বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ ১৯৮১ সালের ৮ ডিসেম্বর মাত্র ২৬ বছর বয়সে মুনসেফ (সহকারী জজ) হিসেবে বিচারিক জীবন শুরু করেন। তারপর চার দশকের বিচারিক কর্মজীবন পার করে ২০২২ সালের ৯ জানুয়ারি আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। এরপর ওই বছরের ৯ অক্টোবর তিনি আনুষ্ঠানিক বিচারিক কাজ থেকে অবসরে যান। সম্প্রতি তিনি দৈনিক বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক আব্দুল জাব্বার খানকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে শোনালেন তার ৪১ বছরের বিচারিক জীবনের কথা।
দৈনিক বাংলা: অবসরকালীন জীবন কেমন কাটছে?
কৃষ্ণা দেবনাথ: ভালোই কাটছে। তবে ব্যস্ততা কমেনি। মনে হয় আরও বাড়ছে। অবসরে অবসর কোথায়? হা হা…
দৈনিক বাংলা: স্বাধীন বাংলাদেশের তৃতীয় কোনো নারী বিচারক হিসেবে বিচার বিভাগে যাত্রা শুরুর পর সর্বোচ্চ আদালত থেকে অবসরে গেলেন। সব মিলিয়ে একজন নারীর বিচারক হিসেবে দীর্ঘ এই পথচলা কতটা সহজ ছিল?
কৃষ্ণা দেবনাথ: দেশ স্বাধীনের পরে ১৯৭২ সালে যখন বাংলাদেশের বিচার বিভাগের যাত্রা শুরু হয়, তখনই কিন্তু বাংলাদেশে মেয়েরা জুডিশিয়াল সার্ভিসে আসতে পারেনি। নারীদের জন্য জুডিশিয়াল সার্ভিসে যাত্রা শুরু হয় ১৯৭৫ সালে। প্রথমেই আমরা পুরুষদের থেকে তিন বছর পিছিয়ে যাই। দেশের বিচার বিভাগের যাত্রা শুরুর তিন বছর পরে নারীদের যাত্রার পরও আজকে নারীদের অবস্থান কোথায় সেটা দেখতে হবে। আমি নারী বিচারক হিসেবে যাত্রা শুরু করেছি ১৯৮১ সালে। প্রথম এসেছিলেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, দ্বিতীয় যাত্রা শুরু করেছিলেন বিচারপতি জিনাত আরা। আর তৃতীয় হিসেবে যুক্ত হই আমি। সৌভাগ্যের ব্যাপার হলো, আমরা তিনজনই আপিল বিভাগ থেকে অবসরে গিয়েছি। এটা ভাবতে ভালো লাগে।
নারী হিসেবে বিচারিক জীবনের তেমন কোনো সমস্যার সৃষ্টি হয়নি। তবে নারী বিচারকদের প্রধান প্রতিবন্ধকতা হয়, তাদের সাংসারিক জীবন নিয়ে। কেননা, এটা বদলির চাকরি। এক জেলা থেকে আরেক জেলায় বদলির কারণে সংসারটা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এটা অনেক কষ্টসাধ্য। এ ছাড়া বেশ কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতা তো ছিলই।
দৈনিক বাংলা: সর্বোচ্চ আদালতের বিচারক হবেন এমন স্বপ্ন কি বিচারিক জীবনের শুরুতে কখনো দেখেছিলেন?
কৃষ্ণা দেবনাথ: না, এমনটি কখনোই ভাবিনি। এমনকি হাইকোর্টেও থাকাকালীন ভাবিনি যে আমি আপিল বিভাগে যাব। স্বপ্নও ছিল না। তবে আমার স্বপ্ন ছিল আমি জজ হব।
দৈনিক বাংলা: অনেক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবীরাই এখন প্রায় বেঁচে নেই, আপনি কি মনে করেন এখন নতুন যারা আসছেন, তারা সেই খ্যাতিম্যান আইনজীবীদের যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে গড়ে উঠছেন?
কৃষ্ণা দেবনাথ: দেখেন এটা শুধু আইনজীবীদের মধ্যে নয়, শিক্ষা, চিকিৎসা সব ক্ষেত্রেই একই অবস্থা। সবখানেই অবক্ষয়। ধরেন আমার বাবা যে পরিমাণ লেখাপড়া করে জ্ঞান অর্জন করেছেন আমি তো মনি করি না, আমার সেটুকু আছে। কিন্তু আমি আশাবাদী নতুন প্রজন্ম থেকে অনেক ট্যালেন্ট উঠে আসছে, আসবে। একসময় নামকরা আইনজীবীরা ছিলেন। তারপর তাদের উত্তরসূরিরা এসেছেন। ঠিক এমনি করেই নতুনরা আইনজীবী হয়ে উঠবেন। এখন যারা নবীন আইনজীবী তাদের জন্য একজন ভালো আইনজীবী হিসেবে গড়ে ওঠার এটা মোক্ষম সময়। তার কারণ জায়গাটা এখন অনেক খালি, সবকিছু প্রস্তুত হয়ে আছে, এখন দরকার শুধু অধ্যবসায়ের।
দৈনিক বাংলা: আপনার অবসর জীবনের শেষ দিনে বলেছিলেন, বিচারক নিজেকে স্বাধীন মনে না করলে সুবিচার সম্ভব না। এর মানে আপনি কী বুঝিয়েছেন?
কৃষ্ণা দেবনাথ: এই বাক্যটি আমি শুধু কথার কথা হিসেবে বলিনি। আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেই বলেছি। এখনো বিশ্বাস করি, একজন বিচারক নিজেকে যদি স্বাধীন মনে না করেন, তাহলে কাগজে-কলমে স্বাধীনতা দিয়েই কী লাভ। একজন বিচারক নিজের বিবেককে প্রশ্ন করবেন তিনি নিজে স্বাধীন কি না। কাগজে-কলমে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে মাত্র কিছু বছর আগে। তার আগে আমরা বিচারকরা তো নিজেদের পরাধীন মনে করিনি, বিচারের কাজটি কিন্তু স্বাধীনভাবেই করেছি।
আমি মনে করি, একজন বিচারক মনেপ্রাণে নিজেকে স্বাধীন মনে করেন কি না, সেটাই বড় কথা। আমি জোর গলায়, দ্ব্যর্থহীনভাবে বলি ৪১ বছরে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিভিন্ন পদে বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। এই সময়ে তো আমার কাছে কোনো তদবির আসেনি। নিজেকেই সেই জায়গা তৈরি করে নিতে হবে। আমি যখন বিচারকের দায়িত্ব পালন করেছি, তখন অনেক জুনিয়র বিচারক বলতেন তদবির আসে। আমি তখন তাদের বলেছি, কই আমার কাছে তো কোনো তদবির আসে না। তদবির যাতে না আসে সেই পরিবেশ আপনার নিজেকেই তৈরি করে নিতে হবে। বিচারকের স্বাধীনতার বিষয়টি নিজের সততা দিয়ে তৈরি করে নিতে হয়।
তদবির না শুনে একবার এক ব্যক্তিকে জামিন দিইনি বলে সেই সময় আমাকে মেহেরপুরের জেলা জজ থেকেও বদলি করা হয়েছিল। জেলা জজ থেকে সাড়ে চার বছর আমাকে কর্নার করে রাখা হয়েছিল। দুটি জেলার জেলা জজ হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর স্পেশাল জজ করে রাখা হয়েছিল। আমি তো তখনো ভয় পাইনি। আমার কথা হলো, নিজেকে স্বাধীন রাখতে হলে বদলির ভয় করলে চলবে না। কী আর করবে বাংলাদেশের ভেতরেই তো বদলি করবে, আর তো কিছু না। বিচারক যদি বদলির ভয় বা নিজের লাভ-ক্ষতির চিন্তা করেন তাহলে তিনি স্বাধীন বিচারক হিসেবে কীভাবে কাজ করবেন। করতে পারবেন না। বিচারককে তার নিজের সততার ওপর শক্ত অবস্থানে থাকতে হবে। এখন কিন্তু দেওয়ানি মামলায় আপস করার সুযোগ আছে। লিগ্যাল এইডের মাধ্যমে মামলা আপসের সুযোগ আছে। এখন যদি এটা ভালোভাবে কার্যকর হয়, তাহলে ৫০ শতাংশ মামলাই আসবে না। এটা যদি সফল করা যায়, তাহলে মামলার জট অনেক কমে আসবে।
দৈনিক বাংলা: একটি মামলা শেষ করতে বছরের পর বছর লাগে কেন?
কৃষ্ণা দেবনাথ: মামলা শেষ করতে পক্ষগণেরই জোরালো পদক্ষেপের প্রয়োজন। কিন্তু সমস্যা হলো, অনেক সময় কোনো না কোনো পক্ষই চায় না, দ্রুত মামলা শেষ হোক। মামলার জট সৃষ্টির পেছনে বিভিন্ন কারণ রয়েছে। এর জন্য শুধু বিচারকরা দায়ী তা বলা যাবে না বরং বাদী-বিবাদী, দুই পক্ষের আইনজীবীদেরও দায় রয়েছে। একটি মামলার নিষ্পত্তির জন্য কম করে হলেও পাঁচটি পক্ষের সমন্বয় দরকার পড়ে, তবেই মামলার নিষ্পত্তি ঘটে।
এ ছাড়া বিচারকসংকট রয়েছে বড় আকারে। এত বিশাল মামলার জট দ্রুত কমাতে হলে বিপুলসংখ্যক বিচারক নিয়োগ দিতে হবে। যেটা সরকারের পক্ষে সম্ভব না।
দৈনিক বাংলা: বর্তমানে দেখা যাচ্ছে ছোটখাটো যেকোনো বিষয়েই হাইকোর্টের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে, কেন?
কৃষ্ণা দেবনাথ: এখন কিন্তু পত্রিকা খুললেই দেখা যায় হাইকোর্টের বিভিন্ন সংবাদ বা নির্দেশনা নিয়ে খবর ছাপানো হয়েছে। চোখ মেললেই কোর্ট-কাচারির খবর পাওয়া যায়। এর কারণ হচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন সময়মতো পদক্ষেপ না নেয়ায় ভুক্তভোগীকে হাইকোর্টে আসতে হচ্ছে। এটার একটা ভালো দিক আছে, মানুষ আদালতে এলে প্রতিকার পায়। আবার কিছু সময় দেখি একটা সাধারণ বিষয় নিয়েও মানুষকে হাইকোর্টে আসতে হয়। স্থানীয় প্রশাসন যদি সঠিক সময়ে সঠিক কাজটা করে তাহলে কিন্তু আদালতের ওপর এই চাপ আসে না। তারা সেটি করছে না। অনেক সময় আদালতের নির্দেশের পরও অনেক কিছু বাস্তবায়ন করা হয় না। এটা ভালো দিক না।
দৈনিক বাংলা: বিচার বিভাগকে কি আরও শক্তিশালী হতে হবে, নাকি শক্তিশালীই আছে?
কৃষ্ণা দেবনাথ: বিচার বিভাগকে কেউ শক্তিশালী করে দেবে না। বিচার বিভাগকে নিজেকেই শক্তিশালী হতে হবে। একটা আদেশ হওয়ার পর ঝড়ঝাপটা আসতে পারে। সেটা বহন করার মতো বিচারক যদি আমরা হতে পারি তাহলে বিচার বিভাগ শক্তিশালী হবে। বিচারক যদি সেই ঝড়ঝাপটা সইবার ক্ষমতা না রাখেন তাহলে সেটা হবে না।
দৈনিক বাংলা: বার ও বেঞ্চের সম্পর্ককে বলা হয় একটি পাখির দুটি ডানা। সম্প্রতি বিভিন্ন বারে আইনজীবী ও বিচারকদের সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছে, এটিকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
কৃষ্ণা দেবনাথ: সর্বজনীনভাবে আমি বলব, সাবলীল সম্পর্ক হ্রাস পেয়েছে। অনেক আগে থেকেই এই সম্পর্ক নষ্ট হয়েছে। অনেক সময় বিচারকের দরজায় লাথি দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে। সার্বিকভাবে বলব আইনজীবী ও বিচারকদের মধ্যে সম্পর্ক অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছে। আমার বক্তব্য হলো, একজন বিচারক যেহেতু একটু ওপরে বসেন, আইনজীবীরা একটু নিচে দাঁড়ান, এই যে বিচারকরা একটু অগ্রাধিকার স্থানে থাকেন সে জন্য বিচারকদের অনেক কিছু করা যায়, অনেক কিছু করা যায় না। সেটি তাদের মাথায় থাকতে হবে। এ ছাড়া আইনজীবীদেরও সহিষ্ণু হতে হবে। দুপক্ষই যদি সহিষ্ণু হয় তাহলে কিন্তু সম্পর্কের মধ্যে চিড় ধরবে না।
আদালতের মর্যাদা কমলে কিন্তু আইনজীবীদেরই মর্যাদা কমবে। এটা তাদের বুঝতে হবে। কোনো বিচারকের ভুল হলে আইনজীবীরা তার ওপরের বিচারককে বলতে পারেন। সুপ্রিম কোর্ট আছে, আইন মন্ত্রণালয় আছে। সেখানে বলার সুযোগ আছে। কিন্তু তাই বলে স্লোগান দেয়া উচিত না। এ ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার সময় এসেছে বলে তিনি মনে করেন।
দৈনিক বাংলা: দীর্ঘ ৪১ বছরের বিচারিক জীবনে পূরণীয় ঘটনা বা অপ্রাপ্তি বলে কিছু আছে কি না?
কৃষ্ণা দেবনাথ: মানিকগঞ্জে একটি অ্যাসিড নিক্ষেপ মামলায় আসামিকে সাজা দিতে পারিনি, এই একটি বিষয় আমার মনে এখনো গেঁথে আছে। আইনজীবীর ভুলের কারণে সেই আসামিকে সাজা দিতে পারিনি। যে কারণে খুব কষ্ট লেগেছিল। কারণ মামলায় আসামি শনাক্ত একটা বড় ব্যাপার। মামলায় বলা হয়েছে, চাঁদের আলোতে আসামিকে দেখা গেছে। কিন্তু পঞ্জিকাতে দেখা গেল সেদিন অমাবস্যা ছিল। তার ওপর আবার সেদিন ওই এলাকায় বিদ্যুৎ ছিল না। আইনজীবী মামলা শক্ত করতে গিয়ে চাঁদের আলোতে দেখেছে বলে বিবরণ দিয়েছেন কিন্তু সেদিন সেটা ছিল না। যে কারণে আসামি শনাক্ত কঠিন হয়ে পড়ে। অতিরঞ্জিত বিবরণ মূল ঘটনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। অথচ ছেলেটি মেয়েটিকে স্কুলে যাওয়ার সময় উত্ত্যক্ত করত, সেটি উল্লেখ থাকলেও হতো। অতিরঞ্জিত করার কারণে আসামি বেঁচে যায়। এই ঘটনা আমাকে পীড়া দেয়। তার কারণ চোখের সামনে দেখেছিলাম মেয়েটির ঝলসানো মুখ। কিন্তু তার ন্যায়বিচার আমি দিতে পারিনি।
দৈনিক বাংলা: দীর্ঘ ৪১ বছরের বিচারিক জীবনে আপনি কতজন আসামিকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দিয়েছেন?
কৃষ্ণা দেবনাথ: এটা বলতে পারব না। তার কারণ, আমি গুনে রাখিনি। তবে সর্বোচ্চ সাজা দেয়ার ব্যাপারে আমি অনেক সতর্ক ছিলাম। আমি দুইয়ে দুইয়ে চার না হওয়া পর্যন্ত কাউকে সাজা দিইনি। অনেক আসামিকে সর্বোচ্চ সাজা দিয়েও আমি স্বস্তি পেয়েছি। তার কারণ অকাট্য দলিল-প্রমাণ ছিল। সব থেকে বড় স্বস্তি পেয়েছি, যখন আমি ঢাকার জেলা জজ ছিলাম। বঙ্গবন্ধু হত্যার ফাঁসির আসামিদের সাজা কার্যকর হবে। তখন ফাঁসির আদেশ কার্যকর করার জন্য শেষ যে স্বাক্ষর দিতে হয়, জেলা জজ হিসেবে সেটা আমি দিয়েছিলাম। ওই দিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে আমার কাছে লাল নথি এল, আমি তাতে স্বাক্ষর করলাম। এরপরই টিভিতে দেখলাম কারা কর্তৃপক্ষ ফাঁসি কার্যকর শুরু করেছে। ঐতিহাসিক সেই মামলাটিতে শেষ স্বাক্ষর করেছিলাম। এটা আমাকে অনুপ্রাণিত করে।
দৈনিক বাংলা: অবসরে কেমন কাটছে?
কৃষ্ণা দেবনাথ: অবসরে একদমই অবসর নেই। আমি রুট (প্রান্তিক) লেভেলের ভিকটিমদের নিয়ে কাজ করতে চাই। সেটাই শুরু করেছি। দেখা যাক কতটা করতে পারি।
দৈনিক বাংলা: ধন্যবাদ আপনাকে।
কৃষ্ণা দেবনাথ: আপনাকেও ধন্যবাদ।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
তিনি গতকাল শনিবার রাতে এক বার্তায় লিখেছেন, ‘তাৎক্ষণিকভাবে যুদ্ধবিরতিতে এবং আলোচনায় যোগদানে সম্মত হওয়ায় আমি ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই।’
প্রধান উপদেষ্টা কার্যকর মধ্যস্থতার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিওর গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, ‘কূটনীতির মাধ্যমে মতপার্থক্য নিরসনে বাংলাদেশ দুই প্রতিবেশী দেশের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখবে।’
গত বছরের জুলাই অগাস্টের আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের রাজনীতি সাময়িক নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
আজ শনিবার রাতে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক থেকে এ সিদ্ধান্ত এসেছে।
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে গত দুদিন ধরে কর্মসূচি পালন করছে সদ্যগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) বিভিন্ন দল ও সংগঠন।
এনসিপি গঠিত হওয়ার পর থেকেই ছাত্র জনতার আন্দোলনে হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন অপরাধের বিচার ও তার দায়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে আসছিল।
বুধবার মধ্যরাতে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সময়ের সাবেক রাষ্ট্রপতি মো.আবদুল হামিদ থাইল্যান্ডে গেলে নতুন করে কর্মসূচি নেয় মাঠে নামে এনসিপি।
শনিবার রাতে এ নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসে উপদেষ্টা পরিষদ। বৈঠক শেষে সরকারের সিদ্ধান্তের কথা জানান উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার নেতাদের বিচার কার্যসম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জুলাই আন্দোলনের নেতাকর্মীদের নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের সুরক্ষার জন্য সন্ত্রাস বিরোধী আইনের অধীনে সাইবার স্পেস-সহ আওয়ামি লীগ এর যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরিপত্র পরবর্তী কর্মদিবসে জারি করা হবে।
আসিফ নজরুল বলেন, উপদেষ্টা পরিষদের এক বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল আইনের সংশোধনী অনুমোদিত হয়েছে। সংশোধনী অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল কোনও রাজনৈতিক দল, তার অঙ্গসংগঠন বা সমর্থক গোষ্ঠীকে শাস্তি দিতে পারবে।
তিনি বলেন, আজকের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে জুলাই ঘোষণাপত্র আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে চূড়ান্ত করে প্রকাশ করার সিদ্ধান্তও গৃহীত হয়েছে।
এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে শুক্রবার (৯ মে) সকাল থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় দেশে কোনো রোগীর মৃত্যু হয়নি। এ সময়ে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৭ জন।
শনিবার (১০ মে) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ অ্যান্ড ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
বিজ্ঞপ্তি থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ভর্তি হয়েছে ৪৭ জন। নতুন আক্রান্তের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১৮ জন। আর ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে আরও ২৯ জন।
বিজ্ঞপ্তি থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, চলতি বছর আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে ৬০ দশমিক ৪ শতাংশ পুরুষ এবং ৪০ দশমিক ৬ শতাংশ নারী।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১০ মে পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন মোট ২ হাজার ৯৭২ জন। এর মধ্যে ৬০ দশমিক ৪ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৯ দশমিক ৬ শতাংশ নারী।
সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের দেশত্যাগের ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করতে ইতোমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেছেন, ‘কমিটি তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে। প্রতিবেদন অনুযায়ী যারা এ ঘটনায় দায়ী বা দোষী সাব্যস্ত হবে, তাদের সবার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
শনিবার (১০ মে) দুপুরে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ও ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি এসব কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আবদুল হামিদের দেশত্যাগের ঘটনায় ইতোমধ্যে কয়েকজনকে সাসপেন্ড (বরখাস্ত) করা হয়েছে এবং কাউকে অ্যাটাচ করা হয়েছে। যেহেতু এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, কমিটি পুঙ্খানুপুঙ্খ দেখে ব্যবস্থা নেবে। যারা দোষী তাদের শাস্তি পেতেই হবে।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরানোর বিষয়ে আইনি প্রক্রিয়ায় কাজ করছে ইন্টারপোল।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘আমার আজকের বিমানবন্দর পরিদর্শনের মূল উদ্দেশ্য ছিল বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া কীভাবে সম্পন্ন হয়, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানা। ২০১১ সালের পর থেকে আমার ইমিগ্রেশন ক্রস করা হয়নি। তাই ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়ার আপডেট জানতে এ পরিদর্শন।’
তিনি বলেন, ‘বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া আগের চেয়ে অনেক উন্নত ও যুগোপযোগী হয়েছে। এ উন্নতির ধারা যেন অব্যাহত থাকে, এই আশা করছি।’
পরিদর্শনকালে উপদেষ্টা ইমিগ্রেশনের জন্য অপেক্ষারত যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের খোঁজখবর নেন ও বিভিন্ন সমস্যার কথা শোনেন। তিনি সেসব বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ইমিগ্রেশনে দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের তাৎক্ষণিক নির্দেশ দেন।
বাংলাদেশ সচিবালয় এবং প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনা ও আশপাশের এলাকায় যেকোনো সভা, সমাবেশ, গণজমায়েত, মিছিল ও শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
শনিবার (১০ মে) দুপুরে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলীর সই করা এক গণবিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জনশৃঙ্খলা ও প্রধান উপদেষ্টার নিরাপত্তা রক্ষার্থে বাংলাদেশ সচিবালয় এবং প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় (হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়, কাকরাইল মসজিদ মোড়, অফিসার্স ক্লাব মোড়, মিন্টু রোড) যেকোনো প্রকার সভা-সমাবেশ, গণজমায়েত, মিছিল ও শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করা হলো।
পুলিশ অধ্যাদেশ ১৯৭৬ এর ২৯ ধারায় বর্ণিত অর্পিত ক্ষমতাবলে আজ (শনিবার) থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই আদেশ বহাল থাকবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
বরেণ্য সংগীতশিল্পী, গবেষক ও লেখক মুস্তাফা জামান আব্বাসীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
শনিবার এক শোকবার্তায় মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, একুশে পদকপ্রাপ্ত এই গুণী শিল্পী বাংলাদেশের সংগীত জগতে যে অবদান রেখেছেন তা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
প্রধান উপদেষ্টা মুস্তাফা জামান আব্বাসীর আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “উপমহাদেশের খ্যাতনামা সংগীত পরিবারে জন্ম নেয়া বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী এই শিল্পীর গান ও গবেষণা বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে নিত্যনতুন চিন্তা ও সৃষ্টির খোরাক জোগাবে।”
প্রসঙ্গত, মুস্তাফা জামান আব্বাসী ৮৭ বছর বয়স আজ সকালে মৃত্যুবরণ করেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরাতে ইন্টারপোলের মাধ্যমে চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ।
শনিবার (১০ মে) সকালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন ব্যবস্থা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘শেখ হাসিনাকে ফেরাতে সবসময়ই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে, ইন্টারপোল তো আমার কথা অনুযায়ী কাজ করবে না! এক্ষেত্রে তারা (ইন্টারপোল) তাদের আইন-কানুন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।’
এসময় সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের দেশত্যাগের ঘটনা প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন, ‘প্রাথমিকভাবে কয়েকজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ঘটনার তদন্তে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে।’
‘তিন কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। রিপোর্টে আরও কারও সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে,’ যোগ করেন তিনি।
উপদেষ্টা বলেন, ‘আব্দুল হামিদের দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞা চেয়ে জেলা ডিএসবির আবেদনের বিষয়টি আমার জানা নেই।’
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘দাবি-দাওয়ার বিষয়ে রাস্তায় আন্দোলন করলে জনদুর্ভোগ হয়। এ বিষয়টি মাথায় রেখে রাস্তা ছেড়ে অন্য কোথাও আন্দোলন করলে ভালো হয়।’
এ ব্যাপারে জনগণকে সতর্ক করার জন্য সাংবাদিকদের সাহায্য চান উপদেষ্টা।
গতকাল (শুক্রবার) যমুনার সামনে ছিলেন আন্দোলনকারীরা। পরে বলার পর তারা শাহবাগে গেছেন। সেখানেও দুর্ভোগ হচ্ছে। তবে তারা ইমার্জেন্সিগুলো দেখছেন,’ বলেন জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
বরেণ্য সংগীতশিল্পী, গবেষক ও লেখক মুস্তাফা জামান আব্বাসী আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
আজ শনিবার সকালে বনানীর একটি হাসপাতালে তিনি মারা যান।
তাঁর মেয়ে শারমিনী আব্বাসী সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। মৃত্যুকালে তিনি দুই কন্যা এবং বহু ভক্ত, অনুরাগী, শুভাকাঙ্ক্ষী রেখে গেছেন। তিনি ছিলেন পল্লিগীতির অগ্রপথিক আব্বাসউদ্দীন আহমেদের পুত্র।
বেশ কিছুদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন মুস্তাফা জামান আব্বাসী। তিনি গতকাল শুক্রবার শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। আজ ভোর সাড়ে ৫ টায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
গুলশান আজাদ মসজিদে আজ বাদ জোহর তাঁর নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী মুস্তাফা জামান আব্বাসী ১৯৩৬ সালের ৮ ডিসেম্বর উপমহাদেশের খ্যাতনামা সংগীত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা আব্বাসউদ্দীন আহমেদ ছিলেন পল্লীগীতির অগ্রপথিক এবং দেশের পল্লীসংগীতকে তিনিই প্রথম বিশ্বের দেশে দেশে জনপ্রিয় করেছেন।
মুস্তাফা জামান আব্বাসীর চাচা আবদুল করিম ছিলেন পল্লীগীতি ও ভাওয়াইয়া-ভাটিয়ালির জনপ্রিয় শিল্পী। বড় ভাই মোস্তফা কামাল ছিলেন প্রধান বিচারপতি। বোন ফেরদৌসী রহমান ও ভাতিজি নাশিদ কামালও সংগীতাঙ্গনে সুপ্রতিষ্ঠিত। তাঁর স্ত্রী আসমা আব্বাসী ছিলেন একজন প্রথিতযশা শিক্ষক ও লেখক। তিনি গত বছর মারা গেছেন।
ভারতের কোচবিহারের বলরামপুর গ্রামে জন্ম নেওয়া আব্বাসী শৈশব কাটিয়েছেন কলকাতায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ, এমএ ডিগ্রি অর্জনের পর হার্ভার্ড গ্রুপ থেকে মার্কেটিং বিষয়ে উচ্চশিক্ষা নেন। দীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের নানা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।
লোকসংগীত গবেষণা ও সংগ্রহে তার অবদান অনন্য। তিনি দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে ফোক মিউজিক রিসার্চ গ্রুপের নেতৃত্ব দিয়েছেন।
মুস্তাফা জামান আব্বাসী ২৫টির বেশি দেশে ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া, নজরুলগীতি পরিবেশন করে বাংলাদেশের সংগীতকে পৌঁছে দিয়েছেন বিশ্ব পরিমণ্ডলে। তিনি ছিলেন একজন গবেষক।
মুস্তাফা জামান আব্বাসীর উপস্থাপনায় বিটিভির ‘ভরা নদীর বাঁকে’, ‘আমার ঠিকানা’, ‘আপন ভুবন’ প্রভৃতি অনুষ্ঠান জনপ্রিয়তা পেয়েছে।সমাজসেবায়ও তিনি ছিলেন সক্রিয়, রোটারি ক্লাবের গভর্নর হিসেবে বহু উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন মুস্তাফা জামান আব্বাসী।
মুস্তাফা জামান আব্বাসী রচিত গ্রন্থের মধ্যে অন্যতম ‘লোকসঙ্গীতের ইতিহাস’, ‘ভাটির দ্যাশের ভাটিয়ালি’, ‘রুমির অলৌকিক বাগান’, উপন্যাস ‘হরিণাক্ষি’, স্মৃতিকথা ‘স্বপ্নরা থাকে স্বপ্নের ওধারে’ এবং ইংরেজি জীবনী।
বাংলা সংস্কৃতিতে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি একুশে পদকসহ অসংখ্য সম্মাননা লাভ করেছেন।
প্রায় এক যুগ আগে নিখোঁজ হওয়া বিএনপি নেতা মো. সাজেদুল ইসলাম সুমনের বাসায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়ে পুলিশের টিম যাওয়ার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
গতকাল শুক্রবার ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান গণমাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় এই দুঃখ প্রকাশ করেন।
এতে বলা হয়, গত বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আকরাম হোসেনের নেতৃত্বে একটি দল মুলতবি ওয়ারেন্ট তামিলের জন্য রাজধানীর তেজগাঁওয়ের শাহিনবাগ এলাকায় যায়। একপর্যায়ে তারা নিখোঁজ বিএনপি নেতা মো. সাজেদুল ইসলাম সুমনের খোঁজে তার বাসায় যান। ওই দলের সদস্যরা সবাই ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে নতুন যোগদান করেছে। এ জন্য তাদের কেউ জানতেন না, এটা এক যুগের বেশি সময় ধরে নিখোঁজ বিএনপি নেতা মো. সাজেদুল ইসলাম সুমনের বাসা। নিখোঁজ বিএনপি নেতা সুমন সম্পর্কে তাদের পূর্ব ধারণা না থাকায় অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট এসআইকে তার দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
বার্তায় আরও বলা হয়, অনাকাঙ্ক্ষিত এই ঘটনার জন্য ঢাকা মহানগর পুলিশ আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করছে। পতিত ফ্যাসিবাদী সরকারের নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার প্রত্যেক ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের প্রতি ডিএমপি সহমর্মিতা প্রকাশ করছে এবং তাদের নিরাপত্তায় ডিএমপি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
প্রসঙ্গত, সাজেদুল ইসলাম সুমন ঢাকা মহানগর ৩৮ (বর্তমান ২৫) নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক। তিনি ২০১৩ সালের ৪ ডিসেম্বর নিখোঁজ হন। পরিবারের ভাষ্য, তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এরপর থেকে তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
ঢাকা থেকে খুলনাগামী জাহানাবাদ এক্সপ্রেস ট্রেনের দুটি কোচ ভাঙ্গা বামনকান্দা জংশন এলাকায় লাইনচ্যুত হওয়ায় ১২ ঘন্টা ধরে বন্ধ রয়েছে দক্ষিণাঞ্চলের রেল চলাচল। পয়েন্টম্যানের ভুল সিগন্যাল দেওয়ার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। ঘটনাটি তদন্তে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং পয়েন্টম্যানকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার (০৯ মে) রাত সাড়ে ৯টা দিকে দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ঢাকা-খুলনা, ঢাকা-বেনাপোল ও ঢাকা- রাজবাড়ী রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয় যায়। ফলে দুর্ভোগে পড়েন কয়েকশ যাত্রী। তবে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
এদিকে, লাইনচ্যুত কোচ ২টি উদ্ধারে ঈশ্বরদী ও খুলনা থেকে ২টি রিলিফ ট্রেন বা ক্রেনসহ শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উদ্ধার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে পাকশি বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা হাচিনা খাতুন বলেন, ‘গতকাল (শুক্রবার) রাত থেকে লাইনচ্যুত কোচ ২টি উদ্ধারে রাজবাড়ী ও খুলনা থেকে ২টি ক্রেন এনে লাইন সচল করতে কাজ করছি।’
হাচিনা খাতুন বলেন, ‘পয়েন্টম্যান নজরুল ইসলাম কতৃপক্ষ থেকে অনুমতি না নিয়েই সিগনাল বা পয়েন্ট পরিবর্তন করেছে। তার ভুল করার বিষয় সত্যতা পেয়েছি। একারণে তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।’
এছাড়া এ ঘটনায় ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আশা করছি দুপুর নাগাদ লাইনটি সচল করা সম্ভব হবে।’
এ বিষয় ভাঙ্গা জংশনের সহকারী রেল স্টেশন মাস্টার সুমন বাড়ৈ জানান, ঢাকা থেকে খুলনা গামী জাহানাবাদ এক্সপ্রেসটি ভাঙ্গা রেল জংশন থেকে বের হওয়ার কিছুদূর পরে গিয়ে ইঞ্জিন সহ একটি বগি লাইনচ্যুত হয়ে যায়। সামনের ইঞ্জিন ও লাগেজ ভ্যান দুইটি এক লাইন থেকে অন্য লাইনে চলে যায়।
তিনি আরও বলেন, ‘পয়েন্টম্যান নজরুলের ভুলের কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।’
সুমন বাড়ৈ বলেন, এ দুর্ঘটনার পরে গতকাল (শুক্রবার) রাত নয়টা দশ মিনিট থেকে এখন পর্যন্ত পদ্মা সেতু হয়ে দক্ষিণাঞ্চলের ৩টি রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। রাজবাড়ী ও খুলনা থেকে উদ্ধারকারী ক্রেন সহ কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা কাজ করছেন। দুপুর পর্যন্ত লাইনটি সচল করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
এ ব্যাপারে ভাঙ্গা বামনকান্দা রেল জংশনের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ খায়রুজ্জামান সিকদার জানান, ট্রেনটি লাইনচ্যুত হওয়াতে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। রাতে সকল যাত্রী বিভিন্ন পরিবহনে চলে গিয়েছে।
বাংলাদেশের ৪টি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের ইউটিউব সম্প্রচার ভারতে বন্ধ করা হয়েছে। দেশটির সরকারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত উদ্বেগের কারণ দেখিয়ে চ্যানেলগুলো জিও ব্লক করে দিয়েছে ইউটিউব।
বন্ধ হওয়া চ্যানেলগুলো হলো—যমুনা, একাত্তর, বাংলাভিশন এবং মোহনা টেলিভিশন।
শুক্রবার (৯ মে) তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান ডিসমিসল্যাব তাদের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
ভারতের ভূ-অবস্থান থেকে এই চ্যানেলগুলোতে প্রবেশের চেষ্টা করলে একটি বার্তা সামনে আসে। তাতে বলা হয়, ‘এই কনটেন্টটি বর্তমানে এই দেশে প্রবেশযোগ্য নয়। কারণ, এটি জাতীয় নিরাপত্তা বা জনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত সরকারি আদেশের আওতায় রয়েছে।’
এ বিষয়ে ইউটিউব থেকে আনুষ্ঠানিক বার্তা পাওয়ার কথা ডিসমিসল্যাবকে নিশ্চিত করেছে যমুনা টেলিভিশন। ভারত সরকারের অনুরোধে তাদের সব পুরোনো ও ভবিষ্যতের অনুষ্ঠান দেশটির দর্শকদের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
ডিসমিসল্যাব এই চার চ্যানেলের ইউটিউব লিংক নয়াদিল্লি ও কলকাতাভিত্তিক দুইজন সাংবাদিককে পাঠায়। তারাও নিশ্চিত করেন যে চ্যানেল চারটিতে প্রবেশ করা যাচ্ছে না।
জিও ব্লকিং মানে দর্শকের ভৌগোলিক অবস্থানের ভিত্তিতে কনটেন্ট অ্যাক্সেস সীমাবদ্ধ করা। এই ক্ষেত্রে, ব্লক করা বাংলাদেশি চ্যানেলগুলো বিশ্বব্যাপী অ্যাক্সেসযোগ্য (দেখা গেলেও) থাকলেও ভারতের ব্যবহারকারীরা দেখতে পাবেন না।
গত ২২ এপ্রিল পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার প্রতিক্রিয়ায় ৬ মে দিবাগত রাতে ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে পরিচালিত এই হামলা নিয়ে দেশ দুটির মধ্যে উত্তেজনা চরমে। এরই মধ্যে বাংলাদেশের চ্যানেলগুলোর সম্প্রচার ভারতে বন্ধ করা হলো।
এর আগে এক্স জানায়, ভারত সরকার আট হাজারের বেশি অ্যাকাউন্ট ব্লক করার নির্দেশ দিয়েছে, যার মধ্যে মাক্তুব মিডিয়া, দ্য কাশ্মিরিয়াত ও ফ্রি প্রেস কাশ্মিরের মতো স্বাধীন সংবাদমাধ্যমের অ্যাকাউন্টও রয়েছে।
গত মাসে ভারতের নির্দেশে বেশকিছু পাকিস্তানি ইউটিউব চ্যানেল এবং রাজনীতিবিদ ও তারকাদের ইনস্টাগ্রাম আইডি ভারতে ব্লক করা হয়েছে বলেও ডিসমিসল্যাবের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
এদিকে, ভারতের এই পদক্ষেপে দেশটিতে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিক—যারা এসব চ্যানেল নিয়মিত দেখেন তাদের অধিকার ক্ষুণ্ন হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের কাজ ভোক্তা অধিকারের আন্তর্জাতিক রীতির পরিপন্থি।’
এ ব্যাপারে ইউটিউবের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে বলে জানান ফয়েজ আহমদ। তিনি বলেন, ‘আমরা ইউটিউবের কাছে এর সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা চাইব। যদি সন্তোষজনক ব্যাখ্যা না পাই, তাহলে পাল্টা পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হব।’
গত বছরের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত গণহত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আগামী সোমবার (১২ মে) তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করবে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। শুক্রবার এক ফেসবুক পোস্টে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম এ তথ্য জানিয়েছেন।
তাজুল ইসলাম বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জুলাই গণহত্যার তদন্ত রিপোর্ট আগামী সোমবার চিফ প্রসিকিউটর বরাবরে দাখিল করবে আশা করছি। তদন্ত রিপোর্ট দাখিল হওয়ার পর আনুষ্ঠানিক অভিযোগ, অর্থাৎ ‘ফরমাল চার্জ’ দাখিলের মাধ্যমে হাসিনার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচারকাজ শুরু হবে।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে চানখারপুল হত্যাকাণ্ডের দায়ে সিনিয়র পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করা হয়েছে। ওই হত্যাকাণ্ডের দায়ে আনুষ্ঠানিক বিচারের জন্য ফরমাল চার্জ চলতি সপ্তাহেই দাখিল করা হবে এবং এর মাধ্যমে জুলাই গণহত্যার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হবে ইনশাআল্লাহ। এর আগে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি জুলাই-আগস্টের গণহত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত ২০ এপ্রিলের মধ্যে শেষ করতে নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন। প্রসিকিউশনের সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত চিফ প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম। গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর জুলাই-আগস্টের গণহত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা দুই মামলায় শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত দুই মাসের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর গুলি, হত্যার নির্দেশদাতা ও পরিকল্পনাকারী হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার চলছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলন ঠেকাতে আওয়ামী লীগ সরকার নির্বিচারে হত্যা চালায়। প্রায় দেড় হাজার মানুষ প্রাণ হারায় এই আন্দোলনে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্যে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের ১৫ বছরের শাসনের অবসান হয়। এরপর শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিলে জুলাই-আগস্টের গণহত্যার বিচার করার সিদ্ধান্ত নেয়।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধকরণ চাইলে বা বিচারিক আদালত এ সম্পর্কে কোনো পর্যবেক্ষণ বা রায় এলে অবশ্যই আইনানুগভাবে দ্রুত আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা যাবে।’
শুক্রবার তার ভেরিফাইড ফেসবুকে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে কিছু মানুষ জঘন্য মিথ্যাচার ও আক্রমণাত্মক বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করছে। আমি আপনাদের সুস্পষ্টভাবে জানাতে চাই খুনের মামলার আসামি সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বিদেশ গমনে বাধা দেওয়ার দায়িত্ব পুলিশ ও গোয়েন্দা এজেন্সিগুলোর। যা কোনোভাবেই আমার আইন মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারভুক্ত বিষয় নয়।’
তিনি বলেন, ‘আমার মন্ত্রণালয়ের অধীনে আছেন নিম্নআদালতের বিচারকরা। আপনারা নিশ্চয়ই জানেন, আদালতের বিচারকদের দায়িত্ব বিমানবন্দর পাহারা দেওয়া না বা কারো চলাচলে বাধা দেওয়া না।’
ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণের সুযোগ রাখার লক্ষ্যে আইসিটি আইনে সংগঠনকে নিষিদ্ধ করার বিধান আইন মন্ত্রণালয়ের খসড়ায় ছিল। আইন উপদেষ্টা হিসেবে আমি নিজে এটা উপদেষ্টা পরিষদের সভায় উত্থাপন করেছি। আমার উত্থাপিত খসড়ার আমিই বিরোধিতা করব এটা কিভাবে সম্ভব? উপদেষ্টা পরিষদের সভায় কোন উপদেষ্টা কী ভূমিকা রেখেছেন এনিয়ে আমাকে, ছাত্র উপদেষ্টাদের বা অন্য কাউকে দোষারোপ করা থেকে বিরত থাকুন।’
তিনি বলেন, সেখানে যা সিদ্ধান্ত হয় তার দায় দায়িত্ব আমাদের প্রতিটি উপদেষ্টার। আমাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রশ্নে কোনো দ্বিমত নেই। তবে পদ্ধতি নিয়ে সবার নিজস্ব মত থাকতেই পারে। তিনি বলেন, ‘আমাদের এটা মনে রাখা প্রয়োজন যে, আইসিটি আইন চাইলেই আমরা কয়েকদিনের মধ্যে সংশোধন করতে পারবো। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার জন্য সন্ত্রাস দমন আইনসহ অন্য আইনগুলোও আছে। কাজেই আইন কোনো সমস্যা না।’ আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধকরণ চাইলে বা বিচারিক আদালত এ সম্পর্কে কোনো পর্যবেক্ষণ বা রায় আসলে অবশ্যই আইনানুগভাবে দ্রুত আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা যাবে। আমরা সেই প্রত্যাশায় আছি। ইনশাল্লাহ।’