নেপাল থেকে ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ আনতে সম্মতি দিয়েছে নয়াদিল্লি। নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্পকমল দহল প্রচন্ড ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে আলোচনায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বাংলাদেশে বিদ্যুৎ আনতে ভারতের সঞ্চালন লাইন ব্যবহার করা হবে। গত বৃহস্পতিবার ভারত ও নেপালের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের এই খবর প্রকাশ করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।
নেপাল থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করতে চুক্তি করেছে বাংলাদেশ। এই কেন্দ্রটি ভারতের মালিকানাধীন। ভারতের বিদ্যুৎ নীতিমালা অনুযায়ী, দেশটির ভেতর দিয়ে তৃতীয় আরেক দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলে যে কেন্দ্রটি থেকে বিদ্যুৎ আসবে সেটির অন্তত ৫০ শতাংশ মালিকানা ভারতের থাকতে হবে। ফলে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি নিয়ে ভারতের বাধা নেই। কিন্তু বাধ সাধে গত বছর নেপাল বাংলাদেশকে জরুরি ভিত্তিতে তখনই ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দিতে চাইলে। নেপালের বিদ্যুৎ ভারতের মাটি ব্যবহার করে বাংলাদেশকে দিতে চায়নি দেশটি। মোদি-প্রচন্ড বৈঠকে নেপাল থেকে ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ভারতের সঞ্চালন লাইন ব্যবহার করে বাংলাদেশকে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার ফলে বিদ্যুৎ আমদানির বাধা কাটল বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের খবরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, ‘গত বছর আমরা বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতার জন্য একটি ল্যান্ডমার্ক ভিশন ডকুমেন্ট গ্রহণ করেছি। একেই এগিয়ে নিয়ে আজ ভারত ও নেপালের মধ্যে একটি দীর্ঘমেয়াদি বিদ্যুৎ বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হলো।’
এর আগে গত ১৫-১৬ মে ঢাকায় জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ এবং জয়েন্ট স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকে ভারতকে বিদ্যুৎ বাণিজ্যসংক্রান্ত ত্রিদেশীয় চুক্তিতে নেয়ার বিষয়ে আলোচনা করে বাংলাদেশ ও নেপাল।
নেপালের বিদ্যুৎ ভারত হয়ে বাংলাদেশে আসার ক্ষেত্রে প্রস্তাবিত দুটি রুট ধরা হয়েছে। একটি হলো নেপালের আনামারি থেকে বাংলাদেশের পঞ্চগড়। এই সঞ্চালন লাইনের দৈর্ঘ্য ৪৯ কিলোমিটার। এই ট্রান্সমিশন লাইনটি নির্মাণ করতে হলে এর জন্য ২৪ কিলোমিটার ভারতীয় ভূখণ্ড ব্যবহার করতে হবে।
দ্বিতীয়টি হলো আনামারি থেকে বাংলাদেশের ঠাকুরগাঁও। এই সঞ্চালন লাইনের দূরত্ব হবে ৮৩ কিলোমিটার। এই রুটে ভারতের ভূখণ্ডের ৩৩ কিলোমিটার ব্যবহার করতে হবে।
ভারতীয় কোম্পানি জিএমআর নেপালে ৯০০ মেগাওয়াট উৎপাদনক্ষমতাসম্পন্ন আপার কার্নালি জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে কাজ করছে। এই কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশ ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আনতে ২০১৯ সালে জিএমআরের সঙ্গে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি (পিপিএ) সই করে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। এই কেন্দ্রের বিদ্যুৎ আনতে ভারত সরকারের কোনো বাধা নেই। কারণ কেন্দ্রটির মালিকানায় রয়েছে ভারতীয় কোম্পানি জিএমআর।
এ ছাড়া নেপালের ৬৮৩ মেগাওয়াটের সানকোশি-৩ জলবিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ আনতে চায় বাংলাদেশ। এই কেন্দ্রটি বাংলাদেশ-নেপাল যৌথভাবে নির্মাণ করার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রকল্পের পরিবেশগত প্রভাবসংক্রান্ত কাজ এখনো শেষ হয়নি।
অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আগামী রোববার সংস্কার প্রস্তাবনা দেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী তিনি তথ্য জানান। এর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বেলা ১১টায় এ বৈঠক শুরু হয়ে ১২টায় শেষ হয়।
বৈঠকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ও চেয়ারপারসনের ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যাডভাইজরি কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক ও চেয়ারপারসনের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক বিশেষ সহযোগী উপদেষ্টা কমিটির সদস্য শামা ওবায়েদ। বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে আমির খসরু বলেন, ‘রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও বৈদেশিক নানা বিষয় নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। সংস্কার কমিশনের যে ঐকমত্য সৃষ্টির চেষ্টা চলছে তা নিয়েও আলোচনা হয়। এখানে কারও দ্বিমত আছে। আমরা মনে করি, যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে তাদের দ্বিমত থাকার কথা নয়।’
তিনি বলেন, ‘সংস্কার বিষয়ে যেখানে ঐকমত্য হবে, সেটা নিয়ে আমরা সামনে এগিয়ে যাব। আর যেসব বিষয়ে হবে না, সেটা সাংবিধানিক হোক, নির্বাচনকেন্দ্রিক হোক বা অন্য যেকোনো বিষয়েই হোক, সেটা প্রতিটি দল নির্বাচনের সময় জনগণের কাছে নিয়ে যাবে। তাদের সামনে উপস্থাপন করবে, তারপর নির্বাচিত হয়ে সংসদে এসে আলোচনা, তর্ক-বিতর্কের পর পাস হবে। আমাদের আলোচনাটা মোটামুটি এভাবেই হয়েছে।’
ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হলে দেশ সঠিক পথে থাকবে উল্লেখ করে বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, সবাই ধরেই নিয়েছে যে, ডিসেম্বরের পর নির্বাচন দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ইতোমধ্যে অনেকেই বলছে ডিসেম্বর অনেক দেরিতে; কিন্তু তারপরও ডিসেম্বর ‘কাট অব টাইম’ হিসেবে ধরে নেওয়া হয়েছে। সবার ধারণা, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হলে আমরা সঠিক পথে থাকব। তিনি আরও বলেন, ‘গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জনগণের মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আমরা ১৭ বছর সংগ্রাম করেছি। সেটা ফিরিয়ে দেওয়ার একমাত্র মাধ্যম নির্বাচন।’
এদিকে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতিতে জোর দিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে মতামত জমা দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। গতকাল সকালে সংসদ ভবনে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজের কাছে তাদের মতামত জমা দেন দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জামায়াতে ইসলামী জানিয়েছে, মিয়া গোলাম পরওয়ারের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজের কাছে সংস্কার প্রস্তাব জমা দিয়েছেন। সংবিধান, নির্বাচন, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন ও দুর্নীতি দমন কমিশনসহ পাঁচটি বিষয়ের ওপর প্রস্তাব পেশ করেন তারা। এ সময় সংগঠনের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মতিউর রহমান আকন্দ উপস্থিত ছিলেন। মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, জামায়াতে ইসলামী একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে সংস্কারের ওপর গুরুত্বারোপ করে আসছে। আমীরে জামায়াতসহ নেতৃবৃন্দ প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে দ্রুত একটি অর্থবহ নির্বাচন দেওয়ার জন্য বারবার বলে আসছেন।
‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময়ের ব্যাপারে একটি ধারণা জাতির সামনে পেশ করা হয়েছে। আমরা তার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করিনি।’ তিনি বলেন, ‘আজকে আমরা পাঁচটি বিষয়ের ওপর আমাদের মতামত তুলে ধরেছি। কমিশনের প্রস্তাবের সঙ্গে কিছু ক্ষেত্রে আমরা একমত হতে পারিনি, আবার অনেক বিষয়েই একমত হয়েছি। আমরা ব্যাখ্যাসহ আমাদের বক্তব্য তুলে ধরেছি।’ ‘আমরা সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেছি। আমরা আশা করি, দ্রুত সংস্কার সম্পন্ন করে একটি অর্থবহ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কাজ শুরু করবে’- বলেন গোলাম পরওয়ার।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আগামী এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে দেশে ফিরবেন। যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক এ কথা জানিয়েছেন।
বুধবার লন্ডনের স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় বেগম খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি কামনায় নোয়াখালী জাতীয়তাবাদী ফোরাম ইউকে আয়োজিত এক ইফতার মাহফিল শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান তিনি।
এম এ মালেক বলেন, ‘আমরা বেগম খালেদা জিয়াকে অনুরোধ করেছিলাম ঈদ করে দেশে যেতে। তিনি আমাদের অনুরোধ রেখেছেন। এখন তিনি ঈদের পরে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে দেশে ফিরবেন।’
তিনি বলেন, ‘ডাক্তাররাও সে অনুপাতে প্রস্তুতি নিয়ে ম্যাডামকে সেভাবেই চিকিৎসা দিচ্ছেন। তবে এখানে ফ্লাইটেরও একটি বিষয় আছে। ফ্লাইট যদি নির্ধারিত সময়ে না পাওয়া যায়, তাহলে দুই-এক দিন এদিক-সেদিক হতে পারে। তবে ম্যাডাম দেশে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন।’
তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের লিডারের দেশে যাওয়ার সময় নিয়ে এখনো নিশ্চিত বলতে পারছি না। ম্যাডাম খালেদা জিয়া যাওয়ার কিছু দিন পরে হয়তো তিনি দেশে ফিরবেন। এক সঙ্গে দুজন অবশ্যই যাবেন না এটা আমি বিশ্বাস করি।’
লন্ডন মহানগর বিএনপির উপদেষ্টা আবুল হোসেন জসিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সিনিয়র ভাইস-প্রেসিডেন্ট আবুল কালাম আজাদ, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পারভেজ মল্লিক, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম ইউকের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার হামিদুল হক আফেন্দী লিটন, জিয়া পরিষদ যুক্তরাজ্য শাখা সভাপতি প্রফেসর ড. সাইফুল আলম চৌধুরী প্রমুখ।
দলীয় পদ বাণিজ্য, মনোনয়ন বাণিজ্যসহ দলীয় ফান্ডের টাকা জালিয়াতের মাধ্যমে আত্মসাতের অভিযোগে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের (জি এম কাদের) বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বৃহস্পতিবার দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন এক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন।
আক্তার হোসেন বলেন, ‘গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের (জি এম কাদের) বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
ব্রিফিংয়ে জি এম কাদেরের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে বলা হয়, ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর সংরক্ষিত নারী আসনে দলীয় মনোনয়ন দিতে ১৮ কোটি ১০ লাখ টাকার ঘুষ গ্রহণ করা হয়, যার মূল সুবিধাভোগী ছিলেন তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জি এম কাদের।
চুক্তি অনুযায়ী অর্থ পরিশোধ না করায় অধ্যাপক মাসুদা এম রশীদ চৌধুরীকে দলীয় পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় এবং তার স্থলে জি এম কাদেরের স্ত্রী শরীফা কাদের সংসদ সদস্য হন।
অভিযোগে এও বলা হয়, জি এম কাদের জালিয়াতির মাধ্যমে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হন এবং দলীয় পদ বাণিজ্য ও মনোনয়ন বাণিজ্যের মাধ্যমে বিপুল অর্থ সংগ্রহ করেন, যা পরে বিদেশে পাচার করা হয়। জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি ৩০১ সদস্যবিশিষ্ট হলেও বর্তমানে ৬০০ থেকে ৬৫০ জনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা পদ বাণিজ্যের প্রমাণ।
২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে দাখিল করা হলফনামা অনুযায়ী, জি এম কাদেরের নামে নগদ ৪৯ লাখ ৮৮ হাজার টাকা, ব্যাংকে ৩৫ লাখ ৯৫ হাজার টাকা এবং ৮৪ লাখ ৯৮ হাজার টাকা মূল্যের একটি জিপ গাড়ি রয়েছে।
আর তার স্ত্রী শরীফা কাদেরের নামে নগদ ৫৯ লাখ ৫৯ হাজার টাকা, ব্যাংকে ২৮ লাখ ৯ হাজার টাকা এবং ৮০ লাখ টাকা মূল্যের তারও একটি জিপ গাড়ি রয়েছে। তার স্থাবর সম্পদের মধ্যে লালমনিরহাট ও ঢাকায় জমি ও ফ্ল্যাট রয়েছে।
অন্যদিকে অবৈধ সম্পদের বিষয়ে অভিযোগে বলা হয়, ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে জি এম কাদেরের দাখিল করা হলফনামা অনুযায়ী, জি এম কাদেরের নামে নগদ ৪৯ লাখ ৮৮ হাজার টাকা, ব্যাংকে ৩৫ লাখ ৯৫ হাজার এবং ৮৪ লাখ ৯৮ হাজার টাকা মূল্যের একটি জিপ গাড়ি রয়েছে। তার স্ত্রী শরিফা কাদেরের নামে নগদ ৫৯ লাখ ৫৯ হাজার টাকা, ব্যাংকে ২৮ লাখ ৯ হাজার এবং ৮০ লাখ টাকা মূল্যের একটি জিপ গাড়ি রয়েছে। তিনি দেশে-বিদেশে (সিঙ্গাপুর, লন্ডন, সিডনি) নামে-বেনামে সম্পদ পাচার করেন।
এ জন্য তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্য অনুসন্ধানের মাধ্যমে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে ব্রিফিংয়ে আক্তার হোসেন উল্লেখ করেন।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জি এম কাদের) ১৯৯৬ সাল থেকে বিভিন্ন আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৯-১৪ সময়ে তিনি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন।
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ২৬ কোটি ২৭ লাখ ৮১ হাজার ৪৬১ টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আমির হোসেন আমুর বিরুদ্ধে পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এছাড়া তাঁর ১৪টি ব্যাংক হিসাবে ৩১ কোটি ৪৭ লাখ ৯২ হাজার ৭০৮ টাকার সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে। তিনটি মামলায় আমির হোসেন আমুসহ তার শ্যালিকা সৈয়দা হক মেরি ও মেয়ে সুমাইয়া হোসেনকেও আসামী করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর সেগুন বাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান।
মো. আক্তার হোসেন জানান, সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আমির হোসেন আমু ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধভাবে ২৬ কোটি ২৭ লাখ ৮১ হাজার ৪৬১ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করে ভোগ দখলে রেখেছেন। এছাড়া তার নামে থাকা ১৪টি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে ৩১ কোটি ৪৭ লাখ ৯২ হাজার ৭০৮ টাকার সন্দেহজনক লেনদেন করে হস্তান্তর, স্থানান্তর ও রূপান্তর করে মানিলন্ডারিংয়ে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ও মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
দ্বিতীয় মামলায় মেয়ে সুমাইয়া হোসেন তার পিতার (আমির হোসেন আমু) সহযোগিতায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে ৪ কোটি ৪৩ লাখ ৫২ হাজার ৮১ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেন। এছাড়া তার নামে থাকা ১৮টি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে ৪৮ কোটি ৪৯ লাখ ৫৯ হাজার ৬৪২ টাকা সন্দেহজনক লেনদেন করে হস্তান্তর, স্থানান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে মানিলন্ডারিং ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। এসব অভিযোগে সুমাইয়া হোসেন ও তার পিতা আমির হোসেন আমুর বিরুদ্ধে পৃথক আরেকটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
তৃতীয় মামলায় আমির হোসেন আমুর শ্যালিকা সৈয়দা হক মেরীর কোনও বৈধ আয়ের উৎস না থাকা সত্ত্বেও তিনি ভগ্নিপতির সহযোগিতায় অবৈধ উপায়ে ৭ কোটি ৬৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৭০ টাকা মূল্যের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেন। এছাড়া নিজ নামে থাকা ১৩টি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে ৬২ কোটি ৬৮ লাখ ৪১৭ টাকা সন্দেহজনক লেনদেন করেছেন। তিনি এসব অর্থ হস্তান্তর, স্থানান্তর ও রূপান্তর করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। এসব অভিযোগে সৈয়দা হক মেরী ও তার ভগ্নিপতিসহ মামলাটি দায়ের করা হয়।
গত বছরের ৫ অগাস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী সরকারের পতনের পর ৬ নভেম্বর ঝালকাঠি-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আমুকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার আগে ১৪ আগস্ট আমুর ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়। এরপর চলতি বছর ২ মার্চ আমু, তার স্ত্রী ও মেয়ের ব্যাংক হিসাবসহ তাদের ৪৪টি হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দেয় আদালত। এসব ব্যাংক হিসাবে ১৮ কোটি ৩৯ লাখ ৯২ হাজার ৫৭৪ টাকা থাকার তথ্য দিয়েছে দুদক।
মিথ্যা তথ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় (ডব্লিউএইচও) চাকরির অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর সেগুন বাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান। ঢাকার সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ মামলাটি দায়ের করেন দুদকের উপপরিচালক তাহাসিন মুনাবীল হক।
মামলায় পুতুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, তিনি মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক পদে নিয়োগ নিয়েছেন। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, অটিজম ও স্নায়ু বিকাশজনিত সমস্যাবিষয়ক জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসন সায়মা ওয়াজেদ পুতুল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক পদে নিয়োগ লাভের উদ্দেশে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় ২০২৩ সালে একটি বায়োডাটা বা সিভি দাখিল করেন। সেই সিভিতে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা ও শিক্ষা ম্যানুয়েল তৈরি বা রিভিউ সম্পর্কিত কার্যক্রমে অংশ না নিয়েও নিজেকে সেই কাজের সঙ্গে সম্পর্কিত বলে দাবি করে আবেদন করেন। পরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালক পদে নিয়োগ লাভ করে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক পদে নিয়োগ লাভ করায় তার বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪২০/৪৬৮/৪৭১ ধারা এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন এর ৫(২) ধারায় একটি নিয়মিত মামলা রুজুর অনুরোধ করা হয়েছে। এদিন দুর্নীতি ও প্রতারণার মাধ্যমে সূচনা ফাউন্ডেশনের জন্য ৩৩ কোটি টাকার তহবিল সংগ্রহের অভিযোগে পুতুলের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা দায়ের করেছে দুদক।
প্রসঙ্গত, এর আগে পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দের অভিযোগে পুতুলের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করা হয়েছিল। গত ১২ জানুয়ারি পুতুলের বিরুদ্ধে পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দের অভিযোগে একটি মামলা করে দুদক। ওই মামলায় পুতুল, শেখ হাসিনাসহ মোট ১৬ জনকে আসামি করা হয়। ক্ষমতার পালাবদলের পর পুতুলকে প্রথম আসামি করা হয়। দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এবং দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারায় মামলাগুলো দায়ের করা হয়েছে। দুদকের দাবি, প্রাথমিক অনুসন্ধানে পুতুল ও অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।
মার্চ মাসের প্রথম ১৯ দিনে দেশের ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী আয় এসেছে ২২৫ কোটি মার্কিন ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭৮ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। যে হারে রেমিট্যান্স আসছে, তাতে করে মার্চে রেমিট্যান্সের নতুন রেকর্ড গড়বে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্য অনুসারে, ঈদ সামনে রেখে প্রবাসীরা ব্যাপক রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। গত বছরের তুলনায় এই রেমিট্যান্সের প্রবাহ অনেক বেশি।
গত বছর মার্চের প্রথম ১৯ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ১২৬ কোটি ডলার। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে অনেকাংশে।
ইতোমধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জুলাই থেকে ১৯ মার্চ পর্যন্ত মোট রেমিট্যান্সের প্রবাহ দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৭৫ কোটি ডলার, যা গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ছিল এক হাজার ৬৩৪ কোটি ডলার।
বর্তমান অর্থবছরে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে প্রায় ২৭ শতাংশ।
এর আগে মার্চের প্রথম ১৫ দিনে দেশে ১৬৬ কোটি ডলার রেমিট্যান্স আসে। সে হিসাবে গত চার দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ৫৯ কোটি ডলার। শুধু ১৯ মার্চই মোট রেমিট্যান্স এসেছে ১৩ কোটি ২০ লাখ ডলার।
রেমিট্যান্সের ধারা এভাবে অব্যাহত থাকলে মাস শেষে মোট রেমিট্যান্স ৩০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এতে করে রেমিট্যান্স অর্জনে নতুন মাইলফলক অর্জনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
দেশে মাসিক হিসাবে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে সর্বোচ্চ ২৬৪ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চে আছে চলতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে অর্জিত ২৫৪ কোটি ডলার। যে হারে রেমিট্যান্স আসছে তাতে করে ঈদকে সামনে রেখে মার্চে ৩০০ কোটি ডলার।
উপসচিব ও সমপর্যায়ের ১৯২ জন কর্মকর্তাকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দিয়েছে সরকার। বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব জামিলা শবনমের সই করা ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তাদের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে। তবে নতুন যুগ্ম সচিবদের পদায়ন করে আদেশ জারি করা হয়নি।
এবার যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতির জন্য ২৪তম ব্যাচকে বিবেচনা করা হয়েছে। এর আগে, বাদ পড়া অন্যান্য ব্যাচের কয়েকজন ইতোমধ্যে পদোন্নতি পেয়েছেন।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা সরাসরি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব বরাবর বা তাদের যোগদানপত্র ই-মেইলে পাঠাতে পারবেন। পদোন্নতির আদেশে উল্লিখিত কর্মস্থল থেকে কোনো কর্মকর্তার দপ্তর বা কর্মস্থল ইতোমধ্যে পরিবর্তন হলে কর্মরত দপ্তরের নাম, ঠিকানা উল্লেখ করে যোগদানপত্র দাখিল করবেন।
পরবর্তী সময়ে কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোনোরকম বিরূপ বা ভিন্নরূপ তথ্য পাওয়া গেলে তার ক্ষেত্রে এই আদেশের প্রয়োজনীয় সংশোধন বা বাতিল করার অধিকার কর্তৃপক্ষ সংরক্ষণ করে বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে।
নতুন করে এই এই কর্মকর্তারা পদোন্নতি পাওয়ায় প্রশাসনে যুগ্ম সচিবের সংখ্যা দাঁড়াল ১০৩৫-এ।
এবারের ঈদুল ফিতরে টানা ৯ দিন ছুটি পাচ্ছেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আগেই টানা পাঁচদিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এরপর আগামী ৩ এপ্রিল নির্বাহী আদেশে একদিন ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে একদিন ছুটি ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠকে উপস্থিত একজন উপদেষ্টা ইউএনবিকে ফোনে এই ছুটি অনুমোদনের কথা জানান।
এতে ২৮ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত টানা ৯ দিনের ছুটি পাবেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ৩১ মার্চ ঈদুল ফিতর হতে পারে। সম্ভাব্য এই তারিখ ধরে আগেই পাঁচ দিনের ছুটির তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল। এই হিসাবে কাগজপত্রে ২৯ মার্চ শুরু হচ্ছে ঈদুল ফিতরের ছুটি। কিন্তু নির্ধারিত ছুটি শুরুর আগের দিন ২৮ মার্চ সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার। একই সঙ্গে একই দিন পবিত্র শবে কদরেরও ছুটি। ফলে বাস্তবে ছুটি শুরু হচ্ছে ২৮ মার্চ থেকে।
পূর্বঘোষণা অনুযায়ী, ছুটি শেষে অফিস খোলার কথা ছিল ৩ এপ্রিল বৃহস্পতিবার। এর পরের দুই দিন আবার সাপ্তাহিক ছুটি শুক্র ও শনিবার। এখন ৩ এপ্রিলও নির্বাহী আদেশে ছুটি হওয়ায় ২৮ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত টানা ৯ দিন ছুটি পাবেন সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারীরা।
এই ছুটি শুরুর দুই দিন আগে আছে ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের ছুটি। পরদিন বৃহস্পতিবার ২৭ মার্চ এক দিন অফিস খোলা থাকবে। ফলে ছুটির সুযোগ আরও বেশি থাকছে।
এদিকে সংবাদপত্রের মালিকদের সংগঠন নিউজপেপার্স ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়াব) নতুন কার্যনির্বাহী কমিটির একজন সদস্য জানিয়েছেন, এবারের ঈদে সংবাদমাধ্যমগুলোতে তিন দিন ছুটি থাকবে। তবে রোজা যদি ৩০টি হয়, তাহলে একদিন বাড়িয়ে চারদিন ছুটি করা হবে।
কোনো ভয়ভীতি ছাড়াই যেকেউ অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করতে পারেন বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘নিজেদের কার্যক্রম নিয়ে সরকারকে প্রায়ই সমালোচনার মুখে পড়তে হয়, এটিই বর্তমান প্রশাসনের সফলতা। কেউ বর্তমান সরকারের সমালোচনা করতে ভয় পান না।’
বুধবার রাজধানীর গুলশান শুটিং ক্লাবে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশের (ডিক্যাব) ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ইফতার ও নৈশভোজে অংশ নিয়ে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
সবার প্রতি প্রশ্ন রেখে উপদেষ্টা বলেন, ‘বছরখানেক কিংবা আট মাস আগে ক্ষমতাসীন সরকারের সমালোচনা কী আপনি করতে পারতেন, যেটা আপনি বর্তমানে করতে পারছেন? যদি আর কিছু না হয়, তবুও সরকারের অন্তত একটি সফলতা হচ্ছে, যে কেউ ইচ্ছা করলেই নির্ভয়ে সরকারের সমালোচনা করতে পারেন। এটাই গণতন্ত্রের মূলকথা।’
এ সময়ে সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, পররাষ্ট্র সচিব জসিম উদ্দিন, বিম্সটেক সেক্রেটারি জেনারেল ইন্দ্রা মনি পান্ডেসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনাররা উপস্থিত ছিলেন।
ডিক্যাব সভাপতি এ কে এম মঈনুদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক আরিফুজ্জামান মামুনও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘জাতীয় জীবনের এক কঠিন সময় পার করছে বাংলাদেশ। জনগণের আকাঙ্ক্ষা অনুসারে সংস্কার কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে সরকার। তবে অন্তর্বর্তী সরকার সব আকাঙ্ক্ষাই যে পূরণ করতে পারছে, তা বলছি না। তবে এমন একটি পথ তৈরি করতে হবে, যা সত্যিকার অর্থে বৈষম্যমুক্ত এবং গণতান্ত্রিক সমাজের চূড়ান্ত লক্ষ্যে নিয়ে যাবে দেশকে।’
‘কিছু কিছু সংস্কার নির্বাচনের আগেই করতে হবে। যেটা সরকার দ্রুততম সময়ের মধ্যে করতে চেষ্টা করছে, যাতে নির্বাচন দিয়ে গণতান্ত্রিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা যায়। আর কিছু সংস্কার পরবর্তী সময়ে অব্যাহত থাকবে,’ বলেন তিনি।
আগামী জাতীয় নির্বাচন শান্তিপূর্ণ, গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু করতে পুলিশকে এখন থেকেই প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সেই সঙ্গে তাদের বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে দিয়েছেন পাঁচটি নির্দেশনাও।
বুধবার স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এক আলোচনা সভায় এ নির্দেশনা দেন।
সভায় আগামী নির্বাচনে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য পুলিশ সদস্যদের নির্দেশ দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য পুলিশের প্রস্তুতি ও করণীয় সম্পর্কে এখন থেকেই উদ্যোগ নিতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলো অল্প সংস্কারের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে একমত হলে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে বলে সম্প্রতি দেওয়া তার বক্তব্য উদ্ধৃত করেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, আগামী ডিসেম্বরে নির্বাচন ধরে নিয়ে এরই মধ্যে প্রস্তুতি নেওয়ার কথা জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
প্রসঙ্গত, প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস গত সোমবার মাঠপর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে একটি সভায় অংশ নেন। সেখানে পুলিশ কর্মকর্তারা তাদের সুবিধা ও অসুবিধার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে জানান। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এসব সমস্যা সমাধানে কী করা যেতে পারে, তা নিয়ে বুধবার প্রধান উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের সুবিধা-অসুবিধা, প্রতিবন্ধকতা ও নানা সমস্যা সমাধানে করণীয় সম্পর্কে আলোচনা হয় এতে। সভায় পুলিশের কল্যাণে কয়েকটি বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
প্রধান উপদেষ্টা জানান, কর্মসম্পাদনের ফলাফলের ভিত্তিতে জেলা পুলিশকে শ্রেণিভুক্ত করে যাদের পারফরম্যানস অপেক্ষাকৃত কম, তাদের কর্মক্ষমতা বাড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। তৃণমূল পর্যায়ে যেসকল পুলিশ কাজ করেন তাদের কল্যাণে কয়েকটি বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন প্রধান উপদেষ্টা। নির্দেশনাগুলো হলো: ১. ঝুঁকি ভাতার প্রচলিত সিলিং তুলে দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা। ২. পুলিশের জন্য নতুন ৩৬৪টি পিকআপ এবং ১৪০টি প্রিজনার ভ্যান কেনার উদ্যোগ নেওয়া। ৩. পুলিশের চলমান নির্মাণ প্রকল্পের যেগুলোর কাজ ৭০ শতাংশের নিচে সম্পাদিত হয়ে আছে সেগুলোতে অর্থ ছাড় করা। ৪. ভাড়াকৃত ভবনে অবস্থিত ৬৫টি থানার জমি অধিগ্রহণের জন্য অর্থ ছাড় করা। ৫. পুলিশের এসআই ও এএসআই র্যাংকের মোটরসাইকেল কেনার জন্য সুদমুক্ত ঋণের বিষয়টি বিবেচনা করা।
মাদারীপুর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) ও আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ আবদুস সোবহান মিয়ার (গোলাপ) বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের কুইন্সে ৯টি ফ্ল্যাট-বাড়ি ক্রয়সহ ৬৮ কোটি ৭৬ লাখ টাকার ‘অবৈধ সম্পদ’ অর্জনের অভিযোগে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বুধবার রাজধানীর সেগুন বাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। দুদকের পক্ষ থেকে মামলাটি দায়ের করছেন সংস্থাটির উপ-পরিচালক নুরুল হুদা।
দুদক জানিয়েছে, মো. আবদুস সোবহান মিয়া ওরফে গোলাপ সংসদ সদস্য হিসেবে পাবলিক সার্ভেন্ট হয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের কুইন্স-এ ৯টি ফ্ল্যাট ও বাড়ি যার মূল্যমান বাংলাদেশি টাকায় ৩২ কোটি টাকাসহ স্থাবর সম্পদের মূল্য ৩২ কোটি ৩৪ লাখ ২৭ হাজার ৯৬০ টাকা এবং ৩৭ কোটি ১৬ লাখ ৬৯ হাজার ৬৭ টাকার অস্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। সব মিলিয়ে তার মোট ৬৯ কোটি ৭৬ লাখ ৭৯ হাজার ২৯৪ টাকার সম্পদ অর্জনের মধ্যে বৈধ ও গ্রহণযোগ্য আয় ১ কোটি ৪৪ লাখ ৩ হাজার ৬২৯ টাকার প্রমাণ পেয়েছে দুদক। ফলে তার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের পরিমাণ পাওয়া গেছে ৬৮ কোটি ৩২ লাখ ৭৫ হাজার ৬৬৫ টাকা।
অন্যদিকে আবদুস সোবহান গোলাপের নিজ নামে ৫১টি ব্যাংক হিসাবে মোট ৯৭ কোটি ৬৩ লাখ ২৩ হাজার ৩৮৮ টাকার অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক লেনদেনের প্রমাণ মিলেছে।
গোলাপের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারা তৎসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারার এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের জুনে তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক ‘অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট’ বা ওসিসিআরপি তাদের ওয়েবসাইটে করা একটি প্রতিবেদনে আবদুস সোবহান মিয়া (গোলাপ) যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ৪০ লাখ ডলার ব্যয়ে একাধিক বাড়ি কেনার তথ্য প্রকাশিত হয়।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, তিনি ২০১৪ সালে প্রথম নিউইয়র্কে অ্যাপার্টমেন্ট কেনা শুরু করেন। ওই বছর নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস এলাকায় একটি সুউচ্চ ভবনে অ্যাপার্টমেন্ট কেনেন তিনি। পরের পাঁচ বছরে তিনি নিউইয়র্কে একে একে মোট নয়টি প্রপার্টি বা সম্পত্তির (ফ্ল্যাট বা বাড়ি) মালিক হন। ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আশির দশকে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পর মোহাম্মদ আবদুস সোবহান মিয়া কম বেতনের কাজ, যেমন- পিৎজা তৈরি, ওষুধের দোকানে কাজ, লাইসেন্স ছাড়া ট্যাক্সি চালাতেন বলে জানান তার সহকর্মীরা। এসব কাজ থেকে যে আয় হয় তা দিয়ে এভাবে অ্যাপার্টমেন্ট বা বাড়ি কেনা সম্ভব নয়। এসব সম্পত্তি কিনতে বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাঠানো হয়েছে কি না- তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আবদুস সোবহান মিয়া ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে মাদারীপুর-৩ আসন থেকে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী সরকার পতনের পর আত্মগোপনে থাকা গোলাপকে ২৫ আগস্ট রাজধানীর নাখালপাড়ার একটি বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে ঢাকায় একটি হত্যার ঘটনাসহ একাধিক অভিযোগে মামলা ছিল।
এরপর চলতি বছর ৯ জানুয়ারি গোলাপ এবং তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা যুক্তরাষ্ট্রে ৯টি স্থাবর সম্পদ জব্দের আদেশ দেয় আদালত। একই সঙ্গে তাদের ৫৩টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশও দেওয়া হয়।
দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন।
আদালতের সম্পদ জব্দের আদেশের তথ্য অনুযায়ী, কারাগারে থাকা সাবেক সংসদ সদস্য গোলাপ, তার স্ত্রী গুলশান আরা মিয়া, ছেলে ইভান সোবহান মিয়া ও মেয়ে আনিশা গোলাপ মিয়ার নামে এসব স্থাবর সম্পদ ও ব্যাংক হিসাব রয়েছে।
এর মধ্যে গোলাপ ও তার স্ত্রী-সন্তানদের নামে থাকা মিরপুরের একটি পাঁচতলা বাড়িও জব্দের আদেশ দেওয়া হয়।
জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের বাড়িগুলোর মধ্যে আটটি সিঙ্গেল রেসিডেনসিয়াল কন্ডো ইউনিট এবং অপরটি ডুয়েল ফ্যামিলি ইউনিট বলে তথ্য দেওয়া হয়েছে দুদকের আবেদনে। এর আগে গত ২ অক্টোবর সাবেক এ সংসদ সদস্যের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেয় একই আদালত।
গাজা উপত্যকায় পুনরায় ইসরায়েলি সামরিক আগ্রাসন শুরু করায় তীব্র নিন্দা ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ।
আজ বুধবার এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই হামলার ফলে শিশু ও নারীসহ নিরীহ বেসামরিক মানুষের ব্যাপক প্রাণহানি ঘটেছে এবং এই অঞ্চলে ইতোমধ্যে ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে।
এতে বলা হয়েছে যে, নতুন করে এই সহিংসতা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং প্রতিষ্ঠিত যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রতি গুরুতর অবজ্ঞার প্রতিফলন।
বাংলাদেশ দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘনবসতিপূর্ণ বেসামরিক এলাকায় ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর অব্যাহত নির্বিচার বিমান হামলার নিন্দা জানিয়েছে, যা মানবিক দুর্ভোগকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে এবং অসহায় ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর ভয়াবহ পরিণতি ডেকে এনেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ সরকার ইসরায়েলকে অবিলম্বে সকল সামরিক অভিযান বন্ধ করার, সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শন করার এবং আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের অধীনে তার বাধ্যবাধকতাগুলোর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করার আহ্বান জানিয়েছে।’
এছাড়াও, বাংলাদেশ যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে, বেসামরিক মানুষের জীবন রক্ষা করতে এবং গাজার অবরুদ্ধ জনগণের কাছে মানবিক সহায়তা নিরবচ্ছিন্নভাবে পৌঁছে দিতে জরুরি ও সিদ্ধান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।
ন্যায়বিচার ও মানবাধিকার বিষয়ে এর নীতিগত অবস্থানের সাথে সামঞ্জস্য রেখে, বাংলাদেশ ফিলিস্তিনি জনগণের বৈধ অধিকারের প্রতি তার অটল সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে, যার মধ্যে রয়েছে তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার এবং পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে ১৯৬৭ সালের পূর্ববর্তী সীমান্ত বরাবর একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা।
বাংলাদেশ মধ্যপ্রাচ্যে একটি ব্যাপক, ন্যায়সঙ্গত ও স্থায়ী শান্তির লক্ষ্যে পুনরায় সংলাপ শুরু করার প্রয়োজনীয়তার উপরও জোর দিয়েছে, যা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য জরুরি।
বাংলাদেশ সকল পক্ষকে ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর অব্যাহত অর্থহীন সহিংসতা ও দুর্ভোগের অবসান ঘটাতে কূটনীতির পথ ও শান্তিপূর্ণ উপায় অবলম্বন করার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
আন্তর্জাতিক আইনের নীতিমালা, জাতিসংঘ প্রস্তাব এবং শান্তি, মর্যাদা ও ন্যায়বিচারের জন্য ফিলিস্তিনি জনগণের আকাঙ্ক্ষার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ফিলিস্তিনি প্রশ্নের একটি টেকসই সমাধান অর্জনের জন্য বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বরাবরের মতো এবারও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে ট্রেন। যাত্রীসেবা, অনলাইন টিকিট, নিরাপত্তা ও সময় বাঁচানোসহ নানা দিক বিবেচনায় রেলপথকে বেছে নিচ্ছে যাত্রীরা। ঈদযাত্রা উপলক্ষে অগ্রিম টিকিট কাটতে অনলাইনে ব্যাপক সক্রিয় হয়েছেন তারা। ৩৫ হাজার ৯১৩টি টিকিটের জন্য ১৭ মার্চ রেলওয়ে অ্যাপ ও ওয়েবসাইটে ভিজিটর হিট করেছে প্রায় আড়াইকোটি বার। এখন পর্যন্ত কোন টিকিট অবিক্রিত নেই।
এবারের ঈদযাত্রাকে নিরাপদ, স্বাচ্ছন্দ্যময় ও উৎসবমুখর করতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ঢাকার প্রধান দু’টি রেলওয়ে স্টেশন, গাজীপুরের জয়দেবপুর স্টেশনে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এছাড়া দেশের সকল আন্তঃনগর স্টেশনে নিরাপত্তা বৃদ্ধি করবে বাংলাদেশ রেলওয়ে পুলিশ ও রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী।
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, এবারের ঈদযাত্রায় রেলওয়ে স্টেশনে অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাহিনী, পুলিশ, র্যাব, এপিবিএন, আনসার ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা সার্বক্ষণিক নিরাপত্তায় থাকবেন। পাশাপাশি সার্বক্ষণিক সিসিটিভি ক্যামেরায় মনিটরিং করা হবে। এছাড়া, যাত্রীদের জন্য কমলাপুর ও ঢাকা বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে মেডিকেল টিম থাকবে।
টিকিট কালোবাজারি, ছাদে ও বিনা টিকিটে ভ্রমণের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার কথা জানান রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী। বেসরকারি ট্রেনের মালিকরা যেন অতিরিক্ত টিকিট বিক্রি করতে না পারে সে বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। কেউ লোকাল ট্রেনের টিকিট কেটে প্লাটফর্মে ঢুকে অন্য ট্রেনে যেন উঠতে না পারে সে সুযোগও বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
এদিকে সরেজমিনে দেখা গেছে, ঈদযাত্রার বিশেষ দিনের আগেই কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে আসছেন অনেক ঘরমুখো মানুষ। যারা চাকরি করছেন তাদের অনেকের পরিবারকে আগে বাড়ি পাঠিয়ে দিতে দেখা গেছে। তারা স্টেশনের গেটগুলোতে সারিবদ্ধভাবে প্লাটর্ফমে প্রবেশ করছেন। কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা দেখা যায়নি। বাহির পথেও যাত্রীরা নিরাপদে বের হচ্ছেন। টিকিটবিহীন যাত্রীদের জরিমানা করতে দেখা গেছে।
রেলওয়ে বিভাগ থেকে জানা গেছে, এবারের ঈদযাত্রায় রেলসেবাকে স্বাচ্ছন্দ্যময় করতে টিকিট কাটার ক্ষেত্রে পরিবর্তন এনেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। দু’টি রেলওয়ে অঞ্চলের জন্য আলাদা আলাদা সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের জন্য সকাল ৮টায় ও রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জন্য দুপুর ২টায় টিকেট বিক্রি শুরু হয়। এই দু’সময়ে রেলওয়ে ওয়েবসাইট ও অ্যাপে ব্যাপক ট্রাফিক হয় বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ রেলওয়ে ও অনলাইনে টিকিট বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান সহজ.কম। তবে এবার ব্যাপক ট্রাফিকেও সার্ভার ডাউনের কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।
ট্রেনের টিকিট বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান সহজ ডট কমের সিইও বাসসকে জানান, এবারের অনলাইন সেবা অনেক আরামদায়ক হয়েছে। টিকিট কাটতে কোন ধরনের সার্ভার জটিলতায় পড়তে হয়নি। এক সেকেন্ডের জন্যও সার্ভার বন্ধ হয়নি। একসাথে কতজন টিকিট কাটার চেষ্টা করছে তা গ্রাহক দেখতে পাচ্ছেন। এছাড়া গ্রাহকের নির্দিষ্ট স্টেশনে টিকিট শেষ হয়ে গেলে তাকে আগে ও পরের স্টেশনের সাজেসন দেওয়া হয়। যা যাত্রীদের জন্য অনেক আরামদায়ক হয়েছে।
এবারের ঈদযাত্রায় ১৪ মার্চ থেকে অনলাইনে অগ্রিম টিকিট বিক্রি করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জন্য দুপুর দুটায় ও পশ্চিমাঞ্চলের জন্য সকাল আটটায় দশদিন পরের টিকেট বিক্রি করা হয়। এবারের ঈদে সারাদেশে চলাচলকারী ১২০টি আন্তঃনগর ট্রেনের বাইরেও পাঁচ জোড়া বিশেষ ট্রেন চলবে। এছাড়া লোকাল, কমিউটার ও মেইল ট্রেনগুলো তাদের নির্দিষ্ট গন্তব্যে চলাচল করবে।
রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর ঢাকা বিভাগীয় কমান্ড্যান্ট মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বাসসকে বলেন, ‘এবারের ঈদযাত্রায় রেলওয়ে স্টেশনে নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য বর্তমান ৪৯০ জন রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর বাইরে অতিরিক্ত ২০০জন আনসার সদস্য যুক্ত হবেন। বিনা টিকিটে ভ্রমণ বন্ধ করতে আমরা যথেষ্ট ভূমিকা পালন করবো। ইতোমধ্যে আমরা প্রবেশ ও বাহিরের জন্য আলাদা গেইট তৈরি করেছি। এতে করে বিনা টিকিটে কেউই ভিতরে প্রবেশ করতে পারবে না। আর প্রবেশ ঠেকানো গেলে বগিতে অতিরিক্ত যাত্রী ও ছাদে ভ্রমণ বন্ধ করতে সক্ষম হবো।
কমলাপুর স্টেশনে তিন স্তরের নিরাপত্তা দেবে রেলওয়ে পুলিশ। এ বিষয়ে রেলওয়ে ঢাকা পুলিশের পলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন বাসকে বলেন, ‘কমলাপুর থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াতকারী যাত্রীদের আমরা তিন স্তরের নিরাপত্তা দেবো। স্টেশনের প্রবেশপথে আমাদের পোশাকধারী পুলিশ, ডিবি, এপিবিএনের সদস্যরা থাকবেন।
সাথে সাদা পোশাকে আমাদের সদস্যরা থাকবেন, সার্বক্ষণিক সিসিটিভি মনিটরিং করা হবে। একই সেবা ঢাকা বিমানবন্দর ও জয়দেবপুর রেলওয়ে স্টেশনেও থাকবে।’
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার শাহাদাৎ হোসেন বাসসকে বলেন, ‘ঈদকে কেন্দ্র করে স্টেশনে ইতোমধ্যে যাত্রীর আনাগোনা বেড়েছে। টিকিট করে প্লাটফর্মে ঢোকানো ও বের করা হচ্ছে। এবারের ঈদ যাত্রায় প্রত্যেক রুটে ট্রেনগুলো শিডিউল মেনে চলবে। সবমিলিয়ে ঈদযাত্রাকে স্বাচ্ছন্দ্যময় করে তুলতে রেলওয়ে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।’
বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেন বাসসকে বলেন, ‘এবারের ঈদযাত্রাকে নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় করতে বাংলাদেশ রেলওয়ে কাজ করছে। নিরাপদ ভ্রমণকে অনিরাপদ করে তোলে ছাদে ওঠা যাত্রীরা। এবার যেন ছাদে ও বিনা টিকিটে কেউ ভ্রমণ করতে না পারে সেক্ষেত্রে আমরা কঠোর হবো। বিশেষ করে কমলাপুর, বিমানবন্দর, জয়দেবপুর স্টেশনে আমাদের নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরা সেটি বাস্তবায়ন করবেন।’