সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫
৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

শেখ হাসিনার মধুর প্রতিশোধ

ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্বব্যাংকের সদর দপ্তরে বিশ্বব্যাংক আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সংস্থাটির প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাসের হাতে পদ্মা সেতুর বিশাল একটি ছবি তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: ফোকাস বাংলা
বিশেষ প্রতিনিধি, দৈনিক বাংলা
প্রকাশিত
বিশেষ প্রতিনিধি, দৈনিক বাংলা
প্রকাশিত : ২ মে, ২০২৩ ২৩:০৯

দুর্নীতির মিথ্যে অভিযোগে অনেক টালবাহানার পর বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন ফিরিয়ে দিয়ে পুরোপুরি নিজস্ব অর্থে স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজস্ব তত্ত্বাবধানে নির্মাণ করা হয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় এই অবকাঠানো প্রকল্পটি। প্রায় এক বছর ধরে এই সেতুর ওপর দিয়ে যান চলাচল করছে। দেশের অর্থনীতির চাকাকে আরও সচল করেছে। কিছুদিন পর ছুটবে ট্রেন। যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্বব্যাংকের সদর দপ্তরে বিশ্বব্যাংক আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে সংস্থাটির প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাসের হাতে তুলে দিলেন সেই পদ্মা সেতুর বিশাল একটি ছবি। এ যেন পদ্মা সেতু নিয়ে শেখ হাসিনার মধুর প্রতিশোধ।

গত সোমবার রাতে অনুষ্ঠানের পর এই ছবি স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। মে দিবসের কারণে ছুটি থাকায় মঙ্গলবার জাতীয় দৈনিক পত্রিকা বের হয়নি। তবে পত্রিকাগুলোর অনলাইন, অন্যান্য অনলাইন পত্রিকা এবং টেলিভিশনগুলো ফলাও করে প্রচার করেছে এই ছবিসহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশ্বব্যাংকের অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার নানা খবর। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘বাইরের চাপে দুর্নীতির মিথ্যে অভিযোগে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বন্ধ করেছিল। কানাডার আদালতে তা প্রমাণ হয়েছে।’

সবচেয়ে বড় সুখবর হচ্ছে শেখ হাসিনা ও বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাসের উপস্থিতিতে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বড় অঙ্কের ঋণচুক্তি সই হয়েছে। বাংলাদেশকে পাঁচটি প্রকল্পে ২২৫ কোটি (২.২৫ বিলিয়ন) ডলারের ঋণ দেবে বিশ্বব্যাংক। বর্তমান বিনিময় হার (প্রতি ডলার ১০৭ টাকা) হিসাবে টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ২৪ হাজার কোটি টাকার বেশি। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনো এক দিনে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে এত বড় অঙ্কের ঋণচুক্তি সই হয়নি। বিশ্বব্যাংকপ্রধান ও বাংলাদেশের সরকারপ্রধানের উপস্থিতিতে ঋণচুক্তির ঘটনাও আগে কখনো দেখা যায়নি।

‘বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রীর বিশ্বব্যাংকের সদর দপ্তরে বড় অনুষ্ঠানে যোগ দেয়াকে খুবই তাৎপর্য’ উল্লেখ করে অর্থনীতির গবেষক পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘এই অনুষ্ঠান এবং বড় অঙ্কের ঋণচুক্তির মধ্য দিয়ে এক দশক আগে পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের যে টানাপোড়েন দেখা দিয়েছিল, তার একটা সম্মানজনক পরিসমাপ্তি হলো। বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্টকে প্রধানমন্ত্রীর পদ্মা সেতুর ছবি উপহারও বিরল ঘটনা হয়ে থাকবে।’

বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে গত পাঁচ দশকের সম্পর্ক সবচেয়ে বড় ধাক্কা খায় পদ্মা সেতুর অর্থায়ন নিয়ে। পদ্মা সেতুতে তাদের ১২০ কোটি ডলার দেয়ার কথা ছিল। পদ্মা সেতুই হতে পারত কোনো একক প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের সবচেয়ে বড় অর্থায়ন। কিন্তু দুর্নীতি হতে পারে- এমন অভিযোগ এনে ২০১১ সালে অর্থায়ন থেকে সরে দাঁড়ায় সংস্থাটি। সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হয়। পরে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও কানাডার আদালত- কোথাও দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে ৩২ হাজার কোটি টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করে।

প্রায় ১০ বছর আগে পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের টানাপোড়েন দেখা দেয়। দুর্নীতির অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে ২০১৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সরকার পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ সহায়তার অনুরোধ প্রত্যাহার করে নেয়ার পর নিজস্ব অর্থে এই সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। গত বছরের জুনে চালু হয়েছে সেই স্বপ্নের পদ্মা সেতু। সেতুটি একদিকে যেমন বাংলাদেশের অবকাঠামো খাতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে, তেমনি পুরোপুরি নিজস্ব অর্থে এই সেতু নির্মাণ করে বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে।

তবে পদ্মা সেতু নির্মাণে ঋণ না নিলেও বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের তেমন অবনতি হয়নি। উন্নয়ন সংস্থাটি বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থায়ন অব্যাহত রেখেছে। এমনকি পদ্মা সেতুতে যে অর্থায়ন করার কথা ছিল, তার চেয়েও বেশি অর্থ অতিরিক্ত হিসেবে অন্য প্রকল্পে অর্থায়ন করেছে বিশ্ব আর্থিক খাতের মোড়ল সংস্থাটি।

চার দিনের সফরে ২৫ এপ্রিল জাপান যান প্রধানমন্ত্রী। ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত তিনি জাপানে ছিলেন। ২৯ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী জাপান থেকে সরাসরি ওয়াশিংটন যান বিশ্বব্যাংকের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে।

সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ভিন্নধর্মী অনুষ্ঠান
বাংলাদেশ-বিশ্বব্যাংকের সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্বব্যাংক সদর দপ্তরে বড় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানটি ছিল ভিন্নধর্মী। সংস্থাটির সদর দপ্তরে একটি দেশের সরকারপ্রধানের উপস্থিতিতে এ ধরনের জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান আগে কখনোই হয়নি। অনুষ্ঠানে বিশ্বব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের সব সদস্যসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু।

বিশ্বব্যাংকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অনুষ্ঠানে বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস নানা বাধা-বিপত্তির মধ্যেও বাংলাদেশের এগিয়ে চলায় সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন সাফল্য থেকে অনেক দেশ শিক্ষা নিতে পারে। রেকর্ড সময়ের মধ্যে দারিদ্র্য হ্রাস, নারীর ক্ষমতায়ন, দেশব্যাপী বিদ্যুতায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ তার উদ্ভাবনী পদ্ধতির জন্য স্বাতন্ত্র্য।’

বাংলাদেশ নজিরবিহীন বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে উল্লেখ করে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘বৃহত্তম উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে আয় বৃদ্ধি ও দারিদ্র্য হ্রাসে বাংলাদেশের অগ্রগতিকে আমরা স্বাগত জানাই। বেসরকারি খাতকে আরও শক্তিশালী করতে, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, করের ভিত্তি প্রসারিত, আর্থিক খাত শক্তিশালীকরণ এবং অর্থনৈতিক ও জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রতি বিশ্বব্যাংক তার সমর্থন অব্যাহত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ অনুষ্ঠানে ডেভিড ম্যালপাস বাংলাদেশ এবং এর জনগণের জন্য বিশ্বব্যাংকের দৃঢ় সহায়তার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস সোমবার বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যে ৫০ বছরের অংশীদারত্ব উদযাপন করেন।

এই অংশীদারত্ব লাখ লাখ বাংলাদেশিকে দারিদ্র্য থেকে মুক্ত করেছে এবং এ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নে সহায়তা করেছে। আঞ্চলিক যোগাযোগ, বন্যা দুর্যোগ মোকাবিলা, সবুজ, অভিঘাত সহনশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন, পরিবেশ ব্যবস্থপনার উন্নয়ন ও মাইক্রো-এন্টারপ্রাইজ সেক্টরকে কম দূষণকারী এবং আরও জলবায়ু- সহনশীল হতে সাহায্য করতে বাংলাদেশকে বিশ্বব্যাংক মোট ২২৫ কোটি (২.২৫ বিলিয়ন) ডলার সহায়তা করেছে।

১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম দরিদ্রতম দেশ থেকে ২০১৫ সালে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণ করে। দেশটি এখন পৃথিবীর দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতিগুলোর অন্যতম।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের ৫০ বছরের অংশীদারত্বের স্মৃতিচারণা করেন। এই অংশীদারত্ব লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশিকে দারিদ্র্য থেকে বের করে আনতে সাহায্য করেছে এবং দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নে সহায়তা করেছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দ্রুততম বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশের মধ্যে একটি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৭১ সালে যখন বাংলাদেশের জন্ম হয়, তখন অনেক উন্নয়ন বিশেষজ্ঞই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দিহান ছিলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অঙ্কুরিত আকাঙ্ক্ষা ও আমাদের জনগণ বিশ্বকে দেখিয়েছে, দৃঢ়সংকল্পের মাধ্যমে কঠিন চ্যালেঞ্জকেও অতিক্রম করা সম্ভব।’

তিনি বলেন, ‘এই উন্নয়ন যাত্রা সহজ ছিল না। কিন্তু আমরা কখনো সাহস হারাইনি। বিগত ৫০ বছরে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে পাশে থেকেছে, আমাদের আকাঙ্ক্ষাকে সমর্থন করেছে। ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশ যাতে উচ্চ আয়ের দেশের মর্যাদা অর্জন করতে পারে, সেজন্য আমরা বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে একত্রে কাজ করার আশা করছি।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশ ঋণ পরিশোধে কখনো খেলাপি হয়নি এবং ‘ঋণের ফাঁদে’ পড়েনি।” তিনি বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে একটি স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে ডিজিটাল ও ভৌত অবকাঠামোতে বিশ্বব্যাংকসহ বৈশ্বিক উন্নয়ন সহযোগীদের বিনিয়োগ অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান।

সরকারপ্রধান বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতি আমাদের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির সুযোগ এবং খাপ খাইয়ে নেয়ার সক্ষমতার ইঙ্গিত দেয় এবং বাংলাদেশ কখনোই তার ঋণ পরিশোধে খেলাপি হয়নি বা তথাকথিত ‘ঋণের ফাঁদে’ পড়েনি।”

সরকার বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আরও অধিক অংশীদারত্ব গড়ে তুলতে চাইছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এখন আমাদের অংশীদারত্বের ভবিষ্যতের দিকে তাকাতে চাই। বিশ্বব্যাংককে অবশ্যই দারিদ্র্যবিমোচন এবং উন্নয়ন অর্থায়নের মূল লক্ষ্যের বিষয়ে মনোযোগী থাকতে হবে। বিশ্বব্যাংক সক্রিয়ভাবে আমাদের ডিজিটাল রূপান্তরে সম্পৃক্ত রয়েছে। আমাদের সরকার ২০২১ সালের মধ্যে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার মাধ্যমে আমাদের জনগণের কাছে তার কথা রেখেছে। আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে জ্ঞানভিত্তিক ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ হওয়ার জন্য আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি।”

প্রধানমন্ত্রী এবং বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট একটি মাল্টিমিডিয়া ফটো প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। যা গত ৫ দশকে বাংলাদেশের উন্নয়নের গল্প তুলে ধরে এবং ৫০ বছরের অংশীদারত্বের প্রতিফলন করার জন্য একটি সেমিনারে যোগ দেন।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে মোট ২২৫ কোটি ডলারের ৫টি অর্থায়ন চুক্তিও স্বাক্ষর করে। আঞ্চলিক সংযোগের উন্নতি, স্থলভূমিতে বন্যা মোকাবিলায় দুর্যোগ প্রস্তুতি জোরদার, সবুজ ও জলবায়ু-সহিষ্ণু উন্নয়নের দিকে স্থানান্তর, পরিবেশগত ব্যবস্থাপনা ও সবুজ বিনিয়োগ জোরদার এবং ক্ষুদ্র উদ্যোগগুলোকে কম দূষণকারী ও অধিক জলবায়ু-সহিষ্ণু হওয়ার জন্য সহায়তা দিতে এই অর্থায়ন করা হচ্ছে।

শেখ হাসিনা এবং ডেভিড ম্যালপাস বাংলাদেশের গত ৫ দশকের উন্নয়নের ওপর একটি মাল্টিমিডিয়া আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যে ৫০ বছরের অংশীদারত্ব বিষয়ে এক সেমিনারে যোগ দেন।

১৯৭২ সালের আগস্টে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংক গ্রুপের সদস্য হয় এবং একই বছরের নভেম্বরে বিশ্বব্যাংক প্রথম প্রকল্প অনুমোদন করে, যার মাধ্যমে যুদ্ধ-বিধ্বস্ত বাংলাদেশের পরিবহন ও যোগাযোগ, কৃষি এবং শিল্প খাতের পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং নির্মাণ ও বিদ্যুৎ খাতে সহায়তার জন্য ৫ কোটি ডলারের জরুরি পুনরুদ্ধার ঋণ দেয়া হয়। একই সঙ্গে বিশ্বব্যাংক ৪টি প্রকল্প পুনরায় চালু করে, যা স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে অনুমোদিত হয়।

৫০ বছরে ৩৮ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে বিশ্বব্যাংক
গত ৫০ বছরে বাংলাদেশকে সব মিলিয়ে ৩ হাজার ৮০০ কোটি (৩৮ বিলিয়ন) ডলার দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। এই অর্থ কাজে লেগেছে দারিদ্র্যবিমোচনে। রাস্তাঘাট, ভবনসহ বড় অবকাঠামো নির্মাণেও অর্থ দিয়েছে এই বহুপক্ষীয় প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা, পরিবেশ রক্ষা, কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন খাতে বিশ্বব্যাংক দশকের পর দশক অর্থ দিয়ে আসছে। বর্তমানে ৫৭টি চলমান প্রকল্পে ১ হাজার ৬০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে বিশ্বব্যাংক।

সত্তরের দশকে মূলত পুনর্বাসন ও পুনর্গঠন প্রকল্পেই বেশি অর্থায়ন করেছে বিশ্বব্যাংক। আশির দশকে কৃষি খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ করে তারা। ১৯৭৮ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্য খাতে সংস্কারে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা দেয়। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বাংলাদেশে দুটি বড় অবকাঠামো প্রকল্প হয়। এ দুটি প্রকল্প হলো বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতু (যমুনা সেতু) এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক (দুই লেন) নির্মাণ। এ ছাড়া তাদের সহায়তায় ২৬টি জেলায় মোট ১ হাজার ৬০০ কিলোমিটার পল্লি সড়ক নির্মাণ করা হয়।

বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে গত পাঁচ দশকের সম্পর্ক সবচেয়ে বড় ধাক্কা খায় পদ্মা সেতুর অর্থায়ন নিয়ে। পদ্মা সেতুতে তাদের ১২০ কোটি ডলার দেয়ার কথা ছিল। পদ্মা সেতুই হতে পারত কোনো একক প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের সবচেয়ে বড় অর্থায়ন। কিন্তু দুর্নীতি হতে পারে- এমন অভিযোগ এনে ২০১১ সালে অর্থায়ন থেকে সরে দাঁড়ায় সংস্থাটি। সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হয়। পরে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও কানাডার আদালত, কোথাও দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে ৩২ হাজার কোটি টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করে।


যে কোনো সময় হাসিনার রায় পড়া শুরু

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

জুলাই অভ‍্যুত্থানে ক্ষমতাচ‍্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় রায় পড়া যে কোনো সময় শুরু হবে। ইতোমধ্যে এ মামলার আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্টরা ট্রাইব্যুনালে উপস্থিতি হয়েছেন।

সোমবার বেলা ১১টার দিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুন্যাল-১-এর বিচারক বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ রায় শুরু হওয়ার কথা ছিলো।

এই ট্রাইব্যুনালের অপর সদস্যরা হলেন—বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

এ মামলায় হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে প্রসিকিউশন ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার অভিযোগ দাখিল করে। এর মধ্যে তথ্যসূত্র দুই হাজার ১৮ পৃষ্ঠার, জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি চার হাজার পাঁচ পৃষ্ঠার এবং শহীদদের তালিকার বিবরণ দুই হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠার।

মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার তদন্ত প্রতিবেদনের মূল অভিযোগ হচ্ছে, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে আন্দোলন চলাকালে হাসিনা বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক এবং পদ্ধতিগত দমনপীড়ন চালানোর সরাসরি নির্দেশ দিয়েছিলেন যা গণহত্যা, খুন এবং ভয়াবহ নির্যাতনের শামিল।

প্রতিবেদনে প্রধান যে অভিযোগ আনা হয় সেগুলো হলো- সরাসরি আদেশ অর্থাৎ শেখ হাসিনা রাষ্ট্রের সব বাহিনী, তার দল আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনগুলো বিশেষ করে ছাত্রলীগ-যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সশস্ত্র ক্যাডারদের বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরাসরি নির্দেশ দেন। গণহত্যা ও নির্যাতন হাসিনার নির্দেশের ফলে দেড় হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত এবং ২৫ হাজারের বেশি আহত, অঙ্গহানি এবং নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

৫ আগস্ট এক দফা বাস্তবায়নের দাবিতে ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে আসার সময় আশুলিয়ায় ছাত্রদের গুলি করে হত্যা করে লাশ পুড়িয়ে দেওয়া হয়, যার মাঝে একজন জীবন্তও ছিল। এ ঘটনার নির্দেশদাতা হিসেবে শেখ হাসিনাসহ তিন আসামি মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন।


মওলানা ভাসানী জাতীয় ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় নাম

আপডেটেড ১৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১১:২১
নিজস্ব প্রতিবেদক

মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী জাতীয় ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় ও গুরুত্বপূর্ণ নাম বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গতকাল রোববার মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এক বাণীতে তিনি এ মন্তব্য করেন।

মওলানা ভাসানীর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে এবং তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, মওলানা ভাসানী আমাদের জাতীয় ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় ও গুরুত্বপূর্ণ নাম। সাম্রাজ্যবাদ, উপনিবেশবাদ ও আধিপত্যবাদবিরোধী সংগ্রামের প্রবাদ পুরুষ মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে উপমহাদেশের নিপীড়িত-নির্যাতিত মানুষের পক্ষে আপোষহীন ও সাহসী নেতৃত্ব দিয়েছেন। মওলানা ভাসানী দেশমাতৃকার মুক্তির পথ প্রদর্শক হিসেবে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম, গণতান্ত্রিক আন্দোলন এবং কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ের সংগ্রামে মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী ছিলেন এক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক। তার অবস্থান ছিল শোষণের বিরুদ্ধে এবং শোষিতের পক্ষে। অধিকার আদায়ে তিনি সর্বদা এদেশের মানুষকে সাহস যুগিয়েছেন তার নির্ভীক ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের দ্বারা। তার হুংকারে অত্যাচারী শাসক ও শোষক গোষ্ঠীর মসনদ কেঁপে উঠত। জাতীর ভয়াবহ দুর্দিনগুলোতে তিনি জনস্বার্থের পক্ষে থাকতেন বলেই জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেছিলেন।

তারেক রহমান বলেন, ‘অসহায় মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়, গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব সুরক্ষায় মওলানা ভাসানী সবসময় আমাদের প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন। তার অগাধ দেশপ্রেম, দেশ ও জাতির স্বার্থ রক্ষা এবং গণতন্ত্র ও মানবতার শত্রুদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হতে যুগ যুগ ধরে আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করবে। তার আদর্শকে সঠিকভাবে অনুসরণ করতে পারলেই আমরা আমাদের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে সক্ষম হব।’

অপর এক বাণীতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এই মুহূর্তে মওলানা ভাসানী প্রদর্শিত পথই আমাদের পাথেয়। যুগে যুগে তিনি শোষিত-বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন। স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব এবং গণতন্ত্র সুরক্ষায় মওলানা ভাসানী যুগ যুগ ধরে আমাদেরকে প্রেরণা জোগাবে, দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ করবে।’ আজকে এই দিনে আমি মওলানা ভাসানীর আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে আত্মনিবেদিত হওয়ার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানাই।


সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য করণীয় সবই করছে কমিশন

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেছেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করার জন্য করণীয় সব কিছুই করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

তিনি বলেন, একটি ভালো নির্বাচন করা ছাড়া আমাদের কাছে আর কোন বিকল্প নেই।

গতকাল রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ইসির দ্বিতীয় দিনের সংলাপে তিনি এসব কথা বলেন।

ইসি আনোয়ারুল বলেন, ভালো একটি নির্বাচন করার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা প্রয়োজন। সবার সহযোগিতায় অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন।

ইসি মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘নির্বাচনে আমাদের প্রায় ৯ লাখের মত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মাঠে থাকবে। থাকবে ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি কমিটি। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, মোবাইল কোর্ট, এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট, মনিটরিং টিম, অবজারভেশন টিমও মাঠে থাকবে। এগুলো সব নিয়ে আমরা মাঠে নামার পরিকল্পনা করেছি।

তিনি আরও বলেন, প্রায় ৪৩ হাজার প্রিজাইডিং অফিসারকে সারা বাংলাদেশ থেকে সিলেকশন করা হয়েছে। নির্বাচনে প্রিজাইডিং অফিসার হচ্ছেন প্রধান। সেই প্রিজাইডিং অফিসার যাতে শক্ত হয়, নিরপেক্ষ হয়— সেভাবে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

নির্বাচন কমিশনার বলেন, নির্বাচনী আচরণবিধি শেষে দুইটা অঙ্গীকারনামা রয়েছে। একটা হলো রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে অঙ্গীকারনামা আর আরেকটা হলো প্রার্থীর। দেখবেন, এখানে প্রার্থিতা বাতিলসহ অন্যান্য বিষয় কঠিনভাবে অন্তর্ভুক্ত করেছি।

আনোয়ারুল ইসলাম সরকার আরও বলেন, ‘আইন তো যথেষ্ট পরিমাণে রয়েছে। এই আইন দিয়েই কিন্তু অতীতে ভালো নির্বাচন হয়েছে। এ ছাড়াও কিছু বিষয় রয়েছে যে প্রার্থিতা বাতিলের বিধান। পুরো আসন বাতিলের বিধান। সেগুলো কিন্তু নিয়মে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।’

তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন আগে যে ভুলগুলো করেছে, এই ভুলের স্তূপের পাহাড়ের ওপর দাঁড়িয়ে, আপনাদের সহযোগিতায় এই ভুলগুলোকে এক পাশে রেখে একটা ভালো নির্বাচন করব আর এ জন্য সবার সহযোগিতা চাই। সবার সহযোগিতায় একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে।


শেখ হাসিনার মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার রায় আজ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

গত বছরের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায় আজ সোমবার।

গত ১৩ নভেম্বর বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ রায় ঘোষণার এই দিন ধার্য করেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য ছিলেন বিচারক মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

বহুল আলোচিত এই মামলায় পাঁচটি অভিযোগ এনে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড চেয়েছেন প্রসিকিউশন। অন্যদিকে, আসামিদের নির্দোষ দাবি করে খালাস চেয়েছেন তাদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী। এছাড়াও রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের খালাস চেয়েছেন তার আইনজীবী।

এই মামলায় প্রসিকিউশন পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও গাজী এস. এইচ. তামিম শুনানি করেন। এছাড়া প্রসিকিউটর বি. এম. সুলতান মাহমুদ, শাইখ মাহদি, আবদুস সাত্তার পালোয়ানসহ অন্যান্য প্রসিকিউটর উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। আর রাজসাক্ষী চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

ঐতিহাসিক এই মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন গণঅভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ আবু সাঈদের পিতাসহ স্বজনহারা পরিবারের অনেকে। এছাড়া স্টার উইটনেস হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক ও জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান। সর্বমোট ৫৪ জন সাক্ষী এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলায় শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। একপর্যায়ে দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে (অ্যাপ্রোভার) রাজসাক্ষী হন সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয়রা ও সরকারের অনুগত প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে-এ অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ে।

গত ২৩ অক্টোবর এ মামলায় সমাপনী বক্তব্য রাখেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রধানমন্ত্রীসহ হেভিওয়েট নেতাদের যেভাবে বিচারের মুখোমুখি হতে হয়েছিল, সেসব বর্ণনা ট্রাইব্যুনালে তুলে ধরেন তিনি।

শেখ হাসিনার এ মামলায় ৮৪ সাক্ষীর মধ্যে সাক্ষ্য দিয়েছেন ৫৪ জন। তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয় চলতি বছরের ৩ আগস্ট। প্রথম সাক্ষী হিসেবে ট্রাইব্যুনালে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের বীভৎসতার চিত্র তুলে ধরেন খোকন চন্দ্র বর্মণ। গত ৮ অক্টোবর মূল তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীরের জেরার মাধ্যমে শেষ হয় সাক্ষ্যগ্রহণের ধাপ। এরপর প্রসিকিউশন ও স্টেট ডিফেন্স আইনজীবীর যুক্তিতর্ক সম্পন্ন হয় ২৩ অক্টোবর।

মামলার তিন আসামির বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন। এর মধ্যে রয়েছে উসকানি, মারণাস্ত্র ব্যবহার, আবু সাঈদ হত্যা, চানখারপুলে হত্যা ও আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানো।

আনুষ্ঠানিক অভিযোগ মোট ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার। এর মধ্যে তথ্য সূত্র দুই হাজার ১৮ পৃষ্ঠার, জব্দ তালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি চার হাজার পাঁচ পৃষ্ঠার ও শহীদদের তালিকার বিবরণ দুই হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠার। গত ১২ মে চিফ প্রসিকিউটরের কাছে এ মামলার প্রতিবেদন জমা দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।

রায় দেখবে বিশ্ব, লাইভ করবে রয়টার্স-বিটিভি

এদিকে শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে করা মামলার রায় সরাসরি সম্প্রচার করবে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ও বার্তা সংস্থা রয়টার্স। রায় ঘিরে ট্রাইব্যুনালে নেওয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামীম জানান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ এই রায় দেওয়া হবে। আজ সোমবার শেখ হাসিনার রায় সরাসরি সম্প্রচার করবে বিটিভি ও রয়টার্স। যা দেখবে পুরো বিশ্ব। সেই সঙ্গে ট্রাইব্যুনালের ফেসবুকে এটি সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। শুধু তাই না, ঢাকা শহরের বেশ কয়েকটি জায়গায় বড় স্ক্রিনে রায় ঘোষণা সম্প্রচার করবে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়।

বাংলাদেশে এর আগে সর্বোচ্চ সাজা দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো নারীর ফাঁসি কার্যকর হয়নি। তবে এবারও কি নারী হিসেবে অনুকম্পা পাবেন শেখ হাসিনা, সেই প্রশ্ন থাকলেও এমন সুযোগ নেই বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামীম।

শেখ হাসিনার রায়ের পর তার সাজা হলে পরোয়ানা ইন্টারপোলে পাঠানো হবে বলেও জানায় প্রসিকিউশন।


৭ ডিসেম্বর থেকে শহীদদের শনাক্তকরণ শুরু, ৫ ডিসেম্বর আসছেন আন্তর্জাতিক ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা: আসিফ মাহমুদ

রোববার রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ সংলগ্ন কবরস্থানে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের গণকবর জিয়ারত শেষে প্রেস ব্রিফিং করেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

আগামী ৫ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের একটি দল বাংলাদেশে আসবেন এবং ৭ ডিসেম্বর থেকে গণকবরের শহীদদের শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া শুরু হবে।

রোববার রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধসংলগ্ন কবরস্থানে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের গণকবর জিয়ারত শেষে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।

তিনি জানান, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে রায়েরবাজারে অস্থায়ী মর্গ ও ক্যাম্প স্থাপন করে শনাক্তকরণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। এই পুরো প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে সিআইডি দায়িত্ব পালন করবে।

পরে উপদেষ্টা জুলাই শহীদদের কবরের বাঁধাই কার্যক্রমও পরিদর্শন করেন


নির্বাচন সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর করতে মাঠ প্রশাসন প্রস্তুত: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী রোববার জেলা পুলিশ লাইন্স পরিদর্শন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ মাঠ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু, সুন্দর ও উৎসবমুখর করতে মাঠ প্রশাসন সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে। ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার রায়কে ঘিরে সব বাহিনীও সতর্ক ও প্রস্তুত রয়েছে বলে জানান তিনি।

রোববার বরিশাল জেলা পুলিশ লাইন্স পরিদর্শন শেষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও মাঠ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, দেশের আইন–শৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোটামুটি সন্তোষজনক। নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া শুধু আইন–শৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর নির্ভর করে না; এর সঙ্গে নির্বাচন কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। জনগণ যখন নির্বাচনমুখী হয়, তখন কাউকে কিছু দিয়ে থামিয়ে রাখা যায় না। বর্তমানে দেশ নির্বাচনমুখী—জানিয়ে সকলের সহযোগিতাও কামনা করেন তিনি।

বৈঠকে ডিআইজি মনজুর মোরশেদ আলম, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম, পুলিশ সুপার শরিফ উদ্দিনসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।


তরুণ প্রজন্মকে প্লাস্টিকের ব্যবহার থেকে বেরিয়ে আসতে হবে: পরিবেশ উপদেষ্টা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
রাউজান (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, বর্তমানে বাংলাদেশে অতিরিক্ত পরিমাণে প্লাস্টিক ব্যবহার হচ্ছে। আমাদের বঙ্গোপসাগর প্লাস্টিক দূষিত সমুদ্রের মধ্যে নবম স্থানে আছে। প্লাস্টিক শুধু পরিবেশগত সমস্যা নয় বরং এটি অর্থনৈতিক সমস্যাও বটে। প্রথমে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে প্লাস্টিকমুক্ত করার প্রচেষ্টা শুরু করতে হবে। আমাদের তরুণ প্রজন্মকে প্লাস্টিকের ব্যবহার থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তবে তারা ক্ষতিকর প্লাস্টিক ব্যবহার বাদ দিয়ে দেশকে স্থানীয় ও টেকসই প্লাস্টিকমুক্ত সমাধানের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)-এর পুরকৌশল বিভাগ ও এসসিআইপি প্লাস্টিকস প্রকল্পের উদ্যোগে নগরীর রেডিসন ব্লু হোটেলের মোহনা বলরুমে আয়োজিত ‘প্লাস্টিকমুক্ত টেকসই সামুদ্রিক পরিবেশ’ শীর্ষক সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইনের সমাপনী অনুষ্ঠানে অনলাইনের মাধ্যমে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এতে অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন চুয়েটের ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মাহমুদ আব্দুল মতিন ভূইয়া ও খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট)-এর ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মো. মাকসুদ হেলালী। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন পুর ও পরিবেশ কৌশল অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আসিফুল হক, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. ফাহমিদা খানম, পুরকৌশল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মো. রিয়াজ আকতার মল্লিক এবং আইইবি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মানজারে খোরশেদ আলম। অনুষ্ঠানে চীফ প্যাট্রন ছিলেন জার্মানির বাউহাউস ইউনিভার্সিটি ভাইমার এর এসসিআইপি প্লাস্টিক প্রজেক্টের লিডার প্রফেসর ড. ইকার্ড ক্রাফট। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এসসিআইপি প্লাস্টিকস প্রকল্পের বৈজ্ঞানিক পরিচালক ও পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. ফারজানা রহমান জুথী। এতে সঞ্চালনা করেন গবেষণা সহকারী জুশান আব্দুল্লাহ ও পুরকৌশল বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী নাজিয়াত বিনতে হারুন। উল্লেখ্য, এসসিআইপি প্লাস্টিক প্রকল্পটি জার্মান ফেডারেল মিনিস্ট্রি ফর এনভায়রনমেন্ট, নেচার কনসারভেশনি অ্যান্ড নিউক্লিয়ার সেফটি (বিএমইউভি) এর অর্থায়নে পরিচালিত হচ্ছে।


বাংলাদেশে শিশুদের রক্তে উদ্বেগজনক সীসা, মস্তিষ্কের বিকাশে হুমকি

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশে প্রতি ১০ শিশুর মধ্যে ৪ জনের রক্তে উদ্বেগজনক মাত্রার সীসা পাওয়া গেছে। ১২ থেকে ৫৯ মাস বয়সী শিশুদের মধ্যে ৩৮ শতাংশ এবং অন্তঃসত্ত্বা নারীদের প্রায় ৮ শতাংশের দেহে সীসার মাত্রা নিরাপদ সীমার চেয়ে বেশি। ঢাকায় এই মাত্রা সর্বোচ্চ, রাজধানীর ৬৫ শতাংশের বেশি এলাকায় উদ্বেগজনক সীসা ধরা পড়েছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ও ইউনিসেফের যৌথ জরিপ ‘মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে-২০২৫’-এর ফলাফলে এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। রোববার (১৬ নভেম্বর) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কক্ষে সেমিনারে এই জরিপের ফলাফল তুলে ধরা হয়।

জরিপে বলা হয়েছে, সীসা দূষণ শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশে সরাসরি হুমকি সৃষ্টি করছে। এ ছাড়া এর প্রভাব সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্তরের ওপরও পড়ছে। আক্রান্ত শিশুদের অর্ধেকের বেশি ধনী পরিবারের এবং ৩০ শতাংশ দরিদ্র পরিবারের শিশু।

শিক্ষা ও শেখার ক্ষেত্রে উপস্থিতি ভালো হলেও মৌলিক দক্ষতা দুর্বল দেখা গেছে। প্রাথমিক স্তরে উপস্থিতি ৮৪ শতাংশ, নিম্ন মাধ্যমিকে ৬০ শতাংশ, আর উচ্চ মাধ্যমিকে মাত্র ৫০ শতাংশ। ৭-১৬ বছরের শিশুর শেখার ফলাফল তুলনামূলকভাবে আরও দুর্বল।

পানির নিরাপত্তা ও পরিচ্ছন্নতায় উচ্চ কাভারেজ থাকা সত্ত্বেও পানি ঝুঁকিপূর্ণ। উন্নত পানির উৎস ব্যবহারের হার ৯৯ শতাংশ, উন্নত স্যানিটেশন কাভারেজ ৯২ শতাংশ, তবে পরিবারের ৮০ শতাংশের বেশি পানিতে কোলাই জীবাণু পাওয়া গেছে। উৎস পর্যায়ে পানিদূষণ প্রায় ৪৭ শতাংশ। নিরাপদ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, বিশেষত পল্লী এলাকায় এখনও দুর্বল।

শিশু সুরক্ষার ক্ষেত্রেও উদ্বেগজনক পরিস্থিতি রয়েছে। সহিংসতা এখনও ব্যাপক; ২০-২৪ বছর বয়সি নারীদের প্রায় ৪৭ শতাংশ ১৮ বছরের আগে বিবাহিত হয়েছেন। ১৫-১৯ বছরের কিশোরী বিবাহের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। ঘরে শিশুদের প্রতি সহিংস শাসন এখনও ৮৬ শতাংশ শিশুকে প্রভাবিত করছে।

পরিবেশগত স্বাস্থ্য বিষয়ে জানানো হয়, ভারী ধাতুর ঝুঁকি রয়েছে। প্রথমবারের মতো ভারী ধাতুর উপস্থিতি নির্ণয়ে দেখা গেছে, ১২-৫৯ মাস বয়সি এক-তৃতীয়াংশের বেশি শিশুর রক্তে সীসার উচ্চমাত্রা রয়েছে। শিল্পকারখানা, অনিয়ন্ত্রিত রিসাইক্লিং এবং বিপজ্জনক পণ্য ব্যবহারের কারণে এই ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সেমিনারে প্রতিবেদনের ফলাফল উপস্থাপনার পর বিবিএস-এর উপপরিচালক মো. আলমগীর হোসেনের সঞ্চালনায় উন্মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সরকারি মন্ত্রণালয়, একাডেমিয়া, উন্নয়ন সংস্থা ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। তারা শিশুদের পুষ্টি, প্রারম্ভিক বিকাশ, পানির নিরাপত্তা ও ভারী ধাতুর ঝুঁকি মোকাবেলায় আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।

উচ্চপর্যায়ের প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন সাবেক উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশ ও ভুটানের ডিভিশন ডাইরেক্টর জাঁ পেসমে, ওয়াটারএইড দক্ষিণ এশিয়ার পরিচালক ড. মো. খায়রুল ইসলাম, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সাবেক সচিব ডা. মো. সরওয়ার বারী, আইসিডিডিআর’বির নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো মাহীন সুলতান।

সেমিনারের দ্বিতীয় ভাগে চারটি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়: স্বাস্থ্য ও পুষ্টি, লিঙ্গ ও নিরাপদ পরিবেশ, ওয়াশ, এবং ভারী ধাতু ও অ্যানিমিয়া। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে ১২ লাখ শিশু শিশু শ্রমে যুক্ত এবং ৫-১৭ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে শিশু শ্রমের হার ২০১৯ সালের ৬.৮ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ৯.২ শতাংশে পৌঁছেছে।

বিশ্লেষকরা শিশু সুরক্ষায় প্রতি ১ ডলার বিনিয়োগ করলে নয় গুন সামাজিক ও অর্থনৈতিক লাভ অর্জন সম্ভব উল্লেখ করেছেন। তারা সতর্ক করে বলেছেন, সীসা দূষণ, শিশু অপুষ্টি ও পানির নিরাপত্তাহীনতা জাতীয় উন্নয়নের জন্য ‘রেড ফ্ল্যাগ’ হিসেবে দেখা উচিত এবং তাৎক্ষণিক ও সমন্বিত নীতি হস্তক্ষেপ জরুরি।


দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম কমলো, ভরি ২ লাখ ৮ হাজার টাকা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

স্বর্ণ বিশ্বের অন্যতম লোভনীয় সম্পদ। যেকোনো দেশে ঝুঁকি এড়াতে সোনা মজুত করে সরকার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোতে সেই পরিমাণ বেড়ে গেলে স্বর্ণের মূল্য বৃদ্ধি পায়। অনেক সময় কোনো দেশের মুদ্রার ব্যাপক অবমূল্যায়ন ঘটে। সেক্ষেত্রে নিজেদের সম্পদ রক্ষার্থে স্বর্ণ বিনিয়োগ করেন ব্যবসায়ীরা। ফলে তাদের কাছে ধাতুটির আকর্ষণ বাড়ে। সেই সঙ্গে দামও ঊর্ধ্বমুখী হয়। আবার ডলারের দাম বাড়লে স্বর্ণের দর হ্রাস পায়। আবার ডলারের মূল্য নিম্নমুখী হলে স্বর্ণের দাম বেড়ে যায়। এসব কারণে স্বর্ণের দাম কখনও বাড়ছে আবার কখনও কমছে। এবার দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম আরও কিছুটা কমানো হয়েছে।

স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের (পাকা স্বর্ণ) দাম কমার পরিপ্রেক্ষিতে দুই দিনের ব্যবধানে দেশের বাজারে মূল্যবান এই ধাতুটির দাম কমানো হয়েছে। সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম কমানো হয়েছে ৫ হাজার ৪৪৭ টাকা। ফলে এখন এক ভরি স্বর্ণের দাম কমে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৮ হাজার ২৭২ টাকা। আজ রবিবার (১৬ নভেম্বর) থেকে নতুন দাম কার্যকর হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)।

নতুন দাম অনুযায়ী, সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৫ হাজার ৪৪৭ টাকা কমিয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৮ হাজার ২৭২ টাকা। ২১ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ৫ হাজার ২০২ টাকা কমিয়ে ১ লাখ ৯৮ হাজার ৮০১ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এছাড়া ১৮ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ৪ হাজার ৪৫৫ টাকা কমিয়ে নতুন দাম ১ লাখ ৭০ হাজার ৩৯৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৩ হাজার ৮০৩ টাকা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৪১ হাজার ৭১৭ টাকা।

এর আগে গত ১৪ নভেম্বর সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৫ হাজার ২৪৮ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয় ২ লাখ ১৩ হাজার ৭১৯ টাকা। ২১ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ৫ হাজার ৪ টাকা বাড়িয়ে ২ লাখ ৪ হাজার ৩ টাকা, ১৮ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ৪ হাজার ২৯২ টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ৭৪ হাজার ৮৫৫ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৩ হাজার ৬৬৩ টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ৪৫ হাজার ৫২০ টাকা।

এদিকে স্বর্ণের দাম কমানো হলেও রূপার দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ভালো মানের ২২ ক্যারেটের এক ভরি রূপার দাম ৪ হাজার ২৪৬ টাকা, ২১ ক্যারেটের এক ভরি রূপার দাম ৪ হাজার ৪৭ টাকা। ১৮ ক্যারেটের এক ভরি রূপার দাম ৩ হাজার ৪৭৬ টাকা এবং সনাতনী এক ভরি রূপার দাম ২ হাজার ৬০১ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।


১২ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ইসির সংলাপ শুরু

আপডেটেড ১৬ নভেম্বর, ২০২৫ ১১:০৭
নিজস্ব প্রতিবেদক

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ১২টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপে বসছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এ সংলাপ শুরু হয়।

সংলাপে যোগ দিয়েছে গণফোরাম, গণফ্রন্ট, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি) ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির নেতারা।

একই দিন দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (বাংলাদেশ জাসদ), বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাপ, তৃণমূল বিএনপি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সংলাপে অংশ নেবে।

সোমবার (১৭ নভেম্বর) জামায়াতে ইসলামীসহ ১২টি দলের সঙ্গে সংলাপে বসবে ইসি।


কোনো অপশক্তি নির্বাচন বানচাল করতে পারবে না: আইজিপি

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
খুলনা ব্যুরো

বাংলাদেশ পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেছেন, কোনো সন্ত্রাসী বা অপশক্তি আসন্ন জাতীয় নির্বাচন বানচাল করতে পারবে না। এ বিষয়ে পুলিশের সকল ইউনিট তৎপর রয়েছে।

গতকাল শনিবার খুলনার বয়রা পুলিশ লাইনে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। আইজিপি খুলনার পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার (পিটিসি), আর্ম পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন), র্যাপিড রিজার্ভ ফোর্স (আরআরএফ) ও খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশে (কেএমপি) চলমান পুলিশ সদস্যদের নির্বাচনি প্রশিক্ষণ পরিদর্শন করেন।

এসময় আইজিপি বাহারুল আলম বলেন, বিগত তিনটি নির্বাচনে পুলিশকে বিতর্কিত করা হয়েছে। পক্ষপাতিত্ব ও অন্যায় করতে বাধ্য করা হয়েছে। যে কারণে বিগত দিনের সকল ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালন করবে পুলিশ। এ কারণেই পুলিশের সকল ইউনিটের সদস্যদের প্রশিক্ষিত করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকার চায় একটি সুষ্ঠু, সুন্দর ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। ফলে এবারের নির্বাচনে পুলিশের দায়িত্ব ও কর্তব্য অনেক। এ কারণে আমরা ট্রেনিং নিয়ে প্রশিক্ষিত হচ্ছি।’

এবারই প্রথম পুলিশের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন নিয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিগত তিনটি নির্বাচনে পুলিশকে দিয়ে অন্যায় করিয়ে বিতর্কিত করা হয়েছে। ফলে এবার স্ব-উদ্যোগে প্রশিক্ষণ নিয়ে বিগত দিনের সবকিছু ঝেড়ে ফেলে একটি সুশৃঙ্খল নির্বাচন করা হবে। তবে, এর মধ্যে যে-সব পুলিশ সদস্য এখনো সংশোধন হতে পারেনি বা পারবে না তাদের নির্বাচনে মূল নেতৃত্বে দায়িত্ব দেওয়া হবে না। বিতর্কিতদের চিহ্নিত করতে রেঞ্জ ডিআইজি এবং পুলিশ সুপারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আগামী জানুয়ারিতে দায়িত্ব বণ্টনের সময় বিষয়টি দেখা হবে।

নির্বাচনে পুলিশ সঠিক দায়িত্ব পালন করতে পারবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে আইজিপি বলেন, মানুষ নির্বাচনের জন্য উদগ্র্রীব হয়ে আছে। তবে পুলিশের একার পক্ষে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না। এজন্য সকলের সহযোগিতা নিয়ে একটি শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করা সম্ভব হবে।

আর্টিফিসিয়্যাল ইন্টেলিজেন্স (এআই) দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিস এবং ডিজ ইনফরমেশন দিয়ে ফেইক নিউজ ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে- এ কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, এসব বিষয় দেখা হচ্ছে। তবে স্বাধীনতার নামে কতটুকু করতে বা লিখতে পারা যাবে সে বিষয়েও আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পুলিশের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার তদন্ত খুব বেশী অগ্রগতি হয়নি। তবে পুলিশের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া ১৯টি হত্যা ও ৩৭টি অন্যান্য মামলায় ২১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এখনও ৩০-৩১ জনকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।

সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করা প্রসঙ্গে আইজিপি বলেন, ৫ আগস্টের পরে কাউকে মিথ্যা মামলায় জড়ানো হলে তাদের ১৭৩ অধ্যাদেশের মাধ্যমে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট থানা থেকে আদালতে সুপারিশ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ডিএমপিকে ২ সহস্রাধিক ব্যক্তিকে মামলায় হয়রানি না করার জন্য বলা হয়েছে।

প্রেস ব্রিফিংয়ে খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি রেজাউল হক ও কেএমপি কমিশনার মো. জুলফিকার আলী হায়দারসহ পুলিশের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।


শেখ হাসিনার রায় ও নির্বাচন নিয়ে চাপে নেই সরকার: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

‘নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ৯ দিন মাঠে থাকবে’
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
পটুয়াখালী প্রতিনিধি

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলার রায় এবং ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সরকার কোনো চাপ বা চ্যালেঞ্জ নেই বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেছেন, ১৭ নভেম্বরের রায়ের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী যা যা প্রস্তুতি নেওয়ার নিয়েছে। ওই দিনই রায় ঘোষণা হবে। কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা হবে না। এখানে কোনো চ্যালেঞ্জ নেই। আর নির্বাচন উপলক্ষে যা যা প্রস্তুতি নেওয়ার তা আমরা নিয়ে নিয়েছি এবং চলছে। নির্বাচন কমিশনসহ আমরা প্রস্তুত।

গতকাল শনিবার পটুয়াখালী সার্কিট প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন তিনি।

সংসদ নির্বাচন ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই হবে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ভোট নিয়ে আমরা চাপ অনুভব করছি না। নির্বাচনের সবকিছু নির্ভর করে জনগণের ওপর। তারা যখন নির্বাচনমুখী হয়ে যায়, তখন তাদের কোনো কিছু দিয়ে বাধা দেওয়া যায় না। আর রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনমুখী হয়ে গেলে তখন আর কোনো মতভেদ থাকেনা। আমার মনে হয় তারা অলরেডি নির্বাচনমুখী।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, নির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ৯ দিন মাঠে থাকবে। এর মধ্যে নির্বাচনের আগে পাঁচ দিন এবং পরে তিন দিন।

এসময় স্বারাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি মরজুর মোর্শেদ, জেলা প্রশাসক ড. শহীদ হোসেন চৌধুরী ও পুলিশ সুপার আনোয়ার জাহিদ উপস্থিত ছিলেন।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা দুই দিনের সফরে সড়ক পথে শনিবার দুপুর দেড়টার দিকে পটুয়াখালী সার্কিট হাউসে পৌঁছান। সেখানে দুপুরের খাবারের পর পটুয়াখালী পুলিশ লাইন ও কোস্টগার্ড ঘাঁটি পরিদর্শন করেন। তবে এসব জায়গায় সাংবাদিকদের যেতে দেওয়া হয়নি। পরে তিনি কুয়াকাটার উদ্দেশে পটুয়াখালী ত্যাগ করেন।


পুকুর ও জলাশয়সমূহকে রক্ষা করা আমাদের সকলের দায়িত্ব: পরিবেশ উপদেষ্টা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, জাতীয় সম্পদ হিসেবে খাস পুকুর ও জলাশয় রক্ষা সবার দায়িত্ব।

তিনি জানান, সরকারি খতিয়ান অনুযায়ী ঢাকা জেলা ও মহানগরে মোট ১১৩টি খাস পুকুর রয়েছে, যার মধ্যে ৪৪টি প্রথম পর্যায়ে সংস্কারের জন্য চিহ্নিত হয়েছে। এসব জলাশয়ে সীমানা নির্ধারণ, অবৈধ দখল উচ্ছেদ, সীমানা পিলার স্থাপন, পুনঃখনন, পাড় বাঁধাই, দূষণমুক্তকরণ, পানি প্রতিস্থাপন, বাঁধানো ঘাট, ওয়াকওয়ে, বেঞ্চ স্থাপন এবং বৃক্ষরোপণের কাজ করা হবে। এর মাধ্যমে জলাবদ্ধতা নিরসন, বৃষ্টির পানি ধারণ, মৎস্যচাষ, কৃষি কার্যক্রম, বাফার জোন উন্নয়ন এবং নগরবাসীর জন্য পরিবেশবান্ধব বিনোদনকেন্দ্র গড়ে তোলার সুযোগ সৃষ্টি হবে।

আজ শনিবার ঢাকার কেরানীগঞ্জের দড়িপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে ‘ঢাকা মহানগরী ও উপজেলা এলাকার ৪৪টি খাস পুকুর ও জলাশয় সংস্কার, উন্নয়ন ও পরিবেশ সংরক্ষণ প্রকল্প’-এর উদ্বোধনকালে উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।

ঢাকা জেলা প্রশাসন বাস্তবায়িত এই উদ্যোগের মাধ্যমে রাজধানী ও উপকণ্ঠের গুরুত্বপূর্ণ জলাধারসমূহ পুনর্গঠন, সংরক্ষণ এবং পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ঘটবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ অপরিহার্য উল্লেখ করে রিজওয়ানা হাসান বলেন, “ঢাকার পুকুরগুলো দখল, ভরাট ও দূষণের চাপের মুখে রয়েছে। বাকি জলাশয়ের তালিকা প্রণয়ন করে ধাপে ধাপে পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। আগামী প্রজন্মের টেকসই পরিবেশ নিশ্চিত করতে এই কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে।”

তিনি বলেন, মৎস্যজীবী সম্প্রদায়, স্থানীয় জনগণ এবং সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে সম্পৃক্ত করেই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে, যা পরিবেশ সংরক্ষণের পাশাপাশি স্থানীয় জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নেও সহায়ক হবে।

নিষিদ্ধ পলিথিন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পলিথিন দূষণ পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য গুরুতর হুমকি। সরকারের কঠোর নজরদারি ও জনসচেতনতা বৃদ্ধির ফলে সুপারশপগুলো পলিথিনের শপিং ব্যাগ ব্যবহারে বিরত হচ্ছে। তিনি পরিবেশ রক্ষায় নাগরিক দায়িত্ববোধের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন— পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমদ চৌধুরী, ঢাকার জেলা প্রশাসক তানভীর আহমেদ, পুলিশ সুপার মো. আনিসুজ্জামান, কেরানীগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিনাত ফৌজিয়া

সংশ্লিষ্টদের দ্রুত কাজ শুরুর নির্দেশনা দিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকার জলাধারসমূহ স্বাভাবিক ধারণক্ষমতা ফিরে পাবে এবং জলবায়ু সহনশীল নগর ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”


banner close