শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫
২৬ আশ্বিন ১৪৩২
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর সাক্ষাৎকার

দেশপ্রেমের অভাব দেখতে পাই

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
আপডেটেড
২৬ মার্চ, ২০২৩ ১৪:৪১
রাহাত মিনহাজ
প্রকাশিত
রাহাত মিনহাজ
প্রকাশিত : ২৬ মার্চ, ২০২৩ ০৮:৫৫

ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী একজন দেশবরেণ্য শিক্ষাবিদ। সুপরিচিত সাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক। ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে খুব কাছ থেকে দেখেছেন বাঙালির অসহযোগ আন্দোলন, ২৫ মার্চ কালরাতের গণহত্যাসহ নানা ঘটনাপ্রবাহ। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি, বামপন্থি রাজনীতি ও নানা বিষয় নিয়ে তিনি কথা বলেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক রাহাত মিনহাজ-এর সঙ্গে।

রাহাত মিনহাজ: ১৯৭১ সালে আপনার বয়স কত ছিল এবং আপনি তখন কোন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন?

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করি। ১৯৬৫ সাল থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত আমি ইংল্যান্ডে ছিলাম পিএইচডির জন্য। ১৯৬৮ সালের আগস্ট মাসে যখন দেশে ফিরলাম, তখন আগরতলা মামলা চলছে। চারদিকে গণ-অভ্যুত্থানের প্রস্তুতি। ছাত্র আন্দোলন গড়ে উঠছে। আমি ১৯৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানটা সরাসরি দেখেছি। আমার জন্ম ১৯৩৬ সালে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার বয়স ৩৫ বছর। আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের রিডার (অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর)। যেহেতু আমি পিএইচডি করেছি, তাই আমি ১৯৭০ সালে রিডার হয়েছিলাম। এর আগে আমি ১৯৫৭ সালের অক্টোবরে জগন্নাথ কলেজ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছিলাম।

রাহাত মিনহাজ: ওই সময় আপনি কি কোনো আবাসিক হলে থাকতেন?

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: আমি কোনো আবাসিক হলে ছিলাম না। কিন্তু ঘটনার একদম কেন্দ্রে ছিলাম। আমরা তখন ফুলার রোডের উল্টোদিকে জগন্নাথ হলের সঙ্গে যে আবাসিক এলাকা সেখানে থাকতাম। ফুলার রোডের ৩৩ নম্বর বাসা।

রাহাত মিনহাজ: ২৫ মার্চ রাতের ঘটনা আপনি কীভাবে প্রত্যক্ষ করেছিলেন এবং আপনার অভিজ্ঞতাটা জানতে চাই?

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: আমরা তো দেখেছিলাম আলোচনা চলছে। মিডিয়াতে বলা হচ্ছিল আলোচনা এগোচ্ছে। আমরা ভেবেছিলাম দেশ স্বাধীন হবেই। এর ভিন্ন কোনো উপায় নেই। তখন আমাদের একটা সংগঠন ছিল ‘লেখক শিবির সংঘ’। সেই ‘লেখক শিবির সংঘ’ থেকে আমরা ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ একটা সেমিনার করেছিলাম বাংলা একাডেমিতে। বাংলা একাডেমির ওই সেমিনারের বিষয় ছিল ভবিষ্যতের বাংলাদেশ। ওখানে নানা ধরনের প্রবন্ধ পাঠ করা হয়েছিল। অধ্যাপক ই এম হাবিবুল্লাহ সভাপতিত্ব করেছিলেন। তিনি ছিলেন আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি। আহমদ শরীফ, মনতাজুর রহমান তরফদার, আমি (সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী), আমার বন্ধু বোরহান উদ্দীন খান জাহাঙ্গীর, আরেকজন ছিলেন বশির আল হেলাল- আমরা সবাই প্রবন্ধ পড়লাম। একেকজন একেক দিক থেকে বক্তব্য তুলে ধরেছিলাম। আমার বক্তব্য ছিল ভবিষ্যতের বাংলা হবে ধর্মনিরপেক্ষ। ধর্মনিরপেক্ষতা কেন হবে, কী জন্য প্রয়োজন, গণতন্ত্রের সঙ্গে ধর্মনিরপেক্ষতার সম্পর্ক- এসব বিষয় নিয়ে বলেছিলাম। আমার এই লেখাটা ২৪ মার্চ ছাপা হয়েছিল ‘দৈনিক পূর্বদেশ’ পত্রিকায়। ওই সময় যারা পাকিস্তানপন্থি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন তাদের কাছে আমি পরে শুনেছি, আমাদের ওই লেখালেখির বিষয়গুলো তারা (পাকিস্তানিরা) প্রত্যক্ষ করেছেন। আমার নাম সেখানে ছিল। যাই হোক, ২৫ মার্চের প্রসঙ্গে আসি। সারা দিন একটা অনিশ্চয়তা ছিল। একটা থমথমে পরিবেশ। প্রত্যেক দিন আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাবে যেতাম। সেখানে নিজেদের মধ্যে আলোচনা হতো। সভাও হতো। ২৫ মার্চ সন্ধ্যার পরও সভা হচ্ছিল, আমরা ৮টার সময় খবরে শুনলাম ২৭ মার্চ আওয়ামী লীগ হরতাল ডেকেছে। এদিকে ইকবাল হল (বর্তমান জহুরুল হক হল) থেকে কয়েকটা ছেলে এসে বলল, স্যার আপনারা চলে যান, আর্মি আসছে। তারা খুব নার্ভাস ছিল। আমরা চলে এলাম বাসায়। আমার বাসা ছিল জগন্নাথ হলের পাশেই। তারপর মধ্যরাতে আরম্ভ হয়ে গেল হামলা। দূরে দু-একটা জয় বাংলা আওয়াজ শুনলাম খুব মৃদুস্বরে। তারপর আমরা বিভিন্ন দেশের রেডিও ধরার চেষ্টা করলাম। কিন্তু কোনো খবর পাওয়া গেল না।

রাহাত মিনহাজ: অভিশপ্ত ওই রাতে আর কী ঘটল। আপনি কী প্রত্যক্ষ করলেন? জগন্নাথ হল তো আপনার বাসার পাশেই ছিল। যেখানে তো বড় ধরনের গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল।

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: আমরা জগন্নাথ হলের পাশের দুই বিল্ডিং পরেই থাকতাম। ২৬ মার্চ সকালবেলা রেডিওতে আমরা শুনলাম কারফিউ জারি হয়েছে। আমরা রেডিও পাকিস্তানে অবাঙালি কর্মকর্তার কণ্ঠে এসব ঘোষণা শুনতে পাচ্ছিলাম। তারা কারফিউয়ের কথা বলল। আমরা দূরে দেখলাম কিছু লোক ছোটাছুটি করছে। ২৫ মার্চ কালরাতে জগন্নাথ হল এবং সলিমুল্লাহ আবাসিক হলে ছিল কিন্তু বেঁচে গেছে- এ রকম কয়েকটা ছেলে সকালে দেয়াল টপকে আমাদের আবাসিক এলাকার মধ্যে ঢুকেছে। তারা কাঁপছিল, আশ্রয় চাচ্ছিল। তাদের কাছ থেকেই প্রথম জানতে পারলাম কী হয়েছিল ওই রাতে। আমরা তাদের বিভিন্ন বাসায় নিয়ে নিলাম। আমাদের বাসায় একজন থাকল। আমাদের বিল্ডিংয়ের যে অংশটা রোকেয়া হলের দিকে, সেখান থেকে জগন্নাথ হলের মাঠটা দেখা যায়। আমাদের বিল্ডিংয়ের তিনতলার ওই দিকে ছিলেন আইইআরের (ইনস্টিটিউট অব এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ) ওয়াজিউর রহমান। উনি ওখান থেকে সকালবেলা দেখেন, অনেক মরদেহ টেনে টেনে আনা হচ্ছে। ওখানে একটা গর্ত করা হচ্ছে এবং মরদেহগুলোকে সেখানে ফেলা হচ্ছে। তারপর ওই মরদেহগুলো যারা এনেছেন, তাদের একটা একটা করে গুলি করে মেরে ফেলা হচ্ছে। এরপর ওখান থেকে কাঁপতে কাঁপতে তিনি আমাদের বাসায় আসেন। তিনি বলছিলেন, আমি কী দৃশ্য দেখলাম এটা! আর এই দৃশ্যটাই ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি থেকে প্রফেসর নুরুল উল্লা ভিডিও ক্যামেরায় ধারণ করেছিলেন। এটা একটা ডকুমেন্ট। তারপর ওই যে ছেলেরা দেয়াল টপকে এসেছিল, তাদের থেকেও শুনলাম। আরও শুনলাম, শিক্ষকদের বাড়িতে ঢুকে তাদের হত্যা করা হয়েছে। ঘটনাক্রমে আমাদের এলাকায় ওরা ঢোকেনি। সেই রাতে ওরা কোনো বাছবিচার করেনি। যেই বাড়িতে ঢুকেছে, সেই বাড়িতে যাকে পেয়েছে, তাকেই হত্যা করেছে। ফুলার রোডে ব্রিটিশ কাউন্সিলে পর্যন্ত ঢুকেছে।

রাহাত মিনহাজ: এরপর কী ঘটল। পরের দিনগুলোর অভিজ্ঞতা যদি আমাদের সঙ্গে শেয়ার করেন।

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: ২৬ তারিখের পর ইয়াহিয়া খানের বক্তৃতা শুনলাম। বিবিসি, আকাশবাণী, রেডিও অস্ট্রেলিয়া থেকে- খবর আসতে থাকল আর্মির ক্র্যাকডাউন হয়েছে। ২৬ মার্চ রাতে আমরা আশঙ্কা করলাম আবারও যদি আসে ওরা। আমাদের বাসায় যে ছেলেটা উঠেছিল, ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পড়ত। আমরা তাকে বললাম, তুমি এখানে থাক। কেউ যদি কিছু জিজ্ঞেস করে, বলবা তুমি আমার স্ত্রীর ভাই। তখন আমি, আমার স্ত্রী আর আমাদের একটা বাচ্চা থাকে আমাদের সঙ্গে। এভাবে আমরা ২৬ মার্চের রাতটা ভয়ে ভয়ে কাটালাম। ২৭ মার্চে কারফিউ কিছুক্ষণের জন্য তুলে দিল। তখন আমরা বাড়িঘর তালা দিয়ে প্রয়োজনীয় সবকিছু নিয়ে বেরিয়ে পড়েছি। ধানমন্ডিতে আমাদের এক আত্মীয় থাকতেন, ওনার বাসার দিকে রওনা হই। দেখলাম রাস্তায় মরদেহ পড়ে আছে। আর্মির সিপাহিরা ঘোরাঘুরি করছে। ওই যে ২৭ মার্চে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাড়ি থেকে বের হয়েছি স্বাধীনতার আগ পর্যন্ত থাকার জন্য আর সেখানে ঢোকিনি।

রাহাত মিনহাজ: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক তো শহীদ হয়েছিলেন পাকিস্থানি বাহিনীর হাতে। যুদ্ধ শেষের দিকে আল-বদররাও তাদের হত্যা করেছে। এ বিষয়ে আপনার স্মৃতি থেকে আমাদের যদি কিছু বলতেন?

ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর সঙ্গে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক রাহাত মিনহাজ

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: একটা ঘটনা বলি। অধ্যাপক আনোয়ার পাশা থাকতেন নীলক্ষেত এলাকায়। ওই এলাকায় অনেককে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনাক্রমে আনোয়ার পাশাদের বাড়িতে আর্মি ঢোকেনি। আরেকজন ছিলেন রশিদুল হাসান। পরে শহীদ হয়েছেন। তিনি আমাদের বিল্ডিংয়ের আরেক ফ্ল্যাটে থাকতেন। তবে সেদিন রাতে আমাদের বাসায় যেহেতু ঢোকেনি তাই তিনিও বেঁচে গেছেন। আনোয়ার পাশা আর রশিদুল হাসান- এই দুজন এসেছেন পশ্চিমবঙ্গ থেকে। আমাদের তবু ঢাকায় আশ্রয় আছে, আত্মীয়স্বজনের বাড়ি আছে। ওনারা তো পশ্চিমবঙ্গ থেকে এসেছেন। তাদের জন্য পরিস্থিতি আরও কঠিন ছিল। আমি ধানমন্ডির এক আত্মীয়ের বাসা থেকে গ্রামে চলে গেলাম। সেখান থেকে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চিঠি দিয়ে জানিয়েছি, আমার বাসা আমি ছেড়ে দিলাম। এরপর ওই বাসাটা অ্যালোট করা হলো আনোয়ার পাশার নামে। আনোয়ার পাশার যেহেতু যাওয়ার জায়গা নেই, তাই তিনি ওই বাসাতে উঠলেন। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বরে বুদ্ধিজীবীদের হত্যার জন্য আলবদর যে লিস্ট বানিয়েছে, সেই লিস্টে আনোয়ার পাশার নাম ছিল। সেখানে আমার নামও ছিল। আমাকে ধরতে পারেনি, কারণ আমার ঠিকানা ছিল না। আলবদরের হাতে যে লিস্টটা ছিল, সেখানে ঠিকানায় ইউনিভার্সিটির কোয়ার্টারের ঠিকানা দেয়া ছিল অনেকের। কিন্তু আমার নামের পাশে কোনো ঠিকানা ছিল না। কারণ আমি তো ২৭ মার্চ রাতেই কোয়ার্টার ছেড়ে দিয়েছি।

এরপর আনোয়ার পাশা ওই বাড়িতে ওঠেন। তাকে খুঁজতে আলবদর ওই বাড়িতে হানা দেয় ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১। রশিদুল হাসান থাকতেন অন্য একটি ভবনে। ১৪ ডিসেম্বর সকালবেলা রশিদুল হাসান আনোয়ার পাশার বাসায় এসে গল্প-স্বল্প করছিলেন। তারা খুবই কাছের বন্ধু ছিলেন। আলবদর এসে আনোয়ার পাশাকে ধরেছে আবার রশিদুল হাসানকেও পেয়ে গেছে। দুজনকেই তারা নিয়ে গেল। আমি যে বাসাটাতে ছিলাম, সেই বাসা থেকেই এ ঘটনা ঘটল। রশিদুল হাসান এবং আনোয়ার পাশা- দুজনই পশ্চিমবঙ্গের মানুষ ছিলেন। তারা দেশ বিভাগের পরে আমাদের এখানে আসেন। রশিদুল হাসান বীরভূমের শান্তিনিকেতনের আর আনোয়ার পাশা চব্বিশ পরগনার বাসিন্দা ছিলেন। আনোয়ার পাশা এমএ পাস করে এসেছেন। আর রশিদুল হাসান এমএ পাস করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

রাহাত মিনহাজ: সেনা কর্তৃপক্ষ ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চালু করার একটা পদক্ষেপ নিয়েছিল এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চালুও হয়েছিল। এই ঘটনাটা কী ছিল?

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: বিশ্ববিদ্যালয় চালুটা তো একটা মশকারি ছিল। এর আগে আমি কেন পালালাম, সেটা একটু সংক্ষেপে বলি। ২৫ মার্চের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০ জনের একটা তালিকা তৈরি করা হয়েছিল। আমরা যারা সভা-সমিতি করি, জোহা দিবস পালন করি, ক্লাবে বক্তৃতা করি তাদের নিয়ে এই তালিকা। ক্লাব ছিল পাকিস্তানি সেনাদের জন্য শত্রুপক্ষের ঘাঁটি। তারা মনে করত ক্লাবে আমরা ষড়যন্ত্র করি। শহীদ ড. খায়ের, রফিকুল ইসলাম, সাদউদ্দীন, শহীদুল্লাহ- এই চারজন ক্লাব থেকে পরপর চারবার সেক্রেটারি ছিলেন। তাদের ধরে নিয়ে গেছে। আমার সহকর্মী এবং সহপাঠী আহসানুল হক, উনি ছিলেন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক, তাকেও ধরে নিয়ে গেছে। তাদের ছবি দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করত, এখানে কে কে বক্তৃতা করছে, তার নাম ঠিকানা কী। হানাদারদের বক্তব্য ছিল, ক্লাব সব ষড়যন্ত্রের ঘাঁটি। তারা ক্লাবের ওপর প্রথমে এসে আক্রমণ করেছে। ক্লাবের তিনজন কর্মী ২৫ মার্চের রাতে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিল।

যাই হোক, যেটা বলছিলাম ওরা তালিকা তৈরি করেছিল। ওরা পুলিশের স্পেশাল ব্র্যাঞ্চ অব ইনটেলিজেন্সের কাছে তালিকা দিয়েছে ঠিকানা জোগাড় করার জন্য। পুলিশের বেশির ভাগই ছিল বাঙালি। তারা তো হানাদারদের সঙ্গে কোলাবোরেট করছে না। ওরা যে পুলিশ স্টেশনে গিয়েছিল, সেখানে আমার এক আত্মীয় এসপি ছিলেন। তার ওপরের একজন আমার আত্মীয়কে জানালেন, পাকিস্তান আর্মি লিস্ট পাঠিয়েছে তাদের ঠিকানা ম্যানেজ করতে। আমার আত্মীয় সেই লিস্টে আমার নাম দেখেন চার নম্বরে। উনি এসে আমাকে বলেন, তোমার নাম চার নম্বরে। কাজেই আমি বুঝে ফেলেছি, এখানে আমার নিরাপত্তা নেই। যাই হোক পাকিস্তানি আর্মি পুলিশকে বলছে, ঠিকানা নিয়ে আসতে। পুলিশের সিনিয়ররা আবার ঠিকানা নেয়ার দায়িত্ব দিয়েছিল নিচের লোকদের। নিচের লোকরা আবার ঠিকানা নিতে যাওয়ার ব্যাপারে তেমন উৎসাহী ছিলেন না। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অফিসে গিয়ে আমাদের যে ঠিকানা আছে, সেটা নিয়ে চলে গেছে। আমরা তো ইউনিভার্সিটি চাকরির আবেদনের সময় যে ঠিকানা দিয়েছিলাম, সেটা ছিল রেজিস্ট্রারের অফিসে। আমি যখন দরখাস্ত করেছিলাম, তখন আজিমপুর কলোনিতে ছিলাম আমার বাবার সঙ্গে, সেই ঠিকানা দিয়ে। ওই ঠিকানায় আর্মি গিয়ে এখন পরে আমাকে পাবে? এসব দেখে পরে আর আর্মিরা পুলিশ ইনটেলিজেন্সের ওপর নির্ভর করেনি।

রাহাত মিনহাজ: মুক্তিযুদ্ধের ভেতরে ঢাকা ইউনিভার্সিটি চালু হয়েছিল কবে। আপনারা কি ক্লাস নিতে পারতেন তখন?

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: তখন তো ক্লাস নেয়ার প্রশ্নই আসে না। আমরা যেতাম নাম সই করতে। আমরা এক দিন গিয়ে অনেক দিনের নাম সই করে আসতাম। এক দিনের ঘটনা, ওখানে কয়েকটা বিহারি ছেলে ছিল। আবার কয়েকজন পাকিস্তানপন্থি ছেলে ছিল। তারা সেখানে ঘোরাঘুরি করত। আমরা ক্লাস নিচ্ছি কি নিচ্ছি না, তারা রিপোর্ট করবে এ রকম একটা ভাব। তারা কয়েকজন মিলে আমাকে ধরল, স্যার ক্লাস নেবেন না? প্রহসনের মতো আরকি। তাদের কয়েকজনকে নিয়ে ক্লাসরুমে বসছি। সেখানে দেখি আর্মি এসেছে। আর্মির লোক বন্দুক নিয়ে এসে প্রথমেই জিজ্ঞেস করছে, ক্যায়া নাম হ্যায়? সেদিনই আমি বুঝে ফেললাম, এখানে আর আসা যাবে না। তারপর আমি আর দ্বিতীয় দিন যাইনি ওই দিকে।

আরেকটা খুব ট্র্যাজেডিক ঘটনা ঘটল। আর্মিরা রশিদুল হাসানকে খুঁজতে এসেছে। রশিদুল হাসান খুব স্পষ্টভাষী লোক ছিলেন। বাঙালি জাতীয়তাবাদের ব্যাপারে কথা বলতেন। ওই দালাল ছেলেরা হয়তো তার নামে রিপোর্ট করেছে। আর্মিরা অফিসে এসে খোঁজ করছেন, রশিদুল হাসান কোথায় আছেন? রশিদুল হাসান ওই দিকেই আসছিলেন। আমাদের অফিসের পিয়ন ছিল নুর মোহাম্মদ রফিক, তাকে আর্মির লোকেরা ধরে নিয়ে গেছে রশিদুল হাসানকে খুঁজতে। রশিদুল উল্টোদিক থেকে আসছে। আমাদের পিয়ন তখন ভয়ংকর দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে গেছে। সামনের লোকটাই যে রশিদুল, এটা পাকিস্তান আর্মিকে বলবে কি বলবে না। কারণ বললেই তো তাকে মেরে ফেলবে। আর্মিরাই সরাসরি রশিদুল হাসানকে জিজ্ঞেস করল, ক্যায়া নাম হ্যায়। রশিদুল হাসান নাম বলতেই আর্মিরা তাকে ধরে নিয়ে গেল। রশিদুল হাসানকে সাত দিন রমনা পুলিশ স্টেশনে রেখে দিয়েছিল। এটা একাত্তরের আগস্টের ঘটনা। তারপরে তো শেষ অবধি ১৪ ডিসেম্বর ধরেই নিয়ে গেল।

রাহাত মিনহাজ: ১৬ ডিসেম্বরের সকালটা কেমন ছিল আপনার কাছে?

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: তারা যে আত্মসমর্পণ করবে, এ রকমটা আমরা শুনছি তখন। এটা আমরা ইন্ডিয়ান রেডিওতে শুনেছিলাম। ঢাকার রেডিওতে তেমন কোনো সাড়াশব্দ নেই। রেডিও বন্ধ। বিদেশি রেডিও থেকেও শোনা যাচ্ছে। আমরা টেনশনে আছি। তারপর শোনা গেল পাকিস্তানিরা স্যারেন্ডার করবে। আমরা আর বের হইনি তখন। আশ্চর্যের সঙ্গে দেখলাম যারা রাজাকার ছিল, তারাই মুক্তিযোদ্ধা হয়ে গেছে। তারাই জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছে। এটা ওয়ারী এলাকার ঘটনা। তারাই গাড়ি-বাড়ি লুট করছে। যা যা পাচ্ছে নিয়ে নিচ্ছে। ১৬ ডিসেম্বর আমরা আর বের হলাম না।

রাহাত মিনহাজ: বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘটনাটা, এটা আপনি প্রথম লোকমুখে শুনেছেন নাকি রেডিওতে?

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: এটা প্রথম রেডিওতেই শুনলাম। পাকিস্তান রেডিও থেকেই বোঝা গেল ঘটনাটা। পাকিস্তান রেডিওতে ইয়াহিয়া খানের একটা বক্তব্য প্রচার করা হলো। সেখানে ইয়াহিয়া খান বললেন, আমাদের আর্মি স্যারেন্ডার করছে। সবুর খান একটা বক্তৃতা দিলেন, বেজন্মা একটা রাষ্ট্রের জন্ম হচ্ছে। এ বাস্টার্ড ন্যাশন ইজ বিং বোর্নড। এটা পাকিস্তান রেডিওতে এমনকি টেলিভিশনেও দেখা যাচ্ছে। তবে ইয়াহিয়া খানের বক্তৃতা থেকে বোঝা গেল, তারা আত্মসমর্পণ করেছে।

রাহাত মিনহাজ: আপনি ১৭ ডিসেম্বর সকালের ঘটনা বলছিলেন। ওই দিন কী দেখলেন?

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: ১৭ তারিখে সকালে বের হয়ে অনেক দৃশ্য দেখলাম। আশপাশের সব দোকান লুট হলো। আরেকটা দৃশ্য দেখলাম। গভমেন্ট হাউসে (বর্তমানে প্রেসিডেন্ট ভবন) লুট হলো। লোকজন হাসিখুশি মনে লুট করছে। একজনকে দেখলাম একটা সিঙ্গার মেশিন নিয়ে যাচ্ছে। বিয়ে বাড়িতে যেভাবে উপহার দিতে যায়, ও রকম হাসতে হাসতে যাচ্ছে। চারদিকে এ রকম লুটপাট দেখে মনটা খারাপ হয়ে গেল। হাটখোলার মোড়ে এসে আমাদের তরুণ সহকর্মী আহমদ কামালের সঙ্গে দেখা। সে তখন ইতিহাস বিভাগের লেকচারার। ও ওখানে আমাকে দেখে রিকশা থেকে লাফ দিয়ে নামল। জিজ্ঞাসা করল, স্যার আপনি বাইচ্যা আছেন! আমি তাকে বললাম, কেন, কী হয়েছে। সে বলল, তারা তো অনেককে মেরে ফেলেছে। ১৪ ডিসেম্বরের হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটা তখনই প্রথম শুনলাম। তারপর আস্তে আস্তে জানলাম কাদেরকে ধরে নিয়ে গেছে।

রাহাত মিনহাজ: একটা ভিন্ন প্রসঙ্গে আসি। আপনি শিক্ষকতা করেছেন দীর্ঘদিন। বামপন্থি রাজনীতির প্রতি আপনার বিশেষ অনুরাগ সেটা গোপন নয়। ১৯৭১ সালের ঘটনা প্রবাহে রাশিয়ার একটা বড় ভূমিকা ছিল। এদিকে অন্য বাম শক্তিগুলো বিচ্ছিন্ন ছিল। নানা কারণে তারা একতাবদ্ধ হতে পারেনি। ১৯৭১ সালের বাম শক্তিকে আপনি কীভাবে ব্যাখ্যা করেন?

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: একাত্তরে বামপন্থিরা বিচ্ছিন্ন, বিক্ষিপ্ত ছিল। অনেকেই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি। এখানে চীনের ভূমিকা ছিল। চীনপন্থিরা প্রভাবিত ছিলেন। তাদের সংখ্যা অল্প। কিন্তু এই যে ‘দুই কুকুরের লড়াই’- এ রকম কোনো ইশতেহার আমরা দেখিনি ১৯৭১ সালে। একাত্তর সালে তো আমরা অনেক ইশতেহার পেতাম। সিরাজ সিকদারের ইশতেহার আমি পেয়েছি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কক্ষের ভেতর দিয়ে ঢুকিয়ে দিয়ে যেত। ওই খানে দুই কুকুরের লড়াই-টড়াই এসব কখনো দেখিনি। আমার চোখে পড়েনি।

রাহাত মিনহাজ: একাত্তরের বাম রাজনীতিকে সমালোচনা করার জন্য সিরাজ সিকদারের যে ইশতেহারের কথা বলা হয়, সেটার সত্যতা আপনি খুঁজে পাননি?

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: সিরাজ সিকদারের লিফলেট আমি পেয়েছি। কিন্তু তার কোনো ইশতেহারে এমন লেখা পাইনি। সিরাজ সিকদার ছয় পাহাড়ের কথা বলত। ছয় পাহাড়ের তালিকা দিত। সে একটা তত্ত্বে ছয়টা পাহাড় রূপক অর্থে ব্যবহার করেছিল, যেগুলো বাংলাদেশের ওপর চেপে বসবে। সেই লিফলেট আমি পেয়েছি আমার কক্ষে। সেখানে কোথাও দুই কুকুরের কামড়া-কামড়ি টাইপের কিছু পাইনি।

রাহাত মিনহাজ: ১৯৭১ সালকে নানাজন নানাভাবে ব্যাখ্যা করেন। এই সময়ে আপনি একজন তরুণ শিক্ষক। আপনি বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষের পক্ষের একজন মানুষ। এই প্রেক্ষাপটে থাকার পরও মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশ না নেয়া, রণাঙ্গনে না থাকা- এটা কি আপনাকে কোনো কারণে চিন্তিত করে কি, যুদ্ধ করতে পারলে ভালো হতো?

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: আমরা যুদ্ধে ছিলাম এই অর্থে যে আমরা যুদ্ধের আগেও বিদেশিদের কাছে চিঠিপত্র পাঠিয়েছি। আমরা জানিয়েছি এখানে একটা গণহত্যা হবে। বিবিসির একটা পোস্টাল অ্যাড্রেস ছিল। যুদ্ধের সময় সেই পোস্ট বক্সে আমরা এখানকার ঘটনাপ্রবাহ বিবিসিতে পাঠিয়েছি। আমরা স্থানীয়ভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করেছি। আমাদের অনেকে বর্ডার ক্রস করে চলে গেছেন। তারাও খবর নিচ্ছেন। যোগাযোগটা ছিল। আমরা কিন্তু পার্টিসিপেট করছি। হয় কোলাবোরেশন, নয় পার্টিসিপেশন- এর মাঝখানে তো কোনো অবস্থা ছিল না। আমরা পার্টিসিপেশন করেছি।

রাহাত মিনহাজ: ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, আপনার স্মৃতি, বাংলাদেশের স্বাধীন হওয়া, পরবর্তীতে বাংলাদেশের বিভিন্ন দিকে চলে যাওয়া- এই সার্বিক বিষয়ে আপনার যদি কোনো মন্তব্য থাকে?

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: আমাদের স্বপ্ন ছিল এই রাষ্ট্রটা একটা গণতান্ত্রিক হবে। পাকিস্তান কিন্তু গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ছিল না। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নিয়ে আমাদের যে ধারণা, সমাজতান্ত্রিক না হলে গণতান্ত্রিক হওয়া যায় না। মানে পুঁজিবাদীরাও গণতন্ত্র করে, বুর্জোয়া গণতন্ত্র। কিন্তু আমরা একটা সমাজতন্ত্রের কথা ভাবছি। এ জন্য আমাদের সেমিনারেও (২৩ মার্চ ১৯৭১) ওই কথাটাই এসেছে। আমরা কিন্তু একটা সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশের কথাই ভাবছি। কিন্তু যেটা ঘটল, সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশ হলো না। পুঁজিবাদী বাংলাদেশ হলো। পাকিস্তানিরা ওদের স্বার্থে যে পুঁজিবাদী ব্যবস্থাটা করেছিল, সেই ব্যবস্থাটা কিন্তু ভাঙল না। রাষ্ট্র চরিত্রগতভাবে আগের মতোই থেকে গেল। অর্থনৈতিকভাবে যে উন্নয়নটা হলো সেটা পুঁজিবাদী উন্নয়ন। বাংলাদেশে আরেকটা পুঁজিবাদী রাষ্ট্র তৈরি হলো। আমরা এখন দেখি সম্পদ পাচার হচ্ছে। এটা তো আগে থেকেই চলে আসছে। মোগলরা সম্পদ দিল্লিতে নিত, ব্রিটিশরা লন্ডনে নিত, পাকিস্তানিরা করাচিতে নিত। এখন বাঙালি ধনীরা তারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সম্পদ নিয়ে যাচ্ছে। দরিদ্র রয়ে গেছি আমরা। ঐতিহাসিকভাবে দেখলে প্রথমে ব্রিটিশ উপনিবেশন, পরে পাকিস্তানি উপনিবেশ। এখন বাংলাদেশে ধনীদের একটা উপনিবেশ তৈরি হচ্ছে। তাদের মধ্যে দেশপ্রেম নেই। দেশপ্রেমের ভবিষ্যৎ আছে বলে তারা মনে করে না। তারা এখানকার সম্পদগুলো যেভাবে পারে বিদেশে পাচার করছে।


এলপিজি সিলিন্ডার ১ হাজার টাকার মধ্যে হওয়া উচিত : জ্বালানি উপদেষ্টা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মোহাম্মদ ফওজুল কাবির খান বলেছেন, দেশের স্বল্পমেয়াদি জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় এলপিজির দাম নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত জরুরি। বর্তমানে সিলিন্ডারের বাজার মূল্য ১২০০ টাকার বেশি হওয়ায় শিল্প ও গৃহস্থালি ব্যবহারকারীরা যথাযথ সুবিধা পাচ্ছেন না। অথচ এর দাম ১ হাজার টাকা মধ্যে হওয়া উচিত।

শনিবার (১১ অক্টোবর) রাজধানীর প্যানপ্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের গ্র্যান্ড বলরুমে দৈনিক বণিক বার্তা আয়োজিত ‘বাংলাদেশে এলপিজি : অর্থনীতি, পরিবেশ ও নিরাপত্তা’ শীর্ষক পলিসি কনক্লেভে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

উপদেষ্টা বলেন, এলপিজির প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো দাম। বর্তমানে ১২০০ টাকা দামের সিলিন্ডার কিছু ক্ষেত্রে বাজারে ১৪০০–১৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাই দামের নিয়ন্ত্রণ, লজিস্টিক উন্নয়ন এবং প্রাইভেট সেক্টরের কার্যকারিতা বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি। দায়িত্বশীল ব্যবসায়িক মনোভাব ছাড়া দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।

তিনি আরও বলেন, দেশের প্রাথমিক জ্বালানির ঘাটতি কোনো স্বাভাবিক সংকট নয়। এটি একটি পরিকল্পিত অবস্থার ফল, যা ক্ষমতাসীন কিছু রাজনীতিবিদ ও তাদের সহযোগী ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর কারণে তৈরি হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন ও গ্যাস লাইনের পরিকল্পনায় গ্যাস সরবরাহের চাহিদা উপেক্ষা করা হয়েছে, ফলে শিল্প ও গৃহস্থালিতে বিপুলসংখ্যক অবৈধ সংযোগও হয়েছে।

ফওজুল কাবির খান বলেন, স্থানীয় গ্যাস উৎপাদন প্রতিবছর কমছে। প্রতিবছর প্রায় ২০০ মিলিয়ন কিউবিক ফুট উৎপাদন কমছে, কিন্তু আমরা মাত্র ৭০ মিলিয়ন কিউবিক ফুট নতুন গ্যাস সংগ্রহ করতে পেরেছি। এজন্য এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে, যদিও এর উচ্চমূল্যের কারণে সমালোচনা হচ্ছে।

তিনি বলেন, এলএনজি আমদানিতে দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া প্রয়োজন, তাই স্বল্পমেয়াদে ঘাটতি মোকাবিলায় এলপিজি কার্যকর বিকল্প হতে পারে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান এবং সম্মানিত অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ।


ভারতের ৯ প্রতিষ্ঠান ও ৮ ব্যক্তির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

ইরানের ওপর সর্বোচ্চ অর্থনৈতিক চাপ প্রয়োগের অব্যাহত চেষ্টার অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের ৯ প্রতিষ্ঠান ও দেশটির আট ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। অভিযোগ করা হয়েছে, এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ইরানি তেল, পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য এবং পেট্রোকেমিক্যাল বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত।

গত বৃহস্পতিবার ঘোষিত এ সর্বশেষ পদক্ষেপে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর প্রায় ৪০ ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও জাহাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এদের বিরুদ্ধে ইরানি পেট্রোলিয়াম ও পেট্রোকেমিক্যাল পণ্যের বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।

একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীন ‘অফিস অব ফরেন অ্যাসেটস কন্ট্রোল (ওএফএসি)’ ইরান থেকে বিদেশি ক্রেতাদের কাছে তেল ও তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) পরিবহনে সহায়তা করার অভিযোগে আরও ৬০ ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও জাহাজকে কালোতালিকাভুক্ত করেছে। চীন ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ আরও কয়েকটি দেশের প্রতিষ্ঠানও এ তালিকায় রয়েছে।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে ৮ ভারতীয় রাসায়নিক ও পেট্রোকেমিক্যাল বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান। এগুলো হলো মুম্বাইভিত্তিক সিজে শাহ অ্যান্ড কো, কেমোভিক, মোডি কেম, পারিকেম রিসোর্সেস, ইনডিসল মার্কেটিং, হরেশ পেট্রোকেম, শিভ টেক্সকেম এবং দিল্লিভিত্তিক বিকে সেলস করপোরেশন।

পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, গত কয়েক বছরে এসব প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞাধীন ইরানি উৎস থেকে শত শত মিলিয়ন ডলার মূল্যের পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য আমদানি করেছে।

পররাষ্ট্র দপ্তরের এ তালিকায় আরও রয়েছেন পাঁচ ভারতীয় নাগরিক—কেমোভিকের পরিচালক পিয়ূষ মাগনলাল জাভিয়া, ইনডিসল মার্কেটিংয়ের পরিচালক নীতি উনমেশ ভাট এবং হরেশ পেট্রোকেমের পরিচালক কমলা কাসাত, কুনাল কাসাত ও পুনম কাসাত।

ওএফএসির তালিকায় আরও তিন ভারতীয়—বরুণ পুলা, আয়াপ্পান রাজা ও সোনিয়া শ্রেষ্ঠার নাম রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা ইরানি এলপিজি পরিবহনকারী জাহাজগুলোর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

ওএফএসি জানিয়েছে, মুম্বাইভিত্তিক শিপিং প্রতিষ্ঠান ‘ভেগা স্টার শিপ ম্যানেজমেন্ট’ সোনিয়া শ্রেষ্ঠার মালিকানাধীন। এটির মালিকানাধীন কমোরোস পতাকাবাহী ‘নেপটা’ নামের জাহাজ ইরানি উৎসের এলপিজি পাকিস্তানে পরিবহন করেছে।

ওএফএসির পদক্ষেপ নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয় ইরানের জ্বালানি রপ্তানি কাঠামো ভেঙে দিয়ে দেশটির নগদ অর্থের প্রবাহ দুর্বল করছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নেতৃত্বে এই প্রশাসন ইরানি শাসনের সেই ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করছে, যার মাধ্যমে তারা যুক্তরাষ্ট্রকে হুমকি দেওয়া ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে’ অর্থায়ন করে থাকে।

সূত্র:দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস


ফেব্রুয়ারির নির্বাচন সুষ্ঠু নিরপেক্ষ করতে সরকার বদ্ধপরিকর: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

আগের তুলনায় দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে। সাভারে এমনটা দাবি করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

শুক্রবার বিকালে ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় বঙ্গবন্ধু রোডে বোধিজ্ঞান ভাবনা (বৌদ্ধ বিহার) কেন্দ্রে কঠিন চিবরদান উৎসবে যোগ দিয়ে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি এ দাবি করেন। এসময় তিনি আরো বলেন, দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বর্তমানে উন্নতি রয়েছে, যা ঢাকার এক সাংবাদিক নিজেই দাবি করে জানিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, উপদেষ্টাদের সেফ এক্সিট প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, অনেকেই অনেক কথা বলতে পারেন, প্রশ্ন তো আর থামানো যায় না। তিনি আরো বলেন, বর্তমান সরকার আগামী ফেব্রুয়াারিতে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছে। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে বর্তমান সরকার বদ্ধপরিকর।

বাংলাদেশ বৌদ্ধ ভিক্ষু মহাসভার উপ-সংঘনায়কের সভাপতি রতনশ্রী মহাথেরের সভাপতিত্বে উৎসবে বক্তব্য রাখেন এইএস-এর এমডি শুভাশীষ চাকমা, আশুলিয়ার আলিফ গার্মেন্টের চেয়ারম্যান আকতার হোসেন রানা, ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল দিদারুর আলম, ব্রি. জে. মো. তানভীর ইকবাল, সাবেক অতিরিক্ত সচিব প্রশান্ত ভুষন বড়ুয়া ও ঢাকায় নিযুক্ত শ্রীলংকার হাইকমিশনার ধর্মপাল বিরাককোড প্রমুখ।


‘আমাদের কাজ শেষ হয়নি’ দেশে ফিরে বললেন শহিদুল আলম

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

গাজার দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াতে ভূমধ্যসাগর হয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে বিশ্বের ১৪৪ বিশিষ্টজনের সঙ্গে আটক বাংলাদেশি আলোকচিত্রী শহিদুল আলম কারামুক্ত হয়ে দেশে ফিরেছেন। শনিবার ভোর ৪টা ৫৫ মিনিটে তাঁকে বহনকারী বিমানটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। বিমানবন্দরে তাঁকে ফুল দিয়ে বরণ করেন তাঁর সহকর্মী ও পরিবারের সদস্যরা।

ইসরায়েলি কারাগার থেকে মুক্তির পর শুক্রবার দুপুরে টার্কিশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে তিনি তুরস্কের ইস্তাম্বুলে পৌঁছান। পরে তিনি দেশের উদ্দেশে রওনা করেন।

বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ দিয়ে ভোর ৫টার পর তিনি বের হয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। এ সময় ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের জাহাজ বহরে তাঁর যাত্রার বর্ণনা দেন। তিনি বলেন, ‘গাজার মানুষ এখনও আক্রান্ত। এখনও তাদের ওপর নির্যাতন চলছে। সেটা যতক্ষণ পর্যন্ত বন্ধ না হয়, আমাদের কাজ শেষ হয়নি।’

তিনি বলেন, আমি অনেক মানুষকে ধন্যবাদ জানাবো। বাংলাদেশি যারা সারা পৃথিবী থেকে সাড়া দিয়েছে, দোয়া করেছে, ভালোবাসা পাঠিয়েছে তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।

ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের জাহাজবহরের সবচেয়ে বড় নৌযান দ্য কনশায়েন্সে ছিলেন শহিদুল আলম। তাঁর সঙ্গে ওই বহরের আরও ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিক, সমাজকর্মী, মানবাধিকারকর্মী আটক হন। এরই মধ্যে কয়েকজনকে মুক্তি দিয়েছে ইসরায়েল। তবে ওই জাহাজের ক্যাপ্টেন অস্ট্রেলীয় নারী মেডেলেইন হাবিবকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ইসরায়েলের মরুভূমির কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। স্থানীয় সময় বেলা ২টা ২৫ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫টা ২৫ মিনিট) শহিদুল আলমকে বহনকারী ফ্লাইটটি ইস্তাম্বুল বিমানবন্দরে অবতরণ করে। ইস্তাম্বুলে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল মো. মিজানুর রহমান বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানান। পরে ইস্তাম্বুলের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে টার্কিশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে তিনি ঢাকার উদ্দেশে রওনা করেন।

আলোকচিত্রী শহিদুল আলম স্বাধীন মিডিয়া প্রতিষ্ঠান দৃকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। নাগরিক অধিকার নিয়েও সোচ্চার তিনি। গাজা অভিমুখী একটি নৌবহরে অংশ নিয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে আটক হন। ইসরায়েলের নৃশংসতা বন্ধ ও গাজায় নৌ অবরোধ ভাঙার প্রত্যয় নিয়ে ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের গাজামুখী নৌযাত্রায় তিনি অংশ নেন।

ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধের দাবিতে আত্মপ্রকাশ করা আরেক উদ্যোগ ‘থাউজেন্ড ম্যাডলিনস টু গাজা’র আটটি নৌযানও এ যাত্রায় অংশ নেয়। ৯টি নৌযানের এ বহরে বিভিন্ন দেশের রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, চিকিৎসক ও অধিকারকর্মীরা যোগ দিয়েছিলেন। সেই দলে ছিলেন আলোকচিত্রী শহিদুল আলম।

বুধবার ওই নৌবহরে আক্রমণ করে সব অধিকারকর্মী ও নাবিককে ধরে নিয়ে যায় ইসরায়েলি সেনারা। পরে শহিদুল আলমসহ আটক অনেককে ইসরায়েলের মরুভূমির কুখ্যাত কেৎজিয়েত কারাগারে নেওয়া হয়। ইসরায়েলে আটক হওয়ার পর থেকেই শহিদুল আলমের মুক্তি নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকার জর্ডান, মিসর ও তুরস্কের মাধ্যমে কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে আসছিল।

শহিদুল আলমের মুক্তি ও ইসরায়েল থেকে তাঁর প্রত্যাবর্তনে সাহায্য করার জন্য তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।


নোবেল জেতার স্বপ্নভঙ্গ ট্রাম্পের

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

নোবেল শান্তি পুরস্কারের স্বপ্নটা এবারও পূরণ হলো না মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের। শেষ এক বছরে বিশ্বজুড়ে একাধিক সংঘাত রুখে দিয়েছেন, এমন দাবি করে নিজেকে নোবেলের দাবিদার হিসেবে ঘোষণা করে আসছিলেন দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় আসা এই রাজনীতিক।
এ বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন ভেনিজুয়েলার বিরোধী নেতা মারিয়া কোরিনা মাচাদো। ভেনিজুয়েলার জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় মাচাদোর নিরলস কাজ ও দেশটিতে একনায়কতন্ত্র থেকে ন্যায্য ও শান্তিপূর্ণ পরিবর্তনের সংগ্রামের স্বীকৃতি হিসেবে তাকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরেই ট্রাম্প নোবেল পুরস্কার পাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে আসছেন। তিনি মনে করেন, বিশ্বজুড়ে সংঘাত কমাতে তার ভূমিকা বড়। বৃহস্পতিবার এক বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘তারা যা করবে, সেটা তাদের বিষয়। আমি একটাই কথা জানি—আমি এসব কিছু পুরস্কারের জন্য করিনি। আমি করেছি, কারণ আমি অনেক মানুষের জীবন বাঁচিয়েছি।’
২০২৫ সালের জন্য মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ছিল ১ ফেব্রুয়ারি। ট্রাম্পের কিছু মনোনয়ন সেই সময়সীমার পর জমা পড়ায় সেগুলো বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। নিউইয়র্কের রিপাবলিকান প্রতিনিধি ক্লডিয়া টেনি ডিসেম্বরে তাকে মনোনীত করেছিলেন ২০২০ সালে ইসরায়েল ও কয়েকটি আরব দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’ চুক্তির মধ্যস্থতার জন্য।
ট্রাম্প ও তার সমর্থকেরা অবশ্য এই সিদ্ধান্তকে তার প্রতি ‘ইচ্ছাকৃত উপেক্ষা’ হিসেবে দেখছেন। তাদের দাবি, ট্রাম্প ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রথম দেওয়া হয় ১৯০১ সালে। আলফ্রেড নোবেল তার উইলে উল্লেখ করেছিলেন, এই পুরস্কার দেওয়া হবে এমন কাউকে, যিনি জাতির মধ্যে ভ্রাতৃত্ব স্থাপন, নিরস্ত্রীকরণ বা শান্তি প্রতিষ্ঠায় সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছেন।
ট্রাম্প ওবামার নোবেল জয় নিয়েও কটাক্ষ করে বলেন, ‘সে কিছুই না করেই পুরস্কার পেয়েছিল। তারা ওবামাকে পুরস্কার দিয়েছে দেশের ক্ষতি করার জন্য।’
ট্রাম্প দাবি করেন, তিনি সাতটি যুদ্ধ শেষ করেছেন। তবে তার দাবি নিয়ে বিতর্ক আছে, কারণ এর বেশ কিছু সংঘাত কেবল উত্তেজনা কমানো পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিল।
ইসরায়েল ও হামাসের যুদ্ধ থামাতে কিছু অগ্রগতি হলেও পুরো যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়েও ট্রাম্পের দাবিগুলো এখনো বাস্তবে প্রমাণিত হয়নি।
গত আগস্টে তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে আলাস্কায় বৈঠকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, কিন্তু ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে ডাকেননি। বৈঠক ব্যর্থ হয়, ২০২২ সালে শুরু হওয়া যুদ্ধ এখনো শেষ করা সম্ভব হয়নি।
ট্রাম্প আন্তর্জাতিক শান্তির কথা বললেও, নিজ দেশে তার প্রশাসন বিভক্ত ও অশান্ত। তিনি অভিবাসীদের বহিষ্কারে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অভিযান শুরু করেছেন। বিরোধীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ক্ষমতা ব্যবহার করছেন। অপরাধ নিয়ন্ত্রণের নামে সেনাবাহিনীও নামিয়েছেন মার্কিন শহরগুলোতে।
এছাড়া ট্রাম্প প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নিয়েছেন, যা জলবায়ু রক্ষায় বৈশ্বিক প্রচেষ্টায় বড় ধাক্কা দেয়। তিনি বাণিজ্যযুদ্ধে জড়িয়েছেন নানা দেশের সঙ্গে, আর নিজের ইচ্ছা চাপিয়ে দিতে শুল্কনীতিকে ব্যবহার করেছেন অস্ত্র হিসেবে।
এ বছর ট্রাম্পের নাম প্রস্তাব করেছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত ও পাকিস্তান সরকারও। তারা সবাই দাবি করেছিলেন, ট্রাম্প তাদের অঞ্চলে শান্তি স্থাপনে ভূমিকা রেখেছেন। তবে এসব মনোনয়নও সময়সীমার পর জমা পড়ায় বিবেচনায় নেওয়া হয়নি।
অবশেষে পুরস্কার গেল মাচাদোর হাতে—যিনি দীর্ঘদিন ধরে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে আসছেন এবং নিজের দেশকে গণতন্ত্রের পথে ফেরানোর লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।


বাজারে উত্তাপ কোনোভাবেই কমছে না

*সবজির বাজার চড়া, স্বস্তি নেই মাছ-মুরগিতেও
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

নিত্যপণ্যের বাজারে উত্তাপ যেনো কোনোভাবেই কমছে না। সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে রয়েছে জিনিসপত্রের দাম। বাজার সিন্ডিকেট গত কয়েক মাস ধরে আবারও সক্রিয় বলে নিত্যপণ্যের এমন দাম বলে জানা যায়। তারমধ্যে গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে সবজির বাজার আকাশছোঁয়া। হাতে গোনা কয়েকটি বাদে সব সবজির দাম প্রতি কেজি ৮০ টাকা থেকে ১০০ টাকার ওপরে। আবার যেসব সবজির দাম কিছুটা কমে ছিল, তার মধ্যে বেশ কয়েকটির দাম নতুন করে বেড়েছে। তবে হুট করেই বেড়ে যাওয়া কাঁচামরিচের দাম অনেকটাই কমেছে। অপর দিকে বেড়ে গেছে মুরগি ও মাছের দাম।
গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজারঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে। আকাশছোঁয়া সবজির দামের কারণে বাজারে স্বস্তি ফিরছে না। স্বল্প আয়ের মানুষেরা হাঁসফাঁস করছেন। প্রতিনিয়তই তাদের মেলাতে হচ্ছে নিজেদের আয়-ব্যয়ের হিসাব। কথায় কথায় এক ক্রেতা বলেন, ‘কোনও কিছু যদি আগে দুই কেজি কিনতাম সেটা এখন কিনি এক কেজি। কারণ দুই কেজি কেনার পয়সা আমার নাই। এটাই সত্য। উচ্চ বাজারমূল্য প্রতিদিন আমার মতো সাধারণ মানুষের ওপর চাপ তৈরি করছে।’
বাজারে প্রতিকেজি ভারতীয় টমেটো ১৪০ টাকা, দেশি গাজর ৮০ টাকা, চায়না গাজর ১৩০-১৪০ টাকা, লম্বা বেগুন ১০০ টাকা, সাদা গোল বেগুন ১২০-১৪০ টাকা, কালো গোল বেগুন ১৮০ টাকা, শিম ২৬০ টাকা, দেশি শসা ১০০ টাকা, উচ্ছে ১০০ টাকা, করলা ১০০ টাকা, কাঁকরোল ১০০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৮০-১২০ টাকা, পটোল (হাইব্রিড) ৮০ টাকা, দেশি পটোল ১৪০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০ টাকা, ধুন্দল ১০০ টাকা, ঝিঙা ১০০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, কচুর লতি ৮০ টাকা, মুলা ৮০ টাকা, কচুরমুখী ৮০ টাকা, কাঁচামরিচ ২৪০ টাকা, ধনেপাতা (মানভেদে) ৩০০ টাকা, শসা (হাইব্রিড) ৭০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। আর মানভেদে প্রতিটি লাউ ৮০-১২০ টাকা, চালকুমড়া ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর এক হালি কাঁচা কলা ৪০-৫০ টাকা। এছাড়া এক হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকা করে।
এ ক্ষেত্রে দেখা যায়, কেজিতে ভারতীয় টমেটো, চায়না গাজর, সাদা গোল বেগুন, কালো গোল বেগুন, শিম, দেশি শসা, ঢ্যাঁড়স, দেশি পটোল, ধুন্দলের দাম ২০ টাকা করে বেড়েছে। কেজিতে ১০ টাকা করে বেড়েছে শসার (হাইব্রিড) দাম। আর কেজিতে ২০ টাকা করে কমেছে মুলা ও কচুরমুখীর দাম। এছাড়া অন্যান্য সবজির দাম রয়েছে অপরিবর্তিত।
এছাড়া হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়া কাঁচা মরিচের দাম আজ প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। সপ্তাহখানেক আগে কাঁচা মরিচের দাম ছিল ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি। কোথাও ছিল ৪০০ টাকা। গতকাল কাঁচামরিচের নেমে এসেছে ২৪০ টাকায়।
এদিকে সবজির দাম বাড়ার পেছনে বৃষ্টি ও ঋতুর পরিবর্তনকে কারণ হিসেবে দেখিয়েছেন বিক্রেতারা। তারা বলেন, ‘অসময়ে বৃষ্টি হওয়ার ফলে সবজির দাম বেড়েছে। এছাড়া একটা সিজন থেকে আরেকটা সিজন আসছে। এরকম সিজন পরিবর্তন হলে চলে যাওয়া সিজনের সবজির দাম বাড়তি থাকে।’
এদিকে বাজারে বেড়েছে ক্রস পেঁয়াজ, চায়না আদার দাম। এছাড়া কমেছে বগুড়ার আলু, দেশি ও চায়না রসুনের দাম। আকার ও মানভেদে ক্রস জাতের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০-৮৫ টাকায়। এর মধ্যে ছোট পেঁয়াজ ৭০ টাকা ও বড় সাইজের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা করে। দেশি পেঁয়াজ ৮০ টাকা, লাল আলু ২৫ টাকা, সাদা আলু ২৫ টাকা, বগুড়ার আলু ৩০-৩৫ টাকা, দেশি রসুন ৮০-১০০ টাকা, চায়না রসুন ১৩০-১৪০ টাকা, চায়না আদা ১৮০-২০০ টাকা, ভারতীয় আদা মানভেদে ১৬০-১৮০ কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
সপ্তাহ দুয়েক আগে কিছুটা কম থাকলেও গতকালকে আবার বেড়েছে মুরগির মাংসের দাম। এদিন বাজারে বয়লার, কক, লেয়ার ও দেশি মুরগির দাম বেড়েছে। এসব মুরগির দাম বেড়েছে কেজিতে ৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত।
বাজারে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৮০ টাকা কেজি দরে। খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১২০০ টাকা কেজি দরে। বয়লার মুরগি ১৭৫-১৮৫ টাকা, কক মুরগি ২৮০-২৯০ টাকা, লেয়ার মুরগি ৩০০ টাকা, দেশি মুরগি ৫৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি ডজন মুরগির লাল ডিম ১৩০ টাকা এবং সাদা ডিম ১২০ টাকা, হাঁসের ডিম ১৮০-২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে প্রতি কেজিতে বয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ৫-১২ টাকা, কক মুরগির দাম বেড়েছে ২০ টাকা, লেয়ার মুরগির দাম বেড়েছে ২০ টাকা এবং দেশি মুরগির দাম বেড়েছে ২০ টাকা করে। এছাড়া অন্যান্য মাংস ও ডিমের দাম রয়েছে অপরিবর্তিত।
এছাড়া বাজারে আকার ও ওজন অনুযায়ী রুই মাছ ৪০০-৭০০ টাকা, কাতল মাছ ৩০০-৬০০ টাকা, কালিবাউশ ৪০০-৭০০ টাকা, চিংড়ি মাছ ৮০০-১৪০০ টাকা, কাচকি মাছ ৪০০-৫০০ টাকা, কৈ মাছ ২৫০-১২০০ টাকা, পাবদা মাছ ৪০০-৬০০ টাকা, শিং মাছ ৪০০-১২০০ টাকা, টেংরা মাছ ৬০০-১০০০ টাকা, বেলে মাছ ১০০০-১২০০ টাকা, মেনি মাছ ৬০০-৮০০ টাকা, বোয়াল মাছ ৭০০-১২০০ টাকা, রূপচাঁদা মাছ ১০০০-১৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।


অতিবৃষ্টির কারণে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে

এবারের ভয়াবহতা ২০১৯ সালের মতো হওয়ার আশঙ্কা
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

বিগত বছরগুলোর চেয়ে চলতি বছরে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে। গত তিন মাসের তুলনায় এ মাসের ৯ দিনে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বেশি। ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুর রিপোর্ট বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রতি মাসে ডেঙ্গুতে আক্রন্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে দেশে ‘এই রোদ, এই বৃষ্টি’- এমন অস্থিতিশীল আবহাওয়া এডিস মশার বিস্তারে খুবই সহায়ক। এ কারণে ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা বেড়েছে। রোগী বাড়লে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ে।
এবারের ভয়াবহতা ২০১৯ সালের মতো হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
চলতি বছরে ডেঙ্গুরোগী বাড়তে শুরু করে মে থেকে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, জুন মাসে ৫হাজার ৯৫১ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। মৃত্যু হয় ১৯ জনের। জুলাই মাসে ১০ হাজার ৬৮৪ জন ডেঙ্গুরোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। মৃত্যু হয় ৪১ জনের। আগস্ট মাসে ভর্তি হয়েছেন ১০ হাজার ৪৯৬ জন। মৃত্যু হয়েছে ৩৯ জনের। সেপ্টেম্বর মাসে ১৫ হাজার ৮৬৬ জন ডেঙ্গুরোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। এ মাসে মৃত্যু হয় ৭৬ জনের। অক্টোবর মাসে মাত্র ৯ দিনে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ৫৪৩ জন। মৃত্যু হয়েছে ২৬ জনের।
এদিকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত একদিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৩০৮ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে এ সময়ে নতুন করে কারও মৃত্যু হয়নি। ফলে চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা ২২৪ জনে অপরিবর্তিত রইল।
গতকাল শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ৩০৮ জন ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে বরিশাল বিভাগে ১১৫ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৮৫ জন, ঢাকা উত্তর সিটিতে ৪৭ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ৪০ জন ও ময়মনসিংহ বিভাগে ২১ জন ভর্তি হয়েছেন।
এ বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সবমিলিয়ে ৫৩ হাজার ১৯৩ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, থেমে থেমে বৃষ্টিতে বিভিন্ন স্থানে পানি জমে যায়। রাস্তায় কিংবা বাসাবাড়ির আনাচে-কানাচে পড়ে থাকা পলিথিন, বিভিন্ন খাবারের প্যাকেট, ডাবের খোসাসহ বিভিন্ন আধারে পানি জমে যায়। এখন সেখান থেকেই এডিস মশার বিস্তার হচ্ছে।
জাহাঙ্গীর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, মাঝে ডেঙ্গুর প্রকোপ কিছু কম ছিল। বৃষ্টির কারণে এখন বাড়ছে। অক্টোবরেও বাড়বে।
তিনি বলেন, ২০২৩ সালের মতো পরিস্থিতি না হলেও ২০১৯ সালের মতো হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০১৯ সালে ১ লাখ ১ হাজার ৩৭৪ জন আক্রান্তের মধ্যে ১৬৪ জনের মৃত্যু হয়। চলতি বছরের এখন (৯ অক্টেবার) পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫২ হাজার ৮৮৫ জন।
মৃত্যু হয়েছে ২২৪ জনের। এবার ১৯ সালের মতো আক্রান্ত না হলেও বছরের ৯ মাসে মৃত্যু প্রায় তখনকার সমান।
২০২১ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন ২৮ হাজার ৪২৯ জন। মৃত্যু হয় ১০৫ জনের। ২০২২ সালে ৬২ হাজার ৩৮২ জন আক্রান্ত হন। মৃত্যু হয় ২৮১ জনের। ২০২৩ সালে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে। সে বছর আক্রান্ত হন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন। মৃত্যু হয় ১ হাজার ৭০৫ জনের। ২০২৪ সালে ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন আক্রান্তের মধ্যে ৫৭৫ জনের মৃত্যু হয়। ২০২৫ সালে এখন পর্যন্ত আক্রন্ত হয়েছে ৫২ হাজার ৮৮৫ জন আক্রন্ত ও ২২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
বয়সভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, এই বছর সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সীরা।
এ সংখ্যা প্রায় ৯ হাজার ৫০০। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ বয়সসীমার মানুষ কর্মজীবী ও চলাফেরায় বেশি সক্রিয় হওয়ায় তারা বেশি মশার সংস্পর্শে আসছেন।
ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, সারাদেশে যদি ছাত্রদের অংশগ্রহণে পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করা যেত, তাহলে হয়তো একটা দৃশ্যমান পরিবর্তন আসত। সে ধরনের কিছু হচ্ছে না। বাসাবাড়িতে ফুলের টবে যাতে পানি জমে না থাকে, সে দিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. মঈনুল আহসান জ্বর হওয়ার সাথে সাথে সবাইকে ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘সকল জ্বরের রোগীকে জ্বর হওয়ার সাথে সাথে নিকটস্থ হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষা করানো এবং ডেঙ্গুরোগ শনাক্ত হলে অনতিবিলম্বে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।’


ইসলামী আন্দোলনের ফয়জুল করীমকে লিগ্যাল নোটিশ

কোরআন অবমাননার অভিযোগ
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

পবিত্র কোরআনের অবমাননা এবং আপত্তিকর মন্তব্য করায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিমকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। দৈনিক আল ইহসান পত্রিকার প্রতিবেদক মুহম্মদ আরিফুর রহমানের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট শেখ ওমর শরীফ এ নোটিশ দেন। নোটিশ প্রাপ্তির তিন দিনের মধ্যে এ ধরনের মন্তব্যের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ভবিষ্যতে এ ধরনের মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়। অন্যথায় তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে।
লিগ্যাল নোটিশে বলা হয়, গত ৬ অক্টোবর ইউটিউবে ‘চরমোনাই দর্পণ’ চ্যানেলে পোস্ট করা একটি ভিডিও ক্লিপে দেখা যায়, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির সৈয়দ ফয়জুল করিম পবিত্র কোরআন নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেন।
সেই বক্তব্যে ফয়জুল করিম বলেছিলেন, ‘শুধু কুরআন কিচ্ছু না’ এবং ‘শুধু কুরআন কোরআন, এর মধ্যে শুভঙ্করের ফাঁকি’।
নোটিশে বলা হয়, ফয়জুল করিমের এসব মন্তব্য পবিত্র কোরআনুল কারীমের মর্যাদা ও পবিত্রতার পরিপন্থি এবং মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে। কোরআন একটি পূর্ণাঙ্গ ও স্বয়ংসম্পূর্ণ দিকনির্দেশনামূলক গ্রন্থ, যার প্রতি অবমাননাকর মন্তব্য করা বাংলাদেশের সংবিধান ও দণ্ডবিধি অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ।
নোটিশে আরও বলা হয়, নোটিশ পাওয়ার তিনদিনের মধ্যে ফয়জুল করিমকে সুস্পষ্ট বিবৃতি দিয়ে তার উল্লেখিত মন্তব্যগুলো প্রত্যাহার করতে হবে এবং নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। ভবিষ্যতে ধর্ম অবমাননামূলক মন্তব্য আর করবেন না- এমন প্রতিশ্রুতি দিতেও আহ্বান জানানো হয়েছে। অন্যথায় আইনের আশ্রয় নেওয়া হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।


ইস্তাম্বুল পৌঁছেছেন আলোকচিত্রী শহিদুল আলম

ইস্তাম্বুলে বিমানবন্দরে শহিদুল আলমকে স্বাগত জানান বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। ছবি : বাসস
আপডেটেড ১০ অক্টোবর, ২০২৫ ২০:৪৩
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

ইসরায়েল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তার্কিশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ইস্তাম্বুলে পৌঁছেছেন বিশিষ্ট আলোকচিত্রী ও মানবাধিকার কর্মী শহিদুল আলম। শুক্রবার বিকেলে ফ্লাইটটি ইস্তাম্বুল বিমানবন্দরে অবতরণ করে।

ইস্তাম্বুলে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বিমানবন্দরে শহিদুল আলমকে স্বাগত জানান। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এক বার্তায় এ তথ্য জানিয়েছে।

শহিদুল আলমের মুক্তি ও প্রত্যাবর্তনে তুরস্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তার নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের পুরো প্রক্রিয়াটি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে বাংলাদেশ সরকার।

শহিদুল আলমের মুক্তি ও ইসরায়েল থেকে তাঁর প্রত্যাবর্তনে সহায়তা করায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।সূত্র : বাসস


টাইমের ‘শ্রেষ্ঠ উদ্ভাবন ২০২৫’-এ স্থান পেল আইসিডিডিআর,বি’র অন্ত্র-সুস্থকারী খাবার

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

বিশ্বখ্যাত টাইম সাময়িকী তাদের মর্যাদাপূর্ণ ‘টাইম শ্রেষ্ঠ উদ্ভাবন ২০২৫’ তালিকায় ‘সামাজিক প্রভাব’ বিভাগে অন্তর্ভুক্ত করেছে অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের অন্ত্রের স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারকারী বিশেষ সম্পূরক খাবার এমডিসিএফ-২। এটি আইসিডিডিআর,বি এবং যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট লুইসের ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির দীর্ঘদিনের যৌথ গবেষণার ফল।

এমডিসিএফ অর্থ হলো মাইক্রোবায়োটা ডিরেক্টেড কমপ্লিমেন্টারি ফুড, যা একটি বিশেষ ধরনের সম্পূরক খাবার, যা অন্ত্রের উপকারী জীবাণুগুলোকে উদ্দীপ্ত করে শিশুদের সুস্থ বিকাশে সহায়তা করে।

বিগত বছরগুলোতে কিছু অগ্রগতি হলেও, বিশ্বজুড়ে পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুদের মৃত্যুর প্রায় অর্ধেকের জন্য অপুষ্টি দায়ী। যুদ্ধ, বাস্তুচ্যুতি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এই সমস্যা আরও ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে, ফলে কোটি কোটি শিশু খর্বতা ও কৃশতার ঝুঁকিতে রয়েছে।

এমডিসিএফ-২ তৈরি হয়েছে ছোলা, সয়াবিন, চিনাবাদাম ও কাঁচা কলার গুঁড়োর বিশেষ মিশ্রণে। উপাদানগুলো এমনভাবে নির্বাচন করা হয়েছে, যাতে অন্ত্রের নির্দিষ্ট উপকারী জীবাণুগুলো পুষ্টি পায় এবং শিশুদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা, স্নায়বিক বিকাশ ও স্বাস্থ্যকর বৃদ্ধি নিশ্চিত হয়।

এই উদ্ভাবনের সূচনা হয় আইসিডিডিআর,বি’র নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ এবং ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির অন্ত্র-জীবাণু গবেষক ড. জেফরি গর্ডন-এর মধ্যে এক অনানুষ্ঠানিক আলোচনার মাধ্যমে। ড. তাহমিদ শিশুদের অপুষ্টি নিয়ে কয়েক দশক ধরে কাজ করছেন, আর ড. গর্ডন মূলত স্থূলতা নিয়ে গবেষণা করলেও অন্ত্রের মাইক্রোবায়োম বিষয়ে পথিকৃৎ হিসেবে পরিচিত।

ড. গর্ডন বলেন, “আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুদের পুষ্টি ও বৃদ্ধি নির্ভর করে অন্ত্রের জীবাণুর ওপর। আমরা যে উপকারী জীবাণুগুলো চিহ্নিত করেছি, তারা এমন খাদ্য উপাদান প্রক্রিয়াজাত করতে পারে, যা শরীর নিজে থেকে করতে পারে না। বাংলাদেশি শিশুদের নিয়ে পরিচালিত ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে দেখা গেছে, এমডিসিএফ-২ অন্ত্রের মাইক্রোবায়োম পুনর্গঠনে সক্ষম এবং এর প্রভাব অন্ত্রের বাইরেও বিস্তৃত।”

ড. তাহমিদ আহমেদ বলেন, “এই স্বীকৃতি আমাদের জন্য গভীর অনুপ্রেরণার উৎস। এটি প্রমাণ করে, বিজ্ঞান ও মানবিক সহমর্মিতা একত্রিত হলে বিশ্বের জটিল স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধান সম্ভব। স্থানীয়ভাবে তৈরি, সাশ্রয়ী এই সমাধান কোটি কোটি অপুষ্টিগ্রস্ত শিশুকে শুধু বাঁচিয়ে রাখতেই নয়, বরং পূর্ণ বিকাশের সুযোগ দিতে পারে।”

বর্তমানে ভারত, পাকিস্তান, মালি এবং তানজানিয়া-তে এই খাবার নিয়ে বৃহৎ পরিসরে গবেষণা চলছে। এমডিসিএফ-২ পুষ্টি কর্মসূচিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে বিশ্বজুড়ে অপুষ্টিরোধ ও চিকিৎসার পদ্ধতিকে আমূল বদলে দেওয়ার সম্ভাবনা রাখে।


ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ৩০৮ জন

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সারাদেশে আরও ৩০৮ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

আজ শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।

এতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর মধ্যে বরিশাল বিভাগে (সিটি কর্পোরেশনের বাইরে) ১১৫ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি কর্পোরেশনের বাইরে) ৮৫ জন, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ৪৭ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ৪০ জন ও ময়মনসিংহ বিভাগে (সিটি কর্পোরেশনের বাইরে) ২১ জন রয়েছেন।

এদিকে গত একদিনে সারা দেশে ৩১০ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর ছাড়পত্র পেয়েছেন ৫০ হাজার ৫১৯ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৫৩ হাজার ১৯৩ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ বছরে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ২২৪ জনের।

২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে মোট ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন এবং মোট ৫৭৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।


লিবিয়া থেকে দে‌শে ফিরে‌ছেন আরও ৩০৯ বাংলাদেশি

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

লিবিয়ার ত্রিপলি ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চল থেকে স্বেচ্ছায় দেশে প্রত্যাবাসনেচ্ছুক ৩০৯ অনিয়মিত বাংলাদেশিকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

প্রত্যাবাসিতদের শুক্রবার (১০ অক্টোবর) সকাল সা‌ড়ে ১০টায় একটি চার্টার্ড ফ্লাইট যোগে দেশে ফিরেছেন।

এক সংবাদ বিজ্ঞ‌প্তি‌তে এ তথ‌্য জানায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

বিজ্ঞ‌প্তি‌তে জানা‌নো হ‌য়ে‌ছে, প্রত্যাবাসিত বাংলাদেশিদের মধ্যে বেশিরভাগই মানবপাচারকারীদের প্রলোভনে পড়ে সমুদ্রপথে অবৈধভাবে ইউরোপে যাওয়ার উদ্দেশ্যে লিবিয়ায় প্রবেশ করেছিলেন। তাদের অনেকে লিবিয়াতে বিভিন্ন সময়ে অপহরণ ও নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার কর্মকর্তারা প্রত্যাবাসিত বাংলাদেশি নাগরিকদের বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানান। জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে তাদের এই দুর্বিষহ অভিজ্ঞতা সবার সঙ্গে বিনিময় করার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তাদের অনুরোধ জানানো হয়।

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার পক্ষ থেকে প্রত্যাবাসনকৃত প্রত্যেককে কিছু খাদ্যসামগ্রী ও প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করা হয়।


শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম আর নেই

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম মারা গেছেন। শুক্রবার (১০ অক্টোবর) বিকাল ৫টায় রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থান তিনি মারা যান।

অন্যপ্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে শুক্রবার দুপুরে মাজহারুল ইসলাম এক ফেসবুক পোস্টে জানান, অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের শারীরিক অবস্থা গুরুতর অবনতির কারণে তাকে শুক্রবার সকালে আবারও লাইফসাপোর্টে নেওয়া হয়েছে। স্যারের অবস্থা আশঙ্কাজনক। চিকিৎসকরা প্রাণপণ চেষ্টা করছেন।

পরিবারের পক্ষ থেকে শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি হাসপাতালে ভিড় না করে স্যারের জন্য প্রার্থনা ও মঙ্গল কামনার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম গত শুক্রবার (৩ অক্টোবর) ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশে যাওয়ার পথে গাড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়েন। গাড়িচালক একজনের সহায়তায় তাকে প্রথমে মোহাম্মদপুরের একটি হাসপাতালে নেন। পরে তাকে ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসকরা জানান, তার ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। এরপর অস্ত্রোপচার করে দুটি রিং পরানো হয় তাকে।

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম সিলেট শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম সৈয়দ আমীরুল ইসলাম এবং মাতা রাবেয়া খাতুন। তিনি সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৬৬ সালে মাধ্যমিক পাস করেন। উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন সিলেট এমসি কলেজ থেকে ১৯৬৮ সালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেন ১৯৭১ ও ১৯৭২ সালে। ১৯৮১ সালে কানাডার কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইয়েটস-এর কবিতায় ইমানুয়েল সুইডেনবার্গের দর্শনের প্রভাব বিষয়ে পিএইচডি করেন।

তিনি সত্তরের দশকে লেখালেখি আরম্ভ করেছিলেন, এরপর স্বেচ্ছাবিরতির কারণে বাংলা কথাসাহিত্যে আত্মপ্রকাশ ঘটে আশির দশকে। সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম নিয়মিত কলাম লিখেছন/ একদম শুরুর দিবে সংবাদ সাময়িকীতে, ‘অলস দিনের হাওয়া’ তাকে পরিচিত করে তোলে। প্রধানত বিদেশি সাহিত্য ও সাহিত্যিকদের নিয়ে আলোচনা করতেন তিনি।

তার গল্পগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে— স্বনিরবাচিত শ্রেষ্ঠ গল্প (১৯৯৪), থাকা না থাকার গল্প (১৯৯৫), কাচ ভাঙ্গা রাতের গল্প (১৯৯৮), অন্ধকার ও আলো দেখার গল্প (২০০১), প্রেম ও প্রার্থনার গল্প (২০০৫)। সুখদুঃখের গল্প, বেলা অবেলার গল্প।

উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে— আধখানা মানুষ্য (২০০৬) দিনরাত্রিগুলি, আজগুবি রাত, তিন পর্বের জীবন, যোগাযোগের গভীর সমস্যা নিয়ে কয়েকজন একা একা লোক, ব্রাত্য রাইসু সহযোগে, কানাগলির মানুষেরা।

প্রবন্ধ ও গবেষণাগ্রন্থ: নন্দনতত্ত্ব (১৯৮৬), কতিপয় প্রবন্ধ (১৯৯২)। অলস দিনের হাওয়া, মোহাম্মদ কিবরিয়া, সুবীর চৌধুরীর সহযোগে রবীন্দ্রানাথের জ্যামিতি ও অন্যান্য শিল্পপ্রসঙ্গ।


banner close