পুলিশ পরিদর্শক মামুন খান হত্যা মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভের ভারতীয় পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র ও আধার কার্ডসহ অন্যান্য বিষয়ে জানতে দেশটির কর্তৃপক্ষ বরাবর চিঠি পাঠিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। পুলিশের একাধিক সূত্র দৈনিক বাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
আরাভকে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) থেকে ফিরিয়ে আনতে পুলিশের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। তবে বাংলাদেশ সরকারের কূটনৈতিক তৎপরতাই আরাভকে দেশে ফেরাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। এ বিষয়ে ইন্টারপোলের সহায়তা নেয়া হলেও তাকে ফিরিয়ে আনার বিষয়টি নির্ভর করছে সরকারি সিদ্ধান্তের ওপর।
মামুন খুনের মামলায় ১৬৪ ধারায় আদালতে ৭ আসামির দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির তথ্য অনুযায়ী আরাভ যৌন ব্যবসায় জড়িত ছিলেন। এই অবৈধ ব্যবসায় তাকে সহযোগিতা করতেন স্ত্রী সুরাইয়া আক্তার ওরফে কেয়া। পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শক মামুন এমরান খান রাজধানীর বনানীর যে ফ্ল্যাটে খুন হন, সেখানেই রবিউল তার সহযোগীদের দিয়ে যৌন ব্যবসা চালাতেন।
পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আরাভের বিষয়ে দুবাইয়ে ইন্টারপোলের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। পুলিশের পক্ষ থেকে তাকে ফেরানোর সব কিছুই করা হচ্ছে। এখন তাকে ফেরানোর পুরোটাই নির্ভর করছে সরকারের চাহিদা ও তৎপরতার ওপর। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এবং ইউএই- দুই দেশের সরকারকে মতৈক্যে পৌঁছাতে হবে।
সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, মামুন হত্যাকাণ্ডের পর রবিউল ভারতে পালিয়ে যান এবং বিয়ে করেন। পরে ভুয়া নাম-পরিচয় ব্যবহার করে ভারতীয় পাসপোর্ট তৈরি করেন। পাসপোর্টে নাম দেয়া হয় আরাভ খান। এই পাসপোর্ট নিয়েই তিনি চলে যান দুবাইয়ে। সেখানে গত সপ্তাহে তার মালিকানাধীন ‘আরাভ জুয়েলার্স’ উদ্বোধন করা হয়। এই অনুষ্ঠানে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানসহ কয়েকজন তারকা যোগ দিলে আরাভ আলোচনায় আসেন।
আরাভের ব্যাপারে তথ্য চেয়ে বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে বুধবার ভারতকে চিঠি দেয়া হয়েছে। মূলত, আরাভ কীভাবে ভারতের ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র, আধার কার্ড ও পাসপোর্ট তৈরি করেছেন সেই বিষয়ে পুলিশ জানতে চেয়েছে।
পুলিশ জানায়, ২০১৮ সালের ৯ জুলাই গাজীপুরের জঙ্গল থেকে পুলিশ পরিদর্শক মামুনের পোড়া লাশ উদ্ধার করা হয়। মামলাটি তদন্ত করে রবিউল, সুরাইয়াসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ অভিযোগপত্র দেয় ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।
সুরাইয়া তার স্বীকারোক্তিতে বলেন, ফেসবুকের মাধ্যমে রবিউলের সঙ্গে তার প্রথমে পরিচয় এবং পরে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর তিনি জানতে পারেন, রবিউল যৌন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তিনি নারীদের সঙ্গে পুরুষদের আপত্তিকর ছবি তুলে ব্ল্যাকমেইল করতেন। একসময় সুরাইয়াও এ ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। যৌন ব্যবসার জন্য বনানীর ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেয়া হয়েছিল। আর সেই ফ্ল্যাটেই পুলিশ কর্মকর্তা মামুনকে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়।
দেশের আকাশে জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা গেছে। আগামী ৭ জুন ঈদুল আজহা পালিত হবে।
আজ বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সভাকক্ষে আরবি ১৪৪৬ সনের জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা কমিটির সভা এমন সিদ্ধান্ত এসেছে।
এতে সভাপতিত্ব করবেন ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন।
আজ চাঁদ দেখা দেওয়ায় আগামীকাল বৃহস্পতিবার ১৪৪৬ হিজরি সনের জিলহজ মাস গণনা শুরু হবে। এছাড়া সৌদি আরবে মঙ্গলবার জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা গেছে।
সে হিসাবে দেশটিতে ১০ জিলহজ আগামী ৬ জুন (শুক্রবার) পবিত্র ঈদুল আজহা উদ্যাপিত হবে। গালফ নিউজের খবরে এমন তথ্য দেওয়া হয়েছে।
এর আগে ইন্দোনেশিয়া একই দিন ঈদুল আজহা উদ্যাপনের ঘোষণা দেয়।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আগামীকাল ৩০তম নিক্কেই ফোরাম ‘ফিউচার অব এশিয়া’ সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে বক্তব্য প্রদান করবেন।
তিনি ‘অসহিষ্ণু বিশ্বে এশিয়ার চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক বিষয়ে বক্তব্য রাখবেন।
প্রধান উপদেষ্টা তাঁর বক্তব্যে আরও টেকসই এবং ন্যায়সঙ্গত ভবিষ্যৎ গঠনে এশিয়ার দেশসমূহের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সম্মিলিত পদক্ষেপের ওপর জোর দেবেন।
আগামীকাল নিক্কেই ফোরামের সম্মেলন শুরু হওয়ার আগে, নিক্কেই ইনকর্পোরেশনের শীর্ষ নির্বাহীরা অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হবেন।
পরে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা টোকিওতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত একটি মানবসম্পদ উন্নয়ন সেমিনারে অংশগ্রহণ করবেন। যেখানে ৩শ’ জনেরও বেশি অংশগ্রহণকারী উপস্থিত থাকবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।
তিনি এই অনুষ্ঠানে বিশেষ ভাষণ দেবেন। ভাষণে জাপানের দক্ষ জনশক্তির চাহিদা পূরণে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান সম্ভাবনার ওপর আলোকপাত করা হবে।
অধ্যাপক ইউনূস জাইকার প্রেসিডেন্ট ড. তানাকা আকিহিকোর সঙ্গে একটি বৈঠকেও মিলিত হবেন। ওই বৈঠকে বাংলাদেশে চলমান উন্নয়ন সহযোগিতা ও জাইকা অর্থায়িত প্রকল্পসমূহ পর্যালোচনা করা হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রণীত কর্মসূচি অনুযায়ী, তিনি জাপানের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যম- নিক্কেই, এনএইচকে, আসাহি শিম্বুন, আসাহি টিভি ও নিপ্পন টিভিকে একান্ত সাক্ষাৎকার দেবেন।
আগামীকাল সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টা নিক্কেই ফোরামের সম্মেলনে আমন্ত্রিত অতিথিদের সম্মানে আয়োজিত এক নৈশভোজে অংশগ্রহণ করবেন।
আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে সংবাদপত্র পাঁচদিন বন্ধ থাকবে বলে ঘোষণা দিয়েছে নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব)। নোয়াব জানিয়েছে, ৫ থেকে ৯ জুন সংবাদপত্রে ঈদের ছুটি থাকবে। এ কারণে ৬ থেকে ১০ জুন সংবাদপত্র বন্ধ থাকবে।
বুধবার নোয়াব সভাপতি এ. কে. আজাদ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নোয়াবের নির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৫ থেকে ৯ জুন ঈদের ছুটি পালন করা হবে। তাই ৬ থেকে ১০ জুন কোনো সংবাদপত্র প্রকাশিত হবে না।
জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও জাপান-বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফ্রেন্ডশিপ লিগের (জেআইপিএফএল) সভাপতি তারো আসো আজ বুধবার টোকিও’র ইম্পেরিয়াল হোটেলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।
প্রধান উপদেষ্টা চার দিনের সরকারি সফরে আজ জাপান পৌঁছান। সফরকালে তিনি নিক্কেই ফোরামের ‘ফিউচার অব এশিয়া’ সম্মেলনে যোগ দেবেন এবং জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মিলিত হবেন।
আগামী ৩১ মে প্রধান উপদেষ্টার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে খাবার খেতে গিয়ে মাদক কারবারিদের কাছে ট্রেজার গান (ইলেক্ট্রিক শক দেওয়ার মেশিন) দেখতে পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্য। সেই ট্রেজার গান দেখতে চাওয়া নিয়ে তাৎক্ষণিক ধস্তাধস্তিতে মাদক কারবারিদের সুইস গিয়ারের ছুরিকাঘাতে নিহত হন তিনি।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এ-সংক্রান্ত ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী ও ডিবির যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম।
এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে তিনজনকে ঘটনার দিন রাতে গ্রেপ্তার করে শাহবাগ থানা পুলিশ এবং পরে আরো আটজনকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
ডিবির হাতে গ্রেপ্তাররা হলেন- মো. রাব্বি ওরফে কবুতর রাব্বি (২৫), মেহেদী হাসান (২৫), নাহিদ হাসান পাপেল (২১), মো. রিপন (২০), মো. সোহাগ (৩৩), মো. রবিন (১৮), মো. হৃদয় ইসলাম (২৪) ও সুজন সরকার (২৭)।
এর আগে গত ১৩ মে ঘটনার রাতেই শাহবাগ থানা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার তিনজন হলেন- তামিম হাওলাদার (৩০), সম্রাট মল্লিক (২৮) ও পলাশ সরদার (৩০)।
এ ছাড়া গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের মধ্যে দুই জন ইতোমধ্যে ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দিও দিয়েছেন।
ব্রিফিংয়ে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত বলেন, গত ১৩ মে রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কতিপয় দুর্বৃত্তদের হাতে নির্মমভাবে খুন হন। চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শাহবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা রুজু হয়। এবং ঘটনার রাতেই এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত তিনজনকে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গা থেকে আহত অবস্থায় গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনায় মামলাটি ডিবিতে স্থানান্তর করা হয়। পরবর্তীতে আদালতের মাধ্যমে গ্রেপ্তারকৃত তিন আসামিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ, প্রাপ্ত গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তির মাধ্যমে ঘটনাস্থলে সরাসরি উপস্থিত ও হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণকারীদের শনাক্ত করা হয়। আসামিদের গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে কক্সবাজার, মুন্সীগঞ্জ ও ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন জায়গায় ডিবির একাধিক দল ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করে এই সংক্রান্ত আরো ৮ জনকে গ্রেপ্তার করে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরে ডিবির যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম বলেন, ঘটনার দিন ১৩ মে রাত ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে সাম্য এবং তার দুই বন্ধু একটি মোটরসাইকেলে করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যায়। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মূলত মাদক ব্যবসার একটি চক্র আছে। মেহেদী সেই চক্রের মূল হোতা। তার গ্রুপের একজন রাব্বির হাতে একটি ট্রেজার গান ছিল। সেই ট্রেজার গানটি দেখে সাম্য সেটি কি জানতে চায়। জানতে চাওয়ার একটি পর্যায়ে তাদের মধ্যে যখন ধস্তাধস্তি হয়। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে মাদক ব্যবসায়ীদের অন্য যারা সেখানে ছিল তারা ঘটনাস্থলে আসে এবং ধস্তাধস্তির একটি পর্যায়ে এই হত্যাকাণ্ডটি ঘটে।
তিনি আরো বলেন, এই হত্যাকাণ্ডে আমরা এখন পর্যন্ত জানতে পেরেছি, ওই মাদক কারবারিদের একজন সদস্য রাব্বি তাৎক্ষণিকভাবে সাম্যকে ছুরিকাঘাত করে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনেক ফুডকার্ট (খাবার গাড়ি) ছিল। সেখানে অনেক রাত পর্যন্ত খাবার পাওয়া যেত। আমরা এখন পর্যন্ত জানতে পেরেছি, সাম্য এবং তার দুই সহপাঠী খাবার খেতে সেখানে যায়। খাবারের জন্য গেলে ট্রেজার গানটি দেখে সাম্যের সন্দেহ হয়। জিনিসটা কি সেটি দেখার জন্য এবং সেটি নিতে গেলে তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাটি ঘটে।
তিনি আরও বলেন, তদন্ত কার্যক্রম এখনো চলমান আছে। তাৎক্ষণিকভাবে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে এখন পর্যন্ত আমরা পেয়েছি। এর নেপথ্যে আর কোনো ঘটনা আছে কিনা, অন্য কোনো বিষয় আছে কি না সেটি নিবিড়ভাবে দেখা হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, আমরা তদন্ত করতে গিয়ে দেখেছি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মাদক কারবারিদের তিনটি গ্রুপ রয়েছে। একটি গ্রুপ তিন নেতার মাজারের ওখানে, একটি মাঝখানে, একটি ছবির হাটে। তিনটি গ্রুপই মাদক ব্যবসা পরিচালনা করে। একটি গ্রুপের দায়িত্বে আছে মেহেদী। যে ৮ জন গ্রেপ্তার হয়েছে সবাই মেহেদীর গ্রুপের। সে ওই গ্রুপের দলনেতা। মেহেদী মূলত সুইস গিয়ারগুলো সাপ্লাই দিয়ে থাকে। ঘটনার দিন একটি কালো ব্যাগে করে মেহেদী সুইস গিয়ারগুলো আনে এবং তাৎক্ষণিকভাবে বাকিদের কাছে সরবরাহ করে।
এই হত্যাকাণ্ডটি পরিকল্পিত কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই ঘটনার মূল আসামি আমাদের রিমান্ডে এলে আমরা হত্যাকাণ্ডের মূল মোটিভটি বের করার চেষ্টা করব।
চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমলেও বেড়েছে মাথাপিছু আয়। বিবিএসের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা যায় ২০২৪–২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশে, যা আগের অর্থবছর ২০২৩–২৪ অর্থবছরে ছিল ৪ দশমিক ২২ শতাংশ।
মঙ্গলবার (২৭ মে) বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এই প্রাথমিক হিসাবের প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে।
এর আগের অর্থবছর ২০২২–২৩ সালে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ। জিডিপি (সামগ্রিক দেশজ উৎপাদন) মানে হলো নির্দিষ্ট সময়ে দেশের ভেতরে উৎপাদিত সকল পণ্য ও সেবার চূড়ান্ত মূল্য।
বিবিএস জানায়, দেশের মাথাপিছু আয় বেড়ে ২ হাজার ৮২০ মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। আগের অর্থবছরে এ আয় ছিল ২ হাজার ৭৩৮ ডলার। অর্থাৎ, এক বছরের ব্যবধানে ৮২ ডলার আয় বেড়েছে।
এর আগে ২০২১–২২ অর্থবছরে দেশের সর্বোচ্চ মাথাপিছু আয় ছিল ২ হাজার ৭৯৩ ডলার। তবে ডলার বিনিময় হার বেড়ে যাওয়ার কারণে পরবর্তী দুই অর্থবছরে এই আয় কমে যায়। এরপর ২০২২–২৩ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়ায় ২ হাজার ৭৪৯ ডলারে। সর্বশেষ ২০২৩–২৪ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় আরও কমে হয় ২ হাজার ৭৩৮ ডলার।
মূলত ডলার বিনিময় হার বৃদ্ধির কারণে বিবিএসের গণনায় মাথাপিছু আয়ের হিসাবে পার্থক্য দেখা যায়। চলতি অর্থবছরে প্রতি ডলারের গড় বিনিময় হার আনুমানিক ধরা হয়েছে ১২০ দশমিক ২৯ টাকা, যেখানে আগের অর্থবছরে এই হার ছিল ১১১ দশমিক ০৬ টাকা।
এই অর্থবছরে টাকার হিসাবে মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৩৯ হাজার ২২১ টাকা, যা গত অর্থবছরের ৩ লাখ ৪ হাজার ১০২ টাকা থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।
মাথাপিছু আয় যেভাবে গণনা করা হয়
মাথাপিছু আয় বলতে কোনো ব্যক্তি এককভাবে যত টাকা আয় করেছেন তা নয়। এটি হলো দেশের মোট জাতীয় আয় (দেশীয় আয় + প্রবাসী আয়) কে জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করে যে গড় আয় পাওয়া যায়, সেটিই মাথাপিছু আয় হিসেবে ধরা হয়।
ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, সরকারি যাকাত তহবিল দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তহবিলটি শক্তিশালী করলেই দারিদ্র্য নিরসনে কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করা সম্ভব হবে।
মঙ্গলবার (২৭ মে) বিকেলে সাতকানিয়ার বাবুনগর জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে স্থানীয় দুঃস্থ ও অসহায় মানুষের মাঝে সরকারি যাকাত তহবিলের অর্থ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
ধর্ম উপদেষ্টা যাকাত গ্রহীতাদের উদ্দেশ্যে বলেন, সরকারি যাকাত তহবিল থেকে প্রাপ্ত অর্থ পরিকল্পিতভাবে কাজে লাগাতে হবে। নিজেদেরকে স্বাবলম্বী করে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আয়বর্ধক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে হবে।
তিনি গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি পালন, মৎস্য চাষ, শাকসবজি উৎপাদন ও কুটির শিল্প স্থাপনসহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা কার্যক্রম শুরু করার পরামর্শ দেন, যা দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়ক হবে।
সরকারি যাকাত তহবিলকে শক্তিশালী করার জন্য যাকাত প্রদান বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে ড. খালিদ বলেন, তহবিল শক্তিশালী হলে দেশের দরিদ্র জনগণের জীবনমান পরিবর্তিত হবে এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। তিনি সমাজের বিত্তবানদের দরিদ্রদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য অনুরোধ জানান।
এ সময় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক সরদার সরোয়ার আলম ও সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিল্টন বিশ্বাস উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সরকারি যাকাত তহবিল থেকে মোট ৬৪ জন দুঃস্থ ও অসহায় মানুষের মাঝে ছয় লাখ পনের হাজার টাকার চেক বিতরণ করা হয়।
পরে ধর্ম উপদেষ্টা নূরে হাবিব ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনায় দুই শতাধিক গরীব-অসহায় মানুষের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেন।
উপকূলীয় অঞ্চলকে দেশের শীর্ষস্থানীয় উৎপাদন ও রপ্তানিমুখী মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চলে রূপান্তর করতে মাতারবাড়ী এলাকার গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগুলোর উন্নয়নে আরো দ্রুততার সাথে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
সোমবার ঢাকার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে মহেশখালী-মাতারবাড়ী সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন উদ্যোগ (MIDI) এর অগ্রগতি পর্যালোচনা শেষে এই নির্দেশনা দেন প্রফেসর ইউনূস।
এই অঞ্চলের কৌশলগত গুরুত্বের উপর জোর দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, "আমরা মাতারবাড়িকে দেশের বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর, পণ্য উৎপাদন ও সরবরাহ এবং জ্বালানি উৎপাদনের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছি। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য, আমাদের বিপুল অঙ্কের বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে হবে।"
তিনি এই খাতে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের কথা তুলে ধরেন এবং এই ধরনের বিনিয়োগ সহজতর করার জন্য একটি মাস্টার প্ল্যান করার ওপর জোর দেন।
প্রধান উপদেষ্টা সড়ক পরিবহন ও নৌপরিবহন সচিবদের মহেশখালী-মাতারবাড়ী অঞ্চলের সাথে দেশের অন্যান্য অংশের যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো উন্নত করতে সড়ক অবকাঠামো নির্মান কার্যক্রম ত্বরান্বিত করার এবং সমুদ্রগামী কন্টেইনার জাহাজগুলিকে ধারণ করতে সক্ষম টার্মিনাল নির্মাণের নির্দেশনা দেন।
তিনি মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল এবং সংশ্লিষ্ট শিল্প-কারখানাগুলোর শ্রমিকদের জন্য একটি পরিকল্পিত শহর নির্মাণসহ নগর উন্নয়নের উপরও গুরুত্বারোপ করেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আগামী ২৮ মে থেকে শুরু হতে যাওয়া জাপান সফরে MIDI অঞ্চলের উন্নয়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডা হিসেবে তুলে ধরা হবে।
আসন্ন জাপান সফরে প্রধান উপদেষ্টার ৩০ মে টোকিওতে আয়োজিত ৩০তম নিক্কেই ফিউচার অফ এশিয়া সম্মেলনে যোগদান এবং জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার সাথে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করার কথা রয়েছে, যার লক্ষ্য হবে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলির জন্য তহবিল নিশ্চিত করা।
বৈঠকে মহেশখালী-মাতারবাড়ি অর্থনৈতিক অঞ্চলে জাপান তাদের দ্বিতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলেও জানানো হয়।
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে জাপানের প্রথম অর্থনৈতিক অঞ্চলটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এটি ইতিমধ্যে উল্লেখযোগ্য বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করেছে।
এছাড়াও, সৌদি আরবের পেট্রোকেমিক্যাল জায়ান্ট আরামকো, আবুধাবি পোর্টস, সৌদি আরবের বন্দর পরিচালনাকারী সংস্থা রেড সি গেটওয়ে, জাপানি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী কোম্পানি জেরা এবং মালয়েশিয়ার পেট্রোকেমিক্যাল কোম্পানি পেট্রোনাসসহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক কোম্পানি এই অঞ্চলে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
বাংলাদেশ সম্প্রতি মাতারবাড়িতে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের জন্য জাপানি সংস্থা পেন্টা-ওশান কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড এবং টোয়া (TOA) কর্পোরেশনের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
জাপান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (জাইকা) সহযোগিতায় গৃহীত এ প্রকল্পটি হবে MIDI উদ্যোগের কেন্দ্রবিন্দু এবং এই অঞ্চলের সংযোগ এবং অর্থনৈতিক সম্ভাবনা বৃদ্ধি করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মহেশখালী-মাতারবাড়ী সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন উদ্যোগটি বাংলাদেশ এবং জাপানের একটি যৌথ উদ্যোগ যা সরবরাহ ব্যবস্থা, জ্বালানি এবং শিল্প উন্নয়নের মাধ্যমে এ অঞ্চলকে একটি কৌশলগত অর্থনৈতিক করিডোরে রূপান্তরিত করবে।
প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়ার সভাপতিত্বে বৈঠকে এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোর্শেদ, সড়ক পরিবহন, নৌপরিবহন, জ্বালানি, বিদ্যুৎ এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিবগণ উপস্থিত ছিলেন। MIDI- সেলের মহাপরিচালক সারওয়ার আলম সভায় চলমান MIDI প্রকল্পগুলির একটি বিষদ পর্যালোচনা উপস্থাপন করেন।
আগামীকাল বুধবার (২৮ মে) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় (বাদ মাগরিব) ইসলামিক ফাউন্ডেশন বায়তুল মুকাররম সভাকক্ষে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হবে।
১৪৪৬ হিজরি সনের পবিত্র জিলহজ্ব মাসের চাঁদ দেখা এবং পবিত্র ঈদুল আজহার তারিখ নির্ধারণের লক্ষ্যে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে আজ এই তথ্য জানিয়ে বলা হয়, সভায় সভাপতিত্ব করবেন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন।
বাংলাদেশের আকাশে কোথাও পবিত্র জিলহজ্ব মাসের চাঁদ দেখা গেলে তা টেলিফোন নম্বর: ০২-২২৩৩৮১৭২৫, ০২-৪১০৫০৯১২, ০২-৪১০৫০৯১৬ ও ০২-৪১০৫০৯১৭ এবং ফ্যাক্স নম্বর: ০২-২২৩৩৮৩৩৯৭ ও ০২-৯৫৫৫৯৫১ এ অথবা সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসক অথবা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানানোর জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, আমানতকারীদের অর্থ নিরাপদ করার লক্ষ্যে সংকটে থাকা কয়েকটি ইসলামী ব্যাংককে রাষ্ট্রীয় মালিকানায় একীভূত করা হবে।
মঙ্গলবার (২৭ মে) বাংলাদেশ ফাইনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
গভর্নর বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের মূল অগ্রাধিকার হলো আমানতকারীদের টাকা রক্ষা করা। ব্যাংক বাঁচবে কি না, তা পরের বিষয়।’
এক প্রশ্নের উত্তরে ড. মনসুর বলেন, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব ও বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে দায়িত্ব বিভাজনের জটিলতা অনেক সময় অর্থপাচার সংক্রান্ত মামলার তদন্তে বিলম্ব ঘটায়।
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন’ সংশোধনের পর তদন্ত কার্যক্রমে নতুন গতি আসবে। কারণ, এতে টাস্কফোর্সকে অধিক ক্ষমতা দেওয়া হবে, যা পাচার করা অর্থ দ্রুত ও কার্যকরভাবে উদ্ধার করতে সহায়ক হবে।
এদিকে, বাংলাদেশ ২০২৪ সালের বাসেল অ্যান্টি-মানি লন্ডারিং (এএমএল) সূচকে ১৩ ধাপ এগিয়েছে। এ সূচকে দেশের অবস্থান ৪৬তম থেকে উন্নীত হয়ে ৫৯তম হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএফআইইউ প্রধান এএফএম শাহিনুল ইসলাম।
একই সংবাদ সম্মেলনে এএফএম শাহিনুল ইসলাম বলেন, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে সাম্প্রতিক সময়ে গৃহীত কঠোর ও জোরালো পদক্ষেপগুলোর ফলেই এই অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে।
তিনি আরও জানান, ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের মে পর্যন্ত সময়কালে ১৭টি সংস্থা মোট ২৭ হাজার ১৩০টি সন্দেহজনক লেনদেন (এসটিআর) ও সন্দেহজনক কার্যক্রম (এসএআর) রিপোর্ট করেছে। এর মধ্যে বিএফআইইউ একাই ১৭ হাজার ৩৪৫টি এসটিআর ও এসএআর রিপোর্ট পেয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ২৩ শতাংশ বেশি।
তিনি আরও জানান, বিএফআইইউ ১১৪টি গোয়েন্দা প্রতিবেদন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও অনুসন্ধানকারী সংস্থার কাছে পাঠিয়েছে।
এছাড়া, মানি লন্ডারিং তদন্তে ১ হাজার ২২০টি তথ্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে শেয়ার করা হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১৩ দশমিক ৯১ শতাংশ বেশি।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএফআইইউ’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ বাতিলের দাবিতে চলমান আন্দোলন আপাতত স্থগিত করেছেন কর্মচারীরা। মঙ্গলবার (২৭ মে) বিকেলে সচিবালয়ে সরকারের তিন সচিবের সঙ্গে কর্মচারীদের বৈঠক শেষে এমন সিদ্ধান্ত এসেছে।
বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এ এস এম সালেহ আহমেদ। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘তাদের সঙ্গে আমাদের ভালো আলোচনা হয়েছে। এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে তাদের দাবিগুলো মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে তুলে ধরা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আগামীকাল (বুধবার) কোনো কর্মসূচি নেই। তারা আন্দোলন স্থগিত করেছেন। সরকার যা সিদ্ধান্ত নেবে, সেটাই চূড়ান্ত। আমাদের কারো সঙ্গে কোনো বিরোধ নেই, আমরা সবাই সহকর্মী।’
এ সময় আন্দোলনকারীদের পক্ষে দুইজন কথা বলেন, তারাও আন্দোলনের স্থগিতের বিষয়ে সম্মত হয়েছেন বলে জানান।
সচিবালয়ে কর্মচারীদের লাগাতার আন্দোলনের মধ্যে মঙ্গলবার সকালে মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশিদ বেশ কয়েকজন সচিবকে নিয়ে জরুরি সভা করেন।
ওই সভায় সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ পর্যালোচনায় কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। সেই সভা থেকেই কর্মচারী নেতাদের সঙ্গে কথা বলতে ভূমি সচিবকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
এর আগে বিকেল পৌনে ৩টায় সচিবালয়ের ভূমি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব।
আন্দোলনের চতুর্থ দিনে মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ের ৬ নম্বর ভবনের পাশে বাদামতলায় জড়ো হয়ে কর্মচারীরা বিক্ষোভ শুরু করেন। এ কারণে সচিবালয়ে দর্শনার্থীদের প্রবেশ এদিন নিষিদ্ধ করা হয়। গেটগুলোতে নেওয়া হয় অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। দুপুরের পর সাংবাদিকদের সচিবালয়ে ঢুকতে দেওয়া হয়।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ বলেছেন, তার দেশ ভারতের সঙ্গে কাশ্মীর সমস্যা এবং পানি নিরাপত্তাসহ দুই দেশের মধ্যে চলমান বিরোধ নিরসনে আলোচনায় আগ্রহী। গতকাল সোমবার ইরান সফরে এসে এসব কথা বলেন শেহবাজ।
প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ বর্তমানে বন্ধুত্বপূর্ণ চার দেশের সফরে ইরানে আছেন। তিনি ভারতের সাথে সাম্প্রতিক সামরিক উত্তেজনার সময় পাকিস্তানকে সমর্থন করার জন্য ইরানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
তেহরান থেকে সিনহুয়া এই খবর জানায়।
এর আগে সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেহবাজকে রাজধানী তেহরানের সাদাবাদ প্রাসাদে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান অভ্যর্থনা জানান। এই সময় তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের সাথে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিতে গিয়ে শেহবাজ বলেছেন, দুই দেশের প্রতিনিধিদলের মধ্যে ‘খুবই ফলপ্রসূ এবং কার্যকর বৈঠক হয়েছে। যা আমাদের পারস্পরিক স্বার্থ এবং সহযোগিতার সকল ক্ষেত্রকে অন্তর্ভুক্ত করেছে।’
শেহবাজ বলেছেন, ‘আমাদের দুই ভ্রাতৃপ্রতিম এবং প্রতিবেশী দেশকে ব্যবসা, বিনিয়োগ, বাণিজ্য, এমনকি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াতে হবে। এই বিষয়ে সম্পূর্ণ ঐক্যমত্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেছেন, তিনি ভারতের সাথে সামরিক সংঘাতের সময় সমর্থন করার জন্য পেজেশকিয়ানকে ধন্যবাদ জানান এবং জোর দিয়ে বলেছেন উভয় দেশেরই গভীর সাংস্কৃতিক বন্ধন এবং ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। তারা এই সম্পর্কগুলোকে ‘জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অত্যন্ত উৎপাদনশীল সহযোগিতায়’ পরিণত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’
ভারতের সাথে সাম্প্রতিক উত্তেজনা নিয়ে শেহবাজ বলেছেন, ‘পাকিস্তান এই সংঘাত থেকে বিজয়ী হয়ে বেরিয়ে এসেছে। আমাদের অসাধারণ সশস্ত্র বাহিনীর সাহসী পদক্ষেপের মাধ্যমে।’
আমরা শান্তি চেয়েছিলাম, আমরা শান্তি চাই এবং আমরা আলোচনার মাধ্যমে এই অঞ্চলে শান্তির জন্য কাজ করব। কাশ্মীর সমস্যাসহ আমাদের অমীমাংসিত বিষয়গুলো সমাধানের জন্য আলোচনা চালিয়ে যাব। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের গৃহীত প্রস্তাব অনুসারে এমনকি ১৯৫৪ সালে ভারতীয় লোকসভার প্রস্তাব অনুসারে।
শেহবাজ বলেছেন, আমরা আমাদের প্রতিবেশীর সাথে শান্তির স্বার্থে পানি সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত। আমরা বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং সন্ত্রাসবাদ দমনের জন্য আলোচনা করতেও প্রস্তুত।
কিন্তু যদি তারা আক্রমণাত্মক পথ বেছে নেয় তাহলে আমরা আমাদের ভূখণ্ড রক্ষা করব। যেমনটি আমরা কয়েকদিন আগে করেছি। কিন্তু যদি তারা আমার শান্তির প্রস্তাব গ্রহণ করে, তাহলে আমরা দেখাবো যে আমরা সত্যিই শান্তি চাই।
এরপর সোমবার রাতে প্রধানমন্ত্রী ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির সাথে দেখা করেন।
রোববার তুরস্কে দুই দিনের সফরে শেহবাজ তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের সাথে একটি প্রতিনিধি পর্যায়ের বৈঠক করেন। বৈঠকে তিনি সাম্প্রতিক সংঘাতের সময় তুরস্ককে তাদের সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানান এবং দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনা করেন।
গত মাসে জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীর হামলায় ২৬ জন পর্যটক নিহতের প্রতিশোধ হিসেবে পাকিস্তানে সামরিক হামলা চালায় ভারত। পাকিস্তান পাল্টা হামলা চালালে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ সামরিক সংঘাতে জড়ায় ভারত-পাকিস্তান। টানা চারদিনের সংঘর্ষের পর ১০মে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় দুই দেশ।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যাচেষ্টার ষড়যন্ত্রের মামলায় সাংবাদিক শফিক রেহমানকে খালাস দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার (২৭ মে) ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ তারিক এজাজ এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময় শফিক রেহমান আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে, ২৭ এপ্রিল শুনানিতে শফিক রেহমানের খালাস চান আসামিপক্ষে অ্যাডভোকেট সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেসবাহ। রাষ্ট্রপক্ষও এতে আপত্তি না থাকার কথা জানায়।
শুনানিতে সৈয়দ জয়নুল বলেন, ‘হাসিনাপুত্র জয়কে কথিত অপহরণ ও হত্যাচেষ্টার মামলা এটি। ভিকটিম নিজেই মামলা করেননি, পুলিশ অতিরিক্ত আগ্রহ দেখিয়ে মামলা করেছে। ৯০ বছর বয়সী শফিক রেহমানকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছিল। মামলায় কোনো স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেই। ১২ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন, জয় নিজেও সাক্ষ্য দিয়েছেন। সেদিন বিচারক তার পেছনে দৌড়াচ্ছিলেন—এমন দৃশ্য দেখা গেছে। বিচার নিয়ে আপনি বুঝতেই পারছেন।’
রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত পিপি মো. খলিলুর রহমান বলেন, ‘এটা রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা। তিনি প্রথিতযশা সাংবাদিক। খালাস দিলে আপত্তি নেই।’
মামলার নথি অনুযায়ী, জয়কে অপহরণ ও হত্যাচেষ্টার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে গত বছরের ১৭ আগস্ট ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত মাহমুদুর রহমান, শফিক রেহমানসহ পাঁচজনকে পৃথক দুই ধারায় সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামিরা হলেন—জাসাস নেতা মোহাম্মদ উল্লাহ, রিজভী আহমেদ সিজার ও মিজানুর রহমান ভূঁইয়া।
আসামিদের দণ্ডবিধির ৩৬৫ ধারায় (অপহরণ) পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানা অনাদায়ে আরও এক মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একই আইনের ১২০-খ ধারায় (ষড়যন্ত্র) দুই বছরের কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়, অনাদায়ে আরও এক মাসের কারাদণ্ড। দুই ধারার সাজা একত্রে চলবে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।
২০২৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর শফিক রেহমান ও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী মিজানুর রহমান ভূঁইয়ার সাজা এক বছরের জন্য স্থগিত করে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পরদিন জামিনে মুক্তি পান শফিক রেহমান।
পরে গত ১০ ফেব্রুয়ারি একই মামলায় মাহমুদুর রহমান খালাস পান। মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরের আগে যেকোনো সময় থেকে বিএনপি ও এর জোটভুক্ত নেতারা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে জয়কে অপহরণ ও হত্যার ষড়যন্ত্রে যুক্ত হন।
২০১৫ সালের ৩ আগস্ট ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ফজলুর রহমান পল্টন থানায় মামলাটি করেন। ২০১৮ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।
মামলায় সজীব ওয়াজেদ জয়সহ ১২ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন।