বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ ১৯৮১ সালের ৮ ডিসেম্বর মাত্র ২৬ বছর বয়সে মুনসেফ (সহকারী জজ) হিসেবে বিচারিক জীবন শুরু করেন। তারপর চার দশকের বিচারিক কর্মজীবন পার করে ২০২২ সালের ৯ জানুয়ারি আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। এরপর ওই বছরের ৯ অক্টোবর তিনি আনুষ্ঠানিক বিচারিক কাজ থেকে অবসরে যান। সম্প্রতি তিনি দৈনিক বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক আব্দুল জাব্বার খানকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে শোনালেন তার ৪১ বছরের বিচারিক জীবনের কথা।
দৈনিক বাংলা: অবসরকালীন জীবন কেমন কাটছে?
কৃষ্ণা দেবনাথ: ভালোই কাটছে। তবে ব্যস্ততা কমেনি। মনে হয় আরও বাড়ছে। অবসরে অবসর কোথায়? হা হা…
দৈনিক বাংলা: স্বাধীন বাংলাদেশের তৃতীয় কোনো নারী বিচারক হিসেবে বিচার বিভাগে যাত্রা শুরুর পর সর্বোচ্চ আদালত থেকে অবসরে গেলেন। সব মিলিয়ে একজন নারীর বিচারক হিসেবে দীর্ঘ এই পথচলা কতটা সহজ ছিল?
কৃষ্ণা দেবনাথ: দেশ স্বাধীনের পরে ১৯৭২ সালে যখন বাংলাদেশের বিচার বিভাগের যাত্রা শুরু হয়, তখনই কিন্তু বাংলাদেশে মেয়েরা জুডিশিয়াল সার্ভিসে আসতে পারেনি। নারীদের জন্য জুডিশিয়াল সার্ভিসে যাত্রা শুরু হয় ১৯৭৫ সালে। প্রথমেই আমরা পুরুষদের থেকে তিন বছর পিছিয়ে যাই। দেশের বিচার বিভাগের যাত্রা শুরুর তিন বছর পরে নারীদের যাত্রার পরও আজকে নারীদের অবস্থান কোথায় সেটা দেখতে হবে। আমি নারী বিচারক হিসেবে যাত্রা শুরু করেছি ১৯৮১ সালে। প্রথম এসেছিলেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, দ্বিতীয় যাত্রা শুরু করেছিলেন বিচারপতি জিনাত আরা। আর তৃতীয় হিসেবে যুক্ত হই আমি। সৌভাগ্যের ব্যাপার হলো, আমরা তিনজনই আপিল বিভাগ থেকে অবসরে গিয়েছি। এটা ভাবতে ভালো লাগে।
নারী হিসেবে বিচারিক জীবনের তেমন কোনো সমস্যার সৃষ্টি হয়নি। তবে নারী বিচারকদের প্রধান প্রতিবন্ধকতা হয়, তাদের সাংসারিক জীবন নিয়ে। কেননা, এটা বদলির চাকরি। এক জেলা থেকে আরেক জেলায় বদলির কারণে সংসারটা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এটা অনেক কষ্টসাধ্য। এ ছাড়া বেশ কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতা তো ছিলই।
দৈনিক বাংলা: সর্বোচ্চ আদালতের বিচারক হবেন এমন স্বপ্ন কি বিচারিক জীবনের শুরুতে কখনো দেখেছিলেন?
কৃষ্ণা দেবনাথ: না, এমনটি কখনোই ভাবিনি। এমনকি হাইকোর্টেও থাকাকালীন ভাবিনি যে আমি আপিল বিভাগে যাব। স্বপ্নও ছিল না। তবে আমার স্বপ্ন ছিল আমি জজ হব।
দৈনিক বাংলা: অনেক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবীরাই এখন প্রায় বেঁচে নেই, আপনি কি মনে করেন এখন নতুন যারা আসছেন, তারা সেই খ্যাতিম্যান আইনজীবীদের যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে গড়ে উঠছেন?
কৃষ্ণা দেবনাথ: দেখেন এটা শুধু আইনজীবীদের মধ্যে নয়, শিক্ষা, চিকিৎসা সব ক্ষেত্রেই একই অবস্থা। সবখানেই অবক্ষয়। ধরেন আমার বাবা যে পরিমাণ লেখাপড়া করে জ্ঞান অর্জন করেছেন আমি তো মনি করি না, আমার সেটুকু আছে। কিন্তু আমি আশাবাদী নতুন প্রজন্ম থেকে অনেক ট্যালেন্ট উঠে আসছে, আসবে। একসময় নামকরা আইনজীবীরা ছিলেন। তারপর তাদের উত্তরসূরিরা এসেছেন। ঠিক এমনি করেই নতুনরা আইনজীবী হয়ে উঠবেন। এখন যারা নবীন আইনজীবী তাদের জন্য একজন ভালো আইনজীবী হিসেবে গড়ে ওঠার এটা মোক্ষম সময়। তার কারণ জায়গাটা এখন অনেক খালি, সবকিছু প্রস্তুত হয়ে আছে, এখন দরকার শুধু অধ্যবসায়ের।
দৈনিক বাংলা: আপনার অবসর জীবনের শেষ দিনে বলেছিলেন, বিচারক নিজেকে স্বাধীন মনে না করলে সুবিচার সম্ভব না। এর মানে আপনি কী বুঝিয়েছেন?
কৃষ্ণা দেবনাথ: এই বাক্যটি আমি শুধু কথার কথা হিসেবে বলিনি। আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেই বলেছি। এখনো বিশ্বাস করি, একজন বিচারক নিজেকে যদি স্বাধীন মনে না করেন, তাহলে কাগজে-কলমে স্বাধীনতা দিয়েই কী লাভ। একজন বিচারক নিজের বিবেককে প্রশ্ন করবেন তিনি নিজে স্বাধীন কি না। কাগজে-কলমে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে মাত্র কিছু বছর আগে। তার আগে আমরা বিচারকরা তো নিজেদের পরাধীন মনে করিনি, বিচারের কাজটি কিন্তু স্বাধীনভাবেই করেছি।
আমি মনে করি, একজন বিচারক মনেপ্রাণে নিজেকে স্বাধীন মনে করেন কি না, সেটাই বড় কথা। আমি জোর গলায়, দ্ব্যর্থহীনভাবে বলি ৪১ বছরে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিভিন্ন পদে বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। এই সময়ে তো আমার কাছে কোনো তদবির আসেনি। নিজেকেই সেই জায়গা তৈরি করে নিতে হবে। আমি যখন বিচারকের দায়িত্ব পালন করেছি, তখন অনেক জুনিয়র বিচারক বলতেন তদবির আসে। আমি তখন তাদের বলেছি, কই আমার কাছে তো কোনো তদবির আসে না। তদবির যাতে না আসে সেই পরিবেশ আপনার নিজেকেই তৈরি করে নিতে হবে। বিচারকের স্বাধীনতার বিষয়টি নিজের সততা দিয়ে তৈরি করে নিতে হয়।
তদবির না শুনে একবার এক ব্যক্তিকে জামিন দিইনি বলে সেই সময় আমাকে মেহেরপুরের জেলা জজ থেকেও বদলি করা হয়েছিল। জেলা জজ থেকে সাড়ে চার বছর আমাকে কর্নার করে রাখা হয়েছিল। দুটি জেলার জেলা জজ হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর স্পেশাল জজ করে রাখা হয়েছিল। আমি তো তখনো ভয় পাইনি। আমার কথা হলো, নিজেকে স্বাধীন রাখতে হলে বদলির ভয় করলে চলবে না। কী আর করবে বাংলাদেশের ভেতরেই তো বদলি করবে, আর তো কিছু না। বিচারক যদি বদলির ভয় বা নিজের লাভ-ক্ষতির চিন্তা করেন তাহলে তিনি স্বাধীন বিচারক হিসেবে কীভাবে কাজ করবেন। করতে পারবেন না। বিচারককে তার নিজের সততার ওপর শক্ত অবস্থানে থাকতে হবে। এখন কিন্তু দেওয়ানি মামলায় আপস করার সুযোগ আছে। লিগ্যাল এইডের মাধ্যমে মামলা আপসের সুযোগ আছে। এখন যদি এটা ভালোভাবে কার্যকর হয়, তাহলে ৫০ শতাংশ মামলাই আসবে না। এটা যদি সফল করা যায়, তাহলে মামলার জট অনেক কমে আসবে।
দৈনিক বাংলা: একটি মামলা শেষ করতে বছরের পর বছর লাগে কেন?
কৃষ্ণা দেবনাথ: মামলা শেষ করতে পক্ষগণেরই জোরালো পদক্ষেপের প্রয়োজন। কিন্তু সমস্যা হলো, অনেক সময় কোনো না কোনো পক্ষই চায় না, দ্রুত মামলা শেষ হোক। মামলার জট সৃষ্টির পেছনে বিভিন্ন কারণ রয়েছে। এর জন্য শুধু বিচারকরা দায়ী তা বলা যাবে না বরং বাদী-বিবাদী, দুই পক্ষের আইনজীবীদেরও দায় রয়েছে। একটি মামলার নিষ্পত্তির জন্য কম করে হলেও পাঁচটি পক্ষের সমন্বয় দরকার পড়ে, তবেই মামলার নিষ্পত্তি ঘটে।
এ ছাড়া বিচারকসংকট রয়েছে বড় আকারে। এত বিশাল মামলার জট দ্রুত কমাতে হলে বিপুলসংখ্যক বিচারক নিয়োগ দিতে হবে। যেটা সরকারের পক্ষে সম্ভব না।
দৈনিক বাংলা: বর্তমানে দেখা যাচ্ছে ছোটখাটো যেকোনো বিষয়েই হাইকোর্টের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে, কেন?
কৃষ্ণা দেবনাথ: এখন কিন্তু পত্রিকা খুললেই দেখা যায় হাইকোর্টের বিভিন্ন সংবাদ বা নির্দেশনা নিয়ে খবর ছাপানো হয়েছে। চোখ মেললেই কোর্ট-কাচারির খবর পাওয়া যায়। এর কারণ হচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন সময়মতো পদক্ষেপ না নেয়ায় ভুক্তভোগীকে হাইকোর্টে আসতে হচ্ছে। এটার একটা ভালো দিক আছে, মানুষ আদালতে এলে প্রতিকার পায়। আবার কিছু সময় দেখি একটা সাধারণ বিষয় নিয়েও মানুষকে হাইকোর্টে আসতে হয়। স্থানীয় প্রশাসন যদি সঠিক সময়ে সঠিক কাজটা করে তাহলে কিন্তু আদালতের ওপর এই চাপ আসে না। তারা সেটি করছে না। অনেক সময় আদালতের নির্দেশের পরও অনেক কিছু বাস্তবায়ন করা হয় না। এটা ভালো দিক না।
দৈনিক বাংলা: বিচার বিভাগকে কি আরও শক্তিশালী হতে হবে, নাকি শক্তিশালীই আছে?
কৃষ্ণা দেবনাথ: বিচার বিভাগকে কেউ শক্তিশালী করে দেবে না। বিচার বিভাগকে নিজেকেই শক্তিশালী হতে হবে। একটা আদেশ হওয়ার পর ঝড়ঝাপটা আসতে পারে। সেটা বহন করার মতো বিচারক যদি আমরা হতে পারি তাহলে বিচার বিভাগ শক্তিশালী হবে। বিচারক যদি সেই ঝড়ঝাপটা সইবার ক্ষমতা না রাখেন তাহলে সেটা হবে না।
দৈনিক বাংলা: বার ও বেঞ্চের সম্পর্ককে বলা হয় একটি পাখির দুটি ডানা। সম্প্রতি বিভিন্ন বারে আইনজীবী ও বিচারকদের সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছে, এটিকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
কৃষ্ণা দেবনাথ: সর্বজনীনভাবে আমি বলব, সাবলীল সম্পর্ক হ্রাস পেয়েছে। অনেক আগে থেকেই এই সম্পর্ক নষ্ট হয়েছে। অনেক সময় বিচারকের দরজায় লাথি দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে। সার্বিকভাবে বলব আইনজীবী ও বিচারকদের মধ্যে সম্পর্ক অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছে। আমার বক্তব্য হলো, একজন বিচারক যেহেতু একটু ওপরে বসেন, আইনজীবীরা একটু নিচে দাঁড়ান, এই যে বিচারকরা একটু অগ্রাধিকার স্থানে থাকেন সে জন্য বিচারকদের অনেক কিছু করা যায়, অনেক কিছু করা যায় না। সেটি তাদের মাথায় থাকতে হবে। এ ছাড়া আইনজীবীদেরও সহিষ্ণু হতে হবে। দুপক্ষই যদি সহিষ্ণু হয় তাহলে কিন্তু সম্পর্কের মধ্যে চিড় ধরবে না।
আদালতের মর্যাদা কমলে কিন্তু আইনজীবীদেরই মর্যাদা কমবে। এটা তাদের বুঝতে হবে। কোনো বিচারকের ভুল হলে আইনজীবীরা তার ওপরের বিচারককে বলতে পারেন। সুপ্রিম কোর্ট আছে, আইন মন্ত্রণালয় আছে। সেখানে বলার সুযোগ আছে। কিন্তু তাই বলে স্লোগান দেয়া উচিত না। এ ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার সময় এসেছে বলে তিনি মনে করেন।
দৈনিক বাংলা: দীর্ঘ ৪১ বছরের বিচারিক জীবনে পূরণীয় ঘটনা বা অপ্রাপ্তি বলে কিছু আছে কি না?
কৃষ্ণা দেবনাথ: মানিকগঞ্জে একটি অ্যাসিড নিক্ষেপ মামলায় আসামিকে সাজা দিতে পারিনি, এই একটি বিষয় আমার মনে এখনো গেঁথে আছে। আইনজীবীর ভুলের কারণে সেই আসামিকে সাজা দিতে পারিনি। যে কারণে খুব কষ্ট লেগেছিল। কারণ মামলায় আসামি শনাক্ত একটা বড় ব্যাপার। মামলায় বলা হয়েছে, চাঁদের আলোতে আসামিকে দেখা গেছে। কিন্তু পঞ্জিকাতে দেখা গেল সেদিন অমাবস্যা ছিল। তার ওপর আবার সেদিন ওই এলাকায় বিদ্যুৎ ছিল না। আইনজীবী মামলা শক্ত করতে গিয়ে চাঁদের আলোতে দেখেছে বলে বিবরণ দিয়েছেন কিন্তু সেদিন সেটা ছিল না। যে কারণে আসামি শনাক্ত কঠিন হয়ে পড়ে। অতিরঞ্জিত বিবরণ মূল ঘটনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। অথচ ছেলেটি মেয়েটিকে স্কুলে যাওয়ার সময় উত্ত্যক্ত করত, সেটি উল্লেখ থাকলেও হতো। অতিরঞ্জিত করার কারণে আসামি বেঁচে যায়। এই ঘটনা আমাকে পীড়া দেয়। তার কারণ চোখের সামনে দেখেছিলাম মেয়েটির ঝলসানো মুখ। কিন্তু তার ন্যায়বিচার আমি দিতে পারিনি।
দৈনিক বাংলা: দীর্ঘ ৪১ বছরের বিচারিক জীবনে আপনি কতজন আসামিকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দিয়েছেন?
কৃষ্ণা দেবনাথ: এটা বলতে পারব না। তার কারণ, আমি গুনে রাখিনি। তবে সর্বোচ্চ সাজা দেয়ার ব্যাপারে আমি অনেক সতর্ক ছিলাম। আমি দুইয়ে দুইয়ে চার না হওয়া পর্যন্ত কাউকে সাজা দিইনি। অনেক আসামিকে সর্বোচ্চ সাজা দিয়েও আমি স্বস্তি পেয়েছি। তার কারণ অকাট্য দলিল-প্রমাণ ছিল। সব থেকে বড় স্বস্তি পেয়েছি, যখন আমি ঢাকার জেলা জজ ছিলাম। বঙ্গবন্ধু হত্যার ফাঁসির আসামিদের সাজা কার্যকর হবে। তখন ফাঁসির আদেশ কার্যকর করার জন্য শেষ যে স্বাক্ষর দিতে হয়, জেলা জজ হিসেবে সেটা আমি দিয়েছিলাম। ওই দিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে আমার কাছে লাল নথি এল, আমি তাতে স্বাক্ষর করলাম। এরপরই টিভিতে দেখলাম কারা কর্তৃপক্ষ ফাঁসি কার্যকর শুরু করেছে। ঐতিহাসিক সেই মামলাটিতে শেষ স্বাক্ষর করেছিলাম। এটা আমাকে অনুপ্রাণিত করে।
দৈনিক বাংলা: অবসরে কেমন কাটছে?
কৃষ্ণা দেবনাথ: অবসরে একদমই অবসর নেই। আমি রুট (প্রান্তিক) লেভেলের ভিকটিমদের নিয়ে কাজ করতে চাই। সেটাই শুরু করেছি। দেখা যাক কতটা করতে পারি।
দৈনিক বাংলা: ধন্যবাদ আপনাকে।
কৃষ্ণা দেবনাথ: আপনাকেও ধন্যবাদ।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, রাষ্ট্র ও সমাজে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করতে আমাদের নিরলস চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। স্বৈরাচার পতন ও গণতন্ত্র মুক্তি দিবস উপলক্ষে শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) দেওয়া বাণীতে তিনি এ কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, অবিস্মরণীয় একটি দিন ৬ ডিসেম্বর। ১৯৯০ সালের এ দিনে রক্তাক্ত পিচ্ছিল পথে অবসান হয়েছিল স্বৈরশাসনের। এরশাদ বিরাশির ২৪ মার্চ পেশাগত বিশ্বস্ততা ও শপথ ভেঙে অস্ত্রের মুখে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আব্দুস সাত্তারকে ক্ষমতাচ্যুত করে গণতন্ত্র হত্যা করে জারি করেছিলেন অসাংবিধানিক শাসন; যে সাংবিধানিক রাজনীতি ছিল বহুদলীয় গণতন্ত্রের নিশ্চয়তা, যার সূচনা করেছিলেন স্বাধীনতার মহান ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান।
তারেক রহমান বলেন, একনায়ক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেন। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে দীর্ঘ ৯ বছর দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে নিরন্তর সংগ্রাম চালিয়ে আপসহীন নেত্রী হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। গড়ে তোলেন এক দুর্বার গণআন্দোলন। এরই ধারাবাহিকতায় নব্বইয়ের ৬ ডিসেম্বর এই দিনে ছাত্র-জনতার মিলিত শক্তিতে স্বৈরাচারকে পরাজিত করে মুক্ত হয়েছিল গণতন্ত্র।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, অর্জিত গণতন্ত্রের চেতনায় আবারও ছাত্র-জনতা ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট এক হিংস্র ফ্যাসিবাদী শক্তিকে পরাস্ত করে। ঐতিহাসিকভাবেই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ছিল গণতন্ত্রের ভয়ংকর শত্রু। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দুঃশাসনের অবসানের পর আবারও গণতন্ত্রের সম্পূর্ণ পুনরুজ্জীবন এবং রাষ্ট্র ও সমাজে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করতে আমাদের নিরলস সংগ্রাম অব্যাহত রাখতে হবে।
তারেক রহমান বলেন, শেখ হাসিনার দুঃশাসনে ‘গণতন্ত্রের মা’ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ওপর জেল-জুলুমসহ নানামাত্রিক নিপীড়ন নামিয়ে আনা হয়েছিল। অবিরাম নির্যাতনের কষাঘাতে অসুস্থ দেশনেত্রীর জীবন এখন চরম সংকটে। আল্লাহর কাছে তার সুস্থতা কামনা করছি। এছাড়া দেশের জাতীয়তাবাদী শক্তির লাখ লাখ নেতাকর্মীকে সীমাহীন অত্যাচার-নির্যাতন করা হয়েছিল। সারাদেশ অবরুদ্ধ করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, আজকের এ দিনে আমি ‘৮২ থেকে ৯০’ পর্যন্ত রক্তস্নাত স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে আত্মদানকারী বীর শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই এবং তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করি। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের এ স্মরণীয় দিনে আমি শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী গণতন্ত্রের হেফাজতকারী দেশবাসীকে। গণতন্ত্রবিরোধী পরাজিত শক্তির যাতে আর পুনরুত্থান না ঘটে, সেজন্য গণতান্ত্রিক শক্তিকে সবসময় ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানাই।
বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে নিয়ে যেতে জার্মানি থেকে একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায় আসছে। কাতার সরকারের ব্যবস্থাপনায় জার্মানি থেকে আনা এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে শনিবার (৬ ডিসেম্বর) বিকেলে খালেদা জিয়াকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য লন্ডনের উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা রয়েছে।
ঢাকায় কাতার দূতাবাসের জনসংযোগ কর্মকর্তা আসাদুর রহমান আসাদ বলেন, কাতার সরকারের ব্যবস্থাপনায় জার্মানি থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায় আসছে। শনিবার বিকেলে ওই এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
এ বিষয়ে বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, কাতার রাজপরিবারের এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটিতে কারিগরি ত্রুটি থাকায় কাতারের আমির তার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অন্য একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাঠাচ্ছেন, যা শনিবার বিকেল ৫টায় ঢাকায় অবতরণ করবে।
তিনি দাবি করেন, এখন যে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি আসছে, সেটিও কাতারের এয়ার অ্যাম্বুলেন্স কিন্তু জার্মান কোম্পানির তৈরি। কাতার জার্মানি থেকে কোনো এয়ার অ্যাম্বুলেন্স বাংলাদেশে পাঠাচ্ছে না।
ঢাকার একটি কূটনৈতিক সূত্র জানায়, জার্মান প্রাইভেট এয়ার অ্যাম্বুলেন্স কোম্পানি ‘এফএআই রেন্ট এ জেট জিএমবিএইচ’-এর সিএল৬০ (বোম্বার্ডিয়ার চ্যালেঞ্জার ৬০০ সিরিজ) জেটে খালেদা জিয়াকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে নিয়ে লন্ডনের উদ্দেশ্যে রওনা হবে।
বিমানটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে জর্জিয়ার রাজধানী তিবলিসি হয়ে সরাসরি লন্ডন যাবে। শনিবার (৬ ডিসেম্বর) বিকেলেই এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটির খালেদা জিয়াকে নিয়ে রওনা দেওয়ার কথা রয়েছে।
খালেদা জিয়াকে শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) ভোরে লন্ডনে নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কারিগরি সমস্যার কারণে গত বৃহস্পতিবার কাতারের এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি আসেনি।
শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, কারিগরি ত্রুটির কারণে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স শুক্রবার আসছে না। সব ঠিক থাকলে সেটা শনিবার পৌঁছাতে পারে।
তিনি আরও বলেন, ম্যাডামের শরীর যদি যাত্রার উপযুক্ত থাকে এবং মেডিকেল বোর্ড যদি সিদ্ধান্ত দেয়, তাহলে ইনশাআল্লাহ ৭ তারিখ (রোববার) ফ্লাই করবেন।
এর আগে উন্নত চিকিৎসার জন্য গত জানুয়ারিতে লন্ডনে গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। সেখানে প্রথমে হাসপাতালে, পরে ছেলে তারেক রহমানের বাসায় থেকে তিনি চিকিৎসা নেন। প্রায় চার মাস পর গত ৬ মে তিনি দেশে ফেরেন।
গত ২৩ নভেম্বর রাতে শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরীক্ষায় ফুসফুসে সংক্রমণ ধরা পড়ায় তাকে ভর্তি করা হয়। গত রোববার ভোরের দিকে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে এসডিইউ থেকে সিসিইউতে নেওয়া হয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের (এমওইউ) আলোকে দেশটি থেকে ৬০ হাজার ৯৫০ মেট্রিক টন গমবাহী জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছেছে।
শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে সরকার টু সরকার (জি টু জি) ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম আমদানি কার্যক্রম শুরু করছে। এই চুক্তির আওতায় মোট ৪ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন গম আমদানি করা হবে, যার প্রথম চালানে ৫৬ হাজার ৯৫৯ মেট্রিক টন গম গত ২৫ অক্টোবর, দ্বিতীয় চালানে ৬০ হাজার ৮০২ মেট্রিক টন গম ৩ নভেম্বর তারিখে এবং তৃতীয় চালানে ৬০ হাজার ৮৭৫ মেট্রিক টন গম ১৫ নভেম্বর দেশে পৌঁছেছে।
এবারেরটি আমদানিকৃত গমের চতুর্থ চালান। চুক্তি মোতাবেক ৪ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন গমের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে চারটি চালানে মোট ২ লাখ ৩৯ হাজার ৫৮৬ মেট্রিক টন গম দেশে পৌঁছেছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জাহাজে রাখা গমের নমুনা পরীক্ষার কার্যক্রম ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। গমের নমুনা পরীক্ষা শেষে দ্রুত তা খালাসের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে। কাতারের পাঠানো এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে লন্ডনে যাবেন তিনি।
এদিকে বেগম জিয়াকে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে নিতে যুক্তরাজ্যের স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের পথে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী জুবাইদা রহমান রওনা দেওয়ার খবর পাওয়া যায়। অন্যদিকে খালেদা জিয়াকে নেওয়ার জন্য কাতারের আমিরের পাঠানো এয়ার অ্যাম্বুলেন্স গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকায় এলে আজ শুক্রবার ভোর ৪টা থেকে ৬টার মধ্যে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটিতে লন্ডনে যাওয়ার কথা থাকলেও তা কিছুটা বিলম্ব হয়েছে বলে জানা যায়।
গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ৩টার আগে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে সাংবাদিকদের বেগম জিয়ার চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন এ তথ্য জানিয়েছিল।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুসারে তাকে লন্ডনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ৩টার পরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ব্রিফ করেন। তিনি জানান, ‘বৃহস্পতিবার (গতকাল) রাতের মধ্যেই কাতারের আমিরের পাঠানো এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি ঢাকায় এসে পৌঁছাবে। শুক্রবার (আজ) ভোরের মধ্যে খালেদা জিয়াকে নিয়ে এটি লন্ডন যাত্রা করবে।’
এদিকে ব্রিফিংয়ে জাহিদ হোসেন বলেন, ‘মেডিকেল বোর্ডের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত এবং খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক অবস্থার ভিত্তিতে তাকে কাতার রয়্যাল এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে লন্ডনের একটি নির্ধারিত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে।’
জাহিদ হোসেন আরও বলেন, ‘বিমানে যাতে যেকোনো প্রতিকূলতার মধ্যেও তাকে সুস্থভাবে চিকিৎসা দেওয়া যায়, সেই লক্ষ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।’
খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক পরিস্থিতি জানতে চাইলে জাহিদ হোসেন বলেন, ‘মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শের বাইরে কিছু চিন্তা করা হচ্ছে না। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার তিনবার ভার্চুয়ালি মিটিং করা হয়েছে। যুক্তরাজ্য ও চীনের চিকিৎসকরা সশরীর দেখেছেন। তাদের সবার সঙ্গে সর্বশেষ আলোচনা হয়েছে। খালেদা জিয়াকে লন্ডনে উন্নত চিকিৎসাসেবা দিতে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি পাঠাবে কাতার। গতকাল বৃহস্পতিবার কাতার সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের কাছে এ বিষয় নিশ্চিত করে।’
এদিকে কাতারের আমিরের বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকায় পৌঁছানোর কথা এদিন বিকেলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কথা বলেছিলেন। তবে সন্ধ্যার পর দলটির মিডিয়া উইং জানিয়েছে, এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে কিছু টেকনিক্যাল (কারিগরি) সমস্যা দেখা দিয়েছে। এ কারণে এর যাত্রা বিলম্বিত হয়।
অবশ্য বিএনপির সূত্র বলছে, এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায় পাঠানোর জন্য দ্রুত প্রস্তুত না হলে কাতার কর্তৃপক্ষ খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নিতে বিকল্প ব্যবস্থা করার কথাও চিন্তা করছে।
এদিকে লন্ডনের স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় (বাংলাদেশের সময় অনুযায়ী প্রায় মধ্যরাত) জুবাইদা রহমান ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন বলে বিএনপির সূত্রগুলো জানিয়েছে। তারা বলেছে, আজ শুক্রবার দিনের প্রথমার্ধে তিনি ঢাকায় পৌঁছাতে পারেন। পরে শাশুড়িকে দেখতে সরাসরি ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে যেতে পারেন জুবাইদা রহমান। খালেদা জিয়ার সঙ্গে লন্ডন-যাত্রায়ও শরিক হতে পারেন চিকিৎসক জুবাইদা।
এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে জানান, জুবাইদা রহমান বৃহস্পতিবারই বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা হচ্ছেন। তিনি লেখেন, ‘জুবাইদা রহমান দেশের উদ্দেশে রওনা হয়ে কাল (শুক্রবার) সকালে ঢাকা পৌঁছানোর চেষ্টা করবেন, যেন সঙ্গে থেকে দেশনেত্রীকে কাতারের অত্যাধুনিক এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে লন্ডন নিয়ে যেতে পারেন। তবে তার আগেই যদি ফ্লাইটের ব্যবস্থা করা যায় কিংবা তার আসা না হয়, সেই বিবেচনায় লন্ডনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রিচার্ড বিল ইতোমধ্যে ঢাকায় এসেছেন। ম্যাডামের পুত্রবধূ সৈয়দা শামিলা রহমান, কয়েকজন চিকিৎসক ও কর্মকর্তাও এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সার্বক্ষণিক পাশে থাকবেন বলে জানা গেছে।’
এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকায় কাতার দূতাবাস পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গত ৩০ নভেম্বরের কূটনীতিক পত্রের অনুরোধে সম্মতি জানিয়েছে।
এর আগে ২৯ নভেম্বর এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করতে বিএনপির পক্ষ থেকে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঢাকায় কাতারের রাষ্ট্রদূত সেরাইয়া আলী আল কাহতানির কাছে চিঠি লেখেন। পরদিন ৩০ নভেম্বর গুরুতর অসুস্থ বিএনপি চেয়ারপারসনের লন্ডনে উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিতের জন্য জরুরি ভিত্তিতে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ওই চিঠিতে চিকিৎসা নিতে গত জানুয়ারিতে লন্ডনে যাত্রার সময় খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করায় কাতারের আমিরের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো হয়। সেবার জানুয়ারিতে ঢাকা থেকে লন্ডন এবং মে মাসে লন্ডন থেকে ঢাকায় খালেদা জিয়াকে কাতার রয়েল এয়ার অ্যম্বুলেন্সের মাধ্যমে যাতায়াত করানো হয়েছিল।
বেগম জিয়ার সঙ্গে ১৪ জন, থাকবেন পুত্রবধূ শামিলা ও ছয় চিকিৎসক
এদিকে বিএনপির দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, খালেদা জিয়ার সঙ্গে লন্ডন যাত্রায় থাকবেন ১৪ জন। ওই সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার সঙ্গে যে ১৪ জন যাচ্ছেন তারা হলেন, খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ সৈয়দা শামিলা রহমান, চিকিৎসক আবু জাফর মো. জাহিদ হোসেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মোহাম্মদ এনামুল হক চৌধুরী, চিকিৎসক ফখরুদ্দিন মোহাম্মদ সিদ্দিকি, চিকিৎসক মো. শাহাবুদ্দিন তালুকদার, চিকিৎসক নূরউদ্দিন আহমদ, চিকিৎসক মো. জাফর ইকবাল, চিকিৎসক মোহাম্মদ আল মামুন, স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) হাসান শাহরিয়ার ইকবাল, স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের সৈয়দ সামিন মাহফুজ, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সহকারী মো. আবদুল হাই মল্লিক, সহকারী ব্যক্তিগত সচিব মো. মাসুদুর রহমান, গৃহকর্মী ফাতেমা বেগম ও গৃহকর্মী রূপা শিকদার।
১২ দিন ধরে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে বলে জানা গেছে। তাকে নিয়ে দেশের মানুষ উদ্বেগে রয়েছে। দেশজুড়ে খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা দোয়া-মাহফিল ও মোনাজাতের আয়োজন চলছে। দলীয় নেতা-কর্মীরা ছাড়াও দেশের সাধারণ মানুষ দোয়া করতে থাকেন তাদের প্রিয় নেত্রীর জন্য। এছাড়া এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে দিনরাত নেতা-কর্মীদের ভিড় দেখা যায়।
এভারকেয়ার হাসপাতালের একটি সূত্র জানায়, অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের অধীন খালেদা জিয়ার চিকিৎসা কার্যক্রম চলে।
বিএনপির একটি সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার ফুসফুসে সংক্রমণের কারণে যে জটিলতা তৈরি হয়েছিল, সেটা কিছুটা উন্নতির দিকে। তবে হৃদযন্ত্রে জটিলতা রয়েছে। বাকি সমস্যাগুলো অনেকটাই অপরিবর্তিত।
২৩ নভেম্বর রাতে শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরীক্ষায় ফুসফুসে সংক্রমণ ধরা পড়ায় তাকে ভর্তি করা হয়। গত রোববার ভোরের দিকে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে এসডিইউ থেকে সিসিইউতে নেওয়া হয়।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসার সহায়তায় যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রিচার্ড বিয়েল গত বুধবার বিকেলে ঢাকায় আসেন। তার চিকিৎসায় সহায়তা করতে যোগ দেন চীন থেকে আসা চার সদস্যের আরেকটি চিকিৎসক দল।
দেশের একদল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস হাসপাতালের চিকিৎসক এবং লন্ডন ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের অধীন খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চলে। তার চিকিৎসায় সহায়তা করতে গত ১ ডিসেম্বর চীনের চিকিৎসকদের পাঁচ সদস্যের একটি অগ্রবর্তী দল ঢাকায় আসে।
এর আগে উন্নত চিকিৎসার জন্য গত জানুয়ারি মাসে লন্ডনে গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। সেখানে প্রথমে হাসপাতালে, পরে ছেলে তারেক রহমানের বাসায় থেকে তিনি চিকিৎসা নেন। প্রায় চার মাস পর গত ৬ মে তিনি দেশে ফেরেন।
জনশৃঙ্খলা ও প্রধান উপদেষ্টার নিরাপত্তা রক্ষায় আগামী শনিবার থেকে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনা ও সচিবালয় এলাকায় সকল প্রকার সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
আজ বৃহস্পতিবার ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী স্বাক্ষরিত এক গণবিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অর্ডিন্যান্সের ২৯ ধারায় অর্পিত ক্ষমতাবলে এ আদেশ জারি করা হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, আগামী ৬ ডিসেম্বর থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ সচিবালয় (সংলগ্ন এলাকাসহ) এবং প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনা ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকা যেমন- হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল ক্রসিং, কাকরাইল মসজিদ ক্রসিং, অফিসার্স ক্লাব ক্রসিং ও মিন্টু রোড ক্রসিং এর মধ্যবর্তী এলাকায় যে কোনো প্রকার সভা, সমাবেশ, গণজমায়েত, মিছিল, মানববন্ধন, অবস্থান ধর্মঘট ও শোভাযাত্রা ইত্যাদি নিষিদ্ধ করা হলো। সূত্র: বাসস
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে ‘ঐতিহাসিক দায়িত্ব’ পালনে পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। আসন্ন নির্বাচনকে দেশের জন্য ‘শত বছরের ভিত্তি নির্মাণের’ সুযোগ উল্লেখ করে তিনি এ দায়িত্বকে ‘ঐতিহাসিক’ বলে বর্ণনা করেন।
তিনি বলেন, ‘ভূমিকম্প হলে আমরা বিল্ডিং কোড মানা হয়েছে কি না তার কথা বলি। এই নির্বাচন আমাদের সমাজের জন্য সেই বিল্ডিং কোড তৈরি করার সুযোগ। এমন একটি কোড তৈরি করতে হবে, যা যত বড় ঝাঁকুনিই আসুক, নড়বে না।’
পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনাদের ওপর যে ঐতিহাসিক দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে, তার জন্য আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ হোন। জীবনের শেষে যখন আমরা ভাবব, কী করেছি—তখন এটিই প্রথমে আসা উচিত যে, আমরা এই বিল্ডিং কোড তৈরিতে অংশ নিতে পেরেছি।’
৪ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) সকালে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে দেশের ৬৪ জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) এবং পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
প্রফেসর ইউনূস বলেন, ‘আসন্ন নির্বাচন শুধু পাঁচ বছরের একটি প্রচলিত নির্বাচন নয়, জাতীয় নির্বাচনের পাশাপাশি এবার একটি গণভোটও অনুষ্ঠিত হবে।’
তিনি বলেন, ‘গণভোট আরও বড় বিষয়—এটা সেই ‘বিল্ডিং কোড’। আমরা যে বিল্ডিং কোড স্থাপন করব, সেটাই আগামী একশ বছর জাতিকে পথ দেখাবে।’ নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এসপিদের পদায়নে দৈবচয়ন পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে। দেশের বৃহত্তর স্বার্থে এটি সহজভাবে নেওয়ারও আহ্বান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব:) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি বক্তব্য রাখেন।
এছাড়া প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন পুলিশের আইজিপি বাহারুল আলম।
আসন্ন নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ‘একটি নতুন বাংলাদেশ’ জন্ম নেবে উল্লেখ করে প্রফেসর ইউনূস বলেছেন, ‘আমাদের কাজ হবে ধাত্রীদের মতো—একটি নতুন জাতির জন্ম দিতে সহায়তা করা।’
তিনি বলেন, এই নির্বাচন বিশ্বে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। ‘পর্যবেক্ষকরা বাইরে থেকে এসে আমাদের মধ্যে ত্রুটি খুঁজতে চাইবে... কিন্তু আমরা এমন একটি (স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর) নির্বাচন উপহার দেব, যা তারা উদাহরণ হিসেবে বহন করে বহু দেশে আলোচনা করবে।’
‘এই নির্বাচন তাদের জন্য একটি স্মরণীয় পরিদর্শন ও অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে,’ যোগ করেন তিনি।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘এটি গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী নির্বাচন। জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে যারা অংশ নিয়েছিল এবং আমরা যারা সেই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত—এই নির্বাচন তাদের আদর্শ ও স্বপ্ন পূরণের মাধ্যম।’
‘যে স্বপ্নের জন্য তারা জীবন দিয়েছে, সে স্বপ্ন আমরা এই নির্বাচনের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করব,’ বলেন প্রধান উপদেষ্টা।
ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের আগ পর্যন্ত প্রতিদিন দায়িত্ব পালন করার আহ্বান জানিয়ে প্রফেসর ইউনূস বলেন, ‘একটি সুন্দর, স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে প্রতিদিন ভাবতে হবে—আজ আমার করণীয় কী—এবং সেটি সম্পন্ন করতে হবে।’
সেবার মান বাড়াতে ও কর্মসম্পাদনে সৃজনশীলতা দেখাতে পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সেরা কর্মসম্পাদনকারী কর্মকর্তাকে বিশেষ পুরস্কার দেওয়া হবে।
২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ হওয়া দশম শ্রেণির ছাত্র শাহরিয়ার খান আনাস (১৭)-কে স্মরণ করতে গিয়ে প্রধান উপদেষ্টা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। আনাস মিছিলে যোগ দেওয়ার আগে তার মায়ের কাছে যে চিঠি লিখেছিল, তার একটি অংশ উদ্ধৃত করার সময় প্রফেসর ইউনূসের চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।
তিনি আনাসের চিঠি উদ্ধৃত করে বলেন, ‘আমি স্বার্থপরের মতো বসে থাকতে পারি না। আমি যদি ফিরতে না পারি, তাহলে আমাকে ক্ষমা করে দিও।’
কিছুক্ষণ নীরব থাকার পর তিনি বলেন, ‘তার (আনাসের) কথাই আমাদের দায়িত্ব নির্ধারণ করে। আমরা নিষ্ক্রিয় থাকতে পারি না।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আনাস যেভাবে বলেছিল কাপুরুষের মতো বসে থাকতে চায় না—আমরাও বসে থাকতে চাই না। তার স্বপ্ন আমরা বাস্তবায়ন করতে চাই। সেটিই আমাদের দায়িত্ব।’
তিনি পুলিশ কর্মকর্তাদের আগামী তিন মাস নিরলসভাবে কাজ করে আনাসের স্বপ্ন বাস্তবায়নের আহ্বান জানান।
তিনি কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান, মিছিলে যোগ দেওয়ার আগে আনাস তার মায়ের কাছে যে চিঠি লিখেছিল, সেটি সঙ্গে রাখার জন্য।
সভায় চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ, হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার ইয়াসমিন খাতুন এবং জামালপুরের পুলিশ সুপার ড. চৌধুরী মোহাম্মদ জাবের সাদেক বক্তব্য দেন।
এ সময়ে অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন উপদেষ্টাও সভায় উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার জন্য চীনের ৪ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ মেডিকেল টিম রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে প্রবেশ করেছে।
৪ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) সকালে চীনের এই বিশেষজ্ঞ মেডিকেল টিম এভারকেয়ার হাসপাতালে পৌঁছায়।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ডা. কাই জিয়ানফাং (Cai Jianfang)-এর নেতৃত্বে টিমটি আজ সকালে এভারকেয়ার হাসপাতালে পৌঁছে সিসিইউতে প্রবেশ করে খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা মূল্যায়ন করবেন।
এর আগে চার সদস্যের একটি চীনা দল হাসপাতালে প্রবেশ করলেও পরবর্তীতে আরও চিকিৎসক যোগ হয়ে দলটি ছয় সদস্যে পরিণত হয়। বিশেষজ্ঞরা খালেদা জিয়ার বর্তমান চিকিৎসা প্রক্রিয়া পর্যালোচনা করছেন এবং স্থানীয় চিকিৎসকদের সঙ্গে সমন্বয় করে পরবর্তী চিকিৎসা পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করছেন।
বিএনপি সূত্র জানিয়েছে, উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
রাজধানী ঢাকাসহ পাশ্ববর্তী এলাকায় আবারো মৃদু ভূ-কম্পন অনুভূত হয়েছে। এসময় আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে নগরবাসী।
৪ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) আবহাওয়া অধিদফতর থেকে জানানো হয়, ভূমিকম্পটি হালকা মাত্রার ছিল। ভোর ৬টা ১৪ মিনিট ৪৫ সেকেন্ডে হওয়া এ ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদীর শিবপুরে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ১। ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণাকেন্দ্র থেকে ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থলের দূরত্ব ছিল ৩৮ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে।
ইউরো-মেডিটেরিয়ান সিসমোলজিক্যাল সেন্টার জানিয়েছে, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল গাজীপুরের টঙ্গী থেকে ৩৩ কিলোমিটার পূর্ব-উত্তরপূর্বে, আর নরসিংদী থেকে ৩ কিলোমিটার উত্তরে। ভূপৃষ্ঠ থেকে এর গভীরতা ছিল ৩০ কিলোমিটার।
এর আগে ১ ডিসেম্বর মধ্যরাত ১২টা ৫৫ মিনিট ১৬ সেকেন্ডে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ৯। কেন্দ্রস্থল ছিল মিয়ানমারের মিনজিনে। চট্টগ্রামসহ দেশের কিছু অংশে এই ভূমিকম্প অনুভূত হয়।
তার আগে গত ২৭ নভেম্বর রাজধানী ঢাকায় বিকেল ৪টা ১৫ মিনিট ২০ সেকেন্ডে ভূমিকম্প হয়।
আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, রিখটার স্কেলে সেটির মাত্রা ছিল ৩ দশমিক ৬। এর উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ঘোড়াশালে। ওই দিন ভোরের দিকে সিলেটে ও কক্সবাজারের টেকনাফে দুই দফা ভূ-কম্পন অনুভূত হয়।
এর আগে ২১ নভেম্বর, শুক্রবার এবং পরদিন শনিবার প্রায় ৩১ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা ও এর আশপাশে চারবার ভূমিকম্প হয়।
এর মধ্যে ২১ নভেম্বর সকালে ঢাকা থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে রিখটার স্কেলে ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পটির উৎস ছিল নরসিংদীর মাধবদী। উৎপত্তিস্থলের গভীরতা ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০ কিলোমিটার গভীরে। ওইদিন ভূমিকম্পে দেশে ১০ জন নিহত হন। আহত হন ৫ শতাধিক মানুষ।
এখন বেশির ভাগ ভূমিকম্পেরই উৎপত্তিস্থল নরসিংদী।
তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, সাবেক রাষ্ট্রপতির স্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার আশু রোগমুক্তি কামনা করে আগামী শুক্রবার বাদ জুমা দেশের সকল মসজিদে দোয়ার আহ্বান জানিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
পাশাপাশি মন্দির, গির্জা ও প্যাগোডাসহ অন্যান্য ধর্মের উপাসনালয়ে সংশ্লিষ্ট ধর্মের রীতি ও আচার অনুযায়ী প্রার্থনারও আহ্বান জানানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, দেশের সর্বস্তরের মানুষকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তির জন্য দোয়া ও প্রার্থনার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের কয়েকটি সংগঠনের কর্মবিরতি ও পরীক্ষা বর্জনের কর্মসূচি প্রত্যাহার করে কাজে যোগদানের নির্দেশনা নিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিয়ে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত কর্মসূচি গ্রহণ সরকারি চাকরি আইন, আচরণ বিধিমালার পরিপন্থি’। এ অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়। বুধবার (৩ ডিসেম্বর) মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা আবদুল্লাহ শিবলী সাদিক স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক উপযুক্ত ব্যবস্থাসমূহ গ্রহণ করার পরেও দেখা যাচ্ছে সহকারী শিক্ষকদের কয়েকটি সংগঠন চলমান বার্ষিক পরীক্ষা গ্রহণ না করে বিভিন্নভাবে উক্ত পরীক্ষা গ্রহণে বাধা বিঘ্ন সৃষ্টি করেছেন এবং কোথাও কোথাও পরীক্ষা গ্রহণে ইচ্ছুক শিক্ষকদের ওপর হামলা ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছেন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকবৃন্দের কয়েকটি সংগঠনের কর্মসূচির বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, তাদের তথাকথিত কমপ্লিট শাট ডাউন’ কর্মসূচির বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় অবহিত রয়েছে। সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডে বেতন প্রদানের দাবিসহ অন্য আরো দুটি দাবি, যথা ১০ ও ১৬ বছর চাকরি সমাপনান্তে উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির জটিলতা নিরসন এবং প্রধান শিক্ষক পদে সহকারী শিক্ষকদের মধ্য হতে শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতির বিষয়ে ইতোমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে। উক্ত দাবিসমূহ বাস্তবায়নের বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, অর্থ উপদেষ্টা এবং বেতন-কমিশনের সম্মানিত সভাপতির সঙ্গে উল্লিখিত দাবিসমূহ বাস্তবায়নের বিষয়ে ব্যক্তিগতভাবে আলোচনা করেছেন।
এতে আরও বলা হয়েছে, এর আগে এ মন্ত্রণালয় হতে গত ৭ আগস্ট থেকে ৩৬৪ সংখ্যক স্মারকে সহকারী শিক্ষকদের বেতন স্কেল ১৩তম গ্রেড হতে ১১তম গ্রেড এ উন্নীতকরণের বিষয়টি বিবেচনার জন্য জাতীয় বেতন কমিশন-২০২৫-কে অনুরোধ জানিয়ে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে। সহকারী শিক্ষকদের বেতন স্কেল উন্নীতকরণের বিষয়টি পে-কমিশনের প্রতিবেদন পাওয়ার পরপরই অর্থ বিভাগ কর্তৃক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে মর্মে গত ১০ নভেম্বর অর্থ বিভাগের সঙ্গে বৈঠকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এ পরিস্থিতিতে দেশের সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকগণকে অবিলম্বে কাজে যোগদান করে শিক্ষার্থীদের ৩য় প্রান্তিকের পরীক্ষা গ্রহণ সংক্রান্ত বিদ্যালয়ের যাবতীয় কার্যক্রম যথাযথভাবে সম্পন্নের জন্য নির্দেশনা দেওয়া যাচ্ছে। অন্যথায় এ ধরনের শৃঙ্খলা-বিরোধী কার্যক্রমে সম্পৃক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে চাকরি আইন, আচরণ বিধিমালা ও ফৌজদারি আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠন ও শপথের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের মতামত নেওয়া প্রক্রিয়া নিয়ে রিট খারিজের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিলের ওপর শুনানি শেষ হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে আদেশ দেবেন সর্বোচ্চ আদালত।
গতকাল বুধবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির আপিল বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানি হয়। আদালতে লিভ টু আপিলের পক্ষে আবেদনকারী জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ মহসিন রশিদ নিজেই শুনানি করেন।
ইন্টারভেনার হিসেবে লিভ টু আপিলে যুক্ত হন লেখক ফিরোজ আহমেদ। তার পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া। নওগাঁর বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেন ইন্টারভেনার (পক্ষ) হন এ মামলায়। তার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এ এস এম শাহরিয়ার কবির।
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ অনীক রুশদ হক। এ ছাড়া ইন্টারভেনার হিসেবে শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. রুহুল কুদ্দুস ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।
ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে গত বছর ৫ আগস্ট পতন ঘটে আওয়ামী লীগ সরকারের। প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে শেখ হাসিনা সেদিন ভারতে পালিয়ে যান।
এমন পরিস্থিতিতে ৬ আগস্ট সংসদ ভেঙে দেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। এরপর সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের কাছে মতামত চান রাষ্ট্রপ্রধান। এই মতামত চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির আপিল বেঞ্চ ৮ আগস্ট মতামত দিলে তার ভিত্তিতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়।
সুপ্রিম কোর্টের কাছ থেকে এই মতামত নেওয়ার প্রক্রিয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ মহসিন রশিদ।
রিট আবেদনে বলা হয়, সংবিধানে নেই, এমন বিষয়ে রেফারেন্স (মতামত) চাওয়া যায় না।
তাছাড়া সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে মতামত দেওয়ার ক্ষেত্রে আপিল বিভাগকে সুপ্রিম কোর্টের রুলস অনুসরণ করে অ্যাটর্নি জেনারেল ও অন্যদের নোটিশ দিয়ে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে শুনানি করতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার গঠন এবং শপথ নিয়ে শুনানির জন্য নোটিশ দেওয়া হয়নি।
প্রাথমিক শুনানির পর গত ১৩ জানুয়ারি রিটটি সরাসরি খারিজ করে দেন বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর হাইকোর্ট বেঞ্চ। পরে ৯ ফেব্রুয়ারি পূর্ণাঙ্গ আদেশটি প্রকাশ করা হয়।
৯ পৃষ্ঠার আদেশে বলা হয়, রিট আবেদনটি কেবল ভুল ধারণার ওপর ভিত্তি করেই করা হয়নি, আবেদনটি উসকানিমূলকও।
এতে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সংবিধান এখনো কার্যকর এবং সম্পূর্ণভাবে সক্রিয়। তবে রিট আবেদনকারীর অবস্থান স্ববিরোধী। কারণ একদিকে বলছেন, গত ৫ আগস্টের পর বিদ্যমান সংবিধান চাপা পড়েছে, অন্যদিকে বিদ্যমান সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদের অধীন এই রিট আবেদন করেছেন। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের অধীনে সাংবিধানিক আদালত হিসেবে এই ধরনের অসাংবিধানিক আবেদন বিবেচনা করার কোনো সুযোগ নেই। ফলে রিট আবেদনটি পর্যবেক্ষণসহ সরাসরি খারিজ করা হলো।
টেলিগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপে পরিকল্পনা করে ঢাকায় অগ্নিসন্ত্রাস ও ককটেল বিস্ফোরণের মাধ্যমে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা করে আসছিল কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বাসে অগ্নিসংযোগসহ একাধিক নাশকতার ঘটনায় তাদের সম্পৃক্ততা শনাক্ত করার পর বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হয়। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের রমনা বিভাগের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অভিযান চালিয়ে মঙ্গলবার চারজনকে গ্রেপ্তার করেছেন।
গতকাল বুধবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের রমনা বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার ডিসি মো. মাসুদ আলম গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানান।
গত ৩০ অক্টোবর বিকেলে ধানমন্ডিতে ২৮ নম্বর সড়কের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইনস্টিটিউটের গলির মুখে নিষিদ্ধ সংগঠনের ব্যানারে মিছিলের প্রস্তুতি চলছিল। ওই সময় ধানমন্ডি থানা পুলিশ আকস্মিক অভিযান চালিয়ে দুজনকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন— হাজারীবাগ-ধানমন্ডি এলাকার পরিচিত যুবলীগ নেতা শওকত ওসমান বাবু ও মিলন খান। গ্রেপ্তার বাবু ধানমন্ডি ২২ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং মিলন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি।
পুলিশ জানায়, শওকত ওসমান বাবু দীর্ঘদিন ধরে এলাকাবাসীর ওপর দমন-পীড়ন চালানোর অভিযোগে কুখ্যাত। ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনে ছাত্রদের ওপর সশস্ত্র হামলাকারীদের অন্যতম ছিলেন তিনি। পরবর্তীতে সরকার পতনের সময় বিদেশে পালিয়ে গেলেও সম্প্রতি মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফিরে আসেন বহু মামলার এই আসামি। দেশে ফিরে তিনি নতুন করে নাশকতার পরিকল্পনা করেন। এ সংক্রান্ত বিভিন্ন ভিডিও, ককটেল বিস্ফোরণের ছবি, বাসে অগ্নিসংযোগের লাইভ ফুটেজসহ নাশকতার নির্দেশনা তার মোবাইল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
হাজারীবাগ বেড়িবাঁধ এলাকায় ১৬ নভেম্বর বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও শওকত ওসমান বাবুর প্রত্যক্ষ নির্দেশনা ও অর্থায়নে সংঘটিত হয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
গ্রেপ্তার হওয়া আরেক আসামি মিলন খান নড়াইলের জয়নগর ইউনিয়নের বাসিন্দা এবং ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় নাশকতা সংগঠনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন বলে তদন্তে জানা গেছে। তিনি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি স্বপন ও যুগ্ম আহ্বায়ক সাব্বির শেখের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। মিলন নড়াইল ও গোপালগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা থেকে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের এনে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা এলাকার লায়ন টাওয়ারের পেছনের একটি টিনশেড বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করে দিতেন আর সেখান থেকেই তারা ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় নাশকতা ও ঝটিকা মিছিল পরিচালনা করতেন।
গ্রেপ্তার হওয়া আরেক ব্যক্তি সাব্বির শেখ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক। সাব্বির মহানগর যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি স্বপনের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত। সাব্বির শেখ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যুবলীগ-ছাত্রলীগ কর্মীদের ডেকে এনে ঢাকায় নাশকতায় যুক্ত করতেন। বিভিন্ন টেলিগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে সক্রিয় থেকে বাসে অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের নির্দেশনা দিতেন। গত ২৮ নভেম্বর ধানমন্ডিতে নিষিদ্ধ সংগঠনের ব্যানারে মিছিলের প্রস্তুতিতেও তিনি নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। যদিও সেদিন পালিয়ে যান। পরে পুলিশ ও রমনা বিভাগের টেকনিক্যাল টিম যৌথ অভিযান চালিয়ে কামরাঙ্গীরচর কোম্পানি ঘাট ব্রিজ এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মোবাইল ফোন বিশ্লেষণ করে পুলিশ ‘আস্থায় শেখ হাসিনার যুবলীগ ঢাকা দক্ষিণ’, ‘দরবার হল গ্রুপ’, ‘বাঙালি বাংলাদেশ’, ‘২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ’সহ বিভিন্ন অনলাইন গ্রুপে নাশকতার পরিকল্পনা, ককটেলের ছবি, বিস্ফোরকের তথ্য, অর্থ লেনদেনের প্রমাণ এবং ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বাসে আগুন দেওয়ার ভিডিও উদ্ধার করেছে। রাজধানীর রূপনগর, হাজারীবাগ, ধানমন্ডিসহ কয়েকটি এলাকায় অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাতেও তাদের সরাসরি সম্পৃক্ততার তথ্য মিলেছে।
বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে দেখতে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে গেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। বুধবার সন্ধ্যা ৭টার পর হাসপাতালে পৌঁছান তিনি। তাকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ. জে. এম. জাহিদ হোসেন, অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদার, খালেদা জিয়ার ছোট ছেলের স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান এবং ছোট ভাই শামীম এসকান্দার অভ্যর্থনা জানান। প্রায় আধা ঘণ্টা হাসপাতালে অবস্থান করে বিএনপি নেত্রীর চিকিৎসার খোঁজ–খবর নেন প্রধান উপদেষ্টা।
১১ দিন ধরে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা এখনও উদ্বেগজনক। তাকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা চলছে। বিএনপির চেয়ারপারসনের চিকিৎসা সহায়তায় যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রিচার্ড বিয়েল সকালে ঢাকায় এসেছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার রাতে বিএনপির চেয়ারপারসনকে দেখতে এভারকেয়ার হাসপাতালে গিয়েছিলেন সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান ও বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন।
বুধবার সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার আগমন উপলক্ষে হাসপাতাল এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ), প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট (পিজিআর), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নিরাপত্তা জোরদার করেন। এ সময় কাঁটাতারের ব্যারিকেড দিয়ে ঘিরে ফেলা হয় হাসপাতালের প্রধান ফটক।
এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেজে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টা হাসপাতালে পৌঁছালে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদার, খালেদা জিয়ার ছোট ছেলের স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান এবং ছোট ভাই শামীম এসকান্দার প্রধান উপদেষ্টাকে ভেতরে নিয়ে যান।
প্রধান উপদেষ্টা প্রায় আধা ঘণ্টা হাসপাতালে অবস্থান করেন। এ সময় তিনি খালেদা জিয়ার পরিবার ও দলের নেতা–কর্মীদের ধৈর্য ধারণের আহ্বান জানান। খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে তার চিকিৎসক দল প্রধান উপদেষ্টাকে ব্রিফ করেন। তারা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের মাউন্ট সিনাই ও জনস হপকিনস এবং যুক্তরাজ্য, চীনসহ বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধান ও সহায়তায় খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চলছে।
এ সময় সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস পুনর্ব্যক্ত করেন প্রধান উপদেষ্টা। একই সঙ্গে তিনি দেশবাসীর কাছে খালেদা জিয়ার আরোগ্য কামনায় দোয়া ও প্রার্থনার আহ্বান জানান। হাসপাতাল পরিদর্শনকালে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
৮০ বছর বয়সি খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে হৃদ্রোগ, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, লিভার সিরোসিস, কিডনির জটিলতাসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে গত ২৩ নভেম্বর দ্রুত তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসকরা জানান, তার হৃদ্যন্ত্র ও ফুসফুসে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে।
চিকিৎসকরা এখনো খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবস্থাকে ‘গুরুতর’ হিসেবে বিবেচনা করছেন। তাদের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, আগামী কয়েকটি দিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিডনি কার্যক্ষমতায় স্থিতিশীলতা ছাড়া তার সামগ্রিক শারীরিক অবস্থায় স্থায়ী উন্নতি আসা কঠিন।
খালেদা জিয়ার অসুস্থতার খবরে এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে ভিড় করছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। এতে ওই এলাকায় যান চলাচলে ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নেতা-কর্মীদের সেখানে ভিড় না করার অনুরোধ জানিয়েছেন।
এদিকে, খালেদা জিয়াকে ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ঘোষণা করার পর এসএসএফ নিরাপত্তা দেওয়া শুরু করেছে। গত মঙ্গলবার বেলা ২টা ২০ মিনিটের দিকে এসএসএফ সদস্যরা খালেদা জিয়াকে নিরাপত্তা দেওয়া শুরু করেন।
এরপর প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এসএসএফের নিরাপত্তা প্রটোকল অনুযায়ী আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৪টার মধ্যে এভারকেয়ার হাসপাতালের কাছের দুটি উন্মুক্ত মাঠে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টার পরীক্ষামূলকভাবে অবতরণ ও উড্ডয়ন করবে। এ বিষয়ে কোনো ধরনের অপপ্রচার বা বিভ্রান্তি থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করা হলো।
অন্যদিকে, দায়িত্বরত বিজিবি কর্মকর্তা আলতাফ হোসেন বলেন, ‘সার্বিক নিরাপত্তার জন্য এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে দুই প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এক প্লাটুন হাসপাতালের গেটে দায়িত্ব পালন করছে। আরেক প্লাটুন টহলে রয়েছে।’
এর আগে গত সোমবার রাতে বিশেষ নিরাপত্তার জন্য ও দলীয় নেতা-কর্মীদের ভিড় সামলাতে এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে ব্যারিকেড বসায় পুলিশ।
অন্য দিনের মতো সকাল থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে সামনে ভিড় করতে থাকেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। পুলিশের যে ব্যারিকেড দেওয়া রয়েছে, তার বাইরে তারা অবস্থান করছেন।
এভারকেয়ার হাসপাতালে সামনে আসা নেতা-কর্মীদের অনেকে বলছেন, এখানে ভিড় না করতে কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশনা আছে। তারপরও তাদের মন মানছে না। তাই সবকিছু উপেক্ষা করে হাসপাতালে সামনের ছুটে এসেছেন তারা।