মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫
৮ পৌষ ১৪৩২
জমজমাট পশুর হাট

চাহিদার শীর্ষে ছোট গরু, দামে নাখোশ সবাই

মাগুরা সদরের রামনগর হাটে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আসা কুরবানির পশু। ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড
২৮ জুন, ২০২৩ ০৯:১০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক
প্রকাশিত
দৈনিক বাংলা ডেস্ক
প্রকাশিত : ২৮ জুন, ২০২৩ ০৮:০৩

ঈদুল আজহা সমাগত। অন্যান্য বছর এই ঈদের সপ্তাহখানেক আগে থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে জমে ওঠে কোরবানির পশুর হাট। তবে এ বছরের চিত্র একটু ভিন্ন। ঈদের এক সপ্তাহ আগে হাটগুলোতে গরুর সরবরাহ থাকলেও ক্রেতাদের উপস্থিতি ছিল না, ছিল না বেচাকেনা। শেষ মুহূর্তে এসে অবশ্য জমজমাট চিত্র হাটের।

বরাবরের মতোই এবারও হাটে চাহিদার শীর্ষে ছোট থেকে মাঝারি আকারের গরু। তুলনামূলকভাবে বড় আকারের গরুর ক্রেতা নেই বললেই চলে। আর সারা দেশেই গরুর ক্রেতা-বিক্রেতা সবার বক্তব্য এক- এ বছর গরুর দাম বেশি। গরুর এই চড়া দামে হাসি নেই কারও মুখেই। সে কারণে শেষের দিকে এসেও বিক্রির পরিমাণে বিক্রেতারা খুশি হতে পারছেন না।

দৈনিক বাংলার নরসিংদী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, জেলায় স্থায়ী ও অস্থায়ী পশুর হাটের সংখ্যা ৭১টি। ক্রেতারা বলছেন, ছোট গরুর দাম গত বছরের তুলনায় বেশি চাওয়া হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা, বড় গরুতে তা ৫০ হাজার থেকে লাখ টাকা। বাড়তি দামের কারণে বেচাকেনায় সন্তুষ্ট নন বিক্রেতারা।

জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের তথ্য বলছে, ঈদ সামনে রেখে জেলায় চাহিদার তুলনায় ১৩ হাজার বেশি পশু প্রস্তুত করেছেন খামারি ও কৃষকরা। তারপরও হাটে গিয়ে গরু মিলছে না কম দামে।

খামারি ও গরু ব্যবসায়ীরা বাড়তি দামের জন্য কারণ দেখাচ্ছেন গো-খাদ্যের দামকে। ক্রেতা না পাওয়ায় সামান্য লাভে, এমনকি লোকসানেও গরু বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন বলে দাবি তাদের।

শিবপুর পুটিয়া বাজারের ইজারাদার মারুফ ইব্রাহিম জানালেন, দুই লাখ টাকা বা তার বেশি দামের পশু বিক্রি হলে হাসিলে ২০ শতাংশ ছাড় দিচ্ছেন। আজ বুধবার এই হাটের শেষ দিন।

নওগাঁ প্রতিনিধি মো. সবুজ হোসেন জানিয়েছেন, ২৭টি স্থায়ী ও ৯টি অস্থায়ী হাটে চলছে কোরবানির পশু বেচাকেনা। জেলার চাহিদার তুলনায় দ্বিগুণ পশু প্রস্তুত হয়েছে কোরবানির জন্য, যেগুলো অন্য জেলায় চলে যাবে।

মহাদেবপুর উপজেলার চকগৌরি ও রানীনগর উপজেলার ত্রিমোহনীসহ কয়েকটি কোরবানির পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, ৭০ হাজার টাকা থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত দামের গরুর চাহিদা এবং বেচাকেনা বেশি। এই জেলায়ও ক্রেতারা জানিয়েছেন, ছোট ও মাঝারি গরুগুলো আগের বছরের চেয়ে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা বেশিতে কিনতে হচ্ছে।

চকগৌরি হাট থেকে এক লাখ ৪০ হাজার টাকায় গরু কিনে ফিরছিলেন একরামুল হক। তিনি বলেন, গত ঈদে এই গরু এক লাখ ২০ হাজার টাকার বেশি হতো না।

ক্রেতাদের অভিযোগ প্রসঙ্গে গরু ব্যবসায়ী আফজাল হোসেন বলেন, গত বছরের দামের সঙ্গে এবারের দাম মেলালে হবে না। এক বছরের ব্যবধানে গরুর সব ধরনের খাবারের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। কিন্তু গরুর দাম ততটা বাড়েনি। নয়তো এক লাখ টাকার গরুর দাম দুই লাখ হতো।

কুমিল্লা প্রতিনিধি মাহফুজ নান্টু জানাচ্ছেন, এই জেলায়ও কোরবানির জন্য পশু প্রস্তুত চাহিদার চেয়ে আট হাজার বেশি। তারপরও মধ্যবিত্তরা পশুর হাটগুলোতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। কারণ তাদের চাহিদা ছোট ও মাঝারি আকারের গরুগুলোর দাম বাজেটে মিলছে না।

আদর্শ সদর উপজেলার নেউরা বাজারে গিয়ে দীর্ঘ দুই ঘণ্টা ঘুরেও বাজেটের মধ্যে গরু কিনতে না পারার কথা জানালেন দুই শিক্ষক আবদুল হক ও ওবায়দুল হক। ঢাকায় বেসরকারি একটি কোম্পানিতে কর্মরত ফেরদৌস আহমেদ আবার বাজারের পরিস্থিতি দেখে অল্প টাকায় গরু কেনার আশা ছেড়ে দিয়ে ভালো একটি খাসি কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

মাগুরা প্রতিনিধি লিটন ঘোষ জানিয়েছেন, জেলায় কোরবানির জন্য চাহিদার তুলনায় পশু প্রস্তুত হয়েছে আড়াই গুণেরও বেশি। তবে বেচাকেনা ও দামে সন্তুষ্ট না হওয়ায় অনেক খামারিই পশু খামারে ফেরত নিয়ে যাচ্ছেন।

সদরের বারাশিয়া গ্রামের খামারি শফিকুল বলেন, ‘মাঝারি দুটি গরু বিক্রি করেছি বাড়ি থেকে। বড় একটি গরু নিয়ে বিপদে পড়েছি। দুই লাখ ২০ হাজার টাকা বিক্রির আশা ছিল, এক লাখ ৭০ হাজার টাকার বেশি দামই উঠছে না। হাটে হাটে ঘুরছি। হাটে গরু নিলে খাজনা দিতে হয়, পরিবহন খরচ আছে। বিক্রি করতে না পারলে এত খরচ উঠানো সম্ভব না। তাই চেষ্টা করে যাচ্ছি।’

বাগেরহাটের মোংলা প্রতিনিধি আবু হোসাইন সুমন জানিয়েছেন, গরুর হাটগুলোতে ক্রেতা-বিক্রেতা কারও মুখেই হাসি নেই। জেলার খামারিরা বিত্তবানদের জন্য শাহীওয়াল, ফ্রিজিয়ানসহ দেশীয় জাতের গরু দেশীয় খাবারের মাধ্যমে মোটাতাজা করেছেন। আর মধ্যবিত্তদের জন্য প্রস্তুত করেছেন দেশি জাতের মাঝারি ও ছোট গরু। লবণাক্ত এ এলাকায় ঘাস ও খড় না থাকায় বিকল্প খাবার কিনে খাওয়াতে গিয়ে তাদের গরু লালন-পালনে খরচ অনেক বেড়েছে।

গরু খামারি মো. মাসুদ, বায়জিদ ও কামারুজ্জামান জসিম জানালেন, এ বছর হাটে বাইরের গরু না আসায় পাল্লা দিয়ে বেড়েছে দেশীয় গরুর দাম। মাংস প্রতি মণ ৩১ থেকে ৩২ হাজার টাকা দর হিসেবে বিক্রি হচ্ছে একেকটি গরু, যা গত বছরের চেয়ে মণে ছয় থেকে সাত হাজার টাকা বেশি।

গতকাল চটেরহাট ঘুরে দেখা যায়, পশু সরবরাহ পর্যাপ্ত হলেও চড়া দামের কারণে বেচাকেনা কম। ক্রেতাদের অনেকেই দীর্ঘ সময় হাট ঘুরে গরু কিনতে না পেরে ফিরে যাচ্ছেন। ভালো দাম না পাওয়ায় বিক্রেতারাও পশু ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।

চটেরহাট বাজারের ইজারাদার মোস্তফা বলেন, ‘হাটে নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত, জাল টাকা শনাক্ত, প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের তদারকির পাশাপাশি অন্যান্য হাটের তুলনায় খাজনাও কম নেয়া হচ্ছে। তবে বেচাকেনা কম, দাম বেশি।’

যশোরের বেনাপোল প্রতিনিধি রাশেদুর রহমান রাশু জানিয়েছেন, শার্শার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে অবৈধপথে ভারতীয় গরু প্রবেশে কড়াকড়ির কারণে সীমান্তের পশু খাটালগুলো খাঁ খাঁ করছে। তবে ভারতীয় গরু না এলেও দেশীয় পশুতে জমজমাট হয়ে উঠেছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সবচেয়ে বড় যশোরের শার্শার বাগ আঁচড়া সাতমাইল পশুহাট। খামারিরা বলছেন, ভারতীয় গরু না আসায় এ বছর তারা ভালো দাম পাবেন। দাম কিছুটা বেশি হলেও দেশি গরু কিনতে পেরে খুশি ক্রেতারাও।

সাতমাইল গরুর হাটের খামারিরা বললেন, ছোট ও মাঝারি আকারের গরুর চাহিদা থাকলেও বড় গরুর দাম উঠছে না একেবারেই। তাতে খামারিদের অনেককেই গরু বিক্রি করে লোকসান দিতে হবে।

বেনাপোল বন্দর থানার বড় আঁচড়া গ্রামের খামারি আবু তাহের ভারত বলেন, ‘গো খাদ্যের দাম অনেক বেশি। কিন্তু ক্রেতারা যে দাম বলছেন, তাতে প্রতি গরুতে ২০ হাজার টাকা থেকে ২৫ হাজার টাকা লোকসান হবে।’

পশু বিক্রি না হওয়ায় হতাশা জানিয়ে আরেক খামারি বলেন, হাটে হাজার হাজার কোরবানির পশু রয়েছে। হাজার হাজার ক্রেতাও রয়েছে। কিন্তু তারপরও পশু বিক্রি হচ্ছে না।

সাতমাইল ও নাভারণ পশুহাটে কোরবানির পশু বেচাকেনার সময়ে মেডিকেল টিম কাজ করতে দেখা গেল। হাটে ছিল ক্যাশলেস ব্যবস্থা তথা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ লেনদেনের সুবিধা।

বিষয়:

একনেকে ৪৬ হাজার কোটি টাকার ২২ প্রকল্প অনুমোদন

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ৪৬ হাজার ৪১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে মোট ২২টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এই সভায় সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের ১৪টি নতুন প্রকল্প ছাড়াও ৫টি সংশোধিত এবং ৩টি মেয়াদ বৃদ্ধিকৃত প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নের মোট ব্যয়ের মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে যোগান দেওয়া হবে ৩০ হাজার ৪৮২ কোটি টাকা এবং অবশিষ্ট অর্থ প্রকল্প ঋণ ও সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে আসবে।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীনে তিনটি বড় প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে যার মধ্যে রয়েছে কর্ণফুলী টানেলের সংযোগ সড়ক উন্নয়ন এবং ঢাকা-সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক চারলেনে উন্নীতকরণে ভূমি অধিগ্রহণ প্রকল্প। এছাড়াও দিনাজপুর সড়ক বিভাগাধীন হিলি-ঘোড়াঘাট জাতীয় মহাসড়ককে যথাযথ মানে উন্নীত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে নারায়ণগঞ্জের আলীগঞ্জে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ৮টি ১৫ তলা ভবন নির্মাণের সংশোধিত প্রকল্পটিও সভায় অনুমোদন পেয়েছে।

স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের পাঁচটি প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে ঢাকা ওয়াসা প্রশিক্ষণ একাডেমি স্থাপন, সিলেটের জলাবদ্ধতা নিরসন ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ এবং পটুয়াখালী জেলার গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন। জ্বালানি খাতের উন্নয়নে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের (ইআরএল) আধুনিকীকরণ ও সম্প্রসারণের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে রাঙ্গামাটি জেলার কর্ণফুলী ও সংশ্লিষ্ট নদীসমূহের পানি ব্যবস্থাপনা এবং সুরমা-কুশিয়ারা নদী অববাহিকার উন্নয়ন সংক্রান্ত চারটি বড় প্রকল্পের সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে মোংলা ও সাভারে দুটি বড় উন্নয়ন প্রকল্প এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে নার্সিং শিক্ষা ও গবেষণার সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। শিক্ষা খাতে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিইউপি-এর উন্নয়নে পৃথক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে গাজীপুরের কোনাবাড়িতে দুস্থ শিশুদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পুনর্নির্মাণ এবং ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীনে দারুল আরকাম ইসলামী শিক্ষা পরিচালনার দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্পটিও চূড়ান্ত করা হয়েছে।

বৈঠকে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনসহ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাবৃন্দ এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও পরিকল্পনা উপদেষ্টার নিজস্ব ক্ষমতাবলে অনুমোদিত ৫০ কোটি টাকার কম ব্যয় সম্বলিত ১০টি ছোট প্রকল্প সম্পর্কে সভায় অবহিত করা হয়, যার মধ্যে অর্থনৈতিক শুমারি ২০২৩ এবং র‍্যাবের আভিযানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির মতো প্রকল্পগুলো রয়েছে। সামগ্রিকভাবে এই প্রকল্পগুলো দেশের অবকাঠামো, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।


তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন: শাহজালাল বিমানবন্দরে ২৪ ঘণ্টা ভিজিটর প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রী ছাড়া সর্বসাধারণ ও সহযাত্রীদের প্রবেশের ওপর ২৪ ঘণ্টার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামীকাল বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এই বিধিনিষেধ কার্যকর থাকবে। বেবিচকের মুখপাত্র কাওছার মাহমুদ জানিয়েছেন, বিমানবন্দরের নিরাপত্তা, যাত্রীসেবা ও অপারেশনাল শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে বিশেষ নিরাপত্তাজনিত কারণে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, মূলত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের লন্ডন থেকে দেশে ফেরার মাহেন্দ্রক্ষণকে কেন্দ্র করেই এই কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে তাঁর বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি-২০২ ফ্লাইটটি ঢাকায় অবতরণ করার কথা রয়েছে। তারেক রহমানের এই আগমনকে সম্পূর্ণ নিরাপদ ও সুশৃঙ্খল রাখতে বিমানবন্দর এলাকায় সাধারণ মানুষের চলাচল সীমিত করা হয়েছে। ওই সময়ে বৈধ টিকিট ও পাসপোর্ট ছাড়া কাউকে বিমানবন্দর এলাকায় প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। তবে তারেক রহমানকে অভ্যর্থনা জানাতে নির্ধারিত একটি বিশেষ প্রতিনিধি দল বিমানবন্দরের ভেতরে থাকার অনুমতি পাবে।

এদিকে, তারেক রহমান লন্ডন থেকেই সংশ্লিষ্টদের প্রতি বিশেষ অনুরোধ জানিয়েছেন যেন তাঁর দেশে ফেরা উপলক্ষে সাধারণ বিমানযাত্রীরা কোনো ধরনের হয়রানি বা সমস্যার শিকার না হন। তাঁর নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট ফ্লাইটের দায়িত্ব থেকে বিতর্কিত দুই কেবিন ক্রুকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বিমানবন্দরের ভিআইপি ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা দফায় দফায় বৈঠক করেছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে যে, তারেক রহমান বিমানবন্দর ত্যাগ না করা পর্যন্ত পুরো এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি নিশ্ছিদ্র ও কঠোর নিরাপত্তা বলয় সক্রিয় থাকবে। মূলত যাত্রী সাধারণের স্বাচ্ছন্দ্য এবং ভিআইপি প্রটোকল বজায় রাখাই এই নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য।


উৎসবমুখর নির্বাচনের পূর্ণ সক্ষমতা পুলিশের রয়েছে: আইজিপি

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ও গণভোটকে সামনে রেখে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম দৃঢ়তার সঙ্গে জানিয়েছেন যে, একটি সুষ্ঠু, সুন্দর ও উৎসবমুখর নির্বাচন উপহার দেওয়ার মতো পূর্ণ সক্ষমতা বাংলাদেশ পুলিশের রয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে রিটার্নিং অফিসার ও মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আয়োজিত এক গুরুত্বপূর্ণ মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন। আইজিপি স্পষ্ট করে জানান, জুলাই-পরবর্তী অস্থিরতা ও প্রতিকূল পরিস্থিতি কাটিয়ে পুলিশ এখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সম্পূর্ণ প্রস্তুত এবং যেকোনো বিশৃঙ্খলা দমনে বাহিনী কঠোর প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

পুলিশ প্রধান বলেন, সম্প্রতি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাস্তা বা মহাসড়ক অবরোধ করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টির একটি প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, যা কঠোরভাবে বন্ধ করার সময় এসেছে। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, যদি সর্বত্র শৃঙ্খলা বা ‘অর্ডার’ প্রতিষ্ঠিত করা না যায়, তবে নির্বাচন কমিশনকে সর্বাত্মক সহায়তা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। তাই মহাসড়ক বা জনপদে অস্থিরতা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার ইঙ্গিত দেন তিনি। এছাড়া, তিনি নির্বাচন কমিশনের নেওয়া সময়োপযোগী পদক্ষেপগুলোর প্রশংসা করেন, বিশেষ করে ইলেক্টরাল ইনকোয়ারি কমিটিকে সংক্ষিপ্ত বিচারের (সামারি ট্রায়াল) মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে সাজার ক্ষমতা দেওয়া এবং ম্যাজিস্ট্রেটদের প্রয়োজনে যেকোনো বাহিনীর সহায়তা নেওয়ার সুযোগ দেওয়ার বিষয়টিকে তিনি অত্যন্ত কার্যকর বলে অভিহিত করেন।

মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনিক পরিবর্তনের বিষয়ে আইজিপি নির্বাচন কমিশনের কাছে একটি সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা চান। তিনি উল্লেখ করেন, এসপি বা তদূর্ধ্ব কর্মকর্তাদের বদলির ক্ষেত্রে কমিশনের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা থাকলেও কনস্টেবল বা সাব-ইন্সপেক্টরের মতো সর্বনিম্ন পদের রদবদলের ক্ষেত্রেও কমিশনের পূর্বানুমতি প্রয়োজন কি না, সে বিষয়ে একটি স্পষ্ট নির্দেশিকা থাকা প্রয়োজন। পরিশেষে তিনি দেশবাসী ও নির্বাচন কমিশনকে আশ্বস্ত করে বলেন যে, পুলিশ তার সর্বশক্তি দিয়ে এবারের নির্বাচনকে সফল ও শান্তিপূর্ণ করতে বদ্ধপরিকর। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।


ভারতে বাংলাদেশের মিশনগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান ঢাকার

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে সৃষ্ট চরম উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে তলব করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আজ মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) সকালে তাঁকে মন্ত্রণালয়ে ডেকে নিয়ে নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাই কমিশন চত্বরের অপ্রীতিকর ঘটনা এবং সোমবার শিলিগুড়িতে বাংলাদেশ ভিসা সেন্টারে চরমপন্থি গোষ্ঠীগুলোর ভাঙচুরের ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। একটি আনুষ্ঠানিক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভারত সরকারকে এই ন্যাক্কারজনক ঘটনাগুলোর বিষয়ে বাংলাদেশের কড়া অবস্থানের কথা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, বাংলাদেশের কূটনৈতিক স্থাপনাগুলোর বিরুদ্ধে এ ধরনের পূর্বপরিকল্পিত সহিংসতা ও ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করা আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক শিষ্টাচারের চরম লঙ্ঘন। এ ধরনের কর্মকাণ্ড কেবল কর্মকর্তাদের নিরাপত্তাকেই হুমকির মুখে ফেলে না, বরং দুই দেশের পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহনশীলতার মূল্যবোধকেও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। বাংলাদেশ সরকার এই সহিংসতা ও ভাঙচুরের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে এটিকে অত্যন্ত দুঃখজনক হিসেবে অভিহিত করেছে।

তদন্ত ও নিরাপত্তার দাবিতে ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ বলেছে, এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ভারতে থাকা বাংলাদেশের প্রতিটি মিশন ও সংশ্লিষ্ট স্থাপনাগুলোর কঠোর সুরক্ষা নিশ্চিত করা দিল্লির দায়িত্ব। একই সঙ্গে শিলিগুড়ি ও নয়াদিল্লির ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়েছে। বাংলাদেশ আশা করে, ভিয়েনা কনভেনশনসহ আন্তর্জাতিক ও কূটনৈতিক বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী ভারত সরকার অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে বিদেশি মিশনের মর্যাদা রক্ষা করবে।


ভারতীয় হাইকমিশনারকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তলব

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশের মিশনগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগের প্রেক্ষাপটে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে তলব করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আজ মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) সকাল ১০টার কিছু আগে পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আল সিয়ামের কার্যালয়ে এই তলব করা হয়। এ সময় ভারতের ডেপুটি হাইকমিশনারও তাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ভারতের বিভিন্ন স্থানে থাকা বাংলাদেশের মিশন ও দূতাবাসগুলোতে বর্তমান নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি এবং সম্ভাব্য ঝুঁকি নিয়ে হাইকমিশনারের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ভারতের মিশনগুলোর সুরক্ষা ব্যবস্থা অবিলম্বে জোরদার করার জন্য প্রয়োজনীয় ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জোরালো অনুরোধ জানানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ১০ দিনের ব্যবধানে এটি দ্বিতীয়বারের মতো ভারতীয় হাইকমিশনারকে তলব করার ঘটনা। এর আগে গত ১৪ ডিসেম্বর তাঁকে তলব করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অব্যাহত উসকানিমূলক বক্তব্য নিয়ে বাংলাদেশের গভীর উদ্বেগের কথা জানানো হয়েছিল। পাশাপাশি ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদির হত্যাকারীদের ভারতে পালিয়ে যাওয়া ঠেকাতে অথবা তারা ভারতীয় ভূখণ্ডে প্রবেশ করে থাকলে তাদের দ্রুত গ্রেফতার ও ফেরত পাঠানোর বিষয়ে দিল্লির সক্রিয় সহযোগিতা চেয়েছিল ঢাকা। মূলত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সাম্প্রতিক টানাপোড়েন এবং কূটনৈতিক মিশনগুলোর নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েই আজকের এই তলব ও বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।


নির্ধারিত সময়েই নির্বাচন: মার্কিন বিশেষ দূতকে প্রধান উপদেষ্টার দৃঢ় অঙ্গীকার

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি নির্ধারিত সময়েই দেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে নিজের দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, দীর্ঘ স্বৈরাচারী শাসনামলে দেশের মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছিল, তাই এখন সাধারণ মানুষ তাদের সেই অধিকার প্রয়োগের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। সোমবার (২২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত সার্জিও গোরের সঙ্গে এক টেলিফোন আলাপে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রায় আধা ঘণ্টাব্যাপী এই গুরুত্বপূর্ণ ফোনালাপে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, শুল্ক সংক্রান্ত আলোচনা, গণতান্ত্রিক রূপান্তর এবং সাম্প্রতিক সময়ের আলোচিত ইস্যু তরুণ রাজনৈতিক কর্মী শহীদ শরীফ ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সার্জিও গোর সাম্প্রতিক শুল্ক আলোচনায় সফল নেতৃত্বের জন্য প্রফেসর ইউনূসকে অভিনন্দন জানান। এই আলোচনার ফলে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের পারস্পরিক শুল্ক ২০ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে, যা দেশের বাণিজ্যের জন্য এক বড় মাইলফলক। আলাপকালে মার্কিন বিশেষ দূত শহীদ ওসমান হাদির জানাজায় মানুষের বিশাল উপস্থিতির বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করেন।

প্রধান উপদেষ্টা মার্কিন দূতকে অবহিত করেন যে, ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরাচারী শাসনের সমর্থকেরা নির্বাচন প্রক্রিয়া নসাৎ করতে বিপুল অর্থ ব্যয় করছে এবং তাদের পলাতক নেতা বিদেশ থেকে সহিংসতা উসকে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। তবে তিনি সাফ জানিয়ে দেন যে, অন্তর্বর্তী সরকার যেকোনো ধরনের নাশকতামূলক পরিস্থিতি মোকাবিলায় এবং একটি সুশৃঙ্খল পরিবেশ বজায় রাখতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত। নির্বাচনের আর মাত্র প্রায় ৫০ দিন বাকি আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার একটি অবাধ ও স্মরণীয় নির্বাচন উপহার দিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

এই ফোনালাপের সময় প্রধান উপদেষ্টার পাশে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান এবং এসডিজি বিষয়ক সিনিয়র সচিব লামিয়া মোরশেদ। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতায় বাংলাদেশ একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক কাঠামো গড়ে তুলতে বদ্ধপরিকর। মার্কিন বিশেষ দূতের এই যোগাযোগ ও সহযোগিতা বাংলাদেশের বর্তমান সংস্কার প্রক্রিয়ায় একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।


আমরা এমন নির্বাচন চাই, যেখানে ভয় ও বাধা থাকবে না: প্রধান উপদেষ্টা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

ভয়হীন ও মুক্ত পরিবেশে ভোট দেওয়ার সুযোগ নিশ্চিত করার বিষয়ে সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকারের কথা ব্যক্ত করে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আমরা এমন একটি নির্বাচন চাই, যেখানে ভয় থাকবে না, বাধা থাকবে না—থাকবে শুধু জনগণের মুক্ত ও নির্ভীক মতপ্রকাশ। সরকার সেই পরিবেশ নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর।

সোমবার (২২ ডিসেম্বর) বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ‘ভোটের গাড়ি’ শীর্ষক প্রচারণার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ভিডিও বার্তায় প্রধান উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও ২০২৬ সালের গণভোট সামনে রেখে ভোটারদের সচেতন ও উদ্বুদ্ধ করতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সৎ ও যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনি দেশের মালিক। এ দেশ আগামী পাঁচ বছর আপনার পক্ষে কে চালাবে সেটা আপনি ঠিক করুন। আপনার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিন। সৎ ও যোগ্য প্রার্থী বেছে নিন। চিন্তা-ভাবনা করে ভোট দিন।’

নতুন বাংলাদেশ গড়তে তরুণদের সক্রিয় অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বিশেষভাবে তরুণ সমাজ, নারী ভোটার ও প্রথমবারের মতো হওয়া ভোটারদের এগিয়ে আসতে বলেন।

তিনি বলেন, ‘আমি বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি তরুণ সমাজ, নারী ভোটার এবং প্রথমবারের ভোটারদের প্রতি- আপনারা এগিয়ে আসুন। প্রশ্ন করুন, জানুন, বুঝুন এবং ভোট দিন। আপনার সিদ্ধান্তে গড়ে উঠবে আগামী দিনের বাংলাদেশ, নতুন বাংলাদেশ।’

একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে দেশের প্রতিটি নাগরিকেরও দায়িত্ব রয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘ভোটাধিকার কারও দয়া নয়- এটি আমাদের সাংবিধানিক অধিকার। এই অধিকার প্রয়োগের মাধ্যমেই আমরা ঠিক করি, আমাদের ভবিষ্যৎ কোন পথে যাবে। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করা শুধু সরকারের দায়িত্ব নয়; এটি রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব।’

তিনি আরও বলেন, ‘চলুন, ভোট দিই- নিজের জন্য, দেশের জন্য, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য, নতুন পৃথিবীর জন্য।’

‘ভোটের গাড়ি’ প্রসঙ্গে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘এই সুপার ক্যারাভান কেবল একটি গাড়ি নয়, এটি গণতন্ত্রের আনন্দ বাণী বহনকারী বহর। এটি জানিয়ে দেবে, আপনার একটি ভোট কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এটা মনে করিয়ে দেবে নিষ্ক্রিয়তা নয়, অংশগ্রহণই গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করে।’

তিনি জানান, এবারের নির্বাচনে ভোটারদের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পাশাপাশি জুলাই জাতীয় সনদের ওপর গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। দীর্ঘ নয় মাস ধরে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে এই সনদ প্রস্তুত করা হয়েছে। জনগণ এই সনদে সমর্থন দিলে দেশের ভবিষ্যৎ দীর্ঘমেয়াদে নিরাপদ ও স্থিতিশীল হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। সনদের পক্ষে থাকলে গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় অতিক্রম করছে। সামনে আমাদের জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের ওপর গণভোট।’

এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে যাত্রা শুরু করেছে ১০টি ভোটের গাড়ি- সুপার ক্যারাভান। এসব গাড়ি দেশের ৬৪টি জেলা ও ৩০০টি উপজেলায় ঘুরে বেড়াবে। তারা মানুষের দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে নির্বাচন ও গণভোট সম্পর্কে তথ্য পৌঁছে দেবে, ভোটাধিকার সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করবে এবং গণতন্ত্রের বার্তা ছড়িয়ে দেবে।

গণতান্ত্রিক এই যাত্রাকে সফল করতে তিনি সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।


তারেক রহমানকে বরণ করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে দেশবাসী

তারেক রহমানকে সংবর্ধনা দিতে ৩০০ ফিট এলাকায় মঞ্চ তৈরির কাজ চলছে। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তাকে বরণ ও সংবর্ধনা দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে দেশবাসী। রাজধানীর ৩০০ ফিট এলাকায় প্রস্তুত হচ্ছে বিশাল মঞ্চ।

গত রোববার (২১ ডিসেম্বর) দুপুর থেকে বিশ্বরোড থেকে পূর্বাচলমুখী ৩০০ ফিট সড়কের একটি অংশজুড়ে মঞ্চ তৈরির কাজ শুরু হয়। বিএনপির নেতারা জানান, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে কমিটির সদস্যরা দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।

সোমবার (২২ ডিসেম্বর) বিএনপি নেতারা বলেন, তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তনের জন্য দেশবাসী অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী ২৫ ডিসেম্বর ঢাকায় পৌঁছে বনানী-কাকলী হয়ে ৩০০ ফিট এলাকায় আসবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। সেখানে আয়োজিত মূল সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি বক্তব্য দেবেন।

এদিকে সরেজমিনে দেখা গেছে, মঞ্চের দুই পাশে তাবু স্থাপন করা হয়েছে— যেখানে আপাতত ডেকোরেটরের সরঞ্জাম রাখা হয়েছে। রাস্তার ল্যাম্প পোস্টে লাগানো হচ্ছে মাইক।

সোমবার (২২ ডিসেম্বর) বিকেলে মঞ্চের আশেপাশে উৎসুক নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ জড়ো হয়ে আছেন। কেউ কাজের তদারকি করছেন, আর কারোবা সাংগঠনিক কাজে মনোযোগ। দলটির সিনিয়র নেতারাও আসছেন, কাজের অগ্রগতি দেখছেন।

সোমবার (২২ ডিসেম্বর) বিকেলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার আহ্বায়ক আমিনুল হকসহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা উপস্থিত হন মঞ্চের কাছে।

প্রস্তুতি সম্পর্কে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমাদের এখানে যারা ডেকোরেটরের কাজ করছেন… মাইক লাগানো হচ্ছে। নিরাপত্তার বিষয়টা আমরা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘সবকিছু তো আমাদের হাতে নাই। আমাদের ছেলেরা রাউন্ড দ্য ক্লক এখানে আছে, কাজ করছে। যাদের দায়িত্ব স্টেজ বানানো, মাইকের কাজ এগুলো চলছে।’

তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে পুরো জাতি একটা শঙ্কা মধ্যে আছে, প্রতিটা মুহূর্তেই। নিরাপত্তা যতটুকু এনসিওর করা দরকার, আমরা চেষ্টা করছি। বাকিটা আল্লাহর হাতে। সরকারের পক্ষ থেকে অসহযোগিতা নাই।’

আব্বাস বলেন, ‘লাখো মানুষের সমাগমের পরিকল্পনা আমরা করি নাই। যদি লাখো মানুষ সমাবেত হয়ে যায়, সেটা তো আমাদের কিছু করার নাই। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আসবেন। দেশে মানুষের মধ্যে একটা জাগরণ তো আছে। সে জাগরণের প্রতিফলন এখানে ঘটবে। এটা আমরা আশা করি।’

এদিকে পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। সোমবার বেশ কয়েকজন পুলিশকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ক্যান্টনমেন্ট জোনের পুলিশ ইন্সপেক্টর টি এম আব্দুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বাড়তি নিরাপত্তা নেওয়া হয়েছে। তবে এটা রেগুলার চেকপোস্ট— যাতে অনাকাঙ্ক্ষিত কোনও ঘটনা না ঘটে। এখানের অবস্থা ভালো। গাড়ি আসতেছে তাদের চেক করা হচ্ছে।’

আয়োজনের প্রস্তুতি সম্পর্কে বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, ‘‘তিনশ ফিটে সংবর্ধনা হবে। সেখানে নানা আয়োজন থাকবে বলে আশা করছি। পুরো শিডিউল নির্ধারণ হলে জানাতে পারবো।’

তিনি আরও জানান, সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের দিন সকাল থেকেই মঞ্চে নানামুখী আয়োজন থাকবে। সাংস্কৃতিক পরিবেশনাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি যুক্ত হতে পারে বলেও জানান তিনি।

সূত্র জানিয়েছে, সরকারি ও দলীয় মিলিয়ে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। মূল মঞ্চ, গণমাধ্যমের কর্মীরা নিরাপত্তা বলয়ে থাকবেন।


মব ভায়োলেন্সকে ক্ষমতার স্তম্ভ বিবেচনা রাষ্ট্রের দায়িত্বে অধিষ্ঠিতদের : ইফতেখারুজ্জামান

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাষ্ট্রকাঠামোর অভ্যন্তরে ‘মবতন্ত্র’ শুরু হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রকাঠামোর দায়িত্বে যারা অধিষ্ঠিত, তারা মব ভায়োলেন্সের পেছনের শক্তিকে তাদের ক্ষমতার অন্যতম প্রধান স্তম্ভ হিসেবে বিবেচনা করেন।’

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ এবং নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীরকে হেনস্তার প্রতিবাদে সংবাদপত্রের মালিক ও সম্পাদকদের দুটি সংগঠন- নিউজপেপার্স ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব) ও সম্পাদক পরিষদের যৌথ প্রতিবাদ সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

গতকাল সোমবার ‘মব ভায়োলেন্সে আক্রান্ত বাংলাদেশ’ শিরোনামে এই সভা পরিচালনা করেন দৈনিক বণিক বার্তার সম্পাদক ও সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আজকে যে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, আমাদের সকলের, দেশবাসীর দায় এটা প্রতিহত করা, কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু মূল দায়িত্ব সরকারের। দেশের মানুষের নিরাপত্তায় সরকার কী করছে, সে প্রশ্নের উত্তর সরকারকে দিতে হবে।

প্রতিবাদ সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, পেশাজীবী সংগঠন, ব্যবসায়ী সংগঠন, সাংবাদিক সংগঠন ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ সংহতি জানাতে আসেন। সভায় দেশের শীর্ষস্থানীয় এই দুই গণমাধ্যম কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন বরেণ্য নাগরিক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি, সাংবাদিক, লেখক, বুদ্ধিজীবী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। তারা বলেছেন, এই হামলা কোন একটি সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে নয়; এটি সরাসরি গণতন্ত্র, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও নাগরিক অধিকারের ওপর আঘাত।

বক্তারা বলেন, দেশের শীর্ষস্থানীয় দুই সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে যে হামলার ঘটনা ঘটেছে, শুধু গণমাধ্যম নয়, এটি গণতন্ত্র ও বাক স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত। শিক্ষা ও সংস্কৃতির ওপর আঘাত। যারা ‘মবের’ নামে নৈরাজ্য করছে, তাদের ঠেকাতে সরকার কেন তৎপর হয় না, সেই প্রশ্ন তোলা হয়েছে সমাবেশ থেকে। সভায় বক্তাদের ভাষ্য, এই হামলার ঘটনায় সরকারের নিষ্ক্রিয়তা ছিল ‘ভয়ঙ্কর’। প্রতিবাদ সভা থেকে স্বাধীন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠা ও সুরক্ষার জন্য ‘ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের’ ডাক দিয়েছেন সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, লেখক, ব্যবসায়ী, নাগরিক ও পেশাজীবী সমাজের প্রতিনিধিরা।

সভাশেষে হোটেলের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। বক্তারা বলেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষা ও গণতন্ত্রের বিকাশে সাংবাদিক, লেখক, বুদ্ধিজীবী এবং সব পেশাজীবী মানুষের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ এখন সময়ের দাবি।

সমাপনী বক্তব্যে নোয়াব সভাপতি ও সমকাল প্রকাশক এ কে আজাদ বলেন, সবাই একটা কথা বলেছেন, আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে এটা প্রতিরোধ করতে হবে। যতদিন পর্যন্ত না ডেইলি স্টার, প্রথম আলো, ছায়ানট, উদীচীসহ সকল হামলার বিচার না হবে, ততদিন আমাদের আন্দোলন চলবে। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের মতামতের ভিত্তিতে আগামী মাসের মাঝামাঝি বড় আকারের মহাসম্মেলন করাও ঘোষণাও দেন।


অস্ত্রের লাইসেন্স ও গানম্যান পাচ্ছেন ওসমান হাদির বোন

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় থেকে শাহাদতবরণকারী শরিফ ওসমান হাদির পরিবারের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে হাদির এক বোনকে ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য অস্ত্রের লাইসেন্স এবং একজন গানম্যান প্রদান করা হচ্ছে। একই সঙ্গে তাঁর পরিবারের অন্য সদস্যদের সুরক্ষায় সার্বক্ষণিক পুলিশি পাহারার ব্যবস্থা থাকবে। মূলত জুলাই আন্দোলনের সম্মুখসারির যোদ্ধা, সমন্বয়ক এবং গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতাদের ওপর বাড়তে থাকা নিরাপত্তা ঝুঁকির কথা মাথায় রেখেই সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

সরকারি সূত্র এবং গোয়েন্দা প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর থেকেই আন্দোলনের শীর্ষ নেতৃত্বের অনেকেই দেশি-বিদেশি বিভিন্ন নম্বর থেকে প্রাণনাশের হুমকি পেয়ে আসছেন। বিশেষ করে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদিকে হত্যার আগে যেভাবে হুমকি দেওয়া হয়েছিল, সেই অভিজ্ঞতা থেকে সরকার এখন ঝুঁকিগ্রস্ত ব্যক্তিদের নিরাপত্তা জোরদার করাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। ইতিমধ্যেই অন্তর্বর্তী সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, হাসনাত আবদুল্লাহ, সারজিস আলম এবং তাসনিম জারাকে গানম্যান প্রদান করা হয়েছে। পাশাপাশি তাঁদের অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়ার প্রক্রিয়াটিও চলমান রয়েছে।

নিরাপত্তা চেয়ে আবেদনের তালিকায় রয়েছেন দেশের বেশ কয়েকজন শীর্ষ রাজনীতিক ও সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থী। গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জুনায়েদ সাকি, এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এবং বিএনপির কয়েকজন প্রার্থীর আবেদন গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পুলিশ জানিয়েছে, যাঁদের নিরাপত্তা ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি, তাঁদের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গানম্যান নিয়োগ করা হচ্ছে। তবে অনেক সমন্বয়ক শিক্ষার্থী হওয়ায় এবং যাতায়াতের জন্য রিকশা বা পাবলিক বাস ব্যবহার করায় তাঁদের গানম্যান দেওয়া কিছুটা জটিল হয়ে পড়ছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নিরাপত্তার জন্য কোনো মৌখিক অনুরোধ গ্রহণ করা হচ্ছে না। লিখিত আবেদনের ভিত্তিতেই কেবল প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। গত রোববার পর্যন্ত এ বিষয়ে ১২টি লিখিত আবেদন জমা পড়েছে। খুব শিগগিরই একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের মাধ্যমে আবেদনকারীদের ঝুঁকি পর্যালোচনা করে গানম্যান ও অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ফ্যাসিবাদী শক্তির যেকোনো ধরনের ষড়যন্ত্র মোকাবিলা এবং আন্দোলনের নেতৃত্বের জীবন রক্ষায় প্রশাসন এখন সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।


পদত্যাগের খবরকে গুজব বললেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজের পদত্যাগের খবরকে পুরোপুরি ভিত্তিহীন এবং গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। আজ সোমবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “পদত্যাগ করলে তো এখানে থাকতাম না।” এই মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি তাঁর দায়িত্ব পালনের বিষয়ে ছড়িয়ে পড়া সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটান।

বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখসারির যোদ্ধা শরীফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানান। তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা ফয়সালের অবস্থান সম্পর্কে এখনো সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি, তবে তাঁর অবস্থান জানা মাত্রই তাকে গ্রেফতার করা হবে। এ ঘটনায় ইতোমধ্যে ফয়সালের বাবা, মা, স্ত্রী ও শ্যালকসহ হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের চালককে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া ফয়সালকে সীমান্ত পার হতে সাহায্য করা দালাল চক্রের সদস্যদেরও আটক করা হয়েছে। সরকার এই হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে বলে তিনি পুনর্ব্যক্ত করেন।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চলমান ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২’ সম্পর্কে তিনি জানান, এই অভিযানের মাধ্যমে সন্ত্রাসী ও দুষ্কৃতকারীদের কঠোরভাবে দমনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং এ পর্যন্ত মোট ৬ হাজার ৯৯৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পাশাপাশি দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তা নিশ্চিতেও সরকার বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদকসহ প্রায় ২০ জন ব্যক্তিকে ইতোমধ্যে গানম্যান দেওয়া হয়েছে এবং তাঁদের বাসভবনের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এমনকি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরলে তাঁকেও সরকারের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়া হবে বলে উপদেষ্টা নিশ্চিত করেন।

মন্ত্রণালয় সূত্রে আরও জানা গেছে, আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির ১৮তম সভায় আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ও গণভোটের প্রস্তুতি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচন, বড়দিন এবং থার্টি ফার্স্ট নাইটের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে জকসু নির্বাচনটি দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্যভাবে সম্পন্ন করার আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। এছাড়া সভায় উসকানিমূলক সাইবার প্রচারণা প্রতিরোধ, শ্রমিকদের বকেয়া বেতন-বোনাস পরিশোধ নিশ্চিত করা, মাদকবিরোধী অভিযান এবং রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও পার্বত্য অঞ্চলের নিরাপত্তা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সামগ্রিকভাবে দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রশাসনকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।


গানম্যান পাচ্ছেন নুরুল হক নুর ও রাশেদ খাঁন

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর এবং সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খাঁনের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিতে গানম্যান দিচ্ছে সরকার। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে বিষয়টি রাশেদ খাঁনকে নিশ্চিত করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। মূলত সাম্প্রতিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি এবং সম্ভাব্য ঝুঁকি বিবেচনা করে দেশের ২০ জন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে গানম্যান দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যার তালিকায় এই দুই শীর্ষ নেতার নাম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

তালিকায় থাকা অন্য ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন দেশের শীর্ষ দুই জাতীয় দৈনিক ‘প্রথম আলো’ ও ‘দ্য ডেইলি স্টার’-এর সম্পাদক এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ছয়জন শীর্ষ নেতা। এ ছাড়াও সম্প্রতি সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদির বোনকেও ব্যক্তিগত গানম্যান ও অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটকে সামনে রেখে সকল রাজনৈতিক দলের নেতা এবং সম্ভাব্য প্রার্থীদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা প্রটোকল সরবরাহের অংশ হিসেবেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর আগে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়েছিল যে, গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখসারির নেতৃত্ব এবং গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতাদের বাসস্থান, কার্যালয় ও চলাচলের ক্ষেত্রে বিশেষ সুরক্ষা প্রদান করা হবে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে এবং ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের জীবন রক্ষা করতেই প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। মূলত আন্দোলনের সম্মুখসারির নেতাদের লক্ষ্য করে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে হুমকি আসার বিষয়টি মাথায় রেখেই সরকার এই তড়িৎ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।


মধ্যযুগীয় কায়দায় পুড়িয়ে মারার চেষ্টা হয়েছে: সংবাদমাধ্যমে হামলায় নুরুল কবীরের ক্ষোভ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ‘প্রথম আলো’ ও ‘ডেইলি স্টার’ কার্যালয়ে বর্বরোচিত হামলার কড়া সমালোচনা করে সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ও নিউ এজ সম্পাদক নুরুল কবীর বলেছেন, হামলাকারীদের মূল উদ্দেশ্য ছিল সংবাদপত্রের ভেতরে থাকা কর্মীদের হত্যা করা। আজ সোমবার (২২ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত ‘মব ভায়োলেন্সে আক্রান্ত বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক যৌথ প্রতিবাদ সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। সম্পাদক পরিষদ এবং নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব) এই সভার আয়োজন করে।

নুরুল কবীর তাঁর বক্তব্যে হামলার ভয়াবহতা বর্ণনা করে বলেন, যখন সংবাদকর্মীরা অফিসের ভেতরে কাজ করছিলেন, তখন চারপাশ থেকে পরিকল্পিতভাবে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। এমনকি আগুন নেভাতে আসা ফায়ার সার্ভিসকেও বাধা দেওয়া হয়েছে। তিনি একে ‘মধ্যযুগীয় কায়দায় পুড়িয়ে মারার চেষ্টা’ হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি আরও বলেন, প্রতিটি গণমাধ্যমের নিজস্ব সম্পাদকীয় নীতি থাকে, যা কারো অপছন্দ হতেই পারে। কিন্তু সেই বিরোধের জেরে প্রতিষ্ঠানে আগুন দেওয়া কোনোভাবেই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া হতে পারে না।

প্রতিবাদ সভায় নুরুল কবীর সতর্ক করে বলেন, এই ধরনের মব ভায়োলেন্স বা গণসহিংসতা যদি অবিলম্বে রোধ করা না যায়, তবে শুধু সংবাদপত্র নয়, পুরো সমাজব্যবস্থা এবং দেশের উন্নতির সব সম্ভাবনা ধূলিসাৎ হয়ে যাবে। তিনি এই হামলাকে সরাসরি গণতন্ত্র, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং নাগরিক অধিকারের ওপর একটি বড় আঘাত হিসেবে চিহ্নিত করেন।

উক্ত প্রতিবাদ সভায় দেশের বরেণ্য নাগরিক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা উপস্থিত থেকে সংহতি প্রকাশ করেন। তাঁরা সবাই একমত হন যে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায় এখন সব পেশাজীবী মানুষের ঐক্যবদ্ধ হওয়া সময়ের দাবি। সভা শেষে হোটেলের সামনে একটি মানববন্ধন কর্মসূচিও পালন করা হয়, যেখান থেকে সাংবাদিক ও গণতন্ত্রকামী মানুষের ওপর এমন হামলা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানানো হয়। মূলত সংবাদমাধ্যমের ওপর এমন নজিরবিহীন আক্রমণের বিরুদ্ধে নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে এক শক্তিশালী বার্তা দেওয়া হয়েছে এই সভার মাধ্যমে।


banner close