বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫
১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

১৯ মার্চ ১৯৭১: মুক্তিযুদ্ধের সর্বপ্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ

বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। ফাইল ছবি
আপডেটেড
১৯ মার্চ, ২০২৩ ০৮:২৪
আ ক ম মোজাম্মেল হক
প্রকাশিত
আ ক ম মোজাম্মেল হক
প্রকাশিত : ১৯ মার্চ, ২০২৩ ০০:০২

আজ ঐতিহাসিক ১৯ মার্চ। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে গাজীপুরের (সেই সময়ের জয়দেবপুর) বীর জনতা গর্জে উঠেছিল এবং সম্মুখযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিল। মনে পড়ে মার্চের সেই উত্তাল দিনগুলোতে বাঙালি জাতির এক অবিস্মরণীয় গণ-অভ্যুত্থানের কথা। ১৯৭১ সালের পহেলা মার্চ দুপুরে হঠাৎ এক বেতার ভাষণে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান ৩ মার্চ অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেন। এ কথা শোনামাত্র সারা দেশের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রতিবাদমুখর হয়ে এ ঘোষণার বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে আসেন। দেশের সর্বত্রই স্লোগান ওঠে ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধর- বাংলাদেশ স্বাধীন কর’, ‘পিন্ডি না ঢাকা, ঢাকা-ঢাকা’, ‘পাঞ্জাব না বাংলা, বাংলা-বাংলা’, ‘তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা-মেঘনা-যমুনা’, ‘তুমি কে আমি কে, বাঙালি-বাঙালি’।

বঙ্গবন্ধু ঢাকায় পূর্বাণী হোটেলে এক সভায় ইয়াহিয়ার ঘোষণার তীব্র প্রতিবাদ করেন এবং ঢাকায় ২ মার্চ এবং সারা বাংলাদেশে (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) ৩ মার্চ হরতাল আহ্বান করেন এবং ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা আহ্বান করেন।

জয়দেবপুরে (আজকের গাজীপুর) আমার পরামর্শে ২ মার্চ রাতে তৎকালীন থানা পশুপালন কর্মকর্তা আহম্মেদ ফজলুর রহমানের সরকারি বাসায় তৎকালীন মহকুমা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হাবিব উল্ল্যাহ এক সর্বদলীয় সভা আহ্বান করেন। সভায় আমাকে (আ ক ম মোজাম্মেল হক) আহ্বায়ক করে এবং মেশিন টুলস্ ফ্যাক্টরির শ্রমিক নেতা নজরুল ইসলাম খানকে কোষাধ্যক্ষ করে ১১ সদস্যের এক সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়। সদস্য হন আয়েশ উদ্দিন, মো. নুরুল ইসলাম (ভাওয়াল রত্ন), মো. আ. ছাত্তার মিয়া (চৌরাস্তা), থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মরহুম হজরত আলী মাস্টার (চৌরাস্তা), মো. শহীদ উল্ল্যাহ বাচ্চু (মরহুম), হারুন-অর-রশিদ ভূঁইয়া (মরহুম), শহিদুল ইসলাম পাঠান জিন্নাহ (মরহুম), শেখ আবুল হোসেন (শ্রমিক লীগ), থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. সাঈদ বকস্ ভূঁইয়া (মরহুম)। কমিটির হাইকমান্ড (উপদেষ্টা) হন মো. হাবিব উল্ল্যাহ (মরহুম), শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা এম এ মুত্তালিব এবং ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) নেতা বাবু মনীন্দ্রনাথ গোস্বামী (প্রয়াত)।

৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঘোষণার আগেই আমরা এ কমিটি গঠন করেছিলাম। পেছনের ইতিহাস এই যে, আমি ১৯৬৬ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে ‘স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াস’-এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হই। নিউক্লিয়াসের উদ্দেশ্য ছিল সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশকে স্বাধীন করা, যা মূলত বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ১৯৬২ সালেই ছাত্রলীগের মধ্যে গঠিত হয়েছিল। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মধ্যেই সশস্ত্র যুদ্ধ করে পাকিস্তানিদের বিতাড়িত করে বাংলাদেশ স্বাধীন করার জন্য বঙ্গবন্ধুর পরামর্শে বাঙালি সৈন্যদের মধ্যেও নিউক্লিয়াস গঠিত হয়েছিল ১৯৬৪ সালে। এ সম্পর্কে বিস্তৃত বিবরণ পাওয়া যাবে পাকিস্তানিদের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট স্বঘোষিত ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খানের দায়ের করা ‘রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান’ মামলায় যা বিখ্যাত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা হিসেবে সর্বাধিক পরিচিত। স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াসের সঙ্গে জড়িত থাকার কারণেই বুঝতে পেরেছিলাম যে, সশস্ত্র যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়ার এটাই মাহেন্দ্রক্ষণ। জয়দেবপুরে (গাজীপুরে) সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ গাজীপুর স্টেডিয়ামের পশ্চিমসংলগ্ন বটতলায় এক সমাবেশ করে পাকিস্তানের পতাকা পুড়িয়ে দেয়া হয়। স্লোগান ওঠে ‘ইয়াহিয়ার মুখে লাথি মার- বাংলাদেশ স্বাধীন কর’, ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধর- বাংলাদেশ স্বাধীন কর’। পতাকা ধরেছিলেন হারুন ভূঁইয়া এবং অগ্নিসংযোগ করেছিলেন শহীদউল্যাহ বাচ্চু। আর স্লোগান, মাস্টার আ. ছাত্তার মিয়া পায়ের আঙুলের ওপর ভর দিয়ে স্লোগান দিতেন।

আমরা ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী (তৎকালীন রেসকোর্স) উদ্যানের মহাসমাবেশে যোগ দিলাম। সে সময় জয়দেবপুর (গাজীপুর) থেকে হাজার হাজার বীর জনতা ট্রেনে করে এবং শতাধিক ট্রাক ও বাসে করে মাথায় লাল ফিতা বেঁধে ওই জনসভায় যোগ দিয়েছিল। সে এক অপূর্ব দৃশ্য। আজকে ভাবতেও অবাক লাগে কীভাবে এ জনস্রোত এসে মিশে গিয়েছিল ৭ মার্চের মহাসমুদ্রে। ৭ মার্চে উজ্জীবিত হয়ে আমরা সম্ভবত ১১ মার্চ গাজীপুর সমরাস্ত্র কারখানা (অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি) আক্রমণ করি। গেটে বাধা পাওয়ার পর আমি হাজার হাজার মানুষের সামনে টেবিলে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা করেছি মাইকে। পাকিস্তানিরা যাতে বুঝতে পারে, সে জন্য ইংরেজিতে বলি, ‘I do hereby dismiss Brigadier Karimullah from the directorship of Pakistan Ordnance Factory and do hereby appoint Administrative officer Mr Abudul Qader (বাঙালি) as the director of the ordnance Factory’। এই গর্জনে সত্যিই কাজ হয়েছিল। পাকিস্তানি ব্রিগেডিয়ার বক্তৃতা চলাকালীন পেছনের গেট দিয়ে সালনা হয়ে পালিয়ে ঢাকায় চলে আসেন। পাকিস্তানি ব্রিগেডিয়ার আর পরবর্তীতে ১৫ এপ্রিলের পূর্বে গাজীপুরে যাননি। ওই সমরাস্ত্র কারখানা ২৭ মার্চ পর্যন্ত আমাদের দখলেই ছিল। সম্ভবত ১৩ মার্চ তৎকালীন জিওসি ইয়াকুব আলী জয়দেবপুর রাজবাড়ী মাঠে হেলিকপ্টারে অবতরণ করতে চেষ্টা করলে শত শত বীর জনতা হেলিকপ্টারের প্রতি ইট-পাটকেল ও জুতা ছুড়তে শুরু করলে হেলিকপ্টারটি না নামতে পেরে ফেরত চলে যায়।

সে দিন ১৭ মার্চ বুধবার, মহান নেতা বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে লাখো জনতার ঢল নেমেছিল ৩২ নম্বরের বাড়িতে। সবাই বঙ্গবন্ধুকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে এসেছিল। তৎকালীন আমাদের নির্বাচনী এলাকার এমএলএ সামসুল হক (পরবর্তীকালে বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার সদস্য), হাবিব উল্ল্যাহসহ আমি গিয়েছিলাম বঙ্গবন্ধুকে জয়দেবপুরে ২য় ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টকে নিরস্ত্র করার সংবাদ দিতে। সন্ধ্যায় আমরা পেছনে দাঁড়িয়ে আছি দেখতে পেয়ে কিছু বলতে চাই কি না বঙ্গবন্ধু জানতে চান। কুর্মিটোলা (ঢাকা) ক্যান্টনমেন্টে অস্ত্রের মজুত কমে গেছে অজুহাতে ২য় ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টে রক্ষিত অস্ত্র আনার পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সিদ্ধান্ত গ্রহণের সংবাদ জানাই। সামসুল হকের ইশারায় আমি তরুণ হিসেবে এ অবস্থায় আমাদের কী করণীয় জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু ব্যাঘ্রের ন্যায় গর্জে উঠে বললেন, ‘তুই একটা আহাম্মক, কী শিখেছিস যে আমাকে বলে দিতে হবে!’ একটু পায়চারি করে বললেন, ‘বাঙালি সৈন্যদের নিরস্ত্র করতে দেয়া যাবে না। ‘Resist at the cost of anything’। নেতার হুকুম পেয়ে গেলাম। ১৯ মার্চ শুক্রবার আকস্মিকভাবে পাকিস্তানি ব্রিগেডিয়ার জাহান জেবের নেতৃত্বে পাকিস্তানি রেজিমেন্ট জয়দেবপুরস্থ (গাজীপুর) ২য় ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টকে নিরস্ত্র করার জন্য পৌঁছে যায়। একজন জেসিও (নায়েব সুবেদার) জয়দেবপুর হাইস্কুলের মুসলিম হোস্টেলের পুকুরে (জকি স্মৃতির প্রাইমারি স্কুলের সামনে) গোসল করার সময় জানান যে, ঢাকা থেকে ব্রিগেডিয়ার জাহান জেব চলে এসেছেন। খবর পেয়ে দ্রুত আমাদের তখনকার আবাসস্থান মুসলিম হোস্টেলে ফিরে গিয়ে উপস্থিত হাবিব উল্ল্যা ও শহীদুল্ল্যাহ বাচ্চুকে এ সংবাদ জানাই। শহীদউল্ল্যাহ বাচ্চু তখনই রিকশায় চড়ে শিমুলতলীতে, মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি, ডিজেল প্লান্ট ও সমরাস্ত্র কারখানায় শ্রমিকদের যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে জয়দেবপুরে চলে আসার খবর দিলে ১ ঘণ্টার মধ্যে মাঠেই হাজার শ্রমিক-জনতা চারদিক থেকে লাঠিসোঁটা, দা, কাতরা, ছেন, দোনলাবন্দুকসহ জয়দেবপুর উপস্থিত হয়। সেদিন জয়দেবপুর হাটের দিন ছিল। জয়দেবপুর রেল গেটে মালগাড়ির বগি, অকেজো রেললাইন, স্লিপারসহ বড় বড় গাছের গুঁড়ি, কাঠ, বাঁশ, ইট ইত্যাদি যে-যেভাবে আনতে পেরেছিল তা দিয়ে এক বিশাল ব্যারিকেড দেয়। জয়দেবপুর থেকে চৌরাস্তা পর্যন্ত আরও ৫টি ব্যারিকেড দেয়া হয় যাতে পাকিস্তানি বাহিনী অস্ত্র নিয়ে ফেরত যেতে না পারে। ২য় ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড ছিলেন মেজর কে এম শফিউল্লাহ (পরবর্তীকালে সেনাপ্রধান)। আমরা যখন ব্যারিকেড দিচ্ছিলাম তখন টাঙ্গাইল থেকে রেশন নিয়ে একটি কনভয় জয়দেবপুর আসছিল। সে রেশনের গাড়িকে জনতা আটকে দেয়। সেই কনভয়ে থাকা ৫ জন সৈন্যের চায়নিজ রাইফেল তাদের কাছ থেকে কেড়ে নেয়া হয়।

এ দিকে রেল গেটের ব্যারিকেড সরানোর জন্য ২য় ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টকে ব্রিগেডিয়ার জাহান জেব আদেশ দেন। কৌশল হিসেবে বাঙালি সৈন্যদের সামনে দিয়ে পেছনে পাঞ্জাবি সৈন্যদের অবস্থান রেখে মেজর শফিউল্লাহকে জনতার ওপর গুলিবর্ষণের আদেশ দেয়া হয়। বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈন্যরা আমাদের জনতার ওপর গুলি না করে আকাশের দিকে গুলি ছুড়ে অগ্রসর হতে থাকলে আমরা বর্তমান গাজীপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ওপর অবস্থান নিয়ে বন্দুক ও চায়নিজ রাইফেল দিয়ে সেনাবাহিনীর ওপর গুলিবর্ষণ শুরু করি।

পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গুলিতে জয়দেবপুরে শহীদ হন নেয়ামত ও মনুখলিফা, আহত হন চতরের সন্তোষ, ডা. ইউসুফসহ শত শত বীর জনতা। পাকিস্তানি বাহিনী কারফিউ জারি করে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ শুরু করলে আমাদের প্রতিরোধ ভেঙে পড়ে। আমরা পিছু হটলে দীর্ঘসময় চেষ্টা করে ব্যারিকেড পরিষ্কার করে ব্রিগেডিয়ার জাহান জেব চান্দনা চৌরাস্তায় এসে আবার প্রবল বাধার সম্মুখীন হন। নামকরা ফুটবল খেলোয়াড় হুরমত এক পাঞ্জাবি সেনাসদস্যকে পেছন থেকে আক্রমণ করে। আমরা সৈন্যের রাইফেল কেড়ে নিই। কিন্তু পেছনে আর এক পাঞ্জাবি সেনা হুরমতের মাথায় গুলি করলে হুরমত সেখানেই শাহাদতবরণ করেন। বর্তমানে সেই স্থানে চৌরাস্তার মোড়ে ‘জাগ্রত চৌরঙ্গী’ নামে ভাস্কর্য স্থাপিত হয়েছে।

পরদিন বঙ্গবন্ধু আলোচনা চলাকালে পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণে ১৯ মার্চ নিহতদের কথা উল্লেখ করলে জেনারেল ইয়াহিয়া খান বলেন যে, ‘জয়দেবপুরে জনতা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ওপর আধুনিক অস্ত্র ও চায়নিজ রাইফেল দিয়ে আক্রমণ করেছে এবং এতে পাকিস্তানি বাহিনীর অনেক সেনা আহত হয়েছে।’

১৯ মার্চের পর সারা বাংলাদেশে স্লোগান ওঠে, ‘জয়দেবপুরের পথ ধর-বাংলাদেশ স্বাধীন কর’, ‘জয়দেবপুরের পথ ধর-সশস্ত্র যুদ্ধ শুরু কর’।

১৯৭২ সালের ১৯ মার্চ প্রথম জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গাজীপুরবাসীর উদ্দেশে এক পত্রে ১৯ মার্চের সশস্ত্র প্রতিরোধের সময় শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং জয়দেবপুরবাসীকে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর মাহেন্দ্রক্ষণে বঙ্গবন্ধুকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ আন্দোলনের সুবর্ণজয়ন্তীতে ১৯ মার্চের শহীদসহ অংশগ্রহণকারী সবার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। এ সশস্ত্র প্রতিরোধযুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়ার সুযোগ পাওয়ায় নিজেকে গৌরবান্বিত মনে করি।

১৯ মার্চের সশস্ত্র যুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক মাইলফলক। জয়দেবপুরের গৌরবগাথা উনিশে মার্চ প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ দিবস হিসেবে জাতীয়ভাবে উদযাপন করার দাবিতে গাজীপুরের সর্বস্তরের জনতা আবেদন জানিয়ে আসছে। উনিশে মার্চ প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ দিবস হিসেবে দেশব্যাপী জাতীয়ভাবে পালিত হলে মুক্তিযুদ্ধের সূচনার ইতিহাস যথাযথভাবে সংরক্ষিত হবে বলে আমি মনে করি।

লেখক: বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী


তফসিলের আগে ফের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠকে ইসি

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে তফসিল ঘোষণার আগে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আবার বৈঠকে বসেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচনের নিরাপত্তা কৌশল পর্যালোচনা ও চূড়ান্ত করতেই এই বৈঠক ডাকা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সকাল সাড়ে ১০টায় এই বৈঠক শুরু হয়েছে। এতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে চার নির্বাচন কমিশনার, স্বরাষ্ট্র সচিব, ইসি সচিবসহ বাহিনী ও সংস্থার শীর্ষ ব্যক্তিরা অংশ নিয়েছেন।

জানা গেছে, আজকের বৈঠকে নির্বাচনকালীন নিরাপত্তা পর্যালোচনা করে ইসির পক্ষ থেকে একটি সমন্বিত কর্মকৌশল নির্ধারণের নির্দেশনা দেওয়া হবে। একইসঙ্গে, ভোটের আগে ও পরে কতদিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে মোতায়েন থাকবে এবং প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে কতজন সদস্য নিয়োজিত থাকবে, সে বিষয়েও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

এর আগে, গত ২০ অক্টোবর প্রথম দফা প্রাক-প্রস্তুতিমূলক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যেখানে সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়। ওই সভায় ভোটের আগে ও পরে মোট আট দিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েনের একটি প্রস্তাব আসে। সবমিলিয়ে, এবারের নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১৩ থেকে ১৮ জন সদস্য থাকার বিষয়েও আলোচনা হয়।

ইসি জানায়, শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে বাহিনীর মোতায়েন সংখ্যা ও সময়কাল আজকের বৈঠকে আনুষ্ঠানিকভাবে চূড়ান্ত করা হবে।


শেখ হাসিনা পরিবারের ৮৩২.৫ ভরি স্বর্ণ জব্দ: দুদক

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

অগ্রণী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিবারের দুইটি লকার থেকে মোট ৮৩২.৫ ভরি বা ৯ কেজি ৭১৬ গ্রাম স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়।

গত মঙ্গলবার একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), বাংলাদেশ ব্যাংকের বুলিয়ন শাখার স্বর্ণ বিশেষজ্ঞ, এনবিআরের কর গোয়েন্দা ও সিআইসির দুই কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে লকার খোলা হয়।

২০০৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর জমা দেওয়া সম্পদ বিবরণীতে শেখ হাসিনা পূবালী ব্যাংকের ১টি এবং অগ্রণী ব্যাংকের ২টি লকারের ঘোষণা দেন। সেই বিবরণী পুনঃযাচাইয়ের অংশ হিসেবে গত ১৪ সেপ্টেম্বর দুদকের উপপরিচালক মো. মাসুদুর রহমান লকার খোলার জন্য আদালতে আবেদন করেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে লকার খোলা হয়েছে।

বুধবার পূবালী ব্যাংক মতিঝিল কর্পোরেট শাখা এবং অগ্রণী ব্যাংক প্রিন্সিপাল শাখায় লকার তিনটি খোলা হয় বলে দুদক থেকে এক প্রেস বিবৃতিতে জানানো হয়।

লকারগুলোর মধ্যে- পূবালী ব্যাংক লকার নং-১২৮ এর গ্রাহক শেখ হাসিনা। যেখানে একটি খালি ছোট পাটের ব্যাগ পাওয়া গেছে। অগ্রণী ব্যাংক লকার-নং ৭৫১/বড়/১৯৬ শেখ হাসিনা ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের নামে। যেখানে পাওয়া যায় ৪ হাজার ৯২৩.৬০ গ্রাম স্বর্ণালংকার।

অন্যদিকে অগ্রণী ব্যাংক লকার নং ৭৫৩/বড়/২০০ এর গ্রাহক শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা সিদ্দিক। যেখানে পাওয়া যায় ৪ হাজার ৭৮৩.৫৬ গ্রাম স্বর্ণালংকার। সব লকারের মালামাল ইনভেন্টরি তৈরি করে শাখার ব্যবস্থাপকের জিম্মায় রাখা হয়েছে।

লকারে শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা সিদ্দিক, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, সজীব ওয়াজেদ জয় ও ববি ওয়াজেদের হতে পারে বলে ধারণা দুদকের।

আর গত ১০ সেপ্টেম্বর ১০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মতিঝিলের পূবালী ব্যাংক সেনা কল্যাণ ভবন শাখায় শেখ হাসিনার একটি লকার (নম্বর ১২৮) জব্দ করে সিআইসি।

গত ১৭ নভেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ শেখ হাসিনা ও তার দোসর সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। সেদিনের রায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামির সমস্ত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্যও আদালত নির্দেশনা দেয়।

ফেরারি দুই আসামির সমস্ত সম্পত্তি ক্রোক ও বাজেয়াপ্ত করার জন্য জব্দ হওয়া লকার খোলা হচ্ছে বলে এনবিআর জানায়।

গত বছর ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার শেখ হাসিনা ও তার পরিবার সদস্যদের কর ফাঁকি ও দুর্নীতির তদন্তের নির্দেশ দেয়। এরই অংশ হিসেবে শেখ হাসিনার নামে থাকা বিভিন্ন ব্যাংকের লকার জব্দ করে সিআইসি।


হারুন ও বেনজীর পরিবারের আয়কর নথি জব্দের নির্দেশ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

সাবেক ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ এবং পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীরের স্ত্রী জীশান মির্জা এবং কন্যা তাহসীন রাইসা বিনতে বেনজীরের আয়কর নথি জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত।

বুধবার দুদকের পৃথক তিন আবেদনের শুনানি নিয়ে ঢাকার কর অঞ্চল-২০ কে এ নির্দেশ দেন ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ সাব্বির ফয়েজ।

সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ সহকারি রিয়াজ হোসেন গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান। দুদকের উপপরিচালক মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীন তিনজনের আয়কর নথি সরবরাহ চেয়ে আবেদন করেন।

ডিবি হারুনের আবেদনে বলা হয়, হারুন অর রশীদ সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে ১৭ কোটি ৫১ হাজার ১৭ হাজার ৮০৬ টাকা মূল্যের জ্ঞাত আয়বর্হিভূত সম্পদ অর্জন করে ভোগদখলে রেখে দুদক আইনে অপরাধ করেছেন। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তার আয়কর নথি জব্দ করে পর্যালোচনা করা একান্ত প্রয়োজন।

বেনজীরের স্ত্রী জীশানের আবেদনে বলা হয়, জীশান মিথ্যা তথ্য প্রদানের মাধ্যমে ১৬ কোটি ১ লাখ ৭১ হাজার ৩৩৬ টাকা মূল্যের সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করে এবং ৩১ কোটি ৬৯ লাখ ৫৫ হাজার ১৪৯ টাকা মূল্যের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অর্জন ভোগদখলে রেখে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৬ (২) ও ২৭ (১) ধারার এবং তার স্বামী বেনজীর আহমেদ বাংলাদেশ পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত থেকে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে তাকে (জীশান) এ অপরাধে প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করে দণ্ডবিধি’র ১০৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন মর্মে প্রতীয়মান হওয়ায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তার সব আয়কর রিটার্নসহ সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র জব্দ করে পর্যালোচনা করা একান্ত প্রয়োজন।

তাহসীন রাইসার আবেদনে বলা হয়, তাহসীন রাইসা বিনতে বেনজীরের ৫ কোটি ৫৯ লাখ ৫৫ হাজার ৮৫ টাকা মূল্যের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অর্জনপূর্বক ভোগদখলে রেখে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৭ (১) ধারার এবং বেনজীর আহমেদ বাংলাদেশ পুলিশ ও র্যাবের গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত থেকে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে জীশানকে এ অপরাধে প্রত্যক্ষ সহায়তা করে দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন মর্মে প্রতীয়মান হওয়ায় মামলা দায়ের করা হয়। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তার আয়কর নথি জব্দ করা প্রয়োজন।


তিন পদে ৮২৬ বিচারকের পদোন্নতি

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

অধঃস্তন আদালতের বিচারকদের বড় সংখ্যায় পদোন্নতি দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। সারাদেশে একসঙ্গে ৮২৬ বিচারককে পদায়ন ও বদলি করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে আইন বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

বুধবার উপসচিব এ এফ এম গোলজার রহমান স্বাক্ষরিত বদলি ও পদোন্নতির পৃথক দুটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। পদোন্নতির পর তাদের নতুন কর্মস্থলে পদায়নও করা হয়েছে।

জেলা ও দায়রা জজ পদে পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (বেতন ও ভাতাদি) আদেশ, ২০১৬’-এর বেতন স্কেলের প্রথম গ্রেডে ৭০,৯২৫-৭৬,৩৫০ বেতনক্রমে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ পদ থেকে জেলা ও দায়রা জজ পদে পদোন্নতি দিয়ে পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত তাদের নিয়োগ/বদলি করা হলো।

প্রজ্ঞাপনের তথ্যানুযায়ী, তিনটি পদে মোট পদোন্নতি ও পদায়ন হয়েছেন ৮২৬ জন। এর মধ্যে অতিরিক্ত জেলা জজ থেকে জেলা জজ ২৫০ জন, যুগ্ম জেলা জজ থেকে অতিরিক্ত জেলা জজ ২৯৪ জন ও সিনিয়র সহকারী জজ থেকে যুগ্ম জেলা জজ ২৮২ জন।

প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, বদলি হওয়া বিচারকদের দপ্তরপ্রধান কর্তৃক মনোনীত কর্মকর্তার কাছে আগামী ২৭ (বৃহস্পতিবার) নভেম্বর বর্তমান পদের দায়িত্বভার অর্পণ করে আগামী ১ ডিসেম্বরের মধ্যে বদলিকৃত কর্মস্থলে যোগদানের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।

এছাড়া প্রশিক্ষণ, মাতৃত্বকালীন ছুটি, বহিঃবাংলাদেশ ছুটিতে থাকা কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ ও ছুটি শেষে কর্মস্থলে যোগদান করে কার্যভার হস্তান্তর করে অবিলম্বে পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মস্থলে যোগদানের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।


একই দিনে নির্বাচন ও গণভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছে কমিশন: ইসি সচিব

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ জানিয়েছেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে আয়োজনের প্রস্তুতি ইতোমধ্যে নিয়ে রেখেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তিনি বলেন, নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে অনুষ্ঠিত হবে- এই ধারণা আগে থেকেই পরিষ্কার ছিল, তাই কমিশন মানসিক প্রস্তুতি এবং প্রাথমিক কাজগুলো আগেই সম্পন্ন করেছে।

বুধবার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে সচিব এসব কথা বলেন।

গণভোটের অধ্যাদেশ জারি হওয়ার পর কমিশনের প্রস্তুতি কোন পর্যায়ে জানতে চাইলে আখতার আহমেদ বলেন, ‘দায়িত্বের আভাস পেলেই প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করা হয়। আপনি যদি ভাবেন যে একটা দায়িত্ব আপনার ওপর আসতে যাচ্ছে, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই মানসিক প্রস্তুতি থাকে। আমাদেরও সেই প্রস্তুতি ছিল। পাশাপাশি আমরা আগাম কাজও শুরু করে দিয়েছিলাম।’

তিনি জানান, আগামী শনিবার সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত শেরেবাংলা নগর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ মক ভোটিং আয়োজন করা হবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট-উভয় প্রক্রিয়া একই কেন্দ্রে একসঙ্গে পরিচালনার অনুশীলন হিসেবে এই মক ভোটিং করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘একই দিনে দুই ধরনের ভোট পরিচালনা করতে গেলে কিছু সমন্বয় প্রয়োজন হতে পারে। সেই বাস্তবতা যাচাই করতেই আমরা এই রিহার্সালের আয়োজন করেছি।’

তিনি জানান, মক ভোটিংয়ের মাধ্যমে পরীক্ষা করে দেখা হবে- কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন হবে কি না, ভোটকক্ষের সংখ্যা বাড়বে বা কমবে কি না, ভোটার ব্যবস্থাপনা কীভাবে সমন্বয় করা যাবে, দুই ধরনের ব্যালট ব্যবস্থাপনা একসঙ্গে করতে কতটুকু সময় লাগবে এবং সামগ্রিকভাবে কেন্দ্র পরিচালনায় কী ধরনের সমন্বয় প্রয়োজন হবে।

আখতার আহমেদ বলেন, ‘আমরা চাই পুরো প্রক্রিয়াটা নিখুঁতভাবে পরিচালনা করতে। একটি সফল রিহার্সাল থেকে পাওয়া অভিজ্ঞতা পরবর্তী সিদ্ধান্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’ তিনি সাংবাদিকদেরও ওই রিহার্সাল কভার করার আমন্ত্রণ জানান।

ইসি সচিবালয়ের পরিচালক (জনসংযোগ ও তথ্য) মো. রুহুল আমিন মল্লিক গণমাধ্যমকে জানান, ২৯ নভেম্বর সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সকল শ্রেণির ভোটারের অংশগ্রহণে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে মক ভোটিং অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহসহ ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন বলে তিনি জানান।


হাসিনাকে ফেরত চেয়ে ঢাকার চিঠি পরীক্ষা করে দেখছে দিল্লি: রণধীর জয়সওয়াল

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণে বাংলাদেশের চিঠি ভারত পর্যালোচনা করছে বলে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল।

বুধবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নয়াদিল্লিতে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা জানান।

রণধীর জয়সওয়াল বলেন, বিষয়টি ভারতের চলমান অভ্যন্তরীণ বিচারিক ও আইনগত প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে যাচাই করা হচ্ছে।

ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে জয়সোওয়াল বলেন, ‘চলমান বিচারিক ও অভ্যন্তরীণ আইনি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে চিঠিটি পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। আমরা শান্তি, গণতন্ত্র, অন্তর্ভুক্তি এবং স্থিতিশীলতাসহ বাংলাদেশের জনগণের সর্বোত্তম স্বার্থের বিষয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ। এ লক্ষ্য অর্জনে আমরা অব্যাহতভাবে সব অংশীজনের সঙ্গে গঠনমূলকভাবে যুক্ত থাকব।’

এদিকে নয়াদিল্লিকে দেওয়া চিঠির বিষয়ে বুধবার পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে পাঠানো চিঠির জবাব এখনো আসেনি।’ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ খবর জানান।

কোন প্রক্রিয়ায় ভারতে চিঠি পাঠানো হয়েছে, সে প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, ‘নোট ভারবাল (কূটনৈতিক পত্র) আমাদের মিশনের মাধ্যমে ওদের (ভারতের) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। কোন উত্তর আসেনি। এত তাড়াতাড়ি উত্তর আশাও করি না আমরা।’

এর আগে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে ফেরত আনার বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। গত শুক্রবার (২১ নভেম্বর) পাঠানো ওই চিঠির বিষয়টি গত রোববার গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।

এদিকে শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে বাংলাদেশ যে চিঠি পাঠিয়েছে তা পাওয়ার কথা স্বীকার করেছে দিল্লি। রণধীর জয়সওয়াল সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘হ্যাঁ, আমরা চিঠিটি পেয়েছি এবং তা পর্যালোচনা করা হচ্ছে।’

ভারত এর জবাব দেবে কি না স্পষ্ট না করে তিনি বলেন, ‘চলমান বিচারিক ও অভ্যন্তরীণ আইনি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বাংলাদেশসহ দেশটির মানুষের শান্তি, গণতন্ত্র, অন্তর্ভুক্তি ও স্থিতিশীলতার সর্বোত্তম স্বার্থে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ বিষয়ে সব স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে আমরা গঠনমূলক যোগাযোগ চালিয়ে যাব।’

গত জুলাইয়ের অভ্যুত্থানের পর মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গত সোমবার রায় দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। রায়ে শেখ হাসিনা ও তার সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। একই মামলায় রাজসাক্ষী হওয়ায় সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল।

রায়ের দিনই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে ভারত সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে দুজনকে প্রত্যর্পণের দাবি তোলে। পরে সচিবালয়ে প্রতিক্রিয়ায় আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ভারতকে আবারও চিঠি পাঠানোর পরিকল্পনার কথা জানান। এরপর সেই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই নতুন চিঠি পাঠানো হয়।

অন্যদিকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে নোটিশ জারি প্রক্রিয়াধীন বলে জানা গেছে।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানায়, গত বছরের ছাত্র-জনতার জুলাই অভ্যুত্থানে নির্বিচারে হত্যা ও দমনে নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) কর্তৃক হাসিনা ও কামালের মৃত্যুদণ্ডাদেশের পর ইন্টারপোলে নোটিশ জারির বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।


বিশ্বে জনবহুল নগরের তালিকায় ২ নম্বরে ঢাকা

জনসংখ্যা যেভাবে বাড়ছে, তাতে ২০৫০ সালে সবচেয়ে জনবহুল নগরে পরিণত হবে ঢাকা, পূর্বাভাস জাতিসংঘের
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

সারা বিশ্বেই মানুষ শহরমুখী, এতে শহরে বাড়ছে মানুষের ভিড়, সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মেগা সিটির সংখ্যা। সম্প্রতি প্রকাশিত জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, এখন বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল শহর ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তা।

এর আগে সবচেয়ে জনবহুল নগর ছিল জাপানের রাজধানী টোকিও। সেই নগর সরিয়ে জাকার্তা ১ নম্বরে উঠে এসেছে। তালিকায় সবচেয়ে বেশি উল্লম্ফন হয়েছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার। জাতিসংঘ প্রকাশিত তালিকায় ঢাকার অবস্থান ২ নম্বরে।

সবশেষ তালিকা অনুযায়ী, বর্তমানে ৪ কোটি ১৯ লাখ মানুষ জাকার্তায় বসবাস করেন। ইন্দোনেশিয়ার ঘনবসতিপূর্ণ দ্বীপ জাভার পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত জাকার্তা একটি উপকূলীয় শহর। গত ১৮ নভেম্বর জাতিসংঘ ‘ওয়ার্ল্ড আরবানাইজেশন প্রসপেক্টস ২০২৫’ শিরোনামে এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে।

জাকার্তার পরেই আছে ঢাকা, এই নগরে এখন ৩ কোটি ৬৬ লাখ মানুষ বাস করেন। তবে ঢাকার জনসংখ্যা যে হারে বাড়ছে, তাতে ২০৫০ সাল নাগাদ জাকার্তাকে সরিয়ে ঢাকাই বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল নগরে পরিণত হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে জাতিসংঘ।

গত ১৮ নভেম্বর জাতিসংঘ ‘ওয়ার্ল্ড আরবানাইজেশন প্রসপেক্টস ২০২৫’ শিরোনামে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

ইউনাইটেড নেশনস ডিপার্টমেন্ট অব ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল অ্যাফেয়ার্স এই প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করেছে।

স্কাই নিউজের খবরে বলা হয়েছে, প্রতিবেদনটি অনুমানের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা। এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে জাতিসংঘ তাদের ২০১৮ সালের জনসংখ্যাবিষয়ক তথ্য হালনাগাদ করেছে।

এই প্রতিবেদনে শহরে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যার নাটকীয় বৃদ্ধি তুলে ধরা হয়েছে। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে একে মানুষ্য বসতির নতুন প্রবণতা বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

ঢাকার পরে আছে জাপানের রাজধানী টোকিও। তবে জাকার্তা ও ঢাকার তুলনায় গত ২৫ বছরে টোকিওতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি অনেকটাই স্থিতিশীল থেকেছে। টোকিওর বর্তমান জনসংখ্যা ৩ কোটি ৩৪ লাখ।

এর আগে ২০০০ সালে জাতিসংঘ প্রকাশিত মূল্যায়নে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল নগর ছিল টোকিও।

২০০০ সালের পর টোকিওর তুলনায় জাকার্তার জনসংখ্যা ৫ গুণ হারে এবং ঢাকা জনসংখ্যা ৭ গুণ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বর্তমানে এক কোটির বেশি জনসংখ্যা রয়েছে, বিশ্বে এমন মেগা সিটির সংখ্যা বেড়ে ৩৩ হয়েছে। ১৯৭৫ সালে বিশ্বে মাত্র ৮টি মেগা সিটি ছিল। অর্থাৎ মেগা সিটি বেড়ে চার গুণ হয়েছে।

জাকার্তা, ঢাকা ও টোকিওর পর ৪ নম্বরে আছে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি (বাসিন্দা ৩ কোটি ২ লাখ), চীনের সাংহাই (২ কোটি ৯৬ লাখ), চীনের গুয়াংজু (২ কোটি ৭৬ লাখ), ফিলিপাইনের ম্যানিলা (২ কোটি ৪৭ লাখ), ভারতের কলকাতা (২ কোটি ২৫ লাখ) এবং দক্ষিণ কোরিয়ার সিউল (২ কোটি ২৫ লাখ)।


নতুন ইউএনও পেল ১৬৬ উপজেলা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জেলা প্রশাসকের (ডিসি) পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পদে রদবদল এনেছে অন্তর্বর্তী সরকার।

বুধবার প্রথম ধাপে ১৬৬ উপজেলায় সিনিয়র সহকারী সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের নতুন ইউএনও নিয়োগ দিয়ে পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। আটটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এসব ইউএনওকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হিসেবে ন্যস্ত করা কর্মকর্তাদের নিজ অধিক্ষেত্রে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য ‌‘দ্য কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর, ১৮৯৮-এর সেকশন-১৪৪-এর ক্ষমতা অর্পণ করা হলো।

নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তারা আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে বদলি করা কর্মস্থলে যোগদান করবেন, অন্যথায় আগামী ৩০ নভেম্বর বিকালে বর্তমান কর্মস্থল (প্রশিক্ষণ/কর্মস্থল) থেকে তাৎক্ষণিক অবমুক্ত (স্ট্যান্ড রিলিজ) বলে গণ্য হবেন।

বদলি করাকর্মকর্তার দপ্তর/কর্মস্থল ইতোমধ্যে পরিবর্তন হলে কর্মরত দপ্তরের নাম-ঠিকানা উল্লেখ করে তিনি যোগদানপত্র দাখিল করবেন বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে।


হাসিনা-কামালের মৃত্যুদণ্ডের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ

*পাঁচটি অভিযোগ জমা দেয় প্রসিকিউশন *রায়ে দুটি অভিযোগে ছয়টি ঘটনা আনেন ট্রাইব্যুনাল *শেখ হাসিনার তিনটি অভিযোগ প্রমাণিত *আপিল করতে হবে এক মাসের মধ্যে নিজস্ব প্রতিবেদক
আপডেটেড ২৬ নভেম্বর, ২০২৫ ২৩:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত গণহত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ডের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়েছে। রায়ে আদালত বলেছেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। প্রথম অভিযোগে অমৃত্যু কারাদণ্ড ও দ্বিতীয়টিতে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

রায়ে আদালত আরও বলেছে, শেখ হাসিনা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন। একইসঙ্গে আসাদুজ্জামান খান কামাল, চৌধুরী মামুনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রমাণ মিলেছে। চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন রাজসাক্ষী হয়ে সত্য উন্মোচন করেছেন, মামুনের অপরাধের সাজা সর্বোচ্চ হলেও সত্য উন্মোচন করায় তার সাজা কম হবে।

বুধবার এ রায় প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়, রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে।

এরই মধ্যে এ মামলায় দণ্ডিত সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদও পূর্ণ কপি পেয়েছেন। বিষয়টি নিজেই নিশ্চিত করেছেন তিনি।

গত ১৭ নভেম্বর শেখ হাসিনা ও কামালকে অমৃত্যু কারাদণ্ডের পাশাপাশি ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল-১। একইসঙ্গে তাদের সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। এছাড়া একই মামলায় পাঁচ বছরের সাজা পান চৌধুরী মামুন। এর ঠিক ৯ দিন পর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করে ট্রাইব্যুনাল। ফলে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে শেখ হাসিনা ও কামালকে আপিল করতে হবে।

এ মামলার পাঁচটি অভিযোগ জমা দেয় প্রসিকিউশন। কিন্তু রায়ে দুটি অভিযোগে ছয়টি ঘটনা আনেন ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে অভিযোগ-১ এ তিনটি ঘটনা আনা হয়। এর প্রথমটি ২০২৪ সালের ১৪ জুলাই গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারীদের রাজাকার বলে উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়া।

দ্বিতীয়ত ওই রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি মাকসুদ কামালের সঙ্গে শেখ হাসিনার কথোপকথনে আন্দোলনকারীদের রাজাকার বলে ফাঁসি দেবেন বলে উসকানি ও আদেশ। এছাড়া অপরাধ সংঘটনে আসামিরা নিজেদের অধীনস্থদের কোনো বাধা দেননি। তৃতীয়ত এরই ফলশ্রুতিতে রংপুরে আবু সাঈদকে গুলি ছুড়ে হত্যা করে পুলিশ। এসব অপরাধে শেখ হাসিনা ও কামালের অমৃত্যু কারাদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল।

দুই নম্বর অভিযোগেও তিনটি ঘটনা আনেন ট্রাইব্যুনাল। এক নম্বর ২০২৪ সালের ১৮ জুলাই শেখ হাসিনার সঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ফজলে নূর তাপস ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর ফোনালাপ পাওয়া যায়। এসব কথপোকথনে ড্রোনের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের অবস্থান নির্ণয়, ছাত্র-জনতাকে হেলিকপ্টার ও মারণাস্ত্র ব্যবহার করে হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন শেখ হাসিনা। এ অপরাধ সংঘটনে অধীনস্থদের কোনো বাধা দেননি আসামিরা।

যার ফলে একই বছরের ৫ আগস্ট চানখারপুলে ছয়জন আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যা করে পুলিশ। যা এ অভিযোগে ঘটনা নম্বর দুই। তিন নম্বর ঘটনা ওই দিন তথা ৫ আগস্ট সাভারের আশুলিয়ায় ছয়জনকে হত্যার পর লাশ পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এসব অপরাধে হাসিনা-কামালের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। পাশাপাশি তাদের সব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয়। যা জুলাইয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরণ করবে সরকার। এছাড়া উভয় অভিযোগে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পাঁচ বছর কারাদণ্ড হয়েছে।

গণহত্যার দায়ে সরকারের সর্বোচ্চ পদধারী ব্যক্তির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশের ইতিহাসে এটিই প্রথম বিচারের রায়। হাসিনার মামলার রায় বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বেসরকারি টেলিভিশনগুলোতে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়। এছাড়া রাজধানীর মোড়ে মোড়ে বড় পর্দায় বিচার কার্যক্রম দেখানো হয়।

হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান পালিয়ে বর্তমানে ভারতের আশ্রয় রয়েছেন। মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া একমাত্র আসামি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন রাজসাক্ষী হয়েছেন। তিনি অ্যাপ্রুভার (রাজসাক্ষী নামে পরিচিত) হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন এবং নিজের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ স্বীকার করেছেন।


নির্বাচনের ব্যালট হবে সাদাকালো, গণভোটে রঙিন

গণভোটে থাকবে একটি প্রশ্ন, দুটি বিকল্প
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

গণভোট অধ্যাদেশ–২০২৫ এর খসড়া অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ। গতকাল মঙ্গলবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়। জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ অনুযায়ী, আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই গণভোট হবে।
বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল জানান, গণভোট পরিচালনার প্রক্রিয়া বিস্তারিত উল্লেখ করে অধ্যাদেশটি চূড়ান্ত করা হয়েছে।
গণভোটে থাকবে একটি প্রশ্ন, দুটি বিকল্প: গণভোটে থাকবে মাত্র একটি প্রশ্ন— জুলাই জাতীয় সনদ আদেশ ও সংবিধানসংক্রান্ত সংস্কার প্রস্তাবে ভোটারের সম্মতি আছে কি না। ভোটাররা ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ বক্সে চিহ্ন দিয়ে মতামত জানাবেন।
ব্যালটে সাদাকালো ও রঙিন পার্থক্য: আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের ব্যালট হবে সাদা কাগজে কালো প্রতীক, আর গণভোটের ব্যালট হবে রঙিন, যাতে ভোটার বিভ্রান্ত না হন।’
একই স্থানে নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ জানান, গণভোট ও নির্বাচনে পোস্টাল ব্যালটেও একই ধরনের স্টাইল ব্যবহার করা হবে। আগামী মাসের ৫ তারিখের মধ্যে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। সরকারি প্রেসে ব্যালট ছাপার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে এবং পর্যাপ্ত কাগজও রয়েছে। গণভোটের ক্ষেত্রে রঙিন কাগজে দৃশ্যমান যেকোনো কালি ব্যবহার করা হবে।
বিদেশে রেজিস্ট্রেশন ও প্রযুক্তিনির্ভর ভোট: ইসির সচিব জানান, পোস্টাল ব্যালটের জন্য উত্তর আমেরিকায় রেজিস্ট্রেশন চলছে। শনিবার অনুষ্ঠিতব্য মক ভোটের ফল অনুযায়ী ভোটকেন্দ্র বাড়ানো বা কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
ইসি সচিব আখতার আরও জানান, প্রবাসী, সরকারি চাকরিজীবী, আইনি হেফাজতে থাকা ব্যক্তি এবং নির্বাচনি দায়িত্বে নিয়োজিতরা অ্যাপের মাধ্যমে ভোট দিতে পারবেন।
আইন উপদেষ্টা জানান, এখন পর্যন্ত ৩১ হাজার ১০৮ জন প্রবাসী ভোটার রেজিস্ট্রেশন করেছেন। একইদিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট আয়োজন বড় চ্যালেঞ্জ হলেও সবার মধ্যে উৎসাহ রয়েছে।
মনিটরিং ও দায়িত্ব বণ্টন: গণভোটের জনসচেতনতা বাড়াতে দ্রুত প্রচারণা শুরু হবে বলে জানান আইন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘অন্ধভাবে নয়, যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রশাসনের পদায়নের জন্য লটারি ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।’
সংসদ নির্বাচনের জন্য নিয়োগকৃত রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা, প্রিসাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তারাই গণভোটেও একই দায়িত্ব পালন করবেন। গণভোটেও পোস্টাল ব্যালটের ব্যবস্থা থাকবে।


কড়াইল অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের সব ধরনের সহায়তা নিশ্চিতের আশ্বাস প্রধান উপদেষ্টার

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ফাইল ছবি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাজধানীর কড়াইল বস্তিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে বিপুলসংখ্যক ঘর-বাড়ি পুড়ে যাওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

এ ঘটনায় অসংখ্য পরিবারের নিঃস্ব হয়ে যাওয়াকে ‘সকলের জন্য বেদনাদায়ক’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এক বিবৃতিতে প্রধান উপদেষ্টা আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

তিনি বলেন, ‘কড়াইল বস্তির অগ্নিকাণ্ডে যেসব পরিবার গৃহহীন হয়েছেন, তাদের দুঃখ-কষ্ট আমাদের সকলের জন্য বেদনার। ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে সরকার প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা নিশ্চিত করবে।’

তিনি জানান, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দ্রুত ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যক্রম জোরদার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধান করে ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।


মাইলস্টোন ট্রাজেডি: বার্ন ইনস্টিটিউট থেকে ছাড়পত্র পেল আরও এক শিক্ষার্থী

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর উত্তরায় বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় প্রায় পাঁচ মাস চিকিৎসাধীন থাকার পর অবশেষে বাড়ি ফিরল মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দগ্ধ শেখ সাইয়েবা মেহজাবিন (১১)। সে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী।

বুধবার (২৬ নভেম্বর) সকালের দিকে তাকে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে দীর্ঘদিন চিকিৎসা শেষে ছাড়পত্র দেওয়া হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক ডা. শাওন বিন রহমান।

তিনি জানান, ২১ জুলাই একটি মর্মান্তিক বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অনেক শিক্ষার্থীর সঙ্গে ওই শিক্ষার্থীও দগ্ধ হয়। প্রায় ৫ মাস সে আমাদের এখানে চিকিৎসাধীন ছিল। তাদের মধ্যে সাইয়েবার শরীরের ২২ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল। এ নিয়ে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউট থেকে মোট শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ ৩৫ জনকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে আমাদের ইনস্টিটিউটে একজন চিকিৎসাধীন রয়েছে। আমরা আশা করছি সেও দ্রুত ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারবে।


৬৪ জেলার এসপি পদায়ন করে প্রজ্ঞাপন জারি

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দায়িত্ব পালনের জন্য ৬৪ জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) চূড়ান্ত করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।

সোমবার প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় লটারি করে এই এসপিদের নির্বাচন করা হয়। বুধবার এসপিদের পদায়ন দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, যমুনায় লটারির সময় উপস্থিত ছিলেন ভারপ্রাপ্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী। এ ছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

পুলিশের নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো জানায়, অতীতে এসপি হিসেবে যাঁরা দায়িত্ব পালন করেছেন—এমন কর্মকর্তাদের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়। এরপর পুলিশ ক্যাডারের ২৫, ২৭ ও ২৮তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে যাচাই-বাছাই করে একটি তালিকা প্রস্তুত করা হয়। সেই তালিকায় থাকা কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে লটারির মাধ্যমে ৬৪ জনকে নির্বাচন করা হয়েছে।


banner close