পরিচালক পদে একটানা বারো বছর থাকার বিধান যুক্ত করে ব্যাংক কোম্পানি আইনের সংশোধনী জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে।
সংসদে পাস হওয়া বিলে খেলাপি ঋণগ্রহীতার ঋণ সুবিধা পাওয়ার বিষয়ে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। অবশ্য এসব সংশোধনী সংসদে উপস্থাপিত বিলে বা স্থায়ী কমিটির প্রতিবেদনে ছিল না।
বিলটি পাসের প্রতিবাদে সংসদ থেকে ওয়াক আউট করেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা।
বুধবার সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ‘ব্যাংক-কোম্পানি (সংশোধন) বিল- ২০২৩’ পাসের প্রস্তাব করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়।
পরিচালক পদের মেয়াদ বাড়ানোর সংশোধনী প্রস্তাবটি যেভাবে আনা হয়েছে তা নিয়ে প্রবল আপত্তি জানান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা। ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা বলেন, ব্যাংক লুটপাটের মূল হোতা পরিচালকেরা। তাদের সুবিধা দেয়ার জন্য আইন সংশোধন করা হচ্ছে। তারচেয়ে পরিচালকদের মেয়াদ আজীবন করে দেয়া হোক।
গত ৮ জুন ব্যাংক কোম্পানি (সংশোধন) বিল–২০২৩ জাতীয় সংসদে তুলেছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সংশোধনীর মূল প্রস্তাবে পরিচালক পদের মেয়াদ বাড়ানো–কমানোর বিষয়ে কোনো প্রস্তাব ছিল না। পরে সেটি পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়েছিল। কমিটিও পরিচালক পদের মেয়াদ নিয়ে কোনো সংশোধনী আনেনি।
সংসদে বিলটি পাসের আগে টাঙ্গাইল-৬ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আহসানুল ইসলাম টিটু পরিচালকদের মেয়াদ বাড়ানো ও খেলাপি ঋণগ্রহীতার ঋণ সুবিধা বিষয়ক সংশোধনী দুটি প্রস্তাব করেন। টিটু পরিচালকদের পদের মেয়াদ বিষয়ক সংশোধনীতে প্রস্তাব করেন- ‘আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইন অথবা কোনো ব্যাংক-কোম্পানির সংঘস্মারক ও সংঘবিধিতে ভিন্নতর যা কিছুই থাকুক না কেন, ব্যাংক কোম্পানি (সংশোধন) আইন, ২০১৮ কার্যকর হবার পর কোনো ব্যক্তি কোনো ব্যাংক কোম্পানির পরিচালক পদে একাদিক্রমে ১২ বছরের অধিক অধিষ্ঠিত থাকতে পারবেন না।’
খেলাপি ঋণগ্রহীতার অনুকূলে ঋণ ছাড় বিষয়ক সংশোধনী প্রস্তাবে তিনি জানান, পরস্পর স্বার্থ সংশ্লিষ্ট গ্রুপভুক্ত কোনো খেলাপি ব্যক্তি বা ক্ষেত্রমত, প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি যদি ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতা না হয় অথবা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে যদি প্রতীয়মান হয় যে, ওই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি কর্তৃক ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হবার ক্ষেত্রে কোনো প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি খেলাপি বলে গণ্য হবে না, এবং এইরূপ প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন সাপেক্ষে তৎকর্তৃক জারিকৃত নির্দেশনা অনুযায়ী ঋণ সুবিধা প্রদান করা যাবে।
টিটুর পরিচালক পদের সংশোধনী প্রস্তাব নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখান জাতীয় পার্টির একাধিক সংসদ সদস্য। বিল পাসের আলোচনায় অংশ নিয়ে তারা প্রশ্ন তোলেন, এভাবে বিলে সংশোধনী আনা যায় কি না। এ বিষয়ে তারা স্পিকারের ব্যাখ্যা দাবি করেন।
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, পরিচালক পদের মেয়াদ ১২ বছর করার জন্য সরকারি দলের একজন সদস্য সংশোধনী প্রস্তাব দিয়েছেন। এটা বিল উত্থাপনের সময় ছিল না। যেহেতু সরকারি দলের সংসদ সদস্য এই প্রস্তাব দিয়েছেন তাই মনে হচ্ছে এটা গ্রহণ করা হবে। যে বিষয়টি সংসদে উত্থাপনই হয়নি সেটা চাওয়া হয় কী করে?
তিনি বলেন, ব্যাংকগুলোতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে। ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর হাত থেকে মুক্ত করতে হবে।
জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘পরিচালকেরা হচ্ছেন ব্যাংক লুটপাটের মূল হোতা। কোনো পরিচালক সুপারিশ না করলে আমার মতো লোক গেলে ব্যাংকঋণ পাবে না।'
জাতীয় পার্টির মহাসচিব চুন্নু বলেন, ‘যে আইনের কোনো ধারা অর্থমন্ত্রী সংশোধনীতে আনেননি, যে ধারা সংশোধনের জন্য সংসদীয় কমিটি কোনো সুপারিশ করেনি, সেখানে একজন সরকারি দলের সদস্য কোন আইনে এই সংশোধনী আনলেন? তিনি এটা পারেন কি না? এটা জানা খুবই দরকার। অভিভাবক হিসেবে স্পিকার এটা বলবেন বলে আশা করি।’
মুজিবুল হক বলেন, ‘মনে হচ্ছে অর্থমন্ত্রীকে কনভিন্স করে সরকারি দল করেন, এমন অনেক ব্যাংকের পরিচালকদের সুপারিশে এটা আনা হয়েছে পাস করার জন্য। সেটা হলে আমরা আমাদের সব সংশোধনী প্রত্যাহার করলাম। কারণ, এর চেয়ে বড় অন্যায় আর হতে পারে না। যেখানে ব্যাংক লুটপাট করা হচ্ছে, বিদেশে টাকা পাচার হচ্ছে, আর বাংলাদেশ ব্যাংক বসে বসে তামাক খায়। ব্যাংকের চেয়ারম্যান-পরিচালক হাজার কোটি টাকা নিয়ে বিদেশে চলে যান। আপনারা দেখছেন না। আপনারা আছেন কাউকে ফেবার (সুবিধা দেয়া) করার জন্য। পরিচালকের মেয়াদ ১২ বছর করার এই প্রস্তাবকে আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানাই।’
জাতীয় পার্টির আরেক সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, এই আইনে সংশোধন আনা হচ্ছে শুধু ব্যাংকমালিকদের সুবিধা দেয়ার জন্য। বেসরকারি ব্যাংকগুলো এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপর খবরদারি করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর কে হবেন, ডেপুটি গভর্নর কে হবেন—এগুলো তারা নির্ধারণ করে দেয়। ব্যাংকমালিকদের কাছে সরকার জিম্মি হয়ে গেছে।
ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক কারা—এই প্রশ্ন রেখে কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘আমরা তার লিস্ট চাই। আমরা এই ভাগ্যবানদের সংসদে দেখতে চাই। সব দলীয় কর্মী ও আত্মীয়স্বজনকে স্বতন্ত্র পরিচালক করা হয়। তাঁরা ব্যাংকে যায় শুধু লোন দেওয়ার জন্য। ১০ কোটি টাকা ঋণ দিয়ে দুই কোটি নিজে নিয়ে নিলেন। এক দিনে ধনী হয়ে গেলেন। যেন আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ। এখানে লুটপাট চলছে। আমরা কমানোর প্রস্তাব করছি না। এদের মেয়াদ আজীবন করে দেন। আমি এখন প্রস্তাব আনলাম। এই পরিচালকেরা আজীবন থাকবেন। আল্লাহ যত দিন হায়াত রাখছেন, আপনারা খাইতে থাকেন। আমরা দেখতে থাকি।’
প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে ব্যাংকমালিকদের অনুদান দেয়ার প্রতি ইঙ্গিত করে কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, তারা পত্রিকার প্রথম ও শেষ পাতায় বড় বড় ছবি দিয়ে বিজ্ঞাপন দেন প্রধানমন্ত্রীর হাতে টাকা (চেক) দিচ্ছেন। আরও এক বস্তা (টাকা) খালেদা জিয়ার হাতে দেন। সেটা প্রকাশ করেন না। এদের চরিত্র একই। সাবধান হতে হবে, তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে সরকারের প্রতি দাবি জানান তিনি।
কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ব্যাংকমালিকদের সুবিধা দেয়ার জন্য আইনটি আনা হয়েছে। তারা জনগণের টাকার অপব্যবহার করেন। সর্দিকাশি হলেই তারা ব্যাংকের টাকায় সিঙ্গাপুর চলে যান।
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান বলেন, সরকার তাদের প্রিয় পরিচালকদের কীভাবে পদে রাখবে, সেটা ভুলে গিয়েছিল। এ কারণে পরবর্তী সময়ে এই সংশোধনী আনা হয়েছে। যে প্রক্রিয়ায় আইনে সংশোধনী আনা হচ্ছে, তা সঠিক প্রক্রিয়া নয়।
বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের সমালোচনার জবাবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, খেলাপি ঋণ ১৪ বছরে ১৩ দশমিক ২ শতাংশ থেকে ৮ দশমিক ৬ শতাংশে নেমেছে। সরকারি ব্যাংকের শাখা দ্বিগুণ বেড়েছে। ব্যাংকের আমানত ৭ গুণ বেড়েছে। বছরওয়ারি মুনাফা বেড়েছে ৮ গুণ। তিনি আশা করেন, তাঁর এই বক্তব্যে ভুল–বোঝাবুঝির কিছুটা অবসান হবে।
সংসদ সদস্য আহসানুল ইসলাম তার সংশোধনী প্রস্তাব তুলতে গেলে জাপার সংসদ সদস্যরা হইচই শুরু করেন। তখন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, আগে সংসদ সদস্যকে সংশোধনী প্রস্তাব তুলতে দিন। এরপর বিষয়টির ব্যাখ্যা দেয়া হবে।
আহসানুল ইসলাম সংশোধনী প্রস্তাব তোলার পর স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী সংসদের কার্যপ্রনালি বিধির সংশ্লিষ্ট বিধি উল্লেখ করে বলেন, মূল সংশোধনীতে বিলের ১০ দফায় সংশোধনীর প্রস্তাব ছিল। আর আহসানুল ইসলাম যে সংশোধনী প্রস্তাব এনেছেন, সেটিও এই দফার একটি উপদফা। এখানে বিলে কোনো নতুন ধারা যুক্ত করা হয়নি বা এমন কোনো নতুন দফাও যুক্ত করা হয়নি। এটি অপ্রাসঙ্গিক নয়।
স্পিকারের বক্তব্যের পর বিরোধী দলের সদস্য ফখরুল ইমাম কথা বলতে চাইলে স্পিকার মাইক না দিয়ে বলেন, ‘মাননীয় সংসদ সদস্য, এটা আমার রুলিং। এ বিষয়ে আর আপনার কিছু বলার নেই।’
ফখরুল ইমাম এ সময় আবারও হাত তুললেও তাকে ফ্লোর দেয়া হয়নি। রুলিংয়ের পর অর্থমন্ত্রীকে ফ্লোর দেন স্পিকার। এ সময় মাইক ছাড়াই বিরোধী দলের সদস্যরা হট্টগোল, হইচই করতে থাকেন। পরে স্পিকার অর্থমন্ত্রীকে থামিয়ে দিয়ে বিরোধী দলের সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমরা বিধির বাইরে কিছু করব না।’
তখনো বিরোধী দলের সদস্যরা হইচই, হট্টগোল করতে থাকেন। তাদের হইচইয়ের মধ্যেই ফ্লোর নিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, তিনি আহসানুল ইসলামের সংশোধনী প্রস্তাব গ্রহণ করছেন।
এটি বলার সঙ্গে সঙ্গে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা হইচই ও চিৎকার করে প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেন। মাইক ছাড়াই কথা বলতে থাকেন মুজিবুল হক। কাজী ফিরোজ রশীদও দাঁড়িয়ে কথা বলতে শুরু করেন। একপর্যায়ে ফিরোজ রশীদকে মাইক দেয়া হয়। তিনি অর্থমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, ‘আমরা যে আজীবনের কথা বললাম, আপনি কি সেটা গ্রহণ করলেন? এই একজন পরিচালক আমৃত্যু থাকবেন, সেটা গ্রহণ করছেন? না ১২ বছর করছেন? কোনটা, সেটা আমাদের স্পষ্ট বলতে হবে।’
মুজিবুল হকও একই ধরনের বক্তব্য দেন। এ সময় বিরোধী দলের সদস্যরা হইচই করতে থাকলে কিছু সময়ের জন্য সংসদে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়।
পরে স্পিকার অর্থমন্ত্রীকে আবারও মাইক দেন। তবে তিনি কথা বলেননি। একপর্যায় স্পিকার সংশোধনী ভোটে দেন। দফাভিত্তিক সব সংশোধনী ভোটে দেয়া হয়। এ সময় জাতীয় পার্টির সদস্যরা হইচই করে ওয়াকআউট করে সংসদ কক্ষ থেকে বেরিয়ে যান।
অবশ্য কিছু সময় পর জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা আবার সংসদের অধিবেশন কক্ষে ফিরে আসেন।
পাস হওয়া বিলে হয়েছে, কোনো ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে একটি একক পরিবারের সদস্যের বাইরে তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বা নিয়ন্ত্রণাধীন সর্বোচ্চ দু’টি প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির পক্ষে প্রতিনিধি পরিচালক থাকতে পারবে। তবে কোনো ব্যাংকের পর্ষদে কোনো প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির পক্ষে একজনের অধিক ব্যক্তি প্রতিনিধি পরিচালক নিযুক্ত হতে পারবে না।
বিলে বলা হয়েছে, কোনো ব্যাংকের পর্ষদে প্রাকৃতিক ব্যক্তিসত্ত্বা বিশিষ্ট ব্যক্তি শেয়ারহোল্ডারের পক্ষে অপর কোনো ব্যক্তি প্রতিনিধি পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত হতে পারবে না। অর্থাৎ, কোনো ব্যক্তি ব্যাংকের শেয়ারের মালিক হলে তার প্রতিনিধি হিসেবে অন্য কোনো ব্যক্তিকে পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়া যাবে না।
বিদ্যমান আইনে কোনো ব্যাংক পরিচালক একইসময়ে অন্য কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক থাকতে পারবেন না। তবে এই আইন কার্যকর হবার পর সর্বোচ্চ দুই মেয়াদে বিমা কোম্পানির পরিচালক হওয়ার সুযোগ রয়েছে। যদিও ২০১০ সালে প্রণীত বিমা আইন অনুযায়ী কোনো বীমা কোম্পানির পরিচালক ব্যাংক কোম্পানির পরিচালক হতে পারেন না। সংশোধনী বিলে কোনো ব্যাংক পরিচালকের একইসঙ্গে বিমা কোম্পানির পরিচালক পদে থাকার সুযোগ বাতিল করা হয়েছে।
এছাড়া, কোনো পরিচালক ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি কোম্পানির পরিচালক হতে পারবেন কি না, সে বিষয়ে বিদ্যমান আইনে কিছু বলা নেই। কিন্তু একজন পরিচালক আরও কোন কোন কোম্পানিতে পরিচালক থাকতে পারবেন না বলে বিলে বলা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি ব্যাংকের পরিচালক হলে একই সময়ে তিনি অন্য কোনো ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিমা কোম্পানি বা এসব কোম্পানির কোনো সাবসিডিয়ারি কোম্পানির পরিচালক থাকতে পারবেন না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বিবেচনায় এমন কোনো কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান যা ওই ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা বিমা কোম্পানির উপর নিয়ন্ত্রণ বা যৌথ নিয়ন্ত্রণ বা প্রভাব বিস্তার করে- এমন কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক থাকবে না বলেও বিলে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিদ্যমান আইনে বিকল্প পরিচালক নিয়োগের সুযোগ থাকলেও তার মেয়াদকাল এবং বিকল্প পরিচালকদের যোগ্যতা সম্পর্কে কিছু বলা নেই। নতুন আইনে এসব বিষয় সুনির্দিষ্ট করা হচ্ছে।
খসড়া আইনে বলা হয়েছে, কোনো পরিচালক কমপক্ষে নিরবচ্ছিন্নভাবে তিন মাস বিদেশে অবস্থান করলে তার অনুপস্থিতির কারণে পর্ষদ চাইলে মূল পরিচালকের বিপরীতে বছরে সর্বোচ্চ একবার একজন বিকল্প পরিচালক নিযুক্ত করতে পারবে। পরিচালক নিয়োগের যেসব শর্ত রয়েছে, সেগুলো বিকল্প পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।
খসড়া আইনে বলা হয়েছে, কোনো ব্যাংক-কোম্পানির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনার স্বার্থে উহার পর্ষদ এবং পর্ষদ কমিটিগুলোর কর্মপরিধি বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক সময় সময় নির্দেশনা জারি করতে পারবে।
নতুন আইনে ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি কোম্পানিগুলোর উপর বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা পাবে। এতে নতুন ধারা যোগ করে বলা হয়েছে, যে উদ্দেশ্যেই ব্যাংক কোনো সাবসিডিয়ারি কোম্পানি গঠন করুক না কেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত হার বা পরিমাণের বেশি সাবসিডিয়ারি কোম্পানির মূলধন হিসেবে বিনিয়োগ করতে পারবে না।
নতুন আইনের আওতায় সাবসিডিয়ারি কোম্পানির পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার যোগ্যতা ও উপযুক্ততার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক সার্কুলার জারি করবে।
ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিদেশ যাওয়া, বাড়ি-গাড়ি ও কোম্পানি নিবন্ধনে নিষেধাজ্ঞা আরোপসহ তাদের রাজনৈতিক দলের কমিটিতে না রাখার বিধান রেখে ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ অধিকতর সংশোধন করতে একটি বিল সংশোধন আনা হয়েছে। এই বিলে এক পরিবার থেকে তিন জনের বেশি ব্যাংক পরিচালক হওয়া যাবে না এরকম বিধান রয়েছে।
সংসদে পাস হওয়া বিলে বলা হয়েছে, ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতা শনাক্ত ও চূড়ান্ত করার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো দুটি পৃথক কমিটি গঠন করবে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সময়ে সময়ে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপির তালিকা বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠাবে।
তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার পর ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান চাইলে ৩০ দিনের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকে আপিল করতে পারবে এবং এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে। এছাড়া ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা, ট্রেড লাইসেন্স ইস্যুতে নিষেধাজ্ঞাসহ বেশকিছু ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দেবার সুযোগ রাখা হয়েছে।
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ড মেনে এই ঘটনার দ্রুত, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের জবাবদিহি নিশ্চিত করার জন্য তিনি বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) নিউইয়র্কে নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক মহাসচিবের এই বার্তা গণমাধ্যমে তুলে ধরেন। তিনি জানান, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জাতিসংঘ মহাসচিব বাংলাদেশের সব পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। একইসঙ্গে সহিংসতা থেকে বিরত থেকে উত্তেজনা প্রশমন এবং দেশে শান্তিপূর্ণ নির্বাচনী পরিবেশ বজায় রাখার ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।
এদিকে, হাদি হত্যাকাণ্ডে গভীর উদ্বেগ ও শোক প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক। গত ১২ ডিসেম্বর গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর হাদির মৃত্যুর ঘটনায় তিনি জেনেভা থেকে এক বিবৃতিতে সতর্ক করে বলেন, প্রতিশোধ ও প্রতিহিংসা কেবল সমাজের বিভাজনকেই আরও গভীর করবে এবং সবার অধিকার ক্ষুণ্ন করবে। তিনি এই হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ীদের অবিলম্বে আইনের আওতায় আনার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও জুলাই যদ্ধা শরিফ ওসমান হাদির দাফন সম্পন্ন হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধির পাশে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়েছে। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে তিনটার দিকে তার দাফন কাজ সম্পন্ন হয়। দাফন শেষে বিকেল ৪টার দিকে কবরের পাশে সংক্ষিপ্ত স্মৃতিচারণ ও মোনাজাত পরিচালনা করেন মরহুমের বড় ভাই ড. মাওলানা আবু বকর সিদ্দিক।
এর আগে বেলা ৩টার দিকে হাদির মরদেহ বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স জাতীয় সংসদ ভবন এলাকা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে পৌঁছায়। সেখানে এক শোকাবহ পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
শনিবার দুপুর আড়াইটার পর জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় লাখো মানুষের অংশগ্রহণে ওসমান হাদির জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় ইমামতি করেন তার বড় ভাই। জানাজায় অংশ নিতে সকাল থেকেই মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ ও এর আশপাশের এলাকায় মানুষের ঢল নামে। ‘আমরা সবাই হাদি হবো, যুগে যুগে লড়ে যাবো’, ‘হাদি ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেব না’—এমন স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। জানাজা উপলক্ষে সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব ও আনসার সদস্যদের সমন্বয়ে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল।
জানাজায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যবৃন্দ, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। জানাজার আগে ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব জাবের ও ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বক্তব্য রাখেন।
জানাজার আগে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার বক্তব্যে বলেন, প্রিয় ওসমান হাদি, তোমাকে আমরা বিদায় দিতে আসিনি। তুমি আমাদের বুকের ভেতরে আছো এবং বাংলাদেশ যতদিন থাকবে, ততদিন তুমি সব বাংলাদেশির বুকে থাকবে। হাদির নির্বাচনী আকাঙ্ক্ষার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ওসমান হাদি নির্বাচনে অংশ নিতে চেয়েছিল এবং দেখিয়ে দিয়ে গেছে কীভাবে বিনয়ের সঙ্গে মানুষের কাছে গিয়ে প্রচারণা চালাতে হয়। তার সেই শিক্ষা আমরা গ্রহণ করলাম। তিনি আরও বলেন, হাদি কোথাও হারিয়ে যাবে না। তাকে আমরা আল্লাহর কাছে আমানত রাখলাম এবং তার আদর্শ ধারণ করে জাতির অগ্রগতির পথে এগিয়ে যাব।
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ শরিফ ওসমান হাদির জানাজায় অংশ নিয়ে আবেগঘন শ্রদ্ধা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, হাদি কখনো হারিয়ে যাবে না, তাকে কেউ ভুলতে পারবে না। সে যুগ যুগ ধরে আমাদের সঙ্গেই থাকবে। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত জানাজায় তিনি এসব কথা বলেন।
বিদায়ী এই বীর যোদ্ধার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, প্রিয় হাদি, তোমাকে আজ বিদায় দিতে আসিনি। তুমি আমাদের বুকের ভেতর আছো এবং বাংলাদেশ যতদিন আছে, ততদিন তুমি সকল বাংলাদেশির হৃদয়ে থাকবে। হাদির ‘বল বীর- চির উন্নত মম শির’ মন্ত্রকে ধারণ করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে ড. ইউনূস বলেন, হাদি আমাদের কানে এমন এক মন্ত্র দিয়ে গেছে যা কেউ কখনো ভুলতে পারবে না। আমরা দুনিয়ার সামনে মাথা উঁচু করে চলবো, কারও কাছে মাথা নত করবো না।
শরিফ ওসমান হাদির নির্বাচনী প্রচারণার ধরণ ও বিনয়ের প্রশংসা করে প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, হাদি নির্বাচনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে দেখিয়ে দিয়ে গেছে কীভাবে বিনীতভাবে মানুষের কাছে যেতে হয় এবং প্রচারণা চালাতে হয়। তার এই শিক্ষা ও আদর্শ জাতীয় রাজনীতিতে কাজে লাগানোর আহ্বান জানান তিনি। তিনি হাদির বিদেহী আত্মাকে আল্লাহর কাছে আমানত হিসেবে সঁপে দিয়ে বলেন, আমরা সবসময় তোমার কথা স্মরণ রেখে জাতির অগ্রগতির পথে চলতে থাকবো।
উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন ঢাকার পুরানা পল্টনে দুর্বৃত্তদের গুলিতে গুরুতর আহত হন শরিফ ওসমান হাদি। প্রথমে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে ১৫ ডিসেম্বর তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়, সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধিসৌধের পাশেই শহীদ শরীফ ওসমান হাদির দাফনের জন্য কবর প্রস্তুত করা হয়েছে। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে কবর খোঁড়ার কাজ সম্পন্ন হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমেদ জানিয়েছেন, জাতীয় কবির কবরের দক্ষিণ দিকে ওসমান হাদিকে সমাহিত করা হবে। মসজিদের দেয়াল ঘেঁষে দ্বিতীয় স্লটের পূর্ব পাশে তার কবরের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে।
কবর প্রস্তুত কার্যক্রম পরিদর্শন ও তদারকির সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমেদসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
লাখো মানুষের অংশগ্রহণে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ শরীফ ওসমান হাদির জানাজা সম্পন্ন হয়েছে। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুর আড়াইটায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় এই জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় ইমামতি করেন মরহুমের বড় ভাই ড. মাওলানা আবু বকর সিদ্দিক।
এই জানাজায় অংশ নেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। এছাড়া বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা এবং সর্বস্তরের জনগণ জানাজায় শরিক হন। জানাজাকে কেন্দ্র করে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজা ও মানিক মিয়া এভিনিউ এলাকায় মানুষের ঢল নামে। খামারবাড়ি থেকে আসাদ গেট পর্যন্ত পুরো এলাকাটি কার্যত জনসমুদ্রে পরিণত হয়।
উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর দুপুরে দুর্বৃত্তদের গুলিতে গুরুতর আহত হন ওসমান হাদি। প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার অস্ত্রোপচার হয় এবং পরে পরিবারের ইচ্ছায় তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় গত ১৫ ডিসেম্বর উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাকে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
ওসমান হাদির মৃত্যুতে শনিবার দেশজুড়ে একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালন করা হচ্ছে। শোক পালনের অংশ হিসেবে দেশের সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছে।
সুদানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন ঘাঁটিতে সন্ত্রাসীদের ড্রোন হামলায় নিহত ছয় বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীর মরদেহ দেশে পৌঁছেছে। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) বেলা ১১টা ৫ মিনিটে নিহতদের মরদেহ বহনকারী ফ্লাইটটি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক এস এম রাগিব সামাদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে গত ১৩ ডিসেম্বর সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের আওতাধীন কাদুগলি লজিস্টিকস বেইসে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠী বর্বরোচিত ড্রোন হামলা চালায়। এতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ছয় সদস্য নিহত হন এবং আহত হন আরও ৯ জন।
নিহত বীর শান্তিরক্ষীরা হলেন– নাটোরের করপোরাল মো. মাসুদ রানা, কুড়িগ্রামের সৈনিক মো. মমিনুল ইসলাম ও সৈনিক শান্ত মন্ডল, রাজবাড়ীর সৈনিক শামীম রেজা, কিশোরগঞ্জের মেস ওয়েটার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম এবং গাইবান্ধার লন্ড্রি কর্মচারী মো. সবুজ মিয়া।
হামলায় আহত শান্তিরক্ষীদের বর্তমানে কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবির আগা খান ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাদের মধ্যে কয়েকজন চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল ছেড়েছেন এবং বাকিরাও শঙ্কামুক্ত রয়েছেন বলে জানা গেছে। আহতদের মধ্যে তিনজন নারী সদস্যও রয়েছেন।
উল্লেখ্য, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের অবদান বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত। সুদানের সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যদের পেশাদারিত্ব, সাহস ও এই সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, মুক্তিবাহিনীর ডেপুটি চিফ অব স্টাফ এবং স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এ কে খন্দকার, বীর উত্তমের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শনিবার এক শোকবার্তায় তিনি এই বীর মুক্তিযোদ্ধার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।
শোকবার্তায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এ কে খন্দকার ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক অবিস্মরণীয় সৈনিক। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতা, দূরদর্শিতা ও নেতৃত্বগুণ দিয়ে তিনি দেশের স্বাধীনতা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিবাহিনীর ডেপুটি চিফ অব স্টাফ হিসেবে তার কৌশলগত সিদ্ধান্ত ও সাংগঠনিক দক্ষতা স্বাধীনতা সংগ্রামকে আরও সুসংহত করেছিল। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী গঠনেও তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন এবং দেশের প্রথম বিমান বাহিনী প্রধান হিসেবে এই বাহিনীকে একটি সুসংগঠিত ও কার্যকর প্রতিষ্ঠানে রূপ দিতে অসামান্য অবদান রাখেন।
এ কে খন্দকারের সততা ও সাহসিকতার প্রশংসা করে ড. ইউনূস উল্লেখ করেন, রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তিনি দেশের স্বাধীনতার ইতিহাস নিয়ে গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। তবে পতিত ফ্যাসিবাদী শাসনামলে সেই গ্রন্থের কারণে তিনি ব্যাপক রোষানলে পড়েন। প্রধান উপদেষ্টা মন্তব্য করেন, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরাই ছিল সেই শাসনের দৃষ্টিতে তার অপরাধ।
প্রধান উপদেষ্টা এ কে খন্দকারকে একজন দৃঢ়চেতা মুক্তিযোদ্ধা ও আদর্শনিষ্ঠ দেশপ্রেমিক হিসেবে অভিহিত করে বলেন, তার কর্ম ও চিন্তা নতুন প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। এই বীর সন্তানের মৃত্যুতে দেশ তার এক শ্রেষ্ঠ সন্তানকে হারালো। শোকবার্তায় তিনি মরহুমের শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজন, আত্মীয়স্বজন ও সহযোদ্ধাদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
জুলাই যোদ্ধা ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির দাফনকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশের কবরস্থান এলাকায় নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুরে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জানাজা শেষে মরদেহ দাফনের জন্য এই স্থানে নিয়ে আসার কথা রয়েছে। এ উপলক্ষে কবরস্থানের ভেতরে ও বাইরের এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, দাফনের জন্য কবর খোঁড়াসহ আনুষঙ্গিক সব প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। যেকোনো ধরণের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে কবরস্থানের মূল ফটক এবং আশপাশের এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি সদস্যদেরও সারিবদ্ধভাবে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলমসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সশরীরে উপস্থিত থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা তদারকি করছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্রে জানা গেছে, জানাজা ও দাফন ঘিরে প্রচুর জনসমাগমের সম্ভাবনা থাকায় সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে এবং পরিস্থিতি বিবেচনায় অতিরিক্ত ফোর্স প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে। তার জানাজায় অংশ নিতে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সাধারণ মানুষের ঢল নেমেছে।
উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর দুপুরে ঢাকা-৮ আসনে নির্বাচনী প্রচারণা শেষে ফেরার পথে দুর্বৃত্তদের গুলিতে গুরুতর আহত হন স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদি। প্রথমে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে গত ১৫ ডিসেম্বর উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুর জেনারেল হসপিটালে স্থানান্তর করা হয়, সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধের ডেপুটি চিফ অব স্টাফ (উপ-সর্বাধিনায়ক) এবং সাবেক বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এ কে খন্দকার, বীর উত্তম ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না-লিল্লাহ ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।
এ কে খন্দকারের জন্ম ১৯৩০ সালের ১ জানুয়ারি। বাবার তৎকালীন কর্মস্থলের সুবাদে রংপুরে তার জন্ম হলেও তার পৈত্রিক নিবাস পাবনা জেলার বেড়া উপজেলার ভারেঙ্গা গ্রামে। তার বাবা খন্দকার আব্দুল লতিফ ব্রিটিশ আমলের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন এবং মা আরেফা খাতুন ছিলেন একজন আদর্শ গৃহিণী। চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে এ কে খন্দকার ছিলেন তৃতীয়। বাবার চাকরির সুবাদে বগুড়া করোনেশন স্কুলে তার শিক্ষাজীবন শুরু হয়। পরবর্তীতে ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় তিনি মালদা জেলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন।
বর্ণাঢ্য সামরিক জীবনের অধিকারী এ কে খন্দকার ১৯৫২ সালের সেপ্টেম্বরে পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে (পিএএফ) পাইলট অফিসার হিসেবে কমিশন লাভ করেন। ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত তিনি ফাইটার পাইলট হিসেবে কাজ করেন এবং পরবর্তীতে ফ্লাইং ইন্সট্রাক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বিভিন্ন সময়ে তিনি ফ্লাইট কমান্ডার, জেট ফাইটার কনভারশন স্কোয়াড্রনের স্কোয়াড্রন কমান্ডার এবং পিএএফ একাডেমির ট্রেনিং উইং-এর অফিসার কমান্ডিং হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৯ সালে তিনি ঢাকায় পাকিস্তান বিমান বাহিনী ঘাঁটির সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে দায়িত্ব পান।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেন এবং ডেপুটি চিফ অফ স্টাফের গুরুদায়িত্ব গ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর তৎকালীন অন্তর্বতীকালীন সরকার তাকে গ্রুপ ক্যাপ্টেন হিসেবে পদোন্নতি দেয়। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম এ জি ওসমানীর ব্যক্তিগত ডেপুটি ইন চার্জ বা উপ-প্রধান সেনাপতি হিসেবে যুদ্ধের ময়দানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদির জানাজায় অংশ নিতে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন জড়ো হতে শুরু করেছে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে। ছোটবড় মিছিল নিয়ে শত শত মানুষ সংসদ ভবন এলাকায় আসছেন।
শনিবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ‘হাদি মরল কেন’, ‘ইউনূস সরকার বিচার চাই’, ‘আমার ভাই, আমার ভাই-হাদি ভাই, হাদি ভাই’, ‘নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবর’, ‘হাদি ভাইয়ের হত্যার বিচার চাই’, ‘বিচার চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দিতে সেখানে জড়ো হচ্ছে জনতা।
কুমিল্লা থেকে হাদির জানাজায় অংশ নিতে এসেছেন মশিউর রহমান নামের এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক। তিনি বলেন, আমরা এমন একটি সমাজ চাই যেখানে কোনো অন্যায় বরদাশত করা হবে না। হাদির জানাজায় অংশ নেওয়া আমার জীবনের বেদনাদায়ক ঘটনাগুলোর একটি। তিনি মারা গেলেও বিপ্লবী কণ্ঠস্বরের মধ্য দিয়ে বিপ্লবী তরুণদের হৃদয়ে যুগ যুগ ধরে বেঁচে থাকবেন।
দুপুরে ২টায় ওসমান হাদির জানাজা পড়াবেন তার বড় ভাই আবু বকর সিদ্দিক। এরপর জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবরের পাশে তার দাফন হবে।
হাদির জানাজা ঘিরে জাতীয় সংসদ ভবনসহ রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে, নেওয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। পুলিশ, বিজিবি, র্যাব মোতায়েন করা হয়েছে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ এবং আশেপাশে এলাকাজুড়ে। সেনাবাহিনীর সদস্যদের টহল দিতে দেখা গেছে।
এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপকমিশনার তালেবুর রহমান বলেন, সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে এক হাজার বডি-ওর্ন ক্যামেরাসহ পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করেছে ডিএমপি।
বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফুল ইসলাম জানান, সার্বিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জাতীয় সংসদ ভবন ও রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় বডি-ওর্ন ক্যামেরা ও রায়োট কন্ট্রোল গিয়ারসহ ২০ প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করা হয়েছে।
এ ছাড়া জানাজায় যারা অংশগ্রহণ করবেন, তাদের কোনো ধরনের ব্যাগ বা ভারি বস্তু বহন না করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর। পাশাপাশি জানাজা চলাকালে সংসদ ভবন এলাকায় ও আশপাশে ড্রোন ওড়ানো কঠোরভাবে নিষিদ্ধ থাকবে বলেও জানানো হয়েছে।
ইনকিলাব মঞ্চ এক ফেইসবুক পোস্টে লিখেছে, পরিবারের দাবির ভিত্তিতে তাদের সংগঠনের আহ্বায়ককে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের পাশে সমাহিত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
হাদির মৃত্যুর ঘটনায় আজ জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখাসহ নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রীয় শোক পালিত হচ্ছে।
গত ১২ ডিসেম্বর দুপুর সোয়া ২টার দিকে রাজধানীর বিজয়নগর পানির ট্যাংকির সামনে রিকশায় করে যাওয়ার সময় ওসমান হাদির উপর আক্রমণ হয়। ওই সময় মোটরসাইকেলে করে এসে দুজন তাকে খুব কাছ থেকে গুলি করে পালিয়ে যায়।
পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় দ্রুত তাকে ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। একপর্যায়ে পরিবারের ইচ্ছায় তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এরপর সেখানে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) তার চিকিৎসা চলে।
পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য সোমবার এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে হাদিকে সিঙ্গাপুর নিয়ে যাওয়া হয়েছিল; সেখানেই বৃহস্পতিবার তার মৃত্যু হয়।সূত্র : ইউএনবি
আজ বেলা দুইটায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় শহীদ ওসমান হাদির নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, শহীদ ওসমান হাদির নামাজে জানাজায় অংশগ্রহণে আগ্রহীদের কোনো প্রকার ব্যাগ বা ভারী বস্তু বহন না করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে এসময় সংসদ ভবন ও এর আশপাশের এলাকায় ড্রোন ওড়ানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি হত্যার প্রতিবাদ ও বিচার দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে বিক্ষোভ সমাবেশ করে ছাত্র ও সর্বস্তরের জনতা।
শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) ভোর থেকেই শাহবাগ এলাকায় মানুষ জড়ো হতে শুরু করে। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। দুপুরের দিকে সেখানে ছাত্র-জনতার ঢল নামে।
বিক্ষোভের মধ্যেই মুসল্লিদের শাহবাগ মোড়ে জুমার নামাজ আদায় করতে দেখা যায়। নামাজ শেষে মোড়ের নাম পরিবর্তন করে ‘শহীদ ওসমান হাদি চত্বর’ ঘোষণা করা হয়। আন্দোলনের কারণে শাহবাগ মোড়ে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকে।
এদিন বিকেল ৩টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহ-সভাপতি (ভিপি) সাদিক কায়েমের ঘোষণায় শাহবাগে শুরু হয় আধিপত্যবাদবিরোধী সমাবেশ। মৎস্য ভবনমুখী সড়কে ডাকসু সদস্যরা একটি ট্রাকের ওপর অবস্থান নিয়ে নানা প্রতিবাদী স্লোগান দেন। পাশাপাশি জুলাই ভাস্কর্যের পাদদেশে জুলাই আন্দোলনে অংশ নেওয়া বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের সদস্যদেরও বিশাল অবস্থান নিতে দেখা গেছে। এসময় আন্দোলনকারীদের ‘আর নয় প্রতিরোধ, এবার হবে প্রতিশোধ’, ‘এক হাদি লোকান্তরে, লক্ষ হাদি ঘরে ঘরে’, ‘এক হাদি লোকান্তরে, লক্ষ হাদি লড়াই করে’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।
সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মী এবং সাধারণ মানুষ অংশ নিয়েছেন। তারা হাদি হত্যার বিচার এবং ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের আহ্বান জানান।
বিক্ষোভকারীদের দাবির মধ্যে রয়েছে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ। তারা ঘোষণা দিয়েছেন, ওসমান হাদির লাশ ঢাকায় পৌঁছানো পর্যন্ত তারা শাহবাগ মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন।
এর আগে জুমার নামাজের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে শহীদ হাদির রুহের মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। দোয়া শেষে শিক্ষার্থীরা মিছিল সহকারে শাহবাগে এসে সমাবেশে যোগ দেন।
গত ১২ ডিসেম্বর রিকশা আরোহী হাদি মোটরসাইকেলে থাকা দুর্বৃত্তদের গুলিতে আহত হন। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে ওই দিন রাতেই তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে ১৫ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুর পাঠানো হয়। গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার পর সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পরপরই সর্বস্তরের ছাত্র-জনতা শাহবাগে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে।
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির জানাজা নামাজের যে সময় নির্ধারণ করা হয়েছিল, তাতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুর আড়াইটার পরিবর্তে আধাঘন্টা এগিয়ে এনে দুপুর দুইটায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে অনুষ্ঠিত হবে।
শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রেস উইং থেকে বলা হয়, ‘আগামীকাল (শনিবার, ২০ ডিসেম্বর) দুপুর দুইটায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় শহীদ ওসমান হাদির জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
ওসমান হাদির জানাজায় অংশগ্রহণের জন্য বেশ কিছু শর্তও জুড়ে দিয়েছে সরকার। যারা জানাজায় অংশগ্রহণ করবে তারা কোনো ধরনের ভারী ব্যাগ বা ভারী বস্তু বহন না করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এছাড়া, জানাজার সময় সংসদ ভবন ও এর আশপাশের এলাকায় ড্রোন ওড়ানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করেছে সরকার।
উল্লেখ্য, শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা পৌঁনে ছয়টায় ঢাকায় পৌঁছে ওসমান হাদির মরদেহ। বিমানবন্দর থেকে মরদেহ হিমাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। শনিবার জানাজা শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কবি কাজী নজরুল ইসলামের পাশে সমাহিত করা হবে বলে জানিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ।