দেশের কিছু জেলায় তীব্র দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে। বাকি অংশের ওপর দিয়ে মৃদু ও মাঝারি দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে। আগামী পাঁচ থেকে ছয় দিন আবহাওয়ার পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকবে। তীব্র গরমের কারণে দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্লাস ৫ থেকে ৮ জুন পর্যন্ত বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। শিগগির বৃষ্টির কোনো লক্ষণ নেই। তীব্র দাবদাহের মধ্যে জনজীবন অসহনীয় করে তুলেছে লোডশেডিং। খোদ রাজধানীতে দিন-রাত মিলিয়ে ৬ থেকে ৮ বার বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। গ্রামপর্যায় এ পরিস্থিতি আরও অসহনীয়।
আগামী পাঁচ-ছয় দিনের মধ্যে বৃষ্টির কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। জুনের শুরুতে সারা দেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক ছিল। রোববার দেশের বাতাসে ক্ষুদ্রকণার পরিমাণও ছিল বেশি। এতে বাতাসে দূষণের মাত্রাও বেড়ে যায়। চলতি সপ্তাহে দেশে বড় ধরনের বা ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা তেমন নেই বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ৩ হাজার কোটি টাকা বকেয়া ৬ মাস পার হলেও দিতে ব্যর্থ হয় বাংলাদেশ ব্যাংক। দফায় দফায় দেনদরবার করেও ডলার পাওয়া যায়নি। এর মধ্যে সম্প্রতি ২ হাজার কোটি টাকা মূল্যের ডলার পরিশোধ করেছে চীনা কয়লা রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান সিএমসিকে। কিন্তু তত দিনে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের সব মজুত কয়লা শেষের দিকে। এখন কয়লা আমদানি করলেও ২৫ জুনের আগে কেন্দ্রটি চালু হবে না। পায়রা কেন্দ্রটির বিদ্যুৎ ঢাকায় সরবরাহ করত। এ কারণে ঢাকায় বেড়েছে লোডশেডিং।
দাবদাহে পুড়ছে দেশ
সোমবার আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশের বিভিন্ন জেলার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। এর মধ্যে গতকাল রোববার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল দিনাজপুরে ৪১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিন উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় রাত-দিন মিলিয়ে ১০ থেকে ১২ বার বিদ্যুৎ চলে যায়। নীলফামারী ও দিনাজপুর জেলাগুলোর ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। রংপুর বিভাগের অবশিষ্টাংশসহ ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগ এবং ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, রাঙামাটি, কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী ও বান্দরবান জেলাগুলোর ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসমতে, সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
গ্রীষ্মের এই গরমে মধ্যরাতেও বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। দিন-রাত মিলিয়ে বিদ্যুতের দেখা মিলছে কম। পাখা চলছে না। ভ্যাপসা গরমে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে যাচ্ছে।
পরিস্থিতি উন্নতি হবে জুনের শেষ সপ্তাহে
জ্বালানির অভাবে ধুঁকে ধুঁকে বন্ধ হচ্ছে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র। এতে প্রতিদিনই বাড়ছে লোডশেডিং। বর্তমানে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রতি ইউনিট জ্বালানি ব্যয় ৫ টাকা ৫০ পয়সা। অন্যদিকে ডিজেলভিত্তিক কেন্দ্রের ব্যয় ইউনিটপ্রতি ৩০ টাকার বেশি আর ফারনেসের উৎপাদন ব্যয় ১৪ টাকার কিছু বেশি। এ পরিস্থিতিতে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বেশি চালালে সরকারকে প্রতিদিন অন্তত বাড়তি গুনতে হবে ১৫০ কোটি টাকা। কয়লা পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রে না আসা পর্যন্ত দেশের বিদ্যুতের পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। কয়লা আসতে সময় নেবে ২৫ জুন পর্যন্ত। এ পর্যন্ত থাকবে লোডশেডিং।
গ্রীষ্মে বিদ্যুৎ সরবরাহ এত বিপর্যয়ের বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন খোদ বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। গতকাল রোববার সচিবালয়ে লোডশেডিং সম্পর্কে সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, ‘লোডশেডিং পরিস্থিতি অসহনীয় হয়ে গেছে।’
এ বিষয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘কয়েক সপ্তাহ লাগবে লোডশেডিং কমতে। বেশ কিছুদিন ধরে গ্রাহকরা দেখছেন যে লোডশেডিং বেড়ে গেছে। জ্বালানি হিসেবে গ্যাস, কয়লা ও জ্বালানি তেলের জোগান দিতে কষ্ট হচ্ছিল। এ কারণে লোডশেডিং ধীরে ধীরে বেড়ে গেছে। লোডশেডিং পরিস্থিতিও অসহনীয় হয়ে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য কত দ্রুত কয়লা নিয়ে আসা যায়, তার চেষ্টা করা হচ্ছে। বর্তমানে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি অর্ধেক সক্ষমতায় চলছে। বড়পুকুরিয়া কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রটিও অর্ধেক সক্ষমতায় চলছে। জ্বালানি তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোও অর্ধেক সক্ষমতায় চলছে। দ্রুত সমাধানে বিদ্যুৎ বিভাগ চেষ্টা করছে।’
তবে গত বছরের জুলাইয়ের মতো সূচি করে পরিকল্পিত লোডশেডিংয়ের চিন্তা আপাতত নেই বলে জানিয়েছেন নসরুল হামিদ। তিনি বলেন, ‘তাপপ্রবাহ চলছে, তাই বিদ্যুৎ চাহিদা বেড়ে গেছে। আড়াই হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং হচ্ছে। ধীরে ধীরে কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। আগামী ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে।’
বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনের জন্য তৈরি আছে। দুই মাস আগে থেকেই চেষ্টা করা হচ্ছিল। কিন্তু জ্বালানি আসার পেছনের বিষয় সব সময় তাদের হাতে থাকে না। অর্থনৈতিক বিষয়, জ্বালানি আমদানির জন্য ঋণপত্র খোলার বিষয় থাকে; সব সমন্বয় করতে হয়। সমন্বয় কোথাও বাধাগ্রস্ত হলেই সমস্যা হয়। এবারও তাই হয়েছে।’
প্রসঙ্গত, কয়লার অভাবে আজ রাত ১২টার পরে বন্ধ হয়ে যেতে পারে দেশের সব থেকে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র পায়রা। এর আগে ২৫ মে কেন্দ্রটির ৬৬০ মেগাওয়াটের প্রথম ইউনিটটি বন্ধ হয়ে যায় কয়লার অভাবে। নতুন করে ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা ২৫ জুনের আগে আসবে না। এ সময় পর্যন্ত কেন্দ্রটি বন্ধ থাকবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেরিতে বকেয়া পরিশোধ করায় পায়রা বন্ধ হলো
৬ মাসের বাকিতে চীনা প্রতিষ্ঠান সিএমসি কয়লা দিত পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রকে। কয়লা দেয়ার ৬ মাস পর অর্থ পরিশোধ করত পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র। গত বছরের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ২৩ মার্চ পর্যন্ত ছয় মাসে সিএমসি বকেয়া কয়লা বাবদ প্রায় ৩০ কোটি ডলার বা ৩ হাজার কোটি টাকা বকেয়া হয়। এই অর্থ পরিশোধ করতে পারেনি পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র। এরপর সিএমসি পায়রাকে আরও প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার কয়লা বাকিতে সরবরাহ করে। এর পরও অর্থ পরিশোধ করতে না পারায় চীনের বৈদেশিক নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ ইন্দোনেশিয়ার পিটি বায়ান্স রিসোর্স টিবিকের কাছ থেকে কয়লা বাংলাদেশের পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করার বিষয়ে সিএমসির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এর ফলে কয়লা আমদানি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
গত ২৭ এপ্রিল বিসিপিসিএল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি বিদ্যুৎ সচিবকে চিঠি দিয়ে অবহিত করে। এরপর কয়েক দফা বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করে সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ৩ হাজার কোটি টাকা বকেয়ার মধ্যে ২ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করেছে সরকার। এরপরই দুই মাসের কয়লা সরবরাহে রাজি হয়েছে সিএমসি।
বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মকর্তা পরিচয় গোপন রেখে দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক ঠিকই ডলারের সংস্থান করল। কিন্তু যখন তারা ডলার দিল তখন বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। বাংলাদেশ দেশের লোডশেডিংয়ের পরিস্থিতি অবনমের পেছনে অন্যতমভাবে দায়ী।’
লোডশেডিং
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত দেশে বিদ্যুতের চাহিদার কথা যখন বলা হচ্ছে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। আর তখন সরবরাহ করা হচ্ছে ১২ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট। ঘাটতি গড়ে প্রায় আড়াই হাজার মেগাওয়াট।
বিদ্যুৎ সঞ্চালনের দায়িত্বে থাকা পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) দুজন প্রকৌশলী পরিচয় গোপন রেখে দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘দেশে পিক আওয়ার সন্ধ্যা ৭টা থেকে ১১টা পর্যন্ত প্রকৃত চাহিদা থাকে ১৭ হাজার মেগাওয়াট। আর এ সময় ১৩ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন করতে গিয়ে পিডিবির নাভিশ্বাস ওঠে যাচ্ছে। ঘাটতি থাকছে ৪ হাজার মেগাওয়াট। এটি মোট উৎপাদনের প্রায় ৩০ ভাগ। এই বিপুল পরিমাণ ঘাটতির কারণে লোডশেডিং বেড়েছে।’ ঢাকার চেয়ে গ্রামে এই পরিস্থিতি আরও অনেক খারাপ বলেও ওই দুই কর্মকর্তার মত।
সাবেক সংসদ সদস্য নাঈমুর রহমান দুর্জয়কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বুধবার (২ জুলাই) দিবাগত রাতে রাজধানীর লালমাটিয়া থেকে তাকে গ্রেপ্তার করেছে মানিকগঞ্জ ডিবি পুলিশ।
বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক।
তিনি ঢাকা বলেন, সাবেক সংসদ সদস্য নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের বিরুদ্ধে ৫ আগস্টের ঘটনাসহ নানা অভিযোগে একাধিক মামলা হয়েছে।
রেজাউল করিম মল্লিক বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও গোয়েন্দা তথ্যে ভিত্তিতে মানিকগঞ্জ জেলা পুলিশের গোয়েন্দা টিম আজ রাতে তাকে রাজধানীর লালমাটিয়া এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, সংখ্যানুপাতিক (পিআর) নির্বাচন পদ্ধতির মতো বড় পরিবর্তন জনগণের মতামত নিয়ে সংসদের মাধ্যমে পাশ করতে হবে। সংসদ ছাড়া এই পরিবর্তন কেউ করতে পারবে না।
বুধবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ‘লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
এক প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু বলেন, ‘সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন পরিবর্তনের কথা কথা বলা হচ্ছে, তবে এটা আগামী সংসদ ছাড়া কেউ করতে পারবে না। আমরা যখন প্রেসিডেন্সিয়াল পদ্ধতি থেকে সংসদীয় পদ্ধতিতে আসি, তখন সব দলগুলো ঐকমত্য হয়ে, সংসদে সেটা পাস করতে হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এই পদ্ধতির বিষয়ে কোন দলের ইচ্ছা থাকলে তাদের মতামতের উপর শ্রদ্ধা রেখেই বলছি জনগণের কাছ থেকে তারা যেন সেই ম্যান্ডেড নিয়ে সংসদে আসে। যে কোন বিষয়ে মৌলিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে জনগণের কাছে যেতে হবে। আগামী নির্বাচনে সেটা সংসদে নিয়ে, সংসদের মাধ্যমে পাশ করতে হবে। এই পর্যায়ে এটা কোন আলোচনার বিষয় হতে পারে না।’
সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্য নিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘বিএনপি কোথায় কোথায় ঐকমত্য হয়েছে, ইতিমধ্যে সবকিছু বলা হয়েছে। অনেকগুলো তো বিএনপি প্রস্তাব, সংসদ দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট, দুই বারের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকবে না এসব বিএনপি'রই প্রস্তাব। সুতরাং ঐকমত্য হওয়া নয় কোথায়? তবে একটা কথা মনে রাখতে হবে সব বিষয়ে ঐকমত্য হবে না। ’
তিনি বলেন, ‘আমরা এটা বাকশাল করতে চাচ্ছি না। এটা বাকশাল না। সব বিষয়ে ঐকমত্য হবে না। যে বিষয়গুলোতে ঐকমত্য হবে, সেগুলো এখন ঐক্যমত্যের মাধ্যমে, এর বাইরে যেগুলো থাকবে প্রত্যেকটি দলকে জনগণের কাছে গিয়ে তাদের মতামতের মাধ্যমে করতে হবে।’
লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক সম্পর্কে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, জুলাই আগস্ট এর আন্দোলন তো দেড় দুই মাস ছিল, তার আগে থেকে বছরের পর বছর যারা রাস্তায় ছিল শেখ হাসিনা স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে, তাদের সঙ্গে আমরা কথাবার্তা বলছি। কারণ এই ঐক্যটা আমাদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এটা শুধু নির্বাচন বলে কোন কথা নয়, আমাদের ৩১ দফার উপরে যে ঐকমত্য সংস্কারের বিষয়ে যে ঐকমত্য, এগুলো আমরা কীভাবে আগামী দিনে বাস্তবায়ন করব নির্বাচনের পরে জনগণ যদি আমাদেরকে রায় দেয়, সবাই মিলে এটা বাস্তবায়ন করতে হবে। ’
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে নির্বাচনের কর্মকাণ্ড শুরু হয়ে গেছে। ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে যে নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে সেটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ এবং বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু।
কৃষি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ হবে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে। তিনি বলেন, প্রকল্প পরিচালক নিয়োগের জন্য অনেক কর্মকর্তা নানা উপায়ে তদবির করেন। যে কোনো ধরনের তদবির অযোগ্যতা হিসেবে ধরা হবে।
বুধবার (০২ জুলাই) রাজধানীর ফার্মগেটে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল মিলনায়তনে কৃষি মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প মূল্যায়ন সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সভায় কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান সভাপতিত্ব করেন।
উপদেষ্টা তার বক্তব্যে টপ সয়েল রক্ষা, সারের ব্যবহার কমানো, কৃষি জমি নষ্ট করে স্থাপনা নির্মাণ না করা, প্রকল্পের কেনাকাটায় দুর্নীতি না করাসহ বিবিধ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালকদের নির্দেশনা দেন।
সভা শেষে উপদেষ্টা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় বাজার পরিস্থিতি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, চাল আমদানি ও অভ্যন্তরীণ ফলন ভালো হলেও বাজারে দাম বাড়তি। সরকার চেষ্টা করছে তা নিয়ন্ত্রণে আনতে। গণমাধ্যমের সহযোগিতা এক্ষেত্রে অত্যন্ত জরুরি।
দুর্নীতি দমনে সরকারের অবস্থান তুলে ধরে তিনি বলেন, দুর্নীতির লাগাম এখনো পুরোপুরি টেনে ধরা না গেলেও কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। কৃষিভিত্তিক প্রকল্প নিয়ে উপদেষ্টা বলেন, জুন মাসে যেসব প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। সেগুলো বাস্তবায়নের ফলে কৃষকরা কতটা উপকৃত হবেন তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পাশাপাশি বৃষ্টির পানি ধরে রাখা ও খাল খনন, পেঁয়াজ সংরক্ষণে এয়ার ফ্লোভিত্তিক সংরক্ষণাগার ও মৌসুমি সবজি সংরক্ষণে মিনি কোল্ড স্টোরেজ, বীজ আলু সংরক্ষণে পৃথক কোল্ড স্টোরেজ নির্মাণ নিয়েও কাজ চলছে।
নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনায় আগামী ৬ মাসের জন্য নৌবাহিনীকে সুপারিশ করেছে সরকার। তিনি বলেন, এক্ষেত্রে যারা ওখানে কাজ করছে তাদের চাকরির কোনো ক্ষতি হবে না। প্রয়োজনে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ইতোপূর্বে যারা টার্মিনাল অপারেট করেছে তাদের থেকেও সহযোগিতা নিতে পারে।
বুধবার (০২ জুলাই) সচিবালয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনাবিষয়ক সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, মঙ্গলবার (০১ জুলাই) উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি পরিচালনার বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে কর্তৃত্ব প্রদান করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এনসিটি পরিচালনার জন্য অপারেটর নিয়োগ করবে। সরকার এনসিটি পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে আগামী ৬ মাসের জন্য দায়িত্ব প্রদানের জন্য উপযুক্ত বিবেচনা করছে।
দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে বিদেশি কোনো কোম্পানির সঙ্গে বন্দর পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করা হবে না জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর বিষয়ে বিদেশি কোনো কোম্পানির সঙ্গে অদ্যাবধি কোনো চুক্তি সম্পাদন করা হয়নি। বর্তমান সরকার কখনোই দেশ বিরোধী কোনো চুক্তি করবে না বলে দেশবাসীকে আশ্বস্ত করে বলেন, দেশের সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে জনগণের জীবন মানোন্নয়নে সরকার সময়োপযোগী নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। ইউরোপসহ বিশ্বের উন্নত দেশের বিভিন্ন সমুদ্রবন্দরগুলো ডিপি ওয়ার্ল্ড, এডি পোর্টসহ অন্যান্য বৈশ্বিক বন্দর পরিচালনাকারী সংস্থা দ্বারা দক্ষতার সাথে পরিচালিত হয়ে আসছে।
তিনি বলেন, দেশের আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রমে আরও গতিশীলতা আনা প্রয়োজন। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রমকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে কাজ করছে। দুবাই পোর্ট ওয়ার্ল্ড সাথেও এনসিটি পরিচালনার বিষয়ে প্রাথমিকভাবে আলাপ আলোচনা চলছে। তারা শুধু সিপিএ’র অধীনে বিশ্বের উন্নত অন্যান্য বন্দরের ন্যায় চুক্তির মাধ্যমে নির্ধারিত মেয়াদে চট্টগ্রাম বন্দরেও পরিচালনা কার্যক্রম পরিচালনা করবে। সার্বিক কর্তৃত্ব বা মালিকানা চট্টগ্রাম কর্তৃপক্ষের হাতে থাকবে।
আন্তর্জাতিক মানের অপারেটর নিয়োগ হলে বন্দরের গতিশীলতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে- উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, পণ্য খালাসের সময় কমে আসবে, একই সঙ্গে বিশ্বের বড় বড় জাহাজ বন্দরে ভিড়বে। নতুন নতুন নৌ রুট তৈরি হবে। জাহাজ ভাড়া কমে আসবে। বর্তমানে যেখানে চার থেকে পাঁচ হাজার টিইইউস কনটেইনার হ্যান্ডলিং হচ্ছে, সেটি ছয় হাজারে উন্নীত হবে। অর্থাৎ বন্দরে বার্ষিক ১৫ থেকে ২০ ভাগ টিইইউস কনটেইনার হ্যান্ডলিং বৃদ্ধি পাবে। এ সময় উপদেষ্টা সাইফ পাওয়ারটেক এর সাথে বন্দরের অন্যান্য চুক্তি অপরিবর্তিত থাকবে বলে জানান।
মতবিনিময়কালে চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস. এম. মনিরুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।
জাতিসংঘকে বিভ্রান্তিকর তথ্যের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য একটি কার্যকর ব্যবস্থা তৈরি করতে এবং নৈতিক মান বজায় রেখে গণমাধ্যমকে সমর্থন করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
বুধবার (২ জুলাই) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি এ কথা বলেন।
প্রতিনিধি দলে ছিলেন ইউনেস্কোর কার্যালয় প্রধান ও ইউনেস্কোর প্রতিনিধি সুসান ভাইজ এবং ইউনেস্কোর সাংবাদিকদের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র প্রকল্প কর্মকর্তা মেহেদী বেনচেলাহ।
ইউএনডিপি এবং ইউনেস্কোর যৌথভাবে প্রস্তুত করা 'বাংলাদেশের গণমাধ্যমের অবস্থার একটি মূল্যায়ন: মুক্ত, স্বাধীন ও বহুমাত্রিক গণমাধ্যমের উপর গুরুত্বারোপ' শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশের আগে ইউনেস্কোর কর্মকর্তারা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা সত্যিই প্রতিবেদনটির জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রধান সমস্যা হলো বিভ্রান্তিকর তথ্য, ভুয়া খবর...এই বিভ্রান্তিকর তথ্যের কিছু অংশ বাইরে বসবাসকারী লোকেরা ছড়িয়ে দেয়। এর সঙ্গে কিছু স্থানীয় মানুষ জড়িত। এটি একটি ক্রমাগত তথ্যবোমা।’
ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের পাশাপাশি নিয়মিত গণমাধ্যমও অনেক বিভ্রান্তির উৎস উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জাতিসংঘের ভূমিকা কামনা করেন। বলেন, ‘আপনারা শুধু সরকারের সঙ্গে কথা বলবেন না, গণমাধ্যমের সঙ্গেও কথা বলেন।’
স্বাধীন নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, যদি কোনো গণমাধ্যম বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে দিতে থাকে—তাহলে সেই গণমাধ্যমকে মনে করিয়ে দেওয়া উচিত যে এটি বিশ্বাসযোগ্য নয়।
তিনি বলেন, ‘আপনারা জাতিসংঘ। আপনার কথা খুবই গুরুত্বপূর্ণ...আপনাদের সমর্থন আমাদের প্রয়োজন।’
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, বৃহস্পতিবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে নিজস্ব নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি তুলে ধরা হবে বলে ইউনেস্কোর প্রতিনিধি সুসান ভাইজ জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘প্রতিবেদনটিতে কী কার্যকর হচ্ছে, আর কী হচ্ছে না—তা তুলে ধরা হয়েছে। এটি মূল্যায়নে আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ রয়েছে। এই মানের সঙ্গে অনুশীলনগুলোকে আরও ভালোভাবে মানিয়ে নিতে কর্মকর্তা, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য এবং বিচার বিভাগের সদস্যদের প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হবে।’
ইউনেস্কোর জ্যেষ্ঠ প্রকল্প কর্মকর্তা মেহেদী বেনচেলাহ বলেন, প্রতিবেদনে সাংবাদিকদের কর্মপরিবেশ সম্পর্কে কিছু সুপারিশ করা হবে—যা বিশ্বব্যাপী উদ্বেগের বিষয় এবং সংবাদ কক্ষে নারী সাংবাদিকদের নিরাপত্তা সম্পর্কিত।
তিনি বলেন, এই বিষয়গুলোতে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে।
কর্মকর্তারা জানান, প্রতিবেদনটি ইউএনডিপির ‘প্রতিষ্ঠান, নীতি ও সেবার সক্ষমতা উন্নয়ন (এসআইপিএস)’ প্রকল্পের আওতায় এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও গণমাধ্যম বিকাশে ইউনেস্কোর দায়িত্বের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রস্তুত করা হয়েছে।
জুলাইয়ের মাঝামাঝি কিংবা তৃতীয় সপ্তাহের দিকে জুলাই সনদে পৌঁছানোর বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ। তিনি বলেছেন, ‘চেষ্টা করলে জুলাই মাসের মাঝামাঝিতে আমরা একটি সনদের জায়গায় যেতে পারব।’
বুধবার (২ জুলাই) ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের আলোচনার শুরুতে তিনি এ মন্তব্য করেন।
আলী রীয়াজ বলেন, ‘এক বছর আগে, আমরা সবাই মিলে সব ধরনের বাধা-বিঘ্ন মোকাবিলা করে যে অর্জন করতে চেয়েছি, তার একটি পর্যায় অতিক্রম করে আজ এখানে আমরা সমবেত হয়েছি। বাংলাদেশের রাষ্ট্র কাঠামোর পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেন আমরা একটি জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র তৈরি করতে পারি, সেই চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। যেন নাগরিকের গণতান্ত্রিক ও জীবনের অধিকার সুরক্ষিত হয়, যেন গুম-হত্যা, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও বিচারিক হত্যার শিকার হতে না হয় আমাদের।’
‘এটি আপনাদের (রাজনীতিবিদ) অবদান, আপনাদের কর্মীদের অবদান, নাগরিকদের অবদান। এটি সব রাজনৈতিক দলের ঊর্ধ্বে উঠে জনগণের সাফল্য।’
তিনি বলেন, ‘এই সাফল্য শুধু একটি পর্যায়ে এসে থেমে গেলে হবে না। এটিকে সুরক্ষিত করতে হবে এবং সেই সুরক্ষার উপায় খুঁজছি আমরা, যেন সংস্কারের কার্যক্রমে এগিয়ে যেতে পারি। আপনারা তাতে আন্তরিকভাবে সহায়তা করছেন, যদিও এ দায়িত্ব আমাদের সবার।’
‘কখনো কখনো আমরা অগ্রসর হই, কখনো আবার যতটা অগ্রসর হতে চাই, ততটা না পেরে খানিকটা হতাশ হই। কিন্তু তবুও আজকের এই দিনে দাঁড়িয়ে আমার মনে হচ্ছে, আমরা চেষ্টা করলে জুলাই মাসের মাঝামাঝিতে একটি সনদের জায়গায় যেতে পারব।’
ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি বলেন, ‘আপনাদের সবার চেষ্টা ও সহযোগিতা হচ্ছে সবচেয়ে বড় জিনিস। দলগত, জোটগত ও ব্যক্তিগতভাবে চেষ্টা করে আমরা আশাবাদী হয়েছি। আমি মনে করি, আমরা এই জায়গাটিতে পৌঁছাতে পারব। কারণ, আমাদের সবার সেই আন্তরিক চেষ্টা আছে।’
জুলাই অভ্যুত্থানে হতাহতদের স্মরণে আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমরা আমাদের বন্ধু, কর্মী ও ভাইবোনদের হারিয়েছি। অনেকে আহত অবস্থায় এখনো জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আছেন; লড়াই করছেন। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও দায়বদ্ধতা থেকে এখানে আমাদের আসা।’
‘প্রতিদিনই আমরা পরস্পরকে জানছি ও বুঝছি। সে কারণে আমি আশাবাদী। আমরা আশাবাদী যে একটি জায়গায় পৌঁছাতে পারব। কেননা, যে দায় ও দায়বদ্ধতা—সেটি আপনারা প্রাণ দিয়ে উপলব্ধি করেন। আমরাও প্রাণ দিয়ে উপলব্ধি করি। মানুষেরও প্রত্যাশা আছে, তারা আমাদের দিকে তাকিয়ে আছেন। সেই জায়গায়, আমরা সবাই যেন অগ্রসর হতে পারি।’
জুলাইয়ের মাঝামাঝি কিংবা তৃতীয় সপ্তাহের দিকে জুলাই সনদে পৌঁছানোর বিষয়ে আশাবাদের কথা জানিয়ে উদ্বোধনী বক্তব্য শেষ করেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি।
বৈঠকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের পাশাপাশি উপস্থিত আছেন, কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. বদিউল আলম মজুমদার ও ড. আইয়ুব মিয়া।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, জলবায়ু অভিযোজন কার্যক্রমে জবাবদিহি, সমন্বয় ও তরুণদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। তিনি বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন অবকাঠামো ও পানি সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের পরিবীক্ষণ ব্যবস্থায় তরুণ প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। একইসঙ্গে পয়ঃনিষ্কাশন ও চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ইনসিনারেশনের বিকল্প হিসেবে উন্নত প্রযুক্তির মতো নিরাপদ ও ব্যবহারিক সমাধান গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
মঙ্গলবার (০১ জুলাই) বাংলাদেশ সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে ইউনিসেফ বাংলাদেশের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ রানা ফ্লাওয়ার্স-এর নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। বৈঠকে শিক্ষা, সামাজিক খাত ও তরুণদের সম্পৃক্ততার মাধ্যমে জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় যৌথ উদ্যোগ জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
বৈঠকে রানা ফ্লাওয়ার্স শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব—যেমন বন্যা, অপুষ্টি ও শিক্ষা ব্যবস্থার ব্যাহত হওয়া উল্লেখ করে বলেন, ইউনিসেফ তরুণদের জলবায়ু সমাধানের কেন্দ্রবিন্দুতে রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি বিভিন্ন জেলায় তরুণদের নিয়ে পরামর্শ সভার পরিসর বাড়ানোর প্রস্তাব দেন এবং নিয়মিতভাবে তরুণদের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের যোগাযোগের জন্য একটি কাঠামোগত ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
পরিবেশ সচেতনতা তৈরির অংশ হিসেবে ইউনিসেফ একটি যৌথ ডকুমেন্টারি সিরিজ নির্মাণের প্রস্তাব দেয়, যেখানে শিশুদের পরিবেশবান্ধব বার্তা স্থান পাবে। উপদেষ্টা এ প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, এটি বিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে এবং শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও শিক্ষার্থীদের সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা সম্ভব।
বৈঠকে ইউনিসেফ ও মন্ত্রণালয় যৌথভাবে পরিবেশ শিক্ষাভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা ও স্থানীয় পর্যায়ে জলবায়ু উদ্যোগ পরিচালনার ব্যাপারে একমত পোষণ করে। পরিকল্পনায় পুনর্ব্যবহার, বর্জ্য পৃথকীকরণ এবং শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে জরুরি প্রস্তুতির কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, অতিরিক্ত সচিব (জলবায়ু পরিবর্তন) মোহাম্মদ নাভিদ শফিউল্লাহ, ইউনিসেফ বাংলাদেশের চিফ অব ওয়াশ পিটার জর্জ এল ম্যাস, চিফ অব ফিল্ড সার্ভিসেস ফ্রাঙ্কো গার্সিয়া এবং প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট (জলবায়ু) ভ্যালেন্টিনা স্পিনেডি।
পরিবেশ মন্ত্রণালয় ও ইউনিসেফ উভয় পক্ষই জলবায়ুবান্ধব নেতৃত্ব গড়ে তুলতে ও দেশের টেকসই উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে পারস্পরিক সহযোগিতা আরও জোরদারের আশাবাদ ব্যক্ত করে।
এক সময় গ্রামবাংলার প্রকৃতিতে যেসব গাছ ছিল অত্যন্ত পরিচিত ও উপকারি, আজ তার অনেকগুলোই ‘বিলুপ্তপ্রায়’। বন অধিদপ্তরের আয়োজনে বৃক্ষমেলায় হারিয়ে যাওয়া, দুর্লভ এবং ‘বিলুপ্তপ্রায়’ গাছগুলো স্থান পেয়েছে এবার। মঙ্গলবার (০১ জুলাই) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বৃক্ষমেলা ঘুরে দেখা গেছে, দর্শনার্থীরা খুঁজে খুঁজে এসব গাছ কিনছেন। কেউবা আবার ছবি তুলে নিচ্ছেন। অনেক গাছের নাম কেউ কেউ শোনেননি কখনও। অনেক বৃক্ষপ্রেমী আবার অনেকে নিজের শৈশবের স্মৃতির সঙ্গে মেলাতে পেরে আবেগাপ্লুত হচ্ছেন।
নার্সারির মালিক ও বিক্রয়কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঔষধি, ফল, ফুল, বনজ, শোভাবর্ধনকারী ও মশলা জাতীয় বিলুপ্তপ্রায় ও দুর্লভ গাছের মধ্যে রয়েছে বাঁশপাতা, দোলনচাঁপা, চিত্তাগাছ, পারুল, রুদ্রপালাশ, গুটিজাম, জৈষ্ঠ্যমধু, বনসাই, শতমূল, কাউ, রক্ত চন্দন, পানবিলাসী, বিলাতী গাব, অশ্বোক, স্বর্পগন্ধা, বনখেজুর, বালবোরক্স, লম্বা ট্রায়াস অর্কিড ও বলগাছসহ বহু প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় গাছ। এসব গাছের সঙ্গে গাছের পরিচয় ছোট সাইনবোর্ড দিয়ে ঝুলিয়ে দেওয়া রয়েছে।
এছাড়া নার্সারির বিক্রয়কর্মীরা জানিয়েছেন, শোভাবর্ধনকারী গাছ পাকুড়, কুর্চি, ঝিনুক, মোচা, মহুয়া গাছ। কাঠ গাছের মধ্যে রয়েছে, গর্জন, লোহাকাঠ, ছাতিম, ওয়াটার ব্যাম্বো। ফুলের মধ্যে, সোনালু, ককসিয়া, গার্ডেনিয়া, টিপু সুলতান, শিমুল, অঞ্জনা, মহুয়া উল্লেখযোগ্য।
পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন, নগরায়ন, নির্বিচারে বন উজাড়, কাঠের ব্যবসা এবং বনায়নের অভাবে এসব গাছ হারিয়ে যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব গাছ সংরক্ষণ করা না গেলে শুধু প্রকৃতির ভারসাম্যই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, হারিয়ে যাবে বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্যের একটি বড় অংশ। এজন্য মেলা থেকে শুধু গাছ কেনা নয়, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে দেশীয় প্রজাতির গাছ বাঁচিয়ে রাখার অঙ্গীকার করাও জরুরি।
বৃক্ষমেলায় অংশ নেওয়া খান নার্সারির ম্যানেজার জাহাঙ্গীর বলেন, আমরা চেষ্টা করি বিলুপ্তপ্রায় গাছের চারা তৈরি করার। মানুষও আবার আগ্রহ দেখাচ্ছে এসব গাছ রোপণে। তবে সরকারের উচিত এসব গাছ রক্ষায় ভূমিকা রাখা।
কিংশুক ও গ্রিন হাউস নার্সারির বিক্রয়কর্মী রবিউল ইসলাম বলেন, আমরা যেহুতু নার্সারি করি সব ধরনের গাছই রাখতে হয়। মানুষ বইখাতা দেখে অনেক গাছ কিনতে চায়। সে কারণে আমরা সব ধরনের গাছ বহু কষ্টে সংগ্রহে রাখি। নার্সারিগুলো বন-জঙ্গল ঘুরে ঘুরে বিলুপ্তপ্রায় গাছ সংগ্রহ করেন।
বৃক্ষমেলায় কথা হয় রাজধানীর সূত্রাপুর থেকে আসা নীলা আলমগীরের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি ঢাকার অনেক নার্সারিত ঘুরেছি। মন মতো গাছ পাইনা। কিন্ত মেলায় এসে এমন অনেক গাছ পেয়েছি, যেগুলো জীবনেও দেখিনি। মহুয়া গাছ, আর পারুল গাছ কিনেছি। পান বিলাসী গাছও নিয়েছি।
মেলায় আসা বৃক্ষপ্রেমীরা বলছেন, বৃক্ষমেলা শুধু গাছ বিক্রির জায়গা নয়, বরং দেশীয় প্রাকৃতিক ঐতিহ্যকে পুনরুজ্জীবন করার একটা জায়গা। সময় এসেছে নিজ নিজ এলাকায় এসব বিলুপ্তপ্রায় গাছ রোপণ ও সংরক্ষণে সক্রিয় হওয়ার।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব, সদস্য ও সমর্থকরা যতক্ষণ না জুলাই বিপ্লবে নিহত ও আহতদের প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো শুরু করে, দুঃখ প্রকাশ না করে-ততক্ষণ পর্যন্ত তারা শান্তি পাবে না।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আজ শফিকুল আলম আওয়ামী লীগের উদ্দেশে তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লেখেন, “আমরা মাটি থেকে আপনাদের কুৎসিত প্রভাবের দাগ মুছে ফেলব এবং তা রক্ত দিয়ে ধুয়ে ফেলব। আপনারা কখনও শান্তি পাবেন না—যতক্ষণ না শহীদ ও আহতদের প্রতি সম্মান দেখান। যতক্ষণ না আপনি ‘দুঃখিত’ বলেন।’
প্রেস সচিব বলেন, ‘আমরা অপেক্ষা করেছি প্রায় দশ মাস—যাতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব, সদস্যবৃন্দ এবং তাদের সমর্থকরা দুঃখ প্রকাশ করে এবং একটি বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ গড়ার চেষ্টায় আমাদের পাশে দাঁড়ায়। কিন্তু গত বছরের জুলাই থেকে আপনারা যা করেছেন তা হল শহীদদের নিয়ে উপহাস, আমাদের সংগ্রামকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য এবং ১৭ কোটি মানুষকে ‘জঙ্গি’ বলে কলঙ্কিত করেছেন—এই আশায় যে, আপনার ঔপনিবেশিক প্রভুরা এসে আবারো আপনাদের হাতে দেশ তুলে দেবে, যেন লুণ্ঠন ও বিশৃঙ্খলার আরেকটি অধ্যায় শুরু করতে পারেন’।
‘দুঃখিত, এবার আর তা হবে না। জুলাই আমাদের সাহসী করেছে। জুলাই আমাদের শিখিয়েছে প্রতিকূলতার মুখেও মাথা তুলে দাঁড়াতে। জুলাই আমাদের ডিএনএ-তে স্থায়ীভাবে এক বিরল সাহসের জিন প্রবেশ করিয়েছে। আমরা আর আগের মতো নই,’ তিনি বলেন।
শফিকুল আলম বলেন, জুলাই আমাদের শিখিয়েছে হাল না ছেড়ে ঝড়ের মতো গুলির মধ্যেও দাঁড়িয়ে থাকার দৃঢ়তা। জুলাই আমাদের ভুলতে দেয় না আমাদের শহীদদের, যাদের আপনারা নির্মমভাবে হত্যা করেছেন; যাদের চোখ উপড়ে নিয়েছেন, যাদের আত্মাকে ছিন্নভিন্ন করেছেন।
আওয়ামী লীগের উদ্দেশে তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘আপনাদের সঙ্গে কখনও শান্তি হবে না—যতক্ষণ না আপনি ‘দুঃখিত’ বলেন, যতক্ষণ না আপনি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আপনার হাতে রক্ত দেখতে পান।’
মানবতাবিরোধীদের বিরুদ্ধে দৃঢ়তার সাথে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে শফিকুল আলম বলেন, ‘আমরা আপনাদের বিরুদ্ধে লড়ব—আমাদের জমিতে, নদীতে, পাহাড়ে। আমরা লড়ব ভার্চুয়াল জগতেও। আপনারা গণহত্যার সহযোগী ও মানবাধিকারের ডাকাত, আমরা আপনাদের মুখোশ খুলে ফেলব।’
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ জুলাই গণ-অভ্যুত্থান পুনরুত্থান কর্মসূচির উদ্বোধন করে বলেছেন, যে লক্ষ্য নিয়ে তরুণ ছাত্র, জনতা, রিকশাচালক, শ্রমিকরা শহীদ হয়েছেন, আহত হয়েছেন-সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে এই অনুষ্ঠানমালার মাধ্যমে জুলাই-আগস্ট মাসজুড়ে আমরা গত বছরের প্রতিটি দিনকে আবারও পুনরুজ্জীবিত করব। এই অনুষ্ঠানমালার মাধ্যমে সে লক্ষ্য বাস্তবায়নে আবার নতুন করে শপথ নেব এবং এটা আমরা প্রতি বছর করব, যাতে স্বৈরাচার আর যেন মাথাচাড়া দিতে না পারে।
আজ মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে মাসব্যাপী কর্মসূচির উদ্বোধন করেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আজ ইতিহাসের এক গৌরবময় ক্ষণ। এক বছর আগে, এই জুলাই মাসে শিক্ষার্থীরা যে আন্দোলন শুরু করেছিল তা এক অভূতপূর্ব গণ-অভ্যুত্থান রচনা করে আমাদের মুক্তির স্বাদ দিয়েছিল। জুলাই ছিল দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে এক অমোঘ ডাক, জনতার এক জাগরণ। সেই আন্দোলনের মর্মবাণী ছিল— “ফ্যাসিবাদের বিলোপ করে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ, রাষ্ট্রকে জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেওয়া।”
জুলাই গণঅভ্যুত্থাণের স্বপ্ন ছিল নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ এই মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, আমরা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে স্মরণ করার যে অনুষ্ঠানমালা নিয়েছি, এটা শুধু ভাবাবেগের বিষয় নয়, ক্ষোভ প্রকাশের বিষয় নয়। আমরা ১৬ বছর পরে বিরাট বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলাম অভ্যুত্থানের মাধ্যমে এবং যে কারণে অভ্যুত্থান হয়েছিল, তাৎক্ষণিক তাঁর যে লক্ষ্য ছিল সেটা আমরা পূরণ করতে পেরেছি। কিন্তু তাঁর পেছনে ছিল একটা বিরাট স্বপ্ন- নতুনভাবে রাষ্ট্রব্যবস্থা বিনির্মাণ, নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ।
স্বৈরাচার যেন আর কখনও ফিরে আসতে না পারে সে বিষয়ে দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আমরা প্রতি বছর এই সময়টা উদযাপন করব যাতে পরবর্তীতে আবার এই অভ্যুত্থান করার জন্য ১৬ বছর আমাদের অপেক্ষা করতে না হয়। আমরা প্রতি বছর এটা করব, যাতে স্বৈরাচারের কোনো চিহ্ন দেখা গেলেই তাৎক্ষণিক ভাবে আমরা তার বিনাশ করতে পারি।
সেটার জন্য জুলাই গণঅভ্যুত্থান পুনরুত্থান কর্মসূচি পালন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্বৈরাচারের প্রথম পাতা মেলার আগেই যেন আমরা তাকে ধরে ফেলতে পারি। ১৬ বছর যেন আমাদের অপেক্ষা করতে না হয়।
প্রধান উপদেষ্টা তাঁর ভাষণে জুলাই গণঅভ্যুত্থাণে অংশগ্রহণকারী প্রত্যেককে গভীর গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, ‘আমি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি, সেই সব তরুণ-তরুণী, নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ, কৃষক, শ্রমিক, শিক্ষক, রিকশাচালকদের—যারা রাস্তায় নেমে গণতন্ত্রের পতাকা উঁচিয়ে ধরেছিলেন; সাহস, ত্যাগ আর দৃঢ়তার প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন’।
জুলাইকে ঐক্যের মাসে পরিনত করার আহ্বান জানিয়ে দেশবাসীর উদ্দেশে সরকার প্রধান বলেন, আমরা আজ মাসব্যাপী যে কর্মসূচির সূচনা করছি, তা শুধুই স্মরণ নয় বরং একটি নতুন শপথ। গত বছরের জুলাইয়ে এ দেশের সকল শ্রেণি-পেশা-বয়সের মানুষের মধ্যে যে ঐক্য তৈরি হয়েছিল, আমরা চাই, এই জুলাইয়ে সেই ঐক্য আবার সুসংহত হোক।
তিনি বলেন, ‘আমাদের এই কর্মসূচির মূল লক্ষ্য— জনগণকে গণতান্ত্রিক অধিকার সম্পর্কে সচেতন করা, রাজনৈতিক দায়বদ্ধতার দাবি জানানো এবং রক্তের বিনিময়ে পাওয়া সংস্কারের এই সুযোগকে হারিয়ে না ফেলা। আমাদের সামনের পথ অনেক কঠিন, কিন্তু মস্ত বড় সম্ভাবনাও আছে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, জনগণ যখন জেগে ওঠে, তখন কোনো শক্তিই তাদের রুখে দিতে পারে না। সেই বিশ্বাস নিয়েই আমি আপনাদের আহ্বান জানাই—আসুন, এই জুলাই মাসকে পরিণত করি গণজাগরণের মাসে; ঐক্যের মাসে’।
জুলাই-আগস্টের পুনরুত্থান কর্মসূচির সাফল্য কামনা করে প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, এই কর্মসূচির মাধ্যমে আমাদের স্বপ্ন আবার নতুন করে জেগে উঠুক। আমাদের ঐক্য সর্বমুখী হোক, অটুট হোক আমাদের এই অনুষ্ঠানমালার লক্ষ্য।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী এবং শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক সি আর আবরার বক্তব্য রাখেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন এলাকায় বনায়ন ও সবুজায়নের লক্ষ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ও বন অধিদপ্তরের মধ্যে সমঝোতা স্মারক আজ মঙ্গলবার নগর ভবনে স্বাক্ষরিত হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মাননীয় প্রশাসক জনাব মো. শাহজাহান মিয়ার উপস্থিতিতে কর্পোরেশনের পক্ষে কর্পোরেশনের সচিব জনাব মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম এবং বন অধিদপ্তরের পক্ষে ঢাকা সামাজিক বন সার্কেলের বন সংরক্ষক জনাব হোসাইন মুহম্মদ নিশাদ এ সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের এলাকার বায়ুদূষণ, পানিদূষণ, মাটিদূষণ, শব্দদূষণ ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ তথা পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ল্যান্ডস্কেপ উন্নয়ন ও জলাবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত প্রশমণে বনায়ন ও সবুজায়নসহ সৌন্দর্য বর্ধনের মাধ্যমে সার্বিক পরিবেশের উন্নয়নে ৫ বছর মেয়াদি এই চুক্তি স্বাক্ষর হয়। চুক্তির আওতায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচিত জায়গায় কর্পোরেশনের অর্থায়নে নগর বনায়ন কার্যক্রমে বন অধিদপ্তর কারিগরী পরামর্শসহ সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করবে। এছাড়া, বন অধিদপ্তর বনায়ন পরিচালনা ও তদারকি ম্যানুয়াল প্রস্তুত করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনকে সরবরাহ করবে। চুক্তি আনুযায়ী বনায়ন পরবর্তী পরিচর্যা ও সুরক্ষায় স্থানীয় কমিঊনিটির অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে।
চুক্তির প্রথম পর্যায়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন ৮১.১০ কি.মি. দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট ৩৫ টি মিডিয়ানের মধ্যে প্রায় ১৬. কি.মি. দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট ০৬ টি মিডিয়ানে ঘাস ও গাছ রোপণ করা হবে।
স্মারক স্বাক্ষর আনুস্থানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক বলেন, “১৯১৭ সালের পরিকল্পনায় বলা হয়েছিল, ঢাকা হবে একটি বাগানের শহর। কিন্তু অপরিকল্পিত নগরায়ন, আবাসন ও জনসংখ্যার চাপে আজ ঢাকা শহর থেকে সবুজ ও জলাশয় হারিয়ে গিয়েছে। আমরা যদি এখনই কার্যকর ববস্থা গ্রহণ না করা হয় তাহলে এটি পরিত্যক্ত নগরীতে পরিণত হবে।” ঢাকা শহরকে বাঁচাতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন পরিকল্পিত বনায়ন ও সবুজায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করছে উল্লেখ করে প্রশাসক বলেন আগামী অর্থবছরে বৃক্ষরোপন খাতে ৫০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এছাড়া, আজকের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের জন্য তিনি বন অধিদপ্তরের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
সভায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. জিল্লুর রহমান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সচিব জনাব মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম এবং বন অধিদপ্তরের সামাজিক বনায়ন শাখার উপ-প্রধান বন সংরক্ষক ড. মোঃ জগলুল হোসেনসহ উভয় প্রতিষ্ঠানের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে ৮ হাজার জন নিয়োগের লক্ষ্যে আজ থেকে অনলাইনে আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
প্রার্থীদের অবশ্যই এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় ন্যূনতম জিপিএ ২.৫০ পেয়ে উত্তীর্ণ হতে হবে। আগ্রহীরা আগামী ২৪ জুলাই রাত ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন।
গত ২৭ জুন বাংলাদেশ পুলিশ নিয়োগ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। আবেদন করতে হবে পুলিশের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে https://pcc.police.gov.bd ।
আবেদনের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। অবিবাহিত হতে হবে এবং প্রার্থীর বয়স হতে হবে ১৮ থেকে ২০ বছরের মধ্যে।
শারীরিক যোগ্যতা: মেধা কোটার ক্ষেত্রে পুরুষ প্রার্থীর উচ্চতা ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি হতে হবে। বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তান এবং ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী কোটার ক্ষেত্রে ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি।
শারীরিক প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের কোটার ক্ষেত্রে বিধি অনুসৃত হবে। নারী প্রার্থীর উচ্চতা মেধা কোটার ক্ষেত্রে ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি হতে হবে। বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তান এবং ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর প্রার্থীদের ক্ষেত্রে ৫ ফুট ২ ইঞ্চি। শারীরিক প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের কোটার ক্ষেত্রে বিধি অনুসৃত হবে।
মেধা ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী কোটার ক্ষেত্রে বুকের মাপ স্বাভাবিক অবস্থায় ৩১ ইঞ্চি ও সম্প্রসারিত অবস্থায় ৩৩ ইঞ্চি। বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তানদের কোটার ক্ষেত্রে স্বাভাবিক অবস্থায় ৩০ ইঞ্চি ও সম্প্রসারিত অবস্থায় ৩১ ইঞ্চি। দৃষ্টিশক্তি ৬/৬।
আবেদন ফি: ফরম পূরণ করার পর যোগ্য প্রার্থী একটি ইউজার আইডি পাবেন। সেই আইডিতে আবেদন ফরম পূরণের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে যেকোনো টেলিটক প্রিপেইড মোবাইল নম্বর থেকে ৪০ টাকা জমা করতে হবে।
আবেদন করার সময়কাল ১ জুলাই সকাল ১০টা থেকে ২৪ জুলাই রাত ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত।
নিম্নোক্ত সময়সূচি অনুযায়ী জেলাগুলো হতে কনস্টেবল পদে প্রার্থী বাছাই চূড়ান্ত করা হবে।
মাগুরা, কিশোরগঞ্জ, রাজশাহী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ঝিনাইদহ, নাটোর, নীলফামারী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, গাইবান্ধা, নরসিংদী, মেহেরপুর, ফরিদপুর, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও খুলনা জেলায় শারীরিক মাপ, কাগজপত্র যাচাই ও ফিজিক্যাল এন্ডিউরেন্স টেস্ট যথাক্রমে ১০, ১১ ও ১২ আগস্ট সকাল ৮টায়; লিখিত পরীক্ষা ২৩ আগস্ট সকাল ১০টায় এবং মনস্তাত্ত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষা ৩১ আগস্ট সকাল ১০টায় নেওয়া হবে ।
সাচিপুর, নওগাঁ, পঞ্চগড়, পটুয়াখালী, নরসিংদী, নেত্রকোণা, ঢাকা, লক্ষ্মীপুর, গোপালগঞ্জ, কক্সবাজার, দিনাজপুর, সিরাজগঞ্জ ও সিলেট শারীরিক মাপ, কাগজপত্র যাচাই ও ফিজিক্যাল এন্ডিউরেন্স টেস্ট যথাক্রমে ১৩, ১৪ ও ১৭ আগস্ট সকাল ৮টায়; লিখিত পরীক্ষা ২৫ আগস্ট সকাল ১০টায় এবং মনস্তাত্ত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষা ৩১ আগস্ট সকাল ১০টায় হবে।
রাজবাড়ী, কুড়িগ্রাম, মাদারীপুর, মেহেরপুর, মাটিরাঙ্গা, মানিকগঞ্জ, গাইবান্ধা, শেরপুর, ভোলা, বগুড়া, ময়মনসিংহ, ঝালকাঠি, বান্দরবান, নড়াইল, পাবনা ও বরগুনা শারীরিক মাপ, কাগজপত্র যাচাই ও ফিজিক্যাল এন্ডিউরেন্স টেস্ট যথাক্রমে ১৭, ১৮ ও ১৯ আগস্ট সকাল ৮টায়; লিখিত পরীক্ষা ৩০ আগস্ট সকাল ১০টায় এবং মনস্তাত্ত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষা হবে ৩ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টায়।
শেরপুর, কিশোরগঞ্জ, জামালপুর, চাঁদপুর, ঠাকুরগাঁও, পাবনা, সুনামগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, নওগাঁ, পিরোজপুর ও চুয়াডাঙ্গা শারীরিক মাপ, কাগজপত্র যাচাই ও ফিজিক্যাল এন্ডিউরেন্স টেস্ট যথাক্রমে ২০, ২১ ও ২২ আগস্ট, সকাল ৮টায়; লিখিত পরীক্ষা ৩১ আগস্ট সকাল ১০টায়; এবং মনস্তাত্ত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষা ৫ সেপ্টেম্বর সকাল ১০ টায় অনুষ্ঠিত হবে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, জলবায়ু অভিযোজন কার্যক্রমে জবাবদিহিতা, সমন্বয় ও তরুণদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। তিনি বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন অবকাঠামো ও পানি সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের পরিবীক্ষণ ব্যবস্থায় তরুণ প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। একই সঙ্গে পয়:নিষ্কাশন ও চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ইনসিনারেশনের বিকল্প হিসেবে উন্নত প্রযুক্তির মতো নিরাপদ ও ব্যবহারিক সমাধান গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
১ জুলাই বাংলাদেশ সচিবালয়ে তার কার্যালয়ে ইউনিসেফ বাংলাদেশের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ রানা ফ্লাওয়ার্স-এর নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। বৈঠকে শিক্ষা, সামাজিক খাত ও তরুণদের সম্পৃক্ততার মাধ্যমে জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় যৌথ উদ্যোগ জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
বৈঠকে রানা ফ্লাওয়ার্স শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব—যেমন বন্যা, অপুষ্টি ও শিক্ষাব্যবস্থার ব্যাহত হওয়া—উল্লেখ করে বলেন, ইউনিসেফ তরুণদের জলবায়ু সমাধানের কেন্দ্রবিন্দুতে রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি বিভিন্ন জেলায় তরুণদের নিয়ে পরামর্শ সভার পরিসর বাড়ানোর প্রস্তাব দেন এবং নিয়মিতভাবে তরুণদের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের যোগাযোগের জন্য একটি কাঠামোগত ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
পরিবেশ সচেতনতা তৈরির অংশ হিসেবে ইউনিসেফ একটি যৌথ ডকুমেন্টারি সিরিজ নির্মাণের প্রস্তাব দেয়, যেখানে শিশুদের পরিবেশবান্ধব বার্তা স্থান পাবে। উপদেষ্টা এ প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, এটি বিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে এবং শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও শিক্ষার্থীদের সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা সম্ভব।
বৈঠকে ইউনিসেফ ও মন্ত্রণালয় যৌথভাবে পরিবেশ শিক্ষাভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা ও স্থানীয় পর্যায়ে জলবায়ু উদ্যোগ পরিচালনার ব্যাপারে একমত পোষণ করে। পরিকল্পনায় পুনর্ব্যবহার, বর্জ্য পৃথকীকরণ এবং শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে জরুরি প্রস্তুতির কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, অতিরিক্ত সচিব (জলবায়ু পরিবর্তন) মোহাম্মদ নাভিদ শফিউল্লাহ, ইউনিসেফ বাংলাদেশের চিফ অব ওয়াশ পিটার জর্জ এল. ম্যাস, চিফ অব ফিল্ড সার্ভিসেস ফ্রাঙ্কো গার্সিয়া এবং প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট (জলবায়ু) ভ্যালেন্টিনা স্পিনেডি।
পরিবেশ মন্ত্রণালয় ও ইউনিসেফ উভয় পক্ষই জলবায়ুবান্ধব নেতৃত্ব গড়ে তুলতে ও দেশের টেকসই উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে পারস্পরিক সহযোগিতা আরও জোরদারের আশাবাদ ব্যক্ত করে।