২০১৪ সাল থেকে আট বছর ধরে বাসাবাড়িতে গ্যাস সংযোগ দেয়া বন্ধ রয়েছে। কিন্তু এ সময় দেশের সবচেয়ে বড় গ্যাস বিতরণ প্রতিষ্ঠান তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড ৯ লাখ ৭৭ হাজার গ্রাহককে সংযোগ দিয়েছে। এর মধ্যে ২০১৬ সালে সাত লাখ গ্রাহককে তিতাসের বোর্ডসভা বৈধ করে। এখনো ২ লাখ ৭৭ হাজার গ্রাহক বৈধ হননি। অবশ্য এসব গ্রাহককে প্রতিষ্ঠানটির বোর্ডসভা বৈধ না করলেও তারা বৈধ গ্রাহক হিসেবে তিতাসের ব্যাংক হিসাবে মাসিক বিল জমা দিচ্ছেন।
গত আট বছরে অবৈধ সংযোগ বৈধ কারা করেছেন, তা চিহ্নিত করতে পারেনি তিতাস কর্তৃপক্ষ, কারোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেয়নি। গত আট বছরে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের বার্ষিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে বন্ধ থাকা গ্যাস সংযোগের সময় আবাসিক গ্রাহক বাড়ার এই অস্বাভাবিক চিত্র পাওয়া গেছে।
তিতাসের বোর্ডসভা বৈধ না করলেও ২ লাখ ৭৭ হাজার গ্রাহকের মাসিক বিল যায় তিতাসের ব্যাংক হিসাবে। এর বাইরে চোরাইপথে তিতাসে আরও অন্তত ১০ লাখ গ্রাহক রয়েছেন, যার অর্থ তিতাসের ব্যাংক হিসাবে যায় না। এসব অর্থ তিতাসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ভাগাভাগি করে নেন। তিতাসের নিজস্ব হিসাব বলছে, ঢাকা ও আশপাশের চার জেলায় তিতাস গ্যাসের প্রায় ২৪৫ কিলোমিটার অবৈধ পাইপলাইন রয়েছে। এই পাইপলাইনে অন্তত ১০ লাখ অবৈধ গ্রাহক গ্যাস ব্যবহার করছেন। সেই টাকা তিতাস পায় না। এ ছাড়া তিতাস অঞ্চলে থাকা শিল্পকারখানায় গ্যাস চুরি তো আছেই। আর এর সবকিছুই চাপিয়ে দেয়া হয় তিতাসের বৈধ আবাসিক গ্রাহক ও প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষতি বা সিস্টেম লসের ওপর।
বন্ধ থাকার পরও বাসাবাড়িতে তিতাসের সংযোগ কীভাবে হচ্ছে জানতে চাইলে গতকাল রোববার তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. হারুনুর রশিদ মোল্লাহ্ টেলিফোনে দৈনিক বাংলাকে বলেন, ২০১৬ সালে একবার অবৈধ সংযোগগুলোকে বৈধতা দেয়া হয়েছিল, এরপর আর হয়নি। সংযোগ বন্ধ থাকার পর গ্রাহকের সংখ্যা বাড়ার সুযোগ নেই।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘বন্ধ থাকার সময় যারা নতুন গ্রাহক হিসেবে গ্যাস ব্যবহার করছেন তারা তিতাসের গ্রাহক নন, তারা অবৈধভাবে গ্যাস ব্যবহার করছেন। আমরা এই ধরনের গ্রাহককে নিয়মিত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করি।’
তিতাস গ্যাসের সাবেক দুই শীর্ষ কর্মকর্তা দৈনিক বাংলাকে বলেছেন, ৯ লাখ ৭৭ হাজার অবৈধ গ্যাস সংযোগ বৈধ করার পেছনে তিতাসের বিভিন্ন জোনে কর্মরত কর্মকর্তা থেকে প্রধান কার্যালয়ের কম্পিউটারের ডেটা সংরক্ষণের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা যুক্ত। পুরোনো ডিমান্ড নোট ও পেছনের তারিখ দেখিয়ে তারা এসব সংযোগকে বৈধ করেছে। উদাহরণ হিসেবে তারা বলেন, ধরুন আপনি ২০২২ সালের আগস্ট মাসে একটি সংযোগের জন্য মোটা অঙ্কের ঘুষ দিলেন। ঘুষ নেয়া তিতাসের লোকরা সংযোগটি দেখাবে ২০১০ সালের আবেদন হিসেবে। আর আপনার সংযোগটি চালু হয়েছে ২০১৬ সালে, এভাবে তারা পুরোনো তারিখে তিতাসের কম্পিউটারে ডেটাবেজে তথ্যটি রাখবে। আপনাকে ব্যাংকে টাকা জমা দিতে হবে গত পাঁচ বছরের পুরোনো বকেয়া। বিষয়টি এমন, আপনি ২০১৪ সালে সংযোগটি নিয়েছিলেন কিন্তু এখন পর্যন্ত বিল জমা দেননি। এটি ধরতে হলে সরকারকে নতুন সফটওয়্যার কেনার পরামর্শ দেন তারা।
তারা আরও বলেন, তিতাস অঞ্চলে ২৫০ কিলোমিটার অবৈধ পাইপলাইন আছে। এখানে কম করে হলেও ১০ লাখ গ্রাহক রয়েছেন। এসব গ্রাহকের মাসিক বিল তিতাস পায় না। ওই গ্রাহকদের বিল স্থানীয় তিতাসের সিন্ডিকেটরা তুলে নেয়। প্রতি মাসে এসব গ্রাহকের কাছ থেকে ১০০ কোটি টাকা বিল তুলে নিজেরা ভাগাভাগি করে নেয়। কিন্তু তিতাসে যতখানি গ্যাস কেনা হয়, সরকারের পেট্রোবাংলার কাছ থেকে তার হিসাব থাকে। সেই হিসাব মেলানো হয় অন্যভাবে। তিতাসের একজন আবাসিক গ্রাহকের যদি প্রিপেইড মিটার না থাকে তাহলে ফিক্সড বিল ১ হাজার ৮৫ টাকা। এই ১ হাজার ৮৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে মাসে ওই গ্রাহক ৭৮ ইউনিট গ্যাস পোড়াবেন এটা ধরে। কিন্তু তিতাস এলাকায় যত প্রিপেইড মিটার আছে তাদের সবার গড় করে দেখা গেছে গ্রাহকের মাসিক গ্যাস খরচ ৩৬০ থেকে সর্বোচ্চ ৪৫০ টাকা হয়ে থাকে। বাকি ৪০০ টাকার গ্যাস তিতাসের কর্মকর্তারা সহজেই চুরির খাতে ঢুকিয়ে দিতে পারে। তিতাস এলাকায় ২৮ লাখ ৫০ হাজারে বেশি গ্রাহকের মধ্যে প্রিপেইড মিটার আছে মাত্র দুই লাখ গ্রাহকের।
এই দুই কর্মকর্তা আরও বলেন, বাসাবাড়িতে তিতাসের একটি সংযোগ নিতে এখন ৩ থেকে ৭ লাখ টাকা খরচ করে থাকেন গ্রাহক। আর শিল্প সংযোগ বা ক্যাপটিভ পাওয়ারের সংযোগ হয়, তাহলে ঘুষের পরিমাণ হয়ে থাকে ৫ থেকে ৭ কোটি টাকা।
ওই দুই কর্মকর্তা ক্যাপটিভ পাওয়ার সংযোগে ঘুষের চাঞ্চল্যকর একটি তথ্য দেন। তারা বলেন, হাতে এমন প্রমাণ রয়েছে যে ক্যাপটিভ পাওয়ারে সংযোগ নিতে শিল্পকারখানার মালিকদের কাছ থেকে রীতিমতো ওয়ার্ক অর্ডার বা কার্যাদেশ নিয়েছেন কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি। তারাই আবার তদবির করে ক্যাপটিভ পাওয়ারের সংযোগ নিচ্ছেন। এ সময় তারা বেশ কিছু কার্যপত্রও দেখান। এসব কার্যপত্রের মধ্যে দেশের একটি শীর্ষ স্ট্রিল কারখানা কোম্পানির কাছ থেকে নেয়া। বড় এই ইস্পাত কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছ থেকে লবিস্ট প্রতিষ্ঠানটি কার্যপত্র নিয়েছে। সেখানে দেখা যায়, ৫০ লাখ টাকা অগ্রিম দিয়েছেন ওই ইস্পাত কারখানার এমডি।
গ্যাস সংযোগ বন্ধ থাকার মধ্যেও গ্রাহক বেড়েছে
সর্বশেষ প্রকাশিত তিতাসের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটির আবাসিক গ্রাহক ছিল ১৮ লাখ ৮০ হাজার ৩৫৩টি। আর সর্বশেষ ২০২১-২২ অর্থবছরে তিতাসের গ্রাহক ছিল ২৮ লাখ ৫৭ হাজার ৯৪৮টি। গত আট বছরে ৯ লাখ ৭৭ হাজার ৫৯৫টি। ২০১৪ সালের জানুয়ারির নির্বাচনের পর থেকে তিতাসে আবাসিক গ্যাস সংযোগ দেয়া বন্ধ ছিল।
তিতাসের হিসাব বিভাগের একজন ও প্রতিষ্ঠানটির একজন সাবেক বোর্ড পরিচালক দৈনিক বাংলাকে বলেন, ২০১৬ সালে তিতাসের বোর্ডসভা সাত লাখ গ্রাহকের সংযোগ বৈধ করেছিল। এটি একবারই হয়েছে। এরপর আর বোর্ডে আবাসিক সংযোগ বৈধ করা হয়নি। কিন্তু অবৈধ সংযোগ তিতাসের ডেটাবেজে তোলা বন্ধ হয়নি। ফলে তিতাসে বোর্ডসভা অনুমোদন দেয়নি এমন গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় পৌনে তিন লাখ।
যারা ঘুষ দিয়ে সংযোগ নিয়েছেন- এমন তিন ব্যক্তি দৈনিক বাংলাকে বলেছেন, ঘুষ দিলে সংযোগের আবেদনটি পেছনের তারিখে দেখিয়ে (ব্যাক ডেট) কাগজপত্র তৈরি করে দেন তিতাসের কর্মকর্তারা। প্রতিটি নতুন আবাসিক সংযোগে ৩ থেকে ৭ লাখ টাকা পর্যন্ত দিতে হয়।
১০ লাখ অবৈধ গ্রাহক হিসাবের বাইরে
গত বছরের সেপ্টেম্বরে নারায়ণগঞ্জে মসজিদে বিস্ফোরণ ঘটে মারা যান ২৬ জন। এ ঘটনার পেছনে তিতাসের অবৈধ গ্যাস সংযোগ দায়ী ছিল। তখন তিতাসের পক্ষ থেকে একটি হিসাব করা হয় প্রতিষ্ঠানটির ১৬টি জেলায় কী পরিমাণ অবৈধ গ্যাস পাইপলাইন আছে। ওই প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ঢাকা ও আশপাশের চার জেলায় গ্যাসের প্রায় ২৪৫ কিলোমিটার অবৈধ পাইপলাইন রয়েছে। সবচেয়ে বেশি অবৈধ পাইপলাইন নারায়ণগঞ্জ সদর, রূপগঞ্জ, বন্দর, আড়াইহাজার ও রূপগঞ্জ উপজেলায়। যার মোট দৈর্ঘ্য ১৭৯ কিলোমিটার। এরপর রয়েছে মুন্সীগঞ্জ সদর ও গজারিয়া। এখানে অবৈধ লাইন রয়েছে ৩১ কিলোমিটার। ঢাকার যাত্রাবাড়ী, শ্যামপুর, পোস্তগোলা, ডেমরা, মাতুয়াইল, সাইনবোর্ড, কড়াইল বস্তি, বনানীর বিটিসিএল এলাকা, জামগড়া, ধলপুর, আমতলাসহ কয়েকটি এলাকায় ২২ কিলোমিটার অবৈধ গ্যাসলাইন রয়েছে। গাজীপুর ও নরসিংদীতে অবৈধ পাইপলাইন আছে।
তিতাসের কর্মকর্তারা বলছেন, ২৫০ কিলোমিটার অবৈধ পাইপলাইন তিতাসের ব্যক্তিরা ও তিতাসে নিয়োজিত ঠিকাদাররা করেছেন। এসব পাইপলাইন সাধারণ মানুষের পক্ষে করা সম্ভব না। তবে ২৫০ কিলোমিটার পাইপলাইন সুনির্দিষ্ট করে কত গ্রাহক রয়েছেন তার হিসাব তখন তিতাসের পক্ষ থেকে করা হয়নি। তবে ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় জনসংখ্যা ও আবাসিক ভবনের ঘনত্ব বিবেচনায় নিয়ে তিতাসের কর্মকর্তারা বলছেন, অবৈধ গ্রাহকের সংখ্যা অন্তত ১০ লাখ হবে। এসব সংযোগ নিতে তিতাসের লোকেরা ২০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ নিয়েছেন। আর এখান থেকে মাসে প্রায় ১০০ কোটি টাকা বিল তোলা হয়, যার পুরোটাই যায় এই সিন্ডিকেটের পকেটে।
শুধু তিতাসেই সিস্টেম লস!
দেশে গ্যাস বিতরণ কোম্পানি আছে ছয়টি। এর মধ্যে তিতাস ছাড়া কোনো কোম্পানির সিস্টেম লস নেই। বরং অন্য কোম্পানিগুলো যতখানি গ্যাস কেনে তার চেয়ে বিক্রি দেখায় বেশি। এর কারণ তারা গ্রাহককে গ্যাসের বদলে বাতাস দিয়ে তার দাম নিয়ে থাকে। এর নাম সিস্টেম গেইন। তিতাসের বিরুদ্ধেও গ্যাসের বদলে বাতাস বেচার অভিযোগ রয়েছে। তবে তিতাসে সিস্টেম গেইন না দেখিয়ে বরং সিস্টেম লস বা কাঠামোগত লোকসান দেখায়।
তিতাসের বার্ষিক প্রতিবেদনে দেয়া তথ্য বলছে, গত তিন অর্থবছরে তিতাসের সিস্টেম লসের হার দাঁড়িয়েছে ২ শতাশং। তিতাস বছরে যা রাজস্ব আদায় করে, তার অনুপাতে সিস্টেম লসের আর্থিক পরিমাণ প্রায় ৫০০ কোটি টাকার বেশি।
দেশের সবচেয়ে বড় গ্যাস বিতরণ প্রতিষ্ঠান তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি বৃহত্তর ঢাকা ও ময়মনসিংহে গ্যাস বিতরণ করে। দেশের মোট ১৬টি জেলায় তিতাস গ্যাস বিতরণ করে থাকে।
গ্যাস-সংকটের কারণে ২০০৯ সালের ২১ এপ্রিল থেকে সারা দেশে নতুন আবাসিক গ্যাস-সংযোগ বন্ধের নির্দেশ দেয় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্বালানি বিভাগ। তবে ২০১৩ সালের শেষ দিকে সংযোগ দেয়া হয়েছিল। এরপর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর জ্বালানি বিভাগ থেকে মৌখিকভাবে আবাসিকে গ্যাস-সংযোগ না দিতে বলা হয়। এর পরও বিভিন্ন সময় তিতাস গ্যাস-সংযোগ দিয়েছে। ২০১৭ সালের প্রথম দিকে তিতাসের বোর্ডসভা এমন সাত লাখ গ্রাহককে বৈধ করেছিল। সর্বশেষ ২০২০ সালের ২১ মে আনুষ্ঠানিকভাবে তিতাসসহ সব কয়টি গ্যাস বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানকে আবাসিক, বাণিজ্যিক এবং সিএনজির নতুন সংযোগ না দিতে বলে জ্বালানি বিভাগ।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, ‘তিতাসে ঘুষ ছাড়া সংযোগ পাওয়া যায় না। ঘুষ দিলে গ্যাস-সংযোগ বন্ধ আছে নাকি খোলা আছে, সেটা ব্যাপার না, সংযোগ লেগে যাবে। এ বিষয়ে বারবার অভিযোগ করে আমরা ক্লান্ত।’
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নতুন সচিব হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ খালেদ রহীম।
সচিব পদে পদোন্নতির পর তাকে দুদকের সচিব হিসেবে পদায়ন করে বুধবার (১৬ জুলাই) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের সচিব খোরশেদা ইয়াসমীনকে অবসরোত্তর ছুটিতে (পিআরএল) যাওয়ার সুবিধার্থে গত ২৪ জুন বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়।
কক্সবাজার চকরিয়ায় এক পুলিশ সদস্যের ভাড়া বাসায় চুরি করতে গিয়ে তাঁর স্ত্রীকে রামদার ভয় দেখিয়ে ধর্ষণ করে এক যুবক। এঘটনায় মঙ্গলবার (১৫জুলাই) অজ্ঞাতপরিচয়ে ওই যুবককে আসামি করে চকরিয়া থানায় একটি মামলা হয়েছে।
সোমবার (১৪ জুলাই) রাত তিনটার দিকে চুরির এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার দিন ওই পুলিশ সদস্য কর্মস্থলে ছিলেন। বাসায় দুই শিশুসন্তান নিয়ে ছিলেন তাঁর স্ত্রী। ধর্ষণের পর অজ্ঞাত ওই যুবক দুটি মুঠোফোন ও আড়াই হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যান বলে মামলার এজাহারে জানিয়েছেন পুলিশ সদস্যটি।
মামলার এজাহারে আরো বলা হয়, তিন মাস ধরে ভাড়া বাসাটিতে রয়েছেন ওই গৃহবধূ। সোমবার রাত পৌনে ১১টার দিকে তিনি ঘুমাতে গিয়েছিলেন। রাত সোয়া তিনটার দিকে ঘরের জানালা দিয়ে কৌশলে মূল দরজার সিটকিনি খুলে অজ্ঞাত এক যুবক বাসায় ঢোকেন। পরে পুলিশ সদস্যের স্ত্রীকে জিম্মি করে দুটি মুঠোফোন ও আড়াই হাজার টাকা ছিনিয়ে নেন ওই যুবক। এ সময় গৃহবধূ ও তাঁর দুই শিশুসন্তান আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। একপর্যায়ে ওই যুবক গৃহবধূকে রান্নাঘরে নিয়ে রামদা দেখিয়ে জিম্মি করে ধর্ষণ করেন।
চকরিয়া থানা পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার সকালে গৃহবধূর স্বামী পুলিশ সদস্য কর্মস্থল থেকে ফিরে চকরিয়া থানায় একটি মামলা করেন।
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম দৈনিক বাংলাকে বলেন, চুরি করতে এক পুলিশ সদস্যের ঘরে ঢুকে তাঁর স্ত্রীকে ধর্ষণ করা হয়েছে। এ অভিযোগে থানায় একটি মামলা হয়েছে। অভিযোগ ওঠা যুবককে শনাক্ত করতে আশপাশের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ যাচাই করা হচ্ছে। আসামিকে ধরতে পুলিশের একাধিক দল কাজ করছে।
জুলাই-আগস্টে সংঘটিত ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের স্মরণে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনকে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘরে’ রূপান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। এটি রূপান্তরে ব্যয় ধরা হয়েছে ১১১ কোটি ১৯ লাখ ৮১ হাজার টাকা।
আগামী ৫ আগস্টের মধ্যে জাদুঘরের রূপান্তরের কার্যক্রম সমাপ্ত করতে এই জাদুঘরের ‘সিভিল’ ও ‘ই/এম’ অংশ নির্মাণ বা সংস্কার কাজ সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে করার অনুমোদন দিয়েছে অর্থনীতি বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে সংঘটিত ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের বিভিন্ন স্মৃতিচিহ্ন, শহীদদের স্মারকের পাশাপাশি বিগত সরকারের ১৬ বছরের নিপীড়নের বিভিন্ন ঘটনা জনগণের সামনে তুলে ধরা হবে এ জাদুঘরে।
গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভায় এ বিষয়ে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
জাদুঘরের ই/এম অংশ বলতে ইলেকট্রো মেকানিক্যাল অংশকে বোঝায়। যার মধ্যে ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল অংশ থাকে। যেমন—ইলেকট্রিক তার, সুইচসহ বিভিন্ন ইলেকট্রিক ও মেকানিক্যাল সামগ্রী।
আর সিভিল অংশ বলতে ইলেকট্রো মেকানিক্যাল অংশ বাদে বাকি অংশকে বোঝায়। অর্থাৎ ই/এম এবং সিভিল এই দুটি অংশের মধ্যে জাদুঘরের সম্পূর্ণ অংশই থাকবে।
জানা গেছে, গণভবনকে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’ রূপান্তরের সিদ্ধান্ত গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর উপদেষ্টা পরিষদের এই সময়ের মধ্যে জাদুঘরের ই/এম অংশ নির্মাণ/সংস্কার করা সম্ভব হবে না। এ জন্য এই নির্মাণ বা সংস্কারকাজ সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে করা হবে।
মেসার্স শুভ্রা ট্রেডার্স-কে দিয়ে এই কাজ করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের গণপূর্ত বিভাগ। এ জন্য ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ৪০ কোটি ৮২ লাখ ৮৬ হাজার টাকা।
জাদুঘরের ই/এম অংশ নির্মাণ বা সংস্কারকাজ সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে করার জন্য বৈঠকে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রস্তাব উপস্থাপন করা হলে বৈঠকে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের আরেক প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে সিভিল অংশের কাজ সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে করার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি অবলম্বন করে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ‘দ্য সিভিল ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডকে দিয়ে এই কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের গণপূর্ত বিভাগ। এ জন্য ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ৭০ কোটি ৩৬ লাখ ৯৫ হাজার টাকা।
অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি তা অনুমোদন দিয়েছে। আগামী ৫ আগস্ট এই জাদুঘরের উদ্বোধন করা হতে পারে।
আগস্ট থেকে শুরু হবে খাদ্য বান্ধব কর্মসূচি। কর্মসূচির আওতায় ৫৫ লাখ পরিবারকে ১৫ টাকা কেজি দরে ৩০ কেজি চাল দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার।
তিনি বলেন, এ বছর খাদ্য বান্ধব কর্মসূচি চলবে ছয় মাস। গত বছর এটা ছিল পাঁচ মাস। প্রথম পর্যায়ে আগস্ট থেকে নভেম্বর পর্যন্ত চার মাস চলবে এ কর্মসূচি। ডিসেম্বর এবং জানুয়ারি এই দুই মাস খাদ্য বান্ধব কর্মসূচি স্থগিত থাকবে। এরপর ফেব্রুয়ারি ও মার্চ দুই মাস পুনরায় খাদ্য বান্ধব কর্মসূচি চলবে।
খাদ্য উপদেষ্টা আরও বলেন, বর্তমান খাদ্য মজুদ অত্যন্ত সন্তোষজনক। তারপরও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে এবং বন্যার বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সরকার আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছে। এর অংশ হিসেবে সরকারিভাবে আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে বিদেশ থেকে চার লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানি করা হবে। এছাড়াও বেসরকারি খাতে পাঁচ লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানির জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ (এফপিএমসি) কমিটির সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সভাপতি, অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদারসহ কমিটির অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
নিবন্ধনের প্রাথমিক বাছাইয়ে ১৪৪টি নতুন রাজনৈতিক দলই নির্বাচনে কমিশনের (ইসি) মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হতে পারেনি। এসব দলকে তাদের আবেদনপত্রে ঘাটতি থাকা কাগজপত্র আগামী ১৫ দিনের মধ্যে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসি।
গতকাল মঙ্গলবার ইসির অতিরিক্ত সচিব কেএম আলী নেওয়াজ সাংবাদিকদের বলেন, প্রথম ধাপে ৬২টি দলকে চিঠি দেওয়া হবে। পরবর্তী ধাপে অন্যান্য দলগুলোকেও চিঠি দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে ১৫ দিন সময়ের মধ্যে যেসব ত্রুটিবিচ্যুতি আছে তা পূরণ করতে হবে।
গত ২০ এপ্রিল পর্যন্ত নিবন্ধন প্রত্যাশী দলগুলোকে আবেদন দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল ইসি। তবে জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) বেশকিছু দল আবেদন করলে ২২ জুন পর্যন্ত সময় বাড়ায় সংস্থাটি। ওই সময় পর্যন্ত ১৪৪টি দল ১৪৭টি আবেদন করে।
ইসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন, দলগুলোর মধ্যে কোনোটিই উত্তীর্ণ হতে পারেনি প্রাথমিক বাছাইয়ে। তাই প্রথম ধাপে ৬২টি দলকে চিঠি দেওয়া হচ্ছে। আর এনসিপিসহ ৮২টি দলকে দ্বিতীয় ধাপে চিঠি দেওয়া হবে। সংশোধনের সুযোগ থাকলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঘাটতি পূরণ না হলে আবেদন বাতিল হতে পারে।
আইন অনুযায়ী, নিবন্ধন পেতে ইচ্ছুক দলের একটি কেন্দ্রীয় কমিটি, এক তৃতীয় জেলা ও ১০০টি উপজেলা কমিটি এবং প্রতিটি কমিটিতে ২০০ ভোটারের সমর্থনের প্রমাণ থাকতে হয়। এছাড়াও কোনো দলের কেউ পূর্বে সংসদ সদস্য থাকলে বা পূর্বের নির্বাচনের পাঁচ শতাংশ ভোট পেলেও নিবন্ধন পাওয়ার যোগ্যতা হিসেবে ধরা হয়। এই প্রধান শর্তগুলো ছাড়াও বেশকিছু নিয়ম কানুন মেনে আবেদন করতে হয়। প্রাথমিক বাছাইয়ে নিয়ম কানুনগুলোই সাধারণত খেয়াল করা হয়।
নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় দলগুলোর আবেদন পাওয়ার পর কমিশন প্রথমে এগুলো প্রাথমিক বাছাই করে। এরপর সেই দলগুলোর তথ্যাবলি সরেজমিন তদন্ত শেষে বাছাই সম্পন্ন করে দাবি আপত্তি চেয়ে বিজ্ঞপ্তি দেয় কমিশন। সেখানে কোনো আপত্তি এলে শুনানি করে তা নিষ্পত্তি করা হয়। আর কোনো আপত্তি না থাকলে সংশ্লিষ্ট দলগুলোকে নিবন্ধন সনদ প্রদান করে ইসি। নিবন্ধন ছাড়া কোনো দল নিজ প্রতীকে ভোটে প্রার্থী দিতে পারে না।
বর্তমানে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৫১টি (আওয়ামী লীগসহ)। নবম সংসদ নির্বাচনের আগে ২০০৮ সালে নিবন্ধন প্রথা চালু হয়। এ পর্যন্ত ৫৫টি দল ইসির নিবন্ধন পেলেও পরবর্তীতে শর্ত পূরণ, শর্ত প্রতিপালনে ব্যর্থতা এবং আদালতের নির্দেশে পাঁচটি দলের নিবন্ধন বাতিল করে ইসি। দলগুলো হলো- জামায়াতে ইসলামী, ফ্রিডম পার্টি, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, পিডিপি ও জাগপা। সস্প্রতি আদালতের আদেশে জামায়াতে ইসলামী ও জাগপা নিবন্ধন ফিরে পেলেও ইসি কেবল জামায়াতের নিবন্ধন ফিরিয়ে দিয়েছে।
ইসিতে আবেদন করা দলগুলো হলো: জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বাংলাদেশ সংগ্রামী ভোটার পার্টি, মুসলিম জনতা পার্টি, নতুন প্রজন্ম পার্টি, ওয়ার্ল্ড মুসলিম কমিউনিটি, বাংলাদেশ নাগরিক দল-বিএনডি, ন্যাশনাল ফ্রিডম পার্টি, নতুন বাংলাদেশ পার্টি (এনবিপি), জাতীয় জনতা পার্টি, বাংলাদেশ সর্ব-স্বেচ্ছা উন্নয়ন দল, কোয়ালিশন-ন্যাশনাল পার্টি (সিএনপি), জাস্টিস ফর হিউমিনিটি পার্টি, বাংলাদেশ বেকার মুক্তি পরিষদ, বাংলাদেশ-তিসারী-ইনসাফ দল, বাংলাদেশ জনকল্যাণ পার্টি (বাজপা), বাংলাদেশ বেকার সমাজ (বাবেস), বাংলাদেশ জাগ্রত পার্টি (বাজপ), বাংলাদেশ জনতা পার্টি-বিজেপি, বাংলাদেশ সোশাল ডেমোক্রেটিক পার্টি, বাংলাদেশ আজাদী পার্টি-বিএপি, বাংলাদেশ সংস্কারবাদী পার্টি (বিআরপি), বাংলাদেশ ইসলামিক জনতা পার্টি, বাংলাদেশ ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট পার্টি (বিডিএম), বাংলাদেশ বেষ্ট পলিটিক্যাল পার্টি (বিবিপিপি), মানবিক বাংলাদেশ পার্টি, বাংলাদেশ সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (বিএসডিপি), বাংলাদেশ রিপাবলিকান পার্টি (বিআরপি), গণদল, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা জনতা পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (বিএনডিপি), ডেমোক্রেটিক পার্টি (ডিপি), বাংলাদেশ গণবিপ্লবী পার্টি, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি), জনতা পার্টি বাংলাদেশ (জেপিবি), ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ভাসানী ন্যাপ), বাংলাদেশ জনজোট পার্টি (বাজপা), জনতার দল, জাতীয় ন্যায় বিচার পার্টি, বাংলাদেশ সমতা পার্টি, বাংলাদেশ সিটিজেন পার্টি (বিসিপি), বাংলাদেশ ডেমোক্রেটিক পার্টি, বাংলাদেশ নাগরিক পার্টি (বিসিপি), বাংলাদেশ ইউনাইটেড পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি-বিএনডিপি, বাংলাদেশ ইসলামী ডেমোক্রেটিক পার্টি (বিআইডিপি), ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টি (আইজিপি), জাতীয় মুক্তি ফ্রন্ট দল-এনএফএফ, বাংলাদেশ নাগরিক কমান্ড, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ফেডারেশন, নৈতিক সমাজ, বাংলাদেশ জাতীয় দল (বিজেডি), বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল, বাংলাদেশ জাতীয় কৃষক শ্রমিক পার্টি, জনতা পার্টি বাংলাদেশ, বাংলাদেশ বেকার সমাজ, বাংলাদেশ রিপাবলিকান পার্টি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও নেজামে ইসলাম পার্টি, ন্যাশনাল লেবার পার্টি, বাংলাদেশ ফরায়েজী আন্দোলন, বাংলাদেশ জনগণের দল, বাংলাদেশ গ্রিন পার্টি, বাংলাদেশ পাবলিক অ্যাকশন পার্টি, বাংলাদেশ গণমুক্তি পার্টি, নাকফুল বাংলাদেশ, বাংলাদেশ গণঅধিকার পার্টি, বাংলাদেশ গণমুক্তি পার্টি, ভাষানী জনশক্তি পার্টি, নতুন ধারা বাংলাদেশ, বাংলাদেশ জনতা পার্টি, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ সর্বজনীন দল, বাংলাদেশ একাত্তর পার্টি, স্বাধীন বাংলা পার্টি, বাংলাদেশ জাস্টিস মুভমেন্ট, জাগ্রত বাংলাদেশ, বাংলাদেশ দেশপ্রেমিক প্রজন্ম, বাংলাদেশ ডেমোক্রেসি মুভমেন্ট, বাংলাদেশ ছাত্রজনতা পার্টি, খেলাফত ইসলাম, বাংলাদেশ সংখ্যালঘু অধিকার, বাংলাদেশ সলিউশন পার্টি (বিএসপি), বাংলাদেশ সংগ্রামী ভোটার পার্টি, মুসলিম জনতা পার্টি, নতুন প্রজন্ম পার্টি, ওয়ার্ল্ড মুসলিম কমিউনিটি, বাংলাদেশ নাগরিক দল-বিএনডি, ন্যাশনাল ফ্রিডম পার্টি, জনতার বাংলাদেশ পার্টি, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা পার্টি, বাংলাদেশ আমজনগণ পার্টি। এছাড়াও বাংলাদেশ রক্ষণশীল সমাজ (বিসিপি), জনতা কংগ্রেস পার্টি, বাংলাদেশ প্রবাসী কল্যাণময় পার্টি, বাংলাদেশ জাস্টিস পার্টি (বাজাপা), বাংলাদেশ তৃণমূল জনতা পার্টি, বাংলাদেশ মুক্তি ঐক্যদল, বাংলাদেশ জনশক্তি পার্টি, বাংলাদেশ নাগরিক আন্দোলন পার্টি, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা জনতা পার্টি, জাস্টিজ পার্টি বাংলাদেশ (জেপিবি), বাংলাদেশ জেনারেল পার্টি (বি. জি. পি), বাংলাদেশ বেকার সমাজ (বাবেস), বাংলাদেশ জনপ্রিয় পার্টি (বিপিপি), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ-শাহজাহান সিরাজ), বাংলাদেশ জাতীয় লীগ, বাংলাদেশ কৃষক পার্টি (কেএসপি), জনতার কথা বলে, ভাসানী শক্তি পার্টি, বাংলাদেশ ফরায়েজী আন্দোলন, বাংলাদেশ জনগণের দল (বাজদ), ফরোয়ার্ড পার্টি, বাংলাদেশ সনাতন পার্টি, স্বাধীন জনতা পার্টি, আমজনতার দল, বাংলাদেশ শান্তির দল, সংবিধান বিষয়ক জনস্বার্থ পার্টি সংগঠন, মুক্তিযোদ্ধা যুব কমান্ড, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ), ডেমোক্রেটিক লীগ (ডিএল), বাংলাদেশ গণঅভিযাত্রা দল, বাংলাদেশ জাস্টিস পার্টি, ন্যাশনাল লেবার পার্টি (এনএলপি), ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ভাসানী ন্যাপ), জনতা মহাজোট বাংলাদেশ, বাংলাদেশ জনতার ঐক্য, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ, নিউক্লিয়াস পার্টি, ইউনাইটেড বাংলাদেশ পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় ভূমিহীন পার্টি (বিএনএলপি), বাংলাদেশ মাতৃভূমি দল, বাংলাদেশ বেকার মুক্তি পরিষদ, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)-সিপিবি (এম), বাংলাদেশ পাক পাঞ্জাতন পার্টি (বিপিপি), সাধারণ জনতা পার্টি, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পার্টি (বিজিপি), ন্যাপ ভাসানী, দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলন, বাংলাদেশ সংস্কারবাদী পার্টি (বিআরপি), জাতীয় পেশাজীবী দল (এসপিপি), বাংলাদেশ জনতা ফ্রন্ট (বি. জে. এফ.), বাংলাদেশ জাতীয় ইনসাফ পার্টি, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী), গণতান্ত্রিক নাগরিক শক্তি-ডিসিপি, ন্যাশনাল রিপাবলিকান পার্টি, বাংলাদেশ জনজোট পার্টি (বাজপা), বাংলাদেশ জনমত পার্টি, বাংলাদেশি জনগণের পার্টি, অহিংস গণ আন্দোলন, মুক্ত রাজনৈতিক আন্দোলন, জনতার বাংলাদেশ পার্টি, মৌলিক বাংলা, বাংলাদেশ জাস্টিস এন্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি, বাংলাদেশ রিপাবলিকান পার্টি এবং মুসলিম সেভ ইউনিয়ন।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে ঢাকায় টানা কয়েকদিন বৃষ্টি হলেও আজ সকালে উঁকি দিয়েছে রোদ। রোদ ওঠার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকায় বাড়তে শুরু করেছে বায়ুদূষণ। গত কয়েকদিন ধরেই দূষণের এই মাত্রা একটু একটু করেই বেড়েই চলেছে। আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
বুধবার (১৬ জুলাই) সকাল সোয়া ৯টায় ঢাকার বাতাসের একিউআই স্কোর ছিল ৯০। বায়ুমান সূচক অনুযায়ী এই স্কোরের কারণে ঢাকার বাতাস ‘মাঝারি’ পর্যায়ে অবস্থান করলেও সেটি ‘সংবেদনশীলদের জন্য অস্বাস্থ্যকর’ হয়ে উঠতে বেশি দূরে নেই।
কারণ একিউআই স্কোর শূন্য থেকে ৫০-এর মধ্যে থাকলে তা ‘ভালো’ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়। অন্যদিকে, এই স্কোর ৫০ থেকে ১০০ মধ্যে থাকলে তা ‘মাঝারি’ বলে গণ্য করা হয়। এরপর এই স্কোর ১০১ থেকে ১৫০ হলে ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ বলে গণ্য করা হয়। এই পর্যায়ে সংবেদনশীল ব্যক্তিদের দীর্ঘ সময় বাইরে পরিশ্রম না করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
দেখা যাচ্ছে, বৃষ্টি হোক কিংবা ছুটির দিন, কোনোকিছুতেই ঢাকার বাতাসের মানে তেমন উন্নতি ঘটাতে পারছে না। মাঝেমধ্যে হয়তো একিউআই স্কোর কিছুটা কমে আসে, পরক্ষণেই আবার পুরনো চেহারায় ফিরে যায়।
যেমন: সোমবার (১৪ জুলাই) সকালে ঢাকার বাতাসের একিউআই স্কোর ছিল ৫৪। যেটি বাতাসের মান ‘ভালো’ হয়ে ওঠার কাছাকাছি। তবে ভালো আর হয়ে ওঠেনি, বরং পরদিনই শহরটির স্কোর গিয়ে দাঁড়ায় ৮৯ তে।
গতকালের মতো আজ সকালেও ঢাকার বাতাসের অবনতির ধারা অব্যাহত আছে। ৯০ স্কোর নিয়ে দূষিত বাতাসের শহরের তালিকার ২৪তম স্থানে রয়েছে ঢাকা।
এদিকে, আজও তালিকার শীর্ষে রয়েছে কঙ্গোর কিনশাসা। শহরটির একিউআই স্কোর ১৮৬। টানা কয়েকদিন ধরেই শীর্ষে অবস্থান করছে শহরটি। তবে গতকাল দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে থাকা চিলির সান্তিয়াগো ও ভিয়েতনামের হ্যানয়ের বাতাসের মানে কিছুটা উন্নতি দেখা গেছে।
এদিন ১৮১ ও ১৭৮ স্কোর নিয়ে তালিকার দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে বাহরাইনের মানামা ও ইন্দোনেশিয়ার জার্কাতা। আর সান্তিয়াগো ও হ্যানয়ের স্কোর আজ ১৫৯ ও ৯৪।
কণা দূষণের এই সূচক ১৫১ থেকে ২০০ হলে ‘অস্বাস্থ্যকর’, ২০১ থেকে ৩০০ হলে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ এবং ৩০১-এর বেশি হলে তা ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে বিবেচিত হয়। জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করে ৩০০-এর বেশি যেকোনো সূচক।
বাংলাদেশে একিউআই সূচক নির্ধারিত হয় পাঁচ ধরনের দূষণের ভিত্তিতে— বস্তুকণা (পিএম১০ ও পিএম২.৫), নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড (এনও₂), কার্বন মনো-অক্সাইড (সিও), সালফার ডাই-অক্সাইড (এসও₂) ও ওজোন।
ঢাকা দীর্ঘদিন ধরেই বায়ুদূষণজনিত সমস্যায় ভুগছে। শীতকালে এখানকার বায়ুমান সাধারণত সবচেয়ে খারাপ থাকে, আর বর্ষাকালে তুলনামূলকভাবে উন্নত হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, বায়ুদূষণের কারণে প্রতিবছর বিশ্বে আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। এসব মৃত্যুর প্রধান কারণ হলো স্ট্রোক, হৃদরোগ, দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসকষ্ট (সিওপিডি), ফুসফুসের ক্যান্সার এবং শ্বাসযন্ত্রের তীব্র সংক্রমণ।
জুলাই শহিদদের স্বপ্ন বৈষম্যহীন, দুর্নীতি ও স্বৈরাচারমুক্ত এক ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়তে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
বুধবার (১৬ জুলাই) জুলাই শহিদ দিবস উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে তিনি এ আহ্বান জানান।
জুলাই শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘জুলাই শহিদরা স্বপ্ন দেখেছিলেন একটি বৈষম্যহীন, দুর্নীতি ও স্বৈরাচারমুক্ত নতুন রাষ্ট্র ব্যবস্থার। তাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে পাওয়া এই সুযোগকে কাজে লাগাতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘জুলাইয়ের চেতনাকে ধারণ করে নতুন বাংলাদেশের পথে দৃপ্ত পদভারে একযোগে সবাই এগিয়ে যাবো—আজকের দিনে এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।
গণ-অভ্যুত্থানে স্বৈরাচারের শৃঙ্খল থেকে জাতিকে মুক্ত করার আন্দোলনে যারা নিজেদের উৎসর্গ করেছিলেন তাদের স্মরণে প্রথমবারের মতো আজ (বুধবার) পালিত হচ্ছে জুলাই শহিদ দিবস। দিবসটি উপলক্ষে সরকার আজ এক দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে।
এদিন সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সব সরকারি-বেসরকারি ভবন এবং বিদেশের মাটিতে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়াও দেশব্যাপী মসজিদে শহিদদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হচ্ছে। অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়েও শহিদদের শান্তির জন্য প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
দিনটির তাৎপর্য তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, প্রথমবারের মতো আজ দেশজুড়ে পালিত হচ্ছে ‘জুলাই শহিদ দিবস’। এই দিনে আমি গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে স্বৈরাচারের শৃঙ্খল থেকে জাতিকে মুক্ত করার আন্দোলনে আত্মোৎসর্গকারী সকল শহিদকে।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় দিন। বৈষম্যমূলক কোটাব্যবস্থা বিলোপের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের গুলিতে ও সন্ত্রাসীদের হামলায় এই দিনে চট্টগ্রাম, রংপুর ও ঢাকায় অন্তত ছয় জন শহিদ হন।
তিনি বলেন, ক্ষণজন্মা অকুতোভয় এই বীরদের আত্মদান আন্দোলনে তীব্র গতির সঞ্চার করে। প্রতিবাদে দেশজুড়ে রাজপথে নেমে আসে লাখো শিক্ষার্থী-শ্রমিক-জনতা। আন্দোলনের তীব্রতার সঙ্গে বাড়তে থাকে শহিদদের সংখ্যা।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বৈষম্য ও কোটাবিরোধী আন্দোলন অচিরেই রূপ নেয় সরকার পতনের আন্দোলনে। সর্বস্তরের মানুষের দুর্বার আন্দোলনের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায় স্বৈরাচার। হাজারো শহিদের রক্তের বিনিময়ে হয় মুক্তির নতুন সূর্যোদয়।
শহিদদের স্মরণ ও তাদের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে অন্তর্বর্তী সরকার বেশ কয়েকটি কল্যাণমূলক উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানান তিনি।
অধ্যাপক ইউনূস জানান, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহিদদের স্মৃতিকে ধরে রাখতে এবং শহিদ পরিবার ও আহতদের কল্যাণে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তর’ এবং ‘জুলাই শহিদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’ গঠন করা হয়েছে। জুলাই শহিদদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রস্তুত ও গেজেটে প্রকাশের কার্যক্রম চলমান আছে।
তিনি আরও জানান, প্রতিটি শহিদ পরিবারকে এককালীন ৩০ লাখ টাকা ও মাসিক ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। আহত জুলাই যোদ্ধাদের কল্যাণেও একই রকম নানা উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
বাণীতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আত্মদানকারী সব শহিদের আত্মার মাগফেরাত ও শান্তি কামনা করেন প্রধান উপদেষ্টা।
আজ বুধবার ‘জুলাই শহীদ দিবস’। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রীয়ভাবে শোক পালন করা হবে। গতকাল মঙ্গলবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে যে, ‘জুলাই শহীদ দিবস’ উপলক্ষে বুধবার (১৬ জুলাই) রাষ্ট্রীয়ভাবে শোক পালন করা হবে।
এ উপলক্ষে আজ দেশের সব সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব সরকারি ও বেসরকারি ভবন এবং বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে।
শহীদদের মাগফিরাতের জন্য সব মসজিদে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হবে। অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানেও তাদের আত্মার শান্তির জন্য বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হবে।
কোটাবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ১৬ জুলাই রংপুরে পুলিশের গুলিতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদ নিহত হন। এরমধ্যে এই দিনটিকে সরকার ‘জুলাই শহীদ দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রথম শহীদ আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের এক বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ। প্রথম শাহাদতবার্ষিকীতে নানা কর্মসূচির মাধ্যমে তাকে স্মরণ করবেন তার পরিবার, আত্মীয়স্বজন, সহপাঠী ও সহযোদ্ধারাসহ পুরো জাতি।
পরিবার ও সহযোদ্ধাদের দাবি, অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদকালেই আবু সাঈদসহ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার দ্রুত শেষ করতে হবে। এক্ষেত্রে তারা অন্তর্বর্তী সরকার ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ওপর ভরসা রাখছেন।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চলাকালে ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই রংপুরে পুলিশের গুলিতে নিহত হন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ও আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবু সাঈদ।
আন্দোলনের সময় পুলিশের ধাওয়ায় শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়লে আবু সাঈদ বেরোবির ১ নম্বর গেটসংলগ্ন রাস্তায় পুলিশের সামনে দুহাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে থাকেন। ঠিক সেই মুহূর্তে রাস্তায় বিপরীত পাশ থেকে পুলিশ সরাসরি তার ওপর গুলি চালায়।
আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং তা দেশজুড়ে ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটায়। এই ঘটনায় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তীব্র আন্দোলন গড়ে ওঠে। কোটা সংস্কার আন্দোলন রূপ নেয় সরকার পতনের গণঅভ্যুত্থানে। দমন-পীড়ন ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়েও পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে একপর্যায়ে ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুর গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া আবু সাঈদ ছয় ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট। তার তিনজন বোন রয়েছে। পরিবারের সদস্যরা জানান, আবু সাঈদের মৃত্যুতে পুরো পরিবার যেন নিঃসঙ্গ হয়ে গেছে।
আবু সাঈদের বাবা মো. মকবুল হোসেন বাসসকে বলেন, আমার প্রিয় সন্তান আবু সাঈদ পুরো পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের জন্য আশার আলো ছিল। আবু সাঈদ শহীদ হওয়ার এক বছর হয়ে গেল। মনে হচ্ছে গতকালের ঘটনা। তার মৃত্যু আমাদের স্বপ্নগুলো ভেঙে দিয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শিগগিরই আবু সাঈদসহ জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে বলে আশা করেন মকবুল হোসেন।
তিনি বলেন, আমি চাই আমার ছেলের খুনিরা এবং সকল জুলাই শহীদদের হত্যাকারীরা শাস্তি পাক।
ছেলের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে আবু সাঈদের মা মনোয়ারা বেগম বলেন, ছেলে হারানোর বেদনা কোনোভাবে সহ্য করা যাচ্ছে না। হত্যাকাণ্ডের বিচার হলে হয়তো কিছুটা স্বস্তি পাব।
আবু সাঈদের বড় ভাই আবু হোসেন বর্তমান সরকারের মেয়াদে বিচার কাজ সম্পন্ন করার প্রতিশ্রুতির জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
আরেক ভাই রমজান আলী বলেন, আমার ভাই আবু সাঈদ আমাদের বাড়ির আঙিনায় চিরনিদ্রায় শায়িত। ওর কবরের দিকে তাকালেই চোখের পানি ধরে রাখতে পারি না।
বোন সুমি খাতুন বলেন, আমরা সাদামাটা জীবনযাপন করতাম। আমাদের খুব কম ছিল, কিন্তু ভাইদের সঙ্গে সবকিছু ভাগাভাগি করে আমরা অনেক সুখী ছিলাম। এখন হয়তো অনেক কিছু আছে, কিন্তু কোনো কিছুতে সুখ নেই। আমি খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।
বেরোবিতে আন্দোলনের সমন্বয়ক ও সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থী মো. রহমত আলী বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ইতোমধ্যে অভিযোগ গঠন করেছে ও বিচার কাজ শুরু করেছে। আমরা দ্রুত রায় চাই। এই বিচার এমন একটি দৃষ্টান্ত হোক, যা প্রমাণ করবে আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়।
বেরোবির বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী ও আবু সাঈদের সহযোদ্ধা শামসুর রহমান সুমন আশা প্রকাশ করে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার তাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করবে। তিনি বলেন, জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার সম্পন্ন হলে, তা হবে একটি জাতীয় মাইলফলক।
আন্দোলনের সময় আবু সাঈদকে রক্ষা করতে গিয়ে মারাত্মকভাবে আহত হন বেরোবির ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী তৌহিদুল হক সিয়াম। তিনি বলেন, এখনো শরীরে প্রায় ৬০টি স্প্রিন্টার নিয়ে বেঁচে আছি। যার মধ্যে ছয়টি রয়েছে মাথায়।
তিনি বলেন, সাঈদ সবসময় অন্যায় ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে দাঁড়াত।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শওকত আলী বলেন, আবু সাঈদ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের গর্বিত সদস্য। তার সর্বোচ্চ ত্যাগ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচিতি এনে দিয়েছে। তার হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার শুধু তার পরিবার নয়, জুলাই শহীদদের পরিবার এবং পুরো জাতিকেই শান্তি দেবে।
এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণ দাবির আন্দোলনের মধ্যে বদলি আদেশ অমান্য করে প্রকাশ্যে তা ছিঁড়ে ফেলার ঘটনায় একই দিনে ১৪ জন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে; যাদের মধ্যে রয়েছেন সংস্কার ঐক্য পরিষদের সভাপতিও।
মঙ্গলবার ( ১৫ জুলাই ) অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) এ-সংক্রান্ত পৃথক আদেশ জারি করেছে। আইআরডি সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান আদেশে সই করেন।
যারা বরখাস্ত হলেন—মূসক নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত কমিশনার হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার, ঢাকার কর অঞ্চল-৮–এর অতিরিক্ত কর কমিশনার মির্জা আশিক রানা, ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো প্রকল্পের উপপ্রকল্প পরিচালক সিফাত ই মরিয়ম, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) দ্বিতীয় সচিব শাহাদাত জামিল, ঢাকা কর অঞ্চল-২-এর যুগ্ম কর কমিশনার মাসুমা খাতুন, কর অঞ্চল-১৫-এর যুগ্ম কর কমিশনার মুরাদ আহমেদ, কুষ্টিয়া কর অঞ্চলের মোরশেদ উদ্দীন খান, নোয়াখালী কর অঞ্চলের যুগ্ম কর কমিশনার মোনালিসা শাহরীন সুস্মিতা, কক্সবাজার কর অঞ্চলের যুগ্ম কর কমিশনার আশরাফুল আলম প্রধান, খুলনা কর অঞ্চলের উপকর কমিশনার শিহাবুল ইসলাম, রংপুর কর অঞ্চলের উপকর কমিশনার নুশরাত জাহান ও কুমিল্লা কর অঞ্চলের উপকর কমিশনার ইমাম তৌহিদ হাসান, খুলনা কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের রাজস্ব কর্মকর্তা শফিউল বশর ও ঢাকা উত্তর কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের রাজস্ব কর্মকর্তা সবুজ মিয়া।
মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে তাদের নামে আদেশ জারি শুরু হয়। সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত মোট ১৪ জন শুল্ক, ভ্যাট ও কর কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করার আদেশ জারি হয়।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, গত মাসে এনবিআরে যে আন্দোলন হয়েছে, তারা সবাই ওই আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিলেন। কেউ কেউ নেতৃত্বও দিয়েছেন। এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে এই আন্দোলন হয়। বরখাস্ত হওয়া মূসক নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত কমিশনার হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার এনবিআর ঐক্য পরিষদের সভাপতি এবং ঢাকার কর অঞ্চল-৮–এর অতিরিক্ত কর কমিশনার মির্জা আশিক রানা সহসভাপতি পদে আছেন।
বরখাস্তের আদেশ অনুসারে, গত ২২ জুন জারি করা বদলির আদেশ অবজ্ঞাপূর্বক প্রকাশ্যে ছিঁড়ে ফেলার মাধ্যমে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করা তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাদের এনবিআরের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দিয়ে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। সাময়িক বরখাস্তকালে তারা বিধি মোতাবেক খোরপোশ ভাতা প্রাপ্য হবেন।
গত মাসে রাজস্ব খাতে যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করেছেন এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ২৮ ও ২৯ জুন সারাদেশে কাজ বন্ধ করে দেন তারা। এরপর ব্যবসায়ীদের মধ্যস্থতায় আন্দোলন প্রত্যাহার করেন তারা।
এরপর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়। আন্দোলন প্রত্যাহারের পরে এই পর্যন্ত তিনজন সদস্য ও একজন কমিশনারকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। কাজ বন্ধ রাখার দায়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের তৎকালীন কমিশনারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এ ছাড়া এনবিআরের দুজন সদস্যসহ ১৬ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে দুদক। তাদের বেশির ভাগই আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন।
গত ১২ মে এনবিআর বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা—এই দুটি বিভাগ করার অধ্যাদেশ জারি করা হয়। এর পর থেকে এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সব পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে প্রায় দেড় মাস আন্দোলন করেন।
শুল্কের ১১ কমিশনার বদলি
এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমানের অপসারণ দাবির আন্দোলনের পর কাজে ফিরে সাময়িক বরখাস্ত, বাধ্যতামূলক অবসর ও বদলির আদেশের মধ্যে এবার শুল্ক ক্যাডারের ১১ কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার এনবিআরের কাস্টমস ও ভ্যাট প্রশাসনের প্রজ্ঞাপনে এ আদেশ ‘অবিলম্বে’ কার্যকর হওয়ার কথা বলা হয়েছে।
এসব কর্মকর্তা হলেন- ঢাকা উত্তরের কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের কমিশনার খালেদ মোহাম্মদ আবু হোসেনকে বেনাপোল কাস্টম হাউজে; রাজশাহী ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার মো. আব্দুল হাকিমকে পানগাঁও কাস্টম হাউজে; ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডোর প্রকল্প পরিচালক জুয়েল আহমেদকে ঢাকা দক্ষিণের ভ্যাট কমিশনারেটে; চট্টগ্রামের কাস্টমস, এক্সাসাইজ ও ভ্যাট ট্রেনিং একাডেমির মহাপরিচালক একেএম নুরুল হুদা আজাদকে শুল্ক রেয়াত ও প্রত্যর্পন পরিদপ্তরে বদলি করা হয়েছে।
এছাড়া কুমিল্লা ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার মো. মাহফুজুল হক ভূঞাকে চট্টগ্রাম কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটে; কাস্টমস, এক্সাসাইজ ও ভ্যাট (আপিল) কমিশনারেট, ঢাকা-২ এর কমিশনার খন্দকার নাজমুল হককে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে এনবিআরের গবেষণা ও পরিসংখ্যান অনুবিভাগের মহাপরিচালক হিসেবে; রংপুর ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার আবু নূর রাশেদ আহম্মেদকে চট্টগ্রামের কাস্টমস, এক্সাসাইজ ও ভ্যাট ট্রেনিং একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
একই সঙ্গে এনবিআরের গবেষণা ও পরিসংখ্যান অনুবিভাগের মহাপরিচালক অরুন কুমার বিশ্বাসকে রংপুর ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার; শুল্ক রেয়াত ও প্রত্যর্পন পরিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আব্দুল মান্নান সরদারকে কুমিল্লা ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার; চট্টগ্রাম কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের কমিশনার মোহাম্মদ শফি উদ্দিনকে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজে; পানগাঁও কাস্টম হাউজের কমিশনার মিয়া মো. আবু ওবায়দাকে ঢাকা উত্তরের কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটে বদলি করা হয়েছে।
এর আগে এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবিতে চলা দেশের সকল কর, ভ্যাট ও কাস্টমসের দপ্তরে ‘কমপ্লিট শাটডাউনের’ মধ্যে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ বন্ধ রাখায় তখনকার কমিশনারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
তার জায়গায় অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয় চট্টগ্রাম কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের কমিশনার মোহাম্মদ শফি উদ্দিনকে; এবার তাকে বন্ড কমিশনারেটের দায়িত্ব থেকে ভারমুক্ত করে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব দেওয়া হলো।
টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পাওয়া সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুটি উচ্চতর গ্রেড পাওয়ার ক্ষেত্রে আর কোনো আইনি বাধা থাকল না। এ বিষয়ে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে, যা সরকারি চাকরিজীবীদের দীর্ঘদিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দাবির নিষ্পত্তি করেছে।
গতকাল মঙ্গলবার আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ ১৮ পৃষ্ঠার এই রায় প্রকাশ করে। এর আগে, চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল নিষ্পত্তি করে সংশোধিত রায় দেন আপিল বিভাগ।
রায়ে বলা হয়, ২০১৫ সালের জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী উচ্চতর গ্রেডের যে বিধান রয়েছে, তা অক্ষুণ্ণ থাকবে। অর্থাৎ, অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারি করা ‘স্পষ্টীকরণ’ পরিপত্রের প্যারা-‘গ’ অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। ওই প্যারার মাধ্যমে বলা হয়েছিল- একজন কর্মকর্তা যদি টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড একাধিকবার পেয়ে থাকেন, তবে তিনি উচ্চতর গ্রেড পাবেন না। তবে এখন সেই বিধান বাতিল হওয়ায় এমন কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও উচ্চতর গ্রেড পাবেন।
রিটকারী পক্ষের আইনজীবী ইব্রাহিম খলিল বলেন, ‘এই রায়ের ফলে প্রায় ১৫ লাখ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী উপকৃত হবেন। যারা ২০১৫ সালের আগে টাইম স্কেল বা সিলেকশন গ্রেড পেয়েছিলেন, তারা এখন দুটি উচ্চতর গ্রেড পাওয়ার সুযোগ পাবেন।’
২০১৫ সালে জাতীয় বেতন স্কেল কার্যকর হওয়ার পর পরবর্তী বছরে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘স্পষ্টীকরণ’ পরিপত্র জারির মাধ্যমে বহু কর্মকর্তা-কর্মচারী উচ্চতর গ্রেড থেকে বঞ্চিত হন। এতে অসন্তোষ দেখা দিলে একাধিক রিট দায়ের হয় হাইকোর্টে। হাইকোর্টে রিটকারীদের পক্ষে রায় গেলেও রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করে। সেই আপিলেরই পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলো গতকাল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই রায় সরকারি চাকরির পে-স্ট্রাকচারে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হয়ে থাকবে।
দেশের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে আন্তর্জাতিক কোটেশন পদ্ধতি অনুসরণ করে স্পট মার্কেট থেকে এক কার্গো এলএনজি সংগ্রহের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে সরকার।
সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত চলতি বছরের সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির ২৭তম সভায় মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) এ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের প্রস্তাবের ভিত্তিতে পেট্রোবাংলা কাতারের মেসার্স কাতার এনার্জি ট্রেডিং এলএলসি থেকে ৫৫৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকায় এক কার্গো এলএনজি সংগ্রহ করবে। যার প্রতি একক এলএনজির দাম পড়বে ১৩ দশমিক ২৪ মার্কিন ডলার।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়াকে ৫০ দিনের মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করতে বলেছেন। সোমবার (১৪ জুলাই) তিনি এ কথা জানান। অন্যথায় মস্কোকে ব্যাপক নতুন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন ট্রাম্প। ন্যাটোর মাধ্যমে কিয়েভে নতুন অস্ত্র সরবরাহের পরিকল্পনাও তুলে ধরেন তিনি।
ট্রাম্প জানান, তিনি ভ্লাদিমির পুতিনের ওপর ‘খুব, খুব অসন্তুষ্ট’। তিনি জোর দিয়ে বলেন, রুশ নেতা মারাত্মক এই সংঘাতের অবসান ঘটাতে অস্বীকৃতি জানানোয়ে অবশেষে তার ধৈর্যের বাধ ভেঙে গেছে। ৫০ দিনের মধ্যে যদি কোনো চুক্তি না হয়, তাহলে আমরা খুব কঠোর শুল্ক আরোপ করব, প্রায় ১০০ শতাংশ শুল্ক। ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটের সঙ্গে ওভাল অফিসে বৈঠকের সময় ট্রাম্প এসব কথা বলেন।
এই রিপাবলিকান নেতা আরও বলেন, এগুলো হবে ‘দ্বিতীয় শুল্ক’ যা রাশিয়ার অবশিষ্ট বাণিজ্য অংশীদারদের লক্ষ্য করে করা হবে। এরই মধ্যে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার আওতায় মস্কোর টিকে থাকার ক্ষমতাকে পঙ্গু করে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
রাশিয়ান ফেডারেল কাস্টমস সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর রাশিয়ার শীর্ষ বাণিজ্যিক অংশীদার ছিল চীন, যার পরিমাণ ছিল প্রায় ৩৪ শতাংশ। এরপরই রয়েছে ভারত, তুরস্ক এবং বেলারুশ।
ট্রাম্প এবং রুট নতুন একটি চুক্তিও উন্মোচন করেছেন যার অধীনে ন্যাটো সামরিক জোট যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র কিনবে। এর মধ্যে প্যাট্রিয়ট অ্যান্টি-ক্ষেপণাস্ত্র ব্যাটারিও থাকবে এবং এগুলি ইউক্রেনে পাঠানো হবে।
রুট বলেন, এটা সত্যিই বড়। তিনি ট্রাম্পের দীর্ঘদিনের অভিযোগ নিরসনের লক্ষ্যে একটি চুক্তির কথা তুলে ধরেন। ট্রাম্প অনেকদিন ধরেই দাবি করে আসছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে সাহায্য করার জন্য ইউরোপীয় এবং ন্যাটো মিত্রদের চেয়ে বেশি অর্থ প্রদান করছে।
এই ন্যাটো প্রধান বলেন, জার্মানি, কানাডা, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, সুইডেন এবং ব্রিটেনও ইউক্রেনকে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে।
তিনি ট্রাম্পকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আমি যদি আজ ভ্লাদিমির পুতিনের জায়গায় থাকতাম এবং আপনার কথা শুনতে পেতাম... তাহলে আমি পুনর্বিবেচনা করতাম যে ইউক্রেন সম্পর্কে আলোচনা আরও গুরুত্ব সহকারে নেওয়া উচিত। এর আগে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ঘোষণা করেন যে, তিনি ট্রাম্পের সাথে কথা বলেছেন এবং অস্ত্র চুক্তির জন্য ‘কৃতজ্ঞ’।
পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক বলেছেন, নিষিদ্ধ সংগঠনের কারও সঙ্গে আঁতাতের গন্ধ পেলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
তিনি বলেন, ‘নিষিদ্ধ সংগঠনের যারা রয়েছে তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে, তা নাহলে জুলাই শহীদদের প্রতি অবমাননা করা হবে।’
ফরিদপুর জেলা পুলিশের বিশেষ কল্যাণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক আজ মঙ্গলবার এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি ফরিদপুরের সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজদের কোনো ছাড় না দেওয়ার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেন।
ডিআইজি বলেন, কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি সহ্য করা হবে না। এমনকি দুর্নীতি করলে পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। যদি কোনো অপরাধ পরিলক্ষিত হয় তাহলে পুলিশের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো রকম অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া যাবে না।
পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করবেন। কোনো সেবাগ্রহীতা যেন থানায় এসে ভোগান্তির শিকার না হন, সেদিকে খেয়াল রাখবেন। মানুষের জানমাল রক্ষার্থে পুলিশের যা করণীয় তা করতে হবে। আমি শুনতে চাই না, কোনো সেবাগ্রহীতা থানায় এসে হয়রানির শিকার হয়েছেন। আইনশৃঙ্খলার যাতে কোনো অবনতি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।’
সভাশেষে জুলাই আন্দোলনে শহীদদের স্বজনদের হাতে উপহার সামগ্রী তুলে দেন ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক। পরে ফিতা কেটে জেলা পুলিশের মাল্টিপারপাস হলের উদ্বোধন করেন তিনি।
এ সময় পুলিশ সুপার মো. আব্দুল জলিল, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শামসুল আজম, আজমির হোসেন এবং সব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) ও অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।