উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান (দায়িত্ব, কর্তব্য ও আর্থিক সুবিধা) বিধিমালায় মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানদের দায়িত্বের বিষয়ে স্পষ্ট করে বলা আছে, ‘একাধিক স্থায়ী কমিটির সভাপতি হতে পারবেন; চেয়ারম্যানের পদ শূন্য হলে অস্থায়ী চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন তারা।’
বিধিমালায় এমন ক্ষমতা দেয়া থাকলেও তৃণমূলের নারী জনপ্রতিনিধিদের বাস্তব অবস্থার প্রতিধ্বনি শোনা গেল রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রোকেয়া বেগমের কণ্ঠে। চার বছর হলো নির্বাচিত হয়েছেন; অথচ এখন পর্যন্ত উপজেলা পরিষদে বসার একটা জায়গাও পাননি তিনি। তার অভিযোগ, স্থানীয় সংসদ সদস্যই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন, তাই এতদিন কোনো কাজও জোটেনি। জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাননি এই নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি।
নিজের পদ নিয়ে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মাছুমা আক্তারের কণ্ঠেও ফুটে উঠল আক্ষেপ- ‘আসলে এই পোস্ট তৈরির কোনো মানে হয় না। এটি শুভঙ্করের ফাঁকি! মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের কোনো স্বাক্ষর ক্ষমতা নেই। সামান্য পরিমাণ ভাতা দেয়া হয়। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমাদের দাওয়াত দেয়া হলেও গাড়ি সুবিধা না থাকায় যেতে পারি না। বরাদ্দ না থাকায় অনুষ্ঠানে গিয়েও কিছু দিতে পারি না। অথচ তারাই আমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন।’
এ রকম নানা অভিযোগ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের নারী জনপ্রতিনিধিদের। তারা বলছেন, আইন ও বিধিমালায় নারী জনপ্রতিনিধিদের কাজের পরিধি নির্ধারণ করা আছে। এর পরও দেশের বেশির ভাগ নারী জনপ্রতিনিধির আসলে কোনো কাজ নেই, দাপ্তরিক কাজে আনুষ্ঠানিক মতামত দেয়া ছাড়া। এ নিয়ে আপত্তি জানালেও কোনো সমাধান হয়নি। ফলে আইনে নারী জনপ্রতিনিধিদের বেশ কিছু ক্ষমতা দেয়া থাকলেও তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। একই অবস্থা স্থানীয় সরকারব্যবস্থার আওতাভুক্ত ইউনিয়ন পরিষদগুলোতেও।
নারী জনপ্রতিনিধি কতজন
২০২১ সালে ৪ হাজার ১৩৮টি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এর মধ্যে ৪ হাজার ১১৪টি ইউপিতে ভোট হয়েছে। তবে কতজন নারী জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন, সেই তথ্য কমিশনের কাছে নেই। স্থানীয় সরকার বিভাগেও এ বিষয়ে কোনো তথ্য নেই।
তবে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলছে, অন্তত ৫০টি ইউপিতে নারীরা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এদের মধ্যে ৪১ জন আওয়ামী লীগ, একজন জাতীয় পার্টির এবং অন্যরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে জয়ী হয়েছেন। এর আগে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে ২৬ জন নারী চেয়ারম্যান জয়ী হয়েছিলেন।
উপজেলা পরিষদ আইন, ১৯৯৮ এবং জাতীয় তথ্য বাতায়নে বলা আছে- ‘একজন নির্বাচিত চেয়ারম্যান, একজন পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান, একজন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান, প্রত্যেক ইউপির চেয়ারম্যান ও সংরক্ষিত নারী সদস্যগণ এবং উপজেলার এলাকাভুক্ত পৌরসভা থাকলে তার মেয়রকে নিয়ে উপজেলা পরিষদ গঠিত হবে।
জাতীয় তথ্য বাতায়ন ও স্থানীয় সরকার বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, দেশে এখন উপজেলা আছে ৪৯৫টি আর উপজেলা পরিষদ আছে ৪৯২টি এবং ইউনিয়ন পরিষদ আছে ৪ হাজার ৫৭১টি। কাজেই এসব পরিষদে কমপক্ষে ৪৯২ জন নারী ভাইস চেয়ারম্যান এবং প্রতি ইউপিতে সংরক্ষিত আসনে তিনজন করে মোট ১৩ হাজার ৭১৩ জন নারী ইউপি সদস্য রয়েছেন। এর বাইরে সংরক্ষিত আসন ছাড়াও উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য পদে সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাধ্যমে কতজন নারী জনপ্রতিনিধি হয়েছেন, তার কোনো হিসাব পাওয়া যায়নি। তাই দেশে অন্তত ১৫ হাজার নারী জনপ্রতিনিধি তো আছেনই, সে হিসাব প্রায় স্পষ্ট। কিন্তু দৈনিক বাংলার অনুসন্ধান বলছে, বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতা এই বিপুলসংখ্যক নারী জনপ্রতিনিধিকে বানিয়ে আসলে ‘ঠুঁটো জগন্নাথ’ বানিয়ে বসিয়ে রেখেছে।
অভিযোগ, আক্ষেপ, হতাশা
নারী জনপ্রতিনিধিদের অভিযোগ, স্থানীয় সরকার কাঠামোতে নারীর সংখ্যা বাড়লেও তাদের ক্ষমতায়ন হচ্ছে না। সরকার আইন করে জনপ্রতিনিধিদের কাজ ভাগ করে দিলেও সেটি কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ।
তারা বলছেন, নির্বাচিত হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নারী জনপ্রতিনিধিরা স্থানীয় রাজনীতির নানা সমীকরণ, পুরুষ চেয়ারম্যানদের আধিপত্য ও বাধায় দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। ইউপির সংরক্ষিত নারী সদস্যদের বেশির ভাগই স্বল্পশিক্ষিত হওয়ায় দায়িত্ব পালনে চেয়ারম্যান ও পুরুষ সদস্যদের ওপরই তাদের নির্ভর করতে হয়। আইনের বিধিমালায় থাকা দায়িত্ব সম্পর্কে কিছুই জানেন না সংরক্ষিত আসনের নারী ইউপি সদস্যরা।
ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার ৮ নম্বর বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত আসনের সদস্য নাজমিন নাহার বলেন, ‘নারী সদস্য হিসেবে তেমন কোনো কাজ আমাদের থাকে না। এলাকার মানুষ মেম্বার হিসেবে জানে, সম্মান করে এটাই পাওয়া। ইউনিয়নের সব কাজ চেয়ারম্যান ও পুরুষ সদস্যরাই করেন।’
স্থানীয় সরকারের তৃণমূল পর্যায়ের নারী জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে উপজেলা পরিষদের অন্তত ২০ জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান এবং ইউনিয়ন পরিষদের কয়েকজন মেম্বার-চেয়ারম্যানের অবস্থা নিয়ে অনুসন্ধান চালানো হয় দৈনিক বাংলার পক্ষ থেকে। বিধি অনুযায়ী, ১৭টি স্থায়ী কমিটির কাজ তদারকির দায়িত্বে থাকার কথা উপজেলা নারী ভাইস চেয়ারম্যানদের। দেখা গেছে, এসব কমিটিতে নাম থাকলেও কাজের বিষয়ে তাদের কিছুই জানানো হয় না। টেস্ট রিলিফ (টিআর) ও কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) কর্মসূচির আওতায় উপজেলায় যে বরাদ্দ আসে তার ২০ শতাংশ পায় উপজেলা পরিষদ। এর মধ্যে উপজেলা চেয়ারম্যান ৮ শতাংশ, ইউএনও ৬ শতাংশ এবং দুজন ভাইস চেয়ারম্যান বাকি ৬ শতাংশ বরাদ্দ পান। তবে চেয়ারম্যানের সঙ্গে সুসম্পর্ক না থাকলে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানদের ওই বরাদ্দ দেয়া হয় না বলে অভিযোগ করছেন নারী জনপ্রতিনিধিরা। তারা আরও বলছেন, একই দলের অনুসারী না হলে বিভিন্ন সরকারি বরাদ্দও ঠিকমতো পান না উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানরা।
বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন পরিষদের নারী চেয়ারম্যানদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, নির্বাচিত হওয়ার পরও স্থানীয় রাজনীতিবিদের কারণে তাদের কোণঠাসা হয়ে থাকতে হয়। পরিষদের পুরুষ সদস্যরাও সব সময় সহযোগিতা করেন না। উন্নয়নমূলক কাজে পুরুষ সদস্যদের দেখভালের দায়িত্ব দেয়া হলে বরাদ্দকৃত অর্থের হিসাব ঠিকমতো দেন না। তখন এর দায় চেয়ারম্যানের ওপর বর্তায়।
এদিকে সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্যদের দাবি, তাদের ক্ষমতাও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের ইচ্ছার কাছে জিম্মি। বেশির ভাগ নারী সদস্য স্বল্পশিক্ষিত হওয়ায় নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কেও জানেন না। এই সুযোগে পুরুষ মেম্বাররাও তাদের ওপর ছড়ি ঘোরান। যার কারণে চেয়ারম্যান ও পুরুষ সদস্যদের সব সিদ্ধান্তে সম্মতি দেয়া ছাড়া তাদের কিছু করার থাকে না।
আইন অনুযায়ী কাজ করতে না পেরে হতাশার কথা জানিয়েছেন ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার ১৫ বছর ধরে নির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান রেখা পারভীন। তিনি বলেন, ‘যারা আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন তাদের জন্য কিছুই করতে পারি না। ১৫ বছরে পাঁচটি উন্নয়নমূলক কাজের সঙ্গেও আমি যুক্ত থাকতে পারিনি। নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদ শুধুই অলংকার হিসেবে রাখা হয়েছে।’
আইনে যা আছে
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান (দায়িত্ব, কর্তব্য ও আর্থিক সুবিধা) বিধিমালায় মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্বের বিষয়ে বলা হয়েছে, একাধিক স্থায়ী কমিটির সভাপতি হতে পারবেন; চেয়ারম্যানের পদ শূন্য হলে অস্থায়ী চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন তারা।
এ ছাড়া পরিষদের স্বাস্থ্য, পুষ্টি, পরিবার পরিকল্পনা ও মাতৃমঙ্গল সেবা নিশ্চিতে ব্যবস্থা নেয়া; স্যানিটেশন ও সুপেয় পানীয় জলের সরবরাহের ব্যবস্থা; মহিলা ও শিশুদের উন্নয়নে করণীয় চিহ্নিত; কুটির ও ক্ষুদ্র শিল্প স্থাপন ও বিকাশে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ; আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং দারিদ্র্য বিমোচনে নিজ উদ্যোগে কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন; নারী ও শিশু নির্যাতন, যৌতুক ও বাল্যবিবাহ রোধে জনমত গড়ে তোলা; গবাদিপশু এবং মৎস্যসম্পদের উন্নয়ন; সমবায় সমিতি ও বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের কাজ তদারকি; সমাজকল্যাণমূলক কাজে অংশ নেয়ার বিষয়ে প্রস্তাব ও সুপারিশ দেয়ার বাইরেও সরকার ও চেয়ারম্যান কোনো কাজ দিলে সেগুলো করতে হবে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানদের।
বিধিমালায় ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্যদের ক্ষমতা ও বিশেষ কার্যাবলির বিষয়ে বলা হয়েছে, ওয়ার্ডের সভায় উপস্থিত থেকে তারা উপদেষ্টার কাজ করতে পারবেন। পরিষদের ১৩টির বেশি স্থায়ী কমিটির মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ কমিটির সভাপতি হিসেবে থাকবেন। সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডে বাস্তবায়িত উন্নয়ন প্রকল্প যেমন- টেস্ট রিলিফ (টিআর), কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা), কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা), বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) উন্নয়ন বরাদ্দ, থোক বরাদ্দসহ অন্যান্য প্রকল্প বাস্তবায়নে অন্যূন এক-তৃতীয়াংশ উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি হবেন। তিনজন প্যানেল চেয়ারম্যানের মধ্যে কমপক্ষে একজন সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্যদের মধ্য থেকে হতে পারবেন।
এ ছাড়া সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্যরা পল্লি অবকাঠামো উন্নয়নকাজের তদারকি, মহিলাদের বৃত্তিমূলক ও আয়বর্ধক কর্মসূচির প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা; নারী ও শিশু নির্যাতন এবং যৌতুক ও অ্যাসিড নিক্ষেপ নিরোধ, বাল্যবিবাহ রোধসহ বিবাহ নিবন্ধনের ব্যবস্থা গ্রহণ; গ্রাম আদালতের বিচারক প্যানেলে থাকা, ওয়ার্ডের জনগণের সম্পত্তি সংরক্ষণসহ ২১টি কাজের বিষয়ে বিধিমালায় বলা হয়েছে।
নামেই উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান
উপজেলার নারী উন্নয়ন ফোরামে পদাধিকার বলে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সভাপতি। পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের নারী সদস্যরাও এই ফোরামের সদস্য। নারী জনপ্রতিনিধিদের অভিযোগ, সংসদ সদস্য ও চেয়ারম্যানরা নারী উন্নয়ন ফোরামের বিভিন্ন বরাদ্দ আটকে রাখেন।
তারা আরও অভিযোগ করছেন, ভিজিএফের চাল; মাতৃত্বকালীন, বয়স্ক ও বিধবা ভাতা বরাদ্দেও নারী ভাইস চেয়ারম্যানদের সুপারিশ রাখা হয় না। নারী ভাইস চেয়ারম্যানদের পরিষদের মাসিক সভায় নিয়মিত ডাকা হয় না। অনেক সময় ডাকলেও তাদের কথা আমলে নেয়া হয় না। উপজেলার বার্ষিক উন্নয়ন বাজেটের ৩ শতাংশ নারী উন্নয়ন ফোরামের জন্য বরাদ্দ দেয়ার কথা থাকলেও চেয়ারম্যান তা ছাড় করেন না। প্রত্যন্ত এলাকায় যাতায়াতের জন্য গাড়ি চাইলেও পান না নারী জনপ্রতিনিধিরা। চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানদের অস্থায়ী চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পাওয়ার কথা থাকলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যানকে সেই দায়িত্ব দেয়া হয়।
দল ও ক্ষমতার হাতে জিম্মি
নির্বাচিত হওয়ার পর কোনো কাজ না পেয়ে বেশির ভাগ উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হতাশ। সরকার নারীদের জন্য অলংকারিক হিসেবে এই পদ সৃষ্টি করেছে কি না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। পুরুষ সহকর্মীদের কাছ থেকে সহযোগিতা না পাওয়ার আক্ষেপও ঝরেছে তাদের কণ্ঠে।
রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রোকেয়া বেগম বলেন, ‘পাংশা উপজেলায় সব কাজের নিয়ন্ত্রণ করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য জিল্লুল হাকিম। উপজেলার উন্নয়নমূলক কাজ থেকে শুরু করে সব বরাদ্দ তিনি নিয়ন্ত্রণ করেন। তার কথামতো না চলায় দায়িত্ব নেয়ার প্রায় চার বছর হতে চললেও আমাকে উপজেলা পরিষদের কক্ষ বরাদ্দ দেয়া হয়নি। কক্ষ না থাকায় পরিষদের কেরানির কক্ষে গিয়ে মাঝেমধ্যে বসি। আমি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হলেও জনগণের সেবা করার সুযোগ দেয়া হয় না। কোনো বরাদ্দ এলে সেটিও ঠিকমতো দেয়া হয় না। এভাবেই সময় পার করছি। বাকি সময়টা এভাবেই হয়তো পার হয়ে যাবে।’
ওই জনপ্রতিনিধির অভিযোগের বিষয়ে পাংশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মাদ আলী দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘আমি এখানে দায়িত্ব পাওয়ার আগে থেকেই তিনি উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান। আগে থেকে উনি যেই কক্ষে বসতেন, এখনো সেভাবেই আছেন বলে জানি। উপজেলায় নতুন ভবন হওয়ার পর ওইভাবে কারও নামে কক্ষ বরাদ্দ দেয়া হয়নি। আর অন্যান্য বরাদ্দ না পাওয়ার বিষয়টি সত্য নয়। উপজেলার সব বরাদ্দই জনপ্রতিনিধিরা পেয়ে থাকেন।’
এমপি জিল্লুল হাকিমকে সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) কয়েকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) একাধিকবার কল দেয়া হলে প্রতিবারই তিনি কেটে দেন।
নারী বলেই পাত্তা মেলে না!
বোয়ালমারী উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রেখা পারভীন বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান হজে যাওয়ার পর এক মাসের জন্য চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ওই সময় নিয়মিত কাজে স্বাক্ষর করা ছাড়া অন্য কিছু করতে পারেননি।
কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আছমা আক্তার বলেন, ‘সম্প্রতি ছয় মাস মেয়াদি মাতৃত্বকালীন ভাতা এসেছে ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে। প্রতি ইউনিয়ন গড়ে ২০০ থেকে ২৫০টি করে কার্ড চেয়ারম্যানরা পেয়েছেন। আমি একজন গর্ভবতী মায়ের সব কাগজপত্রসহ ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে পাঠিয়েছি। কিন্তু তিনি সেটি মানেননি।’
আছমা আক্তার বলেন, ‘সব ইউনিয়নে আর্সেনিকমুক্ত টিউবওয়েল বসানোর প্রকল্পে ভাইস চেয়ারম্যানদের দায়িত্বে থাকার কথা। কিন্তু আমাদের না জানিয়েই চেয়ারম্যান এই প্রকল্পের নিলাম করেছেন। কোনো কাজ আমরা পাব কি না, তা চেয়ারম্যান ও সংসদ সদস্যের মর্জির ওপর নির্ভর করে।’
করিমগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান নাসিরুল ইসলাম খান নিজেই কাজ করতে না পারার কথা জানান। তিনি বলেন, ‘উপজেলার সব কাজ সংসদ সদস্য করেন। পরিষদে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান পদ রাখার কোনো প্রয়োজনীয়তা দেখি না। চেয়ারম্যান হিসেবে রুটিন দায়িত্ব পালন ছাড়া আমারই তেমন কোনো কাজ নেই, সেখানে ভাইস চেয়ারম্যানদের কাজ তো আরও কম।’
চেয়ারম্যানের কাজ করে দেন স্বামী
অনুসন্ধানে দেখা যায়, ইউপিতে নির্বাচিত নারী চেয়ারম্যানদের অনেকেরই বাবা বা স্বামী চেয়ারম্যান ছিলেন। সেই ধারাবাহিকতায় নির্বাচিত হলেও নারী হওয়ায় কাজ করতে গিয়ে নানা বাধার মুখে পড়ছেন তারা। সব কাজে সব সময় নারী চেয়ারম্যানরা উপস্থিত থাকতে না পারায় কারও কারও স্বামী অলিখিত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।
মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয়ী হয়েছেন মৌসুমী হক সুলতানা। কিন্তু উন্নয়ন প্রকল্প, টিআর, কাবিখা, বয়স্ক ও বিধবা ভাতা, ভিজিএফের চাল বিতরণসহ বেশির ভাগ কাজ দেখভাল করেন তার স্বামী সাবেক চেয়ারম্যান ফজলুল হক ব্যাপারী। মামলায় জড়িয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারলেও স্ত্রীর হয়েই চেয়ারম্যানের দায়িত্ব চালিয়ে নিচ্ছেন তিনি। ইউনিয়ন পরিষদে শুধু দাপ্তরিক কাজ করেন মৌসুমী হক।
ওই ইউনিয়নের বাসিন্দা রাকিব হোসেন বলেন, মৌসুমী হক এখানকার নামেমাত্র চেয়ারম্যান। অফিসের কাগজপত্রে স্বাক্ষর করা ছাড়া তার কোনো কাজ নেই। সব কাজ তার স্বামী করে। এলাকার গ্রুপভিত্তিক রাজনীতিও তিনিই নিয়ন্ত্রণ করেন।
জানতে চাইলে ফজলুল হক ব্যাপারী বলেন, ‘সরকারি দায়িত্ব তো আমার পালন করার সুযোগ নেই। বড় ইউনিয়ন হিসেবে এলাকায় বিভিন্ন ধরনের ঝামেলা তৈরি হয়। তখন সেগুলো আমি মীমাংসা করে দিই। মহিলা মানুষ হিসেবে সে এসব সমস্যার সমাধান করতে পারে না। চেয়ারম্যান হিসেবে সরকারি মিটিং-সমাবেশ করে। আমি টিআর, কাবিখার কাজগুলো করি। আমার স্ত্রীর সুনাম হলে তো আমারও সুনাম হয়। সে কারণে আমি তাকে সহযোগিতা করি।’
সব সময় এলাকায় থাকতে পারেন না জানিয়ে মৌসুমী হক সুলতানা বলেন, ‘ওই সময় আমার স্বামী কিছু কাজ করেন। আমরা দুজনে সমন্বয় করেই কাজ করি।’
পদে পদে বাধা
সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়ন পরিষদে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন সাফিয়া পারভীন। গত এক বছর দায়িত্ব পালনে সরকারদলীয় স্থানীয় রাজনীতিকদের বাধার মুখে পড়েছেন বলে জানান তিনি। উন্নয়নকাজ নিয়ে তার এলাকার হোসাইন নামে এক ব্যক্তি দুদকে অভিযোগ দিয়েছেন বলে জানান তিনি। কিন্তু দুর্নীতির কোনো প্রমাণ না পাওয়ায় অভিযোগকারীকে সতর্ক করে তদন্ত শেষ করেছেন তদন্তকারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা।
সাফিয়া পারভীন বলেন, নারী হিসেবে জনপ্রতিনিধি হওয়াটাই অনেক চ্যালেঞ্জের। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে জয়ী হওয়ার পরও দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নানা বাধায় পড়তে হয়।
কী বলছে কর্তৃপক্ষ
নারী জনপ্রতিনিধিদের কাজে বাধার বিষয়ে জানতে চাইলে ৭ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচিত হওয়ার পর নির্বাচন কমিশনের আর কোনো কাজ থাকে না। এ বিষয় দেখবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এসব নির্বাচন কমিশনের ম্যান্ডেটের মধ্যে পড়ে না।’
এই বিষয়ে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম গত মঙ্গলবার মুঠোফোনে দৈনিক বাংলাকে বলেন, একটা সময় ছিল যখন দেশের কোথাও নারীর অংশগ্রহণ ছিল না। কিন্তু এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে সচিব থেকে শুরু করে সব পর্যায়ে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে। নারী জনপ্রতিনিধিদের কাজের বিষয়ে বিস্তারিত আইন ও বিধিমালায় বলা আছে। ওনারা সেভাবেই কার্যক্রম করেন। তবে সময়ের ব্যবধানে আইনের আওতায় নারীদের আরও সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো যায় কি না, সেটি নিয়ে ভাবনার সুযোগ রয়েছে।’
সেনাবাহিনীর কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে গুমের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন মিলিটারি অপারেশনস ডিরেক্টরেটের কর্নেল স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘যখন সেনা সদস্যরা ডেপুটেশনে(অন্য বিভাগে ন্যস্ত) থাকেন, তখন তাদের উপর আমাদের সরাসরি নিয়ন্ত্রণ থাকে না। তবে তদন্ত চলছে। যদি কেউ গুমের সঙ্গে জড়িত থাকেন এবং তা প্রমাণিত হয়—তাহলে সেনাবাহিনী ব্যবস্থা নেবে।’
আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা সেনানিবাসে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আগামী সাধারণ নির্বাচনের আগে সেনাবাহিনী দেশে স্থিতিশীল পরিস্থিতি নিশ্চিত করতে কাজ করছে।
কর্নেল শফিকুল বলেন, লুট হওয়া অস্ত্রের ৮০ শতাংশ ইতোমধ্যেই উদ্ধার করা হয়েছে। বাকী অস্ত্রগুলোও শিগগিরই উদ্ধার করা হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, লুট হওয়া প্রায় ১২ হাজার অস্ত্রের মধ্যে এখন পর্যন্ত প্রায় ৯ হাজার উদ্ধার করা হয়েছে।
সেনা কর্মকর্তা আরও জানান, গত বছরের জুলাই মাসের আন্দোলনে আহত ৪ হাজার ৭৯০ জন সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসা নিয়েছেন। এখনো ঢাকার সিএমএইচে ২২ জন রোগী চিকিৎসাধীন।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আগের সময়ের তুলনায় উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। শান্তি বজায় রাখার প্রচেষ্টায় সহায়তা করতে সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে বলে জানান তিনি।
সরকার আসন্ন জুলাই মাস উপলক্ষে নেওয়া কর্মসূচির অংশ হিসেবে পূর্বে ঘোষিত প্রতীকী ‘এক মিনিট ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট’ কর্মসূচি বাতিল করেছে বলে জানিয়েছেন সংস্কৃতিক বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) নিজের ভ্যারিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে ফারুকী এই সিদ্ধান্তের কথা প্রকাশ করেন। বলেন, এই নির্দিষ্ট উদ্যোগটি নিয়ে শুরু থেকেই অভ্যন্তরীণ বিতর্ক ছিল।
তিনি লিখেছেন, ‘জুলাই স্মরণে অনুষ্ঠানের একটা কর্মসূচি নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা পর্যায় থেকেই দ্বিধা ছিল। একটা মাত্র কর্মসূচিই আমরা কয়েকবার কেটেছি, আবার যুক্ত হয়েছে। আমরা অনেকেই একমত ছিলাম ‘এক মিনিট ইন্টারনেট ব্ল্যাক আউট’ গ্রেট আইডিয়া না সম্ভবত।’
তিনি আরও বলেন, পরে আবার নানা আলোচনায় এটা ঢুকে পড়ে কর্মসূচিতে। অনেক বড় কর্মসূচি এবং বড় একটা দল কাজ করলে এরকম দুয়েকটা ভুল চোখের আড়ালে থেকে যায়।
ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট ধারণার বিষয়ে জনসাধারণের প্রতিক্রিয়ার জন্য কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেছেন উপদেষ্টা।
জনগণ কর্মসূচি নিয়ে মতামত দেওয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা কৃতজ্ঞ আপনাদের কাছে, সেই কর্মসূচি নিয়ে আপনাদের মতামত জানানোর জন্য।’
তিনি আরও বলেন, আপনাদের অবগতির জন্য জানাচ্ছি, আমরা নিজেদের মধ্যে দ্রুত সভা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি- এক মিনিট প্রতীকী ইন্টারনেট ব্ল্যাক আউট কর্মসূচি থাকছে না। সংশোধিত স্লাইড শেয়ার করে হচ্ছে।
ফারুকী লিখেছেন, ‘অন্যান্য সমস্ত কর্মসূচি অপরিবর্তিত থাকবে। আসুন পুনরায় সংযোগ স্থাপন করি, পুনর্গঠন করি এবং জুলাইয়ের আসল চেতনাকে পুনরুজ্জীবিত করি।’
চলতি অর্থবছরের শুরুতে দেশের বিভিন্ন গুদামে চাল ও গমের মজুদ রয়েছে ১৭.৬৪ লাখ মেট্রিক টন, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় তিন লাখ টন বেশি।
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এমন তথ্য দেওয়া হয়েছে।
সরকারি মজুদ, সংগ্রহ ও বিতরণ পরিস্থিতি সম্পর্কে খাদ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত বছরের ১ জুলাই দেশে চাল ও গমের মোট মজুদ ছিল ১৪.৭৩ লাখ টন। এর মধ্যে চালের মজুদ ছিল ১০.৬০ লাখ টন এবং গমের মজুদ ছিল ৪.১৩ লাখ টন।
নতুন অর্থবছরের শুরুতে চালের মজুদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫.৪১ লাখ টনে।
অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সংগৃহীত ও আমদানিকৃত গমের মোট সংগ্রহের তুলনায় বিতরণ বেশি হওয়ায় গমের মজুদ কমে দাঁড়িয়েছে ২.২৩ লাখ মেট্রিক টনে।
রাষ্ট্র সংস্কারের বিভিন্ন বিষয়ে একমত হয়ে জুলাই সনদ তৈরির লক্ষ্যে আজ দ্বিতীয় দফার নবম দিনের মত দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
আজ (বৃহস্পতিবার) সকাল এগারোটায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে এ আলোচনার আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়।
আলোচনায় সভাপতিত্ব করছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ।
এছাড়া, কমিশনের সদস্য হিসেবে উপস্থিত রয়েছেন-বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. মো. আইয়ুব মিয়া ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আজকের আলোচনায় অংশ গ্রহণ করছে- বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টিসহ ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, আজকের আলোচনায় পূর্বের অমীমাংসিত বিষয়ে অধিকতর আলোচনা হওয়ার পাশাপাশি বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শন ও জরুরি অবস্থা ঘোষণা- এই তিনটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।
আজ আলোচনার শুরুতে সূচনা বক্তব্য দেওয়ার সময় কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ বলেন, আমরা কি পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে, অন্যদের কি পরিমাণ আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে আজকের এ পর্যায়ে এসেছি সেটা আমাদের প্রত্যেকেরই স্মরণ রাখতে হবে। হাজারো মানুষের আত্মত্যাগই যেন হয় আমাদের দিক নির্দেশক।
তিনি আরো বলেন, ৫৩ বছরে রাষ্ট্র গঠনের এমন সুযোগ আর আসেনি। অনেক অন্যায় অত্যাচার ও নিপীড়নের মধ্য দিয়ে এ সুযোগটা আমরা পেয়েছি, এ সুযোগ হেলায় হারানো যাবে না।
এর আগে, গতকাল (বুধবার) কমিশনের অষ্টম বৈঠক শুরুর প্রথমে প্রারম্ভিক বক্তব্যে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, আলোচনা ইতিবাচকভাবে অগ্রসর হচ্ছে এবং এভাবে আলোচনা অগ্রসর হলে এ মাসের মাঝামাঝি বা ৩য় সপ্তাহের মধ্যেই জুলাই সনদ ঘোষণা করা সম্ভব হবে।
মুসলিম বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশ ও মরক্কোর নেতৃত্বমূলক ভূমিকা জোরদারে পারস্পরিক ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার ভেরিফাইড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে এ কথা বলা হয়েছে।
পোস্টে আরও বলা হয়েছে, 'মরক্কো সফররত বাংলাদেশের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও মরক্কোর জাতীয় শিক্ষা, প্রাক-প্রাথমিক ও ক্রীড়া বিষয়ক মন্ত্রী মোহাম্মদ সাদ বেরাদা-র মধ্যে গতকাল মরক্কোর রাজধানী রাবাতে এক দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।'
'বৈঠকের শুরুতে মরক্কোর মন্ত্রী মোহাম্মদ সাদ বেরাদা দেশটির সমন্বিত শিক্ষা ও ক্রীড়া কাঠামো তুলে ধরেন।
তিনি বিশেষভাবে মরক্কোর "স্টাডি অ্যান্ড স্পোর্টস" মডেলের উল্লেখ করেন, যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঝরে পড়ার হার কমাতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। এছাড়া প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার বিস্তারে নেওয়া নীতিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগের বিষয়েও তিনি আলোকপাত করেন।'
যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা মরক্কোর বাদশাহ মোহাম্মেদ ষষ্ঠ-এর দূরদর্শী নেতৃত্বের প্রশংসা করেন এবং মরক্কোর শিক্ষা ও ক্রীড়াক্ষেত্রে অর্জিত অগ্রগতির জন্য অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, “মরক্কোর শিক্ষা ও ক্রীড়ার সমন্বিত মডেল একটি রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।”
উপদেষ্টা প্রযুক্তিগত সহায়তা, প্রশিক্ষণ এবং অভিজ্ঞতা বিনিময়ভিত্তিক ক্রীড়া সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রস্তাব দেন এবং মুসলিম বিশ্বের মধ্যে দুই দেশের নেতৃত্বমূলক ভূমিকা জোরদারে পারস্পরিক ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর আহ্বান জানান। তিনি বাংলাদেশ ও মরক্কোর জাতীয় ফুটবল দলের মধ্যে একটি প্রীতি ম্যাচ আয়োজনের প্রস্তাব করেন এবং ২০২৫ সালে অনুষ্ঠেয় "গ্লোবাল ইয়ুথ সামিট"-এ মোহাম্মদ সাদ বেরাদাকে আমন্ত্রণ জানান।
মরক্কোর মন্ত্রী বাংলাদেশের শিক্ষা ও যুব উন্নয়নে সাম্প্রতিক অর্জনের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, মরক্কো প্রি-স্কুল কার্যক্রমে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে এবং ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় ক্লাসরুমকে আরও আনন্দদায়ক ও শিক্ষণ উপযোগী করে তুলতে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। বর্তমানে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক তথ্য একটি ডেটাবেইজে সংরক্ষিত হচ্ছে, যা দেশটির নীতিনির্ধারণে সহায়ক ভূমিকা রাখছে।
উভয়পক্ষই আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, এই বৈঠক শিক্ষা ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে বাংলাদেশ-মরক্কো সহযোগিতাকে আরও শক্তিশালী করবে এবং ভবিষ্যতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও গভীর ও ফলপ্রসূ হবে।
জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ঋণের প্রায় ২৭১ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও আলোচিত পিকে হালদারসহ ১৫ জনকে আসামি করে পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
গতকাল বুধবার রাজধানীর সেগুন বাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন ব্রিফিংয়ে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলাগুলো দায়ের করা হয়েছে বলে এতে জানানো হয়।
দুদক জানায়, প্রতিটি মামলায় ১৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। তিনটি মামলায় মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও আলোচিত পিকে হালদারসহ অধিকাংশকে কমন আসামি করা হয়েছে।
প্রথম মামলায় ৯৪ কোটি ৬৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও ৩২ কোটি ৫০ লাখ টাকার মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলমসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দুদক। মামলার এজাহারে রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেড (বর্তমানে আভিভা ফাইন্যান্স) থেকে জাল কাগজপত্রের ভিত্তিতে একটি নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান মেসার্স মোস্তফা অ্যান্ড কোম্পানির নামে ৩২.৫০ কোটি টাকার মেয়াদি ঋণ অনুমোদন ও বিতরণ করা হয়। পরে সেই টাকা কয়েক ধাপে স্থানান্তর হয়ে এস আলম গ্রুপের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এস আলম সুপার এডিবল অয়েল লিমিটেডে চলে যায়।
এই মামলার আসামিরা হলেন—এস আলম গ্রুপের সাবেক চেয়ারম্যান ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেড সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম, এম আলম গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সামাদ, পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ হাসান, পরিচালক শাহানা ফেরদৌস, রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পিকে হালদার, রিলায়েন্স ফাইন্যান্সের সাবেক ইভিপি ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা বিভাগ প্রধান রাশেদুল হক, একই প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার ও করপোরেট ফাইন্যান্স বিভাগ প্রধান নাহিদা রুনাই, এসভিপি ও মেম্বার, ক্রেডিট কমিটি, রিলায়েন্স ফাইন্যান্স কাজী আহমেদ জামাল, সাবেক ডেপুটি ম্যানেজার, জুমারাতুল বান্না এবং মারিন ভেজিটেবল অয়েলস লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহির আহমেদ, পরিচালক টিপু সুলতান, মো. ইসহাক ও মেসার্স মোস্তফা অ্যান্ড কোম্পানির মালিক মো. গোলাম মোস্তাফা।
দ্বিতীয় মামলায় নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান মেসার্স এ এম ট্রেডিংয়ের নামে জালিয়াতির মাধ্যমে ১০৪ কোটি ২০ লাখ টাকা ঋণ গ্রহণ ও ৩৪ কোটি টাকা মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলমসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
এজাহারে বলা হয়েছে, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে অপরাধমূলক অসদাচরণ ও বিশ্বাসভঙ্গ করে নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের নামে জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ঋণপ্রস্তাব প্রস্তুত এবং ঋণ অনুমোদন, ঋণ প্রদান এবং ঋণের নামে ১০৪ কোটি ২০ লাখ ৭৭ হাজার ৭০৮ টাকা আত্মসাৎ ও ৩৪ কোটি টাকা এস আলম সুপার এডিবল অয়েল নামে প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তর/রূপান্তর/হস্তান্তর করা হয়েছে।
এই মামলার আসামিরা হলেন—এস আলম গ্রুপের সাবেক চেয়ারম্যান ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেড সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম, এম আলম গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সামাদ, পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ হাসান, পরিচালক শাহানা ফেরদৌস, রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পিকে হালদার, রিলায়েন্স ফাইন্যান্সের সাবেক ইভিপি ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা বিভাগ প্রধান রাশেদুল হক, একই প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার ও করপোরেট ফাইন্যান্স বিভাগ প্রধান নাহিদা রুনাই, এসভিপি ও মেম্বার, ক্রেডিট কমিটি, রিলায়েন্স ফাইন্যান্স কাজী আহমেদ জামাল, সাবেক ডেপুটি ম্যানেজার, জুমারাতুল বান্না এবং মারিন ভেজিটেবল অয়েলস লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহির আহমেদ, পরিচালক টিপু সুলতান, মো. ইসহাক ও মেসার্স মেসার্স এ এম ট্রেডিংয়ের মালিক আলহাজ্ব কবির আহম্মদ।
এদিকে নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান মেসার্স সাইফুল অ্যান্ড কোম্পানির নামে ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে ৭১ কোটি ৫১ লাখ টাকার ঋণ ও ২৪ কোটি টাকার মানিলন্ডারিংয়ের অপরাধে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলমসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।
ওই মামলার এজাহার বলা হয়, এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম, রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের কর্মকর্তা এবং মেসার্স সাইফুল অ্যান্ড কোম্পানির মালিক সাইফুল ইসলামের সঙ্গে যোগসাজশে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে ২০১৩ সালের ৩ অক্টোবর তারিখে মেয়াদি ঋণ মঞ্জুর করা হয়। ঋণের ২৪ কোটি টাকা ২০১৩ সালের ৪ নভেম্বর সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, দিলকুশা শাখা থেকে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, খাতুনগঞ্জ শাখার মেসার্স সাইফুল অ্যান্ড কোম্পানি হিসাবে স্থানান্তর করা হয়। সেখান থেকে একই দিনে মারিন ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেড হয়ে এস আলম সুপার এডিবল অয়েল লিমিটেডের হিসাবে স্থানান্তর হয়। প্রতিটি ধাপেই জালিয়াতি ও অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের ঘটনা সংঘটিত হয় বলে দুদক মনে করে।
এই মামলার আসামিরা হলেন—এস আলম গ্রুপের সাবেক চেয়ারম্যান ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেড সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম, এম আলম গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান, আব্দুস সামাদ, পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ হাসান, পরিচালক শাহানা ফেরদৌস, রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পিকে হালদার, রিলায়েন্স ফাইন্যান্সের সাবেক ইভিপি ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা বিভাগ প্রধান রাশেদুল হক, একই প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার ও করপোরেট ফাইন্যান্স বিভাগ প্রধান নাহিদা রুনাই, এসভিপি ও মেম্বার, ক্রেডিট কমিটি, রিলায়েন্স ফাইন্যান্স কাজী আহমেদ জামাল, সাবেক ডেপুটি ম্যানেজার, জুমারাতুল বান্না এবং মারিন ভেজিটেবল অয়েলস লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহির আহমেদ, পরিচালক টিপু সুলতান, মো. ইসহাক ও মেসার্স সাইফুল অ্যান্ড কোম্পানির মালিক সাইফুল ইসলাম।
বান্দরবানের রুমা উপজেলার দুর্গম পাহাড়ে সেনাবাহিনীর অভিযানে কুকি চিন ন্যাশনাল আর্মির (কেএনএ) কমান্ডারসহ দুজন নিহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) ভোরে এ ঘটনা ঘটেছে।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে পাঠানো এক বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়েছে।
আইএসপিআর আরও জানিয়েছে, অভিযানে তিনটি এসএমজি, একটি রাইফেলসহ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। অভিযান এখনও চলছে।
অভিযানের বিষয়ে আজ দুপরে রুমা জোনে প্রেস ব্রিফিং করে বিস্তারিত জানানো হবে।
সাবেক সংসদ সদস্য নাঈমুর রহমান দুর্জয়কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বুধবার (২ জুলাই) দিবাগত রাতে রাজধানীর লালমাটিয়া থেকে তাকে গ্রেপ্তার করেছে মানিকগঞ্জ ডিবি পুলিশ।
বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক।
তিনি ঢাকা বলেন, সাবেক সংসদ সদস্য নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের বিরুদ্ধে ৫ আগস্টের ঘটনাসহ নানা অভিযোগে একাধিক মামলা হয়েছে।
রেজাউল করিম মল্লিক বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও গোয়েন্দা তথ্যে ভিত্তিতে মানিকগঞ্জ জেলা পুলিশের গোয়েন্দা টিম আজ রাতে তাকে রাজধানীর লালমাটিয়া এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, সংখ্যানুপাতিক (পিআর) নির্বাচন পদ্ধতির মতো বড় পরিবর্তন জনগণের মতামত নিয়ে সংসদের মাধ্যমে পাশ করতে হবে। সংসদ ছাড়া এই পরিবর্তন কেউ করতে পারবে না।
বুধবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ‘লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
এক প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু বলেন, ‘সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন পরিবর্তনের কথা কথা বলা হচ্ছে, তবে এটা আগামী সংসদ ছাড়া কেউ করতে পারবে না। আমরা যখন প্রেসিডেন্সিয়াল পদ্ধতি থেকে সংসদীয় পদ্ধতিতে আসি, তখন সব দলগুলো ঐকমত্য হয়ে, সংসদে সেটা পাস করতে হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এই পদ্ধতির বিষয়ে কোন দলের ইচ্ছা থাকলে তাদের মতামতের উপর শ্রদ্ধা রেখেই বলছি জনগণের কাছ থেকে তারা যেন সেই ম্যান্ডেড নিয়ে সংসদে আসে। যে কোন বিষয়ে মৌলিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে জনগণের কাছে যেতে হবে। আগামী নির্বাচনে সেটা সংসদে নিয়ে, সংসদের মাধ্যমে পাশ করতে হবে। এই পর্যায়ে এটা কোন আলোচনার বিষয় হতে পারে না।’
সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্য নিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘বিএনপি কোথায় কোথায় ঐকমত্য হয়েছে, ইতিমধ্যে সবকিছু বলা হয়েছে। অনেকগুলো তো বিএনপি প্রস্তাব, সংসদ দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট, দুই বারের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকবে না এসব বিএনপি'রই প্রস্তাব। সুতরাং ঐকমত্য হওয়া নয় কোথায়? তবে একটা কথা মনে রাখতে হবে সব বিষয়ে ঐকমত্য হবে না। ’
তিনি বলেন, ‘আমরা এটা বাকশাল করতে চাচ্ছি না। এটা বাকশাল না। সব বিষয়ে ঐকমত্য হবে না। যে বিষয়গুলোতে ঐকমত্য হবে, সেগুলো এখন ঐক্যমত্যের মাধ্যমে, এর বাইরে যেগুলো থাকবে প্রত্যেকটি দলকে জনগণের কাছে গিয়ে তাদের মতামতের মাধ্যমে করতে হবে।’
লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক সম্পর্কে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, জুলাই আগস্ট এর আন্দোলন তো দেড় দুই মাস ছিল, তার আগে থেকে বছরের পর বছর যারা রাস্তায় ছিল শেখ হাসিনা স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে, তাদের সঙ্গে আমরা কথাবার্তা বলছি। কারণ এই ঐক্যটা আমাদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এটা শুধু নির্বাচন বলে কোন কথা নয়, আমাদের ৩১ দফার উপরে যে ঐকমত্য সংস্কারের বিষয়ে যে ঐকমত্য, এগুলো আমরা কীভাবে আগামী দিনে বাস্তবায়ন করব নির্বাচনের পরে জনগণ যদি আমাদেরকে রায় দেয়, সবাই মিলে এটা বাস্তবায়ন করতে হবে। ’
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে নির্বাচনের কর্মকাণ্ড শুরু হয়ে গেছে। ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে যে নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে সেটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ এবং বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু।
কৃষি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ হবে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে। তিনি বলেন, প্রকল্প পরিচালক নিয়োগের জন্য অনেক কর্মকর্তা নানা উপায়ে তদবির করেন। যে কোনো ধরনের তদবির অযোগ্যতা হিসেবে ধরা হবে।
বুধবার (০২ জুলাই) রাজধানীর ফার্মগেটে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল মিলনায়তনে কৃষি মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প মূল্যায়ন সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সভায় কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান সভাপতিত্ব করেন।
উপদেষ্টা তার বক্তব্যে টপ সয়েল রক্ষা, সারের ব্যবহার কমানো, কৃষি জমি নষ্ট করে স্থাপনা নির্মাণ না করা, প্রকল্পের কেনাকাটায় দুর্নীতি না করাসহ বিবিধ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালকদের নির্দেশনা দেন।
সভা শেষে উপদেষ্টা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় বাজার পরিস্থিতি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, চাল আমদানি ও অভ্যন্তরীণ ফলন ভালো হলেও বাজারে দাম বাড়তি। সরকার চেষ্টা করছে তা নিয়ন্ত্রণে আনতে। গণমাধ্যমের সহযোগিতা এক্ষেত্রে অত্যন্ত জরুরি।
দুর্নীতি দমনে সরকারের অবস্থান তুলে ধরে তিনি বলেন, দুর্নীতির লাগাম এখনো পুরোপুরি টেনে ধরা না গেলেও কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। কৃষিভিত্তিক প্রকল্প নিয়ে উপদেষ্টা বলেন, জুন মাসে যেসব প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। সেগুলো বাস্তবায়নের ফলে কৃষকরা কতটা উপকৃত হবেন তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পাশাপাশি বৃষ্টির পানি ধরে রাখা ও খাল খনন, পেঁয়াজ সংরক্ষণে এয়ার ফ্লোভিত্তিক সংরক্ষণাগার ও মৌসুমি সবজি সংরক্ষণে মিনি কোল্ড স্টোরেজ, বীজ আলু সংরক্ষণে পৃথক কোল্ড স্টোরেজ নির্মাণ নিয়েও কাজ চলছে।
নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনায় আগামী ৬ মাসের জন্য নৌবাহিনীকে সুপারিশ করেছে সরকার। তিনি বলেন, এক্ষেত্রে যারা ওখানে কাজ করছে তাদের চাকরির কোনো ক্ষতি হবে না। প্রয়োজনে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ইতোপূর্বে যারা টার্মিনাল অপারেট করেছে তাদের থেকেও সহযোগিতা নিতে পারে।
বুধবার (০২ জুলাই) সচিবালয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনাবিষয়ক সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, মঙ্গলবার (০১ জুলাই) উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি পরিচালনার বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে কর্তৃত্ব প্রদান করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এনসিটি পরিচালনার জন্য অপারেটর নিয়োগ করবে। সরকার এনসিটি পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে আগামী ৬ মাসের জন্য দায়িত্ব প্রদানের জন্য উপযুক্ত বিবেচনা করছে।
দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে বিদেশি কোনো কোম্পানির সঙ্গে বন্দর পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করা হবে না জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর বিষয়ে বিদেশি কোনো কোম্পানির সঙ্গে অদ্যাবধি কোনো চুক্তি সম্পাদন করা হয়নি। বর্তমান সরকার কখনোই দেশ বিরোধী কোনো চুক্তি করবে না বলে দেশবাসীকে আশ্বস্ত করে বলেন, দেশের সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে জনগণের জীবন মানোন্নয়নে সরকার সময়োপযোগী নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। ইউরোপসহ বিশ্বের উন্নত দেশের বিভিন্ন সমুদ্রবন্দরগুলো ডিপি ওয়ার্ল্ড, এডি পোর্টসহ অন্যান্য বৈশ্বিক বন্দর পরিচালনাকারী সংস্থা দ্বারা দক্ষতার সাথে পরিচালিত হয়ে আসছে।
তিনি বলেন, দেশের আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রমে আরও গতিশীলতা আনা প্রয়োজন। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রমকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে কাজ করছে। দুবাই পোর্ট ওয়ার্ল্ড সাথেও এনসিটি পরিচালনার বিষয়ে প্রাথমিকভাবে আলাপ আলোচনা চলছে। তারা শুধু সিপিএ’র অধীনে বিশ্বের উন্নত অন্যান্য বন্দরের ন্যায় চুক্তির মাধ্যমে নির্ধারিত মেয়াদে চট্টগ্রাম বন্দরেও পরিচালনা কার্যক্রম পরিচালনা করবে। সার্বিক কর্তৃত্ব বা মালিকানা চট্টগ্রাম কর্তৃপক্ষের হাতে থাকবে।
আন্তর্জাতিক মানের অপারেটর নিয়োগ হলে বন্দরের গতিশীলতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে- উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, পণ্য খালাসের সময় কমে আসবে, একই সঙ্গে বিশ্বের বড় বড় জাহাজ বন্দরে ভিড়বে। নতুন নতুন নৌ রুট তৈরি হবে। জাহাজ ভাড়া কমে আসবে। বর্তমানে যেখানে চার থেকে পাঁচ হাজার টিইইউস কনটেইনার হ্যান্ডলিং হচ্ছে, সেটি ছয় হাজারে উন্নীত হবে। অর্থাৎ বন্দরে বার্ষিক ১৫ থেকে ২০ ভাগ টিইইউস কনটেইনার হ্যান্ডলিং বৃদ্ধি পাবে। এ সময় উপদেষ্টা সাইফ পাওয়ারটেক এর সাথে বন্দরের অন্যান্য চুক্তি অপরিবর্তিত থাকবে বলে জানান।
মতবিনিময়কালে চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস. এম. মনিরুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।
জাতিসংঘকে বিভ্রান্তিকর তথ্যের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য একটি কার্যকর ব্যবস্থা তৈরি করতে এবং নৈতিক মান বজায় রেখে গণমাধ্যমকে সমর্থন করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
বুধবার (২ জুলাই) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি এ কথা বলেন।
প্রতিনিধি দলে ছিলেন ইউনেস্কোর কার্যালয় প্রধান ও ইউনেস্কোর প্রতিনিধি সুসান ভাইজ এবং ইউনেস্কোর সাংবাদিকদের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র প্রকল্প কর্মকর্তা মেহেদী বেনচেলাহ।
ইউএনডিপি এবং ইউনেস্কোর যৌথভাবে প্রস্তুত করা 'বাংলাদেশের গণমাধ্যমের অবস্থার একটি মূল্যায়ন: মুক্ত, স্বাধীন ও বহুমাত্রিক গণমাধ্যমের উপর গুরুত্বারোপ' শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশের আগে ইউনেস্কোর কর্মকর্তারা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা সত্যিই প্রতিবেদনটির জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রধান সমস্যা হলো বিভ্রান্তিকর তথ্য, ভুয়া খবর...এই বিভ্রান্তিকর তথ্যের কিছু অংশ বাইরে বসবাসকারী লোকেরা ছড়িয়ে দেয়। এর সঙ্গে কিছু স্থানীয় মানুষ জড়িত। এটি একটি ক্রমাগত তথ্যবোমা।’
ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের পাশাপাশি নিয়মিত গণমাধ্যমও অনেক বিভ্রান্তির উৎস উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জাতিসংঘের ভূমিকা কামনা করেন। বলেন, ‘আপনারা শুধু সরকারের সঙ্গে কথা বলবেন না, গণমাধ্যমের সঙ্গেও কথা বলেন।’
স্বাধীন নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, যদি কোনো গণমাধ্যম বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে দিতে থাকে—তাহলে সেই গণমাধ্যমকে মনে করিয়ে দেওয়া উচিত যে এটি বিশ্বাসযোগ্য নয়।
তিনি বলেন, ‘আপনারা জাতিসংঘ। আপনার কথা খুবই গুরুত্বপূর্ণ...আপনাদের সমর্থন আমাদের প্রয়োজন।’
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, বৃহস্পতিবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে নিজস্ব নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি তুলে ধরা হবে বলে ইউনেস্কোর প্রতিনিধি সুসান ভাইজ জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘প্রতিবেদনটিতে কী কার্যকর হচ্ছে, আর কী হচ্ছে না—তা তুলে ধরা হয়েছে। এটি মূল্যায়নে আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ রয়েছে। এই মানের সঙ্গে অনুশীলনগুলোকে আরও ভালোভাবে মানিয়ে নিতে কর্মকর্তা, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য এবং বিচার বিভাগের সদস্যদের প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হবে।’
ইউনেস্কোর জ্যেষ্ঠ প্রকল্প কর্মকর্তা মেহেদী বেনচেলাহ বলেন, প্রতিবেদনে সাংবাদিকদের কর্মপরিবেশ সম্পর্কে কিছু সুপারিশ করা হবে—যা বিশ্বব্যাপী উদ্বেগের বিষয় এবং সংবাদ কক্ষে নারী সাংবাদিকদের নিরাপত্তা সম্পর্কিত।
তিনি বলেন, এই বিষয়গুলোতে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে।
কর্মকর্তারা জানান, প্রতিবেদনটি ইউএনডিপির ‘প্রতিষ্ঠান, নীতি ও সেবার সক্ষমতা উন্নয়ন (এসআইপিএস)’ প্রকল্পের আওতায় এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও গণমাধ্যম বিকাশে ইউনেস্কোর দায়িত্বের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রস্তুত করা হয়েছে।
জুলাইয়ের মাঝামাঝি কিংবা তৃতীয় সপ্তাহের দিকে জুলাই সনদে পৌঁছানোর বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ। তিনি বলেছেন, ‘চেষ্টা করলে জুলাই মাসের মাঝামাঝিতে আমরা একটি সনদের জায়গায় যেতে পারব।’
বুধবার (২ জুলাই) ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের আলোচনার শুরুতে তিনি এ মন্তব্য করেন।
আলী রীয়াজ বলেন, ‘এক বছর আগে, আমরা সবাই মিলে সব ধরনের বাধা-বিঘ্ন মোকাবিলা করে যে অর্জন করতে চেয়েছি, তার একটি পর্যায় অতিক্রম করে আজ এখানে আমরা সমবেত হয়েছি। বাংলাদেশের রাষ্ট্র কাঠামোর পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেন আমরা একটি জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র তৈরি করতে পারি, সেই চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। যেন নাগরিকের গণতান্ত্রিক ও জীবনের অধিকার সুরক্ষিত হয়, যেন গুম-হত্যা, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও বিচারিক হত্যার শিকার হতে না হয় আমাদের।’
‘এটি আপনাদের (রাজনীতিবিদ) অবদান, আপনাদের কর্মীদের অবদান, নাগরিকদের অবদান। এটি সব রাজনৈতিক দলের ঊর্ধ্বে উঠে জনগণের সাফল্য।’
তিনি বলেন, ‘এই সাফল্য শুধু একটি পর্যায়ে এসে থেমে গেলে হবে না। এটিকে সুরক্ষিত করতে হবে এবং সেই সুরক্ষার উপায় খুঁজছি আমরা, যেন সংস্কারের কার্যক্রমে এগিয়ে যেতে পারি। আপনারা তাতে আন্তরিকভাবে সহায়তা করছেন, যদিও এ দায়িত্ব আমাদের সবার।’
‘কখনো কখনো আমরা অগ্রসর হই, কখনো আবার যতটা অগ্রসর হতে চাই, ততটা না পেরে খানিকটা হতাশ হই। কিন্তু তবুও আজকের এই দিনে দাঁড়িয়ে আমার মনে হচ্ছে, আমরা চেষ্টা করলে জুলাই মাসের মাঝামাঝিতে একটি সনদের জায়গায় যেতে পারব।’
ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি বলেন, ‘আপনাদের সবার চেষ্টা ও সহযোগিতা হচ্ছে সবচেয়ে বড় জিনিস। দলগত, জোটগত ও ব্যক্তিগতভাবে চেষ্টা করে আমরা আশাবাদী হয়েছি। আমি মনে করি, আমরা এই জায়গাটিতে পৌঁছাতে পারব। কারণ, আমাদের সবার সেই আন্তরিক চেষ্টা আছে।’
জুলাই অভ্যুত্থানে হতাহতদের স্মরণে আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমরা আমাদের বন্ধু, কর্মী ও ভাইবোনদের হারিয়েছি। অনেকে আহত অবস্থায় এখনো জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আছেন; লড়াই করছেন। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও দায়বদ্ধতা থেকে এখানে আমাদের আসা।’
‘প্রতিদিনই আমরা পরস্পরকে জানছি ও বুঝছি। সে কারণে আমি আশাবাদী। আমরা আশাবাদী যে একটি জায়গায় পৌঁছাতে পারব। কেননা, যে দায় ও দায়বদ্ধতা—সেটি আপনারা প্রাণ দিয়ে উপলব্ধি করেন। আমরাও প্রাণ দিয়ে উপলব্ধি করি। মানুষেরও প্রত্যাশা আছে, তারা আমাদের দিকে তাকিয়ে আছেন। সেই জায়গায়, আমরা সবাই যেন অগ্রসর হতে পারি।’
জুলাইয়ের মাঝামাঝি কিংবা তৃতীয় সপ্তাহের দিকে জুলাই সনদে পৌঁছানোর বিষয়ে আশাবাদের কথা জানিয়ে উদ্বোধনী বক্তব্য শেষ করেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি।
বৈঠকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের পাশাপাশি উপস্থিত আছেন, কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. বদিউল আলম মজুমদার ও ড. আইয়ুব মিয়া।