ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনায় ১৩টি দূতাবাসের বিবৃতি প্রদানে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ বলেই তারা একটা মগের মুল্লুক পেয়েছে। এটা গ্রহণযোগ্য নয়।’
বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনায় বিদেশি দূতাবাসগুলোর বিবৃতি নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এটা সম্পর্কে (বিবৃতি) আমি জানি না। একটি দেশ সম্পর্কে আমি বলতে চাই, আমেরিকার নিউইয়র্কে যখন-তখন লোক মেরে ফেলা হয়। তারা কি স্টেটমেন্ট দেয় কখনো? জাতিসংঘ কখনো বলেছে আমেরিকাতে লোক মরে যায় কেন?’
হিরো আলমের ওপর হামলায় ঘটনা প্রসঙ্গে মোমেন বলেন, ‘এটি গ্রহণযোগ্য নয়। কেন মারলো সেটি তদন্ত করে দেখতে হবে। এমন হতে পারে সেটিতে কেউ জড়িত ছিল যা আমরা জানি না। হয়তো আমাদের নির্বাচনে অনিশ্চিত পরিস্থিতি তৈরি করার জন্য কেউ এটি করিয়েছে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘হয়তো কেউ আমাদের আগামী নির্বাচন চায় না। একটি অনিশ্চিত পরিস্থিতি তৈরি করার জন্য, বানচাল করার জন্য অকাম-কুকাম শুরু করছে।’
চলতি বছরের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের ক্যামব্রিজে পুলিশের গুলিতে নিহত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শিক্ষার্থী সাইদ ফয়সাল ওরফে আরিফের প্রসঙ্গ টেনে মোমেন বলেন, ‘একটা বাঙালি ছেলে মারা গেল। এতদিন হলো, জাতিসংঘ কখনো বলেছে ওই ছেলের হত্যাকাণ্ডের তদন্ত কতদূর হয়েছে? কিংবা রাষ্ট্রদূতরা দলবেঁধে কোনো বিবৃতি দিয়েছেন?’
গণমাধ্যমকে উদ্দেশ্য করে মোমেন বলেন, ‘আপনারা কেন জিজ্ঞেস করেন না (পশ্চিমা দূতদের)? প্রতিদিন লোক মারা যায়, তখন তারা কোনো স্টেটমেন্ট দেয় না...আর বাংলাদেশ বলেই একটা মগের মুল্লুক পেয়েছে। এটা গ্রহণযোগ্য নয়। আপনাদের সঙ্গে তাদের (বিদেশি দূতদের) যখন-তখন সাক্ষাৎ হয়। আপনারা তাদের জিজ্ঞেস করেন না কেন, বাঙালি ছেলে মেরে ফেলল। আমেরিকায় তো যখন-তখন লোক মারা যায়।’
সাংবাদিকের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘এগুলো নিয়ে আপনি প্রশ্ন করেছেন কখনো? করেছেন? ফয়সালের কথা প্রশ্ন করেছেন? কেন করেননি? আপনাদেরও এসব বিষয়ে সজাগ হওয়া উচিত। খালি আমার দেশ হলে হইচই করা শুরু করে দেয়। আর কোথাও হলে এ রকম হয়?’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাকে একটা প্রতিবেদন দেন কোন কোন দেশে তারা (বিদেশিরা) এ রকম বিবৃতি দিয়েছে; ওখানে লোক মারার পরে। কিছু দিন আগে ফ্রান্সে কতগুলো লোক আক্রান্ত হলো, কেউ কি দলবেঁধে বিবৃতি দিয়েছে? খালি বাংলাদেশ হলেই দেয়। এখন সময় এসেছে এসব প্রচার বন্ধ করার। তারা আমাদের কাছে বিবৃতি না দিয়ে আপনাদের কাছে দেয়। এটা গ্রহণযোগ্য নয়।’
মোমেন বলেন, ‘এই যে আমেরিকানরা এলো- আপনারা দুনিয়া খেয়ে ফেলেছেন। আমেরিকান আসছে কেন? সম্পর্কের উন্নতি করতে চান বলে প্রেসিডেন্ট বাইডেন একটির পর একটি দল পাঠাচ্ছেন। আর আপনারা সেখানে খালি সন্দেহ খোঁজেন। আমার সঙ্গে ব্লিঙ্কেন সাহেবের বৈঠক হয়েছে— কীভাবে সম্পর্ক উন্নয়ন করা যায়– অন্য কোনো বিষয় নয়। বিদেশ থেকে কেউ এলে আপনারা খালি ষড়যন্ত্র শুরু করেন— এটি বন্ধ করেন।’
বুধবার সকালে ঢাকা-১৭ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলমের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা জানায় ঢাকায় ১২টি দেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দূতাবাস।
বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সহিংসতার কোনো স্থান নেই। আমরা পূর্ণ তদন্ত ও দোষী ব্যক্তিদের জবাবদিহির দাবি জানাই। আসন্ন নির্বাচন যাতে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়, সে জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানাই।’
বিবৃতিদাতা দূতাবাস ও হাইকমিশনগুলো হলো—কানাডা, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, নরওয়ে, সুইডেন, নেদারল্যান্ডস, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
ঢাকা-১৭ আসনের ভোট গ্রহণ চলাকালে গত সোমবার বেলা সোয়া ৩টার দিকে রাজধানীর বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনে গেলে হিরো আলমকে রাস্তায় ফেলে পেটানো হয়।
হামলার ঘটনার পর হিরো আলমের ব্যক্তিগত সহকারী মো. সুজন রহমান ওরফে শুভ বাদী হয়ে মঙ্গলবার মামলা করেন। এ মামলায় পুলিশ সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
এই হামলার ঘটনাকে ‘নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করার অপপ্রয়াস’ হিসেবে বর্ণনা করেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর।
এদিকে মঙ্গলবার এক টুইট বার্তায় এই ঘটনায় উদ্বেগ জানান বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস।
এর আগে সোমবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিংয়ে হিরো আলমের ওপর হামলার প্রসঙ্গ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার বলেন, ‘গণতান্ত্রিক নির্বাচনে এ ধরনের রাজনৈতিক সহিংসতার কোনো স্থান নেই।’
মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও ঘটনাটির নিন্দা জানিয়েছে।