প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী পাইপলাইন’ উদ্বোধনকে দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার একটি মাইলফলক হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি এই মেত্রী পাইপলাইন আমাদের দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের মধ্যে সহযোগিতা উন্নয়নের একটি মাইলফলক অর্জন।’
শনিবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার কার্যালয় থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বোতাম টিপে এই মৈত্রী পাইপলাইন উদ্বোধন করেন।
ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি) থেকে নেয়া প্রায় ৩ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন রুপি ব্যয়ে নির্মিত ১৩০ কিলোমিটার মৈত্রী পাইপলাইনের (আইবিএফপিএল) মাধ্যমে বাংলাদেশে ডিজেল রপ্তানি করবে ভারত। পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ির নুমালীগড় রিফাইনারি থেকে প্রায় ১৩০ কিলোমিটার পাইপলাইনে বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর ডিপোতে ডিজেল আমদানি করা হবে। এরমধ্যে বাংলাদেশ অংশে পড়েছে প্রায় ১২৫ কিলোমিটার এবং ভারতের অংশে প্রায় ৫ কিলোমিটার। পাইপলাইনটির হাই-স্পিড ডিজেলের (এইচএসডি) বার্ষিক পরিবহনের ক্ষমতা ১ (এক) মিলিয়ন মেট্রিক টন (এমএমটিপিএ)।
পাইপলাইনটি উদ্বোধনের পর উভয় প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, এটি বাংলাদেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করার ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। পাশাপাশি পারস্পরিক সুবিধার জন্য দেশ দুটির মধ্যে কানেকটিভিটি বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার ওপরও তারা জোর দেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটি বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা বৃদ্ধির পাশাপাশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভারত আমাদের অকৃত্রিম বন্ধু। আমাদের দুই দেশের এই বন্ধুত্ব অটুট থাকুক সেটাই আমি চাই।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে, সেটাকে আমরা কার্যকর করতে চাই। আর ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে আমরা আরও উন্নত করতে চাই, যেন ভারতের সঙ্গে আমাদের এই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখে দুই দেশের জনগণের সার্বিক উন্নয়ন ও কল্যাণে আমরা একসঙ্গে কাজ করে যেতে পারি, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। কারণ, আমরা চাই আমাদের দেশের এই উন্নয়ন আরও ত্বরান্বিত হোক। সেই সঙ্গে আমাদের মোংলা ও চট্টগ্রাম বন্দর এবং সিলেট, চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আঞ্চলিক বিমানবন্দর হিসেবে উন্নত করেছি। এগুলো ভারতের জন্য সম্পূর্ণ উন্মুক্ত করে দিচ্ছি, যেন এই বন্দরগুলো ব্যবহারে ভারতের কোনো অসুবিধা না হয়। এর ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য আরও সহজ হবে এবং দুই দেশের মানুষই লাভবান হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সারাদেশে এক শ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি। আমি চাই, ভারতের বিনিয়োগকারীরা সেখানে এসে আরও বিনিয়োগ করুন। আমরা দুই দেশই তাতে লাভবান হবো।’
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘আগামী দিনেও বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী পাইপলাইনের মতো আরও সফলতা দুই দেশ যৌথভাবে উদযাপন করবে এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে একইসঙ্গে কাজ করবে।’
‘এই মৈত্রী পাইপলাইন চালুর ফলে বাংলাদেশের জনগণ নানাভাবে উপকৃত হবে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে যখন বিশ্বের অনেক দেশ জ্বালানি সংকটের মুখোমুখি, তখন এই পাইপলাইন আমাদের জনগণের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। এই পাইপলাইনের মাধ্যমে ভারত থেকে ডিজেল আমদানিতে ব্যয় এবং সময়ও উল্লেখযোগ্য ভবে হ্রাস পাবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিদ্যমান ব্যবস্থায় রেলওয়ে ওয়াগনের মাধ্যমে ভারত থেকে বছরে ৬০ থেকে ৮০ হাজার মেট্রিক টন ডিজেল আমদানি করা সম্ভব হতো। পাইপলাইন নির্মাণের ফলে বছরে প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন ডিজেল আমদানি করা সম্ভব হবে।’
তিনি বলেন, ‘এর মাধ্যমে আসামের একটি ভালো বাজার বাংলাদেশে সৃষ্টি হলো, যেখানে এই ডিজেল মানুষের উন্নয়নের কাজে লাগবে এবং সেখানে আসামবাসীও লাভবান হবে, ভারতবাসীও লাভবান হবে।’
মুক্তিযুদ্ধকালে বাংলাদেশের প্রায় ১ কোটি শরণার্থীকে আশ্রয় দেয়াসহ যুদ্ধে ভারতের সহায়তার কথাও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘ভারত আমাদের অকৃত্রিম বন্ধু, ভ্রাতৃপ্রতিম প্রতিবেশী রাষ্ট্র। আমাদের হাজার বছরের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের অবাধ প্রবাহ এবং ঐতিহাসিক ও ভৌগোলিক সেতুবন্ধন দুই দেশের সম্পর্ককে আরও ঘনিষ্ঠ থেকে ঘনিষ্ঠতর করেছে। উভয় দেশের সরকার বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রের অনেকগুলো সম্ভবনাকে বাস্তব রূপ দান করেছে।’
ভূমি মন্ত্রণালয়ে নতুন সচিব নিয়োগ দিয়েছে সরকার। এছাড়া ঢাকা ও রংপুর বিভাগে নতুন বিভাগীয় কমিশনার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বুধবার এসব পদে রদবদল করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার মো. খলিলুর রহমানকে সচিব পদে পদোন্নতি দিয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব করা হয়েছে। রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার মো. সাবিরুল ইসলামকে ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার পদে বদলি করা হয়েছে। আর সুরক্ষা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. হাবিবুর রহমানকে রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে সরকার।
এর আগে গত ২৩ মার্চ ভূমি সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমানকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব হিসেবে বদলি করে সরকার।
দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী বর্ষণের আভাস দিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
বুধবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
এ ছাড়া আবহাওয়ার সিনপটিক অবস্থা সম্পর্কে বলা হয়, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।
বুধবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ডিমলায় ১৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ছাড়া গত মঙ্গলবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল রাজশাহীতে ৩৬ দশমিক ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে সিলেটে ৫১ মিলিমিটার।
সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে একটি মন্ত্রণালয়ের সাফল্য ও ব্যর্থতা বিচার করা ঠিক নয় বলে মন্তব্য করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সমসাময়িক ইস্যু নিয়ে বুধবার সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।
সড়কে শৃঙ্খলা নিয়ে এক প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘একটু কি খবর নিয়েছেন আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে প্রতি মিনিটে কতগুলো অ্যাকসিডেন্ট হয়, কত লোক মারা যায়?’
গতকাল সৌদিতে সড়ক দুর্ঘটনায় ২০ জন মারা গেল। এটা নিয়ে আপনি কি বলবেন? এমন প্রশ্নে কাদের বলেন, ‘অ্যাকসিডেন্ট নিয়ে আপনি কথা বলবেন, চাকা ব্লাস্ট হয়েছে, এটা হতেই পারে। এ রকম অ্যাকসিডেন্ট হতেই পারে।’ এ সময় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের বেশিরভাগ মেগা প্রকল্পের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে জানান ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, ‘এত সাফল্য, সেটাকে ম্লান করে শুধু অ্যাকসিডেন্ট? পৃথিবীর সব দেশে অ্যাকসিডেন্ট হচ্ছে। অ্যাকসিডেন্ট দিয়ে সফলতা ঢেকে দেয়ার সুযোগ নেই। অ্যাকসিডেন্ট নিয়ে একটা মন্ত্রণালয়ের সাফল্য-ব্যর্থতার বিচার করা সঠিক নয়।’
সড়ক দুর্ঘটনার খতিয়ান দেখিয়ে কোনো মন্ত্রণালয়ের সফলতা বা ব্যর্থতার চিত্র সামনে আনার পেছনে অন্য কোনো মোটিভ থাকতে পারে বলেও মনে করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, ‘যেখানে সাফল্য বেশি, সেটাকে অ্যাটাক করার মোটিভও থাকতে পারে। সৌদিতে দুর্ঘটনায় ২০ জন মারা যাওয়ায় সেখানে কেউ কিছু বলেছে বলে শুনিনি।’
সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় আরও এক বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ওই দুর্ঘটনায় এ পর্যন্ত ১৩ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন।
বাসে বাংলাদেশি যাত্রী ছিলেন ৩৫ জন। এদের মধ্যে ১৭ জন মারাত্মক বা আংশিক আহতাবস্থায় বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তবে কয়েকজনের অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
১৩ জন নিহত ছাড়াও নিখোঁজ রয়েছেন আরও পাঁচ বাংলাদেশি। ধারণা করা হচ্ছে, তারা সবাই মৃত, কিন্তু তাদের লাশ পুড়ে যাওয়ায় শনাক্ত করা যাচ্ছে না। অন্য দেশের ১২ জন যাত্রীদের মধ্যে পাঁচজনকে মৃত এবং সাতজনকে আহত অবস্থায় বিভিন্ন হাসপাতালে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে বলে জানা গেছে।
গত সোমবার জেদ্দা থেকে ৬০০ কিলোমিটার দূরে ইয়েমেন সীমান্তবর্তী আসির প্রদেশের আকাবা শার এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। বাসের আরোহীরা ওমরাহ পালন করতে মক্কায় যাচ্ছিলেন। বাসের ব্রেক কাজ না করায় একটি সেতুর ওপর উল্টে গিয়ে বাসটিতে আগুন ধরে যায় বলে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক গালফ নিউজ ও আরব নিউজের খবরে বলা হয়।
শুরুতে দুর্ঘটনায় আটজন প্রবাসী বাংলাদেশির নিহতের খবর পাওয়া গিয়েছিল। মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে জেদ্দায় বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কাউন্সিলর (শ্রম) কাজী এমদাদ দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ১৩ জন বাংলাদেশির মৃত্যু নিশ্চিত হওয়া গেছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।’
এর আগে সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্র জানায়, বাংলাদেশে সময় রাত ১০টা পর্যন্ত ৩৫ জন আহত যাত্রীর মধ্যে ১৮ জন বাংলাদেশি বিভিন্ন হাসপাতালে আছেন। বাকি ১৭ জনের মধ্যে নিহত আটজনের পরিচয় জানা গেছে। নিখোঁজ ব্যক্তিদের বেশির ভাগই নিহত বলে ধারণা করছে জেদ্দার বাংলাদেশ মিশন।
মিশনের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘দুর্ঘটনায় নিহতদের লাশ পুড়ে গেছে। তাদের নাগরিকত্বের বিষয়টি নিশ্চিত হতে ডিএনএ টেস্ট করতে হবে।’
নিহত ১৩ জন হলেন, নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার মো. শরিয়ত উল্লাহর ছেলে শহিদুল ইসলাম, কুমিল্লার মুরাদনগরের আবুল আউয়ালের ছেলে মামুন মিয়া, একই উপজেলার রাসেল মোল্লা, নোয়াখালী জেলার মো. হেলাল, লক্ষ্মীপুরের সবুজ হোসাইন, কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মো. আসিদ, গাজীপুরের টঙ্গীর আব্দুল লতিফের ছেলে মো. ইমাম হোসাইন, চাঁদপুরের কালু মিয়ার ছেলে রুকু মিয়া, কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার সিফাত উল্লাহ, কুমিল্লার দেবিদ্বারের গিয়াস হামিদ, যশোরের কাওসার মিয়ার ছেলে মোহাম্মদ নাজমুল, একই জেলার ইস্কান্দারের ছেলে রনি ও কক্সবাজারের মোহাম্মদ হোসেন।
সৌদিতে পঞ্চম রমজানে এ দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত আল এখবারিয়া চ্যানেলের খবরে বলা হয়েছে, বাসটির সামনে অন্য কোনো গাড়ি চলে এসেছিল। অন্যদিকে বেসরকারি সংবাদমাধ্যম ওকাজ বলছে, নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে (ব্রেক ফেল) বাসটি ব্রিজে ধাক্কা খেয়ে উল্টে যায়, এরপর গাড়িটিতে আগুন ধরে যায়।
ওয়াজ মাহফিলে রাষ্ট্রবিরোধী ও উসকানিমূলক বক্তব্য না দেয়ার শর্তে ‘শিশুবক্তা’ রফিকুল ইসলাম মাদানীকে জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। বুধবার বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে মাদানীর পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট আশরাফ আলী মোল্লা। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শাহীন আহমেদ খান।
জামিনের বিষয়টি নিশ্চিত করে তার আইনজীবী আশরাফ আলী মোল্লা দৈনিক বাংলাকে বলেন, কিছু শর্ত দিয়ে আদালত তাকে জামিন দিয়েছেন। শর্তের মধ্যে রয়েছে, কোনো ওয়াজ মাহফিলে সমাজবিরোধী, প্রচলিত আইনবিরোধী কোনো উক্তি বা বক্তব্য দেয়া যাবে না— এমন লিখিত নিয়ে চারটি থানার মামলায় তাকে জামিন দিয়েছেন। এখন তার মুক্তিতে আপাতত আর কোনো বাধা নেই।
জামিন চেয়ে কবে আবেদন করেছিলেন জানতে চাইলে রফিকুল ইসলামের আইনজীবী বলেন, গত বছর জামিন আবেদন করেছিলাম। এরপর দীর্ঘ সময় রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সময় নেয়ায় শুনানিতে বিলম্ব হয়েছে। আজকে শুনানিন শেষে আদালত জামিন মঞ্জুর করেছেন।
তবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শাহীন আহমেদ খান দৈনিক বাংলাকে বলেন, আদালত তাকে জামিন দিয়েছেন। তবে এ জামিন স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করা হবে।
ঢাকা ও গাজীপুর মিলিয়ে রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে চারটি মামলা হয়। এর মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনেও একটি রয়েছে। এসব মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে দীর্ঘদিন ধরে কারাভোগ করেন।
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, চার খলিফা খ্যাতদের অন্যতম, প্রাক্তন ছাত্রলীগ ফাউন্ডেশনের আহ্বায়ক এবং সাবেক সংসদ সদস্য নূরে আলম সিদ্দিকী মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
বুধবার ভোররাতে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সত্তরের দশকের তুখোড় এই ছাত্রনেতা।
নূরে আলম সিদ্দিকীর প্রেস সচিব অনিকেত রাজেশ জানান, বুধবার ভোর ৪টা ৩৭ মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নূরে আলম সিদ্দিকীর মৃত্যু হয়। বুধবার সকাল ১০টায় তার মরদেহ হেলিকপ্টারে করে ঝিনাইদহে নেয়া হবে। সেখানে জানাজা শেষে রাজধানীর গুলশানের আজাদ মসজিদে বাদ আসর দ্বিতীয় জানাজা হবে। এ সময় তাকে ‘গার্ড অব অনার’ দেয়া হবে। এরপর সাভারে নিজের করা মসজিদের পাশে নূরে আলম সিদ্দিকীকে সমাহিত করা হবে।
নূরে আলম সিদ্দিকী ১৯৭০-১৯৭২ সাল পর্যন্ত ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। মুজিববাহিনীর অন্যতম কর্ণধার ছিলেন তিনি। ছয় দফা আন্দোলন, ভাষা আন্দোলনসহ স্বাধীনতা সংগ্রামের আন্দোলনগুলোতে তার সক্রিয় ভূমিকা ও অবদান ছিল।
১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তৎকালীন যশোর-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন নূরে আলম সিদ্দিকী। ১৯৯৬ সালের সপ্তম ও ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ঝিনাইদহ-২ আসন থেকে অংশ নিয়েছিলেন তিনি।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী গোলাপবাগের মানিক নগর এলাকায় শ্বশুরবাড়ি গিয়ে কিল-ঘুষিতে আব্দুল্লাহ আল সোহান (২৮) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। পরে আহত অবস্থায় সোহানকে মুগদা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
যাত্রাবাড়ী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আজহারুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘আমরা খবর পেয়ে মুগদা জেনারেল হাসপাতালে যাই। সেখানে গিয়ে জানতে পারি রাত সাড়ে ৮টার দিকে গোলাপবাগ মনোয়ারা হাসপাতালের সামনে কিল-ঘুষির ঘটনায় সোহান নামে এক যুবক গুরুতর আহত হন। পরে এলাকার লোকজন তাকে উদ্ধার করে মুগদা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’
পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, সেখান (মুগদা জেনারেল হাসপাতাল) থেকে মরদেহ উদ্ধার করে আইনি প্রক্রিয়া শেষে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। তবে কী কারণে তাকে মারধর করা হলো এ বিষয়ে তদন্ত চলছে।
নিহতের চাচাতো ভাই মো. সাগর মিয়া বলেন, ‘আমার চাচাতো ভাই মৃত সোহান গত দুই বছর আগে দোলা আক্তার নামে এক মেয়েকে কোর্ট ম্যারেজের মাধ্যমে বিয়ে করেন। বিষয়টি উভয় পরিবারের লোকজন জানতেন। রাত সাড়ে আটটার দিকে স্ত্রী দোলাকে নিয়ে সোহান তার শ্বশুরের গোলাপবাগের ভাড়া বাসায় যান। সেখানে শ্বশুর-শাশুড়ি না থাকায় বাসা থেকে ফেরার সময় বাড়িওয়ালা জামাল মিয়ার সঙ্গে দেখা হয়। তখন জামাল মিয়া ক্ষিপ্ত হয়ে সোহানকে কিল-ঘুষি মারতে থাকেন। এতে সোহান অচেতন অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে তাকে দ্রুত মুগদা জেনারেল হাসপাতাল নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।’
সাগর আরও বলেন, ‘বিয়ের বিষয়টা বাড়িওয়ালা ও আশেপাশের লোকজন জানতেন না। মৃত সোহানের গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলার গোলাবাড়ি গ্রামে। ওই গ্রামের মোহাম্মদ ইউনুছ খানের ছেলে তিনি। ইউনুছ বাউফল ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর। ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি থেকে লেখাপড়া শেষ করে কানাডা যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন সোহান। এই ঘটনায় মধ্যরাতে অভিযুক্ত বাড়িওয়ালা জামালকে আটক করেছে যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ।’
ঢাকার সাভারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে তার ভাড়া বাসা থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তুলে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। বুধবার ভোর ৪টার দিকে আশুলিয়ার আমবাগান এলাকার বাসা থেকে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়। যদিও সাভার পুলিশ বা সিআইডি তাকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেনি।
শামসুজ্জামান সাভারে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক হিসেবে কর্মরত। ২৬ মার্চ প্রথম আলোর অনলাইনে প্রকাশিত একটি শিশুর ছবি ও ক্যাপশনে অসঙ্গতি থাকার প্রেক্ষাপটে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। ১৭ মিনিটের মাথায় প্রথম আলো ছবি ও ক্যাপশন প্রত্যাহার করে এবং ভুল স্বীকার করে জানায়, ছবির ভুলে এই বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। যদিও গত কয়েকদিন ধরে নেটিজনদের অনেকেই অভিযোগ করে আসছেন, মহান স্বাধীনতা দিবসে প্রথম আলো এটি উদ্দেশ্যমূলকভাবে করেছে।
শামসুজ্জামান সাভারের আমবাগান এলাকায় ভাড়া বাসায় একাই থাকতেন। তবে ঘটনার সময় আরিফুল ইসলাম নামে এক স্থানীয় সাংবাদিক শামসুজ্জামানের বাসায় উপস্থিত ছিলেন।
সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘ভোর ৪টার দিকে শামসুজ্জামান ভাই আমাকে ঘুম থেকে ডেকে তোলেন। উঠে দেখি, ডাইনিংয়ে ৫-৬ ব্যক্তি দাঁড়ানো। আর এক ব্যক্তি ভাইয়ের কক্ষে তল্লাশি করে তার ব্যবহৃত একটি ল্যাপটপ, দুইটি মোবাইল ফোন ও একটি পোর্টেবল হার্ডডিস্ক নিয়ে নেয়। কর্মকর্তা গোছের একজন ঘরের ভেতরে ঢুকে আমার কাছে পরিচয় জানতে চান এবং জানান জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে বাসায় দিয়ে যাবে।’
বাসা তল্লাশির সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহীন উপস্থিত ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, ক্যাম্পাসে বটতলার নূরজাহান হোটেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহীন, একজন নিরাপত্তা প্রহরী ও শামসুজ্জামানসহ মোট ১৯ জন ব্যক্তি সাহরির খাবার খান। ভোর পৌঁনে ৫টার দিকে বটতলা থেকে তারা আবার শামসুজ্জামানের বাসায় যান।
আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এস এম কামরুজ্জামান দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘সাংবাদিক আটকের বিষয়টি জানা নেই। থানায় এমন কাউকে আনা হয়নি।’
শামস জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৫তম আবর্তনে বাংলা বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। তার গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জের কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের কৃষ্ণপুরে। তিনি গুলশানের হলি আর্টিজান হামলায় শহীদ পুলিশের এসি রবিউল ইসলামের ভাই।
ঈদকে ঘিরে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট ব্যবস্থাপনায় এবার আমূল পরিবর্তন এনেছে রেলওয়ে। কাউন্টারে কোনো টিকিট বিক্রি হবে না। জাতীয় পরিচয় (এনআইডি) দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে শুধু অনলাইনে টিকিট কাটতে পারবেন যাত্রীরা। এতে যার নামে টিকিট কাটা হবে তাকেই ট্রেনে যাত্রা করতে হবে। তবে কাউন্টার থেকে আন্তনগর ট্রেনের নন-এসি আসনের ২৫ শতাংশ স্ট্যান্ডিং টিকিট বিক্রি করা হবে। শেষ সময়ে বাড়ি ফিরতে স্ট্যান্ডিং টিকিটের চাহিদা অনেক বেশি থাকবে। ফলে সিটের বাইরেও অনেক যাত্রী ঢুকে যাবেন ট্রেনে। এ কারণে ‘টিকিট যার ভ্রমণ তার’ বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বড় বড় রেলস্টেশন ছাড়া বেশির ভাগ ষ্টেশনেই নিরাপত্তাবেষ্টনী নেই। ফলে যাত্রীরা স্টেশনে ঢুকে ট্রেনে চড়তে কোথাও আটকান না। অনেক যাত্রী বিভিন্ন ফাঁকফোকর দিয়ে টিকিটবিহীন অবস্থায় ট্রেনে চড়ে বসেন। এ ছাড়া এখনো অবকাঠামোগত দুর্বলতা আছে রেলের। বিগত সময়ের ঈদযাত্রায় দেখা গেছে, কমলাপুর স্টেশন থেকেই ট্রেনের ছাদে যাত্রী উঠছেন। এবার সেই চিরচেনা চিত্র বদলাবে কি না, সেটাই দেখার বিষয়।
২০২২ সালের ২১ জুলাই একটি স্বতঃপ্রণোদিত (সুয়োমোটো) রুলের শুনানিতে হাইকোর্ট এক পর্যবেক্ষণে বলেছিলেন, ‘এখন থেকে ট্রেনের ছাদে কোনো যাত্রী বহন করা যাবে না এবং ট্রেনের ছাদে যাত্রী উঠলে সংশ্লিষ্ট রেল কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এবার যারা রেজিস্ট্রেশন করে অনলাইনের মাধ্যমে টিকিট কাটবেন তাদের টিকিটের সঙ্গেই যাত্রীর নাম এবং এনআইডি নম্বর সংযুক্ত থাকবে। কিন্তু যারা অনলাইনে ট্রেনের টিকিট পাবেন না, তারা কাউন্টারে ভিড় করবেন। আর শেষ মুহূর্তে ঘরেফেরা মানুষের ভিড় বাড়লে স্টেশনের কাউন্টারে স্ট্যান্ডিং টিকিট দেয়ার হিসাব থাকবে না। এতে করে ট্রেনে সিটের বাইরে পা ফেলার জায়গা থাকবে না স্ট্যান্ডিং টিকিটের যাত্রীদের জন্য। ফলে শেষ মুহূর্তে যাত্রীদের চাপে ‘টিকিট যার ভ্রমণ তার’ কতটা বাস্তবায়ন হবে, তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।
যাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘আমাদের দেশে গণপরিবহনের সংকট আছে, ঈদের সময় সেই সংকট আরও প্রকট আকার ধারণ করে। কালোবাজারি বন্ধ করতে শুধু অনলাইনে টিকিট বিক্রির ফলে ভোগান্তি বাড়বে। কারণ, সব মানুষের অনলাইনে টিকিট কাটার সুযোগ এবং সক্ষমতা নেই। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে টিকিট যার ভ্রমণ তার এখনই বাস্তবায়ন করা রেলের পক্ষে চ্যালেঞ্জ হবে। এ ধরনের সিদ্ধান্তগুলো একেবারেই অপরিপক্ব। সাধারণ মানুষ অনলাইনে টিকিট কাটতেও পারবেন না, শেষমেশ ট্রেনের ছাদে যাত্রা করবেন।’
এর আগে গত ঈদের সময়ও ‘টিকিট যার ভ্রমণ তার’ বাস্তবায়নের কথা বলেছিল রেলওয়ে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটি বাস্তবায়ন হয়নি।
ঈদ উপলক্ষে ১০০-এর বেশি আন্তনগর ট্রেন চলাচল করবে যাত্রী পরিবহনের জন্য। এ ছাড়া ঈদ উপলক্ষে অতিরিক্ত চাহিদা মেটানোর জন্য মোট ২১৮টি লোকোমোটিভ যাত্রীবাহী ট্রেনে ব্যবহারের পরিকল্পনা করা হয়েছে। কিন্তু যাত্রীবাহী এসব ট্রেনে পর্যাপ্ত ট্রাভেলিং টিকিট এক্সামিনার বা টিটিই নেই। ট্রেনের মধ্যে টিটিইদের মাত্র ১০০টি পজ মেশিন দেয়া হয়েছে টিকিট চেক করার জন্য। ফলে ঈদের সময় ভিড়ের মধ্যে যার যার টিকিট নিয়ে তিনি ভ্রমণ করছেন কি না, তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. কামরুল আহসান দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘রেজিস্ট্রেশন ছাড়া ট্রেনের টিকিট দেয়া হচ্ছে না। গত কয়েক দিনেই মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি হয়েছে। ঈদের সময় ট্রেনে যাত্রীদের ভিড় থাকলেও শতভাগ চেকিংয়ের চেষ্টা করব আমরা। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, ঈদের সময় প্রত্যেকটা যাত্রীর কাছে গিয়ে টিকিট চেকিং করা কঠিন। আমার মনে হয়, টিকিট কাটার সময় আমাদের চেকিংটা হয়ে যাচ্ছে। কারণ, রেজিস্ট্রেশন ছাড়া কেউ টিকিট পাচ্ছেন না। ইতিমধ্যে প্রায় ১৫ লাখ এনআইডি দিয়ে রেজিস্ট্রেশন হয়ে গেছে। ঈদের আগে আগে আরও ১০-১৫ লাখ রেজিস্ট্রেশন হতে পারে। তবে আমাদের টিটিইর সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়ে নিয়োগের কার্যক্রম চলমান আছে।’
টিকিট কালোবাজারি বন্ধ হবে তো?
ট্রেনের টিকিট নিয়ে কালোবাজারির অভিযোগ বছরের পর বছর ধরে চলছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কালোবাজারির ধরনও পরিবর্তন হয়েছে। সাধারণ যাত্রীরা বলছেন, ‘অনলাইনে-কাউন্টারে টিকিট না মিললেও স্টেশনের আনাচে-কানাচে বেশি দাম দিয়ে মাঝে মাঝেই টিকিট পাওয়া যায়। টিকিট কালোবাজারি না হলে কীভাবে মেলে এসব টিকিট।’
রেলসংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, ‘রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে টিকিট কেনার কারণে কালোবাজারি হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। রেলের মহাপরিচালকও বলছেন কালোবাজারি হওয়ার সুযোগ নেই।’
তবে টিকিট কালোবাজারি প্রসঙ্গে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবির মিলন তার ফেসবুক পোস্টে বলেছেন, ‘কালোবাজারি সাহেবরা এখন রিফান্ড ব্যবসা শুরু করেছে। তারা আগেই টিকিট কেটে রাখে। এরপর যাত্রী জোগাড় করে কোনো এক ফাঁকে কাউন্টারে গিয়ে টিকিট রিফান্ড করেই সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীর এনআইডি এবং নাম, মোবাইল নম্বর দিয়ে টিকিট করে দিচ্ছে। ট্রেনে যাত্রীকে চেকিং করলেও আর ধরার উপায় নেই।’
তিনি আরও জানান, এক মোবাইল নম্বর দিয়ে অসংখ্যবার রিফান্ড করা হয়েছে এক সপ্তাহে। এগুলো প্রায় সবটিই কাউন্টারের রিফান্ড। অসংখ্য মোবাইল নম্বরে অসংখ্য রিফান্ড। রিফান্ড করলে এখন সার্ভারে টিকিট ওপেন হয়ে যায়। কিন্তু আগে থেকেই টিকিট শেষ হয়ে যাওয়ায় কেউ তো দিনের পর দিন বারবার চেক করবে না বা কাউন্টারে যাবে না।
বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ ১৯৮১ সালের ৮ ডিসেম্বর মাত্র ২৬ বছর বয়সে মুনসেফ (সহকারী জজ) হিসেবে বিচারিক জীবন শুরু করেন। তারপর চার দশকের বিচারিক কর্মজীবন পার করে ২০২২ সালের ৯ জানুয়ারি আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। এরপর ওই বছরের ৯ অক্টোবর তিনি আনুষ্ঠানিক বিচারিক কাজ থেকে অবসরে যান। সম্প্রতি তিনি দৈনিক বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক আব্দুল জাব্বার খানকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে শোনালেন তার ৪১ বছরের বিচারিক জীবনের কথা।
দৈনিক বাংলা: অবসরকালীন জীবন কেমন কাটছে?
কৃষ্ণা দেবনাথ: ভালোই কাটছে। তবে ব্যস্ততা কমেনি। মনে হয় আরও বাড়ছে। অবসরে অবসর কোথায়? হা হা…
দৈনিক বাংলা: স্বাধীন বাংলাদেশের তৃতীয় কোনো নারী বিচারক হিসেবে বিচার বিভাগে যাত্রা শুরুর পর সর্বোচ্চ আদালত থেকে অবসরে গেলেন। সব মিলিয়ে একজন নারীর বিচারক হিসেবে দীর্ঘ এই পথচলা কতটা সহজ ছিল?
কৃষ্ণা দেবনাথ: দেশ স্বাধীনের পরে ১৯৭২ সালে যখন বাংলাদেশের বিচার বিভাগের যাত্রা শুরু হয়, তখনই কিন্তু বাংলাদেশে মেয়েরা জুডিশিয়াল সার্ভিসে আসতে পারেনি। নারীদের জন্য জুডিশিয়াল সার্ভিসে যাত্রা শুরু হয় ১৯৭৫ সালে। প্রথমেই আমরা পুরুষদের থেকে তিন বছর পিছিয়ে যাই। দেশের বিচার বিভাগের যাত্রা শুরুর তিন বছর পরে নারীদের যাত্রার পরও আজকে নারীদের অবস্থান কোথায় সেটা দেখতে হবে। আমি নারী বিচারক হিসেবে যাত্রা শুরু করেছি ১৯৮১ সালে। প্রথম এসেছিলেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, দ্বিতীয় যাত্রা শুরু করেছিলেন বিচারপতি জিনাত আরা। আর তৃতীয় হিসেবে যুক্ত হই আমি। সৌভাগ্যের ব্যাপার হলো, আমরা তিনজনই আপিল বিভাগ থেকে অবসরে গিয়েছি। এটা ভাবতে ভালো লাগে।
নারী হিসেবে বিচারিক জীবনের তেমন কোনো সমস্যার সৃষ্টি হয়নি। তবে নারী বিচারকদের প্রধান প্রতিবন্ধকতা হয়, তাদের সাংসারিক জীবন নিয়ে। কেননা, এটা বদলির চাকরি। এক জেলা থেকে আরেক জেলায় বদলির কারণে সংসারটা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এটা অনেক কষ্টসাধ্য। এ ছাড়া বেশ কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতা তো ছিলই।
দৈনিক বাংলা: সর্বোচ্চ আদালতের বিচারক হবেন এমন স্বপ্ন কি বিচারিক জীবনের শুরুতে কখনো দেখেছিলেন?
কৃষ্ণা দেবনাথ: না, এমনটি কখনোই ভাবিনি। এমনকি হাইকোর্টেও থাকাকালীন ভাবিনি যে আমি আপিল বিভাগে যাব। স্বপ্নও ছিল না। তবে আমার স্বপ্ন ছিল আমি জজ হব।
দৈনিক বাংলা: অনেক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবীরাই এখন প্রায় বেঁচে নেই, আপনি কি মনে করেন এখন নতুন যারা আসছেন, তারা সেই খ্যাতিম্যান আইনজীবীদের যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে গড়ে উঠছেন?
কৃষ্ণা দেবনাথ: দেখেন এটা শুধু আইনজীবীদের মধ্যে নয়, শিক্ষা, চিকিৎসা সব ক্ষেত্রেই একই অবস্থা। সবখানেই অবক্ষয়। ধরেন আমার বাবা যে পরিমাণ লেখাপড়া করে জ্ঞান অর্জন করেছেন আমি তো মনি করি না, আমার সেটুকু আছে। কিন্তু আমি আশাবাদী নতুন প্রজন্ম থেকে অনেক ট্যালেন্ট উঠে আসছে, আসবে। একসময় নামকরা আইনজীবীরা ছিলেন। তারপর তাদের উত্তরসূরিরা এসেছেন। ঠিক এমনি করেই নতুনরা আইনজীবী হয়ে উঠবেন। এখন যারা নবীন আইনজীবী তাদের জন্য একজন ভালো আইনজীবী হিসেবে গড়ে ওঠার এটা মোক্ষম সময়। তার কারণ জায়গাটা এখন অনেক খালি, সবকিছু প্রস্তুত হয়ে আছে, এখন দরকার শুধু অধ্যবসায়ের।
দৈনিক বাংলা: আপনার অবসর জীবনের শেষ দিনে বলেছিলেন, বিচারক নিজেকে স্বাধীন মনে না করলে সুবিচার সম্ভব না। এর মানে আপনি কী বুঝিয়েছেন?
কৃষ্ণা দেবনাথ: এই বাক্যটি আমি শুধু কথার কথা হিসেবে বলিনি। আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেই বলেছি। এখনো বিশ্বাস করি, একজন বিচারক নিজেকে যদি স্বাধীন মনে না করেন, তাহলে কাগজে-কলমে স্বাধীনতা দিয়েই কী লাভ। একজন বিচারক নিজের বিবেককে প্রশ্ন করবেন তিনি নিজে স্বাধীন কি না। কাগজে-কলমে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে মাত্র কিছু বছর আগে। তার আগে আমরা বিচারকরা তো নিজেদের পরাধীন মনে করিনি, বিচারের কাজটি কিন্তু স্বাধীনভাবেই করেছি।
আমি মনে করি, একজন বিচারক মনেপ্রাণে নিজেকে স্বাধীন মনে করেন কি না, সেটাই বড় কথা। আমি জোর গলায়, দ্ব্যর্থহীনভাবে বলি ৪১ বছরে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিভিন্ন পদে বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। এই সময়ে তো আমার কাছে কোনো তদবির আসেনি। নিজেকেই সেই জায়গা তৈরি করে নিতে হবে। আমি যখন বিচারকের দায়িত্ব পালন করেছি, তখন অনেক জুনিয়র বিচারক বলতেন তদবির আসে। আমি তখন তাদের বলেছি, কই আমার কাছে তো কোনো তদবির আসে না। তদবির যাতে না আসে সেই পরিবেশ আপনার নিজেকেই তৈরি করে নিতে হবে। বিচারকের স্বাধীনতার বিষয়টি নিজের সততা দিয়ে তৈরি করে নিতে হয়।
তদবির না শুনে একবার এক ব্যক্তিকে জামিন দিইনি বলে সেই সময় আমাকে মেহেরপুরের জেলা জজ থেকেও বদলি করা হয়েছিল। জেলা জজ থেকে সাড়ে চার বছর আমাকে কর্নার করে রাখা হয়েছিল। দুটি জেলার জেলা জজ হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর স্পেশাল জজ করে রাখা হয়েছিল। আমি তো তখনো ভয় পাইনি। আমার কথা হলো, নিজেকে স্বাধীন রাখতে হলে বদলির ভয় করলে চলবে না। কী আর করবে বাংলাদেশের ভেতরেই তো বদলি করবে, আর তো কিছু না। বিচারক যদি বদলির ভয় বা নিজের লাভ-ক্ষতির চিন্তা করেন তাহলে তিনি স্বাধীন বিচারক হিসেবে কীভাবে কাজ করবেন। করতে পারবেন না। বিচারককে তার নিজের সততার ওপর শক্ত অবস্থানে থাকতে হবে। এখন কিন্তু দেওয়ানি মামলায় আপস করার সুযোগ আছে। লিগ্যাল এইডের মাধ্যমে মামলা আপসের সুযোগ আছে। এখন যদি এটা ভালোভাবে কার্যকর হয়, তাহলে ৫০ শতাংশ মামলাই আসবে না। এটা যদি সফল করা যায়, তাহলে মামলার জট অনেক কমে আসবে।
দৈনিক বাংলা: একটি মামলা শেষ করতে বছরের পর বছর লাগে কেন?
কৃষ্ণা দেবনাথ: মামলা শেষ করতে পক্ষগণেরই জোরালো পদক্ষেপের প্রয়োজন। কিন্তু সমস্যা হলো, অনেক সময় কোনো না কোনো পক্ষই চায় না, দ্রুত মামলা শেষ হোক। মামলার জট সৃষ্টির পেছনে বিভিন্ন কারণ রয়েছে। এর জন্য শুধু বিচারকরা দায়ী তা বলা যাবে না বরং বাদী-বিবাদী, দুই পক্ষের আইনজীবীদেরও দায় রয়েছে। একটি মামলার নিষ্পত্তির জন্য কম করে হলেও পাঁচটি পক্ষের সমন্বয় দরকার পড়ে, তবেই মামলার নিষ্পত্তি ঘটে।
এ ছাড়া বিচারকসংকট রয়েছে বড় আকারে। এত বিশাল মামলার জট দ্রুত কমাতে হলে বিপুলসংখ্যক বিচারক নিয়োগ দিতে হবে। যেটা সরকারের পক্ষে সম্ভব না।
দৈনিক বাংলা: বর্তমানে দেখা যাচ্ছে ছোটখাটো যেকোনো বিষয়েই হাইকোর্টের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে, কেন?
কৃষ্ণা দেবনাথ: এখন কিন্তু পত্রিকা খুললেই দেখা যায় হাইকোর্টের বিভিন্ন সংবাদ বা নির্দেশনা নিয়ে খবর ছাপানো হয়েছে। চোখ মেললেই কোর্ট-কাচারির খবর পাওয়া যায়। এর কারণ হচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন সময়মতো পদক্ষেপ না নেয়ায় ভুক্তভোগীকে হাইকোর্টে আসতে হচ্ছে। এটার একটা ভালো দিক আছে, মানুষ আদালতে এলে প্রতিকার পায়। আবার কিছু সময় দেখি একটা সাধারণ বিষয় নিয়েও মানুষকে হাইকোর্টে আসতে হয়। স্থানীয় প্রশাসন যদি সঠিক সময়ে সঠিক কাজটা করে তাহলে কিন্তু আদালতের ওপর এই চাপ আসে না। তারা সেটি করছে না। অনেক সময় আদালতের নির্দেশের পরও অনেক কিছু বাস্তবায়ন করা হয় না। এটা ভালো দিক না।
দৈনিক বাংলা: বিচার বিভাগকে কি আরও শক্তিশালী হতে হবে, নাকি শক্তিশালীই আছে?
কৃষ্ণা দেবনাথ: বিচার বিভাগকে কেউ শক্তিশালী করে দেবে না। বিচার বিভাগকে নিজেকেই শক্তিশালী হতে হবে। একটা আদেশ হওয়ার পর ঝড়ঝাপটা আসতে পারে। সেটা বহন করার মতো বিচারক যদি আমরা হতে পারি তাহলে বিচার বিভাগ শক্তিশালী হবে। বিচারক যদি সেই ঝড়ঝাপটা সইবার ক্ষমতা না রাখেন তাহলে সেটা হবে না।
দৈনিক বাংলা: বার ও বেঞ্চের সম্পর্ককে বলা হয় একটি পাখির দুটি ডানা। সম্প্রতি বিভিন্ন বারে আইনজীবী ও বিচারকদের সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছে, এটিকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
কৃষ্ণা দেবনাথ: সর্বজনীনভাবে আমি বলব, সাবলীল সম্পর্ক হ্রাস পেয়েছে। অনেক আগে থেকেই এই সম্পর্ক নষ্ট হয়েছে। অনেক সময় বিচারকের দরজায় লাথি দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে। সার্বিকভাবে বলব আইনজীবী ও বিচারকদের মধ্যে সম্পর্ক অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছে। আমার বক্তব্য হলো, একজন বিচারক যেহেতু একটু ওপরে বসেন, আইনজীবীরা একটু নিচে দাঁড়ান, এই যে বিচারকরা একটু অগ্রাধিকার স্থানে থাকেন সে জন্য বিচারকদের অনেক কিছু করা যায়, অনেক কিছু করা যায় না। সেটি তাদের মাথায় থাকতে হবে। এ ছাড়া আইনজীবীদেরও সহিষ্ণু হতে হবে। দুপক্ষই যদি সহিষ্ণু হয় তাহলে কিন্তু সম্পর্কের মধ্যে চিড় ধরবে না।
আদালতের মর্যাদা কমলে কিন্তু আইনজীবীদেরই মর্যাদা কমবে। এটা তাদের বুঝতে হবে। কোনো বিচারকের ভুল হলে আইনজীবীরা তার ওপরের বিচারককে বলতে পারেন। সুপ্রিম কোর্ট আছে, আইন মন্ত্রণালয় আছে। সেখানে বলার সুযোগ আছে। কিন্তু তাই বলে স্লোগান দেয়া উচিত না। এ ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার সময় এসেছে বলে তিনি মনে করেন।
দৈনিক বাংলা: দীর্ঘ ৪১ বছরের বিচারিক জীবনে পূরণীয় ঘটনা বা অপ্রাপ্তি বলে কিছু আছে কি না?
কৃষ্ণা দেবনাথ: মানিকগঞ্জে একটি অ্যাসিড নিক্ষেপ মামলায় আসামিকে সাজা দিতে পারিনি, এই একটি বিষয় আমার মনে এখনো গেঁথে আছে। আইনজীবীর ভুলের কারণে সেই আসামিকে সাজা দিতে পারিনি। যে কারণে খুব কষ্ট লেগেছিল। কারণ মামলায় আসামি শনাক্ত একটা বড় ব্যাপার। মামলায় বলা হয়েছে, চাঁদের আলোতে আসামিকে দেখা গেছে। কিন্তু পঞ্জিকাতে দেখা গেল সেদিন অমাবস্যা ছিল। তার ওপর আবার সেদিন ওই এলাকায় বিদ্যুৎ ছিল না। আইনজীবী মামলা শক্ত করতে গিয়ে চাঁদের আলোতে দেখেছে বলে বিবরণ দিয়েছেন কিন্তু সেদিন সেটা ছিল না। যে কারণে আসামি শনাক্ত কঠিন হয়ে পড়ে। অতিরঞ্জিত বিবরণ মূল ঘটনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। অথচ ছেলেটি মেয়েটিকে স্কুলে যাওয়ার সময় উত্ত্যক্ত করত, সেটি উল্লেখ থাকলেও হতো। অতিরঞ্জিত করার কারণে আসামি বেঁচে যায়। এই ঘটনা আমাকে পীড়া দেয়। তার কারণ চোখের সামনে দেখেছিলাম মেয়েটির ঝলসানো মুখ। কিন্তু তার ন্যায়বিচার আমি দিতে পারিনি।
দৈনিক বাংলা: দীর্ঘ ৪১ বছরের বিচারিক জীবনে আপনি কতজন আসামিকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দিয়েছেন?
কৃষ্ণা দেবনাথ: এটা বলতে পারব না। তার কারণ, আমি গুনে রাখিনি। তবে সর্বোচ্চ সাজা দেয়ার ব্যাপারে আমি অনেক সতর্ক ছিলাম। আমি দুইয়ে দুইয়ে চার না হওয়া পর্যন্ত কাউকে সাজা দিইনি। অনেক আসামিকে সর্বোচ্চ সাজা দিয়েও আমি স্বস্তি পেয়েছি। তার কারণ অকাট্য দলিল-প্রমাণ ছিল। সব থেকে বড় স্বস্তি পেয়েছি, যখন আমি ঢাকার জেলা জজ ছিলাম। বঙ্গবন্ধু হত্যার ফাঁসির আসামিদের সাজা কার্যকর হবে। তখন ফাঁসির আদেশ কার্যকর করার জন্য শেষ যে স্বাক্ষর দিতে হয়, জেলা জজ হিসেবে সেটা আমি দিয়েছিলাম। ওই দিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে আমার কাছে লাল নথি এল, আমি তাতে স্বাক্ষর করলাম। এরপরই টিভিতে দেখলাম কারা কর্তৃপক্ষ ফাঁসি কার্যকর শুরু করেছে। ঐতিহাসিক সেই মামলাটিতে শেষ স্বাক্ষর করেছিলাম। এটা আমাকে অনুপ্রাণিত করে।
দৈনিক বাংলা: অবসরে কেমন কাটছে?
কৃষ্ণা দেবনাথ: অবসরে একদমই অবসর নেই। আমি রুট (প্রান্তিক) লেভেলের ভিকটিমদের নিয়ে কাজ করতে চাই। সেটাই শুরু করেছি। দেখা যাক কতটা করতে পারি।
দৈনিক বাংলা: ধন্যবাদ আপনাকে।
কৃষ্ণা দেবনাথ: আপনাকেও ধন্যবাদ।
সৌদি আরবে বাস দুর্ঘটনায় নিহত বাংলাদেশি নাগরিকের সংখ্যা বেড়েছে। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ওই দুর্ঘটনায় ১২ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও অন্তত ১৪ জন বাংলাদেশি আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গত সোমবার জেদ্দা থেকে ৬০০ কিলোমিটার দূরে ইয়েমেন সীমান্তবর্তী আসির প্রদেশের আকাবা শার এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। বাসের আরোহীরা ওমরাহ পালন করতে মক্কায় যাচ্ছিলেন। বাসের ব্রেক কাজ না করায় একটি সেতুর ওপর উল্টে গিয়ে বাসটিতে আগুন ধরে যায় বলে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক গালফ নিউজ ও আরব নিউজের খবরে বলা হয়।
শুরুতে দুর্ঘটনায় আটজন প্রবাসী বাংলাদেশির নিহতের খবর পাওয়া গিয়েছিল। মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে জেদ্দায় বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কাউন্সিলর (শ্রম) কাজী এমদাদ দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ১২ জন বাংলাদেশির মৃত্যু নিশ্চিত হওয়া গেছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।’
জেদ্দায় বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেলের এক কর্মকর্তা দৈনিক বাংলাকে জানিয়েছেন, বাসটিতে ৪৭ জন যাত্রী ছিলেন, যারা ওমরাহ করতে মক্কা যাচ্ছিলেন। তাদের মধ্যে ৩৫ জনই ছিলেন বাংলাদেশি। দুর্ঘটনায় মোট ২২ জন নিহতের তথ্য পাওয়া গেছে। বাকিদের বিষয়ে খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে।
ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলী সাবরীন জানিয়েছেন, সৌদি আরবে ওই দুর্ঘটনার পর কয়েকটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১৮ জন বাংলাদেশিকে পাওয়া গেছে। দূতাবাসের পক্ষ থেকে তাদের চিকিৎসার বিষয়ে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে।
এর আগে, সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্র জানায়, বাংলাদেশে সময় রাত ১০টা পর্যন্ত ৩৫ জন আহত যাত্রীর মধ্যে ১৮ জন বাংলাদেশি বিভিন্ন হাসপাতালে আছেন। বাকি ১৭ জনের মধ্যে নিহত আটজনের পরিচয় জানা গেছে। নিখোঁজ ব্যক্তিদের বেশির ভাগই নিহত বলে ধারণা করছে জেদ্দার বাংলাদেশ মিশন।
মিশনের এক কর্মকর্তা বলেন, দুর্ঘটনায় নিহতদের লাশ পুড়ে গেছে। তাদের নাগরিকত্বের বিষয়টি নিশ্চিত হতে ডিএনএ টেস্ট করতে হবে।
নিহতদের মধ্যে যে আটজনের পরিচয় পাওয়া গেছে তারা হলেন নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার মো. শরিয়ত উল্লাহর ছেলে শহিদুল ইসলাম, কুমিল্লার মুরাদনগরের আবুল আউয়ালের ছেলে মামুন মিয়া, একই উপজেলার রাসেল মোল্লা, নোয়াখালী জেলার মো. হেলাল, লক্ষীপুরের সবুজ হোসাইন, কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মো. আসিদ, গাজীপুরের টঙ্গীর আব্দুল লতিফের ছেলে মো. ইমাম হোসাইন এবং চাঁদপুরের কালু মিয়ার ছেলে রুকু মিয়া।
এদিকে মঙ্গলবার রাতে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এক ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছিলেন, এই পর্যন্ত ২২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। বিভিন্ন হাসপাতালে বাংলাদেশের জেদ্দা কনস্যুলেটের কর্মকর্তারা ১৮ জন বাংলাদেশিকে শনাক্ত করেছেন। মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে।
সৌদিতে পঞ্চম রমজানে এ দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত আল এখবারিয়া চ্যানেলের খবরে বলা হয়েছে, বাসটির সামনে অন্য কোনো গাড়ি চলে এসেছিল। অন্যদিকে বেসরকারি সংবাদমাধ্যম ওকাজ বলছে, নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে (ব্রেক ফেল) বাসটি ব্রিজে ধাক্কা খেয়ে উল্টে যায়, এরপর গাড়িটিতে আগুন ধরে যায়।
ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে হজ মৌসুম ছাড়া সারা বছরই ওমরা পালনে মক্কা-মদিনায় গিয়ে থাকেন বিশ্বের নানা প্রান্তের ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা। তবে ঈদুল ফিতরের আগে-পরে সৌদিতে ওমরা পালনকারীদের ভিড় বেশি দেখা যায়।
সৌদি আরবের আসির প্রদেশের আভা জেলায় বাস দুর্ঘটনায় ২৪ জনের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এক শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী নিহতদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোক-সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
প্রধানমন্ত্রী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাস কর্মকর্তাদের আহত বাংলাদেশি নাগরিকদের চিকিৎসার সকল প্রকার উদ্যোগ গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান করেছেন।
সৌদি আরবের জেদ্দার বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেলের মতে, সোমবার সৌদি আরবের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় আসির প্রদেশের আভা জেলায় একটি ভয়াবহ বাস দুর্ঘটনায় প্রায় ২৪ জন নিহত এবং প্রায় ২৩ জন আহত হয়।
বিকেল ৪টার দিকে আগাবত শার নামক স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে, যেখানে যাত্রীদের অনেকেই বাংলাদেশি ছিলেন বলে জানা গেছে।
বাসটি ওমরাহ পালনরত হজযাত্রীদের নিয়ে মক্কায় যাচ্ছিল।
আভা জেলায় বসবাসরত বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের যাত্রী নিয়ে রুবা আল হিজাজ পরিবহন কোম্পানির একটি বাস সন্ধ্যায় মক্কার উদ্দেশে রওনা হয়।
প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্রেক সিস্টেমের ত্রুটির কারণে বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে উল্টে যায় এবং আগুন ধরে যায়।
যাত্রীরা বাস থেকে নামতে পারেনি, ফলে প্রায় ২৪ জন যাত্রী ঘটনাস্থলেই নিহত হয়, যা জেদ্দা থেকে প্রায় ৬৫০ কিলোমিটার দূরে।
স্থানীয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কনস্যুলেট প্রতিনিধিকে জানিয়েছে যে, মৃতদেহ পুড়ে যাবার এবং বিকৃত হবার কারণে তাদের জাতীয়তা নির্ধারণ করা কঠিন হয়েছে।
দুর্ঘটনায় কতজন বাংলাদেশি মারা গেছে তা হাসপাতাল বা ট্রাফিক সূত্র থেকে এখন পর্যন্ত নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি।
সৌদি আরবে বাস দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ১২ জন বাংলাদেশি। এ ঘটনায় আরও অন্তত ১৮ জন বাংলাদেশি আহত হয়েছেন। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গত সোমবার জেদ্দা থেকে ৬০০ কিলোমিটার দূরে ইয়েমেন সীমান্তবর্তী আসির প্রদেশের আকাবা শার এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। বাসের আরোহীরা ওমরাহ পালনের উদ্দেশ্যে মক্কায় যাচ্ছিলেন। বাসের ব্রেক কাজ না করায় একটি সেতুর ওপর উল্টে গিয়ে বাসটিতে আগুন ধরে যায় বলে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক গালফ নিউজ ও আরব নিউজের খবরে বলা হয়।
জেদ্দায় বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কাউন্সিলর (শ্রম) কাজী এমদাদ দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ১২ জন বাংলাদেশির মৃত্যু নিশ্চিত হওয়া গেছে। মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে।’
জেদ্দায় বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেলের এক কর্মকর্তা দৈনিক বাংলাকে জানিয়েছেন, বাসটিতে ৪৭ জন যাত্রী ছিলেন, যারা ওমরাহ করতে মক্কা যাচ্ছিলেন। তাদের মধ্যে ৩৫ জন বাংলাদেশি। দুর্ঘটনায় মোট ২২ জন নিহত হয়েছেন। বাকিদের বিষয়ে খোঁজ–খবর নেওয়া হচ্ছে।
ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলী সাবরীন জানিয়েছেন, সৌদি আরবে ওই দুর্ঘটনার পর কয়েকটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১৮ জন বাংলাদেশিকে পাওয়া গেছে। দূতাবাসের পক্ষ থেকে তাঁদের চিকিৎসার বিষয়ে খোঁজ–খবর নেওয়া হচ্ছে।
সৌদি আরবে বাংলাদেশে দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে সময় রাত ১০টা পর্যন্ত ৩৫ জন আহত যাত্রীর মধ্যে ১৮ জন বাংলাদেশি (জীবিত) বিভিন্ন হাসপাতালে আছেন। বাকি ১৭ জনের মধ্যে নিহত ৮ জনের পরিচয় জানা গেছে। নিখোঁজ ব্যক্তিদের বেশির ভাগই নিহত বলে ধারণা করছে জেদ্দার বাংলাদেশ মিশন।
মিশনের এক কর্মকর্তা বলেন, দুর্ঘটনায় নিহতদের লাশ পুড়ে গেছে। তাদের নাগরিকত্বের বিষয়টি নিশ্চিত হতে ডিএনএ টেস্ট করতে হবে।
নিহতদের মধ্যে যাদের পরিচয় পাওয়া গেছে তারা হলেন নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার মো. শরিয়ত উল্লাহর ছেলে শহিদুল ইসলাম, কুমিল্লার মুরাদনগরের আবুল আউয়ালের ছেলে মামুন মিয়া, একই উপজেলার রাসেল মোল্লা, নোয়াখালী জেলার মো. হেলাল, লক্ষীপুরের সবুজ হোসাইন, কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মো. আসিদ, গাজীপুরের টঙ্গীর আব্দুল লতিফের ছেলে মো. ইমাম হোসাইন এবং চাঁদপুরের কালু মিয়ার ছেলে রুকু মিয়া।
তবে মঙ্গলবার রাতে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এক ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছেন, এই পর্যন্ত ২২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। বিভিন্ন হাসপাতালে বাংলাদেশের জেদ্দা কন্সুলেটের কর্মকর্তারা ১৮ জন বাংলাদেশিকে শনাক্ত করেছেন। মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে।
সৌদিতে পঞ্চম রমজানে এ দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত আল এখবারিয়া চ্যানেলের খবরে বলা হয়েছে, বাসটির সামনে অন্য কোনো গাড়ি চলে এসেছিল। অন্যদিকে বেসরকারি সংবাদমাধ্যম ওকাজ বলছে, নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে (ব্রেক ফেল) বাসটি ব্রিজে ধাক্কা খেয়ে উল্টে যায়, এরপর গাড়িটিতে আগুন ধরে যায়।
ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে হজ মৌসুম ছাড়া সারা বছরই ওমরা পালনে মক্কা-মদিনায় গিয়ে থাকেন বিশ্বের নানা প্রান্তের ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা। তবে ঈদুল ফিতরের আগে-পরে সৌদিতে ওমরা পালনকারীদের ভিড় বেশি দেখা যায়।