ধারণ করে জানিয়ে দেওয়া হবে। আজ সকাল থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় সেবা প্রত্যাশীরা আবারও যথারীতি সেবা পাচ্ছেন।
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত ফয়সাল করিম মাসুদকে পালাতে সহায়তা করার অভিযোগে গ্রেপ্তারকৃত মো. নুরুজ্জামান নোমানী ওরফে উজ্জ্বলকে তিন দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত। বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ফয়সাল আহমেদ আসামিকে আদালতে হাজির করে পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জশিতা ইসলাম তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। শুনানিকালে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী রিমান্ডের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরলেও আসামিপক্ষে কোনো আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন না।
অভিযোগ রয়েছে, গ্রেপ্তারকৃত নুরুজ্জামান নোমানী মূল হামলাকারী ফয়সাল করিম মাসুদকে পালিয়ে যেতে একটি মাইক্রোবাস ভাড়া দিয়ে সহযোগিতা করেছিলেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ১২ ডিসেম্বর জুমার নামাজের পর নির্বাচনী প্রচারণা শেষে ফেরার পথে রাজধানীর পল্টন এলাকার বক্স কালভার্ট রোডে মোটরসাইকেলে আসা দুর্বৃত্তরা হাদিকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। বর্তমানে তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছেন। গত ১৪ ডিসেম্বর ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের বাদী হয়ে এই মামলাটি দায়ের করেন। এজাহারে অভিযোগ করা হয়, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করা এবং দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে আওয়ামী লীগের পলাতক নেতাকর্মীদের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই এই হামলা চালানো হয়েছে।
বিয়ের দুই বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই কোনো না কোনো সহিংসতার শিকার হয় ৯৬ শতাংশ নারী। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ-আইসিডিডিআর,বি এক গবেষণায় এ তথ্য জানিয়েছে। গবেষণা তথ্য বলছে, বিয়ের প্রথম ছয় মাসের মধ্যেই ৭৯ শতাংশ নারী স্বামীর নিয়ন্ত্রণমূলক আচরণের শিকার হয়েছেন। দুই বছরের আগেই ৫২ শতাংশ আর্থিক সহিংসতা, ২৩ শতাংশ মানসিক সহিংসতা, ১৫ শতাংশ শারীরিক সহিংসতা এবং ১৪ শতাংশ যৌন সহিংসতার শিকার হন।
মাত্র ৪ শতাংশ নারী জানান যে, এই সময়ে তারা কোনো ধরনের সহিংসতার অভিজ্ঞতা পাননি।
বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) সংস্থ্যাটির সাসাকাওয়া অডিটরিয়ামে ‘বাংলাদেশের নির্বাচিত গ্রামীণ ও শহরাঞ্চলে নববিবাহিত দম্পতিদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকার সংক্রান্ত প্রেক্ষাপট ও চাহিদা নিরূপণ’- শীর্ষক এ গবেষণা ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
গবেষণায় অল্প বয়সে বিয়ের প্রবণতা লক্ষ করা গেছে। গ্রামের ৪৩ শতাংশ নারীর ১৮ বছরের আগেই বিয়ে হয়ে যাচ্ছে।
শহরের বস্তিতে এ হার ৬৫ শতাংশ। পুরুষদের ক্ষেত্রে গ্রামে ১৫ শতাংশ এবং শহরে ৩৭ শতাংশ ২১ বছরের আগেই বিয়ে করেছেন।
গবেষণায় জানা যায়, ৭৩ শতাংশ নারী বিয়ের প্রথম বছরে গর্ভধারণ করছে। এর মধ্যে ৪৭ শতাংশ নারীর গর্ভধারণ-ই ছিল অনিচ্ছাকৃত বা সময়ের আগেই।
বাংলাদেশের নির্বাচিত গ্রামীণ এলাকা ও শহরের বস্তি এলাকায় নববিবাহিত দম্পতিদের জীবনে অল্প বয়সে বিয়ে, দ্রুত গর্ভধারণ এবং দাম্পত্য সহিংসতা এখনো উদ্বেগের বিষয় বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।
২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে শুরু হওয়া এ গবেষণা চলে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। আইসিডিডিআর,বি-র চারটি এলাকায় মিশ্র-পদ্ধতির গবেষণাটি পরিচালিত হয়। যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল কক্সবাজার জেলার চকরিয়া ও চাঁদপুর জেলার মতলব উপজেলার দম্পতিরা। এছাড়া শহরের বস্তিগুলোর মধ্যে বেছে নেয়া হয়েছিল ঢাকার মিরপুর ও কড়াইল।
গবেষণায় মোট ৬৬৬ নববিবাহিত দম্পতি এতে অংশ নেন।
গবেষণায় অংশগ্রহণকারী নারী বিয়ের পরপরই গ্রামে ৬০ শতাংশ এবং শহরে ৬৬ শতাংশ পড়াশোনা বন্ধ করেছেন। এর পেছনে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির আপত্তি, বাবা-মায়ের সিদ্ধান্ত, বিয়ের পর বাসস্থান পরিবর্তন, সামাজিক রীতি এবং আর্থিক সীমাবদ্ধতা কাজ করেছে।
আইসিডিডিআর,বি-এর বিজ্ঞানী ও এই গবেষণার প্রধান গবেষক ড. ফৌজিয়া আখতার হুদা, সহকারী বিজ্ঞানী তারানা-ই-ফেরদৌস এবং রিসার্চ ইনভেস্টিগেটর সৈয়দ হাসান ইমতিয়াজ যৌথভাবে গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন।
সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন অ্যাডসার্চের প্রকল্প সমন্বয়কারী ও সহযোগী বিজ্ঞানী আনিসুদ্দিন আহমেদ। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন অ্যাডসার্চের প্রকল্প পরিচালক ও সিনিয়র সায়েন্টিস্ট (এমেরিটাস) ড. শামস এল আরেফিন।
আজ বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদকে বিদায়ী সংবর্ধনা দেওয়া হবে। আজ সকাল সাড়ে ১০টায় বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের এক নং কোর্টে (প্রধান বিচারপতির এজলাস) এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে বার অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি সিনিয়র অ্যাডভোকেট ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন এবং অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের পক্ষে এটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান প্রধান বিচারপতিকে বিদায়ী সংবর্ধনা দেবেন।
দেশের ২৫তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ গত বছরের ১০ আগস্ট নিয়োগপ্রাপ্ত হন এবং ১১ আগস্ট শপথ গ্রহণ করেন।
ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবং সুপ্রিম কোর্টের প্রয়াত জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ ও প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক সুফিয়া আহমেদের ছেলে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে যুক্তরাজ্য থেকে বিএ ও এমএ এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।
ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের জন্ম ১৯৫৮ সালের ২৮ ডিসেম্বর। তিনি ১৯৮৪ সালে জেলা আদালতে, ১৯৮৬ সালে হাইকোর্টে এবং ২০০২ সালে আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। ২০০৩ সালের ২৭ এপ্রিল অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে হাইকোর্টে নিয়োগ পান এবং ২০০৫ সালের ২৭ এপ্রিল হাইকোর্টের স্থায়ী বিচারপতি হন।
তিনি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ব্রাজিল, জার্মানি, ফ্রান্স, ইটালি, নেদারল্যান্ডস, তুরস্ক, ভারত, পাকিস্তান, আরব আমিরাত, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, নেপালসহ বিশ্বের বহু দেশে ভ্রমণ করেছেন।
ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ গ্রহণের পর বিচার বিভাগ ও বিচারপ্রার্থীদের কল্যাণে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেন। গতবছরের ২১ সেপ্টেম্বর সারাদেশের বিচারকদের উদ্দেশ্যে তিনি অভিভাষণ দেন। সেই অভিভাষণে তিনি বিচার বিভাগের জন্য রোডম্যাপ ঘোষণা করেন। যার মধ্যে নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে পৃথক করে স্বাধীন সচিবালয় প্রতিষ্ঠা, বিচারক নিয়োগে আলাদা আইন প্রণয়নসহ নানা পরিকল্পনা রয়েছে। ইতোমধ্যে পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠা ও এর কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
ভারতকে উদ্দেশ্য করে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, বাংলাদেশে নির্বাচন কেমন হবে সেটা নিয়ে আমাদের প্রতিবেশীদের উপদেশ চাই না।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে হওয়া প্রহসনমূলক নির্বাচন নিয়ে ভারত একটি শব্দও উচ্চারণ করেনি। সেই ভারতের নসিয়ত অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে অগ্রহণযোগ্য বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
তৌহিদ হোসেন বলেন, ভারতের কিছু বক্তব্য এসেছে- সেখানে আমাদের কিছু নসিয়ত করা হয়েছে। যে নসিয়ত করা হয়েছে, সেটা আমাদের দরকার আছে বলে মনে করি না। আমরা বাংলাদেশে নির্বাচন কেমন হবে সেটা নিয়ে আমাদের প্রতিবেশীদের উপদেশ চাই না। এই সরকার প্রথম দিন থেকে স্পষ্টভাবে বলে আসছে, অত্যন্ত উচ্চ মানের মানুষ যেন গিয়ে ভোট দিতে পারে সেই পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাই; যে পরিবেশ গত ১৫ বছর ছিল না।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এখন ভারত আমাদের এটা নিয়ে উপদেশ দিচ্ছে। এটা আমি সম্পর্ণ ‘অগ্রহণযোগ্য’ মনে করি। তারা জানে গত ১৫ বছর ধরে যে সরকার ছিল, যাদের সঙ্গে তাদের অত্যন্ত মধুর সম্পর্ক ছিল। তখন কিন্তু নির্বাচগুলো প্রহসণমূলক হয়েছে তখন তারা একটি শব্দও উচ্চারণ করেনি। এখন সামনে একটা ভালো নির্বাচনের দিকে আমরা যাচ্ছি।
তিনি বলেন, এই মুহূর্তে আমাদের নসিয়ত করার দরকার নেই। আমরা জানি, আমরা কি করব। আমরা একটা ভালো নির্বাচন করবো, মানুষ ভোট দিতে পারবে এবং যাদের ভোট দেবে তারাই নির্বাচিত হবে।
এদিকে গত রোববার ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়েছিল। সেদিন ভারতীয় দূতকে তলবের প্রতিক্রিয়ায় দিল্লির ইস্যু করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশের নির্বাচন প্রসঙ্গ ছিল। সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অবাধ, সুষ্ঠু, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে ভারতের অবস্থান। আমরা আশা করি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাসহ অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
ভারতীয় দূতকে তলবের তিন দিনের মাথায় বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার রিয়াজ হামিদুল্লাহকে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়। দুপুরে ঢাকার দূতকে তলবের পর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেখানেও নির্বাচনের প্রসঙ্গ তোলা হয়। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতার পক্ষে ভারত রয়েছে এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অবাধ, সুষ্ঠু, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানিয়ে আসছে ভারত।
দুদেশের দূতদের তলব-পাল্টা তলব নিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমরা তাদের হাইকমিশনারকে ডেকেছি। আমরা যা কিছু বলেছি, তা থেকে কিছু তারা গ্রহণ করেনি। সে বিষয়ে তাদের কিছু দ্বিমত আছে। একইভাবে আমাদের হাইকমিশনারকেও ডেকেছে। এটা খুব অপ্রত্যাশিত না। সাধারণত, এটা ঘটে।
তিনি বলেন, আমরা জানি আগে শেখ হাসিনা ভারতে বসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বক্তব্য দিতেন। এখন প্রতিনিয়ত মূল ধারার গণমাধ্যমেও তার বক্তব্য আসছে এবং সেই বক্তব্যে প্রচুর উসকানি আছে। যিনি একটা আদালত থেকে শাস্তিপ্রাপ্ত হয়েছে, তিনি আমাদের পাশের দেশে বসে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। সেই ক্ষেত্রে আমরা বক্তব্য বন্ধ বা তাকে ফেরত চাইব, এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
জুলাই অভ্যুত্থানের একাধিক সংগঠনের মোর্চা জুলাই ঐক্যের ডাকা ‘মার্চ টু ইন্ডিয়ান হাইকমিশন’ আটকে দিয়েছে পুলিশ। বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) ভারতীয় হাইকমিশন ঘেরাওয়ের উদ্দেশে মোর্চার নেতা-কর্মীরা রামপুরা ব্রিজ থেকে মিছিল নিয়ে উত্তর বাড্ডার হোসেন মার্কেট এলাকায় পৌঁছালে সেখানে ব্যারিকেড দিয়ে তাদের আটকে দেওয়া হয়।
এ সময় বিক্ষোভকারীদের একাংশ সড়কে বসে পড়ে প্রতিবাদ জানায়। অপর অংশ ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
এদিন বেলা সোয়া ৩টার দিকে রামপুরা ব্রিজ থেকে মিছিলটি শুরু হয়। কয়েকশ বিক্ষোভকারী ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা, ঢাকা’ সহ বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে ভারতীয় হাইকমিশনের দিকে এগুতে থাকেন। বিকেল ৪টার দিকে উত্তর বাড্ডায় তাদের আটকে দেওয়া হয়।
গুলশান জোনের এক সহকারী কমিশনার বলেন, জুলাই ঐক্যের ব্যানারে করা কর্মসূচি উত্তর বাড্ডার হোসেন মার্কেটের সামনে আটকে দেওয়া হয়েছে। তারা ব্যারিকেড ভাঙতে চাইলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এতে কেউ আহত হয়নি। এরপর তারা সেখানেই বক্তব্য দিয়ে বিকেল পৌনে ৫টার দিকে সড়ক ছেড়ে চলে যায়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) রওনক আলম বলেন, ‘নিরাপত্তার জন্য আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছি। বাড্ডা এলাকায় মিছিলকারীদের মিছিল আটকে দেওয়া হয়। তারা বিকেলেই সেখান থেকে চলে যায়। এরপর যান চলাচলও স্বাভাবিক হয়।’
জুলাই ঐক্যের পক্ষ থেকে জানানো হয়, জুলাই অভ্যুত্থানের সময় দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাজাপ্রাপ্তদের দেশে ফিরিয়ে আনার দাবিতে এবং ‘ভারতীয় প্রক্সি রাজনৈতিক দল ও সরকারি কর্মকর্তাদের অব্যাহত ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগে ‘মার্চ টু ইন্ডিয়ান হাইকমিশন’ কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়।
এমন পরিপ্রক্ষিতে নিরাপত্তা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে রাজধানীর যমুনা ফিউচার পার্কে ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্র (আইভ্যাক) দুপুর ২টা থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবার নিজেও তার দেশে ফেরার তারিখ উল্লেখ করেছেন। বিজয় দিবস উপলক্ষে লন্ডনে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেছেন, ‘ইনশাআল্লাহ, আমি আগামী ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরে যাব। আপনাদের সঙ্গে দীর্ঘ প্রায় ১৮ বছর কাজ করেছি।’
একইসঙ্গে দেশে ফেরার সময় লন্ডনের বিমানবন্দরে কোনও ধরনের হট্টগোল সৃষ্টি না করার অনুরোধ জানান। কেউ যেন বিমানবন্দরে না যান— এমন অনুরোধ করেন তিনি।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে লন্ডন বিএনপি আয়োজিত লন্ডনের সিটি প্যাভিলিয়নে আলোচনা সভায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এসব কথা বলেন।
এসময় তারেক রহমান সকলের প্রতি ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘দেশে ষড়যন্ত্র থেমে নেই, সামনে কঠিন সময়। এই নির্বাচনও খুব সহজ নয়। তাই সকলে ঐক্যবদ্ধ থাকুন।’
তিনি বলেন, ‘আমি এক বছর আগে আপনাদেরকে বলেছিলাম, সামনে কিন্তু কঠিন সময়। ষড়যন্ত্র থেমে নেই এবং এই নির্বাচনও কিন্তু খুব সহজ নয়। আপনারা অনেকেই কিন্তু ব্যাপারটা এখন বুঝতে পারছেন। এক বছর আগে যা বলেছি সেটা কিন্তু হচ্ছে।’
প্রবাসীদের সাথে এই অনুষ্ঠানটি একদিকে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান হলেও অন্যদিকে ছিল বিদায় অনুষ্ঠানও।
তিনি বলেন, ‘আমি এক বছর আগে আপনাদেরকে বলেছিলাম সামনে আমাদের কঠিন সময়। ষড়যন্ত্র থেমে নেই এবং এই নির্বাচনও কিন্তু খুব সহজ নয়। এখন আমি আবারও বলছি, সামনের সময় কিন্তু খুব সুবিধার না। কাজেই সকলকে সজাগ থাকতে হবে, সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’
প্যাভিলিয়নে হল ভর্তি প্রবাসীদের উদ্দেশে তারেক প্রশ্ন রাখেন, ‘আপনারা কী ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারবেন?’
প্রবাসীরা উচ্চ কন্ঠে ‘হ্যাঁ’ সূচক জবাব দিলে তিনি বলেন, ‘ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারলেই আমরা আমাদের এই যে পরিকল্পনার (দেশ গড়ার পরিকল্পনা) কথা বললাম তা সফল করতে পারব, ঐক্যবদ্ধ থাকলেই আমরা আমাদের প্রত্যাশিত বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে পারব, ঐক্যবদ্ধ থাকলেই আমরা বাংলাদেশের জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারব।’
যুক্তরাজ্যের উদাহরণ টেনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘এই ব্রিটেনে যে আপনারা আছেন এই দেশে জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা আছে বলেই এই দেশের মানুষ তার ন্যায্যতা থেকে বঞ্চিত হয় না। বাংলাদেশের মানুষ বহু বহু যুগ ধরে তাদের ন্যায্যতা থেকে বঞ্চিত হয়েছে।’
‘কাজেই আসুন বাংলাদেশের মানুষের ন্যায্য অধিকার যদি ফিরিয়ে দিতে হয় যে কোনো মূল্যে আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ঐক্যবদ্ধ না থাকার কোনই বিকল্প নেই।’ যোগ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ইউনাইটেড বি স্ট্যান্ড, ডিভাইডেড উই ফল’। কাজেই এই কথাটি আমাদের সকলকে মনে রাখতে হবে।’
তারেক রহমানের বক্তব্যের শুরুতে বিদায়ের কথা উচ্চারিত হয়। এ সময়ে তিনি প্রবাসীদের প্রতি তার কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেন। প্যাভিলিয়ন ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। তিল পরিমাণ ঠাঁই ছিল না। বক্তব্যের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে নেতা-কর্মীদের শান্ত থাকার অনুরোধ জানান তিনি।
সকলের কাছে দোয়া চেয়ে তারেক রহমান ২৫ তারিখে দেশে ফিরে আসার কথা জানান।
তিনি বলেন, সকলের কাছে দোয়া চেয়ে নিচ্ছি। আপনারা দয়া করে দোয়া করবেন। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্য দোয়া করবেন। আপনাদের সামনে যে পরিকল্পনা তুলে ধরেছি দেশ এবং দেশের মানুষের জন্য সেই কাজগুলো আমি যেন সম্পূর্ণ করতে পারি।’
উপস্থিত নেতাকর্মীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘আমি একটি বিনীত অনুরোধ করতে চাই। আপনাদের সাথে আমি ১৮ বছর ছিলাম। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অনেক মানুষের সাথে দেখা হয়েছে। আপনাদের সাথে বহু স্মৃতি আমার রয়ে গিয়েছে, আপনাদের সাথে বহু দুঃখ কষ্ট আমি শেয়ার করেছি।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা বিভিন্ন সময় যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশের প্রবাসী বিশেষ করে যারা জাতীয়তাবাদী বাংলাদেশী রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন আপনারা বিভিন্ন সময়ে আমার, আমার পরিবারের, দলের বিপদের সময় আমাকে মানসিকভাবে সাহস দিয়েছেন, সহযোগিতা করেছেন, সমর্থন যুগিয়েছেন। কিন্তু এখানে এই ঘরে উপস্থিত প্রত্যেকটি মানুষের কাছে আমার অনুরোধ দয়া করে ২৫ ডিসেম্বর আমার দেশে ফেরার দিন কেউ আপনারা এয়ারপোর্টে যাবেন না।’
তিনি বলেন, ‘কারণ এয়ারপোর্টে গেলে একটি হট্টগোল তৈরি হবে এবং মানুষ জানবে যে এরা সব বাংলাদেশি। এতে দেশের সুনাম নষ্ট হবে, দলের সুনাম নষ্ট হবে।’
তারেক রহমান বলেন, ‘যারা সেদিন এয়ারপোর্টে যাবেন না, আমার আজকের এই অনুরোধ যারা রাখবেন আমি ধরে নেবো তারা দল এবং সর্বোপরি দেশের সম্মানের প্রতি মর্যাদা রাখবেন। আর আমার মানা করা সত্ত্বেও আমার অনুরোধ করার পরেও যারা যাবেন আমি ধরে নিতে পারি তারা ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য সেখানে গিয়েছেন।’
বক্তব্যে শেষে দেড় মিনিটের একটি ভিডিও দেখানো হয় যেখানে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ থেকে ২৪ এর ফ্যাসিস্টদের পতন এবং গণঅভুত্থানের পরে নতুন বাংলাদেশ গড়ার কথা বলা হয়েছে।
তারেক রহমান তার বক্তব্যে বাংলাদেশকে একটি সুখী, কল্যাণকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে তার প্রণীত দেশ গড়ার পরিকল্পনাগুলো তুলে ধরেন। এতে ফ্যামিলি কার্ড, ফার্মাস কার্ড, স্বাস্থ্য কার্ড, বেকার সমস্যা সমাধান প্রভৃতি বিষয়গুলো উপস্থাপন করেন তিনি।