ঢাকার কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে অসুস্থ অবস্থায় জানু মিয়া (৫৮) নামে এক হাজতির মৃত্যু হয়েছে। বুধবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
জানু মিয়াকে হাসপাতালে নিয়ে আসা ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের কারারক্ষী মো. রোকনুজ্জামান জানান, হঠাৎ তিনি কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়লে বুধবার রাতে কারা কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তাকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তিনি আরও বলেন, এই হাজতি কোন মামলার আসামি, তা আমরা বলতে পারি না। শুধু এটুকু জানি বাড়ি ঢাকা সাভার এলাকায়।
যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা বাংলাদেশি পণ্যে দেশটি শুল্কহার কমাতে পারে বলে আশাবাদ প্রকাশ করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
এ বিষয়ে আলোচনা করতে বাণিজ্য উপদেষ্টাসহ একটি প্রতিনিধিদল আগামী ১ আগস্টের আগেই যুক্তরাষ্ট্রে যাবেন।
বুধবার (২৩ জুলাই) সচিবালয়ে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের কমিটির বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, ‘শুল্কহার কমানোর বিষয়ে আমরা আশাবাদী। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি খুব কম, প্রায় সাড়ে ৬০০ থেকে ৭০০ কোটি মার্কিন ডলার।’
যুক্তরাষ্ট্র থেকে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পণ্য আমদানির পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা কিছু জরুরি পণ্য আমদানি করব, তবে এখনই সেগুলোর নাম বলতে চাচ্ছি না।’
যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম আমদানির সিদ্ধান্ত সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমরা গম আমদানিকে ডাইভার্সিফাই (বৈচিত্র্যময়) করতে চাচ্ছি। কৃষ্ণসাগর ঘিরে সমস্যা তৈরি হওয়ায় রাশিয়া-ইউক্রেন অঞ্চল থেকে আমদানিতে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।’
গমের দাম সম্পর্কে মন্তব্য অস্বীকৃতি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দাম কিছুটা বেশি হলেও যুক্তরাষ্ট্রের গমে প্রোটিনের মাত্রা সামান্য বেশি এবং পরিষ্কার।’
যুক্তরাষ্ট্র থেকে বেশি দামে গম আমদানির বিষয়টি স্বীকার করে উপদেষ্টা বলেন, ‘এতে আমরা কিছু সুবিধা পাবো এবং আলোচনা এগিয়ে নিতে কিছু আমদানি করতেই হবে।’
এই আমদানি বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমাতেও সহায়তা করবে বলে জানান তিনি।
অর্থ উপদেষ্টা জানান, বাংলাদেশি পণ্যে শুল্কহার বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত আগামী ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হওয়ার আগে এবিষয়ে আলোচনা করতে বাণিজ্য উপদেষ্টা যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাবেন এবং ইউএসটিআরের (যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি) সঙ্গে বৈঠক করবেন।
তিনি বলেন, ‘আমি নিজেও আমার চ্যানেলের মাধ্যমে যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছি।’
এ পর্যায়ে লবিস্ট নিয়োগ কোনো ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘লম্বা সময় নিয়ে কোনো আলোচনার ক্ষেত্রে এ ধরনের লবিস্ট নিয়োগ করা হয়। এখানে যা করতে হবে দ্রুত (কুইক) করতে হবে।’
ব্যবসায়ীদের আলোচনায় যুক্ত করার প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ও এডিবিতে নেগোশিয়েট করে এসেছি। ব্যবসায়ীরা তো আলোচনা দূরে থাক, গেট পর্যন্তও ঢুকতে পারবে না, পরে বাইরে হইচই করবে। ওই হইচইয়ে কাজ হবে না।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি খাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্বীকার করে ইতোমধ্যে ইউএস চেম্বারের সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন বলে জানান উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের ভালো ইমেজ আছে। সম্প্রতি আমরা যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন, এক্সিলারেট এনার্জি, মেটলাইফের কতগুলো বকেয়া পরিশোধ করে দিয়েছি। বাংলাদেশের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করে ইউএস চেম্বার আমাকে চিঠি লিখেছে।
গত ৭ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে পাঠানো এক চিঠিতে বাংলাদেশের পণ্যে ৩৫ শতাংশ শুল্কারোপের ঘোষণা দেন।
চিঠিতে ট্রাম্প বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী ও স্থায়ী বাণিজ্য ঘাটতির কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
তিনি আরও লেখেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে বাংলাদেশের একটি ভারসাম্যপূর্ণ ও ন্যায্য অংশগ্রহণ চাই।’
তিন মাস আগে ঘোষিত শুল্ক হার থেকে ২ শতাংশ কমিয়ে ৩৫ শতাংশ করা হলেও এই হার বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনামের চেয়ে অনেক বেশি।
ভিয়েতনাম সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তি করেছে যার আওতায়, তারা ২০ শতাংশ শুল্কে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি করতে পারবে।
দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে ১৩টি রাজনৈতিক দল ও জোটের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের এক বছরে আমাদের আয়োজন ছিল সব রাজনৈতিক দলকে একসঙ্গে নিয়ে অতীতকে স্মরণ করা, সে জন্য কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলাম। এতে করে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে নিজেদের মধ্যে ঐক্যটা দৃশ্যমান হতো। কিন্তু এক বছর যেতে না যেতেই পরাজিত শক্তির নানা ষড়যন্ত্রের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।’
বুধবার (২৩ জুলাই) বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তিনি ১৩ রাজনৈতিক দল ও জোটের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক নেতাদের উদ্দেশে আরও বলেন, ‘মতপার্থক্য, প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকলেও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যকে আরও দৃশ্যমান করা দরকার। তা না হলে তারা এটাকে সুযোগ মনে করছে’।
বৈঠকে অংশ নেওয়া সকল দল ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও গণঐক্য অটুট রাখার বিষয়ে সমর্থন জানান। তারা আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে প্রধান উপদেষ্টাকে আরও কঠোর হওয়ার আহ্বান জানান। নেতৃবৃন্দ সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন প্রক্রিয়ায় পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে নির্বাচনকে সামনে রেখে ও ফ্যাসিবাদ প্রতিহত করতে আরও নিয়মিতভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সর্বদলীয় সভা আয়োজনের অনুরোধ জানান।
বৈঠকে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সৈয়দ হাসিবউদ্দিন হোসেন, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, এবি পার্টির মজিবুর রহমান, নাগরিক ঐক্যের শহীদুল্লাহ কায়সার, গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) রেদোয়ান আহমেদ, খেলাফত মজলিসের আহমদ আবদুল কাদের, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জেএসডির তানিয়া রব, ১২ুদলীয় জোটের শাহাদাত হোসেন সেলিম, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) বজলুর রশীদ ফিরোজ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) রুহিন হোসেন প্রিন্স ও গণফোরামের মিজানুর রহমান অংশ নেন।
উল্লেখ্য, এর আগে প্রধান উপদেষ্টা গতকাল রাতে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি ও ইসলামী আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সঙ্গে আজ পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন রাজা নকভির এক সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
বাংলাদেশ সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার অফিসে সাক্ষাৎকালে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে দু’দেশের মধ্যে মাদক ও সন্ত্রাস দমন, পুলিশ প্রশিক্ষণে দু’দেশের পুলিশ একাডেমির পারস্পরিক সহযোগিতা, কূটনৈতিক ও অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীদের জন্য অন অ্যারাইভাল ভিসা, রোহিঙ্গা ইস্যু, সাইবার ক্রাইম দমন, ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধিসহ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।
পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) প্রেসিডেন্ট ও পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) চেয়ারম্যানকে স্বাগত জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান অভিন্ন ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অংশীদার। দু’দেশের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক দিন-দিন শক্তিশালী হচ্ছে। এসময় পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বিভিন্ন ক্ষেত্রে দু’দেশের সর্বাত্মক সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, দু’দেশের কূটনৈতিক ও অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীদের জন্য অন-অ্যারাইভাল ভিসা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক চুক্তিটি প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
পাকিস্তানে বাংলাদেশ দূতাবাসের ভবন নির্মাণ প্রক্রিয়া চলমান। সেখানে আপাতত এমআরপি পাসপোর্ট প্রদান কার্যক্রম চালু রয়েছে। দূতাবাসের ভবন নির্মাণ সমাপ্ত হলে সেখানে ই-পাসপোর্ট প্রদান কার্যক্রম শুরু করা হবে
সন্ত্রাসবাদ দমনে পাকিস্তান সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, আমরা সন্ত্রাস দমনের মাধ্যমে সারাবিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করছি।
তিনি বলেন, সেখানে আমরা ব্যর্থ হলে তা পাকিস্তানসহ সবার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। সেজন্য আমরা সবার সহযোগিতা চাই। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সন্ত্রাস দমনে পাকিস্তানের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে পারে।
এসময় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, মাদক সমস্যা দূরীকরণে দু’দেশ পারস্পরিক অভিজ্ঞতাকেও কাজে লাগাতে পারে।
পুলিশ প্রশিক্ষণে দু’দেশ পরস্পরকে সহযোগিতা করতে পারে উল্লেখ করে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে দু’দেশের পুলিশ একাডেমির মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হতে পারে। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা একমত পোষণ করে বলেন, বাংলাদেশের সারদা পুলিশ একাডেমি ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন পুলিশ প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, আমরা তাদেরকে নাগরিকত্ব দিচ্ছি না। তবে পাসপোর্ট দিচ্ছি যা ভিন্ন কোড বা সিরিয়াল নম্বরের যাতে তাদেরকে রোহিঙ্গা হিসেবে শনাক্ত করা যায়। এ সময় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমরা মানবতার খাতিরে ১৩ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছি যা আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য বোঝাস্বরূপ। উপদেষ্টা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে পাকিস্তানের সহযোগিতা কামনা করেন।
বৈঠকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী পাকিস্তান সফরের আমন্ত্রণ জানান।
এসময় তিনি উত্তরায় বিমান দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনায় পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে শোক ও সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
এর আগে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী মহসিন রাজা নকভিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।
সভায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি, পাকিস্তান দূতাবাসের চার্জ দ্যা অ্যাফেয়ার্স মুহাম্মদ ওয়াসিফ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আরও ১৩টি রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন।
প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় আজ বুধবার বিকেল ৩টায় এ বৈঠক শুরু হয়।
এর আগে গতকাল রাতে তিনি দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি এবং ইসলামী আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বাসসকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
বৈঠকে অংশ নেয়া ১৩ রাজনৈতিক দলের নেতারা হলেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সৈয়দ হাসিবউদ্দিন হোসেন, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, এবি পার্টির মজিবুর রহমান মন্জু, নাগরিক ঐক্যের শহীদুল্লাহ কায়সার, গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নূর, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, খেলাফত মজলিসের ড. আহমদ আবদুল কাদের, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির তানিয়া রব, ১২ দলীয় জোটের শাহাদাত হোসেন সেলিম, বাসদের বজলুর রশীদ ফিরোজ, সিপিবির রুহিন হোসেন প্রিন্স এবং গণফোরামের ডা: মিজানুর রহমান।
শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষায় কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্ত না করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি দিয়েছে ময়মনসিংহের ত্রিশালের শিক্ষক-অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (২৩ জুলাই) সকালে উপজেলা পরিষদের সামনে ঘণ্টাব্যাপী এই কর্মসূচির আয়োজন করে ত্রিশাল উপজেলা কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশন। এতে অংশ নেন উপজেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রায় পাঁচ শতাধিক শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থী।
বক্তারা বলেন, সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শুধুমাত্র সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে—এটি সুস্পষ্ট বৈষম্য। এতে দেশের একটি বড় অংশের মেধাবিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
অভিভাবক শফিউল আজম বিপু বলেন, “যে জাতির মেরুদণ্ড শিক্ষা, সে জাতির একটি বড় অংশকে স্তব্ধ করার পাঁয়তারা চলছে। কিন্ডারগার্টেন শিক্ষার্থীদের বাদ দিয়ে বৃত্তি পরীক্ষা আয়োজন মানে মেধাবী শিশুদের শিক্ষাকে হুমকির মুখে ফেলা।”
অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল আওয়াল বলেন, “১৭ জুলাই মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় শুধু সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এক দেশে দুই নীতি মানা যায় না। ত্রিশালে প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”
মানববন্ধন শেষে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল বাকিউল বারির কাছে হস্তান্তর করা হয়।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আলমগীর কবির, যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ার হোসেন লিটন, ত্রিশাল সিটি মডেল স্কুলের প্রধান শিক্ষক ইমরান হাসান বুলবুল, পারফেক্ট মডেল স্কুলের প্রধান শিক্ষক সাইফুল আলম তুহিন, আরক শিক্ষাঙ্গনের প্রধান শিক্ষক এস এম হুমায়ুন কবীর, বিদ্যাবাড়ী ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের চেয়ারম্যান দুর্জয় ইসলাম, মৈত্রী বিদ্যানিকেতনের প্রধান শিক্ষক সাদিকুর রহমান সাদেক, অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবুল বাশার ।
বক্তারা জানান, দাবি আদায় না হলে ভবিষ্যতে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিধ্বস্ত হওয়া বিমানের দুর্ঘটনা নিয়ে হতাহতের সংখ্যা ঘিরে ছড়ানো ভুয়া তথ্যকে উড়িয়ে দিয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, হতাহতের সংখ্যা কম দেখানোর সরকারের কোনো কারণ নেই।
বুধবার (২৩ জুলাই) নিজের ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেন, বাংলাদেশে এখন হতাহতের সংখ্যা গোপন রাখা প্রায় অসম্ভব।
তিনি লিখেছেন, ‘২০০২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আমি বহু বড় ধরনের দুর্যোগ কভার করেছি। অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, বাংলাদেশে হতাহতের সংখ্যা গোপন রাখা কার্যত অসম্ভব। প্রথমদিকে পরিবারগুলো তাদের প্রিয়জন নিখোঁজ হিসেবে জানায়, পরে হাসপাতাল বা কর্তৃপক্ষ থেকে তথ্য এলে তারা স্বজনদের অবস্থান জানতে পারে। এই ঘটনার ক্ষেত্রেও মাইলস্টোন কলেজ প্রতিদিনের হাজিরা খাতা যাচাই করে অনুপস্থিতদের শনাক্ত করতে পারবে।’
তিনি বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীনদের অবস্থা নিয়ে নিয়মিত তথ্য জানাচ্ছে, সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকেও সহযোগিতা করা হচ্ছে। ‘আমি নির্দ্বিধায় বলতে পারি, হতাহতের সংখ্যা কম দেখানোর সরকারের কোনো প্রয়োজন নেই।’
তিনি লেখেন, ‘আমরা মাইলস্টোন কলেজে গিয়েছিলাম নিহতদের পরিবারের সদস্য এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দেখা করতে, যারা এখনো এই শোক থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। চারদিকে ভারী শোকাবহ পরিবেশ ছিল। অনেকে তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছে এবং মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদনে ক্ষোভ জানিয়েছে।’
ঘটনার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে প্রেস সচিব জানান, দুই উপদেষ্টা স্কুল কর্তৃপক্ষকে ক্যাম্পাসে একটি কন্ট্রোল রুম স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, এই কন্ট্রোল রুম থেকে নিয়মিত আহত ও মৃতের তথ্য জানানো হবে, যা স্কুলের উপস্থিতির তালিকার সঙ্গে মিলিয়ে প্রকাশ করা হবে।
প্রেস সচিব জানান, উপদেষ্টারা সুপারিশ করেছেন যাতে বর্তমান শিক্ষার্থী ও প্রাক্তন ছাত্ররা কন্ট্রোল রুমের কাজে যুক্ত থাকে। ‘আমরা আশা করছি, এটি আজ থেকেই সম্পূর্ণরূপে কার্যকর হবে।’
‘আমরা গতকাল (মঙ্গলবার) নয় ঘণ্টা স্কুলে ছিলাম। চাইলে আগে বেরিয়ে আসতে পারতাম, কিন্তু উপদেষ্টারা শান্তিপূর্ণভাবে পরিস্থিতির সমাধান না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে ছিলেন। প্রয়োজন হলে আরও দীর্ঘ সময় থাকতেন, আমরা তখনই বেরিয়েছি যখন সেটি যথাযথ মনে হয়েছে,’ বলেন প্রেস সচিব।
শফিকুল আলম বলেন, যেসব শিক্ষক-শিক্ষার্থী প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা। এই বিমান দুর্ঘটনাকে তিনি জাতীয় শোক হিসেবে অভিহিত করে নিহতদের শহীদ হিসেবে বর্ণনা করেন।
‘আসুন, আমরা একসঙ্গে কাজ করি যেন ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা না ঘটে। বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে উন্নত করতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং আকাশপথে শূন্য দুর্ঘটনার লক্ষ্য নিয়ে সরকার কাজ করছে,’ যোগ করেন তিনি।
একমাত্র ছেলে নবীন সরদারের কবরটি নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে যাওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন অসহায় বাবা খবির সরদার (৬৫)।
যে কারনে দিনরাতের অধিকাংশ সময় তিনি কবরের আশপাশ দিয়েই অতিবাহিত করেন।
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের মুন্সি বাজার এলাকায় ভাঙ্গনের মুখে থাকা পদ্মা নদীর পাড়ে ওই কবরটি অবস্হিত।
মঙ্গলবার (২২ জুলাই) সকালে সরেজমিন আলাপকালে খবির সরদার জানান, ১৫ বছর আগে নিজেদের মুদি দোকানে জেনারেটর বিস্ফোরণ হয়ে তার একমাত্র ছেলে মফিজের মৃত্যু হয়। বাড়ির কাছে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এখানে তার চাচা নবীন সরদার, চাচীসহ আরো কয়েকজনের কবর রয়েছে।
গত কয়েক বছরের ভাঙনে কবরটি একেবারে নদীর পাড়ে এসে পড়েছে। গত দুইদিন ধরে পদ্মায় তীব্র স্রোতের কারনে এখানে আবারো ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙনে তার সর্বশেষ সম্পদ সোয়া বিঘা ফসলি জমি নদীতে চলে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে তাদের পারিবারিক কবরস্হানটিসহ এখানাকার অনেক এলাকা নদীতে চলে যাবে। বিলীন হয়ে যাবে সামান্য দূরে থাকা তার সর্বশেষ আশ্রয়স্হল দুটি ছাপড়াঘর সহ ভিটেমাটি।
তিনি আক্ষেপ নিয়ে বলেন, বহু বছর ধরে এ এলাকায় নদী ভাঙছে। ভাঙনে শতশত মানুষ সর্বশান্ত হয়েছে। আমার বাপ-দাদার ১'শ বিঘা জমি ছিল। এখন কিছুই নেই। কিন্তু সরকার আমাদের রক্ষা করতে বিগত দিনে কোন ব্যবস্থাই নেয়নি।
এমতাবস্হায় দিশেহারা পদ্মা পাড়ের মানুষজন নিরাপদে সরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।। নির্ঘুম রাত কাটেছে তাদের।
আলাপকালে কাউয়ালজানি এলাকার শহিদুল ইসলাম মোল্লা জানান, দুইদিনের নদী ভাঙ্গনে তার প্রায় ১০ বিঘা জমি নদী গর্ভে চলে গেছে। গত বছর যে জায়গায় কিছু জিও ব্যাগ ফেলানো হয়েছিল সে জায়গার পশ্চিমে ভাঙছে। ভাঙ্গন ঠেকাতে দ্রুত জিও ব্যাগ ফেলানো দরকার।
লোকমান সরদার (৫৫) নামের অপর একজন জানান, মুন্সি পাড়া এলাকায় তার ১০ বিঘা ফসলি জমি ছিল। গত কয়েক বছরের ভাঙনে প্রায় ৮ বিঘা নদীতে বিলীন হয়ে যায়। অবশিষ্ট ২ বিঘা জমি গত ২/৩ দিনে বিলীন হয়ে গেছে। আমরা ভাঙ্গন ঠেকাতে জরুরিভাবে জিও ব্যাগ ফেলানোর দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নাহিদুর রহমান জানান, উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের কাওয়ালজানি ও মুন্সি পাড়া এলাকায় ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। এছাড়া ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে দৌলতদিয়া ইউনিয়নে অন্তর্গত দৌলতদিয়া লঞ্চ ও ফেরিঘাটগুলো। বিষয়টি প্রশাসনের উর্ধতন পর্যায়ে অবহিত করেছি। এছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং বিআইডব্লিউটিএ কতৃপক্ষের সাথেও এ বিষয়টি নিয়ে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করছি। জরুরি ভিত্তিতে ভাঙ্গন প্রতিরোধে কাজ করা হবে।
উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার পর যেসব নিখোঁজ ব্যক্তির নাম আহত বা নিহতদের প্রকাশিত তালিকায় নেই, তাদের পরিবারের সদস্যদের মালিবাগস্থ সিআইডি ভবনে গিয়ে ডিএনএ নমুনা দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ডা. মো. সায়েদুর রহমান এক বিবৃতিতে এ অুনরোধ জানান।
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত নিখোঁজদের মধ্যে মাত্র একটি পরিবারের পক্ষ থেকে নমুনা দেওয়া হয়েছে। নিখোঁজ সব পরিবারের সদস্যদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা গেলে সম্ভাব্য স্বল্পতম সময়ের মধ্যেই ডিএনএ ম্যাচিংয়ের মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। সবার সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সিএমএইচ মর্গে বর্তমানে রাখা ছয়টি মরদেহ এখনো শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। মন্ত্রণালয়ের বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে ইতোমধ্যে এসব মরদেহ থেকে ডিএনএ প্রোফাইলিংয়ের জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে সিআইডি ল্যাবরেটরিতে ডিএনএ বিশ্লেষণ করা হবে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সংঘর্ষ, হামলা, ভাঙচুর, সংঘর্ষ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ২০২৪ সালের ২৪ জুলাই (বুধবার) আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ‘চিরুনি অভিযান’ অব্যাহত রাখে। টানা পঞ্চম দিনের মতো সারাদেশে কারফিউ বলবৎ ছিল, তবে এদিন তা শিথিল রাখা হয়।
২৪ জুলাই সারাদেশে আন্দোলনকারীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রায় ১ হাজার ৪০০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে ঢাকায় ৬৪১ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এ নিয়ে গত ৮ দিনে (১৭-২৪ জুলাই) সারাদেশে গ্রেফতারের সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় সাড়ে চার হাজার। রাজধানীতে মোট ১ হাজার ৭৫৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়। চট্টগ্রামে গ্রেফতার করা হয় মোট ৭০৩ জনকে। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদের অধিকাংশ বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মী। (সূত্র: প্রথম আলো, ২৫ জুলাই, ২০২৪)।
গ্রেফতারের বিষয়ে তৎকালীন ডিবি প্রধান ও ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘ভিডিও ফুটেজ দেখেই অপরাধীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে।’
৫ দিন পর ২৪ জুলাই রাতে সারাদেশে পরীক্ষামূলকভাবে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু করে বিটিআরসি। তবে মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ রাখা হয়। হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া মেট্রোরেল এবং ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বন্ধ রাখা হয়।
এদিন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, আবু বাকের মজুমদার ও রিফাত রশীদের খোঁজ পাওয়া যায়। নিখোঁজ হওয়ার পাঁচ দিন পর আসিফ ও বাকেরকে চোখ বাঁধা অবস্থায় ফেলে যাওয়া হয় বলে দুজনই ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে জানান।
ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সংঘর্ষে আহত হয়ে এদিন চিকিৎসাধীন আরও চারজনের মৃত্যু হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনজন ও সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজনের মৃত্যু হয়।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ ও পরবর্তী সংঘাতে ২৪ জুলাই পর্যন্ত ২০১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। এ মৃত্যুর হিসাব হাসপাতাল, হাসাপাতালে মরদেহ নিয়ে আসা ব্যক্তি ও স্বজনদের সূত্রে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
ঢাকাসহ তিন জেলায় বুধবার সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল ছিল। অন্যান্য জেলায়ও জেলা প্রশাসকদের নির্ধারিত কয়েক ঘণ্টা কারফিউ শিথিল থাকে। এদিন সরকারি অফিস ও ব্যাংক চার ঘণ্টার জন্য খুলে দেওয়া হয়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ-র্যাবের পাশাপাশি রাস্তায় সেনাবাহিনীর সদস্যদেরও টহল অব্যাহত ছিল। এছাড়াও এদিন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন দেশের শীর্ষস্থানীয় সাংবাদিকরা।
কারফিউ শিথিল হওয়ায় এদিন রাজধানী থেকে দূরপাল্লার বাস ছেড়ে যায়। ঢাকা নদীবন্দর (সদরঘাট) থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে লঞ্চ চলাচল শুরু হয়। এদিন অফিস-আদালত ও কলকারখানায় কর্মচাঞ্চল্য ফিরে আসে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঢাকার যেসব স্থাপনায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে মেট্রোরেলসহ কয়েকটি স্থাপনা সরকারের উদ্যোগে বিদেশি কূটনীতিকদের সরেজমিনে পরিদর্শন করানো হয়।
এ বিষয়ে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ‘মোট ৪৯টি মিশনের প্রতিনিধিরা ধ্বংসযজ্ঞ চালানো কয়েকটি স্থাপনা পরিদর্শন করেছেন। তাদের মধ্যে ২৩ জন রাষ্ট্রদূত ছিলেন। কূটনীতিকদের মেট্রোরেলের ধ্বংসযজ্ঞ, সড়ক ভবন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বিটিভি ভবন দেখিয়েছি।’
কোটা সংস্কার আন্দোলনে ১৬ জুলাই ৬ জন নিহতের ঘটনা তদন্তে ২৪ জুলাই বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ বৈঠকে গত ১৬ জুলাই সংঘর্ষের ঘটনাগুলোর বিষয়ে জানতে গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জনগণের কাছে তথ্য চাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তদন্ত কমিটি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাওয়ার কথা জানায় এই কমিটি।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতায় নিহত আটজনের পরিচয় শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। ফলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে পড়ে থাকা মরদেহগুলো বুধবার বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়।
পুলিশের তৎকালীন মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘দুষ্কৃতকারীরা যেখানেই থাকুক না কেন, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।’
তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানান, ‘জনমনে স্বস্তি না ফেরা পর্যন্ত কারফিউ চলবে।’
নরসিংদী কারাগার থেকে পালানো দুই নারী ‘জঙ্গি’ ইশরাত জাহান মৌসুমী ওরফে মৌ ও খাদিজা পারভীন মেঘলাকে গ্রেফতার করে পুলিশের সিটিটিসি ইউনিট। এছাড়া পালিয়ে যাওয়া কারাবন্দিদের মধ্যে বুধবার পর্যন্ত ২৯২ জন আত্মসমর্পণ করেন।
সারাদেশে অবিলম্বে ইন্টারনেট চালু, কারফিউ তুলে দেওয়াসহ চার দফা দাবি জানিয়ে ২৩ জুলাই দুই দিনের আল্টিমেটাম দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের একাংশ। অন্যদিকে, নিজেদের ৯ দফা দাবি আদায়ে ২৫ জুলাই দেশব্যাপী গণসংযোগ কর্মসূচি ঘেষণা করে সমন্বয়কদের আরেক পক্ষ।
বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এবং তাদের ওপর হামলা, সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এদিন প্রতিক্রিয়া জানায় মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন। পেন্টাগনের মুখপাত্র মেজর জেনারেল প্যাট রাইডার বলেন, তারা বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতি নজরে রেখেছে। একইসঙ্গে পেন্টাগন সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানায়।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ‘দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। সরকার যত দিন চাইবে, সেনাবাহিনী তত দিন বেসামরিক প্রশাসনের সহযোগিতায় দায়িত্ব পালন করবে।’
জুলাই মাসে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নতুন সেমিস্টারের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। সেই পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়। চলমান পরিস্থিতির কারণে ৩১ জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সব পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়। এতে ৪৪তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা, অর্ধবার্ষিক বিভাগীয় পরীক্ষা (জুন-২০২৪), নন-ক্যাডারের স্ট্যান্ডার্ড অ্যাপটিচুড টেস্টসহ বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা স্থগিত থাকে।
রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার মর্মান্তিক ঘটনার পর থেকে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী রাইসা মনির খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন স্থানে ও হাসপাতালে খোঁজ করেও তার কোনো সন্ধান পাননি। অবশেষে গতকাল মঙ্গলবার তার সন্ধ্যান পাওয়া গেছে। কিন্তু সে আর বেঁচে নেই।
হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্থানে খোঁজখবরের পর ঢাকা সিএমএইচ হাসপাতালে তার মরদেহের সন্ধান মিলেছে। গতকাল সন্ধ্যা ৬টার দিকে নিহত রাইসা মনির চাচা ইমদাদুল শেখ গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে বিকালে ঢাকা সিএমএইচ হাসপাতালে নিহত রাইসার মরদের শনাক্ত করেন তার বাবা শাহাবুল শেখ।
রাইসা মনি ঢাকার উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী, কোড- ২০১০, সেকশন-স্কাই। সে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের বাজড়া গ্রামের শাহাবুল শেখের মেয়ে।
রাইসার চাচাতো ভাই তারিকুল শেখ গণমাধ্যমকে জানান, রাইসা মনির খোঁজ পাওয়া গেছে। তবে সে আর পৃথিবীতে জীবিত নেই। তার বাবা নিজে মেয়ের মরদেহ শনাক্ত করেছেন।
তিনি আরো জানান, রাইসা মনি ভাই-বোনের মধ্যে দ্বিতীয়। তার বড় বোন ও ছোট একটি ভাই রয়েছে। রাইসার মরদেহ খুঁজে পেয়ে তার পরিবারে মাতম চলছে।
চাচা ইমদাদুল শেখ বলেন, ‘রাইসা মনি আর বেঁচে নেই। তার শরীরের প্রায় ৮০ শতাংশ পুড়ে গেছে।
পেটের ওপর থেকে মাথা পর্যন্ত বেশি পুড়েছে। তবে তার মুখমণ্ডল দেখে তার বাবা মেয়ে রাইসা মনিকে শনাক্ত করেছেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘ডিএনএ নমুনা টেস্ট দেওয়ার জন্য মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। ডিএনএ টেস্টের নমুনা রেখে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে। পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হলে গতকাল মঙ্গলবারই গ্রামের বাড়ি নিয়ে যাওয়া হবে। এখানেই তার মরদেহ দাফন করা হবে।’
রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় হাসপাতালে আরও এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এতে এই ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৯ জনে।
মঙ্গলবার (২২ জুলাই) দিবাগত রাত সোয়া ১২টার দিকে শিশুটির মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
গতরাত পৌনে ২টার দিকে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন ৪৪ জনের মধ্যে নাফিস নামের ৯ বছর বয়সী একটি শিশু মঙ্গলবার রাত সোয়া ১২টার দিকে মারা যায়। শরীরের ৯৫ শতাংশ পোড়ার ক্ষত নিয়ে ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিল শিশুটি।
সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরে কুর্মিটোলার বিমানবাহিনী ঘাঁটি এ কে খন্দকার থেকে উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পর বিমানটি মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ চত্বরে বিধ্বস্ত হয়। পরে জানা যায়, স্কুল চত্বরের একটি দোতলা ভবনে বিধ্বস্ত হওয়া ওই বিমানটি ছিল বিমানবাহিনীর এফটি-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমান। প্রশিক্ষণের কাজে ব্যবহৃত চীনের তৈরি এই যুদ্ধবিমান যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে উত্তরার ওই স্কুল ভবনে আছড়ে পড়েছিল।
বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার পরপরই স্কুল ভবনে আগুন ধরে যায়। এ ঘটনায় দেড় শতাধিক হতাহতের ঘটনা ঘটে যার বেশিরভাগই শিশু। যারা এখনো হাসপাতালে ভর্তি আছে, তাদের অধিকাংশের শরীরও মারাত্মকভাবে পুড়ে গেছে।
প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বিষয়ক বিশেষ সহকারী সায়েদুর রহমান গতকাল দুপুরে বার্ন ইনস্টিটিউটে এক ব্রিফিংয়ে বলেছিলেন, যারা চিকিৎসাধীন, তাদের মধ্যে ১০ জনকে ‘শঙ্কামুক্ত’ বলে মনে করা হচ্ছে।
তার কথায়, ‘৩০ জন একটা অস্পষ্ট জায়গায় আছে, যার মধ্যে ১০ জনকে মনে করছি এখনও শঙ্কার মধ্যে আছে। বাকিদের অবস্থা মাঝামাঝি জায়গায়।’
নাফিসের মৃত্যুর পর ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীনদের সংখ্যা কমে ৬৭ জনে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে ৪৩ জন, ঢাকা সিএমএইচে ২১ জন, কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে ১ জন, শহিদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১ জন এবং উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১ জন ভর্তি আছে।
এর আগে, গতকাল দুপুরে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নিহতের সংখ্যা ৩১ ও আহতের সংখ্যা বলা হয়েছিল ১৬৫ জন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও আইএসপিআরের পক্ষ থেকে দুই ধরনের তথ্য দেওয়ায় জনসাধারণের মাঝে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। এ বিষয়ে গতকাল সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন জানান, এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ২৮, আর বিভিন্ন হাসপাতালে আহত অবস্থায় ভর্তি আছেন ৬৮ জন।
তিনি আরও জানান, আইএসপিআর পরিচালকের সঙ্গে মন্ত্রণালয় থেকে যোগাযোগ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্যই সঠিক।
এদিকে, নিহতদের মধ্যে ২২ জনের পরিচয় শনাক্তের পর লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) মর্গে রাখা ছয়টি অজ্ঞাত লাশের পরিচয় শনাক্তে স্বজনদের খুঁজছে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়।
মঙ্গলবার মধ্যরাতে মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এখন পর্যন্ত মর্গে রাখা ছয়টি লাশের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। ডিএনএ বিশ্লেষণের (প্রোফাইলিং) জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধায়নে লাশগুলো থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। দ্রুতই সিআইডির ল্যাবরেটরিতে ডিএনএ প্রোফাইলিং করা হবে।
সায়েদুর রহমানকে উদ্ধৃত করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যেসব নিখোঁজ পরিবারের সদস্যদের নাম আহত ও নিহতদের প্রকাশিত তালিকায় নেই, তাদের মালিবাগে সিআইডির কার্যালয়ে গিয়ে ডিএনএ নমুনা প্রদান করতে অনুরোধ করা হচ্ছে।
এখন পর্যন্ত মাত্র একটি পরিবারের পক্ষ থেকে নমুনা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যত দ্রুত সম্ভব নিখোঁজ পরিবারের সদস্যদের নমুনা পাওয়া গেলে ডিএনএ ম্যাচিংয়ের মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। এ বিষয়ে সকলের সহযোগিতা কাম্য।
শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনায় দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তাদের সিঙ্গাপুরে পাঠানো হবে।
তিনি আজ ঢাকায় ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি পরিদর্শনকালে এ কথা বলেন।
এম সাখাওয়াত হোসেন দুর্ঘটনায় দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসার বিষয়ে চিকিৎসকদের সাথে কথা বলেন এবং সুচিকিৎসার নির্দেশনা দেন।
এসময় তিনি বলেন, দুর্ঘটনায় বিধ্বস্ত বিমানটি ২৫ থেকে ৩০ বছরের পুরোনো ছিল। দুর্ঘটনার সঠিক কারণ অনুসন্ধানে সরকার কাজ শুরু করেছে। বিমানের ব্ল্যাকবক্স পাওয়া গেলে দুর্ঘটনার কারণ নিশ্চিতভাবে জানা যাবে। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে মর্মান্তিক প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনা।
উপদেষ্টা আরও বলেন, দুর্ঘটনায় এ পর্যন্ত ২৭ জন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ১০ জন ন্যাশনাল বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোন কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত দুই শিক্ষার্থী মেহেনাজ আক্তার হুমায়রা ও তানভীর আহমেদ এর গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।
আজ মঙ্গলবার সকালে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর ও সখীপুর উপজেলায় দুই শিক্ষার্থীর গ্রামের বাড়িতে তাদের দাফন করা হয়।
নিহত তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মেহেনাজ আক্তার হুমায়রা টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার হতেয়া কেরানীপাড়ার দেলোয়ার হোসেনের কন্যা এবং অষ্টম শ্রেণির ছাত্র তানভীর আহমেদ (১৪) মির্জাপুর উপজেলার ওয়ার্শি ইউনিয়নের নগর ভাতগ্রাম গ্রামের রুবেল মিয়ার পুত্র।
সরেজমিনে দেখা যায়, টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার হতেয়া কেরানীপাড়ার দেলোয়ার হোসেনের একমাত্র কন্যা নিহত মেহেনাজ আক্তার হুমায়রার বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। আজ সকাল ৯টায় সখীপুর হতেয়া কেরানীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে জানাজা শেষে হতেয়া কেরানীপাড়া সামাজিক কবরস্থানে হুমায়রাকে দাফন করা হয়।
হুমায়রার খালু নাসির সিকদার বাসসকে জানান, গতরাতে ঢাকা থেকে হুমায়রার মরদেহ সখিপুরে নিয়ে আসা হয়। আজ সকাল ৯টায় জানাজা শেষে কেরানীপাড়া সামাজিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। হুমায়রার বাবা দেলোয়ার হোসেন মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক। হুমায়রার জানাজায় সখীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল রনীসহ এলাকার বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অংশ নেন।
হুমায়রার বাবা দেলোয়ার হোসেন বাসসকে বলেন, উত্তরায় মাইলস্টোন কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আমার মেয়ে এবং টাঙ্গাইলের আরো একজন শিক্ষার্থী মারা গেছে। আমার আদরের মেয়েকে হারিয়ে আমি নিঃস্ব হয়ে গেলাম। এ শোক আমি সইব কীভাবে। পুরো দেশের মানুষ এই শোকের ঘটনায় একাত্মতা প্রকাশ করেছে।
‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওপর দিয়ে কেন প্রশিক্ষণ বিমান উড়ছিল, এর কোন জবাব কি কেউ দিতে পারবে?’-বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন এই শোকাহত পিতা।
মির্জাপুর উপজেলার নগর ভাতগ্রাম নয়াপাড়ায় অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী তানভীরের গ্রামের বাড়িতে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। আজ সকাল ১০টায় মির্জাপুর উপজেলার আন্দিপাড়া মাদ্রাসা মাঠে তানভীরের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে আন্দিপাড়া সামাজিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, বাবা রুবেল মিয়ার ব্যবসার সুবাদে ঢাকায় থাকেন তানভীরের পরিবার। তানভীর ও তাশফিক দুই ভাই। তানভীর অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। ছোট ভাই তাশফিক তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে । দুই ভাইই মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী। প্রতিদিনের মত মায়ের হাতের খাবার খেয়ে স্কুলে গিয়েছিল দুই ভাই। ছোট ভাই বেলা ১২টায় স্কুল ছুটি হলে বাসায় চলে যায়। কোচিংয়ে পড়ার জন্য স্কুলে থেকে যায় তানভীর। তানভীর ক্লাসের ক্যাপ্টেন হওয়ায় দুর্ঘটনার আগ মুহূর্তেও শ্রেণিকক্ষের শৃঙ্খলার দায়িত্ব পালন করছিল।
নিহত তানভীরের চাচাতো ভাই সজিব বলেন, চাচা-চাচি সন্তানকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার জন্য মাইলস্টোন কলেজে ভর্তি করেছিলেন। সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল। তার লাশ গ্রামে আনা হলে গ্রামে হৃদয় বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়।
মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবিএম আরিফুল ইসলাম বাসসকে বলেন, এমন ঘটনায় আমরা সবাই মর্মাহত। নিহতের পরিবারকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহায়তা প্রদান করা হবে।