শত ঘর পুড়ে ছাই হওয়ার পর নিয়ন্ত্রণে এসেছে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের কুনিপাড়া বস্তির আগুন। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ করতে হয়েছে ফায়ার সার্ভিসের ১১টি ইউনিটকে। সময় লেগেছে দুই ঘণ্টা ১১ মিনিট। এখন পর্যন্ত আগুনে হতাহতের তথ্য পাওয়া যায়নি।
সোমবার রাত ৮টার দিকে আগুন লাগে কুনিপাড়ার ওই বস্তিতে। রাত ১০টা ১০ মিনিটে নিয়ন্ত্রণে আসে আগুন।
সোমবার রাত ১০টা ২৩ মিনিটে ফায়ার সার্ভিসের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণকক্ষের কর্তব্যরত কর্মকর্তা এরশাদ হোসেন দৈনিক বাংলাকে বলেন, রাত ১০টা ১০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। সর্বশেষ সময় পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের মোট ১১টি ইউনিট আগুন নেভাতে কাজ করে।
এর আগে সন্ধ্যা ৭টা ৫৩ মিনিটে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। ৭টা ৫৯ মিনিটে ফায়ার সার্ভিসের প্রথম ইউনিটটি ঘটনাস্থলে পৌঁছে কাজ শুরু করে। পরে তা বেড়ে ১১টি ইউনিট হয়।
আগুন লাগার কারণ জানাতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস। আগুনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।
পুলিশ খুনের মামলায় দুবাইয়ে পলাতক রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খানকে নজরদারিতে রেখেছে দেশটির পুলিশ। সোমবার রাত থেকে দুবাইয়ের একটি ফ্ল্যাটে তাকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারির পরই দুবাই পুলিশের এনসিবি শাখা আরাভকে আটকের তৎপরতা শুরু করে। পুলিশের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ পুলিশের কেউ মন্তব্য করতে চাননি।
জানতে চাইলে সংযুক্ত আমিরাতে বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত আবু জাফর দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘কর্তৃপক্ষ এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের কিছু জানায়নি। তবে অনানুষ্ঠানিকভাবে আমরা জানতে পেরেছি তাকে নজরদারি করা হচ্ছে এবং তার চলাচল সীমিত করা হয়েছে।’
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান দুবাইয়ে গ্রেপ্তার হননি। তবে তিনি পালিয়ে থাকতে পারবেন না’ বলে মন্তব্য করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।
সূত্র জানায়, আরাভকে দেশে ফিরিয়ে আনতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ও পুলিশ সদর দপ্তরের একটি যৌথ দল দুবাই যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছে। ইতিমধ্যে সরকারি আদেশ জারি করার জন্য পুলিশ সদর দপ্তর থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। আগামী দু-এক দিনের মধ্যেই তিন থেকে চারজনের একটি দল দুবাই যেতে পারে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এনসিবি শাখার এআইজি শরীফ মোস্তাফিজুর রহমান এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। তিনি এআইজি মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। এআইজি মিডিয়া মনজুর হোসেন বলেন, ‘আনুষ্ঠানিকভাবে আমরা এখনো এ বিষয়ে কোনো তথ্য পাইনি।’
এনসিবির একজন কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘আরাভ দুবাই পুলিশের হেফাজতে আছে। তার চলাফেরাও সীমিত করা হয়েছে। দুবাইয়ের স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, আরাভকে তার বাসাতে নজরদারির মধ্যে চলাফেরা সীমিত রাখা হয়েছে।’
সূত্র জানায়, আরাভকে আটক রাখা হলেও এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি। এর কারণ আরাভকে গ্রেপ্তার করার পর পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা কী হবে, তাকে আদৌ বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে কি না, তা দেশটির নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তের বিষয়। কারণ সূত্রের তথ্য মতে, দুবাইয়ে যে কেউ যেকোনো পরিমাণ বিনিয়োগ করলে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয় না। সেই হিসাবে আরাভকে কোন ধরনের অপরাধী হিসেবে গ্রেপ্তার করা হবে তা নিয়ে দুবাই পুলিশের মধ্যে সংশয় রয়ে গেছে।’ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইন্টারপোলের অনুরোধে আরাভকে প্রাথমিকভাবে পুলিশি নজরদারি ও হেফাজতের মধ্যে রাখা হয়েছে। কিন্তু তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে কি না, পাঠালে কীভাবে সেটা করা হবে- এ নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন বাংলাদেশের সংশ্লিষ্টরা।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে গত সপ্তাহে এক জমকালো অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আরাভ জুয়েলার্সের উদ্বোধন করার পর ব্যাপক আলোচনা আসে জুয়েলার্সের মালিক আরাভ খানকে নিয়ে। ওই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের ক্রীড়া ও বিনোদন জগতের অনেক তারকাকে আমন্ত্রণ জানিয়ে ফেসবুকে একাধিক পোস্ট দিয়েছিলেন আরাভ খান। তখনই তাকে পুলিশ সদস্য হত্যা মামলার আসামি বলে শনাক্ত করে ফেলেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা।
সূত্র জানায়, খুনের মামলাসহ ১২ মামলার পরোয়ানা মাথায় নিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়া এবং জালিয়াতি করে ভারতীয় নাগরিকত্ব ও পাসপোর্ট নেয়ার বিষয়টি ভারতীয় কর্তৃপক্ষের নজরে এসেছে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ প্রাথমিক তদন্তে জালিয়াতির সত্যতা পাওয়ার পর তার পাসপোর্ট সাসপেন্ড করেছে। ফলে ভারতীয় পাসপোর্টের মাধ্যমে দুবাইতে তার স্থায়ী বসবাসের অনুমতিও বাতিল হয়ে গেছে।
কূটনৈতিক একজন কর্মকর্তা জানান, ‘আরাভ এখন সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবৈধ নাগরিক হিসেবে বিবেচিত হবেন। যেহেতু তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রেড নোটিশ জারির বিষয়টি ইন্টারপোলে নথিভুক্ত হয়েছে এবং বাংলাদেশ তাকে নিজেদের নাগরিক হিসেবে দাবি করেছে, সেহেতু সংযুক্ত আরব আমিরাত কর্তৃপক্ষ তাকে অন্য অবৈধ বসবাসকারীদের মতো বাংলাদেশে ফেরত পাঠাবে। এ ক্ষেত্রে বন্দি বিনিময় চুক্তির কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই।’
এদিকে দুবাইয়ের স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, মঙ্গলবার দিনভর রবিউল ওরফে আরাভকে তার জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানে দেখা যায়নি। এই প্রতিবেদক তার মোবাইলে একাধিকবার কল দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
গোয়েন্দা পুলিশের তথ্যমতে, আরাভ জুয়েলার্স নামের ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক আরাভ খানের আসল নাম রবিউল ইসলাম। বাংলাদেশের গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় তার বাড়ি। তিনি সোহাগ মোল্লা, হৃদয় শেখ, আপন— এ রকম কয়েকটি নামে পরিচিত। ২০১৮ সালের ৭ জুলাই ঢাকায় পুলিশের পরিদর্শক মামুন এমরান খান খুন হন। সেই খুনের আসামি হয়ে দেশ ছেড়েছিলেন রবিউল।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি সূত্র জানায়, ওই খুনের ঘটনার পরে অন্য আসামিদের সঙ্গে আরাভকে আটক করেছিল ডিবি পুলিশ। ডিবি পুলিশ কার্যালয়ে দুদিন রাখার পর তাকে পুলিশের এক পদস্থ কর্তার অনুরোধে ছেড়ে দেয়া হয়। চার দিন ধরে বিষয়টি নিয়ে দেশের একাধিক গণমাধ্যম এসব তথ্য প্রকাশ করছে। এর পরই পুলিশপ্রধান (আইজিপি) এ বিষয়ে মুখ খোলেন।
মামলা ও নথিপত্র সূত্রে জানা যায়, পুলিশ পরিদর্শক মামুন এমরান নারীদের টোপ হিসেবে ব্যবহার করে বিত্তশালীদের ফাঁদে ফেলে অর্থ হাতিয়ে নেয়া একটি চক্রের কবলে পড়েন। এরপর তাকে ধরে নিয়ে হত্যার পর পেট্রোল ঢেলে লাশ পুড়িয়ে গাজীপুরের জঙ্গলে ফেলে দেয় হত্যাকারীরা।
বাংলাদেশে মানবাধিকার সুরক্ষা ও প্রসারে জাতিসংঘের সঙ্গে একযোগে কাজ করতে দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক। মঙ্গলবার জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার ভলকার তার্কের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে এ অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন আইনমন্ত্রী।
বৈঠকে আইনমন্ত্রী হাইকমিশনারকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে তার অফিসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার কথা উল্লেখ করেন। সরকারের কার্যকর উদ্যোগের কারণে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার অনেক কমেছে বলে আইনমন্ত্রী হাইকমিশনারকে অবহিত করেন। তিনি বলেন, ‘সরকার এ আইনের অপব্যবহার বন্ধের ব্যাপারে সজাগ রয়েছে।’ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের এ সংক্রান্ত আইনের ‘গুড প্রাকটিস’ নিয়ে সরকার আলোচনা করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। আইনটি নিয়ে সরকার সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সাথেও পরামর্শ করছে বলে জানান আইনমন্ত্রী।
এ ছাড়াও মন্ত্রী জানান, তথ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য সরকার তথ্য সুরক্ষা আইন নিয়ে কাজ করছে। সম্প্রতি প্রস্তাবিত আইনের একটি খসড়া প্রকাশিত হয়েছে জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আইনটি নিয়ে সরকার বিভিন্ন অংশীজনদের নিয়ে পরামর্শ করছে।’
বৈঠকে হাইকমিশনার জাতিসংঘের সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্রের ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে তার কার্যালয়ের বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরে এ ব্যাপারে বাংলাদেশর সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।
বৈঠকে আইনমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের প্রচেষ্টাকে সফল করতে জাতিসংঘের অধিকতর শক্তিশালী ও কার্যকর ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান। বৈঠকে জেনেভাস্থ জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মো. সুফিউর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
অভিবাসন খাতে অবদান রাখায় ও মূল্যবোধ চর্চায় ‘স্যার ফজলে হাসান আবেদ মূল্যবোধ পুরস্কার’ অর্জন করেছেন আল-আমিন নয়ন, যিনি বিদেশ ফেরত ও প্রবাসীদের কল্যাণে এবং বিপদে-আপদে আস্থার নাম হয়ে উঠেছেন।
মঙ্গলবার রংপুরের ব্র্যাক লার্নিং সেন্টারে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে নয়নের হাতে এই পুরস্কার তুলে দেন ব্র্যাক বাংলাদেশের চেয়ারপারসন ড. জিল্লুর রহমান ও নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ।
ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচিতে কর্মরত আল-আমিন নয়ন ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দায়িত্ব পালন করেন। অসহায়, ক্ষতিগ্রস্ত ও নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফেরা প্রবাসীদের পাশে দাঁড়ান তিনি। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে দেশে ফেরা প্রবাসীদের সাহায্যে ক্লান্তিহীনভাবে কাজ করছেন এক সময়ের এই রেমিট্যান্সযোদ্ধা।
রাজশাহীর বাসিন্দা নয়ন নিজে মালয়েশিয়ায় গিয়ে চরম নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। ২০০৭ সালে প্রতিবেশী একজন মালয়েশিয়াতে চাকরির কথা বললে জমি বিক্রি করে মালয়েশিয়া যাওয়ার খরচ জোগাড় করেন তিনি। পাসপোর্ট ও সরকারি ছাড়পত্র নিয়ে সব নিয়ম মেনে তিনি মালয়েশিয়ায় যান। কিন্তু যাওয়ার পরেই বুঝতে পারেন, তিনিসহ অন্যদের আসলে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে।
তামিল এক মালিকের অধীনে নয়নদের পাহাড়ের জঙ্গল পরিষ্কার করতে হতো। এ সময় কেউ ক্লান্ত হয়ে পড়লে লাঠি দিয়ে পিটুনি ছাড়াও নানা কায়দায় তাদের নির্যাতন করা হতো। ঠিকমতো খাবার দেয়া হতো না। এসব সহ্য করতে না পেরে ছয়জন আত্মহত্যা করার হুমকি দেন। তারপর তাদের ফেরত দেয়া হয় আগের এজেন্টের কাছে। সেখানে তাদের আরও তিন থেকে চার শ জনের সঙ্গে একটি গোডাউনে রাখা হয়। সেখানে কয়েকজন আত্মহত্যা করেন। জীবন বাঁচাতে জানালা ভেঙে নয়নসহ ১১০ জন পলিয়ে আশ্রয় নেন বাংলাদেশ দূতাবাসে। কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে জীবন বাঁচানোর তাগিদে দূতাবাসের সামনে অনশন শুরু করেন। এ সময় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এই আন্দোলনের খবর বেশ গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশিত হয়। অবশেষে সেখানে মালয়েশিয়ার এক মানবাধিকার সংস্থা নয়নদের সঙ্গে দেখা করে। পরে নয়নদের বাংলাদেশে পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হলে ৮০ জন খালি হাতে, শুধু প্রাণ নিয়ে বাংলাদেশে ফেরত আসতে সক্ষম হন।
দেশে এসে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোতে লিখিত অভিযোগ করলে তদন্ত শেষে রিক্রুটিং এজেন্সি মেসার্স গোল্ডেন এ্যারো লি. মালয়েশিয়া যাওয়া বাবদ ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা ফেরত দেন নয়নসহ ৮০ কর্মীকে। তবে নিজে ক্ষতিপূরণ পেয়েই থেমে যাননি নয়ন। বরং শুরু হয় তার নতুন পথচলা। নয়ন সিদ্ধান্ত নেন তার মতো পরিস্থিতির শিকার মানুষের পাশে দাঁড়ানোর।
২০১৭ সালে ব্র্যাকের মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টারে ম্যানেজার পদে কাজ শুরু করেন। এরপর থেকে অসহায় বিদেশ ফেরত ও প্রবাসীদের জন্য নিরন্তরভাবে কাজ করে চলছেন। তার প্রাথমিক দায়িত্ব ছিল বিদেশ থেকে আসা লোকজনকে তথ্য দিয়ে সচেতনতা তৈরির। কিন্তু নয়ন নিজ উদ্যোগে ও ব্যক্তিগত সহায়তায় ২০১৮ সাথে প্রথম ঢাকা আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরে বিদেশ ফেরত নির্যাতিত ও ক্ষতিগ্রস্থ নারী কর্মীদের পাশে দাঁড়ানো শুরু করেন।
এ বিষয়ে নয়ন বলেন, ‘বিদেশে কাজে গিয়ে নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফেরত আসার যে কষ্ট, তা আমার চেয়ে আর কে ভালো বুঝবে। নিজে ভিকটিম তো, তাই অন্যদের কষ্টটা বুঝতে পারি।’
নয়ন ব্র্যাকের হয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এ পর্যন্ত ২০ হাজার ৮১৮ জন বিদেশফেরত অভিবাসী কর্মীকে দিয়েছেন জরুরি সহায়তা। প্রতারণার শিকার শতাধিক মানুষ কয়েক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ পেয়েছে। মানসিক অসুস্থ হয়ে দেশে ফেরা ঠিকানাহীন ১০০ নারীকে নিরাপদে ফিরিয়ে দিয়েছেন পরিবারে। প্রবাসে মৃত ৪১ কর্মীর মরদেহ দেশে আনতে সাহায্য করছেন।
পুরস্কার পেয়ে নয়ন বলেন, ‘সত্যি এটা আনন্দের। এভাবেই অধিকার রক্ষায় লড়াই চালিয়ে যেতে চাই।’
বাংলাদেশে সংবিধান অনুযায়ী যে সংসদীয় গণতন্ত্র রয়েছে, তা প্রধানমন্ত্রীর হাতে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করে রেখেছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে যা বলা হয়েছে তা দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। শিগগিরই এ প্রতিবেদনের ত্রুটিগুলো চিহ্নিত করে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তুলে ধরা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে সোমবার প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় এসব কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী। মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে শাহরিয়ার আলম বলেন, এই রিপোর্টে কিছু মৌলিক ত্রুটি আছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের সংবিধান অনুসারে সংসদীয় গণতন্ত্রের সরকার গঠন হয়, যেখানে বেশির ভাগ ক্ষমতা ন্যস্ত প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের কাছে।
এ বিষয়ে শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘বাংলাদেশে একজন প্রধানমন্ত্রীর যতটুকু ক্ষমতা থাকা প্রয়োজন ততটুকুই আছে। এটির ডিগ্রি অব অ্যাপ্লিকেশন বা অন্যকিছু নিয়ে প্রশ্ন তোলা, উদ্বেগ বা সংশয় প্রকাশ করার কোনো নৈতিক অধিকার কারও নেই। এ বিষয়ে বলতে গেলে আমাদের অনেক কিছু বলতে হয়, যা অনেক অপ্রীতিকর হতে পারে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশে সংসদীয় গণতন্ত্রে কীভাবে আইন প্রণয়ন হয় সেটা আপনারা দেখছেন। সেখানে এভাবে ঢালাওভাবে একটা পজিশনকে (প্রধানমন্ত্রীকে) বা তার সাংবিধানিক কার্যালয়কে হেয় করার যে প্রবণতা আমরা দেখেছি, সেটা খুবই দুঃখজনক।
এই প্রতিবেদনে বেশি কিছু মৌলিক ত্রুটি রয়েছে জানিয়ে শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘এ ধরনের রিপোর্ট প্রকাশ হওয়ার আগে আমাদের জানানো এবং আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়ার জন্য আমরা বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রকে বলেছি। এ ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও তা এবারও মানা হয়নি।’
নিবন্ধন বাতিল করা অধিকারের মতো সংস্থার তথ্য প্রতিবেদনে ব্যবহার করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘পরিষ্কারভাবে বলতে চাই বর্তমানে বাংলাদেশে কার্যক্রম চালানোর কোনো লাইসেন্স অধিকারের নেই। কোনো সিভিল সোসাইটি অর্গানাইজেশন বা আইএনজিও যার একটি রাজনৈতিক পরিচয় আছে, তাদের নিরপেক্ষতার দৃষ্টিতে দেখার কোনো সুযোগ নেই। এ রকম ঘাটতি অব্যাহত থাকলে এসব রিপোর্টের গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে যায়।’
অনিবন্ধিত সংগঠনকে আমলে নেয়ার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি অন্য দেশগুলোকেও সতর্ক করেন তিনি।
শাহরিয়ার আলম জানান, যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদন আরও পর্যালোচনা করে দেখবে সরকার। এ বিষয়ে সরকারের পর্যবেক্ষণ সামনের দিনগুলোতে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে তুলে ধরা হবে। তবে প্রতিবেদনের বিভিন্ন ইস্যুতে বাংলাদেশের উন্নতির কথাও রয়েছে বলে জানান শাহরিয়ার আলম।
এই প্রতিবেদনের ত্রুটির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এতে জোরপূর্বক গুমের সংখ্যা ৮১ জন বলা হয়েছে। কিন্তু এই সংখ্যাটি ৭৬। সেখানে লেখা রয়েছে, বাংলাদেশ দাবি করেছে ১০ জনকে চিহ্নিত করা গেছে। এমনভাবে বলেছেন যেন এটা চূড়ান্ত নয়। কিন্তু এই ১০ জনের তথ্য-উপাত্ত পাওয়ার পরে জাতিসংঘ নিজেরা যাচাই-বাছাই করে ৭৬ জনের তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে। এ ধরনের মৌলিক ত্রুটি এই রিপোর্টে আছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালে বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, মতপ্রকাশ ও গণমাধ্যমের বাধা, সভা-সমাবেশে বলপ্রয়োগ, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানকে বাধা প্রভৃতি অন্যান্য সময়ের মতো অব্যাহত ছিল।
বাংলাদেশ রেলওয়ে আগামী ৭ এপ্রিল থেকে ঈদযাত্রার ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু করতে পারে। এবার ঈদের অগ্রিম টিকিট শতভাগ অনলাইনে দেয়ার বিষয়েও পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে রেলওয়ে সূত্র জানায়। আগে ট্রেনের ৫০ শতাংশ টিকিট অনলাইনে ও বাকি অর্ধেক স্টেশনের কাউন্টারে বিক্রি হতো। এবার সেই ব্যবস্থায় পরিবর্তন হতে পারে।
আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে মঙ্গলবার রেলভবনে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয়ে এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ঈদযাত্রার টিকিটব্যবস্থা নিয়ে বুধবার রেলমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানানোর কথা রয়েছে।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, এবার ঈদের ১০ দিন আগের ট্রেনের টিকিট বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগে ঈদের ৫ দিন আগে অগ্রিম টিকিট দেয়া হতো। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ৭ এপ্রিল থেকে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হতে পারে। কেউ যাত্রা বাতিল করলে অনলাইনেই টাকা ফেরত (রিফান্ড) পাবেন। শতভাগ অনলাইন টিকিটের ক্ষেত্রে এই ব্যবস্থা চালু হচ্ছে।
রেলওয়ের পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী ৭ এপ্রিল দেয়া হতে পারে ১৭ এপ্রিলের ট্রেনের অগ্রিম টিকিট। ৮ এপ্রিল দেয়া হতে পারে ১৮ এপ্রিলের, ৯ এপ্রিল দেয়া হতে পারে ১৯ এপ্রিলের এবং ১০ এপ্রিল দেয়া হতে পারে ২০ এপ্রিলের টিকিট। ১১ এপ্রিল দেয়া হতে পারে ২১ এপ্রিলের টিকিট।
এদিকে, ঈদযাত্রার ট্রেনের ফিরতি টিকিট দেয়া শুরু হতে পারে ১৫ এপ্রিল থেকে। সেই হিসাবে আগামী ১৫ এপ্রিল দেয়া হতে পারে ২৫ এপ্রিলের টিকিট। যথাক্রমে ১৬ এপ্রিল দেয়া হবে ২৬ এপ্রিলের টিকিট। ১৭ এপ্রিল দেয়া হবে ২৭ এপ্রিলের টিকিট। ১৮ এপ্রিল দেয়া হবে ২৮ এপ্রিলের টিকিট। আর ১৯ এপ্রিল দেয়া হবে ২৯ এপ্রিলের টিকিট।
রেলওয়ের ওই সূত্র আরও জানায়, ঈদের সময় ট্রেনের সব টিকিট অনলাইনে দেয়ার বিষয়টি আন্তমন্ত্রণালয় সভায় আলোচনা হয়েছে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি ও যাত্রার সময় অতিরিক্ত ভিড় এড়াতে এমন সিদ্ধান্ত হতে পারে। সে ক্ষেত্রে শুধু ঈদযাত্রার অগ্রিম টিকিট অনলাইনে দেয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এটা আপাতত ঈদকে কেন্দ্র করে পরীক্ষামূলকভাবে করা হতে পারে। এটা সফল হলে আগামী পহেলা মে থেকে ট্রেনের সব টিকিট অনলাইনে বিক্রির সিদ্ধান্তও হতে পারে।
এদিকে, এবার ঈদে বিভিন্ন রুটে ১০ জোড়া বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করতে পারে বাংলাদেশ রেলওয়ে। তার মধ্যে পূর্বাঞ্চলে চলবে ৮ জোড়া, পশ্চিমাঞ্চলে দুই জোড়া। ঈদের সময় সব মিলিয়ে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টিকিট বিক্রি করে রেলওয়ে। সভায় অংশগ্রহণকারী রেলের একজন কর্মকর্তা জানান, গতবারের চেয়ে এবার বেশি বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করা হবে। গতবার ৬ জোড়া বিশেষ ট্রেন চালানো হয়েছিল।
তবে রেলের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, রেলের অনেক যাত্রী এখনো অনলাইনে টিকিট কাটতে অভ্যস্ত নন। ফলে শতভাগ অনলাইনে টিকি দিলে সাধারণ যাত্রীদের একটি অংশ টিকিট কাটতে পারবেন না। সে ক্ষেত্রে ঈদের সময় একটা বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে।
ঈদে টিকিট কালোবাজারি ঠেকাতে ঢাকা, বিমানবন্দর, জয়দেবপুর, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, সিলেট, রাজশাহী, খুলনাসহ বড় বড় সব স্টেশনে জিআরপি, আরএনবি, বিজিবি ও স্থানীয় পুলিশ এবং র্যাবের সহযোগিতায় সার্বক্ষণিক প্রহরার ব্যবস্থা থাকবে। তাছাড়া জেলা প্রশাসকদের সহায়তায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে বলেও আন্তমন্ত্রণালয় সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে। পাশাপাশি চলন্ত ট্রেনে, স্টেশনে বা রেললাইনে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে আরএনবি, জিআরপি ও রেলওয়ে কর্মচারীদের কার্যক্রম আরও জোরদার করা হবে।
এদিকে, যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলের সুবিধার্থে ঈদের ৩ দিন আগে থেকে কনটেইনার ও জ্বালানি তেলবাহী ট্রেন ছাড়া সবধরনের মালবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে। তাছাড়া ঈদের সময় আন্তদেশীয় ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে। একইসঙ্গে রেলপথ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত ভিজিলেন্স টিমও মনিটরিং করতে পারে ঈদের সময়।
বাসের অগ্রিম টিকিট নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি
বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান ও শ্যামলী পরিবহনের মালিক রমেশ চন্দ্র ঘোষ দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘বাসের অগ্রিম টিকিট বিক্রির বিষয়ে আমরা এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। তবে আগামী সপ্তাহে বাসমালিকদের নিয়ে আমরা একটি সভা করব। তারপর সিদ্ধান্ত জানা যাবে। তবে প্রতিবার ১৫ রোজা থেকে বাসের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়।’
রাজধানীর কমলাপুরে ১৭ তলা একটি ভবনের ১২ তলা থেকে পড়ে শাফায়েত আহমেদ রাশু (১৮) নামে এক শিক্ষার্থী প্রাণ হারিয়েছেন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে কমলাপুরে ইস্টার্ন হাউজিংয়ের ওই ভবন থেকে শাফায়েত পড়ে যান। তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রাত ৮টার দিকে এই তরুণকে মৃত ঘোষণা করেন।
তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা বাবা শাহ আলম জানান, শাফায়েত ওষুধ কেনার জন্য ভভনের ১২ তলার বাসা ঘর থেকে বের হয়ে দৌড়ে লিফট ধরতে যান। এসময় শরীরের ভারসাম্য হারিয়ে ব্যালকনি দিয়ে নিচে পড়ে যান তিনি।
শাফায়েত কমলাপুর শেরেবাংলা স্কুল অ্যান্ড কলেজ এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন ছোট। তার কিছু মানসিক সমস্যা ছিল এবং সেজন্য চিকিৎসা চলছিল বলেও জানান শাহ আলম।
ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বাচ্চু মিয়া দৈনিক বাংলাকে বলেন, শাফায়েতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানাকে অবগত করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেতে যাচ্ছে ঢাকা জেলার ৩৯০টি পরিবার। আগামী বুধবার সুবিধাভোগীদের ঘর বুঝিয়ে দেয়া হবে। এর মধ্য দিয়ে ঢাকার সাভার, কেরাণীগঞ্জ ও দোহার উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ বিষয়ে ঢাকা জেলা প্রশাসন বলছে, ‘মুজিবশতবর্ষে একজন লোকও গৃহহীন থাকবে না’—প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে তার কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প সারাদেশে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে দুই শতাংশ জমিসহ সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে ঘর প্রদানের কার্যক্রম হাতে নেয়। ঢাকা জেলায় প্রথম পর্যায়ে এক হাজার ৪৯টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ঘর দেয়া হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে ঘর দেয়া হয় ২৫৫টি পরিবারকে।
তৃতীয় পর্যায়ে গত বছরের ২৬ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার হিসেবে ঢাকা জেলায় ২৭১টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ঘর দেয়া হয়। এরপর ২১ জুলাই আরও ৯৯টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ঘর দেয়া হয়। ইতোপূর্বে ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলাকে প্রধানমন্ত্রী ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করেছেন।
জেলা প্রশাসন আরও জানিয়েছে, আগের সাফল্যের ধারাবাহিকতায় বুধবার ঢাকা জেলায় চতুর্থ পর্যায়ে ৩৯০টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে দুই শতাংশ জমিসহ সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে নির্মিত ঘর দেয়া হবে। এর মাধ্যমে ঢাকার সাভার, কেরাণীগঞ্জ ও দোহার উপজেলাকে প্রধানমন্ত্রী ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করবেন।
প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, গৃহহীন ও ভূমিহীন মানুষকে বিনামূল্যে জমিসহ ঘর দেয়া উপলক্ষে ঢাকা জেলায় উপকারভোগীদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে। একটি নিজস্ব ঠিকানা খুঁজে পাওয়ায় উপকারভোগীরা আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীকে।
একুশে পদকপ্রাপ্ত ভাস্কর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা অনুষদের সাবেক অধ্যাপক শামীম শিকদার আর নেই। তার বয়স হয়েছিল ৭০ বছর।
মঙ্গলবার বিকেল ৪টা ৪১ মিনিটে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শামীম শিকদার মারা যান। তিনি দীর্ঘদিন ধরে হার্ট ও কিডনি রোগসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন।
ইউনাইটেড হাসপাতালের জনসংযোগ কর্মকমর্তা আরিফ হোসেন দৈনিক বাংলাকে বলেন, আগে থেকেই হৃদরোগে ভুগছিলেন শামীম শিকদার। হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তি ছিলেন তিনি। বিকেলে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে তার মৃত্যু হয়।
শামীম শিকদার এর আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। সেখান থেকে গত ২০-২৫ দিন আগে তিনি ছাড়পত্র পান। পরে অসুস্থতা নিয়ে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি হন।
শামীম সিকদার ১৯৫২ সালের ২২ অক্টোবর বগুড়া জেলার মহাস্থানগড়ের চিংগাশপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৫ বছর বয়সে তিনি বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে ভর্তি হন। পরে ১৯৭৬ সালে তিনি লন্ডনের স্যার জন কাস স্কুলে পড়তে যান।
১৯৭৪ সালে এই ভাস্কর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মরণে একটি ভাস্কর্য নির্মাণ করেন।
১৯৮৮ সালের ২৫ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে ‘স্বোপার্জিত স্বাধীনতা’ শিরোনামের ভাস্কর্য নির্মাণ করেন। ভাস্কর্যটির মূল বেদিতে আছে মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন ঘটনার চিত্র।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুলার রোড এলাকায় ‘স্বাধীনতা সংগ্রাম’ ভাস্কর্যও নির্মাণ করেন তিনি। ১৯৯৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে নির্মাণ করেন স্বামী বিবেকানন্দের ভাস্কর্য।
ভাস্কর্যশিল্পে অবদানের কারণে ২০০০ সালে তাকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করে সরকার।
শামীম শিকদার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ভাস্কর্য বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। ১৯৮০ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ললিতকলা অনুষদের একজন ফ্যাকাল্টি মেম্বার ছিলেন।
শামীম শিকদার দুই সন্তান রেখে গেছেন। তারা লন্ডনে বসবাস করেন। মোহাম্মদপুর কবরস্থানে বাবা-মায়ের কবরের পাশে তাকে সমাহিত হবে। এর আগে, তার মরদেহ শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেয়া হবে।
দেশের নদ-নদী, জলাধার এবং নদীনির্ভর মানুষ ও তাদের জীবিকাকে দখল ও দূষণের মাধ্যমে হত্যা করা হচ্ছে বলে অভিমত দিয়েছেন পরিবেশবাদীরা। এ জন্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য যেমন ট্রাইব্যুনাল করা হয়েছে, নদী হত্যা বন্ধ এবং অবৈধভাবে নদী দখলকারীদের বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠনের দাবি জানিয়েছেন তারা।
‘বিশ্ব পানি দিবস’ উপলক্ষে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে মঙ্গলবার পানি অধিকার ফোরাম এবং বেলা’র উদ্যোগে এক সেমিনারে বক্তারা ট্রাইব্যুনাল গঠনের দাবি জানান।
পানি অধিকার ফোরামের নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা বাংলাদেশের নদ-নদী দখল ও দূষণের সার্বিক চিত্র নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করে নদী সুরক্ষায় দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রমের ওপর অনাস্থা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘কোনো এক অজ্ঞাত কারণে নদী সুরক্ষার উদ্যোগ এবং উদ্যোগের গতি থেমে যাচ্ছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের অদক্ষতা, অসচেতনতা, অজ্ঞতা, উদাসীনতা ও দুর্নীতির কারণে নদী সুরক্ষায় আইন বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না। নদী, পাহাড়, জলাধার, কৃষিজমি রক্ষা করা না হলে আমাদের অস্তিত্ব থাকবে না।’
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. মোতাহার হোসেন হাওরাঞ্চলের মৎস্য সম্পদের ওপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, ‘পুকুরে মাছ চাষ করে উৎপাদন বাড়ানো হলেও উন্মুক্ত জলাশয়ের পরিমাণ কমছে। ময়লা-আবর্জনা ফেলে ও দখল হয়ে সুরমা, কুশিয়ারা নদী এখন ছোট হয়ে গেছে। হাওরে আইন অনুযায়ী জাল ব্যবহার না করার কারণে দেশীয় ছোট ছোট মাছসহ আরও অনেক মাছের প্রজাতি বিলুপ্তির পথে।’
বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘সংবিধানে নদী, জলাশয় সাধারণ জনগণের সম্পত্তি হলেও শিল্প-কারখানার মালিক এবং নদী দূষণকারীরাই এখন নদী উন্নয়নের ধারক ও বাহক। এদের কারণে ভূ-উপরিস্থ পানির উৎস এবং ভূগর্ভস্থ পানি এখন সংকটাপন্ন। বৃহত্তর জনস্বার্থে নদী সুরক্ষায় এবং সঠিক ব্যবস্থাপনার জন্য আগামী নির্বাচনে প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রকৃতি ও ভূগর্ভস্থ পানিবিষয়ক অঙ্গীকার থাকতে হবে।’
জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন নদী সুরক্ষার ম্যান্ডেট থেকে সরে এসেছে অভিযোগ করে রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘মাছের অভয়ারণ্যের কোনো আইনগত স্বীকৃতি নেই। ১৯৫০ সালের মৎস্য সংরক্ষণ আইন দিয়ে ২০২৩ সালে এসে আপনি কীভাবে মাছের সুরক্ষা দেবেন?’
পানি অধিকার ফোরামের চেয়ারপারসন খুশী কবিরের সভাপতিত্বে সেমিনারে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান হাওলাদার এবং বুয়েটের অধ্যাপক শাহজাহান মণ্ডল বক্তব্য দেন।
নির্বাচনের বছরে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চোখ-কান খোলা রাখবে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ। তিনি বলেছেন, ‘নির্বাচনে প্রার্থীদের হলফনামায় যে সম্পদ বিবরণী থাকে, তা খতিয়ে দেখবে দুদক। চোখ-কান খোলা রেখে প্রভাবমুক্ত থেকে কাজ করবে। আগামী বছর দুদকের কাজে আরও গতিশীলতা আনার জন্য কাজ করা হচ্ছে বলেও জানান দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটির প্রধান।’
মঙ্গলবার সেগুনবাগিচায় সংস্থার প্রধান কার্যালয়ে দুদকের ২০২২ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় সংস্থাটির দুই কমিশনার ড. মো. মোজাম্মেল হক খান ও মো. জহুরুল হক এবং সচিব মো. মাহবুব হোসেনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য পর্যালোচনা করে ‘ফাঁদ মামলা’ ইস্যুতে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করলে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা যতটুকু তথ্য পেয়েছি, সেই অনুসারে ফাঁদ মামলা হয়েছে। আমরা শতভাগ সফল হতে পারি নাই। বিগত পাঁচ বছরের তুলনায় গত বছর সবচেয়ে বেশি মামলা দায়ের করেছি। ওই বছর এফআরটি কম হয়েছে। মামলা বেশি হয়েছে, এফআরটি কমেছে। সাজার হার বেড়েছে।’
পাচারকৃত অর্থের বিষয়ে দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) ড. মোজাম্মেল হক খান বলেন, ‘দেশের টাকা বাইরে চলে গেছে। পাচারকৃত অর্থ নিয়ে কাজ করে আরও অনেক সংস্থা। শুধু দুদকের একার কাজ নয় এটি। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি টাকা ফিরিয়ে আনার। এই বিষয়ে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারিনি। পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আমাদের মাত্র একটি অপরাধের এখতিয়ার আছে। বাকি ২৬টি অপরাধের বিষয় অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের এখতিয়ারে। কিন্তু জনগণের মনে এখনো ভ্রান্ত ধারণা, দুদক কী কাজ করে। কিন্তু আমাদের অংশে আমরা কাজ করি ও শতভাগ সাফল্য রয়েছে।’
হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশের এক পর্যবেক্ষণের সূত্র ধরে দুদক কমিশনার জহুরুল হক বলেন, ‘দেশে অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি বাড়েনি বরং কমেছে। তবে অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি বন্ধ করতে পারিনি। মামলা পরিচালনা ক্ষমতা কমেছে এটা মিথ্যা কথা। কারণ মানি লন্ডারিং মামলায় ১০০ ভাগ সাফল্য, অন্যান্য মামলায় সাজা ৬৭ থেকে ৭০ ভাগ আমাদের পক্ষে। আমাদের সক্ষমতা কমেছে কে এটা বলেছে। এ কথা আমি বিশ্বাস করি না।’
দুদকের ২০২২ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত বছর দুদকে জমা পড়ে ১৯ হাজার ৩৩৮টি অভিযোগ। এসব যাচাই-বাছাই শেষে অনুসন্ধানের জন্য সংস্থাটি হাতে নিয়েছে ৯০১টি অভিযোগ, যা মোট অভিযোগের ৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ। অর্থাৎ ৯৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ অভিযোগই অনুসন্ধানের জন্য আমলে নিতে পারেনি দুদক। ১৯ হাজার ৩৩৮টি অভিযোগের মধ্যে ৩ হাজার ১৫২টি অভিযোগ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাঠানো হয়েছে। ২০২২ সালে চার্জশিট অনুমোদন হয়েছে ২২৪টি, মামলা হয়েছে ৪০৬টি, ফাঁদ মামলা হয়েছে মাত্র ৪টি।
খুলনা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আবদুল্লাহর বিরুদ্ধে ওঠা অনিয়ম-দুর্নীতি অনুসন্ধানের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে। মঙ্গলবার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইমাদুল হক বসির।
রিটে খুলনা ওয়াসার এমডির বিরুদ্ধে ওঠা অনিয়ম-দুর্নীতির অনুসন্ধান করতে দুদকের প্রতি নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে তার নিয়োগ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারির আর্জি জানানো হয়েছে।
রিটে স্থানীয় সরকার সচিব, জনপ্রশাসন সচিব, উপ সচিব স্থানীয় সরকার (পানি সরবরাহ), পিএসসির চেয়ারম্যান, খুলনা ওয়াসা কর্তৃপক্ষ, খুলনা ওয়াসার চেয়ারম্যান, দুর্নীতি দমন কমিশন ও খুলনা ওয়াসার এমডিকে বিবাদী করা হয়েছে।
রিটকারী আইনজীবী ইমাদুল হক বসির দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘খুলনার ওয়াসার এমডির অনিয়ম দুর্নীতি নিয়ে বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রতিবেদন প্রকাশ হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে বিস্তর অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, তারপরও তিনি বহাল তবিয়তে রয়েছেন। নিজের পদে থাকতে তিনি প্রবিধান সংশোধন করে নিচ্ছেন। তারপরও তার বিষয়ে কোনো তদন্ত হচ্ছে না। এই কারণে হাইকোর্ট থেকে অনুমতি নিয়ে বিষয়টি অনুসন্ধানের নির্দেশনা চেয়ে রিট দায়ের করেছি। আগামী সপ্তাহে রিটটির শুনানি হতে পারে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি এবং এর যথাযথ সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ ও বিদেশে রপ্তানি নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। একইসঙ্গে তিনি ডাল, পেঁয়াজ ও সরিষার আবাদ, সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে সংশ্লিষ্টদের গভীর মনোযোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, কোনো জমি যেন অলস পড়ে না থাকে।
প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সভাকক্ষে তার সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এসব কথা বলেন। সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকের ব্রিফ করেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী আবারও কোনো জমি অলস না রেখে চাষের আওতায় আনার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সিলেট অঞ্চলে এখনো অনেক জমি অলস পড়ে থাকে। চাষাবাদ হচ্ছে না। সেসব জমি চাষের আওতায় আনতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে উপকূলীয় অঞ্চলের চিংড়ি ঘের মালিকদের প্রযুক্তিগত ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের নির্দেশ দিয়ে বলেন, ঘের মালিকরা যেন ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারে এবং ঘের থেকে বালু পরিষ্কার করতে পারে। এছাড়া, তিনি বিদেশি জাতের মাছের পরিবর্তে স্থানীয় জাতের মাছ চাষে বেশি মনোযোগ দেয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
প্রধানমন্ত্রী যেকোনো প্রকল্পে ‘দারিদ্র্য বিমোচন’ শব্দটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে তার আপত্তির বিষয়টি উত্থাপন করেন। তিনি এক্ষেত্রে মানবসম্পদ উন্নয়ন শব্দটি বেশি ব্যবহার করা যেতে পারে বলে উল্লেখ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেকোনো প্রকল্পের অধীনে কেবল অবকাঠামো নির্মাণ করাটাই সবসময় বুদ্ধিমানের কাজ নয়, জনগণকে সেবা প্রদানের জন্য অবকাঠামো ও ভবনের অধীনে মেশিনারিজ চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় জনবল তৈরি এবং তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণ প্রদানের দরকার রয়েছে।’
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী সরকারি প্রকল্পে আমদানি করা যানবাহনের পরিবর্তে (রাষ্ট্রমালিকানাধীন) প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ থেকে স্থানীয়ভাবে সংযোজিত যানবাহন ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব প্রদান করেন। প্রধানমন্ত্রী উন্নয়ন প্রকল্পে বিদেশি পরামর্শক নিয়োগের প্রবণতা কমানো এবং প্রকল্প ব্যবস্থাপনায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নিজ সংস্থার নিয়মকানুন মেনে চলার নির্দেশ প্রদান করেন।’
দেশের বর্তমান সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘ফেব্রুয়ারিতে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেড়েছে। মার্চে সেটি আরও বাড়তে পারে। যদি বোরোর বাম্পার ফলন হয়, তাহলে বৈশাখ থেকে মূল্যস্ফীতি কমে যাবে, তবে এসময়ে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত কিন্তু ভালো নয়।’
পরিকল্পনামন্ত্রী মনে করেন, ‘বর্তমানে সার্বিক অর্থনীতি আগের তুলনায় অনেক ভালো। রেমিট্যান্স, রপ্তানি এবং কৃষি ফলনের অবস্থা যেভাবে আছে, তাতে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।’
আসন্ন রমজানে মূল্যস্ফীতি কমানোর ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী সুনির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা দিয়েছেন কিনা- সে বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের মধ্যে বেশি করে পণ্য কেনার প্রবণতা রয়েছে। যা ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত মুনাফা করার সুযোগ তৈরি করে। প্রধানমন্ত্রী এই প্রবণতা রোধ করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক থাকার নির্দেশ প্রদান করেছেন।’
এম এ মান্নান জানান, সম্প্রতি ইন্দো-বাংলা ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন উদ্বোধন করায় একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানানো হয়। দুই প্রতিবেশী দেশ ১৩১ দশমিক ৫৭ কিলোমিটার আন্তঃসীমান্ত পাইপলাইন তৈরি করেছে, যার মাধ্যমে ভারত থেকে পেট্রোলিয়াম বিশেষ করে ডিজেল আমদানি করবে বাংলাদেশ।
ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, পরিকল্পনা সচিব ও পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
পুলিশ পরিদর্শক হত্যা মামলার পলাতক আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান পালিয়ে থাকতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রতিমন্ত্রী এ কথা জানান।
আরাভের বিষয়টি সংযুক্ত আরব আমিরাতকে জানানো হয়েছে উল্লেখ করে শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘আমি এটুকুই বলতে পারি যে, বাংলাদেশের আসামি কোনো বন্ধু রাষ্ট্রে গিয়ে, তার যদি কোনো রাজনৈতিক আশ্রয় না থাকে, আর বুদ্ধির সীমাবদ্ধতার কারণে হোক বা অন্য কারণে হোক, সে যদি নিজেকে আইডেন্টিফাই করে; তাহলে তার মুক্ত থাকার কোনো পরিস্থিতি থাকে না। এটুকু বলতে পারি সে (আরাভ খান) পালাতে পারবে না।’
আরাভের গ্রেপ্তারের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এটা এখনো আনফোল্ডিং (উন্মোচন হয়নি), আপনারা সময়মতো জানতে পারবেন।’
প্রতিমন্ত্রী এ কথা বললেও আরব আমিরাত ও ঢাকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আরাভ খানকে আমিরাতের পুলিশ আটক করেছে। বাংলাদেশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারির পরই দুবাই পুলিশের এনসিবি শাখা আরাভকে আটকের তৎপরতা শুরু করে। গত সোমবার রাতে দুবাইয়ের একটি ফ্ল্যাট থেকে তাকে আটক করা হয়।
সূত্র জানায়, আরাভকে দেশে ফিরিয়ে আনতে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) ও পুলিশ সদর দপ্তরের একটি যৌথ দল দুবাই যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছে। আগামী দু-এক দিনের মধ্যেই তারা দুবাই যেতে পারে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে গত সপ্তাহে এক জাঁকালো অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আরাভ জুয়েলার্সের উদ্বোধন করার পর আলোচনায় আসে জুয়েলার্সের মালিক আরাভ খান। ওই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের ক্রীড়া ও বিনোদন জগতের অনেক তারকাকে আমন্ত্রণ জানিয়ে ফেসবুকে একাধিক পোস্ট দিয়েছিলেন আরাভ খান। তখনই তাকে পুলিশ পরিদর্শক হত্যা মামলার আসামি বলে শনাক্ত করে ফেলেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা।
গোয়েন্দা পুলিশের তথ্যমতে, আরাভ জুয়েলার্স নামের ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক আরাভ খানের আসল নাম রবিউল ইসলাম। বাংলাদেশের গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় তার বাড়ি। তিনি সোহাগ মোল্লা, হৃদয় শেখ, আপন- এ রকম কয়েকটি নামে পরিচিত। ২০১৮ সালের ৭ জুলাই ঢাকায় পুলিশের পরিদর্শক মামুন এমরান খান খুন হন। সেই খুনের আসামি হয়ে দেশ থেকে পালিয়েছিলেন রবিউল ওরফে আরাভ।
মামলা ও নথিপত্র সূত্রে জানা যায়, নারীদের টোপ হিসেবে ব্যবহার করে বিত্তশালীদের ফাঁদে ফেলে অর্থ হাতিয়ে নেয়া একটি চক্রের কবলে পড়েন পুলিশ পরিদর্শক মামুন এমরান। এরপর তাকে ধরে নিয়ে হত্যার পর পেট্রল ঢেলে মরদেহ পুড়িয়ে গাজীপুরের জঙ্গলে ফেলে দেয় হত্যাকারীরা।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি সূত্র জানায়, ওই খুনের ঘটনার পরে অন্য আসামিদের সঙ্গে আরাভকে আটক করেছিল ডিবি। ডিবির কার্যালয়ে দুদিন রাখার পর তাকে পুলিশের এক পদস্থ কর্মকর্তার অনুরোধে ছেড়ে দেয়া হয়। চার দিন ধরে বিষয়টি নিয়ে দেশের একাধিক গণমাধ্যম এসব তথ্য প্রকাশ করছে।