রাষ্ট্রপতি পদে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক কমিশনার মো. সাহাবুদ্দিনকে মনোনয়ন দিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। সবকিছু ঠিক থাকলে দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হয়ে বঙ্গভবনের পরবর্তী বাসিন্দা হতে যাচ্ছেন তিনি।
সংসদে আওয়ামী লীগের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় সাবেক এই ছাত্রনেতার রাষ্ট্রপতি হওয়া এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। নির্বাচন কমিশন রাষ্ট্রপতি হিসেবে তার নাম ঘোষণা করলে তিনি হবেন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে যাওয়া ১৮তম ব্যক্তি। ছাত্রনেতা থেকে বিচার বিভাগ, তারপর দুদক, এরপর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ থেকে এবার বঙ্গভবনের পথে হাঁটা শুরু করলেন মো. সাহাবুদ্দিন। আগামী মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশন (ইসি) আনুষ্ঠানিকভাবে মো. সাহাবুদ্দিনকে রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত ঘোষণা করবে।
রোববার সকালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল ইসিতে রাষ্ট্রপতি পদে সাহাবুদ্দিনের মনোনয়নপত্র জমা দেয়। মনোনয়ন জমা দেয়ার শেষ দিনে একমাত্র প্রার্থী থাকায় এ পদে আর ভোটের প্রয়োজন পড়ছে না। দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ার পর রোববার সকালেই গণভবনে মো. সাহাবুদ্দিনকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিকে বিএনপি বলছে, রাষ্ট্রপতি নিয়ে তাদের কোনো আগ্রহ নেই।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, সোমবার মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের শেষ দিন। আগামী মঙ্গলবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে। যাচাই-বাছাই শেষে মো. সাহাবুদ্দিনকেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত ঘোষণা করা হবে। তবে এ পদে যদি একাধিক প্রার্থী থাকতেন, তাহলে সংসদের অধিবেশন কক্ষে ভোট হতো ১৯ ফেব্রুয়ারি বেলা ২টা থেকে বিকেল ৫টার মধ্যে।
বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন পরোক্ষ ভোটে। সংসদ সদস্যরাই এই নির্বাচনে ভোট দেন। ৩৫০ আসনের সংসদে আওয়ামী লীগের সদস্য এখন ৩০৫। মো. সাহাবুদ্দিনই রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের উত্তরসূরি হচ্ছেন, তা এক প্রকার নিশ্চিত।
গত রোববার বেলা পৌনে ১১টার দিকে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে একটি আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদল রাজধানী আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে যায়। তবে সে সময় দলের দপ্তর সম্পাদক এসে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের নির্বাচনীকর্তার দপ্তর থেকে মনোনয়নপত্র তোলেন। ওবায়দুল কাদের ভবনের নিচেই অপেক্ষা করেন। কিছু পরে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সাহাবুদ্দিন চুপ্পু নিজেই হাজির নির্বাচন ভবনে। হাসিমুখে তিনি ঢোকেন ভবনে। নির্বাচনীকর্তার দপ্তরে প্রবেশের আগেই সাংবাদিকরা তাকে অভিনন্দন জানাতে শুরু করেন। এর আগে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন সাবেক এই দুদক কমিশনার। নীল রঙের কোট পরিহিত চুপ্পু পুরো সময়েই হাসিমুখে ছিলেন। তবে গণমাধ্যমকর্মীরা তার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলেও কারও কোনো প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে নীরবে হাঁটছিলেন ২২তম রাষ্ট্রপতি হতে যাওয়া সাহাবুদ্দিন।
বেলা ১১টার দিকে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) কার্যালয়ে প্রার্থী হিসেবে সাহাবুদ্দিনের মনোনয়নপত্র জমা দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। পরে তিনি সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভা থেকে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনাকে রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী চূড়ান্ত করার ক্ষমতা দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী মো. সাহাবুদ্দিনকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করেছেন।
পাশাপাশি এ সময় মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সাহাবুদ্দিনের রাজনৈতিক ও পেশাগত জীবন তুলে ধরেন ওবায়দুল কাদের। পরে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সাহাবুদ্দিন যখন নির্বাচন ভবন থেকে বের হন তখন কথা হয় দৈনিক বাংলার সঙ্গে। প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে সাহাবুদ্দিন দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘সবকিছু আল্লাহর ইচ্ছা। এখন কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। সর্বশক্তিমান আল্লাহর ইচ্ছা।’ এ সময় তার সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মুহাম্মদ ফারুক খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ ও দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। পরে নির্বাচন কমিশন সচিব জাহাংগীর আলম এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, রাষ্ট্রপতি পদে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দুটি আবেদনপত্র জমা দেয়া হয়েছে একই ব্যক্তির নামে।
এদিকে রোববার সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে একজন অসাধারণ ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। ১৯৭৫ সালে দুষ্কৃতকারীরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর সেটির প্রতিবাদ করেছিলেন, সেটির বিরুদ্ধে মিছিল করেছিলেন। এ জন্য ২০ আগস্ট তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তিন বছরের বেশি সময় তিনি কারাগারে অবরুদ্ধ ছিলেন।
অন্যদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘আজকে (রোববার) সকালে প্রেস বিফ্রিংয়ে বলেছি, আমাদের কোনো আগ্রহ নেই।’
এক ব্যক্তির নামে দুই মনোনয়ন
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে রোবাবর ছিল মনোনয়নপত্র দাখিলের দিন। ইসি সচিব জাহাংগীর আলম বলেন, ‘এ পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দুটি মনোনয়ন দাখিল হয়েছে একই ব্যক্তির নামে। যার নামে দাখিল হয়েছে তিনি মো. সাহাবুদ্দিন। পিতা মরহুম শরফুদ্দিন আনসারী। বাসা হোল্ডিং ৮৮/১, গ্রাম-শিবরামপুর, পাবনা। পোস্ট কোড-৬৬০০, পাবনা।’
ইসি সচিব জানান, রাষ্ট্রপতি পদে সাহাবুদ্দিনের নাম প্রস্তাবকারী আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক নোয়াখালী-৫ আসনের সংসদ সদস্য ওবায়দুল কাদের এবং সমর্থনকারীর নাম হচ্ছে চট্টগ্রাম-৭ আসনের সংসদ সদস্য যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. হাছান মাহমুদ। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের নির্বাচনীকর্তার দপ্তরে দুটি আবেদন বেলা ১১টা ও ১১টা ৫ মিনিটে জমা দেয়া হয়।
সচিব জানান, এ দুটি আবেদন সোমবার বেলা ১টায় বাছাই করা হবে। বাছাইয়ে মনোনয়নপত্র বৈধ হওয়ার পর প্রধান নির্বাচনীকর্তা সাংবাদিকদের অবহিত করবেন।
একক প্রার্থী হলে প্রক্রিয়া কী হবে- জানতে চাইলে সচিব বলেন, ‘সোমবার বাছাইয়ের পর বৈধ মনোনয়ন যেটা হবে, তার নাম ঘোষণা করা হবে। আইনানুগভাবে প্রত্যাহারের শেষ তারিখে আমরা চূড়ান্তভাবে ঘোষণা করব, কে বাংলাদেশের পরবর্তী মহামান্য রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন। তবে যেহেতু একই ব্যক্তির দুটি আবেদন এবং দুটি যদি বাছাইয়ে টেকে, তবে সোমবার এটি চূড়ান্ত হয়ে যাবে।’
ফেব্রুয়ারির ১৯ তারিখ ভোটের দিন রেখে গত ২৫ জানুয়ারি বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। তফসিল অনুযায়ী, ১৪ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৪টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে। প্রার্থীর সংখ্যা একজনের বেশি না হলে তাকেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা হবে। সে ক্ষেত্রে মঙ্গলবারই চূড়ান্ত ঘোষণা করা হতে পারে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পরিচালনা করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল, যিনি এ নির্বাচনের ‘নির্বাচনীকর্তা’।
আগামী ২৩ এপ্রিল মেয়াদ শেষ হওয়ায় রাষ্ট্রপতির পদ থেকে বিদায় নেবেন মো. আবদুল হামিদ। সংবিধানে সর্বোচ্চ দুবার রাষ্ট্রপতি পদে থাকার সুযোগ থাকায় এটিই হবে তার শেষ মেয়াদ। এই দেশে প্রথমবারের আবদুল হামিদ রাষ্ট্রপতি পদে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পালন করছেন। দ্বিতীয় মেয়াদের পুরোটা পার করতে পারলে আবদুল হামিদই হবেন সবচেয়ে বেশি সময় রাষ্ট্রপতির পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তি। তারই উত্তরসূরি হতে যাচ্ছেন মো. সাহাবুদ্দিন।
রাজনীতির মাঠ থেকে বঙ্গভবনে
আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের সঙ্গী মো. সাহাবুদ্দিন। সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া এই ছাত্রলীগ নেতা ১৯৭০ সালে পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির পদে ছিলেন। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি থাকাকালে ভারতে গিয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ এবং মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ তার। ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ পাবনা টাউন হল ময়দানে স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলনকারীদের মধ্যে অন্যতম একজন ছিলেন সাহাবুদ্দিন। পাবনা জেলা স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ছিলেন তিনি। ১৯৭৪-৭৫ সালে ছিলেন পাবনা জেলা আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি। ১৯৭৫ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) গঠন করা হলে তিনি পাবনা জেলা বাকশালের যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে মনোনয়ন পান।
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার প্রতিবাদ করে তিন বছর কারাগারে থাকতে হয় তাকে। ইতিহাসের ওই জঘন্যতম হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে প্রতিরোধ মিছিলে নেতৃত্ব দেন মো. সাহাবুদ্দিন। পরবর্তী সময়ে ২০ আগস্ট পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানে তিনি গ্রেপ্তার হন। সেনাক্যাম্পে তিন মাস তার ওপর চলে শারীরিক নির্যাতন। ১৯৭৮ সালে কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি।
মো. সাহাবুদ্দিন ১৯৮২ সালে বিসিএস (বিচার) ক্যাডারে যোগ দেন। ২০০৬ সালে সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ পদ থেকে অবসর নেন তিনি। ২০১১ সালে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কমিশনার (হাইকোর্টের বিচারপতির মর্যাদায়) হিসেবে নিয়োগ পান মো. সাহাবুদ্দিন। ২০১৬ সালের মার্চে এই পদ থেকে অবসরে যান তিনি।
বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু নির্মাণকাজে দুর্নীতির অভিযোগ তোলার সময় দুদক কমিশনার হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন সাহাবুদ্দিন। সরকার এই অভিযোগ অস্বীকার করলেও বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আলোচনাক্রমে দুদককে তা অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেয়া হয়। বিশ্বব্যাংকের একটি অভিজ্ঞ দল দুদককে সঙ্গে নিয়ে এই অনুসন্ধান তদারক করতে থাকে। এ সময় তদারকির নামে ‘মনগড়া’ যুক্তি দিয়ে ‘মিথ্যার আশ্রয়’ নেয়ার জন্য দুদকের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এ সময় বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন মো. সাহাবুদ্দিন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বরত।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আপসহীন, বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন এবং অতীত কর্মজীবনে নিষ্ঠা-সততা-দক্ষতার কারণে স্বাধীনতা সংগ্রামের সম্মুখসারির এই যোদ্ধাকে রাষ্ট্রপ্রধানের পদের জন্য তাকে বেছে নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা। আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করছেন, আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের দেয়া ক্ষমতার আলোকে দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেরা ব্যক্তিকেই বেছে নিয়েছেন।
পাবনার সন্তান মো. সাহাবুদ্দিনের জন্ম ১৯৪৯ সালের ১০ ডিসেম্বর সদর উপজেলার শিবরামপুর গ্রামে। তার পিতা শরফুদ্দিন আনছারী ও মাতা খায়রুন্নেসা। ১৯৬৬ সালে এসএসসি পাস করার পর পাবনার এডওয়ার্ড কলেজ থেকে ১৯৬৮ সালে এইচএসসি ও ১৯৭১ সালে (অনুষ্ঠিত ১৯৭২ সালে) বিএসসি পাস করেন। পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৪ সালে মনোবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর এবং পাবনা শহীদ অ্যাডভোকেট আমিনুদ্দিন আইন কলেজ থেকে ১৯৭৫ সালে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন।
পাবনা শহরের দিলালপুর নিবাসী আলী আকতারের জ্যেষ্ঠ কন্যা ড. রেবেকা সুলতানার সঙ্গে ১৯৭২ সালের ১৬ নভেম্বর মো. সাহাবুদ্দিন বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। রেবেকা সুলতানা বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে যোগ দিয়ে যুগ্ম সচিব হিসেবে ২০০৯ সালে অবসরে যান। ড. রেবেকা বর্তমানে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যান রিসোর্চ প্রোগ্রাম বিভাগের অধ্যাপক এবং ফ্রেন্ডস ফর চিলড্রেন অর্গানাইজেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। তাদের একমাত্র সন্তান মো. আরশাদ আদনান রনি দেশে ও বিদেশে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে বর্তমানে বেসরকারি প্রাইম ব্যাংকে কর্মরত।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে সরকার ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে। গত সোমবার নিউইয়র্কে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক বিশেষ দূত এবং ভারতের জন্য মনোনীত রাষ্ট্রদূত সার্জিও গোরের সঙ্গে বৈঠককালে তিনি এ কথা বলেন।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ। দেশ এ জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত।’ সার্জিও গোর প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বের প্রশংসা এবং যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের প্রতি সহায়তা অব্যাহত রাখবে বলে প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
বৈঠকে বাণিজ্য, দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা, সার্ক পুনরুজ্জীবন, রোহিঙ্গা সংকট এবং ঢাকাকে লক্ষ্য করে পরিচালিত ভ্রান্ত তথ্য প্রচারসহ দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক নানা ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়।
প্রধান উপদেষ্টা কক্সবাজারে বসবাসরত ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত সহযোগিতা কামনা করেন। জবাবে মার্কিন কর্মকর্তারা রোহিঙ্গাদের জন্য জীবনরক্ষাকারী সহায়তা বজায় রাখার আশ্বাস দেন।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, সার্ক প্রায় এক দশকেরও বেশি সময় ধরে সম্মেলন আয়োজন করতে পারেনি। অন্তর্বর্তী সরকার এ সংস্থাকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অর্থনীতির সঙ্গে সংযুক্তি বাংলাদেশের উন্নয়নকে বহুগুণে এগিয়ে নিতে পারে। এ জন্য বাংলাদেশ আসিয়ানে যোগদানের আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
এছাড়া তিনি নেপাল, ভুটান এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি রাজ্যের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়ানোর মাধ্যমে আমরা আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দ্রুততর করতে পারব।’
এদিকে অপর এক অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বিশ্বব্যাপী সংঘাতের দীর্ঘস্থায়ী ছায়া শান্তি, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নকে মারাত্মক হুমকির মুখে ফেলছে। জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ‘সোশ্যাল বিজনেস, ইয়ুথ অ্যান্ড টেকনোলজি’ শীর্ষক জাতিসংঘের উচ্চপর্যায়ের এক সাইডলাইন বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে তিনি এ কথা বলেন।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আজকের পৃথিবী এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। জলবায়ু পরিবর্তনের দাবানল পৃথিবীকে জ্বালিয়ে দিচ্ছে, বৈষম্য বাড়ছে, সংঘাত ছড়িয়ে পড়ছে। ন্যায়বিচার ও শান্তির জন্য সংগ্রাম আমাদের মানবিকতারই পরীক্ষা করছে।’
তিনি বলেন, এই সংকটগুলো আলাদা নয়, পরস্পরের সঙ্গে জড়িত সূতার মতো একে অপরকে টেনে পুরো ব্যবস্থাকেই নাড়িয়ে দিচ্ছে। ‘এটিকে মেরামত করার শক্তি অতীতে ছিল না, তা লুকিয়ে আছে আমাদের কল্পিত ভবিষ্যতে—এবং আজ এখানে আমরা যে সিদ্ধান্ত নেব তাতেই,’ যোগ করেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যুদ্ধ ও বাস্তুচ্যুতি-সীমান্ত অতিক্রম করে অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করছে, খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে ফেলছে এবং অসংখ্য মানুষের জীবন ছিন্নভিন্ন করছে। এ পরিস্থিতিতে পুরনো ব্যবস্থায় সমাধান যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন নতুন কূটনীতি, গভীরতর আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও টেকসই উন্নয়নে সমষ্টিগত প্রতিশ্রুতি।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বাংলাদেশসহ বহু দেশ কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড়িয়েও স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এর সঙ্গে রয়েছে ১৩ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়া, জলবায়ু বিপর্যয়ের ঘনঘন আঘাত সামলানো এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতা মোকাবিলা করা।
তিনি বলেন, ‘এমন প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘের বাজেট সংকোচন বা উন্নয়ন সহায়তা হ্রাস করা হবে বিপরীতমুখী পদক্ষেপ। বরং আন্তর্জাতিক সহায়তা বাড়ানো, কারিগরি সহায়তা প্রদান এবং ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য ন্যায়সঙ্গত উত্তরণের নিশ্চয়তা দেওয়া জরুরি।’
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বর্তমান বৈশ্বিক ব্যবস্থায় যেখানে মানুষের চেয়ে মুনাফা বেশি গুরুত্ব পায়, সেখানে এসব লক্ষ্য পুরোপুরি অর্জন সম্ভব নয়। এজন্য প্রয়োজন ব্যবস্থা পরিবর্তন, এমন একটি অর্থনীতি গড়ে তোলা, যেখানে মানুষের কল্যাণ, সামাজিক ন্যায়বিচার ও পরিবেশ সুরক্ষা সম্পদের সঞ্চয়ের চেয়ে বড় অগ্রাধিকার পাবে।’
তিনি উল্লেখ করেন, এই নতুন অর্থনীতির কেন্দ্রে রয়েছে সামাজিক ব্যবসা। এক ডলারের ক্ষুদ্র ঋণ থেকে শুরু হওয়া এই ধারণা আজ বৈশ্বিক আন্দোলনে রূপ নিয়েছে। স্বাস্থ্য, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, শিক্ষা থেকে শুরু করে খেলাধুলা পর্যন্ত নানা খাতে সামাজিক ব্যবসা প্রমাণ করছে যে বিশ্ব সমস্যার সমাধান করেও আর্থিকভাবে টিকে থাকা যায়।
‘এগুলোই প্রমাণ করছে—অন্য এক পৃথিবী সম্ভব। এমন এক পৃথিবী যেখানে বাণিজ্য হবে মানবতার সেবক, প্রবৃদ্ধি সবার জন্য এবং মুনাফার মাপকাঠি শুধু আর্থিক সাফল্য নয়, বরং মানুষের জীবনমানের উন্নতি, কমিউনিটিকে শক্তিশালী করা ও পৃথিবীর আরোগ্য,’ বলেন প্রধান উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, বর্তমান সভ্যতা সীমাহীন ভোগ, শোষণ ও সঞ্চয়ের ধ্বংসাত্মক পথে হাঁটছে, যা মানবজাতির টিকে থাকার ভিত্তি—পৃথিবীকেই ঝুঁকির মুখে ফেলছে। এজন্য প্রয়োজন নতুন সভ্যতা, যা লোভ নয়, বরং মানবিক ও পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ সমাধানের অঙ্গীকারে পরিচালিত হবে।
অধ্যাপক ইউনূস আরো বলেন, ‘এ নতুন সভ্যতার স্থপতি হবে তরুণ প্রজন্ম। তাদের স্বপ্ন সীমাহীন। আমি প্রায়ই বলি—যেখানে স্বপ্ন নেতৃত্ব দেয়, সেখানেই উদ্ভাবন জন্ম নেয়। যদি আমরা কল্পনা করতে পারি, তবে তা সম্ভব। যদি না পারি, তবে কখনোই হবে না।’
তিনি তরুণদের জলবায়ু পরিবর্তন, বেকারত্ব, দারিদ্র্য ও বৈষম্য মোকাবিলায় সামাজিক ব্যবসায় নিজেদের সৃজনশীলতাকে কাজে লাগাতনার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘তরুণদের নেতৃত্ব দিতে হবে আজই, কাল নয়। বড় স্বপ্ন দেখো, তবে তা বাস্তবায়নে সচেতন পদক্ষেপ নাও।’
বিশ্বকে বদলে দিতে তরুণদের ‘থ্রি-জিরো ক্লাব’ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমি তিন শূন্যের এক পৃথিবীর কথা বলছি— শূন্য নিট কার্বন নিঃসরণ, শূন্য সম্পদ কেন্দ্রীকরণ (যাতে দারিদ্র্যের অবসান ঘটে) এবং শূন্য বেকারত্ব (যা সবার সৃজনশীলতা কাজে লাগিয়ে সম্ভব)।’
তিনি আরও বলেন, শূন্য বর্জ্য (জিরো ওয়েস্ট) ধারণাটিও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি জাতিসংঘ মহাসচিবের ‘জিরো ওয়েস্ট ইনিশিয়েটিভ’-এর অংশ। ‘এটি কোনো কল্পনা নয়, ইতোমধ্যেই বাস্তবে রূপ নিচ্ছে,’ যোগ করেন তিনি।
‘এ কারণেই আমরা তরুণদের সর্বত্র ‘থ্রি-জিরো ক্লাব’ গড়ে তুলতে উৎসাহিত করছি—যেখানে প্রত্যেকে থ্রি-জিরো মানুষ হয়ে উঠতে পারে,’ বলেন প্রধান উপদেষ্টা।
তিনি ব্যাখ্যা করেন, একজন থ্রি-জিরো মানুষ প্রতিশ্রুতি দেয় টেকসইভাবে জীবনযাপন করার, বর্জ্য কমিয়ে আনার এবং সামাজিক উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার। একই সঙ্গে তারা বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, সম্পদ বৈষম্য এবং বেকারত্বে কোনো অবদান না রাখার জন্য সচেষ্ট হয়।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, যত বেশি মানুষ এই আন্দোলনে যুক্ত হবে, এই ক্লাবগুলো রূপ নেবে থ্রি-জিরো পরিবারে, থ্রি-জিরো গ্রামে, থ্রি-জিরো শহরে—এবং একদিন গড়ে উঠবে একটি থ্রি-জিরো বিশ্ব।
‘এটি একটি ছোট্ট পদক্ষেপ দিয়ে শুরু হয়। কিন্তু এক সাথে সেই পদক্ষেপগুলোই বিশ্বকে পাল্টে দিতে পারে।’
তিনি জানান, তিনি সবসময় বিশ্বাস করেছেন যে এই ধরনের ফোরাম কেবল বক্তৃতার জায়গা নয়—এটি অনুপ্রেরণার ক্ষেত্র।
প্রযুক্তির প্রসঙ্গ তুলে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বিশ্ব এখন এক নতুন প্রযুক্তিগত যুগের দ্বারপ্রান্তে—যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, বিগ ডাটা, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও নানান উদ্ভাবন মানব অগ্রগতির ধারা পাল্টে দিচ্ছে।’
‘কিন্তু এর প্রতিশ্রুতির সঙ্গে রয়েছে দায়িত্বও। প্রযুক্তি মানবতার জন্য আশীর্বাদ হবে নাকি অভিশাপ, তা নির্ধারণ করবে আজকের আমাদের সিদ্ধান্ত আর আগামী দিনের নেতৃত্বে আমাদের যে মূল্যবোধ আমরা বপন করব তার ওপর,’ বলেন তিনি।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, প্রযুক্তির ভবিষ্যৎকে গড়ে তুলতে হবে বিবেক দিয়ে—প্রতিযোগিতা নয়, সহযোগিতার মাধ্যমে। কিছু মানুষের জন্য নয়, বরং সবার জন্য।
তিনি বলেন, ‘আসুন নিশ্চিত করি, নতুন প্রযুক্তির যুগ হোক সহমর্মিতা, ন্যায়বিচার ও সমষ্টিগত অগ্রগতির যুগ।’
বেলজিয়ামের রাণী ও সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ
নিউইয়র্কে গত সোমবার জাতিসংঘ সদর দপ্তরে এক অনুষ্ঠানের ফাঁকে বেলজিয়ামের রাণী ম্যাথিল্ড প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। একই অনুষ্ঠানের সময় বৃটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউনও অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন।
এছাড়াও, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে সাক্ষাৎ করেন।
জনগণের জীবন ও সম্পদ রক্ষা করার জন্য সর্বোচ্চ ক্ষমতা ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছিলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান। মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে-১ হাবিবুর রহমানের এমন নির্দেশনা দেওয়া একটি অডিও শোনানো হয়েছে। অডিওটি দুবার শোনানো হয়।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে করা মামলায় ৫০তম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন মো. কামরুল হাসান। তিনি ডিএমপির ক্রাইম কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারে ওয়্যারলেস অপারেটর কর্মরত আছেন।
জবানবন্দি দেওয়ার শেষ পর্যায়ে কামরুল হাসান ট্রাইব্যুনালকে একটি অডিও রেকর্ড দেন। জবানবন্দিতে কামরুল হাসান উল্লেখ করেন, সেই অডিওতে ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, তিনি (কামরুল হাসান) এবং অন্যদের বার্তা আদান-প্রদানের কণ্ঠস্বর শোনা যায়।
জবানবন্দিতে কামরুল হাসান উল্লেখ করেন, গত বছরের ১৭ জুলাই তিনি ডিএমপির ক্রাইম কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারে ওয়্যারলেস অপারেটর হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সেদিন সকাল ৯টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত তার ডিউটি ছিল। বেলা বেলা ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনের জন্য তৎকালীন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, যার সাংকেতিক কল সাইন ভিক্টর মাইক ওয়ানে (victor mike-1) সর্বোচ্চ বল প্রয়োগের নির্দেশ দেন, চায়নিজ রাইফেল দিয়ে গুলি করার নির্দেশ দেন। তখন বার্তাবাহক হিসেবে তিনি ও তার দল ওয়্যারলেসের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সব ইউনিটে ওই বার্তা পৌঁছে দেন।
কামরুল হাসানের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হলে ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন প্রসিকিউটর মো. মিজানুল ইসলাম। তাঁকে একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, অডিও বার্তা যেটা শুনলাম, সেখানে উনি (হাবিবুর রহমান) বলেছেন যে জানমাল রক্ষায়, সরকারি সম্পত্তি রক্ষায়, হাঁটু গেড়ে কোমরের নিচে গুলি করতে বলেছেন। বিষয়টিকে প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রপক্ষ) কীভাবে ব্যাখ্যা করছে?
জবাবে মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘দেখেন, এই জায়গাটা মামলার আরগুমেন্ট করার জায়গা। গত বছরের ১৭ জুলাই সরকারি ছুটি ছিল। সেদিন আন্দোলনের কোনো কর্মসূচি ছিল না। কেন জনগণের ওপর গুলি করার নির্দেশ দেবেন। সেদিন এমন কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি, যাতে গুলি করতে হবে। কোমরের নিচে, না ওপরে, সেটা অবান্তর।
আরেকজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, সাক্ষী বলেছেন, ডিএমপি কমিশনার চায়নিজ রাইফেল ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু অডিওতে এ রকম কিছু পাওয়া যায়নি।
জবাবে মিজানুল ইসলাম বলেন, চায়নিজ রাইফেলের কথাটা তিনি বলেছেন বা বলেননি, এই বিষয়টা ম্যাটার অব আরগুমেন্ট (যুক্তিতর্কের বিষয়)। তিনি বক্তব্য দিয়েছেন, তারা যখন আরগুমেন্ট করবেন, তখন বিষয়টা ফেস (মোকাবিলা) করবেন।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের জেএফকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেনকে লক্ষ্য করে ডিম ছোড়ার ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানিয়ছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি এ ঘটনার পর নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এই প্রতিক্রিয়া জানান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মিজানুর রহমানকে ডিম ছুড়তে দেখা যায়।
এ ঘটনায় মির্জা ফখরুল আওয়ামী লীগের সমালোচনা করেন। মির্জা ফখরুল তার পোস্টে লিখেছেন, ‘নিউইয়র্ক বিমানবন্দরে যা ঘটেছে, তা আবারও প্রমাণ করল, আওয়ামী লীগ তাদের অন্যায়ের জন্য বিন্দুমাত্র অনুশোচনা করে না।’
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে যোগ দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সফরসঙ্গী হিসেবে আখতার হোসেন সেখানে পৌঁছান। বিমানবন্দরের ৪ নম্বর টার্মিনাল থেকে বের হওয়ার সময় স্থানীয় সময় ২২ সেপ্টেম্বর (সোমবার) বিকেল পাঁচটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। আখতার হোসেনের সঙ্গে হাঁটছিলেন সফরসঙ্গী হিসেবে আসা বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকেরা এ সময় তাসনিম জারাকে লক্ষ্য করে কটূক্তি করেন। তারা সেখানে বিক্ষোভ করেন।
মির্জা ফখরুল তার পোস্টে আরও লিখেছেন, ‘আওয়ামী লীগ আজ পর্যন্ত যা করেছে, সবকিছুর বিচার আইনের মাধ্যমে হবে। দল ও দেশের স্বার্থে ধৈর্য ধরুন।’
আখতার হোসেনকে ডিম ছোড়ার ঘটনার পর যুবলীগ কর্মী মিজানুর রহমানকে আটক করেছে পুলিশ।
জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে এসে সোমবার নিউ ইয়র্কের জন. এফ কেনেডি বিমানবন্দরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন এবং যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারাসহ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের ওপর উদ্দেশ্যমূলক হামলার ঘটনায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার সহযোগী এবং সমর্থকরা এই হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এই নিন্দনীয় ঘটনার মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার শাসনামলে গড়ে ওঠা বিধ্বংসী ও সহিংস রাজনৈতিক সংস্কৃতির এক স্পষ্ট ও মর্মান্তিক চিত্র প্রকাশ পেয়েছে। এই বিধ্বংসী রাজনৈতিক সংস্কৃতির অবসান ঘটিয়ে একটি শান্তিপূর্ণ, গণতান্ত্রিক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
প্রধান উপদেষ্টা এবং তাঁর সঙ্গে থাকা রাজনৈতিক নেতাদের সফরের সময় সম্ভাব্য নিরাপত্তা ঝুঁকির আশঙ্কায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিভিন্ন পর্যায়ে একাধিক সতর্কতামূলক নিরাপত্তা ব্যবস্থা সমন্বয় করেছিল। জন এফ. কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর প্রতিনিধিদলটিকে প্রথমে একটি নির্দিষ্ট ভিভিআইপি গেট দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এবং একটি বিশেষভাবে সুরক্ষিত পরিবহন ইউনিটে ওঠানো হয়েছিল। তবে, অপ্রত্যাশিত এবং শেষ মুহূর্তের ভিসা-সম্পর্কিত জটিলতার কারণে প্রতিনিধিদলটিকে পথ পরিবর্তন করে বিকল্প পথে অগ্রসর হতে হয়।
বিমানবন্দরে রাজনৈতিক নেতাদের জন্য ভিভিআইপি প্রবেশাধিকার এবং নিরাপত্তা সুবিধা দেওয়ার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে আনুষ্ঠানিক অনুরোধ করা সত্ত্বেও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ দুঃখজনকভাবে সেই অনুরোধ রাখেনি।এর ফলে প্রতিনিধিদলের সদস্যরা ঝুঁকির মুখে পড়েন।
ঘটনার পরপরই, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিউইয়র্কে বাংলাদেশ মিশনের মাধ্যমে দ্রুত এবং আইনানুগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করে। আমাদের জানানো হয়েছে যে ইতোমধ্যেই একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং বর্তমানে ঘটনাটির আনুষ্ঠানিক তদন্ত চলমান।
এই ঘটনার পর প্রধান উপদেষ্টা এবং প্রতিনিধিদলের সকল সদস্যের নিরাপত্তা ব্যবস্থা উল্লেখযোগ্যভাবে জোরদার করা হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিদেশে তার প্রতিনিধিদের নিরাপত্তা ও মর্যাদা নিশ্চিত করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এবং স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সাথে সার্বক্ষণিক ঘনিষ্ঠ এবং অবিচ্ছিন্ন সমন্বয় রেখে যাচ্ছে।
আমরা দেশের অভ্যন্তরে এবং আন্তর্জাতিকভাবে গণতান্ত্রিক নীতি ও আইনের শাসন সমুন্নত রাখার প্রতি আমাদের অটল অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করছি। রাজনৈতিক সহিংসতা এবং ভীতি প্রদর্শনের ঘটনা, তা বাংলাদেশের ভেতরে হোক বা এর সীমানার বাইরে হোক, কোনোভাবেই সহ্য করা হবে না। এ ধরনের ঘটনায় যথাযথ আইনি ও কূটনৈতিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জয়পুরহাটে সদর উপজেলায় গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ভুয়া পরিচয়ে চাঁদাবাজি করতে এসে দুজনকে আটক করে পুলিশে দিয়েছেন স্থানীয়রা বাসিন্দারা। গত সোমবার রাতে উপজেলার আমদই ইউনিয়নের মাধাইনগর বাজার ওই ঘটনা ঘটে। তাদের কাছ থেকে পুলিশের লোগো সম্বলিত একটি সেফটি ভেস্ট ও হ্যান্ডকাপ উদ্ধার করা হয়েছে। ভুয়া ডিবি পুলিশ পরিচয়ে আটক ব্যক্তিরা হলেন, মজনু মন্ডল (৪০) ও মশিউর রহমান (৩৮)। মজনু মন্ডল ক্ষেতলাল উপজেলার দেওগ্রামের মোজাম্মেল মন্ডলের ছেলে আর মশিউর রহমান সদর উপজেলার মাধাইনগর গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে।
মজনু মন্ডল জানান, ‘কালাই থানার উপপরির্দশক (এসআই) নুর আমিন তাকে হ্যান্ডকাপ দিয়েছেন। তবে কালাই থানার এসআই নুর আমিন বলেন, আমি ওদের চিনি না। আমার হ্যান্ডকাপ আমার কাছেই আছে। কাউকে হ্যান্ডকাপ দেইনি।
জানা যায়, গত সোমবার রাত সাড়ে ৮টার পর মশিউর ও মজনু মাধাইনগর বাজারে এসে নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে লোকজনদের ভয়ভীতি দেখান। তাদের দুজনের আচরণে বাজারে লোকজনের সন্দেহ হয়। এ সময় বাজারের লোকজন তাদের দুজনকে বাজারের একটি দোকানে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে ডিবি পুলিশের পরিচয়পত্র দেখতে চান। তারা ডিবি পুলিশের পরিচয়পত্র না দেখিয়ে নিজেদের কাছে থাকা পুলিশের লোগো সম্বলিত একটি সেফটি ভেস্ট ও হ্যান্ডকাপ দেখান। একপর্যায়ে তারা উৎসুক লোকজনের কাছে নিজেদের আসল পরিচয় পরিচয় প্রকাশ করেন। উত্তেজিত লোকজন তাদের দুজনকে আটকে রেখে থানায় খবর দেন। রাত ৯টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে তাদের গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যান।
ফেসবুক লাইভে দেখা যায়, ডিবি পুলিশ পরিচয় দেওয়া মজনু মন্ডল ও মশিউর রহমানকে একটি দোকানে আটকে রাখা হয়েছে। তাদের কাছে পুলিশের সেফটি ভেস্ট ও হ্যান্ডকাপ রয়েছে। সদর থানার পরির্দশক (আপারেশন) শাহিন কাদির ঘটনাস্থলে এসে লোকজনের সঙ্গে কথা বলছিলেন। তিনি ভুয়া দুই ডিবি পুলিশকে নিয়ে যেতে চাইলে তখন উপস্থিত লোকজনকে তাদের হ্যান্ডকাপ দিয়েছেন তা জানতে চান। তখন মজনু মন্ডল বলেন, কালাই থানার এসআই নুর আমিন তাকে হ্যান্ডকাপ দিয়েছেন।
জয়পুরহাট সদর থানার ওসি তামবিরুল ইসলাম বলেন, তাদের কাছে পুলিশের লোগো সম্বলিত একটি সেফটি ভেস্ট ও একটি পুরাতন হ্যান্ডকাপ পাওয়া গেছে। তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। এ মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে মঙ্গলবার সকালে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, মানব সভ্যতার বিকাশ ও অগ্রযাত্রায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। এটি ছাড়া মানুষের মাঝে ভ্রাতৃত্ব, শান্তি ও উন্নয়ন কোনো কিছুই টেকসই হতে পারে না। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের অন্যতম ভিত্তি।
আজ বিকালে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা পরিষদ
মিলনায়তনে সম্প্রীতি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, একটি দেশের অগ্রগতি নির্ভর করে নাগরিকদের পারস্পরিক ঐক্যের ওপর। সমাজে নানা ধর্ম, বর্ণ, জাতি ও সংস্কৃতির মানুষ একসাথে বাস করে। তাদের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ছাড়া প্রকৃত উন্নয়ন ও মানবিক পরিবেশ গড়ে তোলা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যত দৃঢ় হবে, জাতীয় ঐক্য তত শক্তিশালী হবে এবং রাষ্ট্র দ্রুত উন্নতির পথে এগিয়ে যাবে।
জেলা প্রশাসক এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকারের সভাপতিত্বে এতে অন্যান্যের মধ্যে পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেফালিকা ত্রিপুরা, পুলিশ সুপার মো: আরেফিন জুয়েল ও সেনাবাহিনীর জোন কমান্ডার লে. কর্নেল মো. খাদেমুল ইসলাম প্রমুখ বক্তৃতা করেন। এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপদেষ্টার একান্ত সচিব ছাদেক আহমদ উপস্থিত ছিলেন।
খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে এ সভায় উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, সামাজিক ও ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা ও বাঙ্গালী জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করেন।
তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মোঃ মাহফুজ আলমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন ইউনেস্কোর বাংলাদেশ প্রতিনিধি সুসান ভাইজ। মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বিকালে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে এই সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়।
সাক্ষাৎকালে উপদেষ্টা জানান, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশের আলোকে সাংবাদিকতার অধিকার সুরক্ষা অধ্যাদেশ প্রণয়নের লক্ষ্যে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় কাজ করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গণমাধ্যমের ভূমিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই নির্বাচনে গণমাধ্যম যাতে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে, সেজন্য সরকারের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করা হবে। বর্তমানে গণমাধ্যমের ওপর সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ নেই উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, সরকার গণমাধ্যমের কাছ থেকে নিরপেক্ষ ও দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রত্যাশা করে।
সাক্ষাৎকালে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের কার্যক্রম, সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণ প্রদানে মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ, গুজব ও অপপ্রচার প্রতিরোধে করণীয় প্রভৃতি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। এ সময় ইউনেস্কো বাংলাদেশের সংস্কৃতি শাখার প্রধান কিজি তাহনিন উপস্থিত ছিলেন।
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে জাতীয় নীতি প্রতিযোগিতার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চ্যাপ্টারের চূড়ান্ত পর্ব আজ ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ সোমবার নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ‘রাজনীতিতে তরুণদের অংশগ্রহণ ও গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক চূড়ান্ত পর্বে চ্যাম্পিয়ন হয় ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ)-এর টিম। প্রথম রানার্স আপ হয় লোক প্রশাসন বিভাগের টিম ও দ্বিতীয় রানার্স আপ হয় অপরাধবিজ্ঞান ও অর্থনীতি বিভাগের যৌথ টিম।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মাহবুব-উল-আলম, ডাকসুর কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এইচ এম মোশাররফ হোসেন, প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমদ, প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ, ডাকসুর ভিপি মো. আবু সাদিক (সাদিক কায়েম) এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব শেখ মো. যোবায়ের হোসেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চ্যাপ্টারের আহ্বায়ক ও সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. রবিউল ইসলাম।
প্রতিযোগিতায় সহযোগী হিসেবে ছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবেশ সংসদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটি ও গ্রীন ফিউচার ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ।
প্রথম রাউন্ডে ৪০টি নীতি উপস্থাপন করা হয়। সেখান থেকে ১০টি টিম দ্বিতীয় রাউন্ডে এবং পরবর্তীতে ৫টি টিম ফাইনালে ওঠে। চূড়ান্ত পর্বে চ্যাম্পিয়ন হয় ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ)-এর টিম (অদিতি শাওয়াল নূর, ইত্তেসাফ রহমান ও আলিফ বিন হাসান)। প্রথম রানার্স আপ হয় লোক প্রশাসন বিভাগের টিম (মো. মাহতাবুল ইসলাম মাহিন, সাকিবুল বাশার ও মায়েশা মমতাজ)। দ্বিতীয় রানার্স আপ হয় অপরাধবিজ্ঞান ও অর্থনীতি বিভাগের যৌথ টিম (জারিন তাসনিম, হুমায়রা তাবাসসুম জারিন ও আমিরাস সালেহীন হা-মীম)। এছাড়া ফাইনালে অংশ নেয় প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের টিম এবং ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি স্টাডিজ ও জাপানিজ স্টাডিজের যৌথ টিম।
বিজয়ীদের হাতে ক্রেস্ট, মেডেল ও আর্থিক পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। চ্যাম্পিয়ন দলকে ৪৫ হাজার টাকা, প্রথম রানার্স আপকে ৩০ হাজার টাকা এবং দ্বিতীয় রানার্স আপকে ১৫ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হয়। চ্যাম্পিয়ন দল জাতীয় পর্যায়ে প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে।
জুরি বোর্ডে ছিলেন-বিজয় ৭১ হলের প্রভোস্ট ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. স. ম. আলী রেজা, নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এস এম আরিফ মাহমুদ, শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন সিদ্দিকী এবং রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও সহকারী প্রক্টর ড. এ কে এম নূর আলম সিদ্দিকী।
অনুষ্ঠানে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান বলেন, বর্তমানে নীতি প্রণয়নে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ জরুরি হয়ে পড়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিন কেন্দ্রীভূত ধারা বজায় থাকার কারণে অনেকে মনে করেন, নীতি নির্ধারণ কেবল সরকারের কাজ। তিনি বলেন, নীতি নিয়ে আলোচনার সুযোগ এলে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে হবে।
উপাচার্য শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, দেশের প্রয়োজনে জাতীয় নীতি সম্পর্কে জানা ও কাজ করা অত্যন্ত জরুরি। বিভাজনের দলান্ধ রাজনীতি সমাজে অস্থিরতা তৈরি করছে। নানা কারণে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা এই আলাপ থেকে দূরে থাকতে চাইছেন, যা দেশের জন্য ক্ষতিকর।
জুলাই আন্দোলনে তরুণদের ভূমিকার কথা স্মরণ করে উপাচার্য দেশের সব ক্ষেত্রে তরুণদের নেতৃত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান।
উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান আরও বলেন, বিভাজনের রাজনীতি প্রতিষ্ঠানগুলোকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে সমন্বিত অগ্রযাত্রার দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) দলীয় প্রতীক হিসেবে ‘শাপলা’ পাচ্ছে না। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তালিকা থেকে তাদের বিকল্প প্রতীক নিতে হবে বলে জানিয়েছেন ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ।
মঙ্গলবার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান তিনি।
আইন মন্ত্রণালয় থেকে প্রতীকের তালিকা ভেটিং হয়ে এসেছে। সেই তালিকায় শাপলা প্রতীক নেই, ইসি সচিব জানান।
এ বছর জুলাইয়ে নির্বাচনী প্রতীক হিসেবে ‘শাপলা’কে বিধিমালার তপশিলভুক্ত না করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় ইসি। এর আগে গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী তরুণদের গড়া রাজনৈতিক দল এনসিপি নিবন্ধনের জন্য ইসিতে আবেদন করে এবং প্রতীক হিসেবে ‘শাপলা’ চায়। এনসিপির আবেদনে পছন্দের প্রতীকের তালিকায় শাপলা ছাড়াও ‘কলম’ ও ‘মোবাইল ফোন’ রাখা হয়েছে।
৯ জুলাই নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ জানান, শাপলাকে নির্বাচনী প্রতীক হিসেবে তফসিলভুক্ত করা হবে না মর্মে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। তিনি বলেন, অতীতেও কোনো কোনো দল শাপলা প্রতীক চেয়েছিল, কিন্তু দেওয়া হয়নি। জাতীয় প্রতীক ও জাতীয় পতাকার সম্মান রক্ষার্থে আইন আছে। তবে জাতীয় ফুল বা ফলের বিষয়ে আইন করা হয়নি। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে শাপলাকে নির্বাচনী প্রতীক হিসেবে তপশিলভুক্ত না করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে সরকার ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে।
সোমবার নিউইয়র্কে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক বিশেষ দূত এবং ভারতের জন্য মনোনীত রাষ্ট্রদূত সার্জিও গোরের সঙ্গে বৈঠককালে তিনি এ কথা বলেন।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ। দেশ এ জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত।’
বৈঠকে সার্জিও গোর প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বের প্রশংসা এবং যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের প্রতি সহায়তা অব্যাহত রাখবে বলে প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
বৈঠকে বাণিজ্য, দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা, সার্ক পুনরুজ্জীবন, রোহিঙ্গা সংকট এবং ঢাকাকে লক্ষ্য করে পরিচালিত ভ্রান্ত তথ্য প্রচারসহ দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক নানা ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়।
প্রধান উপদেষ্টা কক্সবাজারে বসবাসরত ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত সহযোগিতা কামনা করেন। জবাবে মার্কিন কর্মকর্তারা রোহিঙ্গাদের জন্য জীবনরক্ষাকারী সহায়তা বজায় রাখার আশ্বাস দেন।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, সার্ক প্রায় এক দশকেরও বেশি সময় ধরে সম্মেলন আয়োজন করতে পারেনি। অন্তর্বর্তী সরকার এ সংস্থাকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অর্থনীতির সঙ্গে সংযুক্তি বাংলাদেশের উন্নয়নকে বহুগুণে এগিয়ে নিতে পারে। এ জন্য বাংলাদেশ আসিয়ানে যোগদানের আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
এছাড়া তিনি নেপাল, ভুটান এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি রাজ্যের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি বলেন, ‘আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়ানোর মাধ্যমে আমরা আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দ্রুততর করতে পারব।’
বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টা সার্জিও গোরকে সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সফরসঙ্গী জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেনের ওপর নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ডিম নিক্ষেপ করা হয়েছে। এ অভিযোগে মিজানুর রহমান চৌধুরী নামের একজন আওয়ামী লীগ কর্মীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। স্থানীয় সময় সোমবার রাতে জ্যাকসন হাইটস এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আরও বেশ কয়েকজনকে পুলিশ খুঁজছে। তাদের বাড়িতেও তল্লাশি চালানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় সময় সোমবার বিকেল ৩টা ১০ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টাসহ প্রতিনিধি দলের সদস্যদের বহনকারী এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইট জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ৮ নম্বর টার্মিনালে অবতরণ করে। এ সময় টার্মিনালের বাইরের পার্কিং লটে প্রচুর সংখ্যক যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী বিক্ষোভ প্রদর্শনসহ বিভিন্ন স্লোগান দেন। প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গীরা টার্মিনাল থেকে বর হয়ে গাড়িতে ওঠার সময় আওয়ামী লীগের কর্মীরা আখতার হোসেনকে লক্ষ্য করে ডিম ছুড়ে মারে। এ ঘটনার প্রায় ৬ ঘণ্টা পর জ্যাকসন হাইটস এলাকা থেকে আওয়ামী লীগ কর্মী মিজানুর রহমান চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের আগমনে দুপুর থেকেই নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিক্ষোভ প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জড়ো হন। প্রধান উপদেষ্টাসহ বিএনপির মহাসচিকে স্বাগর জানাতে আনন্দ সমাবেশ করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। উভয় দলের নেতাকর্মীরা মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন। উভয় দলের কর্মীদের হাতে ছিলে নানা রঙের ব্যানার ও ফেস্টুন। চরম উত্তেজন বিরাজ করতে থাকে উভয় দলের নেতাকর্মীদের মাঝে। ফ্লাইটটি আট নম্বর টার্মিনালে অবতরণের আগেই বাইরে পক্ষে-বিপক্ষে বিভিন্ন স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে গোটা টার্মিনাল এলাকা। দুপুর থেকেই জেএফকে বিমাবন্দরে জড়ো হন প্রধান উপদেষ্টাকে বরণ করতে আসা যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি ও বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। তারা নানা ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন। টার্মিনালের আরেক পাশে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনগুলো প্রতিরোধের লক্ষ্যে প্রতিবাদসহ বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।
নতুন পাঁচটি ভ্রাম্যমাণ টয়লেট (ভিআইপি) পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিতে চীন যাচ্ছেন স্থানীয় সরকার বিভাগের তিন কর্মকর্তা।স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম সচিব মাহবুবা আইরিনের সই করা এক সরকারি আদেশে (জিও) তাদের এ বিদেশ ভ্রমণের অনুমতি দেওয়া হয়।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর জারি করা ওই সরকারি আদেশে বলা হয়, স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. ফারুক হোসেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ নুরুজ্জামান ও উপসহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ জাকির হোসেন এ প্রশিক্ষণের জন্য চীন সফরে যাবেন।
আগামী ২৭ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর কিংবা ছুটি শুরুর তারিখ থেকে সাত দিনের জন্য তারা বিদেশ ভ্রমণের অনুমতি পেয়েছেন।
সরকারি আদেশে আরো বলা হয়েছে, কর্মকর্তারা পাঁচটি নতুন মোবাইল টয়লেট (ভিআইপি) সরবরাহের বিপরীতে তারা সেগুলো পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ বিষয়ে প্রশিক্ষণে অংশ নেবেন। তাদের এ ভ্রমণকে দায়িত্বের অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হবে এবং সব ধরনের ব্যয় বহন করবে উৎপাদক প্রতিষ্ঠান শ্যাংডং কিউয়ানবাই ইন্টেলিজেন্ট ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেড।
ব্যবসায়ীদের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে সয়াবিন ও পাম তেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তবে কত বাড়ানো হবে, সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠক শেষে কোনো মন্তব্য করেননি বাণিজ্য উপদেষ্টা।
বৈঠক শেষে বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ানোর যে প্রস্তাব দিয়েছে তা আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় অনেক বেশি। আমরা পর্যালোচনা করছি। তারপর তাদের সঙ্গে আবার করে ভোজ্যতেলের দাম কত বাড়ানো হবে, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন সয়াবিন ও পাম তেলের দাম লিটারে ১০ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। কারণ হিসেবে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন সয়াবিন তেলের দাম ১ হাজার ২০০ ডলার পর্যন্ত হয়েছে। এই তথ্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন।
গত ১৩ এপ্রিল প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১৮৯ টাকা এবং পাম তেলের দাম ১৬৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
এদিকে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন ভোজ্য তেলের দাম যৌক্তিক হারে বৃদ্ধির বিষয়ে কাজ করছে বলে জানা গেছে।