রাজধানীর গুলশান-২ নম্বর এলাকার একটি বহুতল আবাসিক ভবনের সপ্তম তলায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। আগুনের এই ঘটনায় একজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
রোববার সন্ধ্যা ৭টার দিকে গুলশানের ১০৪ নম্বর সড়কের ওই ভবনে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ১৯টি ইউনিট আগুন নেভাতে কাজ করছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. বাচ্চু মিয়া বলেন, ‘রাত দশটার পরে গুলশানের অগ্নিকাণ্ডের জায়গা থেকে একজনের মরদেহ আনা হয়েছে।’
ওই তলাসহ ওপরের আরও কয়েকটি তলায় আগুন ছড়িয়ে পড়লে বেশ কয়েকজন আটকে পড়েন। আগুন থেকে বাঁচতে ভবন থেকে লাফ দিয়ে কমপক্ষে তিনজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
প্রাথমিকভাবে আগুন লাগার কারণ ও নিহতের কোনো খবর জানা যায়নি। ওই ভবন থেকে আটকে পড়া লোকজনকে উদ্ধার করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
ফায়ার সার্ভিসের ডিউটি অফিসার খালেদা ইয়াসমিন জানান, রাজধানীর গুলশান-২ নম্বরে একটি ভবনে সন্ধ্যা ৬টা ৫৯ মিনিটে আগুন লাগে। প্রথমে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট, পরে আরও তিনটি ইউনিট যোগ দিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
পরে রাত সাড়ে ৯টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের গণমাধ্যম কর্মকর্তা মো. শাহজাহান শিকদার জানান, ফায়ার সার্ভিসের মোট ১৩টি ইউনিট আগুন নেভাতে কাজ করছে। এ পর্যন্ত ওই ভবনে আটকে পড়া নারী-পুরুষসহ মোট সাতজনকে উদ্ধার করেছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। তার মধ্যে নবম তলা থেকে দুজন নারীকে উদ্ধার করা হয়েছে।
গত বছরের ৪ আগস্টের পর সারা দেশের ৪০টি মাজার (মাজার/সুফি কবরস্থান, দরগা) ও তার সঙ্গে সম্পর্কিত ৪৪টি স্থাপনা ভাঙচুর ও হামলার তথ্য পেয়েছে পুলিশ।
এসব হামলায় মাজার ভাঙচুর ও ভক্তদের ওপর হামলা, মাজারের সম্পত্তি লুটপাটসহ অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে। এসব ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিদের অভিযোগ গ্রহণ ও পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বিভিন্ন থানায় ১৫টি নিয়মিত মামলাসহ ২৯টি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে।
শনিবার পুলিশের একটি প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে বলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
প্রেস উইং জানায়, ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট থেকে মাজারে (মাজার/সুফি কবরস্থান, দরগা) হামলার বিষয়ে পুলিশের রিপোর্টে এসব তথ্য দেওয়া হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের মাজার-দরগায় যেকোনো আক্রমণের প্রতি জিরো টলারেন্স নীতি রয়েছে। মামলাগুলো কঠোরভাবে তদন্ত করে হামলার ঘটনায় জড়িত সবাইকে গ্রেপ্তার করতে পুলিশের সব ইউনিটকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকার দেশের ধর্মীয় স্থাপনাগুলোর (মাজার ও দরগাহ) নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়। সংক্ষুব্ধ কোনো ব্যক্তি পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করলে তা তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, সবচেয়ে বেশি হামলার ঘটনা ঘটেছে ঢাকা বিভাগে। এখানে ১৭টি মাজারে ভাঙচুর, লুটপাট হয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগে ১০টি ও ময়মনসিংহ বিভাগে ৭টি মাজারে হামলার ঘটনা ঘটেছে। ময়মনসিংহ বিভাগের শুধু শেরপুর জেলায় একটি মাজারে চারবার হামলা হয়েছে।
এই ৪৪টি হামলার ঘটনার সবকটিতেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে ১৫টি নিয়মিত মামলা এবং ২৯টি সাধারণ ডায়েরি (জিডি)। এসব মামলা ও ডায়রি সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি বা পুলিশ স্বপ্রণোদিত হয়ে করেছে। এসব ঘটনায় ফৌজদারি মামলায় এখন পর্যন্ত ২৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দুটি নিয়মিত মামলায় এরই মধ্যে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। আরও ১৩টি নিয়মিত মামলা ও ২৯টি সাধারণ ডায়েরির তদন্ত চলছে।
বিজ্ঞঘপ্তিতে আরও জানানো হয়, এসব হামলায় মাজার/দরগাহ এবং ভক্তদের ওপর হামলা, ভাঙচুর, মাজারের সম্পত্তি লুটপাট ও মাজারে আগুন দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। একইসঙ্গে স্থানীয়ভাবে বিবাদমান পক্ষগুলোর সঙ্গে শান্তি বৈঠকের আয়োজন করে সমস্যা সমাধানের পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে। কমিউনিটি পুলিশিং প্রচেষ্টার মাধ্যমে জনসাধারণ এবং ইসলামিক নেতাদের অংশগ্রহণ বজায় রেখে সংবেদনশীলকরণ কর্মসূচিতেও জোর দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশে ২০২৪ সালে ৩১০ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। তাদের মাঝে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীও রয়েছেন। এর মধ্যে ৬৫ শতাংশের বেশি কৈশোর বয়সের রয়েছে। শনিবার আঁচল ফাউন্ডেশন আয়োজিত অনলাইনে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে সংস্থাটি। তারা বলছে, আত্মহত্যাকারীদের মধ্যে ৪৬ দশমিক ১ শতাংশ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থী।
বয়সভিত্তিক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ১৩-১৯ বছরে বয়ঃসন্ধিকালীন শুরু থেকে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি। ২০২৪ সালের মোট আত্মহত্যাকারী মানুষের প্রায় ৬৫ দশমিক ৭ শতাংশ এই বয়সসীমার মধ্যে। আত্মহত্যার তালিকায় এরপরই রয়েছে ২০-২৫ বয়সসীমা যুবক-যুবতীরা। অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সায়্যেদুল ইসলাম সায়েদ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও গবেষক ড. মো. জামাল উদ্দীন, আইনজীবী ও লেখক ব্যারিস্টার নওফল জামির, আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তানসেন রোজ প্রমুখ।
যুদ্ধবিধ্বস্ত লেবানন থেকে সম্পূর্ণ সরকারি খরচে কাতারের একটি ফ্লাইটে আজ আরো ৪৭ জন আটকে পড়া বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান, বৈরুতে বাংলাদেশ দূতাবাস এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার সহায়তায় ফ্লাইটটি (কিউআর-৬৪০) সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, এই পর্যন্ত ১৯টি ফ্লাইটে মোট ১,২৪৬ বাংলাদেশি নাগরিককে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
বিমানবন্দরে ফেরত আসাদের স্বাগত জানান পররাষ্ট্র ও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং আইওএম-এর কর্মকর্তারা।
আইওএম প্রত্যেককে পকেট খরচ, খাদ্য সরবরাহ এবং প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা হিসেবে ৫ হাজার টাকা করে দিয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ফেরত আসা ব্যক্তিদের সাথে চলমান সংঘর্ষের ভয়াবহতা নিয়ে আলোচনা করেন এবং তাদের সুস্থতা সম্পর্কে খোঁজ খবর নেন।
সংঘর্ষের সময় বোমা হামলায় এই পর্যন্ত একজন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
সরকার চলমান সহিংসতার কারণে লেবানন থেকে দেশে ফিরতে ইচ্ছুক সকল বাংলাদেশিদের প্রত্যাবাসন ব্যয় বহন করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বৈরুতে বাংলাদেশ দূতাবাস যারা দেশে ফিরতে ইচ্ছুক তাদের নিরাপদে প্রত্যাবর্তন এবং যারা থাকতে পছন্দ করছেন তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে।
শতাধিক পণ্যের ওপর যে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়েছে সরকার, সেটিকে ‘হঠকারী সিদ্ধান্ত’ হিসেবে আখ্যায়িত করে তা প্রত্যাহারে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে বিএনপি। এতে সাধারণ মানুষকে ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়তে হবে বলে মনে করছে দলটি। যদিও অন্তবর্তী সরকারের দাবি, এতে ‘ন্যূনতম’ প্রভাব পড়বে।
আজ শনিবার বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার যে ভ্যাট ও পরোক্ষ কর বাড়িয়েছে, তাতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়বে।’
দেশের চলমান অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও মুদ্রাস্ফীতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘শতাধিক পণ্যের ওপর ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়েছে সরকার। কিছু কিছু পণ্যের ওপর থেকে কর অব্যাহতিও প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে খাদ্য, পোশাক, ওষুধ ও মোবাইল ইন্টারনেট সেবাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যও রয়েছে।’
এতে সাধারণ মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন তিনি। তার ভাষ্যে, ‘বিশেষ করে গরিব ও মধ্যবিত্তদের ব্যাপক দুর্ভোগে পড়তে হবে।’
এসব ভোগান্তি থেকে সাধারণ মানুষকে রেহাই দিতে বিকল্প পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ফখরুল। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ওপর ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর পরিবর্তে সরকার যাতে অপ্রয়োজনীয় উন্নয়ন খরচ কমিয়ে দেয়, অন্তবর্তী সরকারকে সেই পরামর্শও দিয়েছে বিএনপি।
এই বিএনপি নেতা বলেন, ‘জবাবদিহিতামূলক একটি প্রশাসনের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচিত একটি জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করা।’
এর আগে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মাঝপথে এসে শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ায় সরকার।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এতে দৈনন্দিন জীবনযাত্রার খরচ আরেক দফা বেড়ে যেতে পারে সাধারণ মানুষের। যেমন মুঠোফোন সেবার ওপর সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধির ফলে কথা বলা ও ইন্টারনেট ব্যবহারের খরচ বাড়বে। আবার পোশাক–পরিচ্ছেদের দামও বাড়তে পারে ভ্যাট বৃদ্ধির কারণে।
এছাড়া মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে মিষ্টি, ওষুধ, এলপি গ্যাস, ফলের রস, ড্রিংক, বিস্কুট, চশমার ফ্রেম, সিগারেটসহ নানা পণ্যের।
গত ৯ জানুয়ারি রাতে এ–সংক্রান্ত দুটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়। অধ্যাদেশ দুটি হলো— মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ এবং দি এক্সাইজ অ্যান্ড সল্ট (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫।
তবে এই ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধির কারণে সাধারণ মানুষের ওপর তেমন কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না বলে জানিয়েছে সরকার।
এ বিষয়ে ১২ জানুয়ারি রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বাড়লেও সাধারণ মানুষের ওপর খুব বড় প্রভাব পড়বে না। এ প্রভাব হবে খুবই ন্যূনতম। এ বছর (অর্থবছর) পাঁচ মাসে রাজস্ব আয়ে ঘাটতি হয়েছে প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৬৯ হাজার কোটি টাকা। সংগ্রহ হয়েছে ১ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি।
তিনি বলেন, ‘আমরা বলছি না যে কিছু প্রভাব পড়বে না। কিন্তু আমরা মনে করছি, এটি খুবই ন্যূনতম (মিনিমাম) হবে। আমরা মনে করি না যে এটা খুব বড় প্রভাব (ম্যাসিভ ইমপ্যাক্ট) হবে।’
প্রেস সচিব বলেন, সরকার চাচ্ছে অর্থনীতির স্বাস্থ্যটা স্থিতিশীল করতে, ঠিক করতে; এটি দেশের জন্যই ভালো হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফজলুল হক মুসলিম হলে তোফাজ্জল হোসেন নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা মামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ শিক্ষার্থীকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছে পুলিশ। শাহবাগ থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখার উপপরিদর্শক মো. জিন্নাহ এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, গত ১ জানুয়ারি এই প্রতিবেদন জমা পড়ে। প্রতিবেদন জমা দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও শাহবাগ থানার পরিদর্শক মো. আসাদুজ্জামান।
জানা গেছে, অভিযুক্ত ২১ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৬ জন কারাগারে এবং ১৫ জন বর্তমানে পলাতক রয়েছেন। তবে চার্জশিটে কোনো অভিযুক্তের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার কথা উল্লেখ করা হয়নি।
কারাগারে থাকা ৬ জন হলেন জালাল মিয়া, আহসান উল্লাহ ওরফে বিপুল শেখ, আল হোসেন সাজ্জাদ, মোত্তাকিন সাকিন সাহ, মো. সুমন মিয়া ও ওয়াজিবুল আলম। তারা ইতোমধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন।
পলাতক ১৫ জন হলেন ফিরোজ কবির, আবদুস সামাদ, সাকিব রায়হান, ইয়াসিন আলী গাইন, ইয়ামুজ্জামান ইয়াম, ফজলে রাব্বি, শাহরিয়ার কবির শোভন, মেহেদী হাসান ইমরান, রাতুল হাসান, সুলতান মিয়া, নাসির উদ্দিন, মোবাশ্বের বিল্লাহ, শিশির আহমেদ, মহসিন উদ্দিন ও আব্দুল্লাহিল কাফি।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা গেছে, তোফাজ্জল হোসেন গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাত ৮টার দিকে বঙ্গবাজার এলাকার পার্শ্ববর্তী ফজলুল হক হলের ফটক দিয়ে মাঠের ভেতরে প্রবেশ করেন। তখন কয়েকজন শিক্ষার্থী চোর সন্দেহে তাকে আটক করে হলের অতিথি কক্ষে নিয়ে যান। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তাকে মারধর করা হয়। পরে তাকে হলের ক্যান্টিনে নিয়ে রাতের খাবার খাওয়ানো হয়।
এরপর আবার তাকে হলের অতিথি কক্ষে এনে ব্যাপকভাবে মারধর করেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। পরে রাত ১২টার দিকে হলের কয়েকজন আবাসিক শিক্ষক তোফাজ্জলকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার পরিদর্শক মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে তোফাজ্জল হোসেনকে পিটিয়ে হত্যার সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ জন ছাত্রের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। ওই ২১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। আদালত চার্জশিটের শুনানির জন্য আগামী ২ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেছেন।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর তোফাজ্জল হোসেনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পরে ১৯ সেপ্টেম্বর শাহবাগ থানায় অজ্ঞাত দুষ্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দায়ের করা মামলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ শিক্ষার্থীকে আসামি করা হয়।
শেখ হাসিনার শাসনামলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের ‘সন্ত্রাসী’ কর্মকাণ্ডের যথাযথ বিচার ও সন্ত্রাসীদের সাজা নিশ্চিত করার দাবিতে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। আজ শনিবার দুপুর ২টায় এ কর্মসূচি পালন করবে সংগঠনটি।
গতকাল শুক্রবার ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক (সহসভাপতি পদমর্যাদা) মো. জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার শাসনামলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের যথাযথ বিচার ও সন্ত্রাসীদের সাজা নিশ্চিত করা, একইসঙ্গে জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে ভূমিকা পালনকারীদের তদন্ত সাপেক্ষে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি পালন করবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।
আরও বলা হয়, শনিবার দুপুর ২টায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার অভিমুখে এ কর্মসূচি শুরু হবে।
ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির ছাত্রদলের সব নেতাকর্মীসহ ছাত্রসমাজকে মিছিলে অংশগ্রহণ করার অনুরোধ জানিয়েছেন।
এর আগে গত ৩১ জুলাই দেশের সব আদালত, ক্যাম্পাস ও রাজপথে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি পালন করে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’। সারা দেশে ‘ছাত্র-জনতা হত্যা, গণগ্রেপ্তার, হামলা, মামলার’ প্রতিবাদে ও জাতিসংঘের অধীনে ঘটনার তদন্ত করে বিচার এবং ৯ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে এই কর্মসূচির ডাক দিয়েছিলেন তারা। ওই কর্মসূচিতে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করার জন্য পুলিশ লাঠিপেটা, সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। আটক করা হয় অনেককে।
দেশের ৬৮ শতাংশ মানুষ রাষ্ট্রপতি পদে নির্দলীয় ব্যক্তিকে দেখতে চান। সম্প্রতি নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার বিষয়ে জাতীয় জনমত জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
জরিপটি পরিচালনা করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার প্রস্তাব তৈরির লক্ষ্যে গত ২০ থেকে ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন এই জরিপ চালায়। ইতোমধ্যে জরিপের খসড়া প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।
খসড়া প্রতিবেদনে দেখা গেছে, নির্দলীয় ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি দেখতে চান দেশের ৬৮ শতাংশ মানুষ। আর প্রায় ২৯ শতাংশ মানুষ চান দেশের রাষ্ট্রপতি হবেন একজন দলীয় ব্যক্তি। জনগণের সরাসরি ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করার পক্ষে মত দিয়েছেন প্রায় ৮৩ শতাংশ মানুষ। এ ছাড়া ১৩ শতাংশ মানুষ চান সংসদ সদস্যদের ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হোক।
জরিপে আরও দেখা যায়, আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন করার বিষয়ে সমর্থন জানিয়েছেন ৬৫ শতাংশ মানুষ। ৬৩ শতাংশ মানুষ রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তিক ছাত্রসংগঠন থাকার বিষয়টি সমর্থন করেন না। তবে প্রায় ৩১ শতাংশ মানুষ এটিকে সমর্থন করেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, জরিপে নমুনায়নের মাধ্যমে ৪৬ হাজার ৮০টি সাধারণ খানা (পরিবার বা যারা এক চুলায় রান্না করেন) থেকে উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়। প্রতিটি খানা থেকে ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সি নাগরিকদের মধ্যে ‘কিশ গ্রিড সিলেকশন’ পদ্ধতিতে একজন নির্বাচিত উত্তরদাতার কাছ থেকে নির্ধারিত প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়। অর্থাৎ ৪৬ হাজার ৮০ জন মানুষ এই জরিপে অংশ নিয়েছেন।
জরিপে রাষ্ট্রপতি হিসেবে প্রত্যাশিত ব্যক্তির ধরন সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। এখানে চারটি উত্তর থেকে যেকোনো একটি বেছে নেওয়ার সুযোগ ছিল। সেগুলো হলো দলীয়, নির্দলীয়, জানি না ও উত্তর দিতে ইচ্ছুক নই। উত্তরদাতাদের ২৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ দলীয় ব্যক্তির পক্ষে, ৬৮ দশমিক ২৮ শতাংশ নির্দলীয় ব্যক্তির পক্ষে মতামত দিয়েছেন। ২ দশমিক ৩৯ শতাংশ বলেছেন, তারা এ বিষয়ে জানেন না। আর ১ শতাংশের কিছু কম ব্যক্তি উত্তর দিতে ইচ্ছুক নন বলে জানান।
নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার পক্ষে মত দেন প্রায় ৪৭ শতাংশ উত্তরদাতা। আর ৪৪ শতাংশ জেলা প্রশাসকদের রিটার্নিং কর্মকর্তা করার পক্ষে মত দেন।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনো আসনে প্রদত্ত ভোট ৫০ শতাংশের কম হলে ওই আসনে পুনর্নির্বাচনের পক্ষে মত দেন ৭৮ শতাংশ মানুষ। বিপক্ষে মত দেন ১৭ শতাংশ। সংস্কার কমিশন তাদের সুপারিশে ৪০ শতাংশের কম ভোট পড়লে পুনর্নির্বাচন আয়োজনের সুপারিশ করেছে।
নির্বাচনে ‘না’ ভোট জয়ী হলে পরাজিত প্রার্থীদের বাদ দিয়ে নতুন নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে মত দেন ৭৮ শতাংশ মানুষ। এর বিপক্ষে ছিলেন প্রায় ১৭ শতাংশ। সংস্কার কমিশন তাদের সুপারিশে এটি রেখেছে।
জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন ১০০টিতে উন্নীত করে নির্দিষ্ট নির্বাচনী এলাকা থেকে সরাসরি ভোটে নির্বাচনের পক্ষে মত দেন প্রায় ৭৪ শতাংশ। আর প্রায় ২০ শতাংশ ছিলেন বিপক্ষে।
বিদেশে রাজনৈতিক দলের শাখা রাখার বিষয়টিকে সমর্থন করেন না ৫০ শতাংশ উত্তরদাতা। আর ৪২ শতাংশ উত্তরদাতা বিদেশে দলের শাখা থাকার বিষয়টিকে সমর্থন করেন। ৮৭ শতাংশ মানুষ প্রবাসীদের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে ইলেকট্রনিক ভোট আয়োজনের পক্ষে মত দিয়েছেন।
জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, স্থানীয় সরকার নির্বাচন নির্দলীয় করার পক্ষে মত দিয়েছেন প্রায় ৭০ শতাংশ। আর দলীয় প্রতীকে এই নির্বাচন করার কথা বলেছেন প্রায় ২৮ শতাংশ। অন্যদের এ বিষয়ে জবাব ছিল ‘না’ বা তারা ‘জানেন না’ বলে উত্তর দেন।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদের সময়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকারের সব স্তরের নির্বাচন করার পক্ষে মত দেন ৬৪ দশমিক ৯৭ শতাংশ এবং বিপক্ষে মত দেন প্রায় ২৯ শতাংশ মানুষ।
সারা দেশে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সারাদিনে সড়ক দুর্ঘটনায় ৯ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এর মধ্যে রাজধানীতে পৃথক ঘটনায় দুজন, গোপালগঞ্জ ও চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ছয় জন এবং বরিশালের বাকেরগঞ্জে বাস-ট্রাক সংঘর্ষে মারা গেছেন আরও এক ট্রাক চালক।
জানা গেছে, রাজধানীতে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহীসহ দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে মিরপুরের কালশী ও আসাদগেট এলাকায় এসব দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন, সিয়াম (১৫) নামে এক কিশোর ও সিএনজি আরোহী আদম আলী (৫৫)। এ ঘটনায় আরও তিনজন আহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে মিরপুর কালশী কালশী ফ্লাইওভারের নিচে একটি ট্রাকের ধাক্কায় মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে পড়ে আহত হন সিয়াম (১৫) নামে এক কিশোর। তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসলে রাত সাড়ে ১২টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
সিয়ামের বন্ধু সিরাজুল জানান, সিয়াম রূপনগর ইস্টার্ন হাউজিং এলাকায় থাকতো। সে একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতো। রাতে আরেক বন্ধুর মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরতে বের হয়। মিরপুর কালশী ফ্লাইওভারের নিচে আসলে একটি ট্রাকের ধাক্কায় ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত হয় সিয়াম। খবর পেয়ে দ্রুত সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেলে নিযে আসলে মারা যায়।
একই রাত আড়াইটার দিকে আসাদগেট এলাকায় ট্রাক ও সিএনজি চালিত অটোরিকশা সংঘর্ষে আরোহী আদম আলী (৫৫) আহত হন। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভোর সাড়ে ৪টার দিকে মারা যান। এ ঘটনায় নিহত আদম আলী ছেলে সাকের আলী (১৬), ভাতিজা নবী হোসেন (৪৫) ও মেয়ের জামাই সাখাওয়াত হোসেন (৩৫)। তাদের সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
নিহত আদম আলীর ভাতিজা মাসুম জানান, তাদের বাড়ি ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলার নবীনগর থানার মুক্তা রামপুর গ্রামে। তার চাচা আদম আলী এলাকায় কাপড়ের ব্যবসা করতেন। গতকাল (বৃহস্পতিবার) বাড়িতে আমার চাচাতো ভাই শাকের আলী বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে নিয়ে চাচা প্রথমে ধানমন্ডির পপুলার হাসপাতালে যান। পরে সেখান থেকে ইবনে সিনা হাসপাতালে নেওয়ার পথে আসাদ গেট এলাকায় একটি ট্রাক সিএনজিটিকে ধাক্কা দেয়। এতে সিএনজিতে থাকা ৪জন আহত হয়। পরে পথচারীরা তাদের উদ্ধার করে প্রথমে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে তার চাচা আদম আলীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভোরে মারা যান।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. ফারুক মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, রাতে মিরপুর ও আসাদগেট এলাকা থেকে দুজনকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। মরদেহ দুটি ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে রাখা হয়েছে।
এদিকে, গোপালগঞ্জে নিহত হয়েছেন দিপু দাস, বিশাল নাগ ও হৃদয় মৃধা। শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) সকালে কুয়াশার মধ্যে কাশিয়ানী উপজেলার ‘পোনা’ গ্রাম থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে নিহত এই তিন যুবক খেজুরের রস খাওয়ার জন্য যাচ্ছিলেন পাশের জেলা ফরিদপুরের বোয়ালমারীর কালিনগরে। পথে মোটরসাইকেলটি ঢাকা খুলনা মহাসড়কের হিরণ্যকান্দি এলাকায় পৌঁছলে খুলনাগামী একটি বাসের সাথে সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই দিপু এবং বিশাল নিহত হন। গুরুতর আহত অবস্থায় হৃদয়কে কাশিয়ানী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নেয়া হলে চিকিৎসক তাকেও মৃত ঘোষণা করেন।
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের মায়ানী ইউনিয়নের বড়ুয়া পাড়ার রুবেল বড়ুয়া, নিপ্পু বড়ুয়া ও সনি বড়ুয়া সকালে মোটরসাইকেল নিয়ে সুফিয়া রোডের একটি হোটেলে নাস্তা শেষে বাড়ি ফেরার পথে দ্রুতগামী একটি বাস তাদের ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলেই তারা মারা যান।
এছাড়া নারায়ণগঞ্জ ট্রাভেলসের একটি বাস ঢাকা থেকে কুয়াকাটা যাওয়ার পথে রাত সাড়ে তিনটার দিকে বরিশাল কুয়াকাটা মহাসড়কের বাকেরগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডের কাছে পৌঁছলে একটি ট্রাকের সাথে সংঘর্ষ হয়। এতে নিহত হন ট্রাক চালক মাহাবুব হোসেন। আহত হন বাস ও ট্রাকের ১০ যাত্রী।
বাকেরগঞ্জ থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ ফোরকান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তাছাড়া নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল-পাঁচদোনা আঞ্চলিক সড়কে দুই ট্রাক ও বাসের ত্রিমুখী সংঘর্ষে ৮ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। সকালে ভাগদী কদম তলা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন ‘এন্টি ফ্যাসিস্ট কোয়ালিশন’ নামের সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। এ সময় তারা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর কুশপুত্তলিকাও দাহ করেন।
জানা গেছে, জাতীয় পাঠ্যপুস্তক থেকে ‘আদিবাসী গ্রাফিতি’ বাদ দেওয়ার প্রতিবাদে রাজধানীর মতিঝিলে এনসিটিবির সামনে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে হামলা ও হাইকোর্ট মোড়ে পুলিশের লাঠিপেটার দায় নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের এ দাবি করেন শিক্ষার্থীরা।
গতকাল শুক্রবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রাজু ভাস্কর্যের সামনে এ বিক্ষোভ সমাবেশ ও কুশপুত্তলিকা দাহ কর্মসূচি পালন করা হয়।
এ সময় শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার বিপরীতে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়া, জুলাই অভ্যুত্থানের গণহত্যায় অংশ নেওয়া পুলিশের বিচার নিশ্চিতকরণে অক্ষমতা ও দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার দায়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করেন।
পরপর দুই দিন দুটি স্থানে হামলা ও লাঠিপেটার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায়ও তারা এই দাবি করেছেন।
বিক্ষোভ সমাবেশে অ্যান্টি ফ্যাসিস্ট কোয়ালিশনের বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক তাসনিম বিন মাহফুজ বলেন, ‘পুলিশ জুলাইয়ের ব্যর্থতার ক্ষোভ এখনো মেটাচ্ছে, এসবের দায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এখনো কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে সর্বোচ্চ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। তাই স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে ব্যর্থতার দায় নিয়ে পদত্যাগ করতে হবে। পাশাপাশি অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।’
তাসনিম বিন মাহফুজ আরও বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের জন্য বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অপরাধই যথেষ্ট। পুলিশ এর আগেও প্রথম আলো অফিসের সামনে নিরস্ত্র মানুষের ওপর হামলা চালিয়েছে, প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে নির্বিচারে হামলা চালিয়েছে। এসবের কোনো বিচার হচ্ছে না। পুলিশকে এই অনুমতি কে দিয়েছে! পুলিশের এ রকম ফ্যাসিবাদী আচরণ বন্ধের জন্য স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছেন না। যে উপদেষ্টা তার দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না, তার দায়িত্ব পালন করার প্রয়োজন নেই।’
বিক্ষোভ সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন জেনারেল সেক্রেটারি এস এম তানিম, নির্বাহী সদস্য তৌকির উদ্দিন, মোয়াজ আব্দুল্লাহ প্রমুখ।
জেনারেল সেক্রেটারি এস এম তানিম বলেন, ‘জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার ওপর পুলিশি হামলার কোনো বিচার এখনো হয়নি। পুলিশের কাজ হলো মানুষের নিরাপত্তা দেওয়া, অথচ পুলিশের কাছে মানুষ অনিরাপদ। পুলিশের সংস্কার নিয়েও আমাদের কথা বলতে হবে, তারা এখনো ফ্যাসিবাদী কায়দায় মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে। এসবের দায় নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে পদত্যাগ করতে হবে।’
বিক্ষোভ সমাবেশে অ্যান্টি ফ্যাসিস্ট কোয়ালিশনের নেতা-কর্মী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজীম আহমদ সোহেলের সম্প্রতি বাগদান-বিয়ে নিয়ে নেট দুনিয়ায় কম আলোচনা হয়নি। ‘আয়রন গার্ল’খ্যাত শাহনাজ পারভীন শিমুকে বিয়ে করা নিয়ে নেটিজেনদের শুভেচ্ছায় ভেসেছেন সোহেল তাজ।
বেশ কয়েকদিন আগে রাজধানীতে অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ৫৫ বছর বয়সী সোহেল তাজ বাগদান সম্পন্ন করেন। তখন থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার বিয়ে নিয়ে নানা কথা বলাবলি হচ্ছিল। সেসব আলোচনা-সমালোচনাকে তিনি খুব একটা পাত্তা দেননি।
এবার প্রকাশ্যে এলো তাদের বিয়ের ফটোশুটের ছবি। ছবিগুলো প্রকাশ করেছে ওয়েডিং ফটোগ্রাফি প্রতিষ্ঠান ড্রিম ওয়েভার। প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার ও প্রধান ফটোগ্রাফার মো. মাকসুদুর রহমানও তার ওয়ালে ছবিগুলো শেয়ার করে জানিয়েছেন, সোহেল তাজ ও শাহনাজ পারভীন শিমুর বিয়ের ফটোশুটের তথ্য জানায়।
আজ শুক্রবার দুজনের বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে সোহেল তাজের বিয়ের ছবি ছড়িয়ে পড়েছে। বিয়ের সমস্ত আয়োজন ছিল রাজধানীর বনানীর একটি রেস্তোরাঁয়। একটি ভিডিওতে মালাবদল করতে দেখা যায় সোহেল তাজ ও শিমুকে। শিমুর বিয়ের পোশাকের সঙ্গে থাকা ওড়নায় লেখা ছিল ‘সোহেল তাজের বৌ শিমু’।
এর আগে, ধানমন্ডিতে নিজের ফিটনেস সেন্টার ইন্সপায়ারে হাস্যোজ্জ্বল ভঙ্গিতে হাঁটু গেড়ে বসে তার ফিটনেস সেন্টারের ট্রেইনার শাহনাজ পারভীন শিমুর হাতে আংটি পরিয়ে বাগদান সম্পন্ন করেন সোহেল তাজ।
সে সময় বাগদানের সত্যতা নিশ্চিত করে সোহেল তাজের সাবেক ব্যক্তিগত সহকারী আবু কাউছার জানিয়েছিলেন, আমিও বাগদানের সময় উপস্থিত ছিলাম। এ সময় সোহেল তাজের ছেলে ব্যারিস্টার তুরাজ তাজ, ছেলের বউ, নাতিসহ বন্ধু ও ফিটনেস সেন্টারের সবাই উপস্থিত ছিলেন। বাগদানের সেই ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভাইরালও হয়।
জানা গেছে, ঠাকুরগাঁওয়ের মেয়ে শিমু মা ও দুই ভাইকে নিয়ে ঢাকায় বসবাস করেন। দীর্ঘদিন ধরে একসঙ্গে কাজ করার সুবাদে সোহেল তাজের সঙ্গে তার সখ্যতা গড়ে ওঠে। তারই ধারাবাহিকতায় উভয় পরিবারের সম্মতিতে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া।
বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী শহিদ তাজউদ্দীন আহমদের ছেলে সোহেল তাজ ২০০১ সালের নির্বাচনে কাপাসিয়া থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন । ২০০৮ সালে একই আসন থেকে সংসদ সদস্য হন। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভায় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি। একই বছরের ৩১ মে মন্ত্রিসভা থেকে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে তিনি পদত্যাগ করেন। ২০১২ সালের ২৩ এপ্রিল সংসদ সদস্য পদও ছাড়েন। এরপর রাজনীতি থেকে অনেকটাই দূরে রয়েছেন সোহেল তাজ। কয়েক বছর ধরে ফিটনেসের দিকে তিনি বেশি মনোযোগী।
সুইজারল্যান্ডের ডাভোসে অনুষ্ঠেয় ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দিতে সুইজারল্যান্ডে যাচ্ছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ৪ দিনের সফরে আগামী ২০ জানুয়ারি দিবাগত রাতে দাভোসের উদ্দেশে তার ঢাকা ছাড়ার কথা রয়েছে।
ইউএনবি জানিয়েছে, গতকাল বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মোহাম্মদ রফিকুল আলম সচিবালয়ে সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানান। ডাভোসে ‘শেপিং দ্য ইন্টেলিজেন্ট এজ’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে এবার ২১ থেকে ২৪ জানুয়ারি সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানান, সুইজারল্যান্ড সফরকালে প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হবেন আন্তর্জাতিকবিষয়ক বিশেষ দূত এবং এসডিজিবিষয়ক প্রিন্সিপাল কোওর্ডিনেটর। সফরকালে প্রধান উপদেষ্টা বিভিন্ন সেশনে অংশগ্রহণ করবেন।
এছাড়াও উপদেষ্টা সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানসহ গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাত করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর এটি হবে তার চতুর্থ ও এ বছরের প্রথম বিদেশ সফর। গত বছরের ৮ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দেন তিনি। সেটি ছিল সরকার প্রধান হিসেবে তার প্রথম বিদেশ সফর। দ্বিতীয় সফরে নভেম্বরে আজারবাইজানে কপ-২৯ সম্মেলনে যোগ দেন তিনি। সবশেষ প্রধান উপদেষ্টা ডি-৮ সম্মেলনে যোগ দিতে ডিসেম্বরে মিশর সফর করেন। তিনটি সফরেই বহুপক্ষীয় ফোরামের অংশগ্রহণ ছিল। তবে এখন পর্যন্ত ড. ইউনূস দ্বিপক্ষীয় কোনো সফর করেননি। এদিকে আরেকটি গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, দাভোসে ফোরামের সাইডলাইনে জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস, বেলজিয়ামের রাজা ফিলিপ, থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন ইউনূস। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাগনেস ক্যালামার্ড ছাড়াও কয়েকটি সংস্থা প্রধান, বিভিন্ন কোম্পানির প্রধান নির্বাহী এবং চেয়ারম্যান ও উদ্যোক্তারা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। পাশাপাশি কয়েকটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেওয়ার কথা রয়েছে ড. ইউনূসের।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, এটা একটা ব্যবসায়িক ফোরাম বা প্ল্যাটফর্ম। ফোরামে ফোকাস থাকবে ব্যবসা বা বিনিয়োগ নিয়ে। বিভিন্ন কোম্পানি তাদের সঙ্গে অর্থনৈতিক বা বিনিয়োগ সম্পৃক্ত বিষয়ে আলোচনা করবেন। অর্থনীতি নিয়ে কাজ করাদের অনেকে ফোরামে আসবেন, প্রধান উপদেষ্টা তাদের সঙ্গে হয়ত মতবিনিময় করবেন। বিভিন্ন কোম্পানি বা ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার একটা সুযোগ পাওয়া যাবে ফোরামে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রধান উপদেষ্টার পূর্ণাঙ্গ সফর সূচি নিয়ে এখনও কাজ করছেন উপদেষ্টার কার্যালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্টরা গুরুত্ব বিবেচনায় কর্মসূচিতে যোজন-বিয়োজন করছেন। আশা করা হচ্ছে, দাভোসে অনুষ্ঠেয় সম্মেলনে বিশ্বের শতাধিক রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান অংশ নেবেন। ফোরামে জি-৭ ও জি-২০ দেশগুলোর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রধানরা উপস্থিত থাকবেন। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিভিন্ন কোম্পানি, ব্যবসায়ী, বিনিয়োগকারী ও উদ্যোক্তারা অংশগ্রহণ করবেন। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে আগামী ২৪ জানুয়ারি দাভোস থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা রয়েছে ড. ইউনূসের।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ৫ আগস্ট ছিল আমাদের ঐক্যবন্ধ হওয়ার প্রতীক। ওই দিনের পুরো অনুভূতিটাই ছিল একতার অনুভূতি। তাই এখন কিছু করতে হলে সবার মতামতের ভিত্তিতে করতে হবে। কাজেই জুলাই ঘোষণাপত্র সবার মতমতের ভিত্তিতে করতে চাই।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর হেয়ার রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠকের শুরুতে তিনি এসব কথা বলেন।
রাজনৈতিক নেতাদের উদ্দেশ্যে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনাদের সঙ্গে দেখা হলে, বসতে পারলে খুব ভালো লাগে। মনে সাহস পাই। কারণটা পরিষ্কার, এ সরকারের জন্ম হয়েছে ঐক্যের মাঝখানে, এটি ঐক্যের দ্বারা সৃষ্টি। যখন আমরা নিজেরা নিজেরা কাজ করি, যখন দেখি একা পড়ে গেছি, আশেপাশে কেউ নেই আপনারা, তখন একটু দুর্বল মনে হয়। যখন আবার সবাই একসঙ্গে কাজ করি, তখন মনের মধ্যে সাহস বাড়ে, মনে হয় একতাবদ্ধ আছি। একতাতে আমাদের জন্ম। একতাই আমাদের শক্তি।’
জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মাঝখানে একদিন ছাত্ররা এসে বলল, তারা একটা ঘোষণপত্র দেবে। আমাকেও সেখানে থাকতে হবে। বুঝতে চাইলাম কী ঘোষণাপত্র দিচ্ছে, তারা বলল। আমি বললাম, এটা হবে না। আমার চাওয়াটা হবে না, তোমাদের চাওয়াটাও হবে না। তোমরা যদি ৫ আগস্টে ফিরে যেতে চাও, সেদিনের পরিপ্রেক্ষিতে যা হয়েছিল সেটাকে রিক্রিয়েট করতে হবে। একা এটা করা যাবে না। ওইদিনের পুরো অনুভূতিটাই ছিল একতার অনুভূতি। কেউ বলে নাই তুমি অমুক, তুমি অমুক। কাজেই তোমরা করতে চাইলে সবাইকে নিয়েই করতে হবে- এটা পরিষ্কার। না করলে এটা ঠিক হবে না।’
জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র সবার মতামতের ভিত্তিতে করার ওপর গুরুত্বারোপ করে ড. ইউনূস আরও বলেন, ‘শুধু ছাত্ররা করলে, যে একতা দিয়ে তোমরা ৫ আগস্ট সৃষ্টি করেছিলে সেটার অবমাননা হবে। তারা আমার কথায় খুব খুশি হয়নি। কিন্তু ক্রমে তারা বুঝল, ৫ আগস্ট রিক্রিয়েট করতে হলে এভাবে করতে হবে। সেই কথা থেকে এ আলাপ শুরু। আজকের আলোচনা একে কেন্দ্র করেই হবে। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে করতে না পারলে উদ্দেশ্যে ব্যাহত হবে। দরকারও নেই। ঐক্যের মাধ্যমে করলে সবার মনে সাহস আসবে।’
সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এক থাকলে সবাই ভাববে আমরা তো জেগে আছি এখনও। আমরা ভোতা হয়ে যাইনি। আমাদের অনুভূতি ভোতা হয়নি এখনও, এখনও চাঙা আছে। আমরা জাতি হিসেবে ঐক্যবদ্ধ আছি।’
প্রধান উপদেষ্টা দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, ‘আমি যতদিন আছি, একতা নিয়ে থাকব। কাজেই সেই পথেই আমাদের চলতে হবে। যখন আপনাদের (রাজনৈতিক নেতারা) সঙ্গে বসি, তখন সেই সাহসটা দেন। আজকে আপনাদের দেখে খুবই সাহসী মনে হচ্ছে। ৫ আগস্টের কথা স্মরণ করে আমরা একতাবদ্ধ আছি। সেই একতাকে কীভাবে মানুষের সামনে প্রকাশ করব, ৫ আগস্টকে রিক্রিয়েট করব, সেটি এখন আলাপের বিষয়বস্তু হবে।’
গণঅভ্যুত্থানের ঘটনাবলি স্মরণ রাখার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে তিনি বলেন, অভ্যুত্থানের সময় যে যেখানে ছিলাম, তখন আমাদের মনের মধ্যে অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষা ছিল। আমরা কোনরকম সেই মুহূর্তে ফিরে যেতে পারি কি না, ঐতিহাসিকভাবে মুহূর্তটি যেন হারিয়ে না যায়। ফিরে যাওয়া বলতে বলছি, আমরা কিসের জন্য এটা করেছিলাম, কী উন্মাদনা আমাদের মধ্যে ছিল। সেই উন্মাদনা রেকর্ড করে রাখা, যাতে গোটা জাতি সেই মুহূর্তের বিষয় কী ছিল তা ভবিষ্যতে জানতে পারে।
তিনি আরও বলেন, সেখানে বর্তমানের অনেক কথা এখানে ঢুকাবেন না, অতীতের কথা ঢুকাবেন না। ওই দিনের মুহূর্তে যে আকাঙ্ক্ষা, যে যাতনা, যে উৎসাহ, বিপ্লবী অনুভূতি ছিল, সেগুলো যেন আমরা তুলে ধরি। কিছু বিষয় উচ্চারিত ছিল, কিছু অনুচ্চারিত ছিল, কিন্তু মনের মধ্যে ছিল। কাজেই সেগুলোকে রেকর্ড করা।
জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রের কথা উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, যে নামেই এটাকে অভিহিত করেন, সে নামটা বের করতে পারব-আজকে সবাই আমরা সে বিষয়ে একমত হলাম। মূল কথা আসল জিনিসটা যেন হারিয়ে না যায়। যে জিনিসটা অনন্য হয়ে আছে, সেটাকে আমরা লিখিতভাবে রাখি। এমন না হয় আমরা চলে গেলে কেউ মনে করতে পারল না কী হয়েছিল। এটা কি হঠাৎ করে হয়েছিল, নাকি এর পেছনে অনেক জিনিস ছিল, যা ওই মুহূর্তে বিস্ফোরিত হয়েছিল।
বৈঠকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), জামায়াতে ইসলামী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, নাগরিক কমিটিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিকদল ও অংশীজনরা অংশগ্রহণ করেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কর্তব্যরত অবস্থায় আহত ও অসুস্থ পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসার জন্য এবং নিহত পুলিশ সদস্যদের পরিবারের সহায়তার জন্য ডিএমপির কল্যাণ তহবিল থেকে ৭৫ লাখ ৯৭ হাজার ২৯২ টাকার আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার ডিএমপি সদর দপ্তরের সম্মেলন কক্ষে আহত ও অসুস্থ পুলিশ সদস্যদের এবং নিহত পুলিশ সদস্যদের পরিবারের কাছে আর্থিক অনুদানের অর্থ তুলে দেন ডিএমপি কমিশনার শেখ মো.সাজ্জাত আলী।
এ সময় আহত, অসুস্থ পুলিশ সদস্যদের সুস্থতা ও নিহত পুলিশ সদস্যদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ডিএমপির নিজস্ব কল্যাণ ফান্ড থেকে আপনাদের আজ এ আর্থিক সহায়তা দিচ্ছি। কল্যাণ ফান্ডের অর্থ আসে ডিএমপির কর্মরত পুলিশ সদস্যদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে। এ ফান্ড যাতে আরও বাড়ানো যায় সে লক্ষ্যে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আপনারা চিকিৎসা করতে গিয়ে অনেক টাকা খরচ করেছেন। সেই তুলনায় আমাদের সাহায্যের পরিমাণ সীমিত। অসুস্থতার ধরন ও গুরুত্ব বিবেচনা করে আপনাদের এ আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়েছে। কর্তব্যরত অবস্থায় আহত পুলিশ সদস্যদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দিক-নির্দেশনা দেন ডিএমপি কমিশনার।
তিনি আরও বলেন, আপনারা যখন ডিউটিতে মোতায়েন থাকেন তখন প্রয়োজনে মাস্ক ব্যবহার করবেন। এতে ধুলাবালি থেকে সুরক্ষা পাবেন। শারীরিক সুস্থতার জন্য স্বাস্থ্য সচেতন হতে হবে। নিজের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে নিজেকে সচেতন থাকতে হবে।
উল্লেখ্য, গত ৮ জানুয়ারি ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলীর সভাপতিত্বে কল্যাণ তহবিল ব্যবস্থাপনা পরিষদের ৭৫তম সভায় ১৫৯ জন পুলিশ সদস্যের অনুকূলে ৭৫ লাখ ৭৭ হাজার ২৯২ টাকার আর্থিক অনুদান মঞ্জুর করা হয়।