জাপান, যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যে সাম্প্রতিক সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সোমবার বিকেল ৪টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এ সংবাদ সম্মেলন শুরু হয়।
ত্রিদেশীয় সফরের অংশ হিসেবে প্রথম ধাপে গত ২৫ এপ্রিল টোকিওর উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাপানি প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার আমন্ত্রণে ওই সফরে যান শেখ হাসিনা।
টোকিওতে অবস্থানকালীন শেখ হাসিনা এবং তার জাপানি সমকক্ষ কৃষি, মেট্রোরেল, শিল্প উন্নয়ন, জাহাজ রিসাইক্লিং, কাস্টমস বিষয়, মেধা সম্পদ, প্রতিরক্ষা, আইসিটি এবং সাইবার নিরাপত্তা ইত্যাদি খাতে সহযোগিতা বাড়াতে ঢাকা ও টোকিওর মধ্যে স্বাক্ষরিত আটটি চুক্তিনামা বিনিময় প্রত্যক্ষ করেন, যার বেশির ভাগই সমঝোতা স্মারক।
শেখ হাসিনা জাপানের সম্রাট নারুহিতোর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ এবং ফুমিও কিশিদার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য গত ২৭ এপ্রিল চার জাপানি নাগরিকের কাছে ‘ফ্রেন্ডস অব লিবারেশন ওয়ার অনার’ হস্তান্তরের পাশাপাশি একটি বিনিয়োগ শীর্ষ সম্মেলন এবং একটি কমিউনিটি সংবর্ধনায়ও যোগ দেন।
তিনি একই সঙ্গে জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োশিমাসা হায়াশির পাশাপাশি জাইকা, জেইটিআরও, জেইবিআইসি, জেবিপিএফএল এবং জেবিসিসিসিইসির নেতাদের সঙ্গে বেশ কয়েকটি অতিরিক্ত দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেন।
সফরের দ্বিতীয় ধাপে ওয়াশিংটন ডিসিতে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ-বিশ্বব্যাংক অংশীদারত্বের ৫০ বছর উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠানে অংশ নেন। পাশাপাশি তিনি মার্কিন ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে একটি গোলটেবিল বৈঠক এবং বিশ্বব্যাংকের নতুন প্রেসিডেন্ট অজয় বঙ্গ ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিভারের সঙ্গে বেশ কয়েকটি বৈঠকে অংশ নেন। এ ছাড়া তিনি একটি নাগরিক সংবর্ধনায়ও অংশ নেন।
তার সফরের তৃতীয় ধাপে প্রধানমন্ত্রী ওয়াশিংটন ডিসি থেকে যুক্তরাজ্যে যান। সেখানে কমনওয়েলথ রাজ্যের রাজা ও রানি হিসেবে চার্লস তৃতীয় এবং তার পত্নী ক্যামিলার রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানে যোগদান করেন।
লন্ডনে শেখ হাসিনা রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লিভারলি এবং তার স্ত্রী সুসানা স্পার্কস ও লন্ডনের ক্লারিজ হোটেলে তার অবস্থানস্থলে সাক্ষাৎ করেন।
তিনি সেখানে ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগেল ওয়াংচুক এবং রানি জেসুন পেমার সঙ্গে বৈঠক করেন। সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার এবং কমনওয়েলথ মহাসচিব ব্যারনেস প্যাট্রিসিয়া স্কটল্যান্ডও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
শেখ হাসিনা গত ৯ মে দেশে ফেরেন।
নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের আজ এক বছর পূর্ণ হয়েছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের তিন দিন পর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার শপথ গ্রহণ করে।
শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনে ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারের দমন-পীড়ন ও হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপটে দেশে রক্তক্ষয়ী গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়। এতে দেশব্যাপী বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ নিহত ও আহত হন।
টালমাটাল এক পরিস্থিতিতে নানা চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও গত এক বছরে অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনী ব্যবস্থা, শাসনব্যবস্থা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, অর্থনীতি, বিচারব্যবস্থা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন এবং গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের বিচারসহ বিভিন্ন খাতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করে কৃতিত্ব অর্জন করেছে।
৫ আগস্ট জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবসে অন্তর্বর্তী সরকার জাতির সামনে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ উপস্থাপন করেছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক আলোচনার পর ‘জুলাই সনদ’ প্রণয়নের কাজও চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
গত ৫ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ঘোষণা করেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হবে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক টেলিভিশন ভাষণে তিনি বলেন,‘অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে আমি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে চিঠি পাঠাব, যাতে নির্বাচন কমিশন ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে, পরবর্তী রমজানের আগেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করে।’
পরের দিন ৬ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে নির্বাচন কমিশনে একটি চিঠি পাঠানো হয়। চিঠিতে আগামী ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে পবিত্র রমজান শুরু হওয়ার আগেই নির্বাচন সম্পন্ন করার জন্য বলা হয়।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, এই চিঠির মাধ্যমে নির্বাচন আয়োজনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে সরকারের অনুরোধ প্রক্রিয়াগতভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে একটি বৈঠক করে। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। তিনি জানান, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে ঘোষণা করা হবে।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর বেশ কয়েকটি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। যার মধ্যে রয়েছে- নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, পুলিশ সংস্কার কমিশন, বিচারব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, দুর্নীতি দমনুসংক্রান্ত সংস্কার কমিশন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন, স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশন, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন, শ্রমিক অধিকার সংস্কার কমিশন ও নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন।
এসব কমিশন তাদের সুপারিশমালা জমা দিয়েছে। সরকার অনেক ক্ষেত্রেই সুপারিশ বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে এ বছরের জুন মাসে দেশে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি কমে ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশে নেমেছে, যা গত ৩৫ মাসে সর্বনিম্ন।
গত ৫ আগস্ট জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য রয়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ছিল তাঁর অন্তর্বর্তী সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
তিনি বলেন, সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই দেশের দক্ষিণ ও উত্তরাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যায় কৃষি উৎপাদন বিপুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার আশঙ্কা ছিল। তবে সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও কর্তৃপক্ষের যথাযথ পদক্ষেপ, বাজার মনিটরিং ও মধ্যস্বত্বভোগীদের নিয়ন্ত্রণের কারণে তা রোধ করা সম্ভব হয়েছে। বিশেষ করে এবারের পবিত্র রমজান মাস থেকে বাজার স্থিতিশীল রয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি প্রবাসী বাংলাদেশিদের গভীর আস্থার ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে বলে জানান অধ্যাপক ইউনূস। তিনি বলেন, গত অর্থবছরে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে রেকর্ড ৩ হাজার ৩৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, যা রপ্তানি আয়কে প্রায় ৯ শতাংশ বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে টাকার মান শক্তিশালী হয়েছে। বহু বছর পর টাকার মূল্য ডলারের বিপরীতে বাড়ছে।
তিনি বলেন, গত ১১ মাসে বৈদেশিক ঋণদাতাদের কাছে ৪ বিলিয়ন ডলার সুদ ও মূলধন পরিশোধ করা হয়েছে, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এর পরও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে।
১২ মাসে অন্তর্বর্তী সরকারের উল্লেখযোগ্য সাফল্যসমূহ-
শান্তি ও স্থিতিশীলতার পুনঃপ্রতিষ্ঠা
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্বগ্রহণের পর দেশে শান্তি ও শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে, যা বিশৃঙ্খলা ও প্রতিশোধ চক্র রোধ করেছে। অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্ব জাতিকে সহিংসতার বদলে পুনর্মিলন ও গণতান্ত্রিক পুনর্জাগরণের পথে এগিয়ে নিতে স্থিতিশীলতার শক্তি হিসেবে কাজ করেছে।
অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবন
ধ্বংসপ্রাপ্ত অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে: খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৪ শতাংশ থেকে প্রায় অর্ধেকে নেমেছে, সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি কমে ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ হয়েছে (৩৫ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন), রেকর্ড ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, রপ্তানি ৯ শতাংশ বেড়েছে এবং বহু বছর পর প্রথমবারের মতো টাকার মূল্য ডলারের বিপরীতে বেড়েছে।
বাণিজ্য ও বিনিয়োগে অগ্রগতি
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য শুল্ক নিয়ে সফল আলোচনা শেষে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) নিশ্চিত করেছে (যার মধ্যে টেক্সটাইল খাতে হান্ডা গ্রুপের ২৫ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ রয়েছে, যা ২৫ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে) এবং পূর্ববর্তী সরকারের সময়ের তুলনায় দ্বিগুণ এফডিআই প্রবাহ অর্জিত হয়েছে। চীনা বিনিয়োগকারীরাও বাংলাদেশে ব্যাপক হারে আসছে।
গণতান্ত্রিক সংস্কার ও জুলাই সনদ
সরকার বিভিন্ন খাতে সংস্কার কমিশন গঠন করেছে, ৩০টিরও বেশি রাজনৈতিক দলের মধ্যে জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তুলেছে এবং ঐতিহাসিক জুলাই সনদ চূড়ান্ত করেছে, যা প্রাতিষ্ঠানিক জবাবদিহি ও ভবিষ্যতে ফ্যাসিবাদের পুনরাবৃত্তি রোধে সুরক্ষা নিশ্চিত করবে। জুলাই সনদ দেশের ক্ষমতার কাঠামোতে উন্নত চেক অ্যান্ড ব্যালান্স ব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে এক নতুন গণতান্ত্রিক যুগের সূচনা করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার
গত বছরের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতা বিরোধী অপরাধের স্বচ্ছ বিচার কাজ চলছে, অপরাধীদের জবাবদিহিতার মুখোমুখি করা হচ্ছে এবং আইনের শাসনকে সুদৃঢ় করা হচ্ছে। চারটি বড় মামলার বিচার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচারও শুরু হয়েছে।
নির্বাচন রোডম্যাপ ও সংস্কার
সরকার ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর পরিবেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের জন্য তারিখ নির্ধারণ করেছে। সেখানে প্রবাসী ভোটার, প্রথমবারের ভোটার এবং নারীদের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা হবে।
নাগরিকদের মতামত গ্রহণে ডিজিটাল পরামর্শ প্ল্যাটফর্ম চালু করা হচ্ছে, যাতে নির্বাচনকে জাতীয় গণতন্ত্র উৎসবে রূপান্তর করা যায়। শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করতে প্রায় ৮ লাখ পুলিশ, অনিয়মিত আনসার এবং সেনা সদস্য মোতায়েন করা হবে।
প্রাতিষ্ঠানিক ও আইনগত সংস্কার
সংস্কার-নির্ভর নিয়োগের মাধ্যমে স্বাধীন বিচারব্যবস্থা শক্তিশালী করা হয়েছে।
পুলিশ সংস্কার: মানবাধিকার সেল, বডিক্যাম, স্বচ্ছ জিজ্ঞাসাবাদ কক্ষ এবং জাতিসংঘ-মানের প্রটেস্ট প্রটোকল চালু হয়েছে।
আইনগত সংস্কার: দেওয়ানি কার্যবিধি (সিপিসি) ও ফৌজদারি কার্যবিধি (সিআরপিসি)-তে ব্যাপক পরিবর্তন, নতুন অধ্যাদেশে গ্রেফতারের পর সর্বোচ্চ ১২ ঘণ্টার মধ্যে পরিবারকে অবহিতকরণ, আইনজীবীর প্রবেশাধিকার, চিকিৎসা সুরক্ষা এবং অনলাইনে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার সুযোগ নিশ্চিত করা হয়েছে।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও ইন্টারনেট অধিকার
অন্তর্বর্তী সরকার আগের সরকারের দমনমূলক সাইবার সিকিউরিটি আইন বাতিল করেছে, সাংবাদিকদের সব মামলা প্রত্যাহার করেছে, সমালোচনার স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে এবং দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ইন্টারনেট ব্যবহারের অধিকারকে মৌলিক অধিকার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছে।
পররাষ্ট্রনীতিতে পরিবর্তন
অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি একক কোনো দেশের ওপর নির্ভরশীলতা থেকে সরিয়ে ভারসাম্যপূর্ণ বহুমুখী পথে নিয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, চিকিৎসা সহায়তা ও সংকট মোকাবিলায় সহযোগিতা সম্প্রসারণ করেছে। ফলে বাংলাদেশ একটি সক্রিয় ও আঞ্চলিক প্রভাবশালী শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক) পুনরুজ্জীবন ও আসিয়ান-এর সদস্যপদ অর্জনে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
প্রবাসী ও শ্রমিক অধিকার
বাংলাদেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভিসা পুনঃচালু এবং মালয়েশিয়ার একাধিকবার প্রবেশ ভিসা চালুর সুবিধা নিশ্চিত করেছে, পাশাপাশি উপসাগরীয় দেশগুলোতে অবৈধ শ্রমিকদের বৈধ করেছে। সরকার এক লাখ যুবককে জাপানে পাঠানো এবং ইতালি, দক্ষিণ কোরিয়া ও সার্বিয়ায় আরও শ্রমিক প্রেরণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, যাতে প্রবাসীদের সুযোগ বিস্তৃত হয়।
শহীদ ও আহত বিপ্লবীদের সহায়তা
অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সব শহীদ ও আহতের বিস্তারিত তালিকা প্রণয়ন করেছে এবং ৭৭৫ জন শহীদের পরিবারকে প্রায় ১০০ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র ও ভাতা প্রদান করেছে। এছাড়া ১৩ হাজার ৮০০ জন আহত বিপ্লবীকে ১৫৩ কোটি টাকার সহায়তা দিয়েছে। গুরুতর আহতদের উন্নত চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য বিদেশে পাঠানো হয়েছে।
সমুদ্র ও অবকাঠামো উন্নয়ন
সরকার বঙ্গোপসাগরকে ‘পানিভিত্তিক অর্থনীতি’র মূল জাতীয় সম্পদ হিসেবে ঘোষণা করেছে। চট্টগ্রাম বন্দরের দক্ষতা বৃদ্ধি (প্রতিদিন অতিরিক্ত ২২৫ কন্টেইনার হ্যান্ডলিং) করা হয়েছে, উপকূলীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা সম্প্রসারণ করা হয়েছে এবং বৈশ্বিক অংশীদারদের সহযোগিতায় গভীর সমুদ্রের মৎস্য ও শিল্প প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
জুলাই স্মৃতি জাদুঘর
সরকার গণভবনকে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’ এ রূপান্তরের উদ্যোগ নিয়েছে, যাতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতি সংরক্ষিত থাকে। গত ৫ আগস্ট ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস গণভবনে জাদুঘরের নির্মাণকাজের অগ্রগতি পরিদর্শন করেন।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, জাদুঘরে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ছবি, বিভিন্ন স্মারক, শহীদদের পোশাক, চিঠিপত্র, গুরুত্বপূর্ণ নথি, সেই সময়ের পত্রিকার কাটিং, অডিও-ভিডিও এবং অন্যান্য উপকরণ সংরক্ষণ করা হবে।
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন
সরকার জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ ও আহতদের পরিবারকে সহায়তা দেওয়ার জন্য ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’ প্রতিষ্ঠা করেছে। ফাউন্ডেশনটি আহতদের তাৎক্ষণিক চিকিৎসা সহায়তা, ভুক্তভোগী পরিবারকে স্বল্পমেয়াদি আর্থিক সহায়তা, জীবন উৎসর্গকারীদের স্মৃতি সংরক্ষণ এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নিশ্চিত করবে এমন প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তহবিল সংগ্রহে মনোনিবেশ করছে।
দেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন নোয়াবের পর্যবেক্ষণকে দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার।
আজ শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমরা নোয়াবের সাম্প্রতিক বিবৃতি পর্যালোচনা করেছি, যেখানে তারা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও তথ্যপ্রাপ্তি নিয়ে মন্তব্য করেছে। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী- ‘অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার গত এক বছরে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বা গণমাধ্যমের স্বতন্ত্রতাকে ক্ষুণ্ন করেছে’। আমরা দৃঢ় ও স্পষ্টভাবে এ বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করছি।’
নিচে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে প্রকাশিত বিবৃতিটি দেওয়া হলো:
দেশের গণমাধ্যম পরিচালনায় সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ নেই
দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার কোনো গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের সম্পাদকীয়, প্রশাসনিক বা ব্যবসায়িক কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করেনি। বরং ইচ্ছাকৃত অপপ্রচার ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সম্প্রচারের মুখেও সরকার অসাধারণ সংযম দেখিয়েছে।
টেলিভিশনের টকশো ও কলামে প্রায়ই সরকারের বিরুদ্ধে অসত্য ও উসকানিমূলক বক্তব্য প্রচারিত হয়েছে, কিন্তু সরকার তা সেন্সর করেনি কিংবা প্রতিশোধ নেয়নি।
প্রচণ্ড প্ররোচনার মুখেও সরকার কোনো অভিযোগ দায়ের করেনি, লাইসেন্স বাতিল করেনি, বরং পূর্ববর্তী সরকারের জোরপূর্বক বন্ধ করে দেওয়া কিছু গণমাধ্যমকে পুনরায় প্রকাশ বা সম্প্রচারের সুযোগ করে দিয়েছে-যা স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে সরকার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও মুক্ত গণমাধ্যমে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
সরকারের সঙ্গে গণমাধ্যমের যোগাযোগ উন্মুক্ত
সীমিত যোগাযোগের অভিযোগের বিপরীতে সাংবাদিকরা অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীদের সঙ্গে সরাসরি ও উন্মুক্তভাবে যোগাযোগের সুযোগ পেয়েছেন। কোনো সাংবাদিককে তার গণমাধ্যম বা সম্পাদকীয় অবস্থানের কারণে সাক্ষাৎকার বা ব্রিফিং থেকে বঞ্চিত করা হয়নি।
আমরা স্বচ্ছতায় বিশ্বাস করি, এবং আমাদের আচরণ সেই বিশ্বাসের প্রতিফলন।
সচিবালয় অ্যাক্রেডিটেশন প্রক্রিয়ায় সংস্কার
অ্যাক্রেডিটেশন ব্যবস্থার সংস্কারের প্রতি নোয়াবের সমালোচনা শুধু ভুলই নয়, বরং ভ্রান্ত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে করা হয়েছে। আগের ব্যবস্থা ছিল মারাত্মকভাবে আপসকৃত, যেখানে অ্যাক্রেডিটেশন এমন অনেক ব্যক্তির হাতে পৌঁছেছিল যাদের বৈধ সাংবাদিকতায় কোনো ভূমিকা ছিল না; তাদের মধ্যে কেউ ছিলেন রাজনীতিবিদ, কেউ তদবিরবাজ, আর কেউ সুযোগসন্ধানী, যারা বিশেষ প্রাধিকার ব্যবহার করে অন্যায্যভাবে নীতিনির্ধারণ প্রভাবিত করত।
‘আমরা সেই কাঠামো ভেঙে দিয়েছি এবং একটি অস্থায়ী পাস ব্যবস্থা চালু করেছি, যাতে প্রকৃত সাংবাদিকদের সচিবালয়ে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করে। এই সংস্কার প্রবেশাধিকার সীমিত করার জন্য নয়, বরং একটি দুর্নীতিগ্রস্ত প্রক্রিয়ার সততা পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য।’
পূর্বের অ্যাক্রেডিটেশন নীতিতে সাংবাদিকদের সরকারপন্থী হতে বাধ্য করার মতো কিছু অপমানজনক ধারা ছিল, যা তাদের সাংবিধানিক অধিকারের পরিপন্থী। অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার সেই ধারাগুলো সংশোধন করেছে।
দীর্ঘমেয়াদী নবায়ন সময়সীমাসহ নতুন অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড ইস্যুর প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলে বিবৃতিতে জানানো হয়।
কর্মসংস্থান সুরক্ষা
যেসব সাংবাদিক চাকরি হারিয়েছেন, তা কোনো সরকারি নির্দেশে নয়; বরং গণমাধ্যম মালিকদের সম্পাদকীয় বা ব্যবসায়িক পুনর্বিন্যাসের সিদ্ধান্তের ফল। এগুলো মূলত অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক হিসাব-নিকাশ, সরকারের কোনো চাপ নয়।
সাংবাদিকদের নিরাপত্তা: যৌথ দায়িত্ব
সরকার দেশের সব নাগরিকের মতো সাংবাদিকদের শারীরিক নিরাপত্তা ও মর্যাদা রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা অগ্রাধিকার, তবে এই দায়িত্ব মিডিয়া প্রতিষ্ঠান, সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে যৌথভাবে ভাগাভাগি হওয়া উচিত।
নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিতে প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে, এ বছরের শুরুর দিকে অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের অধীন মিডিয়া সংস্কার কমিশন একটি নতুন ‘সাংবাদিক সুরক্ষা আইন’ প্রস্তাব করেছে, যা আইনগত সুরক্ষা বৃদ্ধি করবে এবং সরকারি বা নিরাপত্তা বাহিনীর ভয়ে সৃষ্ট আত্মনিয়ন্ত্রণ কমাবে। সরকার প্রস্তাবিত আইন প্রণয়নের কথা বিবেচনা করছে।
শিল্পের অভ্যন্তরীণ আত্মসমালোচনার আহ্বান
গঠনমূলক সমালোচনার প্রতি উন্মুক্ত থাকা সত্ত্বেও সরকারের পরামর্শ হচ্ছে দায়ারোপ করার আগে নোয়াবের উচিত নিজ সংগঠনের ভেতরে নজর দেওয়া। বিশেষ করে সাংবাদিকদের মজুরি বঞ্চনা, শ্রম অধিকার থেকে বঞ্চিতকরণ, পর্যাপ্ত সুরক্ষা ছাড়া প্রতিকূল পরিবেশে কাজ করানো এবং অসহিষ্ণু কর্মপরিবেশের অভিযোগের ক্ষেত্রে নোয়াবের উচিত তাদের নিজস্ব সদস্যদের কর্মকাণ্ড খতিয়ে দেখা ও তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা।
একটি সংবেদনশীল উত্তরণকালে পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসন হিসেবে সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে হস্তক্ষেপহীন নীতি বজায় রেখেছে, যাতে গণমাধ্যম ভয় বা হস্তক্ষেপ ছাড়াই কাজ করতে পারে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আমাদের কাছে কেবল একটি ‘স্লোগান’ নয়; এটি আমাদের জীবনাচরণের নীতি।
নোয়াবের উদ্বেগগুলো যদি বাস্তব তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এবং সঠিক পক্ষকে লক্ষ্য করে করা হতো, তাহলে সেগুলো আরও বেশি গ্রহণযোগ্য হতো। ঘটনাবলির ভুল ব্যাখ্যার ভিত্তিতে সামগ্রিক অভিযোগ গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে এগিয়ে নেয় না; বরং বাংলাদেশের গণমাধ্যম অঙ্গনের প্রকৃত চ্যালেঞ্জগুলো থেকে মনোযোগ সরিয়ে দেয়।
আমরা স্বচ্ছতা, নিরাপত্তা ও স্বাধীনতার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ, এবং এই মৌলিক মূল্যবোধগুলো রক্ষা ও উন্নয়নে সব পক্ষকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানাই।
গত বছর থেকে মত প্রকাশের স্বাধীনতা বা গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার দায়ী—এমন ইঙ্গিতকে তারা ‘দৃঢ় ও দ্ব্যর্থহীনভাবে’ প্রত্যাখান করে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
তিনি বলেন, তারা (সরকার) স্বচ্ছতা, সুরক্ষা ও স্বাধীনতার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। একই সঙ্গে এই মৌলিক মূল্যবোধ সংরক্ষণ ও বৃদ্ধির জন্য সকল অংশীজনদের একসঙ্গে কাজ করার আমন্ত্রণ জানান তারা।
তবে তিনি বলেন, তারা সংবাদপত্র মালিক সমিতির (নোয়াব) সাম্প্রতিক বিবৃতিতে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং তথ্যের সুবিধাপ্রাপ্তির অবস্থা সম্পর্কে উত্থাপিত উদ্বেগকে স্বীকার করেন।
আলম বলেন, দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে অন্তর্বর্তী সরকার কোনো গণমাধ্যম সংস্থার সম্পাদকীয়, পরিচালনাগত বা ব্যবসায়িক দিকগুলোতে হস্তক্ষেপ করেনি।
তিনি নিজের ভ্যারিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ‘রেসপন্স টু নোয়াব: সেটিং দ্য রেকর্ড স্ট্রেইট' শিরোনামে দেওয়া একটি পোস্টে বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে, আমরা ভুল তথ্য এবং রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সম্প্রচারের মুখেও ব্যতিক্রমী সংযম ব্যবহার করেছি।’
প্রেস সচিব বলেন, টেলিভিশন টক শো এবং কলামগুলোতে প্রায়শই এই সরকার সম্পর্কে মিথ্যা এবং উসকানিমূলক দাবি প্রকাশিত হয়েছে।
আলম বলেন, ‘তবুও, আমরা সেন্সর করিনি বা প্রতিশোধও নেইনি। আমরা অভিযোগ করিনি, এমনকি উসকানি দেওয়ার পরেও লাইসেন্স স্থগিত করিনি, বরং অতীতের শাসনামলে জোরপূর্বক বন্ধ করে দেওয়া কিছু গণমাধ্যমের পুনঃপ্রকাশ বা সম্প্রচারে ফিরে আসার পথ প্রশস্ত করেছি।’ আলম বলেন, এটি স্পষ্টতই বাকস্বাধীনতা এবং মুক্ত সংবাদমাধ্যমের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতিকে তুলে ধরে।
সরকারে প্রবেশাধিকার অবাধ রয়েছে
সীমিত প্রবেশাধিকারের অভিযোগের উত্তরে আলম বলেন, সাংবাদিকদের আমাদের উপদেষ্টা এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীদের কাছে উন্মুক্ত ও সরাসরি পৌঁছানোর সুযোগ রয়েছে।
তিনি বলেন, কোনো সাংবাদিককে তাদের আউটলেট বা সম্পাদকীয় অবস্থানের কারণে সাক্ষাৎকার বা ব্রিফিং থেকে বঞ্চিত করা হয়নি। ‘আমরা স্বচ্ছতায় বিশ্বাস করি এবং আমাদের আচরণ তা প্রতিফলিত করে।’
সচিবালয় প্রবেশ প্রক্রিয়ার সংস্কার
সংশোধিত প্রবেশাধিকার ব্যবস্থার সমালোচনা কেবল ভুলভাবে উপস্থাপন করা নয় বরং ভুল তথ্যও, প্রেস সচিব বলেন।
তিনি বলেন, আগের ব্যবস্থাটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। যার ফলে প্রবেশাধিকারপত্রগুলো এমন ব্যক্তিদের হাতে চলে যায়, যাদের কোনো বৈধ সাংবাদিকতার কাজ নেই। তাদের মধ্যে কিছু রাজনীতিবিদ, লবিস্ট এবং সুবিধাবাদী ছিলেন—যারা বিশেষভাবে প্রাপ্ত প্রবেশাধিকার ব্যবহার করে নীতিকে অন্যায়ভাবে প্রভাবিত করেছিলেন।
আলম বলেন, ‘আমরা সেই ভাঙ্গুর কাঠামো ভেঙে দিয়েছি এবং এটিকে একটি অস্থায়ী পাস ব্যবস্থা দিয়ে প্রতিস্থাপন করেছি, যা প্রতিটি প্রকৃত সাংবাদিকের সচিবালয়ে প্রবেশাধিকার অব্যাহত থাকা নিশ্চিত করবে।’
তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘এই সংস্কার প্রবেশাধিকার সীমাবদ্ধ করার জন্য নয়, বরং দুর্নীতিগ্রস্ত প্রক্রিয়ার স্থলে সততা স্থাপন করার জন্য ছিল।’
প্রেস সচিব বলেন, আগের প্রবেশাধিকার নীতিতে স্বীকৃত সাংবাদিকদের সরকারের সুরে গান গাওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, আগের নীতিমালায় সাংবাদিকদের সাংবিধানিক অধিকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিছু অপমানজনক ধারা অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা অন্তর্বর্তী সরকার সংশোধন করেছে।
‘বর্ধিত নবায়ন সময়সীমার সঙ্গে নতুন স্বীকৃতিপত্র দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে,’ উল্লেখ করেন আলম।
চাকরির নিরাপত্তা
আলম বলেন, ‘এটি স্পষ্টভাবে বলা উচিত, যেসব সাংবাদিককে তাদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, তারা সরকারি নির্দেশে নয়। বরং গণমাধ্যম মালিকদের নেওয়া সম্পাদকীয় এবং কৌশলগত করপোরেট পুনর্বিন্যাসের সিদ্ধান্তের ফলে তা করেছেন।’
তিনি উল্লেখ করেন, ‘এগুলো অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো নির্দেশ বা চাপ নয়, অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক এবং ব্যবসায়িক হিসাব-নিকাশের প্রতিফলন ঘটায়।’
সাংবাদিকদের নিরাপত্তা: একটি পারস্পরিক দায়িত্ব
আলম বলেন, তারা সাংবাদিকসহ সকল নাগরিকের শারীরিক নিরাপত্তা এবং মর্যাদার প্রতি সম্পূর্ণরূপে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তিনি বলেন, নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা একটি অগ্রাধিকার। তবে এই দায়িত্ব গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান এবং সরকার ও এর আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে ভাগ করা হয়েছে।
নিরাপদ ও সুরক্ষিত পরিবেশের প্রতি তাদের অব্যাহত প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে আলম বলেন, এই বছরের শুরুতে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন একটি নতুন ‘সাংবাদিক সুরক্ষা আইন’ সহ সংস্কারের প্রস্তাব করেছে, যাতে আইনি সুরক্ষা বৃদ্ধি করা যায় এবং সরকার বা নিরাপত্তা বাহিনীর ভয়ের কারণে সৃষ্ট স্ব-সেন্সরশিপ কমানো যায়।
প্রেস সচিব বলেন, ‘সরকার প্রস্তাবিত আইনটি জারি করার কথা বিবেচনা করছে।’
শিল্পের মধ্যে প্রতিফলনের আহ্বান
আলম বলেন, ‘যদিও আমরা গঠনমূলক সমালোচনার জন্য উন্মুক্ত, তবে আমরা পরামর্শ দিচ্ছি নোয়াব দোষারোপ করার আগে নিজেরাই দেখুক।’
তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘তাদের অবশ্যই তার নিজস্ব সদস্যদের কর্মকাণ্ড যাচাই করতে হবে এবং সাংবাদিকদের উপর নির্যাতনের জন্য তাদের জবাবদিহি করতে হবে। বিশেষ করে যখন মজুরি শোষণ, শ্রম অধিকার অস্বীকার, পর্যাপ্ত সুরক্ষামূলক সরঞ্জাম ছাড়া প্রতিকূল পরিবেশে কাজ করা এবং অসহনীয় কর্মপরিবেশের অভিযোগের ক্ষেত্রে।’
আলম বলেন, একটি সূক্ষ্ম সংকটকালীন সময় তদারকির দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসন হিসেবে তারা গণমাধ্যম যাতে ভয় বা হস্তক্ষেপ ছাড়াই কাজ করতে পারে—তা নিশ্চিত করার জন্য সহযোগিতার হাত বাড়ানো বজায় রেখেছে।
প্রেস সচিব বলেন, ‘মত প্রকাশের স্বাধীনতা আমাদের কাছে কেবল একটি স্লোগান নয়; এটি এমন একটি নীতি, যা আমরা মেনে চলি।’
তিনি বলেন, নোয়াবের উদ্বেগগুলো যদি তথ্যের উপর ভিত্তি করে সঠিক পক্ষগুলোকে লক্ষ্য করে তৈরি করা হয়, তাহলে তা আরও বেশি গুরুত্ব পাবে।
আলম বলেন, ‘ঘটনার ত্রুটিপূর্ণ ব্যাখ্যার ভিত্তিতে করা অভিযোগগুলো সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে এগিয়ে নেয় না, তারা কেবল বাংলাদেশের গণমাধ্যমের বাস্তব চ্যালেঞ্জগুলো থেকে মনোযোগ সরিয়ে দেয়।’
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের নেতৃত্বে গত এক বছরে বন, বন্যপ্রাণী, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং পরিবেশ সংরক্ষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় গৃহীত হয়েছে একের পর এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
বনের জমিতে সরকারি প্রকল্প স্থাপনের পুরোনো সিদ্ধান্ত বাতিলের ধারাবাহিকতায় কক্সবাজারের ৭০০ একর জমি এবং বাফুফের জন্য নির্ধারিত ২০ একর সংরক্ষিত বনভূমি ফিরিয়ে আনা হয়েছে। সোনাদিয়ার ৯ হাজার ৪৬৭ একর জমি ও জাফর আলম ক্যাডেট কলেজের নামে বন্দোবস্ত ১৫৫ দশমিক ৭০ একর জমিও পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। আগস্ট ২০২৪ থেকে জুন ২০২৫ পর্যন্ত ৫ হাজার ০৯৩ একর বনভূমি উদ্ধার করে সেখানে পুনরায় বনায়ন কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে।
চুনতি বন পুনরুদ্ধার প্রকল্পের আওতায় ৩৭ হাজার ১৮২ একর জমি থেকে আকাশমনি গাছ সরিয়ে প্রাকৃতিক বন ফিরিয়ে আনার কাজ শুরু হয়েছে। মধুপুর ও শেরপুরেও আকাশমনি গাছ সরিয়ে বনকে প্রাকৃতিক পরিবেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, যাতে হাতির করিডোর পুনরায় কার্যকর হয়।
বিলুপ্ত প্রজাতির দেশি ময়ূর ফিরিয়ে আনাসহ সাম্বার, কালোমুখ প্যারা পাখি, উল্লুক ও হাতির সুরক্ষায় নেওয়া হয়েছে সফল উদ্যোগ। মানুষের সাথে হাতি ও অন্যান্য বন্যপ্রাণীর দ্বন্দ্ব নিরসনে ১৫৯টি ইআরটি টিম গঠন ও জনসচেতনতা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। মৌলভীবাজারের লাঠিটিলা সাফারি পার্ক প্রকল্প বাতিল এবং ক্যাপটিভ হাতি সংরক্ষণের অভয়ারণ্য গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
রাজশাহীর বিল জোয়ানা ও বিল ভেলাসহ কয়েকটি জলাভূমিকে অভয়ারণ্য ঘোষণা এবং অন্যান্য এলাকায় জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের উদ্যোগ চলমান রয়েছে। বন্যপ্রাণী আইন সংশোধন ও ট্রাস্ট গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ওয়াইল্ড লাইফ ক্রাইম কন্ট্রোল ইউনিট ২৯৩টি অভিযান চালিয়ে ৫ হাজার ৬৮৪টি প্রাণি উদ্ধার করেছে। সাফারি পার্ক থেকে চুরি হওয়া লেমুরও উদ্ধার করা হয়েছে। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বন্যপ্রাণী ও বৃক্ষ নিধনের অপরাধে কারাদণ্ড কার্যকর হয়েছে।
জনদাবির পরিপ্রেক্ষিতে ইউক্যালিপটাস ও একাশিয়া গাছের চারা উৎপাদন, বিপণন, রোপণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং নার্সারির এসব গাছ ধ্বংস করা হয়েছে। পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধিতে 'গাছ থেকে পেরেক তুলে ফেলা' কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে এবং দেশে প্রথমবারের মতো নেচার লার্নিং সেন্টার স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তরুণ প্রজন্মকে যুক্ত করে বন, বন্যপ্রাণী ও শব্দদূষণ রোধে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। জাতীয় উদ্যান, ইকোপার্ক ও উদ্ভিদ উদ্যানে প্লাস্টিক ও বনভোজন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পূর্বাচলের ১৪৪ একরকে বিশেষ জীববৈচিত্র্য এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে।
পরিবেশ ও জলবায়ু সংরক্ষণে নেওয়া উদ্যোগসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, ঢাকার শপিংমলসমূহে নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ করা এবং কাঁচাবাজারে অভিযান জোরদার করা। বিকল্প হিসেবে পাটের ব্যাগ সহজলভ্য করতে পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয়ে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে ‘ন্যাশনাল এয়ার কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান’ প্রণয়ন ও ৮৩০টি অবৈধ ইটভাটা ভেঙে ফেলা হয়েছে। ১৮টি অবৈধ সীসা কারখানা বন্ধ এবং ঢাকার সাভার-আশুলিয়াকে ডিগ্রেডেড এয়ারশেড হিসেবে ঘোষণা চূড়ান্ত করা হয়েছে। বিআরটিএ’র সহায়তায় পুরনো ও ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করা হয়েছে।
শব্দদূষণ রোধে তরুণদের সম্পৃক্ত করে ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা হয়েছে। গাজীপুরে গাছা খাল দূষণের অভিযোগে ৯টি কোম্পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও সকল পলিথিন কারখানা বন্ধ করা হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের জন্য BEST প্রকল্পের আওতায় নতুন কার্যক্রম অনুমোদনসহ ৩৭টি ভবন নির্মাণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ১৬টি জেলা থেকে পাহাড়ের দাগ-খতিয়ান সংগ্রহ করে অনলাইনে তালিকাভুক্ত করার কাজ চলছে। জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে ৩৫১ কোটি টাকার ৪১টি প্রকল্প অনুমোদন এবং ‘বাংলাদেশ ক্লাইমেট ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ’ চূড়ান্ত করা হয়েছে। পরিবেশ ও বন রক্ষায় ৮টি আইন, বিধিমালা ও নির্দেশিকা চূড়ান্ত করার কাজ চলমান রয়েছে।
উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের পরিবেশ সুরক্ষা, বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ এবং জলবায়ু অভিযোজন প্রক্রিয়ায় চলমান অগ্রযাত্রায় সকল নাগরিকের অংশগ্রহণ প্রয়োজন।
ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ বাহারুল আলম, বিপিএম এর সঙ্গে জাতিসংঘের বাংলাদেশ বিষয়ক নিরাপত্তা উপদেষ্টা মিজ. টেস বি. ব্রেসনান (Ms.Tess B. Bresnan) সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন।
আজ বৃহস্পতিবার (০৭ আগস্ট) সকালে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে এ সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়। সাক্ষাতকালে মিজ. ব্রেসনান বাংলাদেশে অবস্থানরত জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা ও সহযোগী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে বাংলাদেশ পুলিশের পেশাদারত্ব ও সহযোগিতায় সন্তোষ প্রকাশ করেন।
সাক্ষাতকালে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদারকরণ সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।
এ সময় আইজিপি বলেন, বাংলাদেশে কর্মরত জাতিসংঘ ও অন্যান্য বিদেশি সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে পুলিশ সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কাজ করছে এবং ভবিষ্যতেও এ সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের ডিআইজি (অপারেশনস) মোঃ রেজাউল করিমসহ ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাগণ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ হচ্ছে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেয়া। এর মধ্যে সংস্কার এবং বিচারও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এজন্য প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট সকলকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
প্রেস সচিব আরো বলেন, গত ৫ আগস্ট এর পরে বর্তমান অন্তবর্তী সরকারের দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু হয়েছে। এই দ্বিতীয় অধ্যায়ের আজ ছিল উপদেষ্টা পরিষদের প্রথম সভা। প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। সভায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈঠকে ট্যারিফ কমানোর জন্য বাণিজ্য উপদেষ্টা এবং গত এক মাস জুলাই অভ্যুত্থানের ওপর বিভিন্ন কর্মসূচি সুচারুরূপে বাস্তবায়নের জন্য সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানানো হয়।
প্রেস সচিব বলেন, নির্বাচনের দিনক্ষণ নির্ধারণ করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে গতকাল নির্বাচন কমিশনকে আনুষ্ঠানিক পত্র দেয়ার মাধ্যমে নির্বাচনের কার্যক্রম শুরু হল। এখন নির্বাচন কমিশন দিনক্ষণ ঠিক করবে। একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান বিষয়ে তারা তাদের সমস্ত কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
তিনি বলেন, আসন্ন নির্বাচনে পুলিশের পাশাপাশি আনসার বিডিআর এবং আর্মিকে কিভাবে আরো বেশি করে সংযুক্ত করা যায় সেটাও সরকার আন্তরিকভাবে বিবেচনা করছে।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের পতনকালে গত বছর আমাদের খাদ্যের মজুদ ছিল ১৮ লাখ টন। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরে এই মজুদ দাঁড়িয়েছে ২১ লাখ টনে। এছাড়া আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিও স্বাভাবিক ছিল গত এক বছরে। বর্তমান অন্তবর্তী সরকার সাতটি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। সেই কমিশনের প্রস্তাব মতে ১২১ টি প্রস্তাবের মধ্যে ১৬ টি ইতোমধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে। ৮৫টি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় আছে। বাকি ১০ টি আদৌ বাস্তবায়নযোগ্য কি না সেটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে।
প্রেস সচিব বলেন, গাজীপুর ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির নাম পরিবর্তন নিয়ে একটি দাবি ছিল দীর্ঘদিনের। আজকের উপদেষ্টা পরিষদের সভায় গাজীপুর ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির নাম পরিবর্তন করে গাজীপুর ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি ইউনিভার্সিটি নামকরণের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেক ভালো উল্লেখ করে তিনি বলেন, পুলিশ আগের চেয়ে অনেক একটিভ হয়েছে এবং যেহেতু একটি অন্তর্বর্তী সরকার চলছে সেজন্য আর্মিকে ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দেওয়া হয়েছে। চার বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে, ফরেন রিজার্ভ বেড়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা চাই ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতেই তার বিচার কাজ সম্পন্ন হোক। আমাদের বৈদেশিক উপদেষ্টাও বলেছেন তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। বিবিসি এবং আলজাজিরার অনুসন্ধানী রিপোর্ট উল্লেখ করে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা প্রটেষ্টরদের (আন্দোলনকারীদের) গুলি করে মারার বিষয় কিভাবে নির্দেশ দিয়েছে আপনারা সেই রিপোর্টগুলোতে দেখেছেন। সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতেই শেখ হাসিনার বিচার করা হবে।
প্রেস সচিব বলেন, নির্বাচনের পাশাপাশি সংস্কার এবং বিচারও সরকারের অগ্রাধিকার কাজের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে রয়েছে। তিনি বলেন, আগের জাতীয় নির্বাচনগুলোতে আমরা দেখেছি ৮ লাখের মতো ফোর্স মোতায়েন ছিল। এবার জাতীয় নির্বাচনে আরও ৪০ থেকে ৫০ হাজার বেশি ফোর্স মোতায়েন করা যায় কি না এবং আর্মি আরও ৬০ হাজার মোতায়েন করা যায় কি না তা সরকার গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে।
তিনি আরো বলেন, ২০২৪ সালের ৮ই আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের ৩১ জুলাই পর্যন্ত বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ৩১৫ টি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে ২৪৭ টির বাস্তবায়ন হয়েছে। যা শতকরা প্রায় ৭৮ দশমিক ৪১ শতাংশ। এবং এটি গত ৫০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। স্বাধীনতার পরের কোন সরকারের জন্য এটি রেকর্ড।
জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপি এবং জামায়াতে ইসলামীর লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বিষয়ে একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, নির্বাচন ঘনিয়ে আসলে কারো কোন অভিযোগ থাকবে না।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) সাবেক উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (০৭ আগস্ট ) ভোরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) তাঁকে গ্রেপ্তার করে।
চলতি বছরের ১৮ জুন জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
জানা গেছে, সাবেক ভিসি নাজমুল হাসান কলিমুল্লাহকে দুদকের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে পিকআপ ভ্যান ও মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়েছে। এতে তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও একজন।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে উপজেলার বিলাসপুর বটতলা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
ধনবাড়ী থানার ডিউটি অফিসার ফরিদ শেখ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নিহতরা হলেন- জামালপুর জেলার মেলানদহ উপজেলার চর গ্রামের আলামিন (৩০), চরপালিশা গ্রামের স্বপন মিয়া (৩৫) ও সদর উপজেলার হাসিল মানিকাবাড়ী গ্রামের জুয়েল রানা (৩২)।
আহত ব্যক্তির নাম মো. সানী (১৮)। তিনি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার পাণ্ডা গ্রামের সাইদুল ইসলামের ছেলে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী জানান, আজ সকালে জামালপুরগামী পিকআপ ভ্যান ধনবাড়ী উপজেলার বিলাশপুর বটতলা এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা মোটরসাইকেলের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই পিকআপচালক ও মোটরসাইকেলের এক আরোহী নিহত হন। গুরুতর আহত দু’জনকে হাসপাতালে নিলে সেখানে আরও একজন মারা যান।
যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ সংস্থা নাসা ২০৩০ সালের মধ্যে চাঁদে একটি পারমাণবিক চুল্লি স্থাপনের পরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়নের পথে রয়েছে বলে জানিয়েছে মার্কিন গণমাধ্যম। এটি চাঁদের পৃষ্ঠে মানুষের স্থায়ী বসবাস নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টার অংশ।
পলিটিকোর এক প্রতিবেদনের জানানো হয়েছে, নাসার ভারপ্রাপ্ত প্রধান চীন ও রাশিয়ার একই ধরনের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘ওই দুদেশ সম্ভবত চাঁদে একটি কিপ-আউট জোন ঘোষণা করতে পারে।’
কিন্তু নাসার সাম্প্রতিক ও তীব্র বাজেট হ্রাসের পরিপ্রেক্ষিতে লক্ষ্য ও সময়সীমা কতটা বাস্তবসম্মত, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে এবং কিছু বিজ্ঞানী উদ্বিগ্ন যে পরিকল্পনাগুলো ভূরাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত।
যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া, ভারত, জাপানসহ দেশগুলো চাঁদের পৃষ্ঠ অন্বেষণের জন্য তাড়াহুড়া করছে। কিছু দেশ স্থায়ী মানব বসতি স্থাপনের পরিকল্পনাও করছে।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক আস্থাভাজন হিসেবে নাসার সাময়িক প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হওয়া মার্কিন পরিবহন সচিব শন ডাফি নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন, ‘ভবিষ্যতের চন্দ্র অর্থনীতি, মঙ্গল গ্রহে উচ্চ শক্তি উৎপাদন এবং মহাকাশে আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য এ গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিকে সঠিকভাবে এগিয়ে নিতে সংস্থাটির দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া অপরিহার্য।’
তিনি বাণিজ্যিক কোম্পানিগুলোকে কমপক্ষে ১০০ কিলোওয়াট শক্তি উৎপাদনে সক্ষম চুল্লি বানানোর প্রস্তাব জমা দেওয়ার আহ্বান জানান।
এটি তুলনামূলকভাবে ছোট আকৃতির। একটি সাধারণ অফশোর উইন্ড টারবাইন ২-৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে।
চাঁদে শক্তির উৎস হিসেবে পারমাণবিক চুল্লি তৈরি করার ধারণা নতুন নয়। ২০২২ সালে নাসা কোম্পানিগুলোকে ডিজাইনের জন্য তিনটি ৫ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি প্রদান করেছিল।
চলতি বছরের মে মাসে, চীন ও রাশিয়া ঘোষণা করেছিল, তারা ২০৩৫ সালের মধ্যে চাঁদে একটি স্বয়ংক্রিয় পারমাণবিক শক্তি কেন্দ্র গড়ার পরিকল্পনা করছে।
অনেকে বিজ্ঞানীর মতে, এটি চন্দ্র পৃষ্ঠে নিরবচ্ছিন্ন শক্তি সরবরাহের শ্রেষ্ঠ বা একমাত্র উপায় হতে পারে। একটি চন্দ্র দিন পৃথিবীতে চার সপ্তাহের সমান, যার মধ্যে দুই সপ্তাহ অবিরাম রৌদ্র ও দুই সপ্তাহ অন্ধকার থাকে। এটি সৌরশক্তির ওপর নির্ভরশীলতাকে অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং করে তোলে।
বিশ্ববিদ্যালয় অব সারের মহাকাশ প্রযুক্তি, অনুসন্ধান ও যন্ত্রপাতি বিভাগের সিনিয়র লেকচারার ড. সঙ্গউ লিম বলেন, ‘চাঁদে একটি ছোট আবাসস্থল তৈরি করতেও মেগাওয়াট-স্তরের শক্তি প্রয়োজন।
শুধু সৌর-প্যানেল ও ব্যাটারিতে তা নির্ভরযোগ্যভাবে পূরণ করা সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে পারমাণবিক শক্তি কেবল কাম্য নয়, অপরিহার্য।’
ল্যাংকাস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের পৃথিবী ও গ্রহীয় বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক লিওনেল উইলসন মনে করেন, পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ হলে ২০৩০ সালের মধ্যে চাঁদে চুল্লি স্থাপন করা প্রযুক্তিগতভাবে সম্ভব এবং ইতোমধ্যে ছোট চুল্লির জন্য ডিজাইনও রয়েছে।
কিন্তু এ বিষয়ে নিরাপত্তাসংক্রান্ত কিছু প্রশ্নও রয়েছে। ওপেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রহবিজ্ঞান বিশেষজ্ঞ ড. সিমিপন বারবের বলেন, ‘পরমাণু পদার্থ পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের মাধ্যমে উৎক্ষেপণে নিরাপত্তা উদ্বেগ রয়েছে। এর জন্য বিশেষ অনুমোদন প্রয়োজন হয়, তবে এটি অতিক্রমযোগ্য।’
২০২৬ সালে ট্রাম্প প্রশাসন নাসার বাজেটে ২৪ শতাংশ হ্রাসের ঘোষণা দেওয়ায় নাসায় সাম্প্রতিক অস্থিরতার পর ডাফির এ নির্দেশ অবাক করার মতো। এর মধ্যে গ্রহের পৃষ্ঠ থেকে পৃথিবীতে নমুনা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে মার্স স্যাম্পল রিটার্নের মতো উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিজ্ঞান কর্মসূচিতে কাটছাঁট অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
বিজ্ঞানীরা এই ঘোষণা ভূরাজনৈতিক উদ্দেশ্য দ্বারা অনুপ্রাণিত কি না, সে বিষয়ে উদ্বিগ্ন। বারবের বলেন, ‘এটি যেন পুরোনো মহাকাশ প্রতিযোগিতার দিনের মতো ফিরে আসছে, যা বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে কিছুটা হতাশাজনক ও উদ্বেগজনক। প্রতিযোগিতা উদ্ভাবন এনে দিতে পারে, কিন্তু যদি জাতীয় স্বার্থে সীমাবদ্ধ হয়ে যায় এবং অধিকার প্রতিষ্ঠার ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়, তাহলে বৈশ্বিক পরিভ্রমণ ও সৌরজগৎ অন্বেষণের বৃহত্তর চিত্র থেকে চোখ সরিয়ে নেওয়া হতে পারে।’
চাঁদে চীন ও রাশিয়ার একটি ‘কিপ-আউট জোন ঘোষণা’ করার সম্ভাবনা সম্পর্কে ডাফির মন্তব্য আর্টেমিস চুক্তি নামক একটি চুক্তির দিকে ইঙ্গিত করে বলে মনে হচ্ছে। ২০২০ সালে সাতটি দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত এ চুক্তি নির্ধারণ করে, কীভাবে দেশগুলো চাঁদে সম্মিলিতভাবে কাজ করবে।
এ চুক্তি অনুযায়ী ‘সেফটি জোন’ স্থাপনের ধারা রয়েছে, যেখানে দেশগুলো তাদের সম্পদ ও কার্যক্রমের চারপাশে এক ধরনের নিরাপত্তা এলাকা নির্ধারণ করতে পারে।
বারবের ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘আপনি যদি চাঁদে পারমাণবিক চুল্লি বা কোনো ধরনের ভিত্তি তৈরি করেন, তাহলে আপনি তার আশপাশে একটি সেফটি জোন দাবি করতে পারেন- কারণ সেখানে আপনার যন্ত্রপাতি থাকবে।’
বারবের উল্লেখ করেছেন, মানুষের ব্যবহারের জন্য চাঁদে পারমাণবিক চুল্লি স্থাপনের আগে অনেক বাধা অতিক্রম করতে হবে।
নাসার আর্টেমিস ৩-এর লক্ষ্য ২০২৭ সালে চাঁদের পৃষ্ঠে মানুষ পাঠানো, কিন্তু তহবিল নিয়ে এটি একাধিক বাধা ও অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হয়েছে।
বারবের আরও বলেন, ‘আপনার কাছে শক্তি থাকল, কিন্তু মানুষ ও সরঞ্জাম সেখানে নিয়ে যাওয়া যাবে না, তাহলে তাতে লাভ কী? বর্তমানে পরিকল্পনাগুলো খুব সংহত মনে হচ্ছে না।’
রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের পদমর্যাদাক্রম (ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স) নিয়ে রিভিউয়ের রায় আজ ঘোষণা করা হবে। আপিলের রায়ের বিরুদ্ধে করা রিভিউ শুনানি শেষে গত ৩০ জুলাই জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির আপিল বিভাগ বেঞ্চ রায়ের জন্য ৬ আগস্ট দিন ধার্য করেন। তবে গতকাল বুধবার সর্বোচ্চ আদালত রায়ের জন্য ৭ আগস্ট দিন ধার্য করে আদেশ দেন।
আদালতে রিভিউ আবেদনকারী মন্ত্রিপরিষদ সচিবের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার সালাহ উদ্দিন দোলন। বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের রিভিউ আবেদনের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার নিহাদ কবির ও অ্যাডভোকেট প্রবীর নিয়োগী। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলদের আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী আহসানুল করিম ও ব্যারিস্টার এম. আবদুল কাইয়ূম। এছাড়া ইন্টারভেনর হিসেবে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুস (কাজল)।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ‘রুলস অব বিজনেস’ অনুযায়ী ১৯৮৬ সালে ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স তৈরি করে। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর ওই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর তা জারি করা হয়। পরে বিভিন্ন সময়ে এটি সংশোধন করা হয়। তবে ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স তৈরির ক্ষেত্রে সাংবিধানিক পদ ও সংবিধান কর্তৃক স্বীকৃত ও সংজ্ঞায়িত পদগুলো প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নিচে রাখা হয়েছে- এ অভিযোগ এনে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক মহাসচিব মো. আতাউর রহমান ২০০৬ সালে হাইকোর্টে রিট করেন।
২০১০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট আট দফা নির্দেশনাসহ ১৯৮৬ সালের (সংশোধিত) ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সকে অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ২০১১ সালে আপিল করে। সে আপিলের শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১১ জানুয়ারি রায় দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
সেই রায়ে হাইকোর্টের দেওয়া আট দফা নির্দেশনার কিছুটা সংশোধন করে তিন দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়। সেগুলো হলো- যেহেতু সংবিধান দেশের সর্বোচ্চ আইন, তাই বিরোধপূর্ণ প্রিসিডেন্সে সাংবিধানিক পদধারীরা অগ্রাধিকার পাবেন; জুডিশিয়াল সার্ভিসের সদস্য হিসেবে জেলা জজ ও সমপদমর্যাদাসম্পন্নরা সরকারের সচিবদের সঙ্গে ১৬ নম্বরে অবস্থান করবেন এবং জেলা জজদের পরেই অতিরিক্ত সচিবরা ১৭ নম্বর ক্রমিকে থাকবেন।
একপর্যায়ে আপিল বিভাগের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন করে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। পরবর্তীতে রিভিউ আবেদনে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলরাও পক্ষভুক্ত হন।
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, নির্বাচনের জন্য যত টাকা লাগবে, তা দেওয়া হবে। এ নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। নির্বাচনের বাজেট নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আজ অর্থ উপদেষ্টা সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। গতকাল বুধবার সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি ও অর্থনৈতিক বিষয়- সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
গত মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে ভাষণে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাব্য সময় জানান। ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন করতে চায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
প্রসঙ্গত, নির্বাচনকে সামনে রেখে চলতি অর্থবছরের বাজেটে নির্বাচন কমিশনের জন্য ২ হাজার ৯৫৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা গত অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা বেশি।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরেকটু কমলে ভালো হতো বলে মন্তব্য করেছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘ওরা (যুক্তরাষ্ট্র) যেটা করেছে মোটামুটি। স্বস্তির জায়গা বলব না। এমনিতেই বিশ্ব অনেক চ্যালেঞ্জে। তবে অন্য দেশের সঙ্গে তুলনা করলে বাংলাদেশ খুব খারাপ অবস্থানে নেই।’
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘যেটা হয়েছে, আমাদের পোশাক ও নিট পোশাক খাত তাড়াতাড়ি সমন্বয় করে ফেলতে পারবে। বস্ত্র খাতের বোনায় (উইভিং) একটু সমস্যার মধ্যে পড়তে পারে।’
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আবার দর-কষাকষিতে যাওয়া হবে কি না, জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘হ্যাঁ। ইউএস চেম্বারের ভাইস প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলেছি। বাংলাদেশের বিষয়ে তাদের মনোভাব খুবই ভালো। শেভরন ও মেটলাইফের অর্থ দিয়ে দেওয়ার কারণে বলেছে, তোমরা তো টাকা আটকে রাখো না।’
চুক্তি এখনো সই হয়নি জানিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘একটা আনুষ্ঠানিক চুক্তি সই হবে। কোন কোন জায়গায় আমাদের শুল্ক কমাতে হবে, কী কী আমদানি করতে হবে, তা দেখতে হবে। তিনি আরও বলেন, যখন উভয় পক্ষের নিবিড় (ওয়ান টু ওয়ান) দর-কষাকষি হয়, অনেক কথা বলা হয় না। এটা বহুপক্ষীয় দর-কষাকষি না। এটা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) নয়, জাতিসংঘ নয়, যে সবাই জানবেন। তা ছাড়া ভিয়েতনাম আমার প্রতিদ্বন্দ্বী। আবার চীন, উত্তর কোরিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, পাকিস্তান সবাই আছে। কিছু জিনিস আছে বলা যায় না।’
এক বছরে খাদের কিনারা থেকে দেশের অর্থনীতি অনেকটাই ওপরে ওঠে এসেছে বলেও মন্তব্য করেন অর্থ উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘এটা দেখার জন্য দৃষ্টি ও অন্তর্দৃষ্টি লাগে। ভাসা-ভাসা দেখলাম, ভাসা-ভাসা বলে দিলাম, তা না। অনেক কিছুই হয়েছে।’
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, মূল্যস্ফীতি, কর্মসংস্থান, জ্বালানি, শুল্কসহ অনেক চ্যালেঞ্জ আছে সামনে। বড় চ্যালেঞ্জ ব্যবসায়ীদের আস্থা আনা এবং ধীরগতির ব্যবসা-বাণিজ্যে আরও গতি সঞ্চার করা।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘এটা একটু স্বস্তির জায়গায় আসছে। একটু সময় লাগবে। মূল্যস্ফীতি এমন না যে ঘোড়ার রাশ ধরে টেনে দিলাম।’
সংস্কারের বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘কিছু জিনিস আমরা করে ফেলেছি। কতগুলো আছে মধ্যমেয়াদে ও দীর্ঘমেয়াদে করা হবে। যেমন ব্যাংক রেজল্যুশন। একটু সময় লাগবে। বাংলাদেশ ব্যাংক একটা পথনকশা করছে। পুঁজিবাজার মোটামুটি চেষ্টা করছে। এনবিআরের অধ্যাদেশ কিছুটা সংশোধন করা হবে।’
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, এ বছর যারা চামড়া সংরক্ষণ করেছে, তারা পরবর্তিতে ভালো দাম পেয়েছেন। যে কারণে এবার যারা চামড়া সংরক্ষণ করেন নাই, আর যারা করেছেন, তাদের মধ্যে একটি সুনিদৃষ্ট পার্থক্য তৈরী হয়েছে। ফলে আমি মনে করি, এবারের মতো আগামি বছরও সরকার চামড়া সংরক্ষনে সহযোগিতা করলে মানুষ অনেক বেশি অংশগ্রহণ করবে।
আজ বুধবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে কোরবানি সম্পর্কিত বিষয়াদির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণ কমিটির তৃতীয় সভায় এসব কথা বলেন উপদেষ্টা।
বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বাণিজ্য উপদেষ্টা। এছাড়াও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার এবং শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান সভায় উপস্থিত ছিলেন। পাশাপাশি বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান, শিল্প সচিব মো. ওবায়দুর রহমান, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মোঃ আবু সুফিয়ান প্রমুখ বৈঠকে অংশনেন।
বৈঠকে জানানো হয়, গত ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষ্যে অভ্যন্তরীণ বাজারে বিপুল পরিমাণ কাঁচা চামড়া সংগৃহীত হয়েছিল। এ বছর ৯১ লাখ ৩৬ হাজার ৭৩৪ সংখ্যক পশু কোরবানি হয়েছে। এর মধ্যে মাদ্রাসা, এতিমখানা, লিল্লাহ বোর্ডিং এবং স্থানীয় ট্যানার্স কর্তৃক ৬০ লাখ ৪৫ হাজার ২২০টি চামড়া সংরক্ষণ হয়েছে।
এরমধ্যে মাদ্রাসা, এতিমখানা ও লিল্লাহ বোডিংয়ে সরক্ষন হয়েছে ১৭ লাখ ৬১ হাজার ৫১টি চামড়া। সবচেয়ে বেশি সংরক্ষন হয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগে, ১৫ লাখ ৪৮ হাজার পিস। এরপর ঢাকায় ১৪ লাখ ৯ হাজার, রাজশাহী ১৩ লাখ ৯০ হাজার চামড়া সংরক্ষন করা হয়েছিল।
এদিকে বৈঠকে এ বছর কোরবানির চামড়া ব্যবস্থাপনা কিছু চ্যালেঞ্জ তুলে ধরা হয়। সেগুলো হলো, কোরবানি পশুর হাট ব্যবস্থাপনা; অনুনমোদিত হাট অপসারণ এবং বিক্রিত পশুর হাসিল আদায়ের হার; কোরবানিদাতা এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী পর্যায়ে চামড়ার ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতকরণ; এলাকাভিত্তিক পশু কোরবানির জন্য নিদিষ্ট স্থান/ অবকাঠামো অনুপস্থিতি; চামড়া সংরক্ষণের সাথে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের যথাযথ জ্ঞান না থাকা; কোরবানির বর্জ্যের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা; বিদ্যমান ট্যানারিসমূহের সক্ষমতা ও কমপ্লায়েন্স ইস্যু; কোরবানির চামড়া সংগ্রহ ও সংরক্ষণ বিষয়ক কোন বিদ্যমান নীতিমালা নেই এবং ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ জেলায় কাঁচা চামড়া সংরক্ষণের স্থায়ী অবকাঠামোর অভাব।
বৈঠকে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আগামি কোরবানী ঈদের জন্য কিছু সুপারিশ করে কমিটি। সেগুলো হলো:
ক) কোরবানি পশুর হাট দক্ষভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগ কোরবানি পশুর হাট ব্যবস্থাপনা নীতিমালা প্রণয়ন করতে পারে;
খ) কোরবানির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা জন্য একটি STANDARD OPERATING PROCEDURE (SOP) প্রণয়ন করা যেতে পারে এবং তা অনুসরণের জন্য সকল সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা ও অন্যান্য স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্দেশনা প্রদান করা যেতে পারে;
গ) কোরবানি পশুর চামড়া সংগ্রহ, সংরক্ষণ, পরিবহন ও সার্বিক ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রতিষ্ঠানিক সক্ষমতা তৈরি করতে হবে;
ঘ) মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে গবাদি পশুর লাম্পি স্কিন ডিজিজ এবং অন্যান্য যে কোন রোগবালাই দমনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানানো যেতে পারে;
৬) জেলা অনুযায়ী স্থায়ী ও মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ী ও পশু জবাইকারীদের (কসাই) একটি ডাটাবেজ তৈরী করা যেতে পারে এবং তাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে;
চ) সিইটিপি/ইটিপিসমূহকে কোরবানির সময় উৎপাদিত বিপুল পরিমাণ চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের উপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে।
ছ) চামড়া সংরক্ষণকারী/ ব্যবসায়ীদের চাহিদা অনুযায়ী ঢাকার অদুরে চামড়া সংরক্ষণের জন্য একটি জায়গা বরাদ্দ প্রদান এবং প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরি করা যেতে পারে।
সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেছেন, সমাজকল্যাণমূলক প্রতিটি সেবা কার্যক্রম এমনভাবে পরিচালনা করতে হবে, যাতে সাধারণ মানুষ সহজেই সেই সেবার সুবিধা পায়। শহরের পাশাপাশি প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রতিটি মানুষ যেন তাদের প্রয়োজনীয় সেবা পান সেই লক্ষ্য নিয়েই আমাদের কাজ করতে হবে।
তিনি আজ ময়মনসিংহ জেলা সমাজসেবা কমপ্লেক্সের সম্মেলন কক্ষে ময়মনসিংহ বিভাগীয় সমাজসেবা কার্যালয় আয়োজিত সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়াধীন ময়মনসিংহ বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন।
মতবিনিময় সভায় ময়মনসিংহ বিভাগীয় সমাজসেবা কার্যালয়ের পরিচালক মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা, জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক রাজু আহমেদ, ময়মনসিংহ জেলা সমাজসেবা কার্যালয় এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক অধিদপ্তরের বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
উপদেষ্টা বলেন, সেবা প্রদানে জটিলতা বা বিলম্ব নয়, বরং মানুষের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দেওয়া আমাদের অঙ্গীকার। সেবা একটি পবিত্র কাজ, জনগণের জন্য কাজ করাকে যদি আমরা ইবাদতের অংশ হিসেবে দেখি, তাহলে আমাদের কাজের মান ও আন্তরিকতা আরও বৃদ্ধি পাবে।
উপদেষ্টা আরো বলেন, আমরা ইউনিয়ন পর্যায়ে সমাজকল্যাণমূলক সেবা কার্যক্রমকে শক্তিশালী করতে চাই। তাই ইউনিয়ন লেভেলে সমাজসেবা কার্যক্রম, নারীর ক্ষমতায়ন, শিশু সুরক্ষা ও কল্যাণমূলক কার্যক্রমকে আরও সক্রিয় ও শক্তিশালী করে তুলতে হবে। সারাদেশের ন্যায় ময়মনসিংহের পশ্চাৎপদ অসচ্ছল মানুষ এবং নারীরাও যাতে সমান সুযোগ পায় সেদিকে আমাদের লক্ষ্য থাকবে। তাই ময়মনসিংহ সমাজসেবা বিভাগ, মহিলা ও শিশু বিষয়ক অধিদপ্তরের কার্যক্রমকে আরো গতিশীল করার আহ্বান জানান তিনি।
সভা শেষে প্রধান অতিথি শহর সমাজসেবা কার্যালয়ের অধীন সমন্বয় পরিষদ কর্তৃক পরিচালিত দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের আওতাধীন তৃণমূল পর্যায়ের অসহায় প্রশিক্ষণ গ্রহীতা নারীদের মাঝে সেলাই মেশিন বিতরণ করেন।