জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাজেটে মোট জাতীয় উৎপাদনের অন্তত ৩ দশমিক ২ শতাংশ বরাদ্দের দাবি জানিয়েছেন নাগরিক সমাজ প্রতিনিধিরা।
সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে অর্থপাচার রোধে এবং একটি কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে, দেশের কর ও আর্থিক ব্যবস্থার সংস্কারেরও সুপারিশ করেন তারা। এই উদ্যোগ নিজস্ব উৎস থেকে জলবায়ু অর্থায়নে সহায়ক হতে পারে বলে তারা অভিমত প্রকাশ করেন।
কোস্ট ফাউন্ডেশন, সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (সিপিআরডি), সেন্টার ফর সাসটেইনেবল রুরাল লাইভলিহুড (সিএসআরএল), ইক্যুইটি অ্যান্ড জাস্টিস ওয়ার্কিং গ্রুপ বাংলাদেশ (ইক্যুইটিবিডি), অ্যান অর্গানাইজেশন ফর সোসিও-ইকোনমিক ডেভেলমেন্ট (এওসেড), ক্লাইমেট অ্যাকশন নেটওয়ার্ক অন সাউথ এশিয়া, বাংলাদেশ (কানসা বিডি) এবং লিডারস যৌথভাবে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজনের করে। ইক্যুইটিবিডির রেজাউল করিম চৌধুরী সংবাদ সম্মেলনটি সঞ্চালনা করেন।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করতে গিয়ে ইক্যুইটিবিডির সৈয়দ আমিনুল হক বলেন, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় দীর্ঘমেয়াদে জলবায়ু সহনশীল করে তোলার লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ডেল্টা প্ল্যান ২১০০, মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা ২০৩০ এবং ন্যাশনাল ডিটারমাইন্ড প্ল্যান ইত্যাদি সরকারি কৌশলগত জলবায়ু পরিকল্পনাহসূহ বাস্তবায়নে প্রতি বছর জিডিপির প্রায় ৩ দশমিক ২ শতাংশ (বছরে ১৮৩০০০ কোটি টাকা) অর্থ প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমানে বিনিয়োগ বা বরাদ্দ সেই চাহিদার তুলনায় অনেক কম।
আমিনুল হক আয়োজকদের পক্ষ থেকে কয়েকটি সুনির্দিষ্ট দাবি তুলে ধরেন। প্রস্তাবগুলো হলো- সরকারকে অবশ্যই কৌশলগত পরিকল্পনা এবং বাস্তব প্রয়োজনানুযায়ী জলবায়ু অর্থায়ন হিসেবে জিডিপির কমপক্ষে ৩.২ শতাংশ বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ভিন্ন ভিন্ন বরাদ্দ না দিয়ে একটি সমন্বিত জাতীয় জলবায়ু বাজেট বরাদ্দ ও তার বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। জলবায়ু অর্থায়নের জন্য বৈদেশিক ঋণের উপর নির্ভর না করে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে এই অর্থ সংগ্রহে জোর দিতে হবে। অভ্যন্তরীণ উৎস হতে অর্থ সংগ্রহের লক্ষ্যে অর্থপাচার রোধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়া উপকূল সুরক্ষা সম্পর্কিত অবকাঠামো কর্মসূচিকে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিনিয়োগ খাত হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
সিএসআরএলের মো. জিয়াউল হক মুক্তা বলেন, ডেল্টা পরিকল্পনা এবং মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনাসহ বিভিন্ন সরকারি পরিকল্পনায় নীতিগত সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ বাজেট এই অসঙ্গতির ফলাফল, যেখানে বাস্তবসম্মত জলবায়ু অর্থায়নের লক্ষ্য নেই। সরকারকে কৌশলগত জলবায়ু পরিকল্পনার বিষয়গুলিতে জোর দিতে হবে, এবং সেই অনুযায়ী জলবায়ু অর্থ বরাদ্দ করতে হবে।
শ্রমিক বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে পোশাকশিল্পে চলমান অস্থিরতা না কাটলে আজ রোববার থেকে কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের হুমকি দিয়েছিল কারখানা মালিকরা। তবে কারখানায় অস্থিরতা তৈরি হলে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে সব কারখানা খোলা রাখতে বলেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। তিনি বলেন, ‘দেশের অর্থনীতিকে বিপদে ফেলতে কেউ যদি কারখানা বন্ধ রাখার অপচেষ্টা করেন, সেটা মনে রাখা হবে।’ এমন আশ্বাস পেয়ে কারখানা মালিকরা শর্ত সাপেক্ষ আজ থেকে সব কারখানা খোলা রাখতে রাজি হয়েছেন। তবে, কোনো কারখানায় অস্থিরতা তৈরি হলে আগামীকাল সোমবার থেকে সেই কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের ঘোষণা দেন তারা।
গতকাল শনিবার দুপুরে রাজধানীর উত্তরায় অবস্থিত তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ভবনে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় শিল্প উপদেষ্টার এই আশ্বাস ও কারখানা মালিকদের পক্ষ থেকে নতুন ঘোষণা দেওয়া হয়। তৈরি পোশাক কারখানায় চলমান সংকট ও উত্তরণের পথ নিয়ে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে বিজিএমইএ। এতে উপস্থিত ছিলেন শ্রম উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, সেনাবাহিনীর নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মো. মঈন খান ও বিজিএমইএ সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।
মতবিনিময়ের শুরুতে বিজিএমইএর পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘অস্থিরতা না কাটলে আগামীকাল (আজ) থেকে তারা কারখানা বন্ধ রাখবেন।’ বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনও (বিকেএমইএ) বিজিএমইএর এই সিদ্ধান্তের প্রতি সমর্থন জানায়।
পরে সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে সব কারখানা খোলা রাখতে মালিকদের নির্দেশনা দিয়ে শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, ‘তৈরি পোশাক খাতে উদ্ভূত সমস্যা সমাধানে সরকার কমিটি করেছে। এই কমিটির মাধ্যমে সবার সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত সমস্যার সমাধান করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘ব্যবসা যেমন চালাতে হবে, শ্রমিকদের অধিকারও রক্ষা করতে হবে। এটার সমন্বয়ের জন্যই আমরা সবাই এখানে উপস্থিত হয়েছি। একসঙ্গে কাজ করার সংস্কৃতি যেটা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল, সেটা আবার চালু করতে হবে। মালিক পক্ষ বলেছে ব্যাংকের কী কী সমস্যা আছে, আমরা সেগুলো সমাধানে কাজ করব।’
এ সময় শ্রম উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, ‘দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি হওয়ায় অনেকের মতো শ্রমিকরাও নিজেদের কথা বলছেন। শ্রমিকদের অভিযোগ সমাধানে শ্রমসংক্রান্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা সব অভিযোগ ও দাবি নিয়ে কাজ শুরু করেছে। তবে শ্রমিকের আন্দোলনে একদমই যে ষড়যন্ত্র নেই- এমনও নয়।’
শ্রম উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘ইতোমধ্যে শ্রমিকদের জন্য কোন প্রক্রিয়ায় রেশনিং ব্যবস্থা চালু করা যায়, সে বিষয়ে কাজ শুরু করেছে সরকার। এ ছাড়া গত বছরের শেষ দিকে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনের সময় যেসব মামলা হয়েছে, সেগুলো প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। শ্রম আইনের মধ্য থেকে ট্রেড ইউনিয়ন করার যতটা সুযোগ আছে, তা নিশ্চিত করবে সরকার।’
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, ‘শ্রমিক-মালিক কেন পরস্পরকে দোষারোপ করবে? বরং এটা জরুরি, আমাদের পরস্পরের দায়িত্বটা নিতে হবে। এই সেক্টর রক্ষা করা আমাদের দেশপ্রেমেরই অংশ। দেশের মানুষকে ভালোবাসলে এই সেক্টরকে আমাদের রক্ষা করতে হবে। সামনে জিএসপি সুবিধা এলে এই বিষয়গুলো সামনে আসবে। এই অর্ডারগুলো অন্য দেশে চলে যাক- এটা আমরা কেউ চাই? তাই কেউ পক্ষ-বিপক্ষ হওয়া যাবে না। আমাদের সবার খেয়াল রাখতে হবে দেশের অর্থনীতিকে রক্ষা করতে।’
সেনাবাহিনীর নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মো. মঈন খান বলেন, ‘শ্রমিকদের দাবিগুলো যৌক্তিক, তবে সমাধান না হলে শিল্পের অস্থিরতা নিরসন সম্ভব নয়। পোশাক শিল্পকে রক্ষায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করবে সেনাবাহিনী।’
তিনি বলেন, ‘পোশাক শিল্পে চলমান এ অস্থিরতার জন্য মূলত তিনটি কারণ দায়ী। এগুলো হলো- বহিরাগতদের আক্রমণ, শ্রমিকদের যৌক্তিক ও অযৌক্তিক দাবির সমন্বয়ে অস্থিরতা ধরে রাখা এবং ঝুট ব্যবসার আধিপত্য। তবে বহিরাগতদের আক্রমণ এখন আর হচ্ছে না।’
সভায় সভাপতির বক্তব্যে বিজিএমইএ সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সরকার নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেওয়ায় আগামীকাল (আজ) সব পোশাক কারখানা খোলা থাকবে। তবে কোনো কারখানায় অস্থিরতা তৈরি হলে আগামী পরশু (আগামীকাল) থেকে সেই কারখানা শ্রম আইনের ১৩/১ ধারা (কাজ নেই, বেতন নেই) অনুযায়ী অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে।’
পোশাক খাতের অন্য সংগঠনগুলোর নেতারাও বিজিএমইএ সভাপতির এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে সায় দিয়েছেন।
সভায় বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও হা-মীম গ্রুপের চেয়ারম্যান এ কে আজাদসহ বিভিন্ন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলোর নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বিদ্যমান আইন দিয়ে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন সম্ভব নয় বলে মনে করছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা, রাজনৈতিক দলের নেতা ও বিশিষ্টজনরা। গতকাল শনিবার গুলশানে এক হোটেলে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল আয়োজিত ‘বাংলাদেশে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ’ বিষয়ে এক সংলাপ অনুষ্ঠানে তারা এ মত দেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নির্বাচন কমিশন নিয়োগ দেওয়ার বিধানটি সংবিধান থেকে বাদ দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের মুখ্য পরিচালক ডা. মো. আবদুল আলিম। নির্বাচন কমিশন নিয়োগ প্রক্রিয়া যাতে সরকারের প্রভাবমুক্ত থাকে সেটিও দেখতে হবে বলে পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
সংলাপে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, ‘নির্বাচন কমিশনের নিয়োগ প্রক্রিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। প্রয়োজনে তিন স্তরের একটা সার্চ কমিটি থাকতে পারে। তবে যত ভালো কমিশন গঠন হোক না কেন, দেশে যতগুলো ভালো নির্বাচন হয়েছে, অন্তবর্তী বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই হয়েছে। তাই একটি নিরেপক্ষ নির্বাচনের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোকে সৎ হতে হবে।’
অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিটির প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘দায়মুক্তির বিধান যুক্ত করে ২০২২ সালের প্রণীত আইনে যাকে খুশি তাকে নিয়োগ দেওয়া সম্ভব। এর আগের নির্বাচন কমিশন পোস্ট অফিসের ভূমিকা পালন করেছে, তারা সংবিধান লঙ্ঘন করেছে।’ নতুন করে রাজনৈতিক ঐকমত্যের ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে ইসি গঠনে বাছাই কমিটি করতে হবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, ‘নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে আগামীর নির্বাচন কমিশন দেখতে চাই।’
বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সহকারী সম্পাদক রুমিন ফারহানা বলেন, ‘সার্চ কমিটির মাধ্যমে পাওয়া নাম নিয়ে আবার রাজনৈতিক দলের কাছে ফিরে যেতে হবে, কারণ রাজনৈতিক দলগুলো এর সবচেয়ে বড় স্টেকহোল্ডার।’
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ‘সবার আগে প্রয়োজন বিদ্যমান আইনটি বাতিল করা। এমনভাবে কমিশন গঠন প্রক্রিয়া প্রণয়ন করতে হবে, যাতে কোনো সরকার তা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে।’
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকী বলেন, ‘অন্যান্য দেশের সঙ্গে তুলনা নয়, বাংলাদেশের বাস্তবতার আলোকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’ এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বলেন, ‘স্থায়ী সমাধান এখন চিন্তা না করে কী করে পরবর্তী নির্বাচন ভালো করা যায়, সেই পদক্ষেপ নিয়ে এখন ভাবতে হবে।’
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ বিচার বিভাগকে কোনও অবস্থাতেই নির্বাচন কমিশন গঠনে যুক্ত করা উচিত হবে না মনে করেন। তিনি সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ, রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ ও ছাত্র প্রতিনিধির সমন্বয়ে সার্চ কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন্দ বিগত কমিশনকে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার দায়ে আইনের আওতায় আনার কথা বলেন।
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নূরুল হক নূর সাত শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধি নিয়ে সাত সদস্যের সার্চ কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেন। এ ছাড়া তিনি দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ এবং আনুপাতিক নির্বাচনী ব্যবস্থার প্রস্তাব করেন। সংলাপে জাতীয় নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে অংশ নেন আরিফুল ইসলাম আদিব মো. মিরাজ মিয়া ও নাহিদা সারওয়ার চৌধুরী সামান্তা। তারা বলেন, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগের মধ্যে ভারসাম্য না থাকলে শুধু নির্বাচন কমিশন দিয়ে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া সম্ভব নয়। কমিশনকে ডি ফ্যাক্টো অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ পাওয়ার দেওয়া হলে নির্বাচন পরিচালনা সহজ হবে। ছোট-বড় সব দলের মতামতকে সমান গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেন তারা। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. রওনক জাহান। সংলাপে স্বাগত বক্তব্য দেন ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের চিফ অব পার্টি ডানা এল ওল্ডস।
এ ছাড়া ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের মুখ্য পরিচালক ড. আব্দুল আলিম একটি নীতি প্রস্তাবনা উপস্থাপন করে বলেন, যেকোনও নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা নির্বাচন কমিশন নিয়োগপ্রক্রিয়া থেকেই শুরু হয়।
বিভিন্ন দেশের নির্বাচন কমিশন ও ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা শেষে স্বাধীন কমিশন গঠনে তিনি সুনির্দিষ্ট পাঁচটি প্রস্তাব তুলে ধরেন। এর মধ্যে রয়েছে- প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন-২০২২ আন্তর্জাতিক নির্দেশক নীতিমালা অনুসারে একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন কমিশন নিয়োগের নিশ্চয়তা দেয় না। অন্তর্বর্তী সরকারের দুটি বিকল্প রয়েছে বিদ্যমান আইনটিকে পুনর্লিখন বা একটি নতুন আইন প্রণয়ন এবং বিদ্যমান আইনটি স্থগিত করা। যে বিকল্পই বেছে নেওয়া হোক না কেন, আইনটিকে নিশ্চিত করতে হবে।
অনুসন্ধান কমিটি গঠন করতে হবে সরকারি এবং নাগরিক সমাজের মধ্য থেকে নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় পেশাদারদের নিয়ে। কমিটি অবশ্যই স্বাধীন এবং যেকোনো ধরনের প্রভাব থেকে মুক্ত হতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোনো ধরনের প্রভাব থাকতে পারবে না। অন্যদিকে নিয়োগের মানদণ্ডগুলো পেশাদার, সৎ এবং নিরপেক্ষ লোকদের নিযুক্ত করার নিশ্চয়তা দেওয়ার জন্য দৃঢ় হতে হবে। যোগ্যতার মানদণ্ডে পেশাদারত্ব, রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা, নৈতিক সততা, পূর্ববর্তী চাকরিতে বুদ্ধিবৃত্তিক সততা, প্রয়োজনীয় যোগ্যতা এবং দক্ষতা, চারিত্রিক স্বাধীনতা এবং শক্তি, সব নির্বাচনী অংশীজনের কাছে সাধারণ গ্রহণযোগ্যতা এবং একটি বস্তুনিষ্ঠ অবস্থান বজায় রাখার সংকল্প থাকা, অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
এ ছাড়া আইনে একটি উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা এবং ব্যাপকভিত্তিক পরামর্শ গ্রহণমূলক নির্বাচন প্রক্রিয়া অন্তর্ভুক্ত থাকবে, যার মধ্যে উন্মুক্ত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রদান, সাক্ষাৎকার গ্রহণ, সব স্তরে নাম প্রকাশ এবং নাগরিকদের মতামত গ্রহণের ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে। প্রতিটি পদক্ষেপ, কর্মকাণ্ড, যোগাযোগ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ, আন্তরিক এবং সহজ-সরল হতে হবে এবং নির্বাচন প্রক্রিয়ায় এমন একটি পদ্ধতি অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে, যা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আদর্শগত পার্থক্য থাকলেও এক ধরনের সহমত নিশ্চিত করে।
এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময় সারা দেশে ৫৪৮ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুম থেকে পাঠানো ডেঙ্গুবিষয়ক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়াদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৪ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২৪ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪৬ জন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ১৬৯ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ১৯০ জন, খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২০ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২৪ জন, রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) নয়জন ও রংপুর বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১২ জন রয়েছেন।
গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৩৫৮ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। চলতি বছর ১৬ হাজার ৫৫১ জন ছাড়পত্র পেয়েছেন।
চলতি বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ১৮ হাজার ৫৮৯ জন। এর মধ্যে ৬২.০ শতাংশ পুরুষ ও ৩৮.০ শতাংশ নারী রয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। চলতি বছরের এ যাবত ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ১০৬ জন।
২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এক হাজার ৭০৫ জনের মৃত্যু হয়। পাশাপাশি ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন তিন লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন।
সম্পাদক পরিষদ বলেছে, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ঢালাও হত্যা মামলা অন্তর্বর্তী সরকারের স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতিশ্রুতির লঙ্ঘন। শনিবার সম্পাদক পরিষদের সভাপতি মাহফুজ আনাম ও সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদের সই করা এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়।
এতে বলা হয়, ঢালাও অভিযোগের ভিত্তিতে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলার ঘটনা এখনো অব্যাহত রয়েছে। এ ধরনের মামলা প্রচলিত আইনের অপব্যবহারের শামিল। একই সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতিশ্রুতিরও লঙ্ঘন।
বিবৃতিতে বলা হয়, সাংবাদিকরা কোনো অপরাধ করে থাকলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে যথাযথ ধারা অনুসরণ করে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। সম্পাদক পরিষদ আরও জোর দিয়ে বলতে চায়, পেশাদারিত্ব বাদ দিয়ে নীতিবিবর্জিত ও লেজুড়বৃত্তির সাংবাদিকতা বর্জনীয়। যেসব সাংবাদিক বিগত সরকারের নানা নিপীড়নমূলক কর্মকাণ্ডে সাংবাদিকতার নামে সমর্থন দিয়েছেন, প্রেস কাউন্সিলে একটি কমিটি গঠন করে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত ও অনুসন্ধান হতে পারে। সেখানে দোষী সাব্যস্ত হলে প্রেস কাউন্সিল আইনে তাদের সাজা হতে পারে। তাদের অন্যান্য অপরাধের ক্ষেত্রে প্রেস কাউন্সিলের সুপারিশের ভিত্তিতে প্রচলিত আইনে তাদের বিচার চলতে পারে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বিগত সরকারের সময়ে ডিএসএ/সিএসএসহ নিবর্তনমূলক বিভিন্ন আইন ও হয়রানিমূলক আটক-গ্রেপ্তারের মাধ্যমে সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধের যে প্রয়াস চালানো হয়েছিল, তা বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে অত্যন্ত নিন্দিত ও সমালোচিত হয়েছিল। আর বর্তমানে সাংবাদিকদের নামে এভাবে ক্রমাগত হত্যা মামলা দেওয়ার প্রবণতাও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অন্তর্বর্তী সরকারের ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ন করছে।
এ অবস্থায় যথাযথভাবে যাচাই-বাছাই করে অভিযুক্ত সাংবাদিকদের কোনো সংশ্লিষ্টতা না পাওয়া গেলে এসব মামলা থেকে দ্রুত তাদের অব্যাহতি দেওয়ার জন্য বিবৃতিতে আহ্বান জানিয়েছে সম্পাদক পরিষদ।
অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আমরা চেষ্টা করব নিজেরা নিজেদের অর্থের সংস্থান করতে। তবে লক্ষ করতে হবে আমরা যেন পরমুখাপেক্ষী না হই। পরমুখাপেক্ষী হওয়ার বিপদ অন্তর্বর্তী সরকার টের পাচ্ছে। একই সঙ্গে সরকারি খরচ ও অন্য ব্যয় নির্বাহে অর্থ প্রয়োজন।
শনিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাল্টিপারপাস হলে ‘অর্থ আইন, ২০২৪-এর মাধ্যমে প্রত্যক্ষ করের ক্ষেত্রে আনীত পরিবর্তন’ বিষয়ে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন তিনি। আলোচনা সভাটির আয়োজন করে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (ট্যাকসেশন) অ্যাসোসিয়েশন।
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা কমাবো না। আমাদের ঘাটতি বাজেট থাকে। বাজেটের বড় অংশ বাইরে থেকে ঋণ হিসেবে আনতে হয়। দিন দিন ঋণের বোঝা বাড়ছে। আমরা চেষ্টা করব নিজেরা নিজেদের অর্থের সংস্থান করতে। তবে এটা ঠিক যে নিজেদের অর্থে হবে না, বাইরে থেকেও অর্থ আনতে হবে। তবে লক্ষ করতে হবে আমরা যেন পরমুখাপেক্ষী না হই। এ সময় সরকার যেন কোনো অর্থের অপচয় না করে, সেদিকেও লক্ষ রাখার পরামর্শ দেন তিনি।
তিনি বলেন, একটা কথা আছে- আপনার হাতটা যদি আমার পকেটে থাকে, আমি ডান দিকে গেলে আপনিও যাবেন। আমি বাঁয়ে গেলে আপনিও বায়ে যাবেন। সেটা কিন্তু হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করছি। দাতা সংস্থারা যেদিকে বলে যেতে, অবশ্য আমরা চেষ্টা করছি নিজেরা অ্যাসল্ট (প্রতিউত্তর) করতে। ডান দিকে যেতে বললে আমার যাওয়ার কথা বাঁদিকে, বাঁদিকে গেলে আমার যাওয়ার কথা ডান দিকে। সেটা অনেক সময় সম্ভব হয় না। আমরা চাই না তাদের ওপর নির্ভরশীল হতে।
প্রকল্পগুলো মাঠ পর্যায়ের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে নেওয়া হয় না। ফলে অর্থের অপচয় হয় জানিয়ে সরকারের এ উপদেষ্টা বলেন, যেটা দরকার তার ভিত্তিতে যেন প্রকল্প আসে।
এনবিআরের আইনকে ব্যবসাবান্ধব করার ঘোষণা দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেন, ‘আমরা যথেষ্ট রাজস্ব আদায় করতে পারছি না। আমরা ঘাটতি বাজেট করছি। পরবর্তী প্রজন্মের ওপর বেশি বেশি ঋণের দায় চাপিয়ে দিচ্ছি। করদাতারা তাদের দেওয়া করের অপচয় দেখতে চায় না। প্রতি বছর বড় অঙ্কের টাকা আমরা কর ছাড় দেই। এটার বড় অংশ ঠিক করলে কর আদায় বাড়বে। আমরা সঠিকভাবে কর আইন প্রয়োগ করতে চাই।
সবাইকে অনলাইনে রিটার্ন দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, আপনাদের পরিচিতদেরও অনলাইনে রিটার্ন দিতে আহ্বান করবেন। আমাদের আইনকানুন ব্যবসাবান্ধব করতে হবে। ২০১২ সালে আমরা মুসক আইন করেছি, অথচ ১২ বছরে তার ইংরেজি ভার্সন হয়নি। তাহলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা প্রস্তুতি নিতে পারবেন কীভাবে?
সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় স্থান ও সুফি মাজারে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে সরকার।
হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার বলেছে, ধর্মীয় উপাসনালয় ও সাংস্কৃতিক স্থাপনাগুলো রক্ষায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আজ শনিবার এক বিবৃতিতে এই নিন্দা জানানো হয়।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের জারি করা এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক স্থান এবং সুফি মাজারগুলোতে যেকোনো ঘৃণামূলক বক্তব্য এবং হামলার তীব্র নিন্দা জানায়।’
এতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, একদল দুর্বৃত্ত গত কয়েকদিন ধরে দেশের সুফিদের পবিত্র মাজার এবং স্থানগুলো আক্রমণ করছে বলে তাদের নজরে এসেছে।
এতে বলা হয়, হামলার সঙ্গে জড়িত অশুভ শক্তিকে আইনের আওতায় এনে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে সরকার তৎপর রয়েছে।
সরকার জানায়, বাংলাদেশ হাজার বছর ধরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সব ধর্মের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের দেশ।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, 'আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলছি, আমরা সম্প্রীতির দেশ হিসেবে থাকব এবং ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক সহিষ্ণুতা ও সম্প্রীতি বিঘ্নিত করার যেকোনো প্রচেষ্টা নির্দ্বিধায় কঠোরভাবে দমন করা হবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে সাধারণ শিক্ষার্থীদের জোরাল অবস্থানের পর বন্ধ করা হলো অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের ছাত্র সংগঠন ‘গণতান্ত্রিক ছাত্র শক্তি’র সব কার্যক্রম। আজ শনিবার সংগঠনটির অফিসিয়াল ফেইসবুক পেজে দেওয়া এক স্ট্যাটাস থেকে এ তথ্য জানা যায়।
শিক্ষা ব্যবস্থার পুনর্গঠন, রাজনৈতিক ব্যক্তি, পরিসর ও সংস্কৃতি নির্মাণ, শিক্ষার্থী কল্যাণ, ছাত্র-নাগরিক রাজনীতি নির্মাণকে ও রাষ্ট্র-রাজনৈতিক ব্যবস্থা পুনর্গঠনের অঙ্গীকার নিয়ে গত বছরের ৪ অক্টোবর আত্মপ্রকাশ করে ‘গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি’।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ছিলেন এই সংগঠনের সদস্য সচিব আর যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ছিলেন এই সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহবায়ক।
৩১ সদস্যের এই কমিটির অনেকেই বর্তমানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক এবং সহসমন্বয়ক পদে আছেন। এমন এক সময়ে গণতান্ত্রিক ছাত্র শক্তি তাদের কমিটি ও কার্যক্রম স্থগিত করেছে যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে সকল ধরণের ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছে।
গতকাল শুক্রবার শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সব ধরনের দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন।
সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আট দফা বা নয় দফার অন্যতম একটি দফা ছিল ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা। কিন্তু সেই কথাই অনেকেই এখন ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে বলার চেষ্টা করছেন। সমন্বয়কদের অনেকেই এখন ছাত্ররাজনীতির পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। আমরা এটি মেনে নেব না।
আগামী ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ক্যাম্পাস থেকে রাজনীতি নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত ক্লাসে না ফেরার কথা জানান এই শিক্ষার্থীরা।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এর প্রভাবে সারা দেশে ভারী বর্ষণ হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। আজ শনিবার সকালে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এমন খবর জানানো হয়েছে।
আবহাওয়া অফিস বলছে, এটি মৌসুমি নিম্নচাপ। এর প্রভাবে সারা দেশে বৃষ্টি ঝরবে। বিশেষ করে উপকূল অঞ্চলে বজ্র ও ঝোড়ো হাওয়াসহ অতিভারী বৃষ্টি হতে পারে।
শনিবার সকালে দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে সংস্থাটি জানায়, যশোর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত স্থল নিম্নচাপটি সামান্য উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে ঘনীভূত হয়ে আজ সকাল ৯ টায় (১৪ সেপ্টেম্বর) একই এলাকায় গভীর স্থল নিম্নচাপ আকারে অবস্থান করছে। এটি আরও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও সমুদ্র বন্দরসমূহের উপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে তিন নম্বর (পুন:) তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
এদিকে, টানা ভারী বৃষ্টিতে কক্সবাজার শহরের বেশিরভাগ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। সৈকত এলাকার হোটেল-রিসোর্ট, কটেজ জোনে জলাবদ্ধতা দেখা দেওয়ায় বিপাকে পড়েছেন পর্যটকরা। পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেলে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কয়েক হাজার পর্যটক আটকা পড়েছেন। এছাড়া সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে লাল পতাকা উড়িয়ে পর্যটকদের সমুদ্রে নামতে নিষেধ করা হচ্ছে। বৃষ্টিতে শহরের প্রধান সড়ক, সৈকত সড়কসহ অন্তত ৩৫টি উপসড়ক বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে। এতে কয়েকশো দোকানের মালামাল নষ্ট হয়েছে। হাজারো ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন সেখানকার মানুষেরা। সব মিলিয়ে জনজীবনে নেমেছে স্থবিরতা।
ঢাকায় পৌঁছেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল। আজ শনিবার দেশটির রাজস্ব দপ্তরের ডেপুটি আন্ডার সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যানের নেতৃত্বে দলটি ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। তাদের স্বাগত জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আমেরিকা অনুবিভাগের মহাপরিচালক খন্দকার মাসুদুল আলম।
তবে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু আজ বিকেলে দিল্লি হয়ে আলাদাভাবে ঢাকায় আসবেন। শনিবার প্রতিনিধিদলটি ঢাকায় এলেও মূলত বৈঠকগুলো হবে কাল থেকে। আগামীকাল রোববার অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবং অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবে প্রতিনিধি দলটি।
এদিন দুপুরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলটির সদস্যরা পররাষ্ট্রসচিব এম জসীম উদ্দিনের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেবেন। বিকেলে প্রতিনিধিদলের নেতা যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব দপ্তরের ডেপুটি আন্ডার সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
প্রতিনিধিদলে আরও রয়েছেন ইউএসএইডের এশিয়াবিষয়ক উপ-সহকারী প্রশাসক অঞ্জলি কৌর।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, আর্থিক স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের চাহিদা মেটাতে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে সহায়তা করতে পারে, তা নিয়ে আলোচনার জন্য ওয়াশিংটন থেকে একটি প্রতিনিধিদল ঢাকায় আসছে। ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের অংশীদারদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতার বিকাশে সহায়তা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করবেন।
সূত্র জানায়, অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণের জন্য আলোচনা করতে চায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এজন্যই মার্কিন প্রতিনিধি দল ঢাকায় এসেছে।
পররাষ্ট্র সচিব এম জসীম উদ্দিন জানিয়েছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদলের আসন্ন ঢাকা সফরে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের আলোচনা বহুমাত্রিক হবে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আজ শনিবার ঢাকায় আসছে যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল। ছয় সদস্যের প্রতিনিধিদলটির নেতৃত্ব দেবেন যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব ও অর্থ দপ্তরের আন্তর্জাতিক অর্থায়নবিষয়ক সহকারী আন্ডার সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যান। প্রতিনিধিদলে থাকছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু। তবে তিনি সরাসরি ওয়াশিংটন থেকে আসবেন না। দিল্লি সফর শেষ করে ঢাকায় আসবেন লু। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের জরুরি চাহিদা এবং দুই দেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নিয়ে এই সফরে যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও সংস্কারে কীভাবে সহায়তা করা যায়, তাতে গুরুত্ব দেবে।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণের সন্ধিক্ষণে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে সংস্কারপ্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার এক দারুণ সুযোগ তৈরি হয়েছে। সে সঙ্গে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের আমলে দুই দেশের সম্পর্ক নিরবচ্ছিন্নভাবে এগিয়ে নেওয়ার পথ উন্মোচিত হয়েছে। ফলে অর্থনৈতিক ও গণতান্ত্রিক সংস্কারে যেখানে যেখানে সহযোগিতার সুযোগ আছে, সেখানেই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র। এদিকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদল ঢাকায় আসছে। এটা বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে যুক্তরাষ্ট্র যে গুরুত্ব দেয়, তার একটা বড় প্রতিফলন। আমাদের সঙ্গে তাদের আলোচনাটা বহুমাত্রিক হবে। এটা শুধু একটি বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। সেভাবেই আমাদের দিক থেকে প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
আলোচ্যসূচিতে কোন বিষয়ে গুরুত্ব পাবে, জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘আমাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে কথাবার্তা বলব এবং তার মধ্যে বহুমাত্রিকতা হবে। কিন্তু আমি আলোচনার আগে বা প্রতিনিধিদল বসার আগে কোনো ধরনের সুনির্দিষ্ট আলোচ্যসূচির বিষয় প্রকাশ করে আলোচনাকে প্রভাবিত করতে চাই না। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের সদস্যরা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনসহ একাধিক উপদেষ্টার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে পারেন।
ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী এলাকার সীমান্তে গত সোমবার ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে জয়ন্ত কুমার সিংহ (১৫) নামে বাংলাদেশি তরুণকে হত্যার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যরা।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে ভারতের অভ্যন্তরে পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা ও ভারতের ফুলবাড়ী আইসিপিতে বিজিবি উত্তর-পশ্চিম রিজিয়ন কমান্ডার এবং আইজি বিএসএফ নর্থ বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ার কমান্ডারের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে এই প্রতিবাদ জানান বিজিবির ঠাকুরগাঁও সেক্টর সদর দপ্তর।
সৌজন্য সাক্ষাতে বিজিবির পক্ষে রংপুর উত্তর-পশ্চিম রিজিয়নের রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খন্দকার শফিকুজ্জামান পিএলসি, ঠাকুরগাঁও সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মুহাম্মদ তৌহিদুর রহমানসহ অন্যান্য বিজিবি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বিএসএফের পক্ষে আইজি নর্থ বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ার কমান্ডার ইন্সপেক্টর জেনারেল শ্রী সুরিয়া কান্ত, শিলিগুড়ি ও কিশানগঞ্জ সেক্টর কমান্ডার এবং অন্য বিএসএফ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেন পঞ্চগড় ১৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিয়াউল হক। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী এলাকায় গত সোমবার বিএসএফ টহল দল কর্তৃক বাংলাদেশি নাগরিক জয়ন্ত কুমার সিংহকে গুলি করে হত্যা করে বিএসএফ। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার বিজিবি কর্তৃক তীব্র নিন্দা জানানো হয়।
বিএসএফ নর্থ বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ার কমান্ডার এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন এবং ভবিষ্যতে বিএসএফ সীমান্তে কোনো বাংলাদেশি নাগরিকের ওপর গুলি চালানো হবে না মর্মে বিজিবি প্রতিনিধি দলকে আশ্বস্ত করেন। উভয় দেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে সব নাগরিকের মধ্যে জনসচেতনতা বৃদ্ধি, অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম এবং আন্তঃসীমান্ত অপরাধ প্রতিরোধকল্পে বিজিবি-বিএসএফ যৌথভাবে কাজ করার জন্য একমত পোষণ করে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষ হয়।
দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ থাকার তিন দিন পর আবারও উৎপাদনে ফিরেছে একটি ইউনিট। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৮টা ৩২ মিনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদনে যায় কেন্দ্রের ১ নম্বর ইউনিট।
জানা গেছে, ১২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন ১ নম্বর ইউনিটটি বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় চালু হয়েছে। তবে রাত ৮টা ৩২ মিনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদনে যায় ইউনিটটি। বর্তমানে এ ইউনিট থেকে উৎপাদিত ৬০-৬৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ হচ্ছে। এটি চালু রাখতে প্রতিদিন ৮০০-৯০০ মেট্রিক টন কয়লার প্রয়োজন পড়বে।
বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রধান প্রকৌশলী মো. আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ১ নম্বর ইউনিটটি মেরামত শেষে ৭ দিন পর পুনরায় চালু করা হলো। উৎপাদিত ৬০-৬৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে ১২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ২ নম্বর ইউনিট বন্ধ রয়েছে। ৯ সেপ্টেম্বর ইলেকট্রো হাইড্রোলিক ওয়েল পাম্প নষ্ট হওয়ায় ৩ নম্বর ইউনিটটি বন্ধ হয়ে যায়। ১ নম্বর ইউনিটটি অনেক দিনের পুরোনো। গত ৬ সেপ্টেম্বর রাতে সংস্কার কাজের জন্য সেটিও বন্ধ করা হয়েছিল। মেরামত শেষে আজ রাত ৮টা ৩২ মিনিট থেকে ১ নম্বর ইউনিটটি চালু করা হয়েছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বরাত দিয়ে তিনি আরও বলেন, চীন থেকে মেশিন এলে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ৩ নম্বর ইউনিটও চালু করা সম্ভব হবে। এটি থেকে প্রতিদিন ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হতো; যা জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছিল।
জানা যায়, বড়পুকুরিয়া খনি থেকে উৎপাদিত কয়লা দিয়ে ৫২৫ মেগাওয়াট বড়পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রর উৎপাদন কার্যক্রম চালিয়ে আসছে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হারবিন ইন্টারন্যাশনাল। পাঁচ বছরের চুক্তি মোতাবেক আগামী বছর তাদের মেয়াদ শেষ হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থীদের তালিকা চেয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। ২৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এই তালিকা পাঠাতে হবে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক (কলেজ মনিটরিং অ্যান্ড ইভালুয়েশন দপ্তর) মোহাম্মদ সাহাব উদ্দিন আহাম্মদ স্বাক্ষরিত অফিস আদেশ থেকে এ তথ্য জানা যায়।
অফিস আদেশে বলা হয়, ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সব কলেজ/শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্নাতক পাস, স্নাতক সম্মান, স্নাতকোত্তর ও প্রফেশনাল কোর্সে অধ্যয়নরত অবস্থায় ২০২৪-এর জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদানের বিষয়ে সিন্ডিকেটের জরুরি সভায় সিদ্ধান্ত হয়। স্ব-স্ব কলেজ থেকে ছক অনুযায়ী শহীদ ছাত্র-ছাত্রীদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।’
এতে আরও বলা হয়, সংযুক্ত ছক অনুযায়ী তথ্য পাঠানোর আগে কলেজ কর্তৃপক্ষ শহীদ শিক্ষার্থীর পরিচয় সম্পর্কিত সব তথ্য ও ঘটনা যাচাই করে হার্ড কপি সংরক্ষণ করবে। পূরণকৃত ছকের তথ্যাদি অনলাইনে ২৬ সেপ্টেম্বর মধ্যে পাঠানোর জন্য অনুরোধ করা হলো।