গত শনিবার রাত থেকেই অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাব পড়েছে কক্সবাজার উপকূলে। এ সময় ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে ছিল ভারী বৃষ্টিপাত। রোববার দুপুরের পর কক্সবাজার জেলার উপকূলজুড়ে ঘূর্ণিঝড়টি আছড়ে পড়বে। তার আগে সেন্ট মার্টিন, কুতুবদিয়া ও মহেশখালী দ্বীপের ওপর দিয়ে ঝড়টি অতিক্রম করবে। এ সময় ২০ ফুট পর্যন্ত জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। আবহাওয়া অধিদপ্তর কক্সবাজারে ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেত দেখাতে বলেছে।
ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১৯৯১ সালে কক্সবাজারের ঘূর্ণিঝড়ের পর সমুদ্রসৈকতের এই জেলার মানুষ বড় ঘূর্ণিঝড়ের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে। দেশে ও বিদেশের আবহাওয়া পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ভূমিধসের আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।
কক্সবাজারে আশ্রয় শিবিরে থাকা প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা এবং সেন্ট মার্টিন দ্বীপের বাসিন্দারা বড় রকম ঝুঁকিতে রয়েছেন। দ্য ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটি (আইআরসি) জানিয়েছে, কক্সবাজারের আশ্রয় শিবিরে থাকা রোহিঙ্গারা ঘূর্ণিঝড় মোখার ঝুঁকিতে আছে। ঝড়টি বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হানার সময় ওই ক্ষতি হতে পারে। তীব্র বাতাস, অতিবৃষ্টি ও হঠাৎ বন্যায় সেখানে অনেক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছে সংস্থাটি। তারা আশ্রয়কেন্দ্র এলাকায় পাহাড়ধসের আশঙ্কাও করছে।
ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় সরকার সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। মোখা কক্সবাজার থেকে মিয়ানমারে গিয়ে শেষ হবে। সে কারণে সরকারের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ ছয়টি জেলায় ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এসব জেলায় জরুরি ওষুধ, খাদ্যসহ প্রয়োজনীয় ত্রাণসহায়তা রাখা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় মোখা আঘাত হানার পর দ্রুত সময়ে উপকূলীয় এলাকায় উদ্ধার কার্যক্রম, চিকিৎসা ও ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনায় প্রস্তুত রয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। ‘মোখা’র কারণে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সারা দেশে অভ্যন্তরীণ নৌপথে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। এ ছাড়া কক্সবাজারের সাগরে ভাসমান দুটি এলএনজি টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। গ্যাস-সংকটের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে গেছে। এতে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বেড়েছে লোডশেডিং।
শনিবার রাতেই ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগের কারণে কক্সবাজার উপকূল অশান্ত হয়ে উঠেছে। ভারী বৃষ্টিপাত ও ঝোড়ো হাওয়া শুরু হয়েছে গত রাত থেকেই। অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৭০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ১৯০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ ১৫ নম্বর বুলেটিনে বলা হয়, অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ১৭০ কিলোমিটার, যা দমকা ও ঝোড়ো হাওয়াসহ ১৯০ কিলোমিটারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। রোববার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে কক্সবাজার ও মিয়ানমার উপকূল অতিক্রম করতে পারে মোখা। অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় ও ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে ৮ থেকে ১২ ফুট পর্যন্ত জলোচ্ছ্বাস হতে পারে বলেও আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়।
শনিবার ভারতের আবহাওয়া বিভাগের বুলেটিনে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় মোখার কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ সবচেয়ে বেড়েছে গত শনিবার রাতে। তখন ঝড়ের কেন্দ্রে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ১৯০-২০০ কিলোমিটার, যা দমকা হাওয়ার আকারে ২২০ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর জয়েন্ট টাইফুন সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড় মোখা কক্সবাজার উপকূলে ঘণ্টায় ২১৫ কিলোমিটার বেগে আছড়ে পড়তে পারে, এটি মিয়ানমারে গিয়ে শেষ হবে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ৪৫ ফুট পর্যন্ত জলোচ্ছ্বাস হতে পারে বলেও প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান নাসার স্যাটেলাইট ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর জয়েন্ট টাইফুন সেন্টার এসব তথ্য প্রকাশ করেছে।
বড় জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা
ঘূর্ণিঝড়টি কক্সবাজার উপকূল ও মিয়ানমার দিয়ে অতিবাহিত হলেও দেশের সব উপকূলে বড় ধরনের জলোচ্ছ্বাস হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন আবহাওয়াবিদরা। যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর জয়েন্ট টাইফুন সেন্টারের গতকাল রাতের তথ্য অনুযায়ী, মোখার প্রভাবে ৪৫ ফুট পর্যন্ত জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার স্যাটেলাইট ব্যবহার করে দেয়া যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর জয়েন্ট টাইফুন সেন্টারের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গতকাল বিকেল ৫টা পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২৪০ কিলোমিটার।
কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখা কক্সবাজার ও মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের ওপর দিয়ে আঘাত করলেও পুরো বাংলাদেশের সব উপকূলীয় জেলায় ব্যাপক জলোচ্ছ্বাস হবে। এর কারণ ঘূর্ণিঝড়টি যাত্রাপথ ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার ভৌগোলিক অবস্থান। কক্সবাজার জেলার উপকূলীয় এলাকাগুলোতে ১৫ থেকে ২০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে। নোয়াখালী ও চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকাগুলোতে ১০ থেকে ১২ ফুট, বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোতে ৮ থেকে ১২ ফুট ও খুলনা বিভাগের জেলাগুলোতে ৭ থেকে ১০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে ব্যাপক এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র কারণে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সারা দেশে অভ্যন্তরীণ নৌপথে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে। দেশের চারটি সমুদ্রবন্দর থেকে জাহাজগুলোকে গভীর সমুদ্রে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
মোখা মোকাবিলায় প্রস্তুতি
ঘূর্ণিঝড়ের মূল অংশ আঘাত করবে কক্সবাজার উপকূলে। তবে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে কক্সবাজার ছাড়াও চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, বরিশাল, ভোলা, বরগুনাসহ বিভিন্ন এলাকায় জলোচ্ছ্বাস হতে পারে বলে শনিবার জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়টি রোববার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে আঘাত হানতে পারে। এখন পর্যন্ত যে দূরত্ব আছে, রোববার কাল সকাল থেকেই উপকূল স্পর্শ করতে থাকবে।’
এনামুর রহমান বলেন, ‘এটির অবস্থান, গতিপথ ও গতি বিবেচনা করে কক্সবাজার বন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেত দিতে বলা হয়েছে। আর চট্টগ্রাম ও পায়রা বন্দরে ৮ নম্বর মহাবিপৎসংকেত জারি রাখা হবে। মোংলায় ৪ নম্বর সতর্কতা সংকেত থাকবে।’
ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় চট্টগ্রামে প্রায় ১৭ হাজার স্বেচ্ছাসেবককে প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। এ ছাড়া স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে ১ হাজার ৩০টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে প্রায় পাঁচ লাখের বেশি মানুষকে আশ্রয় দেয়া সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
ঝড়ের মূল কেন্দ্র অতিবাহিত হবে কক্সবাজার জেলার ওপর দিয়ে। এই জেলার জেলা প্রশাসন কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজার জেলায় সিসিপির ৮ হাজার ৬০০ জন এবং রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ২ হাজার ২০০ জন স্বেচ্ছাসেবককে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সেন্ট মার্টিনে নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, পুলিশের ভবনসহ ৩৭টি সরকারি স্থাপনা রয়েছে। তাই সেখানে সরকারি স্থাপনাগুলোর সাইক্লোন শেল্টার হিসেবে ব্যবহারের জন্য বলা হয়েছে।
এ ছাড়া দুর্যোগকালে ২০ লাখ নগদ টাকা রাখা হয়েছে, যার মধ্যে ১০ লাখ উপজেলা পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে ৫ দশমিক ৯০ মেট্রিক টন চাল, ৩ দশমিক ৫ টন টোস্ট বিস্কুট, ৩ দশমিক ৪ টন শুকনো কেক, ১৯৪ বান্ডিল ঢেউটিন, ২০ হাজার প্যাকেট ওরস্যালাইন এবং ৪০ হাজার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট মজুত রাখা হয়েছে। প্রস্তুত রয়েছে ৫৭৬টি আশ্রয়কেন্দ্র। জেলায় যে ৫৭৬টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে, সেগুলোতে ৫ লাখ ৫ হাজার ৯৯০ জন মানুষ থাকতে পারবে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিভীষণ কান্তি দাশ জানিয়েছেন, প্রশাসনের পক্ষে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে ‘মোখা’ মোকাবিলায় তৎপরতা চালানো হচ্ছে। এর মধ্যেই অধিক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনা শুরু হয়েছে।
ত্রাণসামগ্রীসহ বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ২১টি জাহাজ, নৌ-কন্টিনজেন্ট, হেলিকপ্টার ও মেরিটাইম প্যাট্রোল এয়ারক্রাফট (এমপিএ) প্রস্তুত রাখার কথা শনিবার জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।
আইএসপিআরের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সবাইকে যাতে দ্রুত ত্রাণ ও চিকিৎসা সহায়তা দেয়া যায়, সেই লক্ষ্যে ২১টি জাহাজ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের পর এমপিএ ও হেলিকপ্টারের মাধ্যমে নৌবাহিনীর সদস্যরা সমুদ্র ও উপকূলীয় এলাকায় অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এমপিএ ও হেলিকপ্টারের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে জাহাজ ও কন্টিনজেন্টসমূহ বঙ্গোপসাগরে অনুসন্ধান ও উদ্ধার তৎপরতা চালাবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, প্রথম ধাপে উদ্ধারকাজের জন্য বানৌজা সমুদ্র জয় ও বানৌজা ধলেশ্বরী কক্সবাজার, সেন্ট মার্টিন ও টেকনাফ এলাকায়, বানৌজা শাপলান কুতুবদিয়া ও বহির্নোঙর এলাকায়, বানৌজা হাতিয়া এবং এলসিটি ১০৩ সন্দ্বীপ ও হাতিয়াসংলগ্ন এলাকায়, এলসিভিপি ১১ পটুয়াখালী এলাকায় এবং এলসিটি ১০৫ পিরোজপুর ও বরগুনা এলাকায় নিয়োজিত থাকবে।
এ ছাড়া ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় চট্টগ্রাম, বরিশাল ও খুলনা বিভাগে মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রস্তুতির মধ্যে আছে পর্যাপ্ত মেডিকেল টিম গঠন, জরুরি বিভাগে অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একটি করে আলাদা ওয়ার্ড নির্ধারণ, অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখা, জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত সব ধরনের ছুটি বাতিল, অপারেশন থিয়েটারগুলো ২৪ ঘণ্টা প্রস্তুত রাখা এবং পর্যাপ্ত জরুরি ওষুধ সংরক্ষণ।
বিদ্যুৎ বন্ধ থাকতে পারে
গত শনিবার ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশের (আইইবি) ৬০তম সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় মোখা আসছে। আমরা ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রগুলোকে প্রস্তুত রেখেছি ও ঝড়টি মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি।’
ঘূর্ণিঝড়ের সময় পানি জমে গেলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার শঙ্কা থাকে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সুতরাং সেই সময়ে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘এই পদক্ষেপ (গ্যাস ও বিদ্যুৎ বন্ধ) সাময়িক দুর্ভোগ সৃষ্টি করলেও মানুষের জীবন রক্ষা পাবে। আমরা এই ধরনের ব্যবস্থা নেব ও নিচ্ছি।’
শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কক্সবাজারের মহেশখালীতে সাগরে ভাসমান দুটি এলএনজি টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
নসরুল হামিদ বলেন, গত শুক্রবার রাত ১১টা থেকে দুটি এলএনজি টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এতে চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা অঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ বিঘ্নিত হবে। ঝড়ের পরিস্থিতি বিবেচনা করে এলএনজি টার্মিনাল দুটি ফের চালু করা হবে। গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকার কারণে চট্টগ্রাম, মেঘনাঘাট, হরিপুর এবং সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ অথবা আংশিক চালু থাকতে পারে।
প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ প্রাকৃতিক এই দুর্যোগের জন্য দুঃখপ্রকাশ করে বলেন, অতিদ্রুত গ্যাস-বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা হবে। তিনি বৈদ্যুতিক ছেঁড়া তার স্পর্শ না করে নিকটস্থ বিদ্যুৎ অফিসে যোগাযোগ করার জন্য গ্রাহকদের প্রতি বিশেষভাবে অনুরোধ করেন।
এদিকে খোদ রাজধানীতে বিদ্যুতের লোডশেডিং দেখা দিয়েছে গতকাল সকাল থেকেই। গতকাল ৮০ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়েছে ঢাকার দুই বিতরণ সংস্থার এলাকায়। এ জন্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) পক্ষ থেকে দুঃখপ্রকাশ করা হয়েছে।
পিডিবি গত শনিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, বাংলাদেশের কক্সবাজার ও অন্যান্য স্থানে আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড় মোখা। এ সময় বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে আপনাদের সাময়িক বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটতে পারে। দুর্যোগকালীন বিদ্যুৎ উৎপাদন, বিতরণ ও সঞ্চালনব্যবস্থা নানাভাবে ব্যাহত হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বিদ্যুৎ প্রাণঘাতী। তাই বৈদ্যুতিক ছেঁড়া তারের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলার জন্য সবাইকে বিশেষভাবে সতর্ক করা যাচ্ছে। ঝড় থেমে গেলেও কোনোভাবেই ছেঁড়া তার সরাবেন না। বিদ্যুৎ কর্মীরাই ছেঁড়া তারের ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।’
পিডিবির কর্মকর্তারা বলছেন, ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডর ঘণ্টায় ২২৩ কিলোমিটার বেগে আঘাত হেনেছিল খুলনা ও বরিশালের উপকূল এলাকায়। এর ফলে এসব উপকূল এলাকার বিদ্যুতের অবকাঠামো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কোথাও কোথাও কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়নি। এবারের ঘূর্ণিঝড়টি ২০০ কিলোমিটারের ওপর বয়ে যেতে পারে, সঙ্গে জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা রয়েছে। এর ফলে বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইন, বিতরণ লাইন, বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ফলে ঝড়টি শেষ না হওয়া পর্যন্ত বলা যাবে না কত দ্রুত উপদ্রুত এলাকায় বিদ্যুতের সংযোগ স্থাপন করা যাবে।