২০২০ সালে সরকারি পাটকলগুলো বন্ধ করে দেয়ার পর পাটকল শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করে দিয়েছে সরকার। কিন্তু বসে বসে বেতন নিচ্ছেন সরকারি পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) আড়াই হাজার কর্মচারী। উদ্বৃত্ত সরকারি কর্মচারীদের আত্তীকরণে বর্তমান আইন ও বিধিমালায় তাদের অন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানে আত্তীকরণের সুযোগ নেই। ফলে বিজেএমসির কর্মচারীদের আত্তীকরণ করতে নতুন আইন করতে যাচ্ছে সরকার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আজ সোমবার তার কার্যালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকে ‘সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, স্বশাসিত সংস্থা ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের উদ্বৃত্ত কর্মচারী আত্তীকরণ আইন-২০২৩’-এর খসড়া অনুমোদনের জন্য তোলার কথা রয়েছে। এই আইন পাস হলে বিজেএমসির প্রায় দুই হাজার শ্রমিককে আত্তীকরণ করা হবে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।
২০১৬ সালে প্রণীত উদ্বৃত্ত সরকারি কর্মচারী আত্তীকরণ আইন ছিল। ২০১৮ সালে সরকারি চাকরি আইন প্রণয়ন করে এই আইনের মধ্যে উদ্বৃত্ত সরকারি কর্মচারীদের আত্তীকরণের বিধান যুক্ত করা হয়। একই সঙ্গে ২০১৬ সালের আইনটি বাতিল করে সরকার। সরকারি চাকরি আইনের আলোকে ২০২০ সালে জারিকৃত উদ্বৃত্ত সরকারি কর্মচারী আত্তীকরণ বিধিমালা অনুযায়ী উদ্বৃত্ত সরকারি কর্মচারীদের আত্তীকরণ করা হচ্ছিল।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, সরকারি চাকরি আইন এবং উদ্বৃত্ত সরকারি কর্মচারী আত্তীকরণ বিধিমালা অনুযায়ী বিজেএমসির কর্মচারীদের আত্তীকরণের কোনো সুযোগ নেই। এর ফলে কাজ না থাকলেও বিজেএমসির আড়াই হাজারের বেশি কর্মচারী বসে বসে বেতন পাচ্ছেন। বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনসহ এ ধরনের সরকারি প্রতিষ্ঠানের উদ্বৃত্ত কর্মচারীদের আত্তীকরণ করতে এখন নতুন আইন করা হচ্ছে।
জাতীয়করণকৃত পাটকলগুলো নিয়ন্ত্রণ, পরিদর্শন ও সমন্বয় করতে বাংলাদেশ শিল্পপ্রতিষ্ঠান (জাতীয়করণ) আদেশ ১৯৭২ অনুযায়ী বিজেএমসি প্রতিষ্ঠা করে সরকার।
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আব্দুর রউফ গতকাল রোববার রাতে দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের কর্মচারীদের আত্তীকরণ করতে যাওয়ার সময় দেখা যায় কোনো আইনেই তা কাভার করে না। ফলে নতুন আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা দেখা যায়। আইনটি প্রণয়ন হলে এটি কমন আইন হয়ে যাবে।’
বিজেএমসিতে আড়াই হাজারের ওপর কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন। তাদের মধ্য থেকে কতজনকে আত্তীকরণ করা হতে পারে, সে বিষয়ে কোনো ধারণা দেননি পাটসচিব। তিনি বলেন, ‘অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে কী ধরনের কর্মকর্তা দরকার, সেসবের সঙ্গে কতজন ম্যাচ করে এবং আমরা কতজনকে রাখব- এসব বিষয় নিয়ে এখনো বলার সময় হয়নি। আপাতত বিজেএমসি দিয়ে আত্তীকরণ শুরু করব।’
নতুন আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, স্বশাসিত সংস্থা ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীর পদ প্রশাসনিক পুনর্গঠন, জনবল যৌক্তিককরণ বা অন্য কোনো বিলুপ্ত হলে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় বা বিভাগ বা ক্ষেত্রমতে সংশ্লিষ্ট সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, স্বশাসিত সংস্থা ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের বিলুপ্ত পদে কর্মরত কর্মচারীদের উদ্বৃত্ত ঘোষণা করতে পারবে।
উদ্বৃত্ত ঘোষণাকারী মন্ত্রণালয় বা বিভাগকে উদ্বৃত্ত ঘোষিত কর্মচারীকে উদ্বৃত্ত ঘোষণার আদেশ জারির ৩০ দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আত্তীকরণের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠাতে হবে। এরপর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এসব কর্মচারীকে সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, স্বশাসিত সংস্থা ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানে আত্তীকরণ করবে।
উদ্বৃত্ত কর্মচারীরা উদ্বৃত্ত হওয়ার আগে যে স্কেলে বেতন পেতেন তার সমান স্কেলের বেতনেই আত্তীকরণ করতে হবে জানিয়ে খসড়ায় বলা হয়েছে, আত্তীকরণ করার পর কোনো কর্মচারীকে আগের থেকে কম বেতন-ভাতা এবং অবসর সুবিধা দেয়া যাবে না। উদ্বৃত্ত কর্মচারীকে কোনো পরীক্ষা বা যাচাইয়ে অংশ নিতে হবে না। কোনো নির্দিষ্ট যোগ্যতা, চাকরির মেয়াদ বা কোনো নির্দিষ্ট বয়সসীমারও প্রয়োজন হবে না। কোনো কর্মচারীকে কোনো পদে একবার আত্তীকরণ করা হলে তা চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে এবং তিনি অন্য কোনো পদে পুনরায় আত্তীকরণের জন্য বিবেচিত হবেন না।
খসড়ায় বলা হয়েছে, সরকারি অন্যান্য কর্মচারীর মতোই সময়ে সময়ে জারিকৃত বিধান দিয়ে আত্তীকৃত কর্মচারীদের জ্যেষ্ঠতা, বেতন ও পেনশন নির্ধারিত হবে। এই আইন পাস হলে সরকার সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, স্বশাসিত সংস্থা ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কর্মচারী নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারবে।
খসড়ায় বলা হয়েছে, এই আইনের অধীনে কৃত কোনো কাজ বা জারিকৃত আদেশের বিরুদ্ধে কোনো আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা কোনো কর্তৃপক্ষের কাছে প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে না। এই আইনের অধীনে কোনো কার্যাবলি নিয়ে মামলা বা অন্য কোনো আইনগত পদক্ষেপও নেয়া যাবে না।
বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটি হচ্ছে
বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটি গঠন করতে নতুন একটি আইন করতে যাচ্ছে সরকার। আজকের মন্ত্রিসভা বৈঠকে অনুমোদনের জন্য বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটি আইন উত্থাপনের কথা রয়েছে।
আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, পরিকল্পনামন্ত্রীকে চেয়ারম্যান করে এই কর্তৃপক্ষের একটি পরিচালনা পর্ষদ থাকবে। পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের মেয়াদ হবে তিন বছর। পরিচালনা পর্যদকে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত নীতি, কৌশল ও আইনি কাঠানো প্রণয়ন; কর্তৃপক্ষ পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনাবিষয়ক নীতি প্রণয়ন, উন্নয়নসংক্রান্ত কর্মপরিকল্পনা অনুমোদন করতে হবে।
এই আইন পাস হলে বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটিকে দেশের সরকারি ক্রয়-প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ, সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত আইনের প্রতিপালন নিশ্চিতকরণ, পরিবীক্ষণ, সমন্বয়, ব্যবস্থাপনা ও তত্ত্বাবধান করতে হবে। বাংলাদেশ ই-গভর্মেন্ট প্রকিউরমেন্ট (ই-জিপি) বিধিমালার প্রয়োজনীয় সংশোধনী প্রস্তাব আনা, ই-জিপি পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা এবং ই-জিপিসংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত ও তথ্যভাণ্ডার সংরক্ষণ; আদর্শ দরপত্র প্রস্তাব বা দলিল এবং সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত অন্যান্য দলিলের নমুনা প্রস্তুত করে তা অনুমোদন দিয়ে বিতরণও করতে হবে এই কর্তৃপক্ষকে।
খসড়ায় বলা হয়েছে, যেসব ক্রয়কারীর ওপর পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন প্রযোজ্য তাদের কাছ থেকে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত তথ্য, দলিল ও নথিপত্র তলব করতে পারবে এই কর্তৃপক্ষ। সরকারি কেনাকাটায় কোনো ব্যত্যয় হলে তা সংশোধনে কোনো ক্রয়কারীকে ক্রয়-প্রক্রিয়ার পরিবর্তন ও সংশোধন করার পরামর্শ, সুপারিশ অথবা প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনাও দিতে পারবে এই কর্তৃপক্ষ। একজন অতিরিক্ত সচিবকে এই কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হবে।