আজ ঐতিহাসিক ১৯ মার্চ। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে গাজীপুরের (সেই সময়ের জয়দেবপুর) বীর জনতা গর্জে উঠেছিল এবং সম্মুখযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিল। মনে পড়ে মার্চের সেই উত্তাল দিনগুলোতে বাঙালি জাতির এক অবিস্মরণীয় গণ-অভ্যুত্থানের কথা। ১৯৭১ সালের পহেলা মার্চ দুপুরে হঠাৎ এক বেতার ভাষণে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান ৩ মার্চ অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেন। এ কথা শোনামাত্র সারা দেশের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রতিবাদমুখর হয়ে এ ঘোষণার বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে আসেন। দেশের সর্বত্রই স্লোগান ওঠে ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধর- বাংলাদেশ স্বাধীন কর’, ‘পিন্ডি না ঢাকা, ঢাকা-ঢাকা’, ‘পাঞ্জাব না বাংলা, বাংলা-বাংলা’, ‘তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা-মেঘনা-যমুনা’, ‘তুমি কে আমি কে, বাঙালি-বাঙালি’।
বঙ্গবন্ধু ঢাকায় পূর্বাণী হোটেলে এক সভায় ইয়াহিয়ার ঘোষণার তীব্র প্রতিবাদ করেন এবং ঢাকায় ২ মার্চ এবং সারা বাংলাদেশে (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) ৩ মার্চ হরতাল আহ্বান করেন এবং ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা আহ্বান করেন।
জয়দেবপুরে (আজকের গাজীপুর) আমার পরামর্শে ২ মার্চ রাতে তৎকালীন থানা পশুপালন কর্মকর্তা আহম্মেদ ফজলুর রহমানের সরকারি বাসায় তৎকালীন মহকুমা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হাবিব উল্ল্যাহ এক সর্বদলীয় সভা আহ্বান করেন। সভায় আমাকে (আ ক ম মোজাম্মেল হক) আহ্বায়ক করে এবং মেশিন টুলস্ ফ্যাক্টরির শ্রমিক নেতা নজরুল ইসলাম খানকে কোষাধ্যক্ষ করে ১১ সদস্যের এক সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়। সদস্য হন আয়েশ উদ্দিন, মো. নুরুল ইসলাম (ভাওয়াল রত্ন), মো. আ. ছাত্তার মিয়া (চৌরাস্তা), থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মরহুম হজরত আলী মাস্টার (চৌরাস্তা), মো. শহীদ উল্ল্যাহ বাচ্চু (মরহুম), হারুন-অর-রশিদ ভূঁইয়া (মরহুম), শহিদুল ইসলাম পাঠান জিন্নাহ (মরহুম), শেখ আবুল হোসেন (শ্রমিক লীগ), থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. সাঈদ বকস্ ভূঁইয়া (মরহুম)। কমিটির হাইকমান্ড (উপদেষ্টা) হন মো. হাবিব উল্ল্যাহ (মরহুম), শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা এম এ মুত্তালিব এবং ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) নেতা বাবু মনীন্দ্রনাথ গোস্বামী (প্রয়াত)।
৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঘোষণার আগেই আমরা এ কমিটি গঠন করেছিলাম। পেছনের ইতিহাস এই যে, আমি ১৯৬৬ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে ‘স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াস’-এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হই। নিউক্লিয়াসের উদ্দেশ্য ছিল সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশকে স্বাধীন করা, যা মূলত বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ১৯৬২ সালেই ছাত্রলীগের মধ্যে গঠিত হয়েছিল। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মধ্যেই সশস্ত্র যুদ্ধ করে পাকিস্তানিদের বিতাড়িত করে বাংলাদেশ স্বাধীন করার জন্য বঙ্গবন্ধুর পরামর্শে বাঙালি সৈন্যদের মধ্যেও নিউক্লিয়াস গঠিত হয়েছিল ১৯৬৪ সালে। এ সম্পর্কে বিস্তৃত বিবরণ পাওয়া যাবে পাকিস্তানিদের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট স্বঘোষিত ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খানের দায়ের করা ‘রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান’ মামলায় যা বিখ্যাত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা হিসেবে সর্বাধিক পরিচিত। স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াসের সঙ্গে জড়িত থাকার কারণেই বুঝতে পেরেছিলাম যে, সশস্ত্র যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়ার এটাই মাহেন্দ্রক্ষণ। জয়দেবপুরে (গাজীপুরে) সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ গাজীপুর স্টেডিয়ামের পশ্চিমসংলগ্ন বটতলায় এক সমাবেশ করে পাকিস্তানের পতাকা পুড়িয়ে দেয়া হয়। স্লোগান ওঠে ‘ইয়াহিয়ার মুখে লাথি মার- বাংলাদেশ স্বাধীন কর’, ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধর- বাংলাদেশ স্বাধীন কর’। পতাকা ধরেছিলেন হারুন ভূঁইয়া এবং অগ্নিসংযোগ করেছিলেন শহীদউল্যাহ বাচ্চু। আর স্লোগান, মাস্টার আ. ছাত্তার মিয়া পায়ের আঙুলের ওপর ভর দিয়ে স্লোগান দিতেন।
আমরা ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী (তৎকালীন রেসকোর্স) উদ্যানের মহাসমাবেশে যোগ দিলাম। সে সময় জয়দেবপুর (গাজীপুর) থেকে হাজার হাজার বীর জনতা ট্রেনে করে এবং শতাধিক ট্রাক ও বাসে করে মাথায় লাল ফিতা বেঁধে ওই জনসভায় যোগ দিয়েছিল। সে এক অপূর্ব দৃশ্য। আজকে ভাবতেও অবাক লাগে কীভাবে এ জনস্রোত এসে মিশে গিয়েছিল ৭ মার্চের মহাসমুদ্রে। ৭ মার্চে উজ্জীবিত হয়ে আমরা সম্ভবত ১১ মার্চ গাজীপুর সমরাস্ত্র কারখানা (অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি) আক্রমণ করি। গেটে বাধা পাওয়ার পর আমি হাজার হাজার মানুষের সামনে টেবিলে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা করেছি মাইকে। পাকিস্তানিরা যাতে বুঝতে পারে, সে জন্য ইংরেজিতে বলি, ‘I do hereby dismiss Brigadier Karimullah from the directorship of Pakistan Ordnance Factory and do hereby appoint Administrative officer Mr Abudul Qader (বাঙালি) as the director of the ordnance Factory’। এই গর্জনে সত্যিই কাজ হয়েছিল। পাকিস্তানি ব্রিগেডিয়ার বক্তৃতা চলাকালীন পেছনের গেট দিয়ে সালনা হয়ে পালিয়ে ঢাকায় চলে আসেন। পাকিস্তানি ব্রিগেডিয়ার আর পরবর্তীতে ১৫ এপ্রিলের পূর্বে গাজীপুরে যাননি। ওই সমরাস্ত্র কারখানা ২৭ মার্চ পর্যন্ত আমাদের দখলেই ছিল। সম্ভবত ১৩ মার্চ তৎকালীন জিওসি ইয়াকুব আলী জয়দেবপুর রাজবাড়ী মাঠে হেলিকপ্টারে অবতরণ করতে চেষ্টা করলে শত শত বীর জনতা হেলিকপ্টারের প্রতি ইট-পাটকেল ও জুতা ছুড়তে শুরু করলে হেলিকপ্টারটি না নামতে পেরে ফেরত চলে যায়।
সে দিন ১৭ মার্চ বুধবার, মহান নেতা বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে লাখো জনতার ঢল নেমেছিল ৩২ নম্বরের বাড়িতে। সবাই বঙ্গবন্ধুকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে এসেছিল। তৎকালীন আমাদের নির্বাচনী এলাকার এমএলএ সামসুল হক (পরবর্তীকালে বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার সদস্য), হাবিব উল্ল্যাহসহ আমি গিয়েছিলাম বঙ্গবন্ধুকে জয়দেবপুরে ২য় ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টকে নিরস্ত্র করার সংবাদ দিতে। সন্ধ্যায় আমরা পেছনে দাঁড়িয়ে আছি দেখতে পেয়ে কিছু বলতে চাই কি না বঙ্গবন্ধু জানতে চান। কুর্মিটোলা (ঢাকা) ক্যান্টনমেন্টে অস্ত্রের মজুত কমে গেছে অজুহাতে ২য় ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টে রক্ষিত অস্ত্র আনার পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সিদ্ধান্ত গ্রহণের সংবাদ জানাই। সামসুল হকের ইশারায় আমি তরুণ হিসেবে এ অবস্থায় আমাদের কী করণীয় জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু ব্যাঘ্রের ন্যায় গর্জে উঠে বললেন, ‘তুই একটা আহাম্মক, কী শিখেছিস যে আমাকে বলে দিতে হবে!’ একটু পায়চারি করে বললেন, ‘বাঙালি সৈন্যদের নিরস্ত্র করতে দেয়া যাবে না। ‘Resist at the cost of anything’। নেতার হুকুম পেয়ে গেলাম। ১৯ মার্চ শুক্রবার আকস্মিকভাবে পাকিস্তানি ব্রিগেডিয়ার জাহান জেবের নেতৃত্বে পাকিস্তানি রেজিমেন্ট জয়দেবপুরস্থ (গাজীপুর) ২য় ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টকে নিরস্ত্র করার জন্য পৌঁছে যায়। একজন জেসিও (নায়েব সুবেদার) জয়দেবপুর হাইস্কুলের মুসলিম হোস্টেলের পুকুরে (জকি স্মৃতির প্রাইমারি স্কুলের সামনে) গোসল করার সময় জানান যে, ঢাকা থেকে ব্রিগেডিয়ার জাহান জেব চলে এসেছেন। খবর পেয়ে দ্রুত আমাদের তখনকার আবাসস্থান মুসলিম হোস্টেলে ফিরে গিয়ে উপস্থিত হাবিব উল্ল্যা ও শহীদুল্ল্যাহ বাচ্চুকে এ সংবাদ জানাই। শহীদউল্ল্যাহ বাচ্চু তখনই রিকশায় চড়ে শিমুলতলীতে, মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি, ডিজেল প্লান্ট ও সমরাস্ত্র কারখানায় শ্রমিকদের যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে জয়দেবপুরে চলে আসার খবর দিলে ১ ঘণ্টার মধ্যে মাঠেই হাজার শ্রমিক-জনতা চারদিক থেকে লাঠিসোঁটা, দা, কাতরা, ছেন, দোনলাবন্দুকসহ জয়দেবপুর উপস্থিত হয়। সেদিন জয়দেবপুর হাটের দিন ছিল। জয়দেবপুর রেল গেটে মালগাড়ির বগি, অকেজো রেললাইন, স্লিপারসহ বড় বড় গাছের গুঁড়ি, কাঠ, বাঁশ, ইট ইত্যাদি যে-যেভাবে আনতে পেরেছিল তা দিয়ে এক বিশাল ব্যারিকেড দেয়। জয়দেবপুর থেকে চৌরাস্তা পর্যন্ত আরও ৫টি ব্যারিকেড দেয়া হয় যাতে পাকিস্তানি বাহিনী অস্ত্র নিয়ে ফেরত যেতে না পারে। ২য় ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড ছিলেন মেজর কে এম শফিউল্লাহ (পরবর্তীকালে সেনাপ্রধান)। আমরা যখন ব্যারিকেড দিচ্ছিলাম তখন টাঙ্গাইল থেকে রেশন নিয়ে একটি কনভয় জয়দেবপুর আসছিল। সে রেশনের গাড়িকে জনতা আটকে দেয়। সেই কনভয়ে থাকা ৫ জন সৈন্যের চায়নিজ রাইফেল তাদের কাছ থেকে কেড়ে নেয়া হয়।
এ দিকে রেল গেটের ব্যারিকেড সরানোর জন্য ২য় ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টকে ব্রিগেডিয়ার জাহান জেব আদেশ দেন। কৌশল হিসেবে বাঙালি সৈন্যদের সামনে দিয়ে পেছনে পাঞ্জাবি সৈন্যদের অবস্থান রেখে মেজর শফিউল্লাহকে জনতার ওপর গুলিবর্ষণের আদেশ দেয়া হয়। বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈন্যরা আমাদের জনতার ওপর গুলি না করে আকাশের দিকে গুলি ছুড়ে অগ্রসর হতে থাকলে আমরা বর্তমান গাজীপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ওপর অবস্থান নিয়ে বন্দুক ও চায়নিজ রাইফেল দিয়ে সেনাবাহিনীর ওপর গুলিবর্ষণ শুরু করি।
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গুলিতে জয়দেবপুরে শহীদ হন নেয়ামত ও মনুখলিফা, আহত হন চতরের সন্তোষ, ডা. ইউসুফসহ শত শত বীর জনতা। পাকিস্তানি বাহিনী কারফিউ জারি করে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ শুরু করলে আমাদের প্রতিরোধ ভেঙে পড়ে। আমরা পিছু হটলে দীর্ঘসময় চেষ্টা করে ব্যারিকেড পরিষ্কার করে ব্রিগেডিয়ার জাহান জেব চান্দনা চৌরাস্তায় এসে আবার প্রবল বাধার সম্মুখীন হন। নামকরা ফুটবল খেলোয়াড় হুরমত এক পাঞ্জাবি সেনাসদস্যকে পেছন থেকে আক্রমণ করে। আমরা সৈন্যের রাইফেল কেড়ে নিই। কিন্তু পেছনে আর এক পাঞ্জাবি সেনা হুরমতের মাথায় গুলি করলে হুরমত সেখানেই শাহাদতবরণ করেন। বর্তমানে সেই স্থানে চৌরাস্তার মোড়ে ‘জাগ্রত চৌরঙ্গী’ নামে ভাস্কর্য স্থাপিত হয়েছে।
পরদিন বঙ্গবন্ধু আলোচনা চলাকালে পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণে ১৯ মার্চ নিহতদের কথা উল্লেখ করলে জেনারেল ইয়াহিয়া খান বলেন যে, ‘জয়দেবপুরে জনতা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ওপর আধুনিক অস্ত্র ও চায়নিজ রাইফেল দিয়ে আক্রমণ করেছে এবং এতে পাকিস্তানি বাহিনীর অনেক সেনা আহত হয়েছে।’
১৯ মার্চের পর সারা বাংলাদেশে স্লোগান ওঠে, ‘জয়দেবপুরের পথ ধর-বাংলাদেশ স্বাধীন কর’, ‘জয়দেবপুরের পথ ধর-সশস্ত্র যুদ্ধ শুরু কর’।
১৯৭২ সালের ১৯ মার্চ প্রথম জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গাজীপুরবাসীর উদ্দেশে এক পত্রে ১৯ মার্চের সশস্ত্র প্রতিরোধের সময় শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং জয়দেবপুরবাসীকে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর মাহেন্দ্রক্ষণে বঙ্গবন্ধুকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ আন্দোলনের সুবর্ণজয়ন্তীতে ১৯ মার্চের শহীদসহ অংশগ্রহণকারী সবার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। এ সশস্ত্র প্রতিরোধযুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়ার সুযোগ পাওয়ায় নিজেকে গৌরবান্বিত মনে করি।
১৯ মার্চের সশস্ত্র যুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক মাইলফলক। জয়দেবপুরের গৌরবগাথা উনিশে মার্চ প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ দিবস হিসেবে জাতীয়ভাবে উদযাপন করার দাবিতে গাজীপুরের সর্বস্তরের জনতা আবেদন জানিয়ে আসছে। উনিশে মার্চ প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ দিবস হিসেবে দেশব্যাপী জাতীয়ভাবে পালিত হলে মুক্তিযুদ্ধের সূচনার ইতিহাস যথাযথভাবে সংরক্ষিত হবে বলে আমি মনে করি।
লেখক: বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী
ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টে ২০২৫ সাল বিদায় নিলেও বাংলাদেশের শিল্প ও সংস্কৃতি অঙ্গনের জন্য এই বছরটি ছিল গভীর শোক আর হারানোর। বছরজুড়েই দেশ হারিয়েছে বেশ কয়েকজন কিংবদন্তি এবং প্রতিভাবান তারকাকে, যাঁদের দীর্ঘদিনের সাধনা ও সৃষ্টি এ দেশের সাংস্কৃতিক ভিত্তি মজবুত করেছিল। বছরের শুরুতেই চলচ্চিত্র জগত বড় এক ধাক্কা খায় সোনালি যুগের জনপ্রিয় নায়িকা অঞ্জনা রহমানের প্রয়াণে। ৪ জানুয়ারি ভোরে ৩ শতাধিক সিনেমার এই অভিনেত্রী না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। তাঁর রেশ কাটতে না কাটতেই ৫ জানুয়ারি বিদায় নেন বরেণ্য অভিনেতা প্রবীর মিত্র, যাঁর চরিত্রাভিনেতা হিসেবে অসামান্য নৈপুণ্য বাংলা সিনেমার ইতিহাসে এক উজ্জ্বল অধ্যায় হয়ে থাকবে। এরপর ২৫ মার্চ নিভে যায় সংস্কৃতিচর্চার অন্যতম বাতিঘর ও ছায়ানটের প্রতিষ্ঠাতা সন্জীদা খাতুনের জীবনপ্রদীপ, যিনি আজীবন রবীন্দ্রসংগীত ও লোকজ সংস্কৃতিকে লালন করেছেন।
বছরের মাঝামাঝি সময়ে ২ জুলাই চিরবিদায় নেন ‘সাগরের তীর থেকে’ খ্যাত কালজয়ী কণ্ঠশিল্পী জীনাত রেহানা। তাঁর রেশ কাটতে না কাটতেই ২৭ জুলাই আকস্মিক মৃত্যু হয় তরুণ প্রজন্মের প্রিয় সংগীতশিল্পী ও ব্যান্ড ‘ওন্ড’-এর সদস্য এ কে রাতুলের, যিনি ছিলেন কিংবদন্তি চিত্রনায়ক জসীমের সন্তান। সংগীতাঙ্গনে শোকের ছায়া আরও ঘনীভূত হয় ১৩ সেপ্টেম্বর, যখন লোকসংগীতের প্রবাদপ্রতিম শিল্পী ও একুশে পদকপ্রাপ্ত লালনকন্যা ফরিদা পারভীন শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর প্রয়াণ বাংলাদেশের লোকজ সংগীতের ধারায় এক অপূরণীয় শূন্যতা তৈরি করেছে।
বছরের শেষ ভাগেও হারানোর মিছিল থামেনি। ২৭ নভেম্বর মারা যান জনপ্রিয় ব্যান্ড ‘ফিডব্যাক’-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও কিংবদন্তি গিটারিস্ট সেলিম হায়দার। তাঁর সৃষ্টির ঠিক একদিন পরই ২৮ নভেম্বর আধুনিক গানের পরিচিত কণ্ঠস্বর জেনস সুমন আমাদের ছেড়ে চলে যান। ২০২৫ সালের এই বিদায়গুলো কেবল একেকটি জীবনের অবসান নয়, বরং বাংলাদেশের শিল্প-সাহিত্যের ইতিহাসের একেকটি সোনালি অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি। এই নক্ষত্ররা শারীরিকভাবে বিদায় নিলেও তাঁদের গান, অভিনয় আর অনন্য সব সৃষ্টি এ দেশের মানুষের হৃদয়ে এবং জাতীয় ইতিহাসে চিরকাল অম্লান হয়ে থাকবে। মূলত তাঁদের দেখানো পথ ধরেই আগামী দিনের সাংস্কৃতিক অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে।
তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) আজকের নির্ধারিত ম্যাচগুলো স্থগিত করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকালে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পক্ষ থেকে এক আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই তথ্য জানানো হয়।
বিসিবি জানিয়েছে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বর্তমানে সারাদেশে শোকাবহ পরিবেশ বিরাজ করছে। তাঁর স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়ে আজ সিলেটের মাঠে অনুষ্ঠিতব্য ‘সিলেট টাইটান্স বনাম চট্টগ্রাম রয়্যালস’ এবং ‘ঢাকা ক্যাপিটালস বনাম রংপুর রাইডার্স’–এর মধ্যকার ম্যাচ দুটি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। স্থগিত হওয়া এই ম্যাচগুলোর নতুন সূচি পরবর্তীতে সুবিধাজনক সময়ে জানিয়ে দেওয়া হবে বলে নিশ্চিত করেছে বোর্ড কর্তৃপক্ষ।
উল্লেখ্য, বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন জটিলতা ও লিভার সিরোসিসসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে আজ মঙ্গলবার ভোর ৬টার দিকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন বেগম খালেদা জিয়া। গত ২৩ নভেম্বর থেকে তিনি হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে ছিলেন। তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানিয়েছিলেন, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি অত্যন্ত সংকটময় সময় পার করছিলেন।
দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রীর এই প্রয়াণে দেশজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। রাজনৈতিক অঙ্গনের পাশাপাশি ক্রীড়া জগতেও এর প্রভাব পড়েছে। বিপিএলের মতো বড় আসরের খেলা স্থগিত রেখে তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করল ক্রিকেট বোর্ড। বর্তমানে জানাজা ও দাফনের প্রস্তুতির কারণে লিগের পরবর্তী সূচি নিয়েও আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার প্রয়াণে গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন তাঁর দীর্ঘদিনের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। বর্তমানে ভারতে অবস্থানরত শেখ হাসিনা এক বিশেষ শোকবার্তায় বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রীর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের প্রশংসা করে বলেছেন, এ দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে বেগম খালেদা জিয়ার অবদান অপরিসীম। আজ মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রকাশিত এক পোস্টের মাধ্যমে এই শোকবার্তাটি প্রচার করা হয়।
শোকবার্তায় শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনীতিতে এবং বিশেষ করে বিএনপির নেতৃত্বের ক্ষেত্রে এক অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে পদত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর এটিই শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে আসা প্রথম কোনো বড় ধরণের আনুষ্ঠানিক শোকবার্তা। রাজনৈতিক বৈরিতা থাকা সত্ত্বেও দেশের ইতিহাসের এক চরম শোকাবহ ও গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে শেখ হাসিনার এই ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া এবং খালেদা জিয়ার আত্মার মাগফিরাত কামনা রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক কৌতূহল ও আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
আবেগঘন এই বার্তায় শেখ হাসিনা আরও বলেন, “আমি তাঁর বড় ছেলে তারেক রহমানসহ পরিবারের অন্যান্য শোকাহত সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই। আমি প্রার্থনা করি যেন মহান আল্লাহ তাঁর পরিবার এবং বিএনপির সকল স্তরের নেতাকর্মীকে এই কঠিন শোক সহ্য করার শক্তি দান করেন।” মূলত দেশের দুই শীর্ষ নেত্রীর দীর্ঘ কয়েক দশকের রেষারেষির অবসান ঘটিয়ে এই মৃত্যু যেন রাজনীতির অঙ্গনে এক ভিন্ন মাত্রার শোকের আবহ তৈরি করেছে।
উল্লেখ্য, লিভার সিরোসিস, কিডনি জটিলতা, হৃদরোগ এবং ডায়াবেটিসসহ নানা বার্ধক্যজনিত সমস্যার সঙ্গে দীর্ঘ লড়াই শেষে আজ মঙ্গলবার ভোর ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন ৭৯ বছর বয়সী বেগম খালেদা জিয়া। গত ২৩ নভেম্বর থেকে তিনি হাসপাতালের সিসিইউতে চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে ছিলেন। সোমবার দিবাগত রাত ২টার পর তাঁর শারীরিক অবস্থার চরম অবনতি হলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং পরিবারের অন্য সদস্যরা দ্রুত হাসপাতালে ছুটে যান। চিকিৎসকদের আপ্রাণ চেষ্টার পর সকালে তাঁর চিরবিদায়ের খবরটি নিশ্চিত করেন ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন।
নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের অগ্রসেনানী হিসেবে ‘আপসহীন নেত্রী’র খ্যাতি পাওয়া বেগম খালেদা জিয়া টানা ৪১ বছর বিএনপির হাল ধরেছিলেন। তাঁর বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের অন্যতম অনন্য রেকর্ড হলো, তিনি তাঁর রাজনৈতিক জীবনে একাধিকবার সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও কখনো কোনো আসনে পরাজিত হননি। তিনি তিনবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং দুইবার জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতার দায়িত্ব পালন করেছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, শত জুলুম ও কারাবরণ সত্ত্বেও দেশ ছেড়ে না যাওয়ার যে অদম্য জেদ তিনি আমৃত্যু বজায় রেখেছিলেন, তা তাঁকে এ দেশের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় করে রাখবে। তাঁর এই মহাপ্রয়াণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক কাঠামোর এক শক্তিশালী স্তম্ভের পতন ঘটল।
বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। আজ মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) ঢাকার জাতিসংঘ কার্যালয় থেকে পাঠানো এক আনুষ্ঠানিক বার্তার মাধ্যমে এই শোক ও সমবেদনা জানানো হয়। বার্তায় জাতিসংঘ উল্লেখ করেছে যে, বেগম খালেদা জিয়ার এই চিরবিদায় একটি অত্যন্ত দুঃখজনক মুহূর্ত। সংস্থাটি তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবার ও নিকটজনদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানানোর পাশাপাশি বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের প্রতি গভীর সংহতি পুনর্ব্যক্ত করেছে।
উল্লেখ্য, দীর্ঘ দিন বার্ধক্যজনিত ও বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ভোগার পর আজ মঙ্গলবার ভোর ৬টার দিকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন এ দেশের মানুষের কাছে ‘আপসহীন নেত্রী’ হিসেবে পরিচিত বেগম খালেদা জিয়া। দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর প্রয়াণে জাতীয় রাজনীতিতে এক বিশাল শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে। সংসদীয় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, জাতীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে তাঁর অদম্য নেতৃত্ব ও বলিষ্ঠ ভূমিকা বাংলাদেশের ইতিহাসে অম্লান হয়ে থাকবে। জাতিসংঘের এই শোকবার্তা তাঁর বৈশ্বিক গুরুত্ব এবং বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের প্রতি এক আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিরই বহিঃপ্রকাশ। বর্তমানে দেশজুড়ে এই কিংবদন্তি নেত্রীর বিদায়ে গভীর শোকের ছায়া বিরাজ করছে।
বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার প্রয়াণে গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। আজ মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকালে বাংলাদেশে অবস্থিত ইউরোপীয় ইউনিয়নের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে দেওয়া এক বার্তার মাধ্যমে এই শোক জানানো হয়। বার্তায় ইইউ উল্লেখ করেছে যে, বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে তারা বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের প্রতি গভীর সহমর্মিতা ও সমবেদনা জ্ঞাপন করছে।
উল্লেখ্য, আজ মঙ্গলবার ভোর ৬টার দিকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন বরেণ্য এই নেত্রী। গত ২৩ নভেম্বর ফুসফুসের সংক্রমণ ও তীব্র শ্বাসকষ্ট নিয়ে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। পরবর্তীতে তাঁর শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটলে চিকিৎসকদের পরামর্শে তাঁকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। কিডনি ও লিভার জটিলতা ছাড়াও তিনি দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রাইটিস ও ডায়াবেটিসের মতো নানা বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন।
বেগম খালেদা জিয়ার এই চিরবিদায়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি দীর্ঘ ও বর্ণাঢ্য অধ্যায়ের অবসান ঘটল। তাঁর মৃত্যুতে ইতোমধ্যেই দেশি-বিদেশি বিভিন্ন রাষ্ট্রপ্রধান, রাজনৈতিক দল এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো শোকবার্তা পাঠাচ্ছে, যার ধারাবাহিকতায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকেও এই বিশেষ বার্তাটি দেওয়া হলো। মূলত বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও নারীর ক্ষমতায়নে তাঁর ভূমিকার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েই এই আন্তর্জাতিক সংস্থাটি তাদের সমবেদনা প্রকাশ করেছে। বর্তমানে দেশজুড়ে শোকের ছায়া বিরাজ করছে এবং এই কিংবদন্তি নেত্রীকে শেষ বিদায় জানাতে প্রস্তুতি চলছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রথম নামাজে জানাজা আগামীকাল বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) জোহর নামাজের পর জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজা এবং সংলগ্ন মানিক মিয়া এভিনিউতে অনুষ্ঠিত হবে। জানাজা শেষে তাঁকে শেরেবাংলা নগরে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরের পাশেই চিরনিদ্রায় শায়িত করা হবে। আজ মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) দুপুরে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের এক বিশেষ সভা শেষে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আইন উপদেষ্টা জানান, বেগম খালেদা জিয়ার দাফন ও জানাজার যাবতীয় প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করা হবে। এ ছাড়া বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশের প্রতিটি মিশনে এই বরেণ্য নেত্রীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে শোক বই খোলা হবে। সভার বিষয়ে তিনি আরও বলেন, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ব্যক্তিগতভাবে বেগম জিয়ার বিভিন্ন স্মৃতিচারণ করেন এবং তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এই কিংবদন্তি নেত্রীকে শেষ বিদায় জানাতে সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এর আগে, লিভার সিরোসিসসহ নানা শারীরিক জটিলতায় দীর্ঘ লড়াই শেষে আজ মঙ্গলবার ভোর ৬টার দিকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন বেগম খালেদা জিয়া। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর প্রয়াণে জাতীয় রাজনীতিতে একটি দীর্ঘ ও গৌরবময় অধ্যায়ের অবসান ঘটল। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং জাতীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষার সংগ্রামে তাঁর আপসহীন নেতৃত্ব ও অদম্য মনোবল এ দেশের মানুষের হৃদয়ে তাঁকে এক অনন্য উচ্চতায় আসীন করেছে। তাঁর মৃত্যুতে রাজনৈতিক অঙ্গনসহ পুরো দেশজুড়ে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বর্তমানে তাঁর মরদেহ এভারকেয়ার হাসপাতালে রাখা হয়েছে এবং আগামীকালকের জানাজা সফল করতে বিএনপি ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হচ্ছে।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও অনন্য অধ্যায়ের প্রতিনিধি ছিলেন। আজ মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) এক শোকবার্তায় তিনি এই বর্ষীয়ান নেত্রীর প্রয়াণে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেন। জিএম কাদের উল্লেখ করেন যে, খালেদা জিয়া তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে রাষ্ট্র পরিচালনা এবং দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের ধারা সুসংহত করতে অনবদ্য ভূমিকা রেখেছেন। তাঁর প্রয়াণে দেশ একজন অভিজ্ঞ ও প্রভাবশালী রাজনীতিককে হারাল, যা জাতীয় রাজনীতিতে এক অপূরণীয় শূন্যতার সৃষ্টি করল।
শোকবার্তায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মরহুমার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও অগণিত রাজনৈতিক সহকর্মীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। তিনি মনে করেন, বেগম খালেদা জিয়ার দীর্ঘ রাজনৈতিক পথচলা এবং দেশের মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম এ দেশের ইতিহাসের পাতায় চিরকাল অম্লান হয়ে থাকবে।
উল্লেখ্য, বার্ধক্যজনিত ও শারীরিক নানা জটিলতার সঙ্গে দীর্ঘ লড়াই শেষে আজ মঙ্গলবার ভোর ৬টার দিকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন ‘আপসহীন নেত্রী’ হিসেবে পরিচিত বেগম খালেদা জিয়া। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী এবং বিএনপি চেয়ারপারসনের এই চিরবিদায়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি যুগের অবসান ঘটল। জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলনে তাঁর আপসহীন নেতৃত্ব তাঁকে এ দেশের সাধারণ মানুষের কাছে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিল। বরেণ্য এই রাজনীতিকের প্রয়াণে সারা দেশে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে সরকার। একই সাথে মরহুমার প্রতি সম্মান জানিয়ে আগামীকাল বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) সারাদেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশীদ সরকারের এই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথা জানান।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, আগামীকাল বুধবার থেকে শুরু করে আগামী শুক্রবার পর্যন্ত (৩১ ডিসেম্বর এবং ১ ও ২ জানুয়ারি) তিন দিনব্যাপী রাষ্ট্রীয় শোক পালিত হবে। এই সময়ে দেশের সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং বিদেশের মিশনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। এ ছাড়া বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয়ে তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনায় বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হবে। বেগম খালেদা জিয়ার দীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রাম এবং দেশের উন্নয়নে তাঁর অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সরকার এই বিশেষ সম্মান প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
উল্লেখ্য, লিভার সিরোসিসসহ নানা বার্ধক্যজনিত জটিলতায় দীর্ঘ লড়াই শেষে আজ মঙ্গলবার ভোর ৬টার দিকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন বর্ষীয়ান এই নেত্রী। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। তাঁর এই প্রয়াণে দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ইতোমধ্যেই রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা এবং বিশ্বনেতারা তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। সরকারের এই ঘোষণার ফলে আগামীকাল দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত ও ব্যাংক-বীমায় সাধারণ ছুটি বলবৎ থাকবে। এক কিংবদন্তি নেত্রীর বিদায়বেলাকে বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করতেই রাষ্ট্র এই শোকাতুর কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন ও বাংলাদেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ। আজ মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) এক শোক বার্তায় তিনি এই বর্ষীয়ান নেত্রীর প্রয়াণে নিজের এবং পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে গভীর সমবেদনা জানান। শেহবাজ শরীফ বলেন, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নে বেগম জিয়া যে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন এবং দেশ ও জাতির জন্য যে আজীবন অবদান রেখে গেছেন, তা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
শোকবার্তায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে পাকিস্তানের একজন ‘নিবেদিত বন্ধু’ হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি উল্লেখ করেন যে, এই শোকাবহ মুহূর্তে পাকিস্তানের সরকার এবং সেদেশের সাধারণ মানুষ বাংলাদেশের জনগণের পাশে রয়েছে। শেহবাজ শরীফ আরও বলেন, এই কঠিন সময়ে তাঁদের আন্তরিক সমবেদনা ও প্রার্থনা মরহুমার শোকসন্তপ্ত পরিবার, বন্ধু-বান্ধব এবং পুরো বাংলাদেশের মানুষের সাথে রয়েছে। তিনি মহান আল্লাহর কাছে বেগম খালেদা জিয়ার বিদেহী আত্মার শান্তি ও মাগফিরাত কামনা করেন।
উল্লেখ্য, লিভার সিরোসিসসহ নানা শারীরিক জটিলতায় দীর্ঘ দিন লড়াই করার পর আজ মঙ্গলবার ভোর ৬টার দিকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭৯ বছর বয়সে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন বেগম খালেদা জিয়া। তাঁর এই চিরবিদায়ে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন রাষ্ট্রপ্রধান ও প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতারা শোক জানাচ্ছেন, যার ধারাবাহিকতায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে এই গভীর সহমর্মিতা প্রকাশ করা হলো। মূলত দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে বেগম জিয়ার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা এবং কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে তাঁর অবদানের বিষয়টিই এই শোকবার্তায় স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।
বাংলাদেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আজ মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক বার্তার মাধ্যমে তিনি এই প্রবীণ নেত্রীর প্রয়াণে তাঁর পরিবার এবং বাংলাদেশের জনগণের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। নরেন্দ্র মোদি তাঁর বার্তায় খালেদা জিয়াকে বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সশ্রদ্ধ চিত্তে স্মরণ করার পাশাপাশি এ দেশের উন্নয়ন এবং ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নয়নে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেন।
শোকবার্তায় মোদি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন যে, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক জোরদার করার ক্ষেত্রে বেগম খালেদা জিয়ার অবদান সবসময় অম্লান হয়ে থাকবে। ২০১৫ সালে তাঁর ঢাকা সফরের সময় খালেদা জিয়ার সঙ্গে ব্যক্তিগত সাক্ষাতের স্মৃতিচারণ করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, বেগম জিয়ার রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও আদর্শিক উত্তরাধিকার ভবিষ্যতেও দুই দেশের অংশীদারিত্বকে আরও শক্তিশালী করতে বিশেষ অনুপ্রেরণা জোগাবে। তিনি বিনম্র শ্রদ্ধায় এই বরেণ্য নেত্রীর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন।
উল্লেখ্য, লিভার সিরোসিসসহ নানা জটিলতা নিয়ে দীর্ঘ সময় চিকিৎসাধীন থাকার পর আজ ভোর ৬টার দিকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন বেগম খালেদা জিয়া। তাঁর এই প্রয়াণে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন রাষ্ট্রপ্রধান ও বিশ্বনেতারা শোকবার্তা পাঠাচ্ছেন, যার ধারাবাহিকতায় ভারতের প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে এই আন্তরিক প্রতিক্রিয়া জানানো হলো। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মোদির এই শোকবার্তা দুই দেশের দীর্ঘদিনের কূটনৈতিক মৈত্রী এবং বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিরই বহিঃপ্রকাশ।
বিএনপি চেয়ারপারসন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। আজ মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) এক বিশেষ শোক বার্তায় তিনি এই বর্ষীয়ান নেত্রীর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানান। রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় বেগম খালেদা জিয়ার ‘আপসহীন ভূমিকা’ এ দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
রাষ্ট্রপতি তাঁর বার্তায় উল্লেখ করেন যে, বেগম জিয়ার চলে যাওয়া জাতির জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। তিনি মরহুমার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবার, দলের অগণিত নেতাকর্মী ও অনুসারীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। শোকাতুর এই মুহূর্তে তিনি দেশবাসীকে মরহুমার স্মৃতির প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শনের পাশাপাশি তাঁর জন্য বিশেষ দোয়া ও প্রার্থনা করার উদাত্ত আহ্বান জানান।
উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস এবং লিভার সিরোসিসের মতো জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে আজ মঙ্গলবার ভোরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৮০ বছর বয়সে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন বেগম খালেদা জিয়া। গত ২৩ নভেম্বর শ্বাসকষ্টসহ শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল, যেখানে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের অধীনে তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন। তাঁর এই চিরবিদায়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি বর্ণাঢ্য ও দীর্ঘ অধ্যায়ের অবসান ঘটল। বর্তমানে তাঁর মৃত্যুতে রাষ্ট্র ও প্রশাসনের উচ্চপর্যায় থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষের মাঝে শোকের আবহ বিরাজ করছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আজ মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) আনুমানিক দুপুর ১২টায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। আজ সকালে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বার্তার মাধ্যমে এই বিশেষ ভাষণের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
লিভার সিরোসিসসহ বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন জটিলতায় দীর্ঘ লড়াই শেষে আজ ভোর ৬টার দিকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭৯ বছর বয়সে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন এ দেশের মানুষের ‘আপসহীন নেত্রী’ হিসেবে পরিচিত বেগম খালেদা জিয়া। তাঁর এই মহাপ্রয়াণে দেশজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে এবং রাজনৈতিক অঙ্গনে এক বিশাল শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে।
আজ সকালেই এক শোকবার্তায় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বেগম জিয়ার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি বলেন, “বেগম খালেদা জিয়ার ইন্তেকালে জাতি আজ তার এক মহান অভিভাবককে হারাল। তাঁর মৃত্যুতে আমি ব্যক্তিগতভাবে গভীরভাবে শোকাহত ও মর্মাহত।” প্রধান উপদেষ্টা মনে করেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে খালেদা জিয়ার নাম ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
প্রধান উপদেষ্টার এই ভাষণটি বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) এবং বাংলাদেশ বেতার থেকে একযোগে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। ধারণা করা হচ্ছে, প্রধান উপদেষ্টা তাঁর ভাষণে বেগম খালেদা জিয়ার স্মৃতির প্রতি রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদর্শন, তাঁর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অবদান এবং বর্তমান শোকাবহ পরিস্থিতিতে দেশবাসীকে ধৈর্য ধারণ ও শান্তি বজায় রাখার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা প্রদান করবেন। তাঁর এই ভাষণের দিকে এখন অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছে পুরো দেশ।
বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার প্রয়াণে গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং। মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পাঠানো এক বিশেষ শোকবার্তায় তিনি এই শোক প্রকাশ করেন। ঢাকায় নিযুক্ত চীনা দূতাবাস থেকে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
শোকবার্তায় লি কিয়াং বেগম খালেদা জিয়াকে বাংলাদেশের একজন অভিজ্ঞ ও প্রবীণ রাজনীতিক হিসেবে অভিহিত করার পাশাপাশি তাঁকে চীনা জনগণের একজন দীর্ঘদিনের ও অকৃত্রিম বন্ধু হিসেবে স্মরণ করেন। তিনি উল্লেখ করেন যে, বেগম জিয়ার প্রধানমন্ত্রিত্বকালে চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সমতা এবং উভয়ের কল্যাণের ওপর ভিত্তি করে একটি শক্তিশালী ও সমন্বিত সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্ব গড়ে উঠেছিল। এই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নয়নে এবং দুই দেশের মৈত্রীকে সুদৃঢ় করতে তাঁর অসামান্য অবদানের কথা চীন সরকার সবসময় অত্যন্ত সম্মানের সঙ্গে মূল্যায়ন করে।
চীনের প্রধানমন্ত্রী আরও জানান যে, বেইজিং সবসময়ই বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের দীর্ঘদিনের ঐতিহাসিক বন্ধুত্বকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার মাধ্যমে এই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও আধুনিক ও উচ্চতর পর্যায়ে নিয়ে যেতে চীন সরকার সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে, যাতে উভয় দেশের সাধারণ মানুষ সুফল ভোগ করতে পারে।
উল্লেখ্য, লিভার সিরোসিসসহ বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন জটিলতায় দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর আজ মঙ্গলবার ভোর ৬টার দিকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন বেগম খালেদা জিয়া। তাঁর এই প্রয়াণে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন রাষ্ট্রপ্রধান ও কূটনীতিকরা গভীর শোক প্রকাশ করে বার্তা পাঠাচ্ছেন। বরেণ্য এই নেত্রীর বিদায়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি বড় শূন্যতার সৃষ্টি হলো বলে মনে করছে বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র চীন।