তীব্র দাবদাহের কারণে দেশে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে প্রায় ১৭ হাজার মেগাওয়াটে পৌঁছেছে। এর বিপরীতে হাতে ২৩ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা থাকলেও পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা না থাকায় জ্বালানি সংকটে পড়ে চাহিদার অন্তত ৩০ শতাংশ বিদ্যুৎ কম উৎপাদন করতে হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ নিয়ে দীর্ঘদিন স্বস্তিতে থাকা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার বেশ বেকায়দায় পড়েছে। মানুষের ভোগান্তির কথা বিরোধীদের মুখে উঠে এলেও সরকারের নীতিনির্ধারকরাও একে এড়িয়ে যাননি। জনভোগান্তি কমাতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছেন। বুধবার খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন কয়েক দিনের মধ্যে ভোগান্তি কমে আসবে।
ভোগান্তি কমানোর উদ্যোগের ফলও পাওয়া গেছে। দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগ্রুপ এস আলমের নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্রটি আগামী ১৩ জুন থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করবে। ভারতের আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকেও আসবে বাড়তি বিদ্যুৎ। সব মিলিয়ে ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে নতুন করে যুক্ত হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কমছে তাপমাত্রা, দেশের কোথাও কোথাও শুরু হয়েছে বৃষ্টি। আগামী তিন দিন বঙ্গোপসাগর থেকে মৌসুমি বায়ুও দেশের স্থলভাগের দিকে প্রবেশ করতে শুরু করবে। ফলে তীব্র দাবদাহের দাপট কমতে শুরু করবে। এতে বিদ্যুতের চাহিদাও কমবে। সব মিলিয়ে বিদ্যুতের অস্বস্তি বেশ খানিকটা দূর হবে। আর ২৫ জুন থেকে দেশের বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র পায়রা ফের চালু হলে পরিস্থিতি পুরোটাই পাল্টে যাবে বলে মনে করছেন সরকারের সংশ্লিষ্টরা।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘আমরা দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করছি। আদানি থেকে বিদ্যুৎ আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। এস আলমের কেন্দ্রটি থেকে আসবে ৫০০ মেগাওয়াট। তেলচালিত কেন্দ্রগুলো আরও বেশি চালাব। এতে সব মিলিয়ে বাড়তি প্রায় ২ হাজার মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুৎ আগামী কয়েক দিনের মধ্যে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। প্রয়োজনে আমরা লোকসান করে হলেও বেশি সময় তেলভিত্তিক কেন্দ্রগুলো চালু রাখব। মানুষ যাতে কষ্ট না পায় আমরা সেই চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি আমলে স্থাপিত বিদ্যুতের ক্ষমতা ছিল ৪ হাজার ৯০০ মেগাওয়াট, সেটি এখন ২৪ হাজার ১৪৩ মেগাওয়াট। সে সময় বিদ্যুৎ উৎপাদন হতো সর্বোচ্চ ৩ হাজার মেগাওয়াটের মতো। আর সারা দেশে ৩৫ শতাংশ মানুষের ঘরে বিদ্যুৎ ছিল। খোদ ঢাকায় ১০-১২ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকত না। আমরা এই পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তন করেছি। দেশে শত ভাগ মানুষের ঘরে বিদ্যুৎ এই সরকারের আমলে হয়েছে। যেহেতু বিদ্যুতের ব্যাপক উন্নতি ঘটেছে সে কারণে মানুষের কাছে লোডশেডিং কষ্টের। তারা বিএনপি আমলের লোডশেডিং দেখতে চায় না। আমরা পরিস্থিতি উন্নয়নে কাজ করছি। দ্রুতই বিদ্যুতের পরিস্থিতির সমাধান হবে।’
২০০০ মেগাওয়াট আসছে জাতীয় গ্রিডে
দেশীয় উদ্যোক্তা এস আলম ও চীনের সেপকোর মালিকানায় চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে তৈরি হয়েছে এসএস পাওয়ার নামে ১৩২০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। এটির ৬৬০ মেগাওয়াটের একটি ইউনিট গত ২৫ মে থেকে পরীক্ষামূলকভাবে উৎপাদনে এসেছে। এ সময় কেন্দ্রটি ২০০ থেকে ৩০০ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ সরবরাহ হচ্ছে। আগামী ১৩ জুন থেকে কেন্দ্রটি ৫০০ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে। কেন্দ্রটি থেকে ৬৬০ মেগাওয়াটই পাওয়া সম্ভব ছিল, কিন্তু সঞ্চালনের দায়িত্বে থাকা পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) সঞ্চালন লাইন নির্মাণের কাজ শেষ করতে না পারায় এখন ৫০০ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ সরবরাহ ঝুঁকিপূর্ণ হবে। সে কারণে কেন্দ্রটি থেকে ৫০০ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ নিতে পারছে না বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)।
এসএস পাওয়ারের কেন্দ্রটিতে কয়লার যথেষ্ট মজুতও রয়েছে। কেন্দ্রটিতে প্রায় ৮৪ হাজার টন কয়লার মজুত রয়েছে। ফলে একটানা কেন্দ্রটি চালাতেও জ্বালানি সংকটে পড়তে হবে না।
ভারতের বৃহৎ শিল্প গ্রুপ আদানির ১৪৯৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রটির ৭৪৯ মেগাওয়াটের একটি ইউনিট উৎপাদনে এসেছে বেশ কয়েক মাস। দ্বিতীয় ইউনিটটি পরীক্ষামূলকভাবে মাঝেমধ্যে চালু করা হয়। এ সময় কেন্দ্রের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ পরীক্ষা করা হয়। তবে গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে ৭৪৯ ইউনিটের কেন্দ্রটি একটানা চালু করা হয়েছে। কেন্দ্রটি থেকে আরও প্রায় ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। সব মিলিয়ে দুটি ইউনিট থেকে ১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসবে।
আদানির বিদ্যুৎ ভারতের ঝাড়খণ্ড থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর দিয়ে বগুড়া হয়ে আনার জন্য সঞ্চালন লাইন করা হয়েছে। এই সঞ্চালন লাইনটি পুরোপুরি নির্মাণকাজ শেষ হয়নি। বর্তমানে ৭৪৯ মেগাওয়াটের একটি ইউনিটের বিদ্যুৎ এই সঞ্চালন লাইন দিয়ে আসছে। গত বুধবার বিকেল পৌনে ৩টার দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর এলাকায় সঞ্চালন লাইন ‘ট্রিপ’ করলে আদানি পাওয়ারের বিদ্যুৎ আসা বন্ধ হয়ে যায়। ১৩ ঘণ্টা পর বৃহস্পতিবার ফের লাইনটি সচল করা সম্ভব হয়।
আদানির দ্বিতীয় ইউনিটের বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়েছে, এটি থেকে আরও বিদ্যুৎ আসবে। এতে স্বস্তি তৈরি হয়েছে পিডিবি ও বিদ্যুৎ বিভাগের।
অন্যদিকে দেশের তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সক্ষমতার মাত্র ১০ থেকে ১২ শতাংশ চালানো হতো। কারণ এই কেন্দ্রগুলোর মধ্যে ফারনেস তেলভিত্তিক কেন্দ্রের উৎপাদন ব্যয় ইউনিট প্রতি ১৪ টাকার বেশি ও ডিজেলভিত্তিক কেন্দ্রের উৎপাদন ব্যয় ৩০ টাকার ওপরে। অন্যদিকে কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রের উৎপাদন ব্যয় গড়ে ১০ টাকার মধ্যে আর গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রের ব্যয় গড়ে ৩ টাকার কম। ফলে তেলভিত্তিক কেন্দ্রগুলো বেশি চালালে বড় লোকসানে পড়বে সরকার। কিন্তু লোডশেডিং ও সমালোচনা এড়াতে সরকার তেলভিত্তিক কেন্দ্রগুলো গড়ে ৪০ শতাংশ সক্ষমতার বেশি চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বর্তমানে গড়ে ২ হাজার মেগাওয়াট আসছে তেলভিত্তিক কেন্দ্র থেকে, সেটি বাড়িয়ে ৩ হাজার মেগাওয়াট করতে চায় সরকার।
আদানি থেকে বাড়তি ৩০০ মেগাওয়াট, এসএস পাওয়ার থেকে ৫০০ মেগাওয়াট ও তেলভিত্তিক কেন্দ্র থেকে ১ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। সব মিলিয়ে প্রায় ২ হাজার মেগাওয়াট বাড়তি বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে আনতে চায় সরকার। এতে লোডশেডিং অনেকটাই কমবে বলে সরকারের নীতিনির্ধারকদের বিশ্বাস।
তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে
গতকাল আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এর ফলে খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
রাজশাহী, নওগাঁ, নীলফামারী ও দিনাজপুর জেলাসমূহের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা ও বরিশাল বিভাগসহ রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের অবশিষ্টাংশ এবং মৌলভীবাজার, চাঁদপুর ও নোয়াখালী জেলাসমূহের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। সারা দেশে দিন এবং রাতের ১ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত কমতে পারে বলেও আবহাওয়া অধিপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, দেশের একটি বড় অঞ্চলে তাপমাত্র ১ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত কমতে পারে।
গতকাল সকালে আবহাওয়া অধিদপ্তরের ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাস ফলতে শুরু করেছে। গতকাল ঢাকা সহ দেশের বিভিন্নস্থানে বৃষ্টি হয়েছে। এ সময় রাজধানীর আকাশ ছিল মেঘঢাকা। সন্ধ্যার দিকে রাজধানীর তাপমাত্রা ছিল ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ঠিক এর এক দিন আগে অর্থাৎ গত বুধবারে রাজধানীর তাপমাত্রা ছিল এই সময় ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রা কমে গেলে বিদ্যুতের চাহিদাও কমে যায়।
সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে কোটার যৌক্তিক সংস্কারের এক দফা দাবিতে ২০২৪ সালের ১৩ জুলাই গণপদযাত্রা কর্মসূচি ঘোষণা করেন আন্দোলনকারীরা। সেই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের নামে করা মামলা তুলে নিতে পুলিশকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন তারা।
১৩ জুলাই শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। একই দাবিতে ১৪ জুলাই রোববার রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপিও প্রদানের ঘোষণা দেন তারা। পাশাপাশি জেলা শহরগুলোতে শিক্ষার্থীদের পদযাত্রা সহকারে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে স্মারকলিপি প্রদানের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, আগামীকাল রোববার সকাল ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার থেকে শিক্ষার্থীরা গণপদযাত্রায় অংশ নেবেন। এরপর শিক্ষার্থীরা রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করবেন । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সাত কলেজ ও ঢাকার অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এতে অংশগ্রহণ করবে। এ ছাড়াও বিভিন্ন জেলায় অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা পদযাত্রা নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে স্মারকলিপি দেবেন ।
পুলিশকে মামলা তুলে নিতে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, শাহবাগ থানায় আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে অজ্ঞাতনামা মামলা করা হয়েছে। সেখানে পুলিশ বলছে যে শিক্ষার্থীরা তাদের ক্ষতি সাধন করেছে। ক্ষতি যদি হয় তাহলে অজ্ঞাতনামা মামলা দেওয়ার প্রয়োজন নেই, আমাদের নামেই মামলা দিতে পারেন।
এইদিন আন্দোলনকারীদের দাবি ও বক্তব্যকে সংবিধান এবং রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতির বিরোধী বলে মন্তব্য করেন ওবায়দুল কাদের। রাস্তা বন্ধ না করে আন্দোলন থেকে সরে আসতে বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।
এদিকে পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) হারুন অর রশীদ বলেন, আন্দোলনের নামে জানমালের ক্ষতি করলে কিংবা সড়ক অবরোধ করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যৌক্তিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে ।
অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এবং তাদের দাবি ন্যায্য হলেও সরকার ভিন্ন খাতে নিতে অপকৌশল করছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।
কোটা সংস্কারের বিষয়টি উচ্চ আদালতে বিচারাধীন থাকায় নির্বাহী বিভাগ এই মুহূর্তে আনুষ্ঠানিক কোনও ঘোষণা দিলে তা অসাংবিধানিক হবে বলে মন্তব্য করেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত।
১৩ জুলাই কোটা সংস্কারের দাবিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) দিনব্যাপী গণসংযোগ করে আন্দোলনকারীরা। শনিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হল ও সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে এ গণসংযোগ করেন শিক্ষার্থীরা।
এছাড়াও এইদিন রাত ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে চলমান আন্দোলন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য সমন্বয়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। ৩৮ সদস্যের এ কমিটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ব্যাচের ২৪ জন শিক্ষার্থীকে সমন্বয়ক এবং ১৪ জনকে সহসমন্বয়ক হিসেবে রাখা হয়।
এদিকে কোটা সংস্কারের দাবিতে রাজবাড়ী রেলস্টেশনের সামনে শনিবার রেললাইনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় ঢাকাগামী মধুমতী এক্সপ্রেস আটকে দেন তারা।
অভিযানে গৌরবময় অবদান রাখায় প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের টাগবোট ‘বিসিজিটি প্রমত্ত’ এবং এর ক্রুদের ‘প্রশংসাপত্র’ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মেরিটাইম অর্গানাইজেশন (আইএমও)।
শনিবার সকালে কোস্টগার্ড সদর দপ্তরের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার হারুন-অর-রশীদ বাসস’কে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে অবস্থানকালে গত বছর ৫ অক্টোবর রাতে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) মালিকানাধীন তেলবাহী জাহাজ ‘এমটি বাংলার সৌরভ’-এ ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। দ্রুত ও কার্যকর অগ্নিনির্বাপণ এবং সামুদ্রিক পরিবেশগত বিপর্যয় রোধে ‘বিসিজিটি প্রমত্ত’ অসাধারণ ভূমিকা রাখে।
ঘটনার সময় ট্যাংকারটিতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে এবং আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, যা সামুদ্রিক জীববৈচিত্র ও পরিবেশের জন্য বড় ধরনের হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। তৎক্ষণাৎ জরুরি উদ্ধার অভিযান শুরু করে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড।
‘বিসিজিটি প্রমত্ত’ এবং এর সাহসী নাবিকরা ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সফল অভিযান পরিচালনা করেন। সেই অভিযানে ৪৮ জন নাবিককে উদ্ধার করা হয়। পাশাপাশি তেল ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে কার্যকর ব্যারিয়ার স্থাপন ও বর্জ্য সংগ্রহের মাধ্যমে গভীর সমুদ্রে দূষণরোধ করা হয়।
এই দৃষ্টান্তমূলক ও সাহসিকতাপূর্ণ অভিযানের জন্য আন্তর্জাতিক মেরিটাইম অর্গানাইজেশন (আইএমও) ‘বিসিজিটি প্রমত্ত’ এবং এর ক্রুদের ‘লেটার অব কমান্ডেশন' দিয়েছে।
আইএমও এই অভিযানে প্রদর্শিত পেশাদারিত্ব, দক্ষতা, পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা এবং আন্তর্জাতিক নৌ নিরাপত্তা নীতিমালা অনুসরণের বিষয়গুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে মূল্যায়ন করেছে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আইএমও’র এই স্বীকৃতি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও দেশের জন্য বড় অর্জন। এটি শুধু কোস্টগার্ড নয়, পুরো দেশের জন্যই গর্বের। এই স্বীকৃতি প্রমাণ করে, কোস্টগার্ড একটি আধুনিক ও দক্ষ বাহিনী হিসেবে যেকোন দুর্যোগে সাহসিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম।
লেফটেন্যান্ট কমান্ডার হারুন-অর-রশীদ আরো বলেন, ‘বাংলাদেশ কোস্টগার্ড সর্বদা সমুদ্রসীমায় নিরাপত্তা বিধান, বিপদগ্রস্তদের উদ্ধার, সমুদ্র দূষণ প্রতিরোধ ও পরিবেশ সুরক্ষার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ভবিষ্যতেও বাহিনী দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী দায়িত্ব পালনে বদ্ধপরিকর থাকবে।
ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুরে সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে আসকর আলী (২৪) নামে এক বাংলাদেশি যুবক নিহত হয়েছেন।
শনিবার (১২ জুলাই) ভোরে উপজেলার মিনাপুর সীমান্তের ৩৫৩ নম্বর প্রধান পিলারের কাছে ভারতের অভ্যন্তরে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত আসকর আলী হরিপুর উপজেলার জীবনপুর গ্রামের কানুরার ছেলে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
স্থানীয় সূত্র ও বিজিবি জানায়, শনিবার ভোর আনুমানিক চারটার দিকে আসকর আলীসহ কয়েকজন মিনাপুর সীমান্তের ৩৫৩ নম্বর প্রধান পিলার সংলগ্ন এলাকা দিয়ে ভারতের অভ্যন্তরে কাঁটাতারের বেড়ার কাছে যান। এ সময় ভারতের কিষাণগঞ্জ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এতে আসকর আলী ঘটনাস্থলেই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। তার মরদেহ ভারতের প্রায় ২০০ গজ অভ্যন্তরে পড়ে আছে বলে জানা গেছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সীমান্তে অতিরিক্ত বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। অপরদিকে, ভারতের সীমান্তেও অতিরিক্ত বিএসএফ সদস্য মোতায়েন রয়েছে বলে জানা গেছে।
দিনাজপুর ৪২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা ঘটনাটি সম্পর্কে অবগত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিএসএফের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা শুরু করেছে। নিহত যুবকের লাশ ফেরত আনার জন্য বিএসএফকে পতাকা বৈঠকে বসার আহ্বান জানানো হয়েছে।
৪২ বিজিবি জানিয়েছে, "আমরা বিএসএফের সঙ্গে যোগাযোগ করে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে লাশটি ফেরত আনার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)-এর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক কার্যালয়ের আঞ্চলিক পরিচালক সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে অনির্দিষ্টকালের ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে পুতুলের বিরুদ্ধে প্রতারণা, জালিয়াতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের গুরুতর অভিযোগের তদন্ত চলাকালীন শুক্রবার এ সিদ্ধান্ত নেয় সংস্থাটি।
ডব্লিউএইচও’র এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশ সরকার বলেছে, আমরা এটিকে জবাবদিহিতার পথে গুরুত্বপূর্ণ প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে দেখি।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম শনিবার তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে সরকারের এই বক্তব্য তুলে ধরেন।
সায়মা ওয়াজেদকে পদ থেকে অপসারণ প্রসঙ্গে তিনি লেখেন, আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এর একটি স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন, যেখানে সায়মা ওয়াজেদকে তার পদ থেকে অপসারণ করা হবে, তার সকল সুযোগ-সুবিধা বাতিল করা হবে এবং এই মর্যাদাপূর্ণ দায়িত্বের সততা ও জাতিসংঘ ব্যবস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা পুনরুদ্ধার করা হবে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের জনগণ ও বিশ্ববাসী স্বচ্ছতা, সততা ও ন্যায়বিচারের আবির্ভাবে আনন্দিত।
হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আট মাস পর আবারো ভারত থেকে কাঁচামরিচ আমদানি শুরু হয়েছে।
দিনাজপুরের হিলি স্থল বন্দরের রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তা মো. নিজামুল ইসলাম আজ এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আজ শনিবার মরিচ বোঝাই দুটি ট্রাক হিলি স্থলবন্দর দিয়ে দেশে প্রবেশ করেছে। এর আগে গতকাল সাপ্তাহিক ছুটির দিনে দুটি ট্রাকে ১৬ মেট্রিক টন ২৪ কেজি কাঁচা মরিচ আমদানি করা হয়। এ নিয়ে দুই দিনে চারটি ট্রাকে ৩২ মেট্রিক টন ৪৮ কেজি কাঁচা মরিচ দেশে আমদানি করা হলো।
হিলি স্থল বন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন শিল্পী জানান, হিলি স্থলবন্দর আমদানিকারক ব্যবসায়ী মেসার্স এনপি ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ও সততা বাণিজ্যালয় নামের দুটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ভারতের শিলিগুড়ি থেকে ৩২ টন ৪৮ কেজি কাঁচামরিচ আমদানি করেছে।
হিলি বাজার ঘুরে জানা যায়, প্রতি কেজি কাঁচামরিচ ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এর দুইদিন আগে ১০০ থেকে ১৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে।
হিলি বাজারের কাঁচামরিচ বিক্রেতা আব্দুর রহিম বাসসকে বলেন, ‘কয়েকদিন দেশের বিভিন্ন জায়গায় বৃষ্টির কারণে মরিচ ক্ষেতে কাঁচামরিচের ফুল নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে মরিচ উৎপাদন অনেক কমে গেছে। তাই মোকামগুলোতে মরিচ সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে দেশীয় কাঁচামরিচ না পাওয়ায় আমরা ভারত থেকে আমদানি করা কাঁচামরিচ বিক্রি করছি।
আমদানিকারক সততা বাণিজ্যালয়ের স্বত্বাধিকারী বাবলু রহমান জানান, দেশের বাজারে কাঁচা মরিচের চাহিদা ও হঠাৎ করে দাম বৃদ্ধির কারণে ভারতের শিলিগুড়ি থেকে মরিচ আমদানি করা হচ্ছে। গতকাল আমদানি করা দুই ট্রাক মরিচ দেশে প্রবেশের পর দ্রুততম সময়ের মধ্যে রাজধানীসহ কয়েকটি জেলায় পাঠানো হয়েছে। আজ শনিবার আমদানি করা মরিচ একইভাবে খালাস করে বিক্রি প্রক্রিয়া আজ শনিবার দিনের মধ্যেই শেষ করা হবে। চাহিদা না থাকলে আর মরিচ আমদানি করা হবে না বলেও তিনি জানান।
হিলি আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন শিল্পী বলেন, ‘দেশের বাজার স্বাভাবিক রাখতে বন্দর দিয়ে অন্যান্য পণ্যসহ কাঁচা-মরিচ আমদানি করা হচ্ছে। আমদানিকৃত কাঁচামরিচ আশপাশের উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হবে। কয়েক দিনের মধ্য কাঁচামরিচের দাম আরও কমে আসবে বলেও তিনি আশ্বস্ত করেন।’
গত বছরের ১৪ নভেম্বর সর্বশেষ এ বন্দর দিয়ে তিনটি ট্রাকে ৩১ মেট্রিক টন কাঁচামরিচ আমদানি করা হয়। সে সময় দেশে মরিচের চাহিদা না থাকায় এর একদিন পর ১৫ নভেম্বর থেকে কাঁচামরিচ আমদানি বন্ধ করে দেওয়া হয়। দেশীয় কাঁচামরিচের সরবরাহ কম থাকায় দীর্ঘ আট মাস পর ভারত থেকে পুনরায় কাঁচামরিচ আমদানি করা হলো।
বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিতীয় দফার বাণিজ্য আলোচনার তৃতীয় ও শেষ দিনে উভয় দেশ বেশ কয়েকটি বিষয়ে একমত হয়েছে। তবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে। দু’পক্ষই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এ নিয়ে নিজেদের মধ্যে আন্তঃমন্ত্রণালয় আলোচনা অব্যাহত রাখার।
দু’দেশের প্রতিনিধিরা আবারো আলোচনায় বসবেন, সেটি ভার্চুয়ালি এবং সামনাসামনি উভয়ভাবেই হতে পারে। খুব শিগগিরই এ সংক্রান্ত সময় ও তারিখ নির্ধারণ করা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বার্তায় এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে আরো বলা হয়, বাণিজ্য উপদেষ্টা, বাণিজ্য সচিব এবং অতিরিক্ত সচিব আজ ১২ জুলাই দেশে ফিরবেন। প্রয়োজনে তারা আবারো যুক্তরাষ্ট্র সফর করবেন। তিন দিনের আলোচনার ভিত্তিতে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই ইতিবাচক সমাধানে পৌঁছানো সম্ভব হবে।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে গত ৯ জুলাই এই বাণিজ্য আলোচনা শুরু হয়। গতকাল দ্বিতীয় দফার আলোচনার মাধ্যমে এটি শেষ হয়েছে। আলোচনায় বাংলাদেশ পক্ষের নেতৃত্ব দেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব ঢাকা থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন। এ ছাড়া ভার্চুয়ালি আরো উপস্থিত ছিলেন সরকারের বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা।
তিন দিনের এই আলোচনার পুরো বিষয়টি সমন্বয় করেছে ওয়াশিংটন ডিসির বাংলাদেশ দূতাবাস।
চট্টগ্রাম মহানগরীর বায়েজিদ রৌফাবাদ এলাকায় স্ত্রীকে নৃশংসভাবে হত্যার পর লাশ ১১ টুকরো করে গুম করার চেষ্টার মামলায় প্রধান আসামি সুমনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৭।
শুক্রবার (১১ জুলাই) মধ্যরাতে ইউএনবিকে এই তথ্য নিশ্চিত করেন র্যাবের জনসংযোগ শাখার সহকারী পরিচালক এম আর এম মোজাফ্ফর হোসেন।
তিনি জানান, গোপন সংবাদের ভিক্তিতে র্যাব-৭ এর একটি দল চট্টগ্রাম থেকে স্ত্রীর খুনি এবং হত্যার পর ঠান্ডা মাথায় লাশ ১১ টুকরো করে নিজ ঘরে ফেলে পালিয়ে যাওয়া ঘাতক স্বামীকে আটক করতে সক্ষম হয়েছে। এ ব্যাপারে (শনিবার) সকালে সংবাদ সন্মেলনের মাধ্যমে বিস্তারিত জানানো হবে।
এর আগে বুধবার (৯ জুলাই) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে অক্সিজেন এলাকার পাহাড়িকা হাউজিং সোসাইটির এফজেড টাওয়ারের ১০ তলার বাসা থেকে ওই নারীর টুকরো করা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের পর স্থানীয়রা নিহত গৃহবধূর স্বামীকে আটকে রাখলেও গ্রিল কেটে পালিয়ে যেতে সমর্থ হন সুমন। পারিবারিক কলহের জের ধরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে ধারণা পুলিশের।
চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ থানার পাহাড়িকা আবাসিক এলাকায় দেড় মাস আগে এফজেড টাওয়ারের দশম তলায় বাসা ভাড়া নেন সুমন ও ফাতেমা। তাদের সিফাত নামে আট বছরের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে।
দেশজুড়ে টানা বৃষ্টি ও বৈরী আবহাওয়ার প্রভাব পড়েছে রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোতে। যোগান কমায় বেশকিছু সবজির দাম অনেক চড়া। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে কাঁচামরিচের। প্রতিকেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকায়। পাশাপাশি কয়েকদিনের তুলনায় মাছের দামও বেড়েছে। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর কয়েকটি কাঁচাবাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।
বাজারে গ্রীষ্মকালীন সবজির দাম তুলনামূলক বেশি। বেগুন প্রকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজিতে। করলা ৭০ থেকে ৮০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, পটোল ৫০ থেকে ৬০ টাকা, ধুন্দল ও চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, কচুর লতি ৬০ থেকে ৮০ টাকা এবং কচুরমুখী ৭০ টাকা।
সজনে কেজিতে ১৪০ টাকা, ঝিঙা ৮০ টাকা, কাঁচামরিচ ৩২০ টাকা এবং পেঁপে ৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিটি লাউ ৫০ থেকে ৬০ টাকা, টমেটো ১২০ টাকা, ইন্ডিয়ান গাজর ১৫০ টাকা, মুলা ৬০ টাকা, দেশি শসা ৮০ টাকা এবং হাইব্রিড শসা ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
লেবুর হালি ১০ থেকে ২০ টাকা, ধনে পাতার কেজি ৪০০ টাকা, কাঁচা কলার হালি ২০ টাকা, চাল কুমড়া প্রতি পিস ৪০ টাকা, ক্যাপসিকাম ৪০০ টাকা, কাঁকরোল ৮০ টাকা এবং মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৪০ টাকা।
শাকসবজির মধ্যে লাল শাক ১০ টাকা আঁটি, লাউ শাক ৩০ থেকে ৪০ টাকা, কলমি শাক ১০ টাকা, পুঁই শাক ৩০ টাকা এবং ডাঁটা শাক ১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আলুর দাম কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে এখন ৩০ টাকা হয়েছে। দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় এবং ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ ৪৫ টাকায়।
মুরগির বাজারেও বাড়তি দাম লক্ষ্য করা গেছে। সোনালি কক মুরগির কেজি ৩০০ টাকা, সোনালি হাইব্রিড ২৭০ টাকা, লাল লেয়ার ২৯০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৮০ টাকা, ব্রয়লার ১৭০ টাকা এবং দেশি মুরগি ৬৬০ টাকা। বাজারে এক ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়, হাঁসের ডিম ২২০ টাকা, দেশি মুরগির ডিম ৯০ টাকা।
হঠাৎ করে সবজির দাম বেড়ে যাওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষেরা বিপাকে পড়েছেন। ক্রেতাদের অভিযোগ, বৃষ্টির অজুহাতে সব ধরনের সবজির দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন বিক্রেতারা। মিরপুর ৬ নাম্বার বাজারে আসা আবুল হোসেন নামে একজন ক্রেতা বলেন, দুয়েকদিন আগের তুলনায় আজকে সবজির দাম বেশি।
বিক্রেতারা জানান, টানা বৃষ্টিতে মাঠ থেকে ফসল তোলার কাজ ব্যহত হচ্ছে। নিচু জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। অন্যদিকে পরিবহন খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় দাম বেড়েছে।
অন্যদিকে, গত তিন-চারদিনের তুলনায় সব ধরণের মাছের দাম কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাহিরে ইলিশ। এক কেজি আকারের ইলিশ আড়াই হাজার টাকার বেশি বিক্রি হচ্ছে। আর সাতশত থেকে আটশত গ্রাম ওজনের ইলিশের জন্য ১৮শ থেকে দুই হাজার টাকা গুনতে হচ্ছে। এছাড়া, ছয়শত থেকে হাজার টাকার নিচে দেশি নদনদীর মাছ পাওয়া যাচ্ছে না।
এছাড়া দেশি মাগুর মাছের কেজি ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা, মৃগেল ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, চাষের পাঙাশ ২০০ থেকে ২৩০ টাকা, চিংড়ি ৮০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকা, বোয়াল ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, বড় কাতল ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা, পোয়া ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ টাকা, কই ২২০ থেকে ২৩০ টাকা, মলা ৫০০ টাকা, বাতাসি টেংরা এক হাজার ৩০০ টাকা, টেংরা ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাচকি ৫০০ টাকা এবং পাঁচ মিশালি ২২০ টাকা।
গরুর মাংসের কেজি ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকা, গরুর কলিজা ৮০০ টাকা, গরুর মাথার মাংস ৪৫০ টাকা, গরুর বট ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। খাসির মাংসের কেজি এক হাজার ২০০ টাকা। আর আদা ১৪০ থেকে ১৮০ টাকা, দেশি রসুন ১৩০ টাকা এবং ইন্ডিয়ান ১৮০ টাকা, দেশি মসুর ডাল ১৪০ টাকা, মুগ ডাল ১৮০ টাকা, ছোলা ১১০ টাকা, খেসারির ডাল ১৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে মিনিকেট চালের কেজি প্রকারভেদে ৮২ থেকে ৯২ টাকা এবং নাজিরশাইল ৮৪ থেকে ৯০ টাকা, স্বর্ণা ৫৫ টাকা এবং ২৮ চাল ৬৫ টাকায়।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান সহিংসতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের মুখে গত দেড় বছরে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে আরও ১ লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গা। আজ শুক্রবার জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর এ তথ্য জানিয়েছে।
সংস্থাটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমারে চলমান সংঘাত এবং বিশেষ করে রাখাইন রাজ্যকে লক্ষ্যবস্তু করায় হাজার হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছে। ২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের মুখে সাড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। গত কয়েক মাসে এ সংখ্যা আরও বেড়েছে। ইউএনএইচসিআর ও অন্যান্য দাতা সংস্থা এসব শরণার্থীকে মানবিক সহায়তা দিতে কাজ করে যাচ্ছে।
ইউএনএইচসিআর বলছে, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে উদারভাবে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে আসছে বাংলাদেশ। কক্সবাজারে মাত্র ২৪ বর্গকিলোমিটারে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। দেড় বছরে আরও দেড় লাখ যুক্ত হয়েছে। ফলে এলাকাটি বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ স্থানের একটিতে পরিণত হয়েছে।
নতুন করে বাংলাদেশে প্রবেশ করা এসব রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে প্রায় ১ লাখ ২১ হাজার জনের বায়োমেট্রিক নিবন্ধন সম্পন্ন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইউএনএইচসিআর। এসব শরণার্থীর বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এদের অধিকাংশই জনাকীর্ণ শরণার্থী শিবিরগুলোতে বসবাস করছে।
সংস্থাটি বলছে, শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা মূলত সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। ফলে নতুন করে শরণার্থী যোগ হওয়ায় সংকট দেখা দিয়েছে। যারা নিবন্ধিত শরণার্থী তাদের মানবিক সহায়তা প্রদান করছে দাতা সংস্থাগুলো। তবে, যারা নিবন্ধনের আওতায় আসেনি; তাদের কাছে খাবার, চিকিৎসাসেবা, শিক্ষা ও প্রয়োজনীয় ত্রাণ সামগ্রীসহ মৌলিক পরিষেবা পৌঁছানো কঠিন হয়ে যাচ্ছে স্বেচ্ছাসেবকদের।
ইউএনএইচসিআরের শঙ্কা, বর্তমানে বৈশ্বিক সহায়তা তহবিল তীব্র সংকটের মধ্যে রয়েছে। এ অবস্থায় নতুন শরণার্থী বৃদ্ধি পেলে জরুরি পরিষেবা শৃঙ্খল ভেঙে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে। শিগগিরই অতিরিক্ত তহবিল নিশ্চিত না করা হলে, সেপ্টেম্বরের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে এবং প্রয়োজনীয় রান্নার জ্বালানি (এলপিজি) ফুরিয়ে যাবে। ডিসেম্বরের মধ্যে খাদ্য সহায়তা বন্ধ হয়ে যাবে। এছাড়া প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার শিশুর শিক্ষা সুবিধা বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। আর এদের মধ্যে প্রায় ৬৩ হাজার নতুন করে বাংলাদেশে আসা শিশু।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর ও মানবিক সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাগুলো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বাংলাদেশ ও এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশগুলোর সঙ্গে সংহতি প্রকাশের আহ্বান জানিয়েছে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা না আসা পর্যন্ত এবং নিরাপদ ও স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের পরিবেশ নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সহায়তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানানো হয়।
রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে মো. সোহাগ নামে এক ব্যবসায়ীকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়ে শোক প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার ।
আজ এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ৯ জুলাই বুধবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ঢাকায় মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে মো. সোহাগ নামে এক ভাঙারি ব্যবসায়ীকে মাথায় পাথর দিয়ে আঘাত করে নিষ্ঠুরভাবে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। হত্যা করে তারা শুধু সোহাগকে উলঙ্গই করেনি, তার লাশের উপর নৃত্য করে আনন্দ উল্লাসও করেছে। প্রকাশ্য দিবালোকে মাথায় পাথর মেরে শতশত মানুষের সামনে এই হত্যার ঘটনা আইয়ামে জাহিলিয়াতকেও হার মানিয়েছে। এই নির্মম দৃশ্য জাহেলিয়াতের লোমহর্ষক নিষ্ঠুরতা ও বর্বরতাকেই যেন স্মরণ করিয়ে দেয়। পাশবিক এই হত্যার ঘটনায় মানুষ বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। এভাবে পাশবিক কায়দায় মানুষ হত্যা সভ্য সমাজে বিরল।
তিনি আরও বলেন, কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায় এসেছে চকবাজার থানা যুবদলের কয়েকজন নেতা নিহত সোহাগের কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না পেয়ে যুবদলের সন্ত্রাসীরা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। দেশবাসীর প্রশ্ন, চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের লালন-পালনকারী দলের নেতারা যে রাজনীতির কথা বলে বেড়ায়, সেই দলের হাতে জনগণের জানমাল কতটা নিরাপদ? এই দলের হাতে ক্ষমতা গেলে দেশ, জাতি ও রাষ্ট্র কখনই নিরাপদ থাকতে পারে না। এই ঘটনায় আবার সেই পতিত ফ্যাসিবাদেরই পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। সরকারকে এইসব দুর্বৃত্তদের শক্ত হাতে দমন করতে হবে এবং দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
এই নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের র সাথে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় এনে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান জামায়াত সেক্রেটারি।
জামায়াত সেক্রেটারি নিহত সোহাগের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন ও তার শোক-সন্তপ্ত পরিবার-পরিজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
রাজধানীর মিটফোর্ট হাসপাতালের মূল ফটকে সোহাগ নামে এক ব্যবসায়ী যুবককে হত্যার ঘটনায় যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক ও ছাত্রদলের অভিযুক্ত সদস্যদের দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিএনপি।
শুক্রবার রাতে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ এমনটা জানিয়ে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, মিটফোর্ডের ঘটনায় সিরিয়াস ব্যবস্থা নেয়ার পরও, বিচ্ছিন্ন ঘটনায় দায় বিএনপির ওপর চাপানো অপরাজনীতি, এটা নোংরা রাজনীতির চর্চা।
বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন কোন অপরাধীকে কখনো প্রশ্রয় দেয় না, কোনোদিন দেবেও না। এক্ষেত্রে বিএনপি অবস্থান ‘জিরো টলারেন্স’।
এদিকে, যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না ও সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম নয়ন এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার আসামি যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সহ-জলবায়ু বিষয়ক সম্পাদক রজ্জব আলী পিন্টু ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সাবাহ করিম লাকিকে প্রাথমিক সদস্যপদসহ দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে।
একই সঙ্গে আইশৃঙ্খলা বাহিনীকে কোনরূপ শৈথিল্য না দেখিয়ে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিতে দলটি জানায়, বহিষ্কৃত নেতৃবৃন্দের কোন ধরনের অপকর্মের দায়দায়িত্ব দল নেবে না।
যুবদলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের তাদের সঙ্গে সাংগঠনিক সম্পর্ক না রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন তারা।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি)আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, আগের আমলে আমরা দেখেছি গুটিকয়েক ব্যবসায়ী মাফিয়ায় পরিণত হয়েছিল। সেই মাফিয়াদের এখন একটি রাজনৈতিক দল প্রশ্রয় দিচ্ছে। ফলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা চাঁদাবাজদের কারণে বেহাল অবস্থায় রয়েছে। দেশের ব্যবসায়ী এবং অর্থনীতিকে সব ধরনের চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসী থেকে আমরা রক্ষা করবো। শহীদেরা সন্ত্রাসীদের জন্য, চাঁদাবাজদের জন্য জীবন দেয় নাই।
শুক্রবার রাতে খুলনা শহরের শিববাড়ি মোড় এলাকার পথসভায় নাহিদ এসব কথা বলেন।
বিচার, সংস্কার ও নতুন সংবিধানের দাবিতে দেশব্যাপী 'দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা' কর্মসূচি পালন করছে গণঅভ্যুত্থান থেকে গড়ে উঠা এই নতুন রাজনৈতিক দল।
পদযাত্রাটি গত ১ জুলাই থেকে শুরু হয়ে ২৯ জুলাই পর্যন্ত চলবে।
পুরান ঢাকার একটি হত্যাকাণ্ডের কথা উল্লেখ করে নাহিদ বলেছেন, একটি গণঅভ্যুত্থানের পরেও আমাদের এই পুনরাবৃত্তি দেখতে হচ্ছে। এটা অত্যন্ত দু:খের। গণঅভ্যুত্থানের পর আমরা বলেছি, যে ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা সন্ত্রাসী তৈরি করে, মাফিয়া তৈরি করে, দুর্নীতিবাজদের আশ্রয় দেয়, জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়, পুলিশ বাহিনীকে খুনি বাহিনীতে রূপান্তর করে সে ব্যবস্থার বিলোপ ঘটাতে হবে। সেই ব্যবস্থার পতন ঘটিয়ে নতুন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে। কিন্তু নানানভাবে ৫ আগস্ট থেকেই ছাত্র নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে।
তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে থাকলেও নানান পক্ষ নতুন বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে আমাদের সাথে নাই। তারা পুরোনো বন্দোবস্ত টিকিয়ে রাখতে সব কিছু করে যাচ্ছে।
ভারতের স্বার্থ রক্ষার জন্য রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে উল্লেখ করে নাহিদ বলেন, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র করে সুন্দরবনকে ধ্বংসের পাঁয়তারা করা হয়েছিল। বিভিন্ন দুর্যোগে সুন্দরবন শত বছর ধরে এই বদ্বীপের জনগণকে পাহারা দিয়ে যাচ্ছে। এই সুন্দরবনকে আমাদের রক্ষা করতে হবে।
গণ-অভ্যুত্থান অসমাপ্ত রয়ে গেছে মন্তব্য করে নাহিদ বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ছিল নতুন বাংলাদেশের শুরু। ছাত্র-তরুণ, শ্রমিকদের আন্দোলনের শুরু। আমাদের এই আন্দোলন চলমান রাখতে হবে। আমরা বলে দিতে চাই, নতুন বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠায় গণ-অভ্যুত্থানের সকল ছাত্র-জনতা এখনো মাঠে আছে। আপনারা যতই চেষ্টা করেন আমাদের মাঠ থেকে সরাতে পারবেন না। জনগণের পক্ষে আমরা মাঠে থাকবো।
রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের মূল ফটকে জনসমক্ষে মোহাম্মদ সোহাগ নামে এক ব্যবসায়ী যুবককে কুপিয়ে ও পিটিয়ে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানিয়ে নিহতের প্রতি শোক প্রকাশ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই পৈশাচিক ঘটনা কেবল একটি জীবনহানিই নয়-এটি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, নাগরিক অধিকার ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় গভীর হতাশার বহি:প্রকাশ। আমাদের সংগঠনের নীতি, আদর্শ ও রাজনীতির সাথে সন্ত্রাস ও বর্বরতার কোনো সম্পর্ক নেই। অপরাধী যে-ই হোক, তার স্থান কখনোই আইন ও ন্যায়বিচারের ঊর্ধ্বে হতে পারে না।
জুলাই-আগস্টের গণ-আন্দোলনে পতিত আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর এ নির্মম ঘটনা দেশের মানুষের বিবেককে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে। প্রকাশ্য দিবালোকে সংঘটিত পৈশাচিক ও ন্যাক্কারজনক ঘটনাটির দৃষ্টান্তমূলক বিচার না হলে বিচারহীনতার সংস্কৃতি আমাদের সমাজকে আরও গভীর অন্ধকারে নিমজ্জিত করবে।
অবিলম্বে এ ঘটনার নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত নিশ্চিত করে প্রকৃত অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল।
নিহত ব্যক্তির রুহের মাগফিরাত কামনা এবং তার পরিবারবর্গের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।