নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে বেশি খাদ্যদ্রব্য মজুত করলে জেল-জরিমানার বিধান রেখে নতুন একটি নতুন আইনের খসড়া সংসদে উঠেছে।
বৃহস্পতিবার খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার ‘খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, মজুত, স্থানান্তর, পরিবহন, সরবরাহ, বিতরণ ও বিপণন (ক্ষতিকর কার্যক্রম প্রতিরোধ) বিল–২০২৩’ সংসদে তোলেন। পরে বিলটি পরীক্ষা করে ৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।
১৯৫৬ সালের ফুড (স্পেশাল কোর্ট) অ্যাক্ট এবং ১৯৭৯ সালের ফুডগ্রেইনস সাপ্লাই (প্রিভেনশন অব প্রিজুডিশিয়াল একটিভিটি) অর্ডিন্যান্স বাতিল করে নতুন এই আইনটি করা হচ্ছে।
প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, সরকার নির্ধারিত পরিমাণের বেশি পরিমাণ খাদ্যদ্রব্য মজুত করলে বা মজুত সংক্রান্ত সরকারের কোনো নির্দেশনা অমান্য করলে এর শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড।
বিলে বলা হয়েছে খাদ্যদ্রব্য বলতে যেকোনো প্রকার দানাদার খাদ্যদ্রব্য যথা– চাল, ধান, গম, আটা, ভুট্টা ইত্যাদিকে বোঝানো হয়েছে।
তবে এইরূপ অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি যদি প্রমাণ করতে পারেন যে, তিনি আর্থিক বা অন্য কোনো প্রকার লাভের উদ্দেশ্য ব্যতীত মজুত করেছিলেন তাহলে তিনি অনূর্ধ্ব ৩ মাস কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এই অপরাধ হবে অজামিনযোগ্য।
বিলে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি পুরাতন খাদ্যদ্রব্য পলিশিং বা অন্য কোনো খাদ্যদ্রব্যের সঙ্গে মিশ্রণ করে বা সরকার কর্তৃক খাদ্যদ্রব্য সংগ্রহকালে সরকারি গুদামে রক্ষিত খাদ্যদ্রব্য বৈধ বা অবৈধভাবে সংগ্রহ করে, দেশে উৎপাদিত খাদ্যদ্রব্যের পরিবর্তে আমদানিকৃত খাদ্যদ্রব্য; বা সরকারি গুদামের পুরাতন বা বিতরণকৃত সিল বা বিতরণ করা হয়েছে এমন চিহ্নযুক্ত খাদ্যদ্রব্য ভর্তি বস্তা বা ব্যাগ বা আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে খাদ্যদ্রব্যের পরিমাণগত বা গুণগত পরিবর্তন করে বা অন্য কোনো অসৎ উদ্দেশ্যে সরকারি গুদামে সরবরাহ করলে তা হবে অপরাধ। এর সাজা হবে সর্বোচ্চ ২ বছর কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ড।
বিলের এই বিধান অনুযায়ী পলিশিং ও কাটিংয়ের মাধ্যমে তৈরি মিনিকেট চাল বিক্রি ও সরবরাহ আইনগত অবৈধ হবে।
বিলে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি খাদ্য অধিদপ্তর কর্তৃক প্রদত্ত বিতরণকৃত সিল বা বিতরণ করা হয়েছে এইরূপ চিহ্নযুক্ত সিল ব্যতীত সরকারি গুদামের খাদ্যদ্রব্য ভর্তি বস্তা বা ব্যাগ বিতরণ, স্থানান্তর, ক্রয় বা বিক্রয় করলে তা অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। এর সাজা সর্বোচ্চ দুই বছর কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ড।
বিলে আরও বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি খাদ্যদ্রব্যের উৎপাদন, মজুত, স্থানান্তর, পরিবহন, সরবরাহ, বিতরণ ও বিপণন সম্পর্কিত কোনো মিথ্যা তথ্য বা বিবৃতি তৈরি, মুদ্রণ, প্রকাশ, প্রচার বা বিতরণ করলে, তা হবে একটি অপরাধ। এর সাজা হবে সর্বোচ্চ ৫ বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ড।
বিলে বলা হয়েছে, কোনো অনুমোদিত জাতের খাদ্যশস্য থেকে উৎপাদিত খাদ্যদ্রব্যকে ওই রূপ জাতের উপজাত পণ্য হিসেবে উল্লেখ না করে ভিন্ন বা কাল্পনিক নামে বিপণন করলে বা খাদ্যদ্রব্যের স্বাভাবিক উপাদানকে সম্পূর্ণ বা আংশিক অপসারণ বা পরিবর্তন করে উৎপাদন বা বিপণন করলে সেটি অপরাধ হবে। এ ছাড়া খাদ্যদ্রব্যের সঙ্গে মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কৃত্রিম উপাদান মিশ্রণ করে উৎপাদন ও বিপণন করলে সেটিও হবে অপরাধ। লাইসেন্স ছাড়া বা মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্স দিয়ে ব্যবসা চললেও তা অপরাধ হবে। আর এসব অপরাধের জন্য ২ বছর কারাদণ্ড অথবা অন্যূন ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ড হবে।
বিলে বলা হয়েছে, এই আইনের উদ্দেশ্যপূরণে প্রয়োজনীয় সংখ্যক আদালত থাকবে। এই আদালত খাদ্যদ্রব্য বিশেষ আদালত নামে অভিহিত হবে। এই আইনের অধীনে কিছু অপরাধের বিচার মোবাইল কোর্টেও করা যাবে।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া পর্যন্ত ব্যাংক কর্মকর্তাদের একান্ত প্রয়োজন ছাড়া বিদেশ ভ্রমণ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
আজ বুধবার জারি করা এক সার্কুলারে দেশের সব ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে এই নির্দেশনা পাঠানো হয়।
সার্কুলারে বলা হয়, নির্বাচনকালে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি), প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এবং অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বিদেশ ভ্রমণ না করার নির্দেশনা দেওয়া হলো। ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১-এর ৪৫ ধারার ক্ষমতাবলে এই সিদ্ধান্ত জারি করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, নির্দেশনাটি অবিলম্বে কার্যকর হবে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।
সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নামছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন।
আজ (বুধবার) পিলখানায় বিজিবির ৫ ব্যাটালিয়ন মাঠে আয়োজিত নির্বাচন কেন্দ্রিক মক এক্সারসাইজ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
সিইসি বলেন, আজ এখানে খুব সুন্দর একটি মহড়া দেখলাম। এটি পুরোপুরি আমাদের নির্বাচনী সংস্কৃতি বিবেচনায় করা হয়েছে। সাধারণত নির্বাচনে যেসব ধরনের ঘটনা ঘটে বা যে ভাবে নির্বাচন পরিচালিত হয়, সব কনসিভেবল ডাইমেনশন মাথায় রেখে বিজিবি প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এতে আমি অত্যন্ত আনন্দিত।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনী ডিউটি নিয়মিত আসে না। ৪ থেকে ৫ বছর পরপর আসে বলে বাহিনীগুলোকে বিশেষ ট্রেনিং নিতে হয়। বিজিবির নিয়মিত কাজ সীমান্ত এলাকায়। পুলিশ ১৩০টি সেন্টারে নির্বাচনভিত্তিক প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। আনসার-বিডিবির মহড়া দেখেছি। তারাও প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। বিজিবির এ অনুশীলন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। যাতে তারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারে। সে জন্য সদস্যদের তৈরি করছে।
সিইসি বলেন, প্রতিটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের সদস্যদের নিয়ে দায়িত্বশীলতার সাথে প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমরা আশা করি এই প্রশিক্ষণ নির্বাচনের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বিশেষ প্রভাব ফেলবে। আমি আশা করি সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সাংবাদিক এবং ১৩ কোটি ভোটার মিলে আমরা একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অর্জন করবো।
দেশের বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, আমি বলবো না যে পরিস্থিতি পারফেক্ট লেভেলে চলে গেছে। তবে ৫ আগস্ট ২০২৪-এর পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করলে এখন অনেক উন্নতি হয়েছে। আপনারা নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারছেন, রাস্তায় চলাচল করতে পারছেন। ভোটের তারিখ আসতে আসতে এটা আরও উন্নতি হবে। ৩০ তারিখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আবারও বৈঠক হবে এবং সেদিনই ডেপ্লয়মেন্ট স্ট্র্যাটেজি চূড়ান্ত করা হবে। পুলিশ চাইলে একজন দুজন মোতায়েন করা যায়। কিন্তু এভাবে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা যায় না। সেনাবাহিনী কন্টিনজেন্ট আকারে কাজ করে। তাই তাদের মোতায়েনের সিদ্ধান্ত যথাযথ বিবেচনার পর নেওয়া হবে।
একটি দলের পক্ষ থেকে নির্বাচন প্রতিহতের ঘোষণার প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, “যারা প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে, তাদের ব্যাপারে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সাংবাদিক, ভোটার, দেশবাসী—সবাই মিলে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি প্রতিহত করতে হবে।”
সরকারের উপদেষ্টাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ নিয়ে তিনি বলেন, এটা সরকারের নীতি-নির্ধারণী বিষয়। নির্বাচন কমিশন আইন অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করবে
ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্র প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা ঝুঁকি অ্যাসেসমেন্ট করেছি। রেড, ইয়েলো ও গ্রিন—এই তিন জোনে ভাগ করে বাহিনী মোতায়ন করা হবে।
এ দিকে বিজিবি জানিয়েছে, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সারা দেশে বিজিবির ১২১০ প্লাটুন সদস্য নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবে। সন্দীপ, হাতিয়া ও কুতুবদিয়া ব্যতীত সকল উপজেলায় বিজিবি নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবে। সীমান্তবর্তী ১১৫টি উপজেলার মধ্যে ৬০টি উপজেলায় বিজিবি সদস্যরা এককভাবে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবে।
মক এক্সারসাইজ অনুষ্ঠানে বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকীসহ বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সরকারে থাকার সময় বিভিন্ন জনসভায় অংশ নিয়ে জনগণের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলতেন, আমার কোনো চাওয়া-পাওয়া নাই। বিদায়ের আগে শুধু এই কথা বলতে চাই- আপনাদের সেবা করাই আমার কাজ।
বক্তব্যের শেষে হাসিনা বলতেন, ‘নিঃস্ব আমি রিক্ত আমি দেবার কিছু নেই, আছে শুধু ভালোবাসা দিয়ে গেলাম তাই।’
অথচ ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যূত হওয়ার পর একে একে বেরিয়ে আসছে হাসিনার অনিয়ম ও দুর্নীতির ফিরিস্তি। ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্লট জালিয়াতি থেকে শুরু করে সরকারি উপহারও ব্যাংকের গোপন ভল্টে রেখেছিলেন হাসিনা।
অগ্রণী ব্যাংকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৮৩২ ভরি স্বর্ণালংকার পাওয়া গেছে। সেখানে সংরক্ষিত দুটি ভল্ট ভেঙে এ সম্পদের সন্ধান পায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি)।
মঙ্গলবার রাজধানীর দিলকুশায় অবস্থিত ব্যাংকটির প্রধান শাখায় ভল্ট দুটি জব্দ করা হয়।
সিআইসির এক কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, গত ১৭ সেপ্টেম্বর গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খবর পেয়ে লকার দুটি জব্দ করেছিল সিআইসি। কিন্তু হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ায় আইনগত বাধা থাকায় এতদিন সেগুলো ভাঙা সম্ভব হয়নি। অবশেষে আদালতের অনুমতি নিয়ে গতকাল লকার দুটি ভাঙা হয়। এ সময় ৭৫১ এবং ৭৫৩ নম্বর ভল্টে ৮৩২ ভরি স্বর্ণালংকার পাওয়া যায়। বর্তমানে দুই লাখ টাকা ভরি হিসাবে উদ্ধার করা স্বর্ণের বাজারদর ১৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।
অগ্রণী ব্যাংকের লকারে স্বর্ণালংকার ছাড়াও বেশকিছু উপহারসামগ্রী পাওয়া গেছে বলে সূত্র জানিয়েছে। রাষ্ট্রীয় তোশাখানায় এসব উপহারসামগ্রী জমা না দিয়ে ব্যক্তিগত লকারে রাখা হয়েছিল। এতে আইনের লঙ্ঘন হওয়ায় হাসিনার বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা হতে পারে বলে ওই কর্মকর্তা জানান।
এর আগে চলতি বছরের ১০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মতিঝিলে অবস্থিত সেনা কল্যাণ ভবনে পূবালী ব্যাংকের করপোরেট শাখায় শেখ হাসিনার নামে থাকা ১২৮ নম্বর লকার জব্দ করেছিল সিআইসি।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, পূবালী ব্যাংকের ওই শাখায় শেখ হাসিনার দুটি ব্যাংক হিসাব পাওয়া গেছে। একটি হিসাবে ১২ লাখ টাকা এফডিআর আছে। আরেক হিসাবে ৪৪ লাখ টাকা পাওয়া গেছে।
এদিকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১০ কাঠা সরকারি জমি বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে ক্ষমতাচ্যূত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগে শেখ রেহানাসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে করা মামলার আদালত রায় ঘোষণার দিন ধার্য করা হয়েছে আগামী ১ ডিসেম্বর।
চলছে অগ্রহায়ণ মাস, আমন ধান ঘরে তুলার সঠিক সময়। প্রতি বছর যখন এই মাসটি আসে তখন সারাদেশের ন্যায় জয়পুরহাট জেলার বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে আমন ধান কাটার ধুম পড়ে যায়। এবার তার ব্যতিক্রম হয়নি। জেলার বিস্তীর্ণ আমন মাঠ এখন সোনালী রঙ ধারণ করেছে। তাইতো কৃষকেরা ধান কাটা ও মাড়াইয়ের মহোৎসব করছেন।
শুধু তাই নয়, নবান্ন উৎসবকে সামনে রেখে মাঠের ধান কাটার ধুম পড়েছে। নতুন ধান কেটে তা বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে যাচ্ছেন কৃষকরা। উৎসবের আমেজ শুধু মাঠে নয় কৃষাণীর উঠোন, রান্না ঘর জুড়ে। নতুন চালের গুঁড়া দিয়ে দুধ, চিনি বা গুড়ের মিশ্রণে নানা রকমের পিঠা-পুলি, ক্ষীর, পায়েস আয়োজনে ব্যস্ত তারা। উঠোনে শুকানো হচ্ছে ধান। সেই ধান থেকে হবে চাল, তারপর টেঁকিতে করা হবে সেই চালের গুঁড়া। আবার নতুন ধান ঘরে উঠলে বাজারে বিক্রির ধুম পড়ে যায় গুড়, পাটালি, চিনির। বাজার থেকে এসব কিনে বাড়িতে নতুন চালের ভাত, পিঠা এবং নতুন খাবারের আয়োজন করা হবে।
সকালে সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকার আমন ফসলের মাঠ ঘুরে দেখা যায়, দিগন্ত বিস্তৃত ফসলের মাঠে সোনালী ধানের সমারোহ। বাতাসে দোল খাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন। চারিদিকে সোনালী রঙের নতুন আমন ধানের মৌ মৌ ঘ্রান। মাঠে মাঠে চলছে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের ধুম। নবান্নের আনন্দে আমন ধান কাটা-মাড়াইয়ের ধুম চলছে জেলার পাঁচ উপজেলা জুড়ে। এখন মাঠের সোনালী ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত কৃষকরা।
তবে, এবছর অসময়ের বৃষ্টি ও বিরূপ আবহাওয়ার কারণে এবার আমন ধানের ফলনে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। তবে, কিছু এলাকায় বিশেষ করে কালাই উপজেলায় আগাম আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে এবং কৃষকরা খুশি। গেল বছরের তুলনায় ফলন কম হয়েছে, প্রতি বিঘায় ফলন হয়েছে ১৬ থেকে ১৮ মন। এতে আবাদি জমিতে ফলন কম হওয়া এবং বাজারে ধানের দাম কম থাকায় অনেক কৃষকরা কিছুটা হতাশ।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় আমন ধান চাষ হয়েছে ৭০ হাজার ৯৫ হেক্টর জমিতে।কিন্তু ঘূর্ণিঝড় ও অসময়ের বৃষ্টিতে ১১৩ হেক্টর জমির ধান নষ্ট হওয়ায় চাষ হয়েছে ৬৯ হাজার ৯৮২ হেক্টর জমিতে।
বিভিন্ন হাট-বাজার ঘুরে দেখা যায়, বর্তমান বাজারে মোটা আমন ধান বিক্রি প্রতি মণ ১২০০ টাকা ও সর্বোচ্চ চিকন ধান ১৩০০ টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার আমন ফসলের মাঠ ঘুরে দেখা যায়, দিগন্ত বিস্তৃত ফসলের মাঠে সোনালী ধানের সমারোহ। বাতাসে দোল খাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন। চারিদিকে সোনালী রঙের নতুন আমন ধানের মৌ মৌ ঘ্রাণ। মাঠে মাঠে চলছে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের ধুম। নবান্নের আনন্দে আমন ধান কাটা-মাড়াইয়ের ধুম চলছে জেলা জুড়ে। এখন মাঠের সোনালী ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত কৃষকরা। নানা ব্যস্ততায় বাড়ির উঠান ও কৃষি জমিতে ধান রেখে চলছে ধান মাড়াইয়ের মহোৎসব। বর্তমানে পুরো কাটা-মাড়াই মৌসুম শুরু হয়েছে এবং কৃষকরা ফসল ঘরে তোলার আনন্দ উপভোগ করছেন।
সদর উপজেলার ধারকী গ্রামের কৃষক ফেরদৌস হোসেন বলেন, এবছর ১২ বিঘা জমিতে আমন ধান রোপণ করেছিলাম। প্রতি বিঘায় ধান হয়েছে ১৬ থেকে ১৮ মণ। গতবছরের চেয়ে প্রতি বিঘায় ধান কম হয়েছে ৪-৬ মণ। আবার বাজারে ধানের দাম কম। সারের দোকানে আলু রোপণের জন্য সার কিনতে গেলে সরকার নির্ধারিত মূল্যে মিলছে না সার।
কালাই উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের কৃষক জয়নুল হোসেন বলেন, এবার ২৫ বিঘা জমিতে আমন ধান রোপণ করেছিলাম। আগাম জাতের ধান হওয়ায় বিঘা প্রতি ২৫ মণ ধান পেয়েছি।
জয়পুরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপপরিচালক কৃষিবিদ এ কে এম সাদিকুল ইসলাম বলেন, এবার জেলায় ৩ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে। এছাড়া চলতি মৌসুমে পরিমিত বৃষ্টি হওয়ায় ধানি জমিতে পানি থাকায় ধানের খাদ্যে ঘাটতি দেখা দেয়নি। এতে ফলন ভালো হয়েছে। ধানে চিটা হবে না। ফলন ভালো হওয়ায় ধান উৎপাদনের মাত্রা ঠিক থাকবে।আগামী কয়েকদিনের মধ্যে সব ধান কাটা শেষ হয়ে যাবে।
রাজধানী ঢাকার জনসংখ্যা ও পরিধি দিন দিন বাড়ছে। বিশ্বের অন্যান্য শহরের তুলনায় ঢাকায় মানুষের আনাগোনা বাড়ছে। আর এতে করে ঢাকা নবম থেকে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ শহরে পরিণত হয়েছে। ২০৫০ সালের মধ্যে ঢাকা বৃহৎ শহরের তালিকার প্রথমস্থানে চলে আসবে।
জাতিসংঘের নতুন প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে বলে বুধবার (২৬ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।
আগে বিশ্বের বৃহৎ শহর ছিল জাপানের রাজধানী টোকিও। কিন্তু টোকিওকে পেছনে ফেলে শীর্ষে উঠে এসেছে ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তা। দ্বিতীয়তে ঢাকা। আর তৃতীয় স্থানে নেমে গেছে টোকিও। সর্বশেষ ২০০০ সালের দিকে জাতিসংঘ জাপানের প্রাণকেন্দ্রকে সবচেয়ে বড় শহর হিসেবে চিহ্নিত করেছিল।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, জাকার্তায় এখন বাস করেন ৪ কোটি ১৯ লাখ মানুষ। ঢাকায় ৩ কোটি ৬৬ লাখ আর টোকিওতে থাকেন ৩ কোটি ৩৪ লাখ মানুষ।
জাতিসংঘের অর্থনীতি এবং সামাজিক বিষয়ক বিভাগের ‘ওয়ার্ল্ড আর্বানাইজেশন প্রসপেক্ট ২০২৫’ শীর্ষক রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী মেগাসিটির সংখ্যা ৩৩-এ পৌঁছেছে। যেখানে ১৯৭৫ সালে শুধুমাত্র আটটি মেগাসিটি ছিল। যেসব শহরে ১ কোটির বেশি মানুষ থাকেন সেগুলোকে মেগাসিটি বলা হয়।
এই ৩৩টি মেগাসিটির মধ্যে ১৯টিই এশিয়ায়। এছাড়া শীর্ষ ১০টি মেগাসিটির ৯টির অবস্থানও এশিয়াতে। এগুলো হলো ভারতের নয়াদিল্লি (৩ কোট ২ লাখ বাসিন্দা), চীনের সাংহাই (২ কোটি ৯৬ লাখ বাসিন্দা), চীনের আরেক শহর গুয়াংজু (২ কোটি ৭৬ লাখ বাসিন্দা), ফিলিপাইনে মানিলা (২ কোটি ৪৭ লাখ বাসিন্দা), ভারতের কলকাতা (২ কোটি ২৫ লাখ বাসিন্দা) এবং দক্ষিণ কোরিয়ার সিউল (২ কোটি ২৫ লাখ বাসিন্দা)।
এরমধ্যে শুধুমাত্র মিসরের রাজধানী কায়রো বিশ্বের শীর্ষ ১০ মেগাসিটির একটি, যেটি এশিয়ার বাইরে। কায়রোতে থাকেন ৩ কোটি ২০ লাখ মানুষ।
অপরদিকে আমেরিকা অঞ্চলে সবচেয়ে বড় শহর ব্রাজিলের সাও পাওলো। এখানে থাকেন ১ কোটি ৮৯ লাখ মানুষ। সাব-সাহারান অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে বড় নাইজেরিয়ার লাগোস।
জাতিসংঘ বলেছে, ঢাকার জনসংখ্যা এত বাড়ার কারণ হলো প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ রাজধানীতে দলে দলে এসেছেন। যাদের অনেকে কাজ বা সুযোগের সন্ধানে, অনেকে বন্যা ও সমুদ্রস্তর বাড়ার ঝুঁকির কারণে ঢাকায় পাড়ি জমিয়েছেন।
সূত্র: আলজাজিরা
অসুস্থতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা অন্য যেকোনো অপ্রত্যাশিত বিপর্যয়ের মুখে পড়ে ফের দারিদ্র্য সীমার নিচে নেমে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে প্রায় সোয়া ৬ কোটি মানুষ। এরা দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। মঙ্গলবার রাজধানীর হোটেল আমারিতে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১০ থেকে ২০২২ সাল, এ সময়ে বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে দারিদ্র্য হ্রাস পেয়েছে। ফলে ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে এসেছিল, এবং আরও ৯০ লাখ মানুষ অতি দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে এসেছিল। ফলে তাদের জীবনমানের উন্নতি হয়েছে, বিদ্যুৎ, শিক্ষা, পয়ঃনিষ্কাশনের মত জরুরি সেবাগুলো পাওয়াও সহজ হয়েছে। তবে ২০১৬ সাল থেকে দারিদ্র্য কমার গতি ধীর হয়েছে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও কম অন্তর্ভুক্তিমূলক হচ্ছে।
বাংলাদেশের দারিদ্র্য ও বৈষম্য মূল্যায়ন ২০২৫’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১০ থেকে ২০২২ সময়ে চরম দারিদ্র্য ১২ দশমিক ২ শতাংশ থেকে কমে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ এবং মাঝারি দারিদ্র্য ৩৭ দশমিক ১ শতাংশ থেকে কমে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। তবে প্রায় ৬ কোটি ২০ লাখ মানুষ অসুস্থতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা অন্য যেকোনো অপ্রত্যাশিত বিপর্যয়ের মুখে পড়ে আবারও দারিদ্র্য সীমার নিচে নেমে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়ে গেছে।
২০১৬ সালের পর থেকে তুলনামূলকভাবে কম অর্ন্তভুক্তিমূলক হয়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতিপথ বদলে গেছে। দেখা গেছে, প্রবৃদ্ধির সুফল পেয়েছেন ধনী মানুষ, ফলে আয় বৈষম্য বেড়ে গেছে। কৃষির ওপর ভর করে গ্রামীণ এলাকাগুলো দারিদ্র্য হ্রাসে নেতৃত্বের ভূমিকায় উঠে আসে। একই সময়ে শহরে দারিদ্র্য হ্রাসের হার কমেছে। ২০২২ সালের মধ্যে প্রতি ৪ জনের মধ্যে ১ জন বাংলাদেশি শহরে বাস করতে শুরু করেছেন।
জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষায় শিল্পে ব্যবহৃত রং, অ্যালুমিনিয়ামের বাসনপত্র এবং শিশুদের খেলনায় সিসার উপস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হালনাগাদ বাংলাদেশ মান (বিডিএস) বাস্তবায়নে এবং কঠোর আইন প্রয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। মঙ্গলবার রাজধানীতে ‘সিসার বিষক্রিয়া প্রতিরোধ এবং শিল্পে ব্যবহৃত রং, রান্নার বাসনপত্র ও খেলনার মানদণ্ড হালনাগাদকরণ’ বিষয়ক এক উচ্চপর্যায়ের নীতি নির্ধারণী সংলাপে বক্তারা এ আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই), ইউনিসেফ এবং এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (এসডো) যৌথভাবে এ সভার আয়োজন করে।
সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক সচিব এবং এসডো’র চেয়ারপারসন সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএসটিআই’র মহাপরিচালক (গ্রেড-১) এস এম ফেরদৌস আলম। স্বাগত বক্তব্য দেন বিএসটিআই মান উইংয়ের পরিচালক মো. সাইদুল ইসলাম।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদ বলেন, সিসা একটি নীরব ঘাতক, যা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে, বিশেষ করে শিশুদের মেধা ও স্নায়ুতন্ত্রকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। এটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সরকার ইতোমধ্যে এটা কমাতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। আমাদের সবার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় এ ক্ষতিকর ধাতব উপাদান থেকে রক্ষা পেতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ডেকোরেটিভ রঙের ক্ষেত্রে আমরা সফলতা পেয়েছি, কিন্তু শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহৃত রং এবং নিত্যব্যবহার্য পণ্য যেমন বাসনপত্র ও খেলনায় সিসার ব্যবহার বন্ধে এখনই কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। আজকের এই নীতি সংলাপ সংশ্লিষ্ট সব সংস্থাকে এক ছাতার নিচে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বিএসটিআই-এর মহাপরিচালক এস এম ফেরদৌস আলম বলেন, বিএসটিআই ইতোমধ্যে ডেকোরেটিভ পেইন্টে সিসার মাত্রা ৯০ পিপিএম নির্ধারণ করে দক্ষিণ এশিয়ায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। শিল্প, মেরিন এবং অটোমোবাইল পেইন্টের বাংলাদেশ মান (বিডিএস) প্রণয়ন করা হচ্ছে। আজকের আলোচনার সুপারিশমালা আমাদের বাংলাদেশ মান হালনাগাদ ও তা বাস্তবায়নে সহায়ক হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন বিভাগের প্রফেসর ড. সৈয়দ মো. সামসুদ্দিনের সভাপতিত্বে ও সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আরজু মিয়া।
আইইডিসিআর-এর পরিচালক প্রফেসর ড. তাহমিনা শিরিন, এসডোর নির্বাহী পরিচালক সিদ্দিকা সুলতানা, ইউনিসেফের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. প্রিসিলা ওবিল। এ ছাড়াও নিপসন, আইসিডিডিআরবি, এশিয়ান পেইন্টস, বার্জার পেইন্টস, পেইন্টস অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিরা আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।
নগরায়ণ, শিল্পায়ন এবং অপরিকল্পিত উন্নয়নের কারণে দেশের কৃষিজমি দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। তিনি বলেছেন, ‘জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাবে নতুন নতুন রোগ-বালাই দেখা দিচ্ছে, নতুন নতুন পোকামাকড়ের আবির্ভাব হচ্ছে। শুধু জমির পরিমাণ কমে যাওয়াই নয়-রাসায়নিক ভিত্তিক কৃষির ফলে জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে এবং সামগ্রিক কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
মঙ্গলবার রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে অনুষ্ঠিত ‘কৃষি জমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার’-শীর্ষক জাতীয় কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান। কর্মশালাটি আয়োজন করেছে বাংলাদেশ অ্যাগ্রোইকোলজি প্ল্যাটফর্ম।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, ‘একসময় একই জমিতে এক, দুই বা তিন ধরনের ফসলের চাষ হতো। কিন্তু আধুনিক কৃষি পদ্ধতি ও ক্রমবর্ধমান চাপের কারণে এখন আর সেইভাবে বিভিন্ন ফসল ফলানো সম্ভব হচ্ছে না।’
ভূমির অধিকারের প্রসঙ্গ উঠলেই শুধু কৃষিখাতকে সামনে আনা হয়, অথচ বিষয়টি আরও বিস্তৃত। কৃষিতে কীটনাশকের পাশাপাশি অতিরিক্ত হার্বিসাইড ব্যবহারের ফলে শুধু কৃষিজমিই নয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতও গুরুতর ক্ষতির মুখে পড়ছে।
মৎস্য উপদেষ্টা বলেন, অ্যাকুয়াকালচারের মাধ্যমে দেশে মাছের উৎপাদন বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু এটি কখনোই একমাত্র উৎস হতে পারে না। একসময় বাংলাদেশের ৬০ শতাংশ মাছ পাওয়া যেত মুক্ত জলাশয় থেকে এবং বাকি ৪০ শতাংশ আসত চাষের মাধ্যমে। কিন্তু বর্তমানে চিত্রটি উল্টো। উন্মুক্ত জলাশয়গুলোতে দূষণ, ভরাট, ও অনিয়ন্ত্রিত পর্যটনের কারণে দিন দিন মাছের প্রজনন ও বিচরণ ক্ষেত্র নষ্ট হচ্ছে, যা দীর্ঘমেয়াদে দেশের দেশিয় মাছের বৈচিত্র্য ও সম্পদকে হুমকির মুখে ফেলছে।
উন্নয়ন বিকল্পের নীতি নির্ধারণী গবেষণা (উবিনীগ)-এর পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম জনির সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের সভাপতি মো. বদরুল আলম।
বক্তারা বলেন, কৃষি এখনো দেশের ১১ শতাংশ জিডিপির উৎস এবং অধিকাংশ গ্রামীণ মানুষের প্রধান জীবিকা। দেশের ৮.৮২ মিলিয়ন হেক্টর আবাদি জমি দ্রুত কমছে- প্রতিবছর প্রায় ৮০ হাজার হেক্টর কৃষিজমি হারিয়ে যাচ্ছে নগরায়ণ, শিল্পায়ন ও অপরিকল্পিত উন্নয়নের কারণে।
তারা বলেন, ভূমি দখল, বেসরকারিকরণ, রাসায়নিকের ক্ষতি ও জলবায়ু পরিবর্তন কৃষিজমির জন্য বড় হুমকি। কৃষিজমি সুরক্ষায় সরকারের প্রস্তাবিত আইনের কার্যকর বাস্তবায়নের ওপর তারা গুরুত্বারোপ করেন।
এ সময় কৃষি, ভূমি, পরিবেশ এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট অংশীজন এ আলোচনায় অংশ নেন।
‘নারীর শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, সামাজিক সুবিধা, এবং ন্যায়বিচারের মতো মৌলিক অধিকার সুরক্ষায় শক্তিশালী জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে সবার জন্য জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করলেও বিদ্যমান আইনের দুর্বলতা এই লক্ষ্য অর্জনে বড় বাধা হিসেবে কাজ করছে।’
মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস-২০২৫ উপলক্ষে গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটর জিএইচএআইর সহযোগিতায়, গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) আয়োজিত, ‘নারী অধিকার সুরক্ষায় শক্তিশালী নিবন্ধন আইন’ শীর্ষক ওয়েবিনারে এ বিষয় তুলে ধরেন বক্তারা।
দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা বন্ধে ঐক্যবদ্ধ হই, ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করি।
ওয়েবিনারে জানানো হয়, জন্ম নিবন্ধনের অভাবে বয়স প্রমাণ করা কঠিন হয় ফলে মেয়েরা বাল্যবিয়ের শিকার হয়। বাল্যবিয়ে নারীর ওপর শারীরিক ও মানসিক সহিংসতার ঝুঁকি বাড়ায়। অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের মধ্যে প্রারম্ভিক মাতৃত্বকালীন স্বাস্থ্যঝুঁকি ও মাতৃমৃত্যুর হার বেশি।
নিবন্ধনহীনতা নারীপাচার ও নারীদের ঝুঁকিপূর্ণ পেশা গ্রহণেও ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশে সম্পত্তিহীন নারীদের মধ্যে মৃত্যু নিবন্ধন হার খুবই কম। নারীর জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের অগ্রগতি উল্লেখযোগ্যহারে বাড়াতে, আইন সংশোধন করে পরিবারের বদলে স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধনের দায়িত্ব দিতে হবে, যাতে হাসপাতালে ঘটিত জন্ম ও মৃত্যু স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিবন্ধনের আওতায় আসে। বর্তমানে বাংলাদেশে জন্ম নিবন্ধনের হার মাত্র ৫০ শতাংশ এবং মৃত্যু নিবন্ধনের হার ৪৭ শতাংশ, যা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক গড় হারের তুলনায় অনেক কম।
ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে. চৌধুরী বলেন, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনে লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য নারীদের অদৃশ্য করে তোলে। প্রতিটি নারীর পরিচয় ও অধিকার নিশ্চিত করতে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন, ২০০৪ সংশোধনের মাধ্যমে শক্তিশালী করা জরুরি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সামিনা লুৎফা বলেন, ব্যক্তি ও রাষ্ট্রীয় জীবনে নারীর অধিকার ও মর্যাদা সুরক্ষায় সকল নারীর জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন নিশ্চিত করতে হবে।
জিএইচএআই বাংলাদেশ কান্ট্রি লিড মুহাম্মাদ রূহুল কুদ্দুস বলেন, হাসপাতালভিত্তিক জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন পদ্ধতি চালুর মাধ্যমে প্রত্যেক নারীকে নিবন্ধনের আওতায় আনা সম্ভব। এতে, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) ১৬.৯ (সবার জন্য বৈধ পরিচয়পত্র) অর্জন ত্বরান্বিত হবে।
ওয়েবিনারে আলোচক হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স-আত্মার কো-কনভেনর নাদিরা কিরণ এবং জাতীয় দৈনিকে রিপোর্টার রাবেয়া বেবী। গণমাধ্যমকর্মী, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা ওয়েবিনারে অংশ নেন।
প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়েরের সভাপতিত্বে ওয়েবিনারটি সঞ্চালনা ও উপস্থাপনা করেন সংগঠনের কো-অর্ডিনেটর মাশিয়াত আবেদিন।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক উপদেষ্টা শারমিন এস মুর্শিদ বলেছেন, দেশের যেকোনো জায়গায় নারী ও শিশু নির্যাতন তথ্য ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মন্ত্রণালয়ে পৌঁছাতে হবে বলে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছে।
গতকাল সোমবার সচিবালয়ে তথ্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ নির্দেশনা দেন।
শারমিন এস মুর্শিদ বলেন, ‘নারী ও শিশু নির্যাতনের তথ্য পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ভিকটিমের কাছে সরকারি লোকজন পৌঁছে যাবে এবং তার চিকিৎসা ও আইনি সহায়তার জন্য সবকিছু করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘১৬ দিনব্যাপী নারী নির্যাতন প্রতিরোধপক্ষ আগামীকাল (২৫ নভেম্বর) থেকে শুরু হচ্ছে এবং এটা শেষ হবে আগামী ১০ ডিসেম্বর। এই সময়কালে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রত্যেকটা কর্মকর্তা ও কর্মচারী সচেষ্টভাবে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে কর্মক্ষম থাকবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের মিডিয়ার সঙ্গে খুব ঘন ঘন বসা হয় না। তবে ইচ্ছে আছে যে এই অনুষ্ঠান আয়োজনের পর থেকে আমরা আরও নিয়মিতভাবে বসব।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ১৬ দিনব্যাপী যে আয়োজনটা হতে যাচ্ছে, সেটার যদিও একটি আন্তর্জাতিক সূত্র আছে। কিন্তু বাংলাদেশে, আমার সমাজে, আমার কমিউনিটিতে এর তাৎপর্য অপরিসীম।’
উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আমরা সব সময় দেখে এসেছি যে রাজনৈতিক শাসকরা তাদের নানা রাজনৈতিক স্বার্থে মেয়েদের ওপর জুলুম করে। যেমন জমি যদি দখল করতে হয়, তবে নারীকে নির্যাতন করও, শিশুকে নির্যাতন করও। তাহলে সেই জমি থেকে পরিবারগুলো সরে যাবে। যদি নির্বাচনকে পক্ষে আনতে হয়, তবে একটি কমিউনিটির ওপরে সহিংসতা আরোপ করও আর সেই কমিউনিটির মেয়েদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দাও। তাহলে সেই গোষ্ঠী জায়গা থেকে সরে যাবে। এতে করে যারা রাজনৈতিক বদ উদ্দেশ্যে এই ঘটনাগুলো ঘটায়, তাদের লাভ হয়। এ থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘একটি আলোকিত সমাজে মেয়েদের প্রতি, শিশুদের প্রতি, নারীদের প্রতি যে স্বাভাবিক সম্মানবোধটুকু থাকে, সেটা যখন ভাঙতে শুরু করে সেই সমাজ; কিন্তু সার্বিকভাবে ভাঙতে থাকে। গত ১৬ বছরে একটি স্বৈরাচারী পরিবেশে আমরা এটার একটি চরম রূপ দেখেছি।’
তিনি বলেন, ‘যারা দেশকে ভালোবাসে, যারা শান্তি চায়, যারা পরিবেশে পরিবারে সমৃদ্ধি চায়, তাদের সকলের মনের গভীরে এই বোধটি কাজ করবে।’
তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম বলেছেন, গুজব ও অপতথ্যের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমকে শক্ত অবস্থান নিতে হবে। একই সঙ্গে গণমাধ্যমের ওপর জনগণের আস্থাহীনতা দূর করতে হবে।
গতকাল সোমবার বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সদস্যদের অংশগ্রহণে ‘গণমাধ্যমের অপসাংবাদিকতা প্রতিরোধ এবং বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন’ বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল এই কর্মশালার আয়োজন করে।
গুজবের ব্যাপকতা তুলে ধরে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা বলেন, জেনে-শুনে গুজব ও অপতথ্য ছড়ানো হচ্ছে। বিগত সরকারের ১৫ বছরের শাসনামলে অপতথ্যের ব্যাপকতা ঘনীভূত হয়েছে। ভূমিকম্প সম্পর্কিত সংবাদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কিছু গণমাধ্যম ভূমিকম্প সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধির পরিবর্তে প্যানিক (আতঙ্ক) ছড়িয়েছে। এটি দুঃখজনক।
মাহফুজ আলম বলেন, গণমাধ্যমের ওপর জনগণের আস্থা না থাকলে যে কেউ যেকোন তথ্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করবে এবং দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। এজন্য গণমাধ্যমের ওপর জন-আস্থা ফেরাতে হবে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় গণমাধ্যমের দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রত্যাশা করেন তিনি।
বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের কার্যক্রম তুলে ধরে উপদেষ্টা বলেন, এটি কোয়াসি জুডিশিয়াল (আধা-বিচারিক) প্রতিষ্ঠান। বিগত সরকার প্রতিষ্ঠানটিকে অকার্যকর করে রেখেছিল। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার প্রেস কাউন্সিলকে কার্যকর করার উদ্যোগ নিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, অধিকারের জায়গা থেকে সাংবাদিকদের প্রেস কাউন্সিলের দ্বারস্থ হওয়ার সুযোগ রয়েছে। তিনি বিদ্যমান আইনের মধ্যে থেকে প্রেস কাউন্সিলকে শক্তিশালী ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি এ. কে. এম. আব্দুল হাকিমের সভাপতিত্বে প্রশিক্ষণ কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবা ফারজানা। কর্মশালায় আরও বক্তব্য দেন দ্য ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস-এর সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি আবু সালেহ আকন। প্রশিক্ষণ কর্মশালায় ৫০ জন সাংবাদিক অংশগ্রহণ করেন। কর্মশালা শেষে অংশগ্রহণকারী সাংবাদিকদের মাঝে সনদ বিতরণ করা হয়।
নির্বাচন পর্যবেক্ষণের সময় শতভাগ স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে দায়িত্বপ্রাপ্তদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন।
তিনি বলেন, যারা মাঠপর্যায়ে কাজ করবেন, অনুগ্রহ করে তারা শতভাগ নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করবেন। একই সঙ্গে আপনাদের পক্ষে যারা কাজ করবেন তাদেরকেও এ কথা জানিয়ে দেবেন। নির্বাচন কমিশনের একটাই এজেন্ডা-আর তা হল জাতিকে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেওয়া। তাই সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতা বজায় রেখে কাজ করা সকলের জাতীয় দায়িত্ব।
আজ (মঙ্গলবার) সকালে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ৪০টি পর্যবেক্ষক সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংলাপ চলাকালে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার স্বচ্ছতার সঙ্গে সকলকে রিপোর্ট করার আহ্বান জানান। তিনি আরও বলেন, নির্বাচনে কমিশনের নিজস্ব সুপারভাইজারি মেকানিজম থাকবে, অফিশিয়াল মেকানিজম থাকবে। কিন্তু আপনাদের চোখ দিয়েও আমরা এই নির্বাচনকে দেখতে চাই। যারা মাঠপর্যায়ে কাজ করবেন, তারা নির্বাচন সংক্রান্ত কাজগুলো স্বচ্ছভাবে হচ্ছে কিনা এবং আচরণ বিধিমালা ও আইনগুলো সঠিকভাবে পালন করা হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে আমাদের জানাবেন।
সিইসি বলেন, যাদেরকে নিয়োগ করবেন তারা যাতে দলীয় প্রচার-প্রচারণা করে কাউকে প্রভাবিত করতে না পারেন, সে বিষয়টা খেয়াল করবেন। মনে রাখবেন, তাদের দায়িত্ব হবে পর্যবেক্ষণ করা; নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করা নয়।
তিনি বলেন, আপনাদেরকে সহযোগী হিসেবে পেতে চাই। আমরা জাতিকে ওয়াদা দিয়েছি একটি সুষ্ঠু, সুন্দর এবং বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন উপহার দেওয়ার। কিন্তু এটা ইলেকশন কমিশনের একার পক্ষে সম্ভব নয়। অতীতের ভুলভ্রান্তি থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই।
নির্বাচনের প্রতিটি স্তরে পর্যবেক্ষকদের ভূমিকা থাকবে উল্লেখ করে সিইসি বলেন, প্রচারকালীন পরিস্থিতি, কেন্দ্র ব্যবস্থাপনা বা প্রিজাইডিং অফিসার ও পুলিশের দায়িত্ব পালন এবং ভোটারদের কেন্দ্রে আসতে বাধা দেওয়া হচ্ছে কিনা-ইত্যাদি সম্পর্কে তারা রিপোর্ট দেবেন। তবে সেটি হতে হবে শতভাগ সত্যনির্ভর। কেননা এই রিপোর্টের ওপরই অনেক কিছু নির্ভর করবে।
এএমএম নাসির উদ্দিন বলেন, নির্বাচন কমিশনের ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি বিচ্যুতি থাকলে তাও সংশোধন করা হবে। এ বিষয়েও আপনারা সুপারিশ দিতে পারবেন। আমরা স্বচ্ছতার সঙ্গে ভোটারবান্ধব পরিবেশে নির্বাচনের আয়োজন করতে চাই।
সংলাপে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ, আব্দুর রহমানেল মাছউদ, তাহমিদা আহমেদ, মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার ও সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদসহ কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সূত্র: বাসস
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ‘ভবিষ্যতে বড় ধরনের ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে এখনই সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। শুধু রাজউক নয়, সংশ্লিষ্ট সব সংস্থাকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। জননিরাপত্তার স্বার্থে প্রয়োজন হলে ব্যক্তিগত সম্পত্তির ঝুঁকি নিরূপণ ও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারের হস্তক্ষেপের ক্ষমতা থাকতে হবে।’
গতকাল সোমবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি)–এর কাউন্সিল কক্ষে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) আয়োজিত ‘ভূমিকম্প ঝুঁকি হ্রাসে প্রস্তুতি ও করণীয়’ শীর্ষক সেমিনার ও মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ভূমিকম্পে প্রস্তুতির পাশাপাশি মানুষকে আরও সচেতন করতে হবে। তিনি প্রস্তাব করেন যে রাজউকের পাশাপাশি থার্ড পার্টির মাধ্যমে রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট শুরু করা যেতে পারে। বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয়দের সহায়তায় জরিপ কার্যক্রম দ্রুত শুরু করারও আহ্বান জানান তিনি। অপেক্ষা করার সুযোগ নেই, মানুষকে আশ্বস্ত করতে হবে যে সরকার ভূমিকম্প মোকাবিলায় সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।
তিনি বলেন, পুরান ঢাকায় ঝুঁকিপূর্ণ কেমিক্যাল কারখানা, ঘনবসতি, বিল্ডিং কোড না মানাসহ নানা কারণে এলাকাটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এসব কেমিক্যাল কারখানা স্থায়ীভাবে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার ওপর তিনি জোর দেন। জরুরি ভিত্তিতে রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট কাজ বিশেষ নির্দেশনার মাধ্যমে শুরু করার পরামর্শও প্রদান করেন তিনি।
সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ধীরগতির সমালোচনা করে পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, অনেক সিদ্ধান্তই বাস্তবায়নের অভাবে ঝুলে থাকে এগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। রাজউককে প্রয়োজনীয় ক্ষমতা দিয়ে প্রক্রিয়াটি সহজ করে তোলাই এখন জরুরি।
তিনি আরও বলেন, আতঙ্ক নয়, এখন প্রয়োজন পরিকল্পিত উদ্যোগ; কীভাবে কাজ শুরু করা যায়, সেটিই গুরুত্বপূর্ণ।
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নজরুল ইসলাম। সভায় সভাপতিত্ব করেন রাজউক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. রিয়াজুল ইসলাম। এছাড়া সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।