মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫
১৪ পৌষ ১৪৩২

ব্যাংক পরিচালকদের মেয়াদ বাড়ল, জাপার হইচই, ওয়াকআউট, স্পিকারের রুলিং

আপডেটেড
২২ জুন, ২০২৩ ০০:৩০
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা
প্রকাশিত
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা
প্রকাশিত : ২১ জুন, ২০২৩ ২২:২০

পরিচালক পদে একটানা বারো বছর থাকার বিধান যুক্ত করে ব্যাংক কোম্পানি আইনের সংশোধনী জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে।

সংসদে পাস হওয়া বিলে খেলাপি ঋণগ্রহীতার ঋণ সুবিধা পাওয়ার বিষয়ে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। অবশ্য এসব সংশোধনী সংসদে উপস্থাপিত বিলে বা স্থায়ী কমিটির প্রতিবেদনে ছিল না।

বিলটি পাসের প্রতিবাদে সংসদ থেকে ওয়াক আউট করেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা।

বুধবার সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ‘ব্যাংক-কোম্পানি (সংশোধন) বিল- ২০২৩’ পাসের প্রস্তাব করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়।

পরিচালক পদের মেয়াদ বাড়ানোর সংশোধনী প্রস্তাবটি যেভাবে আনা হয়েছে তা নিয়ে প্রবল আপত্তি জানান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা। ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা বলেন, ব্যাংক লুটপাটের মূল হোতা পরিচালকেরা। তাদের সুবিধা দেয়ার জন্য আইন সংশোধন করা হচ্ছে। তারচেয়ে পরিচালকদের মেয়াদ আজীবন করে দেয়া হোক।

গত ৮ জুন ব্যাংক কোম্পানি (সংশোধন) বিল–২০২৩ জাতীয় সংসদে তুলেছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সংশোধনীর মূল প্রস্তাবে পরিচালক পদের মেয়াদ বাড়ানো–কমানোর বিষয়ে কোনো প্রস্তাব ছিল না। পরে সেটি পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়েছিল। কমিটিও পরিচালক পদের মেয়াদ নিয়ে কোনো সংশোধনী আনেনি।

সংসদে বিলটি পাসের আগে টাঙ্গাইল-৬ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আহসানুল ইসলাম টিটু পরিচালকদের মেয়াদ বাড়ানো ও খেলাপি ঋণগ্রহীতার ঋণ সুবিধা বিষয়ক সংশোধনী দুটি প্রস্তাব করেন। টিটু পরিচালকদের পদের মেয়াদ বিষয়ক সংশোধনীতে প্রস্তাব করেন- ‘আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইন অথবা কোনো ব্যাংক-কোম্পানির সংঘস্মারক ও সংঘবিধিতে ভিন্নতর যা কিছুই থাকুক না কেন, ব্যাংক কোম্পানি (সংশোধন) আইন, ২০১৮ কার্যকর হবার পর কোনো ব্যক্তি কোনো ব্যাংক কোম্পানির পরিচালক পদে একাদিক্রমে ১২ বছরের অধিক অধিষ্ঠিত থাকতে পারবেন না।’

খেলাপি ঋণগ্রহীতার অনুকূলে ঋণ ছাড় বিষয়ক সংশোধনী প্রস্তাবে তিনি জানান, পরস্পর স্বার্থ সংশ্লিষ্ট গ্রুপভুক্ত কোনো খেলাপি ব্যক্তি বা ক্ষেত্রমত, প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি যদি ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতা না হয় অথবা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে যদি প্রতীয়মান হয় যে, ওই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি কর্তৃক ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হবার ক্ষেত্রে কোনো প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি খেলাপি বলে গণ্য হবে না, এবং এইরূপ প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন সাপেক্ষে তৎকর্তৃক জারিকৃত নির্দেশনা অনুযায়ী ঋণ সুবিধা প্রদান করা যাবে।

টিটুর পরিচালক পদের সংশোধনী প্রস্তাব নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখান জাতীয় পার্টির একাধিক সংসদ সদস্য। বিল পাসের আলোচনায় অংশ নিয়ে তারা প্রশ্ন তোলেন, এভাবে বিলে সংশোধনী আনা যায় কি না। এ বিষয়ে তারা স্পিকারের ব্যাখ্যা দাবি করেন।

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, পরিচালক পদের মেয়াদ ১২ বছর করার জন্য সরকারি দলের একজন সদস্য সংশোধনী প্রস্তাব দিয়েছেন। এটা বিল উত্থাপনের সময় ছিল না। যেহেতু সরকারি দলের সংসদ সদস্য এই প্রস্তাব দিয়েছেন তাই মনে হচ্ছে এটা গ্রহণ করা হবে। যে বিষয়টি সংসদে উত্থাপনই হয়নি সেটা চাওয়া হয় কী করে?

তিনি বলেন, ব্যাংকগুলোতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে। ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর হাত থেকে মুক্ত করতে হবে।

জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘পরিচালকেরা হচ্ছেন ব্যাংক লুটপাটের মূল হোতা। কোনো পরিচালক সুপারিশ না করলে আমার মতো লোক গেলে ব্যাংকঋণ পাবে না।'

জাতীয় পার্টির মহাসচিব চুন্নু বলেন, ‘যে আইনের কোনো ধারা অর্থমন্ত্রী সংশোধনীতে আনেননি, যে ধারা সংশোধনের জন্য সংসদীয় কমিটি কোনো সুপারিশ করেনি, সেখানে একজন সরকারি দলের সদস্য কোন আইনে এই সংশোধনী আনলেন? তিনি এটা পারেন কি না? এটা জানা খুবই দরকার। অভিভাবক হিসেবে স্পিকার এটা বলবেন বলে আশা করি।’

মুজিবুল হক বলেন, ‘মনে হচ্ছে অর্থমন্ত্রীকে কনভিন্স করে সরকারি দল করেন, এমন অনেক ব্যাংকের পরিচালকদের সুপারিশে এটা আনা হয়েছে পাস করার জন্য। সেটা হলে আমরা আমাদের সব সংশোধনী প্রত্যাহার করলাম। কারণ, এর চেয়ে বড় অন্যায় আর হতে পারে না। যেখানে ব্যাংক লুটপাট করা হচ্ছে, বিদেশে টাকা পাচার হচ্ছে, আর বাংলাদেশ ব্যাংক বসে বসে তামাক খায়। ব্যাংকের চেয়ারম্যান-পরিচালক হাজার কোটি টাকা নিয়ে বিদেশে চলে যান। আপনারা দেখছেন না। আপনারা আছেন কাউকে ফেবার (সুবিধা দেয়া) করার জন্য। পরিচালকের মেয়াদ ১২ বছর করার এই প্রস্তাবকে আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানাই।’

জাতীয় পার্টির আরেক সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, এই আইনে সংশোধন আনা হচ্ছে শুধু ব্যাংকমালিকদের সুবিধা দেয়ার জন্য। বেসরকারি ব্যাংকগুলো এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপর খবরদারি করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর কে হবেন, ডেপুটি গভর্নর কে হবেন—এগুলো তারা নির্ধারণ করে দেয়। ব্যাংকমালিকদের কাছে সরকার জিম্মি হয়ে গেছে।

ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক কারা—এই প্রশ্ন রেখে কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘আমরা তার লিস্ট চাই। আমরা এই ভাগ্যবানদের সংসদে দেখতে চাই। সব দলীয় কর্মী ও আত্মীয়স্বজনকে স্বতন্ত্র পরিচালক করা হয়। তাঁরা ব্যাংকে যায় শুধু লোন দেওয়ার জন্য। ১০ কোটি টাকা ঋণ দিয়ে দুই কোটি নিজে নিয়ে নিলেন। এক দিনে ধনী হয়ে গেলেন। যেন আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ। এখানে লুটপাট চলছে। আমরা কমানোর প্রস্তাব করছি না। এদের মেয়াদ আজীবন করে দেন। আমি এখন প্রস্তাব আনলাম। এই পরিচালকেরা আজীবন থাকবেন। আল্লাহ যত দিন হায়াত রাখছেন, আপনারা খাইতে থাকেন। আমরা দেখতে থাকি।’

প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে ব্যাংকমালিকদের অনুদান দেয়ার প্রতি ইঙ্গিত করে কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, তারা পত্রিকার প্রথম ও শেষ পাতায় বড় বড় ছবি দিয়ে বিজ্ঞাপন দেন প্রধানমন্ত্রীর হাতে টাকা (চেক) দিচ্ছেন। আরও এক বস্তা (টাকা) খালেদা জিয়ার হাতে দেন। সেটা প্রকাশ করেন না। এদের চরিত্র একই। সাবধান হতে হবে, তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে সরকারের প্রতি দাবি জানান তিনি।

কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ব্যাংকমালিকদের সুবিধা দেয়ার জন্য আইনটি আনা হয়েছে। তারা জনগণের টাকার অপব্যবহার করেন। সর্দিকাশি হলেই তারা ব্যাংকের টাকায় সিঙ্গাপুর চলে যান।

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান বলেন, সরকার তাদের প্রিয় পরিচালকদের কীভাবে পদে রাখবে, সেটা ভুলে গিয়েছিল। এ কারণে পরবর্তী সময়ে এই সংশোধনী আনা হয়েছে। যে প্রক্রিয়ায় আইনে সংশোধনী আনা হচ্ছে, তা সঠিক প্রক্রিয়া নয়।

বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের সমালোচনার জবাবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, খেলাপি ঋণ ১৪ বছরে ১৩ দশমিক ২ শতাংশ থেকে ৮ দশমিক ৬ শতাংশে নেমেছে। সরকারি ব্যাংকের শাখা দ্বিগুণ বেড়েছে। ব্যাংকের আমানত ৭ গুণ বেড়েছে। বছরওয়ারি মুনাফা বেড়েছে ৮ গুণ। তিনি আশা করেন, তাঁর এই বক্তব্যে ভুল–বোঝাবুঝির কিছুটা অবসান হবে।

সংসদ সদস্য আহসানুল ইসলাম তার সংশোধনী প্রস্তাব তুলতে গেলে জাপার সংসদ সদস্যরা হইচই শুরু করেন। তখন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, আগে সংসদ সদস্যকে সংশোধনী প্রস্তাব তুলতে দিন। এরপর বিষয়টির ব্যাখ্যা দেয়া হবে।

আহসানুল ইসলাম সংশোধনী প্রস্তাব তোলার পর স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী সংসদের কার্যপ্রনালি বিধির সংশ্লিষ্ট বিধি উল্লেখ করে বলেন, মূল সংশোধনীতে বিলের ১০ দফায় সংশোধনীর প্রস্তাব ছিল। আর আহসানুল ইসলাম যে সংশোধনী প্রস্তাব এনেছেন, সেটিও এই দফার একটি উপদফা। এখানে বিলে কোনো নতুন ধারা যুক্ত করা হয়নি বা এমন কোনো নতুন দফাও যুক্ত করা হয়নি। এটি অপ্রাসঙ্গিক নয়।

স্পিকারের বক্তব্যের পর বিরোধী দলের সদস্য ফখরুল ইমাম কথা বলতে চাইলে স্পিকার মাইক না দিয়ে বলেন, ‘মাননীয় সংসদ সদস্য, এটা আমার রুলিং। এ বিষয়ে আর আপনার কিছু বলার নেই।’

ফখরুল ইমাম এ সময় আবারও হাত তুললেও তাকে ফ্লোর দেয়া হয়নি। রুলিংয়ের পর অর্থমন্ত্রীকে ফ্লোর দেন স্পিকার। এ সময় মাইক ছাড়াই বিরোধী দলের সদস্যরা হট্টগোল, হইচই করতে থাকেন। পরে স্পিকার অর্থমন্ত্রীকে থামিয়ে দিয়ে বিরোধী দলের সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমরা বিধির বাইরে কিছু করব না।’

তখনো বিরোধী দলের সদস্যরা হইচই, হট্টগোল করতে থাকেন। তাদের হইচইয়ের মধ্যেই ফ্লোর নিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, তিনি আহসানুল ইসলামের সংশোধনী প্রস্তাব গ্রহণ করছেন।

এটি বলার সঙ্গে সঙ্গে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা হইচই ও চিৎকার করে প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেন। মাইক ছাড়াই কথা বলতে থাকেন মুজিবুল হক। কাজী ফিরোজ রশীদও দাঁড়িয়ে কথা বলতে শুরু করেন। একপর্যায়ে ফিরোজ রশীদকে মাইক দেয়া হয়। তিনি অর্থমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, ‘আমরা যে আজীবনের কথা বললাম, আপনি কি সেটা গ্রহণ করলেন? এই একজন পরিচালক আমৃত্যু থাকবেন, সেটা গ্রহণ করছেন? না ১২ বছর করছেন? কোনটা, সেটা আমাদের স্পষ্ট বলতে হবে।’

মুজিবুল হকও একই ধরনের বক্তব্য দেন। এ সময় বিরোধী দলের সদস্যরা হইচই করতে থাকলে কিছু সময়ের জন্য সংসদে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়।

পরে স্পিকার অর্থমন্ত্রীকে আবারও মাইক দেন। তবে তিনি কথা বলেননি। একপর্যায় স্পিকার সংশোধনী ভোটে দেন। দফাভিত্তিক সব সংশোধনী ভোটে দেয়া হয়। এ সময় জাতীয় পার্টির সদস্যরা হইচই করে ওয়াকআউট করে সংসদ কক্ষ থেকে বেরিয়ে যান।

অবশ্য কিছু সময় পর জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা আবার সংসদের অধিবেশন কক্ষে ফিরে আসেন।

পাস হওয়া বিলে হয়েছে, কোনো ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে একটি একক পরিবারের সদস্যের বাইরে তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বা নিয়ন্ত্রণাধীন সর্বোচ্চ দু’টি প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির পক্ষে প্রতিনিধি পরিচালক থাকতে পারবে। তবে কোনো ব্যাংকের পর্ষদে কোনো প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির পক্ষে একজনের অধিক ব্যক্তি প্রতিনিধি পরিচালক নিযুক্ত হতে পারবে না।

বিলে বলা হয়েছে, কোনো ব্যাংকের পর্ষদে প্রাকৃতিক ব্যক্তিসত্ত্বা বিশিষ্ট ব্যক্তি শেয়ারহোল্ডারের পক্ষে অপর কোনো ব্যক্তি প্রতিনিধি পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত হতে পারবে না। অর্থাৎ, কোনো ব্যক্তি ব্যাংকের শেয়ারের মালিক হলে তার প্রতিনিধি হিসেবে অন্য কোনো ব্যক্তিকে পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়া যাবে না।

বিদ্যমান আইনে কোনো ব্যাংক পরিচালক একইসময়ে অন্য কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক থাকতে পারবেন না। তবে এই আইন কার্যকর হবার পর সর্বোচ্চ দুই মেয়াদে বিমা কোম্পানির পরিচালক হওয়ার সুযোগ রয়েছে। যদিও ২০১০ সালে প্রণীত বিমা আইন অনুযায়ী কোনো বীমা কোম্পানির পরিচালক ব্যাংক কোম্পানির পরিচালক হতে পারেন না। সংশোধনী বিলে কোনো ব্যাংক পরিচালকের একইসঙ্গে বিমা কোম্পানির পরিচালক পদে থাকার সুযোগ বাতিল করা হয়েছে।

এছাড়া, কোনো পরিচালক ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি কোম্পানির পরিচালক হতে পারবেন কি না, সে বিষয়ে বিদ্যমান আইনে কিছু বলা নেই। কিন্তু একজন পরিচালক আরও কোন কোন কোম্পানিতে পরিচালক থাকতে পারবেন না বলে বিলে বলা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি ব্যাংকের পরিচালক হলে একই সময়ে তিনি অন্য কোনো ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিমা কোম্পানি বা এসব কোম্পানির কোনো সাবসিডিয়ারি কোম্পানির পরিচালক থাকতে পারবেন না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের বিবেচনায় এমন কোনো কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান যা ওই ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা বিমা কোম্পানির উপর নিয়ন্ত্রণ বা যৌথ নিয়ন্ত্রণ বা প্রভাব বিস্তার করে- এমন কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক থাকবে না বলেও বিলে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিদ্যমান আইনে বিকল্প পরিচালক নিয়োগের সুযোগ থাকলেও তার মেয়াদকাল এবং বিকল্প পরিচালকদের যোগ্যতা সম্পর্কে কিছু বলা নেই। নতুন আইনে এসব বিষয় সুনির্দিষ্ট করা হচ্ছে।

খসড়া আইনে বলা হয়েছে, কোনো পরিচালক কমপক্ষে নিরবচ্ছিন্নভাবে তিন মাস বিদেশে অবস্থান করলে তার অনুপস্থিতির কারণে পর্ষদ চাইলে মূল পরিচালকের বিপরীতে বছরে সর্বোচ্চ একবার একজন বিকল্প পরিচালক নিযুক্ত করতে পারবে। পরিচালক নিয়োগের যেসব শর্ত রয়েছে, সেগুলো বিকল্প পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।

খসড়া আইনে বলা হয়েছে, কোনো ব্যাংক-কোম্পানির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনার স্বার্থে উহার পর্ষদ এবং পর্ষদ কমিটিগুলোর কর্মপরিধি বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক সময় সময় নির্দেশনা জারি করতে পারবে।

নতুন আইনে ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি কোম্পানিগুলোর উপর বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা পাবে। এতে নতুন ধারা যোগ করে বলা হয়েছে, যে উদ্দেশ্যেই ব্যাংক কোনো সাবসিডিয়ারি কোম্পানি গঠন করুক না কেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত হার বা পরিমাণের বেশি সাবসিডিয়ারি কোম্পানির মূলধন হিসেবে বিনিয়োগ করতে পারবে না।

নতুন আইনের আওতায় সাবসিডিয়ারি কোম্পানির পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার যোগ্যতা ও উপযুক্ততার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক সার্কুলার জারি করবে।

ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিদেশ যাওয়া, বাড়ি-গাড়ি ও কোম্পানি নিবন্ধনে নিষেধাজ্ঞা আরোপসহ তাদের রাজনৈতিক দলের কমিটিতে না রাখার বিধান রেখে ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ অধিকতর সংশোধন করতে একটি বিল সংশোধন আনা হয়েছে। এই বিলে এক পরিবার থেকে তিন জনের বেশি ব্যাংক পরিচালক হওয়া যাবে না এরকম বিধান রয়েছে।

সংসদে পাস হওয়া বিলে বলা হয়েছে, ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতা শনাক্ত ও চূড়ান্ত করার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো দুটি পৃথক কমিটি গঠন করবে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সময়ে সময়ে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপির তালিকা বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠাবে।

তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার পর ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান চাইলে ৩০ দিনের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকে আপিল করতে পারবে এবং এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে। এছাড়া ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা, ট্রেড লাইসেন্স ইস্যুতে নিষেধাজ্ঞাসহ বেশকিছু ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দেবার সুযোগ রাখা হয়েছে।

বিষয়:

জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত : প্রধান উপদেষ্টা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, সংসদ নির্বাচন ও গণভোট সফলভাবে আয়োজনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত। নির্বাচনকে সামনে রেখে কেউ শান্তি বিঘ্নিত করার চেষ্টা করলে তা কঠোরভাবে মোকাবিলা করা হবে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিদায়ী সাক্ষাৎকালে এ কথা বলেন ড. ইউনূস।

সাক্ষাতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট, বাণিজ্য, বেসামরিক বিমান চলাচল, অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া শ্রম সংস্কার এবং দুই দেশের সামগ্রিক দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা হয়।

বাংলাদেশে এক বছরের দায়িত্বপূর্ণ মেয়াদ শেষে দেশে ফেরার প্রাক্কালে ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন গত ১৭ মাসে প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বের প্রশংসা করেন। তিনি ফেব্রুয়ারির নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন।

এসময় প্রধান উপদেষ্টা অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে সরকারের অঙ্গীকারের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট সফলভাবে সম্পন্ন করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত।

অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া সংস্কার উদ্যোগের প্রশংসা করে মার্কিন চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স বিশেষভাবে নতুন শ্রম আইনকে ‘অসাধারণ ও ব্যতিক্রমধর্মী’ বলে উল্লেখ করেন। তার মতে, এসব সংস্কার বাংলাদেশে আরও বেশি বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে সহায়ক হবে। তিনি আগের সরকারগুলোর আমলে শ্রমিক নেতাদের বিরুদ্ধে করা ৪৬টি মামলার মধ্যে ৪৫টি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তেরও প্রশংসা করেন।

জবাবে প্রধান উপদেষ্টা নতুন শ্রম অধ্যাদেশকে ‘একটি উৎকৃষ্ট আইন’ হিসেবে উল্লেখ করে জানান, দেশের শীর্ষ স্থানীয় শ্রমিক নেতারা এ সংস্কারকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) কনভেনশন অনুসমর্থনের বিষয়টিও ইতিবাচকভাবে দেখছেন।

সাক্ষাতে রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তার অর্থায়ন নিয়েও আলোচনা হয়। প্রধান উপদেষ্টা রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে ধন্যবাদ জানান।

ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্ব এলাকায় আশ্রয় শিবিরগুলোতে বসবাসরত এক মিলিয়নের বেশি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গার জন্য জীবনরক্ষাকারী মানবিক সহায়তায় যুক্তরাষ্ট্র এককভাবে সবচেয়ে বড় দাতা। ভবিষ্যতেও এই সহায়তা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

বিদায়ী সাক্ষাতে এক বছরের দায়িত্বকালে ‘গুরুত্বপূর্ণ কাজ’ করার জন্য ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসনকে ধন্যবাদ জানান প্রধান উপদেষ্টা। তিনি তাকে বাংলাদেশের ‘বন্ধু’ হিসেবে উল্লেখ করে ভবিষ্যতে আবার বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।

সাক্ষাতে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান এবং এসডিজিবিষয়ক সিনিয়র সচিব লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন।


দেশ গড়তে নিজ অবস্থান থেকে উদ্যোগী হোন

* দোতলায় বেলকনিতে দাঁড়িয়ে শুভেচ্ছা জানালেন নেতাকর্মীদের * বর্ণিল সাজে সজ্জিত কার্যালয়, হাজার হাজার নেতাকর্মীর প্রাণচাঞ্চল্য
আপডেটেড ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ০০:০৬
নিজস্ব প্রতিবেদক

দীর্ঘ দেড় যুগ পর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপির) নয়াপল্টন কার্যালয়ে এলেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) বিকাল ৩টা ৩৫মিনিটে তিনি রাজধানীর নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এসে পৌঁছান। তারেক রহমানের আগমনকে কেন্দ্র করে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে দলীয় কার্যালয়। দলটির হাজার হাজার নেতাকর্মী সকাল থেকেই নয়াপল্টন এলাকায় জড়ো হন। তাদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা ও প্রাণচাঞ্চল্য দেখা যায়। তিনি দোতলায় বেলকনিতে দাঁড়িয়ে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে নেতা-কর্মী-সমর্থকদের উদেশে বলেন, বাংলাদেশকে নতুন করে গড়ে তুলতে নিজ নিজ অবস্থান থেকে উদ্যোগী হোন। আমাদের যার যতটুকু অবস্থান আছে, সেখান থেকে আসুন- আমরা আমাদের দেশটাকে নতুন গড়ে তোলার চেষ্টা করি। যার পক্ষে যতটুকু সম্ভব আমরা সচেষ্ট হই। কোথাও যদি রাস্তায় এমনি কাগজ পড়ে থাকে, ময়লা হয়ে থাকে তখনই সেটাকে আমরা সরিয়ে দেব। এভাবে ছোট ছোট কাজ করার মাধ্যমে দেশটাকে গড়ে তুলি।

নেতা-কর্মীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেন, এখন সবাইকে অনুরোধ করব, দ্রুত রাস্তাটাকে খালি করে দিন, যাতে সাধারণ মানুষ চলাফেরা করতে পারে। সকলে ভালো থাকবেন। আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্য দোয়া করবেন।

তারেক রহমান বলেন, আজকে এখানে আমাদের কোনো অনুষ্ঠান নেই। আমরা যদি এই রাস্তটা বন্ধ করে রাখি তাহলে সাধারণ মানুষের চলাচলের অসুবিধা হবে। যেহেতু কোনো অনুষ্ঠান নেই। সেজন্য যত দ্রুত সম্ভব আমরা যেন এখান থেকে চলে যাই। ইনশাআল্লাহ কর্মসূচি যখন নেবো তখন আপনাদের সামনে বক্তব্য রাখবো। সকলে দোয়া করবেন।

বিকাল ৪টা ৫মিনিটি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসেন। ব্যাপক মানুষের ভিড় ডিঙিয়ে তারেক রহমান গাড়ি কার্যালয়ের সামনে আনতে নিরাপত্তা কর্মীদের বেগ পেতে হয়। বিকাল ৩টার দিকে গুলশানের বাসায় থেকে বের হয় তারেক রহমানের গাড়িবহন। নয়াপল্টন সড়কে হাজার হাজার নেতা-কর্মীর উপস্থিতি তার গাড়িবহর ধীর গতিতে এগুয়ে যায়।

উল্লেখ্য, দীর্ঘ প্রবাস জীবন কাটিয়ে দেশে ফেরার পর গত রোববার প্রথম গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বসে দাপ্তরিক কাজ সেরেছিলেন তারেক রহমান। আর সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) তিনি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে সাংগঠনিক কাজে অংশ নেন। তারেক রহমানের আগমন উপলক্ষে তাকে স্বাগত জানাতে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে কয়েক হাজার নেতাকর্মী অবস্থান নেয়।

এসময় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ছিলেন বিএনপির উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, ফরহাদ হালিম ডোনার, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, কোষাধ্যক্ষ রশিদুজ্জামান মিল্লাত, আমরা বিএনপি পরিবারের আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমন, নির্বাহী কমিটির সদস্য শাহরিন ইসলাম তুহিন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্যসচিব তানভীর আহমেদ রবিনসহ আরও নেতারা।


মনোনয়নপত্র জমার সময় আর বাড়ছে না: নির্বাচন কমিশন

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট উপলক্ষে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের নির্ধারিত সময় আর বাড়ছে না বলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আজ সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) বিকেল ৫টায় মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আনুষ্ঠানিক সময়সীমা শেষ হওয়ার পর কমিশন এই অবস্থানের কথা স্পষ্ট করে। এর ফলে আগে ঘোষিত নির্বাচনী তফশিল অনুযায়ীই পরবর্তী সকল কার্যক্রম পরিচালিত হবে।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ জানান যে, নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী আজই ছিল মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন এবং এই সময়সীমা বাড়ানোর কোনো অবকাশ নেই। তফশিল অনুযায়ী আজ সকাল থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সারাদেশের আঞ্চলিক ও জেলা নির্বাচন কার্যালয়গুলোতে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছে প্রার্থীরা তাঁদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। শেষ দিনে দেশের বিভিন্ন আসনে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মনোনীত প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ব্যাপক ভিড় এবং উৎসবমুখর পরিবেশ লক্ষ করা গেছে।

সারাদেশে আজ দিনভর মোট কতজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিলেন, সে সম্পর্কে জানতে চাইলে ইসি সচিব বলেন যে বর্তমানে সারাদেশ থেকে তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। জেলা ও অঞ্চলভিত্তিক এই বিশাল তথ্যভাণ্ডার সংকলন করতে কিছুটা সময়ের প্রয়োজন। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে আজ রাত ১০টার মধ্যে দেশজুড়ে কতজন প্রার্থী চূড়ান্তভাবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন, তার একটি সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান কমিশন গণমাধ্যমকে জানাতে পারবে।

ঘোষিত নির্বাচনি সময়সূচি অনুযায়ী, আজ সংগৃহীত এসব মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের কাজ আগামীকাল ৩০ ডিসেম্বর থেকে শুরু হবে এবং তা চলবে ২০২৬ সালের ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত। এরপর পর্যায়ক্রমে রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের, আপিল নিষ্পত্তি এবং প্রার্থিতা প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষে আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে একযোগে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। মূলত একটি সুশৃঙ্খল নির্বাচনী পরিবেশ বজায় রাখতেই কমিশন তফশিলের ওপর অনড় থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।


ওসমান হাদির খুনিদের ধরিয়ে দিতে শিখ সংগঠনের ৫৫ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ শরীফ ওসমান হাদির হত্যাকারীদের শনাক্ত ও গ্রেফতারে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য প্রদানের জন্য ৫৫ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক শিখ সংগঠন ‘শিখস ফর জাস্টিস’ (এসএফজে)। আজ সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক বিবৃতিতে সংগঠনটি এই বড় অঙ্কের পুরস্কারের কথা জানায়। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাম্প্রতিক বক্তব্যের প্রেক্ষাপটে, যেখানে বলা হয়েছে যে হাদি হত্যাকাণ্ডের মূল অভিযুক্তরা সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে পালিয়ে গেছে, এই পুরস্কার ঘোষণা করল সংগঠনটি।

এসএফজে-এর বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, হাদির খুনিদের বর্তমান অবস্থান জানানো, তাঁদের গ্রেপ্তার নিশ্চিত করা অথবা তাঁদেরকে প্রত্যর্পণের ক্ষেত্রে সহায়ক যেকোনো তথ্যের জন্য এই পুরস্কার দেওয়া হবে। সংগঠনটির জেনারেল কাউন্সেল গুরপতবন্ত সিং পান্নুন এই হত্যাকাণ্ডের জন্য সরাসরি ভারতের মোদী সরকারকে অভিযুক্ত করেছেন। তাঁর দাবি, এই হত্যাকাণ্ডটি ভারতীয় সীমান্ত পেরিয়ে পরিচালিত একটি সুপরিকল্পিত সন্ত্রাসী কার্যক্রমের অংশ। তিনি এই ঘটনার সাথে কানাডায় শিখ নেতা হারদীপ সিং নিজ্জর হত্যাকাণ্ডের ধরনের মিল রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন।

সংগঠনটি জানিয়েছে, এই পুরস্কার ঘোষণার মূল উদ্দেশ্য হলো অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতা নিশ্চিত করা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তা করা। তবে শিখ সংগঠনের এই গুরুতর অভিযোগ ও পুরস্কার ঘোষণার বিষয়ে এখন পর্যন্ত ভারত সরকার বা ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য বা প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর পল্টনে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর ১৮ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম সংগঠক শরীফ ওসমান হাদি। এই হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে। ওদিকে পুলিশি তদন্তে ফয়সালসহ মূল আসামিদের অবস্থান নিয়ে নানা তথ্য উঠে এলেও শেষ পর্যন্ত তাঁদের ভারতে পলায়নের বিষয়টিই এখন প্রধান আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।


রণবীর-আলিয়া জুটির হ্যাটট্রিক: এবার জম্বি থ্রিলারে চমক দেবেন এই তারকা যুগল

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বিনোদন ডেস্ক

বলিউডের বর্তমান সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় ও সফল জুটি রণবীর সিং এবং আলিয়া ভাট আবারও বড় পর্দায় এক হতে চলেছেন। ‘গল্লি বয়’ এবং ‘রকি অউর রানি কি প্রেম কাহানি’-র আকাশছোঁয়া সাফল্যের পর এই তারকা যুগল এবার সম্পূর্ণ ভিন্ন ও রোমাঞ্চকর এক ঘরানার সিনেমায় অভিনয় করতে যাচ্ছেন বলে বি-টাউনে জোর গুঞ্জন শুরু হয়েছে। জম্বি থ্রিলার ঘরানার এই সিনেমাটির নাম রাখা হয়েছে ‘প্রলয়’, যা পরিচালনা করবেন নির্মাতা জয় মেহতা। যদিও দুই তারকার পক্ষ থেকে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি, তবে ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর অনুযায়ী তাঁদের আবারও এক পর্দায় দেখার সম্ভাবনা এখন প্রবল।

সূত্র মারফত জানা গেছে, ‘প্রলয়’ সিনেমার গল্পটি একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত ও বিপর্যয়গ্রস্ত সমাজের প্রেক্ষাপটে তৈরি হবে, যেখানে জম্বিদের আক্রমণ এবং বেঁচে থাকার লড়াইকে ফুটিয়ে তোলা হবে। এই ছবিতে আলিয়া ভাটের চরিত্রটি হবে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ এবং আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। প্রথাগত প্রেমিকার চরিত্রের বাইরে বেরিয়ে এখানে তাঁকে এক বিধ্বংসী ও লড়াকু অবতারে আবিষ্কার করবেন দর্শকরা। সিনেমার মূল প্লটে হিংসা, সংঘাত আর প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের এক বিভীষিকাময় রূপ চিত্রায়িত হওয়ার কথা রয়েছে।

সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ২০২৬ সালের আগস্ট মাস থেকে এই বড় বাজেটের সিনেমার শুটিং শুরু হবে। আসন্ন নতুন বছরের জানুয়ারি মাসেই ছবির প্রি-প্রোডাকশন এবং অন্যান্য কারিগরি দিক নিয়ে চূড়ান্ত আলোচনায় বসবেন পরিচালক। রণবীর ও আলিয়ার মধ্যেকার অনস্ক্রিন রসায়ন বরাবরই দর্শকদের মুগ্ধ করেছে, তাই তৃতীয়বারের মতো তাঁদের এই জোটবদ্ধ হওয়া এবং বিশেষ করে জম্বি থ্রিলারের মতো নতুন ঘরানায় তাঁদের পদার্পণ বলিউড প্রেমীদের মাঝে এক নতুন উদ্দীপনার সৃষ্টি করেছে। সিনেমাপ্রেমীরা এখন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন এই ‘প্রলয়’ জুটির আনুষ্ঠানিক ঘোষণার জন্য।


১২ ফেব্রুয়ারি উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন হবে: রংপুরে ধর্ম উপদেষ্টা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি দেশে একটি উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন যে, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সম্পূর্ণ বদ্ধপরিকর এবং এই লক্ষ্যে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকল পর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। আজ সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) দুপুরে রংপুর জেলা প্রশাসনের হলরুমে আয়োজিত একটি কর্মশালার উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।

নির্বাচন পরবর্তী ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়ে সরকারের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, জাতি এখন পুরোপুরি নির্বাচনের আমেজে প্রবেশ করেছে। জনগণের সরাসরি ভোটে যারা ম্যান্ডেট বা জনসমর্থন পেয়ে বিজয়ী হবেন, তাঁদের হাতেই অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে। এটি সরকারের একটি দৃঢ় অঙ্গীকার। তিনি আরও বলেন, দায়িত্ব পালন শেষে তাঁরা পুনরায় তাঁদের পূর্বের ঠিকানায় ফিরে যাবেন এবং এই লক্ষ্যেই তাঁরা কাজ করে যাচ্ছেন। নির্বাচনকে কোনোভাবেই প্রশ্নবিদ্ধ হতে দেওয়া হবে না এবং মাঠ প্রশাসনকে সর্বোচ্চ সতর্ক থেকে যেকোনো ধরনের পক্ষপাতিত্ব বা অনিয়ম কঠোর হাতে দমনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ময়মনসিংহে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া দীপু হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে গভীর দুঃখ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে ড. খালিদ হোসেন বলেন, এটি একটি অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। তিনি একে ‘মব জাস্টিস’ বা গণপিটুনির একটি জঘন্য উদাহরণ হিসেবে অভিহিত করে বলেন, কোনো অবস্থাতেই কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারে না। ধর্ম অবমাননার মতো কোনো অভিযোগ থাকলে দেশে প্রচলিত আইনের মাধ্যমে তার বিচার হবে, কিন্তু পিটিয়ে হত্যা কিংবা পুড়িয়ে মারা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, যারা এই হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত কিংবা ইন্ধন দিয়েছে, তাদের প্রত্যেককে দ্রুততম সময়ের মধ্যে আইনের আওতায় আনা হবে। ধর্ম শান্তি ও মানবতার কথা বলে এবং ধর্মের দোহাই দিয়ে সহিংসতা চালানো প্রকৃত শিক্ষার পরিপন্থী বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

নৈতিক শিক্ষা ও মানবিক মূল্যবোধের গুরুত্ব তুলে ধরে উপদেষ্টা বলেন, মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম একটি সুশৃঙ্খল ও নৈতিকতাসম্পন্ন প্রজন্ম গড়ে তুলতে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তরুণ প্রজন্মের মাঝে মানবিক গুণাবলি বিকশিত করা এখন সময়ের দাবি। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান তপন চন্দ্র মজুমদার উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়াও ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এবং স্থানীয় প্রশাসনের প্রতিনিধিরা এই কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন। অংশগ্রহণকারীরা সামাজিক সহিংসতা রোধ এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার শপথ গ্রহণের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি টানেন। মূলত একটি সুষ্ঠু নির্বাচন এবং সুন্দর সমাজ বিনির্মাণের লক্ষ্যে সরকারের অবিচল অবস্থানের কথাই আজ উপদেষ্টার বক্তব্যে ফুটে উঠেছে।


নির্বাচন নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই, সীমান্তে সর্বোচ্চ সতর্কতার নির্দেশ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানিয়েছেন যে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কোনো ধরনের শঙ্কার অবকাশ নেই এবং সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে একটি সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আজ সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর পিলখানায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদর দপ্তরে ‘বিজিবি দিবস-২০২৫’ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।

বিজিবি সদস্যদের প্রতি কঠোর নির্দেশনা দিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, দেশের কোনো অপরাধী বা সন্ত্রাসী যেন কোনোভাবেই সীমান্ত পেরিয়ে বিদেশে পালিয়ে যেতে না পারে, সে বিষয়ে বিজিবিকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে থাকতে হবে। তিনি সীমান্ত দিয়ে অস্ত্র, মাদক ও সব ধরনের চোরাচালান বন্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণের নির্দেশ দেন এবং সতর্ক করে দেন যে, কোনো বিজিবি কর্মকর্তা যদি চোরাকারবারিদের সহায়তা করেন, তবে তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নির্বাচনের আগে অবৈধ অস্ত্রের অনুপ্রবেশ রোধে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিজিবি ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষায় সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে বলে তিনি আশ্বস্ত করেন।

সাম্প্রতিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, কেরানীগঞ্জের মাদ্রাসায় বোমা বিস্ফোরণের মূল হোতা এখনো পলাতক থাকলেও তাঁর স্ত্রীসহ বেশ কয়েকজন সহযোগীকে ইতিমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন যে, জুলাই-আগস্টের পরাজিত ফ্যাসিস্ট শক্তিগুলো এখনো দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে, তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাঁদের দমনে সম্পূর্ণ সজাগ রয়েছে। নাশকতার মাধ্যমে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির যেকোনো অপচেষ্টা কঠোর হস্তে দমন করা হবে বলে তিনি দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

এর আগে বিজিবি দিবসের মূল অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে উপদেষ্টা মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি বিজিবিকে একটি দক্ষ ‘ত্রিমাত্রিক বাহিনী’ হিসেবে অভিহিত করে বলেন, সীমান্ত সুরক্ষা এবং দেশের অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় এই বাহিনীর অবদান অতুলনীয়। সরকার বিজিবির সক্ষমতা বৃদ্ধি ও আধুনিকায়নে সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে। অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি এবং বিজিবির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। মূলত একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে প্রশাসনের সকল স্তরের প্রস্তুতি ও সীমান্তের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই ছিল আজকের বক্তব্যের মূল সুর।


মাকে দেখতে হাসপাতালে তারেক রহমান

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবনের অবসান ঘটিয়ে দেশে ফেরার পর আবারও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মা বেগম খালেদা জিয়াকে দেখতে গেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গত রবিবার (২৮ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ১১টার দিকে তিনি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে পৌঁছান। সেখানে তিনি তাঁর গর্ভধারিণী মায়ের শয্যাপাশে বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটান এবং তাঁর চিকিৎসার সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে চিকিৎসকদের কাছ থেকে বিস্তারিত খোঁজখবর নেন। প্রায় ৪০ মিনিট হাসপাতালে অবস্থানের পর রাত ১২টা ৮ মিনিটের দিকে তিনি পুনরায় গুলশানের বাসভবনের উদ্দেশ্যে রওনা হন। বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তারেক রহমানের পৌঁছানোর আগেই তাঁর সহধর্মিণী ডা. জুবাইদা রহমান এবং শাশুড়ি ইকবাল মান্দ বানু হাসপাতালে উপস্থিত হয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থার তদারকি করছিলেন। এ দিন খালেদা জিয়ার বড় বোন সেলিনা ইসলামও হাসপাতালে এসে তাঁর বোনের স্বাস্থ্যের খবর নেন। গত ২৩ নভেম্বর থেকে শারীরিক জটিলতা নিয়ে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন তিনবারের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে সিসিইউতে (ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট) রেখে নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের মেডিকেল বোর্ড তাঁর চিকিৎসার দায়িত্ব পালন করছেন।

গত ২৫ ডিসেম্বর লন্ডন থেকে দেশে ফেরার পর থেকেই তারেক রহমান তাঁর প্রতিটি ব্যস্ত কর্মসূচির শেষে নিয়মিতভাবে হাসপাতালে গিয়ে মাকে দেখে আসছেন। দীর্ঘ দেড় যুগ পর প্রিয় সন্তানের উপস্থিতি খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় মানসিক শক্তি যোগাবে বলে আশা করছেন তাঁর পরিবারের সদস্য ও দলীয় নেতাকর্মীরা। বর্তমানে রাজধানীর এই হাসপাতাল এলাকা এবং খালেদা জিয়ার শয্যাপাশে পরিবারের সদস্যদের এমন নিয়মিত উপস্থিতি এক আবেগঘন পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। মায়ের দ্রুত আরোগ্য কামনায় তারেক রহমান দেশবাসীর কাছে দোয়া প্রার্থনা করেছেন।


হাদি হত্যাকাণ্ডে ভারতে কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি: মেঘালয় পুলিশ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের তদন্ত নিয়ে নতুন এক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে ভারতে দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তারের যে দাবি বাংলাদেশ পুলিশ করেছে, তা সরাসরি নাকচ করে দিয়েছে ভারতের মেঘালয় রাজ্য পুলিশ। মেঘালয় পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এ ধরনের কোনো গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটেনি এবং বাংলাদেশ পুলিশের দাবিটি সঠিক নয়।

আজ রবিবার (২৮ ডিসেম্বর) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, মেঘালয় পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন যে, ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডে জড়িত কোনো ব্যক্তি তাদের রাজ্যে প্রবেশ করেছে বলে কোনো প্রমাণ নেই এবং এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তারও করা হয়নি। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ করা হয়নি।

এর আগে আজ সকালেই ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার এস এন মো. নজরুল ইসলাম এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছিলেন যে, হাদি হত্যার প্রধান অভিযুক্ত ফয়সাল করিম ওরফে দাউদ খানের দুই সহযোগীকে মেঘালয় পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। তিনি জানিয়েছিলেন, ‘ইনফরমাল চ্যানেল’ বা অনানুষ্ঠানিক সূত্রের মাধ্যমে তাঁরা এই গ্রেপ্তারের খবর পেয়েছেন। ডিএমপির ভাষ্য অনুযায়ী, আসামিরা ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে মেঘালয়ে প্রবেশ করেছিল।

তবে শুধু মেঘালয় পুলিশই নয়, ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ-ও বাংলাদেশ পুলিশের এই দাবিকে ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করেছে। বিএসএফ-এর মেঘালয় ফ্রন্টিয়ারের প্রধান ওপি উপাধ্যায় জানিয়েছেন, হালুয়াঘাট সীমান্ত দিয়ে কোনো সন্দেহভাজন ব্যক্তি মেঘালয়ে প্রবেশের কোনো তথ্য বা প্রমাণ তাঁদের কাছে নেই। তাঁরা এ ধরনের কোনো ঘটনার বিষয়ে অবগত নন বলেও স্পষ্ট করেছেন।

মেঘালয় পুলিশ ও বিএসএফ আরও জানিয়েছে যে, তারা বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যেকোনো আইনগত সহযোগিতার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। তবে বর্তমানে তারা সীমান্তে নজরদারি আরও জোরদার করেছে যাতে কোনো অপরাধী সীমান্ত পার হতে না পারে।

উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সময় শরীফ ওসমান হাদিকে মাথায় গুলি করা হয়। দীর্ঘ ছয় দিন সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন থাকার পর গত ১৮ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এই হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে দেশে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে এবং ইনকিলাব মঞ্চ খুনিদের দ্রুত বিচার ও গ্রেপ্তারের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। দুই দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরস্পরবিরোধী এই বক্তব্যের ফলে হাদি হত্যার তদন্ত প্রক্রিয়া এখন এক নতুন মোড় নিল।


ওসমান হাদি হত্যা: হামলাকারীর ২ সহযোগী ভারতে আটক

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বিন হাদি হত্যাকাণ্ডের তদন্তে বড় ধরনের অগ্রগতির তথ্য জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। আজ রোববার (২৮ ডিসেম্বর) সকালে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন মো. নজরুল ইসলাম জানান, হাদির খুনিদের পালিয়ে যেতে সহায়তাকারী দুই সহযোগীকে ভারতের মেঘালয় রাজ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। অনানুষ্ঠানিক সূত্রের মাধ্যমে মেঘালয় পুলিশের পক্ষ থেকে পুত্তি ও সামী নামে দুই ব্যক্তির গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

পুলিশের তদন্ত ও গ্রেফতারকৃতদের জবানবন্দি অনুযায়ী, হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ফয়সাল ও তাঁর সহযোগী আলমগীর অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে দেশ ত্যাগ করেছেন। গত ১২ ডিসেম্বর পল্টনে হাদিকে গুলি করার পরপরই তাঁরা সিএনজিযোগে আমিনবাজার ও সেখান থেকে মানিকগঞ্জের কালামপুর যান। পরে একটি প্রাইভেটকারে করে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট সীমান্ত এলাকায় পৌঁছান। সেখানে আগে থেকেই ফিলিপ ও সঞ্জয় নামে দুই ব্যক্তি তাঁদের সীমান্ত পার করে দিতে অপেক্ষায় ছিলেন। সীমান্ত অতিক্রম করার পর তাঁদের ভারতীয় নাগরিক পুত্তির কাছে হস্তান্তর করা হয় এবং পরবর্তীতে ট্যাক্সি চালক সামী তাঁদের মেঘালয় রাজ্যের তুরা নামক নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেন। পুলিশ ধারণা করছে, আসামিরা অবৈধ পথেই সীমান্ত পাড়ি দিয়েছেন।

আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এ পর্যন্ত বাংলাদেশে ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁদের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দুটি বিদেশি পিস্তল, ৫২ রাউন্ড গুলি, ম্যাগাজিন, একটি মোটরসাইকেল এবং ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়াও ৫৩টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিপরীতে ২১৮ কোটি টাকার স্বাক্ষরিত চেক জব্দ করা হয়েছে, যা এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে বড় ধরনের অর্থায়নের ইঙ্গিত দিচ্ছে। তদন্তের স্বার্থে মূল অপরাধীদের নাম এখনই প্রকাশ না করলেও পুলিশ জানিয়েছে, আগামী ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যেই এই মামলার পূর্ণাঙ্গ অভিযোগপত্র বা চার্জশিট আদালতে দাখিল করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ইতোমধ্যে গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ৬ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন এবং ৪ জন সাক্ষী ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করেছেন। হত্যাকাণ্ডের নেপথ্য কারণ সম্পর্কে নজরুল ইসলাম বলেন, ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর শরীফ ওসমান হাদি অত্যন্ত সরব ছিলেন এবং একটি নির্দিষ্ট আদর্শকে ধারণ করতেন। ধারণা করা হচ্ছে, তাঁর এই আদর্শিক অবস্থান অথবা ৫ আগস্টের প্রেক্ষাপটে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাঁরাই এই সুপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে থাকতে পারেন।

উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর জুমার নামাজ শেষে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সময় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পথে চলন্ত অবস্থায় গুলিবিদ্ধ হন শরীফ ওসমান হাদি। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হলেও দীর্ঘ ছয় দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে গত ১৮ ডিসেম্বর তিনি শাহাদতবরণ করেন। প্রথমে এটি হত্যাচেষ্টা মামলা হিসেবে দায়ের হলেও হাদির মৃত্যুর পর আদালতের নির্দেশে এটি এখন ৩০২ ধারার নিয়মিত হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে অপরাধীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার জোর আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।


জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষাকে জামায়াতের হাতে তুলে দেওয়ার অভিযোগ তাজনূভা জাবীনের

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের স্পিরিট বা আকাঙ্ক্ষাকে কৌশলে জামায়াতে ইসলামীর হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে বলে গুরুতর অভিযোগ তুলে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) থেকে পদত্যাগ করেছেন দলটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. তাজনূভা জাবীন। আজ রোববার দুপুরে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক দীর্ঘ ও আবেগঘন পোস্টের মাধ্যমে তিনি এই ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে তিনি আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার সিদ্ধান্তও জানিয়েছেন। তাজনূভা জাবীন তাঁর পোস্টে দলটির শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ‘বিশ্বাসভঙ্গ’ এবং ‘পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগ এনে রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন।

তাজনূভা জাবীন দাবি করেছেন, জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে এনসিপির এই জোট কোনো আকস্মিক রাজনৈতিক কৌশল নয়, বরং এটি অত্যন্ত সুনিপুণভাবে সাজানো একটি পরিকল্পনা। তিনি উল্লেখ করেন, কদিন আগেই সাড়ম্বরে ১২৫ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হলেও শেষ মুহূর্তে মাত্র ৩০টি আসনের বিনিময়ে জোটের সিদ্ধান্তে সিলমোহর বসানো হয়েছে। এর ফলে বাকি প্রার্থীদের নির্বাচনের পথ কার্যত রুদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে এমন এক সময়ে, যখন কারো পক্ষে স্বতন্ত্র হিসেবে দাঁড়ানোর মতো প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ নেই। তিনি প্রশ্ন তোলেন, যেখানে চরমোনাই পীরের দল জামায়াতের কাছ থেকে ৭০টি আসন আদায় করতে পেরেছে, সেখানে জুলাই অভ্যুত্থান থেকে জন্ম নেওয়া একটি দল কেন মাত্র ৩০টি আসনে নিজেদের সীমাবদ্ধ করে ফেলল? জাবীনের মতে, জুলাইয়ের রাজনীতি ধারণ করার বদলে পুরো আন্দোলনকেই জামায়াতের কাছে জিম্মি করে দেওয়া হয়েছে।

দলের অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র ও নেতৃত্বের কড়া সমালোচনা করে এই নেত্রী বলেন, এনসিপির শীর্ষ নেতারা এখন নিজেদের মধ্যে ‘মাইনাসের রাজনীতি’ করতে এত বেশি ব্যস্ত যে, তাঁদের হাত দিয়ে দেশের জন্য নতুন কোনো ‘বাংলাদেশপন্থি’ রাজনীতি করা সম্ভব নয়। তিনি অভিযোগ করেন, যারা আসলেই এনসিপির ঘোষিত মধ্যপন্থা ও নতুন বন্দোবস্তের আদর্শ ধারণ করতে চেয়েছেন, তাঁদের ‘আবেগী’ তকমা দিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে ক্ষমতাহীন করে রাখা হয়েছে। জাবীনের ভাষায়, এনসিপি এখন আর সেই বিপ্লবী সংগঠন নেই বরং এটি জুলাইয়ের স্পিরিটকে কেবল ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করছে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মিলিয়ন ফলোয়ারওয়ালা তথাকথিত ‘গণ-অভ্যুত্থানের নেতারা’ বারবার দলীয় শৃঙ্খলা ভাঙলেও তাঁদের কোনো জবাবদিহিতা নেই, অথচ সাধারণ সদস্যরা পদত্যাগ করলে সেটাকে অপরাধ হিসেবে দেখা হয়।

ব্যক্তিগত দুঃখের কথা জানিয়ে তাজনূভা জাবীন লিখেছেন, তাঁর মা মেয়ের নির্বাচন উপলক্ষে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এলেও আজ তাঁকে এই চরম সিদ্ধান্ত নিতে হলো। তবে রাজনৈতিক সততার নজির স্থাপন করে তিনি তাঁর নির্বাচনী তহবিলে সাধারণ মানুষের দেওয়া প্রতিটি পয়সা এক এক করে ফেরত দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি স্পষ্ট করেছেন যে, জামায়াতের সাথে জোট না চাওয়া মানেই বিএনপির পক্ষে থাকা নয়; বরং তিনি চেয়েছিলেন একটি স্বতন্ত্র তৃতীয় শক্তি হিসেবে এনসিপি নিজের স্বকীয়তা বজায় রাখুক। দল ছাড়লেও জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা ও দেশের গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের লড়াই আমৃত্যু চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন এই তরুণ চিকিৎসক ও নেত্রী। তাঁর এই পদত্যাগ নির্বাচনের প্রাক্কালে এনসিপির অভ্যন্তরীণ সংকট ও আদর্শিক বিভক্তিকে জনসমক্ষে আরও স্পষ্ট করে তুলল।


ভেজাল খাদ্যদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ও খাস জমি দখল পুনরুদ্ধারে সাহসী অভিযান, ফরিদপুরের এসিল্যান্ড সানাউল মোর্শেদের জনআস্থা অর্জন

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
পাবনা জেলা প্রতিনিধি

পাবনার চলনবিল অধ্যুষিত এলাকার এক জনপদের নাম ফরিদপুর উপজেলা। এ উপজেলায় মূলত উৎকৃষ্ট মানের দুগ্ধজাত পণ্য (ঘি ও ছানা) এবং তাঁতশিল্প ও কৃষিপণ্যের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত।এটি পাবনা জেলা শহর থেকে দূরে অবস্থিত হাওয়ায় অনেক ক্ষেত্রেই অবহেলিত একটি উপজেলা।দীর্ঘ দিন ধরে এই উপজেলা ও উপজেলার মানুষ উন্নয়ন, শিক্ষা,বিভিন্ন আইনি সেবা থেকে বঞ্চিত ছিল। বিশেষ করে, দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য (ঘি ও ছানা) সহ ভূমি সেবা ব্যবস্থাপনা ছিল নাজুক প্রকৃতির।

এ উপজেলার ভূমি সেবা থেকে শুরু করে, মাদক, অবৈধ খাস জমি দখল উচ্ছেদ,খাল পুনরুদ্ধার, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ,ইভটিজিং রোধ,দ্রব্য মূল্য নিয়ন্ত্রণ, যানযট নিরোসন,নকল দুধ উৎপাদন,ভেজাল ঘি,চায়না দুয়ারী জাল ও আইন শৃঙ্খলাসহ সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন একজন তরুন, দায়িত্বশীল সাহসী, নির্ভিক কর্মকর্তা সহকারী কমিশনার ভূমি ও বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সানাউল মোর্শেদ।

গত ১লা জুলাই ২০২৪ এ ফরিদপুর উপজেলায় এসিল্যান্ড হিসাবে যোগদান করেন।যোগদানের পরপর তিনি ফরিদপুর পৌরসভার প্রশাসক এর পাশাপাশি পুংগলী ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক হিসাবে ন্যায় নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। এছাড়াও তিনি বনওয়ারীনগর বণিক সমিতি সভাপতি দায়িত্ব অন্তত দক্ষতার সঙ্গে পালন করেছেন। ফরিদপুর পৌরসভার প্রশাসকের দায়িত্ব গ্রহনের পর বিভিন্ন ধরনের উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু করেন। বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন, অনলাইন সনদ বজ্য ব্যবস্থাপনা, মশক নিধন, সড়ক বাতি, উপজেলা মাঠ সংস্কার,প্রেসক্লাব,মুক্ত মঞ্চ,ড্রেনেজ ব্যবস্থা পরিষ্কার সহ শিশু বিনোদন মুলুক পার্ক নির্মান করেন।

গত (১৬) মাসে তিনি বিভিন্ন আইনে ৯৬ টি মোবাইল কোর্ট অভিযান পরিচালনা করেন।তার মধ্য হতে বিভিন্ন মেয়াদে ২৪ জনকে কারাদণ্ড সহ অনন্যা জনকে মোট ৩১,২২,০৫০০/একত্রিশ লাখ বাইশ হাজার পাঁচশত টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করেন।

নামজারী ও মিস কেস সহ প্রায় (১২০০০) বারো হাজারের বেশি মামলা নিস্পত্তি করেছেন। ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ে ব্যপক ভূমিকা পালন করেছেন।গত চলতি বছরে ১,৬৮,০০০০০/= এক কোটি আটষট্টি লাখ টাকা আদায় করেন। ভিপি (ক) তফসিল ভুক্ত জায়গা বকেয়া লিজ নবায়ন রাজস্ব থেকে প্রায় ১৬,৩২০০০/-ষোল লাখ বত্রিশ হাজার টাকা আদায় করেন। হাট বাজার বকেয়া রাজস্ব থেকে ১৫,০০,০০০/- পনোরো লাখ টাকার অধিক টাকা আদায় সহ ২০ একরের অধিক কৃষি ও অকৃষি খাস জমির অবৈধ দখল উচ্ছেদ ও উদ্ধার করেন যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ১২ কোটির টাকার মতো।খাল দখল মুক্ত ১৬,৩২২২৯/= ষোল লাখ বত্রিশ হাজার দুই শত উনত্রিশ টাকা আদায় সহ খাস জমি দখল মুক্ত করেন।

এক ভূমি সেবা গ্রহিতা মো. ঝন্টু মিয়া বলেন, আমি আমার একটি নামজারীর জন্য আবেদন করেছিলাম, আমি সেই নামজারী টা খুব অল্প সময়ের মধ্যে করতে পেরেছি। আরেক ভূমি সেবা গ্রহিতা মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, আমার একটা মিস কেস খুব অল্প সময়ের ভিতর শেষ হয়েছে এবং কাগজ পত্র যাচাই বাছাই করে আমাদের এসিল্যান্ড সাহেব রায় প্রদান করেছেন।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে, মো. সানাউল মোর্শেদ বলেন, আমি চাই এই অবহেলিত ফরিদপুর উপজেলা সর্ব দিক দিয়ে এগিয়ে থাক। আমার এই ভূমি সেবা পেতে যেন সাধারণ মানুষ কোন প্রকার হয়রানি শিকার না হয় সেই দিক আমার বিশেষ নজরদারি থাকবে এবং আমার মোবাইল কোর্ট অভিযানে যে জরিমানা করা তা শুধু সবাইকে সচেতন তৈরি করা,কোন শাস্তি প্রদান করা নয়। তবে এখানে শুধু আমার একার পক্ষে এমন অপরাধ রোধ করা সম্ভব নয়।এখানে আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে সামাজের সকলে প্রচেষ্টায় এমন অপরাধ রোধ করা সম্ভব।


দেশের ২৬তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে জুবায়ের রহমান চৌধুরীর শপথ গ্রহণ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশের ২৬তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী। আজ রবিবার (২৮ ডিসেম্বর) সকালে বঙ্গভবনের দরবার হলে আয়োজিত এক বিশেষ অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তাঁকে এই শপথ বাক্য পাঠ করান। পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হওয়া এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সশরীরে উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়াও সরকারের উপদেষ্টাবৃন্দ, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিগণ, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, বিশিষ্ট নাগরিক এবং উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা এই মাহেন্দ্রক্ষণের সাক্ষী হন। সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটের দিকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদের পরিচালনায় এই আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়।

বিদায়ী প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ গতকাল শনিবার তাঁর কর্মজীবনের ৬৭ বছর পূর্ণ করে আনুষ্ঠানিকভাবে অবসরে গেছেন। তাঁর স্থলাভিষিক্ত হওয়া বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীর নিয়োগ আজ শপথ গ্রহণের মুহূর্ত থেকেই কার্যকর হয়েছে। এর আগে গত ২৩ ডিসেম্বর সংবিধানের ৯৫ (১) অনুচ্ছেদে দেওয়া ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি তাঁকে এই পদে নিয়োগ দেন এবং আইন মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। শপথ গ্রহণ শেষে প্রথা অনুযায়ী নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতিকে উপস্থিত অতিথিরা অভিনন্দন জানান। এই রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ও বাংলাদেশ বেতার সরাসরি সম্প্রচার করে।

পেশাগত জীবনে দীর্ঘ অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী ১৯৮৫ সালে জেলা জজ আদালতে এবং ১৯৮৭ সালে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে আইনজীবী হিসেবে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। দীর্ঘ বিচারিক পরিক্রমায় তিনি ২০০৩ সালের ২৭ আগস্ট হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিযুক্ত হন এবং এর দুই বছর পর ২০০৫ সালে স্থায়ী বিচারপতির মর্যাদা পান। তাঁর নিষ্ঠা ও মেধার স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৪ সালের ১২ আগস্ট তাঁকে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে উন্নীত করা হয়েছিল। শিক্ষাজীবনে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি (সম্মান) ও এলএলএম ডিগ্রি অর্জনের পর যুক্তরাজ্য থেকে আন্তর্জাতিক আইন বিষয়ে উচ্চতর স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তাঁর এই নিয়োগ দেশের বিচার বিভাগে নতুন গতির সঞ্চার করবে এবং বিচারপ্রার্থী মানুষের আস্থা আরও সুদৃঢ় করবে বলে আশা প্রকাশ করছেন আইন সংশ্লিষ্টরা।


banner close