শহিদুল ইসলাম মাঝি ওরফে শহিদ মাঝি একসময় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সোর্স হিসেবে কাজ করতেন। পরে ২০১২ সালে তিনি গড়ে তোলেন ডাকাত দল। প্রায় একযুগ ধরে ডিবি পরিচয়ে তার দল ডাকাতি করে আসছিল। সারা দেশে শহিদুল মাঝির বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত সাতটি মামলা হয়েছে।
গত সোমবার ক্যান্টনমেন্ট থানার একটি মামলায় শহিদ মাঝিকে গ্রেপ্তার করে ডিবি গুলশান বিভাগ। তার দলের সাত সদস্য এবং ডাকাতির প্রস্তুতিকালে আরেক দলের ৯ জনকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। দুই দলই একে অপরের পরিচিত। গত সোমবার অভিযান চালিয়ে রাজধানীর খিলক্ষেত, ডেমরা ও গাজীপুরের কালিয়াকৈর থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তাররা হলেন শহিদ মাঝি, সাগর চন্দ্র মালি, শাহ আলম হাওলাদার, মো. কামরুল ইসলাম ওরফে রমিজ তালুকদার, মো. মাকসুদুল মোমিন ওরফে শামীম, মো. হাসান, মো. নুরুল ইসলাম, মো. খলিলুর রহমান, মো. আকরাম হোসেন, মো. দীন ইসলাম ওরফে কাউছার আহম্মেদ, মো. ইলিয়াছ আহম্মেদ ওরফে নিরব, মো. ফরহাদ আলী, মো. রিয়াজ হোসেন হাওলাদার ওরফে রিয়াজুল, মো. শফিকুল ইসলাম লিটন, মো. সেরাজুল ইসলাম ও মো. জহিরুল ইসলাম পিন্টু।
তাদের কাছ থেকে ৩০টি মোবাইল ফোন, একটি মাইক্রোবাস, ডিবির জ্যাকেট, হ্যান্ডকাফ ও বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র জব্দ করা হয়।
মঙ্গলবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘শহিদ মাঝি একসময় ডিবির সোর্স হিসেবে কাজ করতেন। ২০১২ সালে তিনি ডাকাত দল তৈরি করেন। তার দলে ১০ জন সদস্য রয়েছেন। আমরা সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছি। অন্যদের নাম-পরিচয় পেয়েছি, তাদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
ডিবিপ্রধান বলেন, ‘গত ১৭ জুন বিকাশের এজেন্ট আব্দুল আজিজ পল্টনের কার্পেট মার্কেটের সামনে থেকে একটি ব্যাগে ১৩ লাখ টাকা নিয়ে ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেলে খিলক্ষেতের নিজ বাসার উদ্দেশে রওনা হন। রাত ৮টার দিকে জিয়া কলোনি এমপি চেকপোস্টের সামনে পৌঁছলে তিন-চার ব্যক্তি মাইক্রোবাস নিয়ে তার মোটরসাইকেলের গতিরোধ করেন। পরে ডিবির পোশাক পরিহিত তিন-চারজন ব্যক্তি ডিবি পরিচয়ে তাকে জোর করে মাইক্রোবাসে উঠিয়ে হাত, পা ও চোখ বেঁধে এলোপাতাড়ি মারধর করে। এরপর তার ১৩ লাখ টাকা, মানিব্যাগে থাকা ১৯ হাজার টাকা ও তিনটি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। এ ছাড়া, ভুক্তভোগীর বিকাশের এজেন্ট নম্বর ও পিন কোড জেনে ৩৭ হাজার টাকা তুলে নেয়। পরে রাত ১১টার দিকে রূপগঞ্জের চরপাড়ার রাস্তার পাশে আজিজকে ফেলে যায় দুর্বৃত্তরা।’
ডিবি প্রধান বলেন, ‘এ ঘটনায় গত ২৪ জুন রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলা করেন আব্দুল আজিজ। মামলার ছায়াতদন্তে নামে গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিম। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় দুর্বৃত্ত দলটিকে শনাক্ত করা হয়। গত সোমবার গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানার মৌচাক এলাকায় অভিযান চালিয়ে এই চক্রের মূলহোতা শহিদ মাঝিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেয়া তথ্যে রাজধানীর ডেমরা থেকে সাগর চন্দ্র মালি, শাহ আলম হাওলাদার, মো. কামরুল ইসলাম রমিজ তালুকদার, মো. মাকসুদুল মোমিন ওরফে শামীম, মো. হাসান ও মো. নুরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়।’
হারুন জানান, একই দিন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ডাকাতির প্রস্তুতি নেয়ার সময় খিলক্ষেত ৩০০ ফুট রোডে অস্ট্রেলিয়ান স্কুলের সামনে থেকে আরেকটি একটি ডাকাত দলের আরও ৯ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে খিলক্ষেত থানায় পৃথক মামলা দায়ের করা হয়েছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা যোগসাজশে ঢাকার মতিঝিল, পল্টন, ধানমন্ডি ও গুলশান এলাকার ব্যাংক ও মানি এক্সচেঞ্জ হাউস থেকে কোনো ব্যক্তি টাকা নিয়ে বের হওয়ার সময় তাদের চিহ্নিত করে। পরে দুই-তিনজন মোটরসাইকেল নিয়ে পিছু নেয়। সুবিধাজনক স্থানে মাইক্রোবাস নিয়ে দলের অন্য সদস্যরা প্রস্তুত থাকে। তারা ডিবি পুলিশ পরিচয়ে চিহ্নিত ব্যক্তিকে তাদের মাইক্রোবাসে উঠিয়ে নেয়। পরে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে সব ছিনিয়ে নিয়ে নির্জন স্থানে ফেলে রেখে যায়।’