রাজধানীর পূর্ব রামপুরায় গাছ থেকে আম পাড়তে গিয়ে ডাল ভেঙে নিচে পড়ে মোয়াজ্জেম হোসেন ভূঁইয়া (৫০) নামে এক ব্যক্তি মারা গেছেন। তিনি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২২ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার লিয়াকতের বাড়িতে দারোয়ানের চাকরি করতেন।
শুক্রবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে এই দুর্ঘটনা ঘটে। পরে স্বজনরা মোয়াজ্জেম হোসেনকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসক বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত মোয়াজ্জেম হোসেন ভূঁইয়ার গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলায়। বর্তমানে তিনি পূর্ব রামপুরা জামতলা এলাকার একটি ভাড়া বাসায় থেকে দারোয়ানের চাকরি করতেন।
নিহতের স্ত্রী সালমা বেগম জানান, মোয়াজ্জেম হোসেন রামপুরার ২২ নং ওয়ার্ড কমিশনার লিয়াকতের বাড়ির দারোয়ানের কাজ করেন। বিকেলে পাশের বাড়ির আম গাছের মালিক বুড়ি ও তার মেয়ে আম পেড়ে দেয়ার অনুরোধ করেন। মা-মেয়ের অনুরোধে তিনি আম পাড়ার সময় গাছের ডাল ভেঙে নিচে পড়ে গুরুতর জখম হন। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
সালমা বেগম অভিযোগ করেন, মোয়াজ্জেম হোসেন গাছ থেকে পড়ে গেলে কেউ তাকে উদ্ধার করতে এগিয়ে আসেনি।
ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোহাম্মদ বাচ্চু মিয়া বলেন, মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে রাখা হয়েছে বিষয়টি রামপুরা থানায় জানানো হয়েছে।
আমার নিজ নামীয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্স পরীক্ষার মূল সনদ যার রোল- ২৮৬৭, পাশের সন- ১৯৭৬, বিভাগ- প্রাণীবিদ্যা, হল- ফজলুল হক এবং অনার্স পরীক্ষার মূল সনদ যার রোল- ৩৩৭২, পাশের সন-১৯৭৫, বিভাগ- প্রাণীবিদ্যা, হল- ফজলুল হক আমার বাসা থেকে হারিয়েছে। যা অনেক খুঁজেও পাওয়া যায়নি। এই মর্মে গুলশান থানা, ডিএমপি-এর জিডি নম্বর- ১৭৭৪, তারিখ- ২৪/০৭/২০২৫ইং।
নুরুল ইসলাম
বঙ্গোপসাগরে আবারও একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এতে চার বিভাগে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) এক সতর্কবার্তায় এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এর প্রভাবে আজ বিকাল ৫টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টায় খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় ভারী (ঘণ্টায় ৪৪–৮৮ মিমি) থেকে অতি ভারী (৮৮ মিমি/২৪ ঘণ্টা) বর্ষণ হতে পারে।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, অতি ভারী বর্ষণের কারণে চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলাগুলোর পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে। সেইসঙ্গে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম মহানগরীর কোথাও কোথাও ভারী বৃষ্টিজনিত অস্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতা তৈরি হতে পারে।
নদীবন্দরের জন্য সতর্কতা
এদিকে, লঘুচাপের প্রভাবে দেশের সাতটি অঞ্চলে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টিপাতের সতর্কতা দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
এতে বলা হয়েছে, আজ সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলগুলোর ওপর দিয়ে দক্ষিণ বা দক্ষিণ–পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫–৬০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
এ কারণে এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
সারাদেশের আবহাওয়ার কি অবস্থা?
সারাদেশের সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ১২০ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি আরও ঘণীভূত হতে পারে।
তাছাড়া, মৌসুমি বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ রাজস্থান, উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও লঘুচাপের কেন্দ্রস্থল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের ওপর সক্রিয় এবং দেশের অন্যত্র মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল অবস্থায় রয়েছে।
এর প্রভাবে আজ রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
সেইসঙ্গে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।
এ সময় ঢাকা, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জ জেলাসহ রাজশাহী, রংপুর, খুলনা, ময়মনসিংহ এবং সিলেট বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে—তা কমতে পারে।
অন্যদিকে, সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
ফরিদপুরে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে দুটি বাসের সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১০ জন।
ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ফরিদপুরের করিমপুর এলাকায় বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) সকাল ১০টার দিকে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ((অ্যাডিশনাল এসপি) মো. মারুফ হোসেন হতাহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, সাতক্ষীরা থেকে ঢাকাগামী রয়েল পরিবহনের সঙ্গে ফরিদপুর থেকে মাগুরাগামী একটি লোকাল বাসের সংঘর্ষে এই দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান দুজন। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পথে আরও একজন নিহত হন।
তিনি আরও জানান, আহতদের তাৎক্ষণিকভাবে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে কানাইপুর হাইওয়ে থানার পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে হতাহতের উদ্ধার করে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে পাঠিয়েছে বলেও জানান মো. মারুফ হোসেন।
তবে তাৎক্ষণিকভাবে হতাহতের পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ।
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে গুজব অস্বীকার করেছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।
আইএসপিআর-এর পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সামি-উদ-দৌলা চৌধুরী বলেছেন, ‘সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে, মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক গুজব ছড়ানো হচ্ছে। অনেকেই না বুঝে এসব গুজব বিশ্বাস করছেন।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের সন্তানদের বিষয়ে কোনো তথ্য গোপন করার ইচ্ছে নেই। ঘটনার পরপরই কোনো পূর্ব নির্দেশনা ছাড়াই বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সর্বোচ্চ প্রচেষ্টার মাধ্যমে দ্রুত সাড়া দিয়েছে। যেমনটি সব সময় করে থাকে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমি নিজে এবং আইএসপিআর টিম সরাসরি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলাম।’
গতকাল বুধবার আইএসপিআর-এর পরিচালক গণমাধ্যমকে এ কথা জানান।
তিনি বলেন, ‘আইএসপিআরের পরিচালক হিসেবে আমি স্পষ্টভাবে ঘোষণা করছি- যে কোনো গণমাধ্যম চাইলেই এ বিষয়ে তদন্ত করতে পারে। সেনাবাহিনীসহ যে কাউকে বা সংশ্লিষ্ট যে কোনো স্থান পরিদর্শন করতে পারে। আমরা সর্বোচ্চ সহায়তা করতে প্রস্তুত আছি। পাশাপাশি আপনাদের যে কোনো প্রয়োজনে সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করব।’
আন্তর্জাতিক রুটে চলাচলকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট বিজি-১৪৮-এ উড্ডয়নের কিছু্ক্ষণের পরই যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। এ কারণে ২৮৭ জন যাত্রী নিয়ে বিমানটি আবার ফিরে এসে নিরাপদে অবতরণ করে।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) সকাল ৮টা ৩৭ মিনিটে ফ্লাইটটি চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। তবে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে মাত্র ২১ মিনিট পর সকাল ৮টা ৫৮ মিনিটে ফ্লাইটটি শাহ আমানত বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
এরপর, আরেকটি ফ্লাইট বিজি-১২২-এ সব যাত্রীকে স্থানান্তর করা হয় এবং সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে ওই ফ্লাইটটি ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
চট্টগ্রাম বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, বিজি-১৪৮ ফ্লাইটটি বর্তমানে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের বে নম্বর-৮ এ অবস্থান করছে। ফ্লাইটের সব যাত্রী নিরাপদে রয়েছেন এবং তাদের মধ্যে কেউ আহত হননি।
বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী পাসপোর্টের র্যাংকিংয়ে তিন ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। হেনলি পাসপোর্ট ইনডেক্সের সাম্প্রতিক হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশ রয়েছে ৯৪তম অবস্থানে। গত বছর এ অবস্থান ছিল ৯৭তম।
পাসপোর্ট ইনডেক্সের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীরা এখন বিশ্বের ৩৯টি দেশে ভিসা ছাড়া ভ্রমণ করতে পারেন। প্রকাশিত হেনলি অ্যান্ড পার্টনারসের এই ইনডেক্স বৈশ্বিক ভিসামুক্ত ভ্রমণের সুযোগের ভিত্তিতে র্যাংকিং তৈরি করা হয়েছে।
পাসপোর্ট র্যাংকিংয়ে এবার এককভাবে শীর্ষে রয়েছে সিঙ্গাপুর। দেশটির পাসপোর্টধারীরা বিশ্বের ১৯৩টি দেশে ভিসা ছাড়া প্রবেশ করতে পারেন। গত বছর যৌথভাবে শীর্ষ স্থানে ছিল ছয়টি দেশ– ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, সিঙ্গাপুর ও স্পেন।
র্যাংকিংয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া। এসব দেশের পাসপোর্টধারীরা বিশ্বের ১৯০টি দেশে ভিসা ছাড়া প্রবেশ করতে পারেন।
তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে সাতটি দেশ– ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, আয়ারল্যান্ড, ইতালি ও স্পেন। এসব দেশের পাসপোর্টধারীরা বিশ্বের ১৮৯টি দেশে ভিসা ছাড়া প্রবেশ করতে পারেন।
চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্গ, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, পর্তুগাল ও সুইডেন। এসব দেশের পাসপোর্টধারীরা বিশ্বের ১৮৮টি দেশে ভিসা ছাড়া প্রবেশ করতে পারেন।
পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে গ্রিস, নিউজিল্যান্ড ও সুইজারল্যান্ড। এসব দেশের পাসপোর্টধারীরা বিশ্বের ১৮৭টি দেশে ভিসা ছাড়া প্রবেশ করতে পারেন।
ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাজ্য। দেশটির পাসপোর্টধারীরা বিশ্বের ১৮৬টি দেশে ভিসা ছাড়া প্রবেশ করতে পারেন।
সপ্তম অবস্থানে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, চেক রিপাবলিক, হাঙ্গেরি, মাল্টা, পোল্যান্ড। এসব দেশের পাসপোর্টধারীরা বিশ্বের ১৮৫টি দেশে ভিসা ছাড়া প্রবেশ করতে পারেন।
অষ্টম অবস্থানে রয়েছে কানাডা, এস্তোনিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। এসব দেশের পাসপোর্টধারীরা বিশ্বের ১৮৪টি দেশে ভিসা ছাড়া প্রবেশ করতে পারেন।
নবম অবস্থানে রয়েছে ক্রোয়েশিয়া, লাটভিয়া, স্লোভাকিয়া ও স্লোভেনিয়া। এসব দেশের পাসপোর্টধারীরা বিশ্বের ১৮৩টি দেশে ভিসা ছাড়া প্রবেশ করতে পারেন।
দশম অবস্থানে রয়েছে আইসল্যান্ড, লিথুনিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র। এসব দেশের পাসপোর্টধারীরা বিশ্বের ১৮২টি দেশে ভিসা ছাড়া প্রবেশ করতে পারেন। হেনলি পাসপোর্ট ইনডেক্সে ১৯৯টি পাসপোর্ট ও ২২৭টি গন্তব্য বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।
গত ২০ বছরের মধ্যে বিদায়ী অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) সর্বনিম্ন বাস্তবায়ন হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মাত্র ৬৮ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন হয়।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) ওয়েবসাইটে ২০০৪-২৫ অর্থবছর থেকে গত ২০ বছরের এডিপি বাস্তবায়নের তথ্য দেওয়া আছে। ওই সময়ের মধ্যে সবচেয়ে কম এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে বিদায়ী অর্থবছরে।
গতকাল বুধবার বিদায়ী অর্থবছরের এডিপি বাস্তবায়নের চিত্র প্রকাশ করেছে। সেখানে এই চিত্র পাওয়া গেছে।
বিদায়ী অর্থবছরে সংশোধিত এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ২৬ হাজার ১৬৫ কোটি টাকা। বছর শেষে খরচ হয় মাত্র ১ লাখ ৫২ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা। বাস্তবায়ন হার ৬৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা ছিল। উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ হয়নি বললেই চলে। এছাড়া আন্দোলনের সময়ে বেশ কয়েকদিন কারফিউ ছিল। বছরজুড়ে এক ধরনের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতাও ছিল। তারা আরও বলেন, গত বছর ক্ষমতার পটপরিবর্তনের কয়েকজন প্রকল্প পরিচালককে খুঁজে পাওয়া যায়নি। অনেক ঠিকাদার পালিয়ে গেছেন। এসব কারণে প্রকল্পের বরাদ্দের টাকা পুরোটা খরচ যায়নি।
বিদায়ী অর্থবছরে আগের বছরের চেয়ে ৫২ হাজার কোটি টাকা কম খরচ হয়েছে। এমন ঘটনা খুব একটা ঘটেনি। কোভিডের শুরুর বছরে আগের বছরের কম খরচ হয়েছিল। তবে এত ব্যবধান হয়নি। গত অর্থবছরে এডিপির ১ লাখ ৫২ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা খরচ হয়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এডিপির ২ লাখ ৫ হাজার ১১৮ কোটি টাকা খরচ হয়েছিল।
২০০৪-০৫ অর্থবছরের পর থেকে গত অর্থবছর পর্যন্ত সংশোধিত এডিপির ৮০ শতাংশ থেকে ৯৮ শতাংশ পর্যন্ত বাস্তবায়ন করতে পেরেছেন প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্মকর্তারা। কিন্তু গত অর্থবছরের মতো এত কম বাস্তবায়ন হয়নি।
গত অর্থবছরের এডিপি বা প্রকল্প বাস্তবায়নে সবচেয়ে খারাপ করেছে স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ। এ বিভাগের ১৫টি প্রকল্পের অনুকূলে ২ হাজার ২৮৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বছর শেষে এসব প্রকল্পের কর্মকর্তারা মাত্র ৩৫০ কোটি টাকা খরচ করেছেন। এই বিভাগের এডিপি বাস্তবায়ন হার মাত্র ১৫ শতাংশ।
সবচেয়ে খারাপ পারফরম্যান্স করা শীর্ষ পাঁচের মাধ্যমে থাকা অন্য চারটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ হলো স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ (বাস্তবায়ন ২১ শতাংশ); নির্বাচন কমিশন সচিবালয় (৩২ শতাংশ); বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন (৩৭ শতাংশ); ভূমি মন্ত্রণালয় (৩৭ শতাংশ)। অন্যদিকে সবচেয়ে ভালো করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এই বিভাগ তাদের বরাদ্দের ৯৮ শতাংশ টাকা খরচ করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা বাংলাদেশি পণ্যে দেশটি শুল্কহার কমাতে পারে বলে আশাবাদ প্রকাশ করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
এ বিষয়ে আলোচনা করতে বাণিজ্য উপদেষ্টাসহ একটি প্রতিনিধিদল আগামী ১ আগস্টের আগেই যুক্তরাষ্ট্রে যাবেন।
বুধবার (২৩ জুলাই) সচিবালয়ে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের কমিটির বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, ‘শুল্কহার কমানোর বিষয়ে আমরা আশাবাদী। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি খুব কম, প্রায় সাড়ে ৬০০ থেকে ৭০০ কোটি মার্কিন ডলার।’
যুক্তরাষ্ট্র থেকে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পণ্য আমদানির পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা কিছু জরুরি পণ্য আমদানি করব, তবে এখনই সেগুলোর নাম বলতে চাচ্ছি না।’
যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম আমদানির সিদ্ধান্ত সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমরা গম আমদানিকে ডাইভার্সিফাই (বৈচিত্র্যময়) করতে চাচ্ছি। কৃষ্ণসাগর ঘিরে সমস্যা তৈরি হওয়ায় রাশিয়া-ইউক্রেন অঞ্চল থেকে আমদানিতে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।’
গমের দাম সম্পর্কে মন্তব্য অস্বীকৃতি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দাম কিছুটা বেশি হলেও যুক্তরাষ্ট্রের গমে প্রোটিনের মাত্রা সামান্য বেশি এবং পরিষ্কার।’
যুক্তরাষ্ট্র থেকে বেশি দামে গম আমদানির বিষয়টি স্বীকার করে উপদেষ্টা বলেন, ‘এতে আমরা কিছু সুবিধা পাবো এবং আলোচনা এগিয়ে নিতে কিছু আমদানি করতেই হবে।’
এই আমদানি বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমাতেও সহায়তা করবে বলে জানান তিনি।
অর্থ উপদেষ্টা জানান, বাংলাদেশি পণ্যে শুল্কহার বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত আগামী ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হওয়ার আগে এবিষয়ে আলোচনা করতে বাণিজ্য উপদেষ্টা যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাবেন এবং ইউএসটিআরের (যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি) সঙ্গে বৈঠক করবেন।
তিনি বলেন, ‘আমি নিজেও আমার চ্যানেলের মাধ্যমে যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছি।’
এ পর্যায়ে লবিস্ট নিয়োগ কোনো ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘লম্বা সময় নিয়ে কোনো আলোচনার ক্ষেত্রে এ ধরনের লবিস্ট নিয়োগ করা হয়। এখানে যা করতে হবে দ্রুত (কুইক) করতে হবে।’
ব্যবসায়ীদের আলোচনায় যুক্ত করার প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ও এডিবিতে নেগোশিয়েট করে এসেছি। ব্যবসায়ীরা তো আলোচনা দূরে থাক, গেট পর্যন্তও ঢুকতে পারবে না, পরে বাইরে হইচই করবে। ওই হইচইয়ে কাজ হবে না।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি খাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্বীকার করে ইতোমধ্যে ইউএস চেম্বারের সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন বলে জানান উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের ভালো ইমেজ আছে। সম্প্রতি আমরা যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন, এক্সিলারেট এনার্জি, মেটলাইফের কতগুলো বকেয়া পরিশোধ করে দিয়েছি। বাংলাদেশের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করে ইউএস চেম্বার আমাকে চিঠি লিখেছে।
গত ৭ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে পাঠানো এক চিঠিতে বাংলাদেশের পণ্যে ৩৫ শতাংশ শুল্কারোপের ঘোষণা দেন।
চিঠিতে ট্রাম্প বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী ও স্থায়ী বাণিজ্য ঘাটতির কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
তিনি আরও লেখেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে বাংলাদেশের একটি ভারসাম্যপূর্ণ ও ন্যায্য অংশগ্রহণ চাই।’
তিন মাস আগে ঘোষিত শুল্ক হার থেকে ২ শতাংশ কমিয়ে ৩৫ শতাংশ করা হলেও এই হার বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনামের চেয়ে অনেক বেশি।
ভিয়েতনাম সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তি করেছে যার আওতায়, তারা ২০ শতাংশ শুল্কে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি করতে পারবে।
দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে ১৩টি রাজনৈতিক দল ও জোটের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের এক বছরে আমাদের আয়োজন ছিল সব রাজনৈতিক দলকে একসঙ্গে নিয়ে অতীতকে স্মরণ করা, সে জন্য কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলাম। এতে করে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে নিজেদের মধ্যে ঐক্যটা দৃশ্যমান হতো। কিন্তু এক বছর যেতে না যেতেই পরাজিত শক্তির নানা ষড়যন্ত্রের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।’
বুধবার (২৩ জুলাই) বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তিনি ১৩ রাজনৈতিক দল ও জোটের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক নেতাদের উদ্দেশে আরও বলেন, ‘মতপার্থক্য, প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকলেও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যকে আরও দৃশ্যমান করা দরকার। তা না হলে তারা এটাকে সুযোগ মনে করছে’।
বৈঠকে অংশ নেওয়া সকল দল ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও গণঐক্য অটুট রাখার বিষয়ে সমর্থন জানান। তারা আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে প্রধান উপদেষ্টাকে আরও কঠোর হওয়ার আহ্বান জানান। নেতৃবৃন্দ সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন প্রক্রিয়ায় পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে নির্বাচনকে সামনে রেখে ও ফ্যাসিবাদ প্রতিহত করতে আরও নিয়মিতভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সর্বদলীয় সভা আয়োজনের অনুরোধ জানান।
বৈঠকে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সৈয়দ হাসিবউদ্দিন হোসেন, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, এবি পার্টির মজিবুর রহমান, নাগরিক ঐক্যের শহীদুল্লাহ কায়সার, গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) রেদোয়ান আহমেদ, খেলাফত মজলিসের আহমদ আবদুল কাদের, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জেএসডির তানিয়া রব, ১২ুদলীয় জোটের শাহাদাত হোসেন সেলিম, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) বজলুর রশীদ ফিরোজ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) রুহিন হোসেন প্রিন্স ও গণফোরামের মিজানুর রহমান অংশ নেন।
উল্লেখ্য, এর আগে প্রধান উপদেষ্টা গতকাল রাতে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি ও ইসলামী আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সঙ্গে আজ পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন রাজা নকভির এক সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
বাংলাদেশ সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার অফিসে সাক্ষাৎকালে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে দু’দেশের মধ্যে মাদক ও সন্ত্রাস দমন, পুলিশ প্রশিক্ষণে দু’দেশের পুলিশ একাডেমির পারস্পরিক সহযোগিতা, কূটনৈতিক ও অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীদের জন্য অন অ্যারাইভাল ভিসা, রোহিঙ্গা ইস্যু, সাইবার ক্রাইম দমন, ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধিসহ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।
পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) প্রেসিডেন্ট ও পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) চেয়ারম্যানকে স্বাগত জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান অভিন্ন ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অংশীদার। দু’দেশের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক দিন-দিন শক্তিশালী হচ্ছে। এসময় পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বিভিন্ন ক্ষেত্রে দু’দেশের সর্বাত্মক সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, দু’দেশের কূটনৈতিক ও অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীদের জন্য অন-অ্যারাইভাল ভিসা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক চুক্তিটি প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
পাকিস্তানে বাংলাদেশ দূতাবাসের ভবন নির্মাণ প্রক্রিয়া চলমান। সেখানে আপাতত এমআরপি পাসপোর্ট প্রদান কার্যক্রম চালু রয়েছে। দূতাবাসের ভবন নির্মাণ সমাপ্ত হলে সেখানে ই-পাসপোর্ট প্রদান কার্যক্রম শুরু করা হবে
সন্ত্রাসবাদ দমনে পাকিস্তান সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, আমরা সন্ত্রাস দমনের মাধ্যমে সারাবিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করছি।
তিনি বলেন, সেখানে আমরা ব্যর্থ হলে তা পাকিস্তানসহ সবার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। সেজন্য আমরা সবার সহযোগিতা চাই। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সন্ত্রাস দমনে পাকিস্তানের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে পারে।
এসময় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, মাদক সমস্যা দূরীকরণে দু’দেশ পারস্পরিক অভিজ্ঞতাকেও কাজে লাগাতে পারে।
পুলিশ প্রশিক্ষণে দু’দেশ পরস্পরকে সহযোগিতা করতে পারে উল্লেখ করে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে দু’দেশের পুলিশ একাডেমির মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হতে পারে। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা একমত পোষণ করে বলেন, বাংলাদেশের সারদা পুলিশ একাডেমি ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন পুলিশ প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, আমরা তাদেরকে নাগরিকত্ব দিচ্ছি না। তবে পাসপোর্ট দিচ্ছি যা ভিন্ন কোড বা সিরিয়াল নম্বরের যাতে তাদেরকে রোহিঙ্গা হিসেবে শনাক্ত করা যায়। এ সময় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমরা মানবতার খাতিরে ১৩ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছি যা আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য বোঝাস্বরূপ। উপদেষ্টা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে পাকিস্তানের সহযোগিতা কামনা করেন।
বৈঠকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী পাকিস্তান সফরের আমন্ত্রণ জানান।
এসময় তিনি উত্তরায় বিমান দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনায় পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে শোক ও সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
এর আগে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী মহসিন রাজা নকভিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।
সভায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি, পাকিস্তান দূতাবাসের চার্জ দ্যা অ্যাফেয়ার্স মুহাম্মদ ওয়াসিফ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আরও ১৩টি রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন।
প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় আজ বুধবার বিকেল ৩টায় এ বৈঠক শুরু হয়।
এর আগে গতকাল রাতে তিনি দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি এবং ইসলামী আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বাসসকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
বৈঠকে অংশ নেয়া ১৩ রাজনৈতিক দলের নেতারা হলেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সৈয়দ হাসিবউদ্দিন হোসেন, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, এবি পার্টির মজিবুর রহমান মন্জু, নাগরিক ঐক্যের শহীদুল্লাহ কায়সার, গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নূর, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, খেলাফত মজলিসের ড. আহমদ আবদুল কাদের, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির তানিয়া রব, ১২ দলীয় জোটের শাহাদাত হোসেন সেলিম, বাসদের বজলুর রশীদ ফিরোজ, সিপিবির রুহিন হোসেন প্রিন্স এবং গণফোরামের ডা: মিজানুর রহমান।
শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষায় কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্ত না করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি দিয়েছে ময়মনসিংহের ত্রিশালের শিক্ষক-অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (২৩ জুলাই) সকালে উপজেলা পরিষদের সামনে ঘণ্টাব্যাপী এই কর্মসূচির আয়োজন করে ত্রিশাল উপজেলা কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশন। এতে অংশ নেন উপজেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রায় পাঁচ শতাধিক শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থী।
বক্তারা বলেন, সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শুধুমাত্র সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে—এটি সুস্পষ্ট বৈষম্য। এতে দেশের একটি বড় অংশের মেধাবিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
অভিভাবক শফিউল আজম বিপু বলেন, “যে জাতির মেরুদণ্ড শিক্ষা, সে জাতির একটি বড় অংশকে স্তব্ধ করার পাঁয়তারা চলছে। কিন্ডারগার্টেন শিক্ষার্থীদের বাদ দিয়ে বৃত্তি পরীক্ষা আয়োজন মানে মেধাবী শিশুদের শিক্ষাকে হুমকির মুখে ফেলা।”
অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল আওয়াল বলেন, “১৭ জুলাই মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় শুধু সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এক দেশে দুই নীতি মানা যায় না। ত্রিশালে প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”
মানববন্ধন শেষে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল বাকিউল বারির কাছে হস্তান্তর করা হয়।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আলমগীর কবির, যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ার হোসেন লিটন, ত্রিশাল সিটি মডেল স্কুলের প্রধান শিক্ষক ইমরান হাসান বুলবুল, পারফেক্ট মডেল স্কুলের প্রধান শিক্ষক সাইফুল আলম তুহিন, আরক শিক্ষাঙ্গনের প্রধান শিক্ষক এস এম হুমায়ুন কবীর, বিদ্যাবাড়ী ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের চেয়ারম্যান দুর্জয় ইসলাম, মৈত্রী বিদ্যানিকেতনের প্রধান শিক্ষক সাদিকুর রহমান সাদেক, অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবুল বাশার ।
বক্তারা জানান, দাবি আদায় না হলে ভবিষ্যতে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিধ্বস্ত হওয়া বিমানের দুর্ঘটনা নিয়ে হতাহতের সংখ্যা ঘিরে ছড়ানো ভুয়া তথ্যকে উড়িয়ে দিয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, হতাহতের সংখ্যা কম দেখানোর সরকারের কোনো কারণ নেই।
বুধবার (২৩ জুলাই) নিজের ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেন, বাংলাদেশে এখন হতাহতের সংখ্যা গোপন রাখা প্রায় অসম্ভব।
তিনি লিখেছেন, ‘২০০২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আমি বহু বড় ধরনের দুর্যোগ কভার করেছি। অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, বাংলাদেশে হতাহতের সংখ্যা গোপন রাখা কার্যত অসম্ভব। প্রথমদিকে পরিবারগুলো তাদের প্রিয়জন নিখোঁজ হিসেবে জানায়, পরে হাসপাতাল বা কর্তৃপক্ষ থেকে তথ্য এলে তারা স্বজনদের অবস্থান জানতে পারে। এই ঘটনার ক্ষেত্রেও মাইলস্টোন কলেজ প্রতিদিনের হাজিরা খাতা যাচাই করে অনুপস্থিতদের শনাক্ত করতে পারবে।’
তিনি বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীনদের অবস্থা নিয়ে নিয়মিত তথ্য জানাচ্ছে, সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকেও সহযোগিতা করা হচ্ছে। ‘আমি নির্দ্বিধায় বলতে পারি, হতাহতের সংখ্যা কম দেখানোর সরকারের কোনো প্রয়োজন নেই।’
তিনি লেখেন, ‘আমরা মাইলস্টোন কলেজে গিয়েছিলাম নিহতদের পরিবারের সদস্য এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দেখা করতে, যারা এখনো এই শোক থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। চারদিকে ভারী শোকাবহ পরিবেশ ছিল। অনেকে তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছে এবং মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদনে ক্ষোভ জানিয়েছে।’
ঘটনার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে প্রেস সচিব জানান, দুই উপদেষ্টা স্কুল কর্তৃপক্ষকে ক্যাম্পাসে একটি কন্ট্রোল রুম স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, এই কন্ট্রোল রুম থেকে নিয়মিত আহত ও মৃতের তথ্য জানানো হবে, যা স্কুলের উপস্থিতির তালিকার সঙ্গে মিলিয়ে প্রকাশ করা হবে।
প্রেস সচিব জানান, উপদেষ্টারা সুপারিশ করেছেন যাতে বর্তমান শিক্ষার্থী ও প্রাক্তন ছাত্ররা কন্ট্রোল রুমের কাজে যুক্ত থাকে। ‘আমরা আশা করছি, এটি আজ থেকেই সম্পূর্ণরূপে কার্যকর হবে।’
‘আমরা গতকাল (মঙ্গলবার) নয় ঘণ্টা স্কুলে ছিলাম। চাইলে আগে বেরিয়ে আসতে পারতাম, কিন্তু উপদেষ্টারা শান্তিপূর্ণভাবে পরিস্থিতির সমাধান না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে ছিলেন। প্রয়োজন হলে আরও দীর্ঘ সময় থাকতেন, আমরা তখনই বেরিয়েছি যখন সেটি যথাযথ মনে হয়েছে,’ বলেন প্রেস সচিব।
শফিকুল আলম বলেন, যেসব শিক্ষক-শিক্ষার্থী প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা। এই বিমান দুর্ঘটনাকে তিনি জাতীয় শোক হিসেবে অভিহিত করে নিহতদের শহীদ হিসেবে বর্ণনা করেন।
‘আসুন, আমরা একসঙ্গে কাজ করি যেন ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা না ঘটে। বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে উন্নত করতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং আকাশপথে শূন্য দুর্ঘটনার লক্ষ্য নিয়ে সরকার কাজ করছে,’ যোগ করেন তিনি।