মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বৈশ্বিক দুর্নীতি দমন বিভাগের সমন্বয়ক রিচার্ড নেফিউ স্যাংশন বা নিষেধাজ্ঞাকে দুর্নীতি দমনের হাতিয়ার হিসেবে উল্লেখ করেছেন। সোমবার পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে নেফিউর সঙ্গে বৈঠকের পর পররাষ্ট্রসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটি (স্যাংশন) যেকোনো দেশের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা যেতে পারে, শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়।’
রিচার্ড নেফিউ রোববার ঢাকায় আসার পর দুর্নীতি দমন কমিশন- দুদকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করেন। সোমবার তিনি ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এবং পরে পররাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘নেফিউ বলেছেন যে, বিশ্বব্যাপী দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রমকে যুক্তরাষ্ট্র অগ্রাধিকার দিচ্ছে। ভবিষ্যতে এটি ব্যবসা ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হতে পারে।’
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘আমরা তাকে সক্ষমতা বৃদ্ধির কথা বলেছি এবং যেসব দেশে অবৈধভাবে অর্থ গেছে তাদের সহায়তা পাওয়ার কথা বলেছি।’
রিচার্ড নেফিউ মার্কিন কূটনীতি এবং বৈদেশিক সহায়তায় দুর্নীতি মোকাবিলায় কাজ করে থাকেন।
গত ৫ জুলাই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন তাকে স্টেট ডিপার্টমেন্টের বৈশ্বিক দুর্নীতি দমনবিষয়ক সমন্বয়ক হিসেবে নিযুক্ত করেন। রিচার্ড নেফিউ সরাসরি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে জবাবদিহি করেন। স্টেট ডিপার্টমেন্টে যোগদানের আগে রিচার্ড নেফিউ কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর গ্লোবাল এনার্জি পলিসিতে সিনিয়র ফেলো হিসেবে কাজ করেছেন।
পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে আলাপকালে দেশের বাইরে এস আলম গ্রুপের টাকা নেয়ার বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কী করতে পারে- সাংবাদিকরা তা জানতে চান। জবাবে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘আমরা এ ধরনের কোনো নির্দেশনা পাইনি এখন পর্যন্ত। যদি দুর্নীতি দমন কমিশন আমাদের অনুরোধ করে, তাহলে আমরা যেটা করার করব আইনের মধ্যে থেকে।’
বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডার মতো দেশগুলোতে মানি লন্ডারিং হয়ে থাকে। সেই টাকাগুলো ফেরত আনতে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে সচিব বলেন, ‘ফেরত আনা তো পরের বিষয়। এগুলো কোন রুটে যাচ্ছে, সেগুলো বন্ধ করা দরকার। সবই যে অস্বচ্ছ টাকা, তা তো না।’
‘আমরা অনেক সময় দেখেছি, কানাডায় পাচারের কথা বলেন। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে অনেক বাংলাদেশি আছেন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, তারা কিন্তু অনেক কষ্ট করে পয়সা অর্জন করে কানাডায় গেছেন। সুতরাং সেটাও কিন্তু এখানে আছে। অনেকে ব্যবসা করেন এক্সপোর্টের, সেটির আয়ের একটি অংশ ওখানে থাকে, সেটাও কতটা অবৈধ সেটি আমি জানি না।’
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘বাংলাদেশের অনেকে বাবা-মা, দাদার জমি বা অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রি করে নিয়ে গেছেন, সেটার সোর্স অবৈধভাবে অর্জিত বলা ঠিক হবে না। কিন্তু সেটি কীভাবে নেয়া হয়েছে, আইনসঙ্গতভাবে নেয়া হয়েছে কি না; সেই ইস্যুগুলো যাচাই-বাছাই করা প্রয়োজন।’
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘ইনফরমেশনের দিক থেকে ওদের সঙ্গে তো যোগাযোগ আছে। আমাদের যে সংস্থাগুলো আছে বাংলাদেশ ব্যাংক ওদের কাউন্টার পার্ট। ওদের সঙ্গে যে খুব একটা সমস্যা আছে, তা না। সব দেশের সঙ্গে ইক্যুয়াল পাই না।’