বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫
১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
সেলিনা হোসেনের সাক্ষাৎকার

অনুবাদের দায়িত্বটা আসলে সরকারিভাবে নেয়া উচিত

সেলিনা হোসেন
সেলিনা হোসেন
প্রকাশিত
সেলিনা হোসেন
প্রকাশিত : ১৭ জুন, ২০২৩ ০৮:৪২

সেলিনা হোসেন। প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক। বর্তমানে বাংলা একাডেমির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ১৯৪৭ সালের ১৪ জুন রাজশাহী শহরে জন্মগ্রহণ করেন। এ বছর পা রাখলেন ৭৬ বছরে। জন্মদিন উপলক্ষে তার সাহিত্যকর্ম ও জীবনকথা নিয়ে সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কথাসাহিত্যিক রণজিৎ সরকার

প্রশ্ন: জন্মদিন ও মানবজনম নিয়ে আপনার অনুভূতি কী?

সেলিনা হোসেন: জন্মদিন ও মানবজনম দুটো একইভাবে সত্য। জন্মদিন না হলে মানবজনম তো প্রত্যাশিত হয়ে সামনে থাকে না। সুতরাং সে জন্য জন্মদিন ও মানবজনম- সেটা বেঁচে থাকা সত্য, সেই সত্যকে ধারণ করে নিজের সবটুকু, যা কিছু আছে, সেটাকে সৃষ্টিশীলতার জায়গায় এবং মানবকল্যাণে নিজের জীবনটাকে বড় করে তোলা। এটাই মানবজনমের একটি বড় দিগন্ত।

প্রশ্ন: জন্মদিন নিয়ে আপনার মায়ের সঙ্গে কোনো স্মৃতি, যা এখনো মনে পড়ে?

সেলিনা হোসেন: আমার শৈশব কেটেছে বগুড়া জেলার গণ্ডগ্রামে। গত শতকের পঞ্চাশের দশকে আমার বাবা চাকরিসূত্রে বগুড়ায় বদলি হয়েছিলেন। সেই সময় এক প্রাকৃতিক প্রাণপ্রাচুর্য ও সৌন্দর্যের মধ্যে আমার শৈশব কেটেছে। বসতি কম ছিল। প্রকৃতির সৌন্দর্য ছিল দিগন্ত-বিস্তৃত। মা খুবই সচেতন মানুষ ছিলেন। আমরা পাঁচ-ছয় ভাইবোন একসঙ্গে ছিলাম। বয়সে এক, দুই বছরের ছোট-বড় ছিলাম। আমাদের সবাইকে নিয়ে তিনি সংসারের বড় জায়গাটা আলোকিত করতেন। জন্মদিনে তার রান্নার সুগন্ধ চারদিকে ছড়িয়ে পড়ত। আমাদের জন্মদিনকে বড় জায়গায় নিয়ে যেতেন। ভাইবোনদের যারই জন্মদিন হোক, সেদিন মা আমাদের ডেকে বলতেন, এসো আজ জন্মদিন, তোমাদের জন্য পোলাও-কোরমা রান্না হবে। আরও কিছু খাবে? আমরা কিছু বলতাম না। কেকের প্রসঙ্গ এলে বলতাম, কেক এখন কোথায় পাবেন। এটা তো একটা গ্রাম। এখানে তো কেক পাওয়া যাবে না। আপনার কোনো কষ্ট করার দরকার নেই। আপনি আমাদের জন্মদিনের কথা বলেছেন, স্মৃতির জন্য এটাই সবচেয়ে বড় অনুভবের জায়গা। আমরা খাওয়ার জন্য তেমন উৎফুল্ল থাকতাম না। আমাদের সবার জন্মদিন মা এভাবে আলোকিত করে রাখতেন।

প্রশ্ন: আপনার অমর সৃষ্টি ‘নীল ময়ূরের যৌবন’ ও ‘গায়ত্রী সন্ধ্যা’ উপন্যাস কীভাবে লেখা হলো?

সেলিনা হোসেন: বিশ্ববিদ্যালয়ে চর্যাপদ আমাদের পাঠ্য ছিল। চর্যাপদের একটা কবিতার লাইন এমন- ‘রুখের তন্তুলি কুমিরে খাই’। এটি পড়ে আমি বিস্মিত হতাম। মুখস্থ করে নিয়েছিলাম। ‘রুখের তন্তুলি কুমিরে খাই’ নিয়ে ক্লাসে শিক্ষক একদিন বলেছিলেন, ‘গাছের তেঁতুল কুমিরে খায়’। আমার মনে হলো, এত বড় গাছের তেঁতুল কুমির কী করে খাবে! কুমির তো গাছে উঠতে পারে না। ভাবলাম, দেখি কিছু করতে পারি কি না। চর্যাপদে নানা কিছু পড়েই ‘নীল ময়ূরের যৌবন’ লেখা শুরু করি।

‘গায়ত্রী সন্ধ্যা’ উপন্যাস লেখা হয়েছে ১৯৪৭ সাল-পরবর্তী সময় থেকে আমাদের জনজীবনের ভেতরে কীভাবে সংস্কৃতির সবকিছু নিয়ে বাঙালি এগিয়ে এসেছে, স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছে, যুদ্ধ করেছে। সবকিছু নিয়ে আমার মনে হয়েছে, গায়ত্রী সন্ধ্যা উপন্যাসের একটি বড় জায়গা। আমাদের জনজীবনের সবটুকু নিয়ে একটা উপন্যাস লেখা দরকার। সে ভাবনা থেকেই লেখা।

প্রশ্ন: এই দুটি উপন্যাস ভারতের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্য। এ নিয়ে কোনো স্মৃতি আছে?

সেলিনা হোসেন: ভারতের একজন গবেষক ও অধ্যাপক আমাকে বলেছিলেন, ১৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্য। দিল্লিতে বাঙালিদের একটি সংস্থা আছে, সেখানে একটা সেমিনারে গিয়েছি, মঞ্চে আমার পাশে একজন মহিলা বসেছিলেন, তিনি আমাকে বললেন, আমি আপনার ‘গায়ত্রী সন্ধ্যা’ উপন্যাস পড়াই। আমি বললাম, কেমন করে পড়াবেন। হিন্দি বা ইংরেজিতে গায়ত্রী সন্ধ্যা অনুবাদ হয়নি। তিনি বললেন, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে বাংলাটাই পড়াই আমি। ওখানে বাঙালি ছেলেমেয়ে আছে তাদেরই গায়ত্রী সন্ধ্যা পড়াই।

প্রশ্ন: সমাজের অনেকের মধ্য থেকে মানবিক মূল্যবোধ হারিয়ে যাচ্ছে। উত্তরণের উপায় আসলে কী?

সেলিনা হোসেন: আমাদের সমাজে মানবিক মূল্যবোধ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে- এ রকম একটি চেতনা মানুষের নানাভাবে ধারণ করে। বিশেষ করে অর্থ, লোভ-লালসা আর ক্ষমতা। এগুলো থেকে উত্তরিত হয়ে আমাদের সবকিছু গভীর মর্যাদায় তুলে ধরতে হবে। সেই জায়গাগুলো থেকে নিজের দেশকে আলোকিত করে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।

ইউনেসকো ১৯৯৯ সালে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। সে বছর আমি আমেরিকার একটা সেমিনারে গিয়েছিলাম। তখন বিদেশি অনেক লেখক আমাকে বললেন, এত বড় একটা ঘটনা ঘটল। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করল। কিন্তু তাদের সাহিত্যে অনুবাদ হয় না। আমরা তাদের সাহিত্য পড়তে পারি না। আমরা মনে করি, বাংলাদেশের লেখকদের সাহিত্য অনূদিত হয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে যাক।

প্রশ্ন: আপনি সাহিত্যের অনুবাদের কথা বললেন। আপনি বর্তমানে বাংলা একাডেমির সভাপতি। বাংলা একাডেমি অনুবাদের দায়িত্বটা নিতে পারে কি না?

সেলিনা হোসেন: অনুবাদের দায়িত্বটা আসলে সরকারিভাবে নেয়া উচিত। প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলা একাডেমি দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারে। তবে অর্থের জোগান দিতে হবে সরকারকে। বাংলা একাডেমি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীন। এই মন্ত্রণালয় যদি অনুবাদের জন্য আলাদাভাবে বাংলা একাডেমিকে অর্থ প্রদান করে, তা হলে এই জায়গাটার অপূর্ণতা দূর হতে পারে।

প্রশ্ন: আপনি সভাপতি থাকা অবস্থায় এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে আশা করি পদক্ষেপ নেবেন।

সেলিনা হোসেন: আমি অবশ্যই বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক জাতিসত্তার কবি মুহম্মদ নুরুল হুদাকে বলব। উনি যেন এই জায়গাটা নিয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন।

প্রশ্ন: আপনার বেশ কয়েকটি বইয়ের নাম নদীর নামে যেমন ‘হাঙর নদীর গ্রেনেড, নদীটির ঘুম ভেঙেছে, যমুনা নদীর মুশায়রা, নদীর সাথে গান, গল্পের নদীতে খেয়াঘাট, এক রূপালী নদীসহ আরও নদী নিয়ে বইয়ের নাম আছে। নদীর প্রতি আপনার বিশেষ ভালোবাসা আছে কী?

সেলিনা হোসেন: নদীর প্রতি আমার প্রবল ভালোবাসা আছে। কারণ আমার শৈশব কেটেছে বগুড়ার করতোয়া নদীর ধারে। আমি অনেকবার করতোয়া নদীর পাড়ে গিয়ে দাঁড়িয়ে ও বসে থাকতাম। মাঝিদের নৌকা বেয়ে ঘুরে বেড়াতাম। মাছ ধরা দেখতাম। এবং একজন বাড়ুয়া মাঝি যিনি আমাদের খেয়া নৌকা ঘাটের মাঝি ছিলেন। তাকে দিয়ে বলতাম, কাকু আমাদের একটু পাড় করে দেন। তিনি বড়দের নামিয়ে দিয়ে আমাদের পাড় করে দিতেন। আমাদের আট-নয়জনের একটা দল ছিল, সবাই মিলে ঘুরে বেড়াতাম। এভাবে করতোয়া নদী আমার স্মৃতিতে লেখায় প্রবলভাবে উঠে এসেছে। এবং করতোয়া নদীকে আমি যদি এভাবে ভালোবাসার সুযোগ না পেতাম, তাহলে নদীর প্রতি আমার যে জায়গাটি এত প্রশস্ত হতো না। কিন্তু এরপর রাজশাহীতে আসার পর পদ্মা নদীর অনেক কিছু দেখেছি। পদ্মা নদীর পাড়ে অনেক ঘুরেছি। এই পদ্মাও আমার স্বপ্নের একটা জায়গা তৈরি করেছে। আমি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায়, বিশেষ করে আমার শ্বশুরবাড়ি বরিশাল, এখন অবশ্য বরগুনা জেলা হয়েছে। আমি সেখানে অনেক নদী দেখেছি। এবং নৌকা নিয়ে ঘুরে বেড়াতাম। আমার স্বামীকে বললে সে ছোট নৌকা বা লঞ্চ ভাড়া করে নিয়ে আমাকে নদীর চারদিকে নিয়ে ঘোরাত। বরগুনায় যত নদী সব দেখা। সব জায়গার নদী নিয়েই আমার স্বপ্ন তৈরি হয়েছে ভেতরে। শিশুদের নিয়ে আমি চার-পাঁচটি বই লিখেছি। এবং হাঙর নদীর গ্রেনেডটা বোঝাতে আমি হাঙর শব্দ দিয়ে বুঝিয়েছি আক্রমণ, নদী শব্দ দিয়ে বুঝিয়েছি একটি দেশ ‘ল্যান্ড’; যার মধ্যে শুধু মাটি থাকবে না, নদীও থাকবে। প্রকৃতি থাকবে, আর গ্রেনেড হলো প্রতিরোধের জায়গা।

প্রশ্ন: আপনি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এখন পর্যন্ত অনেক লেখা লিখেছেন। এর পরও কি বড় কোনো লেখার পরিকল্পনা আছে। থাকলে যদি বলতেন?

সেলিনা হোসেন: এ বছর আমি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক একটা উপন্যাস প্রকাশ করেছি, সেটার নাম ‘বধ্যভূমিতে বসন্ত বাতাস’। আমি এইভাবে দেখিয়েছি- হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সব পরিবারের ভেতর থেকে উপন্যাসের চরিত্র এনেছি এবং তারা কীভাবে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা দিয়েছেন। সে বিষয়টা তুলে ধরেছি। শুধু মুসলমানের এই দেশটাকে স্বাধীন করেনি, সেটা বোঝাতে চেষ্টা করেছি। বধ্যভূমিতে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান সবাইকে ফেলে মাটি চাপা দেয়া হয়েছে। এটা আমি অনেক জায়গায় দেখেছি। সুতরাং আমার মনে হয়েছে আমাদের এই সব শহীদের শেষনিশ্বাস স্বাধীনতার বসন্ত বাতাস। সে জন্য আমি উপন্যাসটির নাম এভাবে রেখেছি বধ্যভূমিতে বসন্ত বাতাস।

প্রশ্ন: মুক্তিযুদ্ধে নারীর ভূমিকা কতটা জোরাল ছিল?

সেলিনা হোসেন: মুক্তিযুদ্ধে নারীকে নির্যাতন করা শত্রুদের একটা বড় রকমের কৌশল ছিল। সব যুদ্ধক্ষেত্রে এ কৌশল প্রয়োগ করা হয়। পরিবারের একটা মেয়েকে নির্যাতন করলে মা-বাবা, ভাই-বোন, আত্মীয়স্বজন থেকে শুরু করে সবাই খুব মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েন। আর ওই বিধ্বস্ততার জায়গায় থেকে শত্রুপক্ষ সুযোগটা নিয়ে থাকে, সাহসের জায়গায় ধাক্কা দেয়। এই ঘটনাগুলো বিশ্বজুড়ে ঘটেছে। আমাদের নারীরা ব্যাপকভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। পুরুষ সদস্যরা মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ায় নারীরা সমাজ কাঠামো চমৎকার করে ধরে রেখেছেন। এটিও যুদ্ধের নেপথ্যে একটা বড় জায়গা ছিল।

১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের সার্টিফিকেট দিয়ে অসাধারণ একটা কাজ করেছে। এতে অসাধারণ একটি মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা হয়েছিল। ওই সার্টিফিকেটে লেখা আছে প্রথমে নিজের নাম, বাবার নাম, গ্রামের নাম, থানার নাম, জেলার নাম এবং তারপর লেখা ছিল বীর/বীরাঙ্গনা সৈনিক। বীরাঙ্গনাকে সৈনিক হিসেবে উল্লেখ করেছেন ওই সময় বঙ্গবন্ধু। তিনি এভাবে নারী-পুরুষের মর্যাদার জায়গাটা প্রতিষ্ঠিত করে দিয়েছেন। তারপর সংসদে নারী সদস্য করেছেন। মন্ত্রিসভায় নারীদের স্থান দেয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধু সবকিছুর দ্বার খুলে দিয়েছিলেন। যে নারীরা নির্যাতিত হয়েছিলেন, তাদের অনেক পরিবার বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিল। চাকরি প্রসঙ্গে তাদের বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘বাবা যদি তোমাকে বাবা হিসেবে নাম লিখতে না দেয়, তাহলে বাবার নাম লিখবে শেখ মুজিবুর রহমান।’ আমরা স্বাধীনতা-পরবর্তী এই সমাজব্যবস্থা পেয়েছিলাম। কিন্তু ওই সমাজব্যবস্থার ৪৮ বছর পরও আজ এই নারী নির্যাতন আমাদের জন্য মর্মাহত ঘটনা।

প্রশ্ন: শিক্ষার ক্ষেত্রে নারীর অগ্রগতি কতটুকু?

সেলিনা হোসেন: শিক্ষাক্ষেত্রে নারীর অনেকটাই অগ্রগতি হয়েছে আমি বলব। তবে পূর্ণমাত্রা অর্জিত হয়েছে, সেটা বলা যাবে না। পূর্ণ অর্জন এখনো হয়নি। আমার মনে হয়, আরও সময় লাগবে। ১৯৭৩ সালে কুমিল্লায় একটি সাহিত্য সম্মেলনে নারীরা ব্যাপকভাবে অংশ নিয়েছিলেন। তেভাগা আন্দোলনে ইলা মিত্র বিশাল একটি ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনিও নির্যাতিত হয়েছিলেন ১৯৫০ সালের ৭ জানুয়ারি ধরা পড়ার পর চাঁপাইনবাবগঞ্জ থানায় পুলিশের দ্বারা। কমিউনিস্ট পার্টি যখন তাকে একটা জবানবন্দি দিতে বলে, তখন তিনি অবারিত জবানবন্দিতে সব ঘটনা উল্লেখ করে ওই সমাজব্যবস্থা ভেঙে দিয়েছিলেন, ধাক্কা দিয়েছিলেন। তা নারীসমাজ প্রগতির রক্ষায় বড় একটা ভূমিকা পালন করেছিল। ১৯৫৭ সালে কাগমারী সম্মেলন তারা অংশগ্রহণ করেছিলেন। নারীরা কখনো পিছিয়ে থাকেননি।

প্রশ্ন: ইদানীং নারী ধর্ষণ বেড়ে গেছে। এর প্রতিকার কীভাবে করা যায়?

সেলিনা হোসেন: বেড়ে যাওয়ার অনেক কারণ আছে। বিশেষ করে মানুষের মূল্যবোধের জায়গা দিন দিন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। আর সে জন্য আমাদের একজন ধর্ষককে কঠিন শাস্তি দিতে হবে। একজন ধর্ষককে যদি ফাঁসি দেয়, তাহলে তো আর ধর্ষণ হবে না। আর পাঁচজন লোক ধর্ষণ করার সাহস পাবে না। ফাঁসি দিয়ে যদি দৃষ্টান্ত স্থাপন করা যায়, তাহলে অন্যরা ধর্ষণ করার সাহস পেত না।

প্রশ্ন: ৫২ বছরের বাংলাদেশে দাঁড়িয়ে ১০০ বছরের বাংলাদেশকে কেমন দেখতে চান?

সেলিনা হোসেন: আমি একটি মানবিক বাংলাদেশ দেখতে চাই। উন্নয়নের ধারাবাহিকতার সঙ্গে সঙ্গে জনজীবন মানবিকবোধের জায়গায় পৌঁচ্ছে যাক বাংলাদেশ। মানবিক মূল্যবোধে পরিপূর্ণভাবে তৈরি হোক বাংলাদেশের প্রত্যেক মানুষ। এটাই প্রত্যাশা সবার কাছে আমার।

প্রশ্ন: আপা দীর্ঘ সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

সেলিনা হোসেন: তোমাকেও ধন্যবাদ।


ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনে ডিএমপির ২ হাজার ১ মামলা

আপডেটেড ১৫ মে, ২০২৫ ১৭:১৬
বাসস

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে ২ হাজার ১টি মামলা করেছে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ।

এছাড়াও অভিযানকালে ১৯০টি গাড়ি ডাম্পিং ও ১৩২টি গাড়ি রেকার করা হয়েছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান সাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আজ এ তথ্য জানানো হয়।

গতকাল বুধবার ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ অভিযান চালিয়ে এসব মামলা দায়ের করে।

ঢাকা মহানগর এলাকায় ট্রাফিক শৃঙ্খলা রক্ষায় ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের অভিযান অব্যাহত থাকবে।


চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে একটি সুনির্দিষ্ট রূপ দিতে চাই: আলী রীয়াজ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ইউএনবি

চব্বিশের জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে আকাঙ্ক্ষার স্ফুরণ ঘটেছে তার একটি সুনির্দিষ্ট রূপ দিতে চায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। বৃহস্পতিবার (১৫ মে) ঢাকার জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সঙ্গে আলোচনা সভায় এমন মন্তব্য করেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।

তিনি বলেন, ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার বিষয়টিকে আমরা একটি জাতীয় সনদে প্রতিফলিত করতে চাই। ভবিষ্যতে প্রত্যেকটা রাজনৈতিক দল এই সনদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে ভূমিকা পালন করবে৷

ঐকমত্য কমিশনের এই উদ্যোগ বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশাকে ধারণ করে বলে মন্তব্য করেন আলী রীয়াজ। এ সময় কমিশনের সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ড. ইফতেখারুজ্জামান, আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।

বাংলাদেশের নতুন যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা এদেশের মানুষ এবং রাজনৈতিক শক্তিগুলোর দীর্ঘদিনের সংগ্রামের ফল উল্লেখ করে আলোচনার সূচনায় অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, গত বছরের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে মানুষের দীর্ঘদিনের ক্ষোভ যেমন প্রকাশ হয়েছে, তেমনি তাদের প্রত্যাশাকেও প্রকাশ করেছে। বার বার ফ্যাসিবাদের উত্থান হোক; তা দেশের মানুষ চায় না। আমরা এমন একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই, যেখানে সবার সমানাধিকার থাকবে, নাগরিকের অধিকার সুনিশ্চিত হবে এবং ভিন্নমতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকবে।

কমিশনের সহ-সভাপতি আরও বলেন, সংস্কার কমিশনগুলো থেকে প্রাপ্ত সুপারিশমালা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে কমিশন। এ দায়িত্ব কেবল জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের নয় বরং রাজনৈতিক দলগুলোকেই মানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়ে ভবিষ্যতের পথে অগ্রসর হতে হবে।

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজের নেতৃত্বে দলটির সহ-সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতনসহ ১১ সদস্যের প্রতিনিধিদলের হয়ে আলোচনায় নিখিল দাশ, জনার্দন দত্ত নানটু, প্রকৌশলী শম্পা বসু, ডা. মনীষা চক্রবর্ত্তী, জুলফিকার আলী, আহসান হাবিব বুলবুল, খালেকুজ্জামান লিপন, আবু নাঈম খান বিপ্লব এবং রাহাত আহম্মেদ অংশ নেন।


অতিরিক্ত লবণ গ্রহণের কারণে দেশে বছরে ২৫ হাজার মানুষের মৃত্যু

বিশ্ব লবণ সচেতনতা সপ্তাহ-২০২৫
আপডেটেড ১৫ মে, ২০২৫ ১২:০৬
নিজস্ব প্রতিবেদক

দৈনিক অতিরিক্ত লবণ গ্রহণের ফলে দেশে উক্ত রক্তচাপ, হৃদরোগ, স্ট্রোক ও কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। গবেষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্রাপ্তবয়স্করা প্রতিদিন গড়ে ৯ গ্রাম লবণ গ্রহণ করছেন, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মাত্রার (৫ গ্রাম) চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। এর ফলে প্রতি বছর দেশে প্রায় ২৫ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করছে বলে জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

গতকাল বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ-এর উদ্যোগে ‘বিশ্ব লবণ সচেতনতা সপ্তাহ-২০২৫’ উপলক্ষে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ-এর সভাপতি অধ্যাপক খন্দকার আবদুল আউয়াল রিজাতী'র সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোগগুপ্ত ও গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী। মতবিনিময় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইনস্টিটিউটের লবণ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সমন্বয়ক ডা. আহমাদ খাইনুল আবরার।

সভায় বলা হয়, উচ্চমাত্রায় লবণ গ্রহণের একটি বড় উৎস হলো প্রক্রিয়াজাত খাবার। এ ধরনের খাবারে লবণের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। এই অতিরিক্ত লবণ নীরব ঘাতকের মতো দেশে হৃদরোগসহ অন্যান্য অসংক্রামক রোগের মহামারি সৃষ্টি করছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে অবিলম্বে একটি সমন্বিত জাতীয় লবণ গ্রহণ হ্রাস কৌশল গ্রহণ করা এবং খাদ্যের মোড়কের সামনে ‘ফ্রন্ট অফ প্যাক লেবেলিং’ বাধ্যতামূলক প্রয়োজন। খাদ্য মোড়কের সামনে সহজবোধ্যভাবে দেওয়া ফ্রন্ট অফ প্যাক লেবেলের মাধ্যমে ভোক্তারা সহজেই লবণ, চিনি ও চর্বির মত স্বাস্থ্যহানিকর উপাদানের পরিমাণ সম্পর্কে সচেতন হয়ে স্বাস্থ্যকর পণ্য বেছে নিতে সক্ষম হবেন।

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, লবণ শুধু স্বাদের উপাদান নয়, অতিরিক্ত গ্রহণ করলে এটি হৃদরোগ, স্ট্রোক, কিডনি রোগসহ অসংক্রামক রোগের বড় ঝুঁকি তৈরি করে। তিনি জাতীয় পাঠ্যক্রমে লবণের ক্ষতিকর প্রভাব অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান; যাতে শিশুদের মধ্যে শুরু থেকেই স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে ওঠে।

বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান মুস্তাক হাসান মো. ইফতেখার বলেন, অধিকাংশ প্রক্রিয়াজাত খাবারে অতিরিক্ত লবণ থাকে, কিন্তু বোধগম্য লেবেলিং না থাকার কারণে জনগণ তা বুঝে উঠতে পারে না। তিনি ফ্রন্ট-অফ-প্যাক লেবেলিং ব্যবস্থা চালুর পাশাপাশি মোড়কে পুষ্টি উপাদানসমূহের সঠিক কর্তৃপক্ষের নিয়মিত নজরদারির প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক সৈয়দ জাকির হোসেন বলেন, অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে সরকার বদ্ধ পরিকর। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বিত কার্য পরিকল্পনা রয়েছে এবং সে অনুযায়ী কাজ করে চলছে। সম্প্রতি অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি উদ্যোগে জাতীয় লবণ গ্রহণ হ্রাস কৌশল প্রণয়নের কাজ শুরু হয়েছে উল্লেখ করে তিনি দ্রুত এটি বাস্তবায়ন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শোয়েব বলেন, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের মোড়কিকরণ আইন অনুযায়ী মোড়কে লবণ, চিনি ও চর্বির পরিমাণ উল্লেখ বাধ্যতামূলক হলেও অনেক কোম্পানি তা করে না, অথবা এমনভাবে উল্লেখ করে যা ভোক্তারা পড়তে পারেন না। জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি মোড়কিকরণ আইন সংশোধন করে সহজবোধ্য ফ্রন্ট-অফ-প্যাক লেবেলিং ব্যবস্থা চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শিব্বির আহমেদ ওসমানী প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, জনস্বাস্থ্য রক্ষায় খাদ্যভ্যাস পরিবর্তনের বিকল্প নেই। তিনি দেশের জনগণকে এ বিষয়ে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্য পরিবেশ তৈরিতে সরকারের সার্বিক প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করেন। জনস্বাস্থ্য রক্ষা ও দেশের সুস্থ ভবিষ্যত নিশ্চিত করার জন্য তিনি সরকারি বেসরকারি সকলের সমন্বিত উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে এ জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক খন্দকার আব্দুল আউয়াল রিফায়ী বলেন, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন দীর্ঘদিন ধরে লবণ গ্রহণ হ্রাসের জন্য প্রক্রিয়াজাত খাবারে লুকানো লবণ বিষয়ে মানুষকে সচেতন করে আসছে। জনস্বার্থে সরকারিভাবে প্রক্রিয়াজাত খাবারে সর্বোচ্চ লবণের মাত্রা নির্ধারণ করতে হবে। সেই জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক প্রচারণা চালানো জরুরি।

উল্লেখ্য, জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ১২ থেকে ১৮ মে পর্যন্ত ‘বিশ্ব লবণ সচেতনতা সপ্তাহ’পালিত হয়। এই সচেতনতা সপ্তাহের এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘অতিরিক্ত লবণ বর্জন করি, সুস্থ জীবন পড়ি’।

মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক সাইদুল আরেফিন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এনসিটি বিষয়ক কর্মকর্তা ডা. ফারজানা আক্তার পারভিন, বাংলাদেশ মেডিকেল ইউনিভার্সিটির অসংক্রামক রোগ গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ডা. মো. মাবুল হক খান, জাতীয় পুষ্টিসেবার ডেপুটি প্রোগ্রাম প্রোগ্রাম ম্যানেজার আজমেরী শারমিনসহ, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধিরা।


শিক্ষার্থীদের নতুন বিশ্ব গড়ার স্বপ্ন দেখার আহ্বান জানালেন প্রধান উপদেষ্টা

আজ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্চম সমাবর্তনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বক্তব্য রাখেন। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস শিক্ষার্থীদের নতুন এক বিশ্ব গড়ার স্বপ্ন দেখার আহ্বান জানিয়েছেন।

আজ বুধবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ৫ম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ভাষণদানকালে তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত নতুন কিছু গড়ার সক্ষমতা রাখি।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে সমাবর্তন অনুষ্ঠান হয়।

সমাবর্তন ভাষণে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমরা চাইলে আমাদের মতো করে এক নতুন বিশ্ব গড়ে তুলতে পারি।’ তবে, তিনি বলেন, প্রত্যেকেরই স্বপ্ন থাকা দরকার- কেমন পরিবেশ ও সমাজ তারা প্রতিষ্ঠা করতে চায় সেই সম্পর্কে।

গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পটভূমি স্মরণ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বর্তমানে যে সভ্যতা চলছে তা একটি ধ্বংসাত্মক অর্থনীতির সভ্যতা।

তিনি বলেন, ‘আমরা যে অর্থনীতি তৈরি করেছি তা মানুষের জন্য নয়, বরং ব্যবসার জন্য।’ তিনি উল্লেখ করেন, ব্যবসাকেন্দ্রিক এই সভ্যতা আত্মঘাতী এবং তা টিকবে না।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, দীর্ঘদিন পর তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে আনন্দিত। তিনি স্মরণ করেন, ১৯৭২ সালে চবিতে শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন।

তিনি ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ এবং কীভাবে গ্রামীণ ব্যাংক চট্টগ্রামে দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষদের সহায়তা করতে গঠিত হয়েছিল তা তুলে ধরেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, গ্রামীণ ব্যাংকের জন্ম হয়েছিল চবির অর্থনীতি বিভাগে।

অনুষ্ঠানে, চবি কর্তৃপক্ষ অধ্যাপক ইউনূসকে ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন এবং বিশ্বজুড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অসামান্য অবদানের জন্য সম্মানসূচক ডক্টরেট অব লিটারেচার (ডি লিট) উপাধিতে ভূষিত করে।

চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইয়াহিয়া আখতার অধ্যাপক ইউনূসের হাতে ডি লিট সনদ তুলে দেন।

সমাবর্তনে শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরার এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফয়েজসহ অন্যান্যরাও বক্তব্য রাখেন।

চবি প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (একাডেমিক) ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান এবং প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) মো. কামাল উদ্দিনও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

চবি আজ দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ সমাবর্তনের আয়োজন করে, যেখানে ২২,৫৮৬ জন শিক্ষার্থীকে সনদ প্রদান করা হয়।


দাবি আদায় না-হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকার ঘোষণা জবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের

রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে রাস্তা অবরোধ করে অবস্থান করছেন জবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
unb

দাবি আদায় না-হওয়া পর্যন্ত রাজপথে কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, জবির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা অভিমুখে কাকরাইল মোড়ে রাস্তা অবরোধ করে অবস্থান করছেন।

বুধবার (১৪ মে) বিকাল সাড়ে তিনটার সময় এই ঘোষণা দেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা বলেন, আমাদের শিক্ষক ও ছাত্রদের ওপর হামলা চালানো ঘাতক পুলিশের বিচার করতে হবে।

এসময় জবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দীন বলেন, ‘সরকারের এই কর্মকাণ্ডে আমরা মর্মাহত। আমার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপর চালানো হামলায় শতাধিক আহত হয়েছেন। পুলিশের এই হামলার বিচার করতে হবে।’

অবস্থান কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা, ‘জেগেছে রে জেগেছে, জবিয়ান জেগেছে’; ‘আমার ভাই অনাহারে যমুনা কি করে’; ‘এসেছি যমুনায় যাবো না খালি হাতে’; ‘আমার ভাই আহত কেন ইন্টেরিম জবাব চাই’ এসব স্লোগান দেন।

এদিন বিকাল ৩টার দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সাবিনা শরমিন, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন মঞ্জুর মোর্শেদ উপস্থিন হন।

এদিন, বেলা ১১টায় তিন দফা দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন অভিমুখে লং মার্চ শুরু করেন জবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এতে লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে পুলিশ। এই ঘটনায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকসহ শতাধিক আহত হয়েছেন।

লং মার্চটি মৎস্য ভবন পার হয়ে কাকরাইল মসজিদের ক্রসিং মোড়ে গেলে কাঁদানে গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড, গরম পানি নিক্ষেপ করে পুলিশ। এতে আহত হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. রইছ উদ্দিন, সহকারী প্রক্টর নাইম সিদ্দিকি, ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক নাসিরউদ্দিন, ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক মোহাম্মদ বেলাল হোসেন, সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহাতাব হোসেন লিমন প্রমুখ।

পুলিশের লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাসে গুরুতর আহত হয়ে অন্তত ৩০ জন জবি শিক্ষার্থী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. তাজাম্মুল হক বলেন, ‘আমার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ হামলা চালিয়েছে। আমার সহকারী প্রক্টরের ওপরও পুলিশ আঘাত করেছে। শিক্ষার্থীদের ন্যায্য আন্দোলনে পুলিশ অমানবিক আচারণ করেছে। এর বিচার না-হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়বো না।’

এর আগে মঙ্গলবার দুপুরে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি প্রতিনিধিদল ইউজিসিতে যান। কিন্তু ইউজিসি থেকে আশানুরূপ কোনো ঘোষণা না আসায় ‘লংমার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচি ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। ওইদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ‘জুলাই ঐক্য’ সংগঠনের পক্ষ থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হয়।

আন্দোলনকারীদের তিন দফা দাবি হলো—জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন বৃত্তি ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে কার্যকর করতে হবে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট কাঁটছাট না করেই অনুমোদন করতে হবে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ পরবর্তী একনেক সভায় অনুমোদন করে অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন করতে হবে।


চট্টগ্রাম রেঞ্জ ও সিএমপিতে চালু হচ্ছে অনলাইন জিডি সেবা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
unb

চট্টগ্রাম রেঞ্জের সকল জেলার সকল থানা ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) সকল থানায় আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১৫ মে) থেকে চালু হচ্ছে অনলাইন জিডি সেবা।

প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনার আলোকে পুলিশি সেবা সহজীকরণের অংশ হিসেবে থানায় না এসে ঘরে বসেই সকল ধরনের জিডি অনলাইনে করার সুবিধা চালু করেছে বাংলাদেশ পুলিশ।

পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আজ এ তথ্য জানানো হয়।

এতে বলা হয়, প্রাথমিক পর্যায়ে গত ১৫ এপ্রিল ২০২৫ সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের সকল থানা এবং চাঁদপুর জেলা পুলিশের সকল থানায় অনলাইন জিডি সেবা চালু হয়েছে।

ইতোপূর্বে অনলাইনে শুধুমাত্র হারানো এবং প্রাপ্তি সংক্রান্ত জিডি করা যেত। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য রেঞ্জ ও মেট্রোতেও অনলাইন জিডি সেবা চালু হবে।

অনলাইন জিডি সেবা পেতে গুগল প্লে স্টোর থেকে 'অনলাইন জিডি' অ্যাপ ডাউনলোডের পর রেজিস্ট্রেশন করে এ সেবা পাওয়া যাবে। এক্ষেত্রে একাধিকবার রেজিস্ট্রেশন করার প্রয়োজন নেই। রেজিস্ট্রেশন অথবা অনলাইন জিডি করতে কোনো ধরনের অসুবিধা হলে ০১৩২০০০১৪২৮ হটলাইন নম্বরে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হলো। হটলাইন নম্বরটি ২৪ ঘণ্টা চালু আছে।

বাংলাদেশ পুলিশ জনগণের দোরগোড়ায় পুলিশি সেবা দ্রুততম সময়ে ও সহজে পৌঁছে দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।


দুদকের মামলায় জামিন পেলেন জোবাইদা রহমান

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
unb

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানকে জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে করা ওই মামলায় ৩ বছরের কারাদণ্ডাদেশ থেকে খালাস চেয়ে করা আপিল আবেদনও শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন আদালত।

বুধবার (১৪ মে) বিচারপতি মো. খসরুজ্জামানের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জোবাইদা রহমানের আইনজীবী কায়সার কামাল। আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জোবাইদা রহমানকে জামিন দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

এর আগে, গতকাল (মঙ্গলবার) এই আপিল দায়েরের ক্ষেত্রে ৫৮৭ দিনের বিলম্ব মার্জনা চেয়ে জোবাইদা রহমানের করা আবেদন মঞ্জুর করেন হাইকোর্টের একই বেঞ্চ। একইসঙ্গে আপিল দায়েরের অনুমতি দেওয়া হয়। পরে গতকালই এই মামলায় খালাস চেয়ে আপিল দায়ের করা হয়। এই আপিলের সঙ্গে জামিনের আবেদনও করেন জোবাইদা রহমান।

আদালতে জোবাইদা রহমানের পক্ষে আজ (বুধবার) শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহাজান, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ও ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। দুদকের পক্ষে আইনজীবী আসিফ হাসান শুনানি করেন।

পরে আইনজীবী কায়সার কামাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘সাজার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া, আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তার জামিন আবেদন মঞ্জুর করেছেন হাইকোর্ট। এ মামলার আপিল শুনানির জন্য যাবতীয় নথিও তলব করা হয়েছে।’

সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর তারেক রহমান, জুবাইদা রহমানসহ তিনজনের বিরুদ্ধে রাজধানীর কাফরুল থানায় মামলা করে দুদক। পরের বছর তাদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।

পরে ২০২৩ সালের ২ আগস্ট করা এই মামলার রায় দেন ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. আছাদুজ্জামান। ওই রায়ে তারেক রহমানকে ৯ বছর কারাদণ্ড এবং তার স্ত্রী জোবাইদা রহমানকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

পরে এই মামলায় জোবাইদা রহমানের সাজা স্থগিত করে গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

প্রজ্ঞাপনে সাজা স্থগিত চেয়ে জুবাইদা রহমানের করা আবেদন এবং আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মতামতের আলোকে জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে করা মামলায় তাকে দেওয়া দণ্ডাদেশ এক বছরের জন্য স্থগিত করা হয়।

২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর স্বামী তারেক রহমানের সঙ্গে লন্ডনের উদ্দেশে বাংলাদেশ ছাড়েন জুবাইদা রহমান। এরপর থেকে লন্ডনেই ছিলেন তিনি।

সেখান থেকে ৬ মে শাশুড়ি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে ১৭ বছর পর দেশে ফেরেন জুবাইদা রহমান।

দেশে ফিরে আপিল করার জন্য ৫৮৭ দিন বিলম্ব মার্জনা চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন তিনি। আবেদনটি মঙ্গলবার কার্যতালিকায় উঠলে সেটি মঞ্জুর করেন আদালত।


প্রধান উপদেষ্টাকে ডি লিট ডিগ্রি প্রদান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে বুধবার সম্মানসূচক ডক্টরেট অফ লিটারেচার (ডি.লিট) ডিগ্রি প্রদান করেছেন। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং বিশ্বব্যাপী শান্তি প্রতিষ্ঠায় অনন্য অবদানের জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) কর্তৃপক্ষ প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে ডি লিট ডিগ্রি প্রদান করেছে।

আজ বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত পঞ্চম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে তাঁকে এই ডিগ্রি প্রদান করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে চবি উপাচার্য ড. ইয়াহ্ইয়া আখতার অধ্যাপক ইউনূসের হাতে ডি লিট ডিগ্রির সনদ তুলে দেন।

এ সময় চবি উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান এবং উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) মো. কামাল উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।


ভারত-পাকিস্তানের পাল্টাপাল্টি কূটনীতিক বহিষ্কার

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চললেও কূটনৈতিক উত্তেজনা এখনো থামেনি। এবার পাকিস্তানে নিযুক্ত ভারতীয় এক কূটনীতিককে ‘পারসোনা নন গ্রাটা’ ঘোষণা করেছে ইসলামাবাদ। কূটনীতির ভাষায় ‘পারসোনা নন গ্রাটা’র অর্থ হচ্ছে ‘অবাঞ্ছিত ব্যক্তি’। ওই কূটনীতিককে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পাকিস্তান ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ইসলামাবাদ থেকে এএফপি এই খবর জানায়।

এদিকে বুধবার পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ এক প্রতিবেদনে ওই কূটনীতিকের নাম প্রকাশ করা হয়নি।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিধিবহির্ভূত কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে ইসলামাবাদে ভারতীয় হাইকমিশনের এক কর্মীকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্ত জানাতে গতকাল মঙ্গলবার তাঁকে মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়েছিল।

এর আগে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে দিল্লিতে নিযুক্ত পাকিস্তানের এক কূটনীতিককে বহিষ্কার করে ভারত। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ওই কর্মকর্তা ভারতে তাঁর সরকারি অবস্থানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় এমন কার্যকলাপে লিপ্ত ছিলেন। তাই তাঁকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভারত ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

চার দিনের সামরিক সংঘাতের পর চলমান যুদ্ধবিরতির মধ্যেই দুই প্রতিবেশী দেশ আবারও পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপ নিল।


জবি শিক্ষার্থীদের ওপর কাঁদানে গ্যাস-সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
unb

আবাসন ভাতাসহ তিন দফা দাবিতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা অভিমুখে যাত্রার সময় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীদের ওপর কাঁদানে গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড এবং জল-কামান নিক্ষেপ করেছে পুলিশ।

বুধবার (১৪ মে) দুপুর পৌঁনে ১২টার দিকে পূর্বঘোষিত ‘লং মার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচি অনুযায়ী সেগুনবাগিচার কাকরাইল মোড়ে পৌঁছালে শিক্ষার্থী ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের এক পর্যায়ে এ ঘটনা ঘটে।

কাঁদানে গ্যাসে আহত শিক্ষার্থী সামিউল রহমান বলেন, ‘আমাদের যৌক্তিক দাবির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছে। আমার উপর কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করা হয়েছে।’

এর আগে, আজ (বুধবার) বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে ক্যাম্পাস থেকে যমুনা অভিমুখে যাত্রা শুরু করেন জবি শিক্ষার্থীরা। সোয়া ১২টার দিকে গুলিস্তানের জিরো পয়েন্ট মোড়ে পৌঁছালে তাদের বাধা দেয় পুলিশ। তবে পুলিশের বাধা অতিক্রম করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সামনে এগিয়ে যান।

তার আগে, গতকাল (মঙ্গলবার) বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেন। বৈঠকে জবির বাজেট বৃদ্ধি ও আবাসন সংকট নিরসন বিষয়ে আলোচনা হলেও দাবি মানা হয়নি বলে অভিযোগ তোলেন শিক্ষার্থীরা।

এরপর ‘জবি ঐক্য’ নামে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নতুন এক প্লাটফর্ম থেকে তিন দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় যমুনা অভিমুখে লং মার্চের ঘোষণা দেওয়া হয়।

শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি হলো—আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন বৃত্তি ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে কার্যকর করা, জবির ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট কাঁটছাট না করেই অনুমোদন করতে করা, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ পরবর্তী একনেক সভায় অনুমোদন করে অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন করা।

আন্দোলনে উপস্থিত রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোশাররাফ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দীন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বেলাল হুসাইন, প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল, সদস্যসচিব সামসুল আরেফিন, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মো. আসাদুল ইসলাম, সেক্রেটারি মো. রিয়াজুল ইসলাম, বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ইসলামী ছাত্র আন্দোলন সভাপতি আব্দুল ওয়াহিদ, সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান আকাশ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি একে এম রাকিব সাধারণ সম্পাদক রায়হান হাসান রাব্বিসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা।


চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের অর্থনীতির হৃৎপিণ্ড : প্রধান উপদেষ্টা

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস চট্টগ্রাম সফরের প্রথম কর্মসূচি হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দরের নিউ মুরিং কনটেইনার টার্মিনালে বন্দরের সক্ষমতা সম্পর্কে ব্রিফিং করেন। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, চট্টগ্রাম বন্দরকে আন্তর্জাতিক মানের বন্দরে উন্নীত করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিশ্বের খ্যাতিসম্পন্ন বন্দর ব্যবস্থাপনা সংস্থাগুলোকে আমন্ত্রণ জানিয়ে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

প্রধান উপদেষ্টার চট্টগ্রাম সফরের প্রথম কর্মসূচি হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দরের নিউ মুরিং কনটেইনার টার্মিনালে বন্দরের সক্ষমতা সম্পর্কে তাঁর কাছে ব্রিফিংকালে তিনি এ কথা বলেন।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘এটি আমাদের জন্য একটি বড় সুযোগ।’

তিনি বলেন, ‘যদি সরকারের পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়িত হয়, তাহলে দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হবে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি বদলাতে হলে চট্টগ্রাম বন্দরই আমাদের আশা। এটি ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।’

চট্টগ্রাম বন্দরের গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের অর্থনীতির হৃৎপিণ্ড। কিন্তু যদি হৃৎপিণ্ড দুর্বল হয়, কোনো ডাক্তারই তা আর ভালো করতে পারে না। তাই একে বিশ্বমানের করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘বন্দর ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত বৈশ্বিক পর্যায়ের শীর্ষ সংস্থাগুলোকে আগেও ডাকা হয়েছিল, কিন্তু কার্যকর কোনো অগ্রগতি হয়নি।’

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘এই হৃৎপিণ্ডকে আমাদের প্রতিবেশীদের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে। এজন্য আমি নেপাল ও ভারতের সাতটি উত্তর-পূর্ব রাজ্যের (সেভেন সিস্টার্স) কথা বলেছি। যদি তারা এতে যুক্ত হয়, তারা উপকৃত হবে, আমরাও হবো। যারা যুক্ত হবে না, তারা পিছিয়ে পড়বে।’

চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে নিজের শৈশবস্মৃতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই সফরের জন্য আমি অপেক্ষা করছিলাম। চট্টগ্রাম বন্দর আমার জন্য নতুন কিছু নয়। আমি শৈশব থেকেই এর সঙ্গে পরিচিত। এটি অনেক বদলেছে, তবে দুঃখের বিষয় হলো পরিবর্তন ধীর গতির। আমি যখন সুযোগ পেলাম, তখন থেকেই ভেবেছি কী করা যায়।’

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘বিশ্ব অনেক এগিয়ে গেছে, আর আমরা অনেক পিছিয়ে পড়েছি। কেউ গুরুত্ব দেয় না। এজন্য আমি পরিবর্তনের জন্য চাপ দিচ্ছি। আমি বলেছি বন্দরের পরিচালনার দায়িত্ব বিশ্বের শীর্ষ অপারেটরদের হাতে তুলে দিতে। আশা করি সবাই একদিন বুঝবে।’

নৌ পরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন প্রধান উপদেষ্টার বন্দর উন্নয়নের আগ্রহের প্রশংসা করেন।

তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের আশেপাশে একাধিক টার্মিনাল নির্মাণ কনটেইনার জট কমাতে সাহায্য করবে। ‘আমি আশা করি আগামী ছয় মাসের মধ্যেই আপনি পরিবর্তন দেখতে পাবেন,’ বলেন তিনি।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, ‘বন্দর আধুনিকায়ন করার বিকল্প নেই।’

তিনি জানান, বাংলাদেশের ৯২ শতাংশ বৈদেশিক বাণিজ্য এবং তার ৯৮ শতাংশ নিউ মুরিং কনটেইনার টার্মিনাল দিয়ে সম্পন্ন হয়।

মনিরুজ্জামান বলেন, প্রাকৃতিক কারণে ২০০ মিটারের বেশি দৈর্ঘ্যের জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে ভিড়তে পারে না। এ কারণে বিশ্বব্যাংকের এক সমীক্ষা অনুযায়ী বাংলাদেশ প্রতিদিন প্রায় ১০ লাখ ডলারের ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।


চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শন করলেন প্রধান উপদেষ্টা

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ সকালে চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শন করেছেন। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ সকালে চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শন করেছেন।

এর আগে তিনি আজ সকালে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে চট্টগ্রাম পৌঁছান। চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শনের পাশাপাশি তিনি আজ সারাদিন বেশ কয়েকটি কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবেন।


ঢাবি ছাত্র সাম্য হত্যার ঘটনায় আটক ৩

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
unb

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্র শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার সঙ্গে জড়িত তিনজনকে আটক করেছে শাহবাগ থানা পুলিশ।

বুধবার (১৪ মে) এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান।

এ বিষয়ে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালেদ মনসুর ইউএনবিকে জানান, ঘটনার পরপরই শাহবাগ থানার বেশ কয়েকটি টিম দুর্বৃত্তদের আটকের জন্য বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে। পরে শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে ওই তিনজনকে আটক করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে ওই তিনজন সাম্য হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। তবে তদন্তের স্বার্থে অভিযুক্তদের নাম প্রকাশ করেননি ওসি। এ ছাড়া, পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি।

গতকাল (মঙ্গলবার) দিবাগত রাতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্ত মঞ্চের পাশে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে নিহত হন সাম্য।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে মোটরসাইকেল চালিয়ে ঢাবি সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্ত মঞ্চের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন সাম্য। এ সময় অন্য একটি বাইকের সঙ্গে ধাক্কা লাগলে উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি এবং ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি শাহরিয়ারকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যান।

পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।


banner close