একটা সময় ছিল যখন দেশের অনেক মানুষ মনে করতেই পারত না যে একজন নারী বিচারক হতে পারেন। সেই দেশে এখন বিচার বিভাগে ৫৮০ জন নারী বিচারক বিচারিক কাজে যুক্ত রয়েছেন। বিচার বিভাগে নিয়োগ পরীক্ষায় মেধাতালিকায় এখন নারীরাই এগিয়ে থাকেন। এটাই কম কীসের। এটাই আমাদের সফলতা।
৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে দৈনিক বাংলার সঙ্গে এক আলাপচারিতায় এমনটিই বলছিলেন ৪১ বছরের দীর্ঘ বিচারিক জীবন থেকে অবসর নেয়া আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ।
অবসরপ্রাপ্ত এ বিচারপতি বলেন, ‘দেশের বিচারাঙ্গনে পুরুষ বিচারকদের যাত্রা ১৯৭২ সালে শুরু হলেও নারীর যাত্রা শুরু হয়েছিল তার তিন বছর পর, ১৯৭৫ সালে। শুরুতেই পুরুষদের চেয়ে আমরা তিন বছর পিছিয়ে আছি। তবে বর্তমানে নারী বিচারকের সংখ্যা অনেক বাড়ছে। এটা কোনো নারী কোটায় নয়। বরং সম্মিলিত মেধাক্রম অনুসারেই নারীরা এগিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি মেধাক্রমের প্রথম সারিতেই নারীদের অবস্থান।’
নিজের জীবনের গল্প তুলে ধলে কৃষ্ণা দেবনাথ বলেন, ‘আমি নারী বিচারক হিসেবে যাত্রা শুরু করেছি ১৯৮১ সালে। প্রথম এসেছিলেন নাজমুন আরা সুলতানা, দ্বিতীয়ত যাত্রা শুরু করেছিলেন বিচারপতি জিনাত আরা। আর তৃতীয় হিসেবে যুক্ত হই আমি। সৌভাগ্যের ব্যাপার হলো আমরা তিনজনই আপিল বিভাগ থেকে অবসরে গিয়েছি। এটা ভাবতে ভালো লাগে।’
অবসরপ্রাপ্ত এ বিচারপতি মনে করেন, নারী বিচারকদের প্রধান প্রতিবন্ধকতা হয়, তাদের সাংসারিক জীবন নিয়ে। কেননা এটা বদলি চাকরি। এক জেলা থেকে আরেক জেলায় বদলির কারণে সংসারটা বিছিন্ন হয়ে যায়, যা অনেক কষ্টসাধ্য হয়। যদিও বিষয়টি ক্রমান্বয়ে ঠিক হয়ে আসছে।
নিজের উদাহরণ দিয়ে কৃষ্ণা দেবনাথ বলেন, ‘আমি সারাজীবন আমার বাচ্চা দুটো ছাড়াই বিভিন্ন জেলায় বিচারিক কাজ পরিচালনা করেছি। সন্তানকে তার বাবার কাছে রেখে দেশের বিভিন্ন জেলায় বদলি হয়ে কাজ করতে হয়েছে। প্রথম বদলি রাজশাহীতে, তার পর গাজীপুর, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, জামালপুর, ঢাকা, কুমিল্লা, সিলেট, মানিকগঞ্জ, আবার জামালপুর, মেহেরপুর হয়ে ফের ঢাকায় আসি।’
‘আমি যখন কুমিল্লায় বদলি, তখন আমার বড় মেয়ে অনেক অসুস্থ হয়ে পড়ে। চিকিৎসক বললেন, মেয়ের চিকিৎসার জন্য তার মায়ের সেবা প্রয়োজন। আমি যখন ছুটি চাইলাম ছুটি হলো না। ১৯৯৪ সালের দিকে কথা। তখন সুপ্রিম কোর্ট থেকে অনুমতি নিয়ে ছয় মাস আমি ঢাকা-কুমিল্লা আসা-যাওয়া করে বিচারিক কাজ পরিচালনা করেছি। এই ছয় মাস ভোর ৪টায় উঠে সব খাবার তৈরি করে ভোর ৫টার সময় সায়েদাবাদে বাসে উঠে কুমিল্লা যেতাম। সকাল ৯টার মধ্যে কুমিল্লা পৌঁছাতাম। অনেক দিন এমন গেছে যে, কুমিল্লা থেকে রওনা দিয়ে ঢাকার বাসায় পৌঁছাতে রাত ১২টা বেজে যেত। কোনো রকম রাতে দুই ঘণ্টা ঘুমিয়ে আবার ভোরে কুমিল্লার উদ্দেশে যাত্রা করতাম। এভাবে ছয় মাস আমাকে অক্লান্ত পরিশ্রম করে পেশাগত কাজ চালিয়ে যেতে হয়েছে। একজন নারী এবং মা বলেই কিন্তু আমাকে এতটা পরিশ্রম করতে হয়েছে। পুরুষ হলে হয়তো এতটা পরিশ্রম করতে হতো না। কেননা, তখন আমার মেয়ের জন্য তার মায়ের সাহচর্য বেশি প্রয়োজন ছিল। এভাবে নারীদের জন্য কখনো কখনো অনেক বেশি পরিশ্রম বা কণ্টকাকীর্ণ হয়ে পড়ে তার পেশা পরিচালনায়।’
কৃষ্ণা দেবনাথ বলেন, ‘এখন আমরা যতই দিবস বলি বা যাই বলি, মা একটি সংসারের প্রাণকেন্দ্র। যতই আপনি সমঅধিকারের কথা বলেন না কেন, দিন শেষে একটি পরিবারে মায়ের পৃথক গুরুত্ব, বাবারও অনেক গুরুত্ব। আমি যতই জজ হই বা যা কিছুই হই, সবার আগে আমি মা। একজন নারী বিচারক বা পুরুষ বিচারকের মধ্যে রাষ্ট্রীয় কোনো বৈষম্য নেই। তবে পারিবারিক যে মায়ের দায়িত্ব রয়েছে সেই দায়িত্ব তো মা এড়িয়ে যেতে পারেন না।’
এরপর আরেকটি গল্প বলেন কৃষ্ণা দেবনাথ, “১৯৮৪ সালের দিকে আমি এক দিন টাঙ্গাইলের মধুপুর থেকে বাসে উঠব, যখন বাস আসে তখন আমার পিয়ন গিয়ে কী যেন বলে আর বাসের চালক-হেলপার আমার দিকে তাকায়, এরপর না উঠিয়ে চলে যায়। এমন করে বেশ কয়েকটি বাস চলে যায়। তার পর আরেকটি বাস আসে। তখন পিয়ন গিয়ে কী যেন বলল, সঙ্গে সঙ্গে সামনের সারি থেকে সবাইকে সরিয়ে জায়গা ফাঁকা করে আমাকে ঢাকায় নিয়ে এল যত্ন করে। আমার কৌতূহল হলো, কী এমন ঘটল বা পিয়ন কী এমন বলল আগের বাসগুলো আমাকে নিল না। এখন কী বলল যে, এই বাস নিয়ে নিল। এরপর ছুটি শেষে যখন কর্মস্থলে গেলাম। তখন পিয়ন সোহরাবকে ডাকলাম, ‘বলতো কী ঘটেছিল বা তুমি কী বলেছিলে? অনেক বাস আমাকে নিল না! আরেকটি বাস এভাবে নিয়ে নিল।’ সোহরাব তখন আমাকে বলতে রাজি হচ্ছিল না। তার পরও আমি তাকে জোর করে বলতে বললাম। পরে পিয়ন বলে, ‘যখনই বাস আসে তাদের বলি- জজ সাহেব যাবে, তাকে নিয়ে যাও। তখন বাসের লোকেরা আপনার দিকে তাকিয়ে জজ সাহেব আর দেখে না। এ জন্য চলে যায়। এমন কয়েকবার ঘটার পরে শেষ বাসকে আমি বললাম জজ সাহেবের স্ত্রী যাবে। তখন তারা আপনাকে দেখে দ্রুত উঠিয়ে নেয়।’ তাহলে দেখেন আমরা কোন জায়গা থেকে এখানে উঠে এসেছি। একজন নারী জজ হতে পারে, এটাই তাদের ভাবনাতেই ছিল না ‘
‘এর আগের আরেকটি ঘটনা হলো- আমি বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে পাস করার পর হাতে নয় মাস সময় ছিল, সেই সময় আমি আইনজীবী হিসেবে রাজশাহী বারে প্র্যাকটিস শুরু করি। প্রথম দিন যখন আমি আদালতে শুনানি করতে গিয়ে একটা সময় আবেদন দিই। তখন এক ভদ্রলোক আমাকে ডেকে বলেন, ‘মা তুমি একটু এদিকে এস।’ সেই লোক বলছেন, ‘তোমার বিয়ে হয়নি?’ আমি বলেছি, না। তিনি বলেন, ‘তোমার ভাই নেই?’ আমি বললাম, আছে। তিনি বললেন, ‘তোমার বাবা নেই?’ আমি বললাম, হ্যাঁ আছে। তখন সেই ভদ্রলোক আমাকে বলেন, ‘তারা এল না কেন? তুমি এলে?’ দেখুন, তিনি চিন্তাই করতে পারেননি যে একজন মেয়ে এসে আদালতে শুনানি করতে পারেন। সেই বাস্তবতা থেকে আজকের এই অবস্থান।’
অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ বলেন, ‘একজন মায়ের ছয় মাসের যে মাতৃত্বকালীন ছুটি দরকার, এই দাবি প্রথম আমাদের সংগঠন মহিলা জজ অ্যাসোসিয়েশন থেকেই আমরা তুলেছিলাম। পরে সেটিই চূড়ান্ত রূপ পায়। বর্তমানে দেশের বিচার বিভাগে ৫৮০ জন নারী বিচারক রয়েছেন। এর মধ্যে অনেক দম্পতি (স্বামী-স্ত্রী) জজ রয়েছেন। তাদের বদলির ক্ষেত্রে যদি একসঙ্গে একই জায়গায় বদলি করা হয় তাহলে রাষ্ট্রের অনেক খরচ কমবে, এমনকি সময়ও বাঁচবে। দুজনকে যদি দুই জেলায় বদলি করা হয় তাহলে কী দাঁড়াবে, বৃহস্পতিবার হলে দুজনেরই দ্রুত বের হয়ে যাওয়ার একটা চিন্তা থাকবে, আবার রোববার যথাসময়ে পৌঁছানো বিলম্ব হতে পারে। সে কারণে আমরা বলেছি, দম্পতি জজদের একই জায়গায় বদলি করা হলে ভালো হবে। একই সঙ্গে সরকারের একটি বাড়ি দিলেই হবে। তাহলে দুজনকে দুটি বাড়ি দিতে হবে না। এদিকে আর্থিক খরচও কমে আসবে। তাদের পরিবারটাও ভালো থাকবে। এখন কিন্তু দম্পতি জজদের একসঙ্গে বদলি করা হয়। এটাও আমাদের সংগঠনের দাবি ছিল।’
অবসরপ্রাপ্ত এ বিচারপতি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত নারী কোটায় কেউ বিচারক হয়নি। সবাই মেরিটে (মেধায়) আসছেন। এখন জজ নিয়োগে প্রথম ১০ জনের মধ্যে সাতজনই নারী। প্রথম ২০ জনের মধ্যে ১৪ জন নারী। মেধাতালিকার প্রথম সারিতে নারীর অবস্থান। এই কারণেই কিন্তু প্রধান বিচারপতি সেদিন এক বক্তব্যে বলেছেন, সেই দিন আর বেশি দূরে নেই, যে দিন নারীরা বিচার বিভাগের নেতৃত্ব দেবেন। আমার সেই শুরুর সময় থেকে এখন অনেক পরিবর্তন। নারীরা এখন অনেক এগিয়ে গেছে।’
কৃষ্ণা দেবনাথ বলেন, ‘অনেকেই বলে প্রতিদিনই নারী দিবস বা প্রতিদিনই বাবা দিবস। আসলে আমার কাছে মনে হয়, এক দিনের জন্য নারী দিবস আছে বলেই সেদিন কিন্তু কিছু হলেও বলা হয়। কিছু আনুষ্ঠানিকতা পালন করা হয়। এই দিবসটা কেন্দ্র করেই অনেক কথা উঠে আসে। প্রতিদিনই দিবস হলে তো কথাগুলো আসত না। এ জন্য আমার মনে হয় এটার প্রয়োজন আছে।’
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘আমরা সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি একটি সুষ্ঠু উত্তরণ নিশ্চিত করতে এবং আগামী মাসে আমরা ঐতিহাসিক জুলাই অভ্যুত্থানের বার্ষিকীতে ‘জুলাই সনদ’ ঘোষণা করব।’
আজ মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ঢাকায় অস্ট্রেলিয়ার নতুন হাইকমিশনার সুসান রাইল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে এলে এ কথা বলেন তিনি। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা ঢাকায় ভিসা কার্যক্রম পুনরায় চালু করার জন্য অস্ট্রেলিয়াকে ধন্যবাদ জানান।
সাক্ষাৎকালে অস্ট্রেলিয়ার নবনিযুক্ত হাইকমিশনার সুসান রাইল ভিসার আবেদন এখন অনলাইনে জমা দেওয়া যাবে বলে উল্লেখ করেন। তিনি আরও জানান, বর্তমানে ৬৫ হাজারর বেশি বাংলাদেশি অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করছেন এবং এর পাশাপাশি আরও ১৪ হাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থী সেখানে অধ্যয়ন করছেন।
সাক্ষাৎকালে তারা অন্তর্বর্তী সরকারের চলমান সংস্কার কার্যক্রম, নির্বাচন প্রস্তুতি, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলোচনা করেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার কার্যক্রমের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘অস্থির সময়ের পর আমরা এখন একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রয়েছে সংবিধান, বিচারব্যবস্থা ও প্রশাসনিক সংস্কারে—এগুলোই একটি শক্তিশালী বাংলাদেশের ভিত্তি। আমরা সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি একটি সুষ্ঠু উত্তরণ নিশ্চিত করতে এবং আগামী মাসে আমরা ঐতিহাসিক জুলাই অভ্যুত্থানের বার্ষিকীতে ‘জুলাই সনদ’ ঘোষণা করব।’
তিনি আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়েও কথা বলেন। অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘বহু বছর পর প্রথমবারের মতো জনগণ, বিশেষ করে প্রথমবার ভোটার হওয়া তরুণেরা স্বাধীনভাবে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবে। আমি বিশ্বাস করি এটি একটি উৎসবমুখর ও আশাব্যঞ্জক সময় হবে।’
নির্বাচনী সহায়তা নিয়ে সুসান রাইল জানান, অস্ট্রেলিয়া ইউএনডিপির মাধ্যমে বাংলাদেশে নির্বাচন কমিশনের প্রাতিষ্ঠানিক, কারিগরি ও পরিচালনাগত সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ২০ লাখ অস্ট্রেলিয়ান ডলার প্রদান করবে।
বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে রাইল বলেন, ‘আমাদের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ৫ বিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলারে পৌঁছেছে, যা গত পাঁচ বছরে বার্ষিক গড়ে ১৬ দশমিক ২ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।’
তিনি অস্ট্রেলিয়ায় অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থী এবং প্রবাসীদের অবদানের কথাও তুলে ধরেন।
তিনি আরও বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়া অ্যাওয়ার্ডস প্রোগ্রাম বাংলাদেশে তিন হাজারের বেশি সাবেক শিক্ষার্থীদের একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে, যারা দেশের অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন।’
এর জবাবে অধ্যাপক ইউনূস অস্ট্রেলিয়াকে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তির সংখ্যা বাড়ানোর আহ্বান জানান।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে অধ্যাপক ইউনূস এক মিলিয়ন রোহিঙ্গা শরণার্থীর জন্য মানবিক সহায়তা বাড়াতে অস্ট্রেলিয়ার প্রতি আহ্বান জানান।
এ প্রসঙ্গে রাইল বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়া সম্প্রতি মূল অংশীদারদের মাধ্যমে অতিরিক্ত ৯ দশমিক ৬ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার মানবিক সহায়তা প্রদান করেছে, যার ফলে ২০১৭ সাল থেকে রোহিঙ্গা ও আশ্রয়দাতা সম্প্রদায়ের জন্য বাংলাদেশে মোট সহায়তার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৫৩ দশমিক ৬ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার।’
তিনি আরও বলেন, ‘মিয়ানমারে পরিস্থিতি অনুকূল হলে, অস্ট্রেলিয়া নিরাপদ, স্বেচ্ছামূলক, মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই প্রত্যাবাসনের আশায় বাংলাদেশের পাশে থাকবে।’
সাক্ষাৎকালে এসডিজিবিষয়ক সিনিয়র সচিব লামিয়া মোরশেদ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পূর্ব এশিয়া ও প্যাসিফিক উইংয়ের মহাপরিচালক মোহাম্মদ নূরে আলম উপস্থিত ছিলেন।
প্রতারণার মাধ্যমে শেয়ার বাজার থেকে ২৫৭ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও মাগুরা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাকিব আল হাসানসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ হোসেন বাদী হয়ে সংস্থাটির সমন্বিত ঢাকা জেলা কার্যালয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর সেগুন বাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন এসব তথ্য জানান।
আক্তার হোসেন বলেন, তিনটি কোম্পানির শেয়ারে সাকিব আল হাসান বিনিয়োগ করেছেন। বিনিয়োগ কার্যক্রমে মার্কেট ম্যানিপুলেট করা হয়েছে। মার্কেট ম্যানিপুলেশনের সঙ্গে তিনি (সাকিব) জড়িত।
এর আগে গত সোমবার সাকিব আল হাসানসহ ১৫ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। সাকিব ছাড়া ১৪ আসামি হলেন— সমবায় অধিদপ্তরের উপনিবন্ধক মো. আবুল খায়ের (ওরফে হিরু) ও তার স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান, আবুল কালাম মাদবর, কনিকা আফরোজ, মোহাম্মদ বাশার, সাজেদ মাদবর, আলেয়া বেগম, কাজী ফুয়াদ হাসান, কাজী ফরিদ হাসান, শিরিন আক্তার, জাভেদ এ মতিন, মো. জাহেদ কামাল, মো. হুমায়ুন কবির ও তানভির নিজাম।
আসামিদের বিরুদ্ধে ২৫৬ কোটি ৯৭ লাখ ৭০ হাজার ৩০৪ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহারপূর্বক দ্রুত আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার অসৎ অভিপ্রায়ে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ সংক্রান্ত প্রচলিত আইন ও বিধি (সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬১ এর ১৭ ধারা) পরিকল্পিতভাবে লঙ্ঘনপূর্বক নিজেদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিও অ্যাকাউন্টসমূহে অসাধু, অনৈতিক ও অবৈধ উপায়ে ফটকা ব্যবসার মতো একাধিক লেনদেন, জুয়া ও গুজবের মাধ্যমে বাজারের কারচুপি করেছেন।
এজাহারে আরও বলা হয়, পরিকল্পিতভাবে নির্দিষ্ট কিছু শেয়ার সংঘবদ্ধভাবে ক্রমাগত ক্রয়-বিক্রয়পূর্বক কৃত্রিমভাবে দাম বাড়িয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ওই শেয়ারসমূহে বিনিয়োগে প্রতারণাপূর্বক প্রলুব্ধ করে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে তাদের ২৫৬ কোটি ৯৭ লাখ ৭০ হাজার ৩০৪ টাকা আত্মসাৎপূর্বক অস্বাভাবিক রিয়ালাইজড ক্যাপিটাল গেইনের নামে অর্জিত অপরাধলব্ধ অর্থ বা প্রসিড অব ক্রাইম শেয়ার বাজার থেকে সংঘবদ্ধভাবে উত্তোলন করেছেন। আসামি মো. আবুল খায়ের (ওরফে হিরু) কর্তৃক তার স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসানের সহায়তায় ক্যাপিটাল গেইনের নামে অর্জিত অপরাধলব্ধ অর্থের ২১ কোটি ১৪ লাখ ৪২ হাজার ১৮৫ টাকার উৎস গোপনের অভিপ্রায়ে লেয়ারিং করে বিভিন্ন খাতে স্থানান্তর করেন। তিনি ১৭টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সর্বমোট ৫৪২ কোটি ৩১ লাখ ৫১ হাজার ৯৮২ টাকার অস্বাভাবিক, অযৌক্তিক এবং সন্দেহজনক লেনদেন করেছেন।
ওই মামলায় সাকিব আল হাসানের সম্পৃক্ততা প্রসঙ্গে বলা হয়, আসামি মো. আবুল খায়ের (ওরফে হিরু) কর্তৃক শেয়ার বাজারে কারসাজিকৃত প্যারামাউন্ট ইস্যুরেন্স লি., ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স লি. এবং সোনালী পেপারস লি.-এর শেয়ারে সাকিব আল হাসান বিনিয়োগ করে বাজার কারসাজিতে যোগসাজশ করেন। সরাসরি সহায়তাপূর্বক সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কারসাজিকৃত শেয়ারে বিনিয়োগে প্রতারণাপূর্বক প্রলুব্ধ করে তাদের ২ কোটি ৯৫ লাখ ২ হাজার ৯১৫ টাকা রিয়ালাইজড ক্যাপিটাল গেইনের নামে অপরাধলব্ধ আয় হিসেবে শেয়ার বাজার হতে উত্তোলনপূর্বক আত্মসাৎ করেছেন।
আসামিদের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) এবং দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এর ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/১২০বি/১০৯ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
চলতি বছরের এপ্রিলে সাকিবের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। অর্থপাচার ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য দুদকের উপ-পরিচালক মাহবুবুল আলমের নেতৃত্বে দুই সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার ফলাফলের অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ডক্টর আলী রীয়াজ জুলাই মাসের মধ্যে একটি জাতীয় সনদ তুলে ধরার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
গতকাল বিকালে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দিনব্যাপী দ্বিতীয় দফার আলোচনার পর এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আলোচনা অত্যন্ত ইতিবাচক। আমাদের প্রতিনিয়তই অগ্রগতি হচ্ছে এবং আমরা আশা করছি যে জুলাই মাসের মধ্যে আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত জাতীয় সনদে পৌঁছাতে পারব এবং রাষ্ট্রীয় স্বার্থে সেখানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে আমরা ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করতে পারব।’
আলোচ্য বিষয় নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রথম দফার আলোচনার পর সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের কিছু বিষয়ে পুনর্বিবেচনার কথা রাজনৈতিক দলগুলো বলেছিলেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল মঙ্গলবার আবার এ বিষয়ে আলোচনা করার পর আমরা এ বিষয়ে একমত হতে পেরেছি যে ৭০ অনুচ্ছেদের বিদ্যমান বিধান পরিবর্তন করে অর্থবিল ও আস্থা ভোটের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য বাধ্যবাধকতা থাকবে যেন তারা দলের পক্ষে ভোট দেন।
তিনি বলেন, দ্বিতীয়ত, গতদিনের আলোচনার তুলনায় একটি অগ্রগতি হয়েছে এবং আমরা সুস্পষ্টভাবে বলতে পারি যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ওই ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে চারটি কমিটি অর্থাৎ পাবলিক একাউন্টস কমিটি, প্রিভিলেজ কমিটি, এস্টিমেশন কমিটি এবং পাবলিক আন্ডারটেকিং কমিটিসহ জন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সংক্রান্ত কমিটিগুলোর সভাপতির পদ আসনের সংখ্যানুপাতিক হারে বিরোধী দলকে প্রদানের বিষয়ে সকলে একমত হয়েছেন।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ আরো বলেন, জাতীয় সংসদের নারী প্রতিনিধিত্বের বিষয় দীর্ঘ সময় ধরে আলোচনা হয়েছে। সকলেই জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য ১০০টি আসন সংরক্ষিত করার জন্য সকলে একমত হয়েছেন। তবে এর পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা অব্যাহত থাকবে। আমরা আশা করছি আগামী সপ্তাহে এ বিষয়ে একমত হওয়া যাবে।
তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে যেটি সংবিধানের ৯৫(১) অনুচ্ছেদে আছে তার পাশাপাশি সংবিধানের ৪৮ (৩) অনুচ্ছেদে আছে সেগুলো সংশোধনের ব্যাপারে এক ধরনের ঐক্যমত হয়েছে। কিন্তু আমরা এই বিষয়টি আগামী সপ্তাহে আবার আলোচনা করব যেন একটি নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত আমরা আসতে পারি। কিন্তু প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ব্যবস্থা পরিবর্তনের বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্টের বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে কিন্তু তার সঙ্গে নীতিগতভাবে কিছু কিছু দল এর বিরুদ্ধে আপত্তি জানিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কিন্তু এটা কম বেশি সকলে স্বীকার করেছেন যে এ বিষয়ে পুনর্বিবেচনার দরকার আছে।
এ সময় কমিশনের একটি বড় স্টেকহোল্ডার হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর গতকালের আলোচনায় অনুপস্থিতির কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন , যে কোনো পরিস্থিতির উদ্ভব হলে আমরা সার্বক্ষণিকভাবে সব দলের সাথে যোগাযোগ রাখি যেন তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যায়। কমিশনের পক্ষ থেকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে, আমরা আশা করি গতকাল উপস্থিত না থাকতে পারলেও আজ তারা বা তাদের প্রতিনিধিরা এখানে উপস্থিত থাকবেন।
উল্লেখ্য, অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ চূড়ান্ত করা এবং বহুল আলোচিত ‘জুলাই সনদ’ প্রস্তুতের লক্ষ্যে গতকাল থেকে শুরু হয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা।
বেলা এগারোটা চল্লিশ মিনিটে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে এ আলোচনার আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়।
আলোচনায় কমিশনের সহ সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে আরো অংশ নেন জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের সদস্য বিচারপতি এমদাদুল হক, বদিউল আলম মজুমদার, আইয়ুব মিয়া, মো. ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
এছাড়াও, বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, বিএনপি চেয়ারপার্সন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইসমাইল জবিউল্লাহ,খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের, জাতীয় গণফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির সমন্বয়ক টিপু বিশ্বাস, গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল, এবি পার্টির জেনারেল সেক্রেটারি আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এর জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মুস্তাফিজুর রহমান ইরান, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ, বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (বিএলডিপি) চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, বাংলাদেশ জাসদের পক্ষ থেকে ডা. মুশতাক হোসেনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।
তবে, আমন্ত্রণ পেলেও বৈঠকে উপস্থিত হননি জামায়াতে ইসলামীর কোনো প্রতিনিধি।
এর আগে, এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জানায়, ১৭, ১৮ ও ১৯ জুন এই তিনদিন কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কুষ্টিয়া-১ আসনের সাবেক এমপি এ্যাডভোকেট আ ক ম সরওয়ার জাহান বাদশাহকে গ্রেপ্তার করেছে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ।
আজ মঙ্গলবার দুপুর ১টায় মোহাম্মদপুরের বসিলা সিটি ডেভেলপার এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারের পর জানা গেছে, বাদশা ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) সাড়ে ৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা করেছে। প্রথম মামলায় বাদশার বিরুদ্ধে ৪ কোটি ২০ লাখ ৭২ হাজার টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও ৬টি ব্যাংক হিসাবে ১১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা লেনদেনের অভিযোগ আনা হয়েছে। দ্বিতীয় মামলায় তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ১ কোটি ২৯ লাখ ৮০ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে।
ডিএমপি তেজগাঁও বিভাগের মোহাম্মদপুর থানার ইনচার্জ (তদন্ত) হাফিজুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মোহাম্মদপুরের বসিলা সিটি ডেভেলপার এলাকায় অভিযান চালিয়ে সাবেক সংসদ সদস্য আ ক ম সারোয়ার জাহান বাদশাহকে গ্রেপ্তার করা হয়। আইনানুগ প্রক্রিয়া শেষে তাকে আদালতে পাঠানো হবে।
প্রসঙ্গত, সরওয়ার জাহান বাদশাহ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ও কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন।
সরকার ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘাতের উপর নিবিড়ভাবে নজর রাখছে জানিয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, এই মুহূর্তে জ্বালানির দাম বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনা নেই।
তিনি বলেন, ‘আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। যদি সংঘাত দীর্ঘায়িত হয়—তাহলে এটি আমাদের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। তবে আপাতত, আমরা অপেক্ষা করব।’
মঙ্গলবার (১৭ জুন) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নতুন সম্মেলন কক্ষে অর্থনৈতিক বিষয় সম্পর্কিত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি এবং পাবলিক ক্রয় সম্পর্কিত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকের পর তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
এই সংঘাত অভ্যন্তরীণ জ্বালানির দামের উপর প্রভাব ফেলতে পারে কিনা এমন প্রশ্নে ড. সালেহউদ্দিন বলেন, ‘আন্তর্জাতিকভাবে এরই মধ্যে দাম সামান্য বেড়েছে, তবে আমাদের আগের দেওয়া ক্রয়াদেশগুলোকে এটি প্রভাবিত করেনি।’
তিনি আরও বলেন, সরকার গ্যাস ও এলএনজির দামও পর্যবেক্ষণ করছে।
উপদেষ্টা বলেন, ‘যদি এলএনজির দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ে, তবে আমরা আমাদের পরিকল্পনায় এটি বিবেচনা করব। সৌভাগ্যবশত, আজ আমরা যে এলএনজি আমদানি প্রস্তাবটি অনুমোদন করেছি তা পুরোনো দামেই। আমরা ভাগ্যবান যে এটি আগের হারে পাচ্ছি।’
বাণিজ্যের উপর বর্তমানে কোনো প্রভাব পড়ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না, বর্তমানে বাণিজ্যের উপর কোনো প্রভাব পড়ছে না।’
ভবিষ্যতে সম্ভাব্য বিঘ্নের আশঙ্কায় সরকার কোনো বিশেষ প্রস্তুতি নিচ্ছে কিনা জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ‘আজ আমরা যে এলএনজি এবং সার আমদানি প্রস্তাবগুলো অনুমোদন করেছি তা আগের দামেই রয়েছে। ভবিষ্যতে নতুন যেকোনো প্রস্তাব মূল্যে উপর প্রভাব পড়তে পারে।’
যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে তাক্ষণিক পরিকল্পনা সম্পর্কে ড. সালেহউদ্দিন বলেন, জ্বালানি মন্ত্রণালয় বিকল্পগুলো নিয়ে কাজ করছে। ‘আমরা এলএনজির উপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করি। এই সংঘাত কেবল জ্বালানি নয়, সার আমদানি এবং সামুদ্রিক পরিবহনকেও প্রভাবিত করতে পারে। হরমুজ প্রণালী দিয়ে জাহাজ চলাচল করে যার প্রভাব পড়তে পারে। তবে আমি মনে করি না যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হবে।’
বিশ্বব্যাপী জ্বালানির দাম ইতোমধ্যে বেড়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, অনেক দেশে দাম বেড়েছে, তবে আমরা এখনও কোনো পরিবর্তন করছি না। আমরা অপেক্ষা করব এবং দেখব।’
য়মনসিংহের ত্রিশাল পৌরসভার ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় সড়কের কেরানী বাড়ি মোড় এলাকায় ভয়াবহভাবে বৃদ্ধি পাওয়া মাদক ব্যবসা ও সেবনের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছে এলাকাবাসী। “চলো যাই যুদ্ধে মাদকের বিরুদ্ধে” স্লোগানকে সামনে রেখে (১৭ জুন) মঙ্গলবার সকাল ১১টায় এলাকাবাসীর উদ্যোগে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় সড়কের কেরানী বাড়ি মোড়ে এক মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়। পরে বিক্ষোভ মিছিল করে মাদকব্যবসায়ীর বাড়ি ঘেরাও করে বিক্ষুব্ধ জনতা। এসময় কাউকে না পেয়ে মাদক কারবারীদের বাড়িঘর ভাঙচুরের চেষ্টা করে উত্তেজিত জনতা। পরে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
এসময় বিক্ষোভকারীরা অভিযোগের পরও মাদককারবারী মিনা খাতুন ও তার ভাই মুক্তা মিয়া সহ আরও জনাদশেক মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার না হওয়ায় উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা অভিযোগ করেন যাদের বিরুদ্ধে মাদক বিক্রির অভিযোগ করা হয়েছে পুলিশ তাদেরকে না ধরে উল্টো অভিযোগকারীকে শাসিয়েছেন।
গত ১৫ দিন আগে স্থানীয় ইউএনও ও থানায় লিখিত অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাননি এলাকাবাসী। এতে স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। বিক্ষোভে পুলিশ উপস্থিত থাকা অবস্থায় ভুয়া ভুয়া বলে স্লোগান দেন।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, “সমাজে ছড়িয়ে গেছে মাদক, আসক্ত হয়ে পড়েছে যুব সমাজ। মাদক বেচা-কেনা বন্ধ করতে হবে।” তারা অভিযোগ করেন, কেরানী বাড়ি মোড় এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশ্যে বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য কেনাবেচা ও সেবন চলছে। এতে করে এলাকার যুবসমাজ ধ্বংসের পথে যাচ্ছে, বাড়ছে চুরি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধ। অথচ প্রশাসনের পক্ষ থেকে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
এসময় বক্তারা আরও অভিযোগ করেন, কিছু দালাল চক্রের ছত্রছায়ায় এই মাদক ব্যবসা বিস্তার লাভ করেছে। তারা প্রশ্ন তোলেন, মাদক ব্যবসার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণে প্রশাসনের পদক্ষেপ কোথায়?
মানববন্ধনে বক্তারা অবিলম্বে কেরানী বাড়ি মোড়সহ আশপাশের এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনার দাবি জানানো হয়।
অন্যথায় বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তারা। এ ব্যাপারে ত্রিশাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবরে একটি স্মারকলিপি দেওয়ার কথা রয়েছে।
উল্লেখ্য, এই আন্দোলনের আয়োজন করে স্থানীয় ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সচেতন জনসাধারণ। সবশেষে মাদক বাবসায়ীদের ২৪ ঘন্টার মধ্যে গ্রেফতার না করা হলে বুধবার বিকাল তিনটায় থানা ঘেরাওয়ের আল্টিমেটাম দিয়ে দিনের কর্মসূচি শেষ করা হয়।
ঈদুল আজহার আগে-পরে ১৫ দিনে সারা দেশে ৩৭৯টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় ৩৯০ জন নিহত এবং ১১৮২ জন আহত হয়েছেন। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি এ তথ্য জানিয়েছে।
গতকাল সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য উপস্থাপন করেন সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী।
প্রতিবেদনে তিনি বলেন, একই সময়ে রেলপথে ২৫টি দুর্ঘটনায় ২৫ জন নিহত ও ১২ জন আহত হয়েছেন। নৌ-পথে ১১টি দুর্ঘটনায় ১২ জন নিহত ও ৬ জন নিখোঁজ রয়েছেন। সড়ক, রেল ও নৌ-পথে সর্বমোট ৪১৫টি দুর্ঘটনায় ৪২৭ জন নিহত এবং ১১৯৪ জন আহত হয়েছেন।
মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, সড়কে দুর্ঘটনা ও যাতায়াতের ভোগান্তি কমিয়ে ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক করতে হলে ঈদের আগে কমপক্ষে ৪ দিনের সরকারি ছুটি থাকা দরকার। ঈদের যাতায়াত ব্যবস্থাপনা নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন। সবার আগে আমাদের গণপরিবহন ও ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা বাড়াতে হবে, ছোট যানবাহন মহাসড়ক থেকে উচ্ছেদ করতে হবে। প্রশিক্ষিত দক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন বাতিল, মানসম্মত সড়কের পাশাপাশি আইনের সুশাসন নিশ্চিত করা জরুরি।
তিনি আরও বলেন, যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, দেশের সড়ক-মহাসড়কে বৃষ্টির কারণে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এসব গর্তে পড়ে কিছু যানবাহন দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছে। ঈদের পরে বেশিরভাগ দুর্ঘটনা বিরামহীন ও বিশ্রামহীনভাবে যানবাহন চালাতে গিয়ে হয়েছে। ফলে এসব দুর্ঘটনায় সিংহভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় খাদে পড়ে ও দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের পেছনে লেগে দুর্ঘটনা বেশি ঘটেছে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য ও পথে পথে যাত্রী হয়রানি এবারের ঈদেও চরমে ছিল। গণপরিবহনগুলোতে ঈদকে কেন্দ্র করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্যের কারণে বাসের ছাদে, ট্রেনের ছাদে, খোলা ট্রাকে, পণ্যবাহী পরিবহনে যাত্রী হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দরিদ্র লোকজনদের বাড়ি যেতে হয়েছে।
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও সংলগ্ন এলাকায় আবারও একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে, যার বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। পাশাপাশি মৌসুমি বায়ু দেশের দক্ষিণাঞ্চলে সক্রিয়, অন্যান্য অঞ্চলে মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে তা প্রবল অবস্থায় রয়েছে। এর প্রভাবে সারা দেশে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়ার পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আজ (মঙ্গলবার) সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণও হতে পারে।
এ ছাড়া আবহাওয়াবিদ মো. তরিফুল নেওয়াজ কবিরের সই করা পৃথক এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আজ সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে যশোর, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলের ওপর দিয়ে দক্ষিণ অথবা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে।
এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
আগামীকাল সকাল ৯টার মধ্যে সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে বলে বলেও নিয়মিত আবহাওয়া বুলেটিনে জানানো হয়েছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, তাপমাত্রা কমার এই ধারা আগামীকালও অব্যাহত থাকতে পারে এবং তার পরের অন্তত তিন দিন প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
অন্যদিকে, বৃষ্টিপাত নিয়ে আগামী তিন দিনের পূর্বাভাসে রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি জানিয়েছে, বুধবার সকাল ৯টা থেকে পরের ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে সারা দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।
বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবারও একই ধরনের আবহাওয়া থাকতে পারে। অর্থাৎ রংপুর, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগের অনেক জায়গায় দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। পাশাপাশি দেশের কিছু স্থানে মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের সম্ভাবনাও রয়েছে।
বৃষ্টিপাতের এই প্রবণতা শনিবার, এমনকি তার পরের পাঁচ দিনও অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
বিতর্কিত তিন জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে জড়িত সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনারগণ ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিবদের ভূমিকা তদন্তে অবিলম্বে একটি কমিটি গঠনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
আজ সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এক বৈঠকে এ সংক্রান্ত আলোচনা শেষে এ নির্দেশ দেন প্রধান উপদেষ্টা ও কমিশন প্রধান প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন ও ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া। অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়া ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
বৈঠকে কমিশন সদস্যগণ জুলাই সনদ তৈরির কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করেন। কমিশনের সহ-সভাপতি প্রফেসর আলী রীয়াজ বলেন, ‘বেশকিছু বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। খুব শিগগিরই সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সনদ চূড়ান্ত করে ফেলা সম্ভব হবে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সবাই জুলাই সনদের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। আমি আশা করি আগামী জুলাই মাসের মধ্যে আমরা এটি জাতির সামনে উপস্থাপন করতে পারব।’
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা তাঁর লন্ডন সফরের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন, ‘লন্ডনে বাংলাদেশি কমিউনিটির যাদের সঙ্গেই দেখা হয়েছে তারা সংস্কার নিয়ে জানতে চেয়েছে। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা খুব আগ্রহী। তারা বিস্তারিতভাবে ঐকমত্য কমিশনের কাজ নিয়ে আমার সঙ্গে আলোচনা করেছে, মতামত দিয়েছে। যেখানেই গেছি সেখানকার প্রবাসী বাংলাদেশিরা আমাকে জিজ্ঞেস করছেন, ‘আমরা আগামী নির্বাচনে ভোট দিতে পারব তো?’ আমাদের প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। পোস্টাল ব্যালট এবং আর কী কী অপশন আছে সেগুলো নিয়ে ভাবতে হবে, সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনায় বসতে হবে।’
বৈঠকে নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিশন প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘সকল রাজনৈতিক একমত হয়েছে যে, অতীতের তিনটি বিতর্কিত নির্বাচন আয়োজনে কর্মকর্তাদের ভূমিকা তদন্ত ও জবাবদিহিতার আওতায় আনা প্রয়োজন।’
বাংলাদেশ বিমান বাহিনী মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্রে (Central African Republic) নিয়োজিত জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে (MINUSCA), Bangladesh Armed Military Utility Helicopter Unit-5 (BANAMUHU-5) কন্টিনজেন্ট এর মোট ১২৫ জন সদস্য প্রতিস্থাপন করতে যাচ্ছে। বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন, বিবিপি, ওএসপি, জিইউপি, এনএসডব্লিউসি, পিএসসি সোমবার (১৬-৬-২০২৫) বিমান বাহিনী সদর দপ্তর-এ মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্রগামী কন্টিনজেন্ট (BANAMUHU-6) এর সদস্যদের উদ্দেশ্যে দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য প্রদান করেন।
এসময় তিনি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সততা, পেশাদারিত্ব ও আন্তরিকতার সাথে অর্পিত দায়িত্ব পালন করে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী তথা দেশের সুনাম বয়ে আনার জন্য কন্টিনজেন্ট সদস্যদের প্রতি আহবান জানান। পরিশেষে তিনি মিশনের সাফল্য কামনায় আয়োজিত এক বিশেষ মোনাজাতে অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মাঝে বিমান বাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারগণ, ঢাকাস্থ বিমান ঘাঁটি দ্বয়ের এয়ার অধিনায়ক এবং বিমান সদর ও ঘাঁটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এখানে উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সমরাস্ত্র ব্যবহারে সক্ষম এবং নাইটভিশন প্রযুক্তি সমৃদ্ধ ০৩ টি এমআই-১৭১ হেলিকপ্টার ও বিভিন্ন গ্রাউন্ড সাপোর্ট ইকুইপমেন্ট মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্রে MINUSCA জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে নিযুক্ত রয়েছে। BANAMUHU-6 কন্টিনজেন্টের নেতৃত্বে থাকবেন এয়ার কমডোর ইমরানুর রহমান, বিইউপি, এএফডব্লিউসি, পিএসসি, জিডি(পি)। আগামী ১৯ জুন ২০২৫ তারিখে কন্টিনজেন্ট এর সদস্যগণ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর, ঢাকা হতে মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্রের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন।
নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার চারটি গ্রামের পাঁচ যুবকের অপহরণের এক যুগ পেরিয়ে গেলেও এখনো তাদের সন্ধান মেলেনি। অপহৃতদের কেউ বেঁচে আছেন কিনা, নাকি তাঁরা চিরতরে হারিয়ে গেছেন—সে প্রশ্নের উত্তর মেলেনি পরিবার, প্রশাসন কিংবা গোয়েন্দা সংস্থার কাছেও।
২০১৩ সালের ১৯ মে রাতে বড়াইগ্রামের গুরুমশৈল গ্রামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে অস্ত্রধারী ১০-১২ জনের একটি দল মাইক্রোবাসে এসে কৃষক কামাল হোসেনকে বাড়ির পাশ থেকে তুলে নেয়। একই রাতে একই কায়দায় অপহরণ করা হয় ওই গ্রামের দিনমজুর ইব্রাহিম তালুকদার এবং পার্শ্ববর্তী মহিষভাঙ্গা গ্রামের ভুটভুটি চালক তৈয়ব আলীকে।
অপহরণের সময় অস্ত্রধারীরা এলাকায় ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টি করে এবং অপহৃতদের মারধর করে তুলে নিয়ে যায়। এর ঠিক দুদিন আগে একই উপজেলার কালিকাপুর গ্রাম থেকে নিখোঁজ হন বিজিবি সদস্য রাসেল গাজী ও তার বন্ধু কাটাশকুল গ্রামের সেন্টু হোসেন। ছুটিতে বাড়ি এসে রাসেল তার বন্ধুর ফোন পেয়ে বের হওয়ার পর থেকেই নিখোঁজ হন দুজনই।
স্বজনরা জানান, অপহরণের পরপরই তারা থানায় জিডি ও মামলার পাশাপাশি প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। কিন্তু তৎকালীন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে কোনো দৃশ্যমান তৎপরতা দেখা যায়নি। গুরুমশৈল গ্রামের কামালের মা আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘এক যুগ হয়ে গেল, আমার ছেলের ছবি বুকে নিয়ে কাঁদি। কে নিল, কেন নিল, কোনো উত্তর নেই।’
নিখোঁজ ইব্রাহিম তালুকদারের মা বলেন, ‘ছেলেকে হারিয়ে আমরা পথে বসেছি। কোনো দিন কেউ খোঁজও নেয়নি।’ রাসেল গাজীর বাবা বলেন, ‘বিজিবির মতো চাকরিতে থেকেও যদি অপহৃত হয়, তবে সাধারণ মানুষের কী হবে?’
নাটোরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আমজাদ হোসাইন বলেন, ‘এই ঘটনার বিষয়ে আমরা নতুন করে তদন্ত শুরু করেছি। ইতোমধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও হাতে এসেছে। আশা করছি, দ্রুতই রহস্য উদঘাটন এবং দায়ীদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।’
অপহৃতদের স্বজনরা বলছেন, ‘বর্তমান সরকারের কাছে তারা আকুতি জানাচ্ছেন—তাদের প্রিয়জনেরা জীবিত না থাকলেও অন্তত কী ঘটেছে, কোথায় গেল তারা—সে রহস্য তো উন্মোচিত হোক।’
বাংলাদেশে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ রপ্তানি শুরু করেছে নেপাল। গত বছরের ৩ অক্টোবর নেপাল, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে হওয়া ত্রিপক্ষীয় চুক্তি অনুযায়ী এই বিদ্যুৎ আসছে। গতকাল রোববার থেকে ভারতীয় ট্রান্সমিশন লাইন ব্যবহার করে নেপাল বাংলাদেশে এই বিদ্যুৎ রপ্তানি করছে।
চুক্তি অনুযায়ী, ১৫ জুন থেকে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। ভারতীয় ট্রান্সমিশন চার্জসহ প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম পড়বে প্রায় ৭ টাকা।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান জানান, নেপাল থেকে বিদ্যুৎ গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ শীতকালে নেপালে বিদ্যুৎ রপ্তানির সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখছে। কারণ, শীতের সময় নেপালের নদীতে ভারী তুষারপাতের কারণে নেপালের জলবিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হয়।
শীতকালে দেশের বিদ্যুৎ ব্যবহার কমে যাওয়ায় নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, বাংলাদেশ একই পরিমাণ বিদ্যুৎ নেপালে রপ্তানি করতে পারে। এতে দুই দেশের মধ্যে ভারসাম্যপূর্ণ জ্বালানি বাণিজ্য গড়ে উঠবে।
ফাওজুল কবির খান বলেন, আমরা শীতকালে বাংলাদেশ থেকে নেপালে বিদ্যুৎ রপ্তানির প্রস্তাব পাঠাব।
তিনি আরও বলেন, এ বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য আমরা নেপালের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রীকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি পাঠাব, যাতে সম্ভাব্য বিদ্যুৎ রপ্তানি নিয়ে আলোচনা শুরু করা যায়।
এর আগে ২০২৪ সালের ৩ অক্টোবর নেপাল থেকে ভারত হয়ে বিদ্যুৎ আমদানি চূড়ান্ত করতে কাঠমান্ডুতে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, নেপাল ইলেকট্রিসিটি অথরিটি ও ভারতের এনটিপিসি বিদ্যুৎ ব্যবসা নিগম লিমিটেড একটি ত্রিপক্ষীয় বিদ্যুৎ বিক্রয় চুক্তি স্বাক্ষর করে।
তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বাড়ল ৭৪ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা। যা মোট ঋণের ৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ এখন ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা। যা মোট ঋণের ২৪ দশমিক ১৩ শতাংশ। এ সময় মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ১৭ লাখ ৪১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা। এ হিসাব চলতি বছরের ৩১ মার্চের।
তিন মাস আগে ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর খেলাপি ঋণের হার ছিল ২০ দশমিক ২০ শতাংশ। সে সময় খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা। আর মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ১৭ লাখ ১১ হাজার ৪০২ কোটি টাকা।
গতকাল রোববার এ তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
২০২৪ সালে আওয়ামী লীগের পতন পরবর্তী নতুন গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছিলেন, বিগত সরকার খেলাপি ঋণ নানাভাবে লুকিয়ে রেখেছিল। এসব খেলাপি ঋণ অনুসন্ধান করা হচ্ছে। এটা বেড়ে ৩০ শতাংশ হতে পারে। সেই হিসেবে প্রতি তিন মাসে খেলাপি ঋণ পরিস্থিতির চিত্র তুলে আনার সময় এর পরিমাণ বাড়ছে।