বাংলাদেশ রেলওয়ে আগামী ৭ এপ্রিল থেকে ঈদযাত্রার ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু করতে পারে। এবার ঈদের অগ্রিম টিকিট শতভাগ অনলাইনে দেয়ার বিষয়েও পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে রেলওয়ে সূত্র জানায়। আগে ট্রেনের ৫০ শতাংশ টিকিট অনলাইনে ও বাকি অর্ধেক স্টেশনের কাউন্টারে বিক্রি হতো। এবার সেই ব্যবস্থায় পরিবর্তন হতে পারে।
আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে মঙ্গলবার রেলভবনে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয়ে এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ঈদযাত্রার টিকিটব্যবস্থা নিয়ে বুধবার রেলমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানানোর কথা রয়েছে।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, এবার ঈদের ১০ দিন আগের ট্রেনের টিকিট বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগে ঈদের ৫ দিন আগে অগ্রিম টিকিট দেয়া হতো। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ৭ এপ্রিল থেকে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হতে পারে। কেউ যাত্রা বাতিল করলে অনলাইনেই টাকা ফেরত (রিফান্ড) পাবেন। শতভাগ অনলাইন টিকিটের ক্ষেত্রে এই ব্যবস্থা চালু হচ্ছে।
রেলওয়ের পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী ৭ এপ্রিল দেয়া হতে পারে ১৭ এপ্রিলের ট্রেনের অগ্রিম টিকিট। ৮ এপ্রিল দেয়া হতে পারে ১৮ এপ্রিলের, ৯ এপ্রিল দেয়া হতে পারে ১৯ এপ্রিলের এবং ১০ এপ্রিল দেয়া হতে পারে ২০ এপ্রিলের টিকিট। ১১ এপ্রিল দেয়া হতে পারে ২১ এপ্রিলের টিকিট।
এদিকে, ঈদযাত্রার ট্রেনের ফিরতি টিকিট দেয়া শুরু হতে পারে ১৫ এপ্রিল থেকে। সেই হিসাবে আগামী ১৫ এপ্রিল দেয়া হতে পারে ২৫ এপ্রিলের টিকিট। যথাক্রমে ১৬ এপ্রিল দেয়া হবে ২৬ এপ্রিলের টিকিট। ১৭ এপ্রিল দেয়া হবে ২৭ এপ্রিলের টিকিট। ১৮ এপ্রিল দেয়া হবে ২৮ এপ্রিলের টিকিট। আর ১৯ এপ্রিল দেয়া হবে ২৯ এপ্রিলের টিকিট।
রেলওয়ের ওই সূত্র আরও জানায়, ঈদের সময় ট্রেনের সব টিকিট অনলাইনে দেয়ার বিষয়টি আন্তমন্ত্রণালয় সভায় আলোচনা হয়েছে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি ও যাত্রার সময় অতিরিক্ত ভিড় এড়াতে এমন সিদ্ধান্ত হতে পারে। সে ক্ষেত্রে শুধু ঈদযাত্রার অগ্রিম টিকিট অনলাইনে দেয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এটা আপাতত ঈদকে কেন্দ্র করে পরীক্ষামূলকভাবে করা হতে পারে। এটা সফল হলে আগামী পহেলা মে থেকে ট্রেনের সব টিকিট অনলাইনে বিক্রির সিদ্ধান্তও হতে পারে।
এদিকে, এবার ঈদে বিভিন্ন রুটে ১০ জোড়া বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করতে পারে বাংলাদেশ রেলওয়ে। তার মধ্যে পূর্বাঞ্চলে চলবে ৮ জোড়া, পশ্চিমাঞ্চলে দুই জোড়া। ঈদের সময় সব মিলিয়ে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টিকিট বিক্রি করে রেলওয়ে। সভায় অংশগ্রহণকারী রেলের একজন কর্মকর্তা জানান, গতবারের চেয়ে এবার বেশি বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করা হবে। গতবার ৬ জোড়া বিশেষ ট্রেন চালানো হয়েছিল।
তবে রেলের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, রেলের অনেক যাত্রী এখনো অনলাইনে টিকিট কাটতে অভ্যস্ত নন। ফলে শতভাগ অনলাইনে টিকি দিলে সাধারণ যাত্রীদের একটি অংশ টিকিট কাটতে পারবেন না। সে ক্ষেত্রে ঈদের সময় একটা বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে।
ঈদে টিকিট কালোবাজারি ঠেকাতে ঢাকা, বিমানবন্দর, জয়দেবপুর, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, সিলেট, রাজশাহী, খুলনাসহ বড় বড় সব স্টেশনে জিআরপি, আরএনবি, বিজিবি ও স্থানীয় পুলিশ এবং র্যাবের সহযোগিতায় সার্বক্ষণিক প্রহরার ব্যবস্থা থাকবে। তাছাড়া জেলা প্রশাসকদের সহায়তায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে বলেও আন্তমন্ত্রণালয় সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে। পাশাপাশি চলন্ত ট্রেনে, স্টেশনে বা রেললাইনে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে আরএনবি, জিআরপি ও রেলওয়ে কর্মচারীদের কার্যক্রম আরও জোরদার করা হবে।
এদিকে, যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলের সুবিধার্থে ঈদের ৩ দিন আগে থেকে কনটেইনার ও জ্বালানি তেলবাহী ট্রেন ছাড়া সবধরনের মালবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে। তাছাড়া ঈদের সময় আন্তদেশীয় ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে। একইসঙ্গে রেলপথ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত ভিজিলেন্স টিমও মনিটরিং করতে পারে ঈদের সময়।
বাসের অগ্রিম টিকিট নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি
বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান ও শ্যামলী পরিবহনের মালিক রমেশ চন্দ্র ঘোষ দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘বাসের অগ্রিম টিকিট বিক্রির বিষয়ে আমরা এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। তবে আগামী সপ্তাহে বাসমালিকদের নিয়ে আমরা একটি সভা করব। তারপর সিদ্ধান্ত জানা যাবে। তবে প্রতিবার ১৫ রোজা থেকে বাসের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়।’
বিশ্বের ১০০টি শহরের মধ্যে বাতাসের নিম্নমানের দিক থেকে মঙ্গলবার চতুর্থ অবস্থানে উঠে আসে রাজধানী ঢাকা। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বাতাসের মানবিষয়ক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ারের র্যাংকিংয়ে মঙ্গলবার সকাল ৮টা ৬ মিনিটে ১৩৭ স্কোর নিয়ে ঢাকার এ অবস্থান উঠে আসে।
তালিকায় ওই সময় ১৫৬ স্কোরে শীর্ষ ছিল ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা। এ ছাড়া দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল কাতারের দোহা। তৃতীয় অবস্থানে পাওয়া যায় দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গ ও পঞ্চম অবস্থানে ছিল চিলির সান্তিয়াগো।
নির্দিষ্ট স্কোরের ভিত্তিতে কোনো শহরের বাতাসের ক্যাটাগরি নির্ধারণের পাশাপাশি সেটি জনস্বাস্থ্যের জন্য ভালো নাকি ক্ষতিকর, তা জানায় আইকিউএয়ার। কোম্পানিটি শূন্য থেকে ৫০ স্কোরে থাকা শহরগুলোর বাতাসকে ‘ভালো’ ক্যাটাগরিতে রাখে। অর্থাৎ এ ক্যাটাগরিতে থাকা শহরের বাতাস জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়। ৫১ থেকে ১০০ স্কোরে থাকা শহরগুলোর বাতাসকে ‘মধ্যম মানের বা সহনীয়’ হিসেবে বিবেচনা করে কোম্পানিটি।
আইকিউএয়ারের র্যাঙ্কিংয়ে ১০১ থেকে ১৫০ স্কোরে থাকা শহরগুলোর বাতাসকে ‘সংবেদনশীল জনগোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ ক্যাটাগরিতে ধরা হয়। ১৫১ থেকে ২০০ স্কোরে থাকা শহরের বাতাসকে ‘অস্বাস্থ্যকর’ ক্যাটাগরির বিবেচনা করা হয়। র্যাঙ্কিংয়ে ২০১ থেকে ৩০০ স্কোরে থাকা শহরগুলোর বাতাসকে ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ ধরা হয়। তিন শর বেশি স্কোর পাওয়া শহরের বাতাসকে ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে বিবেচনা করে আইকিউএয়ার।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দলের নেতাকর্মীদের আগামী জাতীয় নির্বাচনের জন্য যথাযথ প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, বহুমুখী ষড়যন্ত্রের কারণে নির্বাচন একটি চ্যালেঞ্জ হবে।
সোমবার গণভবনে আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আগামী নির্বাচন একটি চ্যালেঞ্জ, কারণ বিভিন্ন মহলের ষড়যন্ত্র রয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখনই দেশের মানুষের জীবনযাত্রার কিছুটা উন্নতি হয়, তখনই বাংলাদেশে কিছু কুলাঙ্গার আছে, যারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কথা বলে এবং সর্বত্র মিথ্যাচার করে। কিছু মানুষ আন্তর্জাতিক অনুদান পাওয়ার জন্য বিদেশিদের সামনে বাংলাদেশ সম্পর্কে ভুল ধারণা তৈরি করে।
তিনি আরও বলেন, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, মুক্তিযুদ্ধের সময় লুণ্ঠন, ধর্ষণ ও দমন-পীড়নসহ গণহত্যা ও অন্যান্য অপরাধ করেছে এবং এখন তাদের প্রজন্ম নিরলসভাবে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপগ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।
ভোট কারচুপি বিএনপির অভ্যাস উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভোট কারচুপি ও গণতন্ত্র ছিনতাইয়ের রেকর্ড তাদের আছে। তবে, আমরা এখন তাদের কাছ থেকে গণতন্ত্রের ছবক শুনছি।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘এখন সামরিক স্বৈরশাসকের হাতে গঠিত দলের কাছ থেকে আমাদের গণতন্ত্রের ছবক শুনতে হয়। ভোট চুরি করা তাদের অভ্যাস। তাহলে চোরদের কাছ থেকে বাংলাদেশের মানুষ কী শিখবে?’
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী নেতাকর্মীদের দলকে আরও শক্তিশালী করতে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের দল যথেষ্ট শক্তিশালী। দল যেন আরও শক্তিশালী হয়, আমাদের সেই পদক্ষেপ নিতে হবে।’
বাংলাদেশের উন্নয়নের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর তার দল টানা ১৪ বছর ক্ষমতায় থাকায় এবং দেশে স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রাখায় এই উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে।
বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশকে বদলে দিতে চেয়েছিলাম। আজ আমরা সফলভাবে পরিবর্তন করতে পেরেছি।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন গ্রামীণ এলাকায় দারিদ্র্যের হার কমেছে। ঢাকা শহরে দারিদ্র্যের হার বেশি হলেও গ্রামাঞ্চলে কম। কেউ অতীতে এটি ভাবতে পারেনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ দেওয়ার অঙ্গীকার রক্ষা করেছে, কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধের পর বিশ্বব্যাপী পণ্যের দাম, পরিবহন খরচ, গ্যাস, জ্বালানি ও কয়লার দাম বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশকে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
তিনি বলেন, বৈদেশিক ঋণের সুদের হার বাড়ানো হয়েছে, যা দেশের বৈদেশিক মুদ্র্রার রিজার্ভের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে।
এখনও পাঁচ মাসের জন্য খাদ্য সংগ্রহের জন্য যথেষ্ট রিজার্ভ মজুদ রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি রপ্তানির জন্য কৃষি উৎপাদন বাড়াতে দেশের কোনো জমি অনাবাদি না রেখে সর্বত্র আবাদ করার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, সারা বিশ্বে এবং বাংলাদেশেও খাদ্যের দাম বেড়েছে। প্রকৃতপক্ষে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে জনগণের কষ্ট হচ্ছে। তবে, পণ্য পাওয়া যাচ্ছে (বাজারে) এবং কোনো জিনিসেরই অভাব নেই বলে উল্লেখ করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে এবারও ধান ও অন্যান্য ফসলের ফলন ভালো হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার সম্প্রতি ৭৬১,৭৮৫ কোটি টাকার বৃহত্তম জাতীয় বাজেটের রেকর্ড করেছে। তিনি বলেন, অতীতে এত বড় বাজেট কেউ দিতে পারেনি এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল এই কঠিন সময়ে সরকার এত বড় বাজেট দিতে পেরেছে। তিনি বলেন, বাজেটে বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় সুবিধাভোগীর সংখ্যা এবং ভাতার আকার উভয়ই বাড়ানো হয়েছে।
তিনি বলেন, এছাড়া সরকার একটি কার্ড সিস্টেমের ব্যবস্থা করেছে যাতে নিম্ন আয়ের লোকেরা তাদের ভোগান্তি লাঘব করতে ভর্তুকি মূল্যে চাল, ডাল এবং ভোজ্যতেলসহ কিছু প্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয় করতে পারে।
‘গণমাধ্যমকর্মী (চাকরির শর্তাবলি) বিল-২০২২’ যাচাই-বাছাই ও পরীক্ষা করে জাতীয় সংসদে প্রতিবেদন জমা দিতে চতুর্থ দফায় আরও ৯০ দিন সময় নিয়েছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। নির্দিষ্ট সময়ে প্রতিবেদন দিতে না পারায় সোমবার জাতীয় সংসদে আরও ৯০ দিন সময় চান সংসদীয় কমিটির সভাপতি হাসানুল হক ইনু।
প্রস্তাবটি স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ভোটের জন্য উপস্থাপন করলে এতে অনুমোদন দেয় সংসদ।
বহুল আলোচিত এই বিলটি গত বছরের ২৮ মার্চ সংসদে উপস্থাপন করেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। তখন বিলটি পরীক্ষা করে ৬০ দিনের মধ্যে সংসদে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়। নির্দিষ্ট সময়ে প্রতিবেদন দিতে না পেরে গত বছরের ৬ জুন ৬০ দিন বাড়তি সময় নিয়েছিল সংসদীয় কমিটি। এরপর আগস্টে আবার দ্বিতীয় দফায় ৬০ দিন সময় বাড়িয়ে নেয় তারা। এরপর গত ৮ জানুয়ারি আবারও বিলটি পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দিতে ৯০ দিন সময় নেয়া হয়। দীর্ঘ ছয় মাস পর আবারও ৯০ দিন সময় নিল সংসদীয় কমিটি।
প্রস্তাবিত আইনটি নিয়ে সাংবাদিক, সম্পাদক ও মালিকপক্ষের মধ্যে অসন্তোষ আছে। গত মার্চে আইনের খসড়া সংসদে তোলার পর থেকে সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন ও সংবাদপত্রের মালিকদের সংগঠন আইনের বেশ কিছু ধারা নিয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছে।
প্রস্তাবিত আইনে গণমাধ্যমকর্মী ও মালিকপক্ষের মধ্যে সৃষ্ট বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে গণমাধ্যম আদালত স্থাপন করার কথা বলা হয়েছে। প্রস্তাবিত ‘গণমাধ্যমকর্মী (চাকরির শর্তাবলি) আইন-২০২২’ পাস হলে এটি স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে বাধাগ্রস্ত করবে এবং সংবাদপত্রের বিকাশ সংকুচিত করবে বলে মনে করছে সম্পাদক পরিষদ।
গত এপ্রিলে এক বিবৃতিতে সম্পাদক পরিষদ বলেছিল, প্রস্তাবিত এই আইনের ৫৪টি ধারার মধ্যে ৩৭টি ধারাই সাংবাদিকবান্ধব নয়। সার্বিকভাবে এই আইন গণমাধ্যম ও গণমাধ্যমকর্মীদের স্বার্থের বিরুদ্ধে। এ ধরনের আইন চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত নেয়া প্রয়োজন।
অন্যদিকে প্রস্তাবিত গণমাধ্যমকর্মী আইন প্রচলিত বিচারব্যবস্থা, শিল্প আইন ও বাংলাদেশ শ্রম আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মনে করে দৈনিক সংবাদপত্রের মালিকদের সংগঠন নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব)। সংগঠনটির বক্তব্য, প্রস্তাবিত ওই আইনটি পাস হলে স্বাধীন সাংবাদিকতা এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বাধাগ্রস্তসহ সংবাদপত্রের বিকাশ সংকুচিত হবে।
বর্তমানে নানা অনিয়মের কারণে নির্বাচনের যেকোনো পর্যায়ে ভোট বন্ধ করার ক্ষমতা রয়েছে ইসির। এই ক্ষমতা সীমিত করে শুধু নির্দিষ্ট কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ বন্ধ করার ক্ষমতা দেয়া হচ্ছে সাংবিধানিক সংস্থাটিকে।
এছাড়া জাতীয় সংসদের কোনো আসনের নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগে পুরো আসনের ভোটের ফলাফল স্থগিত বা বাতিল করতে পারবে না ইসি। এক্ষেত্রে কেবল যেসব ভোটকেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হবে, শুধু সেসব কেন্দ্রের ভোট স্থগিত বা বাতিল করতে পারবে।
এসব বিধান রেখে সোমবার গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) সংশোধনীর প্রস্তাব এনে একটি বিল সংসদে উত্থাপন করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
‘রিপ্রেজেন্টেশন অব দ্য পিপল (অ্যামেন্ডমেন্ট) অ্যাক্ট ২০২৩’ সংসদে তোলার পর বিলটি পরীক্ষা করে ১৫ দিনের মধ্যে সংসদে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য আইন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।
আইনের সংশোধনীর মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা খর্ব করা হচ্ছে- এমন অভিযোগ করে বিলটি উত্থাপনে আপত্তি জানান জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম। তবে তার আপত্তি কণ্ঠ ভোটে নাকচ হয়ে যায়। পরে আইনমন্ত্রী বিলটি সংসদে তোলেন।
জাতীয় নির্বাচন সংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯১(এ) ধারায় বলা আছে, ‘নির্বাচন কমিশন যদি সন্তুষ্ট হয় যে, নির্বাচনে বলপ্রয়োগ, ভীতি প্রদর্শন এবং চাপ সৃষ্টিসহ বিভিন্ন বিরাজমান অপকর্মের কারণে যুক্তিযুক্ত, ন্যায় সঙ্গত এবং আইনানুগভাবে নির্বাচন পরিচালনা নিশ্চিত করতে সক্ষম হবে না, তাহলে যেকোনো ভোটকেন্দ্র বা ক্ষেত্র মতো সম্পূর্ণ নির্বাচনি এলাকায় নির্বাচনের যেকোনো পর্যায়ে ভোটগ্রহণসহ নির্বাচনি কার্যক্রম বন্ধ করতে পারবে।’
তবে রিটার্নিং কর্মকর্তা ফলাফল ঘোষণা করার পর ইসি ওই ফলাফল স্থগিত বা বাতিল করতে পারে কিনা, তা নিয়ে মতদ্বৈধতা আছে।
এ কারণে বিষয়টি স্পষ্ট করার জন্য ইসি একটি বিধানের সঙ্গে আরেকটি উপধারা যুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছিল। সেই বলা হয়েছিল, কোনো অনিয়ম, ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ এলে নির্বাচন কমিশন কোনো ভোটকেন্দ্র বা পুরো আসনের ভোটের ফলাফল স্থগিত করতে পারবে। এরপর অভিযোগ দ্রুত তদন্ত করে সত্যতা পায়া গেলে, কোনো কেন্দ্র বা পুরো আসনের ভোট বাতিল করে নতুন করে নির্বাচন করতে পারবে।
তবে ইসি পুরো আসনের ফলাফল স্থগিত বা বাতিলের ক্ষমতা পাচ্ছে না। সংশোধনীতে বলা হয়েছে— যেসব ভোটকেন্দ্রে (এক বা একাধিক) অভিযোগ থাকবে, ইসি শুধু সেসব কেন্দ্রে ভোটের ফলাফল স্থগিত বা বাতিল করে প্রয়োজনে নতুন নির্বাচন করতে পারবে।
এর পাশাপাশি ওই আইনের ৯১ (এ) ধারায়ও সংশোধনীর প্রস্তাব করা হয়েছে। সংশোধনীতে আরপিও’র ৯১ ধারার ‘এ’ উপধারায় ‘ইলেকশন’ শব্দের বদলে ‘পোলিং’ শব্দ প্রতিস্থাপন করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
খসড়া আইনে নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহের দায়িত্বে থাকা গণমাধ্যমকর্মী এবং পর্যবেক্ষকদের কাজে বাধা দিলে তার শাস্তির বিধান যুক্ত করা হয়েছে। এ ধরনের অপরাধে সর্বনিম্ন দুই বছর থেকে সর্বোচ্চ সাত বছর কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
‘ইসির ক্ষমতা খর্ব করা হচ্ছে’
বিলটি উত্থাপনে আপত্তি জানিয়ে সংসদে বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম। তিনি বলেন, ‘সংবিধানে নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীনতা দেয়া হচ্ছে। আমরা ৫২ বছর পর হলেও নির্বাচন কমিশন (গঠন) আইন করেছি। নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালনে স্বাধীন থাকবে। আমরা আইন করতে যাচ্ছি। আইন করে যদি স্বাধীনতাটাকে ক্যানসেল করে দেই। তাহলে কমিশন কীভাবে স্বাধীন থাকবে?’
তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি, আগামী নির্বাচন নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হবে। সেখানে আরপিওতে দেখলাম— আমরা দেখেছি, গাইবান্ধার নির্বাচন খারাপ হয়েছিল বলে কমিশন বন্ধ করে দিয়েছে। জানি না কী কারণে আইনমন্ত্রী আবার এখন আনলেন (সংশোধনী) নির্বাচন কমিশন পুরো নির্বাচন বন্ধ করতে পারবে না। ভোটকেন্দ্র বন্ধ করতে পারবে, যেখানে গণ্ডগোল হয়েছে সেটা বন্ধ করতে পারবে। মানে স্বাধীনতার (ইসির) হস্তক্ষেপ। এই স্বাধীনতা খর্বের বিষয়টি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।’
ফখরুল ইমাম বলেন, ‘এই সংশোধনী সংবিধানের চেতনা ও গণতন্ত্রের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। নির্বাচনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। আমরা নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীনভাবে দেখতে চাই। কমিশন যা পাঠবে তা সংসদে পাস করা উচিত।’
ফখরুল ইমামের বক্তব্যের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘এই সংশোধনী সংবিধান বা গণতন্ত্রের পরিপন্থী নয়। আইনের ৯১ (এ) ধারায় বলা আছে— নির্বাচন কমিশন যদি দেখে কোনো নির্বাচনি এলাকায় সমস্যা হয়, গণ্ডগোল, ভোট দিতে বাধা দান— এটা দেখা গেলে পুরো নির্বাচনি এলাকার নির্বাচন ইলেকশন কমিশন বন্ধ করে দিতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘এখানের সংশোধনী হলো— কোনো একটি পোলিং সেন্টারে যদি গণ্ডগোল দেখা দেয়। ধরেন, আমার নির্বাচনি এলাকায় ১১৪টি পোলিং সেন্টার আছে। এর দুটো কী তিনটায় যদি গণ্ডগোল, কোয়ার্শন (জোরজবরদস্তি), ভায়োলেন্স (সহিংসতা) এগুলো হয়— তাহলে এই দুটো/ তিনটায় নির্বাচন বন্ধ করে দিতে পারবে। কিন্তু এই দুটো/তিনটার কারণে ১১১টির নির্বাচন বন্ধ করার ক্ষমতাটা দেয়া হচ্ছে না। এর মানে হচ্ছে যে, এটা গণতন্ত্রের পরিপন্থী নয়। কারণ যে ১১১টায় সঠিকভাবে নির্বাচন হয়েছে, যেখানে গণতান্ত্রিকভাবে জনগণ তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে, সেটা নির্বাচন কমিশন কমিশন বন্ধ করতে পারবে না। যদি বন্ধ করতে পারতো সেটা অগণতান্ত্রিক হতো।’
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাজেটে মোট জাতীয় উৎপাদনের অন্তত ৩ দশমিক ২ শতাংশ বরাদ্দের দাবি জানিয়েছেন নাগরিক সমাজ প্রতিনিধিরা।
সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে অর্থপাচার রোধে এবং একটি কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে, দেশের কর ও আর্থিক ব্যবস্থার সংস্কারেরও সুপারিশ করেন তারা। এই উদ্যোগ নিজস্ব উৎস থেকে জলবায়ু অর্থায়নে সহায়ক হতে পারে বলে তারা অভিমত প্রকাশ করেন।
কোস্ট ফাউন্ডেশন, সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (সিপিআরডি), সেন্টার ফর সাসটেইনেবল রুরাল লাইভলিহুড (সিএসআরএল), ইক্যুইটি অ্যান্ড জাস্টিস ওয়ার্কিং গ্রুপ বাংলাদেশ (ইক্যুইটিবিডি), অ্যান অর্গানাইজেশন ফর সোসিও-ইকোনমিক ডেভেলমেন্ট (এওসেড), ক্লাইমেট অ্যাকশন নেটওয়ার্ক অন সাউথ এশিয়া, বাংলাদেশ (কানসা বিডি) এবং লিডারস যৌথভাবে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজনের করে। ইক্যুইটিবিডির রেজাউল করিম চৌধুরী সংবাদ সম্মেলনটি সঞ্চালনা করেন।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করতে গিয়ে ইক্যুইটিবিডির সৈয়দ আমিনুল হক বলেন, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় দীর্ঘমেয়াদে জলবায়ু সহনশীল করে তোলার লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ডেল্টা প্ল্যান ২১০০, মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা ২০৩০ এবং ন্যাশনাল ডিটারমাইন্ড প্ল্যান ইত্যাদি সরকারি কৌশলগত জলবায়ু পরিকল্পনাহসূহ বাস্তবায়নে প্রতি বছর জিডিপির প্রায় ৩ দশমিক ২ শতাংশ (বছরে ১৮৩০০০ কোটি টাকা) অর্থ প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমানে বিনিয়োগ বা বরাদ্দ সেই চাহিদার তুলনায় অনেক কম।
আমিনুল হক আয়োজকদের পক্ষ থেকে কয়েকটি সুনির্দিষ্ট দাবি তুলে ধরেন। প্রস্তাবগুলো হলো- সরকারকে অবশ্যই কৌশলগত পরিকল্পনা এবং বাস্তব প্রয়োজনানুযায়ী জলবায়ু অর্থায়ন হিসেবে জিডিপির কমপক্ষে ৩.২ শতাংশ বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ভিন্ন ভিন্ন বরাদ্দ না দিয়ে একটি সমন্বিত জাতীয় জলবায়ু বাজেট বরাদ্দ ও তার বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। জলবায়ু অর্থায়নের জন্য বৈদেশিক ঋণের উপর নির্ভর না করে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে এই অর্থ সংগ্রহে জোর দিতে হবে। অভ্যন্তরীণ উৎস হতে অর্থ সংগ্রহের লক্ষ্যে অর্থপাচার রোধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়া উপকূল সুরক্ষা সম্পর্কিত অবকাঠামো কর্মসূচিকে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিনিয়োগ খাত হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
সিএসআরএলের মো. জিয়াউল হক মুক্তা বলেন, ডেল্টা পরিকল্পনা এবং মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনাসহ বিভিন্ন সরকারি পরিকল্পনায় নীতিগত সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ বাজেট এই অসঙ্গতির ফলাফল, যেখানে বাস্তবসম্মত জলবায়ু অর্থায়নের লক্ষ্য নেই। সরকারকে কৌশলগত জলবায়ু পরিকল্পনার বিষয়গুলিতে জোর দিতে হবে, এবং সেই অনুযায়ী জলবায়ু অর্থ বরাদ্দ করতে হবে।
ঢাকা জজ কোর্ট প্রাঙ্গণে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা সংঘর্ষে জড়িয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন পাঁচজন।
সোমবার বিকেলের এ সংঘর্ষে আহতরা হলেন—জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক ফারুকী (৪০), অ্যাডভোকেট মুজাহিদুল ইসলাম সায়েম (৩৫), অ্যাডভোকেট আনোয়ার হোসেন তারুণ্য (৩০), অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম (৩৫) ও অ্যাডভোকেট মোসাম্মৎ মুক্তি (৩০)।
এদের মধ্যে ওমর ফারুক ফারুকীকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগে ভর্তি করা হয়। পরে তাকে আরেকটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এছাড়া অ্যাডভোকেট মোসাম্মৎ মুক্তিকেও ঢামেকের নিউরোসার্জারি বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে। বাকি তিনজন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন।
বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বিএনপিপন্থি আইনজীবী নেতারা আহতদের দেখতে ঢামেক হাসপাতালে আসেন। এদের মধ্যে ছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের ঢাকা বার ইউনিটের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভাপতি এ জে মোহাম্মদ আলী, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল।
ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. বাচ্চু মিয়া বলেন, জজ কোর্ট প্রাঙ্গণে সংঘর্ষের ঘটনায় দুজনকে হাসপাতালে ভর্তি এবং তিনজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি রাষ্ট্রদূতরা নিজ দায়িত্বের বাইরে গিয়ে কোনো কাজ করলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেবে সরকার। এছাড়া বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের যে ছয় কংগ্রেসম্যান চিঠি দিয়েছে তাদের সঙ্গে কথা বলা হবে।
সোমবার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম।
বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ছয় মাস আগে বিদেশি দূতদের কেউ কেউ দায়িত্বের বাইরে গিয়ে কাজ করেছিলেন, আবারো একই ঘটনা হলে প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেবে সরকার। তবে এমন কিছু আমাদের চোখে এখনো পড়েনি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে ৬ মার্কিন কংগ্রেসম্যানের লেখা চিঠির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ‘এমনকি তথ্যের বড় ধরনের ঘাটতি আছে, অসামঞ্জস্য আছে। আমরা ওই কংগ্রেসম্যানদের সঙ্গে কথা বলব। শুধু তাই না, এ অঞ্চল নিয়ে যাদের আগ্রহ আছে বা এ ধরনের বিষয়ে যাদের আগ্রহ আছে– তাদের সকলকেই নিয়মিতভাবে আমাদের অবস্থান জানাব।’
যুক্তরাজ্য, কানাডাসহ আরো কিছু দেশ ঘোষণা ছাড়াই বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি অনুসরণ করবে—এমন গুজবের বিষয়ে শাহরিয়ার আলম বলেন, এগুলো সবই প্রপাগান্ডা। নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে এগুলো আরো বাড়বে। সে বিষয়ে গণমাধ্যমকে সচেতন থাকতে হবে।
গত ২৫ মে এক চিঠিতে শেখ হাসিনার সরকার সম্পর্কে বিভিন্ন নেতিবাচক মন্তব্য উল্লেখ করে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জো বাইডেনকে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেন ৬ জন মার্কিন কংগ্রেস সদস্য। চিঠিতে কিছু বাড়তি বলা হয়েছে উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশেও রাজনীতিবিদেরা, সংসদ সদস্যরা বিশেষ করে অন্য দলের সংসদ সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীকে অনেক কিছু বলেন। কেউ হয়তো লেখেনও, কিন্তু আমরা সেটি জানি না। হয়তো আমার বিরুদ্ধে বলেন বা লেখেন। এটি রাষ্ট্র বা সরকারের প্রধানের ওপর নির্ভর করে তিনি ওই চিঠি বা কথাগুলো বিবেচনায় নেবেন কি নেবেন না।
শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘এরকম চিঠি অতীতেও এসেছে, ভবিষ্যতে আরও বড় আকারে আসতে পারে। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে এই ধরনের কার্যক্রম তত বাড়তে থাকবে।’
বিভিন্ন লবিস্ট ফার্ম বা শক্তি কাজ করার বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘তারা তাদের কাজ করবে, আমরা আমাদের কাজ করবো। প্রধানমন্ত্রী সবসময় বলেন বাংলাদেশের মানুষ আমাদের শক্তি।’
শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘বিদেশে কারো কাছে ধরনা দিয়ে বা কারো চাপে পড়ে বা কারো সঙ্গে সম্পর্ক শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতেই হবে– এরকম কোনও নীতির প্রতি অগ্রসর হয়ে বাংলাদেশের মানুষকে পেছনে ফেলে দেয়ার নীতিতে আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে না।’
এদিকে সম্প্রতি ভারতের সংসদ ভবনে ‘অখণ্ড ভারতের’ মানচিত্র স্থাপন করা হয়েছে। যাতে বাংলাদেশসহ আরও কয়েকটি দেশকে দেখানো হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জানান, ভারতের আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা জানার জন্য দিল্লিতে বাংলাদেশ দূতাবাসকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যেটা জেনেছি—ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন যে এটি অশোকা সাম্রাজ্যের মানচিত্র, এটি খ্রিস্টের জন্মের তিন শ বছর আগের। সেই সময়ের যে অঞ্চলটি ছিল, তার একটি মানচিত্র এবং এটি একটি ম্যুরাল। ওই ম্যুরালে চিত্রায়ণ করা হয়েছে মানুষের যাত্রা। এখানে সাংস্কৃতিক মিল থাকতে পারে, কিন্তু এর সঙ্গে রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই। তারপরও ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা কী তা জানার জন্য আমরা দিল্লির মিশনকে বলেছি।’
রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি বাসায় তেলাপোকা মারার স্প্রে দেয়ার পর অসুস্থ হয়ে দুই শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। পেস্ট কন্ট্রোল (কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ) সার্ভিসের অদক্ষ কর্মীদের কারণে মর্মান্তিক এ ঘটনা ঘটেছে বলে ওই দুই শিশুর পরিবার অভিযোগ করেছে।
গত রোববার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার আই ব্লকের ওই বাসায় এ ঘটনা ঘটে। মারা যাওয়া দুই শিশু হলো-শায়েন মোবারত জাহিন (১৫) ও শাহিল মোবারত জায়ান (৯)। তারা দুজনেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। দুই শিশুর মা শারমিন জাহান লিমা ও বাবা মোবারক হোসেন বিষক্রিয়ায় অসুস্থ হয়ে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
তাদের স্বজন ও পুলিশ জানায়, অর্ডারের পরিপ্রেক্ষিতে গত শুক্রবার বসুন্ধরা আই বক্লের নতুন বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিসের কর্মীরা এসে স্প্রে করে যান। তারা কাজ শেষ করেন সন্ধ্যা ৬টার দিকে। তখন বলে যান ২-৩ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকতে। কিন্তু পরদিন শনিবার রাতে পরিবারের সদস্যরা বাসায় ঢোকার পর অসুস্থ হয়ে পড়েন। রাতে ছোট ছেলে শাহিল মোবারত জায়ানের অবস্থার অবনতি হলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার ভোরে তার মৃত্যু হয়। সেদিন রাত সাড়ে ৯টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় বড় ছেলে শায়েন মোবারত জাহিন।
শিশু দুটির খালা ডা. রওনক জাহান রোজি অভিযোগ করেন, পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিসের অদক্ষ কর্মীদের কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। আমরা পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিসের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো সঠিক উত্তর পাইনি। শিশুদের মা-বাবাও এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এ বিষয়ে ভাটারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এবিএম আসাদুজ্জামান দৈনিক বাংলাকে বলেন, প্রাথমিকভাবে দুই শিশু বিষক্রিয়ায় মারা গেছে বলে অভিযোগ পেয়েছি। ছোট ছেলেটির মৃত্যুর পর একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়। পরে স্বজনরা জানান, ছোট ছেলের মরদেহ দাফন করার সময় তারা বড় ছেলের মৃত্যুর খবর পান। এরপর মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ময়নাদতন্ত শেষে সোমবার পরিবারের কাছে মরদেহ বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।
এ ঘটনায় মৃত শিশুদের বাবা মোবারক হোসেন মামলা করেছেন। ঘটনা তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলেও জানান ওসি।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাসের পর থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত সারা দেশে সাত হাজার একটি মামলা দায়ের হয়েছে বলে জাতীয় সংসদে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
সোমবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খানের প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানান আইনমন্ত্রী।
স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উপস্থাপন করা হয়।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পাস হয় এবং ওই বছর ৮ অক্টোবর থেকে আইনটি কার্যকর হয়। এর তিন দিনের মাথায় ১১ অক্টোবর প্রথম এই আইনের অধীনে মামলা দায়ের হয়।
মোকাব্বির খান তার প্রশ্নে ডিজিটাল নিরাপত্তার আইনে মামলা ও গ্রেপ্তারের সংখ্যা জানতে চান।
তবে আইনমন্ত্রী ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এ পর্যন্ত কতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সে সংখ্যা দিতে পারেননি। তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সংশ্লিষ্টতা থাকায় ওই অংশ জননিরাপত্তা বিভাগে স্থানান্তর করা হয়েছে।
সরকার দলীয় সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের অধস্তন আদালতগুলোতে চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত ৩৬ লাখ ৭০ হাজার ৬৭০টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এরমধ্যে দেওয়ানি মামলার সংখ্যা ১৫ লাখ ৮৪ হাজার ১৬০টি এবং ফৌজদারি মামলা ২০ লাখ ৮৬ হাজার ৫১০টি।
তিনি জানান, দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ঢাকায় সর্বোচ্চ ৫ লাখ ৪৪ হাজার ৩৩ মামলা চলমান রয়েছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চট্টগ্রামে ২ লাখ ৭১ হাজার ৬০৬ মামলা চলমান। সর্বনিম্ন খাগড়াছড়িতে ৬ হাজার ৬৩০টি মামলা চলমান রয়েছে।
নোয়াখালী-২ আসনের সংসদ সদস্য মোরশেদ আলমের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার বিচারপ্রার্থী জনগণের ভোগান্তি লাঘবের জন্য একটি আধুনিক বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর গতিশীল নেতৃত্বে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সরকার গৃহীত পদক্ষেপ বাস্তবায়ন হলে সারা দেশে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা একটি সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসবে এবং মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে কার্যকর ও দৃশ্যমান উন্নয়ন হবে।
করোনা ভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা নিয়ে প্রতারণার মামলায় দণ্ডিত জেকেজি হেলথ কেয়ারের চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা শারমিন হোসেনকে জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ জামিনাদেশের ফলে তার মুক্তিতে বাধা নেই বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী। তবে রাষ্ট্রপক্ষ বলছে আপিলের প্রস্তুতি চলছে।
সোমবার বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান ও বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিনের হাইকোর্ট বেঞ্চ ডা. সাবরিনাকে জামিন দেন। আদালতে জামিন আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মাসুদুল হক। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জি বাপ্পী।
পরে ডা. সাবরিনার আইনজীবী মাসুদুল হক বলেন, বিচারিক আদালতের দণ্ডের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত আপিল শুনানি না হওয়া পর্যন্ত জামিন জামিন দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে জামিন প্রশ্নে রুল জারি করেছেন। এ মামলায় জামিন হওয়ায় এখন তার মুক্তিতে বাধা নেই। কারণ বাকি মামলাগুলোতে তিনি জামিন পেয়েছেন।
তবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সুজিত চ্যাটার্জি বাপ্পী বলেন, এ জামিনাদেশের বিরুদ্ধে আপিল দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
ডা. সাবরিনা শারমিন এবং প্রতিষ্ঠানটির সিইও আরিফুল হক চৌধুরীসহ আটজনকে তিনটি পৃথক অভিযোগে গত বছরের ১৯ জুলাই ১১ বছর করে কারাদণ্ড দেন ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন।
রায়ে দণ্ডবিধির ৪২০ ধারায় প্রত্যেককে তিন বছর কারাদণ্ড ও তিন হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে তিন মাসের সশ্রম কারাদণ্ড, দণ্ডবিধির ৪৬৬ ধারায় প্রত্যেককে ৪ বছর কারাদণ্ড ও চার হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৪ মাসের সশ্রম কারাদণ্ড এবং দণ্ডবিধির ৪৭১ ধারায় প্রত্যেককে ৪ বছর কারাদণ্ড ও চার হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ৪ মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত।
তিনটি ধারার সাজা পর পর কার্যকর হবে মর্মে রায়ে বলা হয়। যে কারণে আসামিদের ১১ বছর করেই সাজা খাটতে হবে। এ রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট বিভাগে আপিল করেন সাবরিনা, সঙ্গে জামিনও প্রার্থনা করেন।
মামলা বিবরণ থেকে জানা যায়, করোনার ভুয়া সনদ দেয়া, জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগে আরিফুলসহ ছয়জনকে ২০২০ সালের ২৩ জুন গ্রেপ্তার করে তেজগাঁও থানা পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর থানা হাজতে থাকা অবস্থায় আরিফুলের ক্যাডার বাহিনী ভাঙচুর ও থানায় হামলা করে পুলিশকে মারধর করে।
এ মামলায় ২০২০ সালের ৫ আগস্ট তাদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। এরপর একই বছরের ২০ আগস্ট আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন আদালত। বিচার শেষে আট আসামিকে সাজা দেন বিচারিক আদালত।
বাংলাদেশকে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত থেকে রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। তিনি বলেছেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত থেকে রক্ষা করতে হলে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও প্রয়াস দরকার। পরিবেশ, প্রকৃতি সংরক্ষণ, বন সৃজন অন্য কারও জন্য নয়, নিজেদের ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যই করা প্রয়োজন। অন্যথায় ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে আমাদের আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।’
সোমবার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’ উপলক্ষে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনের সভাপতিত্বে সভায় উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার, মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বিশেষ অতিথি এবং সচিব ড. ফারহিনা আহমদ বক্তব্য দেন।
হাছান মাহমুদ বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত আমাদের নিত্যসঙ্গী। জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্ত বিরূপ প্রভাব আমাদের দেশে দৃশ্যমান। সেই প্রেক্ষাপটে পরিবেশ সংরক্ষণ একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে সরকার পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থাপনায় সেই দুরূহ কাজ করতে গিয়ে অনেক সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ২০১৫ সালে পরিবেশ সংরক্ষণে বিশ্বের সর্বোচ্চ পদক ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ’ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে, যা জাতির জন্য বিপুল সম্মান ও স্বীকৃতির পরিচায়ক।”
বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী কীভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলা করেছেন সে উদাহরণ হচ্ছে, বাংলাদেশ পৃথিবীর সবচাইতে ঘনবসতিপূর্ণ, মাথাপিছু সর্বনিম্ন কৃষি জমি এবং আয়তনের দিক দিয়ে পৃথিবীর ৯২তম দেশ হওয়া সত্ত্বেও ধান ও মিঠাপানির মাছ উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয়, সবজি উৎপাদনে চতুর্থ, আলু উৎপাদনে সপ্তম এবং খাদ্যশস্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। ছোট্ট একটি দেশে প্রধানমন্ত্রীর অনন্য ব্যবস্থাপনাতেই এটি সম্ভব হয়েছে।’
এ বছর বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য ‘বিট প্লাস্টিক পলুশন, ইকোসিস্টেম রিস্টোরেশন’ অনুসারে প্লাস্টিক দূষণ সমাধানে ব্রতী হওয়ার আহ্বান জানান তথ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বছরে পৃথিবীতে ৪ শ’ মিলিয়ন টন এবং এর মধ্যে বাংলাদেশ প্রায় ৩ হাজার টন প্লাস্টিক উৎপাদন হয় এবং বিশ্বব্যাপী ১১ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক বর্জ্য সমুদ্রে নিক্ষেপ করা হয়। এ অবস্থা চললে বিশেষজ্ঞদের মতে ৫০ বছরে অনেক জায়গা মৎস্যশূন্য হয়ে যাবে, থাইল্যান্ডের সমুদ্র অনেকটা মৎস্যশূন্য হয়ে গেছে। আবার প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২৫০ প্রজাতির প্রাণী প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে, এর মধ্যে ১৩৭টি প্রজাতি বিলুপ্ত হচ্ছে বনভূমি উজাড় হওয়ার কারণে।’
পরিবেশের বিপর্যয় রোধে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত পরিবেশ সচেতন। আসুন সবাই মিলে দেশ গড়ি, পরিবেশ রক্ষা করি এবং প্রধানমন্ত্রীর হাতকে শক্তিশালী করি।’
অনুষ্ঠানে পরিবেশমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন প্লাস্টিক ব্যবহারের বিরুদ্ধে সতর্ক করে জানান, প্লাস্টিক দূষণ রোধে ১০ বছর মেয়াদী কর্মপরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এছাড়া ২০৩০ সাল নাগাদ দেশে বৃক্ষাচ্ছাদিত ভূমির পরিমাণ বর্তমান ২২ দশমিক ৩৭ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশে এবং বনভূমির পরিমাণ ১৪ দশমিক ১ শতাংশ থেকে ১৬ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার পরিবেশ সংরক্ষণে সরকারের উদ্যোগের সঙ্গে সবার অংশগ্রহণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
সাবের হোসেন চৌধুরী বিশ্বের সামনে পরিবেশগত তিনটি চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরে বলেন, বর্তমান বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তন, জীববৈচিত্র্য হারানো এবং প্লাস্টিক বিস্ফোরণের অভিঘাত মোকাবিলা করছে। বাংলাদেশও এই অভিঘাতের বাইরে নয়। বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়কে এ ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে।
অনুষ্ঠানে সিলেটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আমিনুজ্জামান মো. সালেহ রেজা ও বগুড়ার বাংলাদেশ বায়োডাইভার্সিটি কনজারভেশন ফেডারেশন সভাপতি ড. এস এম ইকবালকে বঙ্গবন্ধু অ্যাওয়ার্ড ফর ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন-২০২২ দেয়া হয়।
অনুষ্ঠানে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জীবানন্দ রায়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ, ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এস এম মফিজুল ইসলাম, ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড ও বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সোসাইটিকে (বেডস) দেয়া হয় জাতীয় পরিবেশ পদক-২০২২।
পাশাপাশি ৬টি শ্রেণিতে নির্বাচিত ১৮ জনকে বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার ২০২১ এবং সামাজিক বনায়নে অংশগ্রহণকারী সর্বোচ্চ লভ্যাংশপ্রাপ্ত ৫ জন মহিলা ও ৫ জন পুরুষকে পুরস্কৃত করেন প্রধান অতিথি পরিবেশবিদ ড. হাছান মাহমুদ।
সভা শেষে তথ্যমন্ত্রী কনভেনশন সেন্টার সংলগ্ন শেরেবাংলা নগরে পরিবেশ মেলা, জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষ মেলা উদ্বোধন করেন এবং অতিথিদের নিয়ে বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন। পরিবেশ মেলা ১১ জুন পর্যন্ত এবং বৃক্ষমেলা প্রথম পর্ব ২৬ জুন পর্যন্ত এবং দ্বিতীয় পর্ব ১ থেকে ১২ জুলাই পর্যন্ত চলবে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকবে।
দেশজুড়ে চলছে তীব্র লোডশেডিং। এর মধ্যে এবার আরেক দুঃসংবাদ। কয়লা সংকটে দেশের সবচেয়ে বড় তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র পায়রায় উৎপাদন কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে লোডশেডিং আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সোমবার দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে পায়রার দ্বিতীয় ইউনিটের উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এর আগে কয়লা সংকটের কারণে গত ২৫ মে কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিটের উৎপাদন বন্ধ করে দেয়া হয়।
এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র সমগ্র বরিশাল, খুলনা ও ঢাকার কিছু অংশের বিদ্যুৎ সরবরাহের উৎস।
পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র সূত্র বলছে, কেন্দ্রটির কয়লা আমদানি করে চীনা অংশীদার প্রতিষ্ঠান সিএমসি। তাদের পাওনা অর্থ ৬ মাসের নির্ধারিত সময় না দেয়ায় চীন সরকার বাংলাদেশে কয়লা সরবরাহ বন্ধ করে দেয়।
কয়লার অভাবে কেন্দ্রটির বন্ধ হওয়া প্রায় নিশ্চিত হয়ে গেলে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক বকেয়া পাওনা থেকে দুই হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করে। পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষে ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা আমদানির উদ্যেগ নিয়েছে, সেই কয়লা আগামী ২৫ জুনের আগে কেন্দ্রে এসে পৌঁছাবে না। ফলে এই কেন্দ্র উৎপাদনে না আসা পর্যন্ত সেটির বিদ্যুৎ ঘাটতি থেকেই যাবে।
এদিকে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধের খবরে সারাদেশে লোডশেডিং নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) দেশের সব উপজেলায় মাইকিং করে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার জন্য সাধারণ মানুষকে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে অনুরোধ করছে। নড়াইল, বরিশালসহ বেশ কিছু এলাকায় এ ধরনের মাইকিং করা হয়েছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ সংক্রান্ত আবেদনের শুনানির জন্য আগামী ১৪ আগস্ট দিন ঠিক করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত।
সোমবার আপিল বিভাগের বিচারপতি এম, ইনায়েতুর রহিমের চেম্বার আদালত এ দিন ধার্য করেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মহসিন রশিদ।
‘একজন চিফ জাস্টিসকেও নামিয়ে দিয়েছিলাম ও সুশীলদের আমরা বস্তায় ভরে বুড়িগঙ্গা নদীর কালো পানিতে ছেড়ে দেবো’—ব্যারিস্টার তাপসের এমন বক্তব্যে আদালত অবমাননা হয়েছে উল্লেখ করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা চেয়ে গত রোববার আবেদন করেন আইনজীবী শাহ আহমদ বাদল। সোমবার এই বিষয়ে শুনানির জন্য আবেদন উপস্থাপন করেন সুপ্রিম কোর্ট বারের এডহক কমিটির আহ্বায়ক সিনিয়র আইনজীবী মহসিন রশীদ।
শুনানিতে তিনি বলেন, এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। আদালত অবমাননার একটি অভিযোগ আমাদের আনতে হয়েছে। আমরা চাচ্ছি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে এ আবেদনের ওপর শুনানির দিন ধার্য করে দেবেন।
এ সময় চেম্বার জজ এম ইনায়েতুর রহিম বলেন, কোর্ট কাচারি নিয়ে নানা জন, নানা কথা বলেন। রাজনীতিবিদেরা তো অনেক কথাই বলেন। রায় পক্ষে গেলে একরকম বলেন, বিপক্ষে গেলে আরেক রকম বলেন। একটি রায় নিয়ে এর আগে প্রধান বিচারপতির কুশপুতুল দাহ করার ঘটনাও ঘটেছে। তখন তো কেউ আদালত অবমাননার অভিযোগ নিয়ে আসেনি।
জবাবে আইনজীবী মহসিন রশীদ বলেন, এ ধরনের কাজ আদালত অবমাননার অভিযোগ আমলে নেয়া উচিত।
পরে আদালত আগামী ১৪ আগস্ট আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য দিন ঠিক করে দেন। এ সময় আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সমর্থক শতাধিক আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।
গত ২১ মে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘মনটা চায় আবার ইস্তফা দিয়ে ফিরে আসি। যেখানে মুগুর দেয়ার সেটাও জানি। একজন চিফ জাস্টিসকেও নামিয়ে দিয়েছিলাম। মশিউজ্জামানকে (বারের গত নির্বাচনের সাব কমিটির প্রধান) আমরা মনে করতাম, ওরে বাবা, কী জানি ফেরেস্তা আসছে। সবচেয়ে বড় চোর হলো মশিউজ্জামান। যে সকল সুশীলরা আমাদেরকে বুদ্ধি দিতে যাবেন সেই সকল সুশীলদের আমরা বস্তায় ভরে বুড়িগঙ্গা নদীর কালো পানিতে ছেড়ে দেবো।’
তার এ বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ২৪ মে ‘একজন চিফ জাস্টিসকেও নামিয়ে দিয়েছিলাম’—মেয়র তাপসের এমন বক্তব্য সম্বলিত একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন প্রধান বিচারপতির আদালতের নজরে আনেন সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ও প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম।