প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে ৫০ বছরের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের মূল্যায়ন করে পরবর্তী সময় উচ্চপর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। খবর বাসসের।
বৃহস্পতিবার সকালে টোকিওর ওয়েস্টিনের সাকুরায় জাপানিজ বিজনেস লিডারদের (সিইও) সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমি নিশ্চিত যে জাপানের সঙ্গে আমাদের গত পঞ্চাশ বছরের ঈর্ষণীয় সহযোগিতা আগামী পঞ্চাশ বছর এবং তার পরেও অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। আসুন আমাদের ব্যবসা ও বিনিয়োগ সম্পর্ককে পরবর্তী সময়ে উচ্চস্তরে নিয়ে যাই।’
‘গত পাঁচ দশকে আমাদের দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের দৃষ্টান্তমূলক ফলাফল দেখে আগামী বছরগুলোতে বাংলাদেশে জাপানের বৃহত্তর পদযাত্রার প্রত্যাশা আমাদের।’
জাপানের ব্যবসায়ীদের মতামতকে গুরুত্ব দেন এবং তাদের পরামর্শগুলো নোট করেছেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘টোকিওতে আমাদের দূতাবাস বাংলাদেশে আপনাদের উদ্যোগকে সহযোগিতা ও সহজতর করতে প্রস্তুত। অনুগ্রহ করে আপনাদের জন্য অপেক্ষারত ব্যবসা এবং বিনিয়োগের সম্ভাবনাগুলো অনুসন্ধান করতে বাংলাদেশে আসুন।’
প্রধানমন্ত্রী জানান, তারা ইতিমধ্যে বাংলাদেশে জাপানি কোম্পানির (আরও জাপানি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে) উত্থাপিত বেশ কয়েকটি নিয়ন্ত্রক ও নীতিগত সমস্যা সমাধান করেছেন। তিনি নিজে বাংলাদেশ-জাপান জয়েন্ট পাবলিক- প্রাইভেট ইকোনমিক ডায়ালগ (পিপিইডি) গঠনের উদ্যোগ নিয়েছেন এবং তিনি সন্তুষ্ট যে, পিপিইডির পঞ্চম রাউন্ড ২০২৩ সালের ১১ এপ্রিল জাপানে তার আগমনের ঠিক আগে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ব্যবসায়িক পরিবেশের উন্নতি অব্যাহত রাখব এবং বাংলাদেশে ব্যবসা করতে আপনাদের সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করব।’
দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের সবচেয়ে উদার বিদেশি বিনিয়োগ ব্যবস্থা রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিযোগিতামূলক খরচ, প্রচুর মানবসম্পদ, উচ্চ ক্রয়ক্ষমতাসহ বিশাল দেশীয় ভোক্তা বাজার এবং ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্তের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ বিনিয়োগের জন্য একটি অত্যন্ত লাভজনক অবস্থান হিসেবে দ্রুত আবির্ভূত হচ্ছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশাধিকার উন্নত করার মাধ্যমে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক কেন্দ্র হতে সচেষ্ট। সরকার সারা দেশে অর্থনৈতিক অঞ্চল, হাই-টেক/সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক স্থাপন করছে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে সংযোগের কেন্দ্র হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে পরিকল্পিত অবকাঠামোগত ভিত্তি তৈরি করছে। আজ, আমি আপনাদের খোলামেলা এবং উৎপাদনশীল ধারণাগুলো শুনে খুশি। এটি আমাদের বন্ধুত্বপ্রতীম উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরও প্রসারিত ও শক্তিশালী করবে।’
এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক উপস্থিত ছিলেন। আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ও জাপানের শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতারা।
শেখ হাসিনা জাপানের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, ‘প্রায় চার বছর আগে ২০১৯ সালে আমি টোকিওতে আপনার সঙ্গে শেষ দেখা করেছিলাম। আমি খুশি তারপর থেকে আমাদের দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা, বিনিয়োগ, বাণিজ্য এবং বাণিজ্যিক কার্যক্রমে অনেক কিছু ঘটেছে।’
বাংলাদেশ ও জাপান গত বছর দ্বিপক্ষীয় কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকী উদযাপন করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এখন আগামী ৫০ বছরে আমাদের সম্পর্ককে আরও নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছি।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যেও জাপানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছে।’
‘গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে কাজ করা জাপানি কোম্পানির সংখ্যা ক্রমাগত বেড়েছে। বিশেষ করে ২০১৪ সাল থেকে যখন আমরা আমাদের বিস্তৃত অংশীদারত্ব এবং বিগ-বি উদ্যোগের অধীনে জাপানের প্রতিশ্রুতিতে প্রবেশ করি’।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাপানি ব্যবসায়ীরাও বাংলাদেশের ব্যবসার এই ক্রমবর্ধমান প্রবণতাকে অনুসরণ করছেন এবং তারা জাপানের বিদ্যমান ব্যবসা সম্প্রসারণ অথবা বাংলাদেশে নতুন ব্যবসা চালু করতে ইতিবাচকভাবে ঝুঁকেছেন।’
তিনি বলেন, ‘আজ আপনাদের সঙ্গে আমার আলোচনার মাধ্যমে আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই যে, আমার সরকার এবং সব সংস্থা বাংলাদেশে ব্যবসায়িক প্রচেষ্টায় আপনাকে এবং জাপানের আমাদের অন্যান্য বন্ধুদের সাহায্য করতে আগ্রহী।’
বৈঠকে জাপানের শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ রোববার নৌবাহিনী সদর দপ্তরে ‘নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনী নির্বাচনী পর্ষদ-২০২৫' এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন।
নৌবাহিনী সদর দপ্তরে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নৌবাহিনীর ক্যাপ্টেন হতে কমডোর, কমান্ডার হতে ক্যাপ্টেন ও লেঃ কমান্ডার হতে কমান্ডার এবং বিমান বাহিনীর গ্রুপ ক্যাপ্টেন হতে এয়ার কমডোর, উইং কমান্ডার হতে গ্রুপ ক্যাপ্টেন এবং স্কোয়াড্রন লীডার হতে উইং কমান্ডার পদবিতে কর্মকর্তাদের পদোন্নতির আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের সামরিক কর্মকর্তাবৃন্দের সমন্বয়ে গঠিত এ পর্ষদ, সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর ভবিষ্যৎ জ্যেষ্ঠ নেতৃত্বের জন্য যোগ্য ও দক্ষ কর্মকর্তা নির্বাচন করবেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজে সংঘটিত মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
নির্বাচনী পর্ষদ-২০২৫ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী সশস্ত্র বাহিনীর বীর সেনা, সকল শ্রেণি-পেশার মুক্তিকামী বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আত্মত্যাগকারী সকল শহীদকে।
তিনি বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর গৌরবময় ইতিহাস, সংগ্রাম ও বীরত্বের কথা স্মরণসহ শান্তিকালীন সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা এবং জাতীয় প্রয়োজনে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
তিনি দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ও নানা সংকটে বিশেষত ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত ছাত্র জনতার অভ্যুত্থান পরবর্তী দেশের নিরাপত্তা সংকটে আপামর জনসাধারণের পাশে দাঁড়িয়ে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ, দেশ গঠনে উন্নয়ন ও সেবামূলক কাজে অংশগ্রহণ করে দেশের মানুষের ভালোবাসা ও পরম নির্ভরতা অর্জন করায় নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর সদস্যদের সাধুবাদ ও অভিনন্দন জানান।
প্রধান উপদেষ্টা দেশের সমুদ্র সম্পদের সংরক্ষণ ও আহরণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন, ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক প্রাণকেন্দ্র গভীর সমুদ্র বন্দরের ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর অবদান এবং সার্বিকভাবে সুনিল অর্থনীতির বিকাশে প্রয়োজনীয় দক্ষ মানবসম্পদ গড়ার ব্যাপারে নির্দেশনা প্রদান করেন। একইসাথে তিনি দেশের সুনীল অর্থনীতির বিকাশে চলমান বিভিন্ন কর্মকাণ্ড, মহেশখালী সমন্বিত উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এমআইডিএ) প্রতিষ্ঠা, উপকূলীয় অঞ্চলের উন্নয়নসহ দেশের সার্বিক উন্নয়নে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের ওপর আলোকপাত এবং এক্ষেত্রে নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর অবদানের কথা উল্লেখ করেন।
অধ্যাপক ইউনূস নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী কর্তৃক দেশের শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদানসহ দেশমাতৃকার সেবায় ও সুরক্ষায় বাহিনী দ্বয়ের ভূমিকা ও সর্বোপরি সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকীকরণের ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেন। নৌবাহিনী এবং বিমান বাহিনী দেশের সংবিধান সমুন্নত রেখে যে কোন রাষ্ট্রীয় সংকটে এবং দুর্যোগে আর্তমানবতার সেবায় জনগণের পাশে দাঁড়ানোর এই ধারা ভবিষতেও অব্যাহত রাখবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন।
তিনি বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর নেতৃত্বে দেশপ্রেমিক, মেধাবী, দক্ষ, পেশাদার, সৎ, মানবিক এবং নৈতিক গুণাবলীসম্পন্ন যোগ্য কর্মকর্তাদের নির্বাচনের জন্য নির্বাচনী পর্ষদকে যথাযথ নির্দেশনা দেন।
প্রধান উপদেষ্টা অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছালে নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম নাজমুল হাসান, ওএসপি, এনপিপি, এনডিসি, এনসিসি, পিএসসি এবং বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান, বিবিপি, ওএসপি, জিইউপি, এনএসডব্লিউসি, পিএসসি তাঁকে স্বাগত জানান।
নির্বাচনী পর্ষদ উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ায় নৌবাহিনী প্রধান এবং বিমান বাহিনী প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান।
নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রধান উপদেষ্টার ব্যক্তিগত সম্পৃক্ততা ও দিকনির্দেশনা নৌবাহিনী এবং বিমান বাহিনীর সকল সদস্যের কর্মস্পৃহা ও মনোবল বৃদ্ধি করেছে বলে তারা দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এছাড়াও, প্রধান উপদেষ্টার মূল্যবান দিকনির্দেশনায় নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীতে নেতৃত্ব প্রদানে দেশপ্রেম, পেশাগত দক্ষতা, মানবিক ও অধিনায়কত্বের গুণাবলির মাপকাঠিতে দক্ষ ও উপযুক্ত কর্মকর্তা নির্বাচনের মাধ্যমে সুদক্ষ বাহিনী গড়ে তোলার দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত করেন বাহিনী প্রধানগণ ।
অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট সামরিক ও বেসামরিক উধ্বর্তন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান শেষে প্রধান উপদেষ্টা নৌবাহিনী সদর দপ্তর প্রাঙ্গণে একটি বৃক্ষরোপণ করে নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী ও বাংলাদেশের সমৃদ্ধি কামনা করেন ।
সন্ধ্যা হলেই বালু নদের তীরে, নীলা মার্কেঠে জলে ওঠে লাল নীল বাতি। মাটির চুলায় লাকড়ি দিয়ে রান্না শুরু হয় হাঁসের মাংস আর বিভিন্ন ধরনের পিঠা। আর এগুলো তৈরি করেন নারীরা এবং পরিবেশনও করেন নারীরা। স্থানীয়রা বলেন, শুধু শীতেই এখানে কোটি টাকার বাণিজ্য হয়। মাংস দিয়ে পিঠা বিক্রি করে এখানে শতাধিক নারী স্বাবলম্বী।
শীত, গ্রীস্ম, শরৎ আর হেমন্ত সব মৌসুম বাঙালি জাতির বিলাসী আহার-বিহারের মৌসুমও। বছরজুড়ে হাজারো ধরনের পিঠাপুলি তৈরির ধুম পড়ে যায়। অঞ্চলভেদে ঘরে ঘরে তৈরি করা হয় কত রংবেরঙের পিঠাপুলি। তবে সময় এবং মানুষের রুচির মধ্যে অনেক পার্থক্য এসেছে। এক সময় বাহিরের খাবাওে অরুচি থাকলেও এখন ঘরে তৈরি খাবার খেয়ে আভ্যন্ত বাঙালি ক্রমেই ঘরের বাইরে তৈরি খাবার খেতেও অভ্যস্ত হয়ে উঠছে। বাঙালির এই খাদ্য রুচি পরিবর্তনের কথা ভেবে অঞ্চলভেদে গড়ে উঠেছে বিশেষ খাবারের বিশেষ রেস্টুরেন্ট। তেমনি কয়েক বছর ধরে শীত মৌসুমে শীতের খাবারের মেন্যুর শীর্ষ পর্যায়ে স্থান পেতে শুরু করেছে হাঁসের মাংস। এসব হাঁসের মাংস রান্নার ধরন ও স্বাদও আলাদা।
তেমনি রান্না করা হাঁসের মাংসের জন্য বিশেষ দ্রষ্টব্য স্থান হয়ে উঠেছে ৩০০ ফিট ঘিরে পূর্বাচলে বালু নদের পাশের ময়েজ উদ্দিন চতুর ও নীলা মার্কেট। ঢাকা-রূপগঞ্জ সড়কের ৩০০ ফিট এলাকায় স্টেডিয়ামের পাশে বালু নদের তীর ঘেঁষে গ্রামীণ এ বাজারের অবস্থান। প্রতিদিন সন্ধ্যা নামলে তরুণ-তরুণীরা, বন্ধু-বান্ধব কিংবা অনেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সেখানে হাজির হন রান্না করা হাঁসের মাংস দিয়ে চাপটি খেতে।
রাজধানী বাড্ডা থেকে এসেছেন শামিম-মুন্নি দম্পতি। তাঁরা বলেন, হাঁস তো বাসায় বসেই খাওয়া যায়। কিন্তু পূর্বাচলে খাওয়ার মজাই আলাদা। গ্রামীণ পরিবেশে খাওয়া ও ঘোরাঘুরি দুটোই হয়। ডেমড়ার মীরপাড়া থেকে এসেছেন আবিদ হাসান ও তাঁর বন্ধুরা। আবিদ বলেন, 'আমরা সব বন্ধু মোটরবাইকে করে পূর্বাচলে এসেছি হাঁসের মাংস খেতে। শুনেছি এখানকার হাঁসের মাংস খুবই স্বাদ।
গ্রামীণ আবহে সেখানকার দোকানগুলোয় হাঁসের মাংস রান্না করা হয় মাটির চুলায়। রান্নায় ব্যবহার করা হয় স্থানীয় উপকরণ। অনেক ভোজনরসিক মাটির চুলায় এই হাঁস রান্নার ঘ্রাণে বিমোহিত হন। দল বেঁধে হাঁসের মাংস দিয়ে চাপটি, রুটিসহ বিভিন্ন পিঠা খেতে পূর্বাচলে ৩০০ ফিটের ময়েজ উদ্দিন চত্বর ও নীলা মার্কেট ভোজনরসিকদের কাছে বিশেষ স্থান হয়ে উঠেছে।
সপ্তাহের ছুটির দিন শুক্র ও শনিবার ছাড়াও যেকোনো বন্ধের দিন যেখানে ভোজনরসিকদের ভিড় লেগে যায়। বিকেল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ভোজনরসিকদের এই ভিড় অব্যাহত থাকে। গ্রামীণ পরিবেশে দেশি হাঁসের মাংসের সঙ্গে আতপ চালের চাপটি কিংবা চিতই পিঠা ভোজনরসিকদের কাছে বিশেষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। শীত আসলেই শীতের খাবারের নতুন এই ট্রেন্ড হাঁসের মাংস খেতে দলে দলে ভোজনরসিকরা ছুটে যান নীলা মার্কেট এলাকায়।
৩০০ ফিট এক্সপ্রেসওয়ের পাশে পূর্বাচল সেক্টর-১-এ বিশাল এলাকাজুড়ে মার্কেকটির অবস্থান। ৩০০ ফিট এক্সপ্রেসওয়ে এমনিতেই রাজধানীবাসীর কাছে দর্শনীয় স্থান। তার পাশে নীলা মার্কেটের মজাদার হাঁসের মাংস মানুষের আগ্রহ আরো বাড়িয়ে তুলেছে। এর সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ায় রাজধানীর আশপাশের এলাকাগুলো থেকেও আনকে দল বেঁধে সেখানে হাঁসের মাংসের স্বাদ নিতে চলে আসেন। সেখানকার অসংখ্য দোকানের যেকোনো একটায় ইচ্ছামতো বসে উপভোগ করা যায় দেশি হাঁসের বিচিত্র স্বাদ। সঙ্গে রয়েছে বাহারি পিঠাও।
নীলা মার্কেট এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সড়কের দুই পাশে সারি সারি দোকান, যার প্রায় প্রতিটি দোকানেই পাওয়া যায় গরু, মুরগীসহ হাঁসের মাংস। রান্নার জন্য প্রতিদিন দুপুরের মধ্যেই শেষ করা হয় হাঁস কেটে মাংস ধোয়ার কাজ। সন্ধ্যা নামতেই শুরু হয় মাটির চুলায় রান্না। তখন সেখানকার চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে হাঁস রান্নার ঘ্রাণ। দেখা গেছে ছুটির দিনে সেখানে আলেয়ার পিঠাঘরে রান্না হচ্ছে ২৫টি হাঁস। আরো ১০টি মজুদ করা আছে। শিউলি আক্তার তাঁর পরিবারের সদস্যদের সহায়তায় প্রায় আড়াই বছর ধরে সেখানে ব্যবসা করছেন। খাবার মজাদার হওয়ায় শুরু থেকেই তিনি ভোজনরসিকদের কাছে জনপ্রিয়। কথায় কথায় জানালেন, ছুটির দিনগুলোতে বিকেল থেকে রাত ১টা পর্যন্ত তাঁর দোকানে বেচাবিক্রি চলে। ২৫০ টাকার এক প্লে¬ট মাংসে থাকে একটি লেগ পিসসহ মোট পাঁচ পিস মাংস, সাথে ঝোল। নীলা মার্কেটের বিশেষত্ব হলো সেখানকার মাংস রান্না হয় মাটির চুলায়। আর জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয় শুকনা কাঠ। এ কারণে খাবারের স্বাদ ভিন্ন হয় বলে জানালেন সেখানকার দোকানিরা।
ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে অনেকে দোকানের সাইন বোর্ডে লিখে রেখেছেন 'লাকড়ি দিয়ে মাটির চুলায় রান্না হয়।' 'নিমন্ত্রণ পিঠা ঘরে' রান্না করছিলেন খালেদা আক্তার। মাটির চুলার বিশেষত্ব সম্পর্কে তিনি বললেন, 'মাটির চুলায় কাঠ দিয়া রান্নাডা হইতে টাইম লাগে। আস্তে আস্তে রান্না হয়। এ জন্য খাবারডা মজা হয়। আর হাঁসের মাংস তো অনেক সময় নিয়া রান্না করা লাগে। মাংস শক্ত থাকলে খাইয়া মজা নাই।
'বউ-শাশুড়ি পিঠা ঘর'-এর মালিক বন্যা আক্তার বলেন, 'আমাদের লোক আছে। ওরা ময়মনসিংহ-নেত্রকোনা থেকে হাঁস দিয়ে যায়। একদম দেশি হাঁস। হাওরে যেগুলো পালা হয়। আমাদের দোকানে প্রতিদিন রান্না করা ৫০ থেকে ৬০টি হাঁসের মাংস বিক্রি হয়।'
শীতে একটু বেশি জমে ব্যবসা। 'অনন্যা খাবারঘর'-এর মালিক জাকির মিয়া বললেন, 'নীলা মার্কেটে দেড় শ থেকে দুই শ দোকান রয়েছে। যারা হাঁসের মাংস। বিক্রি করে। শীতে সবচেয়ে বেশি জমজমাট হয় এই বাবসা। শীতে হাঁস ভুনা দিয়ে পিঠা খেতে অনেকে পছন্দ করে। এই মৌসুমে এক মাসে আমার প্রায় দুই শ থেকে আড়াই শ হাঁস লাগে'।
বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী, গবেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. এম শমশের আলী ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
শনিবার (২ আগস্ট) রাত সাড়ে ৩টায় ঢাকার ল্যাব এইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স ছিল ৮৭ বছর। তার বড় ছেলে জেহান আলী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, আজ ধানমণ্ডির বায়তুল আমান মসজিদে জানাজা শেষে আজিমপুর কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।
ড. শমশের আলী ১৯৩৭ সালের ২১ নভেম্বর কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৫৪ সালে যশোর জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক ও ১৯৫৬ সালে রাজশাহী কলেজ থেকে আইএসসি পাস করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ থেকে ১৯৫৯ সালে অনার্স ও ১৯৬০ সালে এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬১ সালে ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি সম্পন্ন করে ১৯৬৫ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিউক্লিয়ার ফিজিক্সে দ্বিতীয় পিএইচডি অর্জন করেন।
১৯৬১ সালে পাকিস্তান আণবিক শক্তি কমিশনে তার কর্মজীবন শুরু হয়। ১৯৭০ সালে তিনি কমিশনের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পান। ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে অনারারি প্রফেসর হিসেবে সম্মানিত করে। ১৯৮২ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নিযুক্ত হন এবং ২০০৬ সাল পর্যন্ত এ দায়িত্বে ছিলেন।
তিনি ১৯৯২ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাউবি) প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০২ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়েরও প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য ছিলেন। এছাড়া ২০০৪ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
গত ২৪ মার্চ তিনি বাউবির প্রফেসর ইমেরিটাস পদে যোগ দিয়েছিলেন।
বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিক দূষণ রোধে একটি বাধ্যতামূলক চুক্তি করার লক্ষ্যে প্রায় ১৮০টি দেশের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে ১০ দিনের আলোচনা শুরু হচ্ছে। গত বছরের ডিসেম্বরে দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে আয়োজিত আলোচনায় কোনো চুক্তিতে পৌঁছাতে না পারার পর চলতি বছর সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় আবারও এই আলোচনা শুরু হতে যাচ্ছে।
ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে প্লাস্টিক দূষণ এতটাই ব্যাপক যে এর মাইক্রোপার্টিকল বা অতি ক্ষুদ্র কণা পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ, গভীরতম মহাসাগরের তলদেশ এমনকি, মানবদেহের প্রায় প্রতিটি অংশেও পাওয়া গেছে।
২০২২ সালে জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলো ২০২৪ সালের মধ্যে একটি কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তবে দক্ষিণ বুসানের আলোচনায় বড় ধরনের মতভেদের কারণে অগ্রগতি থেমে যায়। একপক্ষ একটি বৈশ্বিক বাধ্যতামূলক চুক্তির পক্ষে কথা বললেও অন্যপক্ষ, বিশেষ করে তেল উৎপাদনকারী দেশগুলো, প্লাস্টিক উৎপাদন সীমিত করার বিরোধিতা করে শুধু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দিকেই জোর দিতে চেয়েছে।
অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার (ওইসিডি) মতে, এই সমস্যার যদি সমাধান না করা হয়, তাহলে ২০৬০ সালের মধ্যে প্লাস্টিক ব্যবহারের পরিমাণ তিনগুণ হতে পারে। এদিকে, জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সংস্থা ইউএনইপি জানিয়েছে, ২০৪০ সালের মধ্যে প্লাস্টিক বর্জ্য মাটি ও পানিতে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে।
বর্তমানে বিশ্বে বছরে প্রায় ৪৬ কোটি টন প্লাস্টিক উৎপাদিত হয়, যার অর্ধেকই একবার ব্যবহারযোগ্য। অথচ এসব প্লাস্টিক বর্জ্যের ১০ শতাংশেরও কম পুনর্ব্যবহার করা হয়।
এই প্লাস্টিক একসময় এতটাই ছোট কণায় ভেঙে যায় যে তা শুধু পরিবেশেই নয়, রক্ত ও মানব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গেও প্রবেশ করছে- যার প্রভাব ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বাস্থ্যের ওপর কী হতে পারে, তা এখনো পুরোপুরি অজানা। ইউএনইপির নির্বাহী পরিচালক ইনগার অ্যান্ডারসেন বলেন, পরিস্থিতি জটিল হলেও আমরা আশা করছি, জেনেভার আলোচনায় একটি চুক্তির দিকে এগোনো সম্ভব।
বুসান বৈঠকের পর প্রকাশিত খসড়া নথিতে ৩০০টির মতো অস্পষ্ট বা মতবিরোধপূর্ণ বিষয় রয়ে গেছে। অর্থাৎ, এখনো ৩০০ বিষয়ে একমত হতে হবে বলে জানান আন্তর্জাতিক দূষণকারী পদার্থ নির্মূল নেটওয়ার্কের (আইপিইএন) নির্বাহী পরিচালক বিয়র্ন বিলার।
চুক্তিতে সবচেয়ে বিতর্কিত বিষয় হলো- নতুন প্লাস্টিক উৎপাদন সীমিত করা হবে কিনা। সৌদি আরব, ইরান ও রাশিয়ার মতো পেট্রোলিয়াম উৎপাদনকারী দেশগুলো এ ধরনের সীমাবদ্ধতার বিপক্ষে।
আরেকটি বিতর্কিত বিষয় হলো- ক্ষতিকর রাসায়নিকের তালিকা তৈরি, বিশেষ করে পিএফএএস জাতীয় রাসায়নিক যেগুলো ‘ফরএভার কেমিক্যালস’ নামে পরিচিত। কারণ এগুলো সহজে ভেঙে পড়ে না।
বিয়র্ন বিলারের বলেন, আরেক দফা বৈঠকের প্রয়োজন হোক, কেউই তা চায় না। সব দেশের কূটনীতিকদের উচিত এখনই অগ্রগতি দেখানো।
একটি কূটনৈতিক সূত্র জানায়, বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট কঠিন, বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে যুক্তরাষ্ট্রের বহুপক্ষীয় উদ্যোগের প্রতি মনোভাব পরিবর্তনের কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।
এদিকে, উন্নয়নশীল দেশগুলো আলোচনায় আগ্রহী। কারণ তারা হয়তো নিজেরাই প্লাস্টিক উৎপাদক, অর্থনীতিতে চুক্তির প্রভাব পড়তে পারে, আবার কেউ কেউ দূষণের শিকার হয়ে এর প্রতিকার চাইছে।
গত জুনে ফ্রান্সের নিস শহরে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ মহাসাগর সম্মেলনে ৯৬টি দেশ অংশ নেয়। তাদের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ২৭টি দেশ, মেক্সিকো ও সেনেগালও একটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী চুক্তির দাবি জানায়। তারা চায়, প্লাস্টিক উৎপাদন ও ব্যবহারের ওপর নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা আরোপ করা হোক।
ছোট দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোর জোট অ্যাওসিস’র চেয়ারপারসন ইলানা সিড বলেন, চুক্তিটি যেন শুধু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে না হয়, বরং প্লাস্টিকের উৎপাদন থেকে শুরু করে ব্যবহারের পরের পর্যায় পর্যন্ত জুড়ে থাকতে হবে।
গ্রিনপিসের আলোচক দলের প্রধান গ্রাহাম ফোর্বস বলেন, সরকারগুলোর উচিত জনগণের স্বার্থে কাজ করা, দূষণকারী শিল্পগুলোর স্বার্থে নয়। তিনি আলোচনায় শিল্প খাতের লবিস্টদের উপস্থিতির সমালোচনাও করেন।
আইপিইএন’র নির্বাহী পরিচালক বিয়র্ন বিলার বলেন, আলোচকরা চান, আরেক রাউন্ডে না গিয়েই একটি কাঠামো চুক্তিতে পৌঁছাতে। কিন্তু কাঠামো থাকলেই তা কার্যকর হবে না, সেটির প্রকৃত প্রয়োগযোগ্যতা, অর্থায়ন ও বাস্তবায়ন দিয়ে পূর্ণ করতে হবে। অন্যথায়, এই চুক্তি কেবল একটি ফাঁকা খোলস হয়েই থেকে যাবে।
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে নিবন্ধনের অপেক্ষায় এক হাজার নতুন ওষুধ। দুই বছরের বেশি সময় ধরে আটকে থাকা এসব ওষুধ আগামী নভেম্বর মাসের আগে উচ্চ হারে রয়্যালটি দিতে হবে, এতে বাড়তে পারে ওষুধের দাম।
গতকাল শনিবার বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতি ও বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের এক মতবিনিয়মসভায় খাত সংশ্লিষ্টরা এসব কথা বলেন। সভায় উপস্থিত ছিলেন ডেল্টা ফার্মা লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ওষুধ শিল্প সমিতির মহাসচিব ডা. মো. জাকির হোসেন, ওষুধ শিল্প সমিতির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ইউনিমেড ইউনিহেলথের চেয়ারম্যান এম মোসাদ্দেক হোসেন, রেনাটার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ কায়সার কবির, বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির সিইও মেজর জে. (অব.) মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান, কোষাধ্যক্ষ হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের সিইও মুহাম্মদ হালিমুজ্জামান।
ডা. মো. জাকির হোসেন বলেন, স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উন্নয়শীল দেশের তালিকায় বাংলাদেশ প্রবেশ করবে ২০২৬ সালের ২৪ নভেম্বর। তখন থেকে বাংলাদেশকে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) বাণিজ্যবিষয়ক মেধাস্বত্ব আইন (ট্রিপস) চুক্তি পুরোপুরি মেনে চলতে হবে এবং ওষুধ কম্পানিগুলোকে উচ্চ হারে রয়্যালটি দিতে হবে। কিংবা পেটেন্ট নিতে প্রচুর বিনিয়োগ করতে হবে, যা কঠিন ও ব্যয়বহুল।
সৈয়দ কায়সার কবির বলেন, স্বল্পোন্নত দেশে প্রবেশ শুধু ওষুধ শিল্পের জন্য খারাপ তা নয়, এটা গোটা বাংলাদেশের জন্য খারাপ হবে।
প্রথমত ট্রিপস সুবিধা বঞ্চিত হবে। দ্বিতীয় স্বল্প সুদে ঋণ পাবে না। তৃতীয় ওষুধের ওষুধে পেটেন্ট সুবিধা মিলবে না। তাই স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উন্নয়শীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের উত্তরণ পিছিয়ে দেওয়ার দাবি ব্যবসায়ীদের।
সভায় খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, কম্বোডিয়া ও সেনেগালের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে তারা গ্রাজুয়েশনে গেলেও অনেক লু ফলের কারণে ট্রানজিশন দেরি করেছে। বাংলাদেশে সে বিষয়ে আগ্রহ নেই। আমাদের এখন দরকার প্রথমে গ্রাজুয়েশনটা ঠেকানো।
তারা বলছেন, আমরা বুঝতে পাচ্ছি, আমেরিকা ও চীন এই শক্তিটা আমাদের কাছে থাকুক। আমাদের এখন বেশি প্রয়োজন উন্নয়শীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের উত্তরণ পিছিয়ে দেওয়া।
যদি এই সরকার না করে তাহলে নির্বাচিত সরকার আসার পর যেন এটা করে।
আরো বলেন, গ্যাস সংকট ও জায়গা সংকটে দাঁড়াতে পারছে না এপিআই পার্ক। সরকার ২০০৭ সালে ওষুধের মূল কাঁচামাল অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্ট (এপিআই) শিল্প তৈরির উদ্যোগ নেয়। এ লক্ষ্যে ২০০৮ সালে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) মাধ্যমে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার বাউসিয়া এলাকায় ২০০ একর জমি বরাদ্দ দেয়। এর নাম দেওয়া হয় ‘এপিআই শিল্পপার্ক’। পার্কের জমি ২৭টি ওষুধ কম্পানিকে ৪২টি প্লটে ভাগ করে বরাদ্দ দেওয়া হয়। কোনো কম্পানি একাধিক প্লট বরাদ্দ নেয়। কিন্তু গত দেড় দশকে মাত্র চারটি প্রতিষ্ঠান সেখানে কাজ শুরু করেছে।
এ বিষয়ে ওষুধ শিল্প সমিতির মহাসচিব জাকির হোসেন বলেন, কম্পানিগুলো ২০১৭ সালে প্লট বরাদ্দ পাওয়ার টেকনোলজি আদান-প্রদানে ভারত, চীনসহ বেশ কিছু দেশে যোগাযোগ করে। চীনারা প্লট দেখে জানায় আকার খুবই ছোট। এছাড়া এপিআই রিঅ্যাক্টর, স্টোরেজ ও সলভেন্সির জন্য যে ক্যাপাসিটি (সক্ষমতা) দরকার পার্কে সব ধরনের সুবিধা নেই। সবচেয়ে বড় সমস্যা গ্যাস সরবরাহ নেই। ফলে অনেক কম্পানি যায়নি। যারা যাচ্ছে না তাদের প্লটগুলো একসঙ্গে করে কয়েকটি কম্পানি কাজ শুরুর চেষ্টা করছে। সরকার নীতিমাল সংশোধন করে দিয়েছে। এখন বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের যাওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। আশা করা যায় ২০২৬ সালের মধ্যে ১০ থেকে ১২টা কম্পানি ফ্যাক্টরি প্রতিষ্ঠা করতে পারবে।
জাতীয় পর্যায়ে অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকা প্রণয়ন ও জনগণের জন্য তা সহজলভ্য করতে করণীয় নির্ধারণে একটি উচ্চ পর্যায়ের টাস্কফোর্স গঠন করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে গেছে অনলাইনে বিমানের টিকিট কাটার সবচেয়ে বড় প্ল্যাটফরম ‘ফ্লাইট এক্সপার্ট’। তাদের অফিস বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া, ওয়েবসাইটও হারিয়ে গেছে। অনেক এজেন্সি এই ফ্লাইট এক্সপার্টে শত শত কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে বলে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।
ফ্লাইট এক্সপার্টের সেলস ডিপার্টমেন্টের মামুনুর রশিদ বলেন, গত রাতেই আমাদের মালিক দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। আমরা এখন মতিঝিল থানায় যাচ্ছি।
এদিকে, ফ্লাইট এক্সপার্টের সিওও সালমান তাদের অফিসের অভ্যন্তরীণ একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে লিখেছেন, সাঈদ, হোসাইন এবং সাকিব তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। তারা খুব সতর্কতার সঙ্গে পরিকল্পনা করে গত বৃহস্পতিবারের মিটিংয়ে এসব দোষ তার (সালমানের) ওপর চাপিয়ে দিয়েছেন। এটা সম্পূর্ণ পরিকল্পিত ছিল এবং সালমানকে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযোগ দেওয়া হয়নি। আজ সকালে তারা ৩ কোটি টাকা বা তার কম টাকা তুলে নিয়েছেন এবং তা নিজেদের কাছে রেখে দিয়েছেন। এর ফলস্বরূপ, কম্পানিটি এখন বন্ধ হয়ে গেছে।
সালমান আরো জানিয়েছেন, তার দিকে আসা হুমকি এবং দোষারোপের কারণে নিজেকে রক্ষা করার জন্য তিনি ছুটি নিয়েছেন। এই পরিস্থিতির জন্য তিনি দুঃখিত এবং বলেছেন যে এভাবে চলে যাওয়ার কোনো ইচ্ছা তার ছিল না।
এদিকে ফেসবুকে অনেকেই লিখেছেন, গত রাতেই (শুক্রবার) দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন ফ্লাইট এক্সপার্ট মালিক।
ফ্লাইট এক্সপার্টের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে গিয়ে দেখা গেছে, তাদের সর্বশেষ পোস্ট ছিল হজ নিয়ে। সেই পোস্টে হজ ২০২৬-এর রেজিস্ট্রেশন শুরু জানিয়ে হজ প্যাকেজের মূল্য ছাড়া হয়েছে।
জয়িতা আফ্রিন নামে একজন প্রশ্ন করে লিখেছেন, ফ্লাইট এক্সপার্টের মতো ট্রাস্টেড কোম্পানি যদি দেশ থেকে পালিয়ে যায় তাহলে আর কাকে বিশ্বাস করব?
ফ্লাইট এক্সপার্ট ২০১৭ সালের মার্চ মাস থেকে বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম শুরু করে। তখন একটি লঞ্চ ইভেন্টের মাধ্যমে তাদের প্ল্যাটফর্ম চালু করে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এটি খুব দ্রুত বাংলাদেশের অনলাইন ট্রাভেল ইন্ডাস্ট্রিতে একটি প্রভাবশালী নাম হয়ে ওঠে। তখন তারা দেশের ফ্লাইট টিকিটিং শিল্পে একটি বড় জায়গা দখল করে নেয়।
প্রতিষ্ঠানটি দেশি-বিদেশি বিভিন্ন এয়ারলাইনসের টিকিট বুকিং, হোটেল রিজার্ভেশন, ট্যুর প্যাকেজ এবং ভিসা প্রক্রিয়াকরণের মতো নানা ধরনের সেবা দিত। বিশেষ করে, সাশ্রয়ী মূল্যে ফ্লাইট টিকিট বুক করার সহজ সুবিধার কারণে এটি গ্রাহকদের কাছে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে। গ্রাহকদের জন্য বিভিন্ন আকর্ষণীয় অফার, ডিসকাউন্ট এবং সহজে পেমেন্টের ব্যবস্থা থাকায় এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) মদিনাকে ‘স্বাস্থ্যকর শহর’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। মুসলিমদের দ্বিতীয় পবিত্রতম স্থান মসজিদে নববীর শহরটি ‘৮০ পয়েন্ট’ পেয়ে এই স্বীকৃতি আদায় করে নিল।
সৌদি প্রেস এজেন্সি জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে সৌদি স্বাস্থ্যমন্ত্রী ফাহাদ আল জালাজেলের কাছ থেকে মদিনা অঞ্চলের গভর্নর প্রিন্স সালমান বিন সুলতান ডব্লিউএইচও’র স্বীকৃতি সনদ গ্রহণ করেন।
যুবরাজ সালমান বলেছেন, মদিনার এই স্বীকৃতি ‘নগর কেন্দ্রগুলোতে দেশের জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে নেতৃত্বের নিষ্ঠার উদাহরণ।’
তিনি মদিনার চলমান রূপান্তরকে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিকভাবে একটি ‘শীর্ষস্থানীয় উন্নয়ন মডেল’ হিসেবে তুলে ধরেন। এটি সৌদির ‘ভিশন ২০৩০’ লক্ষ্যের অংশ।
সৌদি প্রেস এজেন্সি জানিয়েছে, জেদ্দার পর মদিনাও মধ্যপ্রাচ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্বাস্থ্যকর শহর হিসেবে অবস্থান সুদৃঢ় করেছে।
ডব্লিউএইচও’র অনুমোদন পেতে হলে একজন প্রতিযোগীকে ৮০টি মানদণ্ড পূরণ করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে পার্ক, হাঁটার জায়গা এবং প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্র ও স্কুলের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা প্রচার।
ডব্লিউএইচও সৌদি আরবের আরও ১৪টি শহরকে ‘স্বাস্থ্যকর’ স্বীকৃতি দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে তায়েফ, তাবুক, আদ-দিরিয়া, উনাইজা, জালাজেল, আল-মান্দাক, আল-জুমুম, রিয়াদ আল-খুবরা এবং শরুরাহ।
সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেছেন,অন্যায়ের সমাজ ভেঙে নতুন সমাজের কাঠামো গড়ে তোলাই আমাদের প্রধান কাজ।
তিনি আজ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ওয়ারিয়র্স অফ জুলাই কর্তৃক আয়োজিত স্যালুট টু জুলাই ওয়ারিয়র্স অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন।
স্যালুট টু জুলাই ওয়ারিয়র্স অনুষ্ঠানে ওয়ারিয়র্সের কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব মোহাম্মদ সালমান হোসেন এর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মোঃ সাইদুর রহমান, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব সাঈদুর রহমান, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ভাইস চেয়ারম্যান ড. আসাদুজ্জামান রিপন, এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক মোঃ সারজিস আলম, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তানজিম জারা, ঢাকা মেডিকেল কলেজের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ আসাদুজ্জামান এবং জুলাই যুদ্ধে শহিদ ও আহত পরিবারের অভিভাবক এবং জুলাই যোদ্ধারা বক্তৃতা করেন।
উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ ২০২৪ জুলাই যুদ্ধে আমিও ছিলাম উল্লেখ করে বলেন, ১৮ জুলাই যখন আমি রাস্তায় ছিলাম তখন আমার মাথার উপর দিয়ে হেলিকপ্টার থেকে গুলি ছুড়ছে, পুলিশ গুলি ছুড়ছে এবং এক ছাত্রের গায়ে গুলি লাগলো তখন আমি তার কাছে ছুটে গেলাম। আমার গায়েও গুলি লাগতে পারতো কিন্তু আমি বেঁচে গেলাম। তিনি বলেন, আমরা আর রক্ত দিতে চাইনা, আমরা জ্ঞান দিয়ে, মেধা দিয়ে দেশ গড়তে চাই।
উপদেষ্টা বলেন, যেই ভঙ্গুর কাঠামো আমরা পেয়েছি, সে কাঠামো পাহাড়তম। ১৬ বছরের যে অপশাসন রন্ধে রন্ধে প্রবেশ করেছে তা ভাঙতে এক বছরে সম্ভব নয়। তিনি ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বলেন, কোটা নয়, মেধার আন্দোলনে তোমরা যুদ্ধ করেছো, তাহলে আর কেন রক্ত দিতে হবে তোমরা মেধার যোগ্যতা দিয়ে দেশ গড়বে। তাই তোমরা মেধার যোগ্যতা অর্জনে ক্লাসে ফিরে যাও এবং সাম্য ও ন্যায় ভিত্তিক সমাজ গঠনে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে তৈরি হতে বলেন।
ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, বর্তমান তরুণ সমাজ প্রযুক্তি নির্ভর। তাই নৈতিক মূল্যবোধের প্রচারে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার সময়ের দাবি।
বৃহস্পতিবার চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে মারকাজুল ফুরকান শিক্ষা পরিবারের উদ্যোগে আয়োজিত আন্তর্জাতিক ইসলামি দাওয়াহ কনফারেন্সে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আরো বলেন- তরুণ সমাজের মধ্যে ইসলামের অমূল্য বাণী পৌঁছাতে হলে প্রযুক্তির মাধ্যমে উপস্থাপন কার্যকর ও গ্রহণযোগ্য হতে হবে। আকর্ষণীয় গ্রাফিক্স, ভিডিও, শর্ট ক্লিপ, ইসলামিক অ্যানিমেশন ইত্যাদি তাদের আগ্রহ বাড়াতে সাহায্য করে।
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, ভাষা ও ভৌগোলিক সীমা অতিক্রম করে দাওয়াত পৌঁছানো সম্ভব। অনলাইন অনুবাদ, সাবটাইটেল, ও মাল্টি-ল্যাঙ্গুয়াল কনটেন্ট ব্যবহার করে ভিন্ন ভাষাভাষীদের মধ্যেও দাওয়াত পৌঁছানো যায়। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দাওয়াতি বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ।
সুলতানুল ওয়ায়েজিন মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, ইন্টারনেট, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের মাধ্যমে দাওয়াত বহুগুণে বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়। এতে দাওয়াতি কার্যক্রমে ব্যাপকতা আসবে। একসময় যেখানে একজন দায়ি একসঙ্গে কেবল একটি মজলিসে কথা বলতে পারতেন, এখন সেই একই বক্তৃতা লাইভ বা রেকর্ড আকারে কোটি মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। সফর করে দাওয়াত পৌঁছাতে খরচ, সময় ও শ্রম লাগে। কিন্তু প্রযুক্তি মাধ্যমে ঘরে বসেই দাওয়াতি কার্যক্রম চালানো সম্ভব। অনলাইন বই ও ভিডিও ব্যবহার করে কম সময়ে বেশি জ্ঞান বিতরণ করা যায়।
তিনি বলেন, বর্তমান যুগে দাওয়াত ও তাবলিগের কার্যক্রমে প্রযুক্তির ব্যবহার কোনো বিলাসিতা নয়, বরং একটি অপরিহার্য বাস্তবতা। ইসলামের দাওয়াতকে যুগোপযোগী করতে এবং বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে পৌঁছে দিতে প্রযুক্তি একটি শক্তিশালী মাধ্যম। তবে এর ব্যবহারে জ্ঞান, সংযম ও নিয়ন্ত্রণ থাকা জরুরি।
সমেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মুফতি তারিক মাসউদ ও মোহাম্মদ মোশাররফ হোসাইন মাহমুদ।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার রূপকল্প হচ্ছে জুলাই ঘোষণাপত্র বলে দাবি করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। তিনি বলেন, এটি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার দালিলিক প্রমাণ। আগামী ৫ আগস্ট বা তার আগেও জুলাই ঘোষণাপত্র হতে পারে।
শনিবার (২ আগস্ট) ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘জুলাই পুনর্জাগরণ র্যালি’ পরবর্তী বক্তব্যে এসব কথা বলেন উপদেষ্টা।
জুলাই সনদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে জুলাই সনদ তৈরির কাজ চলছে। আগামী ৫ আগস্ট বা তার আগেই এই সনদ স্বাক্ষরিত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম তুলে ধরে উপদেষ্টা বলেন, অভ্যুত্থানকে জনস্মৃতিতে ধরে রাখতে মন্ত্রণালয় সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অধীন ১৫টি দপ্তর–সংস্থার অধিকাংশই জুলাই গণঅভ্যুত্থানকেন্দ্রিক ঘটনাপ্রবাহের তথ্য প্রচার, দলিল সংরক্ষণ ও প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণে কাজ করছে। বাংলাদেশ বেতার ও বিটিভি গণঅভ্যুত্থানকেন্দ্রিক প্রামাণ্যচিত্র ও অনুষ্ঠান প্রচার করছে।
তথ্য অধিদপ্তর (পিআইডি) ও প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি) গণঅভ্যুত্থান নিয়ে গবেষণাধর্মী কাজ করছে। এর পাশাপাশি চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর (ডিএফপি) জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে বেশ কিছু প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করেছে। বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের দলিল সংরক্ষণে ইতিমধ্যে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট গণঅভ্যুত্থানে শহিদ ও আহত সাংবাদিকদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতিচারণা করে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা বলেন, দল–মত–নির্বিশেষে মানুষ এই গণঅভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছেন। গণঅভ্যুত্থানের শেষ পর্যায়ে সব পেশাজীবী, বিশেষ করে শিক্ষক, সমাজকর্মী ও সংস্কৃতিকর্মীরা রাজপথে নেমে এসেছিলেন।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারকে প্রতিবাদ ও বিজয়ের অনুষঙ্গ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা এখান (কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার) থেকে গণঅভ্যুত্থান শুরু করেছিলাম, এখানে এসে বিজয় উদ্যাপন করতে পেরেছিলাম।
মাহফুজ আলম বলেন, গণঅভ্যুত্থানে শহিদদের আমরা যত দিন স্মরণে রাখব, আহতদের মর্মপীড়া যত দিন অনুভব করব, তত দিন আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়ার কাজে অঙ্গীকারবদ্ধ থাকব। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিশ্রুতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গত এক বছরে সরকার অনেকগুলো প্রতিশ্রুতি দিয়েছে; এর মধ্যে একটি বড় অংশের বাস্তবায়নের পথে সরকার অগ্রসর হয়েছে।
গণঅভ্যুত্থানে শহিদদের স্মরণ করে তিনি বলেন, আমরা শহিদদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে নতুনভাবে স্বাধীনতা পেয়েছি, নতুনভাবে দেশ গড়ার সুযোগ পেয়েছি। তিনি দেশ গড়ার কাজে মনোনিবেশ করতে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানান।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে র্যালি–পরবর্তী সমাবেশে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবা ফারজানা, মন্ত্রণালয় ও এর অধীন দপ্তর–সংস্থার কর্মকর্তা–কর্মচারী এবং সাংবাদিকেরা উপস্থিত ছিলেন।
আওয়ামী লীগের কার্যক্রম যেহেতু নিষিদ্ধ, সেহেতু তারা কোনো অপকর্ম করতে চাইলে কোনভাবেই ছাড় দেয়া হবে না বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.)।
উপদেষ্টা আজ সকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এ মন্তব্য করেন।
উপদেষ্টা বলেন, পাঁচ আগস্ট ঘিরে দেশে কোনো ধরনের শঙ্কা নাই। তিনি বলেন, এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সম্পূর্ণ প্রস্তুত ও সজাগ রয়েছে। তাছাড়া সাংবাদিকরা সহ সংশ্লিষ্ট সবাই যেভাবে এ বিষয়ে সাহায্য-সহযোগিতা করে যাচ্ছেন তাতে কোনো শঙ্কা নেই।
আওয়ামী লীগের গুপ্তভাবে কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ ও গোপন প্রশিক্ষণের বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, সবাইকেই আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। এমনকি কোনো বাহিনীর কেউ জড়িত থাকলে তাদেরকেও ছাড় দেয়া হবে না। এসসময় তিনি বলেন, এটা তদন্তের বিষয়। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেন, মিডিয়া সত্য প্রচার করার কারণেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমি সবসময়ই বলে আসছি- আমাদের সাংবাদিকরা সত্য প্রচার করছেন বলেই বিদেশি মিডিয়াগুলোর টোন আস্তে আস্তে নিচে নেমে যাচ্ছে। তারা কিন্তু এখন আগের মতো সরব হতে পারছে না।
অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়া চূড়ান্ত করেছে। আগামী ৫ আগস্ট মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় গণঅভ্যুত্থানের সকল পক্ষের উপস্থিতিতে জুলাই ঘোষণাপত্র জাতির সামনে উপস্থাপন করা হবে।
এ বিষয়ে বিস্তারিত অবিলম্বে ঘোষণা করা হবে বলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়েছে।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইনে লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি ইউনিয়নে ট্রেনে কাটা পড়ে মো. হাছান (৪৫) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। এর আগে ১৮ মাস বয়সী এক শিশুরও মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছিল।
গত বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) রাত ১০টার দিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইনের চুনতি হাফেজিয়া মাদ্রাসার উত্তরে রেলক্রসিংয়ের পাশে এ দুর্ঘটনা ঘটে এবং আলী বাপের পাড়া এলাকার রেললাইন থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
হাসান চুনতি ইউনিয়নের পশ্চিম চুনতি হাদুর পাড়ার বাসিন্দা সৈয়দ আহমেদের ছেলে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মনিরুল মাবুদ রয়েল জানান, ঘটনাস্থলের পাশে রেললাইনের মাঝখানে সাড়ে দশটার দিকে হাসানের মৃতদেহ দেখতে পান স্থানীয়রা। তবে, ট্রেনের কাটায় তার লাশ চারদিকে ছিড়ে ছিটকে পড়েছিল।
লোহাগাড়া রেলওয়ে স্টেশনের সহকারি স্টেশন মাস্টার মোঃ লোকমান বলেন , ট্রেনের কাটায় যুবকের মৃত্যুর বিষয়টি শুনেছি।কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসা সৈকত এক্সপ্রেস রাত ১০টার দিকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে যাচ্ছিল।
উল্লেখ্য এই ঘটনার মাত্র পাঁচ দিন আগে গত ২৬ জুলাই একই ইউনিয়নের নাজির পাড়া এলাকায় ট্রেনের ধাক্কায় তাওসিফ আলম ওয়ালিদ নামে ১৮ মাস বয়সী এক শিশুরও মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছিল। স্বল্প সময়ের ব্যবধানে একই এলাকার দুটি মৃত্যুর ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।