জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মবার্ষিকী আজ। সারা দেশে দিনটি জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে উদযাপিত হয়। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত এই নেতা ১৯২০ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন।
দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে দেশের সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব সরকারি ও বেসরকারি ভবন এবং বিদেশে বাংলাদেশ মিশনসমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে।
বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন এবং জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানাবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ উপলক্ষে জাতীয় শিশু সমাবেশ ও তিন দিনব্যাপী বইমেলারও আয়োজন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত এই জাতীয় শিশু সমাবেশে যোগ দেবেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন দিবসটি উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সরকারি-বেসরকারি টেলিভিশন ও বেতার এ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪০ সালে সর্বভারতীয় মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনে যোগদানের মাধ্যমে তার রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। ১৯৪৬ সালে তিনি কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ (বর্তমানে মওলানা আজাদ কলেজ) ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
তিনি ১৯৪৯ সালে তৎকালীন আওয়ামী মুসলিম লীগের পূর্ব পাকিস্তান শাখার যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৩ সালে তিনি পার্টির সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের টিকিটে ইস্ট বেঙ্গল লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলির সদস্য নির্বাচিত হন। ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নেয়ায় বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আজীবন সোচ্চার এই অবিসংবাদিত নেতাকে রাজনৈতিক জীবনে বহুবার কারাবরণ করতে হয়।
১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জিত হলেও তৎকালীন পাকিস্তানের সামরিক জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করে বাঙালি জাতির ওপর নানা নির্যাতন শুরু করে। বঙ্গবন্ধু একাত্তরের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দেন; যা ইউনেসকোর ইন্টারন্যাশনাল মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্ট্রারে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে বিশ্বপ্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।
অন্যদিকে ২৬ মার্চ (২৫ মার্চ মধ্যরাতে) তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং তার নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাঙালির বহু আকাঙ্ক্ষিত বিজয় ও স্বাধীনতা অর্জিত হয়।
সাম্য, মৈত্রী, স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বিরামহীন সংগ্রামে অবদান রাখার জন্য তিনি বিশ্ব শান্তি পরিষদ প্রদত্ত জুলিও কুরি পদকে ভূষিত হন। বিবিসির এক জরিপে তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি নির্বাচিত হন। যুদ্ধবিধ্বস্ত স্বাধীন বাংলাদেশের জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু যখন বিভিন্নমুখী কার্যক্রম গ্রহণ করতে শুরু করেন, ঠিক সেই মুহূর্তে স্বাধীনতা যুদ্ধে পরাজিত শক্তি ও কায়েমি স্বার্থান্বেষী মহল তার বিরুদ্ধে ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র শুরু করে এবং ওই ষড়যন্ত্রেরই অংশ হিসেবে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তিনি ধানমন্ডির বাসভবনে কতিপয় বিপথগামী সেনা কর্মকর্তার হাতে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ নিহত হন।
দিবসটি উপলক্ষে এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির চিরন্তন প্রেরণার উৎস। রাজনীতিতে তিনি ছিলেন নীতি ও আদর্শের প্রতীক। বাংলাদেশকে জানতে হলে বাঙালির মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানতে হবে, বঙ্গবন্ধুকে জানতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর জাতির পিতার আদর্শকে ধারণ করে জাতি এগিয়ে যাক ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার পথে, নোঙর ফেলুক বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলায়’।
বঙ্গবন্ধুকন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, ‘জাতীয় শিশু দিবসে জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি মহান নেতার জীবন ও আদর্শ অনুসরণে এ দেশের শিশুদের যথাযোগ্য সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলাই আমাদের সরকারের মুখ্য লক্ষ্য। আমাদের শিশুরাই হবে ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণের সারথি। শিশুদের মনে দেশপ্রেম জাগ্রত করে তাদের ব্যক্তিত্ব গঠন, সৃজনশীলতার বিকাশ এবং আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তুলতে দলমত নির্বিশেষে আমাদের সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।’
দিবসটি উপলক্ষে দুই দিনব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। দলের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আজ সকাল সাড়ে ৬টায় বঙ্গবন্ধু ভবন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং সারা দেশে সংগঠনের সব কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। সকাল ৭টায় ধানমন্ডি-৩২ নম্বরে ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করবে আওয়ামী লীগ।
এদিকে ১৭ মার্চ সকাল ১০টায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতীয় নেতারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। একই সঙ্গে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল এবং শিশু সমাবেশে অংশগ্রহণ করবেন তারা। আগামী রোববার বিকেল ৪টায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করবেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে স্বাগত জানাতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি গণপূর্ত অধিদফতরের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন উদ্যোগ।
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভারের আমিনবাজার থেকে নবীনগরের স্মৃতিসৌধ এলাকা পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যানার ও পোস্টারে ছেয়ে গেছে পুরো এলাকা।
তারেক রহমানের আগমন উপলক্ষ্যে জাতীয় স্মৃতিসৌধ এলাকাকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে। কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলার পাশাপাশি স্মৃতিসৌধের মূল ফটক বন্ধ করে জনসাধারণের প্রবেশে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আলোকুর রহমান বলেন, তারেক রহমানকে স্বাগত জানাতে ছাত্রদল প্রস্তুত। আমরা এখন নেতার আগমনের অপেক্ষায় রয়েছি।
সাভার পৌর বিএনপির সভাপতি খন্দকার শাহ মাইনুল হোসেন বিল্টু জানান, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে স্বাগত জানাতে নেতা-কর্মীরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ব্যাপক জনসমাগমের প্রস্তুতি নিয়েছেন।
জাতীয় স্মৃতিসৌধের ইনচার্জ আনোয়ার হোসেন আনু বলেন, তারেক রহমানকে স্বাগত জানাতে সকাল থেকেই পুরো স্মৃতিসৌধ এলাকা ঝেড়ে-মুছে পরিষ্কার করা হচ্ছে।
ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান জানান, তারেক রহমানের আগমন উপলক্ষ্যে ঢাকা জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহস্রাধিক সদস্যের সমন্বয়ে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। পুরো এলাকা নিরাপত্তার আওতায় রাখা হয়েছে।
এদিকে সকাল থেকেই শীত উপেক্ষা করে সাভার, আশুলিয়া ও ঢাকার ধামরাই থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীদের স্মৃতিসৌধ এলাকায় জড়ো হতে দেখা গেছে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছেন।
দীর্ঘ ১৭ বছরের প্রবাস জীবন শেষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফিরে রাজধানীর গুলশান-২ এর গুলশান নর্থ অ্যাভিনিউর ১৯৬ নম্বর বাড়িতে যান। ফলে বাড়িটির আশেপাশের সড়কসহ পুরো এলাকা নিরাপত্তা চাদরে ঢাকা। চারপাশে বাড়তি নিরাপত্তা, সিসিটিভি ক্যামেরা ও অস্থায়ী ছাউনি জানান দিচ্ছে বাড়িটির গুরুত্ব।
বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) গুলশান নর্থ অ্যাভিনিউ এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গত বুধবার রাত থেকেই বাড়িটির সামনের সড়কে সাধারণ মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল জোরদার করা হয়েছে এবং একাধিক চেকপোস্ট বসানো হয়। নিরাপত্তায় রয়েছে পুলিশ, বিজিবি, সিএসএফ (চেয়ারপারসন সিকিউরিটিসহ) এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। পুরো এলাকা কর্ডন করে রাখা হয়েছে। নির্দিষ্ট পরিচয় ছাড়া কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয় না বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, সরকারি নিরাপত্তার পাশাপাশি বিএনপির নিজস্ব ব্যবস্থাপনাতেও আলাদা নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। শুধু বাসভবন নয়, গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়েও তারেক রহমানের জন্য আলাদা কক্ষ প্রস্তুত করা হয়েছে। এ ছাড়া গুলশানের ৯০ নম্বর সড়কের ১০/সি নম্বর বাড়িতে নতুন চারতলা রাজনৈতিক কার্যালয়ে কার্যক্রম শুরু করেছে বিএনপি।
এখান থেকেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
নতুন কার্যালয়ের দোতলায় রয়েছে আধুনিক ব্রিফিং কক্ষ। অন্যান্য তলায় গড়ে তোলা হয়েছে গবেষণা সেল ও বিভাগভিত্তিক দপ্তর, যেখানে নির্বাচন, নীতি ও রাষ্ট্রীয় সংস্কার বিষয়ে প্রস্তুতি চলছে। একইসঙ্গে আশেপাশের গলিতে টাঙানো হয়েছে তারেক রহমানের ছবি সংবলিত ব্যানার ও ফেস্টুন।
দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবন কাটানোর পর বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) দেশের মাটিতে পা রাখেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দেশে এসে বিমানবন্দর থেকে তিনশ ফুট এলাকায় সংবর্ধনা মঞ্চে বক্তব্য দেন তিনি।
এরপর তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে গিয়ে তার মা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দেখতে যান। সেখান থেকে গুলশানের ১৯৬ নম্বর বাড়িতে যান। গুলশানের এই বাড়িটি জিয়া পরিবারের রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান শহীদ হওয়ার পর তৎকালীন সরকার বাড়িটি খালেদা জিয়াকে বরাদ্দ দেয়। বছরের পর বছর ধরে এখানে অনুষ্ঠিত হয় গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বৈঠক ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ।
কয়েক মাস আগে আনুষ্ঠানিকভাবে বাড়িটির মালিকানা দলিল বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নামে হস্তান্তর করা হয়। পাশেই রয়েছে ‘ফিরোজা’, খালেদা জিয়ার দীর্ঘদিনের বাসভবন। বর্তমানে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকলেও পাশের বাড়িটি প্রস্তুত হয় আরেক ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তনের জন্য।
এদিকে তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন ঘিরে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উচ্ছ্বাস দেখা যায়। দলীয় নেতাদের মতে, এটি শুধু একজন রাজনৈতিক নেতার দেশে ফেরা নয়, বরং বাংলাদেশে বিএনপির আরেক রাজনৈতিক অধ্যায়ের শুরু।
মা’ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে দেখতে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে গিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৫টা ৫৭ মিনিটের দিকে তিনি হাসপাতাল প্রাঙ্গণে পৌঁছান এবং ভেতরে প্রবেশ করেন।
এর আগে, এদিন বিকেল ৩টা ৫০ মিনিটের দিকে রাজধানীর পূর্বাচলে আয়োজিত এক গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন তারেক রহমান। সেখানে উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য প্রদান করেন। বক্তব্যে তিনি দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন।
তারেক রহমান বলেন, "যেকোনো মূল্যে দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করতে হবে। আমরা শান্তি চাই। সবাইকে মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে এবং কারও উস্কানিতে পা দেওয়া যাবে না।"
দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে নিজের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, "আমি আপনাদের সামনে বলতে চাই, আমার একটি পরিকল্পনা (আই হ্যাভ এ প্ল্যান)। আমি সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চাই।"
পূর্বাচলের সমাবেশ শেষ করেই তিনি সরাসরি এভারকেয়ার হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা হন এবং সেখানে চিকিৎসাধীন মা বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন।
খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ‘বড়দিন’ উপলক্ষে দেশের বিশিষ্ট নাগরিক এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) বঙ্গভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এই শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। বঙ্গভবনের প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। এ সময় তিনি বাংলাদেশের খ্রিস্টান সম্প্রদায়সহ বিশ্বের সকল মানুষকে বড়দিনের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও উষ্ণ অভিনন্দন জানান। যিশু খ্রিস্টের মহিমান্বিত জীবনের আদর্শ তুলে ধরে তিনি সমাজের সকল স্তরে শান্তি ও মানবতা প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
শুভেচ্ছা বিনিময়কালে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ ঐতিহ্যগতভাবেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। তিনি জাতি, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে এ দেশের দীর্ঘদিনের চমৎকার সম্প্রীতি চিরকাল অটুট এবং অক্ষুণ্ন রাখার জন্য সকলের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান। তিনি বিশ্বাস করেন, সকল ধর্মের মানুষের এই সম্মিলিত উৎসব ও ভ্রাতৃত্ববোধ বাংলাদেশকে একটি সুখী ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতির পরিবারের সদস্যবৃন্দ এবং বঙ্গভবনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। উৎসবমুখর পরিবেশে আয়োজিত এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আসা অতিথিরাও বাংলাদেশের উন্নয়ন ও ধর্মীয় সম্প্রীতির প্রশংসা করেন। মূলত বড়দিনের আনন্দ সবার মাঝে ভাগ করে নিতেই প্রতি বছরের মতো এবারও এই বিশেষ রাজকীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
রাজধানীর গুলশানের এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে প্রায় আড়াই কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া এবং জুলাই আন্দোলনের নাম ভাঙিয়ে ‘মামলা বাণিজ্য’ ও ব্ল্যাকমেইলিংয়ের অভিযোগে আলোচিত তাহরিমা জান্নাত সুরভীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) দিবাগত গভীর রাতে গাজীপুরের টঙ্গীর টেকপাড়া এলাকার নিজ বাসভবন থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। সুরভী গাজীপুরের ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘জুলাইযোদ্ধা’ হিসেবে ভাইরাল পরিচিতি পেয়েছিলেন।
টঙ্গী পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসান জানিয়েছেন, একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের নেতৃত্বে ছিলেন এই সুরভী। সম্প্রতি গুলশানের এক ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন যে, জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের সময় গুলশান ও বাড্ডা এলাকায় সংঘটিত বিভিন্ন হত্যা মামলায় তাঁর নাম জড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে সুরভী ও তাঁর সহযোগীরা ধাপে ধাপে প্রায় আড়াই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। মামলার আসামি বানানো, পুলিশি হয়রানি ও গ্রেফতারের ভয় দেখিয়ে এবং পরবর্তীতে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ‘মীমাংসা’ করে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ দাবি করা হয়েছিল।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ আরও জানতে পেরেছে যে, এই চক্রটি কেবল ওই ব্যবসায়ীই নয়, বরং বিভিন্ন প্রভাবশালী ও বিত্তবান ব্যক্তিদের টার্গেট করে ব্ল্যাকমেইলিং ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে মোট প্রায় ৫০ কোটি টাকা আদায় করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সুরভী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের ভাইরাল পরিচিতি ব্যবহার করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সাথে সখ্য গড়ে তুলতেন এবং পরবর্তীতে সেটিকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে ভয়ভীতি প্রদর্শন করতেন। জুলাই আন্দোলনের শহীদদের আবেগ ও স্মৃতিকে পুঁজি করে এমন নজিরবিহীন অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশ বর্তমানে এই চক্রের সাথে জড়িত অন্যান্য সদস্যদের শনাক্ত ও গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। মূলত আন্দোলনের চেতনাকে কলঙ্কিত করে ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধারের অপরাধেই তাঁর বিরুদ্ধে এই আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ও সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) খোদা বকস চৌধুরী পদত্যাগ করেছেন। বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) রাতে তাঁর পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতি গ্রহণ করেছেন বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে।
গত বছরের নভেম্বরে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রশাসনকে আরও কার্যকর করতে স্বরাষ্ট্র, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাদের সহযোগিতার জন্য প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় তিনজনকে বিশেষ সহকারী নিয়োগ দিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে খোদা বকস চৌধুরীকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। নিয়োগপ্রাপ্ত তিন বিশেষ সহকারীর মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত অধ্যাপক এম আমিনুল ইসলাম আগেই পদত্যাগ করেছেন। এখন পদত্যাগ করলেন খোদা বকস চৌধুরী।
সম্প্রতি ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বিন হাদি হত্যাকাণ্ডের পর দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে জনমনে ব্যাপক অসন্তোষ তৈরি হয়। বিশেষ করে হাদি হত্যার বিচার ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে রাজনৈতিক বিভিন্ন মহল ও সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এবং বিশেষ সহকারী খোদা বকস চৌধুরীর পদত্যাগের দাবি জোরালো হয়ে ওঠে। মূলত দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে চলমান অস্থিরতা ও জনচাপের মুখেই তাঁর এই পদত্যাগ বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে তাঁর পদত্যাগের সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি।
বর্তমানে ওই সময় নিয়োগ পাওয়া তিন বিশেষ সহকারীর মধ্যে কেবল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক সায়েদুর রহমান স্বপদে বহাল রয়েছেন। খোদা বকস চৌধুরীর এই প্রস্থানকে বর্তমান প্রশাসনিক কাঠামোয় এক বড় পরিবর্তন হিসেবে দেখা হচ্ছে।
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ২৪ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়েছে সরকার। একই সঙ্গে বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ৭ শতাংশ এবং জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) উপদেষ্টা পরিষদের সাপ্তাহিক বৈঠকে সংশোধিত বাজেট অনুমোদন দেওয়া হয়। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট বাস্তবায়ন শুরু হবে।
বৈঠক শেষে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
ব্রিফিংয়ে রাজস্ব আদায়ের চিত্র তুলে ধরে শফিকুল আলম বলেন, চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আহরণের গতি বেড়েছে। জুলাই-অক্টোবর সময়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি ছিল ২৪ দশমিক ১ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬ দশমিক ৪ শতাংশে।
এই প্রেক্ষাপটে চলতি অর্থবছরের মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা থেকে ২৪ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে আহরিত হবে ৫ লাখ ৩ হাজার কোটি টাকা, কর-বহির্ভূত রাজস্ব থেকে আসবে ৬৫ হাজার কোটি টাকা এবং এনবিআর-বহির্ভূত অন্যান্য উৎস থেকে সংগ্রহ করা হবে ২০ হাজার কোটি টাকা।
প্রেস সচিব বলেন, গত বছরের শেষের দিকে খাদ্য মূল্যস্ফীতি প্রায় ১৪ শতাংশে পৌঁছেছিল। বর্তমানে তা কমে ৭ শতাংশের কাছাকাছি এসেছে। শীতকালে সবজির উৎপাদন ও সরবরাহ বাড়ায় মূল্যস্ফীতি আরও কমবে বলে সরকার আশা করছে। চলতি অর্থবছর শেষে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশে নামবে এবং জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশ অর্জিত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
সংশোধিত বাজেটে মোট সরকারি ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকা। মূল বাজেটে ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা, যা সংশোধিত বাজেটে ২ হাজার কোটি টাকা কমানো হয়েছে।
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার সংশোধিত বাজেটে ধরা হয়েছে ২ লাখ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। মূল বাজেটে এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৩ দশমিক ৭ শতাংশ ছিল। ফলে উন্নয়ন ব্যয় মূল বাজেটের তুলনায় ৩০ হাজার কোটি টাকা কমানো হয়েছে।
সংশোধিত এডিপিতে বৈদেশিক অর্থায়ন ধরা হয়েছে ৭২ হাজার কোটি টাকা এবং দেশীয় অর্থায়ন হবে ১ লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকা। পরিচালনসহ বাজেটের অন্যান্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকা।
সংশোধিত বাজেটে মোট ঘাটতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। এই ঘাটতির মধ্যে বৈদেশিক উৎস থেকে সংগ্রহ করা হবে ৬৩ হাজার কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে নেওয়া হবে ১ লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকা।
সূত্র: বাসস
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। আবহমানকাল ধরে এদেশের মানুষ ভিন্ন ভিন্ন ধর্ম, সংস্কৃতি ও আচার-অনুষ্ঠানকে সম্মান করে সৌহার্দ্যপূর্ণ সহাবস্থান বজায় রেখে চলেছে।’
২৫ ডিসেম্বর ‘বড়দিন’ উপলক্ষ্যে পাঠানো এক বাণীতে তিনি এ আহ্বান জানান।
প্রধান উপদেষ্টা খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব ‘বড়দিন’ উপলক্ষে এ ধর্মাবলম্বী সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।
এসময় প্রধান উপদেষ্টা নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নে দেশপ্রেম ও মানবতার মহান আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘যথাযোগ্য মর্যাদা ও উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে বড়দিন উদযাপন আমাদের এ সম্প্রীতির বন্ধনকে আরও সুদৃঢ় করবে-এমনটাই প্রত্যাশা করি।’
তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধর্ম-বর্ণ-সম্প্রদায় নির্বিশেষে সকলের জন্য একটি বৈষম্যহীন, ন্যায়ভিত্তিক ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে কাজ করে যাচ্ছে।
প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, খ্রিষ্টান ধর্মের প্রবর্তক যিশু খ্রিষ্ট এই দিনে বেথেলহেমে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পৃথিবীতে শান্তি, ন্যায় এবং মানবমুক্তির বার্তা নিয়ে আগমন করেছিলেন। মানবজাতিকে পাপমুক্ত করে সত্য, কল্যাণ ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত করাই ছিল তার জীবনের অন্যতম লক্ষ্য। মহামতি যিশু সর্বদা বিপন্ন, অবহেলিত ও অনাহারক্লিষ্ট মানুষের সেবায় নিবেদিত ছিলেন। আমৃত্যু তিনি প্রচার করে গেছেন ক্ষমা, ভালোবাসা ও প্রভুভক্তির মহিমা। তার জীবনাচরণ ও মহৎ চারিত্রিক গুণাবলি আজও তার ভক্ত ও অনুসারীদের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।
তিনি খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীসহ সকলের শান্তি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনা করেন।
কবিগুরুর অবিস্মরণীয় ভাষায় জনতার সম্মিলিত মহাকণ্ঠে আজ ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হচ্ছে, ‘ভেঙেছ দুয়ার, এসেছ জ্যোতির্ময়, তোমারি হউক জয়’। হ্যাঁ, কোটি বাংলোদেশির হৃদয়ের ভালোবাসা, আর আবেগে মর্যাদাপূর্ণ অভিভাষণে সিক্ত হয়ে আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) দেশের মাটিতে পা রাখবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তার এই প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ দেড় দশকেরও বেশি সময়ের নির্বাসিত জীবনের ইতি ঘটবে। এই মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষায় ছিল সমগ্র জাতি; অপেক্ষায় ছিল বাংলাদেশ। প্রিয় মাতৃভূমিতে পদার্পণের মাধ্যমে সেই অপেক্ষারও অবসান হবে।
আজ সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে দেশবাসীর দৃষ্টি থাকবে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং পূর্বাচলের বিশাল মঞ্চের দিকে। দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতাকে বরণ করতে প্রস্তুত বিএনপি। এখন ঢাকামুখী লাখ লাখ মানুষ। দেশজুড়ে বইছে উৎসবের আবহ। যেন এক ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তনের সাক্ষী হচ্ছে দেশ।
বিএনপির শীর্ষ নেতা এবং রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, তারেক রহমানের এই প্রত্যাবর্তনকে ঘিরে বিএনপির রাজনীতিতে নতুন যুগের সূচনা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান-পরবর্তী পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তার উপস্থিতি দলের নেতাকর্মীদের মনোবল বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
বহুল আকাঙ্ক্ষিত এই প্রত্যাবর্তনকে অনেকেই দেখছেন বিরাজমান অস্থির পরিস্থিতিতে জনগণের ঐক্য সৃষ্টি এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক দেশ প্রতিষ্ঠার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে। সে কারণেই তারেক রহমানের ফেরা কেবল একটি ব্যক্তিগত প্রত্যাবর্তন নয়; বরং এটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় জনগণের গভীর আকাঙ্ক্ষা ও প্রত্যাশার প্রতীকে পরিণত হয়েছে। ফলে তারেক রহমানের এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ঘিরে দেশজুড়ে রাজনৈতিক অঙ্গন, নেতাকর্মী, সমর্থক এবং সর্বসাধারণের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ, কৌতূহল ও আবেগের সঞ্চার হয়েছে।
জানা গেছে, তারেক রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে স্মরণীয় করে রাখতে দেশব্যাপী এক অভূতপূর্ব জাগরণ তৈরি হয়েছে। দেশের উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম—সব প্রান্তের লাখো নেতাকর্মী এখন ঢাকামুখী। বাস, ট্রেন, লঞ্চ কিংবা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায়—যে যেভাবে পারছেন, প্রিয় নেতাকে বরণ করে নিতে রাজধানীতে জড়ো হচ্ছেন। গত মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) থেকেই দলে দলে ঢাকায় আসা শুরু করেছেন প্রত্যন্ত এলাকার নেতাকর্মীরা। ঢাকার প্রবেশপথগুলোতে বিএনপির নেতাকর্মীদের সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। রাজধানীর বিভিন্ন বাস টার্মিনাল এবং সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে প্রত্যন্ত এলাকার নেতাকর্মীদের দেখা গেছে। বগুড়া থেকে আসা এক তৃণমূল কর্মী বলেন, আমরা দীর্ঘ ১৭ বছর এই দিনটির জন্য অপেক্ষা করেছি। প্রিয় নেতাকে একনজর দেখতে এবং তাকে বিরোচিত সংবর্ধনা জানাতেই আমরা এসেছি।
এদিকে মালয়েশিয়া, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে কয়েক হাজার প্রবাসী নেতাকর্মী এরই মধ্যে ঢাকায় পৌঁছেছেন।
দেশে ফিরে তিন দিন কোথায় যাবেন, কী করবেন: তারেক রহমান দেশে ফেরার পর প্রথম তিন দিন তিনি যেসব কর্মসূচিতে অংশ নেবেন, সে তথ্য জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।
বিএনপির এই নেতা বলেন, আজ দুপুরে বিমানবন্দরে নামার পর দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা তারেক রহমানকে স্বাগত জানাবেন। এরপর তিনি জুলাই এক্সপ্রেসওয়ে তথা ৩০০ ফিট রাস্তায় সংবর্ধনাস্থলে যাবেন। সেখানে অপেক্ষায় থাকা নেতা-কর্মীদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে দেশবাসীর উদ্দেশে বক্তব্য দেবেন তিনি। এরপর বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ার হাসপাতালে যাবেন। সেখান থেকে বিমানবন্দর সড়ক হয়ে কাকলীর মোড় হয়ে গুলশান–২ নম্বরে বাসভবনে চলে আসবেন। সেদিন আর অন্য কোনো অনুষ্ঠান হবে না। পরদিন ২৬ ডিসেম্বর, শুক্রবার জুমার নামাজের পর তারেক রহমান বাসভবন থেকে প্রথমে জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত করবেন। সেখান থেকে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। এরপর ২৭ ডিসেম্বর জাতীয় পরিচয়পত্রের কাজ করবেন তিনি। এরপর শহীদ ওসমান হাদির কবর জিয়ারত করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যাবেন।
শহীদ ওসমান হাদির কবর জিয়ারত শেষে সেখান থেকে রাজধানীর শ্যামলীতে পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের দেখতে যাবেন তারেক রহমান।
চিকিৎসাসহ অন্য প্রস্তুতি: ব্যাপক লোক সমাগমের ফলে যে কেউ অসুস্থ হতে পারেন বা সমস্যায় পড়বেন—এমনটি বিবেচনায় রেখে স্বাস্থ্যসেবা ও পর্যাপ্ত খাবার পানি সরবরাহের ব্যবস্থা থাকবে। ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদ জানান, তারা এরই মধ্যে বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়ে কমিটি গঠন করে দায়িত্ব বণ্টন করেছেন। এর মধ্যে পুরো ঢাকাতেই থাকবে ২৫-৩০টি মোবাইল অ্যাম্বুলেন্স। সংবর্ধনা স্থানের দুই প্রান্তে এবং কাছাকাছি একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে মোট তিনটি মেডিকেল বুথ থাকবে। পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালগুলোয় বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে। ঢাকার প্রবেশপথগুলোয় থাকবে মেডিকেল টিম।
বিশুদ্ধ খাবার পানি বিতরণ: রাজধানীতে কয়েক হাজার বোতল বিশুদ্ধ খাবার পানি বিতরণ করার উদ্যোগ নিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ও যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিএনপির সভাপতি বদরুল আলম চৌধুরী শিপলু। তিনি বলেন, বহু বছর পর দেশে ফিরছেন তারেক রহমান। তার প্রত্যাবর্তন দিবসে ঢাকায় মানুষের ঢল নামবে। প্রচুর লোক সমাগমে যাতে মানুষ কষ্ট না পায়, সেই বিবেচনায় কয়েক হাজার পানির বোতল তিনি বিতরণ করবেন। এরই মধ্যে পানির বোতলে তারেক রহমানের ছবি যুক্ত করে সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
বরণ করতে প্রস্তুত বিএনপি: তারেক রহমানকে বরণ করে নিতে রাজধানীর পূর্বাচলের ৩০০ ফিট এলাকায় তৈরি করা হয়েছে বিশাল সংবর্ধনা মঞ্চ। মঞ্চ তৈরির কাজ শেষ। ঢাকা জেলা প্রশাসন এরই মধ্যে এই গণসমাবেশ ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের জন্য আনুষ্ঠানিক অনুমতি দিয়েছে।
বিএনপির নীতিনির্ধারণী সূত্র জানায়, এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে প্রায় অর্ধকোটি মানুষের সমাগম ঘটানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ৩০০ ফিট এলাকাকে কেন্দ্র করে কয়েক কিলোমিটারজুড়ে মাইক বসানো হয়েছে, যাতে আগত জনতা প্রিয় নেতার বক্তব্য শুনতে পারেন। ড্রোন ও সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে পুরো এলাকা নজরদারিতে রাখা হচ্ছে এবং দলের নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, তারেক রহমান শুধু একটি দলের নেতা নন, তিনি বর্তমান বাংলাদেশের তারুণ্যের প্রতীক। দীর্ঘ নির্বাসন জীবন কাটিয়ে তার এই ফিরে আসা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামকে পূর্ণতা দেবে। আমরা শান্তিপূর্ণ এবং সুশৃঙ্খলভাবে এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠান সফল করতে চাই।
এদিকে, তারেক রহমানকে স্বাগত জানাতে আসা বিশাল জনসমাগমকে কেন্দ্র করে যেন সাধারণ মানুষের জানমালের কোনো ক্ষতি না হয় এবং যানজট যেন অসহনীয় পর্যায়ে না পৌঁছায়, সেদিকেও নজর দিচ্ছে বিএনপি। দলের পক্ষ থেকে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সুশৃঙ্খলভাবে চলাফিরা করতে। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) এবং জেলা প্রশাসনও আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে।
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখসারির যোদ্ধা শরিফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের তদন্তে বড় ধরনের সাফল্য পেয়েছে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের চালক আলমগীরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং আদাবর থানা যুবলীগ কর্মী হিমনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর আদাবর এলাকার একটি আবাসিক হোটেল থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার হিমনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরবর্তীতে অভিযান চালিয়ে পুলিশ একটি বিদেশি পিস্তল, গুলি এবং বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক দ্রব্য উদ্ধার করেছে।
তেজগাঁও বিভাগের মোহাম্মদপুর জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মো. জুয়েল রানা এই গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ জানতে পারে আদাবরের রাজ্জাক হোটেলে হিমন অবস্থান করছে। সেখানে অভিযান চালিয়ে তাকে আটকের পর নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে তার দেওয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী আদাবরের ১৭/বি এলাকায় জনৈক মেহেদীর বাসায় তল্লাশি চালিয়ে অবৈধ অস্ত্র ও বিস্ফোরকের মজুত উদ্ধার করা হয়।
পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি ফয়সাল এবং মোটরসাইকেল চালক আলমগীরের সঙ্গে হিমনের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। হিমন প্রায় দুই মাস আগে দুবাই থেকে বাংলাদেশে ফিরেছিলেন। হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা বা পরবর্তী কার্যক্রমে তার কী ধরনের ভূমিকা ছিল, তা খতিয়ে দেখছে প্রশাসন। এডিসি জুয়েল রানা আরও জানান, হিমন ইতোমধ্যে জিজ্ঞাসাবাদে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করেছে, যা মামলার রহস্য উদঘাটনে সহায়ক হবে। এই জঘন্য হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে থাকা অন্যান্য মদদদাতাদের খুঁজে বের করতে এবং উদ্ধারকৃত অস্ত্রের উৎস নিশ্চিত করতে তাকে আরও বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মূলত ঘাতক চক্রের এই সহযোগীকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে হাদি হত্যা মামলার তদন্তে নতুন গতির সঞ্চার হলো।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণের কোনো সুযোগ নেই বলে সরকারের পক্ষ থেকে পুনরায় স্পষ্ট জানানো হয়েছে। আজ বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এই তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের দলীয় নিবন্ধন বাতিল করেছে, যার ফলে আইনিভাবেই দলটি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। এ বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অবস্থান অত্যন্ত পরিষ্কার এবং অনড় বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ব্রিফিংয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দীর্ঘ ১৭ বছর পর দেশে ফেরার প্রসঙ্গটিও গুরুত্বের সাথে আলোচিত হয়। প্রেস সচিব বলেন, সরকার তারেক রহমানের বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তনকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানায়। তাঁর প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে বিএনপির সাথে সরকারের নিয়মিত আলোচনা চলছে। দলটির পক্ষ থেকে যে ধরনের নিরাপত্তা সহযোগিতা চাওয়া হচ্ছে, প্রশাসন তা প্রদানে সম্পূর্ণ সচেষ্ট রয়েছে এবং পুরো বিষয়টি নিবিড়ভাবে তদারকি করা হচ্ছে।
সাম্প্রতিক বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর ঘটনার তদন্ত ও বিচার সম্পর্কেও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করেন শফিকুল আলম। ময়মনসিংহে দীপু চন্দ্র দাস হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, ভিডিও ফুটেজ দেখে এই ঘটনায় জড়িত অন্তত ১২ জনকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। আইন উপদেষ্টার ঘোষণা অনুযায়ী, এই মামলার বিচার কাজ দ্রুত বিচার আইনের আওতায় সম্পন্ন করা হবে। তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকার দেশের সকল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে, যার প্রমাণ পূর্ববর্তী ধর্মীয় উৎসবগুলোতে দেওয়া নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
এ ছাড়াও, সংবাদমাধ্যম প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় গৃহীত পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রেস সচিব জানান, ভিডিও এবং ভিজ্যুয়াল তথ্য বিশ্লেষণ করে এই ন্যাক্কারজনক ঘটনায় জড়িত ৩১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত অনেকের কাছ থেকে অপরাধের সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ আলামতও উদ্ধার করা হয়েছে। মূলত যেকোনো ধরনের সহিংসতা দমনে এবং অপরাধীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে সরকার সব ধরনের গোয়েন্দা ও আইনি সক্ষমতা ব্যবহার করছে বলে তিনি ব্রিফিংয়ে আশ্বস্ত করেন। দেশের সামগ্রিক স্থিতিশীলতা ও আইনের শাসন বজায় রাখতে প্রশাসনের এই কঠোর অবস্থান অব্যাহত থাকবে বলে তাঁর বক্তব্যে প্রতিফলিত হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মানসম্মত শিক্ষা, গ্রামীণ উন্নয়ন, যুব ও নারীর ক্ষমতায়ন এবং স্থানীয় উৎপাদন বৃদ্ধিকে অগ্রাধিকার দিয়ে একটি স্বনির্ভর বাজেট প্রণয়নের নির্দেশ দিয়েছেন। আজ বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে তাঁর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সাপ্তাহিক বৈঠকে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হতে যাওয়া সংশোধিত বাজেট পর্যালোচনার সময় তিনি এই গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা প্রদান করেন। বৈঠক শেষে বিকেলে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সরকারের এই নতুন অর্থনৈতিক পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন।
প্রেস সচিব জানান, সংশোধিত বাজেটের রূপরেখা নির্ধারণে প্রধান উপদেষ্টা অপ্রয়োজনীয় বৈদেশিক ঋণের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে দেশীয় অর্থায়নে বেশি প্রকল্প বাস্তবায়নের ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি মনে করেন, বিদেশি ঋণের বোঝা কমিয়ে দেশীয় সম্পদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করলেই বাংলাদেশকে প্রকৃত অর্থে স্বনির্ভর করা সম্ভব হবে। বিশেষ করে শিক্ষা খাতের উন্নয়নে অধ্যাপক ইউনূস একটি ভিন্নধর্মী দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন। তিনি উল্লেখ করেন, বিগত কর্তৃত্ববাদী শাসনামলে কেবল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বৃদ্ধিতে জোর দেওয়া হয়েছিল, যার ফলে শিক্ষার মান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই সংকট উত্তরণে আগামী বাজেটে শিক্ষার মানোন্নয়নকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
দেশের অর্থনীতির প্রাণশক্তি কৃষকদের জীবনমান উন্নয়নেও প্রধান উপদেষ্টা বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেন, চলতি বছর কৃষকরা রেকর্ড পরিমাণ খাদ্যশস্য উৎপাদন করে দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় বড় অবদান রেখেছেন, তাই তাঁদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিতে বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ থাকা প্রয়োজন। একই সঙ্গে তিনি বাংলাদেশের বিশাল তরুণ সমাজকে ‘যুবসম্পদের খনি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন এবং নির্দেশ দেন যেন বাজেটের প্রতিটি স্তরে তরুণদের উদ্ভাবনী শক্তি ও চাহিদার প্রতিফলন থাকে। জাতীয় উন্নয়নের অন্যতম চাবিকাঠি হিসেবে নারীর ক্ষমতায়ন খাতেও বাজেট বরাদ্দ বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা তিনি জোরালোভাবে ব্যক্ত করেন।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস স্থানীয় শিল্প ও কৃষিপণ্য উৎপাদন বাড়িয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পাশাপাশি স্বাস্থ্য খাতে জনসেবার মান বাড়াতে বাজেট সম্প্রসারণের কথা বলেন। তাঁর এই নির্দেশনাগুলো মূলত একটি জনবান্ধব ও টেকসই অর্থনীতি গড়ে তোলার অঙ্গীকার হিসেবে দেখা হচ্ছে। আসন্ন ১ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হতে যাওয়া এই সংশোধিত বাজেটটি দেশের প্রান্তিক মানুষের জীবনযাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে এবং বিদেশি সাহায্যের বদলে দেশীয় সক্ষমতাকে প্রধান্য দেবে বলে আশা করছে অন্তর্বর্তী সরকার। মূলত মেধা, তারুণ্য ও কৃষি উৎপাদনকে এক সুতোয় গেঁথে আগামীর সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়াই হবে এই বাজেটের মূল লক্ষ্য।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং আসন্ন গণভোট সম্পর্কে দেশব্যাপী জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে পরিচালিত প্রচার কার্যক্রমের মুখ্য সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক আলী রীয়াজ। আজ বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে এ সংক্রান্ত একটি আনুষ্ঠানিক নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। এই নির্দেশনার ফলে এখন থেকে নির্বাচন ও গণভোট সংক্রান্ত সকল প্রকার প্রচার ও সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডের মূল তদারকি ও সমন্বয়ের গুরুদায়িত্ব তিনি পালন করবেন।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ বর্তমানে উপদেষ্টা পদমর্যাদায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হিসেবে কর্মরত আছেন। এর আগে তিনি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁর দীর্ঘ অ্যাকাডেমিক অভিজ্ঞতা এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষণ ক্ষমতা নির্বাচনের আগে সাধারণ মানুষের মাঝে সঠিক তথ্য পৌঁছে দিতে এবং স্বচ্ছ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে বিশেষ সহায়ক হবে বলে মনে করা হচ্ছে। মূলত একটি অংশগ্রহণমূলক ও সুশৃঙ্খল নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করতেই সরকার তাঁকে এই বিশেষ দায়িত্ব প্রদান করেছে।