রোববার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩

জাহাঙ্গীরকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে দুদক

জাহাঙ্গীর আলম। ফাইল ছবি
আপডেটেড
৬ জুন, ২০২৩ ১৫:০৫
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা
প্রকাশিত
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা
প্রকাশিত : ৬ জুন, ২০২৩ ১২:০৭

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কাজে অনিয়ম, অবৈধ সম্পদ অর্জন ও দুর্নীতিসহ বেশ কিছু অভিযোগের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) হাজির হয়েছেন। মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে দুদক কার্যালয়ে আসেন তিনি। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে কমিশন।

দুদকের সহকারী পরিচালক আশিকুর রহমান জানান, সকাল ১০টার আগেই জাহাঙ্গীরের একজন আইনজীবী দুদক কার্যালয়ে আসেন। এরপর এসে হাজির হন জাহাঙ্গীর।

ভুয়া ব্যাংক হিসাবে অবৈধ লেনদেন, বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করে জাহাঙ্গীর আলমকে গত ১৬ মে নোটিশ দেয় দুদক। এ ছাড়া আলাদা নোটিশে ২১ ও ২২ মে হাজির হয়ে বক্তব্য দেয়ার জন্য অনুরোধ করেন দুদকের উপপরিচালক ও অনুসন্ধান কর্মকর্তা মো. আলী আকবর।

গত ১৮ মে দুদকের তলবে হাজির হতে এক মাস সময় চেয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে আবেদন করেন জাহাঙ্গীর আলম। এ বিষয়ে কোনো জবাব না পেয়ে ২১ মে দুদকে উপস্থিত হয়ে সময় চাওয়ার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে আসেন তিনি। পরে দুদক তাকে চলতি মাসের ৬ ও ৭ তারিখ দুদকে হাজির হয়ে বক্তব্য দিতে বলে।


ওয়াশিংটন ডিসির উদ্দেশে নিউইয়র্ক ছেড়েছেন প্রধানমন্ত্রী

আপডেটেড ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০৮:৫০
বাসস

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশন এবং অন্যান্য উচ্চ পর্যায়ের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক ও অনুষ্ঠানে যোগদানের পর যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির উদ্দেশে নিউইয়র্ক ছেড়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ১১টায় তাঁর আবাসস্থল দ্য লোটে নিউইয়র্ক থেকে গাড়িতে করে ওয়াশিংটন ডিসির উদ্দেশে নিউইয়র্ক ছেড়ে যান।

প্রধানমন্ত্রী আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনের উদ্দেশে ওয়াশিংটন ডিসি ত্যাগ করবেন এবং ৩ অক্টোবর পর্যন্ত লন্ডনে অবস্থান করবেন। সফর শেষ করে প্রধানমন্ত্রী ঢাকার উদ্দেশে লন্ডন ত্যাগ করবেন এবং ৪ অক্টোবর ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে যোগ দিতে ১৭ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে যান।


সাইবার অপরাধ বেড়েছে ২৮১ শতাংশ

ছবি: ফোকাস বাংলা
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে নতুন ধরনের সাইবার অপরাধ বেড়েছে ২৮১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। আর এটি ঘটছে অসচেতনতার কারণে। অনলাইনের বাসিন্দা হতে কিংবা ডিজিটাল জগতে কীভাবে চলতে হবে, সেই সংস্কৃতি গড়ে না ওঠায় অনেকেই নিজেদের অজান্তেই ফাঁদে পা দিচ্ছেন। বিশেষত নারী ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন।

শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন (সিক্যাফ) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছে সংগঠনটি।

সংগঠনের এক গবেষণা জরিপের প্রতিবেদন তুলে ধরে সম্মেলনে বলা হয়, বাংলাদেশে ২০২২ সালে সংঘটিত অপরাধের মাত্রায় নিত্যনতুন ও অভিনব কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে সাইবার দুর্বৃত্তরা। এসব অপরাধের মধ্যে রয়েছে নানামাত্রিক প্রতারণা। যেমন চাকরি দেয়ার মিথ্যা আশ্বাস, ভুয়া অ্যাপে ঋণ দেয়ার ফাঁদ, সেবা বা পণ্য বিক্রির নামে প্রতারণা ইত্যাদি। ২০২২ সালে ভুক্তভোগীদের ১৪ দশমিক ৬৪ শতাংশই অনলাইনে পণ্য কিনতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন। সাইবার অপরাধে শিশু ভুক্তভোগীর হার বেড়েছে ১৪০ দশমিক ৮৭। ভুক্তভোগীদের ৭৫ শতাংশই তরুণ, যাদের বয়স ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। লিঙ্গভিত্তিক তুলনামূলক পরিসংখ্যানে সাইবার অপরাধের ভুক্তভোগীদের মধ্যে নারীদের হার বেশি (৫৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ)।

ভুক্তভোগীদের মধ্যে আইনের আশ্রয় নেয়ার হার দিন দিন কমছে। ২০১৮ সালের জরিপে যেখানে অভিযোগকারীর সংখ্যা ছিল ৬১ শতাংশ, ২০২৩ সালে গিয়ে তা কমে ২০ দশমিক ৮৩ শতাংশে নেমেছে। আইনি ব্যবস্থা না নেয়ার কারণগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত আইন সম্পর্কে না-জানা (২৪ শতাংশ), এর পরই আছে বিষয়টি গোপন রাখার প্রবণতা (২০ শতাংশ) এবং তিন নম্বর কারণ আইনিব্যবস্থা নিয়ে উল্টো হয়রানির আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন ১৮ শতাংশ ভুক্তভোগী।

সংবাদ সম্মেলনে সিকিউরিটি অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন জানায়, তরুণ ও শিশুদের লক্ষ্য করে আগামী অক্টোবরে সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা মাস পালন করা হবে। অক্টোবরের চার সপ্তাহে ডিজিটাল সুরক্ষার চারটি বার্তা দিয়ে এই সচেতনতা কার্যক্রমের ঘোষণা দিয়েছে ফাউন্ডেশনের জাতীয় কমিটি।

সম্মেলনে সিসিএ ফাউন্ডেশনের সভাপতি কাজী মুস্তাফিজ সভাপতিত্ব করেন। বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসের (ব্লাস্ট) পরিচালক (সালিস এবং প্রশিক্ষণ) তাপসী রাবেয়া, বাংলাদেশ সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেটর ফোরামের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মাদ আশফাকুর রহমান, ইন্টারনেট সোসাইটি বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ কাওছার উদ্দিন, রবি আজিয়াটার ভাইস প্রেসিডেন্ট সঞ্জয় চক্রবর্তীসহ অনেকে বক্তৃতা করেন।


মাদক আনতেন দুলাভাই, বেচতেন শ্যালক

গাঁজাসহ গ্রেপ্তার তিন মাদক বিক্রেতা। ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা

রাজধানীর মিরপুরে গাঁজাসহ তিন মাদক বিক্রেতাকে গ্রেপ্তার করেছে মিরপুর মডেল থানা। এরা হলেন, মো. সোহেল (২৯), মো. ময়নুল ওরফে ময়নাল (২৯) ও মো. বিকাশ হোসেন (১৯)। তাদের মধ্যে সোহেল ও বিকাশ সম্পর্কে দুলাভাই ও শ্যালক।

গত শুক্রবার সন্ধ্যায় তাদের পশ্চিম কাজীপাড়া কৃষিবিদ বাজার এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ২২ কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়।

মিরপুর মেডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন দৈনিক বাংলাকে বলেন, গ্রেপ্তার তিনজন পেশাদার মাদক বিক্রেতা। তারা মূলত গাঁজা বিক্রি করেন। তারা কুষ্টিয়া থেকে গাঁজা কিনে আনেন। এরপর রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করেন। গাঁজা বিক্রির জন্য তারা আলাদা বাসা ভাড়া করেন। সেই বাসাতে বসেই গাঁজা বিক্রি করেন তারা।

তিনি আরও বলেন, দুলাভাই সোহেল গাঁজার বিভিন্ন অর্ডার নেন, আর তার শ্যালক বিকাশ চাহিদা মোতাবেক সেই গাঁজা ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেন। গাঁজা বিক্রির জন্য বিকাশ বিভিন্ন ধরনের ছদ্মবেশ ধারণ করেন। কখনো তিনি স্কুলছাত্র সেজে ব্যাগে করে গাঁজা পৌঁছে দেন, কখনো প্রবাসী সেজে বড় ব্যাগে গাঁজা নিয়ে আসেন, আবার কখনো ভাঙারি বিক্রেতা সেজে ছোট ড্রামে করে গাঁজা পৌঁছে দেন। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় গোপন সংবাদে তাদের পশ্চিম কাজীপাড়া কৃষিবিদ বাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার সোহেলের বিরুদ্ধে আগেও দুটি মামলা রয়েছে।

এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানান ওসি।

বিষয়:

ঘুষখোর সিন্ডিকেটের রোষানলে তিতাসের এমডি!

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড
আপডেটেড ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০৩
নিজস্ব প্রতিবেদক

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. হারুনুর রশীদ মোল্লাহর নিয়োগ ঠেকাতে একটি সিন্ডিকেট উঠেপড়ে লেগেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানা গেছে, সংস্থাটিতে দীর্ঘদিন ধরে চলা নানা অপকর্ম, ঘুষ বাণিজ্য ও লুটপাটের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় ওই সিন্ডিকেটের বিরাগভাজন হয়ে পড়েন নীতিনিষ্ঠ এই কর্মকর্তা। ফলে সরকার যখন তার কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তৃতীয় মেয়াদে দায়িত্ব দেয়ার কথা ভাবছে, তখনই তার বিরুদ্ধে নামে-বেনামে অভিযোগ তোলার পাঁয়তারা চালাচ্ছে পক্ষটি।

তবে সম্প্রতি তিতাস কর্তৃপক্ষ ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত গুজব রটানো ও সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের লোকজনকে জড়িয়ে মিথ্যা তথ্য সরবরাহকারীদের বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার তিতাসের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এসব তথ্য জানিয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মো. হারুনুর রশীদ মোল্লাহ এমডি পদে দায়িত্ব নেয়ার ২১ মাসের মধ্যেই ৬ লাখ ৬৯ হাজার ৪৮৬টি গ্যাসের চুলা, ৫১৫টি শিল্প, ৫২৯টি বাণিজ্য, ১৭৯টি ক্যাপটিভ ও ৫৪টি সিএনজি গ্রাহকের অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন। এ ছাড়া ৭৪৪ দশমিক ৪১ কিলোমিটার অবৈধ পাইপলাইন অপসারণ করেন।

এ ছাড়া বিভিন্ন অনিয়ম ও অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে দুই মেয়াদে তিনি ৫ জনকে বরখাস্ত, ১৪ জনকে সাময়িক বরখাস্তসহ মোট ১৮৯ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেন। ওই ২১ মাসের মেয়াদে এক হাজার ৫০ জনকে বিভিন্ন শাখায় বদলিও করেন তিনি।

এ ছাড়া ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে মোট ৪০৪ দশমিক শূন্য ৬ কোটি টাকা আদায় করা হয়।

তিতাস গ্যাসের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, ব্যবস্থাপনা পরিচালকের এসব কঠোর সিদ্ধান্তে নাখোশ হন তিতাসের কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা। অবৈধ সংযোগদানে জড়িত ওই সিন্ডিকেটের সদস্যরা এর পরই তার বিরুদ্ধে তৎপর হয়ে ওঠেন।

তারা নামে-বেনামে নানা ধরনের অভিযোগ বিভিন্ন দপ্তরে পাঠান। সেগুলো বিভিন্ন সাংবাদিকের কাছে সরবরাহ করে ভিত্তিহীন ও অসত্য খবর প্রকাশের মাধ্যমে তার তৃতীয় দফার নিয়োগ বাতিল করতে মরিয়া হয়ে ওঠেন।

এদিকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন তিতাস গ্যাসের একটি সংযোগকে ঘিরে সম্প্রতি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ বিষয়ে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ একটি সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে।

ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত ‘বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা প্রধানমন্ত্রীর নাম ব্যবহার করে উৎকোচ গ্রহণের অভিযোগের পাশাপাশি একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানে তিতাস গ্যাসের সংযোগ প্রদানসহ নানাবিধ অনিয়ম’ খবরের বিপরীতে তিতাস গ্যাস টিঅ্যান্ডডি কো. লি.-এর বক্তব্য হচ্ছে- যেকোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠানে গ্যাস সংযোগ প্রদানের ক্ষেত্রে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সংযোগ প্রদান করা হয়। এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর নাম ব্যবহার করার সংবাদটি মিথ্যা, বানোয়াট ও ষড়যন্ত্রমূলক অপপ্রচার।

তিতাসের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তারা জানান, ভিত্তিহীন অভিযোগগুলো তদন্তাধীন। তার পরও কুচক্রীমহল বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি তদন্তাধীন বিষয় নিয়ে বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করা হয়েছে তিতাসের পক্ষ থেকে।

উল্লেখ্য, আব্দুল লতিফ নামে এক ব্যক্তির মিথ্যা অভিযোগ সামনে এনে চক্রটি তার নিয়োগ ঠেকাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। ভুক্তভোগী দাবিদার আব্দুল লতিফের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে এমডি হারুনুর রশীদ মোল্লাহ বলেন, অবৈধ গ্যাস সংযোগের বিরুদ্ধে তিতাস গ্যাস কর্তৃক পরিচালিত অভিযানে যাদের স্বার্থহানি হয়েছে। সেই সিন্ডিকেটের সদস্যরাই তার বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলকভাবে নানা কল্পিত অভিযোগ ও অপপ্রচার চালাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ‘গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে আমাকে জড়িয়ে অপপ্রচার চালিয়ে তিতাস গ্যাস নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে সরকারের সাফল্য ম্লান করার অপচেষ্টায় রয়েছে সরকারবিরোধী সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের সদস্যরাই আমাকে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য মিথ্যা তথ্য দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে সামাজিকভাবে হেয় করার অপচেষ্টায় রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমার কর্মময় জীবনে আমি নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। তাই তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছি।’

বিষয়:

স্বাধীনতাবিরোধীরা যেন ক্ষমতায় আসতে না পারে সেজন্য সজাগ থাকতে হবে: রাষ্ট্রপতি

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শনিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধে ৭১’ এর ষষ্ঠ জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণ দেন। ছবি: বাসস
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা

স্বাধীনতাবিরোধীরা যেন কোনোমতেই আর ক্ষমতায় আসতে না পারে সেজন্য সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।

তিনি শনিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধে ৭১’ এর ষষ্ঠ জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের কার্যনির্বাহী সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. নুরুল আলম, ফোরামের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. সারওয়ার আলী, সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ম. হামিদ এবং মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুন হাবিব বক্তব্য রাখেন।

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যাব। যারা চক্রান্ত করবে তাদের বিরোধিতা করব। সম্মিলিতভাবে কাজ করে যেতে হবে।’

জাতীয় সম্মেলনে যোগ দেয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা ও নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধিদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, ‘যারা স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে তারা যেন কোনোভাবেই ক্ষমতায় আসতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।’

দেশের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় প্রতিটি কাজে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়ে বলিষ্ঠ নেতৃত্বের মাধ্যমে এগিয়ে যেতে হবে।’

দেশের কষ্টার্জিত স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে হলে এবং স্বাধীনতার সুফল জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে মুক্তিযোদ্ধাদের উত্তরসূরীসহ সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করারও অনুরোধ করেন রাষ্ট্রপতি।

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ সংগ্রামের ফলশ্রুতিতে আপনারা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন এই আন্দোলনের মধ্যমণি এবং নেতা।’

রাষ্ট্রপতি তার বক্তব্যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও উন্নয়নে মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, ‘এটা অনস্বীকার্য যে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে অনেক খেলা হয়েছে, অনেক নেতৃত্ব এসেছে, কিন্তু এই খেলায় বিজয়ী হচ্ছেন বাঙালির সর্বকালের শ্রেষ্ঠ সন্তান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।’

সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয়তাবাদী চেতনায় বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি জানতেন কীভাবে ধারাবাহিকভাবে রাজনীতি করতে হয়। বঙ্গবন্ধুর রাজনীতিতে কোনো রসায়ন কাজ করেনি। বঙ্গবন্ধু ছিলেন জাতির পিতা–তিনি মানুষের অন্তরের কথা বুঝতেন এবং জানতেন।’

তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন, বঙ্গবন্ধু ছোটবেলায় অনেক মানবিক ছিলেন। যারা ক্ষুধার্ত তাদের অন্ন দিতেন। তিনি প্রতিটি ধাপে ধাপে বাঙালির চেতনাকে লালন করেছেন। তার অসাম্প্রদায়িক চেতনা, তার এই জাতীয়তাবাদী মনোভাব, সামাজিক ন্যায়বিচার ও মানবিক মূল্যবোধ, সবকিছুতেই তিনি ছিলেন অনন্য।’

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘একটি অঙ্গুলির হেলনে সমস্ত জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়—এরকম উদাহরণ পৃথিবীতে আমরা খুঁজে পাই না।’

তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামের মাধ্যমে বাংলাদেশ কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা লাভ করলেও স্বাধীনতাবিরোধীদের চক্রান্ত থেমে থাকেনি। তারা এখনো সক্রিয় রয়েছে। তারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সংবিধানকে তছনছ করেছে। ১৯৭১ সালে পরাজিত শত্রুরাই এসব করেছে।’

১৯৭১ সালের গণহত্যার প্রসঙ্গ টেনে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘১৯৭১ সালে বাংলার মাটিতে সংগঠিত এই গণহত্যা বিংশ শতাব্দীর জঘন্যতম বৃহৎ গণহত্যা। বাঙালির গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবিতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জোরালো করা প্রয়োজন।’

এই দাবি নিয়ে সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের কার্যক্রমকে স্বাগত জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘সরকারও এক্ষেত্রে সার্বিক সহযোগিতা করবে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি তুলে ধরে মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশে এখন মর্যাদার আসনে আসীন।’

দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে বেগবান করতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে সবাইকে কাজ করার কথা বলেন রাষ্ট্রপতি।

তিনি অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির ওপর সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম কর্তৃক প্রকাশিত ‘জেনোসাইড ১৯৭১’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন।


বিদেশ থেকে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করলে জনগণই তাদের নিষেধাজ্ঞা দেবে: প্রধানমন্ত্রী

নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: ফোকাস বাংলা
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি নিয়ে বাংলাদেশের ভয় পাওয়ার কিছু নেই জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “দেশের বাইরে থেকে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা হলে বাংলাদেশের জনগণই তাদের ‘স্যাংশন’ দিয়ে দেবে।”

শুক্রবার রাতে নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি প্রয়োগ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

ভিসানীতি প্রয়োগ করা যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা কি ২০০১ সালের অবৈধ নির্বাচনের কথা ভুলে গেছে?’

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যা, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল এবং ‘হ্যাঁ-না’ ভোটের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে এই সচেতনতা তখন তাদের কোথায় ছিল?’

এ সময় বিদেশ থেকে বাংলাদেশের নির্বাচন বানচালের চেষ্টার বিষয়ে সতর্ক করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “নির্বাচন বানচালের চেষ্টা দেশের বাইরে থেকে যেন না হয়। এটি হলে কিন্তু বাংলাদেশের জনগণই তাদের ‘স্যাংশন’ দিয়ে দেবে।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছে। আমরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছি। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, সুন্দর হোক তা আমরাও চাই।’

সরকারপ্রধান আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি প্রয়োগের ঘোষণায় বিরোধীদের কথাও বলা হয়েছে।’

২০১৪ সালের নির্বাচন ঠেকাতে বিএনপির বিরুদ্ধে ভোটকেন্দ্র পোড়ানো, যানবাহনে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ‘ভিসানীতির কারণে এবার তারা হয়তো এত দূর যেতে পারবে না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভিসানীতির একটি সুবিধা হলো, এবার তারা (বিএনপি) জ্বালাও-পোড়াও করতে পারবে না। এতে জনগণের জীবন বাঁচবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা ভিসানীতি প্রয়োগ করছে, তাদের নির্বাচন নিয়েও প্রশ্ন আছে। তারা তাদের বিরোধী দলের সঙ্গে কী করছে? আমরাও তো এতটা করি না!’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘একসময় বাংলাদেশের নির্বাচন সম্পর্কে কথাই ছিল, ১০টা হোন্ডা, ২০টা গুন্ডা। বিএনপি এক কোটি ২০ লাখ ভুয়া ভোটার করেছিল। ১৯৯৬ সালে ভোটারবিহীন নির্বাচন বিএনপিই করেছিল। তারা দেড় মাসও টিকতে পারেনি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভোট ও ভাতের অধিকার আওয়ামী লীগই করেছে। আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব— এটি আমারই স্লোগান।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগই নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে আইন করেছে। স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স চালু করেছে এবং নির্বাচন কমিশনের আর্থিক স্বাধীনতা দিয়েছে।’

কন্যা সায়মা ওয়াজেদের রাজনীতিতে আসার সম্ভাবনার বিষয়ে জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কে আসবে না আসবে, বাংলাদেশের জনগণ ও দল ঠিক করবে।’

তিনি বলেন, ‘সায়মা ওয়াজেদ অটিজম নিয়ে কাজ করছে। ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছে, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে কাজ করছে।’


মার্কিন ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ নিয়ে সরকার চিন্তিত নয়: পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বিধিনিষেধ নিয়ে সরকার চিন্তিত নয়। কারণ ওয়াশিংটন গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশী ব্যক্তিদের উপর এটি প্রয়োগ শুরু করেছে।’

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পর শুক্রবার রাতে গুলশানে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তার বাসভবনে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের হারানোর কিছু নেই, আমরা এটা নিয়ে চিন্তিত নই। কারণ আমরা কিছু ভুল করছি না।’

প্রতিমন্ত্রী বিষয়টিকে ‘একটি সুখকর অভিজ্ঞতা নয়’ বলে অভিহিত করে বলেন, ‘এর মধ্য দিয়েই আমাদের যেতে হবে।’

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য, ক্ষমতাসীন ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসবে।’

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন সৃষ্টিকারী দায়ী ব্যক্তি বা এতে জড়িত বাংলাদেশিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের পদক্ষেপ নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।’

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন চলতি বছরের মে মাসে তার দেশের ‘অভিবাসন ও জাতীয়তা আইন’-এর ২১২(এ)(৩)(সি) (‘৩সি’) ধারার অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সহায়তার লক্ষ্যে নতুন এ ভিসা নীতি ঘোষণা করেন।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘ওয়াশিংটন নতুন ভিসা নীতির অধীনে তাদের সিদ্ধান্তের বিষয়ে ঢাকাকে অবহিত করেছে। বাংলাদেশের লক্ষ্য অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং তার প্রতি সমর্থনের লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র এটা করছে।’

তিনি বলেন, ‘এর আগে কিছু রাজনৈতিক দল এটা প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেছিল যে, মার্কিন ভিসা বিধি নিষেধ কেবলমাত্র সরকারী দলের ওপর আরোপ করা হবে। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আজ স্পস্ট করেছে যে, নতুন নীতিটি সক্ষমতাসীন ও বিরোধী উভয় রাজনৈতিক দলের জন্যই প্রযোজ্য।’

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সরকারের প্রত্যাশা মার্কিন সরকার সঠিক তথ্য ও পরিসংখ্যান যথাযথভাবে পর্যালোচনা করে নতুন ভিসা নিষেধাজ্ঞা নীতি বাস্তবায়ন করবে।’

তিনি বলেন, ‘যদি দেখা যায় যে কোনো বিশেষ ব্যক্তির উপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের জন্য আমাদের (সরকারি) কাজ সম্পাদনে সমস্যা হচ্ছে, তবে ঢাকা এ ধরনের বিষয় নিয়ে ওয়াশিংটনের সঙ্গে আলোচনা করবে।’

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘কতজন ব্যক্তি ভিসা নীতির আওতায় এসেছে, ওয়াশিংটন সে বিষয়ে ঢাকাকে একটা ধারণা দিয়েছে এবং আমি আপনাকে কী বলতে পারি খুবই সংখ্যাটি কম।’

প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘সরকারের বিশ্বাস আগামী নির্বাচন বাঞ্চাচালে জড়িত থাকায় বিএনপি-জামায়াতের কর্মীরা যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞার ক্ষেত্রে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘বিদ্যমান সাংবিধানিক বিধান অনুযায়ী একটি অবাধ সুষ্ঠু ও সহিংসতামুক্ত নির্বাচন করতে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ।’


যুদ্ধের পথ পরিহার করে শান্তি, সমৃদ্ধির জন্য কাজ করুন: জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রী

শুক্রবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: ফোকাস বাংলা
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

যুদ্ধ ও সংঘাতের পথ পরিহার করে মানবজাতির কল্যাণ ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য সকলকে একযোগে কাজ করার জন্য বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘আজ আপনাদের সকলের কাছে, বিশ্ব নেতাদের কাছে আমার আবেদন, যুদ্ধ ও সংঘাতের পথ পরিহার করুন এবং আমাদের জনগণ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য স্থায়ী শান্তি, মানবজাতির কল্যাণ এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করুন।’

শুক্রবার জাতিসংঘ সদর দপ্তরের জেনারেল অ্যাসেম্বলি হলে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৭৮তম অধিবেশনে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনা মহামারি ও জলবায়ু সঙ্কটের প্রভাব এবং বিশ্বব্যাপী খাদ্য, অর্থায়ন এবং জ্বালানি নিরাপত্তার উপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব উন্নয়নশীল দেশগুলোতে উন্নয়ন-লক্ষ্যসমূহ অর্জনে ব্যাপক প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেছে।’

তিনি বলেন, ‘বহুপাক্ষিক কূটনীতিকে জোরদারকরণ, জাতিসংঘের উপর অর্পিত দায়িত্বসমূহ পালন করার জন্য প্রচেষ্টা ও সাহসী বক্তব্য, এবং বৈশ্বিক সঙ্কট উত্তরণে সুদূরপ্রসারী ও বাস্তবমূখী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ সবসময় জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসেকে সমর্থন জানায়।’

প্রধানমন্ত্রী ইউএনজিএ অধিবেশনে প্রদত্ত তাঁর ভাষণে রোহিঙ্গা সংকট, জলবায়ু পরিবর্তন, খাদ্য সংকট, মানবাধিকার, নারীর ক্ষমতায়ন, স্বাস্থ্যসেবা, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি), সন্ত্রাসবাদ এবং সরকারের অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং অন্যান্য বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক সমস্যার কথা তুলে ধরেন।

গেল বারের মতো এবারসহ মোট ১৯তম বারের মতো শেখ হাসিনা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর প্রদত্ত ভাষণের পদাঙ্ক অনুসরণ করে জাতিসংঘ অধিবেশনে বাংলায় ভাষণ দেন।

এ বছরের ইউএনজিএ’র মূল প্রতিপাদ্য হলো— ‘আস্থা পুনর্গঠন ও বিশ্বব্যাপী সংহতি পুনঃপ্রতিষ্ঠা: সকলের জন্য শান্তি, সমৃদ্ধি, অগ্রগতি ও স্থায়িত্বের লক্ষ্যে ২০৩০ এজেন্ডা এবং এর টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যে ত্বরান্বিতকরণ পদক্ষেপ।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ’৭৫ এর বিয়োগান্তক অধ্যায় তুলে ধরে বলেন, ‘আমি নিজে নিপীড়িত এবং যুদ্ধ ও হত্যার নৃশংসতার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে যুদ্ধ, হত্যা, অভ্যুত্থান ও সংঘাতের ভয়াবহতার কারণে মানুষ যে বেদনা ও যন্ত্রণা সহ্য করে তা অনুভব করতে পারি।’

তিনি বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আমার পিতা, জাতির পিতা ও বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। সেদিন আমার মা, আমার তিন ছোট ভাই, দুই ভ্রাতৃবধূ, চাচাসহ পরিবারের মোট আঠার সদস্যকে হত্যা করা হয়েছিল।’

তিনি ও তাঁর ছোট বোন বিদেশে থাকায় সেই বর্বরতা থেকে বেঁচে যান বলেও উল্লেখ করেন তিনি। এর আগে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে আমাদের ত্রিশ লাখ দেশবাসীকে হত্যা এবং দুই লাখ নারীকে নির্মম নির্যাতনের কথাও তিনি ভাষণে উল্লেখ করেন।

আসুন আমরা রোহিঙ্গাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করি
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগণের প্রতি বিশ্ব নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। কেননা ইতোমধ্যেই তাদের বাস্তুচ্যুতির ছয় বছর পেরিয়ে গেছে।

তিনি বলেন, ‘সম্পূর্ণ মানবিক কারণে আমরা অস্থায়ীভাবে তাদের আশ্রয় দিয়েছি। কিন্তু পরিস্থিতি এখন আমাদের জন্য সত্যিই অসহনীয় হয়ে উঠেছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের দীর্ঘায়িত উপস্থিতি বাংলাদেশের অর্থনীতি, পরিবেশ, নিরাপত্তা এবং সামাজিক-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। প্রত্যাবাসন নিয়ে অনিশ্চয়তা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে ব্যাপক হতাশার জন্ম দিয়েছে। এই পরিস্থিতি সম্ভাব্য মৌলবাদকে ইন্ধন দিতে পারে।’

‘এই অবস্থা চলমান থাকলে এটি আমাদের আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতাকে প্রভাবিত করতে পারে’ বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘বাস্তুচ্যূত রোহিঙ্গারা তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যেতে চায় এবং সেখানে তারা শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন করতে আগ্রহী। আসুন আমরা এই নিঃস্ব মানুষের জন্য তাদের নিজের দেশে ফিরে যাওয়া নিশ্চিত করি।’

উন্নত দেশগুলোকে অবশ্যই ১০০ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে হবে
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বৈশ্বিক কার্বন নির্গমনের ০.৪৭% এরও কম অবদান রাখলেও বাংলাদেশ জলবায়ুজনিত ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলির মধ্যে অন্যতম। জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব আমাদের বর্তমান এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য মারাত্মক হুমকি। এর সমাধানের লক্ষ্যে জরুরি, সাহসী এবং উচ্চাভিলাষী সম্মিলিত পদক্ষেপ প্রয়োজন।’

তিনি বলেন, ‘আমরা প্রধান কার্বন নির্গমনকারী দেশগুলিকে উচ্চাভিলাষী এনডিসি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের আহ্বান জানাই। উন্নত দেশগুলোকে অবশ্যই ১০০ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে হবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশের উন্নয়ন চাহিদার কথা বিবেচনা করতে হবে। আমরা ২৭তম জলবায়ু সম্মেলনে গৃহীত ক্ষয়ক্ষতি সংক্রান্ত তহবিলের জরুরি বাস্তবায়ন চাই।’

সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা, লবণাক্ততা, নদী ক্ষয়, বন্যা ও খরা-জনিত কারণে জলবায়ু-অভিবাসীদের দায়িত্ব ভাগাভাগির ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সংহতির আহ্বানও জানান তিনি।

বাংলাদেশ পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও সংরক্ষণ এবং জলবায়ু-সহনশীল টেকসই উন্নয়নের পথ অনুসরণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। প্যারিস চুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ সবুজ উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলাদেশ তার জাতীয় স্বল্প-কার্বন নির্গমন কৌশল প্রণয়ন করছে।

শেখ হাসিনা এ সময় আওয়ামী লীগ সরকারের ‘বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড’ প্রতিষ্ঠার উল্লেখ করে বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব সম্পদ থেকে এই তহবিলে এ পর্যন্ত ৪৮০ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করেছি। জলবায়ু অভিযোজন এবং প্রশমনের লক্ষে সমুদ্র উপকূলে বাঁধ, সাইক্লোন শেল্টার, গ্রিন বেল্ট এবং বৃক্ষরোপণ করা হচ্ছে।’

বাংলাদেশ সরকার কক্সবাজারে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাস্তুচ্যূত মানুষের জন্য বিশ্বের সবচেয় বড় আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “সেখানে ৪ হাজার ৪০৯টি উদ্বাস্তু পরিবারকে পুনর্বাসনের জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধাসহ ১৩৯টি বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। পাশাপাশি ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষের জন্য সরকারের যুগান্তকারী উদ্যোগ ‘আশ্রয়ণ’ প্রকল্পের আওতায় এ পর্যন্ত প্রায় ৮ লাখ ৪০ হাজার পরিবারের ৫০ লাখ মানুষকে বিনামূল্যে ঘর দেয়া হয়েছে।”

তিনি জানান, তাঁর সরকার ‘বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান ২১০০’ বাস্তবায়ন করছে। যার লক্ষ্য সমন্বিত ব-দ্বীপ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে একটি নিরাপদ, জলবায়ু সহনশীল এবং সমৃদ্ধ ডেল্টা অর্জন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সরকার ‘মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা’ গ্রহণ করেছে বলেও উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা ধীরে ধীরে একটি জলবায়ুর ঝুঁকিপূর্ণ দেশ থেকে জলবায়ু সহনশীল দেশে পরিণত হতে কাজ করছি। বাংলাদেশের ৬০ লাখেরও বেশি মানুষ সোলার হোম সিস্টেম ব্যবহার করছে। আমরা আরও টেকসই শক্তির মিশ্রণের জন্য কাজ করছি। আমরা আশা করি, ২০৪১ সালের মধ্যে আমাদের শক্তির ৪০% পুনঃনবায়নযোগ্য উৎস থেকে পাওয়া যাবে।’

আঞ্চলিক খাদ্য ব্যাংক স্থাপন
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন যে ‘ব্ল্যাক সি গ্রেইন ইনিশিয়েটিভ’ অকার্যকর হয় পড়েছে এবং এ ব্যবস্থার দ্রুত পুনরুদ্ধারের জন্য আমি সংশ্লিষ্ট সকলকে আহ্বান জানাচ্ছি। এছাড়াও, আমাদের মতো দেশগুলোর জন্য নিরবচ্ছিন্নভাবে সারের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে হবে। তাছাড়া, উৎপাদিত ফসল সংরক্ষণের লক্ষ্যে হিমাগার নির্মাণের জন্য আমাদের বৈশ্বিক বিনিয়োগ প্রয়োজন। আমি জরুরি অবস্থা মোকাবিলার জন্য আঞ্চলিক ‘খাদ্য ব্যাংক’ চালু করার প্রস্তাব করছি। আমাদের অবশ্যই জলবায়ু-সহনশীল ফসলের গবেষণায় একে অপরকে সহযোগিতা করতে হবে।”

বিগত কয়েক বছরের আন্তঃসংযুক্ত সঙ্কটগুলো বিশ্বব্যাপী খাদ্য, জ্বালানি এবং পণ্য মূল্য বৃদ্ধি করেছে উল্লেখ করে বাংলাদেশের সরকার প্রধান বলেন, ‘জ্বালানি ও খাদ্য আমদানিকারক দেশ হিসেবে আমাদের আমদানি বিল উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, যা আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এসব চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও, আমরা প্রতিটি মানুষের জন্য খাদ্য নিশ্চিত করেছি। আমরা নিম্ন আয়ের ১ কোটি মানুষকে সাশ্রয়ী দামে চাল ও অন্যান্য সামগ্রী সরবরাহ করছি।’

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ এবং দেশের সকল অনাবাদী জমিকে চাষের আওতায় আনার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বানের কথাও উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘২০২২ সালে গ্লোবাল ক্রাইসিস রেসপন্স গ্রুপ গঠন এবং এর মাধ্যমে বৈশ্বিক খাদ্য, শক্তি এবং অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবিলায় প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখে বিভিন্নমুখী সমাধান প্রদানের জন্য আমি জাতিসংঘ মহাসচিবকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাই।’

খাদ্যপণ্য রপ্তানি এবং সরবরাহ শৃঙ্খলে বিদ্যমান সমস্যাসমূহের টেকসই সমাধান নিশ্চিত করার জন্য এই গ্রুপের অন্যতম চ্যাম্পিয়ন হিসেবে তিনি সব সময় জোর দিয়েছেন বলেও জানান।

এসডিজি বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করতে আন্তর্জাতিক আর্থিক অবকাঠামো প্রয়োজন
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এসডিজি অর্জনের ক্ষেত্রে অর্থায়ন গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয় যে, বিদ্যমান আন্তর্জাতিক আর্থিক অবকাঠামো লক্ষ্যগুলির সঙ্গে যেমন সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, তেমনি এটি সঙ্কটের সময় উন্নয়নশীল দেশগুলির আর্থিক চাহিদা মেটাতেও সক্ষম নয়।’

তিনি বলেন, ‘আজ এমন একটি আন্তর্জাতিক আর্থিক অবকাঠামো আমাদের জরুরিভাবে প্রয়োজন যা উন্নয়নশীল দেশগুলিকে বিশেষ ছাড়ে, কম খরচে, কম সুদে এবং ন্যূনতম শর্তে অর্থ সংগ্রহে সহায়তা করবে। তাছাড়া, জরুরি অবস্থা এবং দুর্যোগের সময় আইএমএফের এসডিআর তহবিলে উন্নয়নশীল দেশগুলির ন্যায়সঙ্গত প্রবেশাধিকার থাকতে হবে। সমস্ত ঋণ ব্যবস্থায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ সংক্রান্ত বিশেষ বিধান অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৫০০ বিলিয়ন ডলারের একটি প্রণোদনা প্যাকেজ প্রস্তাবনার জন্য জাতিসংঘ মহাসচিবকে আমরা আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। আমরা এই প্রস্তাবনার দ্রুত বাস্তবায়ন দাবি করছি।’

তিনি বলেন, ‘সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জনে বাংলাদেশের সাফল্যের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে আমরা এসডিজি অর্জনে অবিচলিত অগ্রগতি সাধন করেছি। তবে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশও এক্ষেত্রে গুরুতর চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। করোনাভাইরাস, বিভিন্ন মানবসৃষ্ট সঙ্কট এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয় চ্যালেঞ্জগুলিকে বহুগুণে জটিল করেছে। সে কারণে, এ বছর জাতিসংঘ এসডিজি সম্মেলনের সফল আয়োজন এবং এতে গৃহীত রাজনৈতিক ঘোষণাকে আমরা স্বাগত জানাই। কিছু সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আমরা বিশ্বাস করি, এই রাজনৈতিক ঘোষণা ২০৩০ উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নকে ত্বরান্বিত করবে।’

গণতন্ত্র, মানবাধিকার রক্ষা ও প্রচারে বাংলাদেশ সম্পূর্ণরূপে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ
শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটি দায়িত্বশীল রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ মানবাধিকার, আইনের শাসন ও গণতন্ত্র রক্ষা ও প্রচারে পূর্ণ অঙ্গীকারবদ্ধ।’

তিনি বলেন, ‘এই বছর আমরা সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্রের ৭৫তম বার্ষিকী পালন করছি। এই মাহেন্দ্রক্ষণে বিশ্ব মানবতার প্রতি আমাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে সকলের জন্য সমতা, ন্যায্যতা, স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণে আমাদের সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি মানবাধিকার রক্ষার বিষয়টি যাতে উন্নয়নশীল দেশের উপর রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টিতে ব্যবহৃত না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।’

‘বাংলাদেশের সংবিধান সকলের মৌলিক মানবাধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করে। সকলকে আইনগত সুরক্ষা প্রদান ও সুবিচার নিশ্চিতকরণে গত এক দশকে বাংলাদেশের আইনি ব্যবস্থার তাৎপর্যপূর্ণ সংশোধন করা হয়েছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের নির্বাচিত সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ সারা বিশ্বের আপামর জনগণের মানবাধিকার সংরক্ষণে অন্যান্য সদস্যগণের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘আজ এই অধিবেশনে আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করতে চাই যে, বাংলাদেশ সংবিধানের আলোকে গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে যাবে।’

বাংলাদেশ নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে বদ্ধ পরিকর
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এসডিজি অর্জনে আমরা নারীর প্রতি বৈষম্যের অবসানকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেছি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নারীর ক্ষমতায়ন এবং লিঙ্গসমতা নিশ্চিতকরণ ও প্রত্যাশা পূরণে বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা নারীশিক্ষাসহ সার্বিক শিক্ষার ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘২০১০ সাল থেকে মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষার্থীর মধ্যে বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ করা হচ্ছে। প্রাথমিক হতে উচ্চশিক্ষা পর্যায় পর্যন্ত প্রায় ২ কোটি ত্রিশ লাখ শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি, বৃত্তি এবং এককালীন অনুদান দেয়া হচ্ছে। এদের অর্ধেকেরও বেশি নারী। আমাদের জাতীয় বাজেটের মোট ৩০ শতাংশ নারীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী এ সময় জানান, তাঁর সরকার সরকারের শীর্ষ থেকে সর্বনিম্ন সকল স্তরে নারীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করেছে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতিটি খাতে ৫০ শতাংশ নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়েছে।

তিনি বলেন, “এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে আমরা উপযুক্ত আইন প্রণয়ন ও তা যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাল্যবিবাহ, নারীর প্রতি সহিংসতা, নারী পাচার এবং অন্যান্য অপরাধ নিরসনের জন্য কাজ করছি। আমরা নারীর অগ্রগতির জন্য জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ‘প্ল্যাটফর্ম ফর উইমেন লিডার’-এর মাধ্যমে সকল আন্তর্জাতিক উদ্যোগের সমর্থন করছি।”

২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে অঙ্গীকারাবদ্ধ
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ভিশন ২০৪১-এর আওতায় ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে আমার সরকার বিপুল বিনিয়োগ করেছে এবং এর মাধ্যমে আমরা আমাদের দেশকে এমন একটি উচ্চ আয়ের, দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত দেশে পরিণত করতে চাই, যা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার এবং নিত্য নতুন উদ্ভাবনের পথ উন্মুক্ত করবে। সে উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহার এবং উদ্ভাবনের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র্য বিমোচন, লিঙ্গসমতা নিশ্চিতকরণ এবং পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় রেখে টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে বাংলাদেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নীতির আধুনিকীকরণ করা হয়েছে।”

তিনি বলেন, ‘২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের বাস্তব রূপ দিতে আমরা মানুষের কল্যাণে অন্তর্ভূক্তিমূলক ও আধুনিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ব্যাপক বিনিয়োগ করেছি। তাঁর দেখানো পথে বাস্তবমূখী নীতিগ্রহণ, সুদূরপ্রসারী চিন্তা ও বিনিয়োগের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ হতে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে পেরেছি। আমরা দারিদ্র্যের হার ২০০৬ সালের ৪১.৫ থেকে ২০২২ সালে ১৮.৭ শতাংশে এবং চরম দারিদ্র্যের হার ২৫.১ শতাংশ থেকে ৫.৬ শতাংশে নামিয়ে আনতে পেরেছি।’

সবার জন্য স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও প্রযুক্তি স্থানান্তর
প্রধানমন্ত্রী এ সময় বলেন, ‘আমরা বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণের জন্য কিছু ন্যূনতম মানদণ্ড স্থাপনের ধারণার প্রশংসা করি। এসকল লক্ষ্য অর্জনে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা যেমন পর্যাপ্ত অর্থায়ন, প্রযুক্তি স্থানান্তর এবং উত্তম চর্চাসমূহ বিনিময় নিশ্চিত করতে হবে।’

‘বাংলাদেশে কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আমরা প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবা তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে দিতে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছি। বাংলাদেশের এই সাফল্য এই সাধারণ পরিষদ দ্বারা স্বীকৃত এবং প্রশংসিত হয়েছে। অনুরূপ আর্থ-সামাজিক অবস্থার অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশসমূহ আমাদের এই মডেল অনুকরণ করতে পারে।’

সমুদ্রসীমার শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তি বাংলাদেশের উন্নয়নের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সমুদ্রসীমার শান্তিপূর্ণ সমাধানের পর সুনীল অর্থনীতি বাংলাদেশের উন্নয়নের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। আমরা বিশ্বাস করি, সামুদ্রিক সম্পদের টেকসই ব্যবহারকে কাজে লাগানোর জন্য সমুদ্রের আইন সম্পর্কিত জাতিসংঘ কনভেনশনের বিধানগুলির কার্যকর বাস্তবায়ন আবশ্যক।’

শেখ হাসিনা জানান, একদিন আগে তিনি জাতিসংঘের সাগর সম্পর্কিত আইন অনুযায়ী দেশসমূহের জাতীয় অধিকারভূক্ত এলাকার বাইরে সামুদ্রিক জৈব বৈচিত্রের সংরক্ষণ এবং টেকসই ব্যবহারের জন্য ‘বিবিএনজে’ চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন। বাংলাদেশ সম্প্রতি তার ‘ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুক’ প্রকাশ করেছে, যেখানে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে অন্তর্ভুক্তিমূলক, টেকসই এবং সহযোগিতার মাধ্যমে সমুদ্রপথ এবং সামুদ্রিক সম্পদের ব্যবহারের উপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

সাধারণ ও সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণে বাংলাদেশের অঙ্গীকার অটুট
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সর্বজনীন ও সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণের প্রতি বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি পূর্ণাঙ্গ ও অবিচল। আমরা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ সকল আন্তর্জাতিক নিরস্ত্রীকরণ এবং পারমাণবিক অস্ত্রসহ অন্যান্য অস্ত্রের প্রসারণ বন্ধ বিষয়ক চুক্তি স্বাক্ষর করেছি। আমরা অনতিবিলম্বে আন্তর্জাতিক নিরস্ত্রীকরণ এবং অস্ত্রের প্রসারণ বন্ধ বিষয়ক চুক্তিসমূহের পূর্ণ বাস্তবায়ন চাই।’

তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে আমাদের অবদান বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি আমাদের অঙ্গীকারেরই বহিঃপ্রকাশ। অদ্যাবধি ১ লাখ ৮৮ হাজার বাংলাদেশী নারী ও পুরুষ ৪০টি দেশে ৫৫টি শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীগণ তাদের পেশাগত দক্ষতা এবং কাজের জন্য সমাদৃত।’

তিনি আরও বলেন, “আমরা বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ এবং তৎসংশ্লিষ্ট হুমকি নিয়ে চিন্তিত; যা প্রতিনিয়ত তথ্যের অপব্যবহার এবং যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে নতুনভাবে আবির্ভূত হচ্ছে। আমার সরকার চরমপন্থা ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ‘শূন্য সহনশীলতা’ নীতি গ্রহণ করেছে। আমরা কখনই সন্ত্রাসবাদ কার্যক্রম সংঘটনে বা অন্যের ক্ষতি সাধনে আমাদের ভূমি ব্যবহৃত হতে দেই না।”

শেখ হাসিনা বলেন, ‘সকলের জন্য নিরাপদ, শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ এবং টেকসই ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার জন্য অভিন্ন সঙ্কট মোকাবেলায় আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালাতে হবে। এ জন্য, আমাদের অবশ্যই বিভাজন, সঙ্কীর্ণতা ও বিচ্ছিন্নতার বিপরীতে একতা, সহমর্মিতা ও বহুপাক্ষিকতা বেছে নিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘শান্তি ও টেকসই সমৃদ্ধি অর্জনের উদ্দেশ্যে আমাদের অবশ্যই সুবিচার, ন্যায় ও ন্যায্যতার নীতি অনুসরণ করতে হবে, যার ভিত্তি হবে জাতিসংঘ সনদ এবং ২০৩০ এজেন্ডা।’

উন্নয়নশীল দেশের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহযোগিতার আহ্বান
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ ২০২৬ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে অন্তর্ভুক্ত হবে। আমি বিশ্বাস করি যে, বর্তমান বৈশ্বিক সঙ্কটসমূহ আমাদের উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। তবুও, উন্নয়ন সহযোগী এবং উন্নত দেশসমূহকে আমাদের এ যাত্রায় তাদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার অনুরোধ জানাচ্ছি। যা স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবিলায় আমাদের জন্য সহায়ক হবে। স্বল্পোন্নত দেশসমূহের জন্য প্রযোজ্য বিশেষ সুবিধাসমূহ আমাদের প্রয়োজনীয় ব্যাপ্তিকাল মোতাবেক প্রদান করার জন্য আমি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘এ বছরের মার্চ মাসে কাতারের দোহাতে অনুষ্ঠিত এলডিসি-৫ সম্মেলনে স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের জন্য অপেক্ষমান দেশগুলোকে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে। আমি জাতিসংঘ এবং উন্নয়ন সহযোগীদের দোহা কর্মসূচির সম্পূর্ণ ও কার্যকর বাস্তবায়নের আহ্বান জানাচ্ছি।’


ভেনামি জাত ও ক্লাস্টার পদ্ধতি সাফল্য আনবে চিংড়ি চাষে

আপডেটেড ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০৮:২৭
ফারাজী আজমল হোসেন, সাতক্ষীরা থেকে

বাংলাদেশের মাছ রপ্তানি খাতে আগে ইলিশের পরেই ছিল চিংড়ির অবস্থান। কিন্তু গত কয়েক বছরে ভাইরাসের আক্রমণ আর চাষজনিত নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে চিংড়ি হারিয়ে ফেলেছে সেই সুদিন। এ খাতে সাত নম্বরে পিছিয়ে যাওয়া চিংড়িকে আবারও আগের অবস্থানে ফিরিয়ে নিতে চলছে গবেষণা। চিংড়িচাষিদের তাই চোখ মৎস্য কর্মকর্তাদের দিকে। কর্মকর্তারা বলছেন, বদলে যাওয়া জলবায়ু আর চাষাবাদ মাথায় রেখে শুধু প্রকৃতির ওপর নির্ভর না করে মিশ্র বা আধুনিক প্রক্রিয়ায় চাষাবাদ করা উচিত। তাই এখন ভেনামি জাত ও ক্লাস্টার পদ্ধতিই চিংড়ি চাষে আনবে সাফল্য।বাংলাদেশে বেশ সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে আশির দশক ধরে আলোচনায় রয়েছে মৎস্য খাত। কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে এ খাতে বেশ দ্রুত উন্নতি করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মাছ মারা যাওয়া, চিংড়ি প্রক্রিয়ার খরচ বেড়ে যাওয়াসহ বেশ কিছু কারণে ধুঁকছে এই সম্ভাবনাময় খাতটি। সেই সঙ্গে নতুন জাতের চিংড়ি, আধুনিক ক্লাস্টার পদ্ধতিতে চাষসহ চিংড়ির নতুন বাজার সৃষ্টির কারণে সম্ভাবনাও উঁকি দিচ্ছে চিংড়ির বাজার ঘিরে।সরেজমিন সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার সুন্দরবনসংলগ্ন ঘেরগুলো ঘুরে দেখা যায়, বিগত ১৪ বছর ধরেই কম-বেশি সমস্যার মধ্যে থেকে চিংড়ি চাষ করে যাচ্ছে তারা। ২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় আইলার ক্ষতি মোকাবিলার পর কিছুটা ঘুরে দাঁড়ালেও করোনার মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রপ্তানি ব্যাহত হওয়ায় মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছেন না চিংড়িচাষিরা।

এ অঞ্চলে ১০ বিঘার ঘেরে (চিংড়ি চাষের পুকুর) চাষ করা বকুল বলেন, গেল বছরগুলোতে মাছ মোটামুটি উৎপাদন হয়েছে। কিন্তু দাম কম ছিল। চলতি বছর মাছের দাম তুলনামূলক বেশি, কিন্তু উৎপাদন হচ্ছে কম। এ বছর দেরিতে বৃষ্টি হওয়ায় ঘেরগুলোতে মাছে ভাইরাসের প্রকোপ বেশি।

স্থানীয়ভাবে সাতক্ষীরার এ অঞ্চলে অন্যান্য ঘের মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ বছর সুন্দরবনসংলগ্ন ঘেরগুলোর ৯০ শতাংশ মালিক লাভের চেয়ে খরচ তুলতে পারলেই খুশি। তবে তাদের আশঙ্কা, লিজ নিয়ে যারা যন্ত্রের সাহায্যে পানি তুলেছেন- তারা ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন।

স্থানীয় পর্যায়ের তথ্য অনুসারে, সনাতনী পদ্ধতিতে যে ঘেরগুলোতে নদী থেকে সরাসরি পানি প্রবেশ করানো হয়, সেখানে ভালো সাদা মাছ পাওয়া যায়। চিংড়িতে পর্যাপ্ত লাভ না হলে সেটা পুষিয়ে যায়। কিন্তু এ ধরনের ঘেরের জমি লিজ নিয়ে চাষ করলে লাভের পরিমাণ অনেক কমে যায়। কেননা এ ধরনের ঘেরে জমির মালিককে বিঘাপ্রতি বছরে দিতে হয় ১৫ হাজার টাকা। কোনো কোনো স্থানে তা আরও বেশি। অন্যদিকে সেচ দিয়ে যে ঘেরে চাষ করতে হয়, সেখানে ১০ হাজার টাকা বিঘাপ্রতি বছরে দিতে হয়। স্থানীয় ভাষায় এ পদ্ধতিকে বলা হয় ‘হাড়ি’।

সাতক্ষীরা-যশোর অঞ্চলে অবশ্য লোনাপানির এই বাগদার পাশাপাশি গলদা চিংড়িও উৎপাদন করা হচ্ছে। কিছুটা ভিন্ন চিত্র বর্তমানে রয়েছে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের চিংড়ি ব্যবসায়ীদের মধ্যে।

এ বিষয়ে মৎস্য অধিদপ্তরে যোগাযোগ করা হলে তারা জানায়, বিশ্বজুড়ে আবহাওয়া ও জলবায়ুর পরিবর্তন হচ্ছে। এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে সনাতনী পদ্ধতিতে। এই পদ্ধতিতে মাছের উৎপাদনের জন্য সম্পূর্ণ প্রকৃতির ওপর নির্ভর করা হয়, বাড়তি কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না। বর্তমান সময়ে এ পদ্ধতিতে কাজ করা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। এর বদলে মিশ্র প্রক্রিয়া বা আধুনিক প্রক্রিয়া ব্যবহার যুক্তিযুক্ত হবে বলে পরামর্শ দেয় তারা।

একসময় দেশের দ্বিতীয় শীর্ষ রপ্তানি পণ্য ছিল চিংড়ি। কিন্তু গত কয়েক বছরে এটি ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ে। এখন চিংড়ি দেশের শীর্ষ রপ্তানি পণ্যের তালিকায় সপ্তম স্থানে রয়েছে।

বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যানুসারে, সাত বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে কমেছে চিংড়ি রপ্তানি। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেশ থেকে হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি করা হয় ৪০ হাজার ৭০২ টন। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রপ্তানি করা হয় ৩৯ হাজার ৭০৬ টন। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৩৬ হাজার ১৬৮ টন। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩৩ হাজার ৩০৬ টন। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৩০ হাজার ৩৬ টন। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩০ হাজার ৫৭১ টন। বিগত কয়েক বছরের গড় রপ্তানির হার হ্রাস পেয়েছে প্রায় ১০ শতাংশ করে। এ অবস্থা চলতে থাকলে চিংড়ি রপ্তানি তলানিতে এসে ঠেকার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।
অথচ মাছ উৎপাদনে দীর্ঘদিন পঞ্চম অবস্থানে থাকার পর বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) ‘দ্য স্টেট অব ওয়ার্ল্ড ফিশারিজ অ্যান্ড অ্যাকুয়াকালচার ২০২২’ শীর্ষক বৈশ্বিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, চাষের মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে (৬ বছর ধরে পঞ্চম অবস্থানে ছিল) রয়েছে। এটি মৎস্য খাতের অনন্য এক অর্জন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

এ ছাড়াও স্বাদু পানির মাছ উৎপাদনেও বাংলাদেশ এখন বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। ইলিশ আহরণে প্রথম (বর্তমানে ইলিশের মোট উৎপাদন ৫ দশমিক ৭১ লাখ টন) অবস্থানে রয়েছে।

মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি করা মৎস্যজাত পণ্যের প্রায় ৭০ ভাগ ভ্যালু অ্যাডেড প্রোডাক্টস। বাংলাদেশ থেকে সাধারণত আইকিউএফ, কুকড, ফিস ফিলেট ভ্যালু অ্যাডেড মৎস্য জাতীয় পণ্য রপ্তানি হয়ে থাকে। বাংলাদেশ থেকে মূলত গলদা, বাগদা, হরিণাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, শুঁটকি, মাছের আঁশ, কাঁকড়া এবং চিংড়ির খোলসও রপ্তানি হয়ে থাকে।

আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ফরচুন বিজনেস ইনসাইটের মতে, ২০২৮ সাল নাগাদ বৈশ্বিক চিংড়ির বাজার দাঁড়াবে ৫ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের। এ ক্ষেত্রে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ খাতে বাংলাদেশের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে মাত্র ৫০ কোটি ডলার। তবে অর্থবছরের প্রথম নয় মাস, অর্থাৎ জুলাই-মার্চ সময়ে চিংড়ি রপ্তানিতে আয় কমেছে ২০ শতাংশ।

এ ক্ষেত্রে চিংড়ি চাষে আবারও সফলতা আনতে আধুনিক দুটি বিষয় নিয়ে আলোচনা চলছে বিগত বছরগুলোতে। এর মধ্যে একটি হলো ভেনামি জাতের চিংড়ি উৎপাদন এবং অপরটি ক্লাস্টার পদ্ধতিতে চাষাবাদ।

গেল বছর বাণিজ্যিকভাবে ভেনামি চিংড়ির চাষাবাদের অনুমতি প্রদান করে সরকার। বর্তমানে যশোর, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে এ পদ্ধতিতে কিছু ঘেরে চাষাবাদ করা হচ্ছে। দেশে ভেনামির পরীক্ষামূলক চাষ শুরু হয় ২০১৯ সালে। চার বছর ধরে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর এ চিংড়ির বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুর অনুমোদন প্রদান করে সরকার। ভেনামি চিংড়ি উচ্চ ফলনশীল জাতের চিংড়ি, যাকে অনেকটা ফার্মের মুরগির সঙ্গে তুলনা করা যায়। এটি পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরের একটি চিংড়ির প্রজাতি। উচ্চ ফলনের পাশাপাশি এর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। পৃথিবীজুড়ে উৎপাদিত চিংড়ির ৮০ শতাংশই ভেনামি জাতের।
‘হোয়াইটলেগ শ্রিম্প’ বা সাদা পায়ের চিংড়ি হিসেবে পরিচিত ভেনামি দেখতে আমাদের দেশের স্থানীয় জাতের হরিণা চিংড়ির মতো। ফলে প্রথম দেখায় এ চিংড়িকে হরিণা ভেবে ভুল করেন অনেকে। তবে এ জাতীয় চিংড়ি চাষের ঝুঁকি হলো ফার্মের মুরগির মতোই তার খাদ্যাভ্যাস ও আবহাওয়া বিবেচনায় রাখতে হয়।

ভেনামি চিংড়ি চাষ ব্যবস্থাপনায় জৈব নিরাপত্তাকে গুরুত্ব দিতে হয়। পানি ও বর্জ্য শোধন, ভৌত অবকাঠামোর বিচ্ছিন্নতা, বায়ু সঞ্চালন, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা, রোগের তথ্য সংরক্ষণ, খাদ্য প্রয়োগ- এসব বিষয়ে নিবিড় নজরদারি রাখতে হয় যা সনাতনী পদ্ধতিতে করা হয় না।

চিংড়ি রপ্তানিকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ভাষ্যমতে, সঠিকভাবে ভেনামি চাষ করা গেলে দ্রুত সময়ের মধ্যে চিংড়ি চাষের মাধ্যমে দেশের রপ্তানি আয় দ্বিগুণ করা সম্ভব।

চিংড়ি চাষে অপার সম্ভাবনাময় আলোচনাটি ক্লাস্টার পদ্ধতিতে চাষাবাদ নিয়ে। এ প্রসঙ্গে সিনিয়র উপজেলা মৎস্য অফিসার মো. শফিকুল ইসলাম জানান, ক্লাস্টার হলো পরস্পর সম্পর্কযুক্ত খামার সমষ্টি, যা সাধারণত একই অঞ্চল ও পরিবেশে খুব কাছাকাছি স্থানে অবস্থিত হয়। ক্লাস্টার পদ্ধতিতে খামারগুলোর মধ্যে সমবৈশিষ্ট্য থাকা অপরিহার্য।

এ পদ্ধতিতে চাষ করলে চিংড়ির উৎপাদন বৃদ্ধি পায় এবং নিরাপদ চিংড়ি উৎপাদন করা সহজ চিংড়ি চাষে পানির উৎস ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণ সহজতর ও সাশ্রয়ী হয়। কারিগরি সহায়তা প্রাপ্তি অনেক সহজ হয়। জৈব নিরাপত্তা প্রতিপালনের মাধ্যমে রোগ-বালাই প্রতিরোধ করে উৎপাদন বৃদ্ধি করা যায়। সম্মিলিতভাবে গুণগত মানসম্পন্ন উৎপাদনসামগ্রী সংগ্রহ করা যায় এবং উৎপাদন খরচ কমানো যায়।


শিশু হোসাইন জানেও না সে কী হারিয়েছে

শিশু হোসাইনকে কোলে নিয়ে বসে আছেন এক নারী। ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০১
শেখ শফিকুল বারী

সাত মাস বয়সী শিশু হোসাইন। সে জানেও না কী হারিয়েছে এই মহানগরীর অব্যবস্থাপনায়! ছোট্ট এই শিশুর জীবনে গত বৃহস্পতিবার রাত ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে দুঃখের রাত। আমেনা বেগম নামে এক নারী তাকে কোলে নিয়ে শুক্রবার সকালে মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) কক্ষে এসেছেন। গত রাত থেকে সকাল পর্যন্ত অনেক ধকল গেছে এ ছোট্ট শিশুর ওপর। এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে, কিন্তু কিছুই বুঝতে পারছে না কেন তাকে নিয়ে এখানে আসা হয়েছে।

টানা বৃষ্টির রাত ১০টার দিকে নানুবাড়ি থেকে ফিরছিল মায়ের কোলে চড়ে। রাস্তায় ছিঁড়ে পড়ে থাকা বিদ্যুতের তার থেকে জমে থাকা পানি বিদ্যুতায়িত হয়েছিল। সর্বনাশা বিদ্যুৎ কেড়ে নিয়েছে তার মা, বাবা ও বোনকে। সে ছিটকে পড়েছিল ওই পানিতে। কিন্তু অনিক নামে সদয় এক অটোরিকশাচালক তাকে পানি থেকে সঙ্গে সঙ্গে তুলে আমেনা বেগম নামে স্থানীয় এক নারীর কোলে দেয়ায় অলৌকিকভাবে বেঁচে যায় সে!

আর তার বোন লিমাকে বাঁচাতে গিয়ে অনিক নামের ওই ব্যক্তি নিজেও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান। হোসাইনকে কোলে নিয়ে তিনি দ্রুত তার ঘরে চলে আসেন। এসেই শিশুটির গায়ে প্রথমে গরম তেল মালিশ করেন। পরে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে শিশুটিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সকালে কিছুটা সুস্থ হলে বাসায় ফেরেন। হোসাইনের দাদা-নানা থানায় আছেন জেনে তিনি শিশুটিকে নিয়ে থানায় এসেছেন। ঘটনার এমনই বর্ণনা দিচ্ছিলেন প্রত্যক্ষদর্শী নারী।

গত বৃহস্পতিবার রাত ছিল ঢাকাবাসীর চরম দুর্ভোগের রাত। আকাশ যেন ভেঙে পড়ছে। বজ্রপাতের সঙ্গে অঝোর ধারায় বৃষ্টি। পুরো মহানগর যেন তলিয়ে গেছে পানিতে। বিভিন্ন স্থানে পানি জমে হাঁটুর ওপরে উঠে গেছে। খানাখন্দকে পড়ে পথচারীরা বিপাকে। ইঞ্জিন বিকল হয়ে থেমে আছে মোটরসাইকেল, বাস, প্রাইভেটকার, অটোরিকশা। এর মধ্যে মিরপুরের বিভিন্ন সড়কে পানি জমে একাকার, ফুটপাতও তলিয়ে গেছে।

এই দুর্ভোগের রাতে মিরপুরবাসী সাক্ষী হয়েছে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একই পরিবারের স্বামী, স্ত্রী ও কন্যাসহ অপর এক যুবকের নির্মম মৃত্যুর। রাত ১০টার দিকে মিরপুর কমার্স কলেজ সংলগ্ন শিয়ালবাড়ি ঝিলপাড় বস্তির বিপরীত পাশে হাজী রোডে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন একই পরিবারের মো. মিজান (৩০), তাঁর স্ত্রী মুক্তা বেগম (২৫) ও মেয়ে লিমা (৭) এবং অনিক (২১) নামে এক অটোরিকশাচালক।

স্থানীয়রা জানান, স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে রাজধানীর মিরপুর চিড়িয়াখানা সড়কে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে ভাড়া বাসায় থাকেন মিজান। নিম্নবিত্তের সংসার। মিরপুর এলাকায় রাস্তায় ফেরি করে শরবত বিক্রি করেন তিনি। মিরপুর-২ নম্বরের শিয়ালবাড়ি এলাকার সিরাজিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার বিপরীত পাশে শ্বশুরের টিনশেড ভাড়া বাসায় দুপুরে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে বেড়াতে এসেছিলেন মিজান। দুপুরে খেয়ে স্ত্রী-সন্তানদের শ্বশুরের বাসায় রেখে কাজে গিয়েছিলেন তিনি। রাতে তাদের নিতে আসেন মিজান। রাতের খাবার শেষ করে পৌনে ১০টার দিকে ভারী বৃষ্টির মধ্যেই দুই সন্তানকে নিয়ে চিড়িয়াখানা এলাকায় নিজেদের বাসায় ফিরছিলেন তারা। কিন্তু বাসায় ফেরা হলো না তাদের! পথেই বৃষ্টির পানিতে ডুবে থাকা বৈদ্যুতিক তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মিজান, মুক্তা ও তাদের কন্যাসন্তান লিমা মারা যান। ভাগ্যের জোরে বেঁচে যায় সাত মাসের ছোট্ট শিশু হোসাইন।

স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, বস্তিতে বিদ্যুতের অবৈধ চোরাই লাইন দিয়ে ব্যবসা করে এলাকার কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি ও বিদ্যুৎ বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী। যে তার ছিঁড়ে পড়ে পানি বিদ্যুতায়িত হয়েছিল, সেটি ওই অবৈধ চোরা লাইনের তার। জাহিদ নামে এক রিকশাচালক বলেন, ‘মরে গরিব! আর তাদের টাকায় মৌজে থাকে ওই প্রভাবশালীরা।’ সকাল পর্যন্ত পুলিশ ছাড়া প্রশাসনের কেউ একটু খবরও নিল না। এই চারজনের মৃত্যুতে যে ক্ষতি হলো পরিবারের, কে তা পূরণ করবে। তবে বারবার প্রভাবশালীদের নাম জানতে চাইলেও তিনি কারও নাম উল্লেখ না করে বলেন, আপনারা খোঁজ নিলেই জানতে পারবেন।

এদিকে ঝিলপাড় বস্তির টিনশেড ঘরে মেয়ে, মেয়ের স্বামী ও নাতনিকে হারিয়ে সারা রাত আহাজারি করেছেন মুক্তার মা কুলসুম বেগম। গিয়ে দেখা যায়, প্রতিবেশী নারীরা তাঁকে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করছেন। কেউ মাথায় তেল দিয়ে দিচ্ছেন, কেউ হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন শরীরে। কান্না করার মতো শক্তিও তখন আর নেই। কিছুক্ষণ পর পর আর্তনাদ করে উঠছেন। তার আর্তনাদে আশপাশের পরিবেশ গম্ভীর হয়ে আছে। এ কী হলো আমার, কী শাস্তি দিলে তুমি আল্লাহ্! আমার হোসাইনের কী হবে? তার কথা থেকে জানা গেল, দুপুরে মেয়ে, মেয়ের জামাই ও নাতি-নাতনিরা বেড়াতে এসেছিল। রাতে মেয়ের জামাই মিজান ওদের নিতে এসেছিলেন। রাতে খাওয়াদাওয়ার পর পৌনে ১০টার দিকে অঝোর ধারায় বৃষ্টির মধ্যেই মেয়ে মুক্তা, নাতনি লিমা ও নাতি হোসাইনকে নিয়ে নিজ বাসায় ফিরতে রওনা হন মিজান। কিছুক্ষণ পরই কেউ একজন এসে সংবাদ দেয় মিজান, মুক্তা ও লিমা মরে পানিতে ভাসছে। এ খবরে উদভ্রান্তের মতো শিয়ালবাড়ির ওই রাস্তায় গিয়ে দেখেন তাদের মরদেহ ভাসছে। স্থানীয়রা কাছে যেতে দেয়নি, তিনি বিদ্যুতায়িত হবেন বলে।

তিনি আরও বলেন, দুপুরে খেয়ে ওরা যদি চলে যেত, তাহলে এ সর্বনাশ হতো না। সন্ধ্যা হচ্ছে দেখে তিনি ১০০ টাকার ডিম ও শুঁটকি কিনে এনেছিলেন মেয়ে-মেয়েজামাইকে খাওয়ানোর জন্য। এ খাওয়া যে শেষ খাওয়া হবে তা কি জানতাম! রাতে খাওয়ার পর বৃষ্টি তখন কিছুটা কমেছে। এর মধ্যেই তারা রওনা দেয় বাসার উদ্দেশে। কিছুক্ষণের মধ্যেই মর্মান্তিক দুঃসংবাদটি পান। এই যাওয়া যে শেষ যাওয়া হবে জানলে ওদের যেতে দিতাম না। এ কোন সর্বনাশ হলো আমার বলেই আবারও কান্নায় ভেঙে পড়েন এই মা।

মিজানের বাবা নাসির হাওলাদার বলেন, ‘আমাদের বাড়ি বরিশালের ঝালকাঠি। আমার দুই ছেলে ও এক মেয়ে। মিজান মেজো। গত পরশু সকালে ওরা ঝালকাঠি থেকে ঢাকায় এসেছে। ওদের এই মৃত্যু কীভাবে মানি বাবা! আমার নাতিটার কী হবে? তাদের এই অকালমৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না। মাত্র এক দিন আগে ছেলে আমার ঢাকায় এসেছিল বৌ-বাচ্চা নিয়ে। এই দেখা যে শেষ দেখা হবে, তা কে ভেবেছিল! এ কথা বলেই কেঁদে ফেলেন তিনি।

এদিকে মুক্তার বাবা মো. মহফিজ বলেন, ‘কথা বলতে বলতে রাত হয়ে গেছিল। খাওয়ার পর বৃষ্টির মধ্যেই মেয়েজামাই মুক্তা ও ছেলেমেয়ে নিয়ে বাসায় ফিরতে রওনা হয়। যদি জানতাম এ যাওয়াই শেষ যাওয়া হবে তাহলে কখনোই ওদের যেতে দিতাম না। এই দেখা যে শেষ দেখা হবে কে জানত?

এই ঘটনায় মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগের বিষয়ে আমরা বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে কথা বলব। অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ থেকে শুরু করে এই চারজনের মৃত্যুর পেছনে কারও কোনো অবহেলা বা দায় আছে কি না তা খতিয়ে দেখা হবে। এ ঘটনায় আমরা সবকিছু মাথায় রেখেই তদন্ত করছি।’

তিনি আরও বলেন, নিহত অনিকের বাবা বাবুল মিয়া এ ঘটনায় মামলা করেছেন। ময়নাতদন্তের পর মরদেহ পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।


চুরির টাকায় মা-মেয়ের দেশভ্রমণ!

ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানী ঢাকার বাসা-বাড়িতে কাজ করার সময় চুরির অভিযোগে আছমা আক্তার (৩৭) ও সায়মা আক্তার (২০) নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তারা সম্পর্কে মা ও মেয়ে। কিশোরগঞ্জ থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে চুরি করা স্বর্ণ, নগদ টাকা ও অন্যান্য মালামাল উদ্ধার করা হয়েছে।

মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, সায়মা দীর্ঘদিন ধরেই মিরপুরে বসতি হাউজিংয়ের একটি বাসায় কাজ করতেন। গত ২৫ মে সেই বাসা থেকে স্বর্ণ ও টাকাসহ মালামাল নিয়ে পালিয়ে যান। চুরি করা স্বর্ণ তিনি ঢাকা ও কিশোরগঞ্জের তিনটি দোকানে বিক্রি করেন। বিক্রি করা এসব টাকা দিয়ে গত তিন মাস দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ান।

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সায়মা জানিয়েছেন, চুরির কিছু টাকা দিয়ে খালাকে বাড়ি করে দেন। এরপর মা-মেয়ে কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ঢাকা ও সিলেটের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখেন।

গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর থানার পশ্চিম আব্দুল্লাহপুর মামা বাড়ি থেকে সায়মাকে এবং তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে লক্ষীপুর কোনাবাড়ি থেকে তার মা আছমাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে একটি স্বর্ণের চেইন, চুরি করা স্বর্ণ বিক্রির ৫৯ হাজার টাকা ও অন্যান্য জিনিসপত্র উদ্ধার করা হয়। শুক্রবার আসামিদের ৩ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

বিষয়:

‘বিআরআই’ বাংলাদেশের বাস্তবতায় সবচেয়ে উপযুক্ত: চীনা রাষ্ট্রদূত

বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। ফাইল ছবি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশে পরিণত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘ভিশন-২০৪১’ বাস্তবায়নে বেইজিংয়ের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) বাংলাদেশের বাস্তবতার জন্য ‘সবচেয়ে উপযুক্ত’। এ মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর একটি হোটেলে নতুন প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, এটি বলা যেতে পারে বাংলাদেশের আধুনিকীকরণের যাত্রায় বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ ‘ভিশন-২০৪১’ এবং ‘সোনার বাংলা’ স্বপ্নের সঙ্গে সবচেয়ে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং বাংলাদেশের বাস্তবতার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। খবর বাসস

রাষ্ট্রদূত বলেন, চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক ‘অবশ্যই’ একটি নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে এবং বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের আলোকে বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতার নতুন যুগের সূচনা করবে।

ইয়াও বলেন, বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের আধিপত্য খোঁজার কোনো জিন নেই, অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার কোনো ঐতিহ্য নেই এবং সম্প্রসারণ ও লুণ্ঠনেরও কোনো উপাদান নেই।

রাষ্ট্রদূত বলেন, বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ মানবজাতির একটি অভিন্ন ভবিষ্যৎসহ একটি সম্প্রদায় গঠনের লক্ষ্যে চীনের একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

বাংলাদেশ-চীন চেম্বার অব কমার্স (বিসিসিআই) এবং চায়না এন্টারপ্রাইজেস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (সিইএবি) সহযোগিতায় বাংলাদেশে চীনের দূতাবাস ‘দ্য বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ ইন বাংলাদেশ: অ্যাচিভমেন্টস অ্যান্ড ওয়ে ফরওয়ার্ড’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে।

চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ, যারা চীনের পরিকল্পিত বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে যোগ দিয়েছে।

তিনি বলেন, গত সাত বছরে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে প্রেরণা জুগিয়েছে এবং বাংলাদেশিদের জীবনযাত্রার উন্নতি করেছে।

তিনি বলেন, সামনের দিকে তাকালে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ শক্তিশালী প্রাণশক্তি রপ্ত করবে এবং চীন ও বাংলাদেশের জন্য সুযোগ ও সমৃদ্ধির পথ হয়ে উঠবে।

নতুন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিআরআইয়ের সম্ভাব্যতাকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে এবং জাতীয় উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রকল্পগুলোতে যুক্ত হওয়ার জন্য বাংলাদেশের একটি সমন্বিত নীতি কাঠামো প্রয়োজন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের জন্য অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়ানো এবং প্রযুক্তি হস্তান্তর সহজতর করার দিকে মনোনিবেশ করা উচিত। কারণ চীন-পরিকল্পিত ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ পরিকল্পনায় অংশ নেয়ার বিকল্পগুলো বিবেচনা করে বাংলাদেশের সঙ্গে বিশ্বব্যাপী মনোযোগ আকর্ষণ করেছে।

আরও বলা হয়েছে, ‘কৌশলগতভাবে বিআরআই সুযোগ-সুবিধার মাধ্যমে বাংলাদেশ রূপান্তরমূলক এবং টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথ প্রশস্ত করতে পারে, কৌশলগত পরিকল্পনা এবং কার্যকর বাস্তবায়নের মাধ্যমে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারে।’

বিআরআইয়ের সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের উচিত অবকাঠামো ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে মনোযোগ দেয়া। এতে আরও বলা হয়, কার্যনির্বাহী সংক্ষিপ্তসারে বেসরকারি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে বিদ্যুৎ, পরিবহন এবং লজিস্টিকসের উন্নতির সঙ্গে ব্যবসার পরিবেশের উন্নতির ওপর জোর দেয়া হয়েছে।

বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে এবং বাণিজ্য প্রতিযোগিতা ও দক্ষতা বাড়াতে সড়ক, রেলপথ এবং জ্বালানি সুবিধার মতো অবকাঠামোগত উন্নয়নকে বাংলাদেশের অগ্রাধিকার দেয়া উচিত বলেও মন্তব্য করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।


মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী নুরুল গ্রেপ্তার

অভিযান চালিয়ে নুরুল আমিনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক যুদ্ধাপরাধী মো. নুরুল আমিন হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন। গত বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে তাকে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

র‌্যাব-২ এর জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) শিহাব করিম জানান, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহযোগী হিসেবে যুদ্ধাপরাধী মো. নুরুল আমিন হাওলাদারসহ রাজাকার বাহিনীর অন্যান্য সদস্যরা পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার হাতালিয়া এলাকা ও চরখালী এলাকায় অবৈধ আটক, নির্যাতন, অপহরণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ, হত্যা-গণহত্যাসহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী কাজ করেন।

শিহাব করিম বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধে ২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনারে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। আসামির বিরুদ্ধে ভান্ডারিয়া থানার পূর্ব পশারিবুনিয়া গ্রামের সাতজনকে ধরে নিয়ে হত্যা, চরখালী গ্রামের সুরবালা দাসীকে ধর্ষণ, চরখালী গ্রামের চন্দ্র কান্তি মিস্ত্রি ও মনোরঞ্জন মিস্ত্রিকে ধরে নিয়ে নির্যাতন এবং পূর্ব পশারিবুনিয়া ও হাতালিয়া গ্রামের ১৮ জনকে হত্যার অভিযোগ ছাড়াও অপহরণ, আটক, নির্যাতন, লুটপাট, অগ্নিসংযোগের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের ৪টি অভিযোগ আনা হয়। দীর্ঘ বিচারিক কার্যক্রম শেষে আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ড সাজা দেন। মামলার পর থেকে তিনি গ্রেপ্তারের আগ পর্যন্ত রাজধানী ও দেশের বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপন করেছিলেন।

এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানান র‌্যাবের সহকারী পরিচালক।


banner close