পদ্মা সেতু চালু হওয়ার এক বছর পূর্ণ হলো। সেতুর প্রভাবে বদলে গেছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অনেক জনপদ। নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্প অবকাঠামো খাতে। সবচেয়ে বড় পরিবর্তন এসেছে সড়ক যোগাযোগ ক্ষেত্রে। গ্রামের সঙ্গে শহুরে মানুষের যোগাযোগ বেড়েছে। রাজধানীর সঙ্গে যোগাযোগ সহজ ও দ্রুততর হওয়ায় সাধারণ মানুষ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের আয়ও বেড়েছে। পদ্মা সেতু দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে।
গত বছরের এই দিন, অর্থাৎ ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের মানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করেন। এর এক দিন পর থেকেই শুরু হয় সেতুতে যান চলাচল। দেখতে দেখতেই সেতু চালু হওয়ার এক বছর পেরিয়ে গেল।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পদ্মা সেতুর মাধ্যমে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলসহ মোংলা বন্দরের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ তৈরি হয়েছে। ঢাকা এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে যাতায়াতের সময় এক-চতুর্থাংশ কমে এসেছে। এতে করে পর্যটন খাতেরও ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে। কুয়াকাটা ও সুন্দরবনে পর্যটক যাতায়াত বেড়েছে। নির্মাণ খাতে ২৯ শতাংশ, কৃষি খাতে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ এবং উৎপাদন ও পরিবহনে ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখছে পদ্মা সেতু। তা ছাড়া মাওয়া-জাজিরা রুটে ফেরি সার্ভিসে খরচ কমেছে সরকারের।
সেতু বিভাগের সচিব মো. মনজুর হোসেন দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘পদ্মা সেতুর ফলে যে পরিবর্তন এসেছে, সেটা এখন দৃশ্যমান। সবচেয়ে বড় পরিবর্তন হয়েছে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলায়। এসব জেলার সঙ্গে দেশের অন্যান্য জেলার সরাসরি যোগাযোগ তৈরি করেছে পদ্মা সেতু। একই সঙ্গে এসব অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হচ্ছে। জমির ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন। মানুষের যাতায়াতে এবং পণ্য পরিবহনে সময় এবং ব্যয় কমে গেছে। এতে কৃষিপণ্য, ব্যবসা-বাণিজ্য সব ক্ষেত্রেই ব্যাপক প্রসার হয়েছে। পদ্মা সেতুর যে প্রভাব পড়েছে, সেটা আমাদের প্রত্যাশার চেয়েও বেশি।’
এক বছরে সেতুর টোল
সেতু পারাপারে ১৩ ধরনের যানবাহনের জন্য টোল নির্ধারণ করা আছে। সেই অনুযায়ী টোল আদায় করা হচ্ছে। গত ২৩ জুন পর্যন্ত পদ্মা সেতুতে টোল আদায় হয়েছে ৭৯৪ কোটি ৫৩ লাখ ৪ হাজার ৭৫০ টাকা।
সেতু চালুর আগে ট্রাফিক পূর্বাভাসে যেটা বলা হয়েছিল তার চেয়ে আড়াই থেকে তিন গুণ বেশি টোল আদায় হয়েছে। সেতু চালুর প্রথম বছরে ছয় হাজার গাড়ি চলাচলের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কিন্তু বর্তমানে ১৫ থেকে ১৮ হাজার করে সাধারণ সময়ে প্রতিদিন সেতু দিয়ে যানবাহন পারাপার হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সেতুসচিব।
সরকার নিজস্ব অর্থায়নে ৩২ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছে। সেতুটি নির্মাণের ব্যয় সেতু বিভাগকে ধার দিয়েছে সরকারের অর্থ বিভাগ।
আগামী ৩৫ বছরে, অর্থাৎ ২০৫৭ সাল পর্যন্ত ১ শতাংশ সুদসহ ১৪০টি ত্রৈমাসিক কিস্তিতে ঋণের এই টাকা সরকারকে পরিশোধ করবে সেতু বিভাগ। ইতিমধ্যে পদ্মা সেতুর ঋণের তৃতীয় ও চতুর্থ কিস্তির টাকা পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ।
ঋণের টাকা পরিশোধের বিষয়ে জানতে চাইলে সেতু বিভাগের সচিব মো. মনজুর হোসেন দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘সেতু চালু হওয়ার প্রথম বছরে ৬৩৩ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে সরকারকে, সেটা কিন্তু আমরা করতে পেরেছি। ঋণের টাকা সেতুর টোল আদায়ের টাকা থেকেই পরিশোধ করেছি। আমরা আমাদের টার্গেটের মধ্যেই রয়েছি। ফলে ঋণ পরিশোধ নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই হবে।’
শেষের পথে নদীশাসনের কাজ
৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার পদ্মা সেতুর পাড় রক্ষায় করা হচ্ছে নদীশাসন। সেতুর নদীশাসনের কাজ ৯৯ দশমিক ৫ ভাগ শেষ। ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত কাজ শেষ করার মেয়াদ ধরা আছে। তবে তার আগেই কাজ শেষ হয়ে যাবে মত প্রকল্পসংশ্লিষ্টদের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘নদীশাসনের অল্প একটু কাজ বাকি আছে, যেটা পানি না বাড়লে করা যাবে না। নদীতে পানি এবার কম বেড়েছে, তাই বাকি কাজ করা যাচ্ছে না। পানি কম থাকায় জাহাজ যেতে পারছে না এবং সার্ভে করতে পারছে না। তাই নদীতে পানি বাড়লেই আমাদের কাজ শেষ হয়ে যাবে। বাকি কাজটা করতে এক থেকে দুই মাস সময় লাগতে পারে।’
পদ্মা সেতু চালুর এক বছরের বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘সেতুর নির্মাণকাজটি আমরা শেষ করতে পেরেছি, এটা আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। বিশ্বের অন্যতম একটি জটিল প্রকল্প ছিল পদ্মা সেতু। সেই কাজটি আমরা শেষ করতে পেরেছি। আমাদের কাজের মধ্যে দিয়ে দেশবাসীকে যাতায়াতের একটি সুন্দর ব্যবস্থা করতে পেরেছি।’
যাতায়াতের দূরত্ব কমেছে
ঢাকা থেকে পাটুরিয়া হয়ে যেসব মানুষ দক্ষিণের জেলাগুলোতে যেতেন, তাদের বড় অংশ এখন পদ্মা সেতু দিয়ে যাচ্ছেন। এতে যাতায়াতের দূরত্ব কমেছে, সময় কম লাগছে এবং ব্যয়ও কমেছে। এই এক বছরে মানুষ স্বস্তি ও আনন্দ নিয়ে সেতুটি দিয়ে যাতায়াত করেছেন।
পদ্মা সেতু চালুর পর দেশের দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগব্যবস্থার পুরো চিত্রই পাল্টে গেছে। পরিবহন ব্যবসার প্রসার হয়েছে। খুলনাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলাগুলোতে নতুন নতুন বিলাসবহুল বাস চলাচল শুরু হয়েছে। এসব অঞ্চলের মানুষ এখন সকালে ঢাকায় এসে কাজ করে আবার বিকেলে বাড়ি ফিরে যেতে পারেন পদ্মা সেতুর কল্যাণে।
মিজানুর রহমান কাজ করেন খুলনার একটি বেসরকারি ব্যাংকে। তার পরিবার বসবাস করে রাজধানীতে। তিনি প্রতি বৃহস্পতিবার বিকেলে অফিস শেষে খুলনা থেকে ঢাকায় আসেন। শনিবার সকালে আবারও ঢাকা থেকে রওনা হয়ে খুলনায় গিয়ে অফিস করেন।
তবে পদ্মা সেতু চালুর আগে ঢাকা-খুলনা যাতায়াতে এত সহজ ছিল না। মাওয়া ফেরিঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিলম্ব করতে হতো যাত্রীদের।
সোহাগ পরিবহনের খুলনার রয়্যাল মোড় কাউন্টারের সহকারী ম্যানেজার মো. বুলবুল বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালুর পর খুলনা থেকে ঢাকায় পৌঁছাতে সাড়ে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা সময় লাগছে। তাই এখন গাড়িতে আগের তুলনায় যাত্রী অনেক গুণ বেড়েছে।’
তবে সড়কপথে যাত্রী বেড়ে যাওয়ায় যশোর বিমানবন্দর দিয়ে ঢাকাগামী যাত্রী কমেছে অনেকাংশে। ফলে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের সংখ্যাও কমিয়ে দিয়েছে এয়ারলাইনসগুলো।
কৃষিতে সম্ভাবনা-টাটকা মাছ ও সবজি আসছে ঢাকায়
পদ্মা সেতুর কারণে যে জেলাগুলো সরাসরি লাভবান হয়েছে তার মধ্যে খুলনা বিভাগের খুলনা, বাগেরহাট, যশোর, সাতক্ষীরা, নড়াইল, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও মাগুরা। বরিশাল বিভাগের বরিশাল, পিরোজপুর, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা ও ঝালকাঠি এবং ঢাকা বিভাগের গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও রাজবাড়ী।
বিশেষ করে খুলনা ও বাগেরহাটের মাছ, যশোরের সবজি আর ফুল, বরিশালের ধান ও পান পুরো দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কৃষি অর্থনীতির ভিত্তি। যদিও সেখানকার প্রতিটি জেলাতেই ধান ও মাছ চাষ করা হয়।
মৎস্য অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলা থেকে ঢাকায় প্রায় ১৮০ মেট্রিক টন বিভিন্ন প্রজাতির মাছ নেয়া হয়। এ ছাড়া এসব জেলা থেকে প্রতিদিন প্রায় ৬০০ মেট্রিক টন কৃষিপণ্য রাজধানীতে নেয়া হয়।
খুলনার এক ব্যবসায়ী বাশার মোল্লা বলেন, আগে ট্রাকে করে পণ্য নিতে দীর্ঘ সময় লাগত। আজকের পণ্য ঢাকার বাজারে আগামীকাল বিক্রি করা হতো। তবে এখন সকালে মালামাল পাঠালে দুপুরে পৌঁছে যায়। ফলে ঢাকার ক্রেতারা টাটকা কাঁচা সবজি পাচ্ছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের খুলনা কার্যালয়ের অতিরিক্ত উপপরিচালক মো. মোছাদ্দেক হোসেন বলেন, খুলনা অঞ্চলেও প্রচুর পরিমাণে কৃষিপণ্য উৎপাদিত হয়। এসব পণ্যের একটি বড় অংশ রাজধানীতে নেয়া হয়। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় কৃষিপণ্য বিপণন সহজ হয়েছে।
বাড়ছে জমির দাম, হচ্ছে শিল্পকারখানা
ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বাড়ছে শিল্প-কলকারখানা। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে জমির দামও। গার্মেন্ট কারখানা, বোতলজাত পানি পরিশোধনের কারখানা বরিশালে প্রথমবারের মতো গড়ে উঠবে।
এদিকে পদ্মা সেতুর ফলে রূপসা ও পশুর নদীর তীরের জমির দাম বদলে গেছে রাতারাতি। ঢাকার অধিকাংশ শিল্প গ্রুপ এই অঞ্চলে জমি কিনে রাখছে। পশুর নদীর তীরে গাজী গ্রুপ প্রায় ৪০ একর জমি কিনেছে। সেখানে তারা নতুন শিল্পায়ন করবে।
স্থানীয় বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম বলেন, গত এক বছরে জমির দাম বাড়তে বাড়তে বিঘা দাঁড়িয়েছে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত। শুধু বটিয়াঘাটাতে অন্তত ১০০টি শিল্প গ্রুপ জমি কিনে রেখেছে। অনেকে আবার জমি ভরাট করে শিল্প-কারখানা নির্মাণকাজ শুরু করে দিয়েছে। একই সঙ্গে বাড়তে শুরু করেছে খুলনা শহরে আবাসন প্রকল্প।
খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তথ্য বলছে, খুলনা শহরের আশপাশে মোট ১০৮টি আবাসন প্রকল্প গড়ে উঠেছে।
এদিকে আবাসন প্রকল্পের মালিকরা জানিয়েছেন, গত এক বছরে জমির দাম প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
পর্যটনশিল্পের নতুন দুয়ার, দক্ষিণে যাচ্ছেন পর্যটক
পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় রাজধানীর সঙ্গে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার যোগাযোগের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব পরিবর্তন এসেছে। যার প্রভাব পড়েছে পর্যটনশিল্পেও। খুব সহজেই পর্যটকরা এখন কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত, খুলনা-বাগেরহাট এবং সুন্দরবন দর্শনে যেতে পারছেন। এতে করে এসব অঞ্চলে আগের থেকে এখন পর্যটক যাতায়াত বহুগুণে বেড়েছে। এতে পর্যটনশিল্পের প্রসার ঘটছে।
খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো বলেন, সুন্দরবনে প্রতিবছর ২ লাখ ৫০ হাজার থেকে ৩ লাখ পর্যটক ভ্রমণ করেন। বর্তমানে পর্যটকদের জন্য ১১টি ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্র রয়েছে। ক্রমান্বয়ে সুন্দরবনে পর্যটনের চাপ বাড়ছে।
গত বছর মে মাসে প্রতিদিন ৫০ থেকে ১০০ জন পর্যটক আসতেন। তবে এ বছর একই সময়ে প্রতিদিন ২০০ থেকে ৩৫০ পর্যটক করমজলে এসেছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে নতুন নতুন বিলাসবহুল হোটেল। ঢাকা থেকে খুব কম সময়ে পৌঁছানো যাচ্ছে কুয়াকাটা। ফলে প্রতিনিয়ত বাড়ছে পর্যটক।
[এই প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন দৈনিক বাংলার খুলনা ব্যুরোর আওয়াল শেখ]
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নবগঠিত আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট (আইটিআইআইইউ) তাদের পুর্নাঙ্গ কার্যক্রম শুরুর প্রথম সাত মাসে প্রায় ১ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকির বিষয় উদঘাটনের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে।
২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে গত সাত মাসে নবগঠিত এই দপ্তরটি ১৮৩ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রাথমিক তদন্ত পরিচালনা করেছে এবং এর ফলে প্রায় ১ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকার কর ফাঁকি শনাক্ত করেছে। এনবিআর-এর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আজ এ তথ্য জানানো হয়।
উদঘাটিত রাজস্ব ফাঁকি হতে ৬৩ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ইতোমধ্যে ২৩১টি এ-চালানের মাধ্যমে ১১৭ কোটি ৪৩ লক্ষ টাকা উদ্ধার করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করা হয়েছে।
২০২৪ সালের ডিসেম্বরে প্রতিষ্ঠার পর থেকে আইটিআইআইইউ তার গোয়েন্দা কার্যক্রমের মাধ্যমে রাজস্ব পুনরুদ্ধার, কর ফাঁকি শনাক্তকরণ এবং আইনানুগ ও ন্যায্য রাজস্ব সংগ্রহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অক্লান্ত পরিশ্রম করে আসছে।
এছাড়াও, ইতোমধ্যে সুনির্দিষ্ট কর ফাঁকির তথ্য পাওয়ায় শতাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবসমূহ সাময়িক জব্দ করা হয়েছে। আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট করদাতাদের স্বেচ্ছায় সঠিক কর প্রদানে উৎসাহিত করছে এবং একইভাবে কর ফাঁকিবাজ ও অর্থ পাচারকারীদের প্রতি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে।
যেকোনো ধরনের কর ফাঁকি ও বেনামি সম্পদ অর্জনের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট আইন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নিতে আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট বদ্ধ পরিকর।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশের রাজস্ব খাতে আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিটের যাত্রা নৈতিক, প্রযুক্তিগত ও আইনগত দিক থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ইতোমধ্যে অর্জিত সাফল্যই প্রমাণ করে- এই ইউনিটের কার্যক্রম কেবল রাজস্ব পুনরুদ্ধার নয়, করদাতাদের কমপ্লায়েন্স বৃদ্ধি ও কর সংস্কৃতি বিকাশে কার্যকর ভূমিকা রাখবে ।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, কর আদায়ে ন্যায্যতা ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে জাতির সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নসহ অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করা সম্ভব। আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিটের ক্রমবর্ধমান সক্ষমতা, প্রযুক্তি নির্ভরতা এবং দক্ষ মানবসম্পদ ভবিষ্যতে বাংলাদেশের শক্তিশালী রাজস্ব কাঠামো বিনির্মাণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে বলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, বর্তমান সরকারের আমলেই জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার সম্পন্ন হবে।
তিনি বলেন, ‘জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে নারায়ণগঞ্জের ২১ জন শহীদ হয়েছেন, এছাড়াও সাড়ে তিনশ মানুষ আহত হয়েছেন। আপনাদের দৃঢ়কণ্ঠে জানাতে চাই বিচারের কার্যক্রম পূর্ণ গতিতে এগিয়ে চলছে। কোনো রকম গাফিলতি থাকবে না। আমরা বিশ্বাস করি বর্তমান সরকারের শাসনামলেই জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে।’
আজ সোমবার বিকেলে সদর উপজেলার হাজীগঞ্জ এলাকায় দেশের প্রথম ‘জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আইন উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘জুলাইয়ে আহত ও নিহত অনেকগুলো মামলার তদন্তের অগ্রগতি হয়েছে। ৫ আগস্টের আগেই এসব মামলার চার্জশিট দিতে বলা হয়েছে। চার্জশিট দিলেই বিচারের প্রক্রিয়া শুরু হবে। প্রয়োজনে দ্রুত বিচার আইনে শহীদদের হত্যার বিচার করা হবে।’
দেশের গণতন্ত্র টিকিয়ে রাখার উদ্দেশ্যে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, জুলাইয়ে মানুষের আত্মত্যাগ, শোক, সাহস নিয়ে দেশবাসী একটা পরিবারে পরিণত হয়েছিলাম। ফ্যাসিস্টদের বাদ দিয়ে দেশের সব মানুষ একটা পরিবার হয়ে আন্দোলন করেই বিজয় পেয়েছিলাম। সেই ঐক্যকে ধরে রাখতে হবে।
তিনি বলেন, বৈষম্যহীন নতুন একটা বাংলাদেশ গড়তে চাই। যেখানে প্রকৃত গণতন্ত্র থাকবে। যেখানে কোন শাসক এসে অপশাসকে পরিণত হবে না। স্থানীয়ভাবে আইনশৃঙ্খলা লঙ্ঘনকারীরা বিশৃঙ্খলা করছে, ভয়ংকর হত্যাকাণ্ড হচ্ছে, চাঁদাবাজি হচ্ছে। জুলাইয়ে যেমন ঐক্যবদ্ধ থেকে ফ্যাসিস্ট সরকারকে পরাজিত করেছিলেন, এইভাবে ঐক্যবদ্ধ থাকলেই চাঁদাবাজদের প্রতিরোধ করতে পারবেন। সরকারের পাশাপাশি আপনারাও চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবেন। প্রশাসন আপনাদের সহযোগিতা করবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোখলেছ উর রহমান ও গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব নজরুল ইসলাম।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, জুলাই শহীদদের প্রকৃত সম্মান হবে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়া।
তিনি জানান, ন্যায়বিচার, যথাযথ স্বীকৃতি ও দায়িত্ব পালনের মাধ্যমেই শহীদদের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা জানাতে হবে।
শহীদ পরিবারগুলোকে সম্মান জানানো, আহতদের তালিকা চূড়ান্ত করে ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা এবং রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হাতে নাগরিক হত্যার পুনরাবৃত্তি যেন আর না ঘটে-এই নিশ্চয়তা দিতে হবে।
সোমবার (১৪ জুলাই) নারায়ণগঞ্জে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়নে নির্মিত দেশের প্রথম ‘জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ’ উদ্বোধনকালে তাঁর বক্তৃতায় পরিবেশ উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, স্বৈরাচারবিরোধী ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের আত্মত্যাগই আজকের স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের ভিত্তি। জুলাই গণঅভ্যুত্থান আমাদের শেখায়—গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় নির্ভীকভাবে রাস্তায় দাঁড়াতে হয়। এই স্মৃতিস্তম্ভ কেবল অতীতের স্মরণ নয়, এটি ভবিষ্যতের জন্য দায়বদ্ধতা তৈরি করে। তিনি বলেন, সকলে মিলে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ বিনির্মাণের মাধ্যমে শহীদের স্মরণ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, শিল্প এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান, গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব মো. নজরুল ইসলাম, ঢাকা বিভাগের কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমদ চৌধুরী ও নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞাসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও বিশিষ্টজনেরা।
উপদেষ্টাবৃন্দ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে খোঁজখবর নেন ও সহমর্মিতা প্রকাশ করেন। পরে উপদেষ্টা শহীদদের স্মৃতিতে বৃক্ষরোপণ করেন।
জুলাই স্মৃতি জাদুঘরের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়। আগামী ৫ আগস্ট জাদুঘরটি উদ্বোধন করা হবে। সে অনুযায়ী প্রস্তুতি চলছে।
সোমবার (১৪ জুলাই) ঢাকায় গণভবনে জুলাই পুনর্জাগরণ অনুষ্ঠানমালার বিষয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘আগামী ৫ আগস্ট জুলাই স্মৃতি জাদুঘর উদ্বোধন করা হবে। তবে জাদুঘরটি দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হবে আরো পরে’।
সংবাদ সম্মেলনে মহিলা ও শিশুবিষয়ক উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সংস্কৃতি উপদেষ্টা বলেন, একজন দর্শনার্থী জাদুঘরে প্রবেশ করার পর তিনি যেন উপলব্ধি করতে পারেন- কেন হলো জুলাই বিপ্লব , আওয়ামী লীগের দুঃশাসন এবং অভ্যুত্থানের স্মৃতি। তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীদের অপরাধের বিচার আদালত করবে কিন্তু আমাদের উদ্দেশ্য হলো একজন দর্শনার্থী জাদুঘরে এসে যেন শেখ হাসিনার অপরাধের বিচার নিজের বিবেক দিয়ে করতে পারেন।
জুলাই স্মৃতি জাদুঘর পরিচালনার জন্য একটি আইনি কাঠামো দাঁড় করানো হবে বলেও জানান তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জুলাই স্মৃতি জাদুঘরে জুলাই আন্দোলনের স্থিরচিত্র, বিভিন্ন স্মারক, নানা উপকরণ, শহীদদের জামাকাপড়, চিঠি, গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র, ওই সময়ের পত্রিকার কাটিং, অডিও-ভিডিওসহ বিভিন্ন স্মৃতি স্মারক থাকবে।
এছাড়া সেখানে বিশেষ স্থান পাচ্ছে স্বৈরাচার ও গণহত্যাকারী শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার দৃশ্যও। এ জাদুঘর বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরেরই একটি অংশ।
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, একটি বৈষম্যমুক্ত নতুন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় যুবদের জনসম্পদে রূপান্তর এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরিতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ।
‘বিশ্ব যুব দক্ষতা দিবস’ উপলক্ষে আজ সোমবার এক বাণীতে তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘের আহ্বানে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ১৫ জুলাই ‘বিশ্ব যুব দক্ষতা দিবস’ উদ্যাপিত হচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের জাতীয় উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা, শিল্পক্ষেত্রে বহুমুখী শ্রমের চাহিদা পূরণ এবং আন্তর্জাতিক বাজারে অধিকসংখ্যক শ্রমিকের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে দক্ষ জনশক্তি অপরিহার্য। পরিবর্তিত বিশ্ব প্রেক্ষাপটে আমাদের যুবসমাজকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর করতে আধুনিক প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহারের বিকল্প নেই। এ প্রেক্ষিতে ইউনেস্কো-ইউনেভোক নির্ধারিত দিবসটির এ বছরের প্রতিপাদ্য- ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ডিজিটাল দক্ষতার মাধ্যমে যুবদের ক্ষমতায়ন’ যথার্থ হয়েছে বলে আমি মনে করি।’
তিনি বলেন, দেশবিদেশের শ্রমবাজারের চাহিদার ভিত্তিতে যুবদের প্রশিক্ষণ প্রদান ও তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরিতে সরকার ইতোমধ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। স্থানীয় বাজারের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি আগামী দিনে দক্ষ জনশক্তি রপ্তানিতে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান আরো শক্তিশালী হবে বলে আমি মনে করি। জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (এনএসডিএ) সরকারি-বেসরকারি অংশীজনদের সঙ্গে নিয়ে একটি দক্ষতা উন্নয়ন ইকোসিস্টেম গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছে। দক্ষ যুবসম্পদ তৈরিতে প্রতিষ্ঠানটির সকল কার্যক্রম আরো জোরদার করার জন্য আমি আহ্বান জানাই।
প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, একটি আধুনিক উন্নত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় যুবসমাজের দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে তাদেরকে পরিবর্তনশীল কর্মক্ষেত্রের উপযোগী ও উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। আমি আশা করি, এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে ‘বিশ্ব যুব দক্ষতা দিবস, ২০২৫’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
প্রধান উপদেষ্টা ‘বিশ্ব যুব দক্ষতা দিবস’ উপলক্ষে গৃহীত সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, চব্বিশের জুলাই মাসে ফ্যাসিবাদবিরোধী যে সংগ্রাম বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের মাধ্যমে সূচনা হয়েছিল, ১৪ জুলাইয়ের ঘটনাপ্রবাহ সে আন্দোলনকে নতুন মোড় দেয়।
তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অংশগ্রহণকারীদের প্রতি অবমাননাকর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীরা মধ্যরাতেই পথে নেমে এসেছিলেন। নারীদের বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর সেই অপমানের বিরুদ্ধে আন্দোলনকে বেগবান করেছিল এবং সকলের প্রতিরোধের মুখে ফ্যাসিবাদী শাসন ক্রমাগত পশ্চাদপসরণে বাধ্য হয়েছিল।
সোমবার (১৪ জুলাই) ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় পর্যায়ের ১৩তম দিনের আলোচনার শুরুতে অধ্যাপক আলী রীয়াজ এসব কথা বলেন।
এ সময় কমিশনের সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ড. মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণকে মর্যাদা দিয়ে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে ১৪ জুলাইকে ‘জুলাই নারী দিবস’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে উল্লেখ করে কমিশনের সহ-সভাপতি বলেন, রাষ্ট্র বিনির্মাণে নারীদের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে। এই প্রাতিষ্ঠানিক রূপের মাধ্যমেই রাজনীতিতে, রাষ্ট্র গঠনে এবং আইন প্রণয়নে নারীদের মর্যাদার সঙ্গে অংশগ্রহণের পথ তৈরি হবে। তিনি এ বিষয়ে এক জায়গায় পৌঁছে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আজকের আলোচনায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টিসহ ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিগণ অংশগ্রহণ করেন। আজ নারী প্রতিনিধিত্ব এবং দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা—এই দুইটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।
ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের (স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ) সামনে নৃশংস হত্যার শিকার ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে হিন্দু দাবি করে ভারতের একাধিক গণমাধ্যমে মিথ্যা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।
রোববার রাতে প্রেস উইং ফ্যাক্ট চেক তাদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে প্রকাশিত বিবৃতিতে এসব তথ্য জানায়। সেখানে বলা হয়, ‘এনডিটিভি, ইন্ডিয়া টুডে এবং ডব্লিউআইওএনসহ ভারতের একাধিক গণমাধ্যম নিহত মো. সোহাগ ওরফে লাল চাঁদকে হিন্দু হিসেবে হিসেবে উপস্থাপন করেছে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। বাস্তবে তিনি একজন মুসলিম ব্যবসায়ী।’
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, লাল চাঁদের পিতার নাম মো. আইয়ুব আলী এবং মায়ের নাম আলেয়া বেগম। তার স্ত্রীর নাম স্ত্রী লাকি বেগম। এই দম্পতির দুই সন্তান। ফাতেমা ও সোহান।
গত ৯ জুলাই স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩ নম্বর গেটের সামনে দুর্বৃত্তরা লাল চাঁদকে পিটিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। মৃত্যুর পরও তার মরদেহে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। মর্মস্পর্শী এই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
হত্যার ঘটনায় পুলিশ এখন পর্যন্ত ৭ জনকে হেফাজতে নিয়েছে। নিহত সোহাগকে গত শুক্রবার তার গ্রামের বাড়ি বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের বান্দারগাছিয়া গ্রামে মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হয়।
প্রেস উইং আরো জানায়, ‘ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো শিরোনামে সোহাগকে হিন্দু বলে উল্লেখ করলেও প্রতিবেদনে তার ধর্ম বা ব্যক্তিগত পরিচয় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেয়নি।’
বিবৃতিতে প্রেস উইং অভিযোগ করেছে, ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো বাংলাদেশে কথিত সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে ধারাবাহিকভাবে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদন প্রকাশ করছে।
গাজায় রোববার ইসরাইল বিমান হামলা চালিয়েছে। হামালায় শিশুসহ ৪৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতির আলোচনা অচলাবস্থার মধ্যে ইসরাইল এ হামলা চালায়। গাজার নাগরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা এ তথ্য জানিয়েছে।
গাজা সিটি থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ২১ মাস ধরে চলা ভয়াবহ যুদ্ধবিরতি বন্ধে একটি অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির বিষয়ে একমত হওয়ার চেষ্টায় ইসরাইল এবং ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা এখন এক সপ্তাহ ধরে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন।
গাজার নাগরিক প্রতিরক্ষা সংস্থার মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল বলেছেন, গাজায় একটি পানি বিতরণ কেন্দ্রে ইসরাইলের ড্রোন হামলায় আট শিশুসহ ১০ জন নিহত হয়েছে।
ইসরাইলি সেনাবাহিনী গাজার মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত নুসাইরাত শরণার্থী শিবিরের এই হামলার জন্য ‘কারিগরি ত্রুটি’কে দায়ী করেছে। সেনাবাহিনী আরো জানিয়েছে, একজন যোদ্বাকে লক্ষ্য করে আক্রমণ চালানোর সময় কারিগরি ত্রুটির কারণে লক্ষ্যবস্তু থেকে কয়েক ডজন মিটার দূরে গোলাটি পড়ে।
রোববার মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, তিনি একটি গাজা যুদ্ধবিরতির চুক্তির বিষয়ে আশাবাদী। ওয়াশিংটন ইসরাইলের শীর্ষ মিত্র এবং ট্রাম্প যুদ্ধবিরতির জন্য চাপ দিচ্ছেন।
বাসাল বলেন, কিন্তু যুদ্ধ বন্ধের কোনও তাৎক্ষণিক লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। রোববার ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড জুড়ে হামলায় গাজা সিটির একটি বাজারে ১১ জনসহ কমপক্ষে ৪৩ জন নিহত হয়েছেন।
নুসাইরাতের বাসিন্দা খালেদ রায়ান এএফপিকে বলেন, দুটি বড় বিস্ফোরণের শব্দে তিনি ঘুম থেকে উঠেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রতিবেশী এবং তার সন্তানরা ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছিল’।
আরেক বাসিন্দা, মাহমুদ আল-শামি, আলোচকদের যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের সাথে যা ঘটেছে তা মানবতার ইতিহাসে কখনও ঘটেনি’। ‘যথেষ্ট হয়েছে।’
মেহেরপুর কলেজ মোড়ে “জুলাই শহিদ স্মৃতি স্তম্ভ” নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে।
গণপূর্ত বিভাগের প্রায় ১৪ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য এই স্মৃতিস্তম্ভের নির্মাণ কাজের সূচনা হয় সোমবার সকালে, জেলা প্রশাসক সিফাত মেহনাজের নামফলক উন্মোচনের মাধ্যমে। উদ্বোধন শেষে সেখানে মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মেহেরপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. নজরুল কবীর, গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম রফিকুল হাসান, সিভিল সার্জন ডা. এস এম আবু সাঈদ, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামিনুর রহমান, এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী শাখাওয়াত হোসেন, সদর উপজেলা নির্বাচন অফিসার খায়রুল ইসলাম, তথ্য অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন, সমাজসেবা উপ-পরিচালক আসাদুল ইসলাম, কৃষি সম্প্রসারণ উপ-পরিচালক শামসুল আলম, জেলা নির্বাচন অফিসার মোঃ ওয়ালিউল্লাহসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সহকারী কমিশনার শেখ তৌহিদুল কবির, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার রুহুল আমিন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র প্রতিনিধি তামিম ইসলাম ও খন্দকার মুহিত, জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নাসিমা খাতুন, সরকারি কলেজের শিক্ষক হেজমত আলী মালীথ্যা ও ফুয়াদ খান, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মনিরুল ইসলাম, ফায়ার সার্ভিস অফিসার শামীম রেজা, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট কামরুল হাসান, জেলা জামায়াতের রাজনৈতিক সেক্রেটারি কাজী রুহুল আমিন ও প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি শফিকুল ইসলাম মিন্টু প্রমুখ।
স্মৃতি সংরক্ষণ ও প্রজন্মকে ইতিহাস সম্পর্কে সচেতন করতে নির্মাণ হচ্ছে এই স্মৃতি স্তম্ভ।
২০২৪ সালের ১৫ জুলাই (সোমবার) সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর দফায় দফায় হামলা চালায় ছাত্রলীগ। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।
ছাত্রলীগের এই হামলায় সারাদেশে চার শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। এর মধ্যে শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আহত হন ২৯৭ জন শিক্ষার্থী। তারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। এদিন হাসপাতালে গিয়েও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ।
আগের দিন ১৪ জুলাই বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ বলে কটুক্তি করেন। এ কটুক্তির প্রতিবাদে রাতে উত্তাল হয়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। রাত ১১টার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের হলসহ প্রায় প্রতিটি আবাসিক হল থেকে ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার’ স্লোগানে মিছিল নিয়ে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হন শত শত শিক্ষার্থী।
পরের দিন ১৫ জুলাই ধানমন্ডিতে দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তার আত্মস্বীকৃত রাজাকার, গত রাতে নিজেদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ মানসিকতার প্রকাশ ঘটিয়েছে। এর জবাব ছাত্রলীগই দেবে।’
সেদিন কোটা সংস্কার আন্দোলনে যারা নিজেদের ‘রাজাকার’ বলে স্লোগান দিয়েছে, তাদের শেষ দেখে ছাড়বেন বলে হুমকি দেন ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন।
এই দুইজনের এমন বক্তব্যের পর দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর স্বশস্ত্র হামলা চালায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
১৫ জুলাই বেলা ১২টার পর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও এর অধিভুক্ত সাত কলেজ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হন। বিকেল ৩টার দিকে আন্দোলনকারীদের একটি অংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের হলপাড়ার দিকে মিছিল নিয়ে যান। সেখানে ছাত্রলীগের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বাধে। বিজয় একাত্তর হলের সামনে সংঘর্ষের সূচনা হয়। তখন আশপাশের হল ও মধুক্যান্টিন থেকে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা এসে মল চত্বরে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে। ছাত্রলীগের হামলার মুখে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে ভিসি চত্বর এলাকায় যাওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা রড, হকিস্টিক, রামদাসহ অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে। বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসের ভেতর আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু সেখানেও তাদের মারধর করে রক্তাক্ত করা হয়।
ছাত্রলীগের হামলায় শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে দিগ্বিদিক চলে যান। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সাত কলেজ, মহানগর শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা মহড়া দেয়। এ হামলায় অনেক নারী শিক্ষার্থীসহ প্রায় তিনশ’ শিক্ষার্থী আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসা নেন। বেশ কয়েকজন সাংবাদিকও আহত হন।
এদিন সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটেও আহত শিক্ষার্থীদের ওপর কয়েক দফা হামলা চালায় ছাত্রলীগ। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ্ হলের সামনে কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
ছাত্রলীগের হামলার বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘৫ শতাধিক শিক্ষার্থীর ওপর হামলা করা হয়েছে। আহতদের মেডিকেলে নিয়ে যাওয়ার পরও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হামলা করেছে। ককটেল নিক্ষেপ করেছে। পুলিশ কোনো ধরনের সহযোগিতা করেনি। আমাদের ওপর এ হামলা পরিকল্পিত। এ হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’
ক্যাম্পাসের সহিংসতার ঘটনায় করণীয় ঠিক করতে এদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হলের প্রাধ্যক্ষদের নিয়ে বেঠক করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল।
বৈঠক শেষে উপাচার্য বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য আমাদের প্রাধ্যক্ষরা রাতভর হলে অবস্থান করবেন।’
সংঘর্ষের পর ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থান নেয় পুলিশ। সন্ধ্যার পরপরই ক্যাম্পাসে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
১৫ জুলাই রাত ১০টার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মোবাইল তল্লাশি ও মারধর করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। স্যার এ এফ রহমান হল, বিজয় একাত্তর হল, মাস্টারদা সূর্যসেন হল ও শহীদ সার্জেন্ট জহরুল হক হলে এমন ঘটনা ঘটে। শিক্ষার্থীরা কোটা আন্দোলন যুক্ত কি না, তা যাচাই করতে শিক্ষার্থীদের মোবাইল তল্লাশি করা হয়। আন্দোলনে সম্পৃক্ততা পেলেই মারধর করা হয়।
এদিন রাজধানীর ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যেতে বাধা ও মারধর করেকলেজ ছাত্রলীগের নেত্রীরা। শিক্ষার্থীরা যাতে আন্দোলনে যেতে না পারে, সেজন্য কলেজের গেটে তালা দেওয়া হয়। কিন্তু শিক্ষার্থীদের একটি অংশ তালা ভেঙে মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্যের সামনে যান।
কোটা আন্দোলনকারীদের নিয়ে শেখ হাসিনার কটুক্তির প্রতিবাদে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পুলিশি বাধা অতিক্রম করে পুরান ঢাকা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে এসে বিক্ষোভে যোগ দেন। এর আগে জবি ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ ও কোটা আন্দোলনকারীদের পাল্টাপাল্টি সংঘর্ষে পাঁচ শিক্ষার্থী আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের পূর্বঘোষিত বিক্ষোভ মিছিলে দফায় দফায় হামলা করে শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। ছাত্রলীগের হামলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাবি শাখার সমন্বয়ক আবদুর রশিদ জিতুসহ ১৫ জন আহত হন।
এর আগে ১৪ জুলাই মধ্যরাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা। রাত সাড়ে ১২টার দিকে শতাধিক বহিরাগত নিয়ে এ হামলা চালানো হয়। এতে অর্ধশত শিক্ষার্থী আহত হন। পরে তারা ভিসির বাসভবনে আশ্রয় নেন।
১৫ জুলাই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর দুই দফায় হামলা চালায় ছাত্রলীগ। এতে ১০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার ও কাটাপাহাড় সড়কে আন্দোলনকারীদের ওপর এ হামলার ঘটনা ঘটে। এছাড়াও চট্টগ্রাম শহরেও কোটাবিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষ হয়। এতে সাংবাদিক ও পুলিশসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন।
এদিন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ বাম ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালায়। এতে কয়েকজন আহত হন। বিশ্ববিদ্যালয়ের মমতাজ উদ্দিন কলাভবনের সামনে এ ঘটনা ঘটে। যশোরে এম এম কলেজের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিলে হামলা করে ছাত্রলীগ। দুপুুরে আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের কাছাকাছি পৌঁছালে ছাত্রলীগ তাদের ওপর হামলা চালায়। এদিন শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় জড়িত ছাত্রলীগ নেতাদের বিচারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর বরাবর স্মারকলিপি দেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
এদিকে কোটা সংস্কারের দাবিতে রাজধানীর নতুন বাজার, কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় সড়ক অবরোধ করেন বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এদিন দুপুর থেকে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।
এছাড়া রাজধানীর বাইরে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি), কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি), খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি), খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন।
১৫ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ‘তুমি কে? আমি কে? রাজাকার, রাজাকার’ স্লোগান দেওয়াকে অত্যন্ত দুঃখজনক বলে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, ‘নিজেদের রাজাকার বলতে তাদের লজ্জাও লাগে না।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ‘রাজাকারের পক্ষে স্লোগান রাষ্ট্রবিরোধী স্লোগান। এটি সরকার বিরোধী নয়, এটি রাষ্ট্র বিরোধী স্লোগান।’
এদিকে কোটা আন্দোলনে যারা নিজেদেরকে রাজাকার বলে স্লোগান দিচ্ছে, তাদেরকে ‘এ যুগের রাজাকার’ বলে অভিহিত করেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তিনি বলেন, ‘এ যুগের রাজাকারদের পরিণতি, ওই যুগের রাজাকারদের মতোই হবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের ন্যাক্কারজনক হামলার প্রতিবাদে ১৬ জুলাই (মঙ্গলবার) বিকেল ৩টায় দেশব্যাপী কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল এবং এই আন্দোলনে দেশের সাধারণ মানুষকে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম।
এদিন রাত সাড়ে ৯টার দিকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য আমরা প্রত্যাখ্যান করছি এবং নিন্দা জানাই। তার এমন বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করতে হবে।’
বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন ঠিক কবে হবে—এই প্রশ্ন এখনো অমীমাংসিত। নির্বাচন নিয়ে রাজনীতিতে সন্দেহ, সংশয় তৈরি হয়েছে। এমন পটভূমিতে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে কথা বলেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন। বিবিসি বাংলাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি মব বা দলবদ্ধ বিশৃঙ্খলা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চ্যালেঞ্জসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন তিনি।
নির্বাচন কবে হবে সেটা কি এখন আপনি বলতে পারবেন— এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, ইটস ভেরি ডিফিকাল্ট ফর মি টু রেসপন্ড, বিকজ আই মাইসেলফ ওন্ট নো এক্স্যাক্ট ডেট (সুনির্দিষ্ট তারিখ)। পোলিং ডেটটা জানি না। এপ্রিলে ফার্স্ট হাফে (প্রথমার্ধে) বলা হচ্ছে। দ্যাট কাইন্ড অফ থিং, উইল বি কমিউনিকেট টু আস, উইথ সাম আইডিয়া দ্যাট– প্লিজ গো অ্যাহেড- দিস ইজ দ্য রেঞ্জ।
সরকার নির্বাচন কমিশনকে ভোটের তারিখ জানিয়েছে কি না— এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আপনি যেমন জানেন, আমিও তেমনি জানি যে আইদার ফেব্রুয়ারি, মানে রমজান মাসের আগে অথবা এপ্রিলে। যেটা সব সময় উনি (প্রধান উপদেষ্টা) বলে আসছেন। সেটাই জানি, যেটা আপনি জানেন, দেশবাসী জানে, তার বক্তব্য থেকে। সেটা আমিও জানি।
সরকার ইসিকে কিছু বলেনি যে কবে নির্বাচন হতে পারে বা কোন সময়ের মধ্যে ভোট হতে পারে— এমন পশ্নের উত্তরে সিইসি বলেন, না সেরকম বলে নাই। আমরা ধরে নিচ্ছি, ইট ইজ আওয়ার অ্যাসাম্পশন (আমাদের ধারণা) যে বর্তমানে যে টাইম ফ্রেম বলা হচ্ছে, আইদার আর্লি ফেব্রুয়ারি বিফোর রমাদান, অর ইট মে বি সাম টাইম ইন দ্য ফার্স্ট হাফ অব এপ্রিল। হতে পারে, এপ্রিলের প্রথম দিকে হতে পারে।
তিনি বলেন, আমরা প্রথম থেকেই ডিসেম্বরকে টার্গেট করে প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। কারণ তখন তিনি ডিসেম্বর টু জুন বলেছিলেন। এজন্য আমরা ডিসেম্বরকে টার্গেট করে— ফ্রম ডে ওয়ান উই স্টার্টেড প্রিপেয়ারিং আওয়ারসেলভ।
নিয়োগকালে নির্বাচনের টাইমফ্রেম বা সময়সীমা নিয়ে কোনো ধারণা দেওয়া হয়েছিল কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, না দেওয়া হয় নাই। বাট আমি ধরে নিয়েছি যে ইলেকশন তো একটা হবে। আমি প্রথমে আমার অফিসারদের সঙ্গে বসেছি, একটা ইলেকশন করতে গেলে কী কী দরকার, কী কী কাজ আমাদের করতে হবে, কী কী কাজ বাকি আছে, তারা আমাদের একটা চার্ট করে দেবেন এবং কোন কাজ করতে কতদিন লাগে সেটা দেবেন। তখন তো আমরা জানি না ডিসেম্বর বা অন্য কোনো টাইমলাইন তো তখনও আসে নাই।
ডিসেম্বরকে লক্ষ্য করে আপনার প্রস্তুতি কবে থেকে শুরু করলেন- এই প্রশ্নের জবাবে নাসির উদ্দিন বলেন, যখন প্রধান উপদেষ্টা ঘোষণা করেন; সম্ভবত গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর তিনি যে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিলেন, তখন আমি মৌলভীবাজারে ছিলাম। ওখানে বসেই আমি শুনলাম যে ‘আইদার ইট উইল বি ইন ডিসেম্বর, অর ইন জুন’- এটা শুনলাম তার বক্তব্যের মধ্যে।
শোনার পর ভাবলেন কি না যে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, হ্যাঁ, এইটা শোনার পরে প্রস্তুতি বাড়িয়ে দিলাম আমরা, ডিসেম্বরকে ধরে ব্যাক ক্যালকুলেশন করে। কারণ ইলেকশনের ডেট থেকে অন্তত দুই মাস আগে আমাদের শিডিউল ঘোষণা করতে হয় আমাদের আরপিও (গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ) অনুসারে।
তিনি বলেন, কারণ তফসিল ঘোষণ থেকে ভোটের তারিখ পর্যন্ত যে কর্মকাণ্ডগুলো দরকার, তাতে অন অ্যাভারেজ দুই মাস না হলে পারা যায় না। যেমন ধরেন, নমিনেশন ফাইল করার জন্য সময় লাগে।
আরেক প্রশ্নের উত্তরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, আমাদের প্রস্তুতি নিয়ে সরকারের কাছ থেকে কোনো গাইডেন্সও নাই, পরামর্শও নাই, আদেশও নাই, নির্দেশও নাই, নাথিং। আমরা অ্যাবসোলিউটলি ইন্ডিপেনডেন্টলি এই প্রস্তুতি নিচ্ছি।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাতে কী কথা হয়েছিল, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা ছিল মূলত সৌজন্য সাক্ষাৎকার। কোনো এজেন্ডাভিত্তিক আলোচনার জন্য আমি যাইনি। আমি প্রেসে বলেছিলাম, সৌজন্য সাক্ষাৎ অর্থ এই নয় যে সালাম দিয়ে বসে থাকলাম ৪৫ মিনিট। তারপর আবার চলে আসলাম ওয়ালাইকুম আস সালাম দিয়ে। ইট ডাজ নট মিন দ্যাট।
তিনি আরও বলেন, অভিয়াসলি, উনি হেড অব দ্য গভমেন্ট, তার জন্য একটা নির্বাচন সামনে আছে, নির্বাচনটা আমাকে ডেলিভার করতে হবে, ইসিকে ডেলিভার করতে হবে। অভিয়াসলি, নির্বাচনটা আলোচনার মধ্যে এসে গেছে। শুধু তিনি জানতে চেয়েছেন যে আমাদের প্রিপারেশনের অবস্থা কী, স্ট্যাটাসটা কী, আমরা কতদূর এগিয়েছি, প্রস্তুত কী রকম।
উনি জানতে চেয়েছিলেন, আমি তাকে ডিটেইল জানিয়েছি, আমি কী কী করেছি, কী কী করতেছি, কী কী বাকি আছে বা আমাদের টাইমলাইনটা কী, কখন আমরা শেষ করতে পারব। আমাদের প্রস্তুতি সম্পর্কিত একটা ব্রিফ (ধারণা) তাকে (প্রধান উপদেষ্টাকে) আমি দিয়েছি। কারণ এটা ছিল মূলত সৌজন্য সাক্ষাৎকার।
কয়েকটি রাজনৈতিক দল বলছে যে নির্বাচন করার মতো পরিবেশ এখন নেই, এ বিষয়ে আপনার কী মত, জানতে চাইলে সিইসি বলেন, অ্যাকচুয়ালি রাজনীবিদদের বক্তব্যের বিষয়ে আমরা গাইডেড না। রাজনীতিকরা নানা ধরনের কথাবার্তা বলে। কোনো কোনো দল ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের কথা বলে, পরে আবার ব্যাক ট্র্যাক করে বলছে যে সংস্কারের আগে ভোট হতে পারবে না। নানা ধরনের কথা বলে। এইটা হলো রাজনৈতিক বক্তব্য।
আইনশৃঙ্খলার নাজুক পরিস্থিতির কথা দলগুলো বলছে, মব ভায়োলেন্স বা দলবদ্ধ সহিংসতা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না, সেটার কথা বলছে। এর মাঝে নির্বাচন আয়োজন করা কঠিন হবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, চ্যালেঞ্জিং হবে। বাট ইট ইজ পসিবল। চ্যালেঞ্জিং, কারণ এখন তো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগস্টে যা দেখছিলাম বা গত বছরের ৮ আগস্টে যা দেখছিলাম অনেক ইম্প্রুভ করে গেছে না? অনেক ইম্প্রুভ করছে।
তিনি বলেন, ধরেন নির্বাচন যখন হবে, তখন ওই সময়ের মধ্যে দেখবেন যে সব কিছু শান্ত, অসুবিধা হবে না। বিশেষ করে প্রতিটি রাজনৈতিক দল ছোট হোক বড় হোক, তারা কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলে আসছে প্রথম থেকেই। কেউ বলে নাই যে আমি আগের মতো নির্বাচন চাই। জনগণ যদি আপনার সঙ্গে থাকে, কোনো রকমের কোনো মব বা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আপনাকে তো ক্ষতি করতে পারবে না।
জনগণ তো মব চায় না। কিন্তু সেটা তো নিয়ন্ত্রণে আসেনি এখন পর্যন্ত। দেখা যাচ্ছে তো এটা হচ্ছে নিয়মিত। এই পরিস্থিতিতে কীভাবে কী হবে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কনফিডেন্ট যে ইলেকশন যখন হবে, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব ব্রিফিং দিয়েছেন, শুধু পুলিশকে নয়, তিনি তো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আর্মি থেকে আরম্ভ করে, আর্মি কীভাবে ডেপ্লয়মেন্ট হবে, বিজিবি কীভাবে হবে ইত্যাদি নানাবিধ প্রশ্ন করেছেন, এই চ্যালেঞ্জেসগুলো সামনে রেখে কিন্তু সরকারের যেমন তার নিজস্ব প্রস্তুতি চলছে, আমাদেরও কিন্তু একই রকম প্রস্তুতি চলছে। এই সব চ্যালেঞ্জগুলো কিন্তু আমাদের মাথায়ও আছে। এগুলো অ্যাড্রেস করার জন্য আমরা প্রস্তুত। সব ধরনের ব্যবস্থা আমরা নেব।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নির্বাচনের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াবে কি না- জানতে চাইলে নাসির উদ্দিন: আমি মনে করি যে নির্বাচনের জন্য আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি, একটা ফ্রি ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল ইলেকশন, সেটার জন্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নট বি প্রবলেম, আমি মনে করি।
দেশে এডিশ মশাবাহিত ডেঙ্গু ভাইরাস জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত ৫৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। একইসঙ্গে দেশের ৬০ জেলায় ডেঙ্গু বিস্তারের খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে নতুন করে একদিনে ৪২০ জন ডেঙ্গুরোগী ভর্তির খবর জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এদিন ১ জন মৃত্যুর খবরও পাওয়া গেছে।
গতকাল রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির তথ্যমতে, গত শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত একদিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৪২০ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। একইসঙ্গে এই সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, হাসপাতালে নতুন করে বরিশাল বিভাগে ১১৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৭৯ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৬০ জন, ঢাকা উত্তর সিটিতে ২৫ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ৫৭ জন, খুলনা বিভাগে ২৬ জন, রাজশাহী বিভাগে ৪৫ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৯ জন এবং রংপুর বিভাগে ৩ জন ভর্তি হয়েছেন।
কন্ট্রোল রুমের তথ্য বলছে, ১ জানুয়ারি থেকে ১২ জুলাই পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গুতে ৫৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রথম চার মাসে অর্থাৎ জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও এপ্রিল মাসে মৃত্যু হয় যথাক্রমে ১০, ৩, ৭ ও ৩ জনের। মৃত্যু বেড়ে যায় গত জুন মাসে। জুন মাসে ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয় ১৯ জনের। তবে চলতি জুলাই মাসে মৃত্যু বেশি হওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। প্রথম ১২ দিনেই ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
বিভাগ ওয়ারি তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ঢাকা বিভাগে। ঢাকা বিভাগে মৃত্যুর সংখ্যা ৩০। এরপর সবচেয়ে বেশি মারা গেছে বরিশাল বিভাগে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের এই বিভাগে এ পর্যন্ত ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। বাকি বিভাগগুলোতে মারা গেছেন ১২ জন।
মৃত্যুর পাশাপাশি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। সর্বশেষ ৪২০ জনসহ এ বছর এ পর্যন্ত ১৪ হাজার ৮৮০ জন রোগী ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে জুলাই মাসের ১২ দিনে ভর্তি হয়েছেন ৪ হাজার ৫৮৪ জন। রোগতত্ত্ববিদেরা বলছেন, জুলাইয়ের বাকি দিনগুলোতে ও আগস্ট মাসে ডেঙ্গুর সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি আছে।
এদিকে দেশের ৬০ জেলায় ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। শুধুমাত্র চারটি জেলায় এই বছর এখন পর্যন্ত কোনও ডেঙ্গুরোগী পাওয়া যায়নি। জেলাগুলো হলো- গোপালগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গা, জয়পুরহাট এবং সুনামগঞ্জ। তবে সংক্রমণের হার অর্থাৎ রোগী বেশি পাওয়া গেছে দেশের ১০ জেলায়। তার মধ্যে পাঁচটি উপকূলীয় জেলা। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সর্বশেষ পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব জ্যামিতিক হারে বেড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ঢাকাসহ, চাপাইনবাবগঞ্জ, কুমিল্লা, গাজীপুর ও চাঁদপুর এবং উপকূলের পাঁচ জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, বরগুনা, বরিশাল, পটুয়াখালীতে রোগীর সংখ্যা বেশি। ডেঙ্গু আক্রান্তের ৭৯ শতাংশ ও মৃত্যুর ৮৭ শতাংশ হয়েছে এসব জেলায়। উপকূলের পাঁচ জেলায় আক্রান্ত ৪৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ ও মৃত্যু ৪১ দশমিক ৪৮ শতাংশ।
কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কবিরুল বাশার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের গবেষণা ফোরকাস্টিং মডেল অনুযায়ী, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে বরগুনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, কক্সবাজার, গাজীপুর, পিরোজপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, চাঁদপুর ও মাদারীপুরে ডেঙ্গু ব্যাপক হারে বিস্তার লাভ করতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘গড়ে প্রতিদিন প্রায় ২০০ জন নতুন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। বাস্তব চিত্র আরও ভয়াবহ, কারণ অনেকেই বাসায় বা অনিবন্ধিত ক্লিনিকে চিকিৎসা নিচ্ছেন, যাদের তথ্য সরকারিভাবে নথিভুক্ত হয় না। এই পরিসংখ্যানগুলো এক গভীর সংকটের দিকেই ইঙ্গিত করছে, পরিস্থিতি যদি এখনই সমাধানে না আনা যায়, তাহলে আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।’
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এতে দেশের চারটি সমদ্রবন্দরে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
সোমবার (১৪ জুলাই) সকালে এক সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় বায়ু চাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা ও সমুদ্র বন্দরগুলোর উপর দিয়ে দমকা বা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
এদিকে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
সেই সাথে সারাদেশের কোথাও কোথাও মাঝারী ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।