আউশের আবাদ ও উৎপাদন বাড়াতে এবার কৃষকদের ৫৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা প্রণোদনা দেবে সরকার।
দেশের ১০ লাখ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষককে এই প্রণোদনার আওতায় বিনা মূল্যে বীজ ও সার দেয়া হবে।
কৃষি মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, উচ্চফলনশীল আউশ ধানের উৎপাদন বাড়াতে এ প্রণোদনার আওতায় একজন কৃষক এক বিঘা জমিতে চাষের জন্য ৫ কেজি বীজ, ১০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি এমওপি সার বিনা মূল্যে পাবেন।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত বাজেট কৃষি পুনর্বাসন সহায়তা ও বীজ এবং চারা খাত থেকে এই প্রণোদনা দেয়া হবে।
প্রণোদনার আওতায় মাঠপর্যায়ে শিগগিরই বীজ ও সার বিতরণ কার্যক্রম শুরু করা হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদির জানাজায় অংশ নিতে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন জড়ো হতে শুরু করেছে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে। ছোটবড় মিছিল নিয়ে শত শত মানুষ সংসদ ভবন এলাকায় আসছেন।
শনিবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ‘হাদি মরল কেন’, ‘ইউনূস সরকার বিচার চাই’, ‘আমার ভাই, আমার ভাই-হাদি ভাই, হাদি ভাই’, ‘নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবর’, ‘হাদি ভাইয়ের হত্যার বিচার চাই’, ‘বিচার চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দিতে সেখানে জড়ো হচ্ছে জনতা।
কুমিল্লা থেকে হাদির জানাজায় অংশ নিতে এসেছেন মশিউর রহমান নামের এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক। তিনি বলেন, আমরা এমন একটি সমাজ চাই যেখানে কোনো অন্যায় বরদাশত করা হবে না। হাদির জানাজায় অংশ নেওয়া আমার জীবনের বেদনাদায়ক ঘটনাগুলোর একটি। তিনি মারা গেলেও বিপ্লবী কণ্ঠস্বরের মধ্য দিয়ে বিপ্লবী তরুণদের হৃদয়ে যুগ যুগ ধরে বেঁচে থাকবেন।
দুপুরে ২টায় ওসমান হাদির জানাজা পড়াবেন তার বড় ভাই আবু বকর সিদ্দিক। এরপর জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবরের পাশে তার দাফন হবে।
হাদির জানাজা ঘিরে জাতীয় সংসদ ভবনসহ রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে, নেওয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। পুলিশ, বিজিবি, র্যাব মোতায়েন করা হয়েছে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ এবং আশেপাশে এলাকাজুড়ে। সেনাবাহিনীর সদস্যদের টহল দিতে দেখা গেছে।
এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপকমিশনার তালেবুর রহমান বলেন, সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে এক হাজার বডি-ওর্ন ক্যামেরাসহ পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করেছে ডিএমপি।
বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফুল ইসলাম জানান, সার্বিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জাতীয় সংসদ ভবন ও রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় বডি-ওর্ন ক্যামেরা ও রায়োট কন্ট্রোল গিয়ারসহ ২০ প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করা হয়েছে।
এ ছাড়া জানাজায় যারা অংশগ্রহণ করবেন, তাদের কোনো ধরনের ব্যাগ বা ভারি বস্তু বহন না করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর। পাশাপাশি জানাজা চলাকালে সংসদ ভবন এলাকায় ও আশপাশে ড্রোন ওড়ানো কঠোরভাবে নিষিদ্ধ থাকবে বলেও জানানো হয়েছে।
ইনকিলাব মঞ্চ এক ফেইসবুক পোস্টে লিখেছে, পরিবারের দাবির ভিত্তিতে তাদের সংগঠনের আহ্বায়ককে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের পাশে সমাহিত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
হাদির মৃত্যুর ঘটনায় আজ জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখাসহ নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রীয় শোক পালিত হচ্ছে।
গত ১২ ডিসেম্বর দুপুর সোয়া ২টার দিকে রাজধানীর বিজয়নগর পানির ট্যাংকির সামনে রিকশায় করে যাওয়ার সময় ওসমান হাদির উপর আক্রমণ হয়। ওই সময় মোটরসাইকেলে করে এসে দুজন তাকে খুব কাছ থেকে গুলি করে পালিয়ে যায়।
পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় দ্রুত তাকে ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। একপর্যায়ে পরিবারের ইচ্ছায় তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এরপর সেখানে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) তার চিকিৎসা চলে।
পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য সোমবার এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে হাদিকে সিঙ্গাপুর নিয়ে যাওয়া হয়েছিল; সেখানেই বৃহস্পতিবার তার মৃত্যু হয়।সূত্র : ইউএনবি
আজ বেলা দুইটায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় শহীদ ওসমান হাদির নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, শহীদ ওসমান হাদির নামাজে জানাজায় অংশগ্রহণে আগ্রহীদের কোনো প্রকার ব্যাগ বা ভারী বস্তু বহন না করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে এসময় সংসদ ভবন ও এর আশপাশের এলাকায় ড্রোন ওড়ানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি হত্যার প্রতিবাদ ও বিচার দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে বিক্ষোভ সমাবেশ করে ছাত্র ও সর্বস্তরের জনতা।
শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) ভোর থেকেই শাহবাগ এলাকায় মানুষ জড়ো হতে শুরু করে। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। দুপুরের দিকে সেখানে ছাত্র-জনতার ঢল নামে।
বিক্ষোভের মধ্যেই মুসল্লিদের শাহবাগ মোড়ে জুমার নামাজ আদায় করতে দেখা যায়। নামাজ শেষে মোড়ের নাম পরিবর্তন করে ‘শহীদ ওসমান হাদি চত্বর’ ঘোষণা করা হয়। আন্দোলনের কারণে শাহবাগ মোড়ে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকে।
এদিন বিকেল ৩টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহ-সভাপতি (ভিপি) সাদিক কায়েমের ঘোষণায় শাহবাগে শুরু হয় আধিপত্যবাদবিরোধী সমাবেশ। মৎস্য ভবনমুখী সড়কে ডাকসু সদস্যরা একটি ট্রাকের ওপর অবস্থান নিয়ে নানা প্রতিবাদী স্লোগান দেন। পাশাপাশি জুলাই ভাস্কর্যের পাদদেশে জুলাই আন্দোলনে অংশ নেওয়া বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের সদস্যদেরও বিশাল অবস্থান নিতে দেখা গেছে। এসময় আন্দোলনকারীদের ‘আর নয় প্রতিরোধ, এবার হবে প্রতিশোধ’, ‘এক হাদি লোকান্তরে, লক্ষ হাদি ঘরে ঘরে’, ‘এক হাদি লোকান্তরে, লক্ষ হাদি লড়াই করে’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।
সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মী এবং সাধারণ মানুষ অংশ নিয়েছেন। তারা হাদি হত্যার বিচার এবং ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের আহ্বান জানান।
বিক্ষোভকারীদের দাবির মধ্যে রয়েছে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ। তারা ঘোষণা দিয়েছেন, ওসমান হাদির লাশ ঢাকায় পৌঁছানো পর্যন্ত তারা শাহবাগ মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন।
এর আগে জুমার নামাজের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে শহীদ হাদির রুহের মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। দোয়া শেষে শিক্ষার্থীরা মিছিল সহকারে শাহবাগে এসে সমাবেশে যোগ দেন।
গত ১২ ডিসেম্বর রিকশা আরোহী হাদি মোটরসাইকেলে থাকা দুর্বৃত্তদের গুলিতে আহত হন। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে ওই দিন রাতেই তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে ১৫ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুর পাঠানো হয়। গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার পর সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পরপরই সর্বস্তরের ছাত্র-জনতা শাহবাগে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে।
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির জানাজা নামাজের যে সময় নির্ধারণ করা হয়েছিল, তাতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুর আড়াইটার পরিবর্তে আধাঘন্টা এগিয়ে এনে দুপুর দুইটায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে অনুষ্ঠিত হবে।
শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রেস উইং থেকে বলা হয়, ‘আগামীকাল (শনিবার, ২০ ডিসেম্বর) দুপুর দুইটায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় শহীদ ওসমান হাদির জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
ওসমান হাদির জানাজায় অংশগ্রহণের জন্য বেশ কিছু শর্তও জুড়ে দিয়েছে সরকার। যারা জানাজায় অংশগ্রহণ করবে তারা কোনো ধরনের ভারী ব্যাগ বা ভারী বস্তু বহন না করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এছাড়া, জানাজার সময় সংসদ ভবন ও এর আশপাশের এলাকায় ড্রোন ওড়ানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করেছে সরকার।
উল্লেখ্য, শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা পৌঁনে ছয়টায় ঢাকায় পৌঁছে ওসমান হাদির মরদেহ। বিমানবন্দর থেকে মরদেহ হিমাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। শনিবার জানাজা শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কবি কাজী নজরুল ইসলামের পাশে সমাহিত করা হবে বলে জানিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার একটি চিকিৎসা প্রক্রিয়া শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
শুক্রবার বিকেলে এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর শারীরিক অবস্থা বর্তমানে স্থিতিশীল রয়েছে জানিয়ে জাহিদ হোসেন বলেন, খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটেনি।
জাহিদ হোসেন বলেন, ‘২৩ নভেম্বর থেকে টানা প্রায় এক মাস ধরে খালেদা জিয়া এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আল্লাহর অশেষ মেহেরবানিতে এবং দেশবাসীর দোয়ায় তার শারীরিক অবস্থা বর্তমানে গত এক মাসের তুলনায় স্থিতিশীল রয়েছে। শুক্রবার খালেদা জিয়ার শরীরে একটি ছোট চিকিৎসা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। এটি সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে এবং তিনি তা ভালোভাবে সহ্য করতে পেরেছেন।’
বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক বলেন, বর্তমানে খালেদা জিয়া ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসাধীন। এখানে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের (আইসিইউ) সব ধরনের সুবিধা রয়েছে। সাধারণভাবে বুঝতে চাইলে বলা যায়, তিনি আইসিইউ ব্যবস্থাসম্পন্ন একটি কেবিনে চিকিৎসাধীন।
জাহিদ হোসেন জানান, দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের অধীনে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চলছে। এ চিকিৎসা প্রক্রিয়া যেন আল্লাহ অব্যাহত রাখেন, সে জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চাওয়া হয়েছে।
এসময় খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটেনি। আজ যে চিকিৎসা প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে, সেটি সফলভাবে হওয়া প্রমাণ করে যে তার অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে।’
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ শরিফ ওসমান হাদির জানাজা শনিবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুর আড়াইটায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত হবে।
শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, জানাজায় অংশগ্রহণে আগ্রহীদের কোনো প্রকার ব্যাগ বা ভারী বস্তু বহন না করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হচ্ছে।
একই সঙ্গে এসময় সংসদ ভবন ও আশপাশের এলাকায় ড্রোন ওড়ানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে বলে জানান উপ-প্রেস সচিব।
গত ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর পুরানা পল্টনে নির্বাচনি প্রচারণার সময় সন্ত্রাসীদের গুলিতে মাথায় গুরুতর আহত হন ওসমান হাদি। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ঢামেক) নেওয়া হয়, যেখানে প্রাথমিক অস্ত্রোপচার করা হয়। পরে তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) স্থানান্তর করা হয়।
সেখানে তিন দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার রাতে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তার মরদেহ নিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট বিজি-৩৮৫ শুক্রবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবস্থা গত এক মাসের মধ্যে এখন বেশ স্থিতিশীল বলে জানিয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে বিএনপির চেয়ারপারসনের সর্বশেষ স্বাস্থ্য পরিস্থিতি নিয়ে এক ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা জানান।
ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, আপনারা জানেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী আজকে এক মাস প্রায় হয়ে যাচ্ছে, গত ২৩ নভেম্বর আজ ১৯ ডিসেম্বর যাবৎ এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এবং আলহামদুলিল্লাহ, কালকে আপনাদেরকে আমি বলেছিলাম আপনাদের প্রশ্নের উত্তরে যে উনার শারীরিক অবস্থা আপনাদের দোয়ায় আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের রহমতে উনার শারীরিক অবস্থা গত এক মাসের মধ্যে এখন বেশ স্থিতিশীল আছে। এবং আজকেও উনার একটা ছোট প্রসিডিউর করা হয়েছে ওটিতে নিয়ে এবং সেটিও উনি অত্যন্ত সফলভাবে গ্রহণ করতে পেরেছেন, অর্থাৎ প্রসিডিউরটা সুন্দরভাবে করা হয়েছে। এবং উনি এখন উনার সিসিইউতে যে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট ওখানে উনি আইসিইউ এর যে ব্যবস্থা, সে ব্যবস্থা সম্বলিত কেবিনে চিকিৎসাধীন আছেন।
তিনি বলেন, আমরা আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সহধর্মিণী ডাক্তার জুবাইদা রহমানসহ পরিবারের সকলের পক্ষ থেকে এবং দলের পক্ষ থেকে আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে আমরা দোয়া চাই যেন একইভাবে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মেডিকেল বোর্ডের অধীনে যে চিকিৎসা, দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত যে মেডিকেল বোর্ড, সেই মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসা যেভাবে উনি নিতে পারছেন সেটি যেন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন উনাকে অব্যাহত রাখার তৌফিক দান করেন। এবং এখনকার যে অবস্থা আছে এ অবস্থা যাতে আরও সুস্থতার দিকে উনাকে নিয়ে যেতে পারে সেই দোয়া চাচ্ছি।
সামগ্রিকভাবে উনার শারীরিক অবস্থা কি উন্নতির দিকে বলা যায়? সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে ডা. জাহিদ বলেন, আমি তো আপনাদের বলেছি, আমি দুইটি শব্দ উচ্চারণ করেছি একটি বলেছি আলহামদুলিল্লাহ। দ্বিতীয়টি বলেছি, গতকালকেও আপনাদেরকে বলেছি সেই তুলনায় উনি আজকে উনার শরীরের ওপর একটা প্রসিডিউর করা হয়েছে সেটি উনি অত্যন্ত সফলভাবে গ্রহণ করতে পেরেছেন এবং উনি এখন এই মুহূর্তে উনার অবস্থা স্থিতিশীল আছে। অর্থাৎ উনার অবস্থা অবনতি ঘটে নাই।
ঢাকায় পৌঁছেছে জুলাই জজবার প্রাণ, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার অকুতোভয় বীর শহীদ শরিফ ওসমান হাদির মরদেহ। শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে তার মরদেহ বহনকারী বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট বিজি-৩৮৫ ফ্লাইটটি ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
এর আগে বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টা ৩ মিনিটে সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ফ্লাইটটি ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়।
শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) দুপুর আড়াইটার দিকে ইনকিলাব মঞ্চের ফেসবুক পেজে জানানো হয়, শহীদ ওসমান হাদিকে বহনকারী বিমানটি সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে।
আমাদের জুলাই জজবার প্রাণ, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার অকুতোভয় বীরকে নিতে সবাই এয়ারপোর্ট থেকে শাহবাগগামী রাস্তার দুপাশে সুশৃঙ্খলভাবে অবস্থান নেবো। সেখান থেকে শহীদ ওসমান হাদিকে সর্বসাধারণের সাক্ষাতের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে আনা হবে।
গত ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর পুরানা পল্টনে নির্বাচনি প্রচারণার সময় সন্ত্রাসীদের গুলিতে মাথায় গুরুতর আহত হন ওসমান হাদি। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ঢামেক) নেওয়া হয়, যেখানে প্রাথমিক অস্ত্রোপচার করা হয়। পরে তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) স্থানান্তর করা হয়।
সেখানে তিন দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার রাতে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, দেশের ভৌগলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ন রাখার পাশাপাশি সীমান্ত সুরক্ষা, চোরাচালান রোধ, মাদক ও নারী-শিশু পাচার রোধে বিজিবি ‘সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, দেশের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ যেকোন জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলা করে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানেও বিজিবি প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখছে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বিশেষ করে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর দেশের সার্বভৌমত্ব ও সীমান্তের নিরাপত্তা রক্ষায় বিজিবি সীমান্ত উত্তেজনা ও পুশইন রোধসহ বিভিন্ন নিরাপত্তা ঝুঁকি মোকাবিলায় পেশাদারিত্ব বজায় রেখে কাজ করে যাচ্ছে।
শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) ড. মুহাম্মদ ইউনূস আগামীকাল (শনিবার) ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) দিবস-২০২৫ উদযাপন’ উপলক্ষ্যে দেওয়া বাণীতে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা বিজিবি দিবস উপলক্ষ্যে বাহিনীর সকল সদস্যকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ এই অঞ্চলের সুদীর্ঘ ইতিহাস ও গৌরবময় ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী।
তিনি আরও জানান, ১৯৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে দু’জন বীরশ্রেষ্ঠসহ ১১৯ জনের খেতাবপ্রাপ্তি এবং ৮১৭ শহীদের আত্মত্যাগ বিজিবির ইতিহাসকে মহিমান্বিত করেছে।
মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে দেশমাতৃকার বৃহত্তর কল্যাণে এ বাহিনীর যে সকল সদস্য বিভিন্ন সময়ে আত্মোৎসর্গ করেছেন তাদের আত্মার শান্তি কামনা করেন তিনি।
ড. ইউনূস বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ দিবস-২০২৫ উপলক্ষ্যে আয়োজিত সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।
সূত্র : বাসস
সম্প্রতি সংগঠিত অগ্নিসংযোগ এবং জনগণের জানমাল ধ্বংসের সব কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। একই সঙ্গে সব প্রকার সহিংসতার বিরুদ্ধে দৃঢ়তার সঙ্গে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) দুপুরে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের সব নাগরিককে আহ্বান জানানো হচ্ছে-সংঘটিত সব প্রকার সহিংসতার বিরুদ্ধে দৃঢ়তার সঙ্গে সতর্ক থাকুন। আমরা সহিংসতা, ভীতি প্রদর্শন, অগ্নিসংযোগ এবং জানমাল ধ্বংসের সব কর্মকাণ্ডকে দৃঢ়ভাবে ও দ্ব্যর্থহীনভাবে নিন্দা জানাই।
এতে আরো বলা হয়, দেশের ইতিহাসের এই সংকটময় সময়ে আমরা একটি ঐতিহাসিক গণতান্ত্রিক রূপান্তরের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হচ্ছি। যারা বিশৃঙ্খলাকে পুঁজি হিসেবে নেয় এবং শান্তির পথকে উপেক্ষা করে-এমন অল্প কয়েকজনের কারণে এই অগ্রযাত্রা আমরা কোনোভাবেই ব্যাহত হতে দিতে পারি না এবং দেব না।
অন্তর্বর্তী সরকার আরো জানিয়েছে, আসন্ন নির্বাচন ও গণভোট কেবল রাজনৈতিক অনুশীলন নয়; এগুলো একটি গুরুতর জাতীয় অঙ্গীকার। এই অঙ্গীকার অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িয়ে আছে সেই স্বপ্নের সঙ্গে, যার জন্য শহীদ শরীফ ওসমান হাদি তার জীবন উৎসর্গ করেছেন। তার আত্মত্যাগ ও স্মৃতির প্রতি সম্মান জানাতে হলে সংযম, দায়িত্বশীলতা এবং ঘৃণা প্রত্যাখ্যানের প্রতি অবিচল অঙ্গীকার প্রয়োজন।
সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সাংবাদিকদের ওপর হামলা মানেই সত্যের ওপর হামলা। আমরা আপনাদের পূর্ণ ন্যায়বিচারের আশ্বাস দিচ্ছি।
রাজধানীর শাহবাগে বিক্ষোভ সমাবেশে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম সংগঠক শরিফ ওসমান হাদি হত্যার প্রতিবাদে শিক্ষার্থী ও সর্বস্তরের মানুষের ঢল নেমেছে।
শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) ভোর থেকেই শাহবাগ এলাকায় মানুষ জড়ো হতে শুরু করে। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। দুপুরের পরে ছাত্র-জনতার ঢল নামে সেখানে। এই বিক্ষোভ সমাবেশেই শাহবাগ মোড়ে জুমার নামাজ আদায় করা হয়। নামাজ শেষে মোড়ের নাম পরিবর্তন করে ‘শহীদ ওসমান হাদি চত্বর’ ঘোষণা করা হয়।
এসময় আন্দোলনের কারণে শাহবাগ মোড়ে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
বিকেল ৩টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহ-সভাপতি (ভিপি) সাদিক কায়েমের ঘোষণায় শাহবাগে শুরু হয় আধিপত্যবাদবিরোধী সমাবেশ। মৎস্য ভবনমুখী সড়কে ডাকসু সদস্যরা একটি ট্রাকের ওপর অবস্থান নিয়ে নানা প্রতিবাদী স্লোগান দেন। পাশাপাশি জুলাই ভাস্কর্যের পাদদেশে জুলাই আন্দোলনে অংশ নেওয়া বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের সদস্যদেরও বিশাল অবস্থান নিতে দেখা গেছে। এসময় আন্দোলনকারীদের ‘আর নয় প্রতিরোধ, এবার হবে প্রতিশোধ’, ‘এক হাদি লোকান্তরে, লক্ষ হাদি ঘরে ঘরে’, ‘এক হাদি লোকান্তরে, লক্ষ হাদি লড়াই করে’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।
সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মী এবং সাধারণ মানুষ অংশ নিয়েছেন। তারা হাদি হত্যার বিচার এবং ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের আহ্বান জানান।
বিক্ষোভকারীদের দাবির মধ্যে রয়েছে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ। তারা ঘোষণা দিয়েছেন, ওসমান হাদির লাশ ঢাকায় পৌঁছানো পর্যন্ত তারা শাহবাগ মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন।
এসময় ডাকসু ভিপি সাদিক কায়েম বলেন, ‘আমরা আমাদের ভাই হাদি হত্যার বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত শাহবাগ ছাড়বো না। আমাদের এ অবরোধ কর্মসূচি চলমান থাকবে।’ তিনি হাদির হত্যাকারীদের গ্রেফতারে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করেন।
ডাকসু নেতা এবি জুবায়ের বলেন, শহীদ শরিফ ওসমান হাদি কোনো সহিংসতার পথে বিশ্বাসী ছিলেন না। মেধা, মনন ও জ্ঞানের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদী ও আধিপত্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রাম গড়ে তোলাই ছিল তার আদর্শ। জুবায়ের আন্দোলনের নামে কোনো ধরনের উসকানি বা সহিংসতায় না জড়িয়ে শান্তিপূর্ণ ও সংগঠিতভাবে প্রতিবাদ চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।
এর আগে জুমার নামাজের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে শহীদ হাদির রুহের মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। দোয়া শেষে শিক্ষার্থীরা মিছিল সহকারে শাহবাগে এসে সমাবেশে যোগ দেন।
গত ১২ ডিসেম্বর রিকশা আরোহী হাদি মোটরসাইকেলে থাকা দুর্বৃত্তদের গুলিতে আহত হন। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে ওই দিন রাতেই তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে ১৫ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুর পাঠানো হয়। গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পরপরই সর্বস্তরের ছাত্র-জনতা শাহবাগে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে।
সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শাহাদাতবরণ করেছেন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম নেতা শরিফ ওসমান হাদি। তার মরদেহ আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকায় পৌঁছাবে। শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) দুপুরে ইনকিলাব মঞ্চের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
ইনকিলাব মঞ্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়, শহীদ ওসমান হাদিকে বহনকারী বিমানটি আজ সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার এই অকুতোভয় বীরকে শেষবারের মতো শ্রদ্ধা জানাতে এবং গ্রহণ করতে এক বিশেষ প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।
সংগঠনটির পক্ষ থেকে সাধারণ মানুষকে বিমানবন্দর থেকে শাহবাগগামী রাস্তার দুই পাশে সুশৃঙ্খলভাবে অবস্থান করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হয়েছে। সেখান থেকে শহীদ ওসমান হাদির মরদেহ সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে নিয়ে আসা হবে।
ফ্লাইট ট্র্যাকার সাইটে জানা যায়, হাদির কফিন বহনকারী উড়োজাহাজটি সিঙ্গাপুরের স্থানীয় সময় বিকেল ৩টা ৫০ মিনিটে সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়।
জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট সড়কে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে দুর্বৃত্তরা রিকশায় থাকা ওসমান হাদিকে গুলি করে। ঢাকা-৮ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার জন্য প্রচারণা চালাচ্ছিলেন তিনি।
মোটরসাইকেলে এসে দুজন তাকে খুব কাছ থেকে গুলি করে পালিয়ে যায়। পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় দ্রুত তাকে ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জানা যায়, গুলি ওসমান হাদির মাথার ডান দিক থেকে ঢুকে বাম পাশ দিয়ে বের হয়ে গেছে।
এই অবস্থার মধ্যেই পরিবারের ইচ্ছায় তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছিল। সবশেষ ১৫ ডিসেম্বর দুপুরে উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয় ওসমান হাদিকে। সেখানে গতকাল বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখভাগের যোদ্ধা ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। বৃহস্পতিবার রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি হাদির মৃত্যুকে দেশের রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক পরিসরের জন্য ‘অপূরণীয় ক্ষতি’ বলে উল্লেখ করেন।
ভাষণের শুরুতেই প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তিনি ‘অত্যন্ত হৃদয়বিদারক একটি সংবাদ’ নিয়ে দেশবাসীর সামনে হাজির হয়েছেন। তিনি জানান, সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভিভিয়ান বালাকৃষ্ণান টেলিফোনে তাঁকে এই সংবাদটি জানিয়েছেন।
শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদবিরোধী সংগ্রামের এই অমর সৈনিককে মহান রাব্বুল আলামিন শহিদ হিসেবে কবুল করুন—এই দোয়া করি।’ তিনি তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত স্ত্রী, পরিবার, স্বজন ও সহকর্মীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
প্রধান উপদেষ্টা ভাষণে ঘোষণা দেন, শহিদ ওসমান হাদির স্ত্রী ও একমাত্র সন্তানের দায়িত্ব সরকার গ্রহণ করবে। পাশাপাশি তাঁর অকাল মৃত্যুতে আগামী শনিবার একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেন। ওই দিন দেশের সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সরকারি-বেসরকারি ভবন এবং বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে।
ভাষণে তিনি আরও বলেন, আগামীকাল শুক্রবার বাদ জুম্মা দেশের প্রতিটি মসজিদে শহিদ ওসমান হাদির রূহের মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। একই সঙ্গে অন্যান্য ধর্মের উপাসনালয়গুলোতেও বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হবে।
সিঙ্গাপুর সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, তারা হাদির চিকিৎসায় ‘অত্যন্ত আন্তরিকতা ও পেশাদারিত’ দেখিয়েছে। বিশেষ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভিভিয়ান বালাকৃষ্ণানের ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন তিনি, যিনি একই সঙ্গে একজন চিকিৎসক।
হত্যাকাণ্ডের বিচারের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সকল অপরাধীকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।’ এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের শৈথিল্য দেখানো হবে না বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
ভাষণে ওসমান হাদিকে ‘প্রতিবাদের অনন্য প্রতীক’ উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, তাঁর কর্মের মধ্য দিয়ে তিনি দেশপ্রেম, ধৈর্য ও দৃঢ়তার দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। একই সঙ্গে তিনি দেশবাসীর প্রতি ধৈর্য ও সংযম বজায় রাখার আহ্বান জানান এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে পেশাদারিত্বের সঙ্গে তদন্ত পরিচালনার সুযোগ দেওয়ার কথা বলেন। তিনি বলেন, রাষ্ট্র আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সম্পূর্ণরূপে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘ওসমান হাদি ছিলেন পরাজিত শক্তি ফ্যাসিস্ট সন্ত্রাসীদের শত্রু।’ তাঁর কণ্ঠ স্তব্ধ করে ভয় দেখানোর অপচেষ্টা ব্যর্থ হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তাঁর ভাষায়, ভয়, সন্ত্রাস কিংবা রক্তপাতের মাধ্যমে দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা কেউ থামাতে পারবে না।
গণতান্ত্রিক উত্তরণের প্রক্রিয়ার কথা উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, শহিদ হাদি ছিলেন এই প্রক্রিয়ার অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং আসন্ন নির্বাচনে অংশ নেওয়ার মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে ভূমিকা রাখার ইচ্ছা তাঁর ছিল। তিনি বলেন, ‘তাঁর এই মহতী ইচ্ছা অপূর্ণ রয়ে গেল।’
দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এই শোকের মুহূর্তে আসুন, আমরা শহিদ শরিফ ওসমান হাদির আদর্শ ও ত্যাগকে শক্তিতে পরিণত করি। ধৈর্য ধারণ করি, অপপ্রচার ও গুজবে কান না দিই এবং যে কোনো হঠকারী সিদ্ধান্ত থেকে বিরত থাকি। যারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে চান, তাদের ফাঁদে পা না দিয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার পথে অবিচলভাবে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি। এটাই হবে শহিদ হাদির প্রতি আমাদের প্রকৃত শ্রদ্ধা।সূত্র : বাসস