রাজনৈতিক অপরাধ ও বিত্ত-বৈভব প্রদর্শনীর কলুষতা থেকে সমাজকে রক্ষায় কাজ করতে সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।
রোববার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্র্যাব) ৪০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ আহ্বান জানান।
মন্ত্রী বলেন, “আমাদের দেশে এখন তাড়াতাড়ি বড়লোক হওয়ার প্রবণতা। যত দিন যাচ্ছে তত এই প্রতিযোগিতা বাড়ছে। এর পেছনে ‘ডেমোনেস্ট্রেশন অব ওয়েলথ’ বা বিত্ত-বৈভব প্রদর্শনীর মতো মনস্তাত্ত্বিক বিষয় যেমন ‘আমার এত সুন্দর বাড়ি, এত সুন্দর গাড়ি’ -সেটিকে ‘ডেমোনেস্ট্রেট’ করা, এটি সমাজকে কলুষিত করছে, অসুস্থ প্রতিযোগিতা তৈরি করছে।”
এই প্রতিযোগিতায় নানাভাবে অর্থ উপার্জন করতে গিয়ে মানুষ অর্থনৈতিক ও সামাজিক অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে, অন্যায্যভাবে দ্রব্যমূল্য বাড়াচ্ছে, মুনাফা লুটছে যা পুরো সমাজ ও রাষ্ট্রকে কলুষিত করছে, রাষ্ট্রের স্বাভাবিক বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটি যেন না হয় সেজন্য এর বিরুদ্ধে আপনারা সাংবাদিকরা লিখবেন।’
সামাজিক অপরাধের পাশাপাশি কিছু ক্ষেত্রে রাজনৈতিক অপরাধও বেড়েছে মন্তব্য করে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে রাজনীতির নামে মানুষ পোড়ানো, মানুষের সহায়-সম্পত্তিতে আগুন দেয়া পৃথিবীর কোথাও ঘটেছে কি না আমি জানি না। কোনো জায়গায় কমিটি নিয়ে বিরোধ হলে রাস্তা বন্ধ করে দেয়া কি সমীচীন! কমিটি পছন্দ হলো না বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে তালা লাগিয়ে দিল, এটি কি সমীচীন! এগুলো কোনোভাবেই সমীচীন নয়।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন নরসিংদীতে বিএনপির একজন শীর্ষ নেতা মামলায় হাজিরা দিতে গেছেন, তার দলের নেতারাই তার ওপর হামলা পরিচালনা করছে, তার গাড়ি ভাঙচুর করেছে। রাজনীতির নামে এভাবে মানুষ পোড়ানো, সম্পত্তিতে আগুন দেয়া কিংবা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য অপরের ওপর আক্রমণ পরিচালনা করা, এগুলো রাজনৈতিক অপরাধ।’
এইসব অপরাধের বিরুদ্ধেও লেখা প্রয়োজন এবং তাহলে ক্রাইম রিপোর্টারদের ভূমিকা আরও শানিত হবে এবং দেশ, সমাজ, রাষ্ট্রকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ হলেও যেটি সঠিক সেটি বলতে হবে। তাহলে সমাজ সঠিক পথে হাঁটবে। ক্রাইম রিপোর্টারদের অনেকেই নানা সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন, নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, এরপরও তারা পিছপা হননি। যারা অতীতে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছেন এখনো করছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।’
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমি যখন এ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলাম না, তখনো আপনাদের পাশে ছিলাম, যখন মন্ত্রী থাকবো না তখনো আপনাদের পাশে থাকবো এবং আমি কখনো কোনো সাংবাদিক বা কোনো সাংবাদিক সংগঠনকে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখি না।’
অপরাধ বিষয়ক সাংবাদিকতার প্রশংসা করে মন্ত্রী হাছান বলেন, ‘আপনাদের নানা অনুসন্ধানী রিপোর্টের কারণে, অনেক অপরাধ যেমন মাদক বিস্তার, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে রাষ্ট্রের সুবিধা হয়। আপনারা রিপোর্ট করলে সেটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা সরকারের পক্ষে সুবিধা হয়।’
তিনি বলেন, ‘ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন ৪০ বছর ধরে ঐক্যবদ্ধ আছে এটিই বড় আশার বিষয়। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি যেমন বিভক্ত হয়নি, আমি আশা করবো আপনারাও ঐক্যবদ্ধ থাকবেন। রাজনৈতিক মতাদর্শ থাকবে, পছন্দ-অপছন্দ থাকবে, কিন্তু রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত হওয়া মোটেই সমীচীন নয়।’
ক্র্যাব সভাপতি মির্জা মেহেদী তমালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সংগঠনের সহসভাপতি মিজানুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশীদ, সাবেক সভাপতি খায়রুজ্জামান কামাল, মিজান মালিক ও আবুল হোসেন, ডিআরইউয়ের সভাপতি মুরসালিন নোমানী, সাবেক সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা প্রমুখ বক্তব্য দেন। অতিথিরা ক্র্যাবের ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে মন্ত্রীর সঙ্গে কেক কাটায় অংশ নেন।
জুলাই সনদ বাস্তবায়নের চূড়ান্ত সুপারিশে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ বাদ দিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন প্রতারণা করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। অবিলম্বে ওই সুপারিশ সংশোধনেরও দাবি জানিয়েছেন তিনি।
গতকাল বুধবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক এহসান মাহমুদের ‘বিচার সংস্কার নির্বাচন: অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে বাংলাদেশ’ বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে এ কথাগুলো বলেন মির্জা ফখরুল।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, এত বড় একটা অভ্যুত্থান, এত ত্যাগের বিনিময়ে, এত প্রাণের বিনিময়ে সেটাকে ঠিকভাবে জাতির কল্যাণে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। দুর্ভাগ্যজনকভাবে দেখা যাচ্ছে, যতই দিন যাচ্ছে, ততই বিভক্ত বাড়ছে। বিভক্ত হয়ে পড়াটা, এটা কারা করছেন, কেন করছেন, এটাও উপলব্ধি করতে হবে। মিডিয়াতে, বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়াতে কতগুলো পক্ষ নিয়ে একেবারে নেমে যাওয়া হয়। প্রতিপক্ষকে একেবারে পুরোপুরি ঘায়েল করে দেওয়ার প্রচেষ্টা চালানো হয়।
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে গত মঙ্গলবার সুপারিশ জমা দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, যে বিষয়গুলোতে তারা একমত ছিলেন না, সেখানে তারা নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছিলেন। সেই নোট অব ডিসেন্ট সুপারিশে লিপিবদ্ধ করার একটা প্রতিশ্রুতি ছিল কমিশনের। কিন্তু অবাক হয়ে তারা লক্ষ্য করলেন, সুপারিশে সেই বিষয়গুলো নেই। নোট অব ডিসেন্টগুলো পুরোপুরি উপেক্ষা করা হয়েছে। ইগনোর করা হয়েছে। এটা তো ঐক্য হতে পারে না। তাহলে ঐকমত্য কমিশনটা করা হয়েছিল কেন?
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এটা আমি বলব, জনগণের সঙ্গে এটা একটা প্রতারণা। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এটা প্রতারণা।’
এ মুহূর্তে, এই অন্তর্বর্তীকালের সময়টা ঐক্যের সময় বলে উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, এখানে ন্যূনতম বিষয়গুলোয় একমত হয়ে একটা রাস্তা ধরা, একটা ট্র্যাক ধরা- সেই জায়গাটাকে বিভক্ত করে ফেলা হচ্ছে। কারা করছেন, কেন করছেন, এটা নিশ্চয়ই সবাই উপলব্ধি করতে পারছেন।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, একটি কথা তারা খুব পরিষ্কারভাবে বলতে চান, যা তারা এর আগেও বলেছেন। তারা মনে করেন, সব সংকটের মূলে যে বিষয়টা আছে, তা হলো, সত্যিকার একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। সে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের যে পার্লামেন্ট তৈরি হবে, সেই পার্লামেন্টে এই সব সমস্যাকে সংবিধানের মধ্যে নিয়ে আসবেন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা। সেভাবে দেশ চলবে। তারা সে কারণেই ৫ আগস্টের বিপ্লবের পরেই নির্বাচনের কথা বলেছিলেন। তখন অনেকে বলেছিল, তারা ক্ষমতা চান, সে জন্য অতি দ্রুত নির্বাচন চাচ্ছেন। আজ প্রমাণিত হচ্ছে, এই নির্বাচনটা যত দেরি হচ্ছে, তত বেশি সেই শক্তিগুলো শক্তিশালী হচ্ছে, ফ্যাসিস্ট শক্তিশালী হচ্ছে। যারা বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল দেখতে চায়, এখানে একটা অরাজকতা তৈরি করতে চায়।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা দৃষ্টি আকর্ষণ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনি কিন্তু এইবার জনগণের সামনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, ওয়াদাবদ্ধ। আপনি এখানে সত্যিকার অর্থেই যেটুকু সংস্কার দরকার, সেই সংস্কারগুলো করে আপনি জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য একটা নির্বাচন দেবেন। সেই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যে পার্লামেন্ট আসবে, সেই পার্লামেন্ট এই দেশের সংকটগুলো সমাধান করবে। সুতরাং আজকে যদি এর থেকে কোনো ব্যত্যয় ঘটে, এর থেকে বাইরে যদি যান, তার দায়দায়িত্ব সম্পূর্ণ আপনাকেই বহন করতে হবে। এ কথাটা আমি খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই।’
প্রকাশনা অনুষ্ঠানে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘হঠাৎ করে তারা সুপারিশে দেখলেন, নোট অব ডিসেন্টের উল্লেখ নেই। এটা তো কোনো ঐকমত্য হয়নি। এ প্রশ্নের ব্যাখ্যা নিশ্চয়ই কমিশন দেবে। তারা জুলাই সনদ সই করেছেন। সনদে নোট অব ডিসেন্ট (আপত্তি) লেখা আছে। এটা দলগুলো নিজ নিজ ইশতেহারে দেবে। যে দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে, ম্যান্ডেট পাবে, সেই দল নিজস্ব প্রস্তাব অনুযায়ী আপত্তির অংশগুলোর মীমাংসা করবে।’
জুলাই সনদের আদেশ জারি প্রসঙ্গে জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘অনেকে দাবি তুলছেন যে আদেশ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা। প্রধান উপদেষ্টা আদেশ দেবেন কোনো ক্ষমতাবলে? সরকার আদেশ দেয়, সেটা রাষ্ট্রপতির নামে যায়, এটা যেকোনো রাষ্ট্রের নিয়ম। রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন রাষ্ট্রের প্রতীক। যদি প্রধান উপদেষ্টা নিজে এটা জারি করেন, তার মানে তিনি নিজেকে রাষ্ট্রের প্রধান হিসেবে ঘোষণা করছেন এবং কার্যত সংবিধানকে স্থগিত করছেন।’
জোনায়েদ সাকি সতর্ক করে বলেন, ‘ঐকমত্য ছাড়া কেউ কারও সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিলে তা কার্যকর হবে না। এটা সবার উপলব্ধি করা দরকার।’
প্রকাশনা উৎসবে আরও বক্তব্য দেন চর্চা ডটকমের সম্পাদক সোহরাব হাসান, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক, লেখক ও সাংবাদিক শাহ্নাজ মুন্নী।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে বিএনপি হতাশ বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। গতকাল বুধবার রাজধানীর একটি হোটেল এক সেমিনারে এ কথা জানান তিনি।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, গত ১৭ তারিখ যে দলিল স্বাক্ষর হয়েছে সেই বিষয়গুলো জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায় সম্পর্কিত সুপারিশে পুরোপুরি নাই। বলা হলো ৪৮টা দফার ওপর গণভোট করা হবে। সেই আলাপ তো হয়নি আমাদের সাথে।
এতদিন তাহলে কেন এত আলোচনা, এত কসরত করা হলো প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, যেগুলো ঐকমত্য হবে সেগুলো বাস্তবায়ন হবে এমন প্রস্তাব ছিল। জুলাই সনদ যেটা স্বাক্ষর হয়েছে সেটা নাই, আছে কমিশন ও দুই-একটি দল যে প্রস্তাব দিয়েছে সেগুলো।
কমিশনের উদ্দেশ্য ছিল ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা জানিয়ে বিএনপির এ নেতা আরও বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন যে প্রস্তাব দিয়েছে এতে জাতিতে বিভক্তি হবে, অনৈক্য হবে, কোনো ঐকমত্য হবে না। তাদের উদ্দেশ্য কী আমরা জানি না। এর মাধ্যমে তারা কী অর্জন করতে চায় আমরা জানি না।
এছাড়া আরপিও ও জোটের প্রতীক ইস্যুতে সরকারের আচরণকে পক্ষপাতমূলক বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, জোটবদ্ধ যেকোনো রাজনৈতিক দল তাদের স্বাধীনতা অনুযায়ী নিজস্ব প্রতীকে বা জোটের প্রতীকে নির্বাচন করার সুযোগ পেত। কিন্তু হঠাৎ করে একটি অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বলা হলো-জোটবদ্ধ হলেও তাদের নিজস্ব প্রতীকে নির্বাচন করতে হবে। আরও আশ্চর্যের বিষয়, আরেকটি রাজনৈতিক দল সেটিকে সমর্থন করছে। এটা আমরা আশা করি না।
বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য আরও বলেন, বর্তমান সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকা রাখবে, নিরপেক্ষ আচরণ করবে- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এবং সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে গভীর হতাশ বলেও জানান তিনি।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া সেন্টমার্টিন দ্বীপে কোনো নৌযান চলাচলের অনুমতি দিতে পারবে না। পর্যটকদের অবশ্যই বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে টিকিট কিনতে হবে। সেখানে প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাস এবং কিউআর কোড সংযুক্ত থাকবে। কিউআর কোড ছাড়া টিকিট নকল হিসেবে গণ্য হবে।
দ্বীপে ভ্রমণের সময়সূচি এবং পর্যটক উপস্থিতিও এবার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত থাকবে। নভেম্বর মাসে পর্যটকেরা শুধু দিনের বেলায় ভ্রমণ করতে পারবেন, রাত্রিযাপন করা যাবে না। ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে রাত্রিযাপনের অনুমতি থাকবে। ফেব্রুয়ারি মাসে দ্বীপে পর্যটক যাতায়াত সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকবে। প্রতিদিন গড়ে দুই হাজারের বেশি পর্যটক দ্বীপে ভ্রমণ করতে পারবেন না।
সেন্ট মার্টিনের প্রাকৃতিক পরিবেশ অক্ষুণ্ন রাখতে দ্বীপে রাতে সৈকতে আলো জ্বালানো, শব্দ সৃষ্টি বা বারবিকিউ পার্টি করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কেয়াবনে প্রবেশ, কেয়া ফল সংগ্রহ বা ক্রয়-বিক্রয়, সামুদ্রিক কাছিম, পাখি, প্রবাল, রাজকাঁকড়া, শামুক-ঝিনুক ও অন্যান্য জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। এছাড়া সৈকতে মোটরসাইকেল, সি-বাইকসহ যেকোনো মোটরচালিত যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে।
নিষিদ্ধ পলিথিন বহন করা যাবে না এবং একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক, যেমন চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিক চামচ, স্ট্র, সাবান ও শ্যাম্পুর মিনিপ্যাক, ৫০০ ও ১০০০ মিলি লিটারের প্লাস্টিক বোতল ইত্যাদি বহন নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। পর্যটকদের নিজস্ব পানির ফ্লাস্ক সঙ্গে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এই নতুন নির্দেশনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে সেন্টমার্টিন দ্বীপের নাজুক পরিবেশ ও অনন্য জীববৈচিত্র্য সংরক্ষিত থাকবে এবং দ্বীপটি দায়িত্বশীল ও পরিবেশবান্ধব পর্যটনের উৎকৃষ্ট উদাহরণ হয়ে উঠবে বলে আশা করছে সরকার।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ঘোষণা করা হবে। নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরাপদভাবে আয়োজনের জন্য আগামী ১৫ নভেম্বরের মধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্নের নির্দেশ দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
গতকাল বুধবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি সংক্রান্ত এক উচ্চ পর্যায়ের সভায় এ নির্দেশনা দেন তিনি। বৈঠকে নির্বাচন কমিশন, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সেনাবাহিনী, পুলিশ ও র্যাবের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। প্রায় ২ ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে মূলত চারটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়- নির্বাচনকালীন পদায়ন, ট্রেনিং, নিরাপত্তা ইস্যু এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় ডিসইনফরমেশন মনিটরিং।
প্রধান উপদেষ্টা আগামী জাতীয় নির্বাচন বানচালে ভেতরের বা বাইরের যেকোনো ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন বলেও জানান প্রেস সচিব।
ছোটখাটো নয়, বড় শক্তি নিয়ে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, ‘নির্বাচন বানচালের জন্য ভেতর থেকে, বাইরে থেকে অনেক শক্তি কাজ করবে। ছোটখাটো নয়, বড় শক্তি নিয়ে বানচালের চেষ্টা করবে। হঠাৎ করে আক্রমণ চলে আসতে পারে। এই নির্বাচন চ্যালেঞ্জিং হবে। যত ঝড়ঝঞ্চাই আসুক না কেন, আমাদের সেটা অতিক্রম করতে হবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব বলেন, এই আক্রমণ বলতে শুধু শারীরিক আক্রমণ নয়, বরং সাইবার অ্যাটাক বা সোশ্যাল মিডিয়ায় ডিজ-ইনফরমেশন (অপতথ্য) ছড়ানোকেও বোঝানো হচ্ছে। যারা পতিত স্বৈরাচার এবং তার দোসর, তারা দেশে একটা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হোক, তা চাইবে না। এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ‘আগামী নির্বাচন সুন্দর ও উৎসবমুখর করতে হলে মানুষের কাছে পৌঁছতে হবে, নির্বাচনী নীতিমালা, ভোটকেন্দ্রের নিয়ম, কীভাবে ভোট প্রদান করতে হবে, কোথাও বিশৃঙ্খলা হলে কী করতে হবে এসব বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে হবে।’
প্রেস সচিব জানান, নির্বাচনী দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের বদলি ও পদায়নের বিষয়ে এলাকার গুরুত্ব বিবেচনায় কর্মকর্তাদের দক্ষতা বিবেচনা করে বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় বদলি ও পদায়নের বিষয়ে ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাজ শুরু করেছে। এর পাশাপাশি নির্বাচন কমিশন নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করবে এমন কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ প্রদানও শুরু করেছে।
কর্মকর্তাদের নিজ জেলা ও নিকটবর্তী জেলা এবং আত্মীয় পরিজনের কেউ প্রার্থী হলে সেসব নির্বাচনী এলাকায় দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রাখা হবে। আগের তিনটি নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করেছেন এমন কর্মকর্তাদের বিরত রাখা হবে। যত দ্রুত সম্ভব পোস্টিং দিয়ে দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে যাতে করে তারা পর্যাপ্ত সময় পায় প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য এবং প্রয়োজনীয় ট্রেনিং শুরু করা যায়।
শফিকুল আলম জানান, ‘আজকের (বুধবার) বৈঠকে নির্বাচন নিয়ে সরকার, নির্বাচন কমিশন ও বিভিন্ন বাহিনীর মধ্যে সমন্বয়ের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। মিটিংয়ে এআই, ডিসইনফরমেশন, মিসইনফরমেশন নিয়ে দীর্ঘসময় ধরে আলোচনা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বৈঠকের একটা বড় কনসার্ন ছিল, সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনো অপপ্রচার ছড়িয়ে পড়লে সেটা কীভাবে দ্রুত ডিবাঙ্ক করা যাবে তা নিয়ে। অনেক সময় দেখা যায়, কোনো অপতথ্যকে আইডেন্টিফাই করে সেটা যে ‘অপতথ্য’ এটা প্রচার করতে গিয়ে অনেক সময় লেগে যায়। সেই সময়ের মধ্যে অনেক ক্ষতিও হয়ে যায়। এ জন্য একটি সেন্ট্রাল ডিসইনফরমেশন মনিটরিং সেল ও একটি সেন্ট্রাল কমিউকেশন সেল তৈরির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
শুধু শহর অঞ্চল বা জেলা পর্যায়ে না, গ্রাম পর্যায়েও মানুষের কাছে যেন ফ্যাক্টচেকিং তথ্যগুলো পৌঁছাতে পারে সে বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা গুরুত্ব দিয়েছেন।’
অধ্যাপক ইউনূসের বরাত দিয়ে প্রেস সচিব জানান, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়ায় অপপ্রচার আসবে। নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য দেশের ভেতর থেকে বাইরে থেকে খুবই পরিকল্পিতভাবে নানা অপপ্রচার চালানো হবে। এআই দিয়ে ছবি-ভিডিও তৈরি করে ছেড়ে দেওয়া হবে। এটাকে সামাল দিতেই হবে। একটা অপপ্রচারের সূচনা হওয়া মাত্রই সেটা ঠেকাতে হবে যেন ছড়াতে না পারে।’
নির্বাচনকেন্দ্রিক প্রচার-প্রচারণার জন্য তথ্য মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য মন্ত্রণালয় কাজ শুরু করেছে বলে জানান তিনি।
বৈঠকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান, সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, প্রতিরক্ষা ও জাতীয় সংহতিবিষয়ক প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আব্দুল হাফিজ, আইসিটিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, মুখ্য সচিব মো. সিরাজ উদ্দিন মিয়া, নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ, স্বরাষ্ট্র সচিব নাসিমুল গণি, মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশিদ, পিএসও লে. জে. কামরুল হাসান, পুলিশের মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম, ডিজি র্যাব এ কে এম শহিদুর রহমান, ডিজি কোস্ট গার্ড রিয়ার এডমিরাল জিয়াউল হক, ডিজি আনসার মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ এবং গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই, ডিজিএফআই ও এসবির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ‘আমাদের উন্নয়নের দর্শন বদলাতে হবে। বড় বড় মেগা প্রকল্পে বিপুল অর্থ ব্যয়ের পাশাপাশি নদীভাঙন ও দুর্যোগপ্রবণ এলাকার মানুষের সুরক্ষায় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।’
বুধবার রাজধানীর আলোকি-তে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলে।
পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ‘টেকসই উন্নয়ন হলে প্রতিটি দুর্বল ও প্রান্তিক মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত থেকে সুরক্ষিত থাকবে।’
আ্যনুয়াল কমিউনিটি অব প্র্যাকটিসেস (সিওপি) নেটওয়ার্ক কনভেনশন ২০২৫-এমপাওয়ার উইমেন ফর ক্লাইমেট রিসাইলেন্ট সোসাইটিজ (ফেজ-২) শীর্ষক অনুষ্ঠানে সুইডেনের রাষ্ট্রদূত নিকোলাস উইকস, সুইজারল্যান্ড দূতাবাসের সহযোগিতা প্রধান ডিপাক এলমার, জাতিসংঘ নারী সংস্থার বাংলাদেশ প্রতিনিধি গীতাঞ্জলি সিং ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহিন আনাম বক্তব্য রাখেন।
পরিবেশ উপদেষ্টা আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের নিয়ন্ত্রণে না থাকলেও টিকে থাকার লড়াই আমাদের হাতেই রয়েছে আর এই টিকে থাকার অনুপ্রেরণা পরিবারে সবচেয়ে বেশি দেন নারীরা।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, নারীর অদম্য সাহসেই গড়ে উঠবে জলবায়ু সহনশীল বাংলাদেশ।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের নারীরা ঘরে ও সমাজে প্রতিদিন জলবায়ু সহনশীলতার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। দুর্যোগে, দারিদ্র্যে কিংবা অনিশ্চয়তায় তারা কখনো হার মানেননি।
উপদেষ্টা বলেন, এই নারীদের সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় টেকসই পরিবর্তন আনা সম্ভব।
তিনি আরও বলেন, সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অভিযোজন প্রকল্পগুলোকে বড় আকারে সম্প্রসারণ করতে হবে। স্থানীয় নারী উদ্যোক্তাদের উদ্ভাবনী প্রচেষ্টাগুলোকেই জাতীয় উন্নয়নের পরিধিতে অন্তর্ভুক্ত করা সময়ের দাবি।
অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ জেলার নারীদের জন্য কাজ করা ১০ জন অদম্য নারীকে পুরস্কার প্রদান করা হয়। পরে, পরিবেশ উপদেষ্টা জলবায়ু অভিযোজনের বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন করেন। এই জাতীয় কনভেনশনে দেশের ১০০টি নারী-নেতৃত্বাধীন নাগরিক সংগঠন অংশ নেয়।
সারাদেশে ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধে সমাজসেবা কার্যালয় সক্রিয়ভাবে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন।
তিনি বলেন, “বিগত অর্থবছরে সরকার প্রায় ৪ কোটি অসহায় ও দুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। সমাজের অনাথ, বিধবা, প্রতিবন্ধী ও অসহায় মানুষকে সহায়তা করা সরকারের নৈতিক দায়িত্ব। সরকার তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের সহায়তা করবে, তবে কোনো সমকামীকে সহায়তা করবে না।”
আজ বুধবার (তারিখ উল্লেখযোগ্য হলে যুক্ত হবে) চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সুদমুক্ত ক্ষুদ্রঋণ, দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণের সনদ এবং বাংলাদেশ জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদ থেকে প্রাপ্ত এককালীন আর্থিক অনুদানের চেক বিতরণ করা হয়।
ধর্ম উপদেষ্টা আরও বলেন, “সমাজসেবা কার্যালয়ের মাধ্যমে সরকার সমাজের প্রান্তিক ও অসহায় মানুষের পাশে রয়েছে। দেশের বিভিন্ন মেডিকেল প্রতিষ্ঠানে অসহায় রোগীদের ওষুধ কেনার জন্য সরকার প্রতিবছর ২৪ কোটি টাকা সহায়তা প্রদান করে। চট্টগ্রামের বিভিন্ন এতিমখানা ও অনাথ আশ্রমে প্রায় ১৩ হাজার শিশু এবং ৯৭ হাজার প্রতিবন্ধীকে সহায়তার আওতায় আনা হয়েছে।”
অসহায় মানুষের পাশে বিত্তশালীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “চট্টগ্রামে অনেক সচ্ছল ও প্রভাবশালী মানুষ আছেন। কোনো অসহায় মানুষকে একবেলা আহার করিয়ে যে প্রশান্তি পাওয়া যায়, তা অন্য কোনো কাজে পাওয়া যায় না। তাই সমাজের প্রান্তিক মানুষের পাশে দাঁড়াতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।”
ইউরোপের উদাহন তুলে ধরে তিনি বলেন, “সেখানে সকালের নাশতায় কেউ তিনটি বার্গার কিনলে একটি চ্যারিটির জন্য রেখে দেয়— যাতে কোনো অসহায় মানুষ চাইলে সেটি নিতে পারে। আমাদেরও এই মানবিক শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে।”
অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম সভাপতিত্ব করেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. ফরিদুল আলম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন চট্টগ্রামের উপপরিচালক ফাহমিদা বেগম, বিভাগীয় উপপরিচালক হাফেজ মো. আমানুল্লাহ এবং চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ মোরশেদ হোসেন প্রমুখ।
কোটি কোট টাকা ক্ষতির জন্য আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতে মামলা দায়ের করেছেন শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম। সোমবার ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংকের ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর সেটেলমেন্ট অব ইনভেস্টমেন্ট ডিসপিউটসে সালিশি আবেদন দাখিল করা হয়। খবর ফিনান্সিয়াল টাইমসের।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মামলায় তিনি যুক্তি দেখিয়েছেন, অবৈধভাবে বিদেশে পাচার করা সম্পদ পুনরুদ্ধারে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের প্রচেষ্টার কারণে তার পরিবারের ব্যবসায় ‘শত শত মিলিয়ন’ ডলার ক্ষতি হয়েছে।
আবদেনে এস আলম গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম এবং তার পরিবার যুক্তি দিয়েছে, তারা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের ‘সম্পদ জব্দ, বাজেয়াপ্ত এবং মূল্য ধ্বংসের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে।
এই মামলা ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে দেশ থেকে পাচার হওয়া বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ফেরত আনার ক্ষেত্রে একটি বড় ধাক্কা হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
ডিসেম্বরে বাংলাদেশ সরকারের প্রকাশ করা একটি অর্থনৈতিক শ্বেতপত্রে এই ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২৩৪ বিলিয়ন ডলার বলে উল্লেখ করা হয়।
সরকারের সম্পদ পুনরুদ্ধার প্রচেষ্টার নেতৃত্বদানকারী বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান মনসুর অভিযোগ করেছেন, এস আলম পরিবার দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলার সরিয়ে নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘এই টাকাগুলো কোথায়?’
তবে এস আলম বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই।
এর আগে এস আলম পরিবারের পক্ষের আইনজীবীরা গত বছরের ডিসেম্বরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে, যদি ছয় মাসের মধ্যে এই সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি না হয়, তবে তারা সালিশি মামলা দায়ের করবেন।
সে সময় নোটিশে কুইন ইমানুয়েল উরকুহার্ট এবং সুলিভানের আইনজীবীরা অভিযোগ করেন যে, অন্তর্বর্তী সরকার এস আলম পরিবারের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করেছে এবং সম্পদ জব্দ করেছে, তাদের ব্যবসায়িক লেনদেনের ‘মিথ্যা ও ভুয়া’ তদন্ত পরিচালনা করেছে এবং পরিবারটিকে লক্ষ্যবস্তু (টার্গেট) করে গণমাধ্যমে ‘উস্কানিমূলক প্রচারণায়’ সহযোগিতা করছে। এর ফলে কোম্পানিটির বড় ক্ষতি হয়েছে, যার আনুমানিক পরিমাণ ‘কয়েকশ’ মিলিয়ন’ ডলার।
তবে এস আলম পরিবার ক্ষতিপূরণ হিসেবে কত টাকা দাবি করেছে তা নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি।
সালিশের জন্য এস আলমের আবেদন সম্পর্কে প্রশ্নের জবাবে মনসুর এফটিকে বলেন: “যখনই আমাদের কাছে পৌঁছাবে, আমরা যথাযথ চ্যানেলের মাধ্যমে আমাদের প্রতিক্রিয়া জানাব।” ইউনূসের অফিস মন্তব্যের জন্য অনুরোধের জবাব দেয়নি।
আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতে এস আলমের মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, ‘যখন এটি আমাদের কাছে এসে পৌঁছাবে, আমরা যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানাব।’
২০০৪ সালে বাংলাদেশ এবং সিঙ্গাপুরের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ চুক্তির অধীনে এই সালিশ মামলা করা হয়েছে। উল্লেখ্য, এস আলম পরিবারের সদস্যরা ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে সিঙ্গাপুরের নাগরিকত্ব পান। তারা ২০২০ সালে বাংলাদেশি জাতীয়তা ত্যাগ করেন।
এস আলম পরিবার এর আগে যুক্তি দেখিদিয়েছিল যে, সিঙ্গাপুরের নাগরিক হিসেবে, ১৯৮০ সালের বিদেশি বেসরকারি বিনিয়োগ সংক্রান্ত বাংলাদেশের আইন দ্বারা প্রদত্ত অধিকার বলে তাদের সুরক্ষা পাওয়া উচিত।
আইএমএফের সাবেক কর্মকর্তা আহসান মনসুর এর আগে এস আলম ও তার পরিবার এবং সহযোগীদের বিরুদ্ধে ব্যাংকগুলো জোরপূর্বক দখলের মাধ্যমে ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে অর্থ পাচারের অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, এস আলম এবং তার সহযোগীরা কোম্পানির নিয়ন্ত্রণে থাকা ছয়টি ব্যাংকে ঋণ এবং বাড়িয়ে দেখানো আমদানি চালানের মতো পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন।
আহসান মনসুর আরো বলেন, ‘আমরা বহু পরিমাণ প্রমাণ পেয়েছি, যা থেকে বোঝা যায় যে, তারা কতটা সম্পদ অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে।
তবে ওই সালিশি মামলায়, এস আলম পরিবার দাবি করেছে যে, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়ে প্রমাণ উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের কর্মরত ‘ফ্যাসিস্টের দোসর’ হিসেবে পরিচিত আইন কর্মকর্তাদের নিয়োগ বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে বৈষম্যবিরোধী আইনজীবী সমাজ নামে একটি সংগঠন।
বিক্ষোভের সময়ে তারা অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন।
বুধবার (২৯ অক্টোবর ) সকালে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের সামনে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা বিক্ষোভে অংশ নেন।
নেতারা বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে এখনও ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে পরিচিত অনেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল, সহকারি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজ করে যাচ্ছেন। এটা শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি। ২৪-এর গণঅভ্যুত্থান ফ্যাসিবাদের দোসরদের পুনর্বাসনের জন্য হয়নি। অবিলম্বে ফ্যাসিবাদের দোসরদের নিয়োগ বাতিল করতে হবে।
বক্তারা বলেন, আমরা শুনতে পাচ্ছি নতুন নিয়োগের জন্য অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় থেকে আরেকটি তালিকা করা হয়েছে। যেখানে ফ্যাসিবাদের দোসরদের রাখা হয়েছে। আমরা এই নিয়োগ কার্যকর হতে দেবো না।
বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, অ্যাডভোকেট মো. জসিম উদ্দীন, ব্যারিস্টার আশরাফ রহমান, মিনারা খাতুন লাকী প্রমুখ।
আটলান্টিক মহাসাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় ‘মেলিসা’ ভয়াবহ শক্তি সঞ্চয় করে এখন পর্যন্ত অন্যতম শক্তিশালী ঝড়ে পরিণত হয়েছে। ঘণ্টায় ২৫০ কিলোমিটার বেগে ধেয়ে এসে এটি ক্যারিবীয় অঞ্চলজুড়ে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে।
মার্কিন ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টার (এনএইচসি) জানিয়েছে, মেলিসা বর্তমানে ক্যাটাগরি–৫ মাত্রার একটি অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। ঝড়টি সাগর উপকূলে প্রবল জলোচ্ছ্বাস, বন্যা ও ভূমিধসের আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে।
স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোর বরাত দিয়ে জানা গেছে, ঝড়ের তাণ্ডবে এ পর্যন্ত ৭ জনের প্রাণহানি ঘটেছে—জ্যামাইকায় তিনজন, হাইতিতে তিনজন এবং ডোমিনিকান রিপাবলিকে একজন। এছাড়া আরও একজন নিখোঁজ রয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।
রেড ক্রসের হিসাব অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে অন্তত ১৫ লাখ মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জ্যামাইকা। দেশটির সরকার জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ে বিদ্যুৎ ও যোগাযোগব্যবস্থা মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে জরুরি সহায়তা কার্যক্রম শুরু হয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার জন্য একটি অনলাইন সহায়তা পোর্টাল খোলা হয়েছে।
আবহাওয়াবিদদের আশঙ্কা, আগামী ২৪ ঘণ্টায় জ্যামাইকার পার্বত্য এলাকায় ভয়াবহ ভূমিধস ও আকস্মিক বন্যা দেখা দিতে পারে, যা বড় ধরনের মানবিক সংকট তৈরি করতে পারে।
এদিকে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব প্রতিবেশী কিউবায়ও পড়তে শুরু করেছে। দেশটির উপকূলীয় অঞ্চলগুলো থেকে মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে এবং সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে, বুধবার ভোর নাগাদ ‘মেলিসা’ কিউবার দক্ষিণাঞ্চলে আঘাত হানতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সমুদ্রের তাপমাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় মেলিসা অতিরিক্ত শক্তি অর্জন করেছে। তাদের মতে, এই ঘূর্ণিঝড় কেবল জ্যামাইকা নয়, বরং পুরো ক্যারিবীয় অঞ্চলের জন্য ভয়াবহ মানবিক সংকটের বার্তা বহন করছে।
৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা তাসলিমা আক্তার। তার স্বামীর বাড়ির পার্শ্ববর্তী বেগমগঞ্জ উপজেলার নাজিরপুর গ্রামে। আর পিতার বাড়ি সোনাইমুড়ী উপজেলার মটুবি গ্রামে। সে অনলাইনে আবেদন করে (২৮ অক্টোবর) মঙ্গলবার সকাল ৯ টায় পিতার বাড়ির ঠিকানায় ভোটার হতে আসে উপজেলা নির্বাচন অফিসে।নির্বাচন কর্মকতা আবু তালেবের রুমে প্রবেশ করার পর ভোটার হতে টাকা দাবি করে। টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় তাকে ও তার বৃদ্ধ মা আলেয়া বেগমকে বের করে দেয়। পুনরায় আবার তার রুমে প্রবেশ করলে ওই কর্মকর্তা রাগান্বিত হয়ে অকথ্য ভাষায় গাল মন্দ শুরু করে। পরে মা মেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ জানান।
সোনাইমুড়ির উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের ড্রাইভার মনির হোসেন।এখন তিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের গাড়ি চালান। তার এক আত্মীয় ভোটার হতে উপজেলা নির্বাচন অফিসে আবেদন করে।তার জন্ম নিবন্ধনে বয়সের ত্রুটি দেখিয়ে হয়রানি করতে থাকে। পরে সে উপজেলা কর্মচারী পরিচয় দিয়ে নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে গেলে তিনি ২০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। পরে ওই কর্মচারী তার সাথে দুর্ব্যবহার করেন।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল অফিসের পিয়ন সালাউদ্দিন জানান, তার চাচাতো ভাই মাইনুল ইসলাম ভোটার হতে নির্বাচন অফিসে যান। একইভাবে জন্ম নিবন্ধনে বয়সের ত্রুটি দেখিয়ে আবেদনের ফাইল ফেরত দেন নির্বাচন কর্মকর্তা আবু তালেব। পরে ওই অফিসের নিয়োগকৃত দালালের মাধ্যমে ২০ হাজার টাকা চুক্তি করে।টাকা দেওয়ার পর তাকে ভোটার করা হয়।
উপজেলার বারগাঁও ইউনিয়নের পলাশ জানান, তার ফুফাতো ভাইর নামের আগে মো: নাই।তিনি মোঃ যুক্ত করতে অনলাইনে আবেদন করে উপজেলা নির্বাচন অফিসে যান।সে নির্দিষ্টঙ্কের টাকা না দেয়ায় উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবু তালেব তার আবেদনটি বাতিল করে দেন।
সেবা গ্রহীতাদের অভিযোগ, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবু তালেব এখানে যোগদান করার পরেই সেবা গ্রহীতাদের হয়রানি ও ঘুষ লেনদেন বেড়েছে। তার বিরুদ্ধে জাতীয় পরিচয়পত্রের ভুল সংশোধন, এলাকা পরিবর্তন ও অন্যান্য কাজে সেবা প্রত্যাশীদের নানাভাবে হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে।সেবা নিতে আসা ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, দিনের পর দিন ঘুরলেও কাজ না করে দিয়ে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে অহেতুক হয়রানি করা হচ্ছে। তার রুমের প্রধান দরজা বন্ধ থাকে, জানালায় থাকে পর্দা দেখা করতেও লাগে অনুমতি। চাহিদামতো প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র জমা দিয়েও পাওয়া যায়না সমস্যার সমাধান। শুধু তাই নয় স্মার্ট কার্ড নিতেও একজন ব্যক্তিকে ঘুরতে হচ্ছে একাধিক দিন। জাতীয় পরিচয়পত্রের এসব গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে দেরি হওয়ায় অনেকেই পাসপোর্ট ও চাকরিসহ বিভিন্ন জরুরি কাজ করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন অনেকইে। এই অফিসে নতুন ভোটার হওয়া, জাতীয় পরিচয়পত্রে ভুল সংশোধন ও ভোটার স্থানান্তরসহ সব কাজেই গুনতে হয় টাকা। ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা নির্বাচন অফিস থেকে উপজেলায় যোগদান করেন নির্বাচন কর্মকর্তা আবু তালেব। এখানে যোগদান করার পরেই তিনি বিভিন্ন ঘুষ ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। প্রবাসীরা তাদের ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে এলে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে তিনি ঘুরাতে থাকেন। পরে জরুরী ভিত্তিতে করে দেয়ার আশ্বাস দিয়ে মোট অংকের টাকা দাবি করেন ওই কর্মকর্তা। তিনি যোগদান করার পর ঘুষের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা পরিষদের এক কর্মচারী জানান, মায়ের সাথে সন্তানের বয়সের অমিল থাকলে নির্বাচন কর্মকর্তা ওই আবেদনগুলো বাতিল না করে তার ড্রয়ারে রেখে দেন। পরে আবেদনকারী নিরুপাই হয়ে তার কাছে গিয়ে ১৫/২০ হাজার টাকা দিলে তিনি ভোটার করেন। এই ধরনের অভিযোগ তার বিরুদ্ধে বিস্তর। আর ঠিকানা স্থানান্তর তদন্ত করতে ঘড়িমসি করেন। তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা নেন।সেবা গ্রহীতারা তার কার্যালয়ে হয়রানি শিকার হয়ে ইতিপূর্বে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসরিন আক্তারের কাছে কয়েকটি অভিযোগ দিয়েছেন।
সোনাইমুড়ী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবু তালেব দৈনিক বাংলাকে জানান, তিনি এ উপজেলায় যোগদান করার পরই বিভিন্ন সমস্যার মোকাবিলা করতে হয়েছে। তবে তিনি উক্ত অনিয়মের সত্যতা স্বীকার করেননি
সোনাইমুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসিম আক্তার বলেন, নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে সেবা গ্রহীতারা হয়রানি হচ্ছে এটা সত্য। অভিযোগ পেয়ে কয়েকবার তাকে সতর্ক করা হয়েছে।
নোয়াখালী জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ সাদেকুল ইসলাম দৈনিক বাংলাকে বলেন, ভোটার হতে সেবা প্রার্থী থেকে টাকা নিয়েছে, এমন প্রমাণ থাকলে দেন। ব্যবস্থা নেব।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার বদলে ‘জাতীয় অনৈক্য’ প্রতিষ্ঠার একটা প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। কমিশন জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায়–সম্পর্কিত যেসব সুপারিশ প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দিয়েছে, তার প্রতিক্রিয়ায় এ কথা বলেন তিনি। একই সঙ্গে কার্যক্রম শেষ করায় ঐকমত্য কমিশনকে ধন্যবাদ দিয়েছেন এই বিএনপি নেতা।
মঙ্গলবার বিকেলে সচিবালয়ে আইন উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করার পর বেরিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, যে জুলাই জাতীয় সনদে রাজনৈতিক দলগুলো স্বাক্ষর করেছে সেই স্বাক্ষরিত সনদ বহির্ভূত অনেক পরামর্শ বা সুপারিশ, সনদ বাস্তবায়নের আদেশের খসড়ায় যুক্ত করা হয়েছে।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘জুলাই জাতীয় সনদ ৮৪টি দফা সম্ভবত, সেখানে বিভিন্ন দফায় আমাদের এবং বিভিন্ন দলের কিছু ভিন্ন মত আছে, নোট অব ডিসেন্ট আছে। পরিষ্কারভাবে সেখানে উল্লেখ করা আছে যে, এই সমস্ত নোট অব ডিসেন্টের বিষয়গুলো রাজনৈতিক দলসমূহ যারা দিয়েছে, তারা যদি নিজেদের নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখপূর্বক ম্যান্ডেটপ্রাপ্ত হয় তাহলে তারা সেইভাবে সেটা বাস্তবায়ন করতে পারবেন। সেটা এই প্রিন্টেড জাতীয় জুলাই সনদের যে বই এখানে আপনারা পাবেন সমস্ত দফায় দফায় যেখানে যেখানে ডিসেন্ট আছে সেখানে আছে। অথচ বিশ্বয়করভাবে আজকে যে সংযুক্তিগুলো দেওয়া হলো সুপারিশমালার সাথে, সেখানে এই নোট অব ডিসেন্টের কোনো উল্লেখ নাই।’
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গণভোট আয়োজনের বিষয়ে কমিশনের সুপারিশে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বা নির্বাচনের দিন অনুষ্ঠানের কথা বলা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় বিএনপির প্রতিনিধিত্ব করা সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘হয়তোবা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমস্যাটা নিয়ে আবার আলোচনা হতে পারে। এখানে একটা নতুন বিষয় সংযুক্ত করা হয়েছে যে, সংবিধান সংস্কার পরিষদের নামে একটা আইডিয়া এখানে সংযুক্ত করা হয়েছে। যেটা আগে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে কখনো টেবিলে ছিল না, আলোচিত হয়নি। এ বিষয়ে কোনো ঐকমত্য হয়নি।’
ঐকমত্য কমিশনের একটি সুপারিশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘৯০ দিন বা ২৭০ দিনের মধ্যে ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন না হলে সেটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে আইনে পরিবর্তন হবে—এমন সুপারিশ হাস্যকর।’
বৈঠক সম্পর্কে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘বহুদলীয় গণতন্ত্রের স্বার্থে জোটভুক্ত হয়ে নির্বাচন করলেও প্রত্যেক দল নিজস্ব প্রতীকে নির্বাচন করা উচিত—এমন বিধানে আরপিওর আগের আইন বহাল রাখার অনুরোধ জানাতে আইন উপদেষ্টার কাছে এসেছি। আইন উপদেষ্টা জানিয়েছেন, বিষয়টি উপদেষ্টা পরিষদের সঙ্গে আলোচনা করবেন। আমরা সে পর্যন্ত অপেক্ষা করব।’
ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘এখন পর্যন্ত কোনো দল বলেনি ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে না। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অবশ্যই হবে—সরকারের এই প্রস্তুতিতে আমরা আশ্বস্ত।’
নির্বাচনী জোট নিয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘বিএনপির সঙ্গে এনসিপি জোটভুক্ত হয়ে নির্বাচন করবে কি না, তা বলার সময় এখনো আসেনি।’
জুলাই সনদ অনুযায়ীই সংবিধান সংস্কার পরিষদকে সংবিধানে পরিবর্তন আনতে হবে। সে ক্ষেত্রে চাইলেও আগামী জাতীয় সংসদ তাদের ইচ্ছেমতো সংবিধানে পরিবর্তন, পরিবর্ধন, পরিমার্জন, সংযোজন, বিয়োজন করতে পারবে না। পাশাপাশি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন বা তার আগে যেকোনো দিন গণভোট আয়োজন ও নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
মঙ্গলবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
এর আগে দুপুর ১২টার দিকে জুলাই জাতীয় সনদের বাস্তবায়নের উপায় সম্পর্কিত সুপারিশ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হস্তান্তর করে জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশন। এ সময় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ইফতেখারুজ্জামান, বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, মো. আইয়ুব মিয়া ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন।
আলী রীয়াজ বলেন, ‘গণভোটের ব্যাপারে সব রাজনৈতিক দলের ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং এখনো আছে। এই প্রক্রিয়ায় বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে গণভোটের প্রয়োজন এবং গণভোট অনুষ্ঠানকে সবাই মনে করেছেন যে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য এটা একটি অত্যাবশ্যকীয় শর্ত।’
তিনি বলেন, ‘সেই বিবেচনা থেকেই জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গণভোট অনুষ্ঠানের প্রস্তাব সুপারিশ করেছে। গণভোট অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে তারিখ বিষয়ে ভিন্নমতের কথা বিবেচনা করে এবং এর যেহেতু একটি লজিস্টিক্যাল আসপেক্ট আছে এটা কীভাবে করা যাবে সে বিষয়ে কমিশনের কাছে যথেষ্ট পরিমাণে তথ্য নেই।
‘আমরা সরকারকে বলেছি তারা যেন সংসদের সাধারণ নির্বাচনের দিন বা তার আগে যেকোনো দিন গণভোট অনুষ্ঠান করে। আমরা এটা লিখিতভাবে বলেছি। আমরা সরকারকে বলেছি তারা যেন অবিলম্বে এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে একটি নির্বাচনী তফসিল তৈরি করে,’ যোগ করেন তিনি।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘জুলাই সনদ যেন আইনি ভিত্তি পায়, ভবিষ্যতের পথরেখা হিসেবে যেসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত এবং ঐকমত্য হয়েছে সেগুলো যেন বাস্তবায়িত হয়। গত ১৭ অক্টোবর সনদ সই হয়েছে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট ভাষায় এই অঙ্গীকার করা হয়েছে যে তারা এগুলো বাস্তবায়ন করার জন্য অঙ্গীকারাবদ্ধ হলেন।’
জুলাই সনদের বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ঐকমত্য কমিশন তিন ভাগে সুপারিশ দিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রথমটি হচ্ছে যেসব বিষয়ে সাংবিধানিক বিষয় সংশ্লিষ্ট নয়, সেগুলোর বিষয়ে সরকার অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে পারেন। সেটা যেন অবিলম্বে সরকারের পক্ষ থেকে বাস্তবায়িত করা হয়।’
দ্বিতীয় ভাগে তিনি জানান, অনেকগুলো সুপারিশ সরকারি নির্দেশ বা অফিস আদেশ দিয়েও বাস্তবায়ন করা সম্ভব। সেগুলো যেন সরকার দ্রুততার সঙ্গে বাস্তবায়ন করে।
এ দুটো বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোনোরকম ভিন্নমত নেই বলেও উল্লেখ করেন আলী রীয়াজ।
কমিশন সহ-সভাপতি বলেন, ‘সংবিধান সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোকে বাস্তবায়নের আইনি ভিত্তি দিতে এবং বাস্তবায়নের পথ নির্দেশ করতে তৃতীয় সুপারিশে বলেছি দুটো বিকল্প সরকারের হাতে আছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সরকারকে অনুরোধ করেছি সরকার যেন অবিলম্বে আদেশ জারি করে জুলাই সনদের সংবিধান সংস্কারবিষয়ক সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে একটি গণভোটের আয়োজন করে। এই গণভোটে যেন একটি প্রশ্ন উত্থাপন করা হয়। সেটি হলো, ৪৮টি সংবিধান সংশ্লিষ্ট বিষয় বাস্তবায়নের ব্যাপারে জনগণের সম্মতি আছে কি না।’
ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় রাজনৈতিক দলগুলোর ‘নোট অব ডিসেন্ট’ নিয়ে কী হবে-এমন প্রশ্ন করা হয়। জবাবে আলী রীয়াজ বলেন, তারা সরকারকে বলেছেন, এগুলো জনগণের কাছে নিয়ে যেতে। জনগণের রায় পাওয়ার পর রাজনৈতিক দল সিদ্ধান্ত নেবে।
‘সুপারিশে বলা হয়েছে যে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ একইসঙ্গে সংবিধান সংস্কার পরিষদ এবং জাতীয় সংসদ হিসেবে কার্যকর থাকবে। তবে সংবিধান সংস্কার পরিষদ কার্যকর থাকবে ২৭০ দিন। এই সময়ের মধ্যে সংবিধান সংস্কার পরিষদের সদস্যরা জাতীয় সনদে বর্ণিত বিষয়গুলো সংবিধানে সংযুক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় বিধি-বিধান, প্রয়োজনীয় সংশোধন, সংযোজন, বিয়োজন, পরিবর্তন, পরিমার্জন করবেন,’ বলেন তিনি।
ড. আলী রিয়াজ জানান, যদি সংসদ তা করতে ব্যর্থ হয়, সে ক্ষেত্রে ঐকমত্য কমিশন একটি বিকল্প প্রস্তাবও করেছে। তা হলো-সংবিধান-সংক্রান্ত প্রস্তাবগুলো খসড়া বিল (সংবিধান সংশোধনী আইনের খসড়া) আকারে তৈরি করবে সরকার। বিলটি গণভোটে দেওয়া হবে। গণভোটে তা পাস হলে সংবিধান সংস্কার পরিষদ মূল ভাব ঠিক রেখে প্রস্তাবগুলো অনুমোদন করবে। আগামী সংসদ সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে ২৭০ দিনের মধ্যে তা অনুমোদন না করলে এগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে যুক্ত হয়ে যাবে।
উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠার সুপারিশে ঐকমত্য কমিশন বলছে, ভোটের সংখ্যানুপাতে ১০০ সদস্যের উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠায় জনগণের সম্মতি পাওয়া গেলে জাতীয় সংসদ প্রতিষ্ঠার ৪৫ দিনের মধ্যে এ বিষয়ক প্রয়োজনীয় সংশোধনের মাধ্যমে তা বাস্তবায়িত হবে।
যেসব বিষয় নির্বাহী আদেশে বাস্তবায়ন সম্ভব
সুপারিশগুলোর মধ্যে ৯টি সুপারিশ নির্বাহী আদেশে বাস্তবায়ন করা যাবে বলে মনে করে কমিশন।
উপজেলা পর্যায়ে অধস্তন আদালত সম্প্রসারণ: যেসব উপজেলা জেলা সদরে অবস্থিত (সদর উপজেলা), সেসব উপজেলার আদালতসমূহ জেলা জজকোর্টের সঙ্গে সংযুক্ত রেখে সুনির্দিষ্ট করে দিতে হবে। বিদ্যমান চৌকি আদালত, দ্বীপাঞ্চল ও ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠিত উপজেলা আদালতসমূহ বহাল রেখে এর প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে।
জেলা সদরের কাছাকাছি উপজেলাগুলোতে নতুন আদালত স্থাপনের প্রয়োজন নেই (প্রয়োজনীয় জরিপ পরিচালনা সমাপ্ত করে)। অবশিষ্ট উপজেলাগুলোর জনসংখ্যার ঘনত্ব, ভৌগোলিক অবস্থান ও বৈশিষ্ট্য, যাতায়াতব্যবস্থা, দূরত্ব, অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে পর্যায়ক্রমে আদালত স্থাপন করা হবে।
অধস্তন আদালতের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করা এবং আইনগত সহায়তা কার্যক্রম উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত সম্প্রসারিত করা হবে।
বিচার বিভাগের জনবল বৃদ্ধি: বিচার বিভাগের সকল স্তরে বিচারক ও সহায়ক জনবল বৃদ্ধি এবং বিশেষায়িত আদালত স্থাপন করা হবে।
আদালত ব্যবস্থাপনা সংস্কার ও ডিজিটাইজ করা: মামলার দীর্ঘসূত্রতা ও হয়রানি নিরসন, স্বচ্ছতা আনয়ন, মামলার খরচ হ্রাস ও বিচারপ্রাপ্তি সহজলভ্য করার জন্য বিভিন্ন বিধি প্রণয়ন, সংশোধন ও সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক নির্দেশনা জারির মাধ্যমে আদালত ব্যবস্থাপনার সংস্কার ও ডিজিটাইজ করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
আইনজীবীদের আচরণবিধি: আইনজীবীদের আচরণবিধি যুগোপযোগীকরণ, জেলা পর্যায়ে বার কাউন্সিল ট্রাইব্যুনাল স্থাপন এবং এর প্রধান হিসেবে একজন বিচারককে দায়িত্ব প্রদান করা হবে। অপরদিকে আদালত প্রাঙ্গণে দলীয় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করা হবে।
গণহত্যা ও ভোট জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে স্বাধীন কমিশন গঠন: জুলাই গণঅভ্যুত্থানকালে গণহত্যা ও নিপীড়নের সঙ্গে জড়িত এবং ভোট জালিয়াতি ও দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের চিহ্নিতকরণ এবং তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করা হবে।
কুমিল্লা ও ফরিদপুর নামে দুটি প্রশাসনিক বিভাগ গঠন: ভৌগোলিক অবস্থান ও যাতায়াতের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে কুমিল্লা ও ফরিদপুর নামে দুটি প্রশাসনিক বিভাগ গঠন করা হবে।
দুর্নীতিবিরোধী কৌশলপত্র প্রণয়ন: রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলের পরিবর্তে একটি দুর্নীতিবিরোধী জাতীয় কৌশলপত্র প্রণয়ন করে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় ও অরাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতিবিরোধী দায়িত্ব ও কর্তব্য নির্ধারণ করা হবে। সংবিধানের বিধান অনুযায়ী ন্যায়পাল নিয়োগ করে ন্যায়পালের কার্যালয়কে এই কৌশলপত্র বাস্তবায়নের সঙ্গে কার্যকরভাবে যুক্ত করা হবে।
পরিষেবা খাতের কার্যক্রম ও তথ্য অটোমেশন করা: সেবা প্রদানকারী সব সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিশেষত, থানা, রেজিস্ট্রি অফিস, রাজস্ব অফিস, পাসপোর্ট অফিস এবং শিক্ষা, স্বাস্থ্য, স্থানীয় সরকার, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনসহ সব সেবা-পরিষেবা খাতের সেবা কার্যক্রম ও তথ্য-ব্যবস্থাপনা সম্পূর্ণ (এন্ড-টু-এন্ড) অটোমেশনের আওতায় আনা হবে।
ওপেন গভর্নমেন্ট পার্টনারশিপের পক্ষভুক্ত হওয়া: বাংলাদেশকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ওপেন গভর্নমেন্ট পার্টনারশিপের পক্ষভুক্ত হতে হবে।
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায়-সম্পর্কিত সুপারিশ হস্তান্তর শেষে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, যেসব সুপারিশের বিষয়ে সাংবিধানিক বিষয় সংশ্লিষ্ট নয়, সেগুলোর বিষয়ে সরকার অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে পারে। দ্বিতীয় ভাগে অনেকগুলো সুপারিশ সরকারি নির্দেশ বা অফিস আদেশ দিয়েও বাস্তবায়ন করা সম্ভব। সেগুলো দ্রুততার সঙ্গে বাস্তবায়ন করার জন্য কমিশন সরকারকে বলেছে বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, এ দুটো বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোনোরকম ভিন্নমত নেই।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি কেবল টাকায় পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। অর্থ দিয়ে নদীভাঙন, জীববৈচিত্র্য হ্রাস কিংবা মানুষের জীবনের নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনা যায় না।
তিনি বলেন, এ জন্য উন্নয়ন পরিকল্পনায় পরিবেশ ও জলবায়ু ঝুঁকিকে কেন্দ্রীয়ভাবে বিবেচনায় নেওয়া প্রয়োজন।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরে আয়োজিত ‘রোড টু বেলেম কপ-৩০: পিপল লেড পলিসি—বাংলাদেশ পজিশন @ কপ-৩০-’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জলবায়ু অর্থায়নে বৈশ্বিক প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে হবে- একথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, উন্নত দেশগুলো যদি নিজেদের জলবায়ু রোধে অবদান বাড়াতে না পারে, তাহলে আমাদের মতো জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর বাঁচার পথ রুদ্ধ হবে। জলবায়ু ন্যায্যতার প্রশ্নে বাংলাদেশকে আরও জোরালো ভূমিকা নিতে হবে।
তিনি আরো বলেন, আমরা যদি এখনই আমাদের উন্নয়ন দর্শন ও সিদ্ধান্তে জলবায়ু ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে না পারি, তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এক ভয়াবহ বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হবে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি তখন আর মানবিক বা টেকসই থাকবে না।
উপদেষ্টা বলেন, আমাদের উচিত শুধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বক্তব্য দেওয়া নয়, বরং মাঠপর্যায়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করা। বালু উত্তোলন বন্ধ করা, নদী রক্ষা করা, স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে পরিবেশের পক্ষে কাজ করা—এসব ক্ষেত্রেই প্রকৃত জলবায়ু নেতৃত্বের প্রমাণ দিতে হবে।
অনুষ্ঠানে অ্যাকশন-এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির, ন্যাচার কনজারভেশন ম্যানেজমেন্টের নির্বাহী পরিচালক ড. এস. এম. মঞ্জুরুল হান্নান খান, পরিবেশ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সোহরাব আলী, পরিচালক মির্জা শওকত আলী এবং সি৩ইআরের সহকারী পরিচালক রউফা খানম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।