সারা দেশ থেকে সংসদীয় আসনের সীমানাসংক্রান্ত ১৮৬ দাবি-আপত্তির আবেদন জমা পড়েছে নির্বাচন কমিশনে। সীমানার আপত্তি নিয়ে সবচেয়ে বেশি ৮৪টি আবেদন জমা পড়েছে কুমিল্লা অঞ্চল থেকে। রাজশাহীতে ৪৩টি, বরিশালে ২৯টি, ঢাকা অঞ্চলে ১৮টি আবেদন জমা পড়েছে। এ ছাড়া খুলনা ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে পাঁচটি করে আবেদন পড়েছে। অন্যদিকে সিলেট ও রংপুর অঞ্চল থেকে কোনো আবেদনই জমা পড়েনি।
সোমবার নির্বাচন কমিশনের যুগ্মসচিব ও জনসংযোগ পরিচালক আসাদুজ্জামান আরজু বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বিদায়ী নুরুল হুদা কমিশনের রেখে যাওয়া সংসদীয় আসনের সীমানা গত ২৬ ফেব্রুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের খসড়া সীমানা হিসেবে গেজেট প্রকাশ করে কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন কমিশন। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, ১৯ মার্চ পর্যন্ত সংক্ষুব্ধরা এ বিষয়ে আবেদন করতে পারবেন। সীমানাসংক্রান্ত প্রাপ্ত আবেদনের শুনানি শেষে জুনের মধ্যে সীমানা চূড়ান্ত করতে চায় কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন।
সোমবার নিজ কার্যালয়ে সীমানা পুনর্নির্ধারণ প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান বলেন, ‘আবেদনগুলো আসনভিত্তিক বিন্যাস করা হবে। কোন আসনে কতটি আপত্তি পাওয়া গেছে, সেগুলো নিয়ে কাজ করবে সচিবালয়। আসনভিত্তিক ভাগ করলে বোঝা যাবে কোন আসনে কতটা আবেদন পড়েছে। এরপর কমিশনে প্লেস করবে। কমিশন তখন শুনানি করবে। কোনটার সীমানা পরিবর্তন করতে হবে, কোনটার লাগবে না তখন নির্ধারণ হবে।’
আগামী সপ্তাহে শুনানি হবে কি না জানতে চাইলে এই কমিশনার বলেন, ‘সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না। আগে আসনভিত্তিক বিন্যাস হোক, তারপর। বর্তমান সীমানাই বহাল রাখার আবেদন যারা করেছেন, তাদের আবেদন তো আর আমলে নেয়ার দরকার নেই। যদি বিপক্ষে কেউ বলে থাকেন, তখন শুনানির দরকার আছে। একই আসনে পক্ষে-বিপক্ষে এমন থাকতে পারে। কোনোটায় আবার নতুন কোনো আবেদন থাকতে পারে। এটা যখন বিন্যাস করা হবে, তখনই বোঝা যাবে, কে কী চেয়েছে। এটা করতে একটু সময় লাগবে।’
ইভিএম মেরামতে ১২৬০ কোটি টাকা চেয়ে আজ অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেবে ইসি
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) মেরামতের জন্য ১ হাজার ২৬০ কোটি টাকা চেয়ে আজ মঙ্গলবার অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেবে নির্বাচন কমিশন।
নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন সাবেক কমিশনের রেখে যাওয়া দেড় লাখ ইভিএম মেশিনের ১ লাখ ১০ হাজারটি মেরামত করতে হবে। বাকি ৪০ হাজার মেশিন প্রায় ব্যবহার অযোগ্য। ১ লাখ ১০ হাজার মেশিন মেরামতে ইভিএম প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ) ১ হাজার ২৬০ কোটি টাকা চেয়েছে।
১ লাখ ১০ হাজার ইভিএম মেরামত করার জন্য ১ হাজার ২৬০ কোটি টাকার মতো লাগবে জানিয়ে নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান বলেন, ‘সেটা পাওয়া যাবে কি না, নিশ্চিত করার আমরা একটা চিঠি দিতে বলেছি। সেটা রেডি হয়েছে। মঙ্গলবার (আজ) যেতে পারে।’
টাকার নিশ্চয়তা ইসি এখনো পায়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘টাকার নিশ্চয়তা যদি পাওয়া যায়, আমরা অর্থবছরভিত্তিক এই অর্থবছরে অর্ধেক দেয়ার জন্য, পরবর্তী অর্থবছরে বাকি অর্ধেক দেয়ার জন্য এ রকম একটা প্রস্তাব পাঠাচ্ছি। যদি অর্থ বিভাগ টাকা সংস্থান করে, তাহলে আমরা ইভিএমের ব্যাপারে সিদ্ধান্তে উপনীত হব। অন্যথায় যদি টাকা না পাওয়া যায় তাতেও আমাদের সিদ্ধান্তে আসতে হবে কী করব। ব্যালটে কতটা করব বা ইভিএমে আদৌ করব কি না। কাজেই সবটাই নির্ভর করবে অর্থপ্রাপ্তির ওপর।’
কবে নাগাদ ইভিএম ও ব্যালটের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে- এমন প্রশ্নের উত্তরে এই কমিশনার বলেন, ‘আমরা তো আর মানে একেবারে অনির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বসে থাকবে পারব না। আমরা যদি টাকা হাতে পাই, তাতে ইভিএম প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ) বলেছে যে, তাদের ছয় মাস সময় দিতে হবে মেরামত করার জন্য। কাজেই আমরা তো মনে করি এখনই হাই টাইম।’
ছয় মাস সময়ের পর টাকা দিলে তো আমাদের (নির্বাচন কমিশনের) লাভ হবে না জানিয়ে কমিশনার আানিচুর রহমান বলেন, ‘কারণ ১ লাখ ১০ হাজার মেশিন যদি আমরা ব্যবহারযোগ্য করতে পারি, তাহলে ৭০, ৮০ যে সংখ্যাটা (আসন) হয়, আমরা যেতে পারব। না হলে তো পারব না বা করব কি না তা পরে সিদ্ধান্ত নেব। আশা করছি যে হয়তো টাকার ব্যবস্থা করবে সরকার। কীভাবে করবে তা…।’
এখনো সরকার টাকার বিষয়ে পুরোপুরি না করেনি জানিয়ে এই কমিশনার বলেন, ‘আমরা এটুকু ইঙ্গিত পেয়েছিলাম যে টাকার একটা ব্যবস্থা হবে। আর যদি না দেয়, সে জন্যই সর্বশেষ একটা চিঠি দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
আরপিও সংশোধনের ফাইল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধনের বিষয়ে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘এটা এখন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে গেছে। আইনমন্ত্রী দেশের বাইরে আছেন। তিনি ২৮ তারিখে ফিরবেন সম্ভবত। এরপর হয়তো মন্ত্রিসভার বৈঠকে উঠবে।’
সংসদের পরবর্তী অধিবেশনে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধনে উঠতে পারে আশা প্রকাশ করে এই কমিশনার বলেন, ‘আমি তো মনে করি পরবর্তী অধিবেশনে এটি জাতীয় সংসদে উঠতে পারে। আমরা যে রকম প্রস্তাব পাঠিয়েছিলাম মোর অর লেস ওই রকমই আছে। আমাদের প্রস্তাবের সঙ্গে একমত পোষণ করেছে আইন মন্ত্রণালয়।’
বিশ্বের দূষিত বায়ুর শহরের তালিকায় আজ শীর্ষে রয়েছে পাকিস্তানের লাহোর। বায়ুমান সূচকে শহরটির স্কোর ১৮৭। তালিকায় ৫ম অবস্থানে রয়েছে রাজধানী ঢাকা। এদিন সকালে ঢাকার এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (বায়ুর মান সূচক) স্কোর ছিল ১৬৫।
রোববার (১২ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুমান বিষয়ক ওয়েবসাইট আইকিউএয়ারে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
বায়ুদূষণে বিশ্বের শহরগুলোর তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে কলকাতা, স্কোর ১৭১। তৃতীয় অবস্থানে থাকা ইতালির মিলান শহরের স্কোর ১৭০। চতুর্থ স্থানে থাকা ভারতের দিল্লির স্কোর ১৬৯।
উল্লেখ্য, একটি শহরের বাতাস কতটা নির্মল বা দূষিত, এর লাইভ বা তাৎক্ষণিক সূচক জানিয়ে থাকে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার। প্রতিষ্ঠানটির মানদণ্ড অনুযায়ী, স্কোর শূন্য থেকে ৫০-এর মধ্যে থাকলে বায়ুর মান ভালো বলে বিবেচিত হয়।
আর ৫১ থেকে ১০০ হলে মাঝারি বা সহনীয় ধরা হয় বায়ুর মান। সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয় ১০১ থেকে ১৫০ স্কোর। ১৫১ থেকে ২০০ পর্যন্ত অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয়। স্কোর ২০১ থেকে ৩০০ হলে খুবই অস্বাস্থ্যকর বলে বিবেচনা করা হয়। এছাড়া ৩০১-এর বেশি হলে তা দুর্যোগপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়।
দেশের শিশুদের টাইফয়েড থেকে সুরক্ষা দিতে আজ রোববার শুরু হচ্ছে দেশের প্রথম জাতীয় টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন। এক মাসব্যাপী এই কর্মসূচিতে ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী প্রায় পাঁচ কোটি শিশুকে বিনামূল্যে ইনজেকটেবল টাইফয়েড টিকা দেওয়া হবে।
গতকাল শনিবার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, রোববার স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানা, আজিমপুর কেন্দ্রে উদ্বোধন হবে টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন ২০২৫।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, জন্মসনদবিহীন শিশুরাও এই টিকার আওতায় থাকবে যাতে কেউ বাদ না পড়ে। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম জাতীয় টাইফয়েড টিকা কর্মসূচি। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট তৈরি করেছে এই টিকা, যা সরকার পেয়েছে আন্তর্জাতিক ভ্যাকসিন সহায়তা সংস্থা গ্যাভির সহযোগিতায়।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে) অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদনপ্রাপ্ত এই টিকাটি সম্পূর্ণ নিরাপদ। ইতোমধ্যে নেপাল, পাকিস্তানসহ আটটি দেশে সফলভাবে ব্যবহার হয়েছে। কোনো দেশেই বড় ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, প্রাক্-প্রাথমিক থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত স্কুল ও মাদ্রাসায় এই টিকা পাবে। এরপর ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সি অন্যান্য শিশুরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে টিকা পাবে। শহরের পথশিশুদের টিকাদানের দায়িত্বে থাকবে বিভিন্ন এনজিও।
সরকারের লক্ষ্য- এই ক্যাম্পেইনের আওতায় ৪ কোটি ৯০ লাখ শিশুকে টিকা দেওয়া। ইতিমধ্যে ১ কোটি ৬৮ লাখ শিশু নিবন্ধন করেছে, এবং নিবন্ধন প্রক্রিয়া এখনো চালু রয়েছে। জন্মসনদ না থাকলেও নিকটস্থ টিকাকেন্দ্রে স্বাস্থ্যকর্মীদের সহায়তায় নিবন্ধন করা যাবে।
অভিভাবকেরা সন্তানদের নিবন্ধনের জন্য https://vaxepi.gov.bd/registration/tcv ওয়েবসাইটে গিয়ে ১৭ সংখ্যার জন্মনিবন্ধন নম্বর ব্যবহার করে রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন। নিবন্ধনের পর সরাসরি ভ্যাকসিন কার্ড ডাউনলোড করা যাবে।
ইপিআই (সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি) প্রোগ্রামের ম্যানেজার ডা. আবুল ফজল মো. শাহাবুদ্দিন খান জানান, ১২ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই ক্যাম্পেইনের প্রথম ১০ দিন স্কুল ও মাদ্রাসায় ক্যাম্প করে টিকা দেওয়া হবে এবং পরবর্তী ৮ দিন ইপিআই সেন্টারে টিকাদান কার্যক্রম চলবে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আশা করছে, এই ক্যাম্পেইন সফল হলে টাইফয়েড প্রতিরোধে বাংলাদেশ একটি নতুন অধ্যায় সূচনা করবে। দীর্ঘদিন ধরে উপেক্ষিত এ ব্যাধি থেকে শিশুদের সুরক্ষায় এটি হবে সরকারের একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ।
অন্তঃসত্ত্বা ভারতীয় নাগরিক সোনালী খাতুন এবং তার পরিবারের পাঁচ সদস্যকে ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারী’ তকমা দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। প্রায় চার মাস ধরে চরম দুর্ভোগ পোহানোর পর অবশেষে বিচারিক আদেশে তাদের ভারতে প্রত্যাবর্তনের পথ প্রশস্ত হয়েছে।
দিল্লিতে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ করা পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমের এই দরিদ্র বাসিন্দাদের ভারতীয় নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে আধার কার্ড থাকা সত্ত্বেও দিল্লি পুলিশ তাদের সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছিল।
বাংলাদেশে পুশব্যাক হওয়া বীরভূমের নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা সোনালী বিবিসহ আরও ৬ জনকে কেন্দ্র সরকারের ‘বাংলাদেশি’ তকমার দাবিকে খারিজ করে দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। সেইসঙ্গে চার সপ্তাহের মধ্যে তাদের দেশে ফেরানর নির্দেশ দিয়েছিল আদালত।
কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশের আলোকে বাংলাদেশের আদালত সোনালী খাতুনসহ সবাইকে নিরাপদে দেশে ফেরানোর জন্য ভারতীয় হাইকমিশনকে কূটনৈতিক ও আইনি প্রক্রিয়া শুরু করতে বলেছে।
সোনালীদের সাহায্যের জন্য বাংলাদেশে অবস্থান করছেন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিক উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান সামিরুল ইসলামের প্রতিনিধি মফিজুল শেখ। সামিরুল বৃহস্পতিবার এক্স পোস্টে জানান, বাংলাদেশের আদালতের নির্দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকায় হাইকমিশনে পাঠানো হয়েছে।
এই ঘটনা শুরু হয়েছিল চলতি বছরের ২৬ জুন। সোনালী খাতুন, তার স্বামী দানিশ শেখ, আট বছরের ছেলে সাবির, সুইটি বিবি এবং তার দুই ছেলে—সবাই রাজধানী দিল্লিতে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কোনোমতে জীবন যাপন করতেন। দিল্লি পুলিশের যে দল ‘অবৈধ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের’ বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছিল, তারাই এ দলটিকে আটক করে।
সোনালীর বাবা ভাদু শেখ গত জুলাই মাসে কলকাতা হাইকোর্টে হেবিয়াস কর্পাস (আদালতে উপস্থাপনের আবেদন) মামলা করেন। তিনি অভিযোগ করেন, পুলিশ তাদের ভারতীয় নাগরিকত্বের নথি, যেমন আধার কার্ড দেখানোর পরও আটক করেছে। এরপর চরম অমানবিকতার মধ্য দিয়ে তাদের আসাম সীমান্তে নিয়ে যাওয়া হয় এবং বলপূর্বক আন্তর্জাতিক সীমান্ত পার করিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়। সেখানে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে গত ২২ আগস্ট থেকে তারা বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলে বন্দি।
ভারতে ‘ভুলবশত নির্বাসনের’ এই ঘটনায় দ্রুতই দুই দেশের বিচার বিভাগ হস্তক্ষেপ করে এবং নাটকীয় মোড় আসে। প্রথমে কলকাতা হাইকোর্ট দিল্লি পুলিশের কাজের তীব্র সমালোচনা করে। আদালত পুলিশকে এ দলটিকে ‘অবৈধ অভিবাসী’ হিসেবে তড়িঘড়ি নির্বাসিত করার জন্য ভর্ৎসনা করেন। আদালত কেন্দ্রীয় সরকারকে এই দলটিকে চার সপ্তাহের মধ্যে ভারতে ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেন।
কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশের মাত্র চার দিনের মধ্যেই গত ৩০ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট আদালত একটি নির্দেশ জারি করেন। আদালত ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনকে নির্দেশ দেন যেন সোনালী এবং জেলে বন্দি বাকি পাঁচজনকে ‘নিরাপদে প্রত্যাবাসন’ করা হয়। বিচারকের নির্দেশনায় স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, আটককৃত ছয়জনই ‘ভারতীয় নাগরিক’ এবং তাদের নামে আধার কার্ড রয়েছে। নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে আধার কার্ডের নম্বর এবং তাদের ভারতের আবাসিক ঠিকানাও আদেশে উদ্ধৃত করা হয়েছে।
এই পুরো ঘটনায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানবিক দিক হলো, সোনালী খাতুন যেকোনো দিন সন্তানের জন্ম দিতে পারেন। বন্দিদশার এই কঠিন সময়ে এক সপ্তাহ আগে জেলে পড়ে গিয়ে তিনি আহত হন। তবে সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, তার গর্ভস্থ সন্তানের স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে তার জন্য প্রয়োজনীয় আলট্রাসাউন্ড পরীক্ষাটি এখনো করানো হয়নি।
বীরভূমের সমাজকর্মী মফিজুল শেখ চাঁপাইনবাবগঞ্জে শিবির বসিয়ে আটক ব্যক্তিদের আইনি সহায়তা সমন্বয় করছেন। তিনি শুক্রবার ফোনে সোনালীর সঙ্গে কথা বলেছেন। মফিজুল ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেন, ‘সোনালী কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন এবং দ্রুত ঘরে ফেরার জন্য আকুতি জানাচ্ছিলেন। তিনি বারবার জিজ্ঞেস করছিলেন, ‘আমাদের আর কত দিন এখানে থাকতে হবে? আমাদের অপরাধ কী? দয়া করে বলুন, বাড়িতে আমার জন্য একটা মেয়ে অপেক্ষা করছে।’ তার এই কথাগুলো শুনে আমি নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি!’
তবে দুই দেশের আদালতের ইতিবাচক নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়া এখনো দ্রুত এগোচ্ছে না। একজন ভারতীয় কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, আধার কার্ড ভারতীয় নাগরিকত্বের একমাত্র প্রমাণ নয়। প্রথমে ছয়জনের পরিচয় যথাযথভাবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তিনি বলেন, এর ফলে প্রত্যাবাসনপ্রক্রিয়া অপ্রত্যাশিতভাবে দীর্ঘ হতে পারে।
এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে ভারত ও বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ এবং বিজিবি) মধ্যে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এই বৈঠকেই বাংলাদেশিরা আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের ভারতীয় কর্মকর্তাদের কাছে হস্তান্তর করবেন।
সোনালীর পরিবারের পক্ষে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা লড়া আইনজীবী সৈকত ঠাকুরতা টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেন, ‘এখানে কূটনৈতিক জটিলতা জড়িত। আমি নিশ্চিত নই, তিনি ঠিক কবে নাগাদ বাড়ি ফিরতে পারবেন।’
এদিকে সোনালী বিবিসহ বাংলাদেশে ‘পুশব্যাক করা’ ছয়জনের জামিন এখনও মঞ্জুর হয়নি। নিম্ন আদালতে এ সংক্রান্ত মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য হয়েছে ২৩ অক্টোবর। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পুলিশ জানায়, গত ২৯ সেপ্টেম্বর ‘অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে আটক সোনালী ও সুইটি বিবি-সহ ছয়জনের জামিনের শেষ শুনানি হয়েছে ওই জেলার মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের (সিজেএম) আদালতে। এরপরই পূজার ছুটি পড়ে যায়।
এই ঘটনাকে ঘিরে পশ্চিমবঙ্গ অভিবাসী শ্রমিক কল্যাণ বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং রাজ্যসভার সাংসদ সমীরুল ইসলামের (তৃণমূল কংগ্রেস) মন্তব্য তীব্র রাজনৈতিক বিতর্ক তৈরি করেছে। তিনি এক্স পোস্টে সরাসরি বিজেপিকে অভিযুক্ত করেছেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশি আদালত তাদের ভারতীয় নাগরিক হিসেবে ঘোষণা করার পাশাপাশি আধার কার্ডের মতো প্রমাণও দাখিল করেছে। এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করে বিজেপি কীভাবে দরিদ্র বাংলাভাষী মানুষকে ভাষা ছাড়া অন্য কোনো কারণে বাংলাদেশি তকমা দিয়ে নিষ্ঠুরভাবে নির্বাসিত করে।’ তিনি অবিলম্বে কেন্দ্রীয় সরকারকে দ্রুত প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শেষ করার অনুরোধ করেছেন।
সব মিলিয়ে দুই দেশের আদালতের মানবিক ও বিচারিক নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও অন্তঃসত্ত্বা সোনালী খাতুন এবং তার পরিবারের সদস্যদের স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের তারিখ এখনো অনিশ্চিত।
ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে বন্দি থাকার সময়কার অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন দৃকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং আলোকচিত্রী শহিদুল আলম। তিনি বলেছেন, তাদের ওপর মানসিক অত্যাচার বেশি করা হয়েছে। জেলের ভেতরে আতঙ্ক তৈরির চেষ্টা হয়েছে। এমনকি হামাসের সমর্থক দাবি করে তাদের একজন সহযাত্রীকে গুলি করে মারারও হুমকি দেওয়া হয়েছে।
গতকাল শনিবার বিকেলে রাজধানীর দৃক পাঠ ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমন অভিজ্ঞতার কথা জানান। আজ ভোরে ইসরায়েলের আটক দশা থেকে মুক্ত হয়ে দেশে ফেরেন শহিদুল আলম। নিজের অভিজ্ঞতা জানাতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন তিনি।
শহিদুল আলম বলেন, আটক করে জাহাজ থেকে নামানোর পর তাদের ওপর অনেক ধরনের নির্যাতন করা হয়েছে। তবে এর মধ্যে মানসিক নির্যাতন বেশি করা হয়েছে। তিনি বলেন, তাদের হাত পেছনে নিয়ে বেঁধে যেখানে হাঁটুমুড়ে বসানো হয়েছিল, সেখানে ইসরায়েলি বাহিনী আগে থেকে মূত্রত্যাগ করেছিল। এরপর তার বাংলাদেশি পাসপোর্ট ইসরায়েলি বাহিনী ফেলে দেয়। তিনি যতবার সেটি তুলেছেন ততবার তার ওপর চড়াও হয়েছে। সেসময় নিজেদের মধ্যে কথা বলায় অন্য দুজন সহযাত্রীকে মেশিনগানের ব্যারেল দিয়ে আঘাত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
শহিদুল আলম জানান, মরুভূমির মধ্যে ইসরায়েলের সবচেয়ে গোপনীয় কারাগারে তাদের রাখা হয়। সেখানে অন্য জাহাজ থেকে আটক হওয়া আরেকজন সহযাত্রী তাকে জানান, ইসরায়েলি বাহিনী ওই ব্যক্তিকে আটক করার পর বলেছিল ‘তুমি হামাসের এজেন্ট, ভেতরে নিয়ে তোমাকে গুলি করা হবে।’
শহিদুল আলম আরও বলেন, কারাগারে তারা অনশন করেছিলেন। কোনো খাবার খাননি। তবে শারীরিক দুর্বলতার কারণে কয়েকজন খাবার খেয়েছেন। আড়াই দিনে তাদের মাত্র এক প্লেট খাবার দেওয়া হয়। তাদের যেখানে শুতে দেওয়া হয়েছিল, তা ছিল লোহার, শৌচাগারগুলোর অবস্থাও ছিল শোচনীয়। তিনি আরও বলেন, ‘গভীর রাতে হঠাৎ করে ইসরায়েলি বাহিনী মেশিনগান নিয়ে সেলের মধ্যে ঢুকে যেত। তারা জোরে আওয়াজ করত, চিৎকার করে দাঁড়ানো বা অন্য আদেশ দিত এবং আতঙ্ক তৈরি করার চেষ্টা করত।’
এ সময় একজন সাংবাদিক পরবর্তী পরিকল্পনা জানতে চাইলে শহিদুল আলম বলেন, ‘অসাধারণ কিছু ব্যক্তি একসঙ্গে হওয়ার কারণে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে আমরা এখন আন্তর্জাতিকভাবে একটা নেটওয়ার্ক দাঁড় করাব। যেহেতু গ্লোবাল লিডাররা করবে না, আমরা অ্যাকটিভিস্টরা কীভাবে করতে পারি সেই লড়াইয়ের প্রস্তুতি আমরা নিয়েছি।… একটা ব্লুপ্রিন্ট আমরা করে রেখেছি এবং আমরা ফেরার আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে আবার আমরা যাব এবং হাজারটা জাহাজ যাবে।’
দৃকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘আমাদের দেশে যেটা করেছি জুলাই অভ্যুত্থানের সময় রাস্তায় নেমেছি, আন্দোলন করে এ রকম একজন স্বৈরাচারকেও আমরা হঠাতে পেরেছি। এখানেও সেই জিনিস, আন্তর্জাতিকভাবে সেরকম একটা জিনিস করা দরকার।’
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘আসুন, একটা উদাহরণ সৃষ্টি করি এই দেশে যে আইনের শাসন কাকে বলে আমরা এই ইলেকশনে (ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন) এটা দেখাতে চাই। তাতে যা হওয়ার হবে।’
গতকাল শনিবার সকালে চট্টগ্রাম নগরে ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তাদের নিয়ে অনুষ্ঠিত এক কর্মশালায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তিনি। ‘নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনে চ্যালেঞ্জসমূহ নিরূপণ ও উত্তরণ’ শীর্ষক এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয় নগরের আসকার দিঘি এলাকার আঞ্চলিক লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণকেন্দ্র মিলনায়তনে। কর্মশালার আয়োজন করে সিবিটিইপি প্রকল্প (নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় আইসিটি ব্যবহারে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সক্ষমতা বৃদ্ধি)।
কর্মশালায় প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীন বলেন, ‘যেদিন নির্বাচন হবে, সেদিন মনে রাখবেন, আপনি হচ্ছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। আইনগতভাবে সর্বময় ক্ষমতা আপনাকে দেওয়া আছে। যদি গোলমাল করে, তাহলে ভোটকেন্দ্র বন্ধ করে দেবেন। তিনটা করলে তিনটা। দরকার হলে পুরো সংসদীয় আসন বাতিল করে দেবেন।’
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘আমরা সহজে ছাড়ার পাত্র নই। সহজে ছাড়ব না। আপনাদের পেছনে আমরা আছি। ইলেকশন কমিশন ফুল সাপোর্ট দিয়ে যাবে আপনাদের।’
নির্বাচনের বাতাস বইতে শুরু করেছে উল্লেখ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীন বলেন, ‘সবাই মিলে একটা সুন্দর নির্বাচন করতে হবে। এ জন্য ভোট গ্রহণের দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং কর্মকর্তা, প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের ক্ষমতায়িত করা হচ্ছে। সব ক্ষমতা দেওয়া হবে তাদের। ক্ষমতা ব্যবহার করতে হবে। যদি ক্ষমতা ব্যবহার না করেন, তাহলে অপরাধ হিসেবে ধরে নেওয়া হবে এবং যথাসময়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা না নেন, তাহলে তা ভালোভাবে নেওয়া হবে না। ক্ষমতা থাকা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি ক্ষমতা ব্যবহারও গুরুত্বপূর্ণ। যতক্ষণ আইন ও বিধি অনুযায়ী কাজ করবেন, ততক্ষণ নির্বাচন কমিশন পাশে থাকবে।’
নির্বাচনে বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীন বলেন, ‘দেশে যখন নির্বাচন হয়, তখন বড় কিছু চ্যালেঞ্জ থাকে। যেমন প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জ, নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জ, আইনগত চ্যালেঞ্জ, প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ। তবে ভোট গ্রহণের জন্য নিরাপত্তা বা সিকিউরিটি চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বড় চ্যালেঞ্জ। এটি বিশাল আকারে দেখা দিয়েছে এবং এটা নিয়ে সবাই দুশ্চিন্তার মধ্যে আছে। এটি মোকাবিলাটা আমাদের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়াবে।’
জাতীয় নির্বাচন করা শুধু একা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব নয় বলে মন্তব্য করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীন। তিনি বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচন জাতীয়ভাবেই করতে হবে। এটি নির্বাচন কমিশনের একার কাজ নয়। এটি জাতীয়, দায়িত্ব সবার। প্রশাসন, পুলিশসহ সবাই মিলে করতে হবে। সবার সহযোগিতা ও সমন্বয় দরকার। সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচনের জন্য সমন্বয় দরকার। নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে উপজেলা পর্যন্ত ইমার্জেন্সি সেল থাকবে।’
কর্মশালায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীন আরও বলেন, ‘বেশির ভাগ প্রিসাইডিং কর্মকর্তা হচ্ছেন শিক্ষক। তাদের অনেকেই ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে পরিচিত নন। তাই এ রকম মুহূর্ত তৈরি হলে কীভাবে মোকাবিলা করতে হবে, তা প্রশিক্ষণ দিতে হবে। তবে পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, গত ১৫ বছরে পুলিশকে ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট মোকাবিলায় নিয়োজিত করা হয়নি। বিশেষ বিশেষ বাহিনী দিয়ে ক্রাইসিস ম্যানেজ করা হতো। সুতরাং পুলিশের মধ্যেও ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট নিয়ে সমস্যা রয়েছে।’
কর্মশালায় বিশেষ অতিথি ছিলেন নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজ, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. জিয়াউদ্দীন, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আহসান হাবীব, ইউএনডিপি বাংলাদেশর সহকারী আবাসিক প্রতিনিধি আনোয়ারুল হক। সভাপতিত্ব করেন জ্যেষ্ঠ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ বশির আহমেদ।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, প্রতিটি কন্যাশিশুর স্বপ্ন পূরণের পথে আমরা রাষ্ট্রকে তার অংশীদার বানাব, বাধা নয়। আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস উপলক্ষে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক পোস্টে তিনি একথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, বাংলাদেশের জন্য আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি এমন, যেখানে প্রতিটি মেয়ের একই স্বাধীনতা, সুযোগ ও সুরক্ষা থাকবে, যা যেকোনো বাবা-মা তাদের নিজের সন্তানের জন্য কামনা করেন।
আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস উপলক্ষে তারেক রহমানের দেওয়া স্ট্যাটাসটি নিচে তুলে ধরা হলো- আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবসে আসুন, আমরা প্রতিটি মেয়ের স্বপ্ন দেখার, শেখার, নেতৃত্ব দেওয়ার, মর্যাদার সঙ্গে বেঁচে থাকার অধিকার উদযাপন করি।
একজন কন্যার বাবা হিসেবে আমি জানি যে, মেয়েদের ক্ষমতায়ন শুধু নীতি নয়- এটি ব্যক্তিগত দায়িত্ব। বাংলাদেশের জন্য আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি এমন, যেখানে প্রতিটি মেয়ের একই স্বাধীনতা, সুযোগ ও সুরক্ষা থাকবে, যা যেকোনো বাবা-মা তাদের নিজের সন্তানের জন্য কামনা করেন।
তিনি বলেন, বিএনপি সরকারের রয়েছে জীবন পরিবর্তনের এক ঐতিহ্য এবং সুযোগ পেলে আমরা আরো বেশি কিছু করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা দেখেছি, কিভাবে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান পোশাক খাতের প্রবৃদ্ধিকে একটি শিল্পের চেয়েও বেশি কিছুতে পরিণত করেছিলেন। এটি আশায় পরিণত হয়েছিল। লাখ-লাখ নারী কাজে প্রবেশ করেছিলেন। আয়, সম্মান ও স্বাধীনতা অর্জন করেছিলেন। তার নেতৃত্বে, বাংলাদেশজুড়ে মেয়ে শিশু এবং নারীদের জীবনের উন্নতিকে প্রতিষ্ঠিত করার একক উদ্দেশ্য নিয়ে ‘মহিলাবিষয়ক মন্ত্রণালয়’ তৈরি করা হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে মেয়েদের শিক্ষা বিশেষ সুবিধা নয়, বরং একটি অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা বিনামূল্যে ঘোষণা করা হয়েছিল এবং ‘খাদ্য বা টাকার বিনিময়ে শিক্ষা’ কর্মসূচি লাখ-লাখ মেয়েকে স্কুলে পাঠাতে সাহায্য করেছিল, পারিবারিক ভাগ্য পরিবর্তন করেছিল, শক্তিশালী সম্প্রদায় গড়ে তুলেছিল, ক্ষমতায়িত নারীদের একটি প্রজন্ম তৈরি করেছিল।
তার পথপ্রদর্শক উদ্যোগ ‘ফিমেল সেকেন্ডারি স্কুল অ্যাসিস্ট্যান্স প্রজেক্ট’ আমাদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো মাধ্যমিক শিক্ষায় নারী-পুরুষের সমতা প্রতিষ্ঠা করে এবং বাল্যবিয়ের হার কমিয়ে আনে। এই প্রকল্প পরবর্তী সময়ে কন্যাশিক্ষা ও নারীর ক্ষমতায়নের এক বৈশ্বিক আদর্শে পরিণত হয়, যা অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশেও অনুসরণ করা হয়েছে। এই সাহসী পদক্ষেপগুলো দেখায়, যা প্রমাণ করে যে যখন প্রশাসন মেয়েদের মর্যাদাকে সম্মান করে এবং তাদের ভবিষ্যতে বিনিয়োগ করে তখন কী সম্ভব। এগুলো সাহসী পদক্ষেপের দৃষ্টান্ত, যা প্রমাণ করে— যখন কোনো সরকার কন্যাশিশুদের মর্যাদা রক্ষা করে এবং তাদের ভবিষ্যতে বিনিয়োগ করে, তখন কত কিছুই সম্ভব হয়ে ওঠে।
বিএনপির ভবিষ্যৎ নীতিমালা সম্মান ও বিনিয়োগ অব্যাহত রেখেছে, যার মাধ্যমে:
১. নারী পরিবারের প্রধানদের নামে ‘পরিবার কার্ড’- প্রতিটি পরিবারের প্রধানকে সরাসরি সাহায্য ও সহায়তা পৌঁছানো নিশ্চিত করা।
২. নারী উদ্যোক্তাদের জন্য এসএমই ঋণ, ব্যবসায়িক প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহায়তা- কারণ অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা কোনো আপসের বিষয় নয়।
৩. মেয়েদের জন্য শক্তিশালী শিক্ষাগত ও বৃত্তিমূলক সুযোগ— যাতে প্রতিটি মেয়ে, গ্রামে হোক বা শহরে, দক্ষতা অর্জন করতে পারে এবং ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারে।
৪. নারীরা সিদ্ধান্ত গ্রহণের টেবিলে- রাজনীতি, শাসন ও নীতিনির্ধারণে অংশগ্রহণ বৃদ্ধি। একটি নিরাপদ জাতি এ থেকে কম আশা করতে পারে না।
৫. মর্যাদা ও স্বাধীনতার সুরক্ষা- মেয়েদের চলাফিরা, কথা বলতে, ইন্টারনেট অ্যাক্সেস করতে, ভয় ছাড়াই বাঁচতে সক্ষম করা।
৬. পরিবার ও সামাজিক কল্যাণকে মূলনীতি হিসেবে-স্বাস্থ্য, গ্রামীণ ক্ষমতায়ন, সবার জন্য কর্মসংস্থান, বিশেষভাবে নারী ও কন্যাশিশুর ওপর কেন্দ্রিত।
আমরা খালি বাক্যবুলিতে কথা বলি না। আমরা বিশ্বাস ও অভিজ্ঞতার সঙ্গে, নির্ধারিত লক্ষ্য নিয়ে কথা বলি। প্রতিটি কন্যাশিশুর স্বপ্ন পূরণের পথে আমরা রাষ্ট্রকে তার অংশীদার বানাব, বাধা নয়।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চার্জশিটে নাম আসা সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে ১৫ জন কর্মকর্তাকে ঢাকায় সেনা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। হেফাজতে থাকা কর্মকর্তাদের মধ্যে ১৪ জন কর্মরত ও একজন অবসরোত্তর ছুটিতে (এলপিআরে) থাকা কর্মকর্তা রয়েছেন।
শনিবার(১১ অক্টোবর ২০২৫) বিকেলে ঢাকা সেনানিবাসের মেসে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের মামলাসংক্রান্ত বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অ্যাডজুটেন্ট জেনারেল মেজর জেনারেল মো. হাকিমুজ্জামান।
তিনি বলেন, যেসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চার্জশিট হয়েছে তাদের মধ্যে ১৫ জন কর্মকর্তা ঢাকায় সেনা হেফাজতে আছে। আমরা ১৬ জনকে সেনা হেফাজতে আসার জন্য বলেছিলাম। তাদের মধ্যে ১৫ জন্য আমাদের সেনা হেফাজতে এসেছে।
তিনি আরও বলেন, তিনটি মামলায় ২৫ জন সেনা কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে অবসরে আছেন ৯ জন, এলপিআর-এ একজন, আর বর্তমানে কর্মরত আছেন ১৫ জন।
গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত সশস্ত্র বাহিনীতে কর্মরতরা হলেন: মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, মেজর জেনারেল কবীর আহাম্মদ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভির মাজাহার সিদ্দিকী, কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, কর্নেল কে এম আজাদ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মশিউর রহমান জুয়েল এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন।
মো. হাকিমুজ্জামান বলেন, সেনাবাহিনীর কাছে কারও বিরুদ্ধে গুমের ওয়ারেন্টের কোনো কপি আসেনি। সেনাবাহিনী কোনো ওয়ারেন্ট পেপার পায়নি। এলপিআরের একজন এবং সার্ভিসে থাকা ১৫ জনসহ মোট ১৬ জনকে সেনা হেফাজতে নেওয়ার আদেশ দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৫ জনকে এরই মধ্যে সেনা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
এই সেনা কর্মকর্তা জানান, মেজর জেনারেল কবীর আত্মগোপনে গেছেন। তিনি যাতে বিদেশে চলে যেতে না পারেন, সেজন্য তৎপরতা অব্যাহত রাখা হয়েছে। তিনি ৯ অক্টোবর সকালে বাসা থেকে বের হয়েছেন।
তিনি বলেন, ওয়ারেন্টভুক্তদের ২২ অক্টোবরের মধ্যে আদালতে হাজির করার নির্দেশ আছে, আইনি ব্যাখ্যার প্রয়োজন রয়েছে এই ওয়ারেন্ট নিয়ে। কাজেই ২২ অক্টোবর এদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করার বিষয়ে আইনের ব্যাখ্যা পাওয়া সাপেক্ষে সেই অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
তিনি আরও জানান, গুমের শিকার হওয়া প্রতিটি পরিবারের প্রতি সেনাবাহিনী সহানূভুতিশীল। সব অপরাধের বিচারের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়ে সেনাবাহিনী বিচার প্রক্রিয়া ও গুম কমিশনকে সহায়তা করে যাচ্ছে।
প্রসঙ্গত, মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সাবেক ও বর্তমান ২৫ জন সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। গত বুধবার ট্রাইব্যুনাল এই নির্দেশ দেন। আগামী ২১ অক্টোবরের মধ্যে তাদের গ্রেপ্তার করে ২২ অক্টোবর ট্রাইব্যুনালে হাজির করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) প্রধান প্রসিকিউটরের তথ্য উদ্ধৃত করে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে সশস্ত্র বাহিনীর আর কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির কোনো পরিকল্পনা নেই।
শনিবার বাসসকে প্রেস সচিব বলেন, দআমরা আইসিটির প্রধান প্রসিকিউটরের দপ্তর থেকে জানতে পেরেছি যে এই মুহূর্তে সশস্ত্র বাহিনীর আর কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পরিকল্পনা নেই।’
শতাধিক সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হতে যাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এমন দাবি প্রত্যাখ্যান করে শফিকুল আলম বলেন, ‘এই খবর সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও মনগড়া গুজব।’
তিনি জনগণকে এসব বিভ্রান্তিকর তথ্য বিশ্বাস না করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘এই ধরনের অপপ্রচার সাধারণ মানুষের মধ্যে বিশেষ করে সশস্ত্র বাহিনীর ভেতরে বিভেদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে চালানো হচ্ছে।’
শফিকুল আলম আরও বলেন, ‘আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনের আগে দেশকে অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যেই এসব অসৎ গুজব ছড়ানো হচ্ছে।’
প্রেস সচিব স্পষ্ট করে জানান, সেনা গোয়েন্দা সংস্থা ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স (ডিজিএফআই) বিলুপ্ত করার কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই।
তিনি আরও বলেন, ‘সংস্থাটির সীমান্তবর্তী ও বহিঃদেশীয় গোয়েন্দা কার্যক্রম আরও জোরদার করতে সরকার সংস্কারমূলক পদক্ষেপ বিবেচনা করছে।’ সূত্র: বাসস
জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান ১৫ অক্টোবরের (বুধবার) পরিবর্তে ১৭ অক্টোবর (শুক্রবার) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। জনসাধারণের অংশগ্রহণের সুবিধার্থে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে এ অনুষ্ঠান আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
আজ শনিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
বৈঠক শেষে কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ জানান, জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। আগ্রহী জনগণের অংশগ্রহণের সুবিধার্থে অনুষ্ঠানটি ১৭ অক্টোবর, শুক্রবার বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত হবে। যদিও এর আগে কমিশনের তরফ থেকে জানানো হয়েছিল যে ১৫ অক্টোবর বুধবার বিকেলে জুলাই সনদ স্বাক্ষরিত হবে।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোটের প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন। এছাড়া বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার প্রতিনিধিদের এ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হবে।
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার। সূত্র: বাসস
অন্তবর্তীকালীন সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা ড.আ ফ ম খালিদ হোসাইন বলেছেন, আমরা সেইফ এক্সিট চাইনা, স্বাভাবিক এক্সিট নিয়ে নির্বাচন পরবর্তী এদেশেই থাকতে চাই। তিনি বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারী মাসে নির্বাচন যথাসময়ে হবে এবং সুষ্ঠুভাবেই হবে। ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন সকল প্রস্তুতি নিচ্ছে। নির্বাচিত সরকারের নিকট দায়িত্ব হস্তান্তর করে আমরা চলে যাবো। তিনি বলেন, সেইফ একজিট বলতে আমি কিছু জানিনা। আমার কোন সেকেন্ড হোম নেই। এমনকি ঢাকায় আমার থাকার কোন বাড়ীও নেই। বর্তমানে আমি সরকারী বাড়ীতে থাকি আর চট্টগ্রামে ভাড়া বাসায় থাকি। আমি এই দেশেরই মানুষ,এই দেশ আমার আপনার, এখানেই আমি থাকব। তিনি আরো বলেছেন আমরা সম্প্রীতির বন্ধনে থাকতে চাই এবং সম্প্রীতিই একমাত্র মৌলিক বিষয়। এটা নিয়েই পার্বত্য এলাকাসহ পুরো দেশে আমরা সকলে একসাথে থাকতে পারব বলে আমি আশাবাদি।
তিনি শনিবার রাঙামাটিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম ওলামা পরিষদ কর্তৃক আয়োজিত সম্প্রীতি সমাবেশ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপরোক্ত বক্তব্য রাখেন।
ধর্ম উপদেষ্টা ড, আ ফ ম খালিদ হোসাইন আরো বলেন, ‘কাউকে ধর্মীয়, সামাজিক বা অন্য কোনোভাবে বঞ্চিত করা ঠিক নয়। আমাদের সকলের মাঝে সম্প্রীতি থাকা দরকার, কারণ এটিই আসল।’ দেশের উন্নয়নের ভিত্তি হচ্ছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি। আমি সকল সম্প্রদায়ের উপদেষ্টা। আমাদের দেশের সকল সম্প্রদায়ের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান সকল ধর্মের জন্য বরাদ্ধ আছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম ওলামা পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মাওলানা হাজী শরীয়ত উল্লাহর সভাপতিত্বে এবং সাধারন সম্পাদক মাওলানা মুহাম্মদ আবু বক্কর সিদ্দিকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সম্প্রীতি সমাবেশে অন্যান্যর মধ্যে বক্তব্য রাখেন ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব সাদেক হোসেন, রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মো: হাবিব উল্লাহ মারুফ, জেলা পুলিশ সুপার ড. এস এম ফরহাদ হোসেন প্রমুখ। সম্প্রীতির এসভায় জেলা উপজেলার মসজিদ, মন্দির, বিহারসহ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এবারের নির্বাচনে আমরা আইনের শাসন কাকে বলে, সেটা দেখাতে চাই বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন।
তিনি বলেন, ভোট গ্রহণকেন্দ্রে প্রিজাইডিং অফিসারই হবেন সেই কেন্দ্রের ‘চিফ ইলেকশন অফিসার’। আইন অনুযায়ী সব ধরনের ক্ষমতা প্রয়োগের দায়িত্ব তার ওপরই থাকবে।
শনিবার (১১ অক্টোবর) সকাল ১১টায় চট্টগ্রামে ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে নির্বাচন প্রক্রিয়া সংক্রান্ত কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে সিইসি একথা বলেন।
তিনি বলেন, প্রয়োজনে ভোটকেন্দ্র স্থগিত করুন, আইন প্রয়োগ করুন। তবে নিরপেক্ষতা বজায় রেখে সাহসের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবেন।
সিইসি নাসির উদ্দিন আরো বলেন, আজকের এই কর্মশালা থেকে আমাদের বিভিন্ন ক্যাপসগুলো উঠে আসবে। আমরা তো সব জানি না, তাই আমরা অভিজ্ঞদের পরামর্শ নিচ্ছি। যারা এর আগে নির্বাচনে কাজ করেছেন, তাদের অভিজ্ঞতা থেকে শিখছি। যেখানে যেখানে ঘাটতি আছে, আমরা সেই ঘাটতি পূরণ করে নেব। আমাদের এখানে খুব দ্রুত কাজ করতে হচ্ছে, অনেক চ্যালেঞ্জও আছে।
তিনি বলেন, যাই হোক, আমাদেরকে সবাই মিলে একটি সুন্দর নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। আমরা চাই, একটি এমপাওয়ার্ড (ক্ষমতাসম্পন্ন) প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার ও রিটার্নিং অফিসার তৈরি করতে। আমরা একটি বিশ্বমানের ও সম্পূর্ণ ক্ষমতাসম্পন্ন প্রিজাইডিং অফিসার গড়ে তুলতে চাই।
সিইসি আরো বলেন, আপনাদের হাতে আমরা সমস্ত ক্ষমতা দিচ্ছি। আপনি যদি সেই ক্ষমতা ব্যবহার না করেন, তাহলে সেটাকে আমরা অপরাধ হিসেবে গণ্য করব। আপনি যদি যথাসময়ে যথাযথ ব্যবস্থা না নেন, সেটাও আমরা ভালোভাবে নেব না।
তিনি বলেন, ক্ষমতা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তার সঠিক ব্যবহারও ততটাই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা চাই, যেই পর্যায়ের ক্ষমতা আপনাদের দেওয়া হয়েছে, আপনারা সেটি দায়িত্বশীলভাবে ব্যবহার করবেন।
নির্বাচনী কর্মকর্তাদের উদ্দেশে সিইসি বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত আপনারা আইনের মধ্যে থেকে দায়িত্ব পালন করবেন, নির্বাচন কমিশন আপনাদের পূর্ণ সমর্থন দিয়ে যাবে— এই নিশ্চয়তা আমি দিচ্ছি।
তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য হলো একটি স্বচ্ছ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করা। এজন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, নিরপেক্ষ ও দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, প্রশিক্ষণ কার্যক্রম এমনভাবে তৈরি করতে হবে, যাতে বিভিন্ন পেশার মানুষ যাদের মধ্যে কেউ কেউ আগে কখনো ভোটগ্রহণের অভিজ্ঞতা পাননি, তারাও দায়িত্ব পালনে দক্ষ হয়ে ওঠেন। ‘ওয়ান সাইজ ফিটস অল’ পদ্ধতিতে নয়, বরং অংশগ্রহণকারীদের পটভূমি বিবেচনায় প্রশিক্ষণ মডিউল তৈরি করতে হবে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো নিরাপত্তা। প্রশাসনিক, আইনগত ও প্রযুক্তিগত নানা চ্যালেঞ্জ থাকলেও নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনাই সবচেয়ে কঠিন বিষয়।
এজন্য তিনি প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
এ এম এম নাসির উদ্দিন জানান, নির্বাচন কমিশন একটি ‘সেন্ট্রাল কো-অর্ডিনেশন সেল’ ও ‘ইমার্জেন্সি রেসপন্স ইউনিট’ গঠন করছে, যাতে দেশের যে কোনো স্থান থেকে দ্রুত যোগাযোগ ও ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।
তিনি বলেন, একটি সফল নির্বাচন আয়োজনের মূল চাবিকাঠি হলো সমন্বয়। প্রিজাইডিং অফিসার, রিটার্নিং অফিসার, প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে কার্যকর সমন্বয়ই নির্বাচনের সাফল্য নিশ্চিত করবে।
তিনি জানান, নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুয়া তথ্য ও এআই-ভিত্তিক অপপ্রচার মোকাবিলায় একটি সেল গঠন করেছে। সূত্র: বাসস
এমেরিটাস অধ্যাপক, বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে আজ রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জনসাধারণের ঢল নামে।
তিনি গতকাল বিকেল ৫টায় রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
মুষল বৃষ্টির মধ্যেও সরকারি কর্মকর্তা, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা অনুরাগীরা তাঁর প্রতি ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের পক্ষ থেকেও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এর মধ্যে ছিল— প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর, কপিরাইট অফিস, আর্কাইভস ও গ্রন্থাগার অধিদপ্তর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃত্যকলা বিভাগ, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, কালি ও কলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ, লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন, ব্র্যাক পরিবার, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব), শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি, এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র, জাতীয় জাদুঘর, বাংলাদেশের জাসদ, বাসদ, ছায়ানট, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এবং বাংলা একাডেমি।
প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ প্রফেসর সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী তাঁর প্রাক্তন ছাত্র ও পরবর্তী সময়ের সহকর্মী সৈয়দ মনজুরুল ইসলামকে স্মরণ করে বলেন, 'মনজুর শুধু মেধাবী ছাত্রই ছিলেন না, তিনি ছিলেন অসাধারণ শিক্ষকও। তাঁর পিতা ছিলেন শিক্ষক, আর সেই উত্তরাধিকার তিনি গৌরবের সঙ্গে বহন করেছেন। তাঁর সব ছাত্র-ছাত্রী তাঁকে গভীরভাবে ভালোবাসতেন।'
তিনি আরও বলেন, সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম সাহিত্যিক হিসেবেও উজ্জ্বল ছিলেন, বিশেষত কথাসাহিত্যে। এজন্য তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ও একুশে পদক লাভ করেন।
কথাসাহিত্যের পাশাপাশি তিনি শিল্পসমালোচক হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। চারু ও নন্দনকলার গভীর জ্ঞান ছিল তাঁর। তিনি শেক্সপিয়ারের নাটক অনুবাদ এবং ইংরেজিতেও মৌলিক সাহিত্য রচনা করেছেন।
প্রফেসর চৌধুরী বলেন, 'তিনি ছিলেন বিনয়ী, প্রাণবন্ত ও ইতিবাচক মনোভাবের মানুষ। আমি কখনো তাঁকে দুঃখিত, হতাশ বা অসুস্থ দেখিনি। তাঁর মৃত্যু এক অপূরণীয় ক্ষতি। তবে শিক্ষক, লেখক, সমালোচক এবং সর্বোপরি একজন অসাধারণ মানুষ হিসেবে তাঁর কাজ আমাদের অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।'
বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদ শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বলেন, 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক শিক্ষক আছেন, কিন্তু অল্প কয়েকজনই পুরো জাতির কাছে বুদ্ধিজীবী হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। প্রফেসর মনজুরুল ইসলাম তাঁদের একজন।'
তিনি বলেন, প্রফেসর ইসলাম শুধু প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ছাত্রদেরই গড়ে তোলেননি, তাঁর সাহিত্যকর্মের মাধ্যমে অসংখ্য তরুণ মনকেও অনুপ্রাণিত করেছেন। তাঁর কথাসাহিত্য নাগরিক জীবনের সংকটকে এমনভাবে ধারণ করেছে, যা খুব কম লেখকই করতে পেরেছেন।
'তাঁর প্রয়াণে আমরা জাতি হিসেবে এক অমূল্য সম্পদ হারালাম। তবে আমি বিশ্বাস করি, তিনি আজীবন আমাদের মাঝে অমর হয়ে থাকবেন,’ বলেন বাসস-এর প্রধান সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদ।
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। সূত্র: বাসস
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, বর্তমানে 'সেফ এক্সিট' নিয়ে নানা রকম কথাবার্তা হচ্ছে। কিন্তু উপদেষ্টারা ভালোভাবেই জানেন যে তাদের কোনপ্রকার 'সেফ এক্সিট' এর প্রয়োজন নেই।
আজ দুপুরে রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের বলরুমে অনুষ্ঠিত 'জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অধ্যাদেশ, ২০২৫' এর খসড়া বিষয়ক জাতীয় আলোচনা সভায় বক্তব্য দেয়ার সময় তিনি একথা বলেন।
আইন উপদেষ্টা বলেন, 'আপনারা জানেন এখন 'সেফ এক্সিট' নিয়ে নানা কথাবার্তা হচ্ছে। আমরা উপদেষ্টারা খুব নিশ্চিতভাবে জানি আমাদের কারো কোনো 'সেফ এক্সিট' এর প্রয়োজন নেই। বরং জাতি হিসেবে দেশের মানুষের বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের সৃষ্ট বিধ্বংসী রাষ্ট্র কাঠামো থেকে সেফ এক্সিটের প্রয়োজন আছে।'
তিনি বলেন, 'গত ৫৫ বছর আমরা যে দুঃশাসন, গুম ও বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড দেখলাম, দেখলাম ব্যাংক থেকে সাধারণ মানুষের আমানতের টাকা লুট হচ্ছে- এ ধরনের একটি ভয়াবহ ও আত্মবিধ্বংসী রাষ্ট্র কাঠামো থেকে আমাদের এ জাতির সেফ এক্সিট এর প্রয়োজন আছে।'
তিনি বলেন, বাহাত্তরের সংবিধানে বলা হয়েছিলো যে রাষ্ট্রপতি বিচারপতিকে স্বাধীনভাবে নিয়োগ করবেন যেন এতে রাজনৈতিক প্রভাব না থাকে। কিন্তু সবাই জানেন রাষ্ট্রপতি কখনই স্বাধীনভাবে বিচারপতিকে নিয়োগ করতে পারেননি। এদেশে সবসময় বিচারপতি নিয়োগ পেয়েছে প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা অনুযায়ী।
আইন উপদেষ্টা বলেন, 'আমরা এমন প্রধান বিচারপতিও পেয়েছি যারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিয়েছেন। বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা ও গণতন্ত্র ধ্বংস করার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিয়েছেন। যারা নিজের চোখে গুম, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড দেখেও তা উপেক্ষা করেছেন। যে সকল বিচারক মানবাধিকার লংঘনে সোচ্চার ভূমিকা পালন করেছে তাদের শাস্তি দিতে ব্যর্থ হয়েছেন।'
তিনি বলেন, 'দুঃখজনকভাবে এমন কেউ কেউ এখনো বিচার বিভাগে রয়ে গেছে। আমরা ইনস্টিটিউশনাল রিফর্ম এর পথে কিছুটা অগ্রসর হয়েছি, পুরোটা করতে পারি নাই।
পরের যারা নির্বাচিত সরকার হবেন, তাদের কাছে এই দায়িত্বটা থাকলো।'
আইন উপদেষ্টা বলেন, 'আমরা হয়তো ভালো ভালো কিছু আইন করে যাচ্ছি। কিন্তু ভালো আইন করা মানেই পুরো দেশটা বদলে যাবে সেরকম নয়। দেখা গেছে অনেক ভালো ভালো আইন করা হলেও সে আইন যে প্রতিষ্ঠানের জন্য করা হয়েছে সে প্রতিষ্ঠানই দাঁড়ায় না। আইন করার ক্ষেত্রে আমাদের কোন ব্যর্থতার ইতিহাস নেই। কিন্তু প্রতিষ্ঠান করার ক্ষেত্রে আমাদের ব্যর্থতা সীমাহীন।'
ভালো প্রতিষ্ঠান গড়া একটি নিরন্তর প্রক্রিয়া উল্লেখ করে আইন উপদেষ্টা বলেন, আশা করব এই আইনটি দ্বারা সত্যিকার অর্থে একটি শক্তিশালী মানবাধিকার কমিশন আমরা প্রতিষ্ঠা করতে পারবো।
ভয়াবহ এ রাষ্ট্র কাঠামো থেকে উত্তরণের উপায় হিসেবে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করার প্রয়োজন আছে জানিয়ে তিনি বলেন, 'এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে উচ্চ আদালত ও সংসদীয় কমিটি। এবং সেই সঙ্গে আরও কিছু জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠানকে আমাদের শক্তভাবে দাঁড় করাতে হবে, যার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে মানবাধিকার কমিশন। এটি করতে ব্যর্থ হলে দেশের যে কোনো মানুষ যে কোনো সময় গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হতে পারেন।'
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে শক্তিশালী করা সম্পর্কে আইন উপদেষ্টা বলেন, এটি সরকার বা কোনো একক ব্যক্তির নয় বরং আমাদের সকলের দায়িত্ব।
সংশোধিত আইনটি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং স্বাধীনতাকে আরো শক্তিশালী করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এর পাশাপশি আরও বক্তৃতা করেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, এটর্নী জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সচিব ড. হাফিজ আহমেদ চৌধুরী, বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত রেতো সিগফ্রেড রেংগলি, ড্যানিশ দূতাবাসের ডেপুটি হেড অফ মিশন এন্ডার্স বি. কার্লসেন, ইউনাইটেড নেশনস ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের (ইউএনডিপি) রেসিডেন্ট রিপ্রেজেন্টেটিভ স্টেফান লিলারসহ আরো অনেকে।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ইউএনডিপি বাংলাদেশের আইন, বিচার এবং নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা রোমানা শোয়েগার।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আইন মন্ত্রণালয় ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাবৃন্দ, দেশ বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আগত শিক্ষক ও শিক্ষার্থী, বিভিন্ন মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন ও সংস্থার প্রতিনিধি এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী। সূত্র: বাসস