প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে ৫০ বছরের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের মূল্যায়ন করে পরবর্তী সময় উচ্চপর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। খবর বাসসের।
বৃহস্পতিবার সকালে টোকিওর ওয়েস্টিনের সাকুরায় জাপানিজ বিজনেস লিডারদের (সিইও) সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমি নিশ্চিত যে জাপানের সঙ্গে আমাদের গত পঞ্চাশ বছরের ঈর্ষণীয় সহযোগিতা আগামী পঞ্চাশ বছর এবং তার পরেও অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। আসুন আমাদের ব্যবসা ও বিনিয়োগ সম্পর্ককে পরবর্তী সময়ে উচ্চস্তরে নিয়ে যাই।’
‘গত পাঁচ দশকে আমাদের দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের দৃষ্টান্তমূলক ফলাফল দেখে আগামী বছরগুলোতে বাংলাদেশে জাপানের বৃহত্তর পদযাত্রার প্রত্যাশা আমাদের।’
জাপানের ব্যবসায়ীদের মতামতকে গুরুত্ব দেন এবং তাদের পরামর্শগুলো নোট করেছেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘টোকিওতে আমাদের দূতাবাস বাংলাদেশে আপনাদের উদ্যোগকে সহযোগিতা ও সহজতর করতে প্রস্তুত। অনুগ্রহ করে আপনাদের জন্য অপেক্ষারত ব্যবসা এবং বিনিয়োগের সম্ভাবনাগুলো অনুসন্ধান করতে বাংলাদেশে আসুন।’
প্রধানমন্ত্রী জানান, তারা ইতিমধ্যে বাংলাদেশে জাপানি কোম্পানির (আরও জাপানি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে) উত্থাপিত বেশ কয়েকটি নিয়ন্ত্রক ও নীতিগত সমস্যা সমাধান করেছেন। তিনি নিজে বাংলাদেশ-জাপান জয়েন্ট পাবলিক- প্রাইভেট ইকোনমিক ডায়ালগ (পিপিইডি) গঠনের উদ্যোগ নিয়েছেন এবং তিনি সন্তুষ্ট যে, পিপিইডির পঞ্চম রাউন্ড ২০২৩ সালের ১১ এপ্রিল জাপানে তার আগমনের ঠিক আগে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ব্যবসায়িক পরিবেশের উন্নতি অব্যাহত রাখব এবং বাংলাদেশে ব্যবসা করতে আপনাদের সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করব।’
দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের সবচেয়ে উদার বিদেশি বিনিয়োগ ব্যবস্থা রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিযোগিতামূলক খরচ, প্রচুর মানবসম্পদ, উচ্চ ক্রয়ক্ষমতাসহ বিশাল দেশীয় ভোক্তা বাজার এবং ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্তের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ বিনিয়োগের জন্য একটি অত্যন্ত লাভজনক অবস্থান হিসেবে দ্রুত আবির্ভূত হচ্ছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশাধিকার উন্নত করার মাধ্যমে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক কেন্দ্র হতে সচেষ্ট। সরকার সারা দেশে অর্থনৈতিক অঞ্চল, হাই-টেক/সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক স্থাপন করছে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে সংযোগের কেন্দ্র হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে পরিকল্পিত অবকাঠামোগত ভিত্তি তৈরি করছে। আজ, আমি আপনাদের খোলামেলা এবং উৎপাদনশীল ধারণাগুলো শুনে খুশি। এটি আমাদের বন্ধুত্বপ্রতীম উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরও প্রসারিত ও শক্তিশালী করবে।’
এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক উপস্থিত ছিলেন। আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ও জাপানের শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতারা।
শেখ হাসিনা জাপানের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, ‘প্রায় চার বছর আগে ২০১৯ সালে আমি টোকিওতে আপনার সঙ্গে শেষ দেখা করেছিলাম। আমি খুশি তারপর থেকে আমাদের দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা, বিনিয়োগ, বাণিজ্য এবং বাণিজ্যিক কার্যক্রমে অনেক কিছু ঘটেছে।’
বাংলাদেশ ও জাপান গত বছর দ্বিপক্ষীয় কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকী উদযাপন করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এখন আগামী ৫০ বছরে আমাদের সম্পর্ককে আরও নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছি।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যেও জাপানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছে।’
‘গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে কাজ করা জাপানি কোম্পানির সংখ্যা ক্রমাগত বেড়েছে। বিশেষ করে ২০১৪ সাল থেকে যখন আমরা আমাদের বিস্তৃত অংশীদারত্ব এবং বিগ-বি উদ্যোগের অধীনে জাপানের প্রতিশ্রুতিতে প্রবেশ করি’।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাপানি ব্যবসায়ীরাও বাংলাদেশের ব্যবসার এই ক্রমবর্ধমান প্রবণতাকে অনুসরণ করছেন এবং তারা জাপানের বিদ্যমান ব্যবসা সম্প্রসারণ অথবা বাংলাদেশে নতুন ব্যবসা চালু করতে ইতিবাচকভাবে ঝুঁকেছেন।’
তিনি বলেন, ‘আজ আপনাদের সঙ্গে আমার আলোচনার মাধ্যমে আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই যে, আমার সরকার এবং সব সংস্থা বাংলাদেশে ব্যবসায়িক প্রচেষ্টায় আপনাকে এবং জাপানের আমাদের অন্যান্য বন্ধুদের সাহায্য করতে আগ্রহী।’
বৈঠকে জাপানের শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও জাতীয় গণভোটকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে অবস্থানরত নিজ দেশের নাগরিকদের জন্য নিরাপত্তা সতর্কতা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) ঢাকার মার্কিন দূতাবাস থেকে এই সতর্কবার্তা দেওয়া হয়। এতে বলা হয়েছে, সমগ্র বাংলাদেশেই মার্কিন নাগরিকদের এই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে একযোগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং একটি জাতীয় গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। মার্কিন দূতাবাস জানিয়েছে, নির্বাচনের তারিখ ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিক সমাবেশ এবং বিক্ষোভের মাত্রা ও তীব্রতা আরও বাড়তে পারে। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভগুলোও যেকোনো সময় সংঘাতপূর্ণ ও সহিংস হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
এমতাবস্থায় মার্কিন নাগরিকদের সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছে দূতাবাস। নির্দেশনায় নাগরিকদের বড় কোনো ভিড় বা বিক্ষোভ সমাবেশ এড়িয়ে চলতে, নিজের আশপাশের পরিবেশ সম্পর্কে সজাগ থাকতে এবং পরিস্থিতির হালনাগাদ তথ্যের জন্য স্থানীয় গণমাধ্যমের ওপর নজর রাখতে বলা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে পাশে দাঁড় করিয়েই তার পদত্যাগ চেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি সাদিক কায়েম। সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি এই দাবি জানান। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, দাবি পূরণ ও পরিস্থিতির উন্নতি না হলে শুধু স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নন, ব্যর্থতার দায় নিয়ে আইন উপদেষ্টা এবং পররাষ্ট্র উপদেষ্টাকেও পদত্যাগ করতে হবে।
ব্রিফিংয়ে সাদিক কায়েম সাম্প্রতিক সময়ে শরীফ ওসমান হাদির ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনার বিচার ও নিরাপত্তার বিষয়ে কঠোর বার্তা দেন। তিনি দাবি করেন, এই হামলার সঙ্গে জড়িত প্রত্যক্ষ হামলাকারী, পরিকল্পনাকারী ও সহায়তাকারী সবাইকে দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে। একই সঙ্গে গোয়েন্দা সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি খতিয়ে দেখে তাদের জবাবদিহির আওতায় আনার দাবি জানান। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, যারা এই হামলাকে সমর্থন দিয়েছে এবং ‘জুলাই বিপ্লবীদের’ হত্যার পথ তৈরি করেছে, সেই ‘কালচারাল ফ্যাসিস্টদের’ সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে।
ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়ে ডাকসু ভিপি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে মানবতাবিরোধী অপরাধের রায় কার্যকর করার দাবি জানান। এছাড়া ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনর্বিবেচনার কথাও বলেন তিনি। দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি আল্টিমেটাম দিয়ে বলেন, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ‘নিষিদ্ধ লীগের’ বিরুদ্ধে এলাকাভিত্তিক চিরুনি অভিযান শুরু করতে হবে এবং তাদের সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে। এ বিষয়ে সরকারের আর কোনো অবহেলা সহ্য করা হবে না বলে তিনি সতর্ক করেন।
সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে সাদিক কায়েম বলেন, এসব দাবি অনতিবিলম্বে বাস্তবায়ন না হলে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দৃশ্যমান উন্নতি না ঘটলে তিন উপদেষ্টাকে পদত্যাগ করতে হবে। এ সময় পাশে থাকা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোকে ‘সম্পূর্ণ যৌক্তিক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন এবং ‘ছোট ভাই’ সম্বোধন করে দাবি বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেওয়ার আশ্বাস দেন।
সাংবাদিক আনিস আলমগীর ও অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওনসহ চারজনের বিরুদ্ধে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দায়ের করা অভিযোগটি মামলায় রূপান্তর করা হয়েছে। এই মামলায় বর্তমানে ডিবি হেফাজতে থাকা সাংবাদিক আনিস আলমগীরকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) শফিকুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ডিবি প্রধান জানান, উত্তরা পশ্চিম থানায় দায়েরকৃত এই মামলায় আনিস আলমগীরকে গ্রেপ্তার দেখানোর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। থানা থেকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আসার পর তার মাধ্যমেই গ্রেপ্তারকৃত সাংবাদিককে আদালতে সোপর্দ করা হবে।
এর আগে রবিবার (১৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ধানমন্ডি এলাকার একটি ব্যায়ামাগার থেকে বের হওয়ার সময় আনিস আলমগীরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছিল। উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাজনীতি নিষিদ্ধ দলটির পক্ষে বিভিন্ন টেলিভিশন টকশোতে অবস্থান নেওয়াকে কেন্দ্র করে তিনি বেশ কিছুদিন ধরেই সমালোচিত ছিলেন।
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় পল্টন মডেল থানায় দায়েরকৃত মামলাটি তদন্তের জন্য ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার শফিকুল ইসলাম জানান, এখন থেকে মামলাটির তদন্ত কার্যক্রম ডিবি মতিঝিল বিভাগ পরিচালনা করবে।
এর আগে রবিবার রাতে পল্টন মডেল থানায় হত্যাচেষ্টার অভিযোগে এই মামলাটি (মামলা নং-১৯) দায়ের করা হয়। মামলার প্রাথমিক তদন্তকারী কর্মকর্তা ও পল্টন থানার পরিদর্শক (অপারেশন) ইয়াসিন মিয়া জানিয়েছেন, দায়েরকৃত মামলার এজাহারে একজনকে আসামি করা হয়েছে। মামলাটি ডিবিতে হস্তান্তরের ফলে এখন তারাই পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ ও তদন্ত এগিয়ে নেবে।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) গৃহীত পদক্ষেপ ও সার্বিক প্রস্তুতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি মনে করেন, কমিশন তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব, বিশেষ করে ভোটার তালিকা হালনাগাদ এবং সময়মতো তফসিল ঘোষণার কাজ অত্যন্ত সুচারুভাবে সম্পন্ন করেছে। সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত ও অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, দেশে নির্বাচনের জন্য একটি সুস্থ ও স্বাভাবিক পরিবেশ বিরাজ করছে। এর বড় প্রমাণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন যে, রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিলকে মেনে নিয়েছে এবং কোনো দলই নির্বাচনের তারিখ বা সময়সূচি নিয়ে কোনো ধরনের আপত্তি তোলেনি। দলগুলোর এই ইতিবাচক মনোভাব এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণের আগ্রহই প্রমাণ করে যে, প্রস্তুতি সঠিক পথেই এগোচ্ছে এবং এখন মূল চ্যালেঞ্জ হলো ঘোষিত তফসিলের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন।
এবারের নির্বাচনের সঙ্গে গণভোট আয়োজনের বিষয়টি যুক্ত থাকায় স্বাভাবিকভাবেই নির্বাচনী ব্যয় বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জানান, নির্বাচন কমিশন এখন পর্যন্ত বাড়তি কোনো অর্থের আনুষ্ঠানিক চাহিদাপত্র অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠায়নি। তবে তিনি আশ্বস্ত করেন যে, নির্বাচন ও গণভোট সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে লজিস্টিক সাপোর্ট, বিপুল সংখ্যক জনবল ও আনুষঙ্গিক যা কিছু প্রয়োজন, তার জন্য সরকার প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দিতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত। কমিশন যখনই চাহিদাপত্র পাঠাবে, তা যাচাই-বাছাই করে দ্রুততার সঙ্গে অর্থ ছাড় করা হবে এবং এ ক্ষেত্রে সরকারের কোনো ধরনের কার্পণ্য বা সীমাবদ্ধতা থাকবে না। গণভোটের জন্য ব্যয় ২০ শতাংশ বাড়তে পারে—এমন গুঞ্জন শোনা গেলেও উপদেষ্টা জানান, কোনো নির্দিষ্ট অংক নিয়ে এখনো প্রস্তাব আসেনি।
নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে দেশের পরিস্থিতি মোটামুটি সন্তোষজনক পর্যায়ে রয়েছে। তবে নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা ততটাই বাড়ানো হবে। ভোটের আগে ও পরে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ ভোটগ্রহণের স্বার্থে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও কঠোর থেকে কঠোরতর করা হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। সরকার নির্বাচন কমিশনকে একটি সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেওয়ার ক্ষেত্রে সব ধরনের প্রশাসনিক ও আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করবে বলে তিনি পুনর্ব্যক্ত করেন।
উন্নত চিকিৎসার জন্য ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে নিয়ে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছেড়েছে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স। সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুর ১টা ৫৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিশেষ এই অ্যাম্বুলেন্সটি উড্ডয়ন করে। হাদির সঙ্গে তার দুই ভাইও সিঙ্গাপুরে গিয়েছেন। এর আগে তাকে বহনকারী এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি বেলা ১১টা ২২ মিনিটে ঢাকায় অবতরণ করে।
গত শুক্রবার জুমার নামাজের পর রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স-কালভার্ট রোডে রিকশায় যাওয়ার সময় মোটরসাইকেলে আসা দুর্বৃত্তরা হাদির মাথায় গুলি করে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে এভারকেয়ার হাসপাতালের আইসিইউতে রাখা হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার শারীরিক অবস্থা বেশ সংকটাপন্ন। হামলার ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে ফয়সাল করিম নামের এক ব্যক্তির নাম উঠে এসেছে, যিনি নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা এবং সম্প্রতি হাদির নির্বাচনী প্রচারণায় যুক্ত ছিলেন।
এই ঘটনায় পল্টন থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং এখন পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে রয়েছেন হামলায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক, সীমান্ত দিয়ে মানুষ পাচারকারী চক্রের সদস্য এবং মূল অভিযুক্ত ফয়সালের আত্মীয়রা। হামলাকারীরা ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে গেছে বলে গুঞ্জন থাকলেও পুলিশ জানিয়েছে, এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য না থাকলেও সীমান্তে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। উল্লেখ্য, গত নভেম্বরে হাদি জানিয়েছিলেন যে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন নম্বর থেকে তাকে ও তার পরিবারকে হত্যাসহ নানা ধরনের হুমকি দেওয়া হচ্ছিল।
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় রাজধানীর পল্টন থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) সকালে পল্টন থানার ডিউটি অফিসার উপ-সহকারী পরিদর্শক (এএসআই) রকিবুল হাসান মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, মামলাটির তদন্তভার দেওয়া হয়েছে পল্টন থানার পরিদর্শক (অপারেশন) ইয়াসিন মিয়াকে।
এদিকে, এই হামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এখন পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে রয়েছেন হামলায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক, সীমান্ত দিয়ে মানুষ পাচারকারী চক্রের দুজন সদস্য এবং অভিযুক্ত ফয়সালের স্ত্রী, শ্যালক ও অন্য এক নারী।
উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর জুমার নামাজের পর রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স-কালভার্ট রোডে রিকশায় যাওয়ার সময় মোটরসাইকেলে আসা দুর্বৃত্তরা ওসমান হাদির মাথায় গুলি করে পালিয়ে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তিনি আইসিইউতে চিকিৎসাধীন এবং তার অবস্থা সংকটাপন্ন। উন্নত চিকিৎসার জন্য আজ সোমবার দুপুরেই তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হচ্ছে।
গুলিবিদ্ধ ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নেওয়া হচ্ছে। তাকে বহন করতে সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) বেলা ১১টা ২০ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স অবতরণ করেছে। সবকিছু ঠিক থাকলে অসপ্রে এভিয়েশনের এই এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি আজ দুপুরেই হাদিকে নিয়ে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হবে। সেখানে তাকে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের অ্যাক্সিডেন্ট ইমার্জেন্সি বিভাগে ভর্তি করা হবে।
হাদির চিকিৎসার যাবতীয় ব্যয় রাষ্ট্রীয়ভাবে বহন করা হবে বলে জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। তার চিকিৎসা প্রক্রিয়া সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গত দুই দিন ধরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার একাধিক হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। বর্তমানে হাদির শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল ও অপরিবর্তিত রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিজয়নগর বক্স কালভার্ট এলাকায় রিকশায় যাওয়ার পথে সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হন শরিফ ওসমান হাদি। এ সময় মোটরসাইকেলে আসা দুর্বৃত্তরা তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথায় গুলি করে পালিয়ে যায়। এরপর থেকে তিনি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। প্রধান উপদেষ্টা তার দ্রুত সুস্থতা কামনায় দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন।
জুলাই গণহত্যার দায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একটি অভিযোগে দেওয়া আমৃত্যু কারাদণ্ডের সাজা বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড চেয়ে আজ আপিল বিভাগে আবেদন করতে যাচ্ছে প্রসিকিউশন। সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, শেখ হাসিনার আমৃত্যু কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড চেয়ে আজই আপিল দায়ের করা হবে এবং এরপর ব্রিফিংয়ে বিস্তারিত তথ্য জানানো হবে।
এর আগে, গত ১৭ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে একটি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড এবং অন্য একটি অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ড প্রদান করেন। একইসঙ্গে দেশে থাকা তাদের সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেন আদালত। প্রসিকিউশন জানিয়েছে, তারা রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি পর্যালোচনা করে আমৃত্যু কারাদণ্ডের সাজাটিকে মৃত্যুদণ্ডে উন্নীত করার জন্য আপিল করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। আইন অনুযায়ী রায় ঘোষণার ৩০ দিনের মধ্যেই এই আপিল দায়েরের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
ট্রাইব্যুনালের রায়ে প্রথম অভিযোগে বলা হয়, ২০২৪ সালের ১৪ জুলাই গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভিসি মাকসুদ কামালের সঙ্গে কথোপকথনে শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকার’ আখ্যা দিয়ে উসকানিমূলক বক্তব্য দেন। এছাড়া আসামিরা অপরাধ দমনে অধীনস্থদের বাধা দেননি, যার পরিপ্রেক্ষিতে রংপুরে আবু সাঈদ পুলিশের গুলিতে নিহত হন। এসব অপরাধে শেখ হাসিনা ও কামালকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়, যার বিরুদ্ধেই আজ আপিল করছে প্রসিকিউশন।
অন্যদিকে, দ্বিতীয় অভিযোগে শেখ হাসিনা ও কামালকে আগেই মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এই অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, সাবেক মেয়র ফজলে নূর তাপস ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর সঙ্গে ফোনালাপে শেখ হাসিনা ড্রোন, হেলিকপ্টার ও মারণাস্ত্র ব্যবহার করে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এর ফলে ৫ আগস্ট চানখারপুলে ছয়জন এবং সাভারের আশুলিয়ায় ছয়জনকে হত্যা করে লাশ পুড়িয়ে ফেলার মতো নৃশংস ঘটনা ঘটে। উল্লেখ্য, এই মামলায় রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে উভয় অভিযোগে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। বাজেয়াপ্তকৃত সম্পদ জুলাই আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরণের নির্দেশও দিয়েছেন আদালত।
সাংবাদিক আনিস আলমগীর, অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন, মারিয়া কিশপট্ট এবং ইমতু রাতিশ ইমতিয়াজ—এই চারজনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। গত রবিবার (১৪ ডিসেম্বর) রাতে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় জুলাই রেভ্যুলশনারি অ্যালায়েন্সের কেন্দ্রীয় সংগঠক আরিয়ান আহমেদ বাদী হয়ে এই অভিযোগটি দায়ের করেন। এদিকে একই রাতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাংবাদিক আনিস আলমগীরকে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে।
উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী মোহাম্মদ রফিক আহমেদ অভিযোগ দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, অভিযোগটি গ্রহণ করা হয়েছে এবং এটি মূলত ‘সাইবার রিলেটেড ইস্যু’। তাই প্রাথমিক সত্যতা যাচাই ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনার সাপেক্ষে এটিকে মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করার বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হলেও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুসারীরা বিভিন্ন কৌশলে দেশে অবস্থান করে রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা নষ্টের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন। অভিযোগকারীর দাবি, গত ৫ আগস্টের পর থেকে অভিযুক্তরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন টেলিভিশন টক শোতে অংশ নিয়ে নিষিদ্ধ সংগঠনকে পুনরুজ্জীবিত করার প্রচারণা চালাচ্ছেন, যার মূল উদ্দেশ্য আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করা। অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, তাদের এসব বক্তব্য ও অনলাইন কার্যক্রমের ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা উসকানি পাচ্ছে এবং রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র, সহিংসতা ও অবকাঠামো ধ্বংসের মতো কর্মকাণ্ডে জড়িত হচ্ছে।
অন্যদিকে, অভিযোগ দায়েরের রাতেই ধানমন্ডি এলাকার একটি জিম থেকে ব্যায়াম শেষে বের হওয়ার সময় সাংবাদিক আনিস আলমগীরকে ডিবি হেফাজতে নেওয়া হয়। ডিবির প্রধান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে ডিবি কার্যালয়ে আনা হয়েছে এবং এ বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত পরে জানানো হবে। উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন টেলিভিশন টক শোতে দেওয়া বক্তব্যের কারণে সাংবাদিক আনিস আলমগীর বেশ আলোচনায় ছিলেন।
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র এবং ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি চালানোর ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর একটি সেলফি তুলেছেন, যা সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন।
জুলকারনাইন সায়েরের পোস্ট অনুযায়ী, হামলাকারী ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান এবং তার সহযোগী মোটরসাইকেল চালক আলমগীর হোসেন গত ১২ ডিসেম্বর (শুক্রবার) সন্ধ্যায় ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে প্রবেশ করে। এরপর তাদের জাহাঙ্গীর কবির নানকের পিএস মো. মাসুদুর রহমান বিপ্লব এই ভারতীয় মোবাইল নম্বরটি (+৯১৬০০১৩৯৪০**) ফয়সাল করিম মাসুদকে জোগাড় করে দেন বলে বিশেষ গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে তিনি জানান।
ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান এই ভারতীয় নম্বর ব্যবহার করে গত রাতে কয়েকটি নম্বরে নিজেদের সেলফি পাঠান, যার মধ্যে একটি ইন্টারসেপ্ট করে ছবিটি পাওয়া যায়। ছবিটি ভারতের আসাম রাজ্যের গুয়াহাটিতে তোলা হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর জুমার নামাজের পর রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স-কালভার্ট রোডে মোটরসাইকেলে করে এসে চলন্ত রিকশায় থাকা ওসমান হাদির মাথায় গুলি করা হয়। এই হত্যাচেষ্টার ঘটনায় তাঁর পরিবার মামলা দায়ের করেছে। এই হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন— হামলায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক, মানবপাচার চক্রের দুজন সহযোগী, সন্দেহভাজন শুটার ফয়সালের স্ত্রী, শ্যালক এবং বান্ধবী।
১৫ ডিসেম্বরের নাটকীয় মুহূর্ত: ভুট্টোর জাতিসংঘ ত্যাগ
১৯৭১ সালের ১৫ ডিসেম্বর, নিউইয়র্কের জাতিসংঘ সদরদপ্তর থেকে পাকিস্তানের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো এক আবেগঘন বিদায় নেন। সেদিন গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যে কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়া ছিল। নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় তাঁর চোখে জল ছিল বলে মার্কিন গণমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে উঠে আসে। ভুট্টো সেদিন অধিবেশনে জাতিসংঘের বিরুদ্ধে আগ্রাসনকে বৈধতা দেওয়ার অভিযোগ তুলে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং বলেন, “রাখুন আপনাদের নিরাপত্তা পরিষদ। লজ্জাজনক আত্মসমর্পণের সঙ্গে আমি যুক্ত হবো না। আমি কোনো ইঁদুর নই। পালাচ্ছি না, পরিষদ ছেড়ে চলে যাচ্ছি।” ভুট্টোর এই নাটকীয় প্রস্থান পরদিন নিউইয়র্ক টাইমসের পাতায় স্থান পায়। এই সময়ে ফ্রান্স ও ব্রিটেনের যৌথ প্রস্তাব এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের উত্থাপিত প্রস্তাবে যুদ্ধবিরতি ও পূর্ব পাকিস্তানের কথিত ‘বিদ্রোহী’দের সাথে রাজনৈতিক সমঝোতার আহ্বান জানানো হয়, যা কূটনীতিকদের কাছে ঢাকার আসন্ন পতনের ইঙ্গিত দেয়।
ষোলো ঘণ্টার আলটিমেটাম এবং আত্মসমর্পণের বার্তা চালাচালি
গুরুত্বপূর্ণ শহর ও ঘাঁটি হারানোর পর পাকিস্তানের শাসকরা পরাজয় নিশ্চিত হয়ে পড়েন। এর আগে ১৪ ডিসেম্বর প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজিকে চিঠি পাঠিয়ে অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ এবং সৈন্যদের জীবন রক্ষার্থে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। ইয়াহিয়া খান উল্লেখ করেন যে তিনি ইতিমধ্যেই জাতিসংঘে পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তৎপরতা শুরু করেছেন।
এই বার্তা পাওয়ার পর জেনারেল নিয়াজি ও গভর্নর সামরিক উপদেষ্টা ফরমান আলী যুক্তরাষ্ট্রের কনসাল জেনারেল হার্বার্ট স্পিভ্যাকের সাথে দেখা করে 'সম্মানজনক শর্তসাপেক্ষে যুদ্ধবিরতি'র একটি বার্তা ভারতের কাছে পাঠানোর অনুরোধ জানান। স্পিভ্যাক বার্তাটি দিল্লির বদলে ওয়াশিংটনে পাঠান, যেখান থেকে তা ভারতের তৎকালীন সেনাপ্রধান শ্যাম মানেকশর কাছে পৌঁছায় ১৫ ডিসেম্বর দুপুরে।
জেনারেল মানেকশ সেই বার্তার জবাবে স্পষ্ট জানিয়ে দেন যে, বাংলাদেশে অবস্থানরত পাকিস্তানি সামরিক ও আধা সামরিক বাহিনী আত্মসমর্পণ করলেই কেবল তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে এবং ভারতের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। তিনি ঢাকায় বিমান হামলা বন্ধের নির্দেশও দেন। আত্মসমর্পণের জন্য তিনি পরদিন সকাল ৯টা পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেন, যদিও পরে জে এফ আর জ্যাকবের লেখা অনুযায়ী এই সময়সীমা আরও কয়েক ঘণ্টা বাড়ানো হয়েছিল।
যুদ্ধের শেষ দিনের চিত্র
যুদ্ধের শেষ এই দিনে একদিকে আত্মসমর্পণের বার্তা চালাচালি চলছিল, অন্যদিকে ভারতীয় যুদ্ধবিমান দিনভর পাকিস্তানি বাঙ্কার, আবাসস্থল ও কমান্ড-কেন্দ্রগুলোর ওপর বোমা বর্ষণ করতে থাকে। পাকিস্তানি সেনারা আত্মরক্ষার জন্য কিছু বাঙ্কারের ছাদে হাত-পা বেঁধে স্থানীয়দের শুইয়ে রেখেছিল, যার ফলে ভারতীয় বিমান হামলা মাঝে মাঝে ব্যর্থ হয়। একই সময়ে স্থলপথে মুক্তি ও ভারতীয় সেনারা ঢাকার দিকে দ্রুত অগ্রসর হচ্ছিলেন। নিউইয়র্ক টাইমসের বর্ণনা অনুযায়ী, সেদিন মুক্তিবাহিনীর ঢাকামুখী যাত্রা ছিল বিজয়ীর মতো, পথে সাধারণ মানুষ তাদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছিল, তবে নদীতে তখন লাশের স্তূপ ভাসছিল।
১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে ৫৪ জন প্যারাট্রুপার বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়তে যাচ্ছেন। এই ৫৪ জনের মধ্যে একজন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী। তিনি ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির ছবি আঁকা হেলমেট পরে জাম্প করবেন। রোববার (১৪ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এই তথ্য জানানো হয়।
সেখানে বলা হয়, ‘১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে ৫৪ জন প্যারাট্রুপার বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়তে যাচ্ছেন। এই ৫৪ জনের একজন আশিক চৌধুরী জাম্প করবেন ওসমান হাদির ছবি আঁকা হেলমেট পরে। বিজয়ের দিনে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের ভ্যানগার্ড ওসমান হাদির দ্রুত আরোগ্য কামনায় সবাইকে দোয়া ও প্রার্থনার আহ্বান জানাই।’
উল্লেখ্য, আগামী ১৬ ডিসেম্বর সকাল ১১টা থেকে ঢাকার তেজগাঁওয়ে পুরনো বিমানবন্দরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী পৃথকভাবে ফ্লাই পাস্ট মহড়া পরিচালনা করবে।
চলবে বিজয় দিবসের বিশেষ ব্যান্ড-শো। পরে সকাল ১১টা ৪০ মিনিট থেকে ‘টিম বাংলাদেশ’-এর ৫৪ জন প্যারাট্রুপার স্বাধীনতার ৫৪ বছর উদযাপনে পতাকা হাতে প্যারাস্যুটিং করবেন। জনসাধারণের জন্য এই বিশেষ আয়োজন উন্মুক্ত থাকবে।
এর আগে গত শুক্রবার দুপুরে ঢাকায় গুলিবিদ্ধ হন ওসমান হাদি।
তিনি জাতীয় সংসদের ঢাকা-৮ আসনে সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছিলেন। সেদিন রাত থেকে তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি আছেন।