আজ ঐতিহাসিক ১৯ মার্চ। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে গাজীপুরের (সেই সময়ের জয়দেবপুর) বীর জনতা গর্জে উঠেছিল এবং সম্মুখযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিল। মনে পড়ে মার্চের সেই উত্তাল দিনগুলোতে বাঙালি জাতির এক অবিস্মরণীয় গণ-অভ্যুত্থানের কথা। ১৯৭১ সালের পহেলা মার্চ দুপুরে হঠাৎ এক বেতার ভাষণে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান ৩ মার্চ অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেন। এ কথা শোনামাত্র সারা দেশের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রতিবাদমুখর হয়ে এ ঘোষণার বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে আসেন। দেশের সর্বত্রই স্লোগান ওঠে ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধর- বাংলাদেশ স্বাধীন কর’, ‘পিন্ডি না ঢাকা, ঢাকা-ঢাকা’, ‘পাঞ্জাব না বাংলা, বাংলা-বাংলা’, ‘তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা-মেঘনা-যমুনা’, ‘তুমি কে আমি কে, বাঙালি-বাঙালি’।
বঙ্গবন্ধু ঢাকায় পূর্বাণী হোটেলে এক সভায় ইয়াহিয়ার ঘোষণার তীব্র প্রতিবাদ করেন এবং ঢাকায় ২ মার্চ এবং সারা বাংলাদেশে (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) ৩ মার্চ হরতাল আহ্বান করেন এবং ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা আহ্বান করেন।
জয়দেবপুরে (আজকের গাজীপুর) আমার পরামর্শে ২ মার্চ রাতে তৎকালীন থানা পশুপালন কর্মকর্তা আহম্মেদ ফজলুর রহমানের সরকারি বাসায় তৎকালীন মহকুমা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হাবিব উল্ল্যাহ এক সর্বদলীয় সভা আহ্বান করেন। সভায় আমাকে (আ ক ম মোজাম্মেল হক) আহ্বায়ক করে এবং মেশিন টুলস্ ফ্যাক্টরির শ্রমিক নেতা নজরুল ইসলাম খানকে কোষাধ্যক্ষ করে ১১ সদস্যের এক সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়। সদস্য হন আয়েশ উদ্দিন, মো. নুরুল ইসলাম (ভাওয়াল রত্ন), মো. আ. ছাত্তার মিয়া (চৌরাস্তা), থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মরহুম হজরত আলী মাস্টার (চৌরাস্তা), মো. শহীদ উল্ল্যাহ বাচ্চু (মরহুম), হারুন-অর-রশিদ ভূঁইয়া (মরহুম), শহিদুল ইসলাম পাঠান জিন্নাহ (মরহুম), শেখ আবুল হোসেন (শ্রমিক লীগ), থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. সাঈদ বকস্ ভূঁইয়া (মরহুম)। কমিটির হাইকমান্ড (উপদেষ্টা) হন মো. হাবিব উল্ল্যাহ (মরহুম), শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা এম এ মুত্তালিব এবং ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) নেতা বাবু মনীন্দ্রনাথ গোস্বামী (প্রয়াত)।
৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঘোষণার আগেই আমরা এ কমিটি গঠন করেছিলাম। পেছনের ইতিহাস এই যে, আমি ১৯৬৬ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে ‘স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াস’-এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হই। নিউক্লিয়াসের উদ্দেশ্য ছিল সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশকে স্বাধীন করা, যা মূলত বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ১৯৬২ সালেই ছাত্রলীগের মধ্যে গঠিত হয়েছিল। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মধ্যেই সশস্ত্র যুদ্ধ করে পাকিস্তানিদের বিতাড়িত করে বাংলাদেশ স্বাধীন করার জন্য বঙ্গবন্ধুর পরামর্শে বাঙালি সৈন্যদের মধ্যেও নিউক্লিয়াস গঠিত হয়েছিল ১৯৬৪ সালে। এ সম্পর্কে বিস্তৃত বিবরণ পাওয়া যাবে পাকিস্তানিদের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট স্বঘোষিত ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খানের দায়ের করা ‘রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান’ মামলায় যা বিখ্যাত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা হিসেবে সর্বাধিক পরিচিত। স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াসের সঙ্গে জড়িত থাকার কারণেই বুঝতে পেরেছিলাম যে, সশস্ত্র যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়ার এটাই মাহেন্দ্রক্ষণ। জয়দেবপুরে (গাজীপুরে) সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ গাজীপুর স্টেডিয়ামের পশ্চিমসংলগ্ন বটতলায় এক সমাবেশ করে পাকিস্তানের পতাকা পুড়িয়ে দেয়া হয়। স্লোগান ওঠে ‘ইয়াহিয়ার মুখে লাথি মার- বাংলাদেশ স্বাধীন কর’, ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধর- বাংলাদেশ স্বাধীন কর’। পতাকা ধরেছিলেন হারুন ভূঁইয়া এবং অগ্নিসংযোগ করেছিলেন শহীদউল্যাহ বাচ্চু। আর স্লোগান, মাস্টার আ. ছাত্তার মিয়া পায়ের আঙুলের ওপর ভর দিয়ে স্লোগান দিতেন।
আমরা ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী (তৎকালীন রেসকোর্স) উদ্যানের মহাসমাবেশে যোগ দিলাম। সে সময় জয়দেবপুর (গাজীপুর) থেকে হাজার হাজার বীর জনতা ট্রেনে করে এবং শতাধিক ট্রাক ও বাসে করে মাথায় লাল ফিতা বেঁধে ওই জনসভায় যোগ দিয়েছিল। সে এক অপূর্ব দৃশ্য। আজকে ভাবতেও অবাক লাগে কীভাবে এ জনস্রোত এসে মিশে গিয়েছিল ৭ মার্চের মহাসমুদ্রে। ৭ মার্চে উজ্জীবিত হয়ে আমরা সম্ভবত ১১ মার্চ গাজীপুর সমরাস্ত্র কারখানা (অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি) আক্রমণ করি। গেটে বাধা পাওয়ার পর আমি হাজার হাজার মানুষের সামনে টেবিলে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা করেছি মাইকে। পাকিস্তানিরা যাতে বুঝতে পারে, সে জন্য ইংরেজিতে বলি, ‘I do hereby dismiss Brigadier Karimullah from the directorship of Pakistan Ordnance Factory and do hereby appoint Administrative officer Mr Abudul Qader (বাঙালি) as the director of the ordnance Factory’। এই গর্জনে সত্যিই কাজ হয়েছিল। পাকিস্তানি ব্রিগেডিয়ার বক্তৃতা চলাকালীন পেছনের গেট দিয়ে সালনা হয়ে পালিয়ে ঢাকায় চলে আসেন। পাকিস্তানি ব্রিগেডিয়ার আর পরবর্তীতে ১৫ এপ্রিলের পূর্বে গাজীপুরে যাননি। ওই সমরাস্ত্র কারখানা ২৭ মার্চ পর্যন্ত আমাদের দখলেই ছিল। সম্ভবত ১৩ মার্চ তৎকালীন জিওসি ইয়াকুব আলী জয়দেবপুর রাজবাড়ী মাঠে হেলিকপ্টারে অবতরণ করতে চেষ্টা করলে শত শত বীর জনতা হেলিকপ্টারের প্রতি ইট-পাটকেল ও জুতা ছুড়তে শুরু করলে হেলিকপ্টারটি না নামতে পেরে ফেরত চলে যায়।
সে দিন ১৭ মার্চ বুধবার, মহান নেতা বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে লাখো জনতার ঢল নেমেছিল ৩২ নম্বরের বাড়িতে। সবাই বঙ্গবন্ধুকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে এসেছিল। তৎকালীন আমাদের নির্বাচনী এলাকার এমএলএ সামসুল হক (পরবর্তীকালে বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার সদস্য), হাবিব উল্ল্যাহসহ আমি গিয়েছিলাম বঙ্গবন্ধুকে জয়দেবপুরে ২য় ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টকে নিরস্ত্র করার সংবাদ দিতে। সন্ধ্যায় আমরা পেছনে দাঁড়িয়ে আছি দেখতে পেয়ে কিছু বলতে চাই কি না বঙ্গবন্ধু জানতে চান। কুর্মিটোলা (ঢাকা) ক্যান্টনমেন্টে অস্ত্রের মজুত কমে গেছে অজুহাতে ২য় ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টে রক্ষিত অস্ত্র আনার পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সিদ্ধান্ত গ্রহণের সংবাদ জানাই। সামসুল হকের ইশারায় আমি তরুণ হিসেবে এ অবস্থায় আমাদের কী করণীয় জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু ব্যাঘ্রের ন্যায় গর্জে উঠে বললেন, ‘তুই একটা আহাম্মক, কী শিখেছিস যে আমাকে বলে দিতে হবে!’ একটু পায়চারি করে বললেন, ‘বাঙালি সৈন্যদের নিরস্ত্র করতে দেয়া যাবে না। ‘Resist at the cost of anything’। নেতার হুকুম পেয়ে গেলাম। ১৯ মার্চ শুক্রবার আকস্মিকভাবে পাকিস্তানি ব্রিগেডিয়ার জাহান জেবের নেতৃত্বে পাকিস্তানি রেজিমেন্ট জয়দেবপুরস্থ (গাজীপুর) ২য় ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টকে নিরস্ত্র করার জন্য পৌঁছে যায়। একজন জেসিও (নায়েব সুবেদার) জয়দেবপুর হাইস্কুলের মুসলিম হোস্টেলের পুকুরে (জকি স্মৃতির প্রাইমারি স্কুলের সামনে) গোসল করার সময় জানান যে, ঢাকা থেকে ব্রিগেডিয়ার জাহান জেব চলে এসেছেন। খবর পেয়ে দ্রুত আমাদের তখনকার আবাসস্থান মুসলিম হোস্টেলে ফিরে গিয়ে উপস্থিত হাবিব উল্ল্যা ও শহীদুল্ল্যাহ বাচ্চুকে এ সংবাদ জানাই। শহীদউল্ল্যাহ বাচ্চু তখনই রিকশায় চড়ে শিমুলতলীতে, মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি, ডিজেল প্লান্ট ও সমরাস্ত্র কারখানায় শ্রমিকদের যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে জয়দেবপুরে চলে আসার খবর দিলে ১ ঘণ্টার মধ্যে মাঠেই হাজার শ্রমিক-জনতা চারদিক থেকে লাঠিসোঁটা, দা, কাতরা, ছেন, দোনলাবন্দুকসহ জয়দেবপুর উপস্থিত হয়। সেদিন জয়দেবপুর হাটের দিন ছিল। জয়দেবপুর রেল গেটে মালগাড়ির বগি, অকেজো রেললাইন, স্লিপারসহ বড় বড় গাছের গুঁড়ি, কাঠ, বাঁশ, ইট ইত্যাদি যে-যেভাবে আনতে পেরেছিল তা দিয়ে এক বিশাল ব্যারিকেড দেয়। জয়দেবপুর থেকে চৌরাস্তা পর্যন্ত আরও ৫টি ব্যারিকেড দেয়া হয় যাতে পাকিস্তানি বাহিনী অস্ত্র নিয়ে ফেরত যেতে না পারে। ২য় ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড ছিলেন মেজর কে এম শফিউল্লাহ (পরবর্তীকালে সেনাপ্রধান)। আমরা যখন ব্যারিকেড দিচ্ছিলাম তখন টাঙ্গাইল থেকে রেশন নিয়ে একটি কনভয় জয়দেবপুর আসছিল। সে রেশনের গাড়িকে জনতা আটকে দেয়। সেই কনভয়ে থাকা ৫ জন সৈন্যের চায়নিজ রাইফেল তাদের কাছ থেকে কেড়ে নেয়া হয়।
এ দিকে রেল গেটের ব্যারিকেড সরানোর জন্য ২য় ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টকে ব্রিগেডিয়ার জাহান জেব আদেশ দেন। কৌশল হিসেবে বাঙালি সৈন্যদের সামনে দিয়ে পেছনে পাঞ্জাবি সৈন্যদের অবস্থান রেখে মেজর শফিউল্লাহকে জনতার ওপর গুলিবর্ষণের আদেশ দেয়া হয়। বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈন্যরা আমাদের জনতার ওপর গুলি না করে আকাশের দিকে গুলি ছুড়ে অগ্রসর হতে থাকলে আমরা বর্তমান গাজীপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ওপর অবস্থান নিয়ে বন্দুক ও চায়নিজ রাইফেল দিয়ে সেনাবাহিনীর ওপর গুলিবর্ষণ শুরু করি।
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গুলিতে জয়দেবপুরে শহীদ হন নেয়ামত ও মনুখলিফা, আহত হন চতরের সন্তোষ, ডা. ইউসুফসহ শত শত বীর জনতা। পাকিস্তানি বাহিনী কারফিউ জারি করে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ শুরু করলে আমাদের প্রতিরোধ ভেঙে পড়ে। আমরা পিছু হটলে দীর্ঘসময় চেষ্টা করে ব্যারিকেড পরিষ্কার করে ব্রিগেডিয়ার জাহান জেব চান্দনা চৌরাস্তায় এসে আবার প্রবল বাধার সম্মুখীন হন। নামকরা ফুটবল খেলোয়াড় হুরমত এক পাঞ্জাবি সেনাসদস্যকে পেছন থেকে আক্রমণ করে। আমরা সৈন্যের রাইফেল কেড়ে নিই। কিন্তু পেছনে আর এক পাঞ্জাবি সেনা হুরমতের মাথায় গুলি করলে হুরমত সেখানেই শাহাদতবরণ করেন। বর্তমানে সেই স্থানে চৌরাস্তার মোড়ে ‘জাগ্রত চৌরঙ্গী’ নামে ভাস্কর্য স্থাপিত হয়েছে।
পরদিন বঙ্গবন্ধু আলোচনা চলাকালে পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণে ১৯ মার্চ নিহতদের কথা উল্লেখ করলে জেনারেল ইয়াহিয়া খান বলেন যে, ‘জয়দেবপুরে জনতা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ওপর আধুনিক অস্ত্র ও চায়নিজ রাইফেল দিয়ে আক্রমণ করেছে এবং এতে পাকিস্তানি বাহিনীর অনেক সেনা আহত হয়েছে।’
১৯ মার্চের পর সারা বাংলাদেশে স্লোগান ওঠে, ‘জয়দেবপুরের পথ ধর-বাংলাদেশ স্বাধীন কর’, ‘জয়দেবপুরের পথ ধর-সশস্ত্র যুদ্ধ শুরু কর’।
১৯৭২ সালের ১৯ মার্চ প্রথম জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গাজীপুরবাসীর উদ্দেশে এক পত্রে ১৯ মার্চের সশস্ত্র প্রতিরোধের সময় শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং জয়দেবপুরবাসীকে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর মাহেন্দ্রক্ষণে বঙ্গবন্ধুকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ আন্দোলনের সুবর্ণজয়ন্তীতে ১৯ মার্চের শহীদসহ অংশগ্রহণকারী সবার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। এ সশস্ত্র প্রতিরোধযুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়ার সুযোগ পাওয়ায় নিজেকে গৌরবান্বিত মনে করি।
১৯ মার্চের সশস্ত্র যুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক মাইলফলক। জয়দেবপুরের গৌরবগাথা উনিশে মার্চ প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ দিবস হিসেবে জাতীয়ভাবে উদযাপন করার দাবিতে গাজীপুরের সর্বস্তরের জনতা আবেদন জানিয়ে আসছে। উনিশে মার্চ প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ দিবস হিসেবে দেশব্যাপী জাতীয়ভাবে পালিত হলে মুক্তিযুদ্ধের সূচনার ইতিহাস যথাযথভাবে সংরক্ষিত হবে বলে আমি মনে করি।
লেখক: বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী
খুলনায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সহযোগী সংগঠন জাতীয় শ্রমিক শক্তির বিভাগীয় আহ্বায়ক মোতালেব শিকদারকে গুলি করার রহস্য উন্মোচন করেছে র্যাব। র্যাব-৬ জানিয়েছে, এই হামলার নেপথ্যে রাজনৈতিক কোনো কারণ নয়, বরং মাদক ব্যবসা ও লুণ্ঠিত মাদকের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দল কাজ করেছে। আজ শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) বিকেলে খুলনার র্যাব-৬ সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান উপ-অধিনায়ক মেজর মো. নাজমুল ইসলাম। এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে এ পর্যন্ত প্রধান হামলাকারী শীর্ষ সন্ত্রাসী শামীম শিকদার ওরফে ঢাকাইয়া শামীমসহ মোট চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত ২২ ডিসেম্বর সোনাডাঙ্গা এলাকার ‘মুক্তা হাউস’ নামের একটি ফ্ল্যাটে মোতালেব শিকদারকে মাথায় লক্ষ্য করে গুলি করা হয়। গ্রেফতারকৃত প্রধান আসামি শামীম প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে যে, ওই ফ্ল্যাটটি জাতীয় যুবশক্তির নেত্রী তানিমা তন্বীর বাসা হিসেবে পরিচিত হলেও সেখান থেকেই মাদকের কারবার ও অসামাজিক কার্যক্রম পরিচালিত হতো। ঘটনার দিন সকালে মোতালেবের কাছে থাকা মাদক বা মাদকের টাকা নিয়ে বিরোধের জেরে ক্ষিপ্ত হয়ে শামীম তাঁর কাছে থাকা অস্ত্র দিয়ে মোতালেবের মাথায় গুলি করে। তবে গুলিটি সরাসরি মগজে বিদ্ধ না হওয়ায় অলৌকিকভাবে মোতালেব প্রাণে বেঁচে যান।
র্যাব আরও জানায়, গ্রেফতারকৃত শামীম শিকদার ওই এলাকার একজন চিহ্নিত শীর্ষ সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে এর আগেও মাদক, দস্যুতা ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে একাধিক মামলা রয়েছে। শামীমের পাশাপাশি এই ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে মো. আরিফ, মাহাদিন এবং ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়া তানিমা তন্বীকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ এবং তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় র্যাব নিশ্চিত হয়েছে যে, ঘটনার সময় ওই ফ্ল্যাটে আরও কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন এবং তারা নিয়মিত সেখানে মাদক সেবন ও কেনাবেচার সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
এদিকে, মোতালেব শিকদারকে হত্যা প্রচেষ্টার এই মামলাটি বর্তমানে ডিবি পুলিশ তদন্ত করছে। ডিবির ওসি তৈয়মুর ইসলাম জানিয়েছেন, মামলায় ব্যবহৃত মূল অস্ত্রটি উদ্ধারের জন্য জোর তৎপরতা চালানো হচ্ছে এবং গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে বাকি অভিযুক্তদেরও দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে। উল্লেখ্য, প্রথমে এই ঘটনাকে রাজনৈতিক হামলা হিসেবে চালানোর চেষ্টা করা হলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিবিড় তদন্তে মাদক সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠল। মোতালেবের স্ত্রী ফাহিমা আক্তার বাদী হয়ে গত ২৩ ডিসেম্বর সোনাডাঙ্গা থানায় এই মামলাটি দায়ের করেছিলেন। বর্তমানে পুরো এলাকায় অপরাধীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
মোবাইল সিম ব্যবহারের ক্ষেত্রে আরও কঠোর অবস্থান নিতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। মোবাইল সিমের অপব্যবহার ও বিভিন্ন অনিয়ম রোধে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। নতুন এই নিয়ম অনুযায়ী, আগামী ১ জানুয়ারি থেকে একজন গ্রাহক তাঁর জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ব্যবহার করে সর্বোচ্চ ৫টি সিম সক্রিয় রাখতে পারবেন। বর্তমানে যাদের নামে ৫টির বেশি অর্থাৎ ৬ থেকে ১০টি সিম নিবন্ধিত রয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রেও পর্যায়ক্রমে সংখ্যা কমিয়ে ৫-এ নামিয়ে আনা হবে বলে কমিশন নিশ্চিত করেছে।
বিটিআরসি জানিয়েছে, জননিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং সিমের মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধ কমিয়ে আনতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যদিও দেশের মোবাইল ফোন অপারেটররা এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে পূর্বের মতোই কিছুটা আপত্তি জানিয়ে আসছিল, তবে বিটিআরসি তাঁর অবস্থানে অনড় রয়েছে। বর্তমানে বিশ্বে সিম ব্যবহারের তালিকায় বাংলাদেশ নবম স্থানে অবস্থান করছে, যা অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জাপান ও যুক্তরাজ্যের মতো উন্নত দেশগুলোর তুলনায় অনেক বেশি।
কমিশনের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত অক্টোবর পর্যন্ত দেশে মোট মোবাইল সিম ব্যবহারকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৮ কোটি ৭৯ লাখ ৭০ হাজারে। এর মধ্যে গ্রামীণফোনের গ্রাহক সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, প্রায় ৮ কোটি ৫৯ লাখ। এরপর ক্রমান্বয়ে রয়েছে রবি (৫ কোটি ৭৫ লাখ), বাংলালিংক (৩ কোটি ৭৯ লাখ) এবং সরকারি মালিকানাধীন টেলিটক (৬৬ লাখ ৭০ হাজার)। দেশে মোট নিবন্ধিত সিমের সংখ্যা ২৬ কোটি ৬৩ লাখ হলেও বর্তমানে সক্রিয় রয়েছে প্রায় ১৯ কোটির মতো।
উল্লেখ্য যে, এর আগে গত আগস্ট মাসে এক ব্যক্তির নামে সর্বোচ্চ ১০টি সিম রাখার অনুমতি দিয়ে ৩০ অক্টোবরের মধ্যে অতিরিক্ত সিম বাতিলের নির্দেশনা দিয়েছিল বিটিআরসি। সে সময় প্রায় ৬৭ লাখ গ্রাহকের নামে ১০টির বেশি সিম নিবন্ধিত ছিল। গত তিন মাসে প্রায় ১৫ লাখ সিম গ্রাহকরা স্বেচ্ছায় বাতিল বা মালিকানা পরিবর্তন করলেও এখনো প্রায় ৫০ থেকে ৫৩ লাখ অতিরিক্ত সিম নিষ্ক্রিয় করার অপেক্ষায় রয়েছে। নির্ধারিত সময়সীমা পার হওয়ার পর এখন সংশ্লিষ্ট মোবাইল অপারেটরদের মাধ্যমে এই অতিরিক্ত সিমগুলো ধাপে ধাপে স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়া হবে। মূলত একটি সুশৃঙ্খল টেলিকম সেবা নিশ্চিত করতেই নতুন বছরের শুরু থেকে এই কঠোর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চালু হচ্ছে।
শরীফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে চলমান আন্দোলনে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া না পাওয়ায় এবার আরও কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ। আজ শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে সংগঠনটির সদস্য সচিব আবদুল্লাহ আল জাবের জানিয়েছেন, দাবি আদায় না হলে যেকোনো মুহূর্তে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ‘যমুনা’ এবং ‘জাতীয় সংসদ ভবন’ ঘেরাও করা হবে। হাদির খুনিদের গ্রেপ্তার এবং এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্য পরিকল্পনাকারীদের দ্রুত চিহ্নিত করার দাবিতে ইনকিলাব মঞ্চের নেতাকর্মীরা দ্বিতীয় দিনের মতো শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান নিয়ে এই প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছেন।
বিক্ষোভ সমাবেশে আবদুল্লাহ আল জাবের অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের উদ্দেশ্যে চরম হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, যারা ভাবছেন ক্ষমতায় মাত্র এক মাস আছেন এবং এরপর বিদেশে পাড়ি জমাবেন, তাঁদের কাউকেই ‘সেফ এক্সিট’ বা নিরাপদ প্রস্থানের সুযোগ দেওয়া হবে না। তিনি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলেন, রক্তের সঙ্গে বেইমানি করে কেউ বিদেশে পালাতে পারবেন না; বরং এই বাংলার মাটিতেই জনতা তাঁদের বিচার করবে। সরকারের নীরবতায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি জানান, গত দুদিন ধরে রাজপথে অবস্থান করলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ বা আশ্বাস মেলেনি। ফলে আন্দোলনকে আরও বেগবান করতে সংসদ ভবন ও যমুনার মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ঘেরাওয়ের পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।
ন্যায়বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বেন না বলে ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি। উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর দুর্বৃত্তদের গুলিতে আহত হওয়ার পর গত ১৮ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদি। এই হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে। শাহবাগ এলাকায় আন্দোলনকারীদের অবস্থানের কারণে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন রাখা হয়েছে। তবে ইনকিলাব মঞ্চ স্পষ্ট জানিয়েছে, খুনিদের আড়াল করার কোনো চেষ্টা সফল হতে দেওয়া হবে না এবং রাজপথের এই লড়াই তারা শেষ পর্যন্ত চালিয়ে যাবে।
বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের দীর্ঘদিনের নিষ্ঠা ও আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এবং তাঁদের ও তাঁদের পরিবারবর্গের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে বিশেষ ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পেইন শুরু হয়েছে। বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদের নির্দেশনায় আজ শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) বগুড়া জেলার গাবতলী সরকারি কলেজ প্রাঙ্গণে এই মহতী কর্মসূচির প্রথম পর্যায়ের উদ্বোধন করা হয়। বগুড়া জেলা কমান্ড্যান্ট মোঃ সাদ্দাম হোসেন এই ক্যাম্পেইনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এই বিশেষ স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমের আওতায় আগামী ১৩ জানুয়ারি ২০২৬ পর্যন্ত বগুড়া ছাড়াও পর্যায়ক্রমে জামালপুর, ভোলা ও লালমনিরহাট জেলায় তিন দিনব্যাপী এই মানবিক কর্মসূচি পরিচালিত হবে।
এই মহতী উদ্যোগের আওতায় আনসার ও ভিডিপি সদস্য এবং তাঁদের পরিবারের জন্য আধুনিক চিকিৎসার এক বিশাল সুযোগ তৈরি করা হয়েছে। বিশেষ করে চক্ষু ও দন্ত চিকিৎসার ওপর এই ক্যাম্পেইনে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। চক্ষু বিশেষজ্ঞরা উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে চোখের যাবতীয় পরীক্ষা সম্পন্ন করছেন এবং যাঁদের প্রয়োজন তাঁদের জন্য সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ছানি অপারেশনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। পাশাপাশি অভিজ্ঞ দন্ত চিকিৎসকরা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও পরামর্শ প্রদান করছেন। এছাড়াও সাধারণ রোগে আক্রান্তদের জন্য স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও পরামর্শের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ওষুধ বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে। বাহিনীর এই দায়িত্বশীল ও মানবিক উদ্যোগ সরাসরি তৃণমূল পর্যায়ের সদস্যদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে বড় ভূমিকা রাখছে।
আনসার–ভিডিপি সদর দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে যে, দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং জাতীয় উন্নয়নে বাহিনীর সদস্যরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁদের এবং তাঁদের পরিবারের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা বাহিনীর জন্য কেবল একটি কল্যাণমূলক কাজই নয়, বরং এটি একটি নৈতিক ও সামাজিক দায়বদ্ধতা। এ ধরনের কার্যক্রমের ফলে বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি তাঁদের মনোবল ও কাজের উদ্যম আরও বাড়বে বলে কর্তৃপক্ষ আশাবাদী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পাশাপাশি বাহিনীর বিভিন্ন পদমর্যাদার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সরাসরি উন্নত স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করতে পেরে আনসার ও ভিডিপির সদস্য এবং তাঁদের স্বজনরা বাহিনীর এই সময়োপযোগী পদক্ষেপের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা ও সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। মূলত বাহিনীর অভ্যন্তরীণ সংহতি এবং ইতিবাচক ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করাই এই মেডিকেল ক্যাম্পেইনের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন স্পষ্ট করে জানিয়েছেন যে, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ এবং এটি কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দলের পক্ষে কাজ করছে না। আজ শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) দুপুরে ভোলার সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত ‘ভোটের গাড়ি’ বা ক্যারাভান কর্মসূচির উদ্বোধনকালে তিনি এই গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেন। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সাধারণ ভোটারদের সচেতন ও উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যেই এই বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে তৌহিদ হোসেন বলেন, আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি দেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এবং সরকার আশা করছে এই নির্বাচন অত্যন্ত উৎসবমুখর ও আনন্দঘন পরিবেশের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হবে। তিনি নির্বাচনের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, বিগত ১৫ বছর ধরে দেশে সত্যিকার অর্থে কোনো অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। ২০০৮ সালের পর এই প্রথম দেশবাসী একটি প্রকৃত নির্বাচনের স্বাদ পেতে যাচ্ছে। বিশেষ করে ৩০ বছরের কম বয়সী তরুণরা, যারা আজ পর্যন্ত কোনো জাতীয় নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাননি, তাঁদের জন্য এবারের নির্বাচন অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও উল্লেখ করেন যে, প্রতিটি নাগরিক যাতে নির্ভয়ে ও নির্বিঘ্নে তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করাই বর্তমান সরকারের প্রধান লক্ষ্য। দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে চলা রাজনৈতিক অচলাবস্থা কাটিয়ে একটি সুন্দর গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে প্রশাসন নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ভোলার জেলা প্রশাসক ডা. শামীম রহমান এবং পুলিশ সুপার মো. শহিদুল্লাহ কাওছারসহ স্থানীয় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ‘ভোটের গাড়ি’ ক্যারাভানটি ভোলার বিভিন্ন উপজেলা প্রদক্ষিণ করে ভোটারদের সচেতন করার কাজ চালিয়ে যাবে বলে আয়োজক সূত্রে জানা গেছে।
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদি হত্যার বিচারের দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে পুনরায় অবস্থান নিয়েছেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। আজ শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তারা ফের প্রধান সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। এর আগে সকালে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কবর জিয়ারত কর্মসূচি ও নিরাপত্তার স্বার্থে আন্দোলনকারীরা সাময়িকভাবে শাহবাগ মোড় ছেড়ে দিয়ে পার্শ্ববর্তী আজিজ সুপার মার্কেটের সামনে অবস্থান নিয়েছিলেন। তবে তারেক রহমানের গাড়িবহর এলাকা ত্যাগ করার পরপরই নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে পুনরায় শাহবাগে জড়ো হন এবং যান চলাচল বন্ধ করে দেন।
ইনকিলাব মঞ্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, হাদি হত্যার বিচার নিশ্চিতের দাবিতে তারা ‘অনির্দিষ্টকালের’ জন্য এই কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। গত শুক্রবার জুমার নামাজের পর থেকেই তারা রাজপথে অবস্থান করছেন এবং কনকনে শীত উপেক্ষা করে গতরাতও তারা শাহবাগ মোড়েই কাটিয়েছেন। আন্দোলনের মুখে শাহবাগ ও এর আশপাশের এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে প্রশাসন সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
সংগঠনটির সদস্য সচিব আবদুল্লাহ আল জাবের সংবাদমাধ্যমকে জানান, শরীফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের নেপথ্য হোতাদের গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক বিচার না হওয়া পর্যন্ত তাদের এই লড়াই চলবে। বিচার নিশ্চিত না করে তারা কোনোভাবেই রাজপথ ছাড়বেন না এবং ঘরে ফিরবেন না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর পল্টনে সন্ত্রাসীদের গুলিতে গুরুতর আহত হয়েছিলেন হাদি। পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হলেও গত বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) সেখানে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে এবং ইনকিলাব মঞ্চ ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে শাহবাগ এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে এবং বিকল্প পথে যানবাহন চলাচলের চেষ্টা করছে ট্রাফিক পুলিশ।
জাতির বীর সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে যান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) রাত ১০টা ৪ মিনিটে তিনি জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে প্রবেশ করেন।
এর আগে নিয়ম অনুযায়ী বিকেলে তারেক রহমানের পক্ষে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিএনপির নেতারা। তারেক রহমানের আগমনকে কেন্দ্র করে সাভার-আশুলিয়াসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিএনপির নেতাকর্মীরা জাতীয় স্মৃতিসৌধ এলাকায় জড়ো হন। সারাদিন তারা সেখানে উপস্থিত থেকে তারেক রহমানের জন্য অপেক্ষা করেন।
যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়াতে এবং তারেক রহমানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্মৃতিসৌধ এলাকায় পুলিশ, বিজিবি, আনসারসহ সাদা পোশাকের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হয়।
জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-পরিবার কল্যাণবিষয়ক সম্পাদক ডা. দেওয়ান মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বাবুসহ স্থায়ী কমিটির অন্যান্য সদস্য এবং দলের কেন্দ্রীয় নেতারা।
গত বৃহস্পতিবার দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবন শেষে দেশে ফেরেন তারেক রহমান। ফেরার দিন রাজধানীর পূর্বাচলের ৩০০ ফিট এলাকায় বিএনপির পক্ষ থেকে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশ নেন তিনি। পরে অসুস্থ মা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ার হাসপাতালে যান এবং সেখান থেকে গুলশানের বাসভবনে ফেরেন।
শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটের দিকে তারেক রহমান তার বাবা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর তিনি সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধের উদ্দেশে রওনা হন।
দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবন শেষে স্বদেশে ফেরার পরদিন নিজের পিতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আজ শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটের দিকে তিনি রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে অবস্থিত সমাধি প্রাঙ্গণে পৌঁছালে সেখানে এক অভূতপূর্ব আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
এর আগে ২০০৬ সালের ১লা সেপ্টেম্বরের পর অর্থাৎ দীর্ঘ ১৯ বছরেরও বেশি সময় পর বাবার কবরের পাশে দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা জানালেন তার জ্যেষ্ঠ পুত্র তারেক রহমান। আনুষ্ঠানিক দোয়া ও মোনাজাত শেষ হওয়ার পর তিনি পাশে থাকা নেতাকর্মীদের কিছুটা সরে যাওয়ার অনুরোধ করেন এবং কিছুক্ষণ একান্তে বাবার কবরের পাশে দাঁড়িয়ে থাকেন।
মাতৃভূমিতে ফিরে বাবার সমাধির সামনে দাঁড়ানোর এই বিশেষ মুহূর্তে নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি তারেক রহমান। দীর্ঘক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকার সময় তাকে অঝোরে কাঁদতে এবং বারবার অশ্রুসিক্ত চোখ মুছতে দেখা যায়। তার এই ব্যক্তিগত শোক ও আবেগ দেখে উপস্থিত হাজারো নেতাকর্মী এবং সাধারণ মানুষও আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। বছরের পর বছর দেশের বাইরে থাকার পর প্রিয় জন্মভূমিতে ফিরে পিতার স্মৃতির প্রতি এমন শ্রদ্ধা নিবেদন উপস্থিত সবার মাঝে এক শোকাতুর পরিবেশের সৃষ্টি করে।
এর আগে দুপুর ২টা ৫০ মিনিটে গুলশানের বাসভবন থেকে একটি বিশেষ বাসে চড়ে তিনি সমাধিস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা হন। বিজয় সরণি মোড়ে নেতাকর্মীদের বিশাল ভিড়ে তার গাড়ি বহরটি সাময়িকভাবে আটকে পড়লে সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে বহরটি এগিয়ে দেন। জিয়ারত শেষে বিকেল ৫টা ৪ মিনিটে তিনি পুনরায় বাসে চড়ে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধের উদ্দেশ্যে রওনা হন, যেখানে তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি জাতীয় শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। উল্লেখ্য, গত ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফেরার পর থেকেই তাকে ঘিরে রাজধানী ঢাকা এক অভূতপূর্ব জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে।
সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে স্বাগত জানাতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি গণপূর্ত অধিদফতরের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন উদ্যোগ।
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভারের আমিনবাজার থেকে নবীনগরের স্মৃতিসৌধ এলাকা পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যানার ও পোস্টারে ছেয়ে গেছে পুরো এলাকা।
তারেক রহমানের আগমন উপলক্ষ্যে জাতীয় স্মৃতিসৌধ এলাকাকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে। কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলার পাশাপাশি স্মৃতিসৌধের মূল ফটক বন্ধ করে জনসাধারণের প্রবেশে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আলোকুর রহমান বলেন, তারেক রহমানকে স্বাগত জানাতে ছাত্রদল প্রস্তুত। আমরা এখন নেতার আগমনের অপেক্ষায় রয়েছি।
সাভার পৌর বিএনপির সভাপতি খন্দকার শাহ মাইনুল হোসেন বিল্টু জানান, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে স্বাগত জানাতে নেতা-কর্মীরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ব্যাপক জনসমাগমের প্রস্তুতি নিয়েছেন।
জাতীয় স্মৃতিসৌধের ইনচার্জ আনোয়ার হোসেন আনু বলেন, তারেক রহমানকে স্বাগত জানাতে সকাল থেকেই পুরো স্মৃতিসৌধ এলাকা ঝেড়ে-মুছে পরিষ্কার করা হচ্ছে।
ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান জানান, তারেক রহমানের আগমন উপলক্ষ্যে ঢাকা জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহস্রাধিক সদস্যের সমন্বয়ে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। পুরো এলাকা নিরাপত্তার আওতায় রাখা হয়েছে।
এদিকে সকাল থেকেই শীত উপেক্ষা করে সাভার, আশুলিয়া ও ঢাকার ধামরাই থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীদের স্মৃতিসৌধ এলাকায় জড়ো হতে দেখা গেছে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছেন।
দীর্ঘ ১৭ বছরের প্রবাস জীবন শেষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফিরে রাজধানীর গুলশান-২ এর গুলশান নর্থ অ্যাভিনিউর ১৯৬ নম্বর বাড়িতে যান। ফলে বাড়িটির আশেপাশের সড়কসহ পুরো এলাকা নিরাপত্তা চাদরে ঢাকা। চারপাশে বাড়তি নিরাপত্তা, সিসিটিভি ক্যামেরা ও অস্থায়ী ছাউনি জানান দিচ্ছে বাড়িটির গুরুত্ব।
বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) গুলশান নর্থ অ্যাভিনিউ এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গত বুধবার রাত থেকেই বাড়িটির সামনের সড়কে সাধারণ মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল জোরদার করা হয়েছে এবং একাধিক চেকপোস্ট বসানো হয়। নিরাপত্তায় রয়েছে পুলিশ, বিজিবি, সিএসএফ (চেয়ারপারসন সিকিউরিটিসহ) এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। পুরো এলাকা কর্ডন করে রাখা হয়েছে। নির্দিষ্ট পরিচয় ছাড়া কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয় না বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, সরকারি নিরাপত্তার পাশাপাশি বিএনপির নিজস্ব ব্যবস্থাপনাতেও আলাদা নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। শুধু বাসভবন নয়, গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়েও তারেক রহমানের জন্য আলাদা কক্ষ প্রস্তুত করা হয়েছে। এ ছাড়া গুলশানের ৯০ নম্বর সড়কের ১০/সি নম্বর বাড়িতে নতুন চারতলা রাজনৈতিক কার্যালয়ে কার্যক্রম শুরু করেছে বিএনপি।
এখান থেকেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
নতুন কার্যালয়ের দোতলায় রয়েছে আধুনিক ব্রিফিং কক্ষ। অন্যান্য তলায় গড়ে তোলা হয়েছে গবেষণা সেল ও বিভাগভিত্তিক দপ্তর, যেখানে নির্বাচন, নীতি ও রাষ্ট্রীয় সংস্কার বিষয়ে প্রস্তুতি চলছে। একইসঙ্গে আশেপাশের গলিতে টাঙানো হয়েছে তারেক রহমানের ছবি সংবলিত ব্যানার ও ফেস্টুন।
দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবন কাটানোর পর বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) দেশের মাটিতে পা রাখেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দেশে এসে বিমানবন্দর থেকে তিনশ ফুট এলাকায় সংবর্ধনা মঞ্চে বক্তব্য দেন তিনি।
এরপর তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে গিয়ে তার মা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দেখতে যান। সেখান থেকে গুলশানের ১৯৬ নম্বর বাড়িতে যান। গুলশানের এই বাড়িটি জিয়া পরিবারের রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান শহীদ হওয়ার পর তৎকালীন সরকার বাড়িটি খালেদা জিয়াকে বরাদ্দ দেয়। বছরের পর বছর ধরে এখানে অনুষ্ঠিত হয় গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বৈঠক ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ।
কয়েক মাস আগে আনুষ্ঠানিকভাবে বাড়িটির মালিকানা দলিল বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নামে হস্তান্তর করা হয়। পাশেই রয়েছে ‘ফিরোজা’, খালেদা জিয়ার দীর্ঘদিনের বাসভবন। বর্তমানে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকলেও পাশের বাড়িটি প্রস্তুত হয় আরেক ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তনের জন্য।
এদিকে তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন ঘিরে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উচ্ছ্বাস দেখা যায়। দলীয় নেতাদের মতে, এটি শুধু একজন রাজনৈতিক নেতার দেশে ফেরা নয়, বরং বাংলাদেশে বিএনপির আরেক রাজনৈতিক অধ্যায়ের শুরু।
মা’ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে দেখতে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে গিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৫টা ৫৭ মিনিটের দিকে তিনি হাসপাতাল প্রাঙ্গণে পৌঁছান এবং ভেতরে প্রবেশ করেন।
এর আগে, এদিন বিকেল ৩টা ৫০ মিনিটের দিকে রাজধানীর পূর্বাচলে আয়োজিত এক গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন তারেক রহমান। সেখানে উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য প্রদান করেন। বক্তব্যে তিনি দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন।
তারেক রহমান বলেন, "যেকোনো মূল্যে দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করতে হবে। আমরা শান্তি চাই। সবাইকে মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে এবং কারও উস্কানিতে পা দেওয়া যাবে না।"
দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে নিজের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, "আমি আপনাদের সামনে বলতে চাই, আমার একটি পরিকল্পনা (আই হ্যাভ এ প্ল্যান)। আমি সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চাই।"
পূর্বাচলের সমাবেশ শেষ করেই তিনি সরাসরি এভারকেয়ার হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা হন এবং সেখানে চিকিৎসাধীন মা বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন।
খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ‘বড়দিন’ উপলক্ষে দেশের বিশিষ্ট নাগরিক এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) বঙ্গভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এই শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। বঙ্গভবনের প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। এ সময় তিনি বাংলাদেশের খ্রিস্টান সম্প্রদায়সহ বিশ্বের সকল মানুষকে বড়দিনের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও উষ্ণ অভিনন্দন জানান। যিশু খ্রিস্টের মহিমান্বিত জীবনের আদর্শ তুলে ধরে তিনি সমাজের সকল স্তরে শান্তি ও মানবতা প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
শুভেচ্ছা বিনিময়কালে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ ঐতিহ্যগতভাবেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। তিনি জাতি, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে এ দেশের দীর্ঘদিনের চমৎকার সম্প্রীতি চিরকাল অটুট এবং অক্ষুণ্ন রাখার জন্য সকলের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান। তিনি বিশ্বাস করেন, সকল ধর্মের মানুষের এই সম্মিলিত উৎসব ও ভ্রাতৃত্ববোধ বাংলাদেশকে একটি সুখী ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতির পরিবারের সদস্যবৃন্দ এবং বঙ্গভবনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। উৎসবমুখর পরিবেশে আয়োজিত এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আসা অতিথিরাও বাংলাদেশের উন্নয়ন ও ধর্মীয় সম্প্রীতির প্রশংসা করেন। মূলত বড়দিনের আনন্দ সবার মাঝে ভাগ করে নিতেই প্রতি বছরের মতো এবারও এই বিশেষ রাজকীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
রাজধানীর গুলশানের এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে প্রায় আড়াই কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া এবং জুলাই আন্দোলনের নাম ভাঙিয়ে ‘মামলা বাণিজ্য’ ও ব্ল্যাকমেইলিংয়ের অভিযোগে আলোচিত তাহরিমা জান্নাত সুরভীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) দিবাগত গভীর রাতে গাজীপুরের টঙ্গীর টেকপাড়া এলাকার নিজ বাসভবন থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। সুরভী গাজীপুরের ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘জুলাইযোদ্ধা’ হিসেবে ভাইরাল পরিচিতি পেয়েছিলেন।
টঙ্গী পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসান জানিয়েছেন, একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের নেতৃত্বে ছিলেন এই সুরভী। সম্প্রতি গুলশানের এক ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন যে, জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের সময় গুলশান ও বাড্ডা এলাকায় সংঘটিত বিভিন্ন হত্যা মামলায় তাঁর নাম জড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে সুরভী ও তাঁর সহযোগীরা ধাপে ধাপে প্রায় আড়াই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। মামলার আসামি বানানো, পুলিশি হয়রানি ও গ্রেফতারের ভয় দেখিয়ে এবং পরবর্তীতে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ‘মীমাংসা’ করে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ দাবি করা হয়েছিল।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ আরও জানতে পেরেছে যে, এই চক্রটি কেবল ওই ব্যবসায়ীই নয়, বরং বিভিন্ন প্রভাবশালী ও বিত্তবান ব্যক্তিদের টার্গেট করে ব্ল্যাকমেইলিং ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে মোট প্রায় ৫০ কোটি টাকা আদায় করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সুরভী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের ভাইরাল পরিচিতি ব্যবহার করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সাথে সখ্য গড়ে তুলতেন এবং পরবর্তীতে সেটিকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে ভয়ভীতি প্রদর্শন করতেন। জুলাই আন্দোলনের শহীদদের আবেগ ও স্মৃতিকে পুঁজি করে এমন নজিরবিহীন অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশ বর্তমানে এই চক্রের সাথে জড়িত অন্যান্য সদস্যদের শনাক্ত ও গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। মূলত আন্দোলনের চেতনাকে কলঙ্কিত করে ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধারের অপরাধেই তাঁর বিরুদ্ধে এই আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।