মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫
৭ শ্রাবণ ১৪৩২
গভীর সমুদ্রের গ্যাস উত্তোলন

যুক্তরাষ্ট্রের এক্সনমোবিল ১৫ ব্লক ইজারা চায়

আপডেটেড
৮ মে, ২০২৩ ১৩:৩৪
আরিফুজ্জামান তুহিন
প্রকাশিত
আরিফুজ্জামান তুহিন
প্রকাশিত : ৮ মে, ২০২৩ ১৩:৩২

গত ১০ বছরে দেশের তিনটি গভীর সমুদ্রে ব্লক ইজারা দেয়া হয়েছিল দুটি বিদেশি কোম্পানিকে, সেখানে গ্যাসও মিলেছে। তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে উৎপাদন অংশীদারত্ব চুক্তির (পিএসসি বা প্রোডাকশন শেয়ারিং কন্ট্রাক্ট) বেশি গ্যাসের দাম বাংলাদেশ দিতে রাজি না হওয়ায় ওই দুটি কোম্পানিই দেশ ছেড়ে চলে যায়। বর্তমানে গভীর সমুদ্রের ১৫টি ব্লক ফাঁকা রয়েছে, এই ১৫টি ব্লক ইজারা পেতে সরকারকে প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসভিত্তিক জায়ান্ট তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি এক্সনমোবিল। এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য প্রস্তাবটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে রয়েছে। সরকার রাজি থাকলে এই ১৫টি ব্লকই দেয়া হবে এক্সনমোবিলকে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্বালানি বিভাগ ও পেট্রোবাংলা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এক্সনমোবিলকে সাগরের ১৫টি ব্লক ইজারা দেয়ার আগে ২০১৯ সালের করা মডেল পিএসসি সংশোধন করবে সরকার। ২০১৯ সালের মডেল পিএসসি সংশোধনের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্বালানি বিভাগ অনুমোদন দিলেই নতুন পিএসসি অনুমোদন পাবে। শিগগিরই সংশোধিত ‘মডেল পিএসসি ২০২৩’ অনুমোদন দেবে সরকার।

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসভিত্তিক এক্সনমোবিলের প্রস্তাবটি ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে সম্মতি পেলে সমঝোতা স্মারক সই হবে। এরপর এক্সনমোবিল সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে জরিপ চালাবে। সেই জরিপের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে তারা চূড়ান্ত চুক্তি করবে। এখনই সে কারণে তেল-গ্যাস উত্তোলনে চূড়ান্ত চুক্তি করতে চায় না এক্সনমোবিল।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার বলেন, ‘এক্সনমোবিলের প্রস্তাবের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার সরকারের। আমাদের কাছে যে নির্দেশনা আসবে আমরা সেটাই পালন করব।’

তিনি বলেন, ‘মডেল পিএসসি ২০২৩’ মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া আছে। পেট্রোবাংলা থেকে যা সংশোধন করার দরকার আমি সেটা শেষ করে মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছি। এ বিষয়ে সরকারই সিদ্ধান্ত নেবে।’

সরকারের সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, এক্সনমোবিলের মতো জায়ান্ট কোম্পানি যুক্ত হওয়ার বিষয়টি ইতিবাচক। তা না হলে গ্যাস উত্তোলনে বাংলাদেশকে অপেক্ষাই করে যেতে হবে।

তেল-গ্যাস বিশেষজ্ঞ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. বদরুল ইমাম এ প্রসঙ্গে বলেন, ১২ নম্বর ব্লকটি সমুদ্র ব্লকের সব থেকে সম্ভাবনাময়ী। এটি পসকো দাইয়ুকে ইজারা দেয়া উচিত হয়নি। এই ব্লকের লাগোয়া অঞ্চল মিয়ানমার থেকে পসকো দাইয়ু অপারেটর হিসেবে গ্যাস তুলছে। পসকো দাইয়ু বাংলাদেশে তেল-গ্যাস উত্তোলনের জন্য এসেছে নাকি এখানকার তথ্য নিতে এসেছে, এটা নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে। তারা এখানে জরিপ করে জেনেছে যে তেল-গ্যাস আছে এরপর তারা চলে গেছে, এটাই তাদের দরকার ছিল। এখন তারা মিয়ানমার অংশ থেকে গ্যাস তুলে চীনে রপ্তানি করছে, সেটাই অব্যাহত রাখবে।

তিনি বলেন, গভীর সমুদ্রের ১৫টি ব্লক ফাঁকা রয়েছে। এর মধ্যে ১০, ১১ ও ১২ নম্বর ব্লকে গ্যাস পাওয়া গেলেও উত্তোলন করা হয়নি। এক্সনমোবিল তাদের প্রস্তাবে বাংলাদেশের গভীর সমুদ্রে তেল গ্যাসপ্রাপ্তির সম্ভাবনা সম্পর্কে বলেছে, গভীর সমুদ্র এলাকায় তেল-গ্যাস সঞ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি স্ট্র্যাটিগ্রাফিক ফাঁদে ঘটতে পারে। এক্সনমোবিল গায়ানার গভীর সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান সফলতার সঙ্গে করেছে এবং এই জাতীয় ফাঁদগুলো খুঁজে পাওয়ার সব থেকে ভালো অভিজ্ঞতা রয়েছে এক্সনমোবিলের।

কী প্রস্তাব আছে এক্সনমোবিলের

বাংলাদেশের গভীর সমুদ্রের ব্লকগুলোতে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উন্নয়ন করতে চেয়ে একটি প্রস্তাব সম্প্রতি পেট্রোবাংলাকে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের জায়ান্ট প্রতিষ্ঠান এক্সনমোবিল। এ জন্য আট বছর মেয়াদে তিন ভাগে তারা কাজ করবে। প্রথম দুই বছরে এক্সনমোবিল পিএসসি চুক্তি সই ও টুডি সার্ভে (দ্বিমাত্রিক জরিপ) করবে। এর পরের তিন বছরে তারা থ্রিডি সার্ভে (ত্রিমাত্রিক জরিপ) করবে। আর শেষ তিন বছরে তারা কূপ খনন করবে। এক্সনমোবিলকে বিনা দরপত্রে সাগরের তেল-গ্যাসের ব্লকের ইজারার পিএসসি চুক্তি করতে হবে। আলোচনার মাধ্যমেই পিএসসি সই করতে চায় এক্সনমোবিল।

দেশে বর্তমানে সাগরবক্ষে ২৬টি তেল-গ্যাসের ব্লক রয়েছে। আর স্থলভাগে রয়েছে ২২টি। এর মধ্যে ১১টি ব্লক অগভীর সমুদ্রে ও গভীর সমুদ্রে রয়েছে ১৫টি ব্লক। অগভীর সমুদ্রে ১১ নম্বর ব্লক সান্তোস ও ক্রিস এনার্জি এবং অগভীর সমুদ্রের ৪ ও ৯ নম্বর ব্লক ভারতের দুটি কোম্পানি ওএনজিসি ভিদেশ (ওভিএল) ও অয়েল ইন্ডিয়া (ওআইএল) ইজারা নিয়েছিল। এর মধ্যে সান্তোস দ্বিমাত্রিক ও ত্রিমাত্রিক জরিপ করার পর কূপ খনন না করেই বাংলাদেশ থেকে কার্যক্রম গুটিয়ে নেয়।

আর গভীর সমুদ্রের ১০ ও ১১ নম্বর ব্লক ইজারা পেয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের কনোকো-ফিলিপস আর ১২ নম্বর ব্লক পেয়েছিল দক্ষিণ কোরিয়ার পসকো দাইয়ু করপোরেশন। এই তিনটি ব্লকে গ্যাস পাওয়া গেলেও তারা উত্তোলন না করেই দেশ ছেড়েছে। এর ফলে গভীর সমুদ্রের সবগুলো ব্লকই এখন ফাঁকা রয়েছে। এক্সনমোবিল গভীর সমুদ্রের এই ১৫টি ব্লকই ইজারা চায়। ২০১৯ মডেল পিএসসিতে অগভীর সমুদ্রের প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাসের দাম ধরা হয়েছিল ৫ দশমিক ৬ ডলার আর গভীর সমুদ্রে এই দাম ধরা হয়েছিল ৭ দশমিক ২৫ ডলার। এবারের উৎপাদন অংশীদারি চুক্তিতে প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাসের দাম ১০ ডলার রাখা হয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশের গ্যাসের ওপর মালিকানার হার বা হিস্যা কিছুটা কমতে পারে।

জরিপেও অংশ নিতে চায় এক্সনমোবিল

বাংলাদেশের সাগরভাগের তেল-গ্যাসের মজুত জানতে সরকার দুটি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে মাল্টিক্লায়েন্ট সার্ভে করার কাজ দিয়েছে। এ দুটি কোম্পানি হলো নরওয়ের টিজিএস ও যুক্তরাষ্ট্রের এসএলবি (সাবেক স্লামবার্জার)। এই দুটি প্রতিষ্ঠান গত ৪ জানুয়ারি থেকে বঙ্গোপসাগরের ৩২ হাজার লাইন কিলোমিটার দ্বিমাত্রিক জরিপ শুরু করেছে। এই জরিপের জন্য সরকার তাদের কোনো অর্থ দেবে না। তবে জরিপের তথ্য বা ডেটা এই দুটি প্রতিষ্ঠান তেল-গ্যাস উত্তোলন করতে চায়, এমন বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে অর্থ তুলে নিতে পারবে।

এক্সনমোবিল মাল্টিক্লায়েন্ট সার্ভের সঙ্গে যুক্ত হতে চায়। তারা টিজিএস ও এসএলবির সঙ্গে যৌথভাবে সাগরের তেল-গ্যাস জরিপে অংশ নিতে চায় বলে পেট্রোবাংলার কাছে প্রস্তাবে জানিয়েছে।

গভীর সমুদ্রের ব্লক কতটা সম্ভাবনাময়

গভীর সমুদ্রের ১০ ও ১১ নম্বর ব্লক ইজারা পেয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি কনোকো-ফিলিপস। ২০১১ সালের ১৬ জুনে পেট্রোবাংলার সঙ্গে করা চুক্তি অনুযায়ী কনোকো-ফিলিপসকে প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাসের দাম ৬ দশমিক ৫ ডলার দেয়ার কথা ছিল। এরপর ২০১৪ সালে সাগরের ১০ ও ১১ নম্বর ব্লকে ৪ ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ) গ্যাস পাওয়ার ঘোষণা দেয় কনোকো-ফিলিপস। এরপর তারা সরকারকে চাপ দিতে শুরু করে, গ্যাসের মূল্য প্রতি হাজার ঘনফুটে ৮ ডলার করে দিতে। গ্যাসের দাম না বাড়ালে বিদেশে গ্যাস রপ্তানির অনুমতি দিতে হবে। সরকার এ শর্তে রাজি না হওয়ায় কনোকো-ফিলিপস তখন দেশ ছেড়ে চলে যায়।

এরপর ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিষ্ঠান পসকো দাইয়ু করপোরেশনের সঙ্গে সব থেকে সম্ভাবনাময় গভীর সমুদ্রের ১২ নম্বর ব্লকে পিএসসি সই করে পেট্রোবাংলা। এই ব্লকের সঙ্গে লাগোয়া মিয়ানমারের সমুদ্র ব্লক থেকে গ্যাস তুলছে পসকো দাইয়ু। সেখান থেকে তারা চীনে গ্যাস রপ্তানিও করছে। এখানে দাইয়ু সরকারকে গ্যাস পাওয়ার কথা জানিয়ে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়। কিন্তু চুক্তিতে গ্যাসের দাম বাড়ানোর সুযোগ না থাকায় পসকো দাইয়ু দেশ ছেড়ে চলে যায়।

দেশে গ্যাসের মজুত কত?

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান হাইড্রোকার্বন ইউনিটের তথ্যমতে, দেশে আবিষ্কৃত গ্যাসের পরিমাণ মোট ২৮ ট্রিলিয়ন ঘনফুট বা টিসিএফের চেয়ে কিছু বেশি। গত ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে গ্যাস উত্তোলনের পর বর্তমানে ৯ দশমিক শূন্য ৬ টিসিএফ অবশিষ্ট রয়েছে। দেশীয় গ্যাসক্ষেত্র থেকে দৈনিক গড়ে প্রায় ২ হাজার ২৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন হচ্ছে বিবেচনায় অবশিষ্ট মজুত গ্যাস দিয়ে প্রায় ১১ বছর চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে। এই হিসাব আবিষ্কৃত গ্যাসক্ষেত্র দিয়ে করা হয়েছে।

এই হিসাব দিয়ে বলা হচ্ছে দেশের গ্যাস আগামী ১০ থেকে ১২ বছরে ফুরিয়ে যাবে। তবে বিশ্ববিখ্যাত তেল-গ্যাস জরিপ সংস্থাগুলোর তথ্য বলছে ভিন্নকথা। সারা দুনিয়ার তেল-গ্যাসের মজুতের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ (ইউএসজিএস) তথ্য প্রকাশ করে থাকে। ইউএসজিএস ও পেট্রোবাংলার যৌথ উদ্যোগে ১৯৯৮ সালে দেশের তেল-গ্যাসের মজুতের ওপর একটি সমীক্ষায় বলা হয়, বাংলাদেশে ৫০ শতাংশ সম্ভাবনায় অনাবিষ্কৃত গ্যাস মজুত ৩২ দশমিক ৫ টিসিএফ, এর মধ্যে ৮ দশমিক ৫ টিসিএফ পাওয়ার সম্ভাবনা ৯৫ শতাংশ।

নরওয়ের সরকারি সংস্থা নরওয়েজিয়ান পেট্রোলিয়াম ডিরেক্টরেট (এনপিডি) ও বাংলাদেশের সরকারি প্রতিষ্ঠান হাইড্রোকার্বন ইউনিট দেশের তেল-গ্যাসের মজুতের সমীক্ষায় বলা হয়, দেশে অনাবিষ্কৃত গ্যাসের মজুত আছে ৪২ টিসিএফ, এই পরিমাণ গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা ৫০ শতাংশ। ডেনমার্কভিত্তিক তেল-গ্যাস পরামর্শক প্রতিষ্ঠান র‍্যাম্বল এক সমীক্ষায় বলেছে, বাংলাদেশে ৩৪ টিসিএফ গ্যাসের মজুত রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আরেকটি তেল-গ্যাস অনুসন্ধান প্রতিষ্ঠান গুস্তাভসন অ্যাসোসিয়েটসকে দিয়ে ২০১৭ সালে সরকার একটি সমীক্ষা করে। সেই সমীক্ষা প্রতিবেদনে ৯২ শতাংশ সম্ভাবনা আছে, এমন মজুতের পরিমাণ ৩৪ টিসিএফ। তবে এসব জরিপ গভীর সমুদ্রের ওপর করা হয়নি।

জ্বালানি বিভাগ ও পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে প্রতিবছর এক টিসিএফ গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। স্থলভাগ ও সাগরভাগের মজুত ইঙ্গিত দিচ্ছে দেশের গ্যাস দিয়ে ৩৫ থেকে ৪০ বছর অনায়াসে পার করতে পারবে বাংলাদেশ। কিন্তু এসব গ্যাস উত্তোলনে উদ্যোগের অভাব রয়েছে।

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ এম শামসুল আলম বলেন, তেল-গ্যাস উত্তোলন দরকার। তেল-গ্যাস উত্তোলনে সর্বোচ্চ গুরুত্বও দিতে হবে। তবে তা যেন প্রতিযোগিতামূলক হয়, সেটিও দেখতে হবে।


২৪ জুলাইয়ের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা স্থগিত

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ২৪ জুলাই অনুষ্ঠেয় এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার স্থগিত করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২২ জুলাই) সকালে মাইলস্টোন স্কুল ক্যাম্পাস পরিদর্শনকালে শিক্ষার্থীদের তিনি এমন তথ্য দিয়েছেন।

রুটিন অনুযায়ী ওই দিন (২৪ জুলাই) অর্থনীতি প্রথম পত্র/প্রকৌশল অঙ্কন ও ওয়ার্কশপ প্র্যাকটিস প্রথম পত্রের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।

এর আগে রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের ঘটনায় আজ মঙ্গলবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। এ কথা জানান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। আজ মঙ্গলবার সকাল সোয়া সাতটার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট এক পোস্টে তিনি এ কথা জানান।

রুটিন অনুযায়ী আজ মঙ্গলবার (২২ জুলাই) রসায়ন (তত্ত্বীয়) দ্বিতীয় পত্র/ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি দ্বিতীয় পত্র (মানবিক শাখা)/ইতিহাস দ্বিতীয় পত্র/গৃহ ব্যবস্থাপনা ও পারিবারিক জীবন দ্বিতীয় পত্র/উত্পাদন ব্যবস্থাপনা ও বিপণন দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা ছিল।

এদিকে এই বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩১ জনে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া আরও ১৬৫ জন বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। মঙ্গলবার (২২ জুলাই) দুপুর ২টার দিকে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী সংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৬ জন রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে এবং জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে রয়েছে ১০ জন। এ ছাড়া উত্তরার লুবনা জেনারেল হাসপাতালে ২ জন এবং উত্তরা আধুনিক হাসপাতাল, ইউনাইটেড হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজন করে নিহত রয়েছে।


বিমান দুর্ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের আহ্বান জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

উত্তরায় বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করে সরকারের কাছে সুষ্ঠু তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ সভাপতি ড. আলী রীয়াজ।

মঙ্গলবার সকালে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় পর্যায়ের সপ্তদশ দিনের বৈঠকের শুরুতে সূচনা বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।

এর আগে, আলোচনার শুরুতে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার হতাহতদের স্মরণে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার। সে সময় উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন, ড. মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।

এই শোক প্রস্তাবে স্বাক্ষর করেন আলোচনায় অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টিসহ মোট ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি ও কমিশনের সদস্যরা।

নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, গত বছর এমন সময় আমরা ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেছি। এক বছর পর, আবারও মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় গোটা জাতি শোকে মুহ্যমান। কোনো ক্ষতিপূরণই এই হৃদয়বিদারক ঘটনার জন্য যথেষ্ট নয়। তবুও আমরা সরকারের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি, নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া, আহতদের যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করা এবং দুর্ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করা হয়। ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনা আর না ঘটে, রাষ্ট্রকে সে নিশ্চয়তা দিতে হবে।

তিনি আরো বলেন, রাষ্ট্রীয় দুর্যোগের এই সময়ে সকল রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের উচিত, আহত ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়ানো। এই সংকটময় মুহূর্তে সবাই যেন নিজ নিজ অবস্থান থেকে সহমর্মিতা ও সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন।

এর আগে, গতকাল দুপুর সোয়া তিনটায় দুর্ঘটনার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জরুরি ভিত্তিতে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করে কমিশনের নির্ধারিত বৈঠক স্থগিত করা হয়।

আজকের আলোচ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, প্রধানমন্ত্রী একাধিক পদে থাকতে পারবেন কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ; তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নিয়ে রাজনৈতিক দলের প্রস্তাবের ভিত্তিতে একটি সমন্বিত প্রস্তাব তৈরি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ; নির্বাচন কমিশন, সরকারি কর্ম কমিশন, মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং ন্যায়পাল নিয়োগের বিধান সংক্রান্ত আলোচনা।

ড. আলী রীয়াজ জানান, প্রধানমন্ত্রীর পদে দলীয় প্রধান থাকা যাবে না, এ বিষয়ে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল একমত হলেও কয়েকটি দল ভিন্নমত দিয়েছে। তারা জাতীয় সনদে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ যুক্ত করতে পারবেন।

তিনি সবাইকে ঐকমত্যে পৌঁছাতে সহায়তা করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, সময় স্বল্পতার কারণে আমরা আগামী কয়েক দিনের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে একটি জাতীয় সনদ চূড়ান্ত করতে চাই।

বৈঠকে অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), জামায়াতে ইসলামি বাংলাদেশসহ ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা।

কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর এই গুরুত্বপূর্ণ আলোচনাসভা বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে।


বিমান বিধ্বস্তে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে সহায়তা 

আপডেটেড ২২ জুলাই, ২০২৫ ১৪:৫৪
বাসস

মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ক্যাম্পাসে প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য যারা অর্থ সাহায্য করতে চান তারা প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে সেটি জমা দিতে পারবেন।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়, আর্থিক সহায়তা পাঠানোর ক্ষেত্রে টাকা জমা দেয়ার হিসাবের নাম: প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল।

চলতি হিসাব নম্বর- ০১০৭৩৩০০৪০৯৩

সোনালী ব্যাংক লি:, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় কর্পোরেট শাখা।


গাজায় বিদেশী সংবাদমাধ্যমকে প্রবেশের অনুমতির আহ্বান ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জিন-নোয়েল ব্যারোট মঙ্গলবার ইসরাইলের প্রতি অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড গাজায় বিদেশী সংবাদমাধ্যমকে প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

গাজায় যুদ্ধ চলমান রয়েছে এবং ২১ মাসের চলমান এই যুদ্ধের কারণে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

প্যারিস থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে।

পূর্ব ইউক্রেন থেকে ফ্রান্স ইন্টার রেডিওকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইসরাইলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ব্যারোট বলেন, ‘আমি অনুরোধ করছি মুক্ত ও স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে গাজায় প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হোক, যাতে সেখানে কী ঘটছে তা দেখা যায় ও নিশ্চিত করা যায়।’


মাইনস্টোন কলেজের শিক্ষার্থীদের ৬ দাবিই যৌক্তিক: অন্তর্বর্তী সরকার

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

রাজধানীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনায় শিক্ষার্থীদের ছয়টি দাবির প্রত্যেকটিই যৌক্তিক বলে মনে করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এমন তথ্য জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।

এতে বলা হয়, মঙ্গলবার (২২ জুলাই) দুপুরে উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে উপস্থিত হয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেন শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

আলোচনা শেষে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের বলেন, ‘মাইলস্টোন স্কুলে একটি তথ্যকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এতে নিহত ও আহতের তথ্য থাকছে। কেউ নিখোঁজ থাকলে সে তথ্য থাকছে। এখান থেকে তথ্য নিয়মিত হালনাগাদ করা হচ্ছে। নিহত ও আহত পরিবারের ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন এবং ট্রমা ম্যানেজমেন্ট সাপোর্টের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’

জনগণের ভিড় নিয়ন্ত্রণের সময় সেনাবাহিনীর কর্তব্য পালনকালে কয়েকজন সেনা সদস্যের শিক্ষার্থীদের মারধরের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের পক্ষ থেকে দুঃখপ্রকাশ করা হয়েছে এবং উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সেনা কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে বলে জানান তিনি।

জনবহুল এলাকায় প্রশিক্ষণ বিমান না চালানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য বিমান বাহিনীকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হবে বলেও আইন উপদেষ্টা শিক্ষার্থীদের জানান। শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার শিক্ষার্থীদের বলেন, আগামী ২৪ জুলাই অনুষ্ঠিতব্য এইচএসসি পরীক্ষার তারিখ নিয়মিত পরীক্ষা শেষে ঘোষণা করা হবে।


উত্তরায় বিমান দুর্ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের শোক

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

যুক্তরাষ্ট্র রাজধানীর উত্তরায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছে। ।

এক্স-এ এক পোস্টে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক ব্যুরো বলেছে, ‘উত্তরায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমানের মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় আমরা গভীরভাবে শোকাহত। এই কঠিন সময়ে যারা আহত ও তাদের প্রিয়জনদের হারিয়েছেন তাদের পরিবারের প্রতি আমাদের সমবেদনা’'

এই বার্তা বাংলাদেশের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সংহতিরই প্রতিফলন। কারণ দেশটি এই ঘটনায় প্রাণহানির জন্য শোক পাশাপাশি আহত এবং শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনাও প্রকাশ করছে।

উল্লেখ্য, গতকাল দুপুরে উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি এফ-৭ বিজিআই প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়। এতে কমপক্ষে ২৭ জন নিহত এবং প্রায় পৌনে দুশো লোক আহত হন।


২৩ জুলাই ’২৪  : কোটা সংস্কার করে প্রজ্ঞাপন জারি, রাতে সীমিত পরিসরে ইন্টারনেট চালু

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

২০২৪ সালের ২৩ জুলাই (মঙ্গলবার) আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী সরকারি চাকরিতে ৯৩ শতাংশ পদে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ এবং ৭ শতাংশ কোটার বিধান রেখে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। এর মধ্য দিয়ে সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, স্বশাসিত ও সংবিধিবদ্ধ কর্তৃপক্ষ এবং বিভিন্ন করপোরেশনের চাকরির নিয়োগে ৯ম থেকে ২০তম গ্রেডের ক্ষেত্রে এ বিধান কার্যকর হয়।

এদিন ষষ্ঠ দিনের মতো পুরো বাংলাদেশ ইন্টারনেটবিহীন ছিল। তবে রাতের দিকে ঢাকা ও চট্টগ্রামে সীমিত পরিসরে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু করা হয়। তবে সবাই ইন্টারনেট পাননি। জরুরি সেবা, আর্থিক ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এবং গণমাধ্যমসহ কিছু খাতকে প্রাধান্য দিয়ে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু করা হয়।

২৩ জুলাইও সারাদেশে সাধারণ ছুটি ছিল। কারফিউ অব্যাহত থাকায় দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে। মহাসড়কগুলোতে যান চলাচল শুরু হয়। চলমান কারফিউ আরও শিথিল করে সরকার।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সংঘর্ষ, হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ‘চিরুনি অভিযান’ অব্যাহত রাখে। আগের দিন সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত সারাদেশে আরও প্রায় ১ হাজার ১০০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় অন্তত ৫১৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এ নিয়ে গত এক সপ্তাহে (১৭-২৩ জুলাই) সারাদেশে গ্রেফতারের সংখ্যা ৩ হাজার ছাড়ায়। রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় সংঘর্ষ, হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মঙ্গলবার আরও ৩৮টি মামলা হয়। (সূত্র: প্রথম আলো, ২৪ জুলাই, ২০২৪)।

এদিন সরকারি-বেসরকারি অফিস ২৪ জুলাই (বুধবার) ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত চার ঘণ্টার জন্য খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। একইসাথে রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানাগুলোও খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এদিকে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা চার দফা দাবি জানিয়ে তা বাস্তবায়নের জন্য সরকারকে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন। শিক্ষার্থীদের পক্ষে চার দফা দাবি তুলে ধরেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম। দাবি মেনে নিলে সংলাপের রাস্তা তৈরি হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

শিক্ষার্থীদের চার দফা দাবিগুলো হলো-ইন্টারনেট চালু করতে হবে, কারফিউ প্রত্যাহার করতে হবে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সরিয়ে নিয়ে আবাসিক হল খুলে দিয়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে যাওয়ার সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করতে হবে এবং সারাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়কদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এক সংবাদ সম্মেলনে জানায়, ১৮ জুলাই থেকে আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, আবু বাকের মজুমদার ও রিফাত রশীদ নিখোঁজ রয়েছেন।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ১ জুলাই থেকে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের পরও সরকার দাবি মেনে না নেওয়া আন্দোলন তীব্র হতে থাকে। ১৬ জুলাই সারাদেশে আন্দোলনে ৬ জন নিহত হওয়ার পর কোটা সংস্কার আন্দোলন সহিংস রূপ লাভ করে। বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ, হামলা, গুলি, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি বিজিবি মোতায়েন করা হয়। একপর্যায়ে গত ১৯ জুলাই (শুক্রবার) রাত ১২টা থেকে সারাদেশে কারফিউ জারি করা হয়। একইদিনে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করার জন্য সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত হয়। টানা পাঁচ দিন রেল চলাচল বন্ধ থাকার পর ২৩ জুলাই তেলবাহী ট্রেন চালু হয়।

এদিন তৎকালীন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের কাউকে মামলায় জড়ানো হলে তাদের তথ্য যদি কোটা আন্দোলনকারীরা দেন, তাহলে তা অবশ্যই যাচাই-বাছাই করে দেখবে সরকার।’

এদিন সংবাদ সম্মেলনে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আবাসিক হল খুলে দেওয়া যাবে না।’

র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) তৎকালীন মহাপরিচালক মো. হারুন অর রশিদ বলেন, ‘ছাত্র আন্দোলনের নামে যারা নাশকতা চালিয়ে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অপরাধীদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।’


কুমিল্লায় যৌথ বাহিনীর অভিযানে অস্ত্রসহ দুইজন গ্রেপ্তার 

আপডেটেড ২২ জুলাই, ২০২৫ ১২:২৭
মাহফুজ নান্টু,  কুমিল্লা

কুমিল্লায় সেনাবাহিনী ও র‍্যাবের পৃথক দুটি যৌথ অভিযানে অস্ত্রসহ দুজনকে আটক করা হয়।

রোববার দিবাগত রাতে পরিচালিত অভিযানে নগরীর মুরাদপুর এলাকা থেকে মোঃ আবু হায়দার (৪০)কে আটক করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে তিনটি এলজি একটি বিদেশি চাকু একটি ছেনি একটি পাসপোর্ট ও তিনটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।

অপর দিকে নগরীর নুরপুর এলাকায় মজিবুর রহমান (৩৮) ওরফে পেনু মির্জা নামে আরেকজনকে আটক করা হয় । এ সময় তার কাছ থেকে একটি এলজি ও এলজির কার্তুজ জব্দ করা হয়।

গ্রেফতারকৃতদের কোতোয়ালি মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মহিনুল ইসলাম জানান গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইননানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তাদেরকে আজ আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হবে।


বাবার স্বপ্ন ছিলো ডাক্তার হবে হুমাইরা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি

আমার মেয়ে ডাক্তার হবে অথবা ইন্জিনিয়ার হবে সে মেধাবি ছিলো, আমার মেয়ে ডালিম পছন্দ করতো এ জন্য আমি বাড়িতে ডালিম গাছ রোপন করেছি যাতে করে বাড়ি এসে ডালিম খেতে পারে আমার মা হুমাইরা। এই অল্প বয়সে চোখের সামনে এভাবে আমাকে ছেরে চলে যাবে আমার মেয়ে কখনো চিন্তাও করিনি। কথা গুলো ঘরের এককোণে শুয়ে শুয়ে বলছিলেন মাইলস্টোন স্কুলের শিক্ষক ও উত্তরায় বিমান বিধ্বস্ত ঘটনায় নিহত মেহেনাজ আফরিন হুমাইরার বাবা দেলোয়ার হোসেন।

টাঙ্গাইলের সখিপুর উপজেলার হতেয়া-রাজাবাড়ি ইউনিয়নের কেরানীপাড়া এলাকার মঙ্গলবার সকালে এসে এ চিত্র দেখা যায়।

দেলোয়ার হোসেন আরও বলেন,আমি সকালে মেয়েকে স্কুলে দিয়ে ক্লাস করাচ্ছিলাম পাশের ভবনে। যখন বিমান বিধ্বস্ত হয় তখন বিকট শব্দ হয় তখনি বের হয়ে দেখি আগুন জ্বলছে। তখনি আমার স্ত্রীর ফোন বেজে উঠে। তখন বুঝতে পারি আমার মেয়ে আটকা পড়েছে ওই ভবনে। ওই মুহুর্তে আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে।

নিহত মেহেরাজ আফরিন হুমাইরার মা সুমি আক্তার বলেন, আমি মেয়েকে বাসায় নিয়ে আসার জন্য স্কুলের মাঠে প্রবেশ করতেই দেখি একটি বিমান হঠাৎ করে ভবনের ভিতরে ডুকে পড়ে। তখনি আমি চিৎকার করলে আমাকে স্কুলের অন্য শিক্ষার্থী ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা আটকিয়ে রাখে। আমি বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরে ঘিরে বেড়াই এরপর শুনতে পাই স্কুলে হুমাইরার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আমার মেয়ে অনেক লক্ষি ছিলো, আমার কথার বাহিরে কিছু করতো না। আমার হুমাইরার জন্য দোয়া করবেন।

হুমাইরার মামা ফিরোজ আহমেদ বলেন,আমাকে মামা বলে ডাকার মতো এখন আর কেউ রইলো না। আমার বোনের একমাত্র সন্তান ছিলো হুমাইরা। তাদের একটি মাত্র সন্তানটিও শেষ হয়ে গেলো।

স্থানীয় শামসুল আলম বলেন,এই রকম মর্মান্তিক ঘটনা বাংলাদেশ কখনো প্রত্যাশা করেনি। হঠাৎ করে কতগুলো বাচ্চা শেষ হয়ে গেলো মুহুর্তে। সরকারের কাছে দাবী জানাই এই বিমান বাহিনীর ট্রেনিং গুলো নিরাপদ জায়গায় যেন করা হয়।

সখিপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল রনী বলেন,আমরা সখিপুর উপজেলার পক্ষ থেকে নিহতর পরিবারের প্রতি শোক প্রকাশ করছি।


মেয়েকে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ যায় মায়ের

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা

রাজধানী ঢাকার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বিমান দুর্ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেছেন রজনী নামে এক নারী। গতকাল সোমবার তাকে ঢাকা সিএমএস হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নেওয়া হলে সেখানেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

নিহত রজনী মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার মটমুড়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি বাওট গ্রামের আব্দুল হামিদের মেয়ে। তার স্বামী জহিরুল ইসলাম ব্যবসায়িক সূত্রে ৩ সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় বসবাস করতেন।

সোমবার দুপুরে বিমান বিধ্বস্ত হওয়া খবর শুনে নিজের শিশুকন্যাকে বাঁচাতে শ্রেণিকক্ষের দিকে ছুটে গিয়েছিলেন রজনী। তবে তিনি যাওয়ার আগেই শিশুটি স্কুলের বাইরে বের হয়ে গিয়েছিল। এতে শিশুটি বেঁচে গেলেও অগ্নিদগ্ধ হন রজনী।

দগ্ধ অবস্থায় তাকে সিএমএস হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নেওয়া হয়। পরে সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

স্বামীর বাড়ি কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার চর সাদিপুর গ্রামে রজনীর লাশ দাফন করা হবে বলে পরিবারসূত্রে জানা গেছে।

আইএসপিআরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল দুপুর ১টা ৬ মিনিটে রাজধানীর কুর্মিটোলার বিমানবাহিনী ঘাঁটি এ কে খন্দকার থেকে উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পর বিমানটি স্কুল ভবনের ওপর এসে বিধ্বস্ত হয়। দুপুর ১টা ১৮ মিনিটে এই খবর পায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স।

পরে জানা যায়, বিমানবাহিনীর এফটি-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমান স্কুলটির চত্বরের একটি দোতলা ভবনে বিধ্বস্ত হয়েছে। প্রশিক্ষণের কাজে ব্যবহৃত চীনের তৈরি এই যুদ্ধবিমান যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে উত্তরার ওই স্কুল ভবনে আছড়ে পড়েছিল।

বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার পরপরই স্কুল ভবনে আগুন ধরে যায়। এ ঘটনায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বিমানের পাইলটসহ ২৭ জন নিহত হয়েছে এবং ৭৮ জন বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।


বিধ্বস্ত বিমানটি প্রশিক্ষণ নয়, ছিল যুদ্ধবিমান

আপডেটেড ২২ জুলাই, ২০২৫ ১১:১৩
ইউএনবি

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে বলে যে খবর ছড়িয়েছে, তা সঠিক নয় বলে জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী সংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।

মঙ্গলবার (২২ জুলাই) এক বার্তায় এ বিষয়টি স্পষ্ট করে আইএসপিআর।

ওই বার্তায় বলা হয়, মাইলস্টোনের ঘটনায় কিছু সংবাদমাধ্যমে লেখা হচ্ছে, গতকালের বিমানটি একটি প্রশিক্ষণ বিমান ছিল। আমরা বিনীতভাবে আবারও জানাতে চাই, এটি ছিল যুদ্ধে ব্যবহারের উপযোগী একটি যুদ্ধবিমান। সেটি একটি প্রশিক্ষণ মিশনে অংশ নিয়েছিল।

আইএসপিআরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল দুপুর ১টা ৬ মিনিটে রাজধানীর কুর্মিটোলার বিমানবাহিনী ঘাঁটি এ কে খন্দকার থেকে উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পর বিমানটি স্কুল ভবনের ওপর এসে বিধ্বস্ত হয়। দুপুর ১টা ১৮ মিনিটে এই খবর পায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স।

পরে জানা যায়, বিমানবাহিনীর এফটি-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমান স্কুলটির চত্বরের একটি দোতলা ভবনে বিধ্বস্ত হয়েছে। প্রশিক্ষণের কাজে ব্যবহৃত চীনের তৈরি এই যুদ্ধবিমান যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে উত্তরার ওই স্কুল ভবনে আছড়ে পড়েছিল।

বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার পরপরই স্কুল ভবনে আগুন ধরে যায়। এ ঘটনায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বিমানের পাইলটসহ ২৭ জন নিহত হয়েছে এবং ৭৮ জন বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।


মাইলস্টোনে হতাহতের তথ্য গোপনের দাবি সঠিক নয়: প্রেস উইং

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় বিভিন্ন মহল থেকে হতাহতের তথ্য গোপনের যে দাবি করা হচ্ছে তা সঠিক নয় বলে জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।

মঙ্গলবার (২২ জুলাই) সকালে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রাজধানীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতদের প্রত্যেকের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। নিহতদের প্রত্যেকের নাম-পরিচয় যাচাই ও তালিকা করা হচ্ছে। যেসব লাশ শনাক্ত করা যাচ্ছে না, সেগুলো ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে শনাক্ত করা হচ্ছে। পাশাপাশি ঢাকার কয়েকটি হাসপাতালে এ ঘটনায় আহতদের সুচিকিৎসায় সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

প্রেস উইং জানায়, আমরা উদ্বেগের সাথে লক্ষ করছি যে, বিভিন্ন মহল থেকে হতাহতের তথ্য গোপন করা হচ্ছে দাবি করে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। আমরা অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে জানাতে চাই, এ দাবি সঠিক নয়।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, এ মর্মান্তিক ঘটনায় আহত-নিহতদের সম্পূর্ণ ও নির্ভুল তালিকা প্রকাশের জন্য বাংলাদেশ সরকার, সেনাবাহিনী প্রশাসন, বিদ্যালয় ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একযোগে কাজ করছে। আমরা সবার প্রতি আহ্বান জানাই, এই দুর্ঘটনায় আপনার পরিচিত কেউ যদি নিখোঁজ থেকে থাকে তবে অতিদ্রুত স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। সেখানে একটি কন্ট্রোল রুম বসানো হচ্ছে।

এ ছাড়া এখনো কেউ নিখোঁজ রয়েছে কিনা তা বিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রি খাতা ও অন্যান্য নথি থেকে যাচাই করে দেখা হচ্ছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।


৭ বছরে বিমান বাহিনীর ৩টি এফ-৭ বিধ্বস্ত হলো

আপডেটেড ২২ জুলাই, ২০২৫ ১০:০১
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বিধ্বস্ত হওয়া জেটটি এক ইঞ্জিনবিশিষ্ট হালকা ওজনের যুদ্ধবিমান। যেটি তৈরি করে চীনের চেংদু এয়ারক্রাফট করপোরেশন (সিএসি)। অভ্যন্তরীণ ব্যবহারের জন্য চীনে এটি জে-৭ নামে পরিচিত। তবে রপ্তানির সময় এর নামকরণ হয় এফ-৭।

বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর বহরে এফ-৭ বিজিআই একটি বহু পরিচিত যুদ্ধ বিমান। এটি আকাশ থেকে আকাশে স্বল্পপাল্লার ইনফ্রারড হোমিং মিসাইল এবং লেজার গাইডেড ও জিপিএস গাইডেড বোমা দিয়ে ভূমি আক্রমণে সক্ষম।

বাংলাদেশে এই মডেলের বিমানের তৃতীয় দুর্ঘটনা এটি। এর আগে ২০১৮ সালের নভেম্বরে টাঙ্গাইলের মধুপুরের রসুলপুরে ফায়ারিং রেঞ্জে মহড়ার সময় বিমানবাহিনীর এফ-৭ বিজি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়। এতে উইং কমান্ডার আরিফ আহমেদ দিপু নিহত হন। এরপর ২০২১ সালের নভেম্বরে চট্টগ্রামের জহুরুল হক ঘাঁটি থেকে উড্ডয়নের পর বঙ্গোপসাগরে বিধ্বস্ত হয় এফ-৭ এমবি। এতে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তাহমিদ নিহত হন।

বিভিন্ন সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর মোট ৩৬টি এফ-৭ যুদ্ধবিমান রয়েছে। এর মধ্যে বেশির ভাগই এফ-৭ বিজিআই ভ্যারিয়েন্ট। তবে এফ-৭ এমবি ও এফটি-৭ ভ্যারিয়েন্টও রয়েছে। তবে মোট ফাইটার ভ্যারিয়েন্ট ৩৬টি।

লাইটওয়েট মাল্টিরোল ফাইটার ধরনের এই যুদ্ধবিমানগুলোর গতি সাধারণত মাক ২ দশমিক ২ বা শব্দের গতির অন্তত ২ দশমিক ২ গুণ। এগুলোতে আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র, লেজার গাইডেড বোমা, জিপিএস গাইডেড বোমা এবং বাড়তি জ্বালানি ট্যাংক ও অস্ত্র বহনের জন্য পাঁচটি হার্ড পয়েন্ট রয়েছে। এই যুদ্ধবিমানগুলো ১ হাজার ৫০০ কেজির মতো ভার বহন করতে পারে।

এ ধরনের যুদ্ধবিমানের ককপিটে একজনমাত্র পাইলট বসতে পারেন। ককপিট সম্পূর্ণ কাচের। এফ-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমানে ব্যবহার করা হয়েছে কেএলজে-৬ এফ রাডার। এই যুদ্ধবিমান ভূপৃষ্ঠ থেকে ১৭ হাজার ৫০০ মিটার বা ৫৭ হাজার ৪২০ ফুট পর্যন্ত উচ্চতায় উড়তে সক্ষম। বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুসারে, বেশির ভাগ রাশিয়ার বিগ-২১ ও অন্যান্য সমসাময়িক অনেক যুদ্ধবিমানের চেয়ে এটি বেশি দ্রুত ম্যানুভার বা দিক পরিবর্তনে সক্ষম। এর পাল্লা কমবেশি ১ হাজার ৪০০ কিলোমিটার।

১৯৬০ থেকে ১৯৯০-এর দশক পর্যন্ত চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির বহরে সবচেয়ে বেশি উচ্চতায় উড়তে সক্ষম ও দ্রুতগামী জেট ছিল জে-৭। আধুনিক বিমান প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করা ওয়েবসাইট এয়ারফোর্স টেকনোলজি ডটকম এর তথ্য অনুযায়ী, জে-৭ এর নকশার অনুপ্রেরণা নেওয়া হয়েছে সোভিয়েত ইউনিয়নের সময়কালে তৈরি যুদ্ধবিমান মিগ-২১ থেকে।

এভিয়েশনভিত্তিক ওয়েবসাইট এয়ারোস্পেস গ্লোবাল নিউজের তথ্য অনুযায়ী, রপ্তানির সময় চীনা কোম্পানিটি এফ-৭ যুদ্ধবিমান আমদানিকারকের চাহিদা অনুযায়ী তৈরি করে। সে সময় এর নামের সঙ্গে কিছু সংকেত ব্যবহার করা হয়। যেমন, বাংলাদেশ যদি এই সিরিজের যুদ্ধবিমান আমদানি করে তাহলে এফ-৭ এর পর ইংরেজি অক্ষর ‘বি’ যুক্ত হবে। আর গ্লাস ককপিটের নকশার ক্ষেত্রে ‘জি’ এবং উন্নত সংস্করণ বোঝাতে ইমপ্রুভড এর ‘আই’ যুক্ত হবে। এ সংস্করণের যুদ্ধবিমানে থাকে সম্পূর্ণ ডিজিটাল গ্লাস ককপিট, উন্নত রাডার ব্যবস্থা ও অ্যাভিওনিক্স (ইলেকট্রনিক ব্যবস্থা) প্রযুক্তি।

এয়ারোস্পেস গ্লোবাল নিউজ (এজিএন) বলছে, এই ধরনের জেট সারা বিশ্বেই আকাশ প্রতিরক্ষা, বহুমুখী অভিযান ও পাইলদের প্রশিক্ষণের জন্যও ব্যবহার হয়। তবে নতুন প্রজন্মের যুদ্ধবিমানের চেয়ে এর দুর্ঘটনার হার বেশি। এর কারণ, পুরোনো নকশার এয়ারফ্রেম, সীমিত নিরাপত্তা, আধুনিক ফ্লাইট নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার অভাব।


banner close