সোমবার, ২৬ মে ২০২৫
১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর সাক্ষাৎকার

দেশপ্রেমের অভাব দেখতে পাই

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
আপডেটেড
২৬ মার্চ, ২০২৩ ১৪:৪১
রাহাত মিনহাজ
প্রকাশিত
রাহাত মিনহাজ
প্রকাশিত : ২৬ মার্চ, ২০২৩ ০৮:৫৫

ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী একজন দেশবরেণ্য শিক্ষাবিদ। সুপরিচিত সাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক। ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে খুব কাছ থেকে দেখেছেন বাঙালির অসহযোগ আন্দোলন, ২৫ মার্চ কালরাতের গণহত্যাসহ নানা ঘটনাপ্রবাহ। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি, বামপন্থি রাজনীতি ও নানা বিষয় নিয়ে তিনি কথা বলেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক রাহাত মিনহাজ-এর সঙ্গে।

রাহাত মিনহাজ: ১৯৭১ সালে আপনার বয়স কত ছিল এবং আপনি তখন কোন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন?

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করি। ১৯৬৫ সাল থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত আমি ইংল্যান্ডে ছিলাম পিএইচডির জন্য। ১৯৬৮ সালের আগস্ট মাসে যখন দেশে ফিরলাম, তখন আগরতলা মামলা চলছে। চারদিকে গণ-অভ্যুত্থানের প্রস্তুতি। ছাত্র আন্দোলন গড়ে উঠছে। আমি ১৯৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানটা সরাসরি দেখেছি। আমার জন্ম ১৯৩৬ সালে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার বয়স ৩৫ বছর। আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের রিডার (অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর)। যেহেতু আমি পিএইচডি করেছি, তাই আমি ১৯৭০ সালে রিডার হয়েছিলাম। এর আগে আমি ১৯৫৭ সালের অক্টোবরে জগন্নাথ কলেজ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছিলাম।

রাহাত মিনহাজ: ওই সময় আপনি কি কোনো আবাসিক হলে থাকতেন?

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: আমি কোনো আবাসিক হলে ছিলাম না। কিন্তু ঘটনার একদম কেন্দ্রে ছিলাম। আমরা তখন ফুলার রোডের উল্টোদিকে জগন্নাথ হলের সঙ্গে যে আবাসিক এলাকা সেখানে থাকতাম। ফুলার রোডের ৩৩ নম্বর বাসা।

রাহাত মিনহাজ: ২৫ মার্চ রাতের ঘটনা আপনি কীভাবে প্রত্যক্ষ করেছিলেন এবং আপনার অভিজ্ঞতাটা জানতে চাই?

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: আমরা তো দেখেছিলাম আলোচনা চলছে। মিডিয়াতে বলা হচ্ছিল আলোচনা এগোচ্ছে। আমরা ভেবেছিলাম দেশ স্বাধীন হবেই। এর ভিন্ন কোনো উপায় নেই। তখন আমাদের একটা সংগঠন ছিল ‘লেখক শিবির সংঘ’। সেই ‘লেখক শিবির সংঘ’ থেকে আমরা ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ একটা সেমিনার করেছিলাম বাংলা একাডেমিতে। বাংলা একাডেমির ওই সেমিনারের বিষয় ছিল ভবিষ্যতের বাংলাদেশ। ওখানে নানা ধরনের প্রবন্ধ পাঠ করা হয়েছিল। অধ্যাপক ই এম হাবিবুল্লাহ সভাপতিত্ব করেছিলেন। তিনি ছিলেন আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি। আহমদ শরীফ, মনতাজুর রহমান তরফদার, আমি (সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী), আমার বন্ধু বোরহান উদ্দীন খান জাহাঙ্গীর, আরেকজন ছিলেন বশির আল হেলাল- আমরা সবাই প্রবন্ধ পড়লাম। একেকজন একেক দিক থেকে বক্তব্য তুলে ধরেছিলাম। আমার বক্তব্য ছিল ভবিষ্যতের বাংলা হবে ধর্মনিরপেক্ষ। ধর্মনিরপেক্ষতা কেন হবে, কী জন্য প্রয়োজন, গণতন্ত্রের সঙ্গে ধর্মনিরপেক্ষতার সম্পর্ক- এসব বিষয় নিয়ে বলেছিলাম। আমার এই লেখাটা ২৪ মার্চ ছাপা হয়েছিল ‘দৈনিক পূর্বদেশ’ পত্রিকায়। ওই সময় যারা পাকিস্তানপন্থি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন তাদের কাছে আমি পরে শুনেছি, আমাদের ওই লেখালেখির বিষয়গুলো তারা (পাকিস্তানিরা) প্রত্যক্ষ করেছেন। আমার নাম সেখানে ছিল। যাই হোক, ২৫ মার্চের প্রসঙ্গে আসি। সারা দিন একটা অনিশ্চয়তা ছিল। একটা থমথমে পরিবেশ। প্রত্যেক দিন আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাবে যেতাম। সেখানে নিজেদের মধ্যে আলোচনা হতো। সভাও হতো। ২৫ মার্চ সন্ধ্যার পরও সভা হচ্ছিল, আমরা ৮টার সময় খবরে শুনলাম ২৭ মার্চ আওয়ামী লীগ হরতাল ডেকেছে। এদিকে ইকবাল হল (বর্তমান জহুরুল হক হল) থেকে কয়েকটা ছেলে এসে বলল, স্যার আপনারা চলে যান, আর্মি আসছে। তারা খুব নার্ভাস ছিল। আমরা চলে এলাম বাসায়। আমার বাসা ছিল জগন্নাথ হলের পাশেই। তারপর মধ্যরাতে আরম্ভ হয়ে গেল হামলা। দূরে দু-একটা জয় বাংলা আওয়াজ শুনলাম খুব মৃদুস্বরে। তারপর আমরা বিভিন্ন দেশের রেডিও ধরার চেষ্টা করলাম। কিন্তু কোনো খবর পাওয়া গেল না।

রাহাত মিনহাজ: অভিশপ্ত ওই রাতে আর কী ঘটল। আপনি কী প্রত্যক্ষ করলেন? জগন্নাথ হল তো আপনার বাসার পাশেই ছিল। যেখানে তো বড় ধরনের গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল।

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: আমরা জগন্নাথ হলের পাশের দুই বিল্ডিং পরেই থাকতাম। ২৬ মার্চ সকালবেলা রেডিওতে আমরা শুনলাম কারফিউ জারি হয়েছে। আমরা রেডিও পাকিস্তানে অবাঙালি কর্মকর্তার কণ্ঠে এসব ঘোষণা শুনতে পাচ্ছিলাম। তারা কারফিউয়ের কথা বলল। আমরা দূরে দেখলাম কিছু লোক ছোটাছুটি করছে। ২৫ মার্চ কালরাতে জগন্নাথ হল এবং সলিমুল্লাহ আবাসিক হলে ছিল কিন্তু বেঁচে গেছে- এ রকম কয়েকটা ছেলে সকালে দেয়াল টপকে আমাদের আবাসিক এলাকার মধ্যে ঢুকেছে। তারা কাঁপছিল, আশ্রয় চাচ্ছিল। তাদের কাছ থেকেই প্রথম জানতে পারলাম কী হয়েছিল ওই রাতে। আমরা তাদের বিভিন্ন বাসায় নিয়ে নিলাম। আমাদের বাসায় একজন থাকল। আমাদের বিল্ডিংয়ের যে অংশটা রোকেয়া হলের দিকে, সেখান থেকে জগন্নাথ হলের মাঠটা দেখা যায়। আমাদের বিল্ডিংয়ের তিনতলার ওই দিকে ছিলেন আইইআরের (ইনস্টিটিউট অব এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ) ওয়াজিউর রহমান। উনি ওখান থেকে সকালবেলা দেখেন, অনেক মরদেহ টেনে টেনে আনা হচ্ছে। ওখানে একটা গর্ত করা হচ্ছে এবং মরদেহগুলোকে সেখানে ফেলা হচ্ছে। তারপর ওই মরদেহগুলো যারা এনেছেন, তাদের একটা একটা করে গুলি করে মেরে ফেলা হচ্ছে। এরপর ওখান থেকে কাঁপতে কাঁপতে তিনি আমাদের বাসায় আসেন। তিনি বলছিলেন, আমি কী দৃশ্য দেখলাম এটা! আর এই দৃশ্যটাই ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি থেকে প্রফেসর নুরুল উল্লা ভিডিও ক্যামেরায় ধারণ করেছিলেন। এটা একটা ডকুমেন্ট। তারপর ওই যে ছেলেরা দেয়াল টপকে এসেছিল, তাদের থেকেও শুনলাম। আরও শুনলাম, শিক্ষকদের বাড়িতে ঢুকে তাদের হত্যা করা হয়েছে। ঘটনাক্রমে আমাদের এলাকায় ওরা ঢোকেনি। সেই রাতে ওরা কোনো বাছবিচার করেনি। যেই বাড়িতে ঢুকেছে, সেই বাড়িতে যাকে পেয়েছে, তাকেই হত্যা করেছে। ফুলার রোডে ব্রিটিশ কাউন্সিলে পর্যন্ত ঢুকেছে।

রাহাত মিনহাজ: এরপর কী ঘটল। পরের দিনগুলোর অভিজ্ঞতা যদি আমাদের সঙ্গে শেয়ার করেন।

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: ২৬ তারিখের পর ইয়াহিয়া খানের বক্তৃতা শুনলাম। বিবিসি, আকাশবাণী, রেডিও অস্ট্রেলিয়া থেকে- খবর আসতে থাকল আর্মির ক্র্যাকডাউন হয়েছে। ২৬ মার্চ রাতে আমরা আশঙ্কা করলাম আবারও যদি আসে ওরা। আমাদের বাসায় যে ছেলেটা উঠেছিল, ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পড়ত। আমরা তাকে বললাম, তুমি এখানে থাক। কেউ যদি কিছু জিজ্ঞেস করে, বলবা তুমি আমার স্ত্রীর ভাই। তখন আমি, আমার স্ত্রী আর আমাদের একটা বাচ্চা থাকে আমাদের সঙ্গে। এভাবে আমরা ২৬ মার্চের রাতটা ভয়ে ভয়ে কাটালাম। ২৭ মার্চে কারফিউ কিছুক্ষণের জন্য তুলে দিল। তখন আমরা বাড়িঘর তালা দিয়ে প্রয়োজনীয় সবকিছু নিয়ে বেরিয়ে পড়েছি। ধানমন্ডিতে আমাদের এক আত্মীয় থাকতেন, ওনার বাসার দিকে রওনা হই। দেখলাম রাস্তায় মরদেহ পড়ে আছে। আর্মির সিপাহিরা ঘোরাঘুরি করছে। ওই যে ২৭ মার্চে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাড়ি থেকে বের হয়েছি স্বাধীনতার আগ পর্যন্ত থাকার জন্য আর সেখানে ঢোকিনি।

রাহাত মিনহাজ: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক তো শহীদ হয়েছিলেন পাকিস্থানি বাহিনীর হাতে। যুদ্ধ শেষের দিকে আল-বদররাও তাদের হত্যা করেছে। এ বিষয়ে আপনার স্মৃতি থেকে আমাদের যদি কিছু বলতেন?

ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর সঙ্গে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক রাহাত মিনহাজ

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: একটা ঘটনা বলি। অধ্যাপক আনোয়ার পাশা থাকতেন নীলক্ষেত এলাকায়। ওই এলাকায় অনেককে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনাক্রমে আনোয়ার পাশাদের বাড়িতে আর্মি ঢোকেনি। আরেকজন ছিলেন রশিদুল হাসান। পরে শহীদ হয়েছেন। তিনি আমাদের বিল্ডিংয়ের আরেক ফ্ল্যাটে থাকতেন। তবে সেদিন রাতে আমাদের বাসায় যেহেতু ঢোকেনি তাই তিনিও বেঁচে গেছেন। আনোয়ার পাশা আর রশিদুল হাসান- এই দুজন এসেছেন পশ্চিমবঙ্গ থেকে। আমাদের তবু ঢাকায় আশ্রয় আছে, আত্মীয়স্বজনের বাড়ি আছে। ওনারা তো পশ্চিমবঙ্গ থেকে এসেছেন। তাদের জন্য পরিস্থিতি আরও কঠিন ছিল। আমি ধানমন্ডির এক আত্মীয়ের বাসা থেকে গ্রামে চলে গেলাম। সেখান থেকে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চিঠি দিয়ে জানিয়েছি, আমার বাসা আমি ছেড়ে দিলাম। এরপর ওই বাসাটা অ্যালোট করা হলো আনোয়ার পাশার নামে। আনোয়ার পাশার যেহেতু যাওয়ার জায়গা নেই, তাই তিনি ওই বাসাতে উঠলেন। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বরে বুদ্ধিজীবীদের হত্যার জন্য আলবদর যে লিস্ট বানিয়েছে, সেই লিস্টে আনোয়ার পাশার নাম ছিল। সেখানে আমার নামও ছিল। আমাকে ধরতে পারেনি, কারণ আমার ঠিকানা ছিল না। আলবদরের হাতে যে লিস্টটা ছিল, সেখানে ঠিকানায় ইউনিভার্সিটির কোয়ার্টারের ঠিকানা দেয়া ছিল অনেকের। কিন্তু আমার নামের পাশে কোনো ঠিকানা ছিল না। কারণ আমি তো ২৭ মার্চ রাতেই কোয়ার্টার ছেড়ে দিয়েছি।

এরপর আনোয়ার পাশা ওই বাড়িতে ওঠেন। তাকে খুঁজতে আলবদর ওই বাড়িতে হানা দেয় ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১। রশিদুল হাসান থাকতেন অন্য একটি ভবনে। ১৪ ডিসেম্বর সকালবেলা রশিদুল হাসান আনোয়ার পাশার বাসায় এসে গল্প-স্বল্প করছিলেন। তারা খুবই কাছের বন্ধু ছিলেন। আলবদর এসে আনোয়ার পাশাকে ধরেছে আবার রশিদুল হাসানকেও পেয়ে গেছে। দুজনকেই তারা নিয়ে গেল। আমি যে বাসাটাতে ছিলাম, সেই বাসা থেকেই এ ঘটনা ঘটল। রশিদুল হাসান এবং আনোয়ার পাশা- দুজনই পশ্চিমবঙ্গের মানুষ ছিলেন। তারা দেশ বিভাগের পরে আমাদের এখানে আসেন। রশিদুল হাসান বীরভূমের শান্তিনিকেতনের আর আনোয়ার পাশা চব্বিশ পরগনার বাসিন্দা ছিলেন। আনোয়ার পাশা এমএ পাস করে এসেছেন। আর রশিদুল হাসান এমএ পাস করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

রাহাত মিনহাজ: সেনা কর্তৃপক্ষ ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চালু করার একটা পদক্ষেপ নিয়েছিল এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চালুও হয়েছিল। এই ঘটনাটা কী ছিল?

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: বিশ্ববিদ্যালয় চালুটা তো একটা মশকারি ছিল। এর আগে আমি কেন পালালাম, সেটা একটু সংক্ষেপে বলি। ২৫ মার্চের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০ জনের একটা তালিকা তৈরি করা হয়েছিল। আমরা যারা সভা-সমিতি করি, জোহা দিবস পালন করি, ক্লাবে বক্তৃতা করি তাদের নিয়ে এই তালিকা। ক্লাব ছিল পাকিস্তানি সেনাদের জন্য শত্রুপক্ষের ঘাঁটি। তারা মনে করত ক্লাবে আমরা ষড়যন্ত্র করি। শহীদ ড. খায়ের, রফিকুল ইসলাম, সাদউদ্দীন, শহীদুল্লাহ- এই চারজন ক্লাব থেকে পরপর চারবার সেক্রেটারি ছিলেন। তাদের ধরে নিয়ে গেছে। আমার সহকর্মী এবং সহপাঠী আহসানুল হক, উনি ছিলেন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক, তাকেও ধরে নিয়ে গেছে। তাদের ছবি দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করত, এখানে কে কে বক্তৃতা করছে, তার নাম ঠিকানা কী। হানাদারদের বক্তব্য ছিল, ক্লাব সব ষড়যন্ত্রের ঘাঁটি। তারা ক্লাবের ওপর প্রথমে এসে আক্রমণ করেছে। ক্লাবের তিনজন কর্মী ২৫ মার্চের রাতে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিল।

যাই হোক, যেটা বলছিলাম ওরা তালিকা তৈরি করেছিল। ওরা পুলিশের স্পেশাল ব্র্যাঞ্চ অব ইনটেলিজেন্সের কাছে তালিকা দিয়েছে ঠিকানা জোগাড় করার জন্য। পুলিশের বেশির ভাগই ছিল বাঙালি। তারা তো হানাদারদের সঙ্গে কোলাবোরেট করছে না। ওরা যে পুলিশ স্টেশনে গিয়েছিল, সেখানে আমার এক আত্মীয় এসপি ছিলেন। তার ওপরের একজন আমার আত্মীয়কে জানালেন, পাকিস্তান আর্মি লিস্ট পাঠিয়েছে তাদের ঠিকানা ম্যানেজ করতে। আমার আত্মীয় সেই লিস্টে আমার নাম দেখেন চার নম্বরে। উনি এসে আমাকে বলেন, তোমার নাম চার নম্বরে। কাজেই আমি বুঝে ফেলেছি, এখানে আমার নিরাপত্তা নেই। যাই হোক পাকিস্তানি আর্মি পুলিশকে বলছে, ঠিকানা নিয়ে আসতে। পুলিশের সিনিয়ররা আবার ঠিকানা নেয়ার দায়িত্ব দিয়েছিল নিচের লোকদের। নিচের লোকরা আবার ঠিকানা নিতে যাওয়ার ব্যাপারে তেমন উৎসাহী ছিলেন না। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অফিসে গিয়ে আমাদের যে ঠিকানা আছে, সেটা নিয়ে চলে গেছে। আমরা তো ইউনিভার্সিটি চাকরির আবেদনের সময় যে ঠিকানা দিয়েছিলাম, সেটা ছিল রেজিস্ট্রারের অফিসে। আমি যখন দরখাস্ত করেছিলাম, তখন আজিমপুর কলোনিতে ছিলাম আমার বাবার সঙ্গে, সেই ঠিকানা দিয়ে। ওই ঠিকানায় আর্মি গিয়ে এখন পরে আমাকে পাবে? এসব দেখে পরে আর আর্মিরা পুলিশ ইনটেলিজেন্সের ওপর নির্ভর করেনি।

রাহাত মিনহাজ: মুক্তিযুদ্ধের ভেতরে ঢাকা ইউনিভার্সিটি চালু হয়েছিল কবে। আপনারা কি ক্লাস নিতে পারতেন তখন?

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: তখন তো ক্লাস নেয়ার প্রশ্নই আসে না। আমরা যেতাম নাম সই করতে। আমরা এক দিন গিয়ে অনেক দিনের নাম সই করে আসতাম। এক দিনের ঘটনা, ওখানে কয়েকটা বিহারি ছেলে ছিল। আবার কয়েকজন পাকিস্তানপন্থি ছেলে ছিল। তারা সেখানে ঘোরাঘুরি করত। আমরা ক্লাস নিচ্ছি কি নিচ্ছি না, তারা রিপোর্ট করবে এ রকম একটা ভাব। তারা কয়েকজন মিলে আমাকে ধরল, স্যার ক্লাস নেবেন না? প্রহসনের মতো আরকি। তাদের কয়েকজনকে নিয়ে ক্লাসরুমে বসছি। সেখানে দেখি আর্মি এসেছে। আর্মির লোক বন্দুক নিয়ে এসে প্রথমেই জিজ্ঞেস করছে, ক্যায়া নাম হ্যায়? সেদিনই আমি বুঝে ফেললাম, এখানে আর আসা যাবে না। তারপর আমি আর দ্বিতীয় দিন যাইনি ওই দিকে।

আরেকটা খুব ট্র্যাজেডিক ঘটনা ঘটল। আর্মিরা রশিদুল হাসানকে খুঁজতে এসেছে। রশিদুল হাসান খুব স্পষ্টভাষী লোক ছিলেন। বাঙালি জাতীয়তাবাদের ব্যাপারে কথা বলতেন। ওই দালাল ছেলেরা হয়তো তার নামে রিপোর্ট করেছে। আর্মিরা অফিসে এসে খোঁজ করছেন, রশিদুল হাসান কোথায় আছেন? রশিদুল হাসান ওই দিকেই আসছিলেন। আমাদের অফিসের পিয়ন ছিল নুর মোহাম্মদ রফিক, তাকে আর্মির লোকেরা ধরে নিয়ে গেছে রশিদুল হাসানকে খুঁজতে। রশিদুল উল্টোদিক থেকে আসছে। আমাদের পিয়ন তখন ভয়ংকর দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে গেছে। সামনের লোকটাই যে রশিদুল, এটা পাকিস্তান আর্মিকে বলবে কি বলবে না। কারণ বললেই তো তাকে মেরে ফেলবে। আর্মিরাই সরাসরি রশিদুল হাসানকে জিজ্ঞেস করল, ক্যায়া নাম হ্যায়। রশিদুল হাসান নাম বলতেই আর্মিরা তাকে ধরে নিয়ে গেল। রশিদুল হাসানকে সাত দিন রমনা পুলিশ স্টেশনে রেখে দিয়েছিল। এটা একাত্তরের আগস্টের ঘটনা। তারপরে তো শেষ অবধি ১৪ ডিসেম্বর ধরেই নিয়ে গেল।

রাহাত মিনহাজ: ১৬ ডিসেম্বরের সকালটা কেমন ছিল আপনার কাছে?

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: তারা যে আত্মসমর্পণ করবে, এ রকমটা আমরা শুনছি তখন। এটা আমরা ইন্ডিয়ান রেডিওতে শুনেছিলাম। ঢাকার রেডিওতে তেমন কোনো সাড়াশব্দ নেই। রেডিও বন্ধ। বিদেশি রেডিও থেকেও শোনা যাচ্ছে। আমরা টেনশনে আছি। তারপর শোনা গেল পাকিস্তানিরা স্যারেন্ডার করবে। আমরা আর বের হইনি তখন। আশ্চর্যের সঙ্গে দেখলাম যারা রাজাকার ছিল, তারাই মুক্তিযোদ্ধা হয়ে গেছে। তারাই জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছে। এটা ওয়ারী এলাকার ঘটনা। তারাই গাড়ি-বাড়ি লুট করছে। যা যা পাচ্ছে নিয়ে নিচ্ছে। ১৬ ডিসেম্বর আমরা আর বের হলাম না।

রাহাত মিনহাজ: বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘটনাটা, এটা আপনি প্রথম লোকমুখে শুনেছেন নাকি রেডিওতে?

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: এটা প্রথম রেডিওতেই শুনলাম। পাকিস্তান রেডিও থেকেই বোঝা গেল ঘটনাটা। পাকিস্তান রেডিওতে ইয়াহিয়া খানের একটা বক্তব্য প্রচার করা হলো। সেখানে ইয়াহিয়া খান বললেন, আমাদের আর্মি স্যারেন্ডার করছে। সবুর খান একটা বক্তৃতা দিলেন, বেজন্মা একটা রাষ্ট্রের জন্ম হচ্ছে। এ বাস্টার্ড ন্যাশন ইজ বিং বোর্নড। এটা পাকিস্তান রেডিওতে এমনকি টেলিভিশনেও দেখা যাচ্ছে। তবে ইয়াহিয়া খানের বক্তৃতা থেকে বোঝা গেল, তারা আত্মসমর্পণ করেছে।

রাহাত মিনহাজ: আপনি ১৭ ডিসেম্বর সকালের ঘটনা বলছিলেন। ওই দিন কী দেখলেন?

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: ১৭ তারিখে সকালে বের হয়ে অনেক দৃশ্য দেখলাম। আশপাশের সব দোকান লুট হলো। আরেকটা দৃশ্য দেখলাম। গভমেন্ট হাউসে (বর্তমানে প্রেসিডেন্ট ভবন) লুট হলো। লোকজন হাসিখুশি মনে লুট করছে। একজনকে দেখলাম একটা সিঙ্গার মেশিন নিয়ে যাচ্ছে। বিয়ে বাড়িতে যেভাবে উপহার দিতে যায়, ও রকম হাসতে হাসতে যাচ্ছে। চারদিকে এ রকম লুটপাট দেখে মনটা খারাপ হয়ে গেল। হাটখোলার মোড়ে এসে আমাদের তরুণ সহকর্মী আহমদ কামালের সঙ্গে দেখা। সে তখন ইতিহাস বিভাগের লেকচারার। ও ওখানে আমাকে দেখে রিকশা থেকে লাফ দিয়ে নামল। জিজ্ঞাসা করল, স্যার আপনি বাইচ্যা আছেন! আমি তাকে বললাম, কেন, কী হয়েছে। সে বলল, তারা তো অনেককে মেরে ফেলেছে। ১৪ ডিসেম্বরের হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটা তখনই প্রথম শুনলাম। তারপর আস্তে আস্তে জানলাম কাদেরকে ধরে নিয়ে গেছে।

রাহাত মিনহাজ: একটা ভিন্ন প্রসঙ্গে আসি। আপনি শিক্ষকতা করেছেন দীর্ঘদিন। বামপন্থি রাজনীতির প্রতি আপনার বিশেষ অনুরাগ সেটা গোপন নয়। ১৯৭১ সালের ঘটনা প্রবাহে রাশিয়ার একটা বড় ভূমিকা ছিল। এদিকে অন্য বাম শক্তিগুলো বিচ্ছিন্ন ছিল। নানা কারণে তারা একতাবদ্ধ হতে পারেনি। ১৯৭১ সালের বাম শক্তিকে আপনি কীভাবে ব্যাখ্যা করেন?

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: একাত্তরে বামপন্থিরা বিচ্ছিন্ন, বিক্ষিপ্ত ছিল। অনেকেই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি। এখানে চীনের ভূমিকা ছিল। চীনপন্থিরা প্রভাবিত ছিলেন। তাদের সংখ্যা অল্প। কিন্তু এই যে ‘দুই কুকুরের লড়াই’- এ রকম কোনো ইশতেহার আমরা দেখিনি ১৯৭১ সালে। একাত্তর সালে তো আমরা অনেক ইশতেহার পেতাম। সিরাজ সিকদারের ইশতেহার আমি পেয়েছি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কক্ষের ভেতর দিয়ে ঢুকিয়ে দিয়ে যেত। ওই খানে দুই কুকুরের লড়াই-টড়াই এসব কখনো দেখিনি। আমার চোখে পড়েনি।

রাহাত মিনহাজ: একাত্তরের বাম রাজনীতিকে সমালোচনা করার জন্য সিরাজ সিকদারের যে ইশতেহারের কথা বলা হয়, সেটার সত্যতা আপনি খুঁজে পাননি?

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: সিরাজ সিকদারের লিফলেট আমি পেয়েছি। কিন্তু তার কোনো ইশতেহারে এমন লেখা পাইনি। সিরাজ সিকদার ছয় পাহাড়ের কথা বলত। ছয় পাহাড়ের তালিকা দিত। সে একটা তত্ত্বে ছয়টা পাহাড় রূপক অর্থে ব্যবহার করেছিল, যেগুলো বাংলাদেশের ওপর চেপে বসবে। সেই লিফলেট আমি পেয়েছি আমার কক্ষে। সেখানে কোথাও দুই কুকুরের কামড়া-কামড়ি টাইপের কিছু পাইনি।

রাহাত মিনহাজ: ১৯৭১ সালকে নানাজন নানাভাবে ব্যাখ্যা করেন। এই সময়ে আপনি একজন তরুণ শিক্ষক। আপনি বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষের পক্ষের একজন মানুষ। এই প্রেক্ষাপটে থাকার পরও মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশ না নেয়া, রণাঙ্গনে না থাকা- এটা কি আপনাকে কোনো কারণে চিন্তিত করে কি, যুদ্ধ করতে পারলে ভালো হতো?

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: আমরা যুদ্ধে ছিলাম এই অর্থে যে আমরা যুদ্ধের আগেও বিদেশিদের কাছে চিঠিপত্র পাঠিয়েছি। আমরা জানিয়েছি এখানে একটা গণহত্যা হবে। বিবিসির একটা পোস্টাল অ্যাড্রেস ছিল। যুদ্ধের সময় সেই পোস্ট বক্সে আমরা এখানকার ঘটনাপ্রবাহ বিবিসিতে পাঠিয়েছি। আমরা স্থানীয়ভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করেছি। আমাদের অনেকে বর্ডার ক্রস করে চলে গেছেন। তারাও খবর নিচ্ছেন। যোগাযোগটা ছিল। আমরা কিন্তু পার্টিসিপেট করছি। হয় কোলাবোরেশন, নয় পার্টিসিপেশন- এর মাঝখানে তো কোনো অবস্থা ছিল না। আমরা পার্টিসিপেশন করেছি।

রাহাত মিনহাজ: ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, আপনার স্মৃতি, বাংলাদেশের স্বাধীন হওয়া, পরবর্তীতে বাংলাদেশের বিভিন্ন দিকে চলে যাওয়া- এই সার্বিক বিষয়ে আপনার যদি কোনো মন্তব্য থাকে?

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: আমাদের স্বপ্ন ছিল এই রাষ্ট্রটা একটা গণতান্ত্রিক হবে। পাকিস্তান কিন্তু গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ছিল না। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নিয়ে আমাদের যে ধারণা, সমাজতান্ত্রিক না হলে গণতান্ত্রিক হওয়া যায় না। মানে পুঁজিবাদীরাও গণতন্ত্র করে, বুর্জোয়া গণতন্ত্র। কিন্তু আমরা একটা সমাজতন্ত্রের কথা ভাবছি। এ জন্য আমাদের সেমিনারেও (২৩ মার্চ ১৯৭১) ওই কথাটাই এসেছে। আমরা কিন্তু একটা সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশের কথাই ভাবছি। কিন্তু যেটা ঘটল, সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশ হলো না। পুঁজিবাদী বাংলাদেশ হলো। পাকিস্তানিরা ওদের স্বার্থে যে পুঁজিবাদী ব্যবস্থাটা করেছিল, সেই ব্যবস্থাটা কিন্তু ভাঙল না। রাষ্ট্র চরিত্রগতভাবে আগের মতোই থেকে গেল। অর্থনৈতিকভাবে যে উন্নয়নটা হলো সেটা পুঁজিবাদী উন্নয়ন। বাংলাদেশে আরেকটা পুঁজিবাদী রাষ্ট্র তৈরি হলো। আমরা এখন দেখি সম্পদ পাচার হচ্ছে। এটা তো আগে থেকেই চলে আসছে। মোগলরা সম্পদ দিল্লিতে নিত, ব্রিটিশরা লন্ডনে নিত, পাকিস্তানিরা করাচিতে নিত। এখন বাঙালি ধনীরা তারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সম্পদ নিয়ে যাচ্ছে। দরিদ্র রয়ে গেছি আমরা। ঐতিহাসিকভাবে দেখলে প্রথমে ব্রিটিশ উপনিবেশন, পরে পাকিস্তানি উপনিবেশ। এখন বাংলাদেশে ধনীদের একটা উপনিবেশ তৈরি হচ্ছে। তাদের মধ্যে দেশপ্রেম নেই। দেশপ্রেমের ভবিষ্যৎ আছে বলে তারা মনে করে না। তারা এখানকার সম্পদগুলো যেভাবে পারে বিদেশে পাচার করছে।


৬১,৭২৪ জন বাংলাদেশি হজের জন্য সৌদি আরবে পৌঁছেছেন

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

এ পর্যন্ত ১৬০টি ফ্লাইটে মোট ৬১,৭২৪ জন বাংলাদেশি হজযাত্রী সৌদি আরবে পৌঁছেছেন। এদের মধ্যে নয়জন বার্ধক্যজনিত অথবা অন্যান্য স্বাস্থ্যগত কারণে মারা গেছেন।

ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এম আবুবকর সিদ্দিক বলেন, “আটজন পুরুষ এবং একজন মহিলা হজযাত্রী মারা গেছেন।”

তিনি বলেন, এই বছর ৮৭,১০০ জন বাংলাদেশি পবিত্র হজব্রত পালন করবেন। সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৫,২০০ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৮১,৯০০ জন হজ পালন করবেন।

সিদ্দিক বলেন, আজ বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের তিনটি ফ্লাইট ১২৩৩ জন হজযাত্রী এবং সৌদি এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট ৩২৭ জন হজযাত্রী নিয়ে বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে অথবা ছেড়ে যাচ্ছে। হজযাত্রীদের বহনকারী শেষ ফ্লাইটটি ৩১ মে সৌদি আরবে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।

সর্বশেষ হজ বুলেটিন অনুযায়ী, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এখন পর্যন্ত ৮৩টি ফ্লাইট পরিচালনা করে ৩১,৫১৩ জন হজযাত্রী বহন করেছে, সৌদি এয়ারলাইন্স ৫৬টি ফ্লাইট পরিচালনা করে ২১,৫৮৩ জন হজযাত্রী এবং রিয়াদ-ভিত্তিক ফ্লাইনাস এয়ারলাইন্স ২১টি ফ্লাইটে ৮,৬২৮ জন হজযাত্রী পরিবহন করেছে।

কর্মকর্তারা জানান, এ বছর সরকারের হজ কর্মসূচির আওতায় ৫,০৮৫ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৮১,৮৭১ জন হজযাত্রী সৌদি আরবের ভিসা পেয়েছেন।

প্রথম হজযাত্রী বহনকারী ফ্লাইট গত ২৯ এপ্রিল হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ছেড়ে যায়।

চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে এ বছর হজ ৫ জুন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

বাংলাদেশ হজযাত্রীদের জন্য ফিরতি ফ্লাইটগুলি ১০ জুন শুরু হবে এবং ১০ জুলাই শেষ হবে।


শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ছয় মামলার প্রতিবেদন ১৭ জুন

গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

প্লট বরাদ্দে জালিয়াতির অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা ও ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়সহ ১০০ জনের বিরুদ্ধে পৃথক ছয় মামলায় গ্রেফতার সংক্রান্ত তামিল প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ১৭ জুন দিন ধার্য করেছেন আদালত।

আজ ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিবের আদালতে আসামিদের গ্রেফতার সংক্রান্ত তামিল প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য ছিল।তবে পুলিশ আসামিদের গ্রেফতার সংক্রান্ত তামিল প্রতিবেদন দাখিল না করায় বিচারক নতুন এদিন ধার্য করেন বলে বাসসকে জানান দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর।

এর আগে, ১৫ এপ্রিল ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিব মামলার অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে শেখ হাসিনা ও তার ছেলে ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়সহ চার্জশিটভুক্ত ২৯ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে গ্রেফতার সংক্রান্ত তামিল প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ২৯ এপ্রিল দিন ধার্য করেন।

তবে ২৯ এপ্রিল প্রতিবেদন দাখিল না হওয়ায় ১২ মে নতুন দিন ধার্য করা হয়। এরপর একাধিকবার নতুন দিন ধার্য করে আজকের দিনটি প্রতিবেদনের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছিল।

উল্লেখ্য, ক্ষমতার অপব্যবহার করে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১০ কাঠার সরকারি প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে ১৪ জানুয়ারি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন দুদকের উপ পরিচালক সালাহউদ্দিন। মামলাটি তদন্ত শেষে গত ১০ মার্চ তদন্তে প্রাপ্ত আরো চারজনসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া।

একই দিনে শেখ হাসিনা, জয়সহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে অপর একটি মামলা করেন দুদকের সহকারী পরিচালক এস এম রাশেদুল হাসান। মামলাটি তদন্ত শেষে গত ১০ মার্চ তদন্তে প্রাপ্ত আরো দুইজনসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন তিনি।

১৩ এপ্রিল ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিব মামলার অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে প্লট বরাদ্দে জালিয়াতির অভিযোগে দুদকের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা,তার ছোট বোন শেখ রেহানা ও রেহানার মেয়ে ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিকসহ ৫৩ জনের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। এছাড়াও হাসিনা ও টিউলিপের বিরুদ্ধে পৃথক তিন মামলায় এবং শেখ রেহানা,তার মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক ও ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকের বিরুদ্ধে পৃথক এক মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।

প্লট দুর্নীতির অভিযোগে শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, টিউলিপ,রিজওয়ানা সিদ্দিকসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে গত ১৩ জানুয়ারি মামলা করেন দুদকের উপ-পরিচালক সালাহউদ্দিন। তদন্ত শেষে গত ১০ মার্চ তদন্ত প্রাপ্তে আরো দুই আসামিসহ শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, টিউলিপ,রিজওয়ানা সিদ্দিকসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া।

একই অভিযোগে আজমিনা সিদ্দিক, টিউলিপ ও শেখ হাসিনাসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে ১৩ জানুয়ারি মামলা করেন দুদকের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া। মামলাটি তদন্ত শেষে গত ১০ মার্চ তদন্ত প্রাপ্তে আরো দুই আসামিসহ আজমিনা সিদ্দিক-শেখ হাসিনা-টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিকসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন তিনি।

অপরদিকে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক,টিউলিপ ও শেখ হাসিনাসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে ১৩ জানুয়ারি প্লট দুর্নীতির মামলা করেন দুদকের সহকারী পরিচালক এস এম রাশেদুল হাসান। মামলাটি তদন্ত শেষে গত ১০ মার্চ তদন্ত প্রাপ্তে আরো দুই আসামিসহ রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক-শেখ হাসিনা-টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিকসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।


অধ্যাদেশ নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা: সময়ের প্রয়োজনে অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ এর খসড়ার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, যেটা যে সময় দরকার পড়ে, সেই সময় সেটা করা হয়।

তিনি আজ রোববার পবিত্র ঈদ-উল আযহা উপলক্ষে কোরবানির পশুর হাট ও কাঁচা চামড়ার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সভা এবং আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন ।

গত ২২ মে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে সচিবালয়ে বিক্ষোভ করছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

সভা শেষে সাংবাদিকরা জানতে চান সরকারি কর্মচারী অধ্যাদেশ নিয়ে সচিবালয়ে কর্মচারীরা বিক্ষোভ করছেন। তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে কি ভাবছেন? জবাবে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘যে আইনটা হচ্ছে এটা ২০১৮ সালে সংশোধন হয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকার একটা সংশোধন করে ইলেকশনটা যাতে ম্যানিপুলেট করতে পারে, ওইরকম কিছু কিছু সংশোধন করেছিল। ওই সংশোধনটা শুধু বাদ দেওয়া হয়েছে। আগে আইনটি যে রকম ছিল ওটাই করা হয়েছে। তারপরও যদি তাদের কোনোরকম আপত্তি থাকে, তারা আলোচনা করতে পারেন, কেবিনেট ডিভিশন কিংবা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে। আলোচনা করে সমস্যাটা সমাধান করে নেবেন।’

কেন এ সময়ে এ অধ্যাদেশ করা জরুরি-এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটার ব্যাখ্যা তো আমি দিতে পারব না, কেন এটা দিতেছে। সময়ের প্রয়োজনে অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘২০১৮ সালে (আইনটা) পরিবর্তন হয়েছে। এখন আবার একটু সংশোধন হয়েছে। এটা তো সে রকম কিছু না।’

আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির সভায় কোন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আসন্ন ঈদ-উল আযহার সময় যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো থাকে, মানুষ যাতে নিরাপদে চলাচল করতে পারে সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।


প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিকেলে বৈঠকে বসছেন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আজ বিকেলে বৈঠকে বসছেন দেশের একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতা।

প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় বিকেল ৫টা ও ৬টা দুই দফায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বাসসকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে প্রথম দফায় বৈঠকে বসবেন, কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ, বীর বিক্রম, মাহমুদুর রহমান মান্না, সাইফুল হক, জুনায়েদ সাকী, হাসনাত কাইয়ুম,মুজিবর রহমান মঞ্জু, মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, খালেকুজ্জামান ভূঁইয়া, টিপু বিশ্বাস, শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু এবং শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন।

দ্বিতীয় দফায় বৈঠকে বসবেন, মাওলানা সাদিকুর রহমান, মাওলানা রেজাউল করিম, মাওলানা মামুনুল হক, মাওলানা আহমেদ আব্দুল কাদের, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদি, মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, নুরুল হক নূর, মাওলানা মুসা বিন ইজহার এবং মুফতি মাওলানা শাখাওয়াত হোসাইন রাযি।


মুন্নি সাহা ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের ৩৫ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট অবরুদ্ধ

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

সাংবাদিক মুন্নি সাহা ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ৩৫টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট অবরুদ্ধ (ফ্রিজ) করেছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট। অ্যাকাউন্টগুলোতে মোট ১৮ কোটি ১৬ লাখ ৫৩ হাজার ৭৩৯ টাকা আছে। গতকাল শনিবার সিআইডি থেকে দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এতে বলা হয়েছে, মুন্নি সাহা ও তার স্বামী কবির হোসেন সাংবাদিকতা পেশাকে ব্যবহার করে বিধিবহির্ভূতভাবে প্রভাব খাটিয়ে প্রতারণা ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করেন। অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ নিজ এবং স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে পরিচালিত ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে লেনদেন করে আসছে বলে সিআইডির কাছে অভিযোগ আসে। অভিযোগের ভিত্তিতে সিআইডি, ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালা, ২০১৯ মোতাবেক সন্দেহভাজন ব্যক্তি ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং অনুসন্ধান শুরু করে।

'প্রাথমিক অনুসন্ধানে মুন্নি সাহা ও তার স্বামী কবির হোসেন এবং তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে থাকা ব্যাংক হিসাবের তথ্য পর্যালোচনা দেখা যায়, সন্দেহভাজন ব্যক্তি ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে মোট ৪৬টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। যার মধ্যে বর্তমানে ৩৫টি চালু আছে। এসব অ্যাকাউন্টে সন্দেহজনকভাবে মোট ১৮৬ কোটি ৫৬ লাখ ৯১ হাজার আট টাকা লেনদেন করা হয়েছে এবং বর্তমানে ১৮ কোটি ১৬ লাখ ৫৩ হাজার ৭৩৯ টাকা আছে। প্রাথমিক অনুসন্ধানে ওই ব্যাংক হিসাবগুলোর লেনদেন সন্দেহজনক মনে হলে সেগুলো অবরুদ্ধ করার আবেদন করা হয়।'

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের সিনিয়র স্পেশাল জজ মুন্নি সাহা ও তার স্বামী কবির হোসেন এবং তাদের স্বার্থ সম্পৃক্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে থাকা ১৮ কোটি ১৬ লাখ ৫৩ হাজার ৭৩৯ টাকাসহ ৩৫টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ (ফ্রিজ) করার আদেশ দেন। তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলমান বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।


বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি বাতিলের সিদ্ধান্তে স্থগিতাদেশ

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি বাতিলের সিদ্ধান্তে সাময়িক স্থগিতাদেশ জারি করেছেন এক বিচারক। এই আদেশ হাজার হাজার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর জন্য সাময়িক স্বস্তি এনেছে, যাদের এই নীতির আওতায় অন্যত্র স্থানান্তরিত হওয়ার মুখে পড়তে হয়েছিল।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাম্প প্রশাসনের এই নীতিকে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান ও অন্যান্য ফেডারেল আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন হিসেবে অভিহিত করেছে। এর আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তির ক্ষমতা বাতিল করে।

হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোয়েম এক্স-এ লেখেন, আইন মেনে চলতে ব্যর্থ হয়েছে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়। প্রশাসন স্টুডেন্ট অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ভিজিটর প্রোগ্রামের অধীনে হার্ভার্ডের সার্টিফিকেশন বাতিল করেছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য একটি সতর্কবার্তা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুসারে, গত শিক্ষাবর্ষে ৬ হাজার ৭০০ জনেরও বেশি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী এই প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছিল। সম্প্রতি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নির্ধারিত ৬ কোটি ডলারের ফেডারেল অনুদান বাতিল করা হয়। প্রতিষ্ঠানটি ক্যাম্পাসে ইহুদিবিদ্বেষ ও জাতিগতবৈষম্য মোকাবিলায় ব্যর্থ বলে অভিযোগ করা হচ্ছে।

গত কয়েক সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন হার্ভার্ডের জন্য বরাদ্দ প্রায় ৩০০ কোটি ডলারের ফেডারেল অনুদান এবং চুক্তি জব্দ বা বাতিল করেছে।


রোহিঙ্গারা সমুদ্রপথে ঝুঁকি নিচ্ছে: জাতিসংঘ

সাগরে রোহিঙ্গাবোঝাই একটি নৌকা। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

রোহিঙ্গারা সমুদ্রপথে ঝুঁকি নিচ্ছে বলে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। মিয়ানমার ও বাংলাদেশে ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতি রোহিঙ্গাদের আরও বেশি করে বিপজ্জনক নৌযাত্রায় ঝুঁকি নিতে বাধ্য করছে। এতে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটছে। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর এ তথ্য জানিয়েছে। গতকাল শনিবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি মাসেই রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে একটি নৌকা ডুবে যায়। এতে আনুমানিক ৪২৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। সংস্থাটি বলেছে, মানবিক সহায়তার তহবিল কমে যাওয়ায় এই সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর দুর্দশা আরও গভীর হয়েছে।

ইউএনএইচসিআর জানায়, গত ৯ ও ১০ মে দুটি নৌকা ডুবে যায়। এতে প্রায় ৫১৪ জন রোহিঙ্গা ছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, তারা বাংলাদেশে কক্সবাজারের শরণার্থী শিবির ও মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে যাত্রা শুরু করেছিলেন। এ ঘটনায় মাত্র ৮৭ জনকে জীবিত উদ্ধার করা গেছে। যদি ৪২৭ জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত হয়, তবে এটি এই বছরের রোহিঙ্গাদের জন্য সমুদ্রপথে সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনা হবে।

সংস্থাটি আরও জানায়, এ সব রোহিঙ্গারা বর্ষা মৌসুমের মধ্যেই সমুদ্রপথে যাত্রা বেছে নেয়। যা তাদের চরম হতাশা ও নিরুপায়তার ইঙ্গিত।

ইউএনএইচসিআর-এর এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের আঞ্চলিক ব্যুরোর পরিচালক হাই কিউং জুন বলেন, মানবিক পরিস্থিতির অবনতি এবং তহবিল কাটছাঁট রোহিঙ্গাদের জীবনে ভয়াবহ প্রভাব ফেলছে। তারা এখন নিজেদের ও পরিবারের জন্য নিরাপত্তা, সুরক্ষা এবং মর্যাদাপূর্ণ জীবনের সন্ধানে বিপজ্জনক পথ বেছে নিচ্ছে।

সংস্থাটি বাংলাদেশসহ রোহিঙ্গা শরণার্থী আশ্রয়দানকারী দেশগুলো ও মিয়ানমারে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুতদের জীবনের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে আরও আর্থিক সহায়তার আহ্বান জানিয়েছে। ২০২৫ সালের জন্য ইউএনএইচসিআর-এর চাওয়া ৩৮৩ দশমিক ১ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে এখন পর্যন্ত মাত্র ৩০ শতাংশ তহবিল জোগাড় হয়েছে।

২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ইউএনএইচসিআরকে ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি অনুদান দিয়েছে, যা সংস্থাটির মোট অনুদানের ৪০ শতাংশ। মার্চ মাসে সংস্থাটি ব্যয়ের সীমাবদ্ধতার কারণে ৩০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি পরিকল্পিত কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে।


আজ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্মবার্ষিকী

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

আজ ১১ জ্যৈষ্ঠ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্মবার্ষিকী। জাতীয় পর্যায়ে কবির জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বল নক্ষত্র জাতীয় কবির জন্মবার্ষিকী উদযাপিত হচ্ছে গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায়।

বাংলা ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ বর্ধমান জেলার আসানসোলের জামুরিয়া থানার চুরুলিয়া গ্রামে তিনি জন্মেছিলেন। তার ডাক নাম দুখু মিয়া। পিতার নাম কাজী ফকির আহমেদ ও মা জাহেদা খাতুন।

শৈশব-কৈশোর-তারুণ্যের জীবনের পরতে পরতে সংগ্রাম করতে হয়েছে তাকে। জড়িয়েছিলেন নানা পেশায়। ১৯১৭ সালে যোগ দেন সেনাবাহিনীতে। অংশ নেন প্রথম বিশ্বযুদ্ধেও।

কাজী নজরুল ইসলাম চির প্রেমের কবি। তিনি যৌবনের দূত। তিনি প্রেম নিয়েছিলেন, প্রেম চেয়েছিলেন। মূলত তিনি বিদ্রোহী কিন্তু তার প্রেমিক রূপটিও প্রবাদপ্রতিম। তাই মানুষটি অনায়াসেই বলতে পারেন ‘আমার আপনার চেয়ে আপন যে জন খুঁজি তারে আমি আপনায়।’

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে জাতীয় পর্যায়ে আজ রোববার থেকে শুরু হচ্ছে তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠান। এবারের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান: কাজী নজরুলের উত্তরাধিকার’। অনুষ্ঠানসমূহ সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

সংস্কৃতি-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সহযোগিতায় এবং কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় আজ থেকে ২৭ মে পর্যন্ত কুমিল্লায় এই অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে।

কুমিল্লা জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে বিকেল ৩টায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতি-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।

মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মফিদুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করবেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক মো. লতিফুল ইসলাম শিবলী এবং কবি পৌত্রী ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ইনস্টিটিউট ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান খিলখিল কাজী।

স্মারক বক্তৃতা করবেন অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান এবং স্বাগত বক্তৃতা করবেন কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়ছার।

অনুষ্ঠানে ‘নজরুল পুরস্কার ২০২৩ ও ২০২৪’-এর জন্য মনোনীত গুণীজনদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে।

আলোচনা শেষে একাডেমির বিশেষ নিবেদন ‘চেতনা ও জাগরণে নজরুল’ শীর্ষক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

এছাড়া আগামীকাল সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় একাডেমির সংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তি বিভাগের আয়োজনে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে ‘চেতনা ও জাগরণে নজরুল’ শীর্ষক অনুষ্ঠান। সভাপতিত্ব করবেন শিল্পকলা একাডেমির সচিব ও দায়িত্বপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মোহাম্মদ ওয়ারেছ হোসেন। এতে স্বাগত বক্তৃতা করবেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তি বিভাগের পরিচালক মেহজাবীন রহমান।

এ ছাড়া একাডেমির নবীন কণ্ঠশিল্পী ও নৃত্যশিল্পীরা পরিবেশন করবেন সমবেত সংগীত এবং সমবেত নৃত্য। সবশেষে পরিবেশিত হবে নাটক ‘সেতুবন্ধ’, পরিবেশনায় থাকবে বাঁশরি রেপার্টরি থিয়েটার।

এদিকে, যথাযোগ্য মর্যাদায় আজ রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্মবার্ষিকী পালন করা হবে। এ উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা এবং কর্মচারীরা আজ সকাল সোয়া ছয়টায় অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে সমবেত হবেন। সেখান থেকে তারা সকাল সাড়ে ছয়টায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খানের নেতৃত্বে শোভাযাত্রা সহকারে কবির সমাধিতে গমন, পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করবেন। পরে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খানের সভাপতিত্বে কবির সমাধি প্রাঙ্গণে এক স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) জনসংযোগ দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম গতকাল এ কথা জানান।

১৯৭২ সালে কবি নজরুলকে সপরিবারে নিয়ে আসা হয় স্বাধীন বাংলাদেশে। এরপর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশেই ছিলেন। ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট তৎকালীন পিজি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন এই মহাবিদ্রোহী ও প্রেমিক পুরুষ। কবির ইচ্ছানুসারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়।


ডিসেম্বর থেকে আগামী জুনের মধ্যে নির্বাচন

রাজনৈতিক দলকে জানালেন প্রধান উপদেষ্টা
শনিবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে তার অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

গতকাল শনিবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেন।

পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘অধ্যাপক ইউনূস এক কথার মানুষ। তিনি একটি সময়সীমা নির্ধারণ করেছেন। তিনি সেই সময়সীমার বাইরে যাবেন না। পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন ডিসেম্বর থেকে আগামী জুনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে’।

তিনি বলেন, সব দলই জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে তাদের আস্থা আছে। তার অধীনেই সবাই নির্বাচন চেয়েছে এবং ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলেছেন ড. ইউনূস।

প্রেস সচিব বলেন, স্থানীয় নির্বাচনে জোর দিয়েছে এনসিপি। আওয়ামী লীগের আমলের সব নির্বাচন অবৈধ ঘোষণা চেয়েছে তারা। বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ নয়, তাকে সমর্থন জানিয়েছে।


গ্রাহকপ্রতি ১০টির বেশি সিম নয়

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

এখন থেকে একজন গ্রাহক সর্বাধিক ১০টি মোবাইল ফোন সিম ব্যবহার করতে পারবেন। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গতকাল শনিবার বিটিআরসির এক কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, আগে একজন গ্রাহক সর্বোচ্চ ১৫টি সিম নিবন্ধন করতে পারতেন। তবে নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এখন থেকে সর্বোচ্চ ১০টি সিমই নিবন্ধন করা যাবে।

বিটিআরসি জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক অনুশীলন এবং জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থ বিবেচনা করে একজন গ্রাহকের নামে সর্বোচ্চ নিবন্ধনযোগ্য সিম সংখ্যা ১৫ থেকে দশে কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটও বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। সংস্থাটি আরও জানায়, সর্বোচ্চ ১০টি ব্যক্তিগত সিম নিবন্ধনের সীমা নির্ধারণ করা হলে প্রায় ২৬ লাখ গ্রাহকের মোট ৬৭ লাখ সিম বন্ধ করতে হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।


নির্বাচন, বিচার ও সংস্কার কাজ এগিয়ে নিতে বৃহত্তর ঐক্যের আহ্বান উপদেষ্টা পরিষদের

প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

আজ শনিবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সভা শেষে উপদেষ্টা পরিষদের এক অনির্ধারিত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ওপর অর্পিত তিনটি প্রধান দায়িত্ব (নির্বাচন, সংস্কার ও বিচার) বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

এ নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ এক বিবৃতি দিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে রাজধানীর শের-ই-বাংলা নগর এলাকায় পরিকল্পনা কমিশনে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

এসব দায়িত্ব পালনে বিভিন্ন সময় নানা ধরনের অযৌক্তিক দাবি দাওয়া, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও এখতিয়ার বহির্ভূত বক্তব্য এবং কর্মসূচি দিয়ে যেভাবে স্বাভাবিক কাজের পরিবেশ বাধাগ্রস্ত করে তোলা হচ্ছে এবং জনমনে সংশয় ও সন্দেহ সৃষ্টি করা হচ্ছে, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় বৈঠকে।

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, দেশকে স্থিতিশীল রাখতে, নির্বাচন, বিচার ও সংস্কার কাজ এগিয়ে নিতে এবং চিরতরে এদেশে স্বৈরাচারের আগমন প্রতিহত করতে বৃহত্তর ঐক্য প্রয়োজন বলে মনে করে উপদেষ্টা পরিষদ।

এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর বক্তব্য শুনবে এবং সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করবে।

শত বাধার মাঝেও গোষ্ঠীস্বার্থকে উপেক্ষা করে অন্তর্বর্তী সরকার তার ওপর দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। যদি পরাজিত শক্তির ইন্ধনে এবং বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সরকারের ওপর আরোপিত দায়িত্ব পালনকে অসম্ভব করে তোলা হয়, তবে সরকার সকল কারণ জনসমক্ষে উত্থাপন করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জুলাই অভ্যুত্থানের জনপ্রত্যাশাকে ধারণ করে। কিন্তু সরকারের স্বকীয়তা, সংস্কার উদ্যোগ, বিচার প্রক্রিয়া, সুষ্ঠু নির্বাচন ও স্বাভাবিক কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কর্মকাণ্ড অর্পিত দায়িত্ব পালন করাকে অসম্ভব করে তুললে সরকার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।


ঈদে আসছে নতুন টাকা, থাকছে না কোনো ব্যক্তির ছবি: গভর্নর

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ঈদের আগেই বাজারে ১ হাজার, ৫০ ও ২০ টাকার নতুন নোট আসছে। তবে টাকায় কোনো ব্যক্তির ছবি থাকবে না।

শনিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পল্লী কর্মী-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) অডিটোরিয়ামে ক্রেডিট এনহেন্সমেন্ট স্কিমের (সিইএস) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গভর্নর এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে পিকেএসএফ’র চেয়ারম্যান জাকির আহমেদ খানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কান্ট্রি ডিরেক্টর হোয়ে ইউন জিয়ং এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারক।

অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে গভর্নর বলেন, ‘আমাদের টাকা ছাপানো শুরু হয়ে গেছে। তিনটা নোট আসছে শিগগিরই। সেটা হচ্ছে ১ হাজার টাকার নোট, ৫০ টাকা ও ২০ টাকা। এই নতুন নোট ঈদের আগেই আমরা পাবো। এখানে কোন ব্যক্তির ছবি থাকবে না। নতুন নোটে থাকবে দেশের বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থাপনা।’

এসময় বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে তিনি বলেন, পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনা অন্তর্বর্তী সরকারের রাজনৈতিক অঙ্গীকার। বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রচারিত হওয়ায় তা ফেরত পাঠাতে চাপ তৈরি হয়েছে। এর ফলেই দেখলাম ব্রিটিশ ক্রাইম এজেন্সি কিছু সম্পদ ফ্রিজ করেছে। পাচার করা অর্থ ফ্রিজ করায় অর্থ ফেরত আনার প্রথম ধাপ সম্পন্ন হয়েছে। পাচারের টাকা ফেরাতে অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করছে বলে তিনি জানান।

তিনি বলেন, মাইক্রোএন্টারপ্রাইজ ফাইন্যান্সিং অ্যান্ড ক্রেডিট এনহেন্সমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় এই স্কিমের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়া সহজ হবে, যা এতদিন ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের (এমএফআই) পক্ষে সংগ্রহ করা কঠিন ছিল।

গভর্নর বলেন, ‘স্কিমের আওতায় পিকেএসএফ অংশীদার এমএফআইগুলোকে ২৪০ কোটি টাকার রিজার্ভ তহবিল ভিত্তিতে ব্যাংক ঋণ গ্যারান্টি দেবে। ঋণের গ্যারান্টি অনুযায়ী এককালীন শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ কমিশন আদায় করা হবে। এর মাধ্যমে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ব্যাংক ঋণ পাওয়া সহজ হবে।

সরকার ও এডিবির সহায়তায় এই পাইলট প্রোগ্রামে আজ পাঁচটি বেসরকারি ব্যাংক ও একটি নন ব্যাংকিং ফিনান্সিয়াল ইন্সটিটিউশন চুক্তিবদ্ধ হয়েছে বলে জানান তিনি। আর্থিক সাক্ষরতা বাড়াতে ব্যাংকগুলোকে প্রতিটি স্কুলের সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর।

তিনি বলেন, মাইক্রো ফাইন্যান্স সেক্টর যদি অটোমেটেড হয়ে যায়, ইফিশিয়েন্টলি কাজ করে তাহলে পরিচালন ব্যয় অনেক কমে যায়। যারা দক্ষ হবে তারাই টিকে থাকবে এই প্রতিযোগিতামূলক বাজারে। আমরা রেগুলেটরি ইন্টারভেনশন করবো না।


সীমান্তে উত্তেজনা: বাংলদেশের প্রতিবাদ সত্ত্বেও পুশ-ইন অব্যাহত

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ইউএনবি

‘বাংলাদেশি’ ট্যাগ দিয়ে দেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে অবৈধভাবে শিশু, নারী-পুরুষদের ঠেলে দিচ্ছে (পুশ-ইন) ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। এ নিয়ে প্রতিবেশী এই দুই দেশের অভিন্ন সীমান্তে নতুন করে উত্তেজনা শুরু হয়েছে।

বিএসএফের পুশ-ইন করা মানুষের মধ্যে বাংলাদেশি নাগরিক, রোহিঙ্গা শরণার্থী ও পরিচয় না জানাও অনেকে রয়েছেন। বিষয়টি মানবাধিকার লঙ্ঘনের আশঙ্কার পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্ক, বাণিজ্য ও জনসম্পৃক্ততায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন বিশ্লেষকরা।

এ বিষয়ে ঢাকার পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কূটনৈতিক প্রতিবাদ জানানো হলেও সীমান্তের বিভিন্ন জায়গায় এই ধরনের ঘটনা অব্যাহত রয়েছে।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) এক সূত্র জানায়, শুধু বৃহস্পতিবারই (২২ মে) একশর বেশি মানুষ বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে পাঠানো হয়েছে। পঞ্চগড়, লালমনিরহাট, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, মৌলভীবাজার, ফেনী, কুমিল্লা ও খাগড়াছড়ির সীমান্ত এলাকা থেকে তাদের আটক করে বিজিবি।

সরকারি ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ৪ থেকে ১৫ মের মধ্যে ভারতে থেকে অন্তত তিন শতাধিক মানুষকে বাংলাদেশে পুশ-ইন করা হয়েছে।

বিজিবি ও সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের মতে, ভারতের দিক থেকে ‘পুশ-ইন’ কিংবা ‘পুশ-ইনের চেষ্টা’ ক্রমেই বাড়ছে। এ ছাড়া সীমান্তে চলাচলের ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নিয়েছে বিএসএফ, যা স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক বাড়াচ্ছে বলে জানা যায়।

অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর জন্য ভারত ও বাংলাদেশ আইনি কাঠামোর পাশাপাশি চুক্তি করলেও সেসব উপেক্ষা করেই পুশ-ইন কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের লঙ্ঘন এবং দুই দেশের বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক চুক্তির পরিপন্থী।

বিএসএফের পুশ-ইনের ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেন, কিছু বাংলা ভাষাভাষী ব্যক্তিকে ভারত থেকে বাংলাদেশে পাঠানোর পর আটক করেছে বিজিবি। তারা কোনো পরিচয়পত্র বা পাসপোর্ট দেখাতে পারেননি। তাদের মধ্যে কেউ কেউ দাবি করছেন যে তারা এর আগে বাংলাদেশ থেকে ভারতে গিয়েছিলেন।

আইজিপি জানান, সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থা তাদের পরিচয় যাচাইয়ের পর পুলিশ ও বিজিবির সমন্বয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আটকদের মধ্যে অনেকে অভিযোগ করেছেন, তাদের চোখ বেঁধে দূরবর্তী অঞ্চল থেকে এনে নির্জন সীমান্ত এলাকায় ফেলে যাওয়া হয়েছে।

বিজিবি তাদের আটক করে পরিচয় জানতে ও যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিতের উদ্দেশ্যে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

গত বুধবার (২১ মে) পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন জানান, নয়াদিল্লির সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে এবং নির্ধারিত পদ্ধতির বাইরে যাতে কিছু না ঘটে, তার জন্য ঢাকার পক্ষ থেকে চেষ্টা চলছে।

নির্ধারিত কার্যপ্রক্রিয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘তারা (ভারত) তাদের অবস্থান কিছুটা জানিয়েছে, আমরাও আমাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছি। আমরা বোঝানোর চেষ্টা করছি যে এটা সঠিক নয়।’

উপদেষ্টা জানান, ভারত একটি তালিকা দিয়েছে, যা বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যাচাই করছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান হলো, প্রত্যেকটি ঘটনা পৃথকভাবে খতিয়ে দেখা হবে এবং প্রকৃত বাংলাদেশি হিসেবে প্রমাণ থাকলেই কেবল তাদের গ্রহণ করা হবে।

সম্প্রতি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান বলেছেন, যেকোনো প্রত্যাবাসনই কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমেই হওয়া উচিত।


banner close