সোমবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫
৭ পৌষ ১৪৩২

ব্যাংক পরিচালকদের মেয়াদ বাড়ল, জাপার হইচই, ওয়াকআউট, স্পিকারের রুলিং

আপডেটেড
২২ জুন, ২০২৩ ০০:৩০
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা
প্রকাশিত
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা
প্রকাশিত : ২১ জুন, ২০২৩ ২২:২০

পরিচালক পদে একটানা বারো বছর থাকার বিধান যুক্ত করে ব্যাংক কোম্পানি আইনের সংশোধনী জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে।

সংসদে পাস হওয়া বিলে খেলাপি ঋণগ্রহীতার ঋণ সুবিধা পাওয়ার বিষয়ে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। অবশ্য এসব সংশোধনী সংসদে উপস্থাপিত বিলে বা স্থায়ী কমিটির প্রতিবেদনে ছিল না।

বিলটি পাসের প্রতিবাদে সংসদ থেকে ওয়াক আউট করেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা।

বুধবার সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ‘ব্যাংক-কোম্পানি (সংশোধন) বিল- ২০২৩’ পাসের প্রস্তাব করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়।

পরিচালক পদের মেয়াদ বাড়ানোর সংশোধনী প্রস্তাবটি যেভাবে আনা হয়েছে তা নিয়ে প্রবল আপত্তি জানান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা। ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা বলেন, ব্যাংক লুটপাটের মূল হোতা পরিচালকেরা। তাদের সুবিধা দেয়ার জন্য আইন সংশোধন করা হচ্ছে। তারচেয়ে পরিচালকদের মেয়াদ আজীবন করে দেয়া হোক।

গত ৮ জুন ব্যাংক কোম্পানি (সংশোধন) বিল–২০২৩ জাতীয় সংসদে তুলেছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সংশোধনীর মূল প্রস্তাবে পরিচালক পদের মেয়াদ বাড়ানো–কমানোর বিষয়ে কোনো প্রস্তাব ছিল না। পরে সেটি পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়েছিল। কমিটিও পরিচালক পদের মেয়াদ নিয়ে কোনো সংশোধনী আনেনি।

সংসদে বিলটি পাসের আগে টাঙ্গাইল-৬ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আহসানুল ইসলাম টিটু পরিচালকদের মেয়াদ বাড়ানো ও খেলাপি ঋণগ্রহীতার ঋণ সুবিধা বিষয়ক সংশোধনী দুটি প্রস্তাব করেন। টিটু পরিচালকদের পদের মেয়াদ বিষয়ক সংশোধনীতে প্রস্তাব করেন- ‘আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইন অথবা কোনো ব্যাংক-কোম্পানির সংঘস্মারক ও সংঘবিধিতে ভিন্নতর যা কিছুই থাকুক না কেন, ব্যাংক কোম্পানি (সংশোধন) আইন, ২০১৮ কার্যকর হবার পর কোনো ব্যক্তি কোনো ব্যাংক কোম্পানির পরিচালক পদে একাদিক্রমে ১২ বছরের অধিক অধিষ্ঠিত থাকতে পারবেন না।’

খেলাপি ঋণগ্রহীতার অনুকূলে ঋণ ছাড় বিষয়ক সংশোধনী প্রস্তাবে তিনি জানান, পরস্পর স্বার্থ সংশ্লিষ্ট গ্রুপভুক্ত কোনো খেলাপি ব্যক্তি বা ক্ষেত্রমত, প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি যদি ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতা না হয় অথবা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে যদি প্রতীয়মান হয় যে, ওই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি কর্তৃক ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হবার ক্ষেত্রে কোনো প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি খেলাপি বলে গণ্য হবে না, এবং এইরূপ প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন সাপেক্ষে তৎকর্তৃক জারিকৃত নির্দেশনা অনুযায়ী ঋণ সুবিধা প্রদান করা যাবে।

টিটুর পরিচালক পদের সংশোধনী প্রস্তাব নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখান জাতীয় পার্টির একাধিক সংসদ সদস্য। বিল পাসের আলোচনায় অংশ নিয়ে তারা প্রশ্ন তোলেন, এভাবে বিলে সংশোধনী আনা যায় কি না। এ বিষয়ে তারা স্পিকারের ব্যাখ্যা দাবি করেন।

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, পরিচালক পদের মেয়াদ ১২ বছর করার জন্য সরকারি দলের একজন সদস্য সংশোধনী প্রস্তাব দিয়েছেন। এটা বিল উত্থাপনের সময় ছিল না। যেহেতু সরকারি দলের সংসদ সদস্য এই প্রস্তাব দিয়েছেন তাই মনে হচ্ছে এটা গ্রহণ করা হবে। যে বিষয়টি সংসদে উত্থাপনই হয়নি সেটা চাওয়া হয় কী করে?

তিনি বলেন, ব্যাংকগুলোতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে। ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর হাত থেকে মুক্ত করতে হবে।

জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘পরিচালকেরা হচ্ছেন ব্যাংক লুটপাটের মূল হোতা। কোনো পরিচালক সুপারিশ না করলে আমার মতো লোক গেলে ব্যাংকঋণ পাবে না।'

জাতীয় পার্টির মহাসচিব চুন্নু বলেন, ‘যে আইনের কোনো ধারা অর্থমন্ত্রী সংশোধনীতে আনেননি, যে ধারা সংশোধনের জন্য সংসদীয় কমিটি কোনো সুপারিশ করেনি, সেখানে একজন সরকারি দলের সদস্য কোন আইনে এই সংশোধনী আনলেন? তিনি এটা পারেন কি না? এটা জানা খুবই দরকার। অভিভাবক হিসেবে স্পিকার এটা বলবেন বলে আশা করি।’

মুজিবুল হক বলেন, ‘মনে হচ্ছে অর্থমন্ত্রীকে কনভিন্স করে সরকারি দল করেন, এমন অনেক ব্যাংকের পরিচালকদের সুপারিশে এটা আনা হয়েছে পাস করার জন্য। সেটা হলে আমরা আমাদের সব সংশোধনী প্রত্যাহার করলাম। কারণ, এর চেয়ে বড় অন্যায় আর হতে পারে না। যেখানে ব্যাংক লুটপাট করা হচ্ছে, বিদেশে টাকা পাচার হচ্ছে, আর বাংলাদেশ ব্যাংক বসে বসে তামাক খায়। ব্যাংকের চেয়ারম্যান-পরিচালক হাজার কোটি টাকা নিয়ে বিদেশে চলে যান। আপনারা দেখছেন না। আপনারা আছেন কাউকে ফেবার (সুবিধা দেয়া) করার জন্য। পরিচালকের মেয়াদ ১২ বছর করার এই প্রস্তাবকে আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানাই।’

জাতীয় পার্টির আরেক সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, এই আইনে সংশোধন আনা হচ্ছে শুধু ব্যাংকমালিকদের সুবিধা দেয়ার জন্য। বেসরকারি ব্যাংকগুলো এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপর খবরদারি করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর কে হবেন, ডেপুটি গভর্নর কে হবেন—এগুলো তারা নির্ধারণ করে দেয়। ব্যাংকমালিকদের কাছে সরকার জিম্মি হয়ে গেছে।

ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক কারা—এই প্রশ্ন রেখে কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘আমরা তার লিস্ট চাই। আমরা এই ভাগ্যবানদের সংসদে দেখতে চাই। সব দলীয় কর্মী ও আত্মীয়স্বজনকে স্বতন্ত্র পরিচালক করা হয়। তাঁরা ব্যাংকে যায় শুধু লোন দেওয়ার জন্য। ১০ কোটি টাকা ঋণ দিয়ে দুই কোটি নিজে নিয়ে নিলেন। এক দিনে ধনী হয়ে গেলেন। যেন আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ। এখানে লুটপাট চলছে। আমরা কমানোর প্রস্তাব করছি না। এদের মেয়াদ আজীবন করে দেন। আমি এখন প্রস্তাব আনলাম। এই পরিচালকেরা আজীবন থাকবেন। আল্লাহ যত দিন হায়াত রাখছেন, আপনারা খাইতে থাকেন। আমরা দেখতে থাকি।’

প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে ব্যাংকমালিকদের অনুদান দেয়ার প্রতি ইঙ্গিত করে কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, তারা পত্রিকার প্রথম ও শেষ পাতায় বড় বড় ছবি দিয়ে বিজ্ঞাপন দেন প্রধানমন্ত্রীর হাতে টাকা (চেক) দিচ্ছেন। আরও এক বস্তা (টাকা) খালেদা জিয়ার হাতে দেন। সেটা প্রকাশ করেন না। এদের চরিত্র একই। সাবধান হতে হবে, তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে সরকারের প্রতি দাবি জানান তিনি।

কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ব্যাংকমালিকদের সুবিধা দেয়ার জন্য আইনটি আনা হয়েছে। তারা জনগণের টাকার অপব্যবহার করেন। সর্দিকাশি হলেই তারা ব্যাংকের টাকায় সিঙ্গাপুর চলে যান।

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান বলেন, সরকার তাদের প্রিয় পরিচালকদের কীভাবে পদে রাখবে, সেটা ভুলে গিয়েছিল। এ কারণে পরবর্তী সময়ে এই সংশোধনী আনা হয়েছে। যে প্রক্রিয়ায় আইনে সংশোধনী আনা হচ্ছে, তা সঠিক প্রক্রিয়া নয়।

বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের সমালোচনার জবাবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, খেলাপি ঋণ ১৪ বছরে ১৩ দশমিক ২ শতাংশ থেকে ৮ দশমিক ৬ শতাংশে নেমেছে। সরকারি ব্যাংকের শাখা দ্বিগুণ বেড়েছে। ব্যাংকের আমানত ৭ গুণ বেড়েছে। বছরওয়ারি মুনাফা বেড়েছে ৮ গুণ। তিনি আশা করেন, তাঁর এই বক্তব্যে ভুল–বোঝাবুঝির কিছুটা অবসান হবে।

সংসদ সদস্য আহসানুল ইসলাম তার সংশোধনী প্রস্তাব তুলতে গেলে জাপার সংসদ সদস্যরা হইচই শুরু করেন। তখন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, আগে সংসদ সদস্যকে সংশোধনী প্রস্তাব তুলতে দিন। এরপর বিষয়টির ব্যাখ্যা দেয়া হবে।

আহসানুল ইসলাম সংশোধনী প্রস্তাব তোলার পর স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী সংসদের কার্যপ্রনালি বিধির সংশ্লিষ্ট বিধি উল্লেখ করে বলেন, মূল সংশোধনীতে বিলের ১০ দফায় সংশোধনীর প্রস্তাব ছিল। আর আহসানুল ইসলাম যে সংশোধনী প্রস্তাব এনেছেন, সেটিও এই দফার একটি উপদফা। এখানে বিলে কোনো নতুন ধারা যুক্ত করা হয়নি বা এমন কোনো নতুন দফাও যুক্ত করা হয়নি। এটি অপ্রাসঙ্গিক নয়।

স্পিকারের বক্তব্যের পর বিরোধী দলের সদস্য ফখরুল ইমাম কথা বলতে চাইলে স্পিকার মাইক না দিয়ে বলেন, ‘মাননীয় সংসদ সদস্য, এটা আমার রুলিং। এ বিষয়ে আর আপনার কিছু বলার নেই।’

ফখরুল ইমাম এ সময় আবারও হাত তুললেও তাকে ফ্লোর দেয়া হয়নি। রুলিংয়ের পর অর্থমন্ত্রীকে ফ্লোর দেন স্পিকার। এ সময় মাইক ছাড়াই বিরোধী দলের সদস্যরা হট্টগোল, হইচই করতে থাকেন। পরে স্পিকার অর্থমন্ত্রীকে থামিয়ে দিয়ে বিরোধী দলের সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমরা বিধির বাইরে কিছু করব না।’

তখনো বিরোধী দলের সদস্যরা হইচই, হট্টগোল করতে থাকেন। তাদের হইচইয়ের মধ্যেই ফ্লোর নিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, তিনি আহসানুল ইসলামের সংশোধনী প্রস্তাব গ্রহণ করছেন।

এটি বলার সঙ্গে সঙ্গে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা হইচই ও চিৎকার করে প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেন। মাইক ছাড়াই কথা বলতে থাকেন মুজিবুল হক। কাজী ফিরোজ রশীদও দাঁড়িয়ে কথা বলতে শুরু করেন। একপর্যায়ে ফিরোজ রশীদকে মাইক দেয়া হয়। তিনি অর্থমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, ‘আমরা যে আজীবনের কথা বললাম, আপনি কি সেটা গ্রহণ করলেন? এই একজন পরিচালক আমৃত্যু থাকবেন, সেটা গ্রহণ করছেন? না ১২ বছর করছেন? কোনটা, সেটা আমাদের স্পষ্ট বলতে হবে।’

মুজিবুল হকও একই ধরনের বক্তব্য দেন। এ সময় বিরোধী দলের সদস্যরা হইচই করতে থাকলে কিছু সময়ের জন্য সংসদে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়।

পরে স্পিকার অর্থমন্ত্রীকে আবারও মাইক দেন। তবে তিনি কথা বলেননি। একপর্যায় স্পিকার সংশোধনী ভোটে দেন। দফাভিত্তিক সব সংশোধনী ভোটে দেয়া হয়। এ সময় জাতীয় পার্টির সদস্যরা হইচই করে ওয়াকআউট করে সংসদ কক্ষ থেকে বেরিয়ে যান।

অবশ্য কিছু সময় পর জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা আবার সংসদের অধিবেশন কক্ষে ফিরে আসেন।

পাস হওয়া বিলে হয়েছে, কোনো ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে একটি একক পরিবারের সদস্যের বাইরে তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বা নিয়ন্ত্রণাধীন সর্বোচ্চ দু’টি প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির পক্ষে প্রতিনিধি পরিচালক থাকতে পারবে। তবে কোনো ব্যাংকের পর্ষদে কোনো প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির পক্ষে একজনের অধিক ব্যক্তি প্রতিনিধি পরিচালক নিযুক্ত হতে পারবে না।

বিলে বলা হয়েছে, কোনো ব্যাংকের পর্ষদে প্রাকৃতিক ব্যক্তিসত্ত্বা বিশিষ্ট ব্যক্তি শেয়ারহোল্ডারের পক্ষে অপর কোনো ব্যক্তি প্রতিনিধি পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত হতে পারবে না। অর্থাৎ, কোনো ব্যক্তি ব্যাংকের শেয়ারের মালিক হলে তার প্রতিনিধি হিসেবে অন্য কোনো ব্যক্তিকে পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়া যাবে না।

বিদ্যমান আইনে কোনো ব্যাংক পরিচালক একইসময়ে অন্য কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক থাকতে পারবেন না। তবে এই আইন কার্যকর হবার পর সর্বোচ্চ দুই মেয়াদে বিমা কোম্পানির পরিচালক হওয়ার সুযোগ রয়েছে। যদিও ২০১০ সালে প্রণীত বিমা আইন অনুযায়ী কোনো বীমা কোম্পানির পরিচালক ব্যাংক কোম্পানির পরিচালক হতে পারেন না। সংশোধনী বিলে কোনো ব্যাংক পরিচালকের একইসঙ্গে বিমা কোম্পানির পরিচালক পদে থাকার সুযোগ বাতিল করা হয়েছে।

এছাড়া, কোনো পরিচালক ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি কোম্পানির পরিচালক হতে পারবেন কি না, সে বিষয়ে বিদ্যমান আইনে কিছু বলা নেই। কিন্তু একজন পরিচালক আরও কোন কোন কোম্পানিতে পরিচালক থাকতে পারবেন না বলে বিলে বলা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি ব্যাংকের পরিচালক হলে একই সময়ে তিনি অন্য কোনো ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিমা কোম্পানি বা এসব কোম্পানির কোনো সাবসিডিয়ারি কোম্পানির পরিচালক থাকতে পারবেন না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের বিবেচনায় এমন কোনো কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান যা ওই ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা বিমা কোম্পানির উপর নিয়ন্ত্রণ বা যৌথ নিয়ন্ত্রণ বা প্রভাব বিস্তার করে- এমন কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক থাকবে না বলেও বিলে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিদ্যমান আইনে বিকল্প পরিচালক নিয়োগের সুযোগ থাকলেও তার মেয়াদকাল এবং বিকল্প পরিচালকদের যোগ্যতা সম্পর্কে কিছু বলা নেই। নতুন আইনে এসব বিষয় সুনির্দিষ্ট করা হচ্ছে।

খসড়া আইনে বলা হয়েছে, কোনো পরিচালক কমপক্ষে নিরবচ্ছিন্নভাবে তিন মাস বিদেশে অবস্থান করলে তার অনুপস্থিতির কারণে পর্ষদ চাইলে মূল পরিচালকের বিপরীতে বছরে সর্বোচ্চ একবার একজন বিকল্প পরিচালক নিযুক্ত করতে পারবে। পরিচালক নিয়োগের যেসব শর্ত রয়েছে, সেগুলো বিকল্প পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।

খসড়া আইনে বলা হয়েছে, কোনো ব্যাংক-কোম্পানির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনার স্বার্থে উহার পর্ষদ এবং পর্ষদ কমিটিগুলোর কর্মপরিধি বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক সময় সময় নির্দেশনা জারি করতে পারবে।

নতুন আইনে ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি কোম্পানিগুলোর উপর বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা পাবে। এতে নতুন ধারা যোগ করে বলা হয়েছে, যে উদ্দেশ্যেই ব্যাংক কোনো সাবসিডিয়ারি কোম্পানি গঠন করুক না কেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত হার বা পরিমাণের বেশি সাবসিডিয়ারি কোম্পানির মূলধন হিসেবে বিনিয়োগ করতে পারবে না।

নতুন আইনের আওতায় সাবসিডিয়ারি কোম্পানির পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার যোগ্যতা ও উপযুক্ততার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক সার্কুলার জারি করবে।

ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিদেশ যাওয়া, বাড়ি-গাড়ি ও কোম্পানি নিবন্ধনে নিষেধাজ্ঞা আরোপসহ তাদের রাজনৈতিক দলের কমিটিতে না রাখার বিধান রেখে ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ অধিকতর সংশোধন করতে একটি বিল সংশোধন আনা হয়েছে। এই বিলে এক পরিবার থেকে তিন জনের বেশি ব্যাংক পরিচালক হওয়া যাবে না এরকম বিধান রয়েছে।

সংসদে পাস হওয়া বিলে বলা হয়েছে, ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতা শনাক্ত ও চূড়ান্ত করার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো দুটি পৃথক কমিটি গঠন করবে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সময়ে সময়ে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপির তালিকা বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠাবে।

তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার পর ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান চাইলে ৩০ দিনের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকে আপিল করতে পারবে এবং এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে। এছাড়া ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা, ট্রেড লাইসেন্স ইস্যুতে নিষেধাজ্ঞাসহ বেশকিছু ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দেবার সুযোগ রাখা হয়েছে।

বিষয়:

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে হামলা: ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযানে গ্রেফতার ৯

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

সম্প্রতি দেশের শীর্ষ দুই জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার এবং দুটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে এখন পর্যন্ত ৯ জনকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সোমবার (২২ ডিসেম্বর) সকাল পর্যন্ত পরিচালিত বিভিন্ন অভিযানে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে সাতজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে, তারা হলেন— মো. কাশেম ফারুক, মো. সাইদুর রহমান, রাকিব হোসেন, মো. নাইম, ফয়সাল আহমেদ প্রান্ত, মো. সোহেল রানা এবং মো. শফিকুল ইসলাম। এছাড়া কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট ও গোয়েন্দা পুলিশ আরও দুইজনকে গ্রেফতার করেছে যাদের পরিচয় যাচাই করা হচ্ছে।

গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে রাকিব হোসেনকে ভিডিও ফুটেজে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে সরাসরি অংশ নিতে দেখা গেছে এবং তিনি হামলার পর ধ্বংসস্তূপের ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উসকানিমূলক পোস্ট দিয়েছিলেন। মো. নাইম নামে একজনকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে লুট করা ৫০ হাজার টাকাসহ গ্রেফতার করা হয়। তিনি প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন যে, ওই দিন মোট ১ লাখ ২৩ হাজার টাকা লুট করে তিনি একটি টেলিভিশন ও ফ্রিজ কিনেছিলেন, যা ইতোমধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে। অন্যদিকে কারওয়ান বাজার এলাকা থেকে গ্রেফতারকৃত সোহেল রানার বিরুদ্ধে মাদকসহ বিভিন্ন অভিযোগে ১৩টি এবং শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগে দুটি পুরনো মামলা রয়েছে।

এর আগে গত রোববার প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে এই হামলায় জড়িত ৩১ জনকে প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করা হয়েছে। একই সাথে চট্টগ্রামে ভারতের সহকারী হাইকমিশনারের বাসভবনের সামনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির দায়ে আরও তিনজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। শনাক্ত হওয়া বাকি আসামিদের ধরতেও সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে এবং গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে পুলিশ নিশ্চিত করেছে। মূলত ভিডিও ফুটেজ ও প্রযুক্তির সহায়তায় অপরাধীদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।


যেকোনো মূল্যে আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনায় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে যেকোনো মূল্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সব বাহিনীকে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। সোমবার সকালে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বার্তার মাধ্যমে এই বৈঠকের বিস্তারিত তথ্য জানানো হয়।

এই গুরুত্বপূর্ণ সভায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমানসহ বিভিন্ন নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন, আসন্ন বড়দিন এবং ইংরেজি নববর্ষ উদ্‌যাপন ঘিরে নিরাপত্তা প্রস্তুতিসহ সমসাময়িক বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে বিশদ আলোচনা করা হয়। বিশেষ করে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহিদ শরীফ ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার এবং তদন্তের অগ্রগতির বিষয়টি আলোচনায় বিশেষ গুরুত্ব পায়। প্রধান উপদেষ্টা নির্দেশ দিয়েছেন যে, ওসমান হাদি হত্যাসহ যেকোনো বেআইনি কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে আইনের আওতায় আনতে হবে।

বৈঠকে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, সম্প্রতি দুটি জাতীয় দৈনিক ও দুটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় ভিডিও ফুটেজ দেখে ইতোমধ্যে ৩১ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে আজ সোমবার সকাল পর্যন্ত ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে মো. কাশেম ফারুকি, মো. সাইদুর রহমান, রাকিব হোসেন, মো. নাইম, মো. সোহেল রানা এবং মো. শফিকুল ইসলাম নামে ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং বাকিদের গ্রেফতারে অভিযান চলমান রয়েছে। এ ছাড়াও চট্টগ্রামে ভারতের সহকারী হাইকমিশনারের বাসভবনের নিকট বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টাকারী তিনজনকে ভিডিও ফুটেজ দেখে শনাক্ত করার বিষয়টিও প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করা হয়েছে। সার্বিকভাবে দেশে কোনো ধরনের অস্থিরতা বা অরাজকতা বরদাশত করা হবে না বলে বৈঠকে পুনরায় সতর্ক করা হয়।


এ কে খন্দকার বীর উত্তমের জানাজায় প্রধান উপদেষ্টা

রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষ বিদায়
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক   

মহান মুক্তিযুদ্ধের ডেপুটি চিফ অব স্টাফ ও স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আবদুল করিম খন্দকার (এ কে খন্দকার) বীর উত্তমকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষ বিদায় জানানো হয়েছে। রোববার (২১ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিমানবাহিনীর ঘাঁটি বাশারে তার জানাজায় অংশ নেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, সেনা, নৌ, বিমানবাহিনীর প্রধানসহ উচ্চপদস্থ সামরিক–বেসামরিক কর্মকর্তারা। জানাজার আগে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে খন্দকারের ফিউনারেল প্যারেড হয়।

জানাজা শেষে রাষ্ট্রপতির পক্ষে তার সামরিক সচিব এ কে খন্দকারের কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান। এরপর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

পরে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান এবং বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান একে একে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। বিমানবাহিনীর একটি ফ্লাই পাস্টের মাধ্যমে এ কে খন্দকারের প্রতি সম্মান জানানো হয়।

জানাজার আগে এ কে খন্দকারের ছেলে জাফরুল করিম খন্দকার সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন।

মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম বীর সেনানী এ কে খন্দকার গত শনিবার সকালে বার্ধক্যের কারণে মারা যান। তিনি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, বীর উত্তম খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিবাহিনীর ডেপুটি চিফ অব স্টাফ, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বিমানবাহিনীর প্রধান ও সাবেক মন্ত্রী।

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতা, দূরদর্শিতা ও নেতৃত্বগুণের মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন এ কে খন্দকার। মুক্তিযুদ্ধকালে তার কৌশলগত সিদ্ধান্ত ও সাংগঠনিক দক্ষতা স্বাধীনতার সংগ্রামকে আরও সুসংহত করে।


সুদানে শহীদ ৬ শান্তিরক্ষীকে অশ্রুসজল বিদায়

আপডেটেড ২২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ০০:০৮
নিজস্ব প্রতিবেদক

ছেলের কফিনের পাশে পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন মোহাম্মদ আলমগীর। অর্ধেক জাতীয় পতাকা আর অর্ধেক জাতিসংঘের পতাকায় মোড়ানো কফিন। তার চোখে কেবলই শূন্যতা। নিহত শামীম রেজার বাবা আলমগীর বলেন, আমার ছেলে ছিল আমার বটগাছ। সেই গাছটা আর নেই। আমার সব স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেল।

গত ১৩ ডিসেম্বর সুদানের আবিয়ে এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের বেসে ড্রোন হামলায় নিহত হন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ছয় সদস্য। রোববার (২১ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় ঢাকা সেনানিবাসের কেন্দ্রীয় মসজিদে তাদের জানাজা হয়।

নিহত ৬ শান্তিরক্ষী হলেন- নাটোরের বাসিন্দা করপোরাল মো. মাসুদ রানা, কুড়িগ্রামের বাসিন্দা সৈনিক মো. মমিনুল ইসলাম ও সৈনিক শান্ত মন্ডল, রাজবাড়ীর বাসিন্দা সৈনিক শামীম রেজা, কিশোরগঞ্জের বাসিন্দা মেস ওয়েটার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম এবং গাইবান্ধার বাসিন্দা লন্ড্রি কর্মচারী মো. সবুজ মিয়া।

জানাজা শেষে শহীদ শান্তিরক্ষীদের মরদেহে রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এরপর একে একে তিনবাহিনীর পক্ষ থেকে শহিদদের কফিনে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

জানাজায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান, বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এবং সশস্ত্র বাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা অংশ নেন।

জানাজা শেষে শামীম রেজার বাবা বলেন, তার ছেলে অনেক স্বপ্ন নিয়ে বিদেশে গিয়েছিলেন। ছোট ভাইকে বলেছিলেন ভবিষ্যৎ গড়ে দেবেন, আর ছোট মেয়েকে কথা দিয়েছিলেন ফেরার সময় বিয়ের হার নিয়ে আসবেন।

করপোরাল মোহাম্মদ মাসুদ রানার ছোট ভাই সৈনিক রনি ভাইয়ের জন্য সবার কাছে দোয়া ও ক্ষমা চান। তিনি বলেন, মাসুদ রানা ১৯ বছর ধরে সেনাবাহিনীতে চাকরি করেছেন। তার আট বছরের একটি মেয়ে আছে।

সৈনিক মোহাম্মদ মমিনুল ইসলামের ভগ্নিপতি মিজানুর রহমান জানান, মমিনুল স্ত্রী, দুই ও বারো বছরের দুই সন্তান, ছোট ভাই ও বোনকে রেখে গেছেন।

সৈনিক শান্ত মণ্ডলের চাচা আবু তাহের মণ্ডল বলেন, স্কুল শেষ করেই শান্ত সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন। তার বাবা নুরুল ইসলাম মণ্ডলও সেনাবাহিনীতে ছিলেন। তিনি বলেন, জ নুরুল বেঁচে থাকলে গর্ববোধ করতেন যে তার ছেলে শহীদ হয়েছে, জীবন উৎসর্গ করেছে। তিনি আরও বলেন, শান্তর পরিবার অত্যন্ত গরিব। তার মা দুই ছেলের ওপর নির্ভর করেই সংসার চালাতেন। তিনি শান্তর প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা দ্রুত পরিবারকে দেওয়ার অনুরোধ জানান।

মেস ওয়েটার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের ভগ্নিপতি ওয়ালিউল্লাহ বলেন, জাহাঙ্গীর স্ত্রী ও তিন বছরের এক ছেলেকে রেখে গেছেন। সাত বছর আগে তাদের বিয়ে হয়েছিল। তিনি জাহাঙ্গীরের ভুলত্রুটির জন্য সবার কাছে ক্ষমা চান।

লন্ড্রি কর্মী মোহাম্মদ সবুজ মিয়ার চাচা আব্দুল হামিদ জানান, সবুজ সম্প্রতি বিয়ে করেছিলেন। তিনি স্ত্রী ও বৃদ্ধা মাকে রেখে গেছেন। তিনি সবার কাছে সবুজের জন্য দোয়া চান।

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন ইউনিসফার চিফ কমিউনিটি লিয়াজোঁ অফিসার বরিস-এফ্রেম চুমাভি বাংলাদেশ সরকার, সেনাবাহিনী ও নিহতদের পরিবারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি নিহতদের ‘শান্তির সৈনিক’ হিসেবে অভিহিত করে বলেন, তারা অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়েও পেশাদারত্ব, সততা ও সাহসিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন।

জানাজার আগে নিহত ছয় শান্তিরক্ষীর সংক্ষিপ্ত জীবনী পাঠ করা হয় এবং তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। এরপর সামরিক রীতি অনুযায়ী তাদের রাষ্ট্রীয় সম্মান জানানো হয়। পরে হেলিকপ্টারে করে মরদেহ নাটোর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, রাজবাড়ী ও কিশোরগঞ্জে নিজ নিজ বাড়িতে পাঠানো হয়। সেখানে পারিবারিক কবরস্থানে তাদের দাফন করা হয়।

এর আগে শনিবার এমিরেটস এয়ারলাইনসের ফ্লাইটে তাদের মরদেহ দেশে আনা হয়। দেশে আনার আগে আবিয়েতে তাদের জানাজা ও সামরিক সম্মান জানানো হয়।

গত ১৩ ডিসেম্বরের ড্রোন হামলায় ছয় বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহত এবং নয়জন আহত হন। আহতদের মধ্যে আটজন কেনিয়ার নাইরোবির আগা খান ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তারা সবাই এখন শঙ্কামুক্ত বলে জানা গেছে।


সামনে আসছে কঠিন সময়, সকলকে সজাগ থাকতে হবে : তারেক রহমান

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বগুড়া প্রতিনিধি 

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, সামনের দিনগুলো খুব ভালো দিন নয়। দেশের বিভিন্ন জায়গায় অরাজকতা শুরু হয়েছে। কেউ কেউ দেশে অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। সামনে আসছে কঠিন সময়, সকলকে সজাগ থাকতে হবে। রোববার (২১ ডিসেম্বর) বিকেলে বগুড়ার পৌর এডওয়ার্ড পার্কের শহীদ টিটু মিলনায়তনে জুলাই শহীদদের স্মরণে ডিজিটাল স্মৃতিস্তম্ভের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অনলাইনে যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, ‘শহীদ ওসমান হাদি গণতন্ত্রের পথেই ছিলেন। তিনি একজন প্রার্থী ছিলেন, গণতন্ত্র বা ভোটের রাজনীতিতে বিশ্বাস করতেন। যদি শহীদ হাদির প্রতি, জুলাই শহীদদের ও যোদ্ধাদের প্রতি, একাত্তরের শহীদ ও যোদ্ধাদের প্রতি সম্মান রাখতে হয়, তাহলে আমাদের একটাই লক্ষ্য হতে হবে, দেশের মানুষের জন্য শান্তি প্রতিষ্ঠা করা, দেশের জন্য কাজ করা, দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সামনে একটাই—করব কাজ গড়ব দেশ, সবার আগে বাংলাদেশ।’

অতীতে বিএনপির দুই নেতার রাষ্ট্র পরিচালনায় সফলতার কথা উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান দেশকে ধ্বংসের কিনারা থেকে বের করে এনেছিলেন। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ১৯৯১ সালে স্বৈরাচারের কবল থেকে দেশকে রক্ষা করে ধীরে ধীরে ধ্বংসের কিনারা থেকে উন্নয়নের পথে নিয়েছিলেন। আমাদের হাতে আবারও সুযোগ এসেছে। দেশের প্রায় ২০ কোটি মানুষের জন্য চিকিৎসাব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সুন্দর শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। তরুণদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। নারীদের পিছিয়ে থাকলে চলবে না, তাদের শিক্ষিত করাসহ তারা যাতে অর্থনৈতিক মজবুত ভিত্তির ওপর দাঁড়াতে পারেন, সেদিকে কাজ করতে হবে। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো নয়। দেশকে ধ্বংসের কিনারা থেকে বের করে আনতে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।

সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, ‘সামনে অনেক কাজ। যারা গণতন্ত্র বিশ্বাস করে—আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। সেটি আমরা বিএনপির নেতা–কর্মীরা হই বা অন্য দলের নেতা-কর্মী হই।’

বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এ কে এম মাহবুবর রহমান ও হেলালুজ্জামান তালুকদার, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলাম, জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ও বগুড়া-৫ আসনে বিএনপির প্রার্থী গোলাম মো. সিরাজ, বগুড়া-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কাজী রফিকুল ইসলাম, বগুড়া-৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী ও জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোশারফ হোসেন প্রমুখ।


নয়াদিল্লির প্রেস নোট প্রত্যাখ্যান করল বাংলাদেশ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

নয়াদিল্লি থেকে পাঠানো প্রেস নোটকে ‘সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান’ করেছে বাংলাদেশ। আজ রোববার (২১ ডিসেম্বর) বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন এই কঠোর অবস্থানের কথা জানান। তিনি বলেন, ভারতের দাবি অনুযায়ী নয়াদিল্লিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের নিরাপত্তা বেষ্টনী ভাঙার কোনো চেষ্টা করা হয়নি। প্রকৃতপক্ষে, ময়মনসিংহে দিপু চন্দ্র দাসের হত্যার প্রতিবাদে ২০-২৫ জন যুবক সেখানে গিয়ে স্লোগান দিয়েছে মাত্র। এই ঘটনাকে ভারত যেভাবে উপস্থাপন করেছে, তা বাংলাদেশ পুরোপুরি গ্রহণ করছে না।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা প্রশ্ন তোলেন যে, কড়া নিরাপত্তা বেষ্টিত একটি কূটনৈতিক এলাকায় একটি ক্ষুদ্র দল এত গভীরে প্রবেশ করতে পারল কীভাবে? তিনি এটিকে কূটনৈতিক শিষ্টাচারের স্পষ্ট লঙ্ঘন হিসেবে অভিহিত করেন। এছাড়া একজন বাংলাদেশি নাগরিক হত্যার ঘটনাকে কেন ভারতের পক্ষ থেকে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার বিষয় হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে, সেটিকে অপ্রাসঙ্গিক বলে মন্তব্য করেন তিনি। তৌহিদ হোসেন জানান, ময়মনসিংহের সেই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পর বাংলাদেশ সরকার তাৎক্ষণিকভাবে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নিয়েছে।

দূতাবাসের ভেতরে থাকা কর্মকর্তাদের নিরাপত্তার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ঘটনার সময় কর্মকর্তারা প্রচণ্ড নিরাপত্তা শঙ্কা অনুভব করেছেন এবং সেখানে পর্যাপ্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা ছিল না। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, যদি পরিস্থিতির উন্নতি না হয় এবং কর্মকর্তাদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব না হয়, তবে বাংলাদেশ সরকার নয়াদিল্লিতে দূতাবাসের কার্যক্রম বা জনবল সীমিত করার কথা বিবেচনা করতে পারে।

উল্লেখ্য, এর আগে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছিল যে, বিক্ষোভ শুরুর কয়েক মিনিটের মধ্যেই পুলিশ বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিয়েছে এবং ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী বিদেশি দূতাবাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা তাদের অগ্রাধিকারের তালিকায় রয়েছে। তবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতের এই দাবি ও ব্যাখ্যাকে অগ্রহণযোগ্য বলে নাকচ করে দেওয়া হয়েছে।


শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদেরসহ ১৭ জনের দেশত্যাগে আদালতের নিষেধাজ্ঞা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ ১৭ জন উচ্চপদস্থ ব্যক্তির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন আদালত। আজ রোববার (২১ ডিসেম্বর) ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতের অবকাশকালীন বিচারক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই আদেশ দেন। দুদকের সহকারী পরিচালক তানজিল হাসান এই আবেদনটি আদালতে জমা দেন।

দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার এই তালিকায় আরও রয়েছেন সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু, আনিসুল হক, তোফায়েল আহমেদ, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান এবং সরকারের সাবেক সচিব এম এ এন ছিদ্দিকসহ বেশ কয়েকজন অতিরিক্ত সচিব ও প্রকৌশলী। এছাড়াও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সিএনএস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুনীর উজ জামান চৌধুরী ও দুইজন পরিচালকের বিদেশ গমনেও এই নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে।

দুদকের মামলার এজাহার ও আবেদন সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেম লিমিটেডকে (সিএনএস) কোনো প্রকার বৈধ টেন্ডার প্রক্রিয়া ছাড়াই একক উৎসভিত্তিক চুক্তির মাধ্যমে টোল আদায়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। প্রতিষ্ঠানটিকে মোট আদায়কৃত টোলের ১৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ সার্ভিস চার্জ দেওয়ার চুক্তি করা হয়, যার ফলে তারা ৪৮৯ কোটি টাকারও বেশি বিল গ্রহণ করে। অথচ এর আগে ২০১০ থেকে ২০১৫ মেয়াদে একই কাজে ব্যয় হয়েছিল মাত্র ১৫ কোটি টাকার কিছু বেশি। এ ঘটনায় ভয়াবহ দুর্নীতির অভিযোগে গত ১২ অক্টোবর দুদক শেখ হাসিনাসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে।

আদালতে দেওয়া আবেদনে বলা হয়, বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে যে মামলার আসামিরা দেশত্যাগ করার পরিকল্পনা করছেন। তারা বিদেশে পালিয়ে গেলে মামলার তদন্ত কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ আলামত বিনষ্ট হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। তাই মামলার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে অভিযুক্তদের বিদেশ যাত্রা রহিত করা জরুরি বলে মনে করেন আদালত। এই আদেশের ফলে আইনি প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত অভিযুক্তদের কেউই দেশের বাইরে যেতে পারবেন না।


এ কে খন্দকারের জানাজায় প্রধান উপদেষ্টার অংশগ্রহণ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম রূপকার, মুক্তিবাহিনীর ডেপুটি চিফ অব স্টাফ এবং স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আবদুল করিম খন্দকারের (এ কে খন্দকার) জানাজা ও শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠান আজ রবিবার (২১ ডিসেম্বর) রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সম্পন্ন হয়েছে। রাজধানীর বিমান বাহিনী ঘাঁটি বাশারে আয়োজিত এই জানাজায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস অংশ নেন। জানাজার পূর্বে এই বীর মুক্তিযোদ্ধার সম্মানে একটি সুসজ্জিত ফিউনারেল প্যারেড অনুষ্ঠিত হয় এবং জানাজা শেষে বিমান বাহিনীর একটি ফ্লাই পাস্টের মাধ্যমে তাঁর প্রতি বিশেষ সামরিক সম্মান প্রদর্শন করা হয়।

শ্রদ্ধা নিবেদন পর্বে প্রথমে রাষ্ট্রপতির পক্ষে তাঁর সামরিক সচিব এবং এরপর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মরহুমের কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। একে একে শ্রদ্ধা জানান মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান এবং বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন। এ সময় সরকারের অন্যান্য উপদেষ্টা এবং উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা এই বীর সেনানীর শেষ বিদায়ে উপস্থিত ছিলেন। জানাজার আগে এ কে খন্দকারের ছেলে জাফরুল করিম খন্দকার তাঁর বাবার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন।

উল্লেখ্য, বীর-উত্তম খেতাবপ্রাপ্ত কিংবদন্তি মুক্তিযোদ্ধা এ কে খন্দকার বার্ধক্যজনিত কারণে গতকাল শনিবার সকালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্ব, রণকৌশল এবং সাহসিকতা বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে এক অবিস্মরণীয় ভূমিকা পালন করেছিল। ডেপুটি চিফ অব স্টাফ হিসেবে তিনি মুক্তিবাহিনীর সাংগঠনিক ভিত্তি সুসংহত করতে এবং যুদ্ধজয়ে অনন্য অবদান রাখেন। তাঁর মৃত্যুতে দেশ এক বীর সেনানী এবং জাতির ইতিহাসের এক জীবন্ত কিংবদন্তিকে হারাল।

সুত্রঃ বাসস


সীমান্তে অনুপ্রবেশ: লালমনিরহাটে বিএসএফ সদস্যকে আটক করল বিজিবি

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অনুপ্রবেশের দায়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) এক সদস্যকে আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। আজ রোববার (২১ ডিসেম্বর) ভোর আনুমানিক সাড়ে ৫টার দিকে আঙ্গরপোতা বিওপির আওতাধীন ডাঙ্গাপাড়া এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়। আটক বিএসএফ সদস্যের নাম বেদ প্রকাশ (বডি নম্বর ২১৩৬০০১৭৮)। তিনি পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার-১৭৪ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের অর্জুন ক্যাম্পে কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত।

বিজিবি ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ভোররাতে সীমান্ত পিলার ডিএএমপি ১/৭ এস-এর নিকটবর্তী এলাকা দিয়ে ভারতীয় গরু পাচারকারীদের ধাওয়া করছিল বিএসএফের একটি টহল দল। ধাওয়া করার একপর্যায়ে কনস্টেবল বেদ প্রকাশ জিরো লাইন অতিক্রম করে বাংলাদেশের প্রায় ২০০ গজ ভেতরে ঢুকে পড়েন। সে সময় ওই এলাকায় দায়িত্বরত বিজিবির টহল দল তাকে দেখতে পেয়ে তাৎক্ষণিক আটক করে ক্যাম্পে নিয়ে আসে। তল্লাশি চালিয়ে তার কাছ থেকে একটি শর্টগান, দুই রাউন্ড গুলি, একটি ওয়্যারলেস সেট এবং একটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।

রংপুর-৫১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের পরিচালক লে. কর্নেল সেলিম আল দীন এবং দহগ্রাম ফাঁড়ির ইনচার্জ তাজিরুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে ঘন কুয়াশার কারণে পথ ভুল করে ওই বিএসএফ সদস্য অনিচ্ছাকৃতভাবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়েছিলেন। বিষয়টি জানার পরপরই দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে যোগাযোগ শুরু হয়েছে। আন্তর্জাতিক নিয়ম ও বিদ্যমান প্রটোকল অনুসরণ করে তিনবিঘা করিডোর এলাকায় একটি পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে তাকে বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সীমান্তে সাময়িক উত্তেজনা দেখা দিলেও বর্তমানে পরিস্থিতি বিজিবির নিয়ন্ত্রণে এবং স্বাভাবিক রয়েছে।


তারেক রহমানের ফেরার ফ্লাইট থেকে দুই কেবিন ক্রুকে অব্যাহতি

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

লন্ডনে দীর্ঘ প্রবাস জীবন কাটিয়ে আগামী ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তবে তাঁর ঢাকা ফেরার নির্ধারিত ফ্লাইটের দায়িত্ব থেকে দুইজন কেবিন ক্রুকে সরিয়ে নিয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। মূলত গোয়েন্দা সংস্থার নেতিবাচক প্রতিবেদন এবং ভিআইপি যাত্রীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে বিমান সূত্রে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া ওই দুই কেবিন ক্রুর সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাদের বেশ কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। তাঁদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা এবং সম্ভাব্য নিরাপত্তা ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স তাঁদের পরিবর্তে নতুন দুজনকে ওই ফ্লাইটে দায়িত্ব দিয়েছে। এর আগেও গত মে মাসে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার একটি ফ্লাইটের ক্ষেত্রেও একই ধরনের গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ক্রু পরিবর্তনের ঘটনা ঘটেছিল।

আগামী ২৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি-২০২ ফ্লাইটটি ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করার কথা রয়েছে। এই বিশেষ ফ্লাইটে তারেক রহমানের সঙ্গে তাঁর পরিবারের সদস্য এবং বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতাও সফরসঙ্গী হিসেবে থাকবেন। তাঁর আগমনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রস্তুতির মাঝেই নিরাপত্তাজনিত এই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করল বিমান কর্তৃপক্ষ।


জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট সামনে রেখে তিন বাহিনী প্রধানের সঙ্গে ইসির বৈঠক

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

আগামী ১২ ফেব্রুয়ারির ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং গণভোটকে কেন্দ্র করে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে তিন বাহিনী প্রধানের সঙ্গে বৈঠকে বসেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আজ রোববার (২১ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকটি শুরু হয়। ভোটের তফসিল ঘোষণার পর তিন বাহিনী প্রধানের সঙ্গে এটিই নির্বাচন কমিশনের প্রথম আনুষ্ঠানিক সাক্ষাৎ।

বৈঠকে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান এবং বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান উপস্থিত রয়েছেন। নির্বাচন কমিশনের পক্ষে সিইসির পাশাপাশি চারজন নির্বাচন কমিশনার এবং ইসির সিনিয়র সচিবও এই আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন। তিন বাহিনী প্রধান নির্বাচন ভবনে পৌঁছালে ইসি সচিব তাঁদের আলাদাভাবে অভ্যর্থনা জানান। মূলত নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে এই বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হচ্ছে।

এদিকে, দুপুর ১২টার এই বৈঠকের পর আজ দুপুর আড়াইটায় নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত আরেকটি বড় সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সিইসির সভাপতিত্বে ওই সভায় প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এবং এনএসআই, ডিজিএফআই, বিজিবি, র‍্যাব, কোস্টগার্ড ও আনসারসহ সকল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন। সেখানে নির্বাচনের আগে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, সন্ত্রাসী কার্যক্রম রোধ এবং প্রার্থী ও রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য নির্ধারিত আচরণ বিধিমালা ২০২৫-এর যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করার বিষয়ে কৌশল নির্ধারণ করা হবে।

ইসি সূত্রে জানা গেছে, আজকের এই ধারাবাহিক সভাগুলোর মূল উদ্দেশ্য হলো নির্বাচনের একটি শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ পরিবেশ বজায় রাখা। আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত এই বিশেষ সভা শেষে আজ বিকেলেই গণমাধ্যমকে ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে সভার সিদ্ধান্ত ও গৃহীত পদক্ষেপগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হবে। দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এই জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সশস্ত্র বাহিনী ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বিত এই তৎপরতা রাজনৈতিক অঙ্গনেও বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে।


নিরাপত্তা শঙ্কায় চট্টগ্রামে ভারতীয় ভিসা কেন্দ্রের কার্যক্রম স্থগিত

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রামের ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনে উদ্ভূত নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণে বন্দরনগরীতে অবস্থিত ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্রের (আইভ্যাক) কার্যক্রম আজ রোববার (২১ ডিসেম্বর) থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। বাংলাদেশে অবস্থিত আইভ্যাক তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত চট্টগ্রামের এই কেন্দ্রে ভিসার আবেদন গ্রহণসহ অন্যান্য সব কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।

আইভ্যাক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চট্টগ্রামের বর্তমান পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতি সন্তোষজনক মনে হলে পুনরায় কার্যক্রম চালুর বিষয়ে জানিয়ে দেওয়া হবে। এর আগে গত বুধবার একই ধরনের নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে রাজধানীর যমুনা ফিউচার পার্কে অবস্থিত ভারতীয় ভিসা কেন্দ্রের কার্যক্রম দুপুর থেকে সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছিল। যদিও পরদিন বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ঢাকার সেই কেন্দ্রটি পুনরায় সচল হয়। মূলত সাম্প্রতিক নানা কর্মসূচি ও নিরাপত্তা ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়েই চট্টগ্রামে এই নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। এই স্থগিতাদেশের ফলে চট্টগ্রাম ও পার্শ্ববর্তী এলাকার ভিসা প্রত্যাশীদের পরবর্তী ঘোষণা না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।


ছায়ানটে হামলা ও অগ্নিসংযোগ: ৩৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর ধানমন্ডিতে অবস্থিত বাংলা সংস্কৃতি চর্চার ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানটে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ৩০০ থেকে ৩৫০ জন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ছায়ানটের প্রধান ব্যবস্থাপক দুলাল ঘোষ বাদী হয়ে শনিবার (২০ ডিসেম্বর) রাতে ধানমন্ডি মডেল থানায় এই মামলাটি করেন। ধানমন্ডি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম আজ রোববার মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মামলার এজাহার ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর গত বৃহস্পতিবার রাতে একদল দুর্বৃত্ত ছায়ানট ভবনে ঢুকে তাণ্ডব চালায়। তারা ভবনের সিসি ক্যামেরা ও আসবাবপত্র ভাঙচুরের পাশাপাশি সংগীতচর্চায় ব্যবহৃত মূল্যবান বাদ্যযন্ত্র যেমন—তবলা, হারমোনিয়াম ও বেহালা ভেঙে ফেলে এবং বিভিন্ন কক্ষে আগুন ধরিয়ে দেয়। এই ন্যাক্কারজনক হামলায় প্রতিষ্ঠানের অপূরণীয় ক্ষতি হলেও ক্ষয়ক্ষতির সঠিক আর্থিক পরিমাণ এখনও নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি।

ঘটনার পর অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সারোয়ার ফারুকী ক্ষতিগ্রস্ত ছায়ানট ভবন পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শনকালে তিনি এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান এবং সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে হামলাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার প্রতিশ্রুতি দেন। উল্লেখ্য, শরীফ ওসমান হাদির মৃত্যুর পর একই রাতে ঢাকার তেজগাঁও ও কারওয়ান বাজার এলাকায় ইংরেজি দৈনিক ‘দ্য ডেইলি স্টার’ ও ‘প্রথম আলো’ কার্যালয়েও হামলার ঘটনা ঘটেছিল। ছায়ানট কর্তৃপক্ষ এবং সাংস্কৃতিক কর্মীরা এই হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।


banner close