আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কেউ ক্ষমতায় আসলে দেশের অগ্রযাত্রা তছনছ হবে বলে সবাইকে হুঁশিয়ার করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জনগণের সমর্থন নিয়ে আওয়ামী লীগ টানা তিনবার ক্ষমতায় আসায় দেশ আজ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে পৌঁছেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে ঈদের দিন সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শনিবার গণভবনে দলের নেতা-কর্মী, কবি, সাহিত্যিক, লেখক, সাংবাদিক, শিক্ষক ও বুদ্ধিজীবীসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়কালে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
কোভিড মহামারীর কারণে ২০২০, ২০২১ এবং ২০২২ সালে গণভবনে ঈদের আয়োজন হয়নি। শনিবার সকাল ১০টার দিকে অতিথিরা গণভবনে প্রবেশ করেন। পরে সেখানে সমবেতদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আগামীতে নির্বাচন হবে। জনগণের কাছে এটাই আবেদন থাকবে, উন্নয়নের যে ধারাটা আমরা সূচিত করেছি, উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে যেন আমরা বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠিত করে দিয়ে যেতে পারি। ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে আমাদের যাত্রা শুরু করব, সেই প্রস্তুতিও আমরা নিয়েছি। আমি জানি, স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী, খুনি, গ্রেনেড হামলাকারী, দুর্নীতিবাজ যদি ক্ষমতায় আসে দেশটাকে আবার ধ্বংস করে দেবে; তছনছ করে দেবে, সব অগ্রযাত্রা নষ্ট করে দেবে।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ এখন শান্তিতে আছে। দুবেলা খেতে পারছে, তাদের মাথা গোজার ঠাঁই হচ্ছে, রোগের চিকিৎসা পাচ্ছে, শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে, জীবনকে উন্নত করার সুযোগ পাচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষের এই অগ্রযাত্রা যেন অব্যাহত থাকে, আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে সেই দোয়া করি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০৭ সালে বন্দিখানায় ছিলাম। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, ছাত্র-শিক্ষক আপনারা সবাই প্রতিবাদ করেছেন। একটা প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি হয়েছিল বলেই ২০০৮ সালে নির্বাচন দিয়েছে। যে নির্বাচনে জামাত বিএনপির ২০ দলীয় জোট পেয়েছিল মাত্র ২৯টা সিট। বাংলাদেশের জনগণ আমাদের উন্নয়নের ফসল হিসাবে ২০১৪ সালে, ২০১৮ সালের নির্বাচনে আমাদেরকে ভোট দিয়েছে। ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল দীর্ঘ সময় গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলেই বাংলাদেশ আজকে আর্থসামাজিকভাবে উন্নতি করতে পেরেছে। উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি।’
এবার ঈদযাত্রা স্বস্তির হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘এবার বাড়ি যেতে কিছুটা সময় লেগেছে। কিন্তু অতীতের মত দিনরাত রাস্তায় বসে থাকতে হয়নি। সবচেয়ে ভালো লেগেছে, রাজধানীতে বসে না থেকে যার যার গ্রামে চলে গেছে। গ্রামের আত্মীয় স্বজনদের সাথে ঈদ করা সত্যিই খুব আনন্দের। এতে গ্রামে অর্থের প্রবাহটা বাড়বে। মানুষও খুশি হবে। আজকে নামাজে সব জায়গায় দেখছি আগের মত ভিড় নেই। সবাই যার যার গ্রামে চলে গেছে।’
সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন প্রত্যেক গ্রামে বিদ্যুতের সরবরাহ দিতে পেরেছি। রাস্তাঘাটের উন্নতি করতে পেরেছি। মানুষের জীবন মান উন্নত হয়েছে। সেখানেও মানুষের অর্থনৈতিক কর্মচাঞ্চল্য বেড়েছে।’
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির প্রভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এবারে যেহেতু মূল্যস্ফীতি এবং সাধারণ মানুষের কষ্ট, তাই আমরা রমজানে কোনো ইফতার পার্টি করি নাই। আমি সবাইকে আহ্বান করেছিলাম, ইফতার পার্টি না করে সাধারণ মানুষকে সেহেরি বা ইফতারিতে সহযোগিতা করতে। আমাদের দলের নেতাকর্মী, সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী যে যে এলাকায় আছেন প্রত্যেকেই সাধারণ মানুষের মাঝে ইফতার বা সেহরি বিতরণ করেছেন। এছাড়া ছাত্র, ব্যবসায়ী, সরকারি কর্মচারী সবাই এগিয়ে এসেছ। আমি এজন্য ধন্যবাদ জানাই। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে দোয়া করি যেন মানুষকে দেয়ার এই ক্ষমতাটা অটুট থাকে।’
বাংলাদেশ সারা বিশ্বে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেক ধনী দেশও পারেনি সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সাহায্য করতে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আছে বলেই এটা সম্ভব হয়েছে। সেজন্য আমি আল্লার কাছে শুকরিয়া আদায় করি। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। এই মর্যাদা ধরে রেখে আমাদের এগোতে হবে। এখান থেকে যেন কেউ বাংলাদেশকে সরিয়ে নিতে না পারে। তার জন্য দেশবাসীকেও সতর্ক থাকতে হবে।’
পর পর কয়েকটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পেছনে নাশকতা আছে কিনা এবং এতে বিএনপি-জামায়াতের হাত আছে কিনা সেই সন্দেহের কথা তুলে দরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘পর পর কয়েকটি আগুন লাগা। প্রথম বঙ্গবাজারে যখন আগুন লাগল, মনে হচ্ছিল যেন অ্যাক্সিডেন্ট। এরপর কয়েকটি আগুন লাগার পর মনে হচ্ছে, যারা ২০১৩, ১৪, ১৫ সালে অগ্নি সন্ত্রাস করে জীবন্ত মানুষগুলোকে পুড়িয়ে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। ৩৮০০ গাড়ি, ২৯টা ট্রেন, লঞ্চ, ৫০০ স্কুলঘর, ৭০ সরকারি অফিস, ছয়টি ভূমি অফিস…। চলন্ত গাড়ি থেকে জীবন্ত মানুষকে নামিয়ে গায়ে আগুন দিয়েছে। এই ধরনের জঘন্য কাজ যারা করেছে। এখন যে বার বার হঠাৎ হঠাৎ আগুন লাগে, এখানে তাদেরও কোনো চক্রান্ত আছে কিনা, এটা আমাদের ভাবতে হবে।’
সবাইকে সতর্ক করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যার যার এলাকায় প্রত্যেকটা মানুষ ও ব্যবসায়ী, আপনাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাড়ি ঘর যেনো সুরক্ষিত থাকে, আপানারা সেই দিকে দৃষ্টি দেবেন। কারণ যারা জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মারতে পারে, তারা পারে না এরকম কোনো দুষ্কর্ম নেই যা তারা করতে পারে না। অপরাধীরা অপরাধ করতেই থাকে এটাই হচ্ছে বাস্তবতা।’
প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীর উদ্দেশে বলেন, ‘আমার তো কেউ নেই। বাবা-মা ভাই বোন সব হারিয়েছি। কাজেই বাংলাদেশের মানুষের প্রতি আমার কর্তব্য হচ্ছে দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো, এই দেশের মানুষের কল্যাণ করা। এই দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা। আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি সেই কাজ করতে। আমার বাবার যে স্বপ্ন, প্রত্যেকটা মানুষ, ঘর পাবে, অন্য পাবে, বস্ত্র পাবে, সবার মুখে হাসি ফুটবে। বাংলাদেশের মানুষের মাঝেই আমি খুঁজে পাই হারানো বাবার স্নেহ, মায়ের স্নেহ, ভাইয়ের স্নেহ।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটা মা যেমন তার সংসার আগলে রাখে, পরিবরের প্রতিটি মানুষকে সুখী দেখতে চায়, উন্নত দেখতে চায়, ঠিক সেই মায়ের মন নিয়েই আমি এই বাংলাদেশের জনগণের সেবা করি। বাংলাদেশের মানুষও যেন সুন্দর জীবন পায়, সেটাই আমি চাই। ব্যক্তিগত জীবনে আমার চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই। এদেশের মানুষ যদি ভালো থাকে, এদেশের মানুষ যদি সুন্দর জীবন পায়, আমি জানি আমার বাবার আত্মা শান্তি পাবে।’