পদ্মা সেতু চালু হওয়ার এক বছর পূর্ণ হলো। সেতুর প্রভাবে বদলে গেছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অনেক জনপদ। নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্প অবকাঠামো খাতে। সবচেয়ে বড় পরিবর্তন এসেছে সড়ক যোগাযোগ ক্ষেত্রে। গ্রামের সঙ্গে শহুরে মানুষের যোগাযোগ বেড়েছে। রাজধানীর সঙ্গে যোগাযোগ সহজ ও দ্রুততর হওয়ায় সাধারণ মানুষ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের আয়ও বেড়েছে। পদ্মা সেতু দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে।
গত বছরের এই দিন, অর্থাৎ ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের মানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করেন। এর এক দিন পর থেকেই শুরু হয় সেতুতে যান চলাচল। দেখতে দেখতেই সেতু চালু হওয়ার এক বছর পেরিয়ে গেল।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পদ্মা সেতুর মাধ্যমে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলসহ মোংলা বন্দরের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ তৈরি হয়েছে। ঢাকা এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে যাতায়াতের সময় এক-চতুর্থাংশ কমে এসেছে। এতে করে পর্যটন খাতেরও ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে। কুয়াকাটা ও সুন্দরবনে পর্যটক যাতায়াত বেড়েছে। নির্মাণ খাতে ২৯ শতাংশ, কৃষি খাতে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ এবং উৎপাদন ও পরিবহনে ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখছে পদ্মা সেতু। তা ছাড়া মাওয়া-জাজিরা রুটে ফেরি সার্ভিসে খরচ কমেছে সরকারের।
সেতু বিভাগের সচিব মো. মনজুর হোসেন দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘পদ্মা সেতুর ফলে যে পরিবর্তন এসেছে, সেটা এখন দৃশ্যমান। সবচেয়ে বড় পরিবর্তন হয়েছে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলায়। এসব জেলার সঙ্গে দেশের অন্যান্য জেলার সরাসরি যোগাযোগ তৈরি করেছে পদ্মা সেতু। একই সঙ্গে এসব অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হচ্ছে। জমির ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন। মানুষের যাতায়াতে এবং পণ্য পরিবহনে সময় এবং ব্যয় কমে গেছে। এতে কৃষিপণ্য, ব্যবসা-বাণিজ্য সব ক্ষেত্রেই ব্যাপক প্রসার হয়েছে। পদ্মা সেতুর যে প্রভাব পড়েছে, সেটা আমাদের প্রত্যাশার চেয়েও বেশি।’
এক বছরে সেতুর টোল
সেতু পারাপারে ১৩ ধরনের যানবাহনের জন্য টোল নির্ধারণ করা আছে। সেই অনুযায়ী টোল আদায় করা হচ্ছে। গত ২৩ জুন পর্যন্ত পদ্মা সেতুতে টোল আদায় হয়েছে ৭৯৪ কোটি ৫৩ লাখ ৪ হাজার ৭৫০ টাকা।
সেতু চালুর আগে ট্রাফিক পূর্বাভাসে যেটা বলা হয়েছিল তার চেয়ে আড়াই থেকে তিন গুণ বেশি টোল আদায় হয়েছে। সেতু চালুর প্রথম বছরে ছয় হাজার গাড়ি চলাচলের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কিন্তু বর্তমানে ১৫ থেকে ১৮ হাজার করে সাধারণ সময়ে প্রতিদিন সেতু দিয়ে যানবাহন পারাপার হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সেতুসচিব।
সরকার নিজস্ব অর্থায়নে ৩২ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছে। সেতুটি নির্মাণের ব্যয় সেতু বিভাগকে ধার দিয়েছে সরকারের অর্থ বিভাগ।
আগামী ৩৫ বছরে, অর্থাৎ ২০৫৭ সাল পর্যন্ত ১ শতাংশ সুদসহ ১৪০টি ত্রৈমাসিক কিস্তিতে ঋণের এই টাকা সরকারকে পরিশোধ করবে সেতু বিভাগ। ইতিমধ্যে পদ্মা সেতুর ঋণের তৃতীয় ও চতুর্থ কিস্তির টাকা পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ।
ঋণের টাকা পরিশোধের বিষয়ে জানতে চাইলে সেতু বিভাগের সচিব মো. মনজুর হোসেন দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘সেতু চালু হওয়ার প্রথম বছরে ৬৩৩ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে সরকারকে, সেটা কিন্তু আমরা করতে পেরেছি। ঋণের টাকা সেতুর টোল আদায়ের টাকা থেকেই পরিশোধ করেছি। আমরা আমাদের টার্গেটের মধ্যেই রয়েছি। ফলে ঋণ পরিশোধ নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই হবে।’
শেষের পথে নদীশাসনের কাজ
৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার পদ্মা সেতুর পাড় রক্ষায় করা হচ্ছে নদীশাসন। সেতুর নদীশাসনের কাজ ৯৯ দশমিক ৫ ভাগ শেষ। ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত কাজ শেষ করার মেয়াদ ধরা আছে। তবে তার আগেই কাজ শেষ হয়ে যাবে মত প্রকল্পসংশ্লিষ্টদের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘নদীশাসনের অল্প একটু কাজ বাকি আছে, যেটা পানি না বাড়লে করা যাবে না। নদীতে পানি এবার কম বেড়েছে, তাই বাকি কাজ করা যাচ্ছে না। পানি কম থাকায় জাহাজ যেতে পারছে না এবং সার্ভে করতে পারছে না। তাই নদীতে পানি বাড়লেই আমাদের কাজ শেষ হয়ে যাবে। বাকি কাজটা করতে এক থেকে দুই মাস সময় লাগতে পারে।’
পদ্মা সেতু চালুর এক বছরের বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘সেতুর নির্মাণকাজটি আমরা শেষ করতে পেরেছি, এটা আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। বিশ্বের অন্যতম একটি জটিল প্রকল্প ছিল পদ্মা সেতু। সেই কাজটি আমরা শেষ করতে পেরেছি। আমাদের কাজের মধ্যে দিয়ে দেশবাসীকে যাতায়াতের একটি সুন্দর ব্যবস্থা করতে পেরেছি।’
যাতায়াতের দূরত্ব কমেছে
ঢাকা থেকে পাটুরিয়া হয়ে যেসব মানুষ দক্ষিণের জেলাগুলোতে যেতেন, তাদের বড় অংশ এখন পদ্মা সেতু দিয়ে যাচ্ছেন। এতে যাতায়াতের দূরত্ব কমেছে, সময় কম লাগছে এবং ব্যয়ও কমেছে। এই এক বছরে মানুষ স্বস্তি ও আনন্দ নিয়ে সেতুটি দিয়ে যাতায়াত করেছেন।
পদ্মা সেতু চালুর পর দেশের দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগব্যবস্থার পুরো চিত্রই পাল্টে গেছে। পরিবহন ব্যবসার প্রসার হয়েছে। খুলনাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলাগুলোতে নতুন নতুন বিলাসবহুল বাস চলাচল শুরু হয়েছে। এসব অঞ্চলের মানুষ এখন সকালে ঢাকায় এসে কাজ করে আবার বিকেলে বাড়ি ফিরে যেতে পারেন পদ্মা সেতুর কল্যাণে।
মিজানুর রহমান কাজ করেন খুলনার একটি বেসরকারি ব্যাংকে। তার পরিবার বসবাস করে রাজধানীতে। তিনি প্রতি বৃহস্পতিবার বিকেলে অফিস শেষে খুলনা থেকে ঢাকায় আসেন। শনিবার সকালে আবারও ঢাকা থেকে রওনা হয়ে খুলনায় গিয়ে অফিস করেন।
তবে পদ্মা সেতু চালুর আগে ঢাকা-খুলনা যাতায়াতে এত সহজ ছিল না। মাওয়া ফেরিঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিলম্ব করতে হতো যাত্রীদের।
সোহাগ পরিবহনের খুলনার রয়্যাল মোড় কাউন্টারের সহকারী ম্যানেজার মো. বুলবুল বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালুর পর খুলনা থেকে ঢাকায় পৌঁছাতে সাড়ে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা সময় লাগছে। তাই এখন গাড়িতে আগের তুলনায় যাত্রী অনেক গুণ বেড়েছে।’
তবে সড়কপথে যাত্রী বেড়ে যাওয়ায় যশোর বিমানবন্দর দিয়ে ঢাকাগামী যাত্রী কমেছে অনেকাংশে। ফলে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের সংখ্যাও কমিয়ে দিয়েছে এয়ারলাইনসগুলো।
কৃষিতে সম্ভাবনা-টাটকা মাছ ও সবজি আসছে ঢাকায়
পদ্মা সেতুর কারণে যে জেলাগুলো সরাসরি লাভবান হয়েছে তার মধ্যে খুলনা বিভাগের খুলনা, বাগেরহাট, যশোর, সাতক্ষীরা, নড়াইল, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও মাগুরা। বরিশাল বিভাগের বরিশাল, পিরোজপুর, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা ও ঝালকাঠি এবং ঢাকা বিভাগের গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও রাজবাড়ী।
বিশেষ করে খুলনা ও বাগেরহাটের মাছ, যশোরের সবজি আর ফুল, বরিশালের ধান ও পান পুরো দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কৃষি অর্থনীতির ভিত্তি। যদিও সেখানকার প্রতিটি জেলাতেই ধান ও মাছ চাষ করা হয়।
মৎস্য অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলা থেকে ঢাকায় প্রায় ১৮০ মেট্রিক টন বিভিন্ন প্রজাতির মাছ নেয়া হয়। এ ছাড়া এসব জেলা থেকে প্রতিদিন প্রায় ৬০০ মেট্রিক টন কৃষিপণ্য রাজধানীতে নেয়া হয়।
খুলনার এক ব্যবসায়ী বাশার মোল্লা বলেন, আগে ট্রাকে করে পণ্য নিতে দীর্ঘ সময় লাগত। আজকের পণ্য ঢাকার বাজারে আগামীকাল বিক্রি করা হতো। তবে এখন সকালে মালামাল পাঠালে দুপুরে পৌঁছে যায়। ফলে ঢাকার ক্রেতারা টাটকা কাঁচা সবজি পাচ্ছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের খুলনা কার্যালয়ের অতিরিক্ত উপপরিচালক মো. মোছাদ্দেক হোসেন বলেন, খুলনা অঞ্চলেও প্রচুর পরিমাণে কৃষিপণ্য উৎপাদিত হয়। এসব পণ্যের একটি বড় অংশ রাজধানীতে নেয়া হয়। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় কৃষিপণ্য বিপণন সহজ হয়েছে।
বাড়ছে জমির দাম, হচ্ছে শিল্পকারখানা
ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বাড়ছে শিল্প-কলকারখানা। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে জমির দামও। গার্মেন্ট কারখানা, বোতলজাত পানি পরিশোধনের কারখানা বরিশালে প্রথমবারের মতো গড়ে উঠবে।
এদিকে পদ্মা সেতুর ফলে রূপসা ও পশুর নদীর তীরের জমির দাম বদলে গেছে রাতারাতি। ঢাকার অধিকাংশ শিল্প গ্রুপ এই অঞ্চলে জমি কিনে রাখছে। পশুর নদীর তীরে গাজী গ্রুপ প্রায় ৪০ একর জমি কিনেছে। সেখানে তারা নতুন শিল্পায়ন করবে।
স্থানীয় বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম বলেন, গত এক বছরে জমির দাম বাড়তে বাড়তে বিঘা দাঁড়িয়েছে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত। শুধু বটিয়াঘাটাতে অন্তত ১০০টি শিল্প গ্রুপ জমি কিনে রেখেছে। অনেকে আবার জমি ভরাট করে শিল্প-কারখানা নির্মাণকাজ শুরু করে দিয়েছে। একই সঙ্গে বাড়তে শুরু করেছে খুলনা শহরে আবাসন প্রকল্প।
খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তথ্য বলছে, খুলনা শহরের আশপাশে মোট ১০৮টি আবাসন প্রকল্প গড়ে উঠেছে।
এদিকে আবাসন প্রকল্পের মালিকরা জানিয়েছেন, গত এক বছরে জমির দাম প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
পর্যটনশিল্পের নতুন দুয়ার, দক্ষিণে যাচ্ছেন পর্যটক
পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় রাজধানীর সঙ্গে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার যোগাযোগের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব পরিবর্তন এসেছে। যার প্রভাব পড়েছে পর্যটনশিল্পেও। খুব সহজেই পর্যটকরা এখন কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত, খুলনা-বাগেরহাট এবং সুন্দরবন দর্শনে যেতে পারছেন। এতে করে এসব অঞ্চলে আগের থেকে এখন পর্যটক যাতায়াত বহুগুণে বেড়েছে। এতে পর্যটনশিল্পের প্রসার ঘটছে।
খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো বলেন, সুন্দরবনে প্রতিবছর ২ লাখ ৫০ হাজার থেকে ৩ লাখ পর্যটক ভ্রমণ করেন। বর্তমানে পর্যটকদের জন্য ১১টি ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্র রয়েছে। ক্রমান্বয়ে সুন্দরবনে পর্যটনের চাপ বাড়ছে।
গত বছর মে মাসে প্রতিদিন ৫০ থেকে ১০০ জন পর্যটক আসতেন। তবে এ বছর একই সময়ে প্রতিদিন ২০০ থেকে ৩৫০ পর্যটক করমজলে এসেছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে নতুন নতুন বিলাসবহুল হোটেল। ঢাকা থেকে খুব কম সময়ে পৌঁছানো যাচ্ছে কুয়াকাটা। ফলে প্রতিনিয়ত বাড়ছে পর্যটক।
[এই প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন দৈনিক বাংলার খুলনা ব্যুরোর আওয়াল শেখ]
বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ভিসা পুনরায় চালু করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ সময়ে বিভিন্ন খাতে দেশটির বিনিয়োগ প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন তিনি।
বুধবার (৭ মে) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সাথে বৈঠক করেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের সহনশীলতা ও সহাবস্থানবিষয়ক মন্ত্রী শেখ নাহিয়ান বিন মুবারক আল নাহিয়ানের নেতৃত্বাধীন উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল।
এ সময়ে নাহিয়ানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ড. ইউনূস। নাহিয়ান বলেন, ‘আমাদের প্রেসিডেন্টের নির্দেশে আমি এখানে এসেছি বাংলাদেশের সাথে সংহতি প্রকাশ করতে এবং আমাদের বন্ধুত্বকে আরও জোরদার করতে।’
‘সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের দুই সরকার যে বর্ধিত সংলাপের আয়োজন করেছে, তার আমরা প্রশংসা করি। আমরা বিনিয়োগ থেকে শুরু করে ভিসা পর্যন্ত সব ক্ষেত্রে সহযোগিতা নিশ্চিত করতে চাই,’ বলেন তিনি।
এই পদক্ষেপের প্রশংসা করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা সম্পৃক্ততা এবং সমর্থনকে স্বাগত জানাই, আমরা বিভিন্ন শিল্পে বিনিয়োগকেও স্বাগত জানাই।’
ভিসা ব্যবস্থা শিথিল করার কথা উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। এখনও কিছু পদক্ষেপ নেওয়া বাকি আছে, আশা করি, আমরা সম্পৃক্ত থাকব এবং এই সমস্যাগুলি সমাধান করব।’
সংযুক্ত আরব আমিরাত সম্প্রতি প্রতিদিন ৩০ থেকে ৫০টি ভিজিট ভিসা দেওয়া শুরু করেছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদের জন্য বাল্ক ভিসাও ত্বরান্বিত করা হয়েছে। এছাড়াও, দক্ষ কর্মসংস্থান ভিসার অনলাইন ব্যবস্থা পুনরায় সক্রিয় করা হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের লন্ডনে উন্নত চিকিৎসা এবং পারিবারিক আবহে দীর্ঘ চার মাস অবস্থান শেষে মানসিক প্রশান্তি নিয়ে দেশে ফিরেছেন বিএনপির চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলের চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অভ্যর্থনা জানাতে আসা সাধারণ মানুষ এবং দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি আন্তরিক শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
গতকাল সকাল ১০ টা ৪৩ মিনিটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান তিনি। সেখান থেকে দুপুরে গুলশানে তাঁর নিজ বাসভবন ফিরোজায় ফেরার পথে তাঁকে অভ্যর্থনা জানাতে সড়কের দুই পাশে জড়ো হন লাখো মানুষ।
দলীয় নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। ঢাকায় প্রবেশের প্রায় প্রতিটি মোড়ে দেখা যায় হাতে ব্যানার ও ফুল নিয়ে দলীয় কর্মীদের ভিড়।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এক বিবৃতিতে বিএনপির চেয়ারপার্সনকে স্বাগত জানাতে আসা দলীয় নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যারা খালেদা জিয়াকে অভ্যর্থনা জানিয়েছেন তাদের প্রতি আন্তরিক শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ জানিয়েছেন তারেক রহমান।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয় সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্য, পুলিশ, র্যাবসহ অ্যাভিয়েশন সিকিউরিটির সদস্যরা যেভাবে নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করেছেন বিএনপির পক্ষ থেকে তাদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকেন্দ্রিক রাজধানীর দুই থানায় হওয়া পৃথক তিনটি মামলায় গান বাংলা টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী কৌশিক হোসেন তাপসসহ চারজনকে ঢাকার আদালতে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
গ্রেপ্তার অন্যরা হলেন— নিয়ন ফামাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুস সালাম, দৈনিক সরেজমিন বার্তার সাংবাদিক সিকদার লিটন ও যুব মহিলা লীগ নেত্রী আশা আক্তার।
বুধবার (৭ মে) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জি এম ফারহান ইসতিয়াক শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। এর আগে তাদের আদালতে হাজির করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা রাজধানীর তিন হত্যা মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন। পরে আদালত সেটি মঞ্জুর করেন।
তাপসের মামলা সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ১৯ জুলাই গুলশানের শাহজাদপুরের কনফিডেন্স টাওয়ারের সামনে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলিবর্ষণ করা হয়। এতে জব্বার আলী হাওলাদার নামে একজন গুলিবিদ্ধ হন। চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১০৯ জনের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মামলা করেন।
আব্দুস সালামের মামলা সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ৪ আগস্ট রাজধানীর ধানমণ্ডির সাইন্সল্যাব থেকে জিগাতলা এলাকায় যাওয়ার পথে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন মো. রিয়াজ (২৩)। দুই সপ্তাহ চিকিৎসাধীন থাকার পর গত ১৭ আগস্ট বিকালে মারা যান তিনি। এ ঘটনায় নিহতের মা মোসা. শাফিয়া বেগম ৯ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ধানমণ্ডি থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
এছাড়া আশা ও সিকদার লিটনের মামলার সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ভাটারা থানাধীন যমুনা ফিউচার পার্কের পাশে গত ২০ জুলাই আন্দোলনে অংশ নেন মো. জাহাঙ্গীর। এদিন দুপুর ১২টায় আসামিদের ছোঁড়া গুলিতে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। এরপর ২১ জুলাই তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় এ বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ভাটারা থানায় একটি হত্যা মামলা করা হয়।
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যেকার ক্রমবর্ধমান উত্তেজনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ। বুধবার (৭ এপ্রিল) এক সংক্ষিপ্ত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দুই দেশকে শান্ত থাকার পাশাপাশি সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ সরকার ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার উদ্ভূত পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।’
এতে বলা হয়, আঞ্চলিক শান্তি, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের স্বার্থে বাংলাদেশ আশাবাদী যে এই উত্তেজনা কূটনৈতিকভাবে নিরসন হবে এবং শান্তি ফিরে আসবে, যা দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার প্রতিক্রিয়ায় ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এ নিয়ে প্রতিবেশি দুই দেশের মধ্যে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে।
এ ঘটনাকে ‘যুদ্ধের শামিল’ ও ‘আগ্রাসন’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে পাকিস্তান। যেকোনো সময় হামলার জবাব দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন দেশটির সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ। তিনি বলেছেন, ‘কোথায় ও কীভাবে জবাব দেব, সেটি একান্তই আমাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত।’
অন্যদিকে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি, ‘ভারতের বিরুদ্ধে হামলার পরিকল্পনা হচ্ছে, এমন অন্তত ৯টি স্থানে আঘাত হানা হয়েছে।’
এমন বাস্তবতায় দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। মঙ্গলবার (৬ মে) দিবাগত রাতে ভারতের হামলার মধ্য দিয়ে উত্তপ্ত হয়ে ওঠা এই পরিস্থিতিতে উভয় পক্ষকেই সংযম প্রদর্শনের জন্য আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন ও দেশ।
হজের উদ্দেশে আজ বুধবার ২ হাজার ২৪৮ জন সৌদি আরব যাত্রা করেছেন। এর মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে রওনা হয়েছেন ১ হাজার ৪৪৬ জন এবং সৌদি এয়ারলাইন্সে ৮০২ জন।
ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হজ অফিসের পরিচালক (যুগ্মসচিব) মো. লোকমান হোসেন এ তথ্য জানান।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, গত ২৯ এপ্রিল হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে হজযাত্রীদের প্রথম ফ্লাইট ছেড়ে যায়। এর আগে ২৭ এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস হজ কার্যক্রমের উদ্বোধন ও হজযাত্রীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
হজযাত্রীদের দুর্ভোগ লাঘব এবং উন্নত সেবা দিতে হজ ম্যানেজমেন্ট সেন্টার স্থাপন এবং এ সংক্রান্ত একটি অ্যাপ তৈরি করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। হজযাত্রী পরিবহনে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এবং সৌদিয়া এয়ারলাইন্স সমানভাবে ৫০ শতাংশ করে যাত্রী বহন করবে (৪৩ হাজার ৫৫০ জন করে)। এ ছাড়া ফ্লাইন্যাস এয়ারলাইন্স ১৫ শতাংশ যাত্রী পরিবহন করবে। ফ্লাইট শিডিউল অনুযায়ী মদিনায় যাবে ২০ শতাংশ এবং মক্কায় যাবে ৮০ শতাংশ হজযাত্রী।
উল্লেখ্য, চাঁদ দেখা সাপেক্ষে এবারের হজ অনুষ্ঠিত হবে ৫ জুন। হজ কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছে ৯৪১টি হজ এজেন্সি। সরকারি ব্যবস্থাপনায় সাধারণ প্যাকেজ ১-এর খরচ ৪ লাখ ৭৮ হাজার ২৪২ টাকা এবং প্যাকেজ ২-এর খরচ ৫ লাখ ৭৫ হাজার ৬৮০ টাকা। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় সাধারণ প্যাকেজে সর্বনিম্ন ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৮৩ হাজার ১৫৬ টাকা।
রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বাতিল হওয়া নিবন্ধন ফিরে পেতে আপিল শুনানির জন্য মঙ্গলবার (১৩ মে) দিন ধার্য করেছেন আপিল বিভাগ। বুধবার (৭ মে) প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির বেঞ্চ এ দিন ধার্য করেছেন।
এদিন আদালতে জামায়াতের নিবন্ধন মামলা দ্রুত শুনানির জন্য আবেদন জানান আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। ১২ মার্চ রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বাতিল হওয়া নিবন্ধন ফিরে পেতে আপিল শুনানি শুরু হয়। এরপর আর শুনানি হয়নি।
২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর জামায়াতে ইসলামীকে সাময়িক নিবন্ধন দেওয়া হয়। পরের বছর বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের তৎকালীন সেক্রেটারি জেনারেল সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী, জাকের পার্টির তৎকালীন মহাসচিব মুন্সি আবদুল লতিফ, সম্মিলিত ইসলামী জোটের প্রেসিডেন্ট মাওলানা জিয়াউল হাসানসহ ২৫ জন জামায়াতের নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন।
রিটে জামায়াতের তৎকালীন আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, নির্বাচন কমিশনসহ চারজনকে বিবাদী করা হয়। তারা জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের আর্জি জানান।
এ রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক (পরে প্রধান বিচারপতি) ও বিচারপতি মো. আবদুল হাইয়ের (বর্তমানে অবসর) হাইকোর্ট বেঞ্চ ২০০৯ সালের ২৭ জানুয়ারি রুল জারি করেন। জামায়াতের নিবন্ধন নিয়ে রুল জারির পর ওই বছরের ডিসেম্বরে একবার, ২০১০ সালের জুলাই ও নভেম্বরে দুবার এবং ২০১২ সালের অক্টোবর ও নভেম্বরে দুবার তাদের গঠনতন্ত্র সংশোধন করে নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়।
এসব সংশোধনীতে দলের নাম ‘জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশ’ পরিবর্তন করে ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’ করা হয়।
২০১৩ সালের ১২ জুন ওই রুলের শুনানি শেষ হয়। একই বছরের ১ আগস্ট জামায়াতকে দেওয়া নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিবন্ধন সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে অবৈধ বলে রায় দেন বিচারপতি এম মোয়াজ্জাম হোসেন (বর্তমানে অবসর), বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম (পরে আপিল বিভাগের বিচারপতি) ও বিচারপতি কাজী রেজা-উল-হকের (১৯ নভেম্বর পদত্যাগ করেন) সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বৃহত্তর (লার্জার) বেঞ্চ।
সে সময় সংক্ষিপ্ত রায়ে আদালত বলেন, এ নিবন্ধন দেওয়া আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত। একইসঙ্গে আদালত জামায়াতে ইসলামীকে আপিল করারও অনুমোদন দিয়ে দেন। তবে এ রায়ের স্থগিতাদেশ চেয়ে জামায়াতের করা আবেদন একই বছরের ৫ আগস্ট খারিজ করে দেন আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী। পরে একই বছরের ২ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলে জামায়াতে ইসলামী আপিল করে।
গত বছরের ১৯ নভেম্বর জামায়াতের আপিল খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ। এদিন আদালতে রিটকারীদের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী তানিয়া আমীর ও আহসানুল করীম। জামায়াতে ইসলামীর আইনজীবী এজে মোহাম্মদ আলীর পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. জিয়াউর রহমান।
ওইদিন আইনজীবী জিয়াউর রহমান বলেন, আমাদের সিনিয়র আইনজীবী এজে মোহাম্মদ আলীর ব্যক্তিগত অসুবিধা ছিল। আর অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড জয়নুল আবেদীনও অনুপস্থিত ছিলেন। ব্যক্তিগত অসুবিধার কারণে ছয় সপ্তাহ সময় চেয়েছিলাম। যেহেতু আমাদের আইনজীবীরা উপস্থিত নেই, সেহেতু আদালত এটা ডিসমিস ফর ডিফল্ট করেছেন। অর্থাৎ আইনজীবী উপস্থিত না থাকার কারণে খারিজ করেছেন।
পরে আইনি সুযোগ কী আছে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, রেস্টোর (পুনরায় শুনানির জন্য) আবেদনের সুযোগ আছে। সেক্ষেত্রে এটা আদালতের এখতিয়ার।
এরপর ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ফের আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসে। গত জুলাই মাস থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা কোটা প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আসছে। এ আন্দোলনে গণহত্যা চালানোর অভিযোগে ছাত্র-জনতা সরকার পদত্যাগের দাবি তোলে। এর মধ্যে ১ আগস্ট সরকার অঙ্গসংগঠনসহ জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধের আবেদন বাতিলের উদ্যোগ নেয়। গত ২৮ আগস্ট সরকার আগের নিষিদ্ধের আদেশ বাতিল করে।
এছাড়া আপিল বিভাগে নিবন্ধন মামলাটি পুনরায় শুনানির জন্য আবেদন করে। পরে গত বছরের ২২ অক্টোবর রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বাতিল হওয়া নিবন্ধন ফিরে পেতে খারিজ হওয়া আপিল পুনরুজ্জীবিত করে আদেশ দেন দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আপিল বিভাগ। এর ফলে নিবন্ধন ও দলীয় প্রতীক দাঁড়িপাল্লা ফিরে জামায়াতের আইনি লড়াই করার পথ খুলে যায়। এরপর ১২ মার্চ এ বিষয়ে শুনানি হওয়ার পর তা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর গত ৪ মে আপিল দ্রুত শুনানি করতে আবেদন করে জামায়াতের আইনজীবী।
আইনজীবি শিশির মনির আপিল বিভাগকে বলেন, মামলাটির শুনানি শুরু হয়েছিল আগেই কিন্তু হুট করেই তা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর আজ ফের শুনানির উদ্যেগ নেওয়া হয়।
দেশে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শাখা ক্যাম্পাস স্থাপনের অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে গাইডলাইন পলিসি তৈরির জন্য কাজ করছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এ বিষয়ে একটি সুস্পষ্ট ও কঠোর নীতিমালা প্রণয়নে কাজ করছে ইউজিসির হাই-পাওয়ার কমিটি।
নীতিমালা চূড়ান্ত হওয়ার পর মানসম্পন্ন ও স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আবেদন বিবেচনা করে অনুমোদন দেওয়া হবে। তবে উচ্চশিক্ষার মান রক্ষা ও বাণিজ্যিকীকরণ রোধে প্রয়োজনীয় সতর্কতাও অবলম্বন করা হবে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বে থাকা ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন ইউএনবিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বিদেশি (বিশ্ববিদ্যালয়ের) ক্যাম্পাস এলে বাংলাদেশের কতটুকু ভালো হবে—সব দেখা হচ্ছে। এ বিষয়ে একটি গাইডলাইন পলিসি তৈরির জন্য হাই-পাওয়ার কমিটি কাজ করছে। কমিটিতে প্রফেসররা আছেন। কমিটির প্রধান বুয়েট ভিসি। কমিটি পলিসি তৈরি করছে। পলিসি তৈরি হলে বিদেশি (বিশ্ববিদ্যালয়ের) ক্যাম্পাস অনুমোদনের বিষয়টি নিয়ে বলা যাবে।’
‘এই কমিটি সাব-কমিটি। মেইন কমিটির প্রধান আমি। সেখানে ঢাবি, বুয়েটে, নর্থ সাউথ ও জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটির মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়েসরদের নিয়ে একটি হাই-পাওয়ার কমিটি করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বিদেশি ক্যাম্পাসের অনুমতি দিতে আমরা পজিটিভ। তবে আমরা দেখছি, শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কোনো অসুবিধা হয় কি না। এছাড়া আমাদের পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কী ধরনের প্রেসারে পড়বে, সেটাও দেখতে হবে।’
ইউজিসির এই সদস্য বলেন, ‘প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় একটি অবস্থানে চলে গেছে। তবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের জীবনযাত্রার মান, তাদের বেতনকাঠামো, সুযোগ-সুবিধা, গবেষণার সুযোগ খুব যে ভালো, তা দেখছি না। সবদিক থেকে বিবেচনায় নিয়ে বিদেশি ভার্সিটি এলে পাবলিক ও প্রাইভেট ভার্সিটিগুলো আরও শিক্ষক সংকটে পড়বে কি না তা দেখতে হবে। তাছাড়া এই পদক্ষেপ দেশের জন্য লাভজনক কি না, তা দেখে সেইভাবে পলিসি তৈরি করা হবে।’
ইউজিসি থেকে জানা যায়, ইউজিসি বর্তমানে ২০১৪ সালের ‘বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা বা স্টাডি সেন্টার পরিচালনা বিধিমালা’ সংশোধনের কাজ করছে। এই বিধিমালায় কিছু অস্পষ্টতা ও সীমাবদ্ধতা থাকায় তারা এটি সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে। নতুন নীতিমালায় শুধুমাত্র শাখা ক্যাম্পাস স্থাপনের অনুমতি দেওয়ার প্রস্তাব রয়েছে, স্টাডি সেন্টার নয়। শাখা ক্যাম্পাস স্থাপনের জন্য নির্দিষ্ট শর্তাবলী অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যেমন: ২৫ হাজার বর্গফুট জায়গা, পূর্ণকালীন শিক্ষক নিয়োগ, ৫ কোটি টাকা ফিক্সড ডিপোজিট, অনুমোদনের জন্য ১০ লাখ টাকা ফি। সর্বোপরি, উচ্চশিক্ষার মান নিশ্চিত এবং বাণিজ্যিকীকরণ রোধ করাই এই নীতিমালার লক্ষ্য।
বাংলাদেশে প্রথম বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে শাখা ক্যাম্পাস খুলতে ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেয়েছে মালয়েশিয়ার ইউসিএসসি ইউনিভার্সিটি। ইতোমধ্যে তারা ঢাকায় কার্যক্রম শুরু করেছে।
সাংবাদিকতার নোবেল খ্যাত পুলিৎজার পুরস্কার বিজয়ী সংবাদমাধ্যমের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। চলতি বছর এ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে রয়টার্স, নিউইয়র্ক টাইমস এবং ওয়াশিংটন পোস্ট ছাড়াও আরও কিছু প্রতিষ্ঠান। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় পর্যায়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এ পুরস্কার ১৯১৭ সাল থেকে দেওয়া শুরু হয়।
সাংবাদিকতা ছাড়াও সাহিত্য, সংগীত ও নাটকে বিশেষ অবদানের জন্যও এই পুরস্কার দেওয়া হয়। কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির একটি বোর্ড প্রতিবছর এ পুরস্কার ঘোষণা করে। সোমবার পুলিৎজার বিজয়ী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম ঘোষণা করা হয়। চলতি বছর ব্রেকিং নিউজের জন্য সম্মানজনক পুলিৎজার পুরস্কার পেয়েছে ওয়াশিংটন পোস্ট। গত বছরের ১৩ জুলাই তৎকালীন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর হামলার খবর প্রচার করে পুরস্কার পেয়েছে তারা।
সম্পাদকীয় শাখায় পুলিৎজার পেয়েছে হিউস্টন ক্রোনিকল। অন্যদিকে নিউইয়র্ক টাইমস এবার চারটি শাখায় পুলিৎজার পুরস্কার জিতে নিয়েছে। বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদন শাখায় এ বছর পুলিৎজার পেয়েছেন নিউইয়র্ক টাইমসের আজম আহমেদ ও ক্রিস্টিনা গোল্ডবাম এবং প্রদায়ক ম্যাথিউ আইকিনস।
স্থানীয় সংবাদ শাখায় পুরস্কার পেয়েছে নিউইয়র্ক টাইমস ও বাল্টিমোর ব্যানার। আফ্রিকার দেশ সুদানের সংঘাত নিয়ে সাংবাদিকতার জন্য আন্তর্জাতিক প্রতিবেদন শাখায়ও পুলিৎজার পেয়েছে নিউইয়র্ক টাইমস।
চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রে প্রাণঘাতী মাদক ফেন্টানিলের সহজলভ্যতা এবং বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে এই ভয়াবহ মাদকের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করার বিষয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের কারণে চলতি বছর পুলিৎজার পুরস্কার পেয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
অন্যদিকে গর্ভপাত নিয়ে কঠোর আইন থাকা অঙ্গরাজ্যগুলোতে জরুরি প্রয়োজনের সময় চিকিৎসকদের বিলম্বের কারণে মারা যাওয়া অন্তঃসত্ত্বা নারীদের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে প্রতিবেদন করে পাবলিক সার্ভিস শাখায় পুলিৎজার পেয়েছে প্রোরিপাবলিকা।
অন্যদিকে বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্কের রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে ধারাবাহিক পরিবর্তনের বিষয়ে প্রতিবেদন করে জাতীয় সংবাদ শাখায় সাংবাদিকতার জন্য পুলিৎজার পেয়েছে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল।
পুলিৎজার পেলেন ফিলিস্তিনি কবি
পুলিৎজার পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন ফিলিস্তিনি কবি মোসাব আবু তোহা। দ্য নিউ ইয়র্কার ম্যাগাজিনে প্রকাশিত ‘গাজায় শারীরিক ও মানসিক ধ্বংসযজ্ঞের’ ওপর লেখা তার প্রবন্ধের জন্য তিনি এই মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার পেয়েছেন। পুরস্কার পাওয়ার পর সামাজিক মাধ্যমে এক পোস্টে তিনি বলেন, আমি এইমাত্র পুলিৎজার পুরস্কার জিতেছি। এটা আশার বার্তা হয়ে উঠুক। এটি একটি গল্প হোক।
আবু তোহা আরেক ফিলিস্তিনি কবি রেফাত আলআরির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েই এ কথা বলেছেন। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে গাজায় ইসরায়েলের এক হামলায় আলআরি নিহত হন। আলআরির লেখা শেষ কবিতার শিরোনাম ছিল ‘যদি আমাকে মরতেই হয়, তবে এটি একটি গল্প হোক’।
‘জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫’-এর খসড়ায় নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। গতকাল মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে তেজগাঁওয়ে তাঁর কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এই অধ্যাদেশের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।
পরে রাজধানীর হেয়ার রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে এই সীমানা নির্ধারণ নিজেদের ইচ্ছামতো করা হতো। এগুলো নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে অভিযোগ আছে। এখন আমাদের সীমানা নির্ধারণ সংক্রান্ত যে আইন আছে, সেখানে একটা ব্যাখ্যাগত ভুলের কারণে এটা নিয়ে নির্বাচন কমিশন কাজ করতে পারছিল না। নির্বাচন কমিশন এই আইন প্রস্তাব করেছে। এখন আমরা এই সংশোধনী করে দিয়েছি। এখন সীমানা পুনর্নির্ধারণ সংক্রান্ত নির্বাচন কমিশনের যে সাংবিধানিক দায়িত্ব আছে, সেটা তারা ইচ্ছা করলে এই অধ্যাদেশ গেজেট নোটিফিকেশন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দুই চার দিনের মধ্যে তারা শুরু করতে পারবে।
এ ছাড়া উপদেষ্টা পরিষদের সভায় কোড অব সিভিল প্রসিডিওর (সিপিসি) সংশোধনীর চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আসিফ নজরুল বলেন, বাংলাদেশে সিভিল মামলা নিষ্পত্তি হতে বছরের পর বছর, এমনকি যুগের পর যুগ লাগে। এখানে আমরা অনেক পরিবর্তন এনেছি। এর মধ্যে আগে ইচ্ছামতো শুনানি মুলতবি করা যেতো। এখন আর তা করা যাবে না। আদালতে আইনজীবীর লিখিত আর্জি পড়ে শোনানোর ঘটনা বছরের পর বছর চলতো। এখন আইনে সংশোধনীর মধ্যে বলা হয়েছে—আদালতে যে লিখিত স্টেটমেন্ট দেবে সেটাই চূড়ান্ত। সেটা মৌখিকভাবে উপস্থাপন করা লাগবে না। আরেকটা হচ্ছে—মামলার রায়ের পর তা কার্যকর করতে আলাদাভাবে আবার মামলা করা লাগতো। সেটাও এখন করতে হবে না। আমরা আশা করি, সিভিল মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে এই আইন খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
সংশ্লিষ্ট সকল পুরনো আইন পর্যালোচনা করে যুগোপযোগী করা এবং রোগী সুরক্ষা, আর্থিক বরাদ্দ, জবাবদিহিতা ও জরুরি অবস্থায় পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিশ্চিতে নতুন আইন প্রণয়ন করার সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশন।
স্বাস্থ্য সবার অধিকার উল্লেখ করে স্বাস্থ্য বিষয়ক সংস্কার কমিশন গত সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
আইনের সংস্কার বিষয়ে স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে, ‘সংশ্লিষ্ট সকল পুরনো আইন পর্যালোচনা করে যুগোপযোগী করতে হবে। এছাড়া রোগী সুরক্ষা, আর্থিক বরাদ্দ, জবাবদিহিতা ও জরুরি অবস্থায় পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিশ্চিত করতে কিছু নতুন আইন প্রণয়ন করতে হবে। প্রস্তাবিত নতুন আইনসমূহ হল: বাংলাদেশ স্বাস্থ্য কমিশন আইন, বাংলাদেশ হেলথ সার্ভিস আইন, জনস্বাস্থ্য ও অবকাঠামো আইন, বাংলাদেশ সেইফ ফুড, ড্রাগ, আইভিডি ও মেডিকেল ডিভাইস আইন, ঔষধের মূল্য নির্ধারণ ও প্রাপ্তি আইন, স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী ও রোগী নিরাপত্তা আইন, এ্যালায়েড হেলথ প্রফেশনাল কাউন্সিল আইন, হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক এক্রেডিটেশন আইন, স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন, নারী স্বাস্থ্য আইন, ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণ আইন, শিশু বিকাশ কেন্দ্র আইন, বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল আইন, স্বাস্থ্য তথ্য সুরক্ষা আইন ও স্বাস্থ্যখাতে টেকসই অর্থায়ন আইন।’
সুপারিশে আইনসমূহের সংশোধন প্রয়োজন উল্লেখ করে বলা হয়, বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল আইন, মেডিকেল শিক্ষা এক্রেডিটেশন আইন, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল আইন, বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল আইন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন, পৌর ও সিটি কর্পোরেশন আইন সংশোধন প্রয়োজন।
স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের শুরুতেই উল্লেখ করা হয়েছে, ‘একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও জুলাই-আগস্ট ২০২৪-এ বীর শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে নিবেদিত এ সংস্কার প্রতিবেদন।
একটি বৈষম্যহীন ন্যায্য সমাজ প্রতিষ্ঠায় তাদের স্বপ্নের সহায়ক হোক এই স্বাস্থ্যখাত সংস্কার প্রস্তাবনা।'
প্রস্তাবনার মুখবন্ধে বলা হয়েছে, স্বাধীনতার পরবর্তী দশকগুলিতে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা খাতে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সত্ত্বেও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা এবং সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা অর্জনে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে রয়েছে।
স্বাস্থ্যসেবাকে জনমুখী, সহজলভ্য ও সর্বজনীন করতে প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রস্তাবের লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদনক্রমে ‘স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশন’ নামে কমিশন গঠন করে গত ১৮ নভেম্বর গেজেট প্রকাশ করা হয়। জাতীয় অধ্যাপক ও ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি ডা. এ কে আজাদ খানকে কমিশনের প্রধান করা হয়। ড. আবু মোহাম্মদ জাকির হোসেন (সভাপতি, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট), প্রফেসর লিয়াকত আলী (চেয়ারম্যান, পথিকৃৎ ফাউন্ডেশন), প্রফেসর ডা. সায়েবা আক্তার (গাইনোকলজিস্ট),প্রফেসর ডা. নায়লা জামান খান (শিশু স্নায়ুতন্ত্র বিভাগ), এম এম রেজা (সাবেক সচিব),প্রফেসর ডা. মোজাহেরুল হক (সাবেক আঞ্চলিক উপদেষ্টা,দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চল, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা), ডা. আজহারুল ইসলাম (কনসালটেন্ট আইসিডিডিআরবি), প্রফেসর ডা. সৈয়দ মো: আকরাম হোসেন (স্কয়ার ক্যান্সার সেন্টার, স্কয়ার হাসপাতাল), প্রফেসর ডা. সৈয়দ আতিকুল হক, (চিফ কনসালটেন্ট, গ্রীন লাইফ সেন্টার ফর রিউম্যাটিক কেয়ার এন্ড রিসার্চ), ডা. আহমদ এহসানুর রাহমান (বিজ্ঞানী, শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্য বিভাগ, আইসিডিডিআরবি), উমাইর আফিফ (৫ম বর্ষ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ) কমিশনের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পান। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এ কমিশনকে সাচিবিক সহায়তা প্রদান করেন।
কমিশন সুপারিশ প্রণয়নে যে বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখেছে তা হলো- সুপারিশ বাস্তবায়নের প্রস্তাবিত মেয়াদ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদে করণীয়, পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের মেয়াদে করণীয়, জাতীয় প্রত্যাশা ও অঙ্গীকার।
স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশন প্রতিবেদন ও সুপারিশ প্রণয়নে কমিশন সদস্যদের নিয়মিত বৈঠক হয়েছে মোট ৫১টি, পরামর্শ সভা আয়োজন করেছে মোট ৩২টি, পরামর্শ সভা হয়েছে চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, খুলনা, সিলেট, রাজশাহী, রংপুর, বরিশাল, মুন্সীগঞ্জে ও ঢাকায়। বিভিন্ন বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তি, সংশ্লিষ্ট পেশাজীবী, বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠানের পরামর্শ ও সহযোগিতা গ্রহণ করা হয়েছে।
বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে ভারতীয় দৈনিক দ্য হিন্দু’তে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গত আট মাসে বাংলাদেশের ৬৪০ জন সাংবাদিককে টার্গেট করেছে। এ দাবিকে ভিত্তিহীন, মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর হিসেবে প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশের সরকার। আজ এক বিবৃতিতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এ তথ্য জানায়।
ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ সিএ প্রেস উই ফ্যাক্টস থেকে এক পোস্টে বলা হয়, রাইটস এন্ড রিস্ক অ্যানালাইসিস গ্রুপের (আরআরএজি) বরাতে দ্য হিন্দু প্রকাশিত রিপোর্টে অন্তর্বর্তী সরকারের সময় বাংলাদেশের ৬৪০ সাংবাদিককে হয়রানি অভিযোগ অত্যন্ত বিভ্রান্তিকর ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যা তথ্য।
সেখানে আরও বলা হয়, ‘বাংলাদেশের জনগণ যখন শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন নিপীড়নমূলক ও দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারকে সরিয়ে দেয়, তখন সরকার ঘনিষ্ঠ সাংবাদিকরা চাপের মুখে পড়েন। তবে তা কোনোভাবেই অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে করা হয়নি।’
পোস্টে সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করে বলা হয়, ‘বরং বিচার প্রক্রিয়া প্রভাবিত করতে আওয়ামী লীগ সরকারের করা কিছু আইন বর্তমানে সংশোধন করা হচ্ছে। কিন্তু সরকার কখনও সাংবাদিকদের টার্গেট করেনি।’
প্রেস উইং আরও জানায়, ‘নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস ও তাঁর প্রেস সচিব, ঢাকায় এএফপি’র সাবেক ব্যুরো চিফ বহু বছর ধরে মুক্ত গণমাধ্যমের প্রবক্তা হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।’
বিবৃতিতে আরআরএজি প্রধান সুহাস চাকমাকে আওয়ামী লীগ ঘেঁষা বলেও আখ্যা দেওয়া হয়। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে সংগঠনটি বাংলাদেশ বিষয়ে বারবার মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে বলেও অভিযোগ করা হয়। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে চট্টগ্রাম হিল ট্র্যাক্টসে সংঘটিত সহিংসতা নিয়ে অতিরঞ্জিত তথ্য ছড়িয়েছিল আরআরএজি। দেশীয় গণমাধ্যম তিনটি ঘটনায় ৪ জনের প্রাণহানির কথা নিশ্চিত করে। কিন্তু সংগঠনটি ৯ জন আদিবাসী নিহতের খবর প্রচার করে।
বিবৃতিতে প্রেস উইং জানায়, ‘পরে নিউজ৯ কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিষয়টি ফের তুলে ধরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্মূল্যায়নেরও আহ্বান জানান সুহাস চাকমা।’ এরপর আরআরএজির তথ্যের উপর ভিত্তি করে হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশি মাইনরিটিস (এইচআরসিবিএম) মৃতের সংখ্যা ৬৭ জন বলে দাবি করে। যদিও পরে তা ডিসমিস ল্যাবের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ‘ফ্রম ফোর টু এ হানড্রেড’ এ ভুল প্রমাণিত হয়।
এই ভুল তথ্যের উপর ভিত্তি করে জার্মান ভিত্তিক ডয়চে ভেলের সাংবাদিক তাসমিয়া আহমেদ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। যেখানে তিনি অধ্যাপক ইউনূসের অধীনে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে সমালোচনা করেন। কিছুদিন আগে ছাত্র আন্দোলনকারীদেরও ‘সন্ত্রাসী’ বলে উল্লেখ করেছিলেন এই আওয়ামীপন্থী সাংবাদিক।
প্রেস উইং আরও জানায়, ‘গেল মার্চ মাসে আরআরএজি জাতিসংঘে অভিযোগ করে, অধ্যাপক ইউনূস ধর্মীয় সহিংসতাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। সঙ্গে ফ্যাক্ট চেকিং সংস্থাগুলোকেও তাদের তথ্য যাচাইয়ের কাজে বাধা দিচ্ছে।’
আরও বলা হয়, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অবস্থান নিপীড়নের বিপক্ষে। জনগণের সঙ্গে মিলে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের রেখে যাওয়া বৈষম্যমূলক নীতির অবসান করে নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ সমাজ নির্মাণে কাজ করছে।’
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে প্রকৌশল ও প্রযুক্তি জ্ঞানের সর্বশেষ অগ্রগতির সাথে প্রকৌশলীদের সম্পৃক্ত থাকতে হবে।
আগামীকাল ‘ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি)-এর ৭৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও ইঞ্জিনিয়ার্স ডে’ উপলক্ষ্যে আজ দেয়া এক বাণীতে তিনি এ কথা বলেন। ‘উন্নত জগৎ গঠন করুন’ এই আদর্শকে সামনে রেখে ১৯৪৮ সালের ৭ মে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি) প্রতিষ্ঠিত হয়।
ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি)-এর ৭৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও ইঞ্জিনিয়ার্স ডে’ উপলক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা প্রকৌশলী সমাজের প্রতি আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।
তিনি বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে একটি কর্তৃত্ববাদী দু:শাসনের অবসান হয়েছে। বর্তমান অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার একটি বৈষম্যমুক্ত রাষ্ট্র নির্মাণে কাজ করে যাচ্ছে। প্রযুক্তি ও প্রকৌশলগত উন্নয়ন একটি জাতির উন্নয়নের গতিকে ত্বরান্বিত করে। তথ্যপ্রযুক্তিতে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন জ্ঞান ও আবিষ্কার। প্রকৌশলীগণ যার মুখ্য কারিগর।
প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘বিশ্বায়নের এ যুগে প্রযুক্তি ও প্রকৌশল জ্ঞানের বিকাশ ছাড়া দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। সামগ্রিক উন্নয়ন নিশ্চিত এবং উন্নত আধুনিক বাংলাদেশ গঠনেও প্রকৌশলীদের কার্যকর ভূমিকা অত্যাবশ্যক বলে আমি মনে করি। প্রকৌশলীগণ দেশপ্রেমের অনির্বাণ চেতনাকে ধারণ করে সততা ও নিষ্ঠার সাথে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবেন বলে আশা করছি।’
প্রধান উপদেষ্টা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি)-এর ৭৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে গৃহীত সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।
আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে ১০ দিন ছুটি রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
মঙ্গলবার (৬ মে) সচিবালয়ে উপদেষ্টা পরিষদ সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এ তথ্য জানান।
পাশাপাশি ১৭ ও ২৪ মে দুটি শনিবার অফিস খোলা থাকবে বলে ওই পোস্টে জানানো হয়েছে। তবে কবে থেকে ঈদের ছুটি শুরু হয়ে কবে শেষ হবে, সে বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।
গত ঈদুল ফিতরে ২৮ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত টানা ৯ দিন ছুটি ছিল। ঈদে টানা পাঁচদিন ছুটি আগেই ঘোষণা করে সরকার। তার সঙ্গে নির্বাহী আদেশে আরও এক দিন ছুটি বাড়ানো হয়। ওই ছুটি শুরুর দুদিন আগে ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের ছুটি ছিল। মাঝে ২৭ মার্চ একদিন খোলা ছিল অফিস।
চলতি মে মাসে এরইমধ্যে টানা তিন দিন ছুটি উপভোগ করছেন সরকারি চাকরিজীবীরা। দ্বিতীয় দফায় আরও একবার তিন দিনের ছুটি পেতে চলেছেন তারা। আগামী ১১ মে (রবিবার) বুদ্ধ পূর্ণিমার ছুটি। এরআগে দুদিন সাপ্তাহিক ছুটি আছে তাদের। অর্থাৎ এই মাসে দুদফায় তিন দিন করে ছুটি উপভোগ করবেন তারা।