শনিবার, ৩১ মে ২০২৫
১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

মহাসড়কে পশুবাহী গাড়ি থামানো যাবে না

ফাইল ছবি
আপডেটেড
১৪ জুন, ২০২৩ ১৮:৩৬
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা
প্রকাশিত
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা
প্রকাশিত : ১৪ জুন, ২০২৩ ১৮:৩৬

হাইওয়েতে (মহাসড়ক) কোরবানির পশুবাহী গাড়ি থামানো যাবে না বলে জানিয়েছেন হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. শাহাবুদ্দিন খান।

বুধবার রাজধানীর উত্তরায় আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) সদর দপ্তরের কনফারেন্স রুমে ‘ঈদুল আজহা-২০২৩ উপলক্ষে মহাসড়ক নিরাপদ ও যানজটমুক্ত’ রাখার লক্ষ্যে আয়োজিত সমন্বয় সভায় এ কথা বলেন তিনি।

মো. শাহাবুদ্দিন খান বলেন, ‘পশুবাহী গাড়ির সামনে ও পেছনে গন্তব্য লেখা থাকবে। হাইওয়েতে কোরবানির পশুবাহী গাড়ি থামানো যাবে না। কেউ বাধা দিলে কোনোভাবে বরদাস্ত করা হবে না।’

এর আগে সভায় এক ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন, সড়কে পশুবাহী ট্রাকে চাঁদাবাজি করা হয়। এই অভিযোগের বিষয়ে অতিরিক্ত আইজিপি বলেন, কোনো গরুর হাটের ভলান্টিয়ার জোরপূর্বক বা বাধা দিয়ে গাড়ি হাটে ঢোকাতে পারবে না। এজন্য পশুবাহী প্রত্যেক গাড়িকে সামনে ও পেছনে গন্তব্য লিখে রাখতে হবে। তাহলে কোনো ধরনের চাঁদাবাজির সুযোগ থাকবে না। যারা যাত্রী আছেন, পরিবহনসংশ্লিষ্ট আছেন চাঁদাবাজি হবে না এটা নিশ্চিত থাকেন।

পশুবাহী ট্রাকে মাদক পরিবহন করা হয় এমন অভিযোগের বিষয়ে অতিরিক্ত ডিআইজি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের সুনির্দিষ্ট নজরদারি থাকবে। মাদক কারবারিরা যাতে কোনো ধরনের সুযোগ না পায়, সেজন্য আমাদের নজরদারি ও তদারকি থাকবে।’

বিভিন্ন সংগঠনের নামে চাঁদাবাজির সমস্যা সমাধান প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মো. শাহাবুদ্দিন খান বলেন, ‘আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে, হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে দৃঢ়ভাবে বলছি, চাঁদাবাজির কোনো সুযোগ নেই, থাকবে না। যাত্রীরা যারা রয়েছেন, মহাসড়ক ব্যবহার করবেন, তারা একটি নিরাপদ পরিবেশ পাবেন বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এবং আমরা এটি বাস্তবায়ন করব। সেই সঙ্গে আমরা সবার সহযোগিতা কামনা করছি।’

এবারই প্রথমবার করা সমন্বয় সভার কার্যকারিতা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা খুবই কার্যকরী হবে। আমরা আমাদের কাজটি তখনই সুন্দরভাবে করতে পারি, যখন আমাদের যারা অংশীজন বা স্টেকহোল্ডার, সহযোগী সংস্থা, জনসাধারণ রয়েছেন তাদের সঙ্গে সমন্বয় করতে পারি। সমন্বিত আলোচনার মাধ্যমে প্রত্যেকটি জায়গা ধরে খুঁটিনাটি সমস্যা চিহ্নিত করে আলোচনা করছি। সেই সঙ্গে কার কোন দায়িত্ব ও চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করছি এবং সমাধানে আমাদের কো-অর্ডিনেশন ও দায়িত্বগুলো চিহ্নিত করছি। আমি আশা করি, এই সমন্বয় সভাটি আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, অপরাধ দমনে এবং সুন্দর নিরাপদ পরিবেশ তৈরিতে সহায়ক হবে।’


দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরসমূহে ১নং সতর্কতা সংকেত

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

আজ সকাল নয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দর সমূহের জন্য ১নং সতর্কতা সংকেত জারি করা হয়েছে।

আজ এ বিষয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের প্রকাশিত এক বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, ‘নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, এবং সিলেট অঞ্চল সমূহের উপর দিয়ে দক্ষিণ -দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫-৬০ কি.মি. বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দর সমূহকে ১ নম্বর (পুনঃ) ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।’

এছাড়া, দেশের উপকূলীয় অঞ্চল ও সমুদ্রবন্দরের জন্য প্রযোজ্য অপর এক বিশেষ আবহাওয়া বুলেটিনে বলা হয়েছে, ‘সমুদ্র বন্দরসমূহ, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে সংকেত নামিয়ে ফেলতে বলা হয়েছে।’

উল্লেখ্য, সকালে আবহাওয়া অধিদপ্তর আজ আবহাওয়ার সিনপটিক অবস্থা সম্পর্কে জানিয়েছে যে- শেরপুর ও তৎসংলগ্ন মেঘালয়ে অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি দুর্বল হয়ে গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে। এটি আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে যেতে পারে। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর বাংলাদেশের উপর বিস্তার লাভ করেছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের উপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে।


নিবন্ধন ফিরে পেতে জামায়াতের আপিলের রায় রোববার

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন ফিরে পেতে জামায়াতে ইসলামীর করা আপিলের রায় ঘোষণা করা হবে আগামীকাল রোববার।

প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বিভাগ বেঞ্চে রোববারের কার্যতালিকার ১ নম্বর আইটেমে বিষয়টি রায়ের জন্য রাখা হয়েছে।

মোট চারদিন আপিলের শুনানির পর গত ১৪ মে সর্বোচ্চ আদালত এ বিষয়ে রায়ের দিন ধার্য করেন।

আদালতে জামায়াতের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এহসান আব্দুল্লাহ সিদ্দিকী ও অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। অন্যদিকে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম।

এক রিট আবেদন নিষ্পত্তি করে ২০১৩ সালের ১ আগস্ট জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল ও অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয় হাইকোর্ট। এরপর ২০১৮ সালের ৭ ডিসেম্বর জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। পরবর্তী পর্যায়ে হাইকোর্টে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে জামায়াতে ইসলামী। তবে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল শুনানিতে জামায়াতের মূল আইনজীবী উপস্থিত না থাকায় গত নভেম্বর তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে আপিল বিভাগ ‘ডিসমিস ফর ডিফল্ট’ বলে আপিল খারিজের আদেশ দেন। ফলে রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায় বহাল থাকে।

এক পর্যায়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান চলাকালে গত ১ আগস্ট জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে শেখ হাসিনার সরকার। সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮(১) ধারায় জামায়াত, ছাত্রশিবিরসহ তাদের অন্যান্য অঙ্গসংগঠনকে নিষিদ্ধ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করে। তবে গত ২৮ আগস্ট জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী ছাত্রশিবির নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

অন্যদিকে, রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিলটি পুনরুজ্জীবনের আবেদন করা হয়। সে আবেদনের পর আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, আপিল বিভাগে পেন্ডিং মামলাটি পূর্ণাঙ্গ শুনানি হয়ে নিষ্পত্তি হয় নাই। ‘ডিসমিসড ফর ডিফল্ট’ হয়। সেজন্য আমরা মামলাটি পুনরুজ্জীবনের আবেদন করি। সে পুনরুজ্জীবনের (রেস্টর) আবেদন গত ২২ অক্টোবর মঞ্জুর হওয়ার পর মেরিট অনুযায়ী আবার আপিল শুনানি শুরু হয়। এর মধ্য দিয়ে নিবন্ধন ফিরে পেতে জামায়াতের আইনি লড়াইয়ের পথ খুলে যায়।


মানুষ-হাতি দ্বন্দ্ব কমাতে দুই পরিকল্পনা সরকারের

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ইউএনবি

দেশের বনভূমি সংলগ্ন ও পার্বত্য এলাকায় মানুষ ও হাতির সহাবস্থান উভয়েরই ক্ষতির কারণ হয়ে উঠেছে। হাতির পদদলনে যেমন কৃষিজমি নষ্ট ও প্রাণহানি হচ্ছে, তেমনই বন্যপ্রাণীটির উৎপাত ঠেকাতে মানুষের স্থাপিত বৈদ্যুতিক ফাঁদ ও গুলিতে মারা পড়ছে হাতি। এমন বাস্তবতায় মানুষ ও হাতির মধ্যে দূরত্ব তৈরির মাধ্যমে দ্বন্দ্ব কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

দুই পরিকল্পনা

হাতি ও মানুষের মধ্যে দূরত্ব বাড়াতে দুই পরিকল্পনা—বনভূমি পুনরুদ্ধার ও ইকো-ট্যুরিজমের বিকাশ—সামনে রেখে এগোচ্ছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এর মধ্য দিয়ে পরিবেশ ও জলবায়ু সংকট মোকাবিলা সহজতর এবং হাতিদের নিজস্ব আবাসে বিচরণ নিশ্চিত করতে চায় সরকার।

মানুষ-হাতি দ্বন্দ্ব নিরসনের পাশাপাশি ইকো ট্যুরিজম দেশের অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

তুরস্কের অভিজ্ঞতায় আস্থা

এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে, বিশেষ করে ইকো-ট্যুরিজম খাতে তুরস্কের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চায় বাংলাদেশ।

রাজধানীর পান্থপথের পানি ভবনে ২৭ মে নিজ দপ্তরে এক বৈঠকে এ কথা জানান পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

ঢাকায় নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত রামিস সেনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ওই বৈঠকে অংশ নেয়। ওই সময় মানুষ-হাতি দ্বন্দ্বপ্রবণ এলাকাগুলোতে বন পুনরুদ্ধারের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন উপদেষ্টা রিজওয়ানা।

হাতি নিধন ও মানুষ হত্যা

চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসেই হাতি নিধন ও হাতির মাধ্যমে মানুষের প্রাণহানির একাধিক ঘটনা ঘটেছে।

গত ৫ জানুয়ারি কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং রেঞ্জের হরিখোলা গহিন পাহাড়ের সংরক্ষিত বনে একটি হাতি মারা যায়। পরে ১৮ জানুয়ারি একই উপজেলার সংরক্ষিত বনে একটি বাচ্চা হাতির মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

পরের মাসে ১২ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজারের চকরিয়ায় বৈদ্যুতিক ফাঁদে পড়ে আরও একটি হাতি নিহত হয়। পাহাড়-সংলগ্ন তামাকখেত থেকে মৃত হাতিটি উদ্ধার করে বন বিভাগ। স্থানীয়রা জানান, তামাকখেত রক্ষা করতে পাতা বৈদ্যুতিক ফাঁদে পড়েই হাতিটি মারা যায়।

মার্চ মাসে ফের আসে হাতি মৃত্যুর খবর। সে সময় প্রথমে ধারণা করা হয়েছিল, অসুস্থতাজনিত কারণে সেটির মৃত্যু হয়েছে, তবে পরের দিন ময়নাতদন্তে জানা যায়, হাতিটিকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।

এর ঠিক এক সপ্তাহ আগে উখিয়ার জুমছড়ি সংরক্ষিত বনে একটি বন্যহাতি রক্তবমি করতে করতে মারা যায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।

তার দুই দিন পর ২০ মার্চ শেরপুরের নালিতাবাড়ীর গারো পাহাড়ে ঘটে আরও একটি বন্যহাতি মৃত্যুর ঘটনা। পাহাড়ের পূর্ব সমশ্চুড়া এলাকায় ধানখেতের পাশে স্থাপিত বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে প্রাণ যায় হাতিটির।

এরপর এক মাস বিরতি দিয়ে গত সপ্তাহে মানুষ-হাতি দ্বন্দ্বের বিষয়টি আরও একবার খবরের শিরোনাম হয়। এবারও মৃত্যুর খবর, তবে হাতির নয়; মানুষের।

গারো পাহাড়ের গজনীতে বন্যহাতির আক্রমণে দেড় ঘণ্টার ব্যবধানে দুজনের মৃত্যু হলে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ পরিস্থিতিতে স্থানীয় বাসিন্দাদের সন্ধ্যার পর ঘর থেকে বের না হওয়ার এবং সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে বন বিভাগ।

এতসব ঘটনার পরও হাতি নিধন থেমে নেই। বন বিভাগ বারবার নিরুৎসাহিত করলেও এসব কর্মকাণ্ড ঘটেই চলেছে। আবার আত্মরক্ষার্থে অনেক সময় অবধারিতভাবেই মানুষ কিংবা হাতির প্রাণ যাচ্ছে

ইকো ট্যুরিজমে কি পদচারণার ঝুঁকি বাড়বে?

ইকো ট্যুরিজমের কারণে স্বভাবতই বনাঞ্চলে মানুষের পদচারণা বাড়বে। এতে করে হাতিসহ সব বন্যপ্রাণীর জন্য নিরাপদ আবাসস্থল গড়তে সরকারের যে পরিকল্পনা, তা ভেস্তে যাবে কি না, সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এম মনিরুল এইচ খানের কাছে।

এ ধরনের আশঙ্কার অনেকটাই উড়িয়ে দিয়ে বন্যপ্রাণী ও তাদের আবাসস্থল নিয়ে গবেষণা করা এ শিক্ষক বলেন, ‘ইকো ট্যুরিজম মানে তো পুরো পাহাড় বা বনাঞ্চলই মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া নয়। অন্যান্য দেশের দিকে তাকালে দেখা যায়, তারা বনের মোট অংশের কেবল ১০ থেকে ২০ শতাংশ ইকো-ট্যুরিজমের জন্য উন্মুক্ত করেছে। বাকি অংশে দর্শনার্থীরা ঢুকতেই পারেন না।’

বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে ইকো ট্যুরিজম খুব বেশি বড় সমস্যা হয়ে উঠবে না বলে মনে করেন এ প্রাণিবিদ, তবে বাংলাদেশে এ প্রকল্প বাস্তবায়নে সীমানা নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে সরকারের মনোযোগ রাখা উচিত বলে পরামর্শ দেন তিনি।

এ বিষয়ে মানুষ-বন্যপ্রাণী সংঘাত নিয়ে কাজ করা এ বিশেষজ্ঞ জানান, ইকো ট্যুরিজম বাস্তবায়নের সময় হাতির আবাসস্থলের নিরাপত্তার বিষয়টি সরকারকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। ইকো ট্যুরিজমের জন্য সীমানা নির্ধারণের বিষয়টি যদি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তাহলে তা সম্ভব এবং স্থানীয় জনগণের জন্যেও তা কল্যাণ বয়ে আনবে।

তার ভাষ্য, ‘ইকো ট্যুরিজমের কারণে কিছু এলাকায় হয়তো (হাতি চলাচল) বিঘ্নিত হবে, কিন্তু এর ফলে স্থানীয় জনগণও তো আর্থিকভাবে লাভবান হয়। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে যদি সেটিকে পরিকল্পিত ও নিয়ন্ত্রিভাবে করা যায়, তাহলে সব পক্ষই উপকৃত হবে।’

মানুষ-হাতির দ্বন্দ্বের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ড. মনিরুল এইচ খান বলেন, ‘মানুষ-হাতির এ দ্বন্দ্ব আসলে হয়ে থাকে ফসলের মৌসুমে, আরও নির্দিষ্ট করে বললে ধানের মৌসুমে। ধান খাওয়ার উদ্দেশ্যে হাতিরা খেতে হানা দেয়, অন্যদিকে নিজেদের কষ্টের ফসল বাঁচাতে মানুষও মরিয়া হয়ে যায়।’

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হাতি মৃত্যুর ঘটনাগুলো বেড়ে যাওয়ার কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আগে আগুন জ্বালিয়ে কিংবা বর্শা দিয়ে হাতিকে আক্রমণ করে তাড়ানোর চেষ্টা করতেন স্থানীয়রা। তবে কয়েক বছর আগে থেকে শুরু হয়েছে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে হাতি মারার কৌশল। ফসলের খেতের পাশে হাই ভোল্টেজ বিদ্যুতের তার দিয়ে ফাঁদ পেতে রাখা হয়, আর হাতিগুলো বিদ্যুতের সংস্পর্শে এসে মারা পড়ছে।’

হাতি মৃত্যুর হার কমাতে বৈদ্যুতিক ফাঁদ পাতার কৌশল দমনের বিকল্প নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আইশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং বন বিভাগের উচিত, হাতি তাড়ানোর এসব বৈদ্যুতিক উপায় কঠোর হাতে দমন করা।’

প্রচলিত হাতি তাড়ানোর যেসব পদ্ধতি, সেগুলো হয়তো অবলম্বন করা যেতে পারে, কিন্তু বিদ্যুতায়িত করার কৌশল যেকোনো মূল্য থামাতে হবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

টেকসই বন ব্যবস্থাপনায় জোর

বন্যপ্রাণী পর্যবেক্ষক মনিরুল এইচ খানের কথার সঙ্গে সুর মিলে যায় পরিবেশ উপদেষ্টারও। বনভূমি সংকোচন ও খাদ্য ঘাটতিকে এ ধরনের সংঘাতের মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেন উপদেষ্টা রিজওয়ানা। তাই টেকসই বন ব্যবস্থাপনায় এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সাম্প্রতিক বৈঠকে পরিবেশ সংরক্ষণের পাশাপাশি টেকসই পর্যটন ও উন্নয়ন কার্যক্রমে তুরস্কের সহযোগিতা কামনা করেন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘উপযুক্ত বৃক্ষপ্রজাতি রোপণ এবং প্রকৃতি-কেন্দ্রিক পর্যটন উন্নয়নে কারিগরি সহায়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

এ সময় প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের আগ্রহের প্রশংসা করেন রাষ্ট্রদূত সেন।

উপদেষ্টার অনুরোধে সাড়া দিয়ে তিনি জানান, তুরস্কের সহযোগিতা ও সমন্বয় সংস্থা টিআইকেএ (টিকা) ঢাকায় সক্রিয়ভাবে কাজ করছে এবং পরিবেশবান্ধব বিভিন্ন খাতে মধ্যম পরিসরের প্রকল্পে সহযোগিতায় প্রস্তুত রয়েছে।

দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় টেকসই পর্যটন খাতে তুরস্কের অভিজ্ঞতা বাংলাদেশে প্রয়োগের সম্ভাবনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

রাষ্ট্রদূত জানান, টিকার ঢাকা অফিস ও উপদেষ্টার দপ্তরের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন এবং সম্ভাব্য প্রকল্প চিহ্নিত ও বাস্তবায়নে তিনি সহযোগিতা করবেন।

বৈঠকটি বন পুনরুদ্ধার ও ইকো-ট্যুরিজম খাতে কার্যকর ও দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য প্রকল্প গ্রহণে উভয় পক্ষের আন্তরিক সহযোগিতার অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।

এ ছাড়াও সিলেটসহ দেশের কিছু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা অঞ্চলে এমন ইকো ট্যুরিজম সাইট গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে, যা পরিবেশের ওপর সর্বনিম্ন প্রভাব ফেলবে বলে জানান পরিবেশ উপদেষ্টা।

বৃক্ষরোপণের বিষয়টিতে আলোকপাত করে ড. খান বলেন, ‘পাহাড়ে বা বনভূমিতে সরকারের পক্ষ থেকে যদি বৃক্ষরোপণ করা হয়, তাহলে তা যেন স্থানীয় বা দেশি প্রজাতির গাছ হয়—সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি। তা ছাড়া মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।’

এ প্রসঙ্গে হাতি রক্ষার বিষয়টি আরও একবার সামনে নিয়ে আসেন তিনি।

হাতি নিয়ন্ত্রণে টেকসই ব্যবস্থায় জোর

হাতি বাঁচাতে কেবল এ প্রাণীটির ওপর আক্রমণ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলেই হবে না জানিয়ে এই প্রাণিবিদ বলেন, হাতির প্রাকৃতিক আবাসস্থলে মানুষের কর্মচাঞ্চল্য বেড়েই চলেছে। আগে দেখা যেত, সমতলে ধানসহ অন্যান্য ফসলের চাষ হচ্ছে এবং হাতিরা পাহাড়ি বনাঞ্চলে নিরাপদে বিচরণ করতে পারছে; কিন্তু এখন আর সেই অবস্থা নেই।

স্থানীয়দের অনেকেই পাহাড়ের ওপরে পকেটের মতো জায়গা পরিষ্কার করে সেখানে সবজি চাষ করছেন। আবার পাহাড়ের ঢালে কোথাও পানি জমলে সেখানে মাছ চাষ হয়। ফলে আবাস্থলের নিরাপত্তা হারিয়ে হাতির লোকালয়ে ঢোকার প্রবণতা বেড়েছে।

এই পরিপ্রেক্ষিতে হাতির প্রাকৃতিক আবাসস্থলে কৃষিকাজ নিয়ন্ত্রণ করা গেলে তা কার্যকর হবে বলে মনে করেন ড. খান।

তিনি বলেন, ‘যেকোনো মূল্যে হাতির প্রাকৃতিক আবাসস্থলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে সরকারি জমি, অর্থাৎ বন বিভাগের জমির ভেতরে যেন কোনোপ্রকার কৃষিকাজ না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। জলাভূমি যাতে জলাভূমিই থাকে, অর্থাৎ সেখানে যাতে মাছ চাষ না হয় এবং পাহাড়ে যাতে প্রাকৃতিক পরিবেশ বজায় থাকে, তা নিশ্চিত করা জরুরি।’

তবে শুধু হাতির আবাসস্থল রক্ষার কথা ভাবলেই হবে না। হাতিতে নষ্ট করা ফসলের ক্ষতিপূরণ যথাসময়ে দেওয়াও জরুরি বলে মনে করেন এই বিশেষজ্ঞ। তার বক্তব্য, ‘ক্ষতিপূরণের বিষয়টি দ্রুততম সময়ে নিশ্চিত করতে হবে। অর্থাৎ মানুষের কল্যাণের বিষয়টিও একইসঙ্গে মাথায় রাখতে হবে।’


দেশের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ৩১ মে, ২০২৫ ১২:৫৭
ইউএনবি

চার দিনের সরকারি সফর শেষ করে শনিবার টোকিও থেকে দেশের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

টোকিওর স্থানীয় সময় শনিবার (৩১ মে) বেলা ১১টা ২০ মিনিটে অধ্যাপক ইউনূস ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট নারিতা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে।

প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ইউএনবিকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

আজ (শনিবার) রাত ১০টা ৪০ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছানোর কথা রয়েছে বলেও জানান তিনি।

সফরের তৃতীয় দিন (শুক্রবার) জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন অধ্যাপক ইউনূস। বৈঠকে দুই নেতা আগামী কয়েক মাসের মধ্যে বাংলাদেশ-জাপান অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি চূড়ান্ত করার অঙ্গীকার করেন, যাতে করে দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও গভীর হয়।

সে সময় জাপানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের জন্য বাজেট সহায়তা ও রেল খাতের উন্নয়নে মোট ১০৬ কোটি ৩০ লাখ ডলারের সহায়তা ঘোষণা করেন।

এই ঋণ সহায়তার অর্থের ৬৪ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার দেশের রেলওয়ে খাতের উন্নয়ন ও সংস্কার কাজে ব্যয় করা হবে। এর মাধ্যমে জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী ডুয়েল-গেজ ডাবল-লেন রেল প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। এছাড়া অর্থনৈতিক সংস্কার ও জলবায়ু পরিবর্তন স্থিতিশীলতার জন্য ৪১ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার ও মানব উন্নয়ন বৃত্তির জন্য অনুদান ৪২ লাখ মার্কিন ডলার ব্যয় করা হবে।

পরে ‘বাংলাদেশ বিজনেস সেমিনার’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানের সাইডলাইনে বক্তৃতা করেন অধ্যাপক ইউনূস। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে অর্থনীতি, বিনিয়োগসহ বিভিন্ন খাতে সহযোগিতা সংক্রান্ত ছয়টি সমঝোতা স্মারকে সই হয়।

এর আগে, বৃহস্পতিবার জাপানে বাংলাদেশি কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও সেখানে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে দুই দেশের মধ্যে আরও দুটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। বাংলাদেশ দূতাবাসের আয়োজনে টোকিওর হিরাকাওয়াচো চিওদা সিটিতে অনুষ্ঠিত মানবসম্পদ বিষয়ক সেমিনারে এসব চুক্তিতে সই হয়। সেখানেও অধ্যাপক ইউনূস উপস্থিত ছিলেন।

সেমিনারে জাপানি কর্তৃপক্ষ ও ব্যবসায়ীরা জানান, দেশটিতে ক্রমবর্ধমান শ্রমিক সংকট মোকাবিলায় আগামী পাঁচ বছরে অন্তত এক লাখ বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

ওইদিনই টোকিওতে অনুষ্ঠিত ‘৩০তম নিক্কেই ফোরাম: ফিউচার অব এশিয়া’য় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রধান উপদেষ্টা।

নিক্কেই ফোরামের ফাঁকে মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহামাদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন অধ্যাপক ইউনূস এবং বাংলাদেশকে আসিয়ান জোটে অন্তর্ভুক্ত করতে তার সহযোগিতা চান।

এ ছাড়া শুক্রবার সামাজিক উদ্ভাবন ও বৈশ্বিক উন্নয়নে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদকে সোকা ইউনিভার্সিটির পক্ষ থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি দেওয়া হয়।

২০০৪ সালে নিক্কেই এশিয়া পুরস্কারে ভূষিত অধ্যাপক ইউনূস গত বুধবার টোকিও পৌঁছান।


প্রবাসীদের রেমিটেন্সেই বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে: প্রধান উপদেষ্টা

আজ টোকিওতে বাংলাদেশ দূতাবাসে এক কমিউনিটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বক্তব্য রাখেন। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

জাতি গঠনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অবদানের কথা স্মরণ করে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বাংলাদেশকে ধ্বংসাবশেষ থেকে ঘুরে দাঁড়াতে প্রবাসীরাই মূল ভূমিকা পালন করেছেন।

আজ টোকিওতে বাংলাদেশ দূতাবাসে আয়োজিত এক কমিউনিটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘এটাই সত্য যে কঠিন সময়ে দেশের যে টিকে থাকা—তা সম্ভব হয়েছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের কারণে’।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ক্ষমতাচ্যুত পতিত সরকার রাষ্ট্রীয় কোষাগার এবং ব্যাংক শূন্য করে গিয়েছিল এবং যদি প্রবাসীরা সহায়তা না করতেন, তাহলে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াতে পারত না।

তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার অবশ্যই তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করবে, তবে জাতি গঠনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অংশগ্রহণ আরও শক্তিশালী হওয়া উচিত।

প্রধান উপদেষ্টা প্রবাসীদের বাংলাদেশে ব্যবসা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান।

‘একজন নাগরিক হিসেবে আপনাদেরই রাষ্ট্র মেরামতের দায়িত্ব নিতে হবে,’ তিনি বলেন।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, প্রবাসীদের বাংলাদেশে আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধব রয়েছেন, তাদের ব্যবসাও আছে—এই কারণে তারা নিয়মিত বাংলাদেশে যাতায়াত করেন।

‘তাই সামগ্রিকভাবে আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে...আপনারা জাপান সরকারের ওপর প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টা করুন,’বলেন তিনি।

প্রধান উপদেষ্টার জাপান সফরের তৃতীয় দিনে আজ তিনটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়— যথাক্রমে অর্থনৈতিক সংস্কার ও জলবায়ু পরিবর্তন সহনশীলতা জোরদার করতে ডেভেলপমেন্ট পলিসি লোন (৪১৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার), জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী ডুয়াল-গেজ ডাবল-লেন রেলওয়ে প্রকল্পের জন্য ঋণ (৬৪১ মিলিয়ন ডলার) এবং মানবসম্পদ উন্নয়ন স্কলারশিপ অনুদান (৪.২ মিলিয়ন ডলার)।

বাংলাদেশের পক্ষে রাষ্ট্রদূত মো. দাউদ আলী এবং জাপানের পক্ষে দেশটির রাষ্ট্রদূত শিনিচি সাইদা সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস দলিল এমওইউ স্বাক্ষরের এই আনুষ্ঠানিকতা প্রত্যক্ষ করেন।

পরে, জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের দেওয়া নৈশভোজে তিনি অংশ নেন।


বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় ডিজিটাল পেমেন্ট সেবা ‘গুগল’ বাংলাদেশে চালু হচ্ছে : আসিফ মাহমুদ

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন,বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় ডিজিটাল পেমেন্ট সেবা ‘গুগল পে’ (Google Pay) আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশে এক মাসের মধ্যে চালু হতে যাচ্ছে।

আসিফ মাহমুদ তার ভেরিফাইড ফেসবুকে এক পোস্টে বলেন, ‘দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর, বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় ডিজিটাল পেমেন্ট সেবা ‘গুগল পে’ আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশে চালু হতে যাচ্ছে।’

উপদেষ্টা বলেন, ‘আগামী এক মাসের মধ্যেই এই সেবা দেশের ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থায় তাদের কার্যক্রম শুরু করবে। এই সেবা চালুর মাধ্যমে বাংলাদেশের স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা তাদের হাতে থাকা ডিভাইসকেই একটি পূর্ণাঙ্গ‘'ডিজিটাল ওয়ালেট’ হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন।’

এর ফলে আলাদা করে ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড বহন করার প্রয়োজনীয়তা অনেকাংশে কমে যাবে বলে জানান আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।


বাংলাদেশ ও জাপান ছয়টি সমঝোতা স্মারক সই করেছে

টোকিওতে "বাংলাদেশ ব্যবসা সেমিনার" শীর্ষক একটি সেমিনারের ফাঁকে প্রফেসর ইউনূস এই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর প্রত্যক্ষ করেন। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের জাপান সফরের তৃতীয় দিনে শুক্রবার বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে অর্থনৈতিক, বিনিয়োগ ও অন্যান্য সহযোগিতা সংক্রান্ত ছয়টি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়েছে।

টোকিওতে ‘বাংলাদেশ বিজনেস সেমিনার’ শীর্ষক একটি সেমিনারের ফাঁকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের উপস্থিতিতে এই সমঝোতা স্মারকগুলো সই হয়।

প্রথম সমঝোতা স্মারকটি ছিল জাপান ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন (জেবিআইসি) এবং বাংলাদেশের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে।

এই সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে জেবিআইসি জ্বালানি খাতে প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে উভয়ের দেশের মধ্যে সহযোগিতা আরো জোরদার হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

দ্বিতীয় সমঝোতা স্মারকটি ছিল অনোডা ইনক ও বাংলাদেশ এসইজেড লিমিটেডের (বিএসইজেড) মধ্যে, এর আওতায় অর্থনৈতিক অঞ্চলে একটি জমি লিজ সংক্রান্ত চুক্তি হয়েছে।

অনোডা ইতোমধ্যে জাইকার উদ্যোগে একটি গ্যাস মিটার স্থাপন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে এবং এখন সেখানে গ্যাস মিটারের অ্যাসেম্বলি, ইনেসফেকশন ও রক্ষণাবেক্ষণ কারখানা স্থাপন করার পরিকল্পনা করছে।

তৃতীয় সমঝোতা স্মারকটি ছিল বাংলাদেশ নেক্সিস কো. লিমিটেড এবং বাংলাদেশ এসইজেড লিমিটেডের মধ্যে, অর্থনৈতিক অঞ্চলে জমি লিজ সংক্রান্ত।
এই চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ নেক্সিস কো. অর্থনৈতিক অঞ্চলে একটি কারখানায় গার্মেন্টস এক্সেসরিজ উৎপাদনের পরিকল্পনা করছে।

চতুর্থ সমঝোতা স্মারকে গ্লাগিট, মুসাসি সিমিতিসু ইন্ডাস্ট্রি গ্লাফিট এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) মধ্যে ব্যাটারি চালিত বাইসাইকেল ও বৈদ্যুতিক মোটরসাইকেল তৈরির একটি কারখানা স্থাপন বিষয়ক সহযোগিতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

পঞ্চম সমঝোতা স্মারকটি কিপার কোর কো. লিমিটেডের সঙ্গে, যারা বাংলাদেশে ২ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করে তথ্য নিরাপত্তায় তাকাতোসি নাকামোরা পুরস্কারপ্রাপ্ত’ পূর্ণাঙ্গ কিপার প্রযুক্তি’র ভিত্তিতে একটি জাতীয় পাইলট প্রকল্প শুরু করতে যাচ্ছে।

এই প্রকল্পের লক্ষ্য হলো বাংলাদেশকে একটি কোয়ান্টাম-প্রতিরোধী ডিজিটাল অর্থনীতিতে রূপান্তর করা।

প্রযুক্তির প্রয়োগ ও বিশ্বব্যাপী সম্প্রসারণের একচেটিয়া অধিকার স্থানীয় প্রতিষ্ঠানকে প্রদান করা হয়েছে।

ষষ্ঠ সমঝোতা স্মারকটি জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ও বিডার মধ্যে।

এই চুক্তির মাধ্যমে জাইকা একীভূত সিঙ্গেল উইন্ডো প্ল্যাটফর্মের (আইএসডব্লিউপি) প্রাথমিক উন্নয়নে কারিগরি ও অন্যান্য সহযোগিতা প্রদান করবে।

এই প্ল্যাটফর্মটি বিডার নেতৃত্বে গঠিত, যার লক্ষ্য হলো বাংলাদেশের বিভিন্ন বিনিয়োগ উন্নয়ন সংস্থার সেবাকে এক-দরজায় একত্রিত করা।

স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এমওইউ স্বাক্ষরকারী সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে অভিনন্দন জানান।

তিনি বলেন, ‘এখন আমাদের কাজ এর বাস্তবায়ন করা। আমি অভিভূত।’

গত ১৬ বছরে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এই সময়ে দেশটিতে একের পর এক ভূমিকম্প হয়েছে, যার ফলে কিছুই অক্ষত ছিল না।’

তিনি বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে একজন ভালো বন্ধু এগিয়ে এলো। আর সেই বন্ধু হলো জাপান। আমি এখানে এসেছি আপনাদের ধন্যবাদ জানাতে এবং পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণ করতে।’

এই চ্যালেঞ্জকে ‘ঐতিহাসিক’ আখ্যা দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা ইতিহাসকে দেখাতে চাই যে, এটি সম্ভব হয়েছে, তা-ও নিখুঁতভাবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের বেল্ট শক্ত করে ধরে বলেছি, আমরা কাজ করতে প্রস্তুত। আপনাদের সহায়তায় এটা সম্ভব।’

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘চলুন হাতে হাত মিলিয়ে বাস্তবায়ন করি। এটা শুধু অর্থ উপার্জনের বিষয় নয়। এটা মানুষের জীবন পরিবর্তনের বিষয়।’

জাপানের অর্থনীতি, বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় ভাইস মিনিস্টার শিনজি তাকেউচি অনুষ্ঠানে বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে কর্মরত জাপানি কোম্পানির সংখ্যা ৩শ’ ছাড়িয়ে গেছে, যা ১০ বছর আগের তুলনায় তিন-চতুর্থাংশ বেশি।

জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশনের (জেট্রো) চেয়ারম্যান ও সিইও নোরিহিকো ইশিগুরো অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন, যেখানে জাপান-বাংলাদেশ বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা কমিটির (জেবিসিসিইসি) চেয়ারম্যান ও মারুবেনি কর্পোরেশনের বোর্ড সদস্য ফুমিয়া কোকুবু-ও বক্তব্য রাখেন।


সোকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রফেসর ইউনূসকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাপানের সোকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ জাপানের সোকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি গ্রহণ করেছেন।

সামাজিক উদ্ভাবন এবং বৈশ্বিক উন্নয়নে তাঁর অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ অধ্যাপক ইউনূসকে এই সম্মানসূচক ডিগ্রি প্রদান করা হয়।

ড. ইউনুস টোকিওর সোকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের উদ্দেশ্যে বক্তব্য প্রদান করেন।

অনুষ্ঠানে সোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট সুজুকিও বক্তব্য রাখেন।

প্রধান উপদেষ্টা চার দিনের সফরশেষে আগামীকাল ৩১ মে সকালে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে টোকিও ত্যাগ করবেন এবং সিঙ্গাপুর হয়ে রাতেই ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে।

উল্লেখ্য, অধ্যাপক ইউনূস গত ২৭ মে জাপানে চার দিনের সরকারি সফরে টোকিও পৌঁছান।


শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আজ ৪৪তম শাহাদাৎ বার্ষিকী

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

বাংলাদেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং স্বাধীনতার ঘোষক, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাৎ বার্ষিকী আজ।

১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে দেশি-বিদেশি চক্রান্তে সেনাবাহিনীর কিছু বিপথগামী সদস্য তাঁকে হত্যা করে।

স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার ও জেড ফোর্সের অধিনায়ক ছিলেন। তিনি দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) প্রতিষ্ঠাতা। জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে। তিনি বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রবর্তন করেন। তাই তাকে বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের জনক বলা হয়। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার সাতটি দেশের সমন্বয়ে সার্ক প্রতিষ্ঠায় স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন জিয়াউর রহমান। শহীদ জিয়াউর রহমান জাতীয়তাবাদ ভিত্তিক এক কালজয়ী দর্শন প্রতিষ্ঠা করে গেছেন।

প্রতি বছর দিনটি জিয়াউর রহমানের শাহাদাৎ বার্ষিকী হিসেবে পালন করে বিএনপি ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ্। শহীদ জিয়াউর রহমানের ৪৪ তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে টানা ৮ দিনের কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। গত ২৬ মে থেকে শুরু হওয়া এই কর্মসূচি চলবে ২ জুন পর্যন্ত।

এরমধ্যে রয়েছে আলোচনা সভা, পোস্টার ও বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ, কালো ব্যাজ ধারণ, কালো পতাকা উত্তোলন, জিয়ার কবরে ফুল দেওয়া ও ফাতেহা পাঠ, দরিদ্রদের মধ্যে খাদ্য ও বস্ত্রসামগ্রী বিতরণ। কর্মসূচি অনুযায়ী গতকাল বৃহস্পতিবার রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ মিলনায়তনে আলোচনা সভা করেছে বিএনপি। এতে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ দলের জ্যেষ্ঠ নেতা ও বিশিষ্টজন বক্তব্য রাখেন।

দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষ্যে আজ শুক্রবার সকাল ৬টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশের কার্যালয়ে দলীয় পতাকা অর্ধনমিত ও কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে। নেতাকর্মীরা কালো ব্যাজ ধারণ করছেন। সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে শেরেবাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ, দুপুরে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে বিভিন্ন স্থানে খাদ্য ও বস্ত্র বিতরণ করা হবে। দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারা এই সময় এসব আয়োজনে উপস্থিত থাকবেন।

এছাড়াও সারা দেশে বিএনপি ও দলটির অঙ্গ সংগঠন শহীদ জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষ্যে নানা কর্মসূচি পালন করছে।

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়া খাল খনন কর্মসূচি, সবুজ বিপ্লব, শিল্প উন্নয়ন এবং যুগোপযোগী ও আধুনিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রবর্তনের মধ্য দিয়ে স্বনির্ভর বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় বিশেষ ভূমিকা রাখেন। নারী সমাজের উন্নয়ন ও শিশুদের বিকাশে তার আগ্রহ জাতিকে নতুন দিকনির্দেশনা দেয়। তার সততা, কর্তব্যনিষ্ঠা ও দেশপ্রেম ছিল অতুলনীয়।

দেশকে যখন তিনি সামনের দিকে নিয়ে চলতে শুরু করেন সেই সময়ে তার বিরুদ্ধে শুরু হয় দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র। ১৯৮১ সালের ২৯ মে তিনি এক সরকারি সফরে চট্টগ্রামে যান। ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে গভীর রাতে একদল সেনাসদস্য তাকে হত্যা করে। বিপথগামী সেনাসদস্যরা তার লাশ চট্টগ্রামের রাউজানের গভীর জঙ্গলে কবর দেয়।

তিন দিন পর ওই লাশ উদ্ধার করে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়, লাখ লাখ শোকার্ত মানুষ শেরেবাংলা নগরে তার জানাজায় শরিক হন। ঢাকায় শহীদ জিয়াউর রহমানের নামাজে জানাজায় লোকসমাগম ও লাখ লাখ লোকের শোকাহত উপস্থিতি ইতিহাস সৃষ্টি করেছে।

জিয়াউর রহমান বিবিসি’র জরিপে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালিদের অন্যতম। জিয়াউর রহমান তার রাষ্ট্রনায়কত্ব এবং দৃষ্টিভঙ্গির জন্য দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা দ্বারা সম্মানিত হয়েছিলেন। সৈনিক ও রাজনৈতিক জীবনে তিনি অসামান্য অবদান রেখে গেছেন।

জাতীয় সংসদ ভবন চত্বরে শহীদ জিয়াউর রহমানকে সমাহিত করা হয়। যা বর্তমানে ‘জিয়া উদ্যান’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।


প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক শুরু

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আজ টোকিওতে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আজ টোকিওতে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মিলিত হয়েছেন।

জাপানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এই বৈঠক চলছে। সকালে অধ্যাপক ইউনূস প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পৌঁছালে তাঁকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।

উভয় দেশের মধ্যে চলমান সহযোগিতার সম্পর্ক আরো এগিয়ে নেয়ার বিষয়টি বৈঠকে গুরুত্ব পাবে বলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং সূত্র জানিয়েছে।


বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ শ্রমিক নেবে জাপান

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

ক্রমবর্ধমান শ্রমিক সংকট মোকাবিলায় আগামী পাঁচ বছরে বাংলাদেশ থেকে অন্তত এক লাখ শ্রমিক নিয়োগের কথা জানিয়েছে জাপানি কর্তৃপক্ষ ও ব্যবসায়ীরা।

আজ বৃহস্পতিবার টোকিওতে ‘বাংলাদেশ সেমিনার অন হিউম্যান রিসোর্সেস’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘জাপানে বাংলাদেশিদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রয়োজনীয় সব কিছু করবে।’

তিনি বলেন, ‘এটা আমার জন্য সবচেয়ে রোমাঞ্চকর ও প্রেরণার দিন। এটি শুধু কাজ করার জন্য নয়, বরং জাপানকে জানারও দ্বার উন্মোচন করবে বাংলাদেশের মানুষের জন্য।’

সেমিনারে প্রধান উপদেষ্টা দুটি সমঝোতা স্মারকের সাক্ষী হন। প্রথমটি বাংলাদেশের ব্যুরো অব ম্যানপাওয়ার এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড ট্রেনিং (বিএমইটি) ও কাইকম ড্রিম স্ট্রিট (কেডিএস)-এর মধ্যে, যার একটি জাপান-বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগ; দ্বিতীয়টি বিএমইটি ও জাপানের ন্যাশনাল বিজনেস সাপোর্ট কম্বাইন্ড কোঅপারেটিভস (জাপানে ৬৫টির বেশি কোম্পানির একটি ফেডারেশন) এবং জেবিবিআরএ (জাপান বাংলা ব্রিজ রিক্রুটিং এজেন্সি)-র মধ্যে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এই অনুষ্ঠানটি একটি দ্বার উন্মোচনের প্রতীক।’ তিনি উল্লেখ করেন যে বাংলাদেশ ১৮ কোটি মানুষের দেশ, যার অর্ধেকই ২৭ বছরের নিচে।

তিনি বলেন, ‘সরকারের কাজ হলো তাদের জন্য দরজা খুলে দেওয়া।’

শিজুওকার কর্মপরিবেশ উন্নয়ন সমবায়ের তত্ত্বাবধায়ক সংস্থার প্রতিনিধি পরিচালক মিতসুরু মাতসুশিতা বলেন, ‘অনেক জাপানি কোম্পানি বাংলাদেশিদের বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করছে এবং তিনি বিশ্বাস করেন যে এই ধারা অব্যাহত থাকবে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশি মেধাবীদের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। তাদের প্রতিভা লালন করা আমাদের দায়িত্ব।’

এনবিসিসি চেয়ারম্যান মিকিও কেসাগায়ামা স্মরণ করেন যে প্রায় ১৪ বছর আগে অধ্যাপক ইউনূস জাপানে এসেছিলেন এবং ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে নারীদের সহায়তার গল্প বলেছিলেন।

তিনি বলেন, ‘আমাদের ফেডারেশন তরুণ ও দক্ষ শ্রমিকের জন্য বাংলাদেশকে একটি সম্ভাবনাময় উৎস হিসেবে দেখছে। তারা উভয় দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আগামী পাঁচ বছরে আমরা এক লাখ বাংলাদেশি শ্রমিককে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত।’

ওয়াতামি গ্রুপের প্রেসিডেন্ট মিকি ওয়াতানাবে জানান, বাংলাদেশে তাদের প্রতিষ্ঠিত একটি স্কুল প্রতিবছর ১৫০০ শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ দেয়, এবং তারা এই সংখ্যা ৩০০০-এ উন্নীত করার পরিকল্পনা করছে।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের কারিগরি শিক্ষা গ্রহণকারীরা জাপানের চাকরির বাজারে প্রবেশ করতে পারবে।’

জাপান ইন্টারন্যাশনাল ট্রেইনি অ্যান্ড স্কিল্ড ওয়ার্কার কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনের (জেইটিসিও) চেয়ারম্যান হিরোআকি ইয়াগি জাপানের শ্রমবাজারে বাংলাদেশিদের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে এখনও ভাষা শিক্ষকের ঘাটতি রয়েছে।

জাপানের স্বাস্থ্য, শ্রম ও কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের (এমএইচএলডব্লিউ) প্রতিমন্ত্রী নিকি হিরোবুমি বলেন, ‘জাপানে জনসংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে এবং সে কারণে বাংলাদেশি শ্রমিকদের সহায়তা প্রয়োজন হবে।’

তিনি বলেন, ‘এটি শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, জাপানের জন্যও একটি আশাব্যঞ্জক দিক হতে পারে।’

স্বাগত বক্তব্যে জাপানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. দাউদ আলী বলেন, ২০৪০ সালের মধ্যে জাপানে শ্রমিক সংকট এক কোটি ১০ লাখ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। বাংলাদেশ এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আরও দক্ষ শ্রমিক পাঠাতে পারে


প্রেমের জেরে স্বামী-স্ত্রী খুন, প্রেমিক আটক 

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর মিরপুরের পল্লবীতে প্রেমের জেরে স্বামী-স্ত্রীকে হত্যা করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে পুলিশের ধারণা, স্ত্রীর প্রেমিক এই জোড়া খুনের সঙ্গে জড়িত। নিহতরা হলেন- পাপ্পু (৩৬) ও তার স্ত্রী দোলন আক্তার দোলা (২৮)।

হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে গাউস (৩৩) নামের এক যুবককে আটক করেছে পুলিশ। আটক গাউসের বাড়ি গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলায়। নিহত দোলা ও পাপ্পুর বাড়ি বরগুনায়।

গতকাল বুধবার বিকেল সোয়া ৪টার দিকে মিরপুর-১১ নম্বরের বি ব্লকের ৩৫ নম্বর বাসায় এ ঘটনা ঘটে। পরে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর মাধ্যমে খবর পেয়ে পল্লবী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে অভিযুক্তকে আটক ও রক্তমাখা ছুরি জব্দ করে। মরদেহ উদ্ধারের করে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আটক যুবক গাউস মিয়া সৌদিপ্রবাসী। তিনি সৌদি আরবে থাকার সময় নিহত দোলার সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে পরিচয় হয়। পরিচয়ের পর তাদের মধ্যে প্রায়ই ফোনে কথা হতো। গাউস মিয়া গত জানুয়ারি মাসে দেশে আসেন। তিনি দোলার বাসার কাছেই বাসা ভাড়া নিয়ে থাকা শুরু করেন। পরে বিভিন্ন সময় তার সঙ্গে গাউস মিয়ার দেখা করতেন। কিন্তু তিনি জানতেন না দোলা বিবাহিতা। গাউস মিয়া গতকাল সকালে দোলা ও পাপ্পুকে এক সঙ্গে এক রিকশায় যেতে দেখনে। পরে খোঁজ নিয়ে তিনি জানকে পারেন, দোলার সঙ্গে থাকা ব্যক্তি তার স্বামী। এতে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে বাসায় ফিরে যান। পরে বাসা থেকে ছুরি নিয়ে এসে দোলা ও তার স্বামী পাপ্পুকে কুপিয়ে হত্যা করেন।

পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিউল আলম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, পরকীয়ার জেরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। বিস্তারিত তদন্তের পর বিস্তারিত জানানো হবে।


পারস্পরিক বৈশ্বিক আস্থা হুমকির মুখে: নিক্কেই ফোরামে প্রফেসর ইউনূস

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বিশ্ব বর্তমানে চরম অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে বৈশ্বিক আস্থা হুমকির মুখে।

তিনি আজ টোকিওর ইম্পেরিয়াল হোটেলে অনুষ্ঠিত ৩০তম নিক্কেই ফোরাম ‘ফিউচার অব এশিয়া’র উদ্বোধনী অধিবেশনের মূল বক্তব্যে এ কথা বলেন।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘বৈশ্বিক আস্থা এখন হুমকির মুখে। জাতির মধ্যে, সমাজের অভ্যন্তরে, এমনকি নাগরিক ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যেও আস্থা হ্রাস পাচ্ছে।’

‘উত্তাল বিশ্বে এশিয়ার চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, বিশ্ব ক্রমেই অস্থির হয়ে উঠছে।

ইউনূস বলেন,‘আমরা এক গভীর অনিশ্চিত সময় পার করছি। আমরা এমন একটি বিশ্বকে প্রত্যক্ষ করছি যেখানে শান্তি বিনষ্ট হচ্ছে, উত্তেজনা বাড়ছে এবং পারস্পরিক সহযোগিতা সবসময় নিশ্চিত থাকছে না।’

অধ্যাপক ইউনূস উল্লেখ করেন, এশিয়া ও তার বাইরের বিভিন্ন অঞ্চলে সংঘর্ষ শুরু হয়েছে এবং শান্তি দিন দিন অধরা হয়ে উঠছে।

‘ইউক্রেন, গাজা এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে যুদ্ধ ও মানবসৃষ্ট সংঘাত হাজারো মানুষের জীবন ও জীবিকা ধ্বংস করে দিচ্ছে’, বলেন প্রফেসর ইউনূস।

তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধ এক নির্মম রূপ নিয়েছে এবং সাম্প্রতিক ভূমিকম্প দেশটির গভীর মানবিক সংকটকে আরও অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সম্প্রতি আমাদের দুই প্রতিবেশীর মধ্যে একটি সংক্ষিপ্ত কিন্তু ব্যয়বহুল যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। অত্যন্ত দুঃখজনক যে আমরা কোটি কোটি টাকা যুদ্ধের পেছনে ব্যয় করছি, অথচ লাখ লাখ মানুষ না খেয়ে বা ন্যূনতম চাহিদার জন্য লড়াই করছে।’

অধ্যাপক ইউনূস যুদ্ধবিরতির জন্য উভয় দেশের নেতাদের ধন্যবাদ জানান এবং দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সহাবস্থানের আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

তিনি আরও বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছে, অন্যদিকে প্রযুক্তিগত অগ্রগতি অনেক প্রতিশ্রুতি দিলেও নতুন নতুন নৈতিক প্রশ্ন উত্থাপিত হচ্ছে।’

প্রফেসর ইউনূস বলেন, বাণিজ্যিক বিধিনিষেধ বেড়ে যাওয়ায় মুক্ত বাণিজ্য ব্যবস্থার ভিত্তি চ্যালেঞ্জের মুখে এবং আর্থিক বৈষম্য সমাজে বেড়েই চলেছে।

সাম্প্রতিক সময়ে, বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ায় এমন বিভাজনের কারণে অসন্তোষ ও অস্থিরতা দেখা গেছে, যা শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন ডেকে এনেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

বাংলাদেশে শাসনব্যবস্থার সাম্প্রতিক পরিবর্তন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘গত বছর শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশে একটি পরিবর্তন ঘটেছে এবং এরপর তাঁর সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে।’

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমরা আমাদের জনগণের স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষা পূরণে, ন্যায়বিচার, সমতা, স্বাধীনতা ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে এবং একটি অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য সাধারণ নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে গণতন্ত্রে শান্তিপূর্ণ রূপান্তরের লক্ষ্যে কাজ করছি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, এটি আমাদের ভুলগুলো সংশোধন করার, নতুন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার এবং একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গড়ার সুযোগ।’

বহুমুখী অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও, প্রফেসর ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ বৈশ্বিক শান্তি ও নিরাপত্তায় ভূমিকা রাখছে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা ও শান্তি প্রতিষ্ঠা মিশনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে এবং মানবিক কারণে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে।

তিনি বলেন, ‘বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষের আবাসস্থল এশিয়া অনিশ্চয়তার কেন্দ্রস্থলে, একই সঙ্গে সম্ভাবনারও কেন্দ্রে।’

‘আমাদের চ্যালেঞ্জগুলো বিশাল, কিন্তু আমাদের সম্মিলিত শক্তিও বিশাল। এ বাস্তবতায়, আমি বিশ্বাস করি এশিয়ার সামনে একটি সুযোগ, এমনকি একটি দায়িত্ব রয়েছে ভিন্ন পথ দেখানোর: শান্তির, সংলাপের, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের। শুধু সংখ্যাগত নয়, মানুষের কল্যাণ, আস্থা ও আশার উন্নয়ন,’ তিনি বলেন।

প্রফেসর ইউনূস বলেন, ‘আমরা এই চ্যালেঞ্জগুলোর মুখে অসহায় নই। বরং, আমরা ইতিহাসের একটি সন্ধিক্ষণে আছি। আজকের সিদ্ধান্তগুলো নির্ধারণ করবে আমরা আমাদের সন্তানদের জন্য কেমন পৃথিবী রেখে যাব। তাই আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, কেবল সমস্যা নিয়ে আলোচনার জন্যে নয়, বরং সমাধান খুঁজে পেতে।’

তিনি বলেন, ‘এই সমাধানগুলো যেন অন্তর্ভুক্তিমূলক, ন্যায্য এবং মানবিকতার ভিত্তিতে গড়ে ওঠে।’

প্রফেসর ইউনূস প্রায়ই উল্লেখ করা নিজের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘অর্থ উপার্জন আনন্দের বিষয়। কিন্তু মানুষকে সুখী করা, সেটিই প্রকৃত আনন্দ।’

তিনি বলেন,‘আমাদের মনোযোগ সরাতে হবে, ব্যক্তিগত মুনাফা থেকে সমষ্টিগত কল্যাণে। স্বল্পমেয়াদি অর্জন থেকে দীর্ঘমেয়াদী স্বপ্নের দিকে।’

তিনি বলেন, ‘তাঁর নিজের জীবনের যাত্রায় গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা থেকে শুরু করে দরিদ্র নারীদের ক্ষুদ্রঋণ দেওয়া এবং সারা বিশ্বে সামাজিক ব্যবসার ধারণা ছড়িয়ে দেওয়া পর্যন্ত, তিনি একটি বিষয় স্পষ্টভাবে শিখেছেন; মানুষ কষ্ট পাওয়ার জন্য জন্মায়নি।’

‘মানুষ সীমাহীন সম্ভাবনা নিয়ে জন্মায়। আমাদের শুধু তাদের সঠিক সুযোগটি দিতে হবে,’ তিনি বলেন।

‘তিনটি শূন্য’- শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব, শূন্য নিট কার্বন নিঃসরণ - এই তত্ত্ব উপস্থাপন করে ড. ইউনূস বলেন, এটি কোনো স্বপ্ন নয়, বরং একটি দিকনির্দেশনা।

‘যেখানে একটি লক্ষ্যে সরকার, ব্যবসা, বিশ্ববিদ্যালয় এবং ব্যক্তি একযোগে কাজ করতে পারে,’ তিনি বলেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের প্রয়োজন এমন একটি নতুন ধরনের অর্থনীতি, যা প্রতিযোগিতার ওপর নয়, সহানুভূতির ভিত্তিতে গড়ে উঠবে। শুধু ভোগের ওপর নয়, অন্যের কল্যাণ হয় এমন অর্থনীতি হবে। এখানেই আমাদের ভবিষ্যৎ।’

নিক্কেই ফোরাম সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ফিউচার অব এশিয়া’ একটি আশাবাদের মঞ্চ।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘নিক্কেই এমন একটি পরিসর তৈরি করেছে যেখানে সংলাপ সমাধানে রূপ নেয়, এবং যেখানে আস্থা কেবল একটি শব্দ নয়, বরং একটি লক্ষ্য—যার দিকে আমরা একসাথে এগিয়ে যাই।’

তিনি বলেন, ‘এশিয়ার ভবিষ্যৎ কেবল অর্থনীতি বা ভূরাজনীতির বিষয় নয়, এটি মানুষের, ভাবনার এবং সাহসের বিষয়।’

ইউনূস বলেন,‘চলুন, আমাদের চারপাশের অস্থিরতা দেখে ভীত না হয়ে এটিকে একটি আহ্বান হিসেবে নিই—নতুন করে ভাবার, পুনর্গঠনের এবং একসাথে জাগরণের আহ্বান।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘ভয়ের দ্বারা নয়, সম্ভাবনার দ্বারা; শক্তির দ্বারা নয়, উদ্দেশ্যের দ্বারা পরিচালিত হই। চলুন, একটি উত্তম বিশ্বের কল্পনা করতে সাহসী হই। চলুন, একে অপরের প্রতি আস্থা রাখি। চলুন, শুধু প্রয়োজনীয়তার কারণে নয়, বরং আন্তরিক ইচ্ছে থেকে একে অপরকে সহযোগিতা করি।’

তিনি বলেন, ‘এশিয়ার ভবিষ্যৎ এখনো লেখা হয়নি—আমরাই তা একসঙ্গে লিখব।’

প্রফেসর ইউনূস বলেন, ‘বাংলাদেশ ও জাপান একসঙ্গে কাজ করে এশিয়ার ভাগ্য এমনকি বিশ্বের ভাগ্যও পুনর্লিখন করতে পারে।’


banner close