দেশের মহাসড়কগুলোয় পণ্যবাহী যানবাহনের চালকদের জন্য আলাদাভাবে কোনো বিশ্রামাগারের ব্যবস্থা নেই। ফলে তাদের একটানা দীর্ঘ সময় গাড়ি চালাতে হয়, যা সড়ক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ঝুঁকি তৈরি করেছে। অনেক দুর্ঘটনারই কারণ টানা বিশ্রামহীন গাড়িচালনা। এ কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার পর ২০১৯ সালে চার মহাসড়কে চারটি বিশ্রামাগার নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। কিন্তু গত প্রায় চার বছরেও শেষ হয়নি এগুলো নির্মাণের কাজ।
এদিকে কাজ শেষ না হলেও দফায় দফায় বাড়ছে প্রকল্পের মেয়াদ। এবার প্রকল্পের চতুর্থ দফায় মেয়াদ বাড়বে। শেষ সময়ে এসে পরিবর্তন হয়েছে বিশ্রামাগারের ডিজাইন। এতে প্রকল্পের ব্যয়ও বাড়ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডিজাইনের পরিবর্তন হওয়ায় ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে পুরো কাজ শেষ করতে।
জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কুমিল্লার নিমসারে, ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে সিরাজগঞ্জের পাঁচলিয়ায়, ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে মাগুরার লক্ষ্মীকান্দরে এবং ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে হবিগঞ্জের জগদীশপুরে চালকদের জন্য বিশ্রামাগার নির্মাণ প্রকল্পের কাজ চলছে। এর মধ্যে কুমিল্লার নিমসার ও সিরাজগঞ্জের পাঁচলিয়ার বিশ্রামাগারের নির্মাণকাজ প্রায় শেষ। অপারেটর নিয়োগ দিয়ে চালু হওয়ার অপেক্ষায় আছে এ দুটো। তবে মাগুরার লক্ষ্মীকান্দর এবং হবিগঞ্জ জগদীশপুরের বিশ্রামাগারের কাজ খুব একটা এগোয়নি।
প্রকল্প দপ্তর সূত্র জানায়, বিশ্রামাগার নির্মাণ প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি প্রায় ৬৬ শতাংশ। মাগুরা ও হবিগঞ্জের বিশ্রামাগার নির্মাণে প্রায় সাড়ে ১৩ একর জমি প্রয়োজন। প্রকল্প কর্তৃপক্ষ এই জমি বুঝে পেয়েছে ২০২২ সালে। ফলে সময়মতো কাজ শুরু করা যায়নি। এখন মাগুরার বিশ্রামাগারের একতলার কাজ প্রায় শেষ। হবিগঞ্জে পাইলিং শুরু হয়েছে মাত্র।
অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক মো. তানভীর সিদ্দিক দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘চারটি বিশ্রামাগারের মধ্যে দুটির নির্মাণকাজ শেষ। আরও দুটির কাজ চলছে। আমাদের টার্গেট এ বছরের জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার। মাগুরা ও হবিগঞ্জের বিশ্রামাগার নির্মাণের জমি অধিগ্রহণ হতে সময় লেগেছে। ফলে সময়মতো কাজ হয়নি। তবে প্রকল্পের মূল কাজ জুনের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। অ্যাডিশনাল আরও কিছু কাজ এই প্রকল্পের আওতায় যুক্ত হচ্ছে, সেগুলো শেষ হতে সময় লাগবে।’
বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হোসেন আহাম্মেদ মজুমদার হতাশা ব্যক্ত করে দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘সারা দেশে ৩ লাখ ৮৬ হাজার ৯১৪ গাড়ি চলাচল করে। এসব গাড়িতে একজন ড্রাইভার এবং তার সহকারী থাকে। তাদের সুবিধার জন্য আজও বিশ্রামাগার নির্মাণ হয়নি। এটি অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়। আমাদের দাবির মুখে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছিলেন, তার পরও এখনো নির্মাণকাজ শেষ হয়নি।’
দোতলা চারতলা করার সিদ্ধান্ত
আগের নকশা অনুযায়ী বিশ্রামাগারগুলো দোতলা করার কথা। সিরাজগঞ্জ ও কুমিল্লার বিশ্রামাগার আগের নকশায়ই শেষ হয়েছে। তবে ট্রাক মালিক ও চালকসহ সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের মিটিংয়ের পর এটি আরও দুই তলা বাড়িয়ে চারতলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ।
এদিকে বিশ্রামাগার যারা পরিচালনার দায়িত্বে থাকবেন এবং নিরাপত্তাকর্মী থাকবেন, তাদের থাকার জন্য আরও বাড়তি দুই তলা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
এতে কোনো সমস্যা হবে কি না, জানতে চাইলে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিশ্রামাগার চারতলা ফাউন্ডেশন রেখে নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে সিরাজগঞ্জ ও কুমিল্লায় আরও দুই তলা বাড়িয়ে দেয়া হবে। আর মাগুরা ও হবিগঞ্জে যেহেতু কাজ শুরু হয়েছে, ফলে সেগুলো একসঙ্গেই চারতলা করা হবে।
ব্যয় বাড়ছে ৩৩ কোটি টাকা
বিশ্রামাগার নির্মাণ প্রকল্পের কাজ ২০১৯ সালের জুনে শুরু হয়। তিন বছর মেয়াদে ২০২১ সালের জুনে কাজ শেষ করার কথা ছিল। এই সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় আরও এক বছর ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। সর্বশেষ ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। তবে আরও দুই তলা করতে হবে বলে প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি শেষ করতে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হবে।
এদিকে আধুনিক এই বিশ্রামাগারগুলো নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল ২২৬ কোটি টাকা। তবে নানা কারণে এবার ব্যয় বেড়ে হবে ২৫৯ কোটি টাকা। এ বিষয়ে প্রকল্পের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক বাংলা বলেন, ‘বেশ কিছু কারণে প্রকল্পের ব্যয় ও মেয়াদ বাড়ছে। বিশ্রামাগার নির্মাণকাজের কিছু জায়গায় মাটির সমস্যার কারণে পাইলিং অনেক বেশি গভীরে করতে হয়েছে, যা পরিকল্পনায় ছিল না। করোনার কারণে ঠিকঠাক কাজ করা যায়নি। নির্মাণসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি এবং সর্বশেষে ডিজাইনের পরিবর্তন। এতে আরও দুটি প্যাকেজ যুক্ত হয়েছে।’
বিশ্রামাগার পরিচালনা করবে কে
পণ্যবাহী গাড়িচালকদের জন্য পার্কিং সুবিধাসংবলিত বিশ্রামাগার পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একটি নির্দেশনা প্রকাশ করেছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। বিশ্রামাগার ইজারা বা অপারেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (ওঅ্যান্ডএম) ব্যবস্থায় পরিচালিত হবে। আবার বিভাগীয় পদ্ধতিতেও পরিচালনা করা হতে পারে। ইজারা দেয়া হলে কম-বেশি তিন বছরের চুক্তি হতে পারে। অপারেটর নিয়োগ দিলে তা হবে উন্মুক্ত দরপতের মাধ্যমে। এ ক্ষেত্রেও তিন বছরের জন্য নিয়োগ দেয়া হবে।
চালকদের জন্য কী সুবিধা থাকছে
বিশ্রামাগারে দূরপাল্লার ট্রাকচালকরা বিশ্রাম নেয়ার জন্য দ্বিতল শয়নকক্ষে রাতযাপন করতে পারবেন, গাড়ি পার্কিং, বিনোদন পয়েন্ট, ক্যানটিন, গোসলখানা, নামাজের জায়গা, প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা কক্ষ, গাড়ি মেরামতের ওয়ার্কশপ, ওয়াশজোন, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎব্যবস্থা, আধুনিক স্যানিটেশনব্যবস্থা, সবুজায়ন ও নিরাপত্তাপ্রাচীরের মধ্যে সীমিত আকারে খেলার ব্যবস্থাও রাখা হবে।
সব ধরনের পণ্যবাহী যানবাহনের চালক ও সহকারীরা নির্ধারিত সেবামূল্য পরিশোধ করে বিশ্রামাগারের সেবা নিতে পারবেন। ইতিমধ্যে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে বিশ্রামাগারে যানবাহন পার্কিং, বিশ্রাম কক্ষ ও ওয়াশরুম ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটি ফি নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী অতিভারী (এক্সট্রা হেভি) পণ্যবাহী মোটরযান পার্কিংয়ে প্রথম ৫ ঘণ্টার জন্য ১৫০ টাকা এবং পরবর্তী প্রতি ঘণ্টার জন্য ৩০ টাকা দিতে হবে। ভারী পণ্যবাহী মোটরযানের জন্য প্রথম ৫ ঘণ্টায় ১০০ টাকা এবং পরবর্তী প্রতি ঘণ্টার জন্য ২০ টাকা, মাঝারি ভারী পণ্যবাহী যানবাহন পার্কিংয়ে প্রথম ৫ ঘণ্টায় ৭৫ টাকা এবং পরবর্তী প্রতি ঘণ্টার জন্য ১৫ টাকা এবং হালকা পণ্যবাহী মোটরযানের প্রথম ৫ ঘণ্টায় ৫০ টাকা এবং পরবর্তী প্রতি ঘণ্টার জন্য ১০ টাকা করে ফি নির্ধারণ করা হয়েছে।
এ ছাড়া বিশ্রাম কক্ষের জন্য প্রথম ৫ ঘণ্টায় ১৫০ টাকা এবং পরবর্তী প্রতি ঘণ্টার জন্য ২৫ টাকা ভাড়া দিতে হবে। টয়লেট প্রতিবার ব্যবহারে ৫ টাকা, গোসলখানা প্রতিবার ১০ টাকা এবং টয়লেট ও গোসলখানা একসঙ্গে প্রতিবার ১৫ টাকা করে ফি নির্ধারণ করেছে সরকার।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হোসেন আহাম্মেদ মজুমদার দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘বিশ্রামাগারের সেবা নিতে যে ফি নির্ধারণ করা হয়েছে, তাতে সেখানে কোনো ট্রাক ঢুকবে না। কারণ কম টাকায় হোটেলে খেয়ে একজন চালক পেট্রল পাম্পে নিরাপদে গাড়ি রেখে ঘুমিয়ে বিশ্রাম নিতে পারে। সেখানে বিশ্রামাগারে গাড়ি রাখতে, ঘুমাতে, ওয়াশরুম ব্যবহার করতে চালককে যদি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা খরচ করতে হয়, তাহলে সেখানে কেউ যাবে না।’
চালকদের কর্মঘণ্টা আইনে আছে বাস্তবে নেই
সড়ক পরিবহন আইনের বিধিমালার ৩২(৫) ধারায় গণপরিবহনের চালকের কর্মঘণ্টা নির্ধারণ করা হয়েছে। কার্যকর হওয়া বিধিমালায় বলা হয়েছে, একজন চালককে দিয়ে একটানা ৫ ঘণ্টার বেশি গাড়ি চালানো যাবে না। এরপর কমপক্ষে আধা ঘণ্টা বিশ্রাম দিয়ে আবার ৩ ঘণ্টা গাড়ি চালানো যাবে। তবে দিনে ৮ ঘণ্টা এবং সপ্তাহে ৪৮ ঘণ্টার বেশি একজন চালককে দিয়ে গাড়ি চালানো যাবে না।
তবে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘কোনো পরিবহনে চালকদের আইনের কর্মঘণ্টা মানা হয় না। যার ফলে অধিকাংশ দুর্ঘটনা ঘটে শারীরিক ক্লান্তি যেমন- ঘুম আসা, অবসন্নতার কারণে। সে জন্য বিশ্রামাগার অবশ্যই প্রয়োজন আছে। তবে কর্মঘণ্টা নিশ্চিত করার দায়িত্ব যানবাহন মালিকদের এবং সরকারকে সেটি মনিটর করতে হবে।’
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘৮ ঘণ্টা গাড়ি চালানো আন্তর্জাতিক মানের। কিন্তু আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এই মুহূর্তে সেটি সম্ভব হয়ে উঠছে না। এই মুহূর্তে তেলের দাম বাড়তি। যুদ্ধ ও করোনার পর পণ্য পরিবহনে ভয়াবহ ধস নেমেছে। এই সময়ে মালিকের পক্ষে দুজন চালক রাখা সম্ভব না।’
শিক্ষা উপদেষ্টার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য ২০ শতাংশ বাড়ি ভাড়া, ১৫০০ টাকা মেডিকেল ভাতা এবং কর্মচারীদের জন্য ৭৫ শতাংশ উৎসব ভাতার প্রজ্ঞাপন জারির দাবিতে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচিতে নেমেছে এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোট।
রোববার সকাল ১০ টার পর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে এই অবস্থান শুরু করেন শিক্ষকরা। সারা দেশ থেকে আসা ব্যাপকসংখ্যক শিক্ষকের অবস্থানের কারণে ওই সড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া জাতীয় প্রেসক্লাব, সচিবালয় ও মেট্রোরেলের প্রবেশ পথে সাধারণ মানুষের চলাচলও চরমভাবে বিঘ্ন হচ্ছে।
প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলে জোটের মহাসচিব দেলাওয়ার হোসেন আজিজী জানিয়েছেন। দাবি আদায়ে অবস্থান থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লাগাতার কর্মবিরতির ঘোষণা আসতে পারে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের গত ১৩ আগস্ট জাতীয় প্রেসক্লাবের শিক্ষক সমাবেশে লক্ষাধিক শিক্ষক-কর্মচারী উপস্থিত ছিল। ওইদিন শিক্ষা উপদেষ্টা শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেসিকের ২০ শতাংশ বাড়ি ভাড়া, ১৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা ও উৎসব ভাতা বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু দীর্ঘ দুই মাস পার হলেও প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়ায় এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা ক্ষুব্ধ।
সূত্রমতে, শিক্ষক-কর্মচারীদের আন্দোলনের মুখে নতুন করে বাড়িভাড়া ভাতা ও মেডিকেল ভাতার বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নতুন প্রস্তাবনা গত ৫ অক্টোবর অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এতে বাড়িভাড়া ২০ শতাংশ নির্ধারণে নতুন প্রস্তাব করা হয়। একইসঙ্গে কর্মচারীদের উৎসব ভাতা ৭৫ শতাংশ এবং চিকিৎসা ভাতা এক হাজার টাকার প্রস্তাব করেন শিক্ষা উপদেষ্টা।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে জুলাই-আগস্টের হত্যাযজ্ঞের মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হয়েছে। রোববার বেলা সোয়া ১১টার দিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ১-এ প্রসিকিউশনের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হয়। যুক্তিতর্ক উপস্থাপন সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম বলেন, প্রথমে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবে প্রসিকিউশন। এরপর নিজেদের যুক্তি তুলে ধরবেন স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী। শেষ পর্যায়ে যুক্তি খণ্ডন করবে প্রসিকিউশন বা রাষ্ট্রপক্ষ। এ ধাপ শেষে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমান রাখা হবে।
এর আগে এ মামলায় তদন্ত কর্মকর্তাসহ ৫৪ জন সাক্ষ্য দেন। জবানবন্দিতে তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীর বলেছেন, গত ১৫ বছরে গুম, খুন, হত্যা, নির্যাতন এবং বিরোধী পক্ষকে দমন করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চেয়েছিল শেখ হাসিনার সরকার।
ওয়ার্ল্ড ফুড ফোরামের ফ্ল্যাগশিপ ইভেন্টে যোগ দিতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আজ সকালে ইতালির রাজধানী রোমের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেছেন।
প্রধান উপদেষ্টা ও তাঁর সফরসঙ্গীদের বহনকারী বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইট সকাল ১১টা ৩০ মিনিটে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছেড়ে যায়।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বাসসকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সফরসূচি অনুযায়ী, অধ্যাপক ইউনূস ফোরামের মূল অধিবেশনে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে ভাষণ দেবেন। পাশাপাশি, তিনি ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এসব বৈঠকে খাদ্য নিরাপত্তা, দারিদ্র্য নিরসন ও টেকসই উন্নয়নসহ বৈশ্বিক ইস্যু নিয়ে আলোচনা হবে।
ওয়ার্ল্ড ফুড ফোরাম জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) আয়োজিত একটি বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্ম, যেখানে বিশ্বের নীতিনির্ধারক, গবেষক ও উদ্যোক্তারা খাদ্য ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ নিয়ে মতবিনিময় করেন।
এবারের ইভেন্টটি ১০ থেকে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত রোমে এফএওর সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টার এই সফরকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের সক্রিয় কূটনৈতিক ভূমিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
আগামী ১৫ অক্টোবর প্রধান উপদেষ্টার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
সাতক্ষীরার তলুইগাছা সীমান্ত দিয়ে নারী শিশুসহ ১৬ বাংলাদেশিকে বিজিবির কাছে ফেরত পাঠিয়েছে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফ। শনিবার রাত ১০টার দিকে ওই ১৬ জনকে সাতক্ষীরা থানায় হস্তান্তর করে বিজিবি।
এসব বাংলাদেশী নাগরিকরা সাতক্ষীরা ও খুলনা জেলার বাসিন্দা। তারা দীর্ঘদিন ধরে ভারতে অবস্থান করছিলেন। ফেরত আসা বাংলাদেশীরা ৬ টি পরিবাবের সদস্য। এদের মধ্যে ৪জন শিশু ৫ জন নারী ও ৭ জন পুরুষ রয়েছে।
ভারত থেকে ফেরত পাঠানো বাংলাদেশিরা হলেন- সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার আটুলিয়া গ্রামের মৃত কলিমদ্দীন ঢালীর ছেলে মোশারাফ ঢালী (৫৭), নুর মোহাস্মদ গাজীর ছেলে ইউনুস আলী (৪২), তার ইউনুস আলী স্ত্রী মুসলিমা খাতুন (২৯), মেয়ে সিনহা খাতুন (১১), ইউনুস আলী ছেলে মোরসালিম গাজী (৭), পার্শ্বেমারী গ্রামের আবুল হোসেন মোড়লের স্ত্রী মোছা. ঝরনা পারভিন (৩৭), ছেলে মো. আশিকুজ্জামান (১৮), কাশিমাড়ী গ্রামের জিয়াদ আলী গাইনের ছেলে রিফাত হোসেন (২৬), খুটিকাটা গ্রামের ইউনুস আলী মোড়লের ছেলে মো. শাহিনুজ্জামান (২৮), চন্ডিপুর গ্রামের হানজালার স্ত্রী শারমিন সুলতানা (১৮), মেয়ে সুমাইয়া আক্তার (৩), নুর আলম হোসেনের স্ত্রী ফাতিমা খাতুন (২২), ছেলে মো. ফারজান নাবিল (৩), আল মামুনের স্ত্রী রুবিনা খাতুন (২৯), আব্দুর রহিমের ছেলে আল আমিন (২৬), ও খুলনা জেলা কয়রা উপজেলার বেদকাশী গ্রামের শামছুর রহমানের ছেলে জিল্লুর রহমান (২৩)।
সাতক্ষীরা সদর থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) শফিকুল ইসলাম জানান, ভারতের হাকিমপুর চেকপোষ্টে বাংলাদশি নাগরিকদের আটক করা হয়। শনিবার সন্ধ্যায় বিএসএফের আমুদিয়া ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার ইন্সপেক্টর বিকাশ কুমার ও সাতক্ষীরার তলুইগাছা বিওপি কমান্ডার আবুল কাশেমের মধ্যস্থতায় পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে এসব বাংলাদেশিদের বিজিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়। রাতে বিজিবি তাদের থানায় হস্তান্তর করে।
পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও জানান, ফেরত আসা বাংলাদেশিদের পরিচয় যাচাই বাছাই করে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
বিশ্বের দূষিত বায়ুর শহরের তালিকায় আজ শীর্ষে রয়েছে পাকিস্তানের লাহোর। বায়ুমান সূচকে শহরটির স্কোর ১৮৭। তালিকায় ৫ম অবস্থানে রয়েছে রাজধানী ঢাকা। এদিন সকালে ঢাকার এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (বায়ুর মান সূচক) স্কোর ছিল ১৬৫।
রোববার (১২ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুমান বিষয়ক ওয়েবসাইট আইকিউএয়ারে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
বায়ুদূষণে বিশ্বের শহরগুলোর তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে কলকাতা, স্কোর ১৭১। তৃতীয় অবস্থানে থাকা ইতালির মিলান শহরের স্কোর ১৭০। চতুর্থ স্থানে থাকা ভারতের দিল্লির স্কোর ১৬৯।
উল্লেখ্য, একটি শহরের বাতাস কতটা নির্মল বা দূষিত, এর লাইভ বা তাৎক্ষণিক সূচক জানিয়ে থাকে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার। প্রতিষ্ঠানটির মানদণ্ড অনুযায়ী, স্কোর শূন্য থেকে ৫০-এর মধ্যে থাকলে বায়ুর মান ভালো বলে বিবেচিত হয়।
আর ৫১ থেকে ১০০ হলে মাঝারি বা সহনীয় ধরা হয় বায়ুর মান। সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয় ১০১ থেকে ১৫০ স্কোর। ১৫১ থেকে ২০০ পর্যন্ত অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয়। স্কোর ২০১ থেকে ৩০০ হলে খুবই অস্বাস্থ্যকর বলে বিবেচনা করা হয়। এছাড়া ৩০১-এর বেশি হলে তা দুর্যোগপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়।
দেশের শিশুদের টাইফয়েড থেকে সুরক্ষা দিতে আজ রোববার শুরু হচ্ছে দেশের প্রথম জাতীয় টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন। এক মাসব্যাপী এই কর্মসূচিতে ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী প্রায় পাঁচ কোটি শিশুকে বিনামূল্যে ইনজেকটেবল টাইফয়েড টিকা দেওয়া হবে।
গতকাল শনিবার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, রোববার স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানা, আজিমপুর কেন্দ্রে উদ্বোধন হবে টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন ২০২৫।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, জন্মসনদবিহীন শিশুরাও এই টিকার আওতায় থাকবে যাতে কেউ বাদ না পড়ে। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম জাতীয় টাইফয়েড টিকা কর্মসূচি। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট তৈরি করেছে এই টিকা, যা সরকার পেয়েছে আন্তর্জাতিক ভ্যাকসিন সহায়তা সংস্থা গ্যাভির সহযোগিতায়।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে) অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদনপ্রাপ্ত এই টিকাটি সম্পূর্ণ নিরাপদ। ইতোমধ্যে নেপাল, পাকিস্তানসহ আটটি দেশে সফলভাবে ব্যবহার হয়েছে। কোনো দেশেই বড় ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, প্রাক্-প্রাথমিক থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত স্কুল ও মাদ্রাসায় এই টিকা পাবে। এরপর ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সি অন্যান্য শিশুরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে টিকা পাবে। শহরের পথশিশুদের টিকাদানের দায়িত্বে থাকবে বিভিন্ন এনজিও।
সরকারের লক্ষ্য- এই ক্যাম্পেইনের আওতায় ৪ কোটি ৯০ লাখ শিশুকে টিকা দেওয়া। ইতিমধ্যে ১ কোটি ৬৮ লাখ শিশু নিবন্ধন করেছে, এবং নিবন্ধন প্রক্রিয়া এখনো চালু রয়েছে। জন্মসনদ না থাকলেও নিকটস্থ টিকাকেন্দ্রে স্বাস্থ্যকর্মীদের সহায়তায় নিবন্ধন করা যাবে।
অভিভাবকেরা সন্তানদের নিবন্ধনের জন্য https://vaxepi.gov.bd/registration/tcv ওয়েবসাইটে গিয়ে ১৭ সংখ্যার জন্মনিবন্ধন নম্বর ব্যবহার করে রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন। নিবন্ধনের পর সরাসরি ভ্যাকসিন কার্ড ডাউনলোড করা যাবে।
ইপিআই (সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি) প্রোগ্রামের ম্যানেজার ডা. আবুল ফজল মো. শাহাবুদ্দিন খান জানান, ১২ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই ক্যাম্পেইনের প্রথম ১০ দিন স্কুল ও মাদ্রাসায় ক্যাম্প করে টিকা দেওয়া হবে এবং পরবর্তী ৮ দিন ইপিআই সেন্টারে টিকাদান কার্যক্রম চলবে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আশা করছে, এই ক্যাম্পেইন সফল হলে টাইফয়েড প্রতিরোধে বাংলাদেশ একটি নতুন অধ্যায় সূচনা করবে। দীর্ঘদিন ধরে উপেক্ষিত এ ব্যাধি থেকে শিশুদের সুরক্ষায় এটি হবে সরকারের একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ।
অন্তঃসত্ত্বা ভারতীয় নাগরিক সোনালী খাতুন এবং তার পরিবারের পাঁচ সদস্যকে ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারী’ তকমা দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। প্রায় চার মাস ধরে চরম দুর্ভোগ পোহানোর পর অবশেষে বিচারিক আদেশে তাদের ভারতে প্রত্যাবর্তনের পথ প্রশস্ত হয়েছে।
দিল্লিতে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ করা পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমের এই দরিদ্র বাসিন্দাদের ভারতীয় নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে আধার কার্ড থাকা সত্ত্বেও দিল্লি পুলিশ তাদের সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছিল।
বাংলাদেশে পুশব্যাক হওয়া বীরভূমের নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা সোনালী বিবিসহ আরও ৬ জনকে কেন্দ্র সরকারের ‘বাংলাদেশি’ তকমার দাবিকে খারিজ করে দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। সেইসঙ্গে চার সপ্তাহের মধ্যে তাদের দেশে ফেরানর নির্দেশ দিয়েছিল আদালত।
কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশের আলোকে বাংলাদেশের আদালত সোনালী খাতুনসহ সবাইকে নিরাপদে দেশে ফেরানোর জন্য ভারতীয় হাইকমিশনকে কূটনৈতিক ও আইনি প্রক্রিয়া শুরু করতে বলেছে।
সোনালীদের সাহায্যের জন্য বাংলাদেশে অবস্থান করছেন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিক উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান সামিরুল ইসলামের প্রতিনিধি মফিজুল শেখ। সামিরুল বৃহস্পতিবার এক্স পোস্টে জানান, বাংলাদেশের আদালতের নির্দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকায় হাইকমিশনে পাঠানো হয়েছে।
এই ঘটনা শুরু হয়েছিল চলতি বছরের ২৬ জুন। সোনালী খাতুন, তার স্বামী দানিশ শেখ, আট বছরের ছেলে সাবির, সুইটি বিবি এবং তার দুই ছেলে—সবাই রাজধানী দিল্লিতে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কোনোমতে জীবন যাপন করতেন। দিল্লি পুলিশের যে দল ‘অবৈধ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের’ বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছিল, তারাই এ দলটিকে আটক করে।
সোনালীর বাবা ভাদু শেখ গত জুলাই মাসে কলকাতা হাইকোর্টে হেবিয়াস কর্পাস (আদালতে উপস্থাপনের আবেদন) মামলা করেন। তিনি অভিযোগ করেন, পুলিশ তাদের ভারতীয় নাগরিকত্বের নথি, যেমন আধার কার্ড দেখানোর পরও আটক করেছে। এরপর চরম অমানবিকতার মধ্য দিয়ে তাদের আসাম সীমান্তে নিয়ে যাওয়া হয় এবং বলপূর্বক আন্তর্জাতিক সীমান্ত পার করিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়। সেখানে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে গত ২২ আগস্ট থেকে তারা বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলে বন্দি।
ভারতে ‘ভুলবশত নির্বাসনের’ এই ঘটনায় দ্রুতই দুই দেশের বিচার বিভাগ হস্তক্ষেপ করে এবং নাটকীয় মোড় আসে। প্রথমে কলকাতা হাইকোর্ট দিল্লি পুলিশের কাজের তীব্র সমালোচনা করে। আদালত পুলিশকে এ দলটিকে ‘অবৈধ অভিবাসী’ হিসেবে তড়িঘড়ি নির্বাসিত করার জন্য ভর্ৎসনা করেন। আদালত কেন্দ্রীয় সরকারকে এই দলটিকে চার সপ্তাহের মধ্যে ভারতে ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেন।
কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশের মাত্র চার দিনের মধ্যেই গত ৩০ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট আদালত একটি নির্দেশ জারি করেন। আদালত ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনকে নির্দেশ দেন যেন সোনালী এবং জেলে বন্দি বাকি পাঁচজনকে ‘নিরাপদে প্রত্যাবাসন’ করা হয়। বিচারকের নির্দেশনায় স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, আটককৃত ছয়জনই ‘ভারতীয় নাগরিক’ এবং তাদের নামে আধার কার্ড রয়েছে। নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে আধার কার্ডের নম্বর এবং তাদের ভারতের আবাসিক ঠিকানাও আদেশে উদ্ধৃত করা হয়েছে।
এই পুরো ঘটনায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানবিক দিক হলো, সোনালী খাতুন যেকোনো দিন সন্তানের জন্ম দিতে পারেন। বন্দিদশার এই কঠিন সময়ে এক সপ্তাহ আগে জেলে পড়ে গিয়ে তিনি আহত হন। তবে সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, তার গর্ভস্থ সন্তানের স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে তার জন্য প্রয়োজনীয় আলট্রাসাউন্ড পরীক্ষাটি এখনো করানো হয়নি।
বীরভূমের সমাজকর্মী মফিজুল শেখ চাঁপাইনবাবগঞ্জে শিবির বসিয়ে আটক ব্যক্তিদের আইনি সহায়তা সমন্বয় করছেন। তিনি শুক্রবার ফোনে সোনালীর সঙ্গে কথা বলেছেন। মফিজুল ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেন, ‘সোনালী কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন এবং দ্রুত ঘরে ফেরার জন্য আকুতি জানাচ্ছিলেন। তিনি বারবার জিজ্ঞেস করছিলেন, ‘আমাদের আর কত দিন এখানে থাকতে হবে? আমাদের অপরাধ কী? দয়া করে বলুন, বাড়িতে আমার জন্য একটা মেয়ে অপেক্ষা করছে।’ তার এই কথাগুলো শুনে আমি নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি!’
তবে দুই দেশের আদালতের ইতিবাচক নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়া এখনো দ্রুত এগোচ্ছে না। একজন ভারতীয় কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, আধার কার্ড ভারতীয় নাগরিকত্বের একমাত্র প্রমাণ নয়। প্রথমে ছয়জনের পরিচয় যথাযথভাবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তিনি বলেন, এর ফলে প্রত্যাবাসনপ্রক্রিয়া অপ্রত্যাশিতভাবে দীর্ঘ হতে পারে।
এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে ভারত ও বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ এবং বিজিবি) মধ্যে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এই বৈঠকেই বাংলাদেশিরা আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের ভারতীয় কর্মকর্তাদের কাছে হস্তান্তর করবেন।
সোনালীর পরিবারের পক্ষে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা লড়া আইনজীবী সৈকত ঠাকুরতা টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেন, ‘এখানে কূটনৈতিক জটিলতা জড়িত। আমি নিশ্চিত নই, তিনি ঠিক কবে নাগাদ বাড়ি ফিরতে পারবেন।’
এদিকে সোনালী বিবিসহ বাংলাদেশে ‘পুশব্যাক করা’ ছয়জনের জামিন এখনও মঞ্জুর হয়নি। নিম্ন আদালতে এ সংক্রান্ত মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য হয়েছে ২৩ অক্টোবর। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পুলিশ জানায়, গত ২৯ সেপ্টেম্বর ‘অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে আটক সোনালী ও সুইটি বিবি-সহ ছয়জনের জামিনের শেষ শুনানি হয়েছে ওই জেলার মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের (সিজেএম) আদালতে। এরপরই পূজার ছুটি পড়ে যায়।
এই ঘটনাকে ঘিরে পশ্চিমবঙ্গ অভিবাসী শ্রমিক কল্যাণ বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং রাজ্যসভার সাংসদ সমীরুল ইসলামের (তৃণমূল কংগ্রেস) মন্তব্য তীব্র রাজনৈতিক বিতর্ক তৈরি করেছে। তিনি এক্স পোস্টে সরাসরি বিজেপিকে অভিযুক্ত করেছেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশি আদালত তাদের ভারতীয় নাগরিক হিসেবে ঘোষণা করার পাশাপাশি আধার কার্ডের মতো প্রমাণও দাখিল করেছে। এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করে বিজেপি কীভাবে দরিদ্র বাংলাভাষী মানুষকে ভাষা ছাড়া অন্য কোনো কারণে বাংলাদেশি তকমা দিয়ে নিষ্ঠুরভাবে নির্বাসিত করে।’ তিনি অবিলম্বে কেন্দ্রীয় সরকারকে দ্রুত প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শেষ করার অনুরোধ করেছেন।
সব মিলিয়ে দুই দেশের আদালতের মানবিক ও বিচারিক নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও অন্তঃসত্ত্বা সোনালী খাতুন এবং তার পরিবারের সদস্যদের স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের তারিখ এখনো অনিশ্চিত।
ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে বন্দি থাকার সময়কার অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন দৃকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং আলোকচিত্রী শহিদুল আলম। তিনি বলেছেন, তাদের ওপর মানসিক অত্যাচার বেশি করা হয়েছে। জেলের ভেতরে আতঙ্ক তৈরির চেষ্টা হয়েছে। এমনকি হামাসের সমর্থক দাবি করে তাদের একজন সহযাত্রীকে গুলি করে মারারও হুমকি দেওয়া হয়েছে।
গতকাল শনিবার বিকেলে রাজধানীর দৃক পাঠ ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমন অভিজ্ঞতার কথা জানান। আজ ভোরে ইসরায়েলের আটক দশা থেকে মুক্ত হয়ে দেশে ফেরেন শহিদুল আলম। নিজের অভিজ্ঞতা জানাতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন তিনি।
শহিদুল আলম বলেন, আটক করে জাহাজ থেকে নামানোর পর তাদের ওপর অনেক ধরনের নির্যাতন করা হয়েছে। তবে এর মধ্যে মানসিক নির্যাতন বেশি করা হয়েছে। তিনি বলেন, তাদের হাত পেছনে নিয়ে বেঁধে যেখানে হাঁটুমুড়ে বসানো হয়েছিল, সেখানে ইসরায়েলি বাহিনী আগে থেকে মূত্রত্যাগ করেছিল। এরপর তার বাংলাদেশি পাসপোর্ট ইসরায়েলি বাহিনী ফেলে দেয়। তিনি যতবার সেটি তুলেছেন ততবার তার ওপর চড়াও হয়েছে। সেসময় নিজেদের মধ্যে কথা বলায় অন্য দুজন সহযাত্রীকে মেশিনগানের ব্যারেল দিয়ে আঘাত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
শহিদুল আলম জানান, মরুভূমির মধ্যে ইসরায়েলের সবচেয়ে গোপনীয় কারাগারে তাদের রাখা হয়। সেখানে অন্য জাহাজ থেকে আটক হওয়া আরেকজন সহযাত্রী তাকে জানান, ইসরায়েলি বাহিনী ওই ব্যক্তিকে আটক করার পর বলেছিল ‘তুমি হামাসের এজেন্ট, ভেতরে নিয়ে তোমাকে গুলি করা হবে।’
শহিদুল আলম আরও বলেন, কারাগারে তারা অনশন করেছিলেন। কোনো খাবার খাননি। তবে শারীরিক দুর্বলতার কারণে কয়েকজন খাবার খেয়েছেন। আড়াই দিনে তাদের মাত্র এক প্লেট খাবার দেওয়া হয়। তাদের যেখানে শুতে দেওয়া হয়েছিল, তা ছিল লোহার, শৌচাগারগুলোর অবস্থাও ছিল শোচনীয়। তিনি আরও বলেন, ‘গভীর রাতে হঠাৎ করে ইসরায়েলি বাহিনী মেশিনগান নিয়ে সেলের মধ্যে ঢুকে যেত। তারা জোরে আওয়াজ করত, চিৎকার করে দাঁড়ানো বা অন্য আদেশ দিত এবং আতঙ্ক তৈরি করার চেষ্টা করত।’
এ সময় একজন সাংবাদিক পরবর্তী পরিকল্পনা জানতে চাইলে শহিদুল আলম বলেন, ‘অসাধারণ কিছু ব্যক্তি একসঙ্গে হওয়ার কারণে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে আমরা এখন আন্তর্জাতিকভাবে একটা নেটওয়ার্ক দাঁড় করাব। যেহেতু গ্লোবাল লিডাররা করবে না, আমরা অ্যাকটিভিস্টরা কীভাবে করতে পারি সেই লড়াইয়ের প্রস্তুতি আমরা নিয়েছি।… একটা ব্লুপ্রিন্ট আমরা করে রেখেছি এবং আমরা ফেরার আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে আবার আমরা যাব এবং হাজারটা জাহাজ যাবে।’
দৃকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘আমাদের দেশে যেটা করেছি জুলাই অভ্যুত্থানের সময় রাস্তায় নেমেছি, আন্দোলন করে এ রকম একজন স্বৈরাচারকেও আমরা হঠাতে পেরেছি। এখানেও সেই জিনিস, আন্তর্জাতিকভাবে সেরকম একটা জিনিস করা দরকার।’
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘আসুন, একটা উদাহরণ সৃষ্টি করি এই দেশে যে আইনের শাসন কাকে বলে আমরা এই ইলেকশনে (ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন) এটা দেখাতে চাই। তাতে যা হওয়ার হবে।’
গতকাল শনিবার সকালে চট্টগ্রাম নগরে ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তাদের নিয়ে অনুষ্ঠিত এক কর্মশালায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তিনি। ‘নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনে চ্যালেঞ্জসমূহ নিরূপণ ও উত্তরণ’ শীর্ষক এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয় নগরের আসকার দিঘি এলাকার আঞ্চলিক লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণকেন্দ্র মিলনায়তনে। কর্মশালার আয়োজন করে সিবিটিইপি প্রকল্প (নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় আইসিটি ব্যবহারে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সক্ষমতা বৃদ্ধি)।
কর্মশালায় প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীন বলেন, ‘যেদিন নির্বাচন হবে, সেদিন মনে রাখবেন, আপনি হচ্ছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। আইনগতভাবে সর্বময় ক্ষমতা আপনাকে দেওয়া আছে। যদি গোলমাল করে, তাহলে ভোটকেন্দ্র বন্ধ করে দেবেন। তিনটা করলে তিনটা। দরকার হলে পুরো সংসদীয় আসন বাতিল করে দেবেন।’
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘আমরা সহজে ছাড়ার পাত্র নই। সহজে ছাড়ব না। আপনাদের পেছনে আমরা আছি। ইলেকশন কমিশন ফুল সাপোর্ট দিয়ে যাবে আপনাদের।’
নির্বাচনের বাতাস বইতে শুরু করেছে উল্লেখ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীন বলেন, ‘সবাই মিলে একটা সুন্দর নির্বাচন করতে হবে। এ জন্য ভোট গ্রহণের দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং কর্মকর্তা, প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের ক্ষমতায়িত করা হচ্ছে। সব ক্ষমতা দেওয়া হবে তাদের। ক্ষমতা ব্যবহার করতে হবে। যদি ক্ষমতা ব্যবহার না করেন, তাহলে অপরাধ হিসেবে ধরে নেওয়া হবে এবং যথাসময়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা না নেন, তাহলে তা ভালোভাবে নেওয়া হবে না। ক্ষমতা থাকা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি ক্ষমতা ব্যবহারও গুরুত্বপূর্ণ। যতক্ষণ আইন ও বিধি অনুযায়ী কাজ করবেন, ততক্ষণ নির্বাচন কমিশন পাশে থাকবে।’
নির্বাচনে বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীন বলেন, ‘দেশে যখন নির্বাচন হয়, তখন বড় কিছু চ্যালেঞ্জ থাকে। যেমন প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জ, নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জ, আইনগত চ্যালেঞ্জ, প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ। তবে ভোট গ্রহণের জন্য নিরাপত্তা বা সিকিউরিটি চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বড় চ্যালেঞ্জ। এটি বিশাল আকারে দেখা দিয়েছে এবং এটা নিয়ে সবাই দুশ্চিন্তার মধ্যে আছে। এটি মোকাবিলাটা আমাদের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়াবে।’
জাতীয় নির্বাচন করা শুধু একা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব নয় বলে মন্তব্য করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীন। তিনি বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচন জাতীয়ভাবেই করতে হবে। এটি নির্বাচন কমিশনের একার কাজ নয়। এটি জাতীয়, দায়িত্ব সবার। প্রশাসন, পুলিশসহ সবাই মিলে করতে হবে। সবার সহযোগিতা ও সমন্বয় দরকার। সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচনের জন্য সমন্বয় দরকার। নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে উপজেলা পর্যন্ত ইমার্জেন্সি সেল থাকবে।’
কর্মশালায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীন আরও বলেন, ‘বেশির ভাগ প্রিসাইডিং কর্মকর্তা হচ্ছেন শিক্ষক। তাদের অনেকেই ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে পরিচিত নন। তাই এ রকম মুহূর্ত তৈরি হলে কীভাবে মোকাবিলা করতে হবে, তা প্রশিক্ষণ দিতে হবে। তবে পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, গত ১৫ বছরে পুলিশকে ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট মোকাবিলায় নিয়োজিত করা হয়নি। বিশেষ বিশেষ বাহিনী দিয়ে ক্রাইসিস ম্যানেজ করা হতো। সুতরাং পুলিশের মধ্যেও ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট নিয়ে সমস্যা রয়েছে।’
কর্মশালায় বিশেষ অতিথি ছিলেন নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজ, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. জিয়াউদ্দীন, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আহসান হাবীব, ইউএনডিপি বাংলাদেশর সহকারী আবাসিক প্রতিনিধি আনোয়ারুল হক। সভাপতিত্ব করেন জ্যেষ্ঠ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ বশির আহমেদ।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, প্রতিটি কন্যাশিশুর স্বপ্ন পূরণের পথে আমরা রাষ্ট্রকে তার অংশীদার বানাব, বাধা নয়। আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস উপলক্ষে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক পোস্টে তিনি একথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, বাংলাদেশের জন্য আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি এমন, যেখানে প্রতিটি মেয়ের একই স্বাধীনতা, সুযোগ ও সুরক্ষা থাকবে, যা যেকোনো বাবা-মা তাদের নিজের সন্তানের জন্য কামনা করেন।
আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস উপলক্ষে তারেক রহমানের দেওয়া স্ট্যাটাসটি নিচে তুলে ধরা হলো- আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবসে আসুন, আমরা প্রতিটি মেয়ের স্বপ্ন দেখার, শেখার, নেতৃত্ব দেওয়ার, মর্যাদার সঙ্গে বেঁচে থাকার অধিকার উদযাপন করি।
একজন কন্যার বাবা হিসেবে আমি জানি যে, মেয়েদের ক্ষমতায়ন শুধু নীতি নয়- এটি ব্যক্তিগত দায়িত্ব। বাংলাদেশের জন্য আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি এমন, যেখানে প্রতিটি মেয়ের একই স্বাধীনতা, সুযোগ ও সুরক্ষা থাকবে, যা যেকোনো বাবা-মা তাদের নিজের সন্তানের জন্য কামনা করেন।
তিনি বলেন, বিএনপি সরকারের রয়েছে জীবন পরিবর্তনের এক ঐতিহ্য এবং সুযোগ পেলে আমরা আরো বেশি কিছু করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা দেখেছি, কিভাবে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান পোশাক খাতের প্রবৃদ্ধিকে একটি শিল্পের চেয়েও বেশি কিছুতে পরিণত করেছিলেন। এটি আশায় পরিণত হয়েছিল। লাখ-লাখ নারী কাজে প্রবেশ করেছিলেন। আয়, সম্মান ও স্বাধীনতা অর্জন করেছিলেন। তার নেতৃত্বে, বাংলাদেশজুড়ে মেয়ে শিশু এবং নারীদের জীবনের উন্নতিকে প্রতিষ্ঠিত করার একক উদ্দেশ্য নিয়ে ‘মহিলাবিষয়ক মন্ত্রণালয়’ তৈরি করা হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে মেয়েদের শিক্ষা বিশেষ সুবিধা নয়, বরং একটি অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা বিনামূল্যে ঘোষণা করা হয়েছিল এবং ‘খাদ্য বা টাকার বিনিময়ে শিক্ষা’ কর্মসূচি লাখ-লাখ মেয়েকে স্কুলে পাঠাতে সাহায্য করেছিল, পারিবারিক ভাগ্য পরিবর্তন করেছিল, শক্তিশালী সম্প্রদায় গড়ে তুলেছিল, ক্ষমতায়িত নারীদের একটি প্রজন্ম তৈরি করেছিল।
তার পথপ্রদর্শক উদ্যোগ ‘ফিমেল সেকেন্ডারি স্কুল অ্যাসিস্ট্যান্স প্রজেক্ট’ আমাদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো মাধ্যমিক শিক্ষায় নারী-পুরুষের সমতা প্রতিষ্ঠা করে এবং বাল্যবিয়ের হার কমিয়ে আনে। এই প্রকল্প পরবর্তী সময়ে কন্যাশিক্ষা ও নারীর ক্ষমতায়নের এক বৈশ্বিক আদর্শে পরিণত হয়, যা অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশেও অনুসরণ করা হয়েছে। এই সাহসী পদক্ষেপগুলো দেখায়, যা প্রমাণ করে যে যখন প্রশাসন মেয়েদের মর্যাদাকে সম্মান করে এবং তাদের ভবিষ্যতে বিনিয়োগ করে তখন কী সম্ভব। এগুলো সাহসী পদক্ষেপের দৃষ্টান্ত, যা প্রমাণ করে— যখন কোনো সরকার কন্যাশিশুদের মর্যাদা রক্ষা করে এবং তাদের ভবিষ্যতে বিনিয়োগ করে, তখন কত কিছুই সম্ভব হয়ে ওঠে।
বিএনপির ভবিষ্যৎ নীতিমালা সম্মান ও বিনিয়োগ অব্যাহত রেখেছে, যার মাধ্যমে:
১. নারী পরিবারের প্রধানদের নামে ‘পরিবার কার্ড’- প্রতিটি পরিবারের প্রধানকে সরাসরি সাহায্য ও সহায়তা পৌঁছানো নিশ্চিত করা।
২. নারী উদ্যোক্তাদের জন্য এসএমই ঋণ, ব্যবসায়িক প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহায়তা- কারণ অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা কোনো আপসের বিষয় নয়।
৩. মেয়েদের জন্য শক্তিশালী শিক্ষাগত ও বৃত্তিমূলক সুযোগ— যাতে প্রতিটি মেয়ে, গ্রামে হোক বা শহরে, দক্ষতা অর্জন করতে পারে এবং ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারে।
৪. নারীরা সিদ্ধান্ত গ্রহণের টেবিলে- রাজনীতি, শাসন ও নীতিনির্ধারণে অংশগ্রহণ বৃদ্ধি। একটি নিরাপদ জাতি এ থেকে কম আশা করতে পারে না।
৫. মর্যাদা ও স্বাধীনতার সুরক্ষা- মেয়েদের চলাফিরা, কথা বলতে, ইন্টারনেট অ্যাক্সেস করতে, ভয় ছাড়াই বাঁচতে সক্ষম করা।
৬. পরিবার ও সামাজিক কল্যাণকে মূলনীতি হিসেবে-স্বাস্থ্য, গ্রামীণ ক্ষমতায়ন, সবার জন্য কর্মসংস্থান, বিশেষভাবে নারী ও কন্যাশিশুর ওপর কেন্দ্রিত।
আমরা খালি বাক্যবুলিতে কথা বলি না। আমরা বিশ্বাস ও অভিজ্ঞতার সঙ্গে, নির্ধারিত লক্ষ্য নিয়ে কথা বলি। প্রতিটি কন্যাশিশুর স্বপ্ন পূরণের পথে আমরা রাষ্ট্রকে তার অংশীদার বানাব, বাধা নয়।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চার্জশিটে নাম আসা সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে ১৫ জন কর্মকর্তাকে ঢাকায় সেনা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। হেফাজতে থাকা কর্মকর্তাদের মধ্যে ১৪ জন কর্মরত ও একজন অবসরোত্তর ছুটিতে (এলপিআরে) থাকা কর্মকর্তা রয়েছেন।
শনিবার(১১ অক্টোবর ২০২৫) বিকেলে ঢাকা সেনানিবাসের মেসে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের মামলাসংক্রান্ত বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অ্যাডজুটেন্ট জেনারেল মেজর জেনারেল মো. হাকিমুজ্জামান।
তিনি বলেন, যেসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চার্জশিট হয়েছে তাদের মধ্যে ১৫ জন কর্মকর্তা ঢাকায় সেনা হেফাজতে আছে। আমরা ১৬ জনকে সেনা হেফাজতে আসার জন্য বলেছিলাম। তাদের মধ্যে ১৫ জন্য আমাদের সেনা হেফাজতে এসেছে।
তিনি আরও বলেন, তিনটি মামলায় ২৫ জন সেনা কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে অবসরে আছেন ৯ জন, এলপিআর-এ একজন, আর বর্তমানে কর্মরত আছেন ১৫ জন।
গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত সশস্ত্র বাহিনীতে কর্মরতরা হলেন: মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, মেজর জেনারেল কবীর আহাম্মদ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভির মাজাহার সিদ্দিকী, কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, কর্নেল কে এম আজাদ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মশিউর রহমান জুয়েল এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন।
মো. হাকিমুজ্জামান বলেন, সেনাবাহিনীর কাছে কারও বিরুদ্ধে গুমের ওয়ারেন্টের কোনো কপি আসেনি। সেনাবাহিনী কোনো ওয়ারেন্ট পেপার পায়নি। এলপিআরের একজন এবং সার্ভিসে থাকা ১৫ জনসহ মোট ১৬ জনকে সেনা হেফাজতে নেওয়ার আদেশ দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৫ জনকে এরই মধ্যে সেনা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
এই সেনা কর্মকর্তা জানান, মেজর জেনারেল কবীর আত্মগোপনে গেছেন। তিনি যাতে বিদেশে চলে যেতে না পারেন, সেজন্য তৎপরতা অব্যাহত রাখা হয়েছে। তিনি ৯ অক্টোবর সকালে বাসা থেকে বের হয়েছেন।
তিনি বলেন, ওয়ারেন্টভুক্তদের ২২ অক্টোবরের মধ্যে আদালতে হাজির করার নির্দেশ আছে, আইনি ব্যাখ্যার প্রয়োজন রয়েছে এই ওয়ারেন্ট নিয়ে। কাজেই ২২ অক্টোবর এদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করার বিষয়ে আইনের ব্যাখ্যা পাওয়া সাপেক্ষে সেই অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
তিনি আরও জানান, গুমের শিকার হওয়া প্রতিটি পরিবারের প্রতি সেনাবাহিনী সহানূভুতিশীল। সব অপরাধের বিচারের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়ে সেনাবাহিনী বিচার প্রক্রিয়া ও গুম কমিশনকে সহায়তা করে যাচ্ছে।
প্রসঙ্গত, মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সাবেক ও বর্তমান ২৫ জন সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। গত বুধবার ট্রাইব্যুনাল এই নির্দেশ দেন। আগামী ২১ অক্টোবরের মধ্যে তাদের গ্রেপ্তার করে ২২ অক্টোবর ট্রাইব্যুনালে হাজির করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) প্রধান প্রসিকিউটরের তথ্য উদ্ধৃত করে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে সশস্ত্র বাহিনীর আর কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির কোনো পরিকল্পনা নেই।
শনিবার বাসসকে প্রেস সচিব বলেন, দআমরা আইসিটির প্রধান প্রসিকিউটরের দপ্তর থেকে জানতে পেরেছি যে এই মুহূর্তে সশস্ত্র বাহিনীর আর কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পরিকল্পনা নেই।’
শতাধিক সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হতে যাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এমন দাবি প্রত্যাখ্যান করে শফিকুল আলম বলেন, ‘এই খবর সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও মনগড়া গুজব।’
তিনি জনগণকে এসব বিভ্রান্তিকর তথ্য বিশ্বাস না করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘এই ধরনের অপপ্রচার সাধারণ মানুষের মধ্যে বিশেষ করে সশস্ত্র বাহিনীর ভেতরে বিভেদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে চালানো হচ্ছে।’
শফিকুল আলম আরও বলেন, ‘আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনের আগে দেশকে অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যেই এসব অসৎ গুজব ছড়ানো হচ্ছে।’
প্রেস সচিব স্পষ্ট করে জানান, সেনা গোয়েন্দা সংস্থা ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স (ডিজিএফআই) বিলুপ্ত করার কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই।
তিনি আরও বলেন, ‘সংস্থাটির সীমান্তবর্তী ও বহিঃদেশীয় গোয়েন্দা কার্যক্রম আরও জোরদার করতে সরকার সংস্কারমূলক পদক্ষেপ বিবেচনা করছে।’ সূত্র: বাসস
জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান ১৫ অক্টোবরের (বুধবার) পরিবর্তে ১৭ অক্টোবর (শুক্রবার) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। জনসাধারণের অংশগ্রহণের সুবিধার্থে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে এ অনুষ্ঠান আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
আজ শনিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
বৈঠক শেষে কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ জানান, জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। আগ্রহী জনগণের অংশগ্রহণের সুবিধার্থে অনুষ্ঠানটি ১৭ অক্টোবর, শুক্রবার বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত হবে। যদিও এর আগে কমিশনের তরফ থেকে জানানো হয়েছিল যে ১৫ অক্টোবর বুধবার বিকেলে জুলাই সনদ স্বাক্ষরিত হবে।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোটের প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন। এছাড়া বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার প্রতিনিধিদের এ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হবে।
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার। সূত্র: বাসস